Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অনড় দাঁড়ালাম – তসলিমা নাসরিন

    তসলিমা নাসরিন এক পাতা গল্প352 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১০. ধর্মীয় অনুভূতি এবং বাকস্বাধীনতা

    ১০. ধর্মীয় অনুভূতি এবং বাকস্বাধীনতা

    লাখো মুসলমানের ঢল নেমেছিল ঢাকা শহরে। ভিডিওতে এই দৃশ্য দেখে আমি চমকে উঠলাম। ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক কয়েকটি মুসলিম দেশে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের মতো এত বড় মিছিল আর কোনও দেশে হয়নি। যখন দেশে ছিলাম, মোল্লা মুসল্লিদের মিছিল দেখেছি অনেক। কিন্তু এত বড় তো দেখিনি। দিন দিন এরা সংখ্যায় বাড়ছে। অবশ্য সংখ্যায় বাড়া সরকারের কল্যাণেই সম্ভব হয়েছে। সাধারণত প্রগতিশীল মানুষের মত প্রকাশের বিরুদ্ধে, তাঁদের ফাঁসির দাবিতে, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মিছিল বের করতো ওরা। ওদের কখনও দেখিনি সমাজের মঙ্গলের জন্য মিছিল বের করতে। ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, দারিদ্র, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ইত্যাদির প্রতিবাদ কখনও করতে দেখিনি। তারা শুধু ধর্মীয় অনুভূতির জন্য পথে নামে। তাদের ওই অনুভূতিতে যেন কখনও কোনও আঘাত না লাগে, এই হুমকি দিতেই নামে। মানুষের নানা অনুভূতিতে দিনভর আঘাত লাগছে, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এসব আঘাত সামলে নিতে পারে। যারা অনুভূতিতে আঘাত লাগলে অন্যকে খুন করে, বা খুন করাকে সমর্থন করে, তাদের নিয়ে সমাজে সমস্যা হয়।

    ফ্রান্সের পণ্য বাংলাদেশ বয়কট করলে ফ্রান্সের খুব হয়তো অর্থনৈতিক অসুবিধে হবে না। কিন্তু বাংলাদেশের পণ্য ফ্রান্সে না রফতানি করলে কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে। গার্মেন্টস ব্যবসায় ক্ষতি হলে বাংলাদেশের মানুষই ভুগবে। আর বাংলাদেশের মুসলমানদের যদি ফ্রান্স থেকে বর্জন করা হয়, তাহলে সমস্যা কি ফ্রান্সের হবে, নাকি বাংলাদেশি মুসলমানদের হবে? ফ্রান্সের কাছে অনেক সাহায্য সহযোগিতার জন্যই তো ঋণী বাংলাদেশ। মুসল্লিদের রাগ দেখে মনে হচ্ছে, ওরা ফ্রান্সে তৈরি বাংলাদেশের স্যাটেলাইটকেও মহাকাশ থেকে নামিয়ে আনবে। নামিয়ে আনলে কার ক্ষতি? কার আর, বাংলাদেশের!

    কূটনৈতিক সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে সমস্যার সমাধানে আলাপ আলোচনা করতে হবে। জ্বালাও পোড়াও করে কোনও সম্পর্ককে বন্ধুত্বপূর্ণ করা যায় না। ফ্রান্সের ধর্মনিরপক্ষতা আর মত প্রকাশের অধিকার ওরা দীর্ঘ সংগ্রামের পর অর্জন করেছে, ওদের এই মূল্যবান অর্জনকে কোনও মিছিল আর পণ্য বর্জনের হুমকি দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা আর মত প্রকাশের অধিকার রক্ষার কোনও বালাই নেই। যেটা আছে, সেটা হলো ধর্মীয় অনুভূতি। অন্য হাজারো অনুভূতিতে আঘাত লাগলেও এই ধর্মীয় অনুভূতি যেন অনন্তকাল অক্ষত অবস্থায় থাকে, তার গ্যারেন্টি চাই সবার। এই গ্যারেন্টি বাংলাদেশের সরকার দিয়েছে, কিছু প্রগতিশীল ব্যক্তি দিতে পারেনি বলে তাদের খুন করা হয়েছে এবং নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে।

    কেবল নিজের মত প্রকাশের অধিকারেই কিন্তু এরা বিশ্বাস করে। অন্যের মত প্রকাশের অধিকারে করে না। ফ্রান্সে তো কম জঙ্গি হামলা হয়নি এ পর্যন্ত। ফরাসিদের মনে হয় সহ্যের সীমা পার হয়ে গেছে। একটি নিরীহ শিক্ষকের প্রাণও চলে যায় উন্মত্ত ধর্মান্ধের হাতে। প্রায় ৬০ লাখ মুসলমান বাস করে ফ্রান্সে। আমার তো ভয় হয়, যদি ফ্রান্সে কখনও ঘোষণা করে দেয়, ৬০ লাখ মুসলমানকে তারা আর ফ্রান্সে থাকতে দেবে না, তবে? কোথায় যাবে এই ৬০ লাখ?

    ফ্রান্স মুসলমানদের উপকার কি কম করেছে? জমজমের পানিতে নাইট্রেট, আর্সেনিক, ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি পাওয়া গেছে বলে বিবিসির খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন ফ্রান্সের কারসো-লেসেল ল্যাবই তো পরীক্ষানিরীক্ষা করে জানিয়ে দিয়েছিল বিশ্বকে যে জমজমের পানি নিরাপদ! ফ্রান্সের এই সার্টিফিকেট সৌদি আরবকে কতটা উপকার করেছিল, তা সৌদি আরবই ভালো জানে।

    ফরাসি পণ্যের মধ্যে শুধু তো সুগন্ধি আর রূপচর্চার জিনিসপত্র নয়, অস্ত্রও পড়ে। মুসলিম দেশগুলো নিজেরা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে রাখতে বদ্ধ পরিকর, সুতরাং তাদের অস্ত্র চাই। কে কী কার্টুন ছাপিয়েছে, এতে কার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে, কোথায় আগুন লেগেছে, তারা থোড়াই পরোয়া করে। তারা মুসলিম হয়ে অন্য মুসলিমকে কী করে খুন করতে হয়, কী করে তাদের বাড়ি ঘর শহর গ্রাম ধ্বংস করে দিতে হয়, শিখে ফেলেছে। এটি করতে বোমা চাই, যুদ্ধবিমান চাই, আধুনিক সব অস্ত্র চাই। তখনই তো ফ্রান্স এবং পাশ্চাত্যের দেশগুলোর দিকে হাত বাড়ায় তারা। পাশ্চাত্য যতই ইসলাম-বিরোধী হোক, তাতে তাদের কিছু যায় আসে না।

    মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য নেই। কিছুদিন আগে কিছু মুসলিম দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। সৌদি আরব তার তেলের ব্যবসার স্বার্থে মুসলিম-বিরোধী শক্তিকে আলিঙ্গন করতে কোনও আপত্তি করে না। জ্বালাও পোড়াও শুধু গরিব মুসলমানের আবেগ। যেটিকে পাশ্চাত্য কেন, ধনী মুসলিম দেশই প্রশ্রয় দেয় না। মুসলমানরা কিন্তু অমুসলিমদের পাশ্চাত্যে বাস করে বেশি মর্যাদা এবং সম্মান পায়, মুসলিম দেশে বাস করে সেটা পায় না। সৌদি আরবে কত গরিব মুসলিমকে নির্যাতিত হতে হয়। কত বাংলাদেশের নারী শ্রমিককে ধর্ষিতা হয়ে ফিরতে হয়েছে তা কি গুণে শেষ করা যাবে!

    মুসলিম মুসলিম ভাই ভাই মিথ্যে কথা। সাধারণ মুসলিম জনতাকে কারা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত করে? মুসলিম-দেশগুলোর মুসলিম সরকার। সাধারণ মানুষের দারিদ্র ঘোচানো, তাদের শিক্ষা স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করা, তাদের সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার কোনও কাজই সরকার করে না। তারা শুধু জনতাকে ধর্মান্ধ বানানোর সবরকম ব্যবস্থা করে দেয়। এতে খরচ কম, পরিশ্রম কম। পঙ্গপালের মতো মূর্খ জনতার জন্ম হতে থাকে, আর সরকার ব্যস্ত আখের গুছোতে। দেশের সম্পদ লুঠ করে দেশের সর্বনাশ করতে ক্ষমতাসীন লোকদের জুড়ি নেই। মুসলিমদের ধর্মান্ধ করে গড়ে তোলা সহজ। মুসলিমদের সভ্য শিক্ষিত সচেতন দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার কাজটি কঠিন। এই কঠিