Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অগোচরা – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এক পাতা গল্প123 Mins Read0
    ⤶

    অধ্যায় ৩০ – হ্যালো কলকাতা!

    আমি আবারো ফিরে এসেছি কলকাতায়!

    আমার মুখে চাপদাড়ি, মাথায় সানক্যাপ, চোখে সানগ্লাস। এই বেশে মনিকাকে সঙ্গে নিয়ে বিধান নগরের ফ্ল্যাটে যখন ঢুকলাম, দারোয়ান প্রথমে আমাকে দেখে চিনতে না পারলেও সানগ্লাসটা খুলে ফেলতেই চিনতে পারলো।

    এতদিন জরুরি একটা কাজে বোম্বে ছিলাম-ছোট্ট এই মিথ্যেটা বলেই উপরে উঠে এলাম আমরা দুজন।

    মনিকা আবার আগের রূপে ফিরে গেছে। চোখের নিচে আর কালশিটে দাগ নেই, স্বাস্থ্যও অনেকটা ভালো। এখন ওকে দেখলেই বোঝা যায় বেশ নির্ভার।

    বহুদিন পর ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখি সবকিছুতে ধুলোর আস্তরণ পড়ে গেছে, কেমন গুমোট একটা গন্ধ। পূজোর ঘরটার দরজা খোলা, কাঠের মন্দির-ঘরটা লণ্ডভণ্ড। বেডরুমের ক্লজিটটাও খোলা। ভেতরের কাপড়চোপড় বাইরে ফেলে রাখা হয়েছে।

    এখানেও তল্লাশি চালিয়েছিল মনিকার বদ্দা!

    তবে আতঙ্কিত হলাম না। সানগ্লাস আর ক্যাপটা খুলে কাজে নেমে পড়লাম আমি। ক্লজিটটা ধরে দেয়াল থেকে কিছুটা সরিয়ে আনলাম, তারপর ডানদিকে কাত করে আস্তে আস্তে মেঝেতে শুইয়ে দেবার পর মনিকা বুঝতে পারলো আমি কী করেছি!

    ক্লজিটের নিচে, পাঁচ-ছয় ইঞ্চির মতো ফাঁপা বেইজটায় গামটেপ দিয়ে কিছু জিনিস আটকে রাখা আছে।

    মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো মনিকা। সত্যি বলতে, এই বুদ্ধিটা আমি ওর কাছ থেকেই পেয়েছি-কাঠের মন্দির-ঘরটার বেইজের নিচে চোরাকুঠুরিতে ডলারের বান্ডিল আর স্বর্ণের বারগুলো লুকিয়ে রেখেছিল।

    গামটেপগুলো খুলে ফেলতেই বেরিয়ে এলো পলিথিনের জিপারব্যাগে রাখা ডলারের বান্ডিলগুলো 1 আরেকটা জিপারব্যাগে স্বর্ণের বারগুলো রাখা।

    ক্লজিটের নিচে বাকি জিনিসটা দেখে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো মনিকা। নাইজেলের দেয়া রাইফেলটা টেলিস্কোপ আর সাইলেন্সার লাগানো অবস্থায় গাম টেপ দিয়ে আটকানো আছে ওখানে।

    প্রথমে পরিকল্পনা করেছিলাম, নাইজেল আর তার সঙ্গিকে মারার পর রাইফেলটা ওই ঘরে রেখেই চলে আসবো। কিন্তু পরে পরিকল্পনাটা একটু বদলাই। পুলিশ স্নাইপার রাইফেল উদ্ধার করলে উঠেপড়ে লাগবে, জোর তদন্ত শুরু করে দেবে। ঘটনা আর সামান্য থাকবে না। তাছাড়া ফেরার পথে সবজল কিংবা মনিকার বদ্দার লোকজন আমার পিছু নিতে পারে-তাই ওটা সঙ্গে করে নিয়ে সোজা চলে আসি এখানে।

    ঘটনার আগের দিনই ক্লজিটের বেইজের নিচে ডলারের বান্ডিল আর স্বর্ণগুলো এভাবে আটকে রেখেছিলাম, নাইজেলকে ঘায়েল করার পর রাতে ফ্ল্যাটে ফিরে এসে ওগুলোর পাশে লম্বালম্বি করে রাইফেলটাও গাম টেপ দিয়ে আটকে রাখি এবং ডলারের একটা বান্ডিল দু ভাগে ভাগ করে জুতার শুকতলায় নিয়ে নেই। ক্লজিটটা জায়গামতো রেখে জামা-কাপড়ের ব্যাকপ্যাক, রাইফেলের খালি বাক্স আর বেচে যাওয়া গামটেপটা সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি আমি।

    ফ্ল্যাটের ভেতরে গাম টেপ রেখে গেলে ওটা সন্দেহের উদ্রেক করতে পারে। খালি গিটারের বাক্সটা ফ্ল্যাটে খুঁজে পেলেও বুঝে যাবে আমি বাক্স ছাড়া রাইফেল নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হইনি-জিনিসটা ফ্ল্যাটেই আছে।

    ট্যাক্সিতে করে যাবার পথে গাম টেপটা ফেলে দিয়েছিলাম, আর বাসস্টেশনে এসে গিটারের বাক্সটা পরিত্যাগ করি।

    নিজের সম্পদ হাতে পেয়ে মুখে হাতচাপা দিয়ে হাসতে লাগলো মনিকা। আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো, আমার কাছ থেকে এসব লুকিয়ে রাখার জন্য আবারো সরি বলল ও।

    কিন্তু মনিকা জানে না, ওর ভয়টা মোটেও অমূলক ছিল না—ওগুলোর সন্ধান পাবার পর কী করতে চেয়েছিলাম! ভাগ্যিস, একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে থেমে গেছিলাম।

    ওকে জড়িয়ে ধরে পরম মমতায় চুমু খেলাম ওর কপালে, আর মনে মনে বললাম : সরি, মনিকা!

    অধ্যায় ৩১ – নাটের গুরু

    এক সময় ওর বদ্দা বিশ্বজিৎ সাহাও বিধুদার ঘনিষ্ঠ লোক ছিল, সেই সূত্রে ওদের বাড়িতে আসা-যাওয়া ছিল তার।

    মনিকা একটু বড় হতেই বিধুর চোখ পড়ে যায়। বিশ্বজিৎ যে পথের বাধা হিসেবে দাঁড়াবে, বুঝতে পেরেছিল, তাই সুকৌশলে ওর দাদাকে একটা খুনের মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হয়।

    গ্রেফতারের ভয়ে পলাতক বিশ্বজিৎকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেয় বিধু-ই। কেরাণীগঞ্জের প্রতাপশালী মানিকের কাছে রেখেছিল ওর দাদাকে। দীর্ঘদিন এভাবে পালিয়ে থেকে হাঁপিয়ে ওঠে সে। বিধু তখন তাকে কলকাতায় চলে যাবার বুদ্ধি দেয়। ওখানে তার এক মাসির বাড়িতে বিশ্বজিৎ নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে।

    মনিকার দাদাকে কলকাতায় পাঠানোর পরই বিধু তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে। হুট করেই দেখা যায়, পাড়ার উঠতি বখাটে ছেলেপেলেরা মনিকার পেছনে লেগেছে। তাদের যন্ত্রণায় অতীষ্ঠ হয়ে বিধুর শরণাপন্ন হতে বাধ্য হয় মনিকার পরিবার। বড় ছেলে কলকাতায় থাকার কারণে ঢাকায় বিধু-ই হয়ে ওঠে ওদের অভিভাবক। এক পর্যায়ে পাশের মহল্লার প্রভাবশালী মোক্তার হাজীর বখাটে ছেলে শামীম পিছু নেয় সপ্তদর্শী মনিকার। ওর কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক তখনই বিধু বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে, সেই সঙ্গে এই ভয়-ও ঢুকিয়ে দেয়, যেকোনো সময় দিলু গুণ্ডার মতো ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

    আশির দশকে পুরান ঢাকার ত্রাস এই দিলু গুণ্ডা শাঁখারি বাজারের অনিন্দ্য সুন্দরি সারিকা দেবীকে তুলে নিয়ে বিয়ে করেছিল। দুটো বাচ্চা হবার পর দিলু গুণ্ডা একাধিক খুনের মামলায় ধরা পড়ে জেলে চলে গেলেও সারিকার পক্ষে আর স্বধর্মে, স্বজাতে ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়নি—বাকি জীবন সুরাইয়া হয়েই থাকতে হয়েছে।

    পুরান ঢাকার অনেকের মতো মনিকার বাবা-মা এই গল্পটা জানতো, ফলে ভয় পেয়ে যায় তারা। মন্দের ভালো হিসেবে মনিকার চেয়ে বয়সে বড় বিধুর সঙ্গে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়।

    বিধুর আশ্রয়ে কলকাতায় থেকে মনিকার বদ্দা এ বিষয়ে কিছুই করতে পারেনি। তার খুনের মামলার চার্জশিট দিয়ে দিয়েছে পুলিশ, দেশে গেলেই গ্রেফতার হয়ে যাবে, তাই বিশ্বজিৎ সাহা নিজের কথা ভেবে এই বিয়ের ব্যাপারে জোর আপত্তিও জানায়নি। মনিকার বয়স যদি কম না হতো, তাহলে হয়তো ওর দাদার স্বার্থপরতার ব্যাপারটা তখনই বুঝে যেতো। কিন্তু এটা ও বুঝতে পেরেছে অনেক দেরিতে, বিধু নিহত হবার পর।

    বিয়ের পর বিধু আগের চেয়ে আরো বেশি করে কলকাতায় টাকা-পয়সা হুন্ডি করতে শুরু করে মনিকার প্ররোচনায়। ওকে এই বুদ্ধিটা ওর দাদা-ই দিয়েছিল। বোঝাতে পেরেছিল, বিধু যে জগতের বাসিন্দা, আজ হোক কাল হোক, অপঘাতে মারা যাবে নয়তো জেলে পচে মরবে। ওর উচিত নিজের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবা।

    সজলের সঙ্গে সম্পর্ক হবার পর নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে মনিকা। ওর বদ্দা এই সম্পর্কের কথা জানতো। মনিকার দাদা-ই তাকে পরামর্শ দিয়েছিল, বিধুকে সরিয়ে না দিলে ভয়ানক বিপদ নেমে আসবে। কোনোভাবে যদি ওদের সম্পর্কের কথা জানতে পারে, তাহলে সজল তো মরবেই, মনিকাও রেহাই পাবে না। এরপরই সজল পরিকল্পনা করতে শুরু করে। প্রথমে আমাকে দিয়ে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বিধু সেটা বুঝে গেলে সজল পড়ে যায় বিপদে। জীবন বাঁচাতে সে তখন পালিয়ে বেড়াতে শুরু করে। এক পর্যায়ে কলকাতায় মনিকার ভাইয়ের কাছে চলে যায় আবার। বিশ্বজিৎই তাকে বুদ্ধি দেয়, এভাবে পালিয়ে না থেকে বিধুর একটা ব্যবস্থা করা উচিত। নাইজেল তখন কলকাতায় এসে নাড় গেঁড়েছে। সজলের সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেয় মনিকার বদ্দা। মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে নাইজেলকে ভাড়া করে সজল।

    মনিকার দাদা-ই সবজলকে দিয়ে নাটকা গেসুকে ম্যানেজ করেছিল। এক সময় এই সবজল, মনিকার দাদা আর নাটকা গেসু একসঙ্গে বিধুর হয়ে কাজ করতো। তাদের মধ্যে আগে থেকেই ঘনিষ্ঠতা ছিল।

    সবজল নানাভাবে বোঝায় তার বন্ধু গেসুকে। বিপুল টাকার প্রলোভনের সাথে সাথে এ-ও বলে, আজ বাদে কাল বিধু মরবেই, সে আর বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারবে না। ভালো হয়, লোকটার সঙ্গে সহমরণে যেন না যায় সে। কার জন্য গেসু এত বড় ঝুঁকি নিচ্ছে? যে লোক নিজের আখের গোছানোর জন্য তাকে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে, কলকাতায় পাচার করেছে? তার জন্য কী করেছে বিধু? তাকে শুধু ব্যবহারই করে গেছে। বিধুর কিছু হয়ে গেলে গেসুর কী হবে? তার নামে না আছে কোনো সম্পদ না আছে ব্যাঙ্ক ব্যালান্স। বিধু না থাকলে তার বিপুল অঙ্কের টাকা থেকে বড় একটা ভাগ পাবে সে। ঐ টাকা দিয়ে বাকি জীবন সাচ্ছন্দে চলে যাবে তার। সময় থাকতে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে দুই কুলই হারাবে গেসু।

    সবজলের প্ররোচনায় অবশেষে নাটকা গেসু রাজি হয়ে যায়।

    তবে বিধু মারা যাবার পর এই গেসুকে সরিয়ে দেবার জন্য সজলকে লেলিয়ে দেয় বিশ্বজিৎ সাহা। নাটকা গেসু ছোটবেলা থেকেই অন্ধকার জগতে পা রেখেছিল বিধুর হাত ধরে। বিপদের গন্ধ সে আগেভাগে টের পেয়ে যেতো, সেজন্যেই কয়েক বার চেষ্টা করেও গেসুকে মারতে পারেনি সজল।

    ওদিকে মনিকার বদ্দা হিসেব কষতে থাকে, কাকে আগে সরিয়ে দিলে তার লাভ বেশি। সজল বেঁচে থাকলে তার কাছে গচ্ছিত মনিকার বিপুল পরিমাণের টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করা সম্ভব হবে না, সেজন্যে নাটকা গেসুকে লেলিয়ে দেয় সজলের পেছনে। সবজলকে দিয়ে গেসুকে জানিয়ে দেয়, বিধুর বিপুল পরিমাণের টাকা মনিকার কাছে, আর তার সঙ্গে সজলের সম্পর্ক আছে। ওরা বিয়ে করে ফেললে টাকাগুলো সব বেহাত হয়ে যাবে। তাছাড়া, সজল বেঁচে থাকলে গেসুর জীবন ও হুমকির মুখে থাকবে। যেকোনো সময় তাকে মেরে ফেলবে সে। টাকা আর জীবন বাঁচাতে হলে সজলকে দ্রুত সরিয়ে দিতে হবে।

    অন্যদিকে মনিকার মাধ্যমে সজলকে জানিয়ে দেয়, নাটকা গেসু তাকে মেরে ফেলার জন্য হন্যে হয়ে উঠেছে। সে যেন সাবধানে থাকে। এরপরই দেশের ভেতরে আত্মগোপনে চলে যায় সজল। কিন্তু সে কোথায় আছে, বিশ্বজিৎ সাহা-ও জানতে পারেনি। তবে এটা জানতো, মনিকার সঙ্গে সজলের দেখা হবে। তাই মনিকার ঘনিষ্ঠ ভৃত্য কালীচরণকে হাত করে ফেলে সে। কালীর মাধ্যেমেই জানতে পারে, মনিকা কবে কোথায় দেখা করতে যাবে সজলের সঙ্গে আর এই খবরটা সবজলের মাধ্যমে গেসুকে জানিয়ে দেয়।

    অনেক ভেবেচিন্তে অবশেষে মনিকার কাছে সজল হত্যার কথা স্বীকার করেছি। আমাদের মধ্যে আর কোনো লুকোছাপা থাকুক, চাইনি আমি।

    সবটা শোনার পর দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনিকা বলেছে, ঐদিন এমভি জামান লঞ্চ থেকে বোরকা পরে যে মেয়েটি নৌকায় করে চলে গেছিল, সে আর কেউ না, ও ছিল। বুঝতে পেরেছে, নাটকা গেসু আমাকে দিয়ে সজলকে সরিয়ে দিলেও আদতে পর্দার আড়ালে থেকে সবকিছু করেছে ওর বদ্দা।

    সজল খুন হয়ে যাবার পর নাটকা গেসু কীভাবে জানি বুঝে গেছিল, সবকিছুর পেছনে আছে মনিকার দাদা। অন্ধকার জগতের বাসিন্দা গেসুর পক্ষে এটা আন্দাজ করা অসম্ভব কিছুও ছিল না।

    মনিকার বদ্দাকে সবজল জানিয়ে দেয়, গেসু কঠিন পণ করেছে, কলকাতায় গিয়ে হলেও নাটেরগুরু বিশ্বজিৎকে দেখে নেবে। এটা জানার পর থেকেই লোকটা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তার ছোটবোনকে গেসু সব বলে দিতে পারে। তাদের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস আর দূরত্ব বাড়ানোর জন্য মনিকাকে সে বলে দেয়, এই গেসু-ই সজলকে মেরেছে, এখন বিধুর সম্পদ থেকে ভাগ চাইছে। সে বেঁচে থাকলে মনিকা মুক্তি পাবে না।

    এমন সময় আমি মনিকার সঙ্গে যোগাযোগ করে সব খোলাসা করে ফেলি। আমরা দুজনেই বুঝতে পারি, গেসু বেঁচে থাকলে দুজনের কেউই মুক্তি পাবো না। দৃশ্যপটে আমি যদি না আসতাম, গেসুকে না মারতাম, তাহলে মনিকার বদ্দা এই কাজটা হয়তো নাইজেলকে দিয়েই করাতো।

    অধ্যায় ৩২ – হুন্ডি

    “এতদিন কই ছিলি! কই গেছিলি?” আমাকে দেখেই অজয় বলে উঠল। “এই অবস্থা ক্যান তোর?”

    মুখের চাপদাড়িতে হাত বুলিয়ে হাসলাম আমি। তাকে বললাম, লুকিয়ে ঢাকায় গেছিলাম। সরকারি দলের এক নেতার সঙ্গে বোঝাপড়া হয়েছে, ওখানে থাকতে আর সমস্যা হবে না।

    ওদের দোকানটার দিকে তাকালাম, বেশ বদলে গেছে এ কয়দিনে-ঝকঝকে আর ওষুধে ঠাসা। একটা ফ্রিজ আর নতুন একজন কর্মচারিও দেখলাম।

    “এসি কিনছি…সামনের হপ্তায় লাগামু,” আমাকে জানালো অজয়।

    খুব ভালো লাগলো। ওর মুখে চাপদাড়ি থাকলেও বেশ পরিপাটী। জামা-কাপড়ে পরিবর্তন এসেছে, চেহারাও বেশ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে এখন। মুখে হাসি হাসি ভাবটা ঠিক আগের মতোন। অবাক হয়েই ভাবলাম, কতো অল্প টাকায় মানুষের জীবন বদলে যায়!

    “আমি কিন্তু দাদারে তোর কথা কইছি,” কাচুমাচু খেয়ে বলল অজয়। “নাইলে দাদায় মনে করতো এত্তগুলান ট্যাকা আমি দুই নম্বরি কইরা কামাইছি।”

    তার দাদা আমাকে আবার দুই নম্বরি করা লোক ভাববে না তো?

    হেসে ফেলল আমার বন্ধু। “আরে, না। কইছি তোর কাছে কিছু ক্যাপিটাল আছিল…আমারে দিছোস ব্যবসা করতে…মাসে মাসে আমি তরে লাভ দিমু…কলকাতায় থাকনের খরচ আছে না?”

    যুৎসই ব্যাখ্যাই দিয়েছে বন্ধু আমার। আরো অনেক কথা বলার পর আমরা দুজন দোকান থেকে বের হয়ে একটা রেস্টুরেন্টে বসে চা-সিগারেট খেলাম। আলাপের এক পর্যায়ে ওকে বললাম, আমি খুব জলদি দেশে ফিরে যাবো, যাবার আগে কিছু টাকা হুন্ডি করতে হবে।

    “কতো?”

    অঙ্কটা শুনে অবাক হলো। সেটাই স্বাভাবিক।

    “এত টাকা হুন্ডি করা রিস্ক,” চিন্তিত মুখে বলল। “আমার লগে তো ডিরেক্ট আলাপ নাই কারোর…বেঈমানি করলে কিচ্ছু করার থাকবো না।”

    মনিকা শেষের দিকে যার মাধ্যমে টাকাগুলো এখানে নিয়ে এসেছিল, সেই লোক এখন পুলিশের কাছে ধরা পড়ে জেলে আছে। এই লাইনে অন্য কাউকে ও চেনেও না। এমন কেউ থাকলেও তাকে দিয়ে হুন্ডি করাতে সাহস পাচ্ছে না এখন।

    হতাশ হয়ে যখন ভাবছি, যক্ষের ধনগুলো নিয়ে কী করবো তখনই একটা বুদ্ধি দিলো অজয়। আর সেটা আমার কাছে অভিনব বলেই মনে হলো।

    অজয়ের এক পিসা ঢাকায় তার বাড়িটা বিক্রি করে কলকাতায় চলে আসতে চাইছে পাকাপোক্তভাবে। কিন্তু স্থানীয় কারো কাছে বিক্রি করতে ভয় পাচ্ছে। তারা বুঝে যাবে জায়গা-জমি বিক্রি করে ভারতে চলে যাচ্ছে, আর তখন পেয়ে বসবে। ন্যয্য দাম দেবে না, এমন কি অন্য কেউ যাতে বাজার দরে কিনতে না পারে সে চেষ্টাও করবে। আমি ওই জমিটা ন্যয্য দামে কিনে নিলে ঝুঁকি নিয়ে আর হুন্ডি করার দরকার পড়বে না। এখানে টাকা দিয়ে দেবো, ঢাকায় আমার নামে জমির মালিকানা ট্রান্সফার হয়ে যাবে।

    হিসেব করে দেখলাম, যে পরিমাণ ডলার আর স্বর্ণ আছে তা দিয়ে ঐ জমিটা কেনার পরও বেশ কিছু টাকা থেকে যাবে।

    “এইটা কোনো সমস্যা-ই না,” বলল অজয়। “পিসার কাছে কোটি ট্যাকা ক্যাশ আছে…কইছিল হুন্ডি কইরা নিয়া আসবো আসার সময়…তুই এইখানে ট্যাকা দিয়া দিলে ওরা তোর নামে ঢাকায় তোর ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে জমা কইরা দিবো।”

    সহজ আর নিরাপদ বুদ্ধি। হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। অজয়কে বলে দিলাম, দ্রুত সব কিছুর ব্যবস্থা করতে।

    আলাপের এক পর্যায়ে ওর কাছ থেকে জানতে চাইলাম, মাউড়া হামিদ এখনও কলকাতয় আছে কি না।

    “আছে তো…গত হপ্তায়ও দেখছি গালিব স্ট্রিটে…কথাও হইছে…ক্যান?”

    তারপর যেটা বললাম সেটা শুনে অজয় বেশ অবাক হলো। “তুই দেখা করবি?

    ওকে জানালাম, আমার সেরকম কোনো ইচ্ছে নেই।

    অধ্যায় ৩৩ – রেহাই

    ঘোলাটে হলেও টেলিস্কোপে সবটাই দেখতে পাচ্ছি।

    একটা রেস্টুরেন্টের মেইন দরজা। আমি জানি, একটু পরই দুজন মানুষ বের হয়ে আসবে ওখান থেকে।

    একটা কমোডের উপরে দাঁড়িয়ে আছি। টয়লেটের ছোট্ট জানালা দিয়ে তাক করে রেখেছি রাইফেলটা।

    ঠিক কতোক্ষণ পর জানি না, মনিকার দাদা আর সবজল রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে দরজার বাইরে এসে দাঁড়ালো। টুথ পিক দিয়ে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে আশেপাশে তাকালো সবজল। মনিকার বদ্দা একটা সিগারেট ধরালো।

    গভীর করে দম নিয়ে নিলাম আমি। তারপর, সব সময় যেমনটা করি, নিশ্বাস ছাড়ার মুহূর্তেই টিপে দিলাম ট্রিগার।

    থুতু ফেলার মতো শব্দ হলো কেবল।

    সবজলের কপালে গিয়ে লাগলো গুলিটা। ধাক্কার চোটে রেস্টুরেন্টের দরজার সামনে গিয়ে পড়লো। বিশ্বজিৎ সাহা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার রাইফেল থেকে দ্বিতীয় গুলিটা বিধলো তার ঘাড়ের পেছনে। সবজলের পাশেই মুখ থুবড়ে পড়লো সে।

    সামান্য একটু খিচুনি দিয়ে নিথর হয়ে গেল, তৃতীয় গুলিটা করার দরকার পড়লো না।

    কোত্থেকে যেন মনিকার বৃদ্ধ বাবা-মা ছুটে এসে রক্তাক্ত সন্তানের লাশটা জাপটে ধরে আহাজারি করতে লাগলো।

    .

    ঘুম ভেঙে যাবার পর বিছানায় উঠে বসতেই বুঝতে পারলাম, এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম। সত্যি বলতে, এমন স্বপ্ন আমি দিনের বেলায়-ও দেখি কিন্তু সত্যি সত্যি এটা করা যাবে না।

    আমার পাশে মনিকা ঘুমাচ্ছে। ভোরের আলোর কিছুটা জানালার পর্দা ভেদ করে পড়েছে ওর মুখে। ও ভ্রাতৃঘাতিনী হতে চায় না। ওর দাদা ওর সঙ্গে যা করেছে, সবটাই ভুলে যেতে চায়। ওর বৃদ্ধ আর অসুস্থ বাবা-মা মৃত্যুর আগে একমাত্র ছেলের লাশ দেখলে ভীষণ কষ্ট পাবে। হয়তো এমন শোক সহ্যও করতে পারবে না। তাই ও আমাকেও বলেছে, আমি যেন ওর দাদাকে ক্ষমা করে দেই।

    আমি জানি এই জগতে ক্ষমা করাটা বিরাট বড় ভুল। কিন্তু আমি এখান থেকে বের হতে চাই, মুক্তি পেতে চাই।

    কখনও কখনও মুক্তির জন্য এরকম ছাড় দিতেই হয়।

    অধ্যায় ৩৪ – ফল

    তিনটাদিন কেটে গেল দারুণ ব্যস্ততার মধ্যে।

    অজয় ওর পিসার সঙ্গে কথা বলে বাড়ি কেনার ব্যাপারটা চূড়ান্ত করে ফেলেছে। আগামিকাল ওর পিসামশাই ঢাকা থেকে কলকাতায় চলে আসবে, বায়নাবাবদ তাকে কিছু ডলার দেবো। ডলারে পেমেন্ট নিতে সাগ্রহে রাজি হয়েছেন তিনি, ফলে কষ্ট করে ওগুলো আর কনভার্ট করার দরকার নেই। ঢাকায় গিয়ে দলিল হস্তান্তর চূড়ান্ত করার পর আবারো আসতে হবে কলকাতায়, তখন বাকি টাকাগুলো দিয়ে দেয়া হবে।

    আগামিকাল ঢাকায় রওনা দেবো আমরা, তাই বিকেলের দিকে অজয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে বেলেঘাটায় গেলাম, ওর দোকানে গিয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে একটা ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলাম মির্জা গালিব স্ট্রিটে।

    মনিকার বদ্দার ডান্স-বারের সামনে দিয়ে যাবার সময় মেইন দরজায় কোনো সিকিউরিটি দেখতে পেলাম না। বাইরে থেকে দেখে সুনশান লাগলো।

    ট্যাক্সি থামিয়ে পাশের একটা দোকান থেকে সিগারেট কেনার উসিলায় জানতে চাইলাম, বারটা খোলা আছে কি না।

    “ওটা কাল থেকে বন্ধ আছে,” লোকটা জানালো। “কী একটা ঝামেলা হয়েছে…পুলিশও এছিল…ওখানে নাকি ইলিগ্যাল কাজকারবার হয়।”

    একটা সিগারেট ধরিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে বসলাম আবার। জানতাম, কিছু একটা হবে কিন্তু এতটা দ্রুত ফল পাবো আশা করিনি।

    অধ্যায় ৩৫ – উড়োচিঠি

    আপনি আমাকে চিনবেন না। আপনার মতো আমিও পুরান ঢাকায় থাকি, আপনার নাম শুনেছি, দুয়েক বার দেখেছিও। আপনিও হয়তো আপনিও হয়তো আমাকে দেখেছেন!

    আমি অন্ধকার জগতের একজন মানুষ। কী করে এই জগতে ঢুকে পড়েছি, সে এক লম্বা ইতিহাস। আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি এখান থেকে বের হবার জন্য, সে কারণেই সশরীরে এসে আপনাকে কথাগুলো বলতে পারলাম না।

    মাসখানেক আগে পার্কস্ট্রিটের একটা পাবে গিয়েছিলেন নাইজেলের সঙ্গে মিটিং করতে, আপনি দুজন লোককে নিয়ে ওখান থেকে বের হবার পর পরই নাইজেল ঐ বারের সামনে খুন হয়ে যায়। তার আগে ওর এক সহযোগি সাধু পাবের উল্টোদিকের একটি দোতলায় খুন হয়। সম্ভবত আপনি এসব জানেন এখন।

    সত্যি বলতে, ঐদিন খুন হবার কথা ছিল আপনার। আর কাজটা দেয়া হয়েছিল আমাকে। কিন্তু আমি এ জগত থেকে বের হবার চেষ্টা করছি, তাই এরকম কোনো কাজ করতে চাইনি, বাধ্য হয়ে রাজি হলেও ভিন্ন একটি পরিকল্পনা করি আমি, আর সেটাই বাস্তবায়ন করেছি ঐদিন।

    সম্ভবত বিশ্বজিৎ সাহা নামের কাউকে আপনি চেনেন, এই লোক মির্জা গালিব স্ট্রিটে প্যারামাউন্ট নামের ডান্স-বারটা চালায়। তার আরো কিছু ব্যবসাও আছে এখানে। এক সময় পুরান ঢাকাতেই থাকতো। আপনাকে খুন করার জন্য নাইজেল আর বিশ্বজিৎ সাহা আমাকে বাধ্য করেছিল। ওদের সঙ্গে সবজল নামেরও একজন ছিল। আমার সন্দেহ, এই লোক অষ্টধাতু। সবার কাছের মানুষ হয়ে থাকে সে। পুরান ঢাকার বিধুদার সঙ্গেও ছিল, সে আজ নেই। তার বন্ধু নাটকা গেসুও নেই। এই লোকের ব্যাপারে সাবধান হয়ে যাবেন।

    যা বললাম, একদম সত্যি। বিশ্বাস করা বা না করা আপনার ব্যাপার। মনে রাখবেন, আপনার এবং আমার শত্রু অভিন্ন। ওরা এখনও আমার পেছনে লেগে আছে, হয়তো আপনার পেছনেও।

    যদি কোনোদিন সম্ভব হয়, আপনাকে আমি সামনাসামনি আমার গল্পটা বলবো।

    ভালো থাকবেন, সাবধানে থাকবেন।

    চিঠির সঙ্গে আপনার একটা ছবি দিলাম। এটা ওরা আমাকে দিয়েছিল।

    .

