Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অদ্ভুত সব গল্প – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প99 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    কুদ্দুসের এক দিন

    কুদ্দুসের এক দিন

    মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস পত্রিকা অফিসে কাজ করে।

    বড় কাজ না, ছোট কাজ–চা বানানো, সম্পাদক সাহেবের জন্যে সিগারেট এনে দেয়া। ড্রাইভার গাড়িতে তেল নেবে সঙ্গে যাওয়া, যাতে তেল চুরি করতে না পারে। এই ধরনের টালটু-ফালটু কাজ।

    কুদ্দুসের বয়স বাহান্ন। বাহান্ন থেকে ষোল বাদ দিলে থাকে ছয়ত্রিশ। সোল। বছরে মেট্রিক পরীক্ষা দেবার পর (পুরো পরীক্ষা দিতে পারেনি, ইংরেজি প্রথম পত্র পর্যন্ত দিয়েছিল) গত ছয়ত্রিশ বছর ধরে সে নানান ধরনের চাকরি করেছে। সবই টালুট-ফালটু চাকরি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, কিছু দিন সে একটা চোরের অ্যাসিসট্যান্টও ছিল। নিতান্ত ভদ্র ধরনের চোর। সুন্দর চেহারা। স্যুট পরে ঘুরে বেড়াত। শান্তিনিকেতনি ভাষায় কথা বলতো। বোঝার কোন উপায়ই নেই লোকটা বিরাট চোর। কুদ্দুস যেদিন বুঝতে পেরেছে সেদিনই চাকরি ছেড়ে দিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদে গিয়ে মসজিদের খতিবের মাধ্যমে তওবা করেছে। চোরের। সঙ্গে বাস করে চারশ টাকার মত জমিয়েছিল, তার অর্ধেক মসজিদের দানবাক্সে ফেলে দিয়েছে। ইচ্ছা ছিল পুরোটাই দিয়ে দেয়, না খেয়ে থাকতে হবে বলে দিতে পারেনি।

    গত ছয়ত্রিশ বছরে যে সব চাকরি কুদ্দুস করেছে তার তুলনায় পত্রিকা অফিসের চাকরিটা শুধু ভাল না, অসম্ভব ভাল। দেশ-বিদেশের টাটকা খবরের সঙ্গে যুক্ত থাকার মত সৌভাগ্য বাংলাদেশের কটা মানুষের আছে? সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই বিনা পয়সায় খবরের কাগজ পড়া যাচ্ছে। এই সৌভাগ্য তো সহজ সৌভাগ্য না, জটিল সৌভাগ্য।

    প্রতিদিন সকাল বেলা খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে নিজের সৌভাগ্যে কুদ্দুস নিজেকেই ঈর্ষা করে। যুবক বয়সে সে একবার গণক দিয়ে হাত দেখিয়েছিল। গণক। বলেছিল–শেষ বয়সটা আপনার মহাসুখে কাটবে। বিরাট সম্মান পাবেন। পত্রিকা

    অফিসে কাজটা পাবার পর কুদ্দুসের ধারণা গণক মোটামুটি সত্যি কথাই বলেছে। শুধু। বিরাট সম্মানের জায়গায় একটু ভুল করেছে। তা কিছু ভুল-ত্রুটি তো হবেই।

    কুদ্দুস রাতে পত্রিকা অফিসেই ঘুমায়। কোন এক কোনা-কানা খুঁজে নিয়ে মাদুর। পেতে শুয়ে পড়ে। চাদর দিয়ে সারা শরীর ঢেকে ফেললে মশার হাত থেকে মুক্তি। মেস করে থাকতে হচ্ছে না বলে বেশ কিছু টাকা বেঁচে যাচ্ছে। বেতন যা পাওয়া যায়। তাতে আলাদা ঘর ভাড়া করে বা মেস করে থাকা সম্ভব না। তার দরকারই বা কি? সে একা মানুষ। এত শৌখিনতার তার দরকার কি? পত্রিকা অফিসে কাজ করতে এসে তার গত তিন বছরে দশ হাজার পাঁচশ টাকা জমে গেছে। অকল্পনীয় একটা ব্যাপার। টাকাটা পত্রিকার সম্পাদক মতিয়ুর রহমান সাহেবের কাছে জমা আছে। চাইলেই উনি দেন। কুদ্দুসের টাকার কোন দরকার নেই, তবু মাঝে মাঝে মতিয়ুর রহমান সাহেবের কাছ থেকে টাকগুলি চেয়ে আনে। সারাদিন হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে থেকে সন্ধ্যাবেলা ফেরত দিয়ে আসে। টাকা হাতে নিরিবিলি বসে থাকতে তার ভাল লাগে। নিজেকে রাজা-বাদশার মত মনে হয়।

     

     

    আজ সকালে তেমন কোন কারণ ছাড়াই কুদ্দুসের নিজেকে রাজা-বাদশার মত মনে হতে লাগল। সে চায়ের কাপ এবং পত্রিকা হাতে বসেছে। পা নাচাতে নাচাতে কাগজ পড়ছে। মজার মজার খবরে আজ কাগজ ভর্তি। খবরগুলি পড়ে ফেললেই তো মজা শেষ হয়ে গেল, কাজেই কুদ্দুস প্রথমে শুধু হেড লাইনে চোখ বুলাবে। ভেতরের ব্যাপারগুলি ধীরে সুস্থে পড়া যাবে। তাড়া কিছু নেই। সম্পাদক সাহেব চলে এসেছেন। তাকে প্রথম দফার চা দেয়া হয়েছে, তিনি ঘণ্টাখানিকের ভেতর আর ডাকবেন না। কুদ্দুস শিস দিয়ে একটা গানের সুর তোলার চেষ্টা করতে লাগল–পাগল মন …। গানটা খুব হিট করেছে।

    কুদ্দুস পত্রিকার তিন নাম্বার পাতাটা খুলল। আজকের দিনটি কেমন যাবে তিন নম্বর পাতায় ছাপা হয়। কুদ্দুস এই অংশটা প্রথম পড়ে। তার ধনু রাশি। তার ব্যাপারে আজকের দিনটি কেমন যাবেতে যা লেখা হয় সব মিলে যায়। একবার লেখা হল দুর্ঘটনার সম্ভাবনা। সেদিন অকারণে হুমড়ি খেয়ে পড়ে বুড়ো আঙুলের। নখের অর্ধেকটা ভেঙে গেল।

     

    আজকের রাশিফলে লেখা–

    ধনু রাশির জন্যে আজ যাত্রা শুভ। ভ্রমণের যোগ আছে। কিঞ্চিত অর্থনাশের আশঙ্কা। শত্রুপক্ষের তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে। শত্রুর কারণে সম্মানহানির আশঙ্কা।

    সম্মানহানির আশংকায় কুদ্দুস খানিকটা চিন্তিত বোধ করছে। সম্মান বলতে গেলে কিছুই নেই। যা আছে তাও যদি চলে যায় তো মুশকিল। পত্রিকার সব হেড লাইন শেষ করবার আগেই কুদ্দুসের ডাক পড়ল। মতিয়ুর রহমান সাহেবের ইলেকট্রিক বেল ঝনঝন শব্দে বেজে উঠল। কুদ্দুস এমনভাবে লাফিয়ে উঠল যে তার কাপ থেকে চা পুরোটা হলকে গায়ে পড়ে গেল। শার্টটা নুতন কেনা। আজ নিয়ে মাত্র তৃতীয়বার পরা হয়েছে। শাদা কাপড়ে চায়ের রঙ সহজে ওঠে না। এক্ষুণি ধুয়ে ফেলতে পারলে হত। সেটা সম্ভব না। মতিয়ুর রহমান স্যার ডেকেছেন। এক সেকেন্ড অপেক্ষা করা যাবে না। কুদ্দুস প্রায় ছুটে সম্পাদক সাহেবের ঘরে ঢুকল।

     

     

    মতিয়ুর রহমান সাহেব বললেন, তোর খবর কি রে কুদ্দুস?

    কুদ্দুস বিনয়ে মাথা নিচু করে বলল, খবর ভাল স্যার।

    একটা কাজ করে দে তো–এই চিঠিটা নিয়ে যা। নাম-ঠিকানা লেখা আছে। হাতে হাতে দিয়ে আসবি।

    জি আচ্ছা, স্যার।

    জাভেদ সাহেব ইস্টার্ন প্লাজার নয় তলায় থাকেন। ইস্টার্ন প্লাজা চিনিস তো?

    জ্বি স্যার, চিনি।

    খুবই জরুরী চিঠি। হাতে হাতে দিবি। উনাকে বলবি আমাকে টেলিফোন করতে। আমি অফিসেই থাকব। নে টাকাটা নে, রিকশা করে চলে যা।

    মতিয়ুর রহমান সাহেব কুড়ি টাকার একটা নোট বের করে কুদ্দুসের হাতে দিলেন। কুদ্দুস টাকা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হল। রওনা হবার আগে শার্টটা পানি দিয়ে একবার ধুয়ে ফেলতে হবে। কতক্ষণের মামলা? কুদ্দুস বাথরুমের দিকে যাচ্ছে, আবার মতিয়ুর রহমান সাহেবের বেল বেজে উঠল। আবারও কুদ্দুস ছুটে গিয়ে ঘরে ঢুকল। সম্পদাক সাহেবের ঘরে ঢুকলে কুদ্দুসের মাথা ঠিক থাকে না।

    কুদ্দুস।

    জ্বি স্যার।

    রিকশায় যাওয়ার দরকার নেই, দেরি হবে। তুই এক কাজ কর, আমার গাড়ি নিয়ে চলে যা। আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি।

    জি আচ্ছা, স্যার।

     

     

    রিকশা ভাড়ার টাকাটা ফেরত দেবার জন্যে কুদ্দুস কুড়ি টাকার নোটটা বের করল। মতিয়ুর রহমান সাহেব বললেন, টাকা ফেরত দিতে হবে না। তুই দেরি করিস না। চলে যা।

    শার্ট না ধুয়েই কুদ্দুস গাড়িতে উঠল। তার মনটা খুঁতখুঁত করতে লাগল। শার্টের এই রঙ তো আর উঠবে না। নতুন শার্ট। মাত্র তিনবার পরা হয়েছে। গাড়িতে উঠে তার আরেকটু মন খারাপ হল–আবার একটা ভুল করা হয়েছে। পত্রিকাটা সাথে নিয়ে এলে হত। গাড়িতে যেতে যেতে কাগজ পড়ার আলাদা একটা মজা আছে। বসনিয়া-হার্জিগোভিনার গরম খবর আছে। আজকের দিনটা ভুল দিয়ে শুরু হয়েছে। আজকের তারিখটা কত যেন? ১৪ই এপ্রিল ১৯৯৬, তারিখটা তার জন্যে শুভ না।

     

    লিফটে কুদ্দুস একা। লিফটম্যান তাকে ঢুকিয়ে বোতাম টিপে দিয়ে বলেছে–আট তলায় গিয়ে থামবে। নেমে যাবেন। পারবেন না? কুদ্দুস বলেছে, পারব। তার কথা শেষ হবার আগেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। লিফট চলছে না। স্থির হয়ে আছে। একটা লালবাতি জ্বলছে আর নিভছে। মাথার উপর শাশা শব্দে ফ্যান। ঘুরছে। অদ্ভুত ফ্যান। গায়ে কোন বাতাস লাগছে না। লিফটের ভেতর বিরাট একটা আয়না লাগানো। আয়নার দিকে তাকিয়ে কুদ্দুসের মন খারাপ হয়ে গেল। শার্টের। দাগ বিশ্রীভাবে দেখা যাচ্ছে। এখন লন্ড্রিতে দিয়েও লাভ হবে না। টাকা খরচ হবে। অথচ দাগ উঠবে না। আচ্ছা, লিফটটা চলছে না, ব্যাপারটা কি? লিফটম্যান মনে হয় শুধু দরজা বন্ধ করার বোতাম টিপেছে, উপরে উঠার বেতাম টিপতে ভুলে গেছে। সে কি সাত লেখা বোতামটা টিপবে? কুদ্দুস মনস্থির করতে পারছে না। এ কি বিপদে পড়া গেল! আগে জানলে সিড়ি দিয়ে হেঁটে হেঁটে উপরে উঠে যেত। আট। তলায় ওঠা এমন কোন ব্যাপার না।

    পাগল মন গানটার প্রথম লাইনটা কুদ্দুস মনে মনে কয়েকবার গাইল। ইচ্ছে করলে শব্দ করেও গাইতে পারে। লিফটে সে একা। লিফটের ভেতর গান গাইলে কি বাইরে থেকে শোনা যায়?

    হেস করে একটা শব্দ হয়ে লিফটের ভেতরটা পুরো অন্ধকার হয়ে গেল। ইলেকট্রিসিটি কি চলে গেল? কুদ্দুসের বুকে ধক করে একটা ধাক্কা লাগল। ঢাকা শহরে কারেন্টের কোন ঠিকঠিকানা নেই। একবার চলে গেলে কখন আসবে কে জানে। লিফেটের ভেতর কতক্ষণ থাকতে হবে? লিফটম্যান যে গেছে তারও ফেরার নাম নেই। কি হচ্ছে না হচ্ছে সে খোঁজ-খবর করবে না? এডমিনিস্ট্রেশন ভাল না। মতিয়ুর রহমান স্যারের হাতে পড়ত–এক প্যাচে ঠিক করে দিত।

     

     

    কুদ্দুস খুব সাবধানে লিফটের দরজায় কয়েকবার ধাক্কা দিল। জোরে ধাক্কা দিতে সাহসে কুলুচ্ছে না। কল-কৰ্জার কারবার–কি থেকে কি হয় কে জানে? গরম লাগছে। আবার দমবন্ধও লাগছে। কুদ্দুস বেশ উচু গলায় ডাকল, লিফটম্যান ব্রাদার, হ্যালো! হ্যালো!

    কতক্ষণ পার হয়েছে তাও বোঝা যাচ্ছে না। কুদ্‌সের মনে হল ঘণ্টাখানিকের কম না। বেশিও হতে পারে। সারাদিনে যদি কারেন্ট না আসে তাহলে কি হবে? লিফটের ভেতর থাকতে হবে? কুদ্দুস লিফটের দরজায় আরেকবার ধাক্কা দিল আর তাতেই লিফট চলতে শুরু করল। কারেন্ট ছাড়াই কি চলছে? লিফটের ভেতরটা ঘোর অন্ধকার। কারেন্ট এলে তো বাতি-ফাতি জ্বলত। কিছুই জ্বলেনি। কুদ্দুস মনে। মনে বলল, চলুক, কারেন্ট ছাড়াই চলুক। চুলা দিয়ে হচ্ছে কথা।

    শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছে। কুদূসের শরীর কাঁপছে। লিফট কি এত দ্রুত ওঠে? এ তো মনে হচ্ছে বাড়িঘর ফুড়ে আসমানে উঠে যাবে। এত দ্রুত লিফট উঠছে যে কদ্দসের পেটের ভেতর পাক দিয়ে উঠছে। যে ভাবে উঠছে তাতে ১০০ তলা ছাড়িয়ে যাবার কথা। এটা মাত্র বার তলা বিল্ডিং। কুদ্দুস আসহাবে কাহাফের আটটা নাম মনে করার চেষ্টা করছে। এদের নাম পড়ে বুকে ফুঁ দিলে মহা বিপদ দূর হয়। বহু পরীক্ষিত। এরা আটজন দাকিয়ানুস বাদশাহর সময়ে পর্বতের গুহায় ঢুকে ঘুমিয়ে পড়েছিল। রোজ কেয়ামত পর্যন্ত এরা ঘুমন্ত থাকবে। এদের সাতজন মানুষ, একটা কুকুর। সাতজন মানুষের নাম মনে পড়ছে, কুকুরটার নাম মনে পড়ছে না।

    মাকসেলাইনিয়া
    মাসলিনিয়া
    ইয়ামলিখা
    মারনুশ
    দাবারনুশ
    শয়নুশ
    কাফশাতোইউশ

     

     

    কুকুরটার নাম কি?

    কুকুরের নাম মনে করতে না পারলে কোন লাভ হবে না। কুকুরের নামশুদ্ধ পড়ে বুকে ফুঁ দিতে হয়। কুদ্দস প্রাণপণে কুকুরটার নাম মনে করার চেষ্টা করছে। চরম বিপদে কিছুই মনে পড়েনা।

    শোঁ শোঁ শব্দ বাড়ছেই। শব্দটা এখন কানের পর্দার ভেতরে হচ্ছে। কুদ্দুসের মুখ শুকিয়ে গেছে। সে লিফটের মেঝেতে বসে পড়ল। আর তখনই কুকুরটার নাম মনে পড়ল–কিতমীর!

     

    কিতমীর নাম পড়ার পরপরই হঠাৎ প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে লিফট থেমে গেল। লিফটের দরজা খুলতে শুরু করল। দরজা পুরোপুরি খোলার জন্যে কুদ্দুস অপেক্ষা করল না। সে বসা অবস্থা থেকেই ব্যাঙের মত লাফ দিয়ে বের হয়ে পড়ল। বের হয়েই হতভম্ব হয়ে গেল। সে কোথায় এসেছে? ব্যাপারটা কি? লিফট থেকে বের হওয়াটা বিরাট বোকামি হয়েছে। যে ভাবে লাফ দিয়ে সে লিফট থেকে বের হয়েছে তার উচিত ঠিক একইভাবে লাফ দিয়ে আবার লিফটে ঢুকে যাওয়া। সে পেছনে তাকালো। পেছনে লিফট নেই। লিফট কেন কোন কিছুই নেই, চারদিকে ভয়াবহ শূন্যতা। সে নিজেও বসে আছে শূন্যের উপর। মাথার উপর আকাশ থাকার কথা। আকাশ-ফাঁকাশ কিচ্ছু নেই। তার চারপাশে কুয়াশার মত হালকা ধোয়া। সেই ধোয়ার রঙ ঈষৎ গোলাপী। কুদ্দুস মনে মনে বলল, ইয়া গাফুরুর রাহিম! এ কি বিপদে পড়লাম! ও আল্লাপাক, আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার কর। হে গাফুরুর রাহিম! একবার যদি এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাই তাহলে শুক্রবারে তারা মসজিদে সিন্নি দেব। এবং বাকি জীবনে আর লিফটে চড়ব না। দরকার হলে ৫০০ তলা পর্যন্ত হেঁটে উঠব। আমার উপর দয়া কর আল্লাহপাক।

    কুদ্দুস চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। চোখ বন্ধ অবস্থাতেই সে তিনবার কুলহুআল্লাহ পড়ে বুকে ফুঁ দেবে। তারপর চোখ খুলবে। তাতে যদি কিছু হয়। কোন দোয়াই প্রথম চোটে মনে পড়ছে না। হায়, এ কেমন বিপদ!

     

     

     

    ২.

    কুদ্দুস চোখ খুলল। অবস্থার কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আগে চারপাশে ছিল গোলাপী রঙের ধোয়া, এখন বেগুনী ধোয়া। আগে কোন শব্দ ছিল না। এখন একটু পর পর সাপের শিসের মত তীব্র শব্দ হচ্ছে। শব্দটা শরীরের ভেতর ঢুকে কলজে কাপিয়ে দিচ্ছে। এরচে তো আগেই ভাল ছিল। কুদ্দুস ভেবে পাচ্ছে না সে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলবে কি না। চোখ বন্ধ রাখা আর খোলা রাখা তো একই ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আচ্ছা, এমন কি হতে পারে যে সে মারা গেছে? হার্টফেল করে লিফটের ভেতরেই তার মৃত্যু হয়েছে? সে যে জগতে আছে সেটা আর কিছুই না, মৃত্যুর পরের জগৎ। এ রকম তো হয়। কিছু বোঝার আগেই কত মানুষ মারা যায়। সেও মারা গেছে, মৃত্যুর পর তাকে আবার জিন্দা করা হয়েছে। কিছুক্ষণের ভিতর মানকের-নেকের আসবে, তাকে সোয়াল-জোয়ার শুরু করবে–তোমার ধর্ম কি? তোমার নবী কে? এইসব জিজ্ঞেস করবে। এ কি বিপদ!

    তুমি কে?

    কুদ্দুস চমকে চারদিকে তাকালো, কাউকে সে দেখতে পেল না। প্রশ্নটা সে পরিষ্কার শুনলো। তাকেই যে প্রশ্ন করা হচ্ছে তাও বোঝা যাচ্ছে। কেমন গম্ভীর ভারি গলা। শুনলেই ভয় লাগে।

    এই, তুমি কে?

    কুদ্দুস কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, স্যার, আমার নাম কুদ্দুস।

    তুমি এখানে কি ভাবে এসেছ?

    স্যার, আমি কিছুই জানি না। লিফটের ভিতরে ছিলাম। লাফ দিয়ে বের হয়েছি। বাইর হওয়া উচিত হয় নাই। আপনে স্যার এখন একটা ব্যবস্থা করেন। গরীবের একটা রিকোয়েস্ট।

     

     

    আমরা তো কিছুই বুঝতে পারছি না। তুমি এখানে এলে কি করে?

    স্যার, আমার ভুল হয়েছে। ক্ষমা করে দেন। কোথায় আসছি নিজেও জানি। কিভাবে আসছি তাও জানি না। লিফটের দরজা ভালমত খোলার আগেই লাফ দিয়েছিলাম। এটা স্যার অন্যায় হয়েছে। আর কোনদিন করব না। সত্যি কথা বলতে কি–আর কোনদিন লিফটেও চড়ব না। এখন স্যার ফেরত পাঠাবার একটা ব্যবস্থা। করেন। আমি খাস দিলে আল্লাপাকের কাছে আপনার জন্যে দোয়া করব।

    তোমার কোন কিছুই তো আমরা বুঝতে পারছি না। প্রথম কথা হল–মাত্রা। কি করে ভাঙলে? মাত্রা ভেঙে এখানে এলে কি ভাবে?

    স্যার বিশ্বাস করেন, আমি কোন কিছুই ভাঙি নাই। যদি কিছু ভেঙে থাকে। আপনাআপনি ভাঙছে। তার জন্যে স্যার আমি ক্ষমা চাই। যদি বলেন, পায়ে ধরব। কোন অসুবিধা নাই।

    তুমি তো বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করেছ। তুমি কি বুঝতে পারছ ব্যাপারটা কি ঘটেছে?

    জ্বি না।

    তুমি ত্রিমাত্রিক জগৎ থেকে চতুর্মাত্রিক জগতে প্রবেশ করেছ। এই কাণ্ডটা কি ভাবে করেছ আমরা জানি না। আমরা জানার চেষ্টা করছি।

    স্যার, ফেরত পাঠাবার ব্যবস্থা করেন। সারাজীবন আপনার গোলাম হয়ে থাকব।

    তোমার কথাবার্তাও তো আমরা কিছু বুঝতে পারছি না। গোলাম হয়ে থাকব মানে কি?

    কুদ্দুস ব্যাকুল গলায় বলল, স্যার, গোলাম হয়ে থাকব মানে হল স্যার আপনার সার্ভেন্ট হয়ে থাকব। আমি আপনার মুখ দেখতে পারছি না। মুখ দেখতে পারলে ভয়টা একটু কমত।

     

     

    আমরা ইচ্ছা করেই তোমাকে মুখ দেখাচ্ছি না। মুখ দেখালে ভয় আরো বেড়ে যেতে পারে।

    স্যার, যে ভয় লিফটের ভিতর পেয়েছি, এরপর আর কোন কিছুতেই কোন ভয় পাব না। রয়েল বেঙ্গলের খাচার ভেতর ঢুকে রয়েল বেঙ্গলকে চুমু খেয়ে আসব। তার লেজ দিয়ে কান চুলকাব, তাতেও স্যার ভয় লাগবে না।

    তোমার নাম যেন কি বললে–কুদ্দুস?

    জ্বি স্যার, কুদ্দুস।

    একটা জিনিশ একটু বোঝার চেষ্টা কর–তুমি হচ্ছ ত্রিমাত্রিক জগতের মানুষ। তোমাদের জগতের প্রাণীদের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এই তিনটি মাত্রা আছে। এই দেখে তোমরা অভ্যস্ত। আমরা চার মাত্রার প্রাণী। চার মাত্রার প্রাণী সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা নেই।

    স্যার, আপনি আমার মত বাংলা ভাষায় কথা বলতেছেন, এইটা শুনেই মনে আনন্দ পাচ্ছি। আপনার চেহারা যদি খারাপও হয়, কোন অসুবিধা নাই। চেহারার উপর তো স্যার আমাদের হাত নাই। এটা হল বিধির বিধান।

    আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি আমাকে দেখ।

    কুদ্দুসের শরীরে হালকা একটা কাপুনি লাগল। হঠাৎ এক ঝলক ঠাণ্ডা হাওয়া লাগলে যে রকম লাগে, সে রকম। তারপরই মনে হতে লাগলো তার চারপাশে যত বেগুনী রঙ আছে সব তার চোখের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। আবার চোখের ভেতর থেকে কিছু কিছু রঙ বের হয়ে আসছে। এ কি নতুন মুসিবত হল!

    এ আচমকা রঙের আসা-যাওয়া বন্ধ হল। কুদ্দুস তার চোখের সামনে কি একটা যেন দেখল। মানুষের মতই মুখ, তবে স্বচ্ছ কাচের তৈরি। একটা মুখের ভেতর আরেকটা, সেই মুখের ভেতর আরেকটা–এই রকম চলেই গিয়েছে। মুখটার চোখ দুটাও কাচের। সেই চোখের যে কোন একটার দিকে তাকালে তার ভেতরে আর একটা চোখ দেখা যায়, সেই চোখের ভেতর আবার আরেকটা … ঘটনা এইখানে শেষ হলে হত, ঘটনা এইখানে শেষ না। কুদ্দুসের কখনো মনে হচ্ছে সে ভয়ংকর এই মানুষটার ভিতরে বসে আছে, আবার পরমুহূর্তেই মনে হচ্ছে ভয়ংকর এই মানুষটা তার ভেতরে বসে আছে। এই কুৎসিত জিনিশটাকে মানুষ বলার কোন কারণ নেই, মানুষ ছাড়া কুদ্দুস তাকে আর কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

     

     

    তুমি কি ভয় পাচ্ছ?

    জ্বি না, স্যার। যদি কিছু মনে না করেন–একটু পেসাব করব, পেসাবের বেগ। হয়েছে।

    কি করবে?

    প্রস্রাব করব। আপনাদের বাথরুমটা কোন দিকে?

    তোমার কথা বুঝতে পারছি না–কি করতে চাও?

    স্যার, একটু টয়লেটে যাওয়া দরকার।

    ও আচ্ছা। আচ্ছা, বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন। তুমি তো আমাদের মহা সমস্যায় ফেললে। আমাদের এখানে এরকম কোন ব্যবস্থা নেই।

    বলেন কি স্যার!

    আমরা দেহধারী প্রাণী নই। দেহধারী প্রাণীদের মত আমাদের খাদ্যের যেমন প্রয়েজন নেই তেমনি টয়লেটেরও প্রয়েজন নেই। এখন তুমি টয়লেটে যেতে চাচ্ছ, আমাদের ধারণা কিছুক্ষণ পর তুমি বলবে খিদে পেয়েছে।

    সত্যি কথা বলতে কি স্যার, খিদে পেয়েছে। সকাল বেলা নাসতা করি নাই। মারাত্মক খিদে লেগেছে। চক্ষুলজ্জার জন্যে বলতে পারি নাই। সকাল থেকে এই পর্যন্ত কয়েক চুমুক চা শুধু খেয়েছি, পত্রিকাও পড়া হয় নাই–আপনাদের এখানে। পত্রিকা আছে স্যার?

    না, পত্রিকা নেই।

    জায়গা তো তাহলে খুব সুবিধার না।

     

     

    আমাদের জায়গা আমাদের মত, তোমাদের জায়গা তোমাদের মত।

    আপনাদের তাহলে ইয়ে হয় না?

    ইয়ে মানে কি?

    পেসাব-পায়খানার কথা বলতেছি–বর্জ্য পদার্থ।

    না, আমাদের এই সমস্যা নেই। তোমাকে তো একবার বলা হয়েছে আমরা। তোমাদের মত দেহধারী না। শুধু দেহধারীদেরই খাদ্য লাগে। খাদ্যের প্রশ্ন যখন আসে তখনই চলে আসে বর্জ্য পদার্থের ব্যাপার।

    তবু স্যার, আমার মনে হয় বাইরের গেস্টদের জন্য দুই-তিনটা টয়লেট বানিয়ে রাখা ভাল।

    দেহধারী কোন অতিথির আমাদের এখানে আসার উপায় নেই। আপনি তো স্যার একটা মিসটেক কথা বললেন। আমি চলে এসেছি না?

    হ্যাঁ, তুমি চলে এসেছ। অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিভাবে এসেছ সেই রহস্য এখনো ভেদ করা সম্ভব হয়নি।

    স্যার বিশ্বাস করেন, নিজের ইচ্ছায় আসি নাই। যে দেশে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা নাই, পেসাব-পায়খানার উপায় নাই, সেই দেশে খামাখা কি জন্যে আসব বলেন? তাও যদি দেখার কিছু থাকত, একটা কথা ছিল। দেখারও কিছু নাই। স্যার, আপনাদের সমুদ্র আছে?

    হ্যাঁ আছে। তবে সে সমুদ্র তোমাদের সমুদ্রের মত না। আমরা সময়ের সমুদ্রে বাস করি। তোমাদের কাছে সময় হচ্ছে নদীর মত বয়ে যাওয়া। আমাদের সময় নদীর মত প্রবহমান নয়, সমুদ্রের মত স্থির।)

    মনে কিছু নেবেন না স্যার, আপনার কথা বুঝতে পারি নাই।

     

     

    সময় সম্পর্কিত এই ধারণা ত্রিমাত্রিক জগতের প্রাণীদের পক্ষে অনুধাবন করা খুবই কঠিন। অংক এবং পদার্থবিদ্যায় তোমার ভাল জ্ঞান থাকলে চেষ্টা করে দেখতাম।

    এটা বলে স্যার আমাকে লজ্জা দিবেন না। আমি খুবই মুর্খ। অবশ্য স্যার মূর্খ হবার সুবিধাও আছে। মুর্খদের সবাই স্নেহ করে। বুদ্ধিমানদের কেউ স্নেহ করে না। ভয় পায়। মতিয়ুর রহমান স্যার যে আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করে তার কারণ একটাই–আমি মুর্খ। বিরাট মুর্খ।

    ও আচ্ছা।

    উনার স্ত্রীও আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। গত ঈদে আমাকে পায়জামা আর পাঞ্জাবি দিলেন। পাঞ্জাবি সিল্কের। এই রকম সিল্ক সচরাচর পাওয়া যায় না, অতি মিহি–এক্সপোর্ট কোয়ালিটি সিল্ক। যা তৈরি হয় সবই বিদেশে চলে যায়। ওনাদের কানেকশন ভাল বলে এইসব জিনিশ যোগাড় করতে পারে। যাই হোক, পাঞ্জাবি সাইজে ছোট হয়ে গিয়েছিল, সেটা আর উনাকে বলি নাই, মনে কষ্ট পাবেন। শখ করে একটা জিনিশ কিনেছেন।

    কুদ্দুস।

    জ্বি স্যার।

    তোমাকে আমাদের পছন্দ হয়েছে।

    এই যে স্যার বললাম–মুর্খদের সবাই পছন্দ করে। আপনারা বেশি জ্ঞানী, কেউ আপনাদের পছন্দ করবে না। সত্যি কথা বলতে কি স্যার, আপনাদের ভয়ে।

    আমি অস্থির। আপনাদের দিকে তাকাতেও ভয় লাগতেছে।

    ভয়ের কিছু নেই আমরা তোমাকে ফেরত পাঠাবার ব্যবস্থা করেছি।

     

     

    আপনাদের পা থাকলে স্যার ভাল হত। আপনাদের পা ছুঁয়ে সালাম করতাম।

    তোমার প্রতি আমাদের মমতা হয়েছে যে কারণে আমরা এমন ব্যবস্থা করে দিচ্ছি যাতে তোমার নিজের জায়গায় যখন ফিরবে তখন তোমার জীবন আনন্দময় হবে।

    বললে হয়তো স্যার আপনারা বিশ্বাস করবেন না, আমি খুব আনন্দে আছি।

    আনন্দে থাকলেও তোমার জীবন মোটামুটিভাবে অর্থহীন এটা বলা যায়। জীবন কাটাচ্ছ অন্যের জন্যে চা বানিয়ে।

    কি করব স্যার বলেন, পড়াশোনা হয় নাই, মেট্রিক পরীক্ষাটা দিতে পারলাম না। ইংরেজি সেকেন্ড পেপার পরীক্ষার আগের দিন রাতে বাবাকে সাপে কাটল। চোখের সামনে ধড়ফড় করতে করতে মৃত্যু।

    আমরা কি করছি মন দিয়ে শোন, তোমাকে ফেরত পাঠাচ্ছি ইংরেজি সেকেন্ড পেপার পরীক্ষার আগের দিন রাতে। তুমি সেখান থেকে জীবন শুরু করবে। বাবাকে যাতে সাপে না কাটে সেই ব্যবস্থা করবে।

    সেটা স্যার কি করে সম্ভব?

    সময় আমাদের কাছে স্থির। আমরা তা পারি। তুমি যখন ফিরে যাবে তখন এখনকার স্মৃতি তোমার থাকবে না। তবে তোমার বাবাকে সাপে কাটবে এই ব্যাপারটা তোমার মনে থাকবে। এটা যাতে মনে থাকে সেই ব্যবস্থা আমরা করে। দিচ্ছি। নতুন জীবন তোমার শুরু হচ্ছে। সেখানে তোমার বাবাকে সাপে কাটবে না। তোমার বুদ্ধিবৃত্তিও কিছু উন্নত করে দিচ্ছি। পড়াশোনায় তুমি অত্যন্ত মেধার পরিচয়। দেবে।

    অংকটা নিয়ে স্যার সমস্যা। অংকটা পারি না। খুব বেড়াছেড়া লাগে।

    আর বেড়াছেড়া লাগবে না।

    এখন কি স্যার আমি চলে যাচ্ছি?

    কিছুক্ষণের মধ্যে যাচ্ছ।

    ম্যাডামকে আমার সালাম দিয়ে দেবেন। উনার সঙ্গে দেখা হয় নাই।

    ম্যাডামকে তোমার সালাম পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তোমাকে আগে। একবার বলেছি আমরা দেহধারী নই। আমাদের মধ্যে নারী-পুরুষের কোন ব্যাপার

    নেই।

    জি আচ্ছা। না থাকলে কি আর করা! সবই আল্লাহর হুকুম। একটু দোয়া রাখবেন স্যার। এই বিপদ থেকে কোনদিন উদ্ধার পাব চিন্তা করি নাই।

    কুদ্দুস হঠাৎ তার বুকে একটা ধাক্কার মত অনুভব করল। গভীর ঘুমে সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে পড়ল। ঘুমের মধ্যেই তার মনে হচ্ছে সে যেন অতল কোন সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছে। সেই সমুদ্রের পানি শিসার মত ভারি, বরফের মত ঠাণ্ডা। পানির রঙ গাঢ় গোলাপী। সে তলিয়েই যাচ্ছে। তলিয়েই যাচ্ছে। এই সমুদ্রের কি কোন তলা নেই?

    -কি এখন সে মারা যাচ্ছে?

    কুদূসের ঘুম পাচ্ছে। চোখের পাতা ভারি হয়ে আসছে। সে চোখ মেলে রাখতে পারছে না। অথচ তার ইচ্ছা জেগে থাকে। অদ্ভুত ব্যাপার কি হচ্ছে দেখে।

    ৩.

    কুদ্দুসের ঘুম ভেঙেছে।

    সে তার গ্রামের বাড়িতে চৌকির উপর বই-খাতা মেলে পড়তে বসেছিল। পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। কি সর্বনাশের কথা! কাল ইংরেজি সেকেন্ড পেপার পরীক্ষা। রচনা এখনো দেখা হয়নি। অ্যা জার্নি বাই বোট এই বছর আসার কথা। গত বছর আসেনি। কুদ্দুস রচনা বই টেনে নিল। আর তখন মনে হল তাকে একটা সাপ মারতে হবে। সাপটা কিছুক্ষণের মধ্যেই বের হবে। ভয়ংকর বিষধর একটা সাপ। এ রকম মনে হবার কি কারণ কুদ্দুস বুঝতে পারল না। তারপরেও সে হ্যারিকেন হাতে নেমে এল। একটা মোটা লাঠি দরকার। লাঠি হাতে এক্ষুণি তাকে তার বাবার কাছে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। হাতে একটুও সময় নেই।

    কেউ একজন তাকে বলছে–তাড়াতাড়ি কর, তাড়াতাড়ি কর। সেই কেউএকজনটা কে? কুদ্দুস জানে না। শুধু জানে এক্ষুণি একটা সাপ তার বাবাকে ছোবল দিতে আসবে। তার দায়িত্ব সাপটাকে মারা। যদি মারতে পারে তবেই তার জীবন হবে অন্য রকম।

    কুদ্দুস তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। ঐ তো সাপটা। শঙ্খচূড় নিঃশব্দে এগিয়ে আসছে।

    হ্যারিকেনের আলোয় তার চোখ জ্বলজ্বল করছে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রেমের গল্প – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article দিঘির জলে কার ছায়া গো – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }