Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অনড় দাঁড়ালাম – তসলিমা নাসরিন

    তসলিমা নাসরিন এক পাতা গল্প352 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১০০. অশ্রুপাত

    ১০০. অশ্রুপাত

    দেশভাগের শিকার ছিলেন দুজনেই। আনিসুজ্জামানের জন্মস্থান বসিরহাট, পশ্চিমবঙ্গ। দেবেশ রায়ের জন্ম পূর্ববঙ্গের পাবনায়। দেবেশ রায়কে পূর্ববঙ্গ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। তিনি হিন্দু বলে। আনিসুজ্জামানকে পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে পূর্ববঙ্গে চলে যেতে হয়েছিল। তিনি মুসলমান বলে। দুজনই তাঁদের মুক্তচিন্তা, মননশীলতা, উদারনীতি, রাজনৈতিক আদর্শ, সর্বোপরি তাঁদের উপন্যাস এবং প্রবন্ধের জন্য শ্রদ্ধা, সম্মান, পুরস্কার প্রচুর পেয়েছেন। সম্ভবত যা চেয়েছিলেন সবই পেয়েছেন, অথবা তার চেয়ে বেশিই পেয়েছেন। প্রায় একই বয়সে দুজন দু’দেশ থেকে চিরকালের জন্য বিদেয় নিয়েছেন গতকাল। যথেষ্ট বয়স হয়েছিল। যা দেওয়ার ছিল, দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, সার্থক জীবন ছিল তাঁদের। সে কারণে আমি তাঁদের মৃত্যুতে দুঃখ করছি না।

    আমি তাঁদের মৃত্যুতে দুঃখ করি, জীবনে যাঁদের সুখ, স্বস্তি, সহানুভূতি, সমর্থন-প্রাপ্য ছিল, কিন্তু পাননি। যাঁরা প্রতিভাবান হয়েও, মুক্তচিন্তক হয়েও, মননশীল হয়েও বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, উপেক্ষিত, অপমানিত, অবহেলিত রয়ে গেছেন সারা জীবন। যাঁরা কেবল ঠকেছেন, কেবল দুঃখ পেয়েছেন, কেবল দুঃখই পেয়েছেন, তাঁদের জন্য আমি অশ্রুপাত করি।

     ১০ ১. গোমূত্র

    হিন্দু মহাসভার ২০০ জন লোক গোমূত্র পার্টি করেছেন। সবাই গোমূত্র পান করেছেন এবং বলেছেন, করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক গোমূত্র। একজন তো বললেন যে লোকই বিদেশ থেকে দেশের বিমানবন্দরে ল্যান্ড করবে, তার শরীরে গোমূত্র এবং গোবর ছিটিয়ে দিলেই ভাইরাস দূর হবে। ভিডিওতে দেখলাম একেকজন কী করে পান করছেন গোমূত্র। নিশ্চয়ই খুব আরামদায়ক নয় ওই জিনিস পান করা। এক লোক তো একহাতে নাক ধরে অন্য হাতে গোমূত্রের গ্লাস মুখে ঢাললেন। বিশ্বাস মানুষকে দিয়ে কী না করাতে পারে! বিশ্বাসের কারণে মানুষ মানুষকে নির্যাতন করছে, খুন করছে। আর এ তো কেবল গোমূত্র পান! কারও গোমূত্র পানে অন্যের কোনও ক্ষতি হচ্ছে না অবশ্য। অন্যকে গোমূত্র পানের জন্য জোর না করলেই হল। কেউ যদি নিজেকে অত্যাচার করে আনন্দ পায়, না হয় পাক। সৌদি আরবের মুসলমানদের মধ্যেও অনেকে উটমূত্র পান করেন। তাঁরাও বিশ্বাস করেন উটমূত্র রোগ সারায়। সৌদি সরকার কয়েক বছর আগে নাকি উটমূত্র বিক্রির দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। মার্স ভাইরাস যে মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়েছিল একসময়, ওই ভাইরাস কিন্তু বাদুড় থেকে উটে এসেছিল, উট থেকে মানুষে। কে জানে, উটমূত্রেই ওই ভাইরাস ছিল কি না, উটের দুধেও অবশ্য থাকতে পারে।

    বাদুড় থেকে সার্স, মার্স, নিপা, হেন্ড্রা, হালের কোভিড১৯—কত কিছু এল। সোজা মানুষের শরীরে আসে না, ঘোড়া, উট, সিভেট, শুকর ইত্যাদি হয়ে আসে। এই বাদুড়ের ভাইরাসই মনে হয় একদিন মানুষ প্রজাতিকে বিলুপ্ত করবে। বাদুড়গুলো কত হাজারো ভাইরাস শরীরে নিয়ে দিব্যি সুস্থ বেঁচে থাকে। এমন চমৎকার সহাবস্থান কী করে সম্ভব! কিছু বিজ্ঞানী বলেন, বাদুড়ই একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী যে ওড়ে। সম্ভবত স্তন্যপায়ী যখন বিবর্তিত হয়ে ওড়ার ক্ষমতা পেয়েছে, তখনই পেয়ে গেছে ভয়াবহ সব ভাইরাস শরীরে ধারণ করেও অসুস্থ না হওয়ার ক্ষমতা।

    মানুষের জীবন যে কীরকম নড়বড়ে, ভঙ্গুর, পলকা—তা চোখ-কান খুলে দেখা হল এবার! একটা ছোট্ট বাদুড়ের শরীর থেকে একটা ছোট্ট ভাইরাস নেমে এসে সাত বিলিয়ন মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার হুমকি দিতে পারে। আমরা কি ইকো সিস্টেমের কথা ভাববো, নাকি সব কটা বাদুড়কে মানুষ প্রজাতির স্বার্থে মেরে ফেলবো? শুধু কি বাদুড়? মশারই বা কী দরকার পৃথিবীতে বেঁচে থাকার? মানুষকে কামড়, রোগ, আর মৃত্যু দেওয়া ছাড়া এর তো কোনও কাজ নেই।

     ১০২. ছিঃ

    বাংলাদেশের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী আজ একটি জাতীয় দৈনিকে করোনা ভাইরাস বিষয়ে একখানা কলাম লিখেছেন। লিখেছেন মানুষ আল্লাহর ইবাদত না করে পাপাচারে লিপ্ত ছিল, সেকারণে আল্লাহ দুনিয়াতে করোনা ছেড়েছেন, এখন করোনা থেকে বাঁচতে হলে আল্লাহকে দিবানিশি ডাকতে হবে। এই লোকটি ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর’-এর মহাপরিচালক! কী ভয়ংকর! এসব গণ্ডমূর্খ বোকাচোদা কত বড় বড় জায়গা দখল করে বসে আছে। শুধু ফাজিল ওয়াজবাজরাই মানুষকে নষ্ট করছে না, ‘বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি’র মাথা হয়ে যে ধর্মান্ধগুলো বসে আছে, তারাও করছে।

     ১০৩. উমরাহ বন্ধ

    করোনা ভাইরাসের ভয়ে সৌদি সরকার মক্কা মদিনায় উমরাহ বন্ধ করেছে। মসজিদে শুক্রবারের নামাজ বন্ধ করেছে ইরান। কেন রে? এইসব পবিত্র জায়গায় উমরাহ করে, নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি প্রার্থনা করবে মানুষ। আল্লাহ তাদের বাঁচিয়ে দেবেন ভাইরাস থেকে। তা হতে দিচ্ছিস না কেন? আল্লাহ যে রোগ শোক সারাতে পারেন, তা বুঝি আর বিশ্বাস করছিস না? পবিত্র জায়গাতেও যে রোগের সংক্রমণ হতে পারে, স্বয়ং আল্লাহও যে তা রোধ করতে পারেন না, তা এতদিনে বুঝেছিস? প্রার্থনায় যে কাজ হয় না সেটা তাহলে গোপনে গোপনে ঠিকই জানিস!

    ঠেকায় পড়লে মানুষ যুক্তিবাদী হয়ে ওঠে। যতক্ষণ ঠেকা নাই, ততক্ষণ শো বিজনেস, ততক্ষণই আল্লাহ রসুল! ঠিক কি না?

     ১০৪. লজ্জা

    বাবরি মসজিদ ভাঙার পর বাংলাদেশে হিন্দুর ওপর আক্রমণ করেছিল মুসলিম মৌলবাদীরা। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে। আমি তখন বাংলাদেশে। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা ভীত সন্ত্রস্ত হিন্দুর পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। লিখেছিলাম ‘লজ্জা’। গত ক’দিনে ভারতে যে দাঙ্গা হল, তার পেছনে বাংলাদেশের হিন্দুর কোনও ভূমিকা নেই। বাংলাদেশে কোনও ধর্মান্ধ প্রতিশোধপরায়ণ মুসলমান যেন একজন হিন্দুর ওপরও হামলা না চালায়। সরকার এবং বোধবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যেন রোধ করে নিরীহ সংখ্যালঘুর ওপর যে কোনও ধরনের আক্রমণ। আর যেন কাউকে নতুন কোনও ‘লজ্জা’ লিখতে না হয়।

     ১০৫. ঘৃণাকে সরিয়ে দাও

    ২৭ বছর আগে ‘লজ্জা’ লিখেছিলাম। উৎসর্গ করেছিলাম ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষকে। লিখেছিলাম ‘ধর্মের অপর নাম আজ থেকে মনুষ্যত্ব হোক’। না, ২৭ বছরে ধর্মের অপর নাম মনুষ্যত্ব হয়নি। ধর্ম ধর্মই রয়ে গেছে, যে ধর্ম বিবর্তিত হয়ে এবং না-হয়ে আজ অনেকটাই মনুষ্যত্বহীন।

    দিল্লিতে গত দুদিন যে দাঙ্গা হল, মানুষ মরলো, তা শুধু পাথরের আঘাতে নয় কিন্তু; বন্দুকের গুলিতে, ছুরির কোপেও। মানুষের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দোকানপাটে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। মানুষও আগুনে পুড়ে মরেছে। এরা গরিব। এদের একটিই পরিচয়, এরা গরিব। এদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। টুপি বা গেরুয়া পরা না থাকলে দাঙ্গাবাজদের দেখে বোঝার কোনও উপায় নেই কে হিন্দু কে মুসলমান। ওসব যদি পরা না থাকে তাহলে নাম না শুনলে বা কাপড় খুলে যৌনাঙ্গ না দেখলে কে বুঝবে কে কী। কারণ, দেখতে তো তারা এক। ত্বকের রঙ, নাক, চোখ, মুখের গড়ন, পরনের কাপড়, মুখের ভাষা, এক। হিন্দুরাই তো এককালে ধর্ম বদলে মুসলমান হয়েছিল। চেহারা ভিন্ন হবে কী করে!

    ৩৪ জন মারা গেছে দাঙ্গায়। হাসপাতালে আহত অবস্থায় পড়ে আছে অনেক। এই দাঙ্গা শুরুতেই বন্ধ করার হয়তো উপায় ছিল। যে কোনও কারণেই হোক, বন্ধ করা হয়নি। আমরা জানি ধনী মুসলমানের গায়ে কোনও টোকা পর্যন্ত পড়বে না। ধনী হিন্দুর নাগাল কেউ পাবে না। কেবল গরিব হিন্দু-মুসলমানে হিংসেহিংসি খুনোখুনি হবে। আমরা অবাক হয়ে খুনোখুনি দেখতে থাকবো। একসময় আর অবাকও হব না, শুধু দেখতে থাকবো।

    বাংলাদেশে যখন হিন্দুর ওপর অত্যাচার হয়, সহৃদয় কিছু মুসলমান হিন্দুদের নিজের নিরাপদ ঘরে আশ্রয় দেয়। দিল্লিতেও তেমন, কিছু মুসলমান, হিন্দু এবং শিখ পড়শির বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছে। মানুষ তো সব নষ্ট হয়ে যায়নি, তাই আশা জাগে, হয়তো ঘৃণাকে সরিয়ে ভালোবাসাই একদিন বড় জায়গাটা নেবে।

     ১০৬. ধর্ম যদি মানবতা হত

    বাংলাদেশ পাকিস্তানের অত্যাচারিত ভীত সন্ত্রস্ত হিন্দুদের জন্য ভারত তার উদার দরজা খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানেরও উচিত ভারতের অত্যাচারিত ভীত সন্ত্রস্ত মুসলমানের জন্য নিজেদের দরজা খুলে দেওয়া।

    ভালো হত মানুষের সত্যিকার ধর্ম যদি মানবতা হতে। সব ধর্মের, সব জাতের, সব বর্ণের, সব শ্রেণির মানুষ যদি মিলেমিশে সুখেশান্তিতে বাস করতে পারতো, সবার মধ্যে যদি সহমর্মিতা হৃদ্যতা থাকতো। কিন্তু বারবারই দেখছি ঘৃণা মানুষকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। অমানবতাই এখন ধর্মের অপর নাম। যারা ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছে, তাদের মধ্যেই কিছুটা মানবতা দেখি। ধর্ম, ধর্মের রাজনীতি অরণ্যের আগুনের মতো বাড়ছে। একে রোধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি ক্ষমতাহীন প্রভাব-প্রতাপহীন কিছু অসহায় নিরীহ মানুষ। আমাদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না।

    দিল্লির দাঙ্গাবিধ্বস্ত এলাকা থেকে গত দুদিন মুসলমানরা ঘটিবাটি, লেপ- তোশক কাঁধে করে নিয়ে যখন পালাচ্ছিল, কেউ ওদের প্রশ্ন করেছিল, কোথায় যাচ্ছে তারা, তারা তখন জানে না কোথায় যাচ্ছে। ওরা যদি বাংলাদেশে বা পাকিস্তানে যেতে চায়, আমার তখন মনে হচ্ছিল, দরজা খুলে দেওয়া উচিত।

    ধর্মের মতো হাস্যকর কল্পকথা দিয়ে দেশ ভাগ করা, মানুষ ভাগ করা খুব অন্যায়। কিন্তু আপাতত কিছু নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমরা ভাবতেই পারি দরজা খোলার কথা। ধনী হিন্দু বা ধনী মুসলমান তো নিরাপত্তার জন্য ইউরোপ বা আমেরিকায় চলে যায়। তখন তো কেউ প্রশ্ন করে না কেন যাচ্ছে! গরিবের তো প্রতিবেশিই সম্বল। ধর্মের কৃত্রিম কাঁটাতার ডিঙিয়ে যাওয়া শুধু। আসলে তো একই মাটির মানুষ সবাই।

    কোনও একদিন ধর্ম যখন জীবনের মুখ্য কোনও বিষয় থাকবে না, ধর্মের রাজনীতিরও জনপ্রিয়তা নষ্ট হবে, তখন এই উপমহাদেশ, এই দক্ষিণ এশিয়া এক হবে নিশ্চয়ই। মানুষের পরিচয় হবে তার মনুষ্যত্ব দিয়ে, ধর্ম দিয়ে নয়। সেদিন কবে আসে কে জানে। তার আগে হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক, মৌলবাদ আর সন্ত্রাস বন্ধ হোক।

     ১০৭. শিক্ষা

    ইস্কুল-কলেজে গিয়ে কেউ শিক্ষিত হয় না। আমাদের সমাজের চোর, ডাকাত, বদমাশ, প্রতারক, জঙ্গি, সন্ত্রাসী, ধর্মান্ধ, ধর্ম ব্যবসায়ী, নারীবিদ্বেষী, ধর্ষক, খুনী— সকলেই ইস্কুল-কলেজে গিয়েছে, বা মাদ্রাসায় গিয়েছে। ওসবে গিয়ে বইপত্র পড়ে পরীক্ষায় পাশ করা যায়, সত্যিকার মানুষ হওয়া যায় না।

    সত্যিকার মানুষ হওয়ার জন্য যে শিক্ষা প্রয়োজন সেটি কেউ কোথাও থেকে পাচ্ছে না। না ঘর থেকে, না বাইরে থেকে। না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে, না প্রচারমাধ্যম থেকে। মানুষ হওয়ার শিক্ষা যাদের কাছ থেকে পেতে পারতো, তারা হয় মরে গেছে, নয়তো ভয় দেখিয়ে তাদের চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

     ১০৮. স্বেচ্ছাসেবী

    ইতালির হাসপাতালগুলো থেকে ৩০০ স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক চাওয়া হয়েছিল। কারণ এত উপচে পড়া রোগী আর সামলানো সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু চিকিৎসকরা কেন মৃত্যুকূপে ঢুকতে চাইবেন! রোগীদের ভাইরাসের মধ্যে থাকতে থাকতে ইতিমধ্যে প্রচুর চিকিৎসক আক্রান্ত, প্রচুর চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু অবাক কাণ্ড, ৩০০ চিকিৎসক নন, ৮০০০ চিকিৎসক স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কাজও শুরু করেছেন। পৃথিবীকে সুন্দর বলি, এই জন্যই সুন্দর বলি। এই মানুষগুলোর জন্য।

     ১০৯. তাবলিগ জামাত

    তাবলিগ জামাত একটা গণ্ডমূর্খদের আন্দোলন। ১৯২৬ সালে হরিয়ানার মিয়াট অঞ্চলে মোহাম্মদ ইলিয়াস নামের এক লোক একে জন্ম দেয়। ভারতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা দেওবন্দের জন্ম। ভারতে আহমদিয়া ধর্মের জন্ম। ইসলামের প্রসারে ভারতের ভূমিকা বিরাট।

    তাবলিগ জামাত এখন পৃথিবীতে এত ছড়িয়ে গেছে যে ১৫০টি দেশ থেকে প্রায় কয়েক কোটি লোক এতে অংশ নেয়। ফেব্রুয়ারির ২৭ তারিখে ৪ দিন ব্যাপী তাবলিগ জামাতের সম্মেলন হল মালয়েশিয়ায়। ১৬০০০ লোক অংশগ্রহণ করেছিল। ১৫০০ ছিল বিদেশি। চীন থেকে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা। মালয়েশিয়ার দুই-তৃতীয়াংশ করোনা রোগীর ভাইরাস এসেছে ওই তাবলিগ জামাত থেকে। এই খবরগুলো চারদিকে প্রচার হওয়ার পরও তাবলিগ জামাত দিল্লিতে সম্মেলন করার অনুমতি পেয়ে যায় কী করে জানিনা। এখন দিল্লিতে নানান দেশের তাবলিগিগুলো ভাইরাস ছড়িয়েছে। কত হাজার লোককে যে ওরা সংক্রামিত করেছে তার কোনও হিসেব আছে?! গণ্ডমূর্খগুলো কি জানে না করোনার কারণে সারা বিশ্বের মানুষ গণহারে মারা পড়ছে, তাদের কি জমায়েত বন্ধ করা উচিত ছিল না? সামান্য মানবতাবোধও ধর্মান্ধ লোকদের মধ্যে নেই।

    সৌদি আরবকে স্যালুট দিই। আল্লাহর ঘর কাবা বন্ধ করে দিতে এতটুকু দ্বিধা করেনি। উমরাহ বন্ধ করেছে। নবীর রওজা শরিফ দর্শন বন্ধ করেছে, মসজিদ বন্ধ করেছে। ভারতে এখনও অনেক মসজিদ খোলা। লোকেরা নামাজ পড়তে ভিড় করে। লকডাউন মানছে না, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মানছে না। ভারতের একটুখানি সৌদি আরবের মতো হওয়া দরকার।

    বাই দ্য ওয়ে, উজবেকিস্তান, কাজাকস্তান, তাজিকিস্তান—এই দেশগুলোয় কিন্তু তাবলিগ জামাত নিষিদ্ধ। তাবলিগ হাদিস কোরান যেভাবে বলে, সেভাবে চলে। ১৪০০ বছর আগে মোহাম্মদ যেভাবে জীবনযাপন করত, সেভাবে জীবনযাপন করে। আক্ষরিক অর্থেই মৌলবাদী।

    যে দেশ আধুনিক হতে চায় বা সভ্য হতে চায়, সে দেশ মৌলবাদী আন্দোলনকে প্রশ্রয় দেয় না। আল কায়দার মতো সন্ত্রাসী দল তাবলিগের আইডি ব্যবহার করে সন্ত্রাসের উদ্দেশে এক দেশ থেকে আর এক দেশে ভ্রমণ করেছে। এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী কি সমাজের কোনও উপকার করছে? প্রগতির বিরুদ্ধে গিয়ে সমাজকে পেছনে টেনে রাখলে উপকার নয়, অপকার হয় মানুষের। যত্রতত্র ভাইরাস ছড়িয়ে কত নিরীহ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। কী ভয়ংকর অপকারই না ওরা করলো মানবজাতির!

    ধর্ম মানুষকে স্বার্থপর, নিষ্ঠুর, হিংসুক বানায়, খুব বোকাও বানায়। না হয় বুঝলাম ওরা বোকা। সরকার কী করে শুরু থেকে বিমান যাত্রা চালু রেখেছিল, সেই সব দেশেও দিব্যি বিমান যাওয়া-আসা করেছে যেসব দেশে ভাইরাস দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। সময়মতো উচিত কাজটি করা হয়নি বলে শত শত তাজা জীবন আজ অকালে ঝরে পড়ছে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleফেরা – তসলিমা নাসরিন
    Next Article ফরাসি প্রেমিক – তসলিমা নাসরিন

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    লজ্জা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার মেয়েবেলা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    উতল হাওয়া – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    দ্বিখণ্ডিত – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    কিছুক্ষণ থাকো – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    ভালোবাসো? ছাই বাসো! – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }