Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অগ্নিনিরয় – কৌশিক মজুমদার

    কৌশিক মজুমদার এক পাতা গল্প336 Mins Read0

    একাদশ পর্ব- ধূসর মৃত্যুর মুখ

    শহর কলকাতায় মুষলধারায় বৃষ্টি খুব একটা হয় না। বৃষ্টি যদি বা হয়, মাটির আগুন উত্তাপ গরম হাওয়ায় বয়ে উঠে যায় উপরে। তারপর তীব্র চিটচিটে ঘামের মতো নেমে আসে আকাশ থেকে। বছরে একটা কি দুটো দিন আকাশ ভেঙে পড়ে। প্রথমেই ঠান্ডা বাতাস এসে উড়িয়ে নিয়ে যায় যত ধুলো, অনাহত হলদে গাছের পাতা আর কাগজের ঠোঙা। জলভরা মেঘ মৌমাছির চাকের মতো ঝুলে থাকে হাওড়া ব্রিজের উপরে। গোটা শহর নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে ঢুকে পড়তে চায় নিশ্চিত আশ্রয়ে। কোথায় যেন একটা বাজ পড়ে। চার লক্ষ ভোল্টের বিদ্যুৎ আকাশ চিরে নিজেকে সঁপে দেয় মাটিতে। বাতাসে বাতাসে ঘর্ষণে ওঠে দামামার শব্দ। তারপর বৃষ্টি নামে। গোটা রাজপথ জুড়ে সবাই প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে। ব্যস্ত টানারিকশা, পথচারী, ফুটপাথের পসরা সাজানো দোকানদার, কেউ বাদ নেই। সাদা আবছা পর্দার মতো বৃষ্টি পড়ে। ঠান্ডা বরফজলের মতো বৃষ্টি চুঁইয়ে নামে ঘাড় থেকে শিরদাঁড়া বেয়ে। কলকাতার রাস্তাঘাট নিমেষে ধূসর কাচের মতো স্বচ্ছ হয়ে যায়। চারিদিক ঝাপসা…

    রামানুজ কিছুতেই ওই ঘরটার দিকে তাকাতে পারছে না। তাকালেই একগাদা স্মৃতি, একসঙ্গে কাটানো সময়গুলো ফিরে ফিরে আসছে। রামানুজ না চাইতেই আবার তাকিয়ে ফেলে। এই ঘরেই তো শেষবার শুইয়ে রাখা হয়েছিল তার ভালোবাসার মানুষটাকে। পেট চেরা। কাটা অণ্ডকোশ মুখে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিল রামানুজের পারিক। রামানুজের ভালোবাসার মানুষ। রামানুজ এসব কিছু জানত না। গোলাপ জানত। গোলাপ তাকে সবকিছু বলেছে। বাইরে এই সৃষ্টিছাড়া বৃষ্টির মধ্যেও চেতলা খোলের সবাই যে এই ভাঙাচোরা বাড়িতে এসে হাজির হয়েছে। কারণ একটাই। প্রতিশোধ। কলকাতার হিজড়ারা এতদিন যার ভয়ে দম বন্ধ করে থাকত, সেই অজানা, প্রায় ঈশ্বরের মতো লোকটা এখন কেমন অদ্ভুতভাবে কুঁকড়ে ঘরের এক কোণে পড়ে আছে। গাঢ় ক্লোরোফর্মের ঘুম ভেঙেছে সদ্য। মাঝে মাঝেঘাড় তুলে বোঝার চেষ্টা চালাচ্ছে। উঠে বসার জন্য দুহাতের ভর নিয়ে আবার শুয়ে পড়ছে। সবাই রামানুজের পিঠ চাপড়ে দিয়েছিল। সে না থাকলে মাস্টারকে ধরা যেত না। ‘সাব্বাস’ বলেছিলেন অফিসার মুখার্জিও। অফিসার অমিতাভ মুখার্জি। প্রথমবার দেখে ভয় পেয়েছিল যাকে। ভেবেছিল এ লোক তার বন্ধু হতে পারে না। কিন্তু দিনের পর দিন চেতলা খোলে এসে তাদের সঙ্গে মিলে আজকের পরিকল্পনা করেছিল অফিসার। বলেছিল সরকার কিছু করবে না। দুদিন বাদে ফাইল ক্লোজ করে দেবে। আর যারা খুনি, তারা প্রমাণ রাখেনি কোনও। কেস দাঁড়াবে না। বিচার করতে হবে নিজেদের আদালতে। এই আকাশভাঙা বৃষ্টিতে বিধান সরণির এই ভাঙা বাড়িতে বিচারসভা বসবে। রামানুজকে যে যতই বলুক, রামানুজ জানে, এই গল্পের নায়ক সে না। নায়করা কাঁদে না। কিন্তু যতবার ওই ঘরের দিকে চোখ যাচ্ছে, রামানুজের দুচোখ জলে ভরে উঠছে অজান্তে। মাস্টারের ঠিক উলটো দিকে ছেলেটা এখনও শুয়ে আছে। জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু মাথার যন্ত্রণায় মাথা চেপে ধরে আছে দুই হাত দিয়ে। মুখে গোঙানির শব্দ। চারিদিকে চেতলা খোলের হিজড়ারা গোল হয়ে বসে। ভাঙা মেঝেতে রাখা ব্যাটারি ল্যাম্পের সাদা আলোয় গোটা ঘরে এক ভৌতিক পরিবেশ। যেন এই মুহূর্তে কোনও অলীক ঘটনা ঘটবে। একটু দূরে এক কোণে তিন-চারটে মদের বোতল আর গেলাস সাজিয়ে গোলাপ বসে আছে। মুখার্জি বলেছে আজ কড়া ইন্টারোগেশান হবে। রাম ছাড়া জমবে না। মুখার্জি নিজে একটা লোহার চেয়ারে বসে আছে ঘরের ঠিক মাঝখানে। হাতে সার্ভিস রিভলভার। দেহের ঊর্ধ্বাংশ অনাবৃত। রামানুজ এই আলো-আঁধারিতেও দেখতে পেল ঘামের একটা নদী মুখার্জির শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে আসছে। মাস্টার এখন অনেকটা সুস্থ। উঠে বসেছে। ঘোলাটে চোখ কেটে গেছে। সোজা তাকিয়ে আছে অফিসারের দিকে। ঠিক উলটো দিকের দেওয়ালে পিঠ দিয়ে এখনও ঝিম মেরে বসে আছে ছেলেটা। মাথা ঝুলে আছে নিচের দিকে। অফিসার দুজনকেই আর-একবার দেখে নিলেন। তারপর পিছন ফিরে বললেন, “শুরু করি, কী বলিস গোলাপ?”

    গোলাপ কিছু বলল না। শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।

    অফিসার মাস্টারের দিকে ঘুরে বসলেন এবার। “ওয়েলকাম হামচুপামুহাফ। এই বাড়িটা তো আপনি চেনেন। তাই না মাস্টার?”

    মাস্টার কিচ্ছু বলল না। একইভাবে তাকিয়ে রইল।

    “আচ্ছা, কিছু বলবেন না, তাই তো? এটা বলুন দেখি, সেদিন আপনি বিশ্বজিতের দোকানে কেন গেছিলেন? সিসিটিভি ফুটেজ আছে। না বলতে পারবেন না।”

    “আমি বলতে বাধ্য নই।” জড়ানো গলায় উত্তর দিলেন মাস্টার।

    “ঠিক আছে। বলবেন না যখন, সমস্যা নেই। আমি আপনার কীর্তিকলাপের সব খবর এলাহাবাদ, ওয়াশিংটন, নেপলস, এডিনবরার সব ম্যাসনিক লজগুলোতে পাঠিয়ে দেব। ব্রাদারহুডের সবাই জানুক। যাদের থেকে নীবারের টাকা জোগাড় হয়, তাদের অন্ধকারে রেখে আপনি কী করছেন সেটা তো তাদের জানা উচিত।”

    মাস্টার চুপ করে বসে রইলেন। এবার অনেকটা সোজা হয়েছেন।

    “কী করেছি আমি?”

    “ভুলে যাবেন না প্রশান্তবাবু, আমি পেশায় পুলিশ। আমাদের এমন সব টুলস আছে, যাতে যে-কোনো লোকের ই-মেইল খুলে পড়তে পারি। শুধু জানতে হবে কারটা খুলতে হবে? থ্যাংকস টু রামানুজ। ও না থাকলে আপনাকে ট্র্যাক করা যেত না।” চোখের ইশারা করলেন অফিসার। বেলা নামে এক হিজড়া একতাড়া কাগজ এনে দিল মাস্টারের হাতে।

    “দেখুন দেখি, এই আপনার করা মেইল কি না? মাঝে পয়সার অভাবে অকশন স্টোরে যাওয়া বন্ধ করেছিলেন। কিন্তু গত চার বছরে আপনার ব্যক্তিগত সম্পত্তি বেড়েছে প্রায় দুশো শতাংশ। আর তার গোটাটাই নীবারের নামে নিয়ে আসা টাকায়। সেই টাকাতেই ক্রিস্টি, সদবির মতো নিলামঘর থেকে অ্যান্টিকে বাড়ি সাজিয়েছেন আপনি। ভুল বললাম?”

    দু-এক পাতা উলটেই যা বোঝার বুঝে গেলেন মাস্টার। তারপর হাতের কাগজ ফেলে অফিসারকে বললেন, “ওকে, ডান। আপনি নীবারকে এর মধ্যে জড়াবেন না। আপনি যা জানতে চান, আমি সব বলে দেব। রাজি?”

    অফিসার উত্তর দিলেন না।

    মাস্টার আবার বললেন, “আমি নীবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিইনি। কোনও মাস্টারই তা করে না। মাস্টারের পাওয়ার থাকে একা দলের হয়ে সিদ্ধান্ত নেবার। কিন্তু তাতে ভুল হলে প্রতিফল মাস্টারকেই ভুগতে হয়। আমিও ভুগতে রাজি। বলুন, কী জানতে চান?”

    ব্যাপারটা এত সোজা হয়ে যাবে ভাবেননি মুখার্জি। তিনি একটু থমকে গেলেন। তারপর হাতের রিভলবার নাচাতে নাচাতে বললেন, “শুরু থেকে। আপনি কীভাবে নীবারে এলেন?”

    রামানুজ দেখল উলটো দিকের সেই ছোকরাও উঠে বসে মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করছে। যদিও মাথা এখনও হাত দিয়ে চেপে ধরা।

    “আমাকে দেবাশিস এনেছিল। আমি আগে এলাহাবাদে থাকতাম। এলাহাবাদের ব্রাদারহুড সংগঠন প্রায় ভেঙে যাচ্ছিল। আমি একা সেটাকে আবার দাঁড় করাই। খবর চাপা থাকে না। আমি এখানে স্টেট আর্কাইভে যোগ দিলে দেবাশিস নিজেই আমাকে নীবারের দায়িত্ব নিতে বলে। বলল, এটা প্রায় পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে। বদ্ধ ডোবা। সংগঠন চালাতে আমার মতো লোক লাগবে। নীবারের সদস্যরা প্রথমে রাজি হয়নি। কিন্তু ব্রাদারহুডে আমার সুনাম ছিল। তাই নীবারে আমাকে সর্বোচ্চ দায়িত্ব দেওয়াহয়।”

    “খুব ভালো। তারপর একদিন দেবাশিস প্রিয়নাথের পাণ্ডুলিপি পেলেন।”

    “ওটাই কাল হল। আমিই ওকে পাঠিয়েছিলাম। গোপাল দত্ত আগে নীবারের সদস্য ছিলেন। তাই কোনও ডকুমেন্ট ওঁর কাছে থাকলে সেটা বেহাত যেন না হয়, সেইজন্য ওকে পাঠাই। আমি নিজেও যেতে পারতাম। কেন যে গেলাম না…. অবশ্য আমি গেলে একটা ব্যাপার করতে পারতাম না। যেটা দেবাশিস পেরেছিল।”

    “কী?”

    “চুরি। প্রিয়নাথের পাণ্ডুলিপি আর ভূতের বাক্স চুরি করে এনেছিল। এটা আমার দ্বারা হত না।”

    “আর আপনি জেনেবুঝে চুপ করে ছিলেন?”

    “অবশ্যই। আপনি জানেন ওতে কী আছে? সে জিনিস বাইরে বেরোলে কী হতে পারে কোনও আইডিয়া আছে আপনার?”

    “জানি। গোটাটাই জানি। নীবার থেকে যখন আপনারা দেবাশিসদাকে অকারণে তাড়িয়ে দিলেন, তখন আমিই একমাত্র ওর পাশে ছিলাম। আমি। ওর এক নম্বর চ্যালা। আমি দেখেছি, কীভাবে ওকে বাধ্য করা হয়েছে নিজের বউকে অন্যের হাতে তুলে দিতে, কীভাবে দিনের পর দিন ওকে ইউজ করে আপনি ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। ও আমায় সব বলেছে। কেন করলেন এসব?”

    “আপনি গল্পের একটা দিক শুনেছেন। অন্যটা শোনেননি। শুনুন। সবই যখন জানেন, নিশ্চয়ই জানেন ভূত কী? নীবার বলেছিল এই ভূত নীবারের কাছে জমা দিতে। ও তো দেয়নিই, বরং বলে, এই সুযোগ এসেছে নীবারকে সর্বক্ষমতাশালী করার। আমরা তাতে রাজি হইনি।”

    “সেটা কীভাবে?”

    “মানুষের শরীরকে বশ মানানোর হাজার উপায় চিকিৎসাবিজ্ঞানে আছে। কিন্তু মনকে বশ মানাতে পারেনি কেউই। ঈশ্বরও ফ্রি উইলের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেন না। আর ঈশ্বর যা পারেন না, শয়তান তা পারে। ভূতের সেই এই ক্ষমতা ছিল। আর ভূতের বলে দেবাশিস নিজে ঈশ্বর হতে চেয়েছিল। বলেছিল ভূত তৈরির ফর্মুলাটা শুধু লাগবে। তারপর আর চিন্তা নেই। এ জিনিসের দারুণ ডিমান্ড হবে। ভোটের আগে দাঙ্গা বাধাতে, দেশে দেশে যুদ্ধ লাগাতে এর জুড়ি নেই। সবচেয়ে বড়ো কথা, যারা এইসব অপরাধ করবে তারা নিজেরাই ভুলে যাবে। ডার্ক ওয়েবে এই জিনিস বেচে কোটি কোটি উপার্জন হবে আমাদের। আমরা কেউই রাজি হইনি। এটা ব্রাদারহুডের সমস্ত এথিকসের বিরুদ্ধে। ওকে বারবার নির্দেশ দেওয়া হয় ও যেন ব্রাদারহুডকে ভূত ফেরত দেয়। ও দেয়নি। ওকে তাই তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ভেবেছিলাম একা হয়ে গেলে ও কিছু করতে পারবে না। ভুল ভেবেছিলাম। ও আপনাকে নিজের কনফিডেন্সে নিয়ে নেয়। ভয়ানক ভালো ম্যানিপুলেটর ছিল কিনা। পুলিশের সাপোর্ট থাকলে অনেক কিছু সম্ভব। সেটাই ও করত।”

    “কী করত?”

    “নিয়মিত হিজড়াখোলে গিয়ে মানুষের উপরে ভূতের এফেক্ট কতটা, তা নিয়ে ডেটা কালেক্ট করত। যাতে পরে জিনিসটা বেচতে পারে। আমাদের কাছে খবর ছিল। আমরা পুলিশকে টিপস দিয়েছিলাম। পুলিশ চেতলা খোল সার্চ করতে যায়। শেষ মুহূর্তে দেবাশিস এসে ইন্টারভেন করে।”

    “সেই ফর্মুলা এখন কোথায়?”

    “জানি না। দেবাশিস পায়নি এটা বলতে পারি। ওই ফর্মুলার জন্যেই তো ও তুর্বসুর সঙ্গে আলাপ জমায়। তুর্বসুর বাবা বিরূপাক্ষ চাইতেন না তুর্বসু নীবারে জড়াক। তাই অন্যভাবে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তবে ফর্মুলা পায়নি, এটা আমি নিশ্চিত। যদিও অন্য একটা লাভ হয়েছিল।”

    “কীলাভ?”

    মাস্টার উত্তর দেন না।

    “বিশ্বজিৎকে কে মেরেছে?”

    “ভাড়াটেগুন্ডা।”

    “কেন?”

    “দেবাশিসের খুনের খবর পেয়েই আমি প্যানিকড হয়ে যাই। আগে বেশ কয়েকবার ওর বাড়িতে নীবারের লোক তল্লাশি চালায়। ভয়ে ও সেই বাক্স খিদিরপুর খোলে রেখে আসে। সেখান থেকেই তা মাঝে বেহাত হয়ে বিশ্বজিতের কাছে চলে গেছিল। দেবাশিস ওকে ট্র্যাক করে। ও প্রথমে দিতে রাজি হয়নি। দেবাশিস আমায় ফোন করে বলে, আমি যদি বিশ্বজিৎকে ধমকে ওটা উদ্ধার করাতে পারি, তবে ও বাক্সটা নীবারকে দিয়ে দেবে। আমি রিস্ক নিয়েছিলাম। ভুল করেছিলাম। বিশ্বজিতের সঙ্গে আমি দেখা করি। দেবাশিস বাক্স পায়, কিন্তু নীবারকে দেয় না। উপায় না দেখে আমি ওকে বাড়িতে ডাকলাম।”

    “কবে?”

    “ও খুন হবার ঠিক আগের দিন।”

    “তারপর?”

    .

    ১৯ জুন ২০১৮, দুপুর ১.৪৫

    —আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন?

    —হ্যাঁ। বসো। কিছু কথা আছে।

    —কী কথা? যা বলবার তাড়াতাড়ি বলে ফেলুন স্যার। আমার অন্য কাজ আছে।

    —এভাবে কথা বলছ কেন? তুমি তো আগে এভাবে কথা বলতে না!

    —তখন আমার সঙ্গে সংঘের যোগ ছিল। তখন আপনাকে আমি মাস্টার বলে ডাকতাম। আপনি নিজেই সে সম্মান রাখতে পারেননি। -তুমি কি তোমার কথা রেখেছ? আমাকে যা দেবার কথা ছিল, ফেরত দাও। নইলে ফল ভালো হবে না।

    —হাহ। আপনার দৌড় আমার জানা আছে। নীবার এখন কতগুলো বুড়োদের আখড়া। নতুন কিছু কেউ করতে গেলেই তাকে বাধা দেওয়া হয়। তারা আমার কী করবে?

    —আমি চাই না তুমি সেটা দেখতে পাও। ওই বাক্স তোমার মতো লোকের কাছে সেফ না। বাক্স নীবারের।

    —বললেই হল! আমি নিজে ওই বাক্স খুঁজে পেয়েছি। আমি না জানালে আপনারা জানতে পারতেন ওটার কথা? এখন আমার নিজেদের বলে দাবি করছেন!

    —করতাম না, যদি না তুমি এটা বেচে দেবার ধান্দা করতে।

    —কে বলেছে আপনাকে?

    —নীবারের ক্ষমতা তুমি এখনও পুরোটা জানো না দেবাশিস। বাক্স ফেরত দাও। ভিতরের সব জিনিসপত্র সমেত।

    -দেব না। বেশি কথা বললে বাক্সের মাল ছড়িয়ে দেব সব জায়গায়। আমার তাতে কী? প্রচুর নিরীহ মানুষ মরবে, আর আপনি তার জন্য দায়ী থাকবেন।

    —তুমি এসব কিছুই করবে না।

    —কে বলেছে? নীবারের থেকে আমি কী পেয়েছি বলতে পারেন? অপর্ণাকে সরিয়ে নিয়েছেন, কিছু বলিনি। কিন্তু এই বাক্স আমি নীবারকে দেব না।

    —অপর্ণার উপরে তোমার কতটা ফিলিংস ছিল আমার জানা আছে। ছাড়ো। চব্বিশ ঘণ্টা সময় দিলাম। বাক্স ফেরত দাও, তা না হলে আমি লিগাল স্টেপ নেব।

    —লিগাল? সে কীরকম?

    -গত দুই বছর ধরে আর্কাইভের নানা টুকিটাকি জিনিস চুরি যাচ্ছে। প্রায়ই তাদের পাওয়া যাচ্ছে অ্যান্টিক মার্কেটে কিংবা কিউরিও শপে। আমি একটা ভিজিলেন্স কমিটি বসিয়েছিলাম। তারা গতকাল সকালে রিপোর্ট দিয়েছে। একেবারে সঠিক রিপোর্ট। এই রিপোর্টটা নিয়ে আমি দুটো কাজ করতে পারি। চেপে যেতে পারি কিংবা সরকারে ফরোয়ার্ড করতে পারি। তুমি বাক্স ফেরত দিলে আমি প্রথমটা করব, না দিলে তুমি কীভাবে ধনেপ্রাণে মরো সেটা দেখার দায়িত্ব আমার।

    —আপনি আমায় থ্রেট দিচ্ছেন? -যেভাবে নেবে। আমার বাক্স চাই। আর সেটাও চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে।

    —এবার আমি বলি? আপনি সাবধানে থাকুন। আপনার বড়ো বিপদ সামনে। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আপনিও বুঝে যাবেন আপনি কাকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করেছেন।

    —কী করবে তুমি?

    —আমাকে কিছু করতে হবে না। যা করার বাসু করবে। চললাম।

    .

    “আর সেই রাতে দেবাশিস নিজেই খুন হল”, মাথা নেড়ে বললেন প্ৰশাস্ত মজুমদার।

    “আপনি খবর পেলেন কীভাবে?”

    “পুলিশের ভিতরে আমাদের ইনফর্মার আছে। আমি জানতাম এই খবর চাপা থাকবে না। বিশ্বজিৎ সুবিধার ছেলে ছিল না। ও মুখ খুললে আমি, নীবার, সবাই বিপদে পড়ব। দেবাশিসের হাতের লেখা নকল করা খুব সোজা। বাচ্চাদের মতো গোটা গোটা। আমি হাতের লেখা নকল করে বিশ্বজিৎকে দিয়ে বলি বাসু আর দেবাশিস পালিয়েছে। ভূতের বাক্স আবার ওর কাছেই ফিরে আসবে। কিন্তু পুলিশ পিছনে লেগেছে। ওকে বাক্স নিয়ে কিছুদিন এলাহাবাদে গা ঢাকা দিতে হবে। বাক্স নিতে এই বাড়িতেই ওকে ডাকা হয়েছিল। আমাদের ভাড়াটে গুন্ডা ছিল। ওকে নিকেশ করে। দিন পনেরো বাদে সব একটু ঠান্ডা হলে আমরা বডি এক্সপোজ করি।”

    “এতদিন পরে কেন?”

    “বিশ্বজিৎ ভালো ছেলে ছিল না। কিছু হলেই ব্ল্যাকমেলের হুমকি দিত। মৃত্যুর পরে পনেরো দিন অবধি বড়ির সৎকার না হলে সে নরকে যায়। ম্যাসনিক প্রবাদ। আমি চাইনি ওই শয়তানের বাচ্চাটা স্বর্গ পাক। মরার পরেও যদি কোনও জীবন থাকে, সেটাও নরকে পচে মরুক শালা।”

    রামানুজ স্তম্ভিত হয়ে গেল। এই শাস্ত, প্রায় শিক্ষকের মতো দেখতে লোকটার মনে এত বিষ! শুধু মেরেই ক্ষান্ত হয়নি। রামানুজের পারিককে জাহান্নামে পাঠিয়েছে। রামানুজ চোখের জল মুছে ভাবতে থাকল। খুব জোর করে ভাবতে থাকল।

    এদিকে অফিসার প্যান্টের পকেট থেকে একটা পাতলা সেলোফেনের খাম বার করেছেন। চকচক করছে। রামানুজ দেখল ভিতরে সাদা একেবারে গোলমতো একটা বড়ি। এটা সে চেনে। অভয়ের ঘরের তোশকের তলায় গোলাপ পেয়েছে। গোলাপ জানে এটা কী। এটা ভূত। মানুষকে অমানুষ করে দেয়। গোলাপ নিজে এটা ছোঁয়নি। কাউকে ছুঁতেও দেয়নি। এই অফিসারটা নিজে এটাকে নিয়ে এসেছে।

    “এটা চেনেন?”

    “যদি খুব ভুল না হয়, তবে এটাই ভূতের বড়ি।”

    চিকচিক করে মুখ দিয়ে অদ্ভুত শব্দ করলেন মুখার্জি। “বাকিগুলো কোথায়?”

    “আমি জানি না। সিরিয়াসলি আমি জানি না। আমিও এটার খোঁজেই আছি। লাস্ট ছিল দেবাশিসের কাছে। ও মারা যাবার পর থেকে এটা ভ্যানিশ। অদ্ভুত চরিত্র এটার। একশো বছরে বারবার হারিয়ে গেছে। আবার ফিরে এসেছে আচমকা। আঘাত করেছে অতর্কিতে…. যখন কেউ এক্সপেক্টই করছে না।”

    “বালের কথা রাখুন। সত্যি বলুন। বাকিগুলো কোথায়?”

    “জানি না।”

    “গ্রেট… খুঁজে নেব।”

    সেলোফেন আবার পকেটে রেখে ঠান্ডাগলায় প্রশ্ন করলেন মুখার্জি, “লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট। এই বাসু কে?”

    “বাসু কেউ না। একটা ছদ্মনাম। একটা ছায়ার মতো।”

    “এর পিছনে আসল লোকটার নাম কী?”

    “জেনে কী হবে?” অদ্ভুত হাসি ফুটে ওঠে মাস্টারের মুখে। “বাসুর পিছনে যে লোকটা আছে, সে নিজেও জানে না সে বাসু। এখানেই দেবাশিসের চালাকি বলো চালাকি, শয়তানি বলো শয়তানি।”

    “দেবাশিসদাকে কে খুন করেছে?”

    “জানি না। তবে বাসু হলে অবাক হব না। আমি যতদূর ভূতকে বুঝেছি, ভূত মানুষের শয়তানি প্রবৃত্তি জাগায় ঠিকই, কিন্তু সেটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট না। বাই এনিচান্স শুভবুদ্ধি ফাঁকফোকর দিয়ে ঢুকে গেলে ভূত ব্যাক ফায়ার করে। ভিক্টর ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের তৈরি দানবটার মতো। তাই পিছনে থাকা লোকটাকে নিয়ে ভেবে লাভ নেই। সে নির্দোষ।”

    “ওয়েল। ভালো কথায় কাজ হবে না যখন…” মুখার্জি দাঁড়িয়ে নিজের বেন্ট খোলে। হাতের রিভলবার রাখে লোহার চেয়ারে। “গোলাপ, তুই একটা লার্জ পেগ বানা তো! আমি এই বুড়ো ভামটাকে বানাব। সাদা চোখে ঠিক জমছে না।”

    গোলাপ সঙ্গে সঙ্গে একটা গ্লাস ভরে রামানুজকে ডাকল নিয়ে যেতে। রামানুজ তখনও মেনে নিতে পারছে না গোটা ব্যাপারটা। যেন এমন কখনও হয়ইনি! সব মিথ্যে। তার পা টলছে। টলমল পায়ে এগিয়ে যেতে গিয়ে ধাক্কা লাগল মুখার্জির সঙ্গে।

    “ধ্যার শালা! দেখে চলতে পারিস না বাঁড়া!” খিঁচিয়ে উঠলেন মুখার্জি।

    রামানুজের মাথা কাজ করছে না। গোলাপের কাছে গিয়ে তার মাথাটা যেন ঘুরে গেল। থেবড়ে বসে পড়ল মাটিতে। দু-একজন হিজড়া এগিয়ে এল তাকে ধরতে। সে হাত নেড়ে মানা করল। একটু ধাতস্থ হয়ে মদের গেলাস এগিয়ে দিল মুখার্জির হাতে। মুখার্জি এক ঢোঁকে খেয়ে নিলেন সবটা। তারপর একটা বিকৃত ভঙ্গি করে এক হাতে বন্দুক, অন্য হাতে বেল্টটা চাবুকের মতো দোলাতে দোলাতে বললেন, “বল বাসু কে? তুই সব জানিস। আমিও জানি, শুধু কনফার্ম হতে চাইছি। বল। বলে ফেল।”

    “আমি বলব না। সরি।”

    “জানিস, তোকে আমি কী করতে পারি?”

    “আমার ত্রিসংসারে কেউ নেই মুখার্জিবাবু, মেরে ফেললেও আমি বলব না।”

    “তাই নাকি? তবে এই নে, এই নে”, বলে একের পর এক বেল্টের বাড়ি মারতে থাকলেন মুখার্জি। প্রতিবার আঘাতের পরিমাণ আগের বারের চেয়েও বেশি। প্রায় বৃদ্ধ প্রশান্ত মজুমদারের দেহটা প্রত্যেক আঘাতে কুঁকড়ে যেতে থাকল। মুখে তবুও চুঁ শব্দটি করছেন না তিনি। অফিসারের রোখ চেপে গেছে। তিনি বেল্ট ছেড়ে সোজা মজুমদারের গলা টিপে ধরলেন। মজুমদারের দম আটকে যাচ্ছে, চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেছে, জিভ বেরিয়ে যাচ্ছে। দু-তিনজন হিজড়া মুখার্জিকে ধরতে গেল। তিনি ঠেলে সরিয়ে দিলেন তাদের। রামানুজ দেখতে পেল অফিসারের সারা দেহ ঘামে ভেজা, শরীর অদ্ভুতভাবে দুলছে। মুখে শুধু একটাই কথা, “বল শালা, নাম বল… বল কে দেবাশিস গুহকে খুন করেছে?”

    আচমকা মুখার্জি যেটা করলেন সেটার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। উঠে দাঁড়িয়ে পাশে রাখা সার্ভিস রিভলভার থেকে পরপর দুটো গুলি চালালেন মজুমদারের বুকে। প্রশান্ত মজুমদারের মুখ বিকৃত হয়ে গেল। কিন্তু এই বিকৃতির মধ্যে কষ্ট যতটা আছে, তার সঙ্গে যেন একটা ব্যঙ্গের হাসিও মিশে রয়েছে। রামানুজ দেখতে পেল অতি কষ্টে তিনি একটা আঙুল তুলছেন। ডান হাতের তর্জনী। আর সে তর্জনী সোজা অফিসার মুখার্জির দিকে। আঙুলটা ধীরে ধীরে নেমে গেল। এলিয়ে পড়লেন প্রশান্ত মজুমদার।

    বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতে অফিসার ঠিক একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেলেন। হাতে বন্দুক। তবে নিশানা এবার অন্য। এই ছোকরা গোয়েন্দাটা। তুর্বসু না কী যেন নাম। ছেলেটা উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিল। এসব দেখে বসা আর দাঁড়ানোর মাঝামাঝি অদ্ভুত বেঁকেচুরে স্থির হয়ে রইল।

    “তোকেই তো দেখাল, তাই না? আমি আগেই জানতাম। তুই-ই বাসু। তুই ছাড়া কেউ হতেই পারে না। সত্যি কথা বল। তুই বাসু তো?”

    “আমি!!” বিস্ময়ে ছেলেটার কথাই যেন বন্ধ হয়ে গেল।

    “শুরু থেকেই তোর উপরে সন্দেহ আমার। দেবাশিসদা কোনও দিন জানায়নি। তুই কে। কিন্তু বলেছিলাম জানিয়ে রাখতে। যদি কোনও বিপদআপদ হয়…. বলেনি। যা ভেবেছিলাম তাই হল। তুই-ই দেবাশিসদাকে মারলি।”

    “না-আ-আ”, চিৎকার করে উঠল ছেলেটা। “বিশ্বাস করুন আমি মারিনি। কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। বিরাট ভুল।”

    “ভুল হচ্ছে না। হচ্ছিল। ইচ্ছে করে তোকে সব জায়গায় নিয়ে যেতাম আর তোর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখতাম। আমার চোখকেও ফাঁকি দিয়েছিলি? এমন ভাব করতিস কিচ্ছু জানিস না। এবার দেখলি তো, বুড়ো মরার সময় কাকে দেখাল?”

    “আপনাকে”, ক্ষীণ গলায় বলল তুর্বসু।

    “চুপ কর শুয়োরের বাচ্চা!” বুটের সপাট লাথি এসে পড়ল তুর্বসুর বুকে। গোটা দেহটা নিমেষে ছোটো হয়ে গেল কেন্নোর মতো। “তোর দাঁড়ানোর ভঙ্গি আমি চিনি। অবিকল সেই ছবিতে বাসুর মতো। দেবাশিসদা নীবারের উপর রাগে তোকেই ওদের বিরুদ্ধে মোহরা বানিয়েছিল। আর তুই, তুই শালা কালসাপ হয়ে দেবাশিসদাকেই খুন করলি?”

    “একদম ভুল! একদম! আমি এসবের কিচ্ছু জানি না। বিশ্বাস করুন”,হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল তুর্বসু।

    এবার হিজড়াদের দিকে ফিরল মুখার্জি, “কি রে, বুড়োটা মরার আগে ওকেই দেখাল তো? কি… দেখাল তো?”

    হিজড়ারা সবাই চুপ। কে ঠিক, কে ভুল বোঝা মুশকিল। প্রশান্ত মজুমদার মুখার্জির দিকে দেখিয়েছে, এটা যেমন সত্যি, তেমনি ঠিক পিছনেই তুর্বসু ছিল, এটাও সত্যি।

    “তোরা বলবি না তো? বেশ আমিই বলাচ্ছি”, অফিসার মুখার্জির গলা জড়িয়ে আসছে। আবার তুর্বসুর দিকে বন্দুক তাগ করে প্রশ্ন করলেন, “বল দেখি, দেবাশিসদার বাড়ি গিয়ে তুই কী করতিস? বল!”

    “যে-যেতাম, কফি খেতাম, আড্ডা দিতাম, চলে আসতাম।”

    “কী নিয়ে আড্ডা হত?”

    “আ-আমার মনে পড়ছে না।”

    “কিছু তো মনে আছে। এতদিন গেছিস!”

    “আমার মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা।”

    “লাস্ট কবে দেবাশিসদার বাড়ি গেছিস?”

    “মনে নেই। গত এক বছর আমাদের খুব বেশি দেখাসাক্ষাৎ হত না।”

    “আবার মিথ্যে কথা!

    কানফাটানো একটা শব্দে চমকে উঠল রামানুজ। একটু আগেই এই শব্দটা সে পেয়েছে। মুখার্জির একটা গুলি সোজা তুর্বসুকে বিঁধে দিয়েছে। কাঁধের কাছ থেকে দরদরিয়ে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। সাদা টিশার্টে লাল অংশ বাড়ছে ক্রমাগত।

    “সত্যি কথা বল। নইলে পরেরটা তোর বুকে। বল শালা বাঞ্চোত!”

    বাইরে বাজ পড়ল একটা। রামানুজ শুনতে পেল অনেকগুলো পায়ের শব্দ। কারা যেন আসছে। অফিসার মুখার্জির সেদিকে খেয়াল নেই। সে একভাবে চিৎকার করেই যাচ্ছে। এরপরের ঘটনাগুলো রামানুজের চোখের সামনে স্লো মোশান সিনেমার মতো ঘটে গেল একে একে। মিনিটখানেকের মধ্যে একগাদা পুলিশ ঘরে ঢুকে এল। সবার হাতে বন্দুক। বেশিরভাগ মুখার্জির দিকে তাক করা। সামনের একজন বয়স্ক পুলিশ মুখার্জিকে বললেন, “হ্যান্ডস আপ।” মুখার্জি শুনল না। সে আবার রিভলবার ওঠাল। আলোর ঝলক আর কানফাটানো আওয়াজ। একজন পুলিশ নেতিয়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে আবার দুটো বন্দুকের শব্দ। মুখার্জি দুই পা মুড়ে মাটিতে বসে পড়েছে। থাইয়ের কাছে প্যান্টটা লাল হয়ে যাচ্ছে। আবার কে একটা বলল, “হ্যান্ডস আপ।” এবার আরও জোরে। মুখার্জি তাও বন্দুক ফেলল না। হাত ওঠাল না। কাউকে কোনও সুযোগ না দিয়ে রিভলবারের নলটা মুখে ঢুকিয়ে ট্রিগার টেনে দিল। এবার অবশ্য আগের মতো কানফাটানো শব্দ নেই। চাপা আওয়াজ একটা। মুখার্জির পা বেঁকে আছে অদ্ভুত কোণে। এক হাত পাশে ছড়ানো। অন্য হাতে এখনও রিভলবার ধরা। মাথার পিছন থেকে একটা রক্তের সরু ধারা বেরিয়ে আসছে। পিছনের দেওয়ালটায় যেন কেউ পানের পিক ফেলেছে, এমন লাল। মাঝে মাঝে সাদা সাদা কী সব। রামানুজ জানে এগুলো অমিতাভ মুখার্জির মস্তিষ্কের অংশ। সেই মস্তিষ্ক, যা শেষ মুহূর্তে আর কাজ করছিল না। সেই মস্তিষ্ক যাতে ভূত ভর করেছিল।

    কোনও শিক্ষাই বিফলে যায় না। দাশরথির মতো পকেটমারের সেরা মিস্তিরি হতে পারত সে। প্রায় অন্ধকার ঘরে এক পুলিশের পকেট থেকে সেলোফেন নেওয়া তার বাঁ হাতের কাজ। কিন্তু তাকে তো নিতেই হত। নইলে মাস্টার শাস্তি পেত না যে! লোকটা বিশ্বজিৎকে খুন করিয়েছিল। আর বিশ্বজিৎ এই দুনিয়ায় তার সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষ।

    .

    ছিল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleজু – অৎসুইশি
    Next Article নীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার

    Related Articles

    কৌশিক মজুমদার

    নোলা : খাবারের সরস গপ্পো – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    আঁধার আখ্যান – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    নীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.