Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অদ্বৈতপ্রকাশ – ঈশান নাগর

    ঈশান নাগর এক পাতা গল্প282 Mins Read0

    অদ্বৈতপ্রকাশ – ২১

    একবিংশ অধ্যায়

    জয় জয় শ্রীচৈতন্য জয় সীতানাথ।
    জয় নিত্যানন্দ-রাম ভক্তগণ সাথ।।
    একদিন মহাপ্রভু বসিয়া নিৰ্জ্জনে।
    অতি প্রিয়তম শ্রীজগদানন্দে ভণে।।
    গৌড়দেশে চল তুহুঁ ত্বরিত গমনে।
    পহিলে নদীয়া যাইবা মোর জন্মস্থানে।।
    মাতৃপদে কহিবা মোর কোটি নমস্কার।
    যাঁহা তাঁহা থাকো মুঞি তাঁহান কিঙ্কর।।
    পুত্র হঞা পুত্ৰধৰ্ম্ম পালিতে নারিণু।
    ইথে তান পদে মহাঅপরাধী হৈনু।।
    কোটিযুগে তান ঋণ নারিমু শোধিতে।
    অপরাধ ক্ষমে যদি নিজ দয়ামৃতে।।
    তবেহ পাইমু রক্ষা নতুবা পতন।
    তাহান শ্রীপাদপদ্মে লইনু শরণ।।
    কৃষ্ণ ভক্তগণে মোর কহিবা সন্দেশ।
    আচার্য্যের নিকটে কহিবা সবিশেষ।।
    শ্রীজগদানন্দ মহাপ্রভুর আজ্ঞা পাঞা।
    গৌড়ে যাত্রা কৈলা গৌরচন্দ্রে প্রণমিয়া।।
    ক্রমে নবদ্বীপধামে উপনীত হৈলা।
    শচীমাতার পদে যাঞা দন্ডবৎ কৈলা।।
    শ্রীগৌরাঙ্গের দৈন্য উক্তি কৈলা নিবেদন।
    শুনি শচী আশীষ করয়ে পুন পুন।।
    শ্রীজগদানন্দ গৌরের ভক্তকন্ঠহার।
    শচী মায়ের সেবা কৈলা বিবিধ প্রকার।।
    ভক্তগণে কহিলা শ্রীগৌরাঙ্গ সংবাদ।
    শুনি শুদ্ধ ভক্তগণের হৈল প্রেমোন্মাদ।।
    কেহ কহে হা গৌরাঙ্গ কাহে ন্যাসী হৈলি।
    পদছায়া দিয়া কেনে দুখে ভাসাইলি।।
    কেহ কহে মোর মহাভাগ্য উপজিল।
    দয়া করি প্রাণ গোরা মোরে সঙরিল।।
    ভক্ত খেদে দুখী হঞা পণ্ডিত চলিলা।
    শান্তিপুরে যাঞা প্রভু পদে প্ৰণমিলা।।
    প্রভু তারে কৈলা প্রেমে দৃঢ় আলিঙ্গন।
    বসিবারে দিলা ঝাট উত্তম আসন।।
    গৌরাঙ্গের কুশল পুছে প্রেমে পূর্ণ হঞা।
    গৌরের তত্ত্ব পণ্ডিত কহে বিবরিয়া।।
    এবে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যের সদা প্রেমোন্মাদ।
    ক্ষণে রাধা রাধা বলি করয়ে বিষাদ।।
    ক্ষণে কাঁহা প্রাণনাথ বলিয়া গৰ্জ্জয়।
    সেই রবে সর্ব্ব প্রাণীর হৃদয় দ্রবয়।।
    শুনি মোর প্রভুর হৈল শুদ্ধ প্রেমোন্মাদ।
    হা নাথ গৌরাঙ্গ বিনু নাহি অন্য বাদ।।
    গ্রহরেক পরে প্রভু স্তম্ভিত হইলা।
    দ্বিতীয় প্রহরে উচ্চ হুঙ্কার করিলা।।
    ক্ষণে উচ্চহাস ক্ষণে করয়ে ক্রন্দন।
    প্রকটাপ্রকট মাত্র করি উচ্চারণ।।
    হেন মতে কত ভাবের হৈল উদ্দাম।
    মো অধমের তাহা বর্ণিবারে নাহি ক্ষম।।
    যাহা দেখি তাহা লিখি না বুঝিনু মৰ্ম্ম।
    যৈছে শুক গীত গায় শিক্ষণের ধর্ম্ম।।
    তবে পণ্ডিতেরে প্রভু বহু সৎকার কৈলা।
    গৌরগুণ আলাপিয়া নিশি পোহাইলা।।
    প্রভাতে জগদানন্দ শ্রীঅদ্বৈত স্থানে।
    যাইবারে আজ্ঞা মাগে বিনয় বচনে।।
    তরজা প্রহেলী প্রভু কহিলা ইঙ্গিতে।
    গৌর বিনু অন্যে তাহা না পারে বুঝিতে।।
    প্রভু কহে শ্রীগৌরাঙ্গ মোর প্রাণধন।
    তার রাঙ্গা শ্রীচরণে এই নিবেদন।।
    বাউলকে কহিও লোক হইল আউল।
    বাউলকে কহিও হাটে না বিকায় চাউল।।
    বাউলকে কহিও কাজে নাহিক আউল।
    বাউলকে কহিও ইহা কহিছে বাউল।।
    শুনি শ্রীজগদানন্দ ঈষৎ হাসিয়া।
    নীলাচলে যাত্রা কৈলা প্রভু সম্ভাষিয়া।।
    কতদিনে উপনীত হইলা শ্রীক্ষেত্রে।
    গৌরে দেখি প্রেমধারা বহে দুই নেত্রে।।
    অষ্ট-অঙ্গে শ্রীচৈতন্যে দন্ডবৎ কৈলা।
    তিঁহ উঠি শ্রীজগদানন্দে আলিঙ্গিলা।।
    তবে করযোড়েতে পণ্ডিত ক্রমে বলে।
    নদীয়ার ভক্তগণ আছয়ে কুশলে।।
    শচীমাতার বৎসলতা নিরুপম হয়।
    তোমার মঙ্গল লাগি দেবে আরাধয়।।
    সাধু স্থানে আশীর্ব্বাদ লহয়ে মাগিয়া।
    আশীষ করয়ে নিজে ঊর্দ্ধ বাহু হঞা।।
    বিষ্ণুপ্রিয়া মাতার কথা কি কহিনু আর।
    তান ভক্তি নিষ্ঠা দেখি হৈনু চমৎকার।।
    শচীমাতার সেবা করেন বিবিধ প্রকারে।
    সহস্রেক জনে নারে ঐছে করিবারে।।
    প্রত্যহ প্রত্যূষে গিয়া শচীমাতা সহ।
    গঙ্গাস্নান করি আইসেন নিজ গৃহ।।
    দিনান্তেহ আর কভু না যান বাহিরে।
    চন্দ্ৰসূৰ্য্যে তান মুখ দেখিতে না পারে।।
    প্ৰসাদ লাগিয়া যত ভক্তবৃন্দ যায়।
    শ্রীচরণ বিনা মুখ দেখিতে না পায়।।
    তান কণ্ঠধ্বনি কেহ শুনিতে না পারে।
    মুখপদ্ম ম্লান সদা চক্ষে জল ঝরে।।
    শচীমাতার পাত্রশেষ মাত্র সে ভুঞ্জিয়া।
    দেহ রক্ষা করে ঐছে সেবার লাগিয়া।।
    শচী সেবা কাৰ্য্য ছাড়ি পাইলে অবসর।
    বিরলে বসিয়া নাম করে নিরন্তর।।
    হরিনামামৃতে তান মহা রুচি হয়।
    সাধ্বী শিখামণি শুদ্ধ প্ৰেমপূৰ্ণ কায়।।
    তব শ্রীচরণে তাঁর গাঢ় নিষ্ঠা হয়।
    তাহান কৃপাতে পাইনু তাঁর পরিচয়।।
    তব রূপ-সাম্য চিত্রপট নিৰ্ম্মাইলা।
    প্রেমভক্তি মহামন্ত্রে প্রতিষ্ঠা করিলা।।
    সেই মূর্ত্তি নিভৃতে করেন সুসেবন।
    তব পাদপদ্মে করি আত্ম-সমর্পণ।।
    তার সদ্‌গুণ শ্রীঅনন্ত কহিতে না পারে।
    এক মুখে মুঞি কত কহিমু তোমারে।।[১]
    মহাপ্রভু কহে আর না কহ ঐ বাত।
    শান্তিপুরে আচার্য্যের কর সুসংবাদ।।
    প্রভুর মঙ্গল আগে পণ্ডিত কহিলা।
    তরজা প্রহেলী তান পরে প্রকাশিলা।।
    তরজা শুনিয়া হাসি কহে শ্রীচৈতন্য।
    তাঁর যেই অনুমতি সেই মোর মান্য।।
    এত কহি শ্রীগৌরাঙ্গ স্তম্ভিত হইলা।
    স্বরূপাদি ভক্তগণ তাহানে পুছিলা।।
    কহ মহাপ্রভু এই তরজার অর্থ।
    মোরা সভে বুঝিবারে হৈনু অসমর্থ।।
    শ্রীগৌরাঙ্গ কহে সেই অদ্বৈত আচাৰ্য্য।
    কৃষ্ণ সিদ্ধি কৈলা তিঁহ অলৌকিক কাৰ্য্য।।
    তাঁর প্রেম-রজ্জু-বন্ধ স্বয়ং ভগবান।
    তাঁর ইচ্ছার কৃষ্ণের অপ্রকট অধিষ্ঠান।।
    তাঁর তরজার অর্থ কে বুঝিতে পারে।
    তার অর্থ সেই বুঝে আনে নাহি স্ফূরে।।
    সাধুগণে কহে তাঁরে দেবতার কার্য্য।
    ভক্তি কল্পতরু তিহুঁ জগতের পূজ্য।।
    শুনি ভক্তগণ মনে লাগে চমৎকার।
    সেই দিন হৈতে গোরার হৈল দশান্তর।।
    শ্রীরাধার দিব্যোন্মাদ হৈল উদ্দীপন।
    হা নাথ হা কৃষ্ণ বুলি করয়ে ক্রন্দন।।
    দিবা নিশি নাহি জ্ঞান মহা ভাবাবেশে।
    তরাস লাগয়ে ভক্তগণের মানসে।।
    এক দিন গোরা জগন্নাথে নিরখিয়া।
    শ্রীমন্দিরে প্রবেশিলা হা নাথ বলিয়া।।
    প্রবেশ মাত্রেতে দ্বার স্বয়ং রুদ্ধ হৈল।
    ভক্তগণ মনে বহু আশঙ্কা জন্মিল।।
    কিছুকাল পরে স্বয়ং কপাট খুলিলা।
    গৌরাঙ্গাপ্রকট সভে অনুমান কৈলা।।
    যদ্যপি চৈতন্যাপ্রকট নহে ভক্ত স্থানে।
    লোক সিদ্ধ মহা-খেদ কৈলা গৌর গণে।।[২]
    সেই খেদ রুদ্র বহ্নি মহা-তেজীয়ান।
    সর্ব্বজীবের পোড়াইল দেহ মন প্ৰাণ।।
    শ্রীগৌরাঙ্গের লীলা হয় সমুদ্র পাথার।
    অনন্ত বর্ণিতে নারে তার একাধার।।
    ক্ষুদ্রতম কীট হৈতে মুঞি অতি ক্ষুদ্র।
    চিত্তানন্দে কহি পরমাণু ক্ষুদ্র মাত্র।।
    হেথা মোর প্রভু অলৌকিক ভাবাবেশে।
    মহাপ্রভুর অপ্রকট বুঝিলা মানসে।।
    দিব্যোন্মাদ হৈল প্রভুর নাহি বাহ্যজ্ঞান।
    নিমাঞি নিমাঞি বুলি করয়ে আহ্বান।।
    ক্ষণে কহে আয়রে নিমাই পুস্তক লইয়া।
    গৃহ-কৃত্ব আছে ঝাট যাঙ পড়াইয়া।।
    ক্ষণে কহে তোর জারি জুরি মুঞি জানি।
    কোন ভাবে গৌর হৈলি কহ দেখি শুনি।।
    ক্ষণে কহে নিমাঞি তুহুঁ রহ মোর ঘরে।
    শচীমায়ের দুঃখ হৈব গেলে দেশান্তরে।।
    ক্ষণে কহে গৌর তুহুঁ বিধাতার ধাতা।
    কলিযুগে হৈলি নাম-সংকীর্ত্তনের পিতা।।
    কভু কহে ব্রজের বস্তু ব্ৰজে লুকাইলি।
    খুঁজি নাহি পাঙ একি কর চতুরালী।।
    হেন মতে বহুত প্রলাপ ফুকারিল।
    বহুক্ষণ পরে প্রভুর বাহ্যস্ফূৰ্ত্তি হৈল।।
    হরি হরি বুলি তিঁহ ছাড়য়ে হুঙ্কার।
    সভে করে ব্যাধি এবে হইল অন্তর।।
    এই শুদ্ধ মহাভাব কে বুঝিতে পারে।
    শুদ্ধ ভক্তগণ মাত্র বুঝয়ে অন্তরে।।
    মুঞি ক্ষুদ্রতম কীটের নাহি জ্ঞানাভাস।
    যে দেখিনু তার সূত্র করিনু প্রকাশ।।
    এক দিন সীতানাথ বসি বহির্দ্বারে।
    হরে কৃষ্ণ নাম ডাকে আনন্দ অন্তরে।।
    ক্ষেত্রবাসী ভক্ত এক তথায় আইলা।
    দেখি প্রভু সমাদরে তায়ে বসাইলা।।
    লোকাচার মতে তেহোঁ অশ্ৰু বিমোচিয়া।
    গৌরাঙ্গের কুশল পুছে অতি ব্যগ্র হঞা।।
    শ্রীবৈষ্ণব কহে জানোঁ চৈতন্যের সংবাদ।
    অপ্ৰকট হৈলা তিঁহো হঞাছে প্রবাদ।।[৩]
    তাহা শুনি দেখে প্রভু সৰ্ব্ব শূন্যায়িত।
    বুঝিনু বুঝিনু বৈলা হইলা মুচ্ছিত।।
    বহুক্ষণ পরে তেঁহো পাইলা চেতন।
    কত ভাব হৈল প্রভুর না যায় বর্ণন।।
    ক্ষণে স্তম্ভ ক্ষণে হুঙ্কার ক্ষণে গড়াগড়ি।
    ক্ষণে গোরা গোরা বুলি কান্দয়ে ফুকারি।।
    ক্রন্দন শুনিয়া তহি সীতামাতা আইলা।
    কারণ শুনিয়া তিহোঁ মূৰ্চ্ছিত হইলা।।
    বহু ক্ষণে সীতাদেবী পাইয়া চৈতন্য।
    ফুকারিয়া কান্দে বহু বলিয়া চৈতন্য।।
    শ্রীঅচ্যূত কান্দে আর কান্দে কৃষ্ণদাস।
    শ্রীগোপাল দাস কান্দে হইয়া হতাশ।।
    সীতার নন্দন মধ্যে এ তিন প্রধান।
    শুদ্ধ-ভক্ত হয় তিনের গৌরগত প্রাণ।।
    তা সভার বিলাপ বৰ্ণিতে নাহি ক্ষম।
    সূত্র পরমাণু মাত্র কহিনু বৰ্ণন।।
    দিবারাত্র গেল প্রভু নাহি বাহ্যাভাস।
    সপরিবারে আচার্য্য কৈলা উপবাস।।
    পরদিনে প্রভু মহামহোৎসব কৈলা।
    বহু দ্বিজ শ্রীবৈষ্ণবে সেবা করাইলা।।
    শত শত দরিদ্রেরে কৈলা অন্নদান।
    বহু কৌড়ি দান কৈলা পৰ্ব্বত প্রমাণ।।
    হরিসংকীর্ত্তন সুধা শুদ্ধ গঙ্গানীরে।
    শান্তিপুর ভাসি গেল প্রেমার্য্যসাগরে।।
    তার তরঙ্গেতে কত গ্রামবাসীজন।
    সপরিবারেতে কৈলা স্নানাবগাহন।।
    সেই দিন হৈতে প্রভু মহাযোগেশ্বর।
    শ্রীগৌরাঙ্গের রূপ ধ্যান করে নিরন্তর।।
    স্বপ্নে মহাপ্রভু আসি কহে অদ্বৈতেরে।
    মো বিচ্ছেদে নাঢ়া দুঃখ না ভাব অন্তরে।।
    তো প্রেমাকর্ষণে মুঞি আইনু তোর ঘরে।
    কৃষ্ণমিশ্রের পুত্ররূপে দেখিবা আমারে।।
    প্রভু নিত্যানন্দ চাঁদে দিনকত পরে।
    কৃষ্ণমিশ্রের পুত্ররূপে পাইবা নিজ ঘরে।।
    তব প্রাণ-প্রিয়তম পুত্ৰ কৃষ্ণদাস।
    যাহার হৃদয়ে মোর সর্বদা বিলাস।।
    সেই নিত্যভক্ত মোর নিযুক্ত সেবাতে।
    পুন প্রকট হৈনু তার বাঞ্চা পুরাইতে।।
    অত্যাশ্চৰ্য্য স্বপ্ন দেখি প্রভুর বিস্ময়।
    সেই দিনে কৃষ্ণমিশ্রের হইল তনয়।।
    শ্রীগৌরাঙ্গের প্রতিকৃতি ভূবনমোহন।
    রূপ দেখি হৈলা প্রভু প্রেমেতে মগন।।
    রঘুনাথ নাম তান তিঁহ প্রেমাকর।
    গৌরগুণ শুনি যার বহে অশ্রুধার।।
    তবে যথাকালে কৃষ্ণের দোল পূর্ণিমায়।
    কৃষ্ণ মিশ্র প্রভুর হৈল দ্বিতীয় তনয়।।
    নিত্যানন্দের প্রতিকৃতি দয়ার সাগর।
    গৌরাঙ্গ মহিমা সেই কহে নিরন্তর।।
    শ্রীদোলগোবিন্দ নাম প্রভু তার থুইলা।
    শুনি ভক্তগণ প্রেমে হরিধ্বনি কৈলা।।
    একদিন শ্রীঅদ্বৈত ডাকি পুত্রগণে।
    নিৰ্জ্জনে কহয়ে অতি মধুর বচনে।।
    অহে বৎসগণ সভে স্থির কর মন।
    গার্হস্থ্য ধর্ম্মের সার করহ শ্রবণ।।
    সন্ধ্যাবন্দনাদি আর পঞ্চ মহাযজ্ঞ।
    যেই জন করে নিত্য যেই মহাবিজ্ঞ।।
    পরদার পরধনে লোভ না করিবা।
    ইথে ইহ পরকালে যাতনা পাইবা।।
    জীবমাত্রে দয়া রাখি না করিহ হিংসা।
    নিন্দা না করিহ সাধুর করিহ প্রশংসা।।
    গৃহাঙ্গনে শ্রীতুলসী করিবে স্থাপন।
    তুলসী বিহণে গৃহ শ্মশানের সম।।
    নিতি হরিসংকীর্ত্তন হয় সর্ব্বোত্তম।
    পাপের প্রায়শ্চিত্ত ইথে পলায় শমন।
    অপরাধ খণ্ডে নিত্য সাধু-সঙ্গ হয়।
    কৃষ্ণভক্তি লাভ হয় নাহিক সংশয়।।
    আর এক কথা মোর স্মরণ রাখিবা।
    আত্মসুখ লাগি কোন কৰ্ম্ম না করিবা।।
    কৃষ্ণ-সেবা লাগি যদি সংসার করয়।
    কৰ্ম্ম-জন্য পাপ পূণ্য ভাগী নাহি হয়।
    কাম্যকৰ্ম্মে বিষয় বাসনা ক্রমে বাড়ে।
    সেই সূত্রে সংসারে জীব গতাগতি করে।।
    অতএব কাম্যকৰ্ম্ম সৰ্ব্বদা ত্যজিবে।
    কৃষ্ণার্থ করিলে কর্ম্ম অভীষ্ট পুরিবে।।
    হেন মতে বহুবিধ উপদেশ দিলা।
    শুনি শ্রীঅচ্যূত আদি আনন্দিত হৈলা।।
    শ্রীঅচ্যূত কৃষ্ণমিশ্র আর গোপালদাস।
    এ তিনের কৃষ্ণসেবায় সতত উল্লাস।।
    কৃষ্ণ বৈষ্ণবেতে সদা গাঢ় অনুরাগ।
    শ্রীঅচ্যুতের সংসারেতে সম্পূর্ণ বিরাগ।।
    প্রভু আজ্ঞায় প্রেম-গঙ্গার কল্লোল বাঢ়িল।
    নানা উপচারে কৃষ্ণের সেবা আরম্ভিল।।
    যদ্যপি এই তিনের হয় কৃষ্ণৈকান্ত মন।
    কৃষ্ণমিশ্রে সেবা দিতে প্রভুর হৈল মন।।
    আশ্ৰমী শ্রীকৃষ্ণমিশ্র শুদ্ধ-ভক্তিমান।
    কৃষ্ণ-সেবায় যোগ্যপাত্র করি অনুমান।।
    অচ্যুতের প্রতি কহে লাভার নন্দন।
    শুন বাছা শ্রীঅচ্যুত আমার বচন।।
    তুমি মোর জ্যেষ্ঠ পুত্র বৈষ্ণবাগ্রগণ্য।
    তোমা হেন পুত্র পাঞা হৈনু মুঞি ধন্য।।
    পরম পবিত্র তুহুঁ শাস্ত্রে বৃহস্পতি।
    ধার্ম্মিকের শিরোমণি অতি শুদ্ধ মতি।।
    বাল্যকাল হৈতে তুমি সংসারে বিরক্ত।
    পরম বৈরাগ্য-ধনে সদা অনুরক্ত।।
    তেঞি দারপরিগ্রহে হইলা বিমুখ।
    তুচ্ছ কৈলা জীব প্রিয় বাহ্যেন্দ্রিয় সুখ।।
    অতএব শ্রীবিগ্রহের সেবাদিক ক্রিয়া।
    তোমা হৈতে না চলিবে দেখিনু বুঝিয়া।।
    কৃষ্ণদাসমিশ্র এই তোমার কনিষ্ঠ।
    দেব-দ্বিজ অনুরক্ত বৈষ্ণবের শ্রেষ্ঠ।।
    সুপন্ডিত শুদ্ধ বুদ্ধি ভক্তির ভান্ডারী।
    প্রেমিকের শিখামণি সদা শুদ্ধাচারী।।
    মোর মতগ্রাহী সদা মোর অনুগত।
    গৌর-গত প্রাণ তেঞি গৌরপ্রিয়-পাত্র।।
    বিবাহ করিয়া তাহে হঞাছে আশ্রমী।
    মোর মতে তারে কৃষ্ণ সেবার যোগ্য মানি।।
    বিশেষতঃ কৃষ্ণদাসের পুত্র দুই জন।
    পরম ধাৰ্ম্মিক শ্রীগৌরাঙ্গ-পরায়ণ।।
    জ্যেষ্ঠ রঘুনাথ ছোট শ্রীদোলগোবিন্দ।
    শ্রীকৃষ্ণ-সেবনে দোঁহার পরম আনন্দ।।
    এক দিন শ্রীমান রঘুনাথ কহে মোরে।
    বেদব্যাস বাক্য স্থির রহে কি প্রকারে।।
    কলিকালে চৌরালী নরক হৈল পূর্ণ।
    সেই পথ রুদ্ধ কৈলা শ্রীকৃষ্ণ-চৈতন্য।।
    হরিনাম মহামন্ত্রে উচ্চারিলা জীবে।
    কহ শুনি কৈছে জীবের নরক পূরিবে।।
    শুনি শ্রীদোলগোবিন্দ করিলা হাসিয়া।
    পূর্ণ দৈব গৌর-দ্বেষী পাপী সভ দিয়া।।
    ঐছে বাত শুনি মোর হৈল চমৎকার।
    সেই হৈতে জানি দুহু দেব অবতার।।
    ধন্য কৃষ্ণদাস মোর ধন্য তার পুত্র।
    শ্রীমদনগোপাল সেবার যোগ্য পাত্র।।
    সেই মোর আত্মীয় গৌরাঙ্গ ভজে যেই।
    মোর প্রাণধন সেবার অধিকারী সেই।।
    অতএব কৃষ্ণমিশ্রে এই সেবা ভার।
    অর্পণ করিতে চাই কি ইচ্ছা তোহার।।
    শুনি হর্ষে শ্রীঅচ্যূত কহে যোড়করে।
    যে আজ্ঞা করিলা ঐছে মোর মনে ধরে।।
    তবে শ্রীঅদ্বৈত কহে কৃষ্ণমিশ্ৰ প্ৰতি।
    মদনগোপাল হয় মোর প্রাণগতি।।
    ভক্তি ভাবে নিতি তানে করিহ সেবন।
    বহির্মুখে নাহি দিবা করিতে পূজন।।
    নাস্তিক পাষন্ডগণে বহির্মুখ জানি।
    সন্ন্যাসী অদ্বৈতবাদী আর যোগী জ্ঞানী।।
    ভুক্তিমুক্তি অভিলাষী ভক্তিবাঞ্ছা হীনে।
    কৃষ্ণ বহির্মুখ মানি অবৈষ্ণব জনে।।
    বৈষ্ণবের মধ্যে যেই সম্প্রদায় হীনে।
    সম্প্রদায়ী মধ্যে যেই গৌরাঙ্গ না মানে।।
    কৃষ্ণ বহির্মুখ সেই করিম নির্যাস।
    আর এক কথা মোর শুন কৃষ্ণদাস।।
    মোর নিজ গণ মধ্যে দুম্মতি যাহারা।।
    মোর আজ্ঞা লঙ্ঘি চলে নাহি মানে গোরা।
    শ্রীগৌরাঙ্গ মোর প্রভু মুঞি তাঁর দাস।
    তাঁর শ্রীচরণরেণু মোর পঞ্চগ্রাস।।
    গোরা মোর প্রাণপতি গোরা মোর পূজ্য।
    সে গৌরাঙ্গ যে না মানে সেই মোর ত্যজ্য।।
    কৃষ্ণ বহির্মুখ সেই সভ নীচাশয়।
    শ্রীকৃষ্ণবিগ্রহ সেবার যোগ্য কভু নয়।।
    পিতৃ সদ্ধর্ম্মের রক্ষা করে যেই জন।
    সেই সে যথার্থ পুত্র বেদের বচন।।
    এত কহি শ্ৰীমদনগোপাল বিগ্রহ।
    কৃষ্ণমিশ্রে সমর্পিলা করিয়া আগ্রহ।
    কৃষ্ণসেবা পাঞা কৃষ্ণমিশ্র প্রেমানন্দে।
    দন্ডবৎ কৈলা প্রভুর চরণারবিন্দে।।
    দৈন্যস্তুতি করি মাতৃ পদে প্ৰণমিলা।
    সীতাদ্বৈত দোহে তাঁরে আশীর্ব্বাদ কৈলা।।
    শ্রীঅচ্যুতে তবে প্রণমিলা দৈন্য করি।
    অচ্যুত কহে তুয়া ভাগ্যের যাঙ বলিহারি।।
    কৃষ্ণের ইচ্ছা হৈল তুহেঁ দয়া করিবারে।
    সেই ইচ্ছা প্রকাশিলা আত্ম ভক্ত দ্বারে।।
    যৈছে ব্রহ্মাধারে কৃষ্ণ বেদ প্রকটিলা।
    এত কহি তিঁহ কৃষ্ণমিশ্রে আলিঙ্গিলা।।
    গোপাল কহে কৃষ্ণ হয় বড় দয়াবান্।
    তুঁহে কৃপা করি বংশের করিব কল্যাণ।।
    যৈছে বৃক্ষের মূলে জল করিলে সেচন।
    শাখা পল্লবাদির হয় সুখের উদ্গম।।
    অহো ভাগ্য বুলি কৃষ্ণমিশ্রে প্রণমিলা।
    কৃষ্ণমিশ্র তারে দৃঢ় আলিঙ্গন কৈলা।।
    তাহে আর আচার্য্যসূত প্রভু বলরাম।
    আর প্রভু জগদীশ মহা তেজীয়ান।।
    রোষাবেশে নিজগণ লৈঞা যুক্তি করি।
    এক কৃষ্ণমুর্তি আনাইলা যত্ন করি।।
    অভিষেক করি সেই মূৰ্ত্তি স্থাপিলা।
    আপনার গণ লঞা মহোৎসব কৈলা।।
    শ্রীঅদ্বৈতের লীলা হয় সমুদ্র দুষ্পার।
    তার সূত্র বিন্দুমাত্র করিনু প্রচার।।
    শ্রীচৈতন্য শ্রীঅদ্বৈত পদে যার আশ।
    নাগর ঈশান কহে অদ্বৈত-প্ৰকাশ।।

    ইতি অদ্বৈত-প্রকাশে একবিংশোহধ্যায়ঃ।

    —

    ১. বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর এই বেদন-বিবরণ বৈষ্ণব সাহিত্যে অনন্য সম্মপদ।  যে কোন বৈষ্ণব তথা সাধারণ পাঠকের চক্ষু শুষ্ক থাকা অসম্ভব। এই রচনায় ঈশান এক বিশিষ্ট আসনের অধিকারী।

    ২. মহাপ্রভুর অপ্রকট প্রথমে অদ্বৈত ‘মানসে’ জ্ঞাত হন।

    ৩. পরে ‘ক্ষেত্রবাসী ভতের’ মুখে বিশেষ পরিজ্ঞাত হন।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleজেমস বন্ড সমগ্র – ইয়ান ফ্লেমিং
    Next Article ভ্রান্তিবিলাস – ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.