    দুদিন আগে অজয়ের কাছ থেকে মাউড়া হামিদের হোটেলের নামটা জেনে নিয়ে আমি সোজা চলে গেছিলাম মির্জা গালিব স্ট্রিটে। হোটেলের ডেস্ক-ক্লার্ককে এনভেলপটা দিয়ে বলে দিয়েছিলাম, ঢাকার হামিদ সাহেবকে যেন এটা দিয়ে দেয়।

    অজয়ের কাছ থেকেই জেনেছিলাম, এখানকার এক এমএলএ’র সঙ্গে সখ্যতা আছে মাউড়া হামিদের। আন্ডারওয়ার্ল্ডের এক হোমরাচোমড়ার সঙ্গেও খাতির আছে তার। এরকম একটা চিঠি পেয়ে সে যদি সবকিছু বুঝতে পারে, নিশ্চয়ই বসে থাকবে না, সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করবে।

    কিন্তু এই চিরকুটে যদি কাজ না হতো তাহলে হয়তো আমি রাইফেলটা নিয়ে নেমে পড়তাম আবার। সবার অলক্ষ্যে, অগোচরে টেলিস্কোপে চোখ রেখে খুঁজে বেড়াতাম সবজল কিংবা বিশ্বজিৎ সাহাকে। তারপর লম্বা করে শ্বাস নিয়ে ছাড়ার সময়টাতেই টিপে দিতাম ট্রিগার। থুপ্ করে একটা শব্দ হতো কেবল। আর আমি এগিয়ে যেতাম মুক্তির দ্বারপ্রান্তে।

    অধ্যায় ৩৬ – নিষ্কৃতি

    মুক্তি এখনও আমার নাগালের বাইরে। তবে সেটা আছে পঞ্চাশ কি ষাট গজ দূরে আর আমার আঙুলের ডগায়!

    কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরে এসে ভেবেছিলাম অবশেষে আমি আমার কাঙ্ক্ষিত মুক্তি পেয়ে গেছি। কিন্তু সত্যিটা হলো, মুক্তির পথ সব সময়ই দীর্ঘ আর বন্ধুর! আজো সেই পথে হাঁটছি আমি।

    কয়েক ঘণ্টা ধরে টেলিস্কোপের ভিউ-ফাইন্ডারে চোখ রেখে একজনকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। কিছুদিন আগেও ভেবেছিলাম, এ জীবনে আর কখনও এমন কাজ করতে হবে না। কিন্তু মানুষের ভবিষ্যতের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। কখন কী হবে, আর কোন পরিস্থিতিতে পড়ে কী করতে হবে, কেউ জানে না।

    অজয়ের সাহায্যে ডলার আর স্বর্ণের বারগুলো দিয়ে ঢাকায় ওর পিসার বাড়িটা কিনে নেই। বাকি ডলার আর স্বর্ণগুলোর সমপরিমাণ টাকা ঢাকার একটি ব্যাঙ্কে জমা করে দিয়েছে। যে বাড়িটা কিনেছি, সেটা ভাড়া দিয়ে মনিকা আর আমার ভালোমতোই চলে যাচ্ছিল। মুক্তির জন্য এমন সচ্ছলতার ভীষণ দরকার ছিল আমাদের। তারপরও মনে হয়েছিল, একটা পেশা বেছে নেয়া উচিত-ছোটখাটো কোনো ব্যবসা। রুটিরুজির ব্যাপার না, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষ হিসেবে একটা কর্ম-পরিচয়ের দরকার আছে।

    মুন্নাকে আমি আমার ইচ্ছের কথাটা বলেছিলাম কিন্তু ওর মধ্যে ব্যবসা করার কোনো তাড়ণাই নেই। বাপের দু-তিনটা বাড়ি আছে ঢাকায়, সেগুলো থেকে যে ভাড়া পায় তা দিয়ে একমাত্র ছেলে হিসেবে সারাজীবন কিছু না করলেও ওর চলবে। আমি ওকে বুঝিয়েছিলাম, কর্মহীন মানুষ সমাজে করুণার পাত্র। পুরান ঢাকায় এরকম মানুষকে ‘নির্গুইন্যা’ বলে ডাকে। কিন্তু এসব কথায় কাজ হয়নি

    একদিন মুন্না আমাকে বলল, ওদের হার্ডওয়্যারের দোকানটা বিক্রি করে দেবে। এসব ব্যবসা দেখাশোনা করা ওর পক্ষে সম্ভব না। এই ব্যবসার কিছুই বোঝে না। ওটা বিক্রি করে দিলে ভালো টাকা পাবে, সেই টাকা ব্যাঙ্কে রেখে দিলে প্ৰতি মাসে ভালো টাকার সুদ আসবে।

    ওর কাছ থেকে এমন কথা শুনে অবাক হইনি আমি। বাপের অঢেল সম্পত্তি আর ফেন্সিডিল ওকে কর্মবিমুখ করে ফেলেছে। নিতান্তই কৌতুহলবশত জানতে চেয়েছিলাম, কতো টাকায় বিক্রি করতে চাইছে দোকানটা।

    “এক পার্টি কইছে মালামালসহ বেঁইচ্যা দিলে চল্লিশ দিবো,” সিগারেটে টান দিয়ে বলেছিল ও। “আমি যাইটের নিচে ছাড়ুম না।” তারপর চড়ামূল্যের যৌক্তিকতা দেখিয়ে বলেছিল, “নওয়াবপুরের রাস্তার উপরে তিনতালা একটা বিল্ডিং, পুরানা হইছে তো কী হইছে, দাম আছে না?”

    বাড়িতে এসে মনিকাকে কথাটা বললে ও ভীষণ আগ্রহি হয়ে ওঠে।

    মুন্নাদের দোকানটা কিনে নেবার পর একচুলও বদলাইনি আমি, আগের সব কর্মচারিকে রেখে দেই। ওরা-ই ব্যবসাটা চালাতে থাকে। দোকানে বসে থাকতে অস্বস্তি লাগে আমার, সেজন্যে দোতলায় মালামাল রাখার যে স্টোর-রুমটা আছে, সেটার একটা অংশ খালি করে বসার চেম্বার বানিয়ে নেই। কর্মচারিরা জানে, আমি আছি মাথার উপরে—এটুকুই যথেষ্ট। ওদের সামনে বসে থেকে শ্যেনদৃষ্টিতে সবকিছু দেখাশোনা করার দরকার নেই।

    জীবনটা যখন নির্ভার আর গোছানো বলে মনে হচ্ছিল তখনই একটা দুর্ঘটনা ঘটে-সাড়ে চার মাসের মাথায় বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গিয়ে মনিকার মিস ক্যারেজ হয়ে যায়। শক্ত মনের মেয়ে হলেও পুরোপুরি ভেঙে পড়ে ও। এমন কঠিন সময়ে ওকে বেশি বেশি করে সময় দিতে থাকি আমি, দোকানে গেলেও এক-দেড় ঘন্টার বেশি থাকি না।

    এ রকমই একদিন দোকান থেকে মাত্র বের হয়েছি, অমনি অচেনা দুটো ছেলে এসে আমাকে সালাম দেয়। অজানা ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠেছিল আমার। তারা বলল, হামিদ ভাই আমাকে খুঁজছে।

    তবে কি মাউড়া হামিদ জেনে গেছে, আমি-ই তাকে উড়ো চিঠিটা দিয়েছিলাম?

    অসম্ভব! এটা কী করে জানবে!

    অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমি ছেলেদুটোর সঙ্গে অলি-গলি পেরিয়ে মালিটোলার একটি পুরনো বাড়িতে গেলাম।

    “আরে তুমি!” আমাকে দেখেই বিশালদেহী মাউড়া হামিদ বলে উঠল। “তোমারে তো আমি চিনি!”

    চিনি মানে মুখচেনা। পুরান ঢাকার মতো ঘিঞ্জি এলাকায় কে কার মুখ দেখেনি?

    “আহো আহো…বহো,” আন্তরিকভাবেই আমাকে পাশের সোফায় বসতে বলল হামিদ ভাই। ছেলেদুটোকে ইশারা করার পর ওরা ঘর থেকে চলে গেল। “তোমারে আমি নামে চিনি না…আমার এক পোলা তোমার নাম হুইন্যা চিনবার পারছে।”

    আমি বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে নিলাম। সত্যি বলতে, জীবনের আশঙ্কা করছিলাম না। মাউড়া হামিদের উপকার ছাড়া অপকার তো করিনি! তারপরও মন বলিছল, এসবই খারাপ কিছুর আলামত।

    মাউড়া হামিদের দিকে তাকালাম। লোকটার চোখমুখ একদম শান্ত আর স্বাভাবিক। হাতের নীলা কিংবা গমেডযুক্ত আঙটিদুটো অন্য হাতে মোচড়াচ্ছে। কী বলবে, গুছিয়ে নিচ্ছে হয়তো।

    “সবজল সব কইছে!” অবশেষে নিরবতা ভেঙে বলেছিল।

    কথাটা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে আমার ভেতর থেকে। ধরে নিয়েছিলাম মাউড়া হামিদ আমার উড়োচিঠি পাবার পর পরই বিশ্বজিৎ আর সবজলের পেছনে লাগবে। কিন্তু ওদের কাউকে হাতের মুঠোয় পেয়ে গেলে যে সবকিছু জেনে নিতে পারবে, এমন চিন্তা মাথায় আসেনি।

    “নাইজেল একটা বেঈমানের বাচ্চা,” কথাটা বলেই বাঁকা হাসি দিলো। “যে পাতে খায়, ওই পাত-ই ছ্যাঁদা করে। আমার লগে ওর ভালা খাতির আছিল…কোনো দুশমনি আছিল না। কলকাতায় আমার লগে দেহা কইরা আড্ডা দিতো, খানাপিনা করাইতো,” একটু থেমে আমার দিকে স্থিরচোখে তাকালো হামিদ। “নাইজেলের খবরটা মনে হয় তুমি জানো না।”

    অবাক হয়ে তাকালাম তার দিকে। ওর আবার কী খবর?!

    “ওয় এহন ঢাকায়!”

    কয়েক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, এই আলাপটা বাস্তব জগতে হচ্ছে না। হয় এটা কোনো দুঃস্বপ্ন, নয়তো অন্য কোনো জগতে ঘটছে! আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো। ফ্যাল ফ্যাল চোখে মাউড়া হামিদের দিকে চেয়ে রইলাম।

    “কই মাছের জান…সহজে মরে না।”

    কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না, মাথায় গুলিবিদ্ধ হবার পর নাইজেল কী করে বেঁচে আছে! হান্টিং রাইফেল দিয়ে মাত্র ষাট-সত্তুর ফিট দূর থেকে মেরেছিলাম।

    “তাজ্জব অইছো জানি,” বলল হামিদ। “মাগার ঐ হালায় বাঁইচ্যা আছে…মাথার ডাইনদিকে লাগছে…এক্কেরে ঘেইষ্যা ঢুকছে!”

    ঘটনার পর পরই কলকাতা ছেড়ে চলে আসি ঢাকায়। পত্রপত্রিকায় দুটো খুনের সংবাদ আদৌ এসেছিল কি না কে জানে। তবে মনিকা সেটা জানতো না। ওর বদ্দা ওকে কেন এটা বলেনি তা-ও জানি না আমি।

    “গোপনে কলকাতার একটা ক্লিনিকে ট্রিটমেন্ট নিছে অনেক দিন। আমিও জানতাম ওয় মইরা গেছে…মাগার সবজল কইছে, হারামিটা বাঁইচ্যা আছে এহনও। কই আছে, আমি জানি।”

    আমার মুখে রা নেই।

    “সিটিং পার্টির এক নেতার লগে সিস্টেম কইরা ঢাকায় আইছি আমি…এহন আমার সমস্যা নাই…” একটা ভারি দীর্ঘশ্বাস ফেলল হামিদ। “মাগার ওইটা বাঁইচ্যা থাকলে তো চৈন পামু না।”

    তারপর বিস্তারিত বলল মাউড়া হামিদ : নাইজেল একটু সুস্থ হতেই অনেকটা বাধ্য হয়ে কলকাতা ছেড়েছে। ওখানে হামিদের ইয়ারদোস্ত পার্কস্ট্রিটের আন্ডারওয়ার্ল্ডের ইদ্রিস তার পেছনে লেগেছিল, আর এক এমএল-এর সাহায্যে বিশ্বজিৎ সাহার পেছনে লাগিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। তবে মনিকার দাদার জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে গেছে নাইজেল। সে মনে করছে তাকে হত্যা করার যে পরিকল্পনা, তার সঙ্গে বিশ্বজিৎ সাহাও জড়িত! এই অবিশ্বাসই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে লোকটার জন্য।

    কয়দিন আগে নাইজেল ঢাকায় চলে এসেছে। হামিদ কিংবা আমার পেছনে লাগার মতো অবস্থায় না থাকলেও এই বিষাক্ত সাপকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো ইচ্ছে মাউড়া হামিদের নেই। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার এক প্রতিদ্বন্দ্বী নাইজেলকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছিল তাকে খুন করার জন্য।

    শেষে বলল, আমার উচিত হবে তাকে সাহায্য করা। নইলে আমিও শান্তিতে থাকতে পারবো না।

    কী সাহায্য করবো আমি? কীভাবে করবো? অবাক হয়েই জানতে চেয়েছিলাম।

    “আধাখেচরা কাম করছো…ওইটা এখন পুরা করবা।” মউড়া হামিদ বলেছিল। “এইটা আমাগো জানের ব্যাপার।”

    সব সময়েই এটা জানের ব্যাপার-বেঁচে থাকার সংগ্রাম। একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে ভেতর থেকে। প্রথম বারের মতো নিজের নিশানা নিয়ে সন্দেহ জাগে আমার মনে। এতো কাছ থেকে পেয়েও কী করে মিস্ করলাম! তবে আমার ধারণা, এর আগে কখনও এতো কাছ থেকে শুট করিনি-এটাই হয়তো নিশানা হেরফের হবার একমাত্র কারণ।

    “চিন্তার কিচ্ছু নাই…ওগোর মতো তোমারে আমি ইউজ করুম না…আর যা-ই হওক, আমি বেঈমান না। তুমি আমার লাইগ্যা যা করছো, মনে আছে। কব্বরে যাওনের আগেও মনে থাকবো।” একটু থেমে আবার বলেছিল মাউড়া হামিদ, “আমি ছাড়া আর কেউ কিচ্ছু জানবো না। তুমি যেটা চাও ওইটা-ই অইবো। তুমি চাও না কেউ জানুক তুমি…” কথাটা শেষ করলো না, একটু ঝুঁকে টেবিল থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। “তুমি কইছিলা একদিন সামনাসামনি তোমার কাহিনিটা কইবা আমারে।”

    আলতো করে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে সংক্ষেপে ঘটনাটা বলেছিলাম তাকে।

    “তাইলে সবজল হাচা-ই কইছে,” কথাটা বলে সিগারেটে লম্বা একটা টান দিলো মাউড়া হামিদ।

    কয়েকদিন আগে সবজল দেখা করতে এসেছিল মাউড়া হামিদের সঙ্গে। আমার উড়োচিঠি সম্পর্কে তার কোনো ধারণা- ই ছিল না। ঐ ধুরন্ধর লোকটা হামিদের সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক ঝালাই করতে এসেছিল। তাকে এতো সহজে হাতের মুঠোয় পেয়ে মাউড়া হামিদ সদ্ব্যবহার করতে ভোলেনি।

    প্রথমে সবকিছুই অস্বীকার করেছিল সবজল কিন্তু তাকে নির্যাতন করে মুখ খুলতে বাধ্য করা হয়। ঐ অষ্টধাতু নিশ্চয়ই অবাক হয়েছিল এই ভেবে, এতো কিছু হামিদ কী করে জানতে পারলো! মৃত্যুর আগে সবজল গর গর করে সব বলে দিয়েছে।

    মিস ক্যারেজটা না হলেও মনিকাকে আমি এসবের কিছুই বলতাম না। যে নিস্তরঙ্গ জীবন আমরা অর্জন করেছি বহু চড়াই- উৎড়াই পেরিয়ে, সেটা এতো দ্রুত এলোমেলো করে দিতে চাই না। আমি চাই ও প্রতিদিন যে প্রশান্তি নিয়ে ঘুমাতে যায়, সেরকমই নির্ভার হয়ে থাকুক। ঘুম থেকে উঠে আমি ওর যে প্রশান্তিময় মায়াভরা মুখটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকি, সেটাই অটুট থাকুক। তাই অনেক ভেবে অবশেষে শেষবারের মতো আবারো অলক্ষ্যে আর অগোচরে ওঁৎ পেতে আছি আমি।

    প্রথমবার কলকাতায় যাবার আগেই রাইফেলটা মুন্নার কাছে রেখে গেছিলাম, সেটা আবার উঠে এসেছে আমার হাতে। মাউড়া হামিদ কথা রেখেছে, আমাকে আজিমপুরের এই সরকারি কলোনির এক ভবনের চারতলায় রেখে চলে গেছে সে। কাজ শেষে রাইফেলটা এখানে রেখে ফ্ল্যাটের দরজায় চাবি মেরে চলে যাবো আমি।

    কিন্তু তিন ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করেও নাইজেলের টিকিটা দেখতে পাচ্ছি না। নিজেকে ঘরে বন্দি করে রেখেছে সে, যেন বুঝে গেছে, ওঁৎ পেতে আছি আমি, ওকে দেখামাত্রই ট্রিগার টিপে দেবো!

    সন্ধ্যার দিকে ত্রিশ কি চল্লিশ গজ দূরে, বিপরীত দিকের ভবনের চারতলার এক জানালার সামনে একটা হুইল চেয়ার দেখতে পেলাম। এক মেয়ে সেটা ঠেলে নিয়ে এলো। হুইলচেয়ারে বন্দি নাইজেলের মাথায় বিশাল ব্যান্ডেজ তার ডানচোখটাও ঢেকে ফেলেছে। রোগাটে আর অথর্ব দেখাচ্ছে তাকে। মনে হচ্ছে ভারসাম্যহীন একজন মানুষ!

    এই ক্যালিবারের রাইফেল দিয়ে গুলি করলে নাইজেলকে ভেদ করে হুইলচেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার শরীরও বিদীর্ণ করবে বুলেট!

    কিন্তু মেয়েটা গর্ভবতী!

    আমার মধ্যে দ্বিধা এসে ভর করলো। তারপরও গভীর করে শ্বাস নিয়ে আস্তে করে ছাড়লাম আর নিজেকে তাড়া দিতে থাকলাম, মুক্তি আছে পঞ্চাশ কি ষাট গজ দূরে আর আমার আঙুলের ডগায়!

    ***

    ⤶
    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকন্ট্রোল (বেগ-বাস্টার্ড ৭) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
    Next Article দরিয়া-ই-নুর – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    Related Articles

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেক্সাস (বেগ-বাস্টার্ড ৩) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }