Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অগ্নিনিরয় – কৌশিক মজুমদার

    কৌশিক মজুমদার এক পাতা গল্প336 Mins Read0

    ষষ্ঠ পর্ব- সিন্ধুর রাত্রির জল

    সাদা স্করপিওটা যখন লালবাজারের মেন গেটের চেকিং-এর সামনে পৌঁছাল, তখন খেয়াল হল, এই আমার প্রথম লালবাজারে আসা। সঙ্গের পুলিশদের মধ্যে একজন মুখ বাড়িয়ে “স্টাফ” বলে আই কার্ড দেখানোতে গেট খুলে গেল। ঢুকতে ঢুকতে মনে পড়ল, এখানেই না এককালে প্রিয়নাথ দারোগার পোস্টিং ছিল! হয়তো আমার মতো একদিন তারিণীচরণও এসেছিল এই ভবনে। গাড়ি এসে থামল মাঝের বিরাট চত্বরে। অন্ধকার হয়ে এসেছে। তবু বেশ বুঝতে পারছি চারিদিকে আমায় ঘিরে রয়েছে কলকাতার কলোনিয়াল যুগের বিরাট এক ইমারত। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে। ঠিক এই কেসটার মতো। মুক্তি কোথায়? জানা নেই। বাঁদিকে বেঁকে সোজা উপরে দোতলার সিঁড়ি। তারপর আবার বারান্দা। সেই বারান্দার একেবারে শেষে বিরাট কাঠের দরজাওয়ালা এক রুমের সামনে আমাকে নিয়ে হাজির করল আমার দুই সঙ্গী। দরজায় পিতলের ফলকে লেখা, “সুকল্যাণ মিত্র, ইনস্পেকটর জেনারেল অফ পুলিশ”। সামনে পিয়ন বসে। একজন তাকে কী যেন একটা বলল। শুনতে পেলাম না। ঘরে ঢুকে সে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে এসে বলল, “স্যার আপনাদের ডাকছেন।”

    বিরাট বড়ো ঘর। একদিকে সেক্রেটারিয়েট টেবিল পাতা। সামনে চেয়ার আছে বেশ কয়েকটা। কিন্তু ওদিকে কেউ নেই। সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরা গোলগাল হাসিমুখ এক প্রৌঢ় বসে আছেন চেয়ার টেবিলের ঠিক উলটো দিকের কৌচে। সামনে একটা ছোটো কফি টেবিল। আমাকে দেখেই সামান্য হেসে বললেন “এসো, এসো। তুমি দেখি একেবারে বাচ্চা ছেলে। আমার ছেলের বয়সি। তাই তুমি করেই বললাম। অসুবিধা নেই তো?”

    “না স্যার, ইটস ওকে।”

    শুরুতেই আলোচনাটায় একটা ইনফরমাল টোন এনে আমায় অনেকটা সহজ করে দিলেন ভদ্রলোক। প্রথম দেখাতেই ভদ্রলোককে ভালো লাগতে শুরু করেছে। কিন্তু আমায় কেন ডাকা হল, না জানলে শাস্তি পাচ্ছি না। “সুমন, তোমরা যাও এখন। আর হ্যাঁ, বাইরে প্রহ্লাদকে বলে যাও দুটো কফিপাঠাতে”, বলেই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “কফি চলে তো?”

    না বলার প্রশ্নই নেই। পড়েছি পুলিশের হাতে, কফি খেতে হবে সাথে।

    দুজন চলে যাবার পর ভদ্রলোক আমাকে পাশে বসালেন। ওঁর অন্যপাশে প্রচুর ফাইলপত্র আর ব্রাউন কাগজে মোড়া খাম। তাদেরই একটা থেকে এক টুকরো কাগজ হাতে তুলে ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুর্বসু রায়। প্রাইভেট ডিটেকটিভ। ক্লাইভ স্ট্রিটে অফিস। ডিভোর্সের কাজ করা হয় মূলত। গোয়েন্দাগিরি ছাড়া আর কী করা হয়?”

    “কিছু না। এটাই করি।”

    “স্ট্রেঞ্জ! তাতে যা হয়, সেই আয়ে চলে যায়?”

    “একা মানুষ। বাবা সামান্য কিছু রেখে গেছিলেন ব্যাংকে, সেখান থেকে সুদ পাই মাসে মাসে।”

    “ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছ। যাদবপুর? তাই তো? আমার ছেলেও পড়েছিল। সিভিল। এখন বিদেশে। ও তোমার চেয়ে সামান্য বড়োই হবে।”

    এসব আলোচনা করতে নিশ্চিত আমাকে ডাকা হয়নি। ভদ্রলোক ‘আইস ব্রেক’ করছেন। আমাকে সহজ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এটা তখনই হয়, যখন এর ঠিক পরেই কোনও বড়ো ধাক্কা আসে। আমি ধাক্কার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

    ভদ্রলোক এবার খাম খুলে কতগুলো ফটো বার করলেন। বললেন, “একটা খুব দরকারি কাজে তোমায় ডেকে পাঠিয়েছি। তোমার সাহায্য লাগবে। তোমাকে কতগুলো ছবি দেখাব। প্রথমে দ্যাখো চিনতে পারো কি না? আর পারলে বলো কবে, কোথায় এগুলো তোলা হয়েছে? একটা একটা করে দিচ্ছি।”

    সুকল্যাণবাবু প্রথম ছবিটা হাতে দিতেই চমকে উঠলাম। চন্দননগর স্ট্র্যান্ড। ধাপে ধাপে নেমে যাওয়া সিঁড়ির একটা ধাপে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছেন অমিতাভ মুখার্জি। আর ক্যামেরার দিকে পিঠ ফিরিয়ে থাকা অলিভ গ্রিন টিশার্টটা গতকালও পরেছি। কিন্তু এ ছবি……

    “এ তো আমি আর অমিতাভবাবু।”

    “ঠিক। কিন্তু কবে?”

    “যেদিন দেবাশিসদার বডি পাওয়া গেল। মানে… গত বিশে জুন”

    “গ্রেট। এবার এটা দ্যাখো।”

    “বিধান সরণি। আমি আর অমিতাভবাবু। এখান থেকেই বিশ্বজিতের বড়ি পাওয়া গেছিল।”

    “কবে?”

    “পনেরো দিন পরে। জুলাইয়ের পাঁচ।”

    ভদ্রলোক হাতের কাগজের সঙ্গে মিলিয়ে নিলেন বোধহয়। “একদম ঠিক। আচ্ছা এবার?”

    “এবারের ছবিটা দেবাশিসদার বাড়ির সামনে তোলা। দরজার ভিতরে দরজা খুলে কেউ একটা দাঁড়িয়ে আছেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে না। বাইরে আমি, বাইকে বসা।”

    “ভিতরে কে?”

    “খুব স্বাভাবিক, দেবাশিসদাই হবেন। আমি আজ অবধি ওঁর বাড়িতে ওঁকে ছাড়া কাউকে দেখিনি।”

    “কবে তোলা?”

    ঠিক তখনই ব্যাপারটা আমার মধ্যে সিঙ্ক ইন করল। এই ছবি তো কম করেও বছর তিনেক আগে তোলা। যে শার্টটা আমার গায়ে, সেটা বহুদিন হল পরি না। এত আগের ছবি পুলিশের কাছে এল কীভাবে? আর কেন?

    “মনে নেই। তবে ২০১৫ সালের আশেপাশে।”

    “আর এটা?”

    “এটাতেও আমি। এ তো চন্দননগরের বড়বাজার দিয়ে যাচ্ছি। তাহলে হয়তো দেবাশিসদার বাড়িতেই গেছিলাম।”

    “কবে?’

    “বলা খুব মুশকিল। তবে বছরখানেক বা তার বেশিই হবে। সঠিক ডেট বলতে পারব না।”

    “আচ্ছা তুমি শিওর, এটা যেদিন তোলা, সেদিন তুমি দেবাশিসের বাড়িতেই গেছিলে?”

    “দেবাশিসদার বাড়ি যাওয়া বাদে চন্দননগর বিশেষ যাওয়া হত না। অবশ্য একেবারে যেতাম না, তা বলা মিথ্যে। চুঁচুড়াতে ভিটেবাড়ি গেলে অনেকসময় ঘুরতে যেতাম। এটা কবে তোলা না বললে বুঝব না।”

    “১২ নভেম্বর, ২০১৭। কিছু মাথায় এল?”

    “উঁহুঁ। সিরিয়াসলি মনে পড়ছে না। আচ্ছা হ্যাঁ, নভেম্বর। বাড়ি গেছিলাম। জেঠুর ছেলে নেশা করে জেঠিমাকে মারছিল। তাকে বোঝাতে।”

    “তারিখটা এটাই?”

    “সেটা ভুলে গেছি।”

    “বাদ দাও। এবার এটা দ্যাখো।”

    “ও বাবা! এ তো রাতের ছবি। দাঁড়ান দাঁড়ান। দেবাশিসদা আর অমিতাভবাবু। দেবাশিসদার বাড়ির সামনে। এটার ডেট আমি শিওর। ৩ জুলাই। সাল বলতে পারব না। সেটা আপনি অমিতাভবাবুকে জিজ্ঞেস করে নিলে ভালো।”

    “ডেট নিয়ে এত শিওর হচ্ছ কী করে?”

    “দেবাশিসদার পোশাক। এই অদ্ভুতুড়ে পোশাকটা প্রতি বছর ওই দিনে পরতেন তিনি। ওই দিন নাকি ওঁর জন্মদিন। ওঁর বাবা ওঁকে এই পোশাকটা দিয়েছিলেন।”

    “তুমি গেছ ওঁর জন্মদিনে?

    “একবার। একেবারে শুরুতে।”

    “কে কে এসেছিল?”

    “কেউ না। শুধু আমি। ওঁর স্ত্রী-ও না। অবশ্য এখন জানি তখনই সেপারেশন চলছিল।”

    “অমিতাভ আসেনি?”

    “আমি দেখিনি। ইনফ্যাক্ট দেবাশিসদা মারা যাবার আগে আমি কোনও দিন ওঁকে দেখিনি। আমরা দুজনেই দেবাশিসদার বাড়ি যেতাম। কিন্তু উনি টাইম ম্যানেজমেন্ট এত ভালো করতেন, দুজনের কোনও দিন সাক্ষাৎ হয়নি।”

    “আর কাউকে দেখোনি কোনও দিন?”

    “আর কে?”

    “এই ছবিটা দ্যাখো।”

    “এ তো বেশ অন্ধকারে তোলা ছবি। এটা দেবাশিসদা। এই যে সেই হলুদ ফতুয়া কিছুটা বোঝা যাচ্ছে আর কাঁধের ঝোলা ব্যাগ। কিন্তু পাশে পিছন ফিরে কে দাঁড়িয়ে?”

    “সেটাই আমার প্রশ্ন। চেনো?”

    আমি চোখের খুব কাছে ছবিটা নিয়ে এলাম। পিছন ফিরে একজন দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে। অল্প আলোতে অবয়বটুকু ছাড়া খুব বেশি কিছু চেনা যাচ্ছে না। কিন্তু কেন যেন মনে হল আমি একে চিনি। এই দাঁড়ানোর ভঙ্গি কোথাও দেখেছি। খুব সম্প্রতি। কোথায় মনে পড়ছে না। সেটাই বললাম অফিসারকে। এবার তিনি অদ্ভুত এক প্রশ্ন করলেন আমায়, “বাসুকি কিংবা বাসু নামটা কি তোমার পরিচিত?”

    “বাসুকি মানে সেই নাগ দেবতা?”

    “দেবাশিসের ডান হাত।”

    বাধ্য হয়ে স্বীকার করলাম এই নামটা আমার কাছে নতুন। ভদ্রলোক খানিক কী যেন ভাবলেন। ততক্ষণে কফি এসে গেছে। সঙ্গে ক্রিম বিস্কুট। আমাকে খেতে বলে নিজেই ছবিগুলো বারবার দেখতে থাকলেন সুকল্যাণ মিত্র।

    “আচ্ছা, এবার কফি খেতে খেতে একটু ভাবো। তারপর বলো দেখি, তোমার সঙ্গে দেবাশিসের আলাপের প্রথম থেকে শেষ অবধি প্রতিদিন কী কী হত? আলাপ কেমন করে হল? কিচ্ছু বাদ দেবে না।”

    আমি সবটাই বললাম। শুধু তাই না, দেবাশিসদার খুনের পরে যা যা হয়েছে তার প্রায় পুরোটাই। প্রায় বললাম, তার কারণ আজই যে তারিণীর ডায়রিটা পেয়েছি, সেটা ইচ্ছে করেই চেপে গেলাম। এখন বললে পুলিশ ওটা বাজেয়াপ্ত করবে। ওটা দেখার অধিকার আমার প্রথম। কিন্তু যেখানে বাঘের ভয়, “আজকে ব্যান্ডেল চার্চে গেছিলে কেন?”

    এটা অর্ধসত্য বললাম। এমনকি বাবার রাখা বাইবেলটাও দেখালাম। সুকল্যাণ মিত্র ভালোভাবে উলটে পালটে দেখলেন বইটা। তারপর আমার হাতে দিয়ে বললেন, “ঠিক আছে। আপাতত কলকাতা ছেড়ে কোথাও যেয়ো না। এখন আসতে পারো।”

    আমি উঠলাম না। বসে রইলাম।

    “কিছু বলবে?”

    “হ্যাঁ স্যার। আমার আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করার আছে।”

    “কী জিজ্ঞাসা?”

    “আমি যতদূর বুঝেছিলাম, দেবাশিসদার খুন থেকেই এই কেসের শুরু। ঠিক যেমন ভেবেছিলাম, এই কেস চন্দননগর পুলিশ হ্যান্ডল করছে। এখন যা বুঝলাম, গত তিন বছর, মে বি তার চেয়েও বেশিসময় ধরে পুলিশ দেবাশিস গুহকে ফলো করছিল। শুধু তাঁকে না, তার সঙ্গে পরিচিত সবাইকে। আমিও সেই দলে আছি। আমার একটাই প্রশ্ন। কেন?”

    মৃদু হাসলেন সুকল্যাণ, “সে কথা আমি তোমাকে বলব কেন? এসব সরকারি মোস্ট কনফিডেনশিয়াল তথ্য। বলা যাবে না। সরি।”

    “স্যার, আমিও তো প্রাইভেট ডিটেকটিভ। আমিও নিজের মতো তদন্ত করে কিছু ক্লু পেয়েছি। শেয়ার করলে দুপক্ষেরই ভালো হত।”

    হো হো করে খানিক হাসলেন সুকল্যাণ মিত্র। তারপর বললেন, “প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড। আমার পুলিশের চাকরির চৌত্রিশ বছর কেটেছে। আমি এতদিনে একটা ব্যাপার পরিষ্কার বুঝেছি। প্রাইভেট ডিটেকটিভ এক জায়গাতেই থাকে। বইয়ের পাতায়। ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কিরীটী রায়, শার্লক হোমস, এদের পড়তেই ভালো লাগে। সব জায়গায় দেখবে, পুলিশ মানেই বোকা। বাস্তবে পুলিশের পক্ষে যে নেটওয়ার্কে কাজ করা পসিবল, প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটরদের কাছে তার একশো ভাগের এক ভাগ থাকে না। তুমি ডিভোর্সের কাজ করো। এই কেস তোমার ভাবনার চেয়ে অনেক বড়ো। অনেক অনেক বড়ো। প্রায় এক আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। তুমি এতে কী হেল্প করবে? বাড়ি যাও। দরকার পড়লে ডাক দেব।”

    চট করে আমার মাথা গরম হয়ে গেল। “তাই নাকি? আপনারা সব জানেন? বলুন দেখি ভূত কী জিনিস?”

    জোঁকের মুখে নুন পড়ার মতো গুটিয়ে গেলেন সুকল্যাশ। স্থিরদৃষ্টিতে খানিক চেয়ে রইলেন আমার দিকে। তারপর টেবিল থেকে জলের গেলাসটা উঠিয়ে জল খেলেন খানিকটা। মুখ গম্ভীর। সোফা ছেড়ে উঠে সোজা গিয়ে বসলেন নিজের টেবিলে। টেবিল থেকে কিছু কাগজ নিয়ে কী যেন দেখলেন। আমি চুপ করে বসে আছি। বুঝতে পারছি না, হঠকারিতা করে ফেললাম কি না। বসতেও বলছেন না, আবার যেতেও বলছেন না। বুঝলাম উনি নিজেও ধন্দে পড়ে গেছেন। ভূত ব্যাপারটা এই কেসে শিওর একটা ইম্পরট্যান্ট ব্লু, যেটা আমার জানার কথা না। ভদ্রলোক এবার ভাবছেন আমার সামনে হাতের তাস দেখানো ঠিক হবে কি না। আমি প্লেট থেকে একটা বিস্কুট তুলে চুপচাপ চিবুতে লাগলাম।

    মিনিট পাঁচেক আরও গেল এইভাবে। ঘরে কেউ কিচ্ছু বলছে না। শেষে উনিই উঠে এলেন। আবার এসে বসলেন আমার পাশে। “ওকে। ডান। বলো কী বলবে? আই অ্যাম অল ইয়ার্স।”

    “অবশ্যই বলব স্যার। কিন্তু আপনি আগে। এক্সচেঞ্জ অফ ইনফরমেশন।”

    “ওয়েল, তাহলে শোনো। তুমি নীবারের নাম শুনেছ?”

    “শুনেছি। এনজিও। হিউম্যান রাইটস এর কাজ করে।”

    “ঠিক। বাট পার্শিয়ালি। নীবার আসলে ম্যাসনিক ব্রাদারহুড থেকে ভেঙে আসা একটা অংশ। প্রায় একশো বছর আগে চন্দননগর, চুঁচুড়াতে এর উৎপত্তি। এরা ঠিক কে বা কারা, তা নিয়ে এতদিন কেউ কোনও মাথা ঘামায়নি। কিছু দেশীয় খ্রিস্টান, কিছু হিন্দু আর অ্যাংলো মিলেমিশে এই সংগঠন চালাত। মানে চালায়। ওদের অস্তিত্বই জানত না তেমন কেউ। পুলিশের র‍্যাডারেও ওরা ছিল না। প্রথম ওদের খবর আমরা পাই চেতলার এক হিজড়া খোল থেকে। তুমি নিশ্চয়ই জানো, সমাজের সব স্তরে আমাদের খোচড় মানে ইনফরমার রাখতে হয়। এক ইনফরমার আমাদের জানায়, নীবার নামে এক এনজিও নাকি আচমকা খুব অ্যাকটিভ হয়ে উঠেছে। হিজড়ারা যে-কোনো ট্র্যাফিকিং-এর সেরা অস্ত্র। সেটা ড্রাগ হোক, কিংবা মানুষ। খবর পেয়ে আমরা নীবারকে ফ্ল্যাগিং করি। তখনই জানতে পারি, নীবার না, মূলত নীবারের নামে কাজটা করছে এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান। ওয়াফি ডিব্যাসি, যে নাকি সবার কাছে দেবাশিস গুহ নামে পরিচয় দেয়। লোকটা কারও সঙ্গে মেশে না, তেমন কোনও বন্ধু নেই, যাবার মধ্যে মাঝে মাঝেই ভিজিট করে বিভিন্ন বেশ্যাপটি আর হিজড়াখোলে। আর এই নীবার-ও এক অদ্ভুত সংগঠন। এর ভিতরে ঠিক কী হচ্ছে অনেক চেষ্টা করেও জানতে পারিনি। পারফেক্ট সিক্রেট সোসাইটি। এরা মেম্বার নেয় না। সে চেষ্টা করেও দেখেছি। ফলে ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ ছাড়া কোনও গতি ছিল না। তারপরেই শুরু হল ভূতের উপদ্রব।”

    “কীরকম?”

    “কলকাতায় বিভিন্ন জায়গায় অদ্ভুত অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে লাগল। সিভিল ডিফেন্সের এক পুলিশ আচমকা মাথা খারাপ হয়ে গিয়ে রাস্তায় ঠাঁই ঠাঁই গুলি চালিয়ে শেষে নিজে নিজের মাথায় গুলি চালাল। তারপর বছর কয়েক আগে ভিক্টোরিয়ার মিউজিয়ামে কী হল মনে আছে নিশ্চয়ই?”

    “হ্যাঁ, সেই গার্ডদের একজন হঠাৎ পাগল হয়ে দর্শকদের দিকে গুলি চালায়।”

    “একজ্যাক্টলি। আর পরে জানায় তার কিছুই মনে নেই। আমরা হন্যে হয়ে যাচ্ছিলাম এইসব কেসের সমাধান করতে। সত্যিই মনে হয় এদের যেন ভূতে পেয়েছিল। মজার ব্যাপার, যে দুজন পাগল হয়ে গুলি চালিয়েছিল, দুজনের একজন সোনাগাছি, অন্যজন চন্দননগর বেশ্যাপট্টির নিয়মিত খদ্দের ছিল। যেখানে আবার দেবাশিস নীবারের কাজে যাতায়াত করত। কিন্তু এতটুকু প্রমাণে কিচ্ছু করা সম্ভব না। আর ঠিক তখনই খিদিরপুর থেকে খবর এল। হিজড়াখোলেই ইউনুস হিজড়া পাগল হয়ে অন্য তিনজন হিজড়াকে খুন করে। সেটা তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারি, সেখানেও দেবাশিসের যাতায়াত ছিল। আমরা দেবাশিসকে ক্লোজ করতে থাকি। শুধু ওকে না, ওর সঙ্গীসাথি সবাইকে। এমনকি অমিতাভকেও। তোমাকেও। হিজড়াদের একটা সুবিধে আছে। ওরা খুব ক্লোজ কম্যুনিটি। ফলে খোঁজ পাওয়া অনেক ইজি। আমরা বুঝতে পারছিলাম দেবাশিস এবার ওদের নিয়ে কিছু একটা করতে চাইছে। আমরা খোচড় ঢুকিয়ে দিলাম। সে নিয়মিত আমাদের খোঁজ দিত। কিন্তু ওদের সব কথা এত ডিস্টার্বিং আর অদ্ভুত যে, সত্যি বলে মেনে নেওয়া মুশকিল। আসলে ওরা খুব সুপারস্টিশাস কিনা…. বাদ দাও।”

    “না, না, এই জায়গাটাই আমার শোনা দরকার। আমি হয়তো হেল্প করতে পারব। বলুন।”

    “শুনলে ভাববে রূপকথার গল্প বলছি। যাই হোক, যা শুনেছি ভাবাটিম বলছি। দেবাশিসের কাছে নাকি একটা ছোটো একটা বাক্স ছিল। সিসার লাইনিং দেওয়া। সেই বাক্সে অদ্ভুত কিছু বোতলে অজানা মেডিসিন থাকত। দেবাশিস নিজে এটাকে বলত ভূতের বাক্স। এই মেডিসিন খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দিলে খানিক বাদে যে খেল তার মাথা কাজ করে না। সে পাগলের মতো আচরণ করে। তাও এমনি পাগল না। হিংস্র পাগল। মানে…”

    “মানে ডাক্তার জেকিল ওই ওষুধে মিস্টার হাইড হয়ে যান। তাই তো?”

    “ঠিক। একেবারে ঠিক”, সুকল্যাণ মিত্র বেশ প্রশংসার স্বরে বললেন। “দেবাশিস এবার চেতলা খোলে রেগুলার যাতায়াত করতে থাকল। খিদিরপুরে ওর মেইন অপারেটিভ ছিল ইউনুস। ইউনুস পুলিশ কাস্টডিতে আসার পর বেশ কিছুদিন দেবাশিস ঘরবন্দি হয়ে যায়। চেতলা থেকে খবর আসে ভূতের বাক্স হারিয়েছে। দেবাশিস হন্যে হয়ে সেটা খুঁজছে।”

    “তারপর? পেল?”

    “হিয়ার কামস বিশ্বজিৎ। বাই সেক্সুয়াল। দোকানে কাজ করে। তোমার ইনফরমার। খিদিরপুরে খুনের দিন সে ওই খোলায় ছিল। ইউনুস কেমন করে সেই ভূতের পাল্লায় পড়ল জানি না, তবে বিশ্বজিৎ বাক্সটা নিয়ে কিছু একটা জানত। সে পালাবার সময় সবার অলক্ষে বাক্স চুরি করে আনে।”

    “সেটা কীভাবে জানা গেল?”

    “আমাদের আগের ইনফরমার ছিল অভয় নামে এক হিজড়া। চেতলার গুরুমা। সেটা দেবাশিস কোনওভাবে জানতে পেরে তাকে খুন করে দেয়। তখনই আমরা ঠিক করি, ওর অস্ত্রেই ওকে বধ করব। ও নিজে এক হিজড়াকে বিশ্বজিতের কাছে পাঠায়। বাক্সের খোঁজে। সে বিশ্বজিতের পার্টনার হয়ে তার বাড়িতেই থাকত। আমরা জাস্ট ওকে টিপ দিয়ে ডবল এজেন্টের কাজে লাগাই।”

    “রামানুজ?”

    “তুমি চেনো!” মিত্র মশাইয়ের ভুরু দুটো উপরে উঠে গেল। “হ্যাঁ, ও-ই। গত উনিশে জুন রামানুজ জানায়, বিশ্বজিৎ আর দেবাশিসের একটা মিটিং হতে পারে। বিশ্বজিৎ মোটা টাকার বিনিময়ে বাক্স দেবাশিসকে তুলে দেবে। আমরা মিটিং প্লেস জিজ্ঞাসা করলাম। চেতলা খোল। আমাদের লোক সেখানে মোতায়েন করলাম। হাতেনাতে ধরব। কিন্তু আসল সময় যখন এল, পাখি পালিয়েছে। তারপরেই পরপর দুটো খুন। সবকিছু ঘেঁটে গেল।”

    “দেবাশিসদার সেই বাক্স নিয়ে কী প্লান ছিল, কিছু জানা গেছে?”

    “সামান্য। যা বোঝা গেছে, ও আগে একটা এক্সপেরিমেন্ট চালাচ্ছিল। Sick experiment। বিভিন্ন মানুষের উপরে ওর সেই ওষুধ প্রয়োগ করে দেখছিল মেইনলি হিজড়া আর বেশ্যাদের এজেন্ট করেছিল, কারণ এদের ইজি অ্যাক্সেস। এরা মরলেও কারও কিছু যায় আসে না। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, এটা নেহাত মানসিক রোগ। পরে বুঝেছি আরও বড়ো শয়তানি চাল ছিল এর পিছনে।”

    “সেটা কী?”

    “অনলাইনে কিছু কিনতে গেলে প্রথমে আমরা কী দেখি? বিশেষ করে সেটা যদি কোনও ওষুধজাতীয় প্রোডাক্ট হয়?”

    “কাস্টমাররেটিং। মানে আসল ব্যবহারকারীরা কী বলছেন।”

    “ঠিক। সোজা কথায় কেস স্টাডি। তাই তো? দেবাশিসের কম্পিউটার থেকে যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এটা পরিষ্কার ও ডার্ক ওয়েবে কোটি কোটি টাকায় এটা বেচতে চাইছিল। কিন্তু যারা কিনবে, তারা মুখের কথায় বিশ্বাস করবে কেন? তারা চায় প্রত্যক্ষ প্রমাণ। সত্যিকারের কেস স্টাডি। দেবাশিসের এই এক্সপেরিমেন্টকে অসুস্থ বললাম কেন বুঝলে তো? এখানে জলজ্যান্ত মানুষকে গিনিপিগ বানিয়ে ট্রায়াল চলছিল।”

    “কারা কিনবে সেটা?”

    “কী বলছ হে তুর্বসু! এমন একটা অস্ত্র পেলে তো রাজকার্য হয়ে যাবে জল”, হীরক রাজাকে কোট করে যেন একটু মজাই পেলেন ভদ্রলোক, “দেশে হোক বা বিদেশে, দাঙ্গা লাগাতে, অপরাধ করাতে আলাদা করে আর খরচ নেই। মানুষ বিবেকশূন্য হয়ে যথা নিযুক্তোহস্মি তথা করোমি’ বলে হৃষীকেশের আজ্ঞা পালন করে যাবে। তুমি ভাবতে পারবে না পোটেনশিয়াল বায়ার সব কারা কারা ছিল। দেশবিদেশের বড়ো বড়ো মাথাদের এজেন্টরা। আফশোস একটাই, আর একটা দিন। দেবাশিস আর একটা দিন পরে খুন হলে সেই বাক্স আমাদের হাতে এসে যেত। এখন সেটা কোথায় কেউ জানে না।”

    “আর বাসুকি কে?”

    “একটা ছায়া। ছদ্মনাম। মানুষটাকে কেউ চেনে না। দেবাশিস একেবারে পক্ষীমাতার মতো লুকিয়ে রাখত একে। একে নিয়ে সে কী করতে চেয়েছিল সেটাও সঠিক জানা নেই। এই ছবিটা ছাড়া কিছু পাওয়া যায়নি এর বিষয়ে।”

    “বুঝলাম। জিগস পাজলের অনেকটা ভরাট হল। তবে আপনি বলছিলেন না, বাক্স পেলেই দেবাশিসদা ওটা বেচে দিতেন, পারতেন না। সলিড কেস স্টাডি থাকলেও না।”

    “কেন?”

    “ভেবে দেখুন, আপনিই যদি কোটি টাকা দিয়ে এমন একটা জিনিস কেনেন, আপনি কী চাইবেন? আপনি চাইবেন যাতে ওই বাক্সের মেটেরিয়াল শেষ হলে আপনি পরে আরও বানাতে পারেন। তাই তো? ইন ফ্যাক্টসেই জন্যেই আমার ধারণা, দেবাশিসদা এতদিন বাক্সটা বেচতে পারেননি। মাস স্কেলে বানানোর ফর্মুলা ওঁর কাছে ছিল না।”

    “হ্যাঁ, কিন্তু…” আমতা আমতা করেন সুকল্যাণ মিত্র, “কিন্তু এমন অদ্ভুত জিনিস আজকের দিনে কেমন করে বানানো যাবে? “সেটাই আপনাকে এবার আমি বলব”, মুচকি হেসে উত্তর দিলাম।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleজু – অৎসুইশি
    Next Article নীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার

    Related Articles

    কৌশিক মজুমদার

    নোলা : খাবারের সরস গপ্পো – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    আঁধার আখ্যান – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    নীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.