Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অগোচরা – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এক পাতা গল্প123 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    অধ্যায় ১৩ – প্রতীক্ষা

    মুক্তি এত সহজে আসে না।

    নির্জন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে, সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে এমনটাই ভাবছি আমি।

    একেবারে শেষ মুহূর্তে ঘুমন্ত মনিকার ঘাড়টা মটকে দিতে গিয়ে থমকে গেছিলাম। কখনও এভাবে নিজহাতে কাউকে খুন করিনি-দূর থেকে, সবার অলক্ষ্যে, অগোচরে থেকে একটা রাইফেল দিয়ে গুলি করে মানুষ মেরেছি। ওভাবে যতটা সহজ, খালি হাতে কাজটা করা ঠিক ততটাই কঠিন।

    তাছাড়া মনিকার সঙ্গে আমার সম্পর্ক আছে। অনেকগুলো সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছি ওর সঙ্গে। একই শীর্ষসুখের অনুভূতি ভাগাভাগি করে নিয়েছি আমরা দুজন। ব্যাপারটা পুরোপুরি শারীরিক নয়, এরমধ্যে ভালোবাসাও আছে।

    কিন্তু বিশ্বাস নেই!

    মনিকাকে আমি বিশ্বাস করি না। অনেক চেষ্টা করেছি, পারিনি। ওকে আমি পুরোপুরি বুঝতেও পারি না। ও আমার কাছে গোলকধাঁধার মতো। সেই গোলকধাঁধায় ঢুকে ইতি উতি হেঁটে বেড়ালেও ওখান থেকে বের হতে পারিনি এখনও।

    ওর আদরমাখা চাহনি, উদ্দাম প্রেম আর আকুতি আমাকে বিভ্রমের মধ্যে ফেলে দেয়। এ-ও মনে হয়, ও কেবলই প্রেমের কাঙাল। এতদিন পর সঠিক মানুষটির দেখা পেয়েছে। মিলনের সময়গুলোতে আমি ওর প্রতি সুতীব্র মায়া অনুভব করি। সত্যি বলতে, তখন মনে হয় ও আমাকে ওর জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসে। কিন্তু মিলনপর্ব শেষ হলেই আমার মাথা হিসেব কষতে শুরু করে দেয়। নানার ধরণের সব হিসেব। সেই হিসেবের জটিল অঙ্ক যখন মাথাটা পুরোপুরি দখল করে ফেলে, মনিকার প্রেম-ভালোবাসার অঙ্ক মেলাতে পারি না আমি। মনে হয়, ভালোবাসার আড়ালে আমাকে দিয়ে স্বার্থ হাসিল করার একটি জাল বিছিয়েছে ও, সেই জাল থেকে আমাকে বের হতে হবে।

    মনিকা যদি আমাকে বিশ্বাস করতো, তাহলে কি পাশের ঘরে এতগুলো ডলার আর স্বর্ণ লুকিয়ে রাখার কথাটা আমার কাছ থেকে লুকাতো?

    এতদিনে আমি একটা সত্য জেনে গেছি, টাকা-পয়সা দিয়ে যাকে বিশ্বাস করা যায় না তাকে কোনো কিছু দিয়েই বিশ্বাস করা যায় না।

    আর বিশ্বাস ছাড়া কি ভালোবাসা হয়?

    গ্রীষ্মের এই ভোরে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে মনে হচ্ছে, সম্ভবত আরেকটা কারণেও খুনটা করতে পারিনি আমি। এই একটা খুন যদি আমাকে মুক্তি দিতো, সেটা করতে আমার হাত খুব বেশি কাঁপতো না। প্রথম খুনের পর থেকে খুব বেশি অনুশোচানা আমাকে পোড়ায়নি। আমি যে জঙ্গলে ঢুকে পড়েছি, সেখানে প্রতিটি খুন আমাকে বেঁচে থাকার আরেকটি সুযোগ এনে দেয়। ব্যাপারটাকে আমি টিকে থাকার সংগ্রাম হিসেবেই দেখি।

    পাশের ঘরে যে পরিমাণ সম্পদ আছে, সেটা আমাকে চিরকালের জন্য মুক্তি দিতে পারে, ওগুলো হতে পারে আমার অন্ধকার জগত থেকে বের হবার টিকেট। জীবনটা নতুন করে শুরু করতে, অতীতের কালো অধ্যায়কে পেছনে ফেলতে ওই পরিমাণ টাকা-পয়সা ভীষণ সাহায্য করবে।

    কিন্তু মনিকাকে হত্যা করলেও আমি মুক্তি পেতাম না। এই যক্ষের ধন এখান থেকে কীভাবে দেশে নিয়ে যাবো সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণাও নেই আমার।

    খুনটা না করে বিরাট বড় বাঁচা বেঁচে গেছি। মুক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষায়, ঝোঁকের মাথায় কাজটা করে ফেললে পস্তাতে হতো। এখন বুঝতে পারছি, মুক্তির জন্য আমাকে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে খুব বেশি দেরি করা যাবে না-যেকোনো সময় এই যক্ষের ধন সরিয়ে ফেলতে পারে মনিকা।

    পুব-আকাশে আলোর আভা। নতুন একটা দিন শুরু হতে যাচ্ছে, দ্বিতীয় সিগারেটটা শেষ করে আমি ফিরে গেলাম বেডরুমে। জানালার ভারি পর্দা ভেদ করে ভোরের নরম আলো ঢুকে পড়েছে, সেই আলোতে মনিকার ঘুমন্ত মুখটা দেখে একটু মায়া হলো আমার। শেষ মুহূর্তে যদি সিদ্ধান্ত না পাল্টাতাম, তাহলে এখন ও নিথর হয়ে পড়ে থাকতো। এই যে ধীরে ধীরে ওর বুক ওঠানামা করছে, সেটা স্থির হয়ে যেতো, শীতল হয়ে উঠতো ওর পেলব শরীর। কিছুক্ষণ পর সেই হিমশীতল দেহ নীলচে হতে শুরু করতো, আর অচিরেই কালচে হয়ে যেতো সেটা। তখন নিশ্চয়ই ওকে এতটা সুন্দর দেখাতো না। তবে কুৎসিত দেখাতো কি না, জানি না।

    সম্ভবত মৃত মানুষকে কখনও কুৎসিত দেখায় না-করুণ দেখায়।

    মনিকার ঘুমন্ত মুখে মায়া থাকলেও সেটা মোমেনার মতো সুতীব্র মনে হলো না আমার কাছে।

    অনেকদিন পর ওর কথা মনে পড়ে গেল। ও এখন কী করে? বিয়ে করেছে? আমার দেয়া সামান্য টাকা কি ওকে ভুল পথ থেকে সরে আসতে সাহায্য করেছিল? নাকি যে পঙ্কিল চক্রে ঢুকে পড়েছিল, তলিয়ে গেছে সেখানে?

    পরিহাসের হাসি ফুটে উঠল আমার ঠোঁটে। এদিকে আমি নিজেই পড়ে আছি এক পঙ্কিল আবর্তে!

    মোমেনার সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়েছিল দেশ ছাড়ার অনেক আগে। হয়তো এ জীবনে আর কখনও দেখা হবে না ওর সঙ্গে। ঐ মায়াভরা মুখটা আমার স্মৃতিতেই রয়ে যাবে চিরটাকাল।

    সত্যিটা হলো, আমরা কেউ-ই কারোর প্রতীক্ষায় নেই।

    অধ্যায় ১৪ – সিটি অব জয়

    কলকাতায় আসার আগেই মনিকা বলেছিল বিধুদা কী করে ওকে বিয়ে করেছে, দাম্পত্য জীবনে কীভাবে অত্যাচার- নির্যাতন করেছে। এখানে আসার পর ও আমার কথাও জানতে চেয়েছিল।

    আমি ওকে বলেছি, কী করে রাতারাতি শুটার হয়ে গেছিলাম, বাদ পড়ে গেছিলাম এক মন্ত্রীর কারণে, তলিয়ে গেছিলাম হতাশা আর নেশার জগতে। আর কী করে ঘরছাড়া হবার পর সজল ভাই আমাকে সুকৌশলে এ পথে নিয়ে আসে।

    তবে আমি জানতাম, সজলের সঙ্গে মনিকার সম্পর্ক ছিল, অন্তরঙ্গতা ছিল, তাই ওকে বলিনি আমার হাতেই খুন হয়েছে সে। ও জানে সজলকে মেরেছে নাটকা গেসু।

    আমার গল্পটা শোনার পর মনিকা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। অশ্রুসজল চোখে দু’ হাতে আমার মুখটা ধরলে অপ্রস্তুত হয়ে গেছিলাম আমি।

    ঐদিন রাতে ঘুমানোর সময় আমি যখন ড্রইংরুমে চলে যেতে উদ্যত হই, মনিকা তখন বলেছিল, একা একা ঘুমাতে ভয় করে ওর, আর এখানে যেহেতু আমরা ছাড়া কেউ নেই, এক বিছানাতেই ঘুমাতে পারি!

    একটু অস্বস্তি হলেও আমি কিছু বলিনি। আমরা পাশাপাশি শুয়ে থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করি। এক পর্যায়ে মনিকা আমাকে বলে, তাকে যেন বৌদি বলে না ডাকি। আমরা যেহেতু সমবয়সি, তাকে নাম ধরে ডাকতে পারি আমি।

    এটা ছিল আমাদের একে অন্যের কাছে আসার একটি ধাপ।

    ঐদিন রাতে আমাদের কারোরই ঘুম আসছিল না। ফ্রিজ থেকে একটা হুইস্কির বোতল নিয়ে আসে মনিকা, আমরা একসঙ্গে পান করি। নিজেদের জীবনের নির্মল আর নির্দোষ গল্পগুলো করার সময় কখনও হেসে উঠি, কখনও বা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। এই করতে করতে আমরা কখন যে ঘনিষ্ঠ হয়ে যাই, টেরই পাইনি।

    আমার মনে হয়, মদের প্রভাবে এটা ঘটেনি। সম্ভবত আমরা দুজনেই এটা চাচ্ছিলাম। মদ হয়তো আমাদের জড়তা কাটাতে সাহায্য করেছে। কিংবা মাতলামিকে আমরা দুজনেই অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছি!

    মনিকা দেখতে খুবই সুন্দর। আকর্ষণীয়। এর আগে কখনও কোনো মেয়ের সঙ্গে এতটা ঘনিষ্ঠ হইনি আমি। মোমেনার সঙ্গে সারা রাত গল্প করে কাটালেও তার প্রতি মায়া ছাড়া আর কিছুই অনুভব করিনি।

    কিন্তু এ কথা মনিকার বেলায় খাটে না। ওর প্রতি আমার মায়া যেমন আছে, তার চেয়ে বেশি আছে দুর্নিবার আকর্ষণ।

    পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মনিকা শাওয়ার নিয়ে পাশের ঘরে পূজা করছে। ও একদম স্বাভাবিক ছিল। ধন্দে পড়ে গেছিলাম আমি। মনে হয়েছিল, আদতে রাতের বেলায় সেরকম কিছু হয়নি! পুরোটাই ছিল মধুর কোনো স্বপ্ন!

    ঐদিন দুপুরের পর মনিকা বেক বাগানে ওর দাদার কাছে চলে যায়, ফিরে আসে পরদিন। আবারো আমরা মদ্য পান করি সেই রাতে। ও আর আমি সিগারেটও খেয়েছিলাম। তারপর আবারো মিলিত হই আমরা। বেশ কয়েক বার।

    আমাকে পাবার জন্য ওর তীব্র আকুতি এলোমেলো করে দেয় আমাকে। আমি ওর সঙ্গে মিলিত হতে পছন্দ করি। সত্যি

    বলতে, এমন অত্যুঙ্গ প্রেম-ভালোবাসার সঙ্গে এর আগে আমার পরিচয় ছিল না। একে অন্যকে পাবার উদগ্র বাসনা… দুজন দুজনকে নিয়ে মেতে ওঠা…তারপর তীব্রভাবে নিঃশেষিত হওয়া-এ এক অনির্বচনীয় সুখ!

    আমাদের এই সম্পর্ক শরীরের বাইরেও বিস্তার লাভ করে, আমরা একে অপরের বন্ধু হয়ে উঠি। যেন আমরা দুজন একই পথের পথিক। জীবনের বাকি পথটুকু একসঙ্গে চলা-ই আমাদের নিয়তি।

    এক রাতে মিলনের সময় মনিকা কাঁদতে কাঁদতে বলে, ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। ভালোবাসার আশ্রয়ে থাকতে চায়। আমিও সেই আবেগে ভেসে যাই, ওকে ভালোবাসার কথা জানাই তীব্র আকুতির সাথে।

    মনিকা আমাকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার নানান জায়গায় ঘুরে দেখায়, এ শহরটা হাতের তালুর মতোই চেনে। ওকে দেখে মনে হয় ও এখানেই জন্মেছে, বেড়ে উঠেছে। কলকাতা বেশ বড় শহর, অন্তত আমার মতো নতুন যারা আসে তাদের কাছে এটা সত্যি সত্যি এক মহানগর।

    মনিকা আমাকে নিয়ে ট্যাক্সি আর মেট্রো’তে করে ঘুরে বেড়িয়েছে কলকাতার এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত। কতো জায়গা যে গেছি, ইয়ত্তা নেই। আমরা এক সঙ্গে সিনেমা দেখেছি, রেস্টুরেন্টে খেয়েছি, শপিং করেছি।

    ঢাকার মতো এখানেও নতুন আর পুরাতনের বিভেদ রেখা আছে। পুরনো কলকাতার সঙ্গে পুরান ঢাকার বেশ মিল আছে। মির্জা গালিব, মারকুইজ কিংবা কিড স্ট্রিটে এসে ভিরমি খেয়েছিলাম আমি। প্রচুর লোকজন, আর তাদের অনেককে দেখে আমার স্বদেশি বলেই মনে হয়েছিল। মনিকা বলেছে, আমার এই মনে হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক-বাংলাদেশ থেকে যারা কলকাতায় আসে তাদের বেশিরভাগ এখানেই ওঠে। পথেঘাটে সবখানে ওদের দেখা মেলে।

    ঢাকার মতো এখানেও রাধুনী আর কস্তুরী নামে রেস্টুরেন্ট আছে। মনিকা আর আমি ওসব জায়গাতেও লাঞ্চ আর ডিনার করেছি। ধীরগতির ট্রাম দেখে চোখ জুড়িয়েছিল। শখ করে একবার ট্রামে চড়েওছিলাম, কিন্তু ওঠার পরই মনে হয়েছে গতিময় যুগের সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ এই জিনিস এখন কেবলই ঐতিহ্যের অংশ।

    বিধান নগরের এই ফ্ল্যাটে মনিকা মাঝেমধ্যে রাতে থাকে। ওর বৃদ্ধ আর অসুস্থ বাবা-মা আছে দাদার বাসায়। দাদার সঙ্গে ওর বৌদির ঝামেলা চলছে, তারা আর একসঙ্গে থাকে না এখন, বাবা-মাকে দেখভাল করতে হয় ওকেই। সেজন্যে বেশিরভাগ সময় দিনে এসে সন্ধ্যার দিকে চলে যায়।

    একা থাকতে আমি অভ্যস্ত হলেও অচেনা এই শহরে একা একা ভালো লাগে না। মনিকার সঙ্গ পাবার জন্য লালায়িত থাকি আমি। ও যেদিন আসে না ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে পড়ি, কলকাতার পথেঘাটে ঘুরে বেড়াই নিঃশঙ্ক চিত্তে। মনে এই ভয় থাকে না, গোপন কিংবা অজানা কোনো শত্রু দেখে ফেলল কি না।

    সত্যি বলতে, কলকাতাকে আমার বিদেশ বলেও মনে হয় না। এটাও বাঙালিদের শহর। শুনেছি শহরটাকে সিটি অব জয় নামেও ডাকা হয়। কখনও কখনও আমি এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারি না।

    অধ্যায় ১৫ – অপরেশ

    কলকাতায় আমি অপরেশ।

    মনিকা আমাকে এ নামটা দিয়েছে। ওর পরিবারের ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষ জানে এ নামে ঢাকার একজনের সঙ্গে ওর সম্পর্ক হয়েছে। সেই ছেলে এখন কলকাতাতেই থাকে। মুসলিম শুনলে ওর পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বিশেষ করে ওর বদ্দা মেনে নেবে না, তাই আমি অপরেশ হয়ে গেছি।

    নামে কী যায় আসে!

    কিন্তু মনিকা অমাকে পুরো নাম দেয়নি, শুধুই অপরেশ- আগে পিছে কিচ্ছু নেই।

    এখানে আমি মুখ খুললেই লোকজন বুঝে যায় ওপাড় বাংলা থেকে এসেছি। তবে মনিকা একদম এখানকার মানুষজনের মতো করেই কথা বলতে পারে। একদিন একা একা ঘুরতে বের হয়ে টের পেলাম, আমার বানোয়াট নামে বিরাট বড় একটা খামতি আছে।

    হাঁটতে হাঁটতে এক দোকানে গিয়ে সিগারেট চাইলে দোকানি আমার উচ্চারণ শুনে জানতে চায়, কোথায় আমার দেশের বাড়ি। ঢাকার কথা শুনে অবাক হয় লোকটা।

    “আমার ঠাকুদাও ঢাকা জেলার লোক ছিলেন, পার্টিসানের সময় চলে এসছেন এখানে,” খুব আন্তরিকভাবে বলেছিল। “ঢাকার বিক্রমপুরে এখনও ঠাকুর্দার দুই দিদির পরিবার আছে।”

    বিক্রমপুর যে এখন ঢাকা জেলার মধ্যে নেই, এরশাদ সরকার আলাদা জেলা করে ফেলেছে, তার নামটারও মুসলমানি করে মুন্সিগঞ্জ বানিয়ে দিয়েছে, সে কথা আর বলিনি তাকে।

    “তা, দাদার নামটা কী?”

    শুধু অপরেশ শুনে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেনি দোকানি।

    “অপরেশ কী?”

    চট করে মনে পড়ে গেছিল মনিকার বিয়ের আগের টাইটেলটার কথা। সেটা শুনে দোকানিও খুশি হয়েছিল। সম্ভবত সে-ও নিচুজাতের। এখানকার লোকজন পদবী শুনে কী করে বুঝে যায় কে ব্রাহ্মণ, কে নমশূদ্র আর কে কায়স্থ, আমি এখনও সেটা বুঝে উঠতে পারিনি।

    মনিকা আমাকে কেবল নাম দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, বলেছে আঁধার–কার্ডও করিয়ে দেবে। এই কার্ড থাকলে আমি এখানে স্থায়ীভাবে থাকতে পারবো, হয়ে যাবো এখানকারই একজন।

    কিন্তু আমি কি এই শহরে থেকে যাবো আজীবন?

    আমার মধ্যে এ নিয়ে দ্বিধা আছে। প্রথমদিকে মনে হয়েছিল এখানে এসে নিরাপদে থাকতে পারবো। কিন্তু দুয়েক সপ্তাহ পরই বুঝতে পারি, পাকাপোক্তভাবে থাকা বোধহয় আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। যখনই ভাবি এখানে আমি থেকে যাবো, বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে।

    অল্প কদিনেই পুরান ঢাকার অভাব অনুভব করতে শুরু করে দিয়েছি। হাস্যকর শোনালেও সত্যি-ঐ দীনহীন, ঘিঞ্জি আর নোংরা শহরটা আমাকে টানে। মনে হয় সবকিছু ফেলে এসেছি সেখানে! যদিও আমার জন্য সেটা এখনও পুরোপুরি নিরাপদ কি না জানি না। আমি এও জানি না, ওখানে আমার জন্য কী বিপদ অপেক্ষা করছে, ওঁৎ পেতে আছে কোন শত্রু।

    যেদিন মনিকা আমার সঙ্গে রাতে থাকে সেদিন খুব সকালে উঠে চলে যায় বেক বাগানে ওর দাদার কাছে। আমি তখন হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার মোড়ের কাছে এসে স্ট্রিটফুড দিয়ে নাস্তা সেরে নেই।

    অন্য অনেকদিনের মতো বাইরে নাস্তা সেরে ভরপেটে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে হাঁটতে বেলেঘাটা নামক এক জায়গায় চলে এলাম। ওখানকার সিটি রোড নামের এক জায়গায় এসে টের পেলাম গরম খুব বেশি পড়েছে। কলকাতার গ্রীষ্মকাল ঢাকার চেয়েও বেশি প্রখর। এই গরম আমার শরীরে হালকা জ্বলুনি ধরিয়ে দেয়। ভাবলাম, আজকের মতো ঘোরাফেরা শেষ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ফ্ল্যাটে ফিরে যাই। ফিরে আসার পথে একটা ওষুধের দোকান দেখে থামলাম আমি। এই ভর দুপুরে আমার বয়সি এক দোকানি নিজের চাপদাড়িতে হাত বুলিয়ে অলস সময় পার করছে।

    এখনও আমি কনডম কিনতে গেলে ইতস্তত বোধ করি, তাই সব সময় এরকম নির্জন দোকানই বেছে নেই। কিন্তু এই দোকানির কাছে এই জিনিস চাইবার পর সে আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল চোখে চেয়ে রইলো। খুবই অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেলাম আমি। দোকানিকে মনে করিয়ে দিলাম, দুই প্যাকেট কনডম চেয়েছিলাম তার কাছে।

    “তুই আমারে চিনবার পারোস নাই?!” বিস্মিত কণ্ঠে বলে উঠল ছেলেটা।

    পুরোপুরি ভড়কে গেলাম। বলা ভালো, বজ্রাহত হলাম আমি।

    অধ্যায় ১৬ – ছোট্ট এই দুনিয়া

    “আমি অজয়!”

    দোকানির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম কয়েক মুহূর্ত। তারপরই স্মৃতির ঝাঁপি থেকে লাফ দিয়ে জীবন্ত কিছু বের হয়ে এলো। বিশ্বাস করতেও কষ্ট হলো, আমার হারিয়ে যাওয়া বন্ধু অজয়ের সঙ্গে এভাবে কলকাতা শহরে দেখা হয়ে যাবে।

    অজয় আর আমি একসঙ্গে স্কুলে পড়েছি। ও আমার পাশের মহলা শ্যামবাজারে থাকতো। এসএসসি দেবার পর আমরা একই কলেজে ভর্তিও হয়েছিলাম, কিন্তু একদিন জানতে পারলাম ওরা সপরিবারে দেশ ছেড়েছে চিরতরের জন্য চলে গেছে কলকাতায়।

    ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙা হলে উপমহাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা। বাংলাদেশেও হয়েছে, তবে সংখ্যালঘুদের উপরে একতরফা আক্রমণকে দাঙ্গা বলা যায় কি না সন্দেহ আছে আমার।

    এই গোণ্ডগোল থামতেই অনেকের মতো অজয়রাও সপরিবারে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে চিরকালের জন্য দেশ ছাড়ার আগে অজয় আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। সত্যি বলতে, কোনো বন্ধুর সঙ্গেই দেখা করে বিদায় জানাতে আসেনি ও। এই খবরটা পেয়েছিলাম ওর এক প্রতিবেশির কাছ থেকে।

    অনেকদিন পর দেখা হয়ে গেল অজয়ের সঙ্গে। ওর নরম- সরম মুখে এখন ঘন চাপদাড়ি। মাথার ঝাঁকড়া চুলগুলো ছোট ছোট করে ছাটা। চেহারা বেশ মলিন। গায়ের রঙও কিছুটা কালচে হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য আর আগের মতো নেই। পরনে জামা-কাপড় এতটাই সাদামাটা যে, ওকে দেখে আমি চিনতে পারিনি।

    অনেক কথা হলো ওর সঙ্গে। শুরুতেই জানতে চাইলো আমি এখানে কেন। তাকে জানালাম, রাজনৈতিক কারণে দেশ ছেড়েছি। বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা অনেক মামলা মোকদ্দমা দিয়েছে আমার নামে। দেশে থাকলে জেলে পচে মরতে হতো।

    অজয় এটা বিনাপ্রশ্নেই বিশ্বাস করে নিলো। বাংলাদেশে যে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মিদের নামে মিথ্যা মামলা দেবার ঐতিহ্য আছে, সেটা ওর অজানা নয়।

    “মির্জা গালিব স্ট্রিটের দিকে গেলে পুরান ঢাকার এমন অনেকরে দেখি,” মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বলল। “কয়েক দিন আগে মাউড়া হামিদের লগে কস্তুরীর সামনে দেখা হইছিল…তারও একই কেস।”

    আমি এই হামিদকে চিনি, দুয়েকবার দেখেছিও কিন্তু আমার সঙ্গে তার পরিচয় নেই। যতোটুকু জানি, সাতচল্লিশে তার পরিবার বিহার থেকে ঢাকায় চলে আসে। হামিদের মা পুরান ঢাকার মেয়ে। তবে তাকে সম্ভবত পিতৃভূমির জন্যে মাউড়া বলা হয় না। পুরান ঢাকায় এক মহল্লায় একাধিক নামের মানুষ থাকলে তাদেরকে আলাদা করে চিহ্নিত করার জন্য বিচিত্র সব টাইটেল বসে যায় নামের আগে পরে। হামিদের বেলায়ও তাই হয়েছে-আরেকজন হামিদ আগে ওই এলাকায় ছিল।

    “হামিদ ভাইয়ের লগে এইখানকার এক এমএলএ’র ভালো খাতির আছে,” বলল অজয়। “আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেকের লগেও তার ওঠাবসা…তুই কবে থিকা পলিটিক্সে ঢুকলি? আগে তো করতি না।”

    তাকে জানালাম, এইচএসসি পাশ করে জগন্নাথে ভর্তি হবার পরই রাজনীতি করতে শুরু করি। অজয় দেশ ছাড়ার পরে আমি শুটিংয়ে জড়িয়ে গেছিলাম, ফলে আমার জীবনের এই সংক্ষিপ্ত পর্বটি ওর একদমই অজানা। এরমধ্যে ও আর দেশে যায়নি। দেশের এমন কারোর সঙ্গে দেখাও হয়নি যে আমার এই অধ্যায়টি সম্পর্কে জানতে পারবে।

    অতীত স্মৃতি আর অনেক কথার ভিড়ে অজয় ভুলে গেল আমি কী কিনতে এসেছিলাম। আমার জন্য সেটা স্বস্তিদায়কই বটে, নইলে এই প্রশ্নের জবাবে চট করে মিথ্যে বলতে হিমশিম খেতাম।

    অজয় জানালো এই ওষুধের দোকানটি ওর দাদা সুজয়দার, পুরান ঢাকায় ওদের বাড়িটা বিক্রি করে কলকাতায় এসে এই ব্যবসাটা দিয়েছেন।

    “কমিশনারের ভাই আমাগো ঠকাইছে,” আক্ষেপ করে বলল অজয়। “বহুত কম দাম দিছে…নাইলে আইজকা এইখানে একটা জায়গাও কিনবার পারতাম…ভাড়া বাড়িতে আর থাকা লাগতো না আমাগো।”

    একটা ব্যাপার আমার মাথায় উঁকি দিলো এ সময়, কিন্তু ঠিক করলাম, আরেকদিন সেটা জানতে চাইবো ওর কাছ থেকে।

    ওদের ওষুধের দোকানটা দেখে মনে হলো না খুব ভালো অবস্থায় আছে। আসবাবগুলো কেমন মলিন, তাকগুলো অনেকটাই ফাঁকা।

    “এই বিজনেসে অনেক ট্যাকা লাগে। একটা ফ্রিজ কিনা উচিত…এসিও লাগানো দরকার,” বলল অজয়। “ঠিকঠাক মালও তুলবার পারি না। বিরাট ফ্যামিলি…আয়রোজগার সব খরচ হইয়া যায়, পুঁজি কইখন আসবো?”

    ওর মুখের দিকে তাকালাম। চাপদাড়িটাকে আর স্টাইল বলে মনে হলো না, মনে হলো ওটা অভাব-অনটনের চিহ্ন। ঢাকায় থাকতে অজয় সব সময় ফিটফাট হয়ে চলতো। খুব দামি পোশাক না পরলেও পরিপাটী ছিল। সব সময় মুখে লেগে থাকতো স্মিত হাসি। এখন সেই মুখটাও কেমন শুকনো।

    খুব ভালো ছবি আঁকতো ও। এখনও সেই অভ্যেস আছি কি না জানতে চাইলাম।

    “আঁকাআঁকি চাঙ্গে উঠছে,” দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল। “এই দোকানে সময় দিতে হয় সকাল থিকা রাইত পর্যন্ত। দাদায় তো একটা পার্ট টাইম করে। দেখোস না, কোনো কর্মচারি নাই, আমি একলাই চালাই।”

    বুঝতে পারলাম, দেশ পাল্টে জীবনের নিরাপত্তা পেলেও আর্থিক নিরাপত্তা এখনও ওদের কাছে অধরাই রয়ে গেছে।

    অজয় বিয়ে করেছে কি না সেটা আর জিজ্ঞেস করলাম না-বিয়ে থেকে কনডম প্রসঙ্গ চলে আসতে পারে এই ভয়ে।

    “এইখানে নিজেরে খুব আলগা লাগে,” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল আমার বন্ধু।

    ওর অবস্থাটা আমি ভালোমতোই বুঝতে পারলাম। এ কয়দিনে আমার নিজেকেই এখানে আলগা আর অযাচিত মানুষ বলে মনে হয়।

    সম্ভবত ভর দুপুর বলে দোকানে খুব বেশি কাস্টমার এলো না। আমরা একসঙ্গে বসে সিগারেট খেলাম, গল্প করলাম। মনে পড়ে গেল, ক্লাস এইটে ওঠার পর আমাদের মধ্যে এই অজয়-ই প্রথম সিগারেট ধরেছিল। তারপর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দিন স্কুলের পুরনো ভবনের ছাদে নিয়ে গিয়ে আমাদের তিন- চারজনকে দুটো সিগারেট দিয়েছিল। আমরা সেই সিগারেটে টান দিয়ে নিজেদেরকে কতো বড়ই না ভেবেছিলাম সেদিন।

    অনেকক্ষণ কথা বলার পর ক্ষিদে লেগে গেল, দোকানের শাটার ফেলে কাছের একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম আমরা।

    বিকেলের আগে ওখান থেকে চলে আসার সময় শেষ একটা সিগারেট ধরালাম, পুরনো দিনের মতো ভাগ করেই খেলাম সেটা।

    “উঠছোস কই?…হোটেলে?”

    অজয়কে জানালাম, আপাতত বিধান নগরে পরিচিত একজনের বাসায় উঠেছি।

    “কয়দিন থাকবি এইখানে?”

    কাঁধ তুললাম আমি। এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই আমার! “দ্যাশের কী অবস্থা!” আক্ষেপে বলল ও। “যদ্দিন আছোস রোজ আসিস…আড্ডা দিমু দুইজনে।” চলে আসার সময় দুই প্যাকেট কনডম ধরিয়ে দিলো আমার হাতে। “…ট্যাকা দিতে হইবো না।”

    ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম আমি। হয়তো ওষুধের দোকান চালায় বলেই এসব বিষয় সহজভাবে নিতে শিখে গেছে। চুপচাপ পকেটে ভরে ফেললাম প্যাকেট দুটো।

    চলে আসার আগে আমাকে জড়িয়ে ধরলো অজয়। মিথ্যে বলবো না, আমিও আবেগতাড়িত হয়ে পড়লাম।

    মায়ার মতো আবেগ অতোটা খারাপ নয়। এটা একধরণের নিষ্কাশনের কাজ করে!

    ফ্ল্যাটে ফিরে আসার পথে ভাবলাম, লোকে তাহলে ভুল বলে না-দুনিয়াটা আসলেই ছোট।

    অধ্যায় ১৭ – যক্ষের ধন

    বিধুদা কী পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছিল সে ব্যাপারে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। কথায় কথায় নাটকা গেসু একবার বলেছিল, দাদা অনেক টাকার মালিক। কিন্তু সেই অনেকটা আসলে কতো, তখন বুঝিনি। এখানে আসার পর টের পেলাম, বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছিল দাদা, এর সবটাই কামিয়েছে অপরাধ জগত থেকে।

    দৃশ্যত বিধুদার কোনো ব্যবসা ছিল না। জীবনে একদিনের জন্যেও কাজ করেনি কোথাও, তারপরও এ দেশের অনেক রাজনীতিকের মতো সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছিল।

    মনিকার সঙ্গে এখানে যখন প্রথম আসি তখন আমি অবাক হয়েছিলাম কেবল এটা জেনে যে. কলকাতা মহানগরীর এরকম অভিজাত এলাকায় বিধুদা নিজের স্ত্রীর নামে একটা ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছে।

    এখানে আসার পর এক রাতে ঘুম ভেঙে যাবার পর দেখি মনিকা বিছানায় নেই। প্রথমে ভেবেছিলাম বাথরুমে গেছে, পরে খুঁটখাঁট শব্দ শুনে উঠে বসি। ঘর থেকে বের হয়ে দেখি পাশের খালি ঘরটায় আলো জ্বলছে। ওই ঘরটার দরজার উপরে আমারো ‘ওম’ প্রতীক লাগানো। ওটা ওর পূজোর ঘর। কিন্তু এত রাতে মনিকা ওখানে কী করে?

    পরদিন সকালে ও চলে গেলে সেই ঘরের দরজাটা বন্ধ দেখতে পাই। আমি জানতাম না, ওই ঘরের দরজা সব সময় বন্ধ থাকে।

    দুদিন পর মনিকা এলো, রাতে থেকে গেল। সকালে ঘুম থেকে উঠে ও যখন বাথরুমে গেল স্নান করতে, সেই সুযোগে আমি ওর ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে চাবির গোছাটা নিয়ে নেই। মোট চারটা চাবি ছিল। আমি জানতাম, দুটো চাবি এই ফ্ল্যাটের মেইন দরজা আর শোবার ঘরের…বাকি দুটো চাবি এক টুকরো সাবানের উপর চেপে ধরে ছাপ নিয়ে নেই।

    মনিকা চলে যাবার পর আমি বাইরে গিয়ে নাস্তা করে একটা চাবি বানানোর দোকান খুঁজে বের করি। সাবানের ছাপদুটো থেকে কারিগর দুটো চাবি বানিয়ে দেয় আমাকে। একটা চাবি দিয়ে ঠাকুর ঘরে ঢুকে বুঝতে পারি না অন্য চাবিটা দিয়ে কী খুলবো।

    ঘরের এককোণে নক্সা করা কাঠের তৈরি ছোট্ট একটা মন্দির-ঘর। সেই ঘরের মাঝখানে রাখা বংশীবাদক কৃষ্ণ আর রাধার দুটো মূর্তি। ওদের নিচে ছোট ছোট আরো কিছু দেব- দেবীর মূর্তিও আছে। আরো আছে প্রদীপ আর ধূপের পাত্র। মন্দির ঘরের পাশে কিছু ধর্মিয় ছবির ফ্রেমও রাখা

    হতাশ হয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করতে যাবো যখন, তখনই কিছু একটা চোখে পড়ে আমার-কাঠের তৈরি খাঁজকাটা আর নক্সা করা মন্দির-ঘরটা সামান্য একটু সরে আছে-দেয়ালের সঙ্গে পুরোপুরি সমান্তরালে নেই। আর মন্দির-ঘরটার বেইজ অনেক পুরু, প্রায় এক ফুটের মতো।

    রাধা-কৃষ্ণের মূর্তিসহ সবকিছু সেখান থেকে সরিয়ে মেঝেতে রাখলাম। মন্দির-ঘরটা একদিকে কাত করতেই বেইজের নিচে চাবি ঢোকানোর একটা ছিদ্র খুঁজে পেলাম আমি। লকটা খুলে ফেলতেই বেরিয়ে এলো চোরা একটা কুঠুরি, আর সেখানে সযত্নে রাখা আছে কতোগুলো আমেরিকান ডলারের বান্ডিল আর স্বর্ণের বার!

    বিস্ময়ে থ বনে গেলাম আমি।

    অল্প জায়গায় বিপুল ধন-সম্পদ লুকিয়ে রাখার জন্যই ডলার আর স্বর্ণ হিসেবে রেখেছে মনিকা।

    অধ্যায় ১৮ – হুন্ডি

    অজয়ের সঙ্গে দেখা হবার পর থেকে প্রায় প্রতিদিন বিকেলে আমি ওর ওষুধের দোকানে গিয়ে আড্ডা মারতে শুরু করলাম। এতে করে আমার অফুরন্ত সময় কিছুটা হলেও কেটে যেতে লাগলো।

    অবিশ্বাস থেকে কিংবা অজ্ঞাত কোনো কারণে মনিকাকে আমি অজয়ের কথা বলিনি। ও একদিন হুট করে ফ্ল্যাটে এসে আমাকে না পেয়ে একটু অবাক হয়েছিল। এমনি আশেপাশে ঘুরে বেড়াই-এই অর্ধসত্যটা বলে ওকে সন্তুষ্ট করেছিলাম আমি।

    আড্ডায় স্কুল জীবনের ঘটনাগুলো মনে করে আমি আর অজয় খুব মজা পাই। পুরনো স্মৃতি অক্ষয়, রোমন্থনে এর ঔজ্জ্বল্য বাড়ে।

    একদিন সুযোগ বুঝে অজয়ের কাছে জানতে চাইলাম, ঢাকার বাড়িটা বিক্রি করে টাকাগুলো ওরা কলকাতায় কীভাবে নিয়ে এসেছে?

    “লিগ্যালি তো আনা যায় না, হুন্ডি কইরা নিয়া আসছে বদ্দা,” বলল অজয়।

    এই হুন্ডি জিনিসটা কী, কিভাবে কাজ করে, আমি তখনও জানি না। ওকে বলতেই বিস্তারিত বলল আমাকে :

    ঢাকার একজন হুন্ডি ব্যবসায়ীকে টাকা দেবার পর কলকাতায় থাকা তার একজন পার্টনার সেই টাকা দিয়ে দেয়। এই ট্রাঙ্কজাকশনের জন্য কিছু টাকা কমিশন দিতে হয়—জলবৎ তরল জিনিস। এভাবেই বিশ্বাস আর আস্থার উপরে ভর করে লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি টাকা আনা-নেয়া করা হয়।

    জানতে চাইলাম, তার পরিচিত বিশ্বস্ত কোনো হুন্ডি ব্যবসায়ি আছে কি না।

    “বদ্দা যার মাধ্যমে ট্যাকা আনছে, তারে চিনি,” অজয় জানালো আমাকে। “আমাগো পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের শঙ্কর মাধব। আর এইখানে তার পার্টনার শিবরাম।”

    কতো টাকা পর্যন্ত এভাবে আনা নেয়া করা যায়?

    অজয় এ কথা শুনে গাল চুলকে বলল, যতো খুশি টাকা হুন্ডি করা যায়, কিন্তু টাকার অঙ্ক বেশি হলে এ কাজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। যদিও সচরাচর বেঈমানির ঘটনা ঘটে না, তবে পরিমাণ বেশি হলে ঝুঁকি থাকে। ব্যবসায়িক সুনামের পরোয়া না করে টাকাগুলো হজম করে ফেললে কিছু করার থাকে না। ভুলে গেলে চলবে না, এটা একেবারেই অবৈধ লেনদেন।

    এ কথা শুনে চুপসে গেলাম আমি।

    “সমস্যা কী?” বলল অজয়। “বেশি ট্যাকা হইলে ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা হুন্ডি করবি।”

    কথাটা আমার মনে ধরলো।

    অধ্যায় ১৯ – চক্কর

    এক বিকেলে মনিকা ফ্ল্যাটে এসে জানালো, ওর বদ্দা আমাকে দেখতে চায়, কথা বলতে চায়। আমার আঁধারকার্ডটার ব্যাপারেও কথা বলবে।

    মনিকা বদ্দা আমার কথা আংশিক জানে। আমি অপরেশ, ঢাকার ছেলে। বিধুদার লোকজন আমাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে, নিরাপত্তার কারণে কলকাতায় চলে এসেছি। মনিকা আমাকে বিয়ে করে এখানে স্থায়ী করতে চাইছে।

    এবার আমার নতুন নামটার পূর্ণতা পেলো, সেই সাথে পেয়ে গেলাম বাবা-মা আর নিজের একটা ঠিকানা! ভাগ্য ভালো একমাত্র সন্তান হিসেবেই রেখেছে, নইলে ভাই-বোনদের নাম ও মুখস্ত করতে হতো!

    মনিকা জানালো, বিধানগরের এই ফ্ল্যাটের কথা ওর বদ্দা জানে না, তাই এখানে দেখা করার প্রশ্নই আসে না। অবাকই হলাম কথাটা শুনে। যাই হোক, আমাকে মির্জা গালিব স্ট্রিটে প্যারামাউন্ট ডান্স-বার নামের একটা ঠিকানা দিলো ও. বিকেলের দিকে গেলাম সেখানে। বারটা তখন বন্ধ। গেটের সামনে জবরদস্ত সিকিউরিটিকে বিশ্বজিৎ সাহার নাম বলতেই গেট খুলে দিলো।

    ভেতরে ঢুকে দেখি অন্ধকারাচ্ছন্ন বিশাল একটি ঘর। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেকগুলো সোফা আর টেবিল। ঘরের ডানদিকে একটা মঞ্চের মতো স্থান। সেই মঞ্চ থেকে ঘরের মাঝখানে একটা র‍্যাম্প চলে এসেছে। র‍্যাম্পটা রেলিং দিয়ে ঘেরা।

    আগে কখনও ডান্স-বার দেখিনি। তবে আন্দাজ করতে পারলাম, এখানেই মেয়েগুলো নাচানাচি করে। স্বল্পবসনায়? কে জানে!

    “এই যে…এইদিকে আসো!”

    কেউ একজন বলল। বাঁ-দিকে তাকিয়ে দেখি দূরের দেয়াল ঘেষে একটা সোফায় দুজন লোক বসে আছে। একজনের বয়স চল্লিশোর্ধ, একটু ভারি শরীরের, অন্যজনের বয়স ত্রিশের কোঠায় হবে, হালকা-পাতলা। ভাবভঙ্গি বেশ স্মার্ট।

    আমি এগিয়ে গেলাম তাদের দিকে।

    “বসো,” ভারি শরীরের লোকটা বলল।

    ওদের বিপরীতে বসে পড়লাম।

    “আমি বিশ্বজিৎ…মনিকার দাদা,” তারপর পাশ ফিরে বলল, “নাইজেল…আমার বিজনেস পার্টনার।”

    আলতো করে মাথা নাড়লো নাইজেল নামের লোকটা। মুখে তার একচিলতে হাসি কিন্তু চোয়াল শক্ত। সেই হাসি না সৌজন্যতার, না আন্তরিকতার।

    “ওয়-ও আমাগো ঢাকার পোলা,” মনিকার দাদা বলল। “ওর একটা আঁধারকার্ড কইরা দিতে হইবো।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো লোকটা। আমার দিকে স্থিরচোখে চেয়ে রইলো।

    ইন্টারভিউয়ের জন্য আমি প্রস্তুত হয়ে গেলাম :

    আমার নাম অপরেশ পাল। পিতা অসীম পাল। মাতা সুচিত্রা পাল। বাড়ি দক্ষিণ মৈষণ্ডী।

    কিন্তু কয়েক মুহূর্ত কেউ কিছু বলল না, অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম আমি।

    তারপরই আচমকা নাইজেল নামের লোকটা বলে উঠল, “ওরে দেইখ্যা তো মনে হয় না ওয় একজন শুটার!”

    এমন বেমক্কা কথা শুনে বজ্রাহত হলাম আমি। বোকার মতো চেয়ে রইলাম তার দিকে।

    মনিকার বদ্দা আমার দিকে তাকিয়ে আশ্বস্ত করার হাসি দিলো। “আমরা এইটা জানি…ভয়ের কিছু নাই।”

    আমি কী বলবো বুঝতে পারলাম না। মাথাটা ভন ভন করতে লাগলো। এরা কীভাবে জানতে পারলো এটা? মনিকা তো আমার পরিচয় লুকিয়ে রেখেছে ওর দাদার কাছ থেকে!

    নাকি কিছুই লুকায়নি? সব বলে দিয়েছে!

    “কতো দূর থেইক্যা টার্গেট করতে পারো, তুমি?” জিজ্ঞেস করলো নাইজেল, একদম স্বাভাবিক কণ্ঠে।

    গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলাম। নিজেকে ধাতস্থ করতে হিমশিম খেলাম আমি।

    “ঘাবড়ায়া গেছো?” হাসিমুখে বলল বিশ্বজিৎ সাহা। “আমরা তো পর না…আজ বাদে কাল তুমি মনিকার…” কথাটা আর শেষ করলো না সে।

    ঢোক গিললাম আমি। কী বলবো, বুঝতে পারছি না।

    “এইগুলা খাও?” মদভর্তি গ্লাসটা উঁচিয়ে ধরে বলল মনিকার বদ্দা।

    “লজ্জা পাইতাছে,” মুচকি হেসে বলল নাইজেল। “হাজার হইলেও জামাই তো।”

    “আরে, লজ্জার কিছু নাই,” মনিকার বদ্দা টেবিলের নিচে পা নাচাতে নাচাতে মদে চুমুক দিলো। “চাইলে খাইতে পারো।”

    “কইলা না তো, কতো দূর থেইক্যা মারতে পারো?” নাইজেল আবারো জানতে চাইলো।

    লোকটার দিকে তাকালাম আমি। আমার সঙ্গে তামাশা করছে নাকি? নিজেকে আমার সঙ বলে মনে হলো। সামনে যে দুজন মানুষ বসে আছে আমি যেন তাদের হাতের পুতুল।

    “বহুত দূর থিকা মারতে পারে,” আমার কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে প্রশংসার সুরে বলল মনিকার বদ্দা। “দশ-পনেরো মিটার ওর জন্য কোনো ব্যাপারই না। সজল তো অনেক দূরে আছিল…বুড়িগঙ্গার উপরে একটা লঞ্চে…তারপরও কুরুৎ কইরা দিছে!” শেষ শব্দটা তুড়ি বাজিয়ে বলল।

    আরেক বার বজ্রাহত হলাম। এ ঘটনাও জানে!

    স্থিরচোখে আমার দিকে তাকালো নাইজেল। “কতো দূর থিকা মারছিলা ওরে?”

    বিশ্বজিৎ সাহা গ্লাসে আরেকটা চুমুক দিয়ে হাসলো। “ভয়ের কিছু নাই…তুমি এখন পর না।”

    চুপ মেরে রইলাম আমি।

    “আমাগো দুইজনেরই খুব ঝামেলা করতাছে এক লোক, “ বলল মনিকার বদ্দা। “ক্ষতি করার চেষ্টা করতাছে।”

    চুপচাপ শুনে গেলাম তাদের কথা। আমার মাথায় কেবল একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে : মনিকা এটা আমার সাথে করতে পারলো!

    “এই কাজটা অনেক সহজ,” বলল নাইজেল। “রাস্তার এই পাড় ওই পাড়…একজ্যাক্টলি বলতে পারবো না, তবে এক শত ফিটের বেশি হইবো না।”

    “সব কিছুর ব্যবস্থা কইরা দিবো ওয়…চিন্তার কিছু নাই।” আমাকে আশ্বস্ত করে বলল মনিকার বদ্দা।

    মাথা নেড়ে সায় দিলো নাইজেল। “তুমি খালি বলো কী কী লাগবো।”

    নিজেকে ফাঁদে পড়া ইঁদুর মনে হলো। কী বলবো আমি?

    “আমরা তোমার আঁধারকার্ড কইরা দিমু…তুমি আমাগো একটু উপকার কইরা দিবা… আপনা মানুষ হিসাবে,” বিশ্বজিৎ সাহা যোগ করলো।

    আমার দিকে স্থিরচোখে চেয়ে রইলো নাইজেল।

    বুঝতে পারলাম না, কী বলবো এদেরকে!

    বিশ্বজিৎ আমার পিঠে হাত রাখলো। “মনিকারে নিয়া ভাবতাছো?”

    লোকটার দিকে তাকালাম আমি।

    “ওরে নিয়া ভাইবো না, ওরে আমি ম্যানেজ করুম।”

    কথাটা শুনে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলাম। আমার ধারণা মনিকা সবই জানে। আমার সত্যিকারের পরিচয় ও ছাড়া আর কে এদেরকে জানাবে?

    “তুমি যে সজরে মারছো, এইটা কিন্তু মনিকা জানে না, বিশ্বজিৎ সাহা বলল। “আমি ওরে কমু না…গোপনই থাকবো।”

    খটকা লাগলো এবার। আমি সজলকে মেরেছি-এ কথা যদি মনিকা না জেনে থাকে তাহলে এরা জানে কী করে?!

    “এইরকম কাম জীবনে অনেক করছো, এইবার আমাগো লাইগ্যা একটা কইরা দাও…আমার পার্টনার…নাইজেলের বিরাট বড় উপকার হইবো,” মনিকার দাদা বলল বেশ আন্তরিক ভঙ্গিতে।

    নাইজেল নামের লোকটা আসলে কে, কী করে-আমি জানি না। তবে মনিকার বদ্দার আচার-আচরণ দেখে বুঝতে পারলাম, বয়সে তার চেয়ে ছোট হলেও এই বিজনেস পার্টনারকে বেশ সমীহ করে।

    আরো কিছুক্ষণ আশ্বস্তমূলক কথা বলল তারা দুজন। এক পর্যায়ে জানতে চাইলো কী কী লাগবে আমার।

    গভীর করে দম নিয়ে সমস্ত আড়ষ্টতা ঝেড়ে ফেললাম আমি। তাদেরকে জানালাম, শুধু একটা ভালো মানের রাইফেলের ব্যবস্থা করলেই হবে না, আরো অনেক কিছু লাগবে। টেলিস্কোপ, সাইলেন্সার, সেই সাথে একটা ব্যাকআপ টিম। শট নেবার পর পরই আশপাশ থেকে গুলি ছুঁড়বে ওরা, কাজটা যে স্নাইপারের সেটা ধামাচাপা পড়ে যাবে। সবাই জানবে সশস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছে একজন। এটা না করলে বিরাট সমস্যা হয়ে যাবে।

    “কীসের সমস্যা হইবো?” নাইজেল অবাক হয়ে জানতে চাইলো।

    পুলিশি তদন্তের কথা বললাম। কলকাতায় একজন স্নাইপার সক্রিয় আছে, এটা জানার পর পুলিশ বসে থাকবে না, ব্যাপক তল্লাশী আর অভিযান শুরু করে দেবে।

    হেসে ফেলল নাইজেল। “আরে এত কিছু হইবো না। এই মাল এইখানকার না.” এবার সিগারেট ধরালো লোকটা। “আমাগো দেশি…পুলিশ ওরে নিয়া খুব মাথা ঘামাইবো না।”

    মনিকার বদ্দাও মাথা নেড়ে সায় দিলো

    “রাইফেল, স্কোপ আর সাইলেন্সারের ব্যবস্থা করতাছি আমি,” বলল নাইজেল। “বাকি সব আমার উপরে ছাইড়্যা দাও। তোমার লগে আমার লোকজনও থাকবো…আমিও থাকুম…আমার লগেই মিটিং করতে আসবো টার্গেট।”

    “কাম হওনের পর তোমারে ওয় সেইফলি জায়গামতোন পৌঁছায়া দিবো।”

    মনিকার দাদার কথাটা আমার কাছে কেমন দ্ব্যর্থবোধক শোনালো। বলতে ইচ্ছে করলো, সেটা কোথায়? স্বর্গে না নরকে!

    কাজটা করবো কি না, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না। হতবুদ্ধিকর অবস্থায় ডান্স-বার থেকে বের হয়ে কিছুটা পথ হাঁটলাম আমি। বুঝতে পারলাম, যে চক্করে পড়েছিলাম, এখনও সেখান থেকে বের হতে পারিনি!

    এমন কি দেশ পাল্টেও!

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকন্ট্রোল (বেগ-বাস্টার্ড ৭) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
    Next Article দরিয়া-ই-নুর – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    Related Articles

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেক্সাস (বেগ-বাস্টার্ড ৩) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }