Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    জীবন যেখানে যেমন – আরিফ আজাদ

    লেখক এক পাতা গল্প152 Mins Read0

    ০৯. সুখ

    [এক]।

    ‘বুঝলে ইয়াং ম্যান’–নিজের চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন দীপ্ত চৌধুরি, ‘সুখের প্রতিশব্দ হচ্ছে টাকা। টাকা থাকলেই জীবনে তুমি সুখী মানুষ। টাকা না থাকলে অসুখী। ভীষণ অসুখী। দুনিয়ায় কিছু ফালতু দার্শনিক আছে, ইউ নো? আমি তাদের বলি গবেট ফিলোসফার! এরা কী বলে জানো? এরা বলে, মানি ক্যান্ট বাই হ্যাপিনেস! হোয়াট দ্য হেল! টাকা দিয়ে নাকি সুখ কেনা যায় না! টাকায় কেনা যায় না এমন জিনিস দুনিয়ায় আছে নাকি আবার? হা হা হা।’

    দীপ্ত চৌধুরির সামনে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছি আমি। আজ অফিসে আমার সপ্তম দিন। আমার দিকে তাকিয়ে তিনি আরেকবার খলখলিয়ে হেসে উঠলেন। খুবই বিদঘুঁটে ধরনের হাসি। হাসি থামিয়ে বললেন, এই যেমন ধরো তোমার কথা। তুমি একজন ইয়াং, এনারজেটিক এবং খুবই স্মার্ট পারসন। কিন্তু তোমার মতো একজন লোক, যার কিনা যোগ্যতার কোনো কমতি নেই–তোমাকে কাজ করতে হচ্ছে নিতান্তই আমার পিএস হিশেবে। আমার সব কথা শোনা এবং তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই তোমার একমাত্র কাজ। এখন যদি বলি বাইরে গিয়ে গড়াগড়ি দাও, তাও তুমি দিতে বাধ্য। হা হা হা।

    আমি চুপ করে বসে আছি। চুপ করে বসে থাকা ছাড়া এখানে আমার আর তেমন কোনো কাজ নেই। আমার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো চুপচাপ এই লোকটার কথা শুনে যাওয়া। বিরক্তি ধরে গেলেও, চেহারায় সদাহাস্য ভাব জিইয়ে রেখে আমি লোকটার কথা শুনে যাচ্ছি। তিনি বলে যাচ্ছেন–এর কারণ কী জানো? এর কারণ হলো তোমার টাকা নেই। টাকার জন্য আমার যাবতীয় কথা শোনা এবং তা পালনের ব্যাপারে তুমি চুক্তিবদ্ধ। টাকা নেই বলে তোমার সুখও নেই। সুখ কিনতে তোমার টাকা চাই। টাকার জন্যেই আজ তুমি এখানে। একেবারে সহজ সমীকরণ, তাই না ইয়াং ম্যান?’

    আমি বললাম, ‘স্যার, বেলা এগারোটায় মধুমিতা হলে আপনার উপস্থিত থাকার কথা। কোরিয়া থেকে যেসব বায়াররা আসবে, তাদের সাথে আপনার জরুরি মিটিং সারতে হবে। আপনি সম্ভবত ভুলে গেছেন।

    ‘নো নো ম্যান! আমি ভুলে যাইনি। এখন কটা বাজে দেখো তো?’

    ‘স্যার, দশটা পাঁচ বাজে।’

    ‘মোর দ্যান ফিফটি মিনিটস। এনাফ টাইম টু গো দেয়ার। তোমাকে যা বলছিলাম। কী যেন আলাপ করছিলাম তোমার সাথে? এই যাহ! ভুলে গেলাম আবার! আচ্ছা বাদ দাও। কাজের কথায় আসা যাক। তোমাকে আজকে খুব ইম্পরট্যান্ট একটা কাজ করতে হবে।’

    ‘জি বলুন স্যার।’

    ‘তোমাকে জুয়েলারি মার্কেটে যেতে হবে। চমৎকার দেখে তিনটে ডায়মন্ডের নেকলেস কিনবে। মনে রেখো, বাজার কিন্তু দুই নাম্বার ডায়মন্ডে সয়লাব। দেখে-শুনে কিনতে হবে। যাকে বলে চোখ-কান খোলা রাখা। যদি নকল ডায়মন্ড কিনে আনো, ইউ নো, হোয়াট আই উইল ডু উইদ ইউ।’

    আমি এবারও চুপ করে আছি। তিনি বলতে লাগলেন, ‘বাকি জীবন হয়তো তোমাকে জেলে পচে মরতে হবে। হা হা হা।’

    আমাকে চাপা একটা ভয় দেখিয়ে দীপ্ত চৌধুরি ঘাবড়ে দিতে চাইলেন। আমি ঘাবড়াইনি দেখে তিনি বললেন, ‘তোমার সাহস আছে বেশ। আই এপ্রিশিয়েইট ইট! বাই দ্য ওয়ে, তিনটে ডায়মন্ডের নেকলেস দিয়ে আমি কী করবো জানতে চাইলে না যে!’

    ‘স্যার, এটা জিগ্যেশ করা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।’

    আমার উত্তরে এবার উনি দমে গেলেন খানিকটা বেশ জমিয়ে কোনো গল্প শুরু করতে গিয়ে আগ্রহী শ্রোতা না পেলে গল্প-কথক যেভাবে নিদারুণ পর্যুদস্ত হয়, ঠিক সেরকম অবস্থা তার। কিন্তু দুরন্ত চালাক বলে তার এই অপ্রসন্নতা আমাকে তিনি বুঝতে দিলেন না। তার মোলায়েম কিন্তু হেঁয়ালি গলায় বললেন, ‘গুড ডেলিভারি। তোমার পোস্টে আগে যারা ছিলো সবার কিন্তু এসব ব্যাপারে দুর্নিবার আগ্রহ থাকত। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জানতে চাইতো আমার কাছে। তুমি তাদের মতন নও জেনে ভালো লাগলো। অ্যানিওয়েজ, নেকলেস তোমাকে কিনতে হবে না। আমি শফিউলকে সাথে দিচ্ছি, সে নেকলেস কিনে তোমাকে দিলে তুমি সেগুলো নিয়ে মধুমিতা হলে চলে যেয়ো।’

    কথাগুলো শেষ হলে দীপ্ত চৌধুরি হনহন করে হেঁটে বেরিয়ে গেলেন। তার প্রস্থানের সাথে সাথে শফিউল নামের একজন এসে বললো, ‘স্যার চলুন।’

    দীপ্ত চৌধুরির পিএস হিশেবে এখানে আমি নতুন জয়েন করেছি। চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতাও এ আমার প্রথম। এখানেও যে কেউ আমাকে স্যার সম্বোধন করতে পারে তা আমার ভাবনাতে ছিলো না। ব্যাপারটা আমাকে তেমন আনন্দ না দিলেও খানিকটা সম্মান দিয়েছে।

    শফিউল নামের লোকটার চেহারা ম্যাড়মেড়ে, কিন্তু তাতে চালাকির ষোলোআনা উপস্থিতি বিদ্যমান। আমার দিকে নিক্ষেপ করা তার চতুর দৃপাত সে বিষয়ের সাক্ষ্য দিয়ে চলেছে। ভদ্রতার খাতিরেই আমি মুচকি হেসে জানতে চাইলাম, ‘কোথায় যাবো?’

    ‘নেকলেস কিনতে।’

    ‘ও দায়িত্ব আমার নয়।’

    ‘তা জানি। নেকলেস আমিই কিনবো। আপনি কেবল আমার সাথে যাবেন। গাড়ি থেকে আপনাকে নামতেও হবে না। আমি নেকলেস কিনে আপনার হাতে তুলে দেবো, আপনি সেগুলো স্যারের হাতে হ্যান্ড-ওভার করে দিয়ে আসবেন মধুমিতা হলে, ব্যস।’

    রোগা এবং ম্যাড়মেড়ে চেহারা হলে কী হবে, কথা বলাতে এই লোক যে দারুণ পটু তা নিঃসন্দেহ। তবে, দীপ্ত চৌধুরি কবে শফিউলের কাছে গেলেন, কবে তাকে সব বুঝিয়ে দিলেন, আর কীভাবে অতো অল্প সময়ের ব্যবধানে তা নিতান্ত বাধ্য ছাত্রের মতো গিলে নিয়ে শফিউল আমার সামনে এসে দাঁড়ি-কম-সহ সেগুলো উগরে দিলো–তা এক বিরাট আশ্চর্য! মনে হলো সেকেন্ডের ব্যবধানে সব ঘটে চলেছে। অথবা হতে পারে–ভাবনার বেড়াজালে আমিই হয়তো সময়ের ব্যাপারে বেখেয়াল হয়ে পড়েছি।

    [দুই]

    গাড়িতে আমার পাশে শফিউল বসা। লোকটার মুখ থেকে জর্দার বিকট গন্ধ আমার নাকে এসে লাগছে। আমার যে তাতে বেশ অস্বস্তি হচ্ছে তা বুঝতে পেরেও লোকটা কথা বলার সময় একেবারে আমার মুখের ওপরে এসে পড়ছে। কী বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার! সহ্যের সীমা পার হয়ে গেলে আমি মুখ ফুটে বললাম, ‘আপনি কি দয়া করে পান চিবানোটা বন্ধ করে দুটো কুলি করে আসবেন?’

    হে হে করে হেসে ফেলে লোকটা বললো, ‘আগে বলবেন না স্যার! তবে এই জিনিস কিন্তু ব্যাপক মজার! আমার ধারণা, যারা জর্দা দিয়ে পান খায় না, তারা দুনিয়ার এক বিরাট অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত। জীবনে একবার হলেও ট্রাই করবেন স্যার।’

    আমি কথাগুলো না শোনার ভান করে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। গাড়ি থামিয়ে শফিউল মুখ থেকে পানের চিবানো অংশটা ফেলে, বোতল থেকে চুকচুক করে পানি মুখে নিয়ে তা ফুস করে ছেড়ে দিলো কয়েকবার। তার কুলি-পর্ব শেষ হলে গাড়ি আবার চলতে আরম্ভ করলো।

    ‘স্যার, আপনি কিন্তু বেশ ভালো মানুষ। তবে, ভালো মানুষদের কপাল খারাপ থাকে। তারা জীবনে উন্নতি করতে পারে কম। তাদের ঠকানো সহজ, কষ্ট দেওয়া সহজ, আরও সহজ…’

    তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, আপনার কেন মনে হলো যে আমি ভালো মানুষ?

    ‘ভালো মানুষ না হলে কি আর নিজের হাতে ডায়মন্ডের নেকলেস কেনার সুযোগ ছাড়ে কেউ? এখানে যে বিরাট ধান্ধ করার জায়গা আছে, স্যার।’

    ‘স্যরি, আমি ঠিক বুঝতে পারিনি।’

    ‘খুব সহজ। আপনার আগে যারা এই পোস্টে ছিলো, তারা এমন সুযোগগুলো একেবারে লুফে নিয়ে নিতো। দেখা যেতো, তাদের তিনটে ডায়মন্ডের নেকলেস কিনতে দিলে, সেখান থেকে এক লাখ টাকা তাদের পকেটে চালান হয়ে গেছে। দোকানদারকে হালকা কিছু দিয়ে ওই হিসাবের একটা মেমোও তারা জোগাড় করে রাখত। আপনার ঠিক আগেরজন তো এভাবেই চাকরি খোয়ালো। হয়েছে কী, তাকে তিনটে ডায়মন্ডের নেকলেস কিনতে পাঠালেন বড় স্যার। লোকটা তিনটে ডায়মন্ড থেকে দেড় লাখ টাকা পকেটে পুরে নিলেন আরামসে। কিন্তু তাতে খায়েশ মিটল না। আরও পাবার নেশায় নতুন এক চাল চাললেন। স্যারকে এসে বললেন, নেকলেসগুলো এতো খাঁটি আর দামি–স্যারের দেওয়া টাকাতে কিছুতেই সব কেনা গেলো না। তাই, কী আর করা, নিজের পকেট থেকে বাকি টাকা পরিশোধ করে তাকে নেকলেসগুলোর দাম পরিশোধ করতে হলো। কিন্তু কপালে বিপদ থাকলে যা হয়! সেদিন স্যারের মন-মেজাজ এতো বেশি খারাপ ছিলো যে, বেশি দাম দিয়ে কিনবার কথা শুনে স্যার তো রেগেমেগে আগুন! বললেন, দাও, আমাকে এখনই জুয়েলার্সের ঠিকানা দাও। আমি নিজে গিয়ে ফেরত দিয়ে আসবো সেগুলো। কে বলেছে তোমাকে বাড়তি টাকা ঢালতে এগুলোর পেছনে?’

    শফিউলের পান খাওয়ার মতো বদভ্যাস থাকলেও লোকটা গল্প-কথক হিশেবে দুর্দান্ত! তার কাহিনি বর্ণনার ধারা দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। আমি মুগ্ধ শ্রোতার মতো করে বললাম, ‘তারপর?’

    ‘তারপর আর কী! বড় স্যার ঠিকানা চাইলে না দিয়ে কি পারা যায়? ঠিকানা নিয়ে বড় স্যার সোজা চলে গেলেন ওই নেকলেসের দোকানে। গিয়ে ডায়মন্ডের নেকলেস তিনটে ফিরিয়ে দিয়ে টাকা ফেরত চাইলেন। কিন্তু বেচারারা তো হতভম্ব! যতো টাকা দিয়ে বেচে নাই, তার বেশি ফেরত কীভাবে দেবে? মাঝখান থেকে ধরা পড়ে গেলেন স্যারের পিএস। অতি লোভে গাজন নষ্ট।’

    ‘তারপর কী হলো?’

    ‘অনেক ঝামেলা। লোকটাকে মামলা দিলেন বড় স্যার। কী জানি, এখনো হয়তো জেলের ঘানি টানছেন বসে বসে।’

    আমি অস্ফুটে বললাম, ‘আচ্ছা, এজন্যেই চৌধুরি সাহেব আমাকে নেকলেস কেনার ব্যাপারে ভয় দেখাচ্ছিলেন।’

    ‘কিছু বললেন স্যার?’

    ‘না, কিছু না। তবে একটা ব্যাপার মনে হলো। বড় স্যার কি সব সময় একসাথে তিনটে ডায়মন্ডের নেকলেসই কেনেন নাকি?’

    আমার এই কথা শুনে শফিউল আরেকবার হে হে করে হেসে উঠলো। হাসি থামিয়ে বললো, ‘সে আরেক কাহিনি স্যার। বড়লোকদের কাজ-কারবার তো, তাই একটু অন্যরকম।’

    গল্প-কথক হিশেবে শফিউল ইতোমধ্যেই আমার মনে জায়গা দখল করে নিয়েছে। তার মুখ থেকে এই তিনটে নেকলেসের রহস্য-গল্পটাও শোনার লোভ তাই সামলানো গেলো না।

    ‘অন্যরকম বলতে?’

    শফিউল আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘সে বড় আজগুবি গল্প স্যার। বড় স্যারের সব সময় তিনটে ডায়মন্ডের নেকলেসই লাগে। আমার চাকরি-জীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এর ব্যতিক্রম হতে দেখিনি কখনো।’

    ‘স্যারের মিসেস বোধহয় একসাথে তিনটে নেকলেস না হলে উপহার গ্রহণ করেন না, তাই।’

    ‘তা নয় স্যার। স্যারের মিসেস একটা নেকলেসই পায়। বাকি দুটোর একটা নেকলেস পায় স্যারের প্রেমিকা আফসানা ম্যাম।’

    আমি বিস্মিত চেহারায় বললাম, ‘প্রেমিকা? তার মানে?’

    ‘প্রেমিকা মানে বান্ধবী, স্যার। স্যারের অন্তরঙ্গ বান্ধবী, কিন্তু বউ নয়। বড়োলোকদের এমন কতো বান্ধবীই থাকে। এগুলো বড়োলোক সমাজের কালচার। এসব না হলে সেই সমাজকে বড়োলোক সমাজ বলা যায় না।’

    ‘আর পরের নেকলেসটা?’

    ‘ওটা আজকে মধুমিতা হলে যে পতিতা মেয়েটার সাথে স্যারের ডেট হবে, ওর জন্য। বড়োলোক মানুষ, পতিতাকেও ডায়মন্ডের নেকলেস উপহার দিতে এদের গায়ে লাগে না।’

    ‘কিন্তু ওখানে তো বিদেশি বায়ারদের সাথে স্যারের মিটিং হওয়ার কথা। আপনি ডেটের কথা বলছেন কীভাবে?’

    তৃতীয়বারের মতো হাসিতে ফেটে পড়লো শফিউল। একগাল হাসি মুখে ধরে রেখে সে বললো, ‘আমার চাকরি-জীবনের দশ বছর এখানে শেষ হতে চলল স্যার। এখানকার অলিগলি আমার চাইতে ভালো কি আপনি জানবেন? এ রকম বায়ারদের মিটিংগুলোতে একদল পতিতাকে হায়ার করা হয় বড়লোকদের সন্তুষ্টির জন্যে। মেয়ে আর মদ ছাড়া এদের আবার মিটিং হয় নাকি?’

    আমার মাথাটা ঝিমঝিম করতে লাগলো। মস্তিষ্কের কোষগুলোতে যেন দারুণ এক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। খুব ভালো হতো যদি শফিউলের কাছ থেকে এই গল্পটা না শুনতে চাইতাম।

    ‘তার মানে, তার এমন জঘন্য একটি কাজ সম্পন্ন করার জন্য যে নেকলেস ব্যবহার করা হবে, তা আমাকে বয়ে নিয়ে যেতে হবে মধুমিতা হলে?’

    ‘জি স্যার, আজকে ওটাই আপনার দায়িত্ব।’

    আমি চিৎকার করে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললাম। আমার এমন চিৎকারে হতভম্ব হয়ে গেলো শফিউল। আমি কী করতে যাচ্ছি তা হয়তো সে বুঝে উঠতে পারছে না।

    গাড়ি থেকে নেমে শফিউলকে বললাম, ‘এই জঘন্য গল্পটা না শুনলে যদিও মনটা শান্ত থাকত, তবুও সেটা আমাকে জানানোর জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার বড় স্যারকে বলবেন, আমি সেচ্ছায় তার চাকরি থেকে ইস্তফা দিলাম। একজন চরিত্রহীন নিকৃষ্ট লোকের পিএস হয়ে থাকার চাইতে হাতিরঝিলে থালা হাতে নিয়ে ভিক্ষে করাটা আমার কাছে অধিক সম্মানের।’

    গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিয়ে আমি হাঁটা ধরলাম। পেছন থেকে শফিউলের বলা কথাগুলো আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি, ‘বলেছিলাম স্যার, ভালো মানুষদের কপাল খারাপ থাকে, তারা জীবনে উন্নতি করতে পারে কম।’

    [তিন]

    সারাদিন আর বাসায় ফিরলাম না। বুড়িগঙ্গার অদূরে বসে, ঢেউয়ের উত্থান-পতন দেখতে দেখতে কাটিয়ে দিলাম পুরোটা বিকেল। সূর্যের শেষ রক্তিম আভাটুকুও যখন মিলিয়ে গেলো, তখন কেমন যেন শীত শীত অনুভব হলো। মুয়াজ্জিনের করুণ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো বাতাসে। মাগরিবের ওয়াক্ত হলো। প্রকৃতিজুড়ে একটা স্নিগ্ধ আবেশ ঘরে ফিরবার প্রস্তুতিকে আরও ত্বরান্বিত করার আস্কারা দিয়ে গেলো। লালবাগ কেল্লার পাশ ঘেঁষে বাজারের ভেতরে যে পুরাতন মসজিদটি আছে, তার দিকে মুসল্লীদের একটা জনস্রোত এগিয়ে চলেছে ধীর পায়ে। মসজিদমুখী সেই মিছিলে আমিও নিজেকে বিলীন করে দিলাম।

    সালাত শেষ করে জোর কদমে হেঁটে চলে এলাম জগন্নাথের মোড়। হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় জায়গাটা গমগম করছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম–ভিক্টোরিয়া পার্কের ওদিক থেকে, একটা ছোট্ট মেয়ে কিছু ফুলের মালা হাতে এগিয়ে আসছে। আমার কাছাকাছি এসেই সে বললো, ‘বাইয়া, শিউলি ফুলের মালা লইবেন?’

    পকেটের আমার সকরুণ অবস্থা! ফুলের মালা নিলে গাড়ি ভাড়া দিতে পারব না, গাড়ি ভাড়ার কথা ভাবলে ফুল নেওয়া হবে না। চরম দোটানায় শেষ পর্যন্ত ফুলের মালারই জিত হলো। আজ না-হয় ল্যাম্পপোস্টের আলো ধরে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাবো ঘরে। মেয়েটাকে বললাম, ‘কতো করে মালা?’

    ‘দশ ট্যাকা।’

    ‘কয়টা আছে তোমার কাছে?’

    ‘চাইট্টা।’

    ‘চারটাই দাও আমাকে। এই নাও চল্লিশ টাকা।’

    ফুলের মালাগুলো আমার হাতে দিয়ে, টাকাগুলো হাতের মুঠোয় পুরে মেয়েটা দিলো এক ভোঁ-দৌড়। আজ এতো তাড়াতাড়ি তার ছুটি! সে সম্ভবত বিশ্বাস করতে পারছে না। টাকাগুলো নেওয়ার সময় তার চোখ দুটো ঝলমল করছিল। মুখে সে কি তৃপ্তির হাসি! আচ্ছা, এটা কি সুখ নয়? এই যে অল্পের গল্প, এই গল্পে কি সুখ নেই?

    আমি ল্যাম্পপোস্টের আলো ধরে ধরে হাঁটছি। আজ আমারও ছুটি। একটা দোযখের আস্তানা থেকে মুক্তি মিলেছে। আমার হাতে শিউলি ফুলের চারটে মালা। আমার স্ত্রী রেবেকার জন্য। রেবেকা যখন দুআর খুলে আমার সম্মুখে এসে দাঁড়াবে, আলতো করে একটা মালা আমি তার খোঁপায় খুঁজে দেবো। আমি জানি সে খুব খুশি হবে। আনন্দ আর আহ্লাদে দৌড়ে সে আয়নার কাছে গিয়ে জানতে চাইবে, ‘আমাকে সুন্দর লাগছে না?’

    আমি বলব, ‘একটা ফুলের গায়ে চড়েছে অন্য একটা ফুল। কোন ফুলটাকে যে বেশি সুন্দর লাগছে সেটা নির্ণয় করা কঠিন। বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছি।’

    আমার কথায় লজ্জা পেয়ে রেবেকা একেবারে কুঁকড়ে যাবে।

    আমি তো ভীষণ সুখে আছি। একজীবনে সুখী হতে আর কী লাগে?

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএবার ভিন্ন কিছু হোক – আরিফ আজাদ
    Next Article প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ – ২ – আরিফ আজাদ

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }