Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অগ্নিবীণা – কাজী নজরুল ইসলাম

    কাজী নজরুল ইসলাম এক পাতা গল্প131 Mins Read0

    কামাল পাশা

    [তখন শরৎ-সন্ধ্যা। আস্‌মানের আঙিনা তখন কার্‌বালা ময়দানের মতো খুনখারাবির রঙে রঙিন। সেদিনকার মহা-আহবে গ্রীক-সৈন্য সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হইহা গিয়াছে। তাহাদের অধিকাংশ সৈন্যই রণস্থলে হত অবস্থায় পড়িয়া রহিয়াছে। বাকি সব প্রাণপণে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিতেছে। তুরস্কের জাতীয় সৈন্যদলের কাণ্ডারী বিশ্বত্রাস মহাবাহু কামাল-পাশা মহাহর্ষে রণস্থল হইতে তাম্বুতে ফিরিতেছেন। বিজয়োন্মত্ত সৈন্যদল মহাকল্লোলে অম্বর-ধরণী কাঁপাইয়া তুলিতেছে। তাহাদের প্রত্যেকের বুকে পিঠে দুই জন করিয়া নিহত বা আহত সৈন্য বাঁধা। যাহারা ফিরিতেছে তাহাদেরও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গোলাগুলির আঘাতে, বেয়নটের খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত, পোষাক-পরিচ্ছদ ছিন্নভিন্ন, পা হইতে মাথা পর্যন্ত রক্তরঞ্জিত। তাহাদের কিন্তু সে দিকে ভ্রূক্ষেপও নাই। উদ্দাম বিজয়োন্মাদনার নেশায় মৃত্যু-কাতর রণক্লান্তি ভুলিয়া গিয়া তাহারা যেন খেপিয়া উঠিয়াছে। ভাঙা সঙ্গীনের আগায় রক্ত-ফেজ উড়াইয়া ভাঙা-খাটিয়া-আদি-দ্বারা-নির্মিত এক অভিনব চৌদলে কামালকে বসাইয়া বিষম হল্লা করিতে করিতে তাহারা মার্চ করিতেছে। ভূমিকম্পের সময় সাগর কল্লোলের মতো তাহাদের বিপুল বিজয়ধ্বনি আকাশে-বাতাসে যেন কেমন একটা ভীতি-কম্পনের সৃজন করিতেছে। বহু দূর হইতে সে রণ-তাণ্ডব নৃত্যের ও প্রবল ভেরী-তূরীর ঘন রোল শোনা যাইতেছে। অত্যধিক আনন্দে অনেকেরই ঘন ঘন রোমাঞ্চ হইতেছিল। অনেকেরই চোখ দিয়া অশ্রু গড়াইয়া পড়িতেছিল।]

          [সৈন্য-বাহিনী দাঁড়াইয়া। হাবিলদার-মেজর তাহাদের মার্চ করাইবার জন্য প্রস্তুত হইতেছিল। বিজয়োন্মত্ত সৈন্যগণ গাইতেছিল,–]
      	
    
    ঐ খেপেছে পাগ্‌লি মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,
    অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্‌সে সামাল সামাল তাই।
                কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
    হো হো   কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
    
    [হাবিলদার-মাজর মার্চের হুকুম করিল,-কুইক্ মার্চ!]
    
          লেফ্‌ট! রাইট! লেফ্‌ট!!
          লেফ্‌ট! রাইট! লেফ্‌ট!!
    
    [সৈন্যগণ গাহিতে গাহিতে মার্চ করিতে লাগিল]
    
         ঐ খেপেছে পাগ্‌লি মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,
         অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্‌সে সামাল সামাল তাই!
                 কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
    হো হো    কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
    
    [হাবিলদার-মেজর;- লেফ্‌ট্! রাইট!]
    
    সাব্বাস্ ভাই! সাব্বাস্ দিই, সাব্বাস্ তোর শম্‌শেরে।
    পাঠিয়ে দিলি দুশ্‌মনে সব যম-ঘর একদম্‌-সে রে!
          বল্‌ দেখি ভাই বল্ হাঁ রে,
    দুনিয়ার কে ডর্ করে না তুর্কির তেজ তলোয়ারে?
    
          [লেফট্! রাইট! লেফ্‌ট্!]
    
         খুব কিয়া ভাই খুব কিয়া!
    বুজ্‌দিল্ ঐ দুশ্‌মন্ সব বিল্‌কুল্ সাফ হো গিয়া!
          খুব কিয়া ভাই খুব কিয়া!
               হুর্‌রো হো!
               হুর্‌রো হো!
    দস্যুগুলোয় সাম্‌লাতে যে এমনি দামাল কামাল চাই!
               কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
    হো হো  কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
    
    [হাবিলদার-মেজর;- সাবাস সিপাই! লেফ্‌ট্! রাইট্! লেফ্‌ট!]
    
    শির হতে এই পাঁও-তক্ ভাই লাল-লালে-লাল খুন মেখে
          রণ-ভিতুদের শান্তি-বাণী শুন্‌বে কে?
               পিণ্ডারিদের খুন-রঙিন
               নোখ-ভাঙা এই নীল সঙিন
    তৈয়ার হেয়্ হর্দম ভাই ফাড়্‌তে যিগর্ শত্রুদের!
    হিংসুক-দল! জোর তুলেছি শোধ্ তাদের!
               সাবাস্ জোয়ান! সাবাস্!
    ক্ষীণজীবি ঐ জীবগুলোকে পায়ের তলেই দাবাস্–
          এম্‌নি করে রে–
          এমনি জোরে রে–
    ক্ষীণজীবি ঐ জীবগুলোকে পায়ের তলেই দাবাস্!–
    ঐ চেয়ে দ্যাখ্ আসমানে আজ রক্ত-রবির আভাস!–
          সাবাস্ জোয়ান! সাবাস্!! 
    
          [লেফট্! রাইট! লেফ্‌ট্]
    
    হিংসুটে ঐ জীবগুলো ভাই নাম ডুবালে সৈনিকের,
    তাই তারা আজ নেস্ত-নাবুদ, আমরা মোটেই হইনি জের !
          পরের মুলুক লুট করে খায় ডাকাত তারা ডাকাত !
    তাই   তাদের তারে বরাদ্দ ভাই আঘাত শুধু আঘাত !
                কি বলো ভাই শ্যাঙাত?
                         হুর্‌রো হো !
                         হুর্‌রো হো ! !
          দনুজ দলে দল্‌তে দাদা এম্‌নি দামাল কামাল চাই !
                   কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
    হো হো       কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
    
    [হাবিলদার মেজর: রাইট্ হুইল্! লেফ‌্ট্ রাইট্! লেফ্‌ট্!
          সৈন্যগণ ডানদিকে মোড় ফিরিল।]
    
    আজাদ মানুষ বন্দী করে, অধীন করে স্বাধীন দেশ,
    কুল্ মুলুকের কুষ্টি করে জোর দেখালে ক'দিন বেশ,
    মোদের হাতে তুর্কি-নাচন নাচ্‌লে তাধিন্ তাধিন্ শেষ!
                       হুর্‌রো হো!
                       হুর্‌রো হো!
    বদ্‌-নসিবের বরাত খারাব বরাদ্দ তাই কর্‌লে কি না আল্লায়,
    পিশাচগুলো পড়্‌ল এসে পেল্লায় এই পাগলাদেরই পাল্লায়!
               এই    পাগলাদেরই পাল্লায়!!
                        হুর্‌রো হো!
                        হুর্‌রো–
    ওদের     কল্লা দেখে আল্লা ডরায়, হল্লা শুধু হল্লা,
             ওদের    হল্লা শুধু হল্লা,
    এক মুর্গির জোর গায়ে নেই, ধর্‌তে আসেন তুর্কি-তাজি
                    মর্দ গাজি মোল্লা!
                    হাঃ! হাঃ! হাঃ!
          হেসে   নাড়িই ছেড়ে বা!
          হা হা   হাঃ! হাঃ! হাঃ!
    
    [হাবিলদার-মেজর-সাবাস সিপাই! লেফ্‌ট্ রাইট্! লেফ্‌ট্!
                                    সাবাস সিপাই! ফের বল ভাই!]
    
    ঐ খেপেছে পাগলি মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই!
    অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্‌সে সামাল সামাল তাই!
          কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
    
    হো হো  কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
    
    [হাবিলদার-মেজর;- লেফ্‌ট্ হুইল্! য়্যাজ্‌ য়ু ওয়্যার্!- রাইট হুইল!–
                লেফ্‌ট্! রাইট! লেফট্‌!]
    [সৈন্যদের আঁখির সামনে অস্ত-রবির আশ্চর্য রঙের খেলা ভাসিয়া উঠিল।]
    
    দেখ্‌চ কি দোস্ত অমন করে? হৌ হৌ হৌ!
    সত্যি তো ভাই!– সন্ধেটা আজ দেখতে যেন সৈনিকেরই বৌ!
          শহীদ সেনার টুক্‌টুকে বৌ লাল-পিরাহান-পরা,
          স্বামীর খুনের ছোপ-দেওয়া, তায় ডগডগে আন্‌কোরা!–
    না না না,–কল্‌জে যেন টুকরো-করে-কাটা
    হাজার তরুণ শহীদ বীরের,–শিউরে উঠে গা'টা!
    আস্‌মানের ঐ সিং-দরজায় টাঙিয়েছে কোন্ কসাই!
    দেখতে পেলে এক্ষুনি গে এই ছোরাটা কল্‌জেতে তার বসাই!
                        মুণ্ডুটা তার খসাই!
    গোস্বাতে আর পাইনে ভেবে কি যে করি দশাই!
    
    [হাবিলদার-মেজর-সাবাস সিপাই! লেফ্‌ট্! রাইট্! লেফ্‌ট্!]
    [ঢালু পার্বত্য পথ, সৈন্যগণ বুকের পিঠের নিহত ও আহত সৈন্যদের ধরিয়া সন্তর্পণে নামিল।]
    
                      আহা কচি ভাইরা আমার রে!
          এমন কাঁচা জানগুলো খান্‌ খান্‌ করেছে কোন্‌ সে চামার রে?
                        আহা কচি ভাইরা আমার রে! !
    
    [সাম্‌নে উপত্যকা। হাবিলদার মেজর :– লেফ্‌ট্ ফর্ম! সৈন্য- বাহিনীর মুখ হঠাৎ বামদিকে ফিরিয়া গেল! হাবিলদার মেজর :-ফর্‌ওয়ার্ড ! লেফ্‌ট্ ! রাইট্ ! লেফ্‌ট্ !]
    
    
                         আস্‌মানের ঐ আঙরাখা
                         খুন-খারাবির রঙ মাখা
                         কি খুবসুরৎ বাঃ রে বা !
                         জোর বাজা ভাই কাহারবা!
                   হোক্ না ভাই এ কারবালা ময়দান–
                   আমরা যে গাই সাচ্চারই জয়-গান !
                             হোক্ না এ তোর কার্‌বালা ময়দান ! !
                                          হুর্‌রো হো !
                                          হুর্‌রো–
    
    [সাম্‌নে উপত্যকা– হঠাৎ যেন পথ হারাইয়া ফেলিয়াছে। হাবিলদার-মেজর পথ খুঁজিতে লাগিল। হুকুম দিয়া গেল– 'মার্ক্ টাইম্।' সৈন্যরা এক স্থানেই দাঁড়াইয়া পা আছড়াইতে লাগিল–]
    
    
                      দ্রাম্‌! দ্রাম্‍! দ্রাম!
                      লেফ্‌ট্! রাইট! লেফ্‌ট!
                      দ্রাম্‌! দ্রাম্! দ্রাম্!
    আস্‌মানে ঐ ভাস্‌মান যে মস্ত দুটো রঙের তাল,
    একটা নিবিড় নীল-সিয়া আর একটা খুবই গভীর লাল,–
               বুঝ্‌লে ভাই! ঐ নীল সিয়াটা শত্রুদের!
              দেখ্‌তে নারে কারুর ভালো,
    তাইতে কালো রক্ত-ধারার বইছে শিরায় স্রোত ওদের।
                     হিংস্র ওরা হিংস্র পশুর দল!
               গৃধ্নু ওরা, লুব্ধ ওদের লক্ষ্য অসুর বল–
                     হিংস্র ওরা হিংস্র পশুর দল!
                     জালিম ওরা অত্যাচারী!
               সার জেনেছে সত্য যাহা হত্যা তারই!
                     জালিম ওরা অত্যাচারী!
                     সৈনিকের এই গৈরিকে ভাই–
                     জোর অপমান করলে ওরাই,
               তাই তো ওদের মুখ কালো আজ, খুন যেন নীল জল!–
                         ওরা    হিংস্র পশুর দল!
                         ওরা    হিংস্র পশুর দল!!
    
    [হাবিলদার-মেজর পথ খুঁজিয়া ফিরিয়া অর্ডার দিল-ফর্‌ওয়ার্ড! লেফ্‌ট্ হুইল্–
               সৈন্যগণ আবার চলিতে লাগিল-লেফ্‌ট্ রাইট্! লেফ্‌ট্!]
    
          সাচ্চা ছিল সৈন্য যারা শহীদ হলো মরে।
          তোদের মতন পিঠ ফেরেনি প্রাণটা হাতে করে,–
                  ওরা     শহীদ হলো মরে!
                  পিট্‌নি খেয়ে পিঠ যে তোদের ঢিট হয়েছে! কেমন!
                  পৃষ্ঠে তোদের বর্শা বেঁধা, বীর সে তোরা এমন!
                        মুর্দারা সব যুদ্ধে আসিস্‌! যা যা!
    খুন দেখেছিস্ বীরের? হা দেখ্ টক্‌টকে লাল কেমন গরম তাজা!
                                      মুর্দারা সব যা যা!!
    
    [বলিয়াই কটিদেশ হইতে ছোরা খুলিয়া হাতের রক্ত লইয়া দেখাইল]
    
                    ত্রঁরাই বলেন হবেন রাজা!
                    আরে যা যা! উচিত সাজা
          তাই দিয়েছে শক্ত ছেলে কামাল ভাই!
    
                  [হাবিলদার মেজর;- সাবাস সিপাই!]
    
                     এই তো চাই! এই তো চাই!
    থাক্‌লে স্বাধীন সবাই আছি, নেই তো নাই, নেই তো নাই!
                                        এই তো চাই!!
    
    [কতকগুলি লোক অশ্রুপূর্ণ নয়নে এই দৃশ্য দেখিবার জন্য ছুটিয়া আসিতেছিল।
             তাহাদের দেখিয়া সৈন্যগণ আরও উত্তেজিত হইয়া উঠিল।]
    
                         মার্ দিয়া ভাই মার্ দিয়া!
                         দুশ্‌মন্ সব হার্ গিয়া!
                                   কিল্লা ফতে হো দিয়া।
          পর্‌ওয়া নেহি, যা নে দো ভাই যো গিয়া!
                        কিল্লা ফতে হো গিয়া!
                                    হুর্‌রো হো!
                                    হুর্‌রো হো!
    
    [হাবিলদার-মেজর;-সাবাস জোয়ান! লেফ্‌ট্! রাইট্!]
    
          জোর্‌সে চলো পা মিলিয়ে,
                          গা হিলিয়ে,
                 এম্‌নি করে হাত দুলিয়ে!
          দাদ্‌রা তালে 'এক দুই তিন' পা মিলিয়ে
                    ঢেউএর মত যাই!
    আজ   স্বাধীন এ দেশ! আজাদ মোরা বেহেশ্‌তও না চাই!
          আর          বেহেশ্‌তও না চাই!!
    
    [হাবিলদার-মেজর:- সাবাস সিপাই! ফের বল ভাই!]
    
          ঐ খেপেছে পাগলি মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,
          অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোর্‌সে সামাল তাই!
                         কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !
            হো হো    কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই ! !
    
    [সৈন্যদল এক নগরের পার্শ্ব দিয়া চলিতে লাগিল। নগর-বাসিনীরা ঝরকা হইতে মুখ বাড়াইয়া এই মহান দৃশ্য দেখিতেছিল; তাহদের চোখ-মুখ আনন্দাশ্রুতে আপ্লুত। আজ বধূর মুখের বোরকা খসিয়া পড়িয়াছে। ফুল ছড়াইয়া হাত দুলাইয়া তাহারা বিজয়ী বীরদের অভ্যর্থনা করিতেছিল। সৈন্যগণ চীৎকার করিয়া উঠিল।]
    
    
          ঐ শুনেছিস্‌? ঝর্‌কাতে সব বল্‌ছে ডেকে বৌ-দলে,
             'কে বীর তুমি? কে চলেছ চৌদলে?'
    চিনিস্‌নে কি? এমন বোকা বোনগুলি সব!– কামাল এ যে কামাল!
             পাগলি মায়ের দামাল ছেলে! ভাই যে তোদের!
             তা না হলে কার হবে আর রৌশন্ এমন জামাল?
                                কামাল এ যে কামাল!!
    উড়িয়ে দেবো পুড়িয়ে দেবো ঘর-বাড়ি সব সামাল!
                               ঘর-বাড়ি সব সামাল!!
                   আজ আমাদের খুন ছুটেছে, হোশ টুটেছে,
                         ডগ্‌মগিয়ে জোশ উঠেছে!
                                সাম্‌নে থেকে পালাও!
    শোহরত দাও নওরাতি আজ! হর্‌ ঘরে দীপ জ্বালাও!
                               সাম্‌নে থেকে পালাও!
                               যাও ঘরে দীপ জ্বালাও!!
    
    [হাবিলদার-মেজর:- লেফ্‌ট্ ফর্ম্! লেফ্‌ট্! রাইট! লেফ্‌ট্!-ফরওয়ার্ড্!]
    
    [বাহিনীর মুখ হঠাৎ বামদিকে ফিরিয়া গেল। পার্শ্বেই পরিখার সারি। পরিখা-ভর্তি নিহত সৈন্যের দল পচিতেছে এবং কতকগুলি অ-সামরিক নগরবাসী তাহা ডিঙাইয়া ডিঙাইয়া চলিতেছে।]
      	
    
    ইস্! দেখেছিস! ঐ কারা ভাই সাম্‌লে চলেন পা,
    ফস্‌কে মরা আধ-মরাদের মাড়িয়ে ফেলেন বা!
                       ও তাই শিউরে ওঠে গা!
                                     হাঃ হাঃ হাঃ!
                 মরল যে সে মরেই গেছে,
                        বাঁচ্‌ল যারা রইল বেঁচে!
          এই তো জানি সোজা হিসাব! দুঃখ কি তার আঁ?
          মরায় দেখে ডরায় এরা! ভয় কি মরায়? বাঃ!
                      হাঃ হাঃ হাঃ!
    
    [সম্মুখে সঙ্কীর্ণ ভগ্ন সেতু। হাবিলদার-মেজর অর্ডার দিল-'ফর্ম্ ইন্‌টু সিঙ্গল্‌ লাইন'। এক একজন করিয়া বুকের পিঠের নিহত ও আহত ভাইদের চাপিয়া ধরিয়া অতি সন্তর্পণে 'স্লো মার্চ' করিয়া পার হইতে লাগিল।]
      	
    
                                সত্যি কিন্তু ভাই!
          যখন মোদের বক্ষে-বাঁধা ভাইগুলির এই মুখের পানে চাই–
          কেমন সে এক ব্যথায় তখন প্রাণটা কাঁদে যে সে!
          কে যেন দুই বজ্র-হাতে চেপে ধরে কল্‌জেখানা পেষে!
    নিজের হাজার ঘায়েল জখম ভুলে তখন ডুক্‌রে কেন কেঁদেও ফেলি শেষে!
                  কে যেন ভাই কল্‌জেখানা পেষে!!
          ঘুমোও পিঠে, ঘুমোও বুকে, ভাইটি আমার, আহা!
          বুক যে ভরে হাহাকারে যতই তোরে সাব্বাস দিই,
                        যতই বলি বাহা!
               লক্ষ্মীমণি ভাইটি আমার, আহা!!
               ঘুমোও ঘুমোও মরণ-পরের ভাইটি আমার, আহা!!
    অস্ত-পারের দেশ পারায়ে বহুৎ সে দূর তোদের ঘরের রাহা!
          ঘুমোও এখন ঘুমোও ঘুমোও ভাইটি ছোট আহা!
                     মরণ-বধূর লাল রাঙা বর! ঘুমো!
          আহা, এমন চাঁদমুখে তোর কেউ দিল না চুমো!
    
                                    হতভাগা রে!
          মরেও যে তুই দিয়ে গেলি বহুৎ দাগা রে
                    না জানি কোন্ ফুট্‌তে-চাওয়া মানুষ-কুঁড়ির হিয়ায়!
    তরুণ জীবন এম্‌নি গেল, একটি রাতও পেলিনে রে বুকে কোনো প্রিয়ায়!
          অরুণ খুনের তরুণ শহীদ! হতভাগ্য রে!
          মরেও যে তুই দিয়ে গেলি বহুৎ দাগা রে!
    তাই যত আজ লিখ্‌নে-ওয়ালা তোদের মরণ ফুর্তি-সে জোর লেখে!
          এক লাইনে দশ হাজারের মৃত্যু-কথা! হাসি রকম দেখে‍!
          মরলে কুকুর ওদের, ওরা শহীদ-গাথার বই লেখে!
                                     খবর বেরোয় দৈনিকে,
    আর   একটি কথায় দুঃখ জানান, 'জোর মরেছে দশটা হাজার সৈনিকে!'
                 আঁখির পাতা ভিজল কি না কোনো কালো চোখের,
          জান্‌ল না হায় এ-জীবনে ঐ সে তরুণ দশটি হাজার লোকের!
          পচে মরিস পরিখাতে, মা-বোনেরাও শুনে বলে 'বাহা'!
    সৈনিকেরই সত্যিকারের ব্যথার ব্যথী কেউ কি রে নেই? আহা!–
          আয় ভাই তোর বৌ এল ঐ সন্ধ্যা মেয়ে রক্ত-চেলি পরে,
    আঁধার-শাড়ি পরবে এখন পশ্‌বে যে তোর গোরের বাসর-ঘরে!–
          ভাবতে নারি, গোরের মাটি করবে মাটি এ মুখ কেমন করে–
                  সোনা মানিক ভাইটি আমার ওরে!
          বিদায়-বেলায় আরেকটিবার দিয়ে যা ভাই চুমো!
    অনাদরের ভাইটি আমার! মাটির মায়ের কোলে এবার ঘুমো!!
    
     [নিহত সৈন্যদের নামাইয়া রাখিয়া দিয়া সেতু পার হইয়া আবার জোরে মার্চ করিতে করিতে তাহাদের রক্ত গরম হইয়া উঠিল।]
      	
    
                         ঠিক বলেছ দোস্ত তুমি!
          চোস্ত কথা! আয় দেখি–তোর হস্ত চুমি!
          মৃত্যু এরা জয় করেছে, কান্না কিসের?
    আব্-জম্-জম্ আনলে এরা, আপনি পিয়ে কল্‌সি বিষের!
          কে মরেছে? কান্না কিসের?
             বেশ করেছে!
    দেশ বাঁচাতে আপ্‌নারি জান শেষ করেছে!
         বেশ করেছে!!
         শহীদ ওরাই শহীদ!
    বীরের মতন প্রাণ দিয়েছে খুন ওদেরি লোহিত!
         শহীদ ওরাই শহীদ!!
    
    [এইবার তাহাদের তাম্বু দেখা গেল। মহাবীর আনোয়ার পাশা বহু সৈন্যসামন্ত ও সৈনিকদের আত্মীয়-স্বজন লইয়া বিজয়ী বীরদের অভ্যর্থনা করিতে আসিতেছেন দেখিয়া সৈন্যগণ আনন্দে আত্মহারা হইয়া 'ডবল মার্চ' করিতে লাগিল]
    
    
                 হুর্‌রো হো!
                     হু‌র্‌রো হো!!
    ভাই-বেরাদর পালাও এখন! দূর্ রহো! দূর্ রহো!!
               হুর্‌রো হো! হুর্‌রো হো!
    
    [কামাল পাশাকে কোলে করিয়া নাচিতে লাগিল]
    
        হৌ হৌ হৌ! কামাল জিতা রও!
                কামাল জিতা রও!
        ও কে আসে? আনোয়ার ভাই?–
        আনোয়ার ভাই! জানোয়ার সব সাফ!!
        জোর নাচো ভাই! হর্দম্ দাও লাফ!
                আজ জানোয়ার সব সাফ!
        হুর্‌রো হো! হুর্‌রো হো!!
    সব-কুছ আব্ দূর্ রহো! – হুর্‌রো হো! হুর্‌রো হো!!
    রণ জিতে জোর মন মেতেছে!-সালাম সবায় সালাম!–
                                  নাচ্‌না থামা রে!
    জখ্‌মি ঘায়েল ভাইকে আগে আস্তে নামা রে!
                   নাচ্‌না থামা রে!–
    
                [আহতদেরে নামাইতে নামাইতে]
    
         কে ভাই? হাঁ হাঁ, সালাম!
    –ঐ শোন্‌ শোন্‌ সিপাহ্‌-সালার কামাল ভাই-এর কামাল।
    
                  [সেনাপতির অর্ডার আসিল]
    
      'সাবাস! থামো! হো! হো!
       সাবাস! হল্ট্! এক! দো!'
    
    [এক নিমিষে সমস্ত কল-রোল নিস্তব্ধ হইয়া গেল। তখনো কি তারায় তারায় যেন ঐ বিজয় গীতির হারা-সুর বাজিয়া বাজিয়া ক্রমে ক্ষীণ হইতে ক্ষীণ হইয়া মিলিয়া গেল–]
      	
    
    ঐ খেপেছে পাগলি মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই!
        অসুর-পুরে শোর উঠেছে জোরসে সামাল সামাল তাই!
                  কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই।
        হো হো,     কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!!
    
    

    ——————————
    তু নে– তুমি।
    কামাল কিয়া– অভাবনীয় কাণ্ড করলে, অসম্ভব করলে! [‘কামাল মানে কিন্তু পূর্ণ’]
    শমশেরে– তরবারিকে।
    বিল্‌কুল সাফ হো গিয়া– একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে।
    খুব কিয়া–আচ্ছা করেছ। বুজদিল–ভীরু, কাপুরুষ।
    পাঁও তক– পা পর্যন্ত।
    নেস্ত-নাবুদ– ধ্বংস-বিধ্বংস
    কুল মুলুক– সমস্ত দেশ।
    আজাদ– মুক্ত
    বদ্-নসিব– দুর্ভাগ্য
    ত্যজি– যুদ্ধাশ্ব
    পিরাহান– পিরান।
    গোস্বা– ক্রোধ
    খুবসরৎ– সুন্দর
    সিয়া– কৃষ্ণবর্ণ।
    জালিম– উৎপীড়ক
    মুর্দা– মৃত
    জামাল– রূপ।
    জোশ– উত্তেজনা
    শোহরত– ঘোষণা
    নোরাতি– উৎসব-রাত্রি
    ভাই-বেরাদর– আত্মীয়-স্বজন।
    জিতা রও– বেঁচে থাক
    আব্– এখন
    জখ্‌মি – ঘায়েল, আহত।
    সিপাহি-সালার – প্রধান সেনাপতি
    কালাম– হুকুম

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleচক্রবাক – কাজী নজরুল ইসলাম
    Next Article মাসুদ রানা ৪৭১ : নরকের শহর

    Related Articles

    কাজী নজরুল ইসলাম

    চক্রবাক – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    ভাঙার গান – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    বাঁধনহারা – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    মৃত্যুক্ষুধা – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    দোলনচাঁপা – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    সন্ধ্যা – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.