Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচিত গল্পসংগ্রহ

    লেখক এক পাতা গল্প1108 Mins Read0

    মানিকলের জীবনচরিত

    এতক্ষণে সে নিশ্চিত হল। ঘাম দিয়ে ওর জ্বর সেরে গেল।

    কিছুক্ষণ আগেও সে থরথর করে কাঁপছে। এখন কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম। যারা ওকে তাড়া করেছিল সে তাদের পিছনে ফেলে চলে এসেছে। সে বার বার পেছন ফিরে তাকিয়েছে—কপালে তার চোখ উঠে গেছে, ওরা ছুটে আসছে। ওরা ওকে ঘিরে ফেলবে। রাস্তার এই জনতা ওর গাড়ি ঘিরে ফেললে, গাড়িটা এবং সে মরে যাবে। অথবা সে এবং গাড়িটা পুড়ে যাবে। পুড়ে গেলে সে আকাশ দেখতে পাবে না, ফসলের মাঠ দেখতে পাবে না। খিস্তি খেউড়, জীবন যে মহান—সে চলার সময় আর কোনোদিন, তা টের পাবে না।

    ওর কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম এখন শুকিয়ে যাচ্ছে। লক-আপের বড়ো তালাটা ঝুলিয়ে গোঁফ চাড়া দিচ্ছিল দফাদার। এত ভালো লাগল যে সে পয়সা থাকলে দু আনার তেলেভাজা অথবা আলুকাবলি কিনে দিত, শক্ত তালা দিয়ে সেপাই তাকে আগুনের হাত থেকে রক্ষা করে গেল। এত বড়ো তালা, লোহার গরাদ এবং শক্ত দেয়াল ভেদ করে ওদের সড়কি অথবা আগুনের উত্তাপ তার গায়ে লাগবে না। ওর কেমন কষ্ট হচ্ছিল ভিতরে। সিপাই চলে যেতেই মনে হল ওর জলতেষ্টা পেয়েছে। গলা শুকনো, মুখে থুথু পর্যন্ত উঠছে না। জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে সে জলতেষ্টা নিবারণের চেষ্টা করল। কেউ কাছে নেই দেখে সে দু-হাতে গরাদ ধরে ঝাঁকি দিল—কতটা শক্ত, ক-টা মানুষের ঠেলাঠেলি সহ্য করতে পারবে দেখার সময় মনে হল, চারপাশে তার অন্ধকার নামছে। পেছনের দিকে যে জানালাটা আছে সেখানে এখনই একটা কি দুটা নক্ষত্র উঁকি মারবে। আকাশে নক্ষত্র উঠে এলেই সে পাশের বেঞ্চে শুয়ে ঘুম দেবার চেষ্টা করবে। যেন সে কতকাল না ঘুমিয়ে আছে। মনে হয় মাস কাল বৎসর কেটে গেছে সে না ঘুমিয়ে আছে। আহা জীবন কী সুস্বাদু। সে কিছুক্ষণ আগেও ভেবেছিল মরে যাবে—সকলে তাকে পিটিয়ে কিংবা পুড়িয়ে মেরে ফেলবে।

    ঘটনাটা ঘটে যাবার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিৎকারে তার হুঁশ ফিরে এসেছিল। চাকার নীচে সেই মুখ—করুণ মুখখানি। দু-হাত রাস্তার উপর দেবীর মতো ছড়িয়ে দিয়েছে। চাকাটা পেটের উপর উঠে গেছে। শালা আমি এক নম্বরের হারামি। সে নিজেকে গাল দিল। টের পেলাম না, চাকার নীচে তিনটে বাচ্চা হামাগুড়ি দিয়ে নদী পারাপারের খেলা খেলছে।

    সে লক-আপের ও-পাশে নিবুনিবু আলোটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। দেখল হাতে নাগাল পাওয়া যায় কি না লম্ফটা। সে ফুঁ দিয়ে লম্ফটা নিভিয়ে দেবার চেষ্টা করল। ওরা যদি এতক্ষণে এতদূর পর্যন্ত ছুটে আসে, শালা কুত্তার বাচ্চা থানায় দ্যাখো কেমন চুপচাপ লক-আপে বসে আছে, দে, ছুঁড়ে দে, লম্ফটা ভিতরে, কুত্তার বাচ্চা আগুনে পুড়ে মরুক—লম্ফটা নিভিয়ে দেবার জন্য সে প্রাণপণ গরাদের ফাঁকে মুখ রেখে ফুঁ দিতে থাকল। লম্ফটা ছুঁড়ে দিলে ভেতরে তেলের সঙ্গে আগুন মিশে অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে পারে। লক্ষটা নাগাল পেলে সে যে করে হোক নিভিয়ে দিতে পারত—যা কিছুর ভিতর মৃত্যুভয় লুকিয়ে আছে সে দু-হাতে দূরে সরিয়ে দিতে পারলে যেন বাঁচে এখন।

    সে বেঞ্চটা টেনে অন্য দিকের দেয়ালে নিয়ে গেল। যেন গরাদের ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে অথবা বর্শা মেরে কেউ খোঁচা না দিতে পারে। সে যতটা পারল বেঞ্চটাকে পিছনের দিকে ঠেলে দিল। কারণ সে যত দ্রুত গাড়িটা নিয়ে থানায় ভিতর ঢুকে পড়েছে তত দ্রুত রাস্তার জনতা এখানে ঢুকে যেতে পারবে না। ওকে ধরার জন্য চারজন লোক সাইকেল চালিয়ে আসছিল। ওরা গাড়ির পেছনে বেগে ধেয়ে আসছে। সে কিছুতেই ধরা পড়বে না। ওরা যদি লাফ দিয়ে বাসটার ভিতর ঢুকে যায় তবুও না। কারণ সে তার সবরকমের কৌশল খাঁটিয়ে মা জননীরা, মাসিমারা আপনারা নামুন গাড়ি থেকে, গাড়ির চাকার নীচে তাজা প্রাণ, এবার আমাকে দ্রুত পালাতে হবে, এত মানুষজনের যখন ভিড়, যখন আমাকে আপনারা সকলে পুড়িয়ে মারবেন স্থির করেছেন, তখন সবটা শুনুন, গাড়িটাকে সাইড করতে দিন, এই সাইড করার নাম করে সে খালি গাড়ি নিয়ে একেবারে সোজা থানায়—কারণ সে কিছুতেই জনতার হাতে ধরা পড়বে না, ওরা লাফ দিয়ে যদি ভিতরে ঢুকে যায় তবু না। সে কেবল তার সামনের আয়নাটা দেখছিল। চারটা মানুষ যেন সাইকেলে আসছে না, পাখি হয়ে বাতাসে উড়ছে। আয়নার ভিতর ওরা উড়ে উড়ে কেমন বড়ো মাঠে এক সময় অদৃশ্য হয়ে গেল। সে বুঝতে পারল ওরা ওর কাছে হেরে গেছে। সে এবার বেঁচে যাচ্ছে, সে বেঁচে যাচ্ছে। সে স্টিয়ারিঙে শক্ত হয়ে বসেছিল। হাওয়ার আগে গাড়ি ছুটিয়ে সে লোকগুলোকে বেমালুম বোকা বানিয়ে দিয়েছে। রাস্তা শেষ হলেই থানা। সে থানায় গেলে আজ হোক কাল হোক ওরা ওকে শহরে পৌঁছে দেবে।

    আহা সে বেঁচে যাচ্ছে। সামনে থানার কাঁটাতারের বেড়া। দুটো একটা প্রজাপতি উড়ছে লতায় পাতায়। এখন শীতের আকাশ নয়। বসন্তের আকাশ। রাস্তার শুকনো পাতা উড়ছে। সে বেঁচে যাচ্ছে—কী সুস্বাদু জীবন। সে জিভ চেটে চেটে জীবন কত সুস্বাদু তার আস্বাদন নিতে নিতে দেখল, সিপাই মানুষটি লক-আপের তালা খুলছে।

    সে বলতে চাইল, আহা এটা কী করছেন? ওদের চিৎকার শুনতে পাচ্ছেন না? ওরা এলেই সোজা ঢুকে যাবে থানায়? বলবে, কুত্তার বাচ্চাকে বের করে দিন। ওকে মারব। একটা কাঁচা প্রাণকে এইমাত্র চেপটে দিয়ে এসেছে। বড়ো হারামি আছে।

    সিপাই মানুষটি একঘটি জল রেখে দিল ভিতরে। তার জলতেষ্টা পেয়েছে, সে ঢক ঢক করে জল খেল। সে মনে মনে হাত জোড় করে বলল দয়া করে এই গরাদ আর টানবেন না। তালা খুলবেন না। আজ রাতটা কাটাতে দিন। কাল সকালে আমার মালিক এলে পুলিশ পাহারায় শহরে চলে যাব। আমি আবার নদীর পারে হেঁটে যাব। গাছের নীচে বসে থাকব। দরকার হলে খিস্তি খেউড় এবং সুবি নামে মেয়েটার সঙ্গে যালা দেব।

    সিপাই চলে গেলে সে নিজেই ফের লক-আপ টেনে টেনে দেখল। না খুব কঠিন জায়গা। ভেঙে কেউ ভিতরে ঢুকে যেতে পারবে না। এ-সময় দারোগাবাবুর রসিকতা শোনা যাচ্ছিল। পুলিশের বুটের শব্দ কানে আসছে এবং ব্যারাক বাড়িতে দুজন সিপাই ঢোল বাজাচ্ছে। সে শুনতে পেল কোথাও গুম গুম আওয়াজ উঠছে। সে কি ভয়ে তাহলে মরে যাচ্ছে। চারপাশে অনবরত বিশ্রী শব্দ, ওর বুকটা মাঝে মাঝে ধড়ফড় করে উঠছে–সে কেন জানি স্থির থাকতে পারছে না। সে সারারাত চেষ্টা করেও বুঝি একটু নিদ্রা যেতে পারবে না। কারণ ওরা এলে ওকে কুত্তার বাচ্চা, হারামির বাচ্চা এইসব বলে গাল পাড়তে পারে। সে এই গাল পাড়তে পারে ভেবে যেন সটান হয়ে শুল না। পাশ ফিরে শুয়ে একটা কান খাড়া করে রাখল, কুত্তার বাচ্চা শব্দটা শুনলেই সে জোড় হাত করে ক্ষমার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমার অপরাধ নেবেন না বাবুসকল। আমি না জেনে ওকে হত্যা করেছি। আমার বিশ বছরের ড্রাইভারি জীবনে এমন কোনোদিন হয়নি। আমি ভালো স্টিয়ারিং ধরতে জানি। হালে সহসা পানি না পেলে মানুষের এমন হয়। কিন্তু আমার হালে পানি না পাওয়ার কিছু ছিল না। কারণ আমি আমার অধীনে ছিলাম। গাড়ি আমার থেমে ছিল। আদৌ দেখিইনি ওরা দুজন কি তিনজন হবে উবু হয়ে গাড়ির চাকা দেখছে, চাকাটা ঘুরছে কী করে, কোন জাদুবলে এত বড়ো অতিকায় দানবটা মাঠ পার হয়ে নদী পার হয়ে চলে যায়। সব সময় ওদের ভিতর এই গঞ্জের মতো জায়গায় এত বড়ো গাড়িটার এক রহস্য ছিল। আমার গাড়ি, আমি এবং কোনো কোনোদিন আমার কথাবার্তা শুনে ওরা হাসত। হাসতে হাসতে বলত, ড্রাইভার সাব অমাগ তুমি পদ্মার পারে নিয়া যাইবা?

    যামু। কবে রওনা দিবা কও। সে ওদের মতো করে কথার জবাব দিত।

    তুমি ড্রাইভার সাব কবে যাইবা। গাড়িতে চইড়া পদ্মাপারে যাইতে বড়ো শখ যায়।

    দিমুনে একবার একটা পাড়ি দিয়া।

    ড্রাইভার সাহেব মানিকলের তখন মনে হত শোভার কথা। সেও বলেছিল, এডারে বুঝি দ্যাশ কয়। আছিল একখানা দ্যাশ আমার পদ্মার পারে। তুমি ত যাও নাই। গ্যালে তোমারে দ্যাখাইতে পারতাম দ্যাশ একখান কারে কয়।

    আমি শোভা তোমার দেশে যেতে পারিনি। আমি এখন এই লক-আপে আছি। শুধু এখন এটুকু মনে করতে পারি তুমি আমাকে কোনোদিন ভালোবাসোনি। মানিকলাল কেমন ঢোক গিলে সুর ধরে বলতে থাকল—তোমার মনে ছিল কত আশা আমি তোমারে ঘর দিমু চান্দের মতো মুখখানাতে চুমা দিমু, কিন্তু পারি নাই। সে কেন জানি জায়গায় জায়গায় আজ শোভার মতো ভাবনাচিন্তায় ডুবে যাচ্ছিল। চুমা দিমু যখন কই, তখন দ্যাখি তুমি মুখটারে ঘুরাইয়া রাখছ।–মুখে তোমার মানিক অষুধের গন্ধ ক্যান?

    ওষুধ না খাইলে শোভা গাড়ি চালানো যায় না।

    মিছা কথা।

    হাচা কথাই কই।

    কয়ডা লোখ হাচা কথা কয় কও!

    ক্যান কয়না?

    তোমার মতো মাইনসে দ্যাশটা ছাইয়া গ্যাছে মানিক। একবার লইয়া যাইতে পারতাম। পদ্মাপারে, নদীর জল, ইলিশ মাছ, দেখাইতে পারতাম তবে দ্যাখতাম তোমার রোগড়া থাকে কোনখানে?

    মানিকলাল বলত, তোমার দ্যাশে বুঝি কোনো রোগ নাই?

    থাকব না ক্যান! তোমার রোগে মানুষ ভোগে না মানিক। মাঠেঘাটে বেড়াইলে, নদী-নালা দ্যাখলে, পদ্মার জলে মাছ ধরলে এই রোগডা মইরা যায়। নদীর জলে ডুইবা গেলে মনটা তোমার ভইরা যায়। অষুধ খাওনের আর কাম লাগে না।

    লম্ফটা নিয়ে কেউ চলে গেল। আবার অন্ধকারে ডুবে গেল মানিকলাল। চারপাশের ঘন অন্ধকারে সে কিছু দেখতে পাচ্ছে না। বাইরের চাতালে অনেকগুলো মানুষের চিৎকার চেঁচামেচি-ওরা বুঝি এসে গেছে। সে অন্ধকারের ভেতর ঘাপটি মেরে বসে আছে। কেউ টের পাবে না এখন মানিকলাল কোথায়। আর তখনই মনে হল পেছন থেকে ওর মাথায় কে টর্চের আলো ফেলছে। পিছনে দেয়াল, কে আলোটা ফেলছে—সে ভয়ে ছুটবে ভাবল। ওরা ওকে নিতে আসছে বোধ হয়। আজকাল যা দিন পড়েছে ওকে ফিরিয়ে না দিলে থানা-পুলিশ উড়িয়ে দিতে পারে। সে ভয়ে ভয়ে পেছনের দিকে মুখ ফেরাতেই দেখল, উঁচু জানালা থেকে জ্যোৎস্নার আলো এসে এই ঘরে পড়েছে। কোথাও চাঁদ উঠেছে। মাঠ আছে হয়ত পিছনে। সাদা মাঠ, তারপর কোনো অশ্বথ গাছ। গাছের মাথায় চাঁদটা মরা মানুষের চোখের মতো ঝুলছে। সে এবার আশ্বস্ত হল। আর সেই মুহূর্তে সেই অন্ধকার গলি পথটায়, ওর লক-আপের সামনে কারা দল বেঁধে আসছে। একটা আলো ক্রমে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। সে টের পেল ওটা বড়ো টর্চের আলো। স্টিমারের আলোর মতো ওর চারপাশটা একেবারে সাদা হয়ে গেছে। সাদা কাপড়ে মোড়া রক্তাক্ত একটা জীবকে ধরাধরি করে কারা এদিকটায় নিয়ে আসছে। ওরা লক-আপের সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। আহত বাঘের মতো ওরা ড্রাইভারকে দেখছে। টর্চের আলোটা নিভে গেল সহসা। অন্ধকার চারপাশে, শুধু সেই এক ফালি জ্যোৎস্না, মরা মেয়েটাকে রাখার জন্য দারোগাবাবু আবার হয়ত লম্ফটা এদিকে ঝুলিয়ে দেবার অনুমতি দিয়েছেন—সেই লক্ষের আলো ফলে অস্পষ্ট অন্ধকারে মানিকলালের চোখ দপদপ করে জ্বলছিল। এবং দূরে কোথাও মাংসের গন্ধ, দারোগাবাবু বিকালে নদীর চর থেকে তিতির মেরে এনেছেন—তিতিরের মাংস রান্না হচ্ছে। লোকগুলো পাশের লক-আপে সেই সাদা চাদরে মোড়া বনবাসী দেবীর মতো ছোট্ট এক বালিকাকে রেখে গেল। লম্ফটা নিয়ে চলে গেলে, শুধু থাকল অন্ধকার, মরা চাঁদের আলো আর বনবাসী দেবী চিৎপাত হয়ে পুঁটলির ভিতর শুয়ে আছে।

    কী বড়ো রাস্তা! দু-পাশে ফসলের মাঠ। সে বাস-ড্রাইভার। তার বউর নাম শোভা। শোভা তার ঘর ছেড়ে চলে গেছে সেই কবে। কেবল কথায় কথায় সে বলত তুমি দ্যাখছনি, পদ্মার পার, নদীর জল, ইলিশ মাছ! শোভার কিছু ভালো লাগত না। মানিকলাল নেশা করে ঘরে ফিরত এবং সুবি নামে মেয়েটার সঙ্গে যালা দিত। আর ঘরে তার বউ, উদবাস্তু যুবতী নদীর পারে স্বামী এখনও ফিরছে বলে নেমে যেত, হিজলের ফুল, শালুক পাতা এবং জোয়ারের জল অন্বেষণ করত, উঁচু টিলায় দাঁড়িয়ে বাসটা বড়ো রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে কি না উঁকি দিয়ে দেখত। বাসটা দাঁড়িয়ে আছে, অথচ মানুষটা এখনও ফিরছে না। বাস থেকে নেমে সে যে কোথায় যায়। তখন ড্রাইভারসাহেব নেশার ঘোরে বউকে নদীর পাড়ে দেখলে, বকত। তুই কি ছুঁড়ে বেড়াস আমি সব জানি।

    আমি কি ছুঁড়ে মরি!

    তুই নদীর জল, ইলিশ মাছ, পদ্মার পাড় ছুঁড়ে মরিস। আমি তোর সব বুঝি। তুই আমাকে ভালোবাসিস না।

    শোভা কিছু বলত না। ড্রাইভারসাব বড়ো রাস্তায় নেমে গেলে সে একটা কদমগাছের নীচে দাঁড়িয়ে থাকত। এবং যতক্ষণ না বাসটা চোখের ওপর থেকে সরে যেত ততক্ষণ সে নড়তে পারত না।

    শোভার কথা মনে এলেই এসব কথা মনে হয়। পদ্মার পাড়, নদীর জল, ইলিশ মাছ, সূর্যের আলো এসব ছবি মনের ভিতর উঁকি মারতে থাকে। এখন দারোগাসাবের বউ পানের পিক ফেলে মাংসের গন্ধ শুকছে। লম্বা ব্যারাক বাড়ির শেষ মাথায় দারোগাসাবের কোয়ার্টার। ড্রাইভার মানিকলাল অন্ধকারে তা টের পাচ্ছে। বুটের শব্দ আসছে এখনো, কেউ বন্দুকের নলে পৃথিবী পাহারা দিচ্ছে। এবং মানিকলালকে দেখলে টের পাওয়া যাবে ওর চুল খাড়া; চোখ লাল এবং শরীরে ঘামের গন্ধ। ওর গলা শুকনো। তেলানো একটা মাংসের জীব পাশের ঘরে শুয়ে আছে। চোখ নাক মুখ সমতল। সে স্থান কাল পাত্র পরিবর্তন করে গাজির গীতের চাঁদ পাতার মতো চ্যাপটা। সে নাক টানল। রক্ত-মাংসের আঁশটে গন্ধটা ও-পাশের লক-আপ থেকে আসছে কি না দেখার সময় মনে হল দারোগাসাবের বউ তিতিরের মাংস চেটে চেটে সুসিদ্ধ মাংসের স্বাদ নিচ্ছে। এবার ওর গলা থেকে একটা ওক ওঠে এল। রান্না করা মাংসের গন্ধ তাজা মাংসের গন্ধকে সুরুয়ার মতো গিলে ফেলছে।

    আলোটা জ্বালা হোক এবার। লম্ফটা না জ্বেলে দিলে ভয়টা বাড়বে। চারপাশটা নিঝুম। বড়ো মাঠের ভিতর এইখানে জানালায় জ্যোৎস্না দেখে মনে হয় এই পৃথিবীর একাংশে সে এবং আট-নয় বছরের ফসলের মাঠ থেকে উঠে আসা বনদেবী চুপচাপ বসে রাত কাটাবার আশায় আছে। সকাল হলে সে যাবে শহরে। মেয়েটা যাবে মর্গে। এখন এমন অন্ধকারে গোটা লক-আপটা প্রায় মানিকলের কাছে মর্গের মতো। যেন এবার ফসলের মাঠ থেকে উঠে-আসা বনদেবী ওকে ভয় দেখাতে শুরু করবে। সে ভয় থেকে নিষ্কৃতি পাবার জন্য ডাকল ও মেয়ে আরতি, তুমি জেগে আছ না কি! তারপর যেন সে কেমন কাতর গলায় বলল, আহা তুমি যুবতী হলে না, যুবতী হলে তোমার শরীরে কত রকমের ইচ্ছা খেলা করে বেড়াত। ও মেয়ে জেগে আছ না কি? আমি মানিকলাল, বউ আমার পলাতক। পদ্মার পাড়, নদীর জল, ইলিশ মাছ সে খুব ভালোবাসত। আমি ড্রাইভার মানুষ ওর মন খারাপ হলেই বুঝতে পারতাম, সে কোথাও যেতে চায়।

    বস্তুত মানিকলের ভয়ে ধরেছে। চোখের উপর দৃশ্যটা ভাসছে। চোখ মুখ নাক গলে গিয়ে সমতল, পেট ফেটে হাঁ করে আছে। সে ভয় থেকে নিষ্কৃতি পাবার জন্য ইনিয়েবিনিয়ে কবিতার মতো করে নাকিসুরে কথা বলছে। একাকী নির্জন রাতে ভয় ধরলে মানিকলাল উচ্চস্বরে গান গাইত। এখন সে ভয়ে কবিতার মতো করে কথা বলছে—অ মেয়ে, সে বড়ো ভালোবাসে বৃষ্টিতে ভিজতে, নদীর পাড়ে হাঁটতে, জ্যোৎস্না রাতে বালির ঢলে চুপচাপ বসে থাকতে। আমাকে নিয়ে শোভা এসব করতে চাইত। আমি মানিকলাল সারাদিন নেশার ভিতর ডুবে থাকি, একবার গাড়ি নিয়ে বের হলে ফেরার নাম করি না। সে কেন আমার আশায় বসে থাকবে বল।

    মানিকলাল এবার বলল, বারে বা আমি কার সঙ্গে কথা বলছি তবে। আমাকে ভূতে পেয়েছে তবু লোমকূপে শক্ত দানদার সব হিজিবিজি দাগ কাটা, কে যেন সারা শরীরে হাজার হাজার দাগ কেটে চলেছে। ওর ভিতরটা ভয়ে ফুলে উঠছে এবং শরীরের সব লোমকূপ শক্ত হয়ে উঠছে। আর তখনই মনে হল কেউ যেন ডাকছে তাকে। অনেক দূরে ফসলের মাঠ থেকে কে ডাকতে ডাকতে উঠে আসছে। বেশ মজা দারোগাসাবের। লম্ফ নিভিয়ে দিয়ে তেল বাঁচাচ্ছেন। সে যে অন্ধকারে ভয়ে মরছে এবং এ ভয়টা যে আরও ভয়াবহ এটা কেউ টের পাচ্ছে না। সে নিজেও বুঝতে পারেনি মাটির ঢেলার মতো মাংসপিণ্ডটা ওকে এমন ভয় দেখাতে পারে। সে যেন এতদূর অনর্থক বাঁচার জন্য ছুটে এসেছে। পাশে মৃতদেহ বালিকার—সে যাবে শহরে, মেয়েটা যাবে মর্গে—মেয়ের চোখ দুটো ডাগর ছিল, একটা নীল রঙের ডুরে শাড়ি কোমরে প্যাঁচ দিয়ে পরত। হাত-পা শীর্ণ। নরম মুখ। সে গঞ্জের কাছে বাস থামালেই তার জানালায় লাফিয়ে উঠে আসত মেয়েটি, কার মেয়ে কোথাকার মেয়ে—এই গ্রামেগঞ্জে কে তার খবর রাখে। দুটো পয়সা দেবা ড্রাইভারসাব। মুরকি খাব।

    ছোটো থাকতে তার পালিয়ে যাওয়া বউটার মুখ হয়ত এমন ছিল। এ অঞ্চলে ধান হয়, যব গম হয়। ফসলের মাঠ থেকে নানারকমের পাখি উড়ে আসে। মেয়েটার বুঝি কাজ ছিল ফসলের খেতে বসে ঢং ঢং করে টিন বাজানো। বসন্তে অথবা গ্রীষ্মেও ওদের কোনো কাজ থাকে না। তখন রাস্তার এসে দুটো পয়সা ভিক্ষা। গঞ্জের মতো জায়গাটায় হরেকরকমের চাষবাস, মনিহারি দোকান, পাটের আড়ত এবং চাল ডাল মুসুরির গুদাম নিয়ে বেশ আর্থিক সচ্ছলতা। এখান থেকে পদ্মার পার বেশি দূর নয়। দু-ক্রোশ পথ হেঁটে গেলেই নদী, বালির চর, ইলিশের ঝাঁক এবং নানাবিধ গাছপালা যা বাংলাদেশের সীমানা মানে না। মনে সন্দেহ ছিল মানিকলের, বাঁজা বউ শোভারাণী নদী পার হবার জন্য পালিয়ে এ অঞ্চলে চলে এসেছিল। সে এবার ভয় থেকে মুক্তি পাবার জন্য বলল, ও মেয়ে আমি যে আমার পালানো বউয়ের খোঁজে এই রুটে শেষে কাজ নিয়ে চলে এলাম। এসব কথা তোকে আমি কতবার বলেছি।

    মনে হল এই অন্ধকারে কেউ ফিস ফিস করে কথা বলছে। সে কান খাড়া করে রাখল। দেয়ালের পিছনে কি কোনো গাছ আছে, এই ফুলটুলের গাছ। গাছে পাখির বাসা। পাখিরা নড়ছে। সে খচখচ শব্দ শুনে দেয়ালে কান পেতে রাখল। কেউ যেন বলছে, নদীর চর, বালিহাঁস, কুমিরের চোখ ড্রাইভারসাব এনে দিতে পার? মা আমার বালিহাঁসের ডিম কুড়াতে যাচ্ছে বলে বনের ভেতর ঢুকে যেত। আর ফিরতে চাইত না। সেই বন পার হলে বাংলাদেশের সীমানা। মা সেখানে গিয়ে বসে থাকত, মা কেন যে এত কাঁদত ড্রাইভারসাব!

    তোমার মা কোথায়?

    জানি না। বালিহাঁসের ডিম আনবে বলে সেই যে বনে ঢুকে গেল একবার আর এল না। অনেকদিন ওর বলার ইচ্ছা হয়েছে—তোর মায়ের মুখ কি আমার বউয়ের মতো দেখতে ছিল!

    মেয়েটা যেন বলতে চাইত, সংসারে কি এক রকমের মুখ থাকতে নেই।

    সে তখন চুপচাপ কি ভাবত। বাসে প্যাসেঞ্জার উঠবে এই প্রতীক্ষায় সে বাস থামিয়ে গঞ্জের মতো জায়গাটায় বসে থাকত। ওদের সঙ্গে সে গল্পে মেতে উঠত— তা তোরা পথেঘাটে থাকিস, রাতে রাতে বড়ো হয়ে যাবি। আমি যেমন শোভাকে ট্রাকে তুলে নিয়ে এসেছিলাম, তোদেরও কেউ না কেউ তুলে নিয়ে যাবে।

    হ্যাঁ বয়ে গেছে মানুষের।

    মানিকাল স্পষ্ট এমন কথা শুনল। ও-পাশের লক-আপে মেয়েটা যেন নাকে নথ পরে ঘোমটা টেনে বসে আছে। পাল্কি এলেই উঠে পড়বে। সে বসে বসে মানিকলালের সঙ্গে মশকরা করছে।

    আমার সঙ্গে যাবি তুই?

    ড্রাইভারসাব কি যে বলে!

    তোকে বালিহাঁস, কুমিরের চোখ এনে দেব। তুই পাখি ওড়াতে গিয়ে একদিন দেখবি বড়ো হয়ে গেছিস। তোর তখন নদী সাঁতরে ওপারে যেতে ইচ্ছা হবে।

    ও মাঃ ও কিরে! তোর পছন্দ নয় আমাকে। আমার দুটো-একটা চুল দাড়ি পেকে গেছে। তুই বড় হলে আরও পাকবে। তাতে কি আছে। কঠিন হাতে নরম মাছ বেছে খাব। একটু থেমে ঢোক গিলে মালিকলাল এমন বলল।

    কোনো জবাব পাচ্ছে না ও-পাশের লক-আপ থেকে। মেয়েটা আবার মাংসের পিণ্ড হয়ে গেছে বুঝি। সে বলল, (কথা শুনলে যদি আবার জেগে গিয়ে বউ সেজে নাকে নোলক পরে বসে থাকে) জরুর নেবে। ফসলের খেতে বড়ো হতে হতে তোরা একদিন নদীর পারে হারিয়ে যাবি।

    সহসা মনে হল মেয়েটা হা হা করে হাসছে। ওর কথা শুনে হাসছে। তারপর বিকট একটা শব্দ। বাসের চাকাটা পেটে উঠে গেছে। পেটটা ফেটে গেল। অথবা বাসের চাকা মাথায় উঠে গেছে-ফট করে শব্দ। কী যে শব্দ হয়েছিল, চাকাটা পেটে মাথায় উঠে গেলে মানিকলাল ধরতে পারেনি। সে আন্দাজে শব্দের তারতম্য ধরার চেষ্টা করছে।

    ভয়ে মানিকলাল আবোল তাবোল বকছিল। অথবা অদ্ভুত সরল দৃশ্য ভেসে উঠতে দেখল অন্ধকারে। রাত গভীর হচ্ছে টের পাওয়া যাচ্ছে। থালাবাসনের শব্দ আসছিল। কেউ হয়ত খেয়ে বাসন মাজছে। সে নানাভাবে নিজেকে অন্যমনস্ক রাখতে গিয়েও পারছে না। ক্রমে ও-পাশের লক-আপে দুটো হাত লম্বা হচ্ছে। লম্বা হতে হতে সাপের মতো দুলে দুলে দেয়ালে বেয়ে উঠে আসছে ওকে ধরার জন্য। এখন হাত দুটো মাথার উপর নুয়ে পড়েছে। সাপের ফণার মতো দুলছে। ওকে সুড়সুড়ি দেবে বলে আঙুলগুলো ফাঁক করছে। আঙুলে সে ফোঁটা ফোঁটা রক্তের দাগ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। সে ভয়ে চোখ বুজে আছে। অন্ধকারে চোখ খুললেই যেন দেখতে পাবে সেই সরু হাত, ছোটো ছোটো আঙুল ভীষণ লম্বা হয়ে ওর সামনে কৃমির মতো কিলবিল করছে। হাতটা কঙ্কালসদৃশ। এবং কাচের চুড়িগুলি, নীলরঙের কাচের চুড়ি ঝুমঝুম করে কানের কাছে বাজছে। সে ভয় থেকে পালাবার জন্য গরাদের শিক ফাঁক করতে গিয়ে দেখল, একটা আলো। স্টিমারের বাতির মতো আলোটা সরু লম্বা হয়ে এদিকে নেমে আসছে। সেই বড়ে টর্চ জ্বালিয়ে কেউ হয়ত আসছে এদিকে।

    মানিকলাল গেটের মুখে গিয়ে দাঁড়াল। কারণ সামান্য আলো এসে পড়েছে গেটের মুখে। সেই আলোই এখন ওর প্রাণরক্ষার নিমিত্ত বরাভয় হয়ে আছে। সে এবার চিৎকার করে উঠল, কে? কে?

    একজন সিপাই, অন্যজন বামুনঠাকুর। দারোগাসাহেব কৃপাপরবশে খাবার পাঠিয়েছে। সে দেখল এক থালা খাবার এবং তিতিরের মাংস। লম্ফটা জ্বেলে দিল সিপাই। সে নেড়েচেড়ে তিতিরের মাংস এবং ভাত দেখল। ও-পাশের একটা অবলা জীবের মাংসপিণ্ড থেকে তাজা মাংসের গন্ধ উঠে আসছে। সে চুপচাপ বসে থাকল সামনে খাবারের থালা নিয়ে। খেতে পারছে না। ভাত মাংস এবং জলের ঘটি-এনামেলের থালা বাসন, ও-পাশে রক্তের চাপ চাপ মাংস, কাঁচা এবং ফেসে গেছে—সে ভাত নাড়তে নাড়তে ওক দিচ্ছিল।

    কী হল!

    মানিকলাল ফ্যালফ্যাল করে তাকাল। পুলিশের লোকগুলি দেখল একেবারে মৃত চোখ কোনো আশা-আকাঙক্ষা নেই। ঝড়ে মরে পড়ে থাকা পাখির মতো চোখ। বাসি, বাদামি রঙের। চোখে যেন দুটো আস্ত পিঁপড়া হাঁটছে। ওরা বলল, বমি পাচ্ছে কেন? জল খাও। গলা শুকনো থাকলে বমি পায়।

    চোখে যার পিঁপড়া হাঁটছে—সে খাবে কী? ওরা যেমন এসেছিল—তেমনি চলে

    গেল। ওরা যেতে যেতে লম্ফটা ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিল।

    মানিকলাল শুনতে পেল ঝুমঝুম করে কী যেন বাজছে ও-পাশের লক-আপে। কাচের চুড়ি নীল রঙের। মেয়েটার হাত এখন সাপের মতো চার দেয়ালের অন্ধকারে যেন ঘোরাফেরা করছে। ইচ্ছা করলেই হাতটা মাথার ছাদ ফুটো করে উপরে উঠে যেতে পারে। এবং যা কিছু সুন্দর এই পৃথিবীর অথবা সৌরলোকের, তাবৎ সংসার, এই যেমন গ্রহ-নক্ষত্র সব বিনষ্ট করে দিতে পারে। হাত দুটো লম্বা হতে হতে অনেক যোজন দূর উঠে যেতে পারে এবং ফুল ফল তোলার মতো গ্রহ নক্ষত্র তুলে আনতে পারে। অন্ধকারে নীল রঙের চুড়ি আর তাতে জলতরঙ্গের শব্দ। মানিকলাল এসেছিল নিজের প্রাণরক্ষার্থে। কিন্তু এই অন্ধকার, পাশে মৃতদেহ এবং তার থেকে নানারকমের ভয় ওকে পাগলপ্রায় বানিয়ে রেখেছে। সে যেন নিজের এই ভয়কে জয় করার জন্য এই রাস্তায় কবে কখন প্রথম মেয়েটাকে দেখেছিল মনে করার চেষ্টায় আছে।

    তা তোর নাম?

    আমার নাম আরতি।

    তোর মার নাম।

    আরতি হাসত তখন। কিছুতেই সে মায়ের নাম বলত না। মায়ের নাম নিতে নেই। নিলে পাপ হয়। সে অন্য কথা বলত, দে ড্রাইভারসাব দুটো পয়সা দে।

    কী করবি পয়সা দিয়ে?

    মুরকি খাব।

    আরতি দু-রকমের ভাষায়ই কথা বলত। সে যখন আর ড্রাইভারসাবের মন গলাতে পারত না, তখন বলত, আমারে নিয়া যাইবা পদ্মার পারে। ঠিক তখন মানিকলের শোভার কথা মনে হত। সে স্থির থাকতে পারত না। দুটো পয়সা দিয়ে বলত, মুরকি কিনে সবাই মিলে খাবি। আরতির সঙ্গে আরও তিন-চারটি রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো, বাপে খেদানো, মায়ে তাড়ানো বাচ্চা ঘুরে বেড়াত। মানিকলাল না বললেও সে কোনোদিন একা কিছু কিনে খায় না। চেয়েচিন্তে যা পায় সকলে মিলে গাছের নীচে বসে মাঠের ফসল দেখতে দেখতে ওরা আহার করে।

    ড্রাইভারসাব কথাটা শুনলেই মানিকলাল ভিতরে গর্ব অনুভব করত। সে তখন বলত, তোর মুখে আমার বউ-এর ছাপ আছে। মানিকলাল মনে মনে এই মেয়েকে তা দিয়ে বড়ো করার তালে ছিল।

    আরতি এই ন-দশ বছরে বউ কথাটার মানে ধরে ফেলেছে।

    মানিকলাল হাসতে হাসতে বলত কোনোদিন, তুই আমার বউ হবি। আমার বাড়ি নিয়ে যাব তোকে।

    আরতি কৃত্রিম রাগে ওর চুল টেনে ধরত।

    তবে আর পয়সা পাবি না।

    রঙ্গ-রসিকতা এমন হত অনেক দিন। কেবল মেয়েটার কাছে মায়ের নাম জানতে পারেনি। বাপের নাম বলতে পারে না। জারজ সন্তান, বাপের নাম না জানলে পাপ নেই।

    মানিকলাল বলত, বড়ো হলে তুই যা হবি না মাইরি!

    আরতি লজ্জায় মুখ নীচু করে রাখত। তারপর ফিক করে হেসে দিত।-তুমি যে কি বল ড্রাইভারসাব!

    আরতি এবং আরও দু-তিনজন বালক-বালিকা এ-গঞ্জে এ-ভাবে ভিক্ষা করে। কখনো জমিতে গোরু-বাছুর তাড়িয়ে বেড়ায়, কখনও গৃহস্থের ফসল পাহারা দিয়ে জীবন অতিবাহিত করে। আর মানিকলের বাসটা দূর থেকে দেখলেই মাঠের ওপর দিয়ে ছুটতে আরম্ভ করে। এই গঞ্জে যতক্ষণ মানিকলাল থাকবে ততক্ষণ নানারকম হাসি-মশকরাতে, অথবা দু-পয়সা চার-পয়সার মুড়ি-মুড়কিতে সময়টা কেটে যায় তাদের। গাড়ির জানালায় বসে থাকে কোনো কোনো দিন। গাড়িটা যে মানিকলের নয়। গাড়িটা আরতি এবং এই তিন বালক-বালিকার। ওরা এই গাড়ির উপরে নীচে লুকোচুরি খেলে বেড়ায়। মানিকলাল গতকাল বলেছিল এই তোরা গেছিস ত! যা যা। সে গাড়ির হর্ন বাজাল। তারপর চালাতে গিয়ে দেখল চাকাটা আরতির পেটে মাথায়। শালা এতদিন ওর দিকে তাকাবার কেউ ছিল না। পেটে চাকা উঠে যেতেই গঞ্জের সব লোকদের হুঁশ এসেছে—এক মহাপ্রাণ, এই বয়স আর কত, নয় দশ, কি তার চেয়ে এক দুই এদিক-ওদিক।

    সে টপকে ও-পাশের ঘরটাতে যাবার জন্য ছটফট করতে থাকল। সে তো মৃত। হাত দিলে টের পাবে না। মেয়েটার মুখ দেখতে ওর পালিয়ে-যাওয়া বউয়ের মতো। সে বলত এই আরতি তোর মা আর সত্যি ফিরে এল না।

    না ড্রাইভারসাব।

    আরতি তারপর গল্প করত। কারণ বাসটা সেখানে থামত বিশ মিনিটের মতো। মানিকলালের কথা বলার লোকের অভাব। সে চা খেত একটা চালাঘরে—বিস্কুট কিনে দিত এবং এই করে সময়টা পার হয়ে যেত এবং একদিন সে বলেছিল, তোর মাকে আর বনের ভিতর খুঁজতে গেলি না?

    আরতির চোখ মুখ বড়ো বিষণ্ণ দেখতে হত তখন। সে যেন কিছুই বলতে চায় না, বললে এমন শোনায়, সেই ফসলের মাঠ পার হয়ে গেলে বন, বনে কত রকমের লতাপাতা, ফুল ফল, পাখি এবং গাছপালা। বনের ভিতর সে একবার মায়ের সঙ্গে ঢুকে গিয়েছিল। মা বলত, সে তাদের নিয়ে যাবে পদ্মার পারে। সেখানে ওরা পেট ভরে খেতে পাবে। বনটা পার হলেই পুলিশের ক্যাম্প। তারপর সীমানা চলে গেছে। মা তাদের নিয়ে সীমানার কাঁটাতারের বেড়ার গায়ে বসে থাকত। কতদিন কত বিকেলে ওরা বসে বসে দেখত, ও-পার থেকে কত পাখি এ-পারে আসছে। কত লাল নীল রঙের পাখি ও-পারে চলে যাচ্ছে। মাকে দেখলেই মনে হত, মা যেন ও-পারে এসে কী ফেলে চলে এসেছে।

    মানিকলের মনে হল, ও-পাশে মেয়েটা এখন প্রাণ পেয়ে গেছে। প্রাণ পেয়ে পাখি পুবে যায় পশ্চিমে যায় বলে ঘুরে ফিরে নাচছে। এবং কাচের চুড়িতে সেই ঝুমঝুম আওয়াজ। চোখ ভারী ভারী। যৌবনের ঢল নামছে। আরতি একেবারে শোভার মতো হয়ে গেছে। পদ্মার পারে ঘর। দেশের মা-বাবা এদেশের আত্মীয়স্বজনের কাছে শোভাকে রেখে গেল। আইবুড়ো মেয়েকে ক্যাম্পের জীবনে ঠেলে ফেলে দিয়ে চলে গেল। শোভা তার ধূর্ত আত্মীয়ের পাল্লায় পড়ে শেষ পর্যন্ত রাস্তায় নেমে এল। আর তখনই সে যেন দেখল ফুসফাস মেয়েটা মশা হয়ে ওর ঘরে উড়ে চলে এসেছে। তারপর সাদা কাপড়ে নিজেকে মুড়ে মর্গের মতো মমি হয়ে আছে পায়ের কাছে।

    মানিকলাল দ্রুত পালাতে চাইল। সে গরাদের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। সাদা কাপড়ে মোড়া মাংসের ঢেলাটা থপ থপ করে হেঁটে গেল ওর পাশে। সে ছুটে গিয়ে দক্ষিণের দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল। আবার আরতি থপ থপ করে হেঁটে আসছে। যেন আরতির মাথামুণ্ডু কিছু নেই, একটা বালির বস্তা হয়ে গেছে। মানিকলাল ভয়ে চিৎকার করে উঠবে এমন সময় মনে হল ওটা আবার মাছি হয়ে উড়ে ও-পাশে চলে গেছে।

    মানিকলাল ভয়ে ক্রমে ঠাণ্ডা মেরে যাচ্ছে। তাকে খুব কাতর দেখাচ্ছিল। ওর ভীষণ জলতেষ্টা পাচ্ছে। সে অন্ধকারে ঘটিটা হাতড়াতে থাকল। জল নেই। ছুটোছুটিতে জলের ঘটিটা উলটে গেছে। সে ভাবল, জলের জন্য চিৎকার করবে, কিন্তু মনে হল ওর স্বর বসে গেছে। সে কেমন বোবার মতো অন্ধকারে একটা বাছুর হয়ে গেল।

    সুতরাং মানিকলালের কী যে এখন করণীয়—সে তার কিছুই বুঝতে পারছে না! সে ঘেমে গেছে ভীষণ। ওর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এই অন্ধকারে মেয়েটা অযথা ভয় দেখাতে শুরু করল। এখানে পালিয়ে এসেও নিস্তার নেই। সে আবার কথা আরম্ভ করে দিল।তুই আরতি মরে গিয়ে ভয় দেখাচ্ছিস কেন। সকালটা হতে দে। আমার মালিক রাতে রাতে খবর পেয়ে যাবে। মালিক এলে তুই আমি এক সঙ্গে কাল সকালে শহরে চলে যাব।

    কোনো জবাব পেল না বলে বলল, তুই তো বলেছিলি একজন পুলিশের বাবু আসত তোর মার কাছে। বর্ডার পার করে দেব বলত।

    এমন বীভৎস অবস্থায়ও ওর মুখ থেকে সব খিস্তি শব্দ বের হয়ে যাচ্ছে। সে নিজের ওপর রাগ করে বসে থাকল। এখন আর যেন মেয়েটা জ্বালাচ্ছে না। বেশ চুপচাপ আছে। সুতরাং আবার সেই অনর্থক ছবি চোখের উপর। সেদিন মানিকলাল কী কারণে অসময়ে বাড়ি ফিরেছিল। ঘরে শোভা নেই। নদীর পারে শোভা চুপচাপ বসে আছে। মনে হচ্ছিল দূরে কে যেন বালির চরে হেঁটে যাচ্ছে। এবং ও-পারের ইস্টিশানে বাজনা বাজছে। সে বলল তুই এখানে!

    আমি ঘরে যামু না।

    তোর এমন হয় কেন। মাঝে মাঝে তুই নদীর পাড়ে এসে বসে থাকিস কেন?

    শোভার চোখে জল পড়ত। বাবা-মা তাকে বনবাসে রেখে চলে গেছে। সুন্দর এক যুবক, বয়স তখন তার বিশ-বাইশ হবে-কলেজে পড়ত আলম, খুব ধীরে ধীরে কথা বলত, বড়ো বড়ো চোখে কলেজে যাবার পথে ওদের আমলকি গাছটার নীচে এলেই খুঁজত শোভাকে, শোভা আতাবেড়ার পাশ থেকে বলত, আলম আমি আমলকি গাছের নীচে নাই। ঘরে আছি। জানালায় বইসা আছি। ওর মুখ মনে হলেই শোভা বড়ো আকুল হত। আলমের সঙ্গে একটা ভালোবাসার ঘটনা ঘটে যাচ্ছে—ভয়ে মা-বাবা শোভাকে এ-পারে এসে রেখে গেল। আত্মীয় মানুষটির মজা লুটে খাবার লোভ বড়ো বেশি। তাকে লুটে খেতে এলেই সে তার বাবা-মাকে চিঠি দিত। কিন্তু চিঠির কোনো জবাব আসত না। সেদিন শোভার কি যে হয়েছিল—সে জীবনের সব কথা চিৎকার করে বলতে গিয়ে হাউ হাউ করে কেঁদেছিল—আর শালা সে ত ড্রাইভার, কোথায় সে শোভাকে ভালোবাসায় জয় করবে, তা না, সে পাছায় লাথি মেরে চিৎকার করে উঠল, মাগি তুই এত বজ্জাত রাস্তায় পড়ে থাকতিস ঘরে নিয়ে এলাম। একটা বাচ্চা বিয়োতে পারলি না!

    সে রাতেই শোভা পালিয়েছিল। বর্ডার পার হলেই পদ্মার পার, নদীর জল, ইলিশ মাছ, শালুক ফুল। সুখ, সুখ, অন্তহীন সুখ। তার বউটা বাংলাদেশের সীমানা পার হবার জন্য পাগলের মতো নিরুদ্দেশে চলে গেল।

    মানিকালের কিছুই ভালো লাগছিল না। সে দেয়াল বেয়ে কেন জানি উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। কোথায় যেন মানিকলাল টের পেয়েছে বেঁচে থাকার মানে নেই। নাকি মানিকলের কাছে এই ভয়াবহ রাতের চেয়ে মৃত্যু বেশি কাম্য। সে ক্রমে দেয়াল ধরে উপরে উঠে যাচ্ছে। সে যেন তার এই লক-আপে পালানো বউকে খুঁজছে এখন।

    আরতির মুখে এখন দুটো মশা বসেছে। থেঁতলানো মুখ থেকে রক্ত শুষে খাবে বলে হুল ফোঁটাচ্ছে। সাদা কাপড়ে বাঁধা তবু দু-বার পাছা উঁচু করে ঠোঁট থেকে রস চুষতে গিয়ে দেখল—একেবারে ঠাণ্ডা। শক্ত। মশা দুটো উড়ে মাঠে নেমে গেল। সাদা জ্যোৎস্না মাঠ। মশা দুটো সাদা জ্যোৎস্নায় উড়ে বেড়াতে থাকল।

    আরতি তার রক্ত-মাংসের ভিতরই পড়ে আছে। দেখলে মনে হয় সাদা কাপড়ের একটা পুঁটলি। সকাল হলে মানিকলালের সঙ্গে মর্গে যাবে। কারণ মানিকলাল রাতের আঁধারে নানারকমের ভয়ংকর সব ছবি ফুটে উঠতে দেখেছিল, চারপাশের নানারকমের কিম্ভুতকিমাকার আলোর মায়াজাল, মনে হয়েছিল তার সবই অলৌকিক, জীবনযাপনে কোনো আর মানে খুঁজে পাওয়া যায় না—ঠিক শালা হিন্দি ছবির মতো, মাথামুণ্ডু যার কিছু ঠিক নেই, প্রেম, ভালোবাসা, রাহাজানি, খুনের দৃশ্য, মোটর রেস এবং নীল পতাকা নিয়ে ঘোড়া যাচ্ছে। একজন সুন্দর মতো মেয়ে পাশে পাশে গান গেয়ে চলেছে। মানিকলাল কখনো ঘোড়সোয়ারী পুরুষ, আবার কখনও ঘোড়ার পায়ে ওর ঠ্যাং রঞ্জুতে বাঁধা। ঘোড়াটা মাঠের উপর দিয়ে ছুটছে। অথবা যুবতীরা ওর চারপাশে নাচছিল—কত হাজার লক্ষ যুবতী, যাদের কোনো স্পষ্ট মুখ নেই, অবয়ব নেই—গাজির গিদের চাঁদপাতার মতো চ্যাপটা নাক, চোখ মুখ সমতল, হাত পা শরীর কাগজের মতো ফিনফিনে পাতলা–তারা ওর চারপাশে নাচছিল—যেন তারা প্রত্যেকেই এক একজন শোভা। আর কেন জানি মনে হল তার ফসলের খেতে তখন পাখি উড়ছে। বর্ডার পার হবে বলে শোভা বসে আছে। কারা নিয়ে এল সেই যুবতীকে বর্ডার পার করে দেবে বলে। অথচ ফুসলে তাকে এপারেই রেখে দিল—কোথায় আর যাবি? বর্ডার পার হলে পদ্মার পাড়, ইলিশের ঝাঁক আর খুঁজে পাবি না। এই ত আছিস বেশ। ক্যাম্পের ভাত বেঁধে দিবি, মুরকি খাবি। মাঝে মাঝে ঠ্যাং তুলে চিৎপাত হয়ে শুয়ে থাকবি। আমরা পুলিশের বাবুরা তোকে পদ্মার পার, ইলিশের ঝাঁক, নদীর জল সময় হলেই দেখিয়ে আনব।

    মানিকলাল এইসব দৃশ্য দেখতে দেখতে কেমন পাগল হয়ে গেছে। সারাক্ষণ। গারদের ভিতর সে পাগলের মতো অন্ধকারে ছুটোছুটি করেছে। বনবাসী দেবী তাকে হাত ধরে একসময় কোথায় যেন তুলে নিয়ে এল। একটা ডালে সজীব নীল রঙের লতা—সেই লতার পোশাক তাকে পরতে বলল। এবারে তুই নীচে ঝাঁপ দিবি। দেখবি সাধের জীবন হরেক রকম বাঁশি বাজায়।

    বনবাসী দেবীর কথামতো মানিকলাল নীল রঙের লতার পোশাক পরে বড়ো প্ল্যাটফরমে শেষ ট্রেন ছেড়ে দেবার বাঁশি বাজাল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনানা রসের ৬টি উপন্যাস – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article ৩০০ বছরের কলকাতা : পটভূমি ও ইতিকথা – ডঃ অতুল সুর

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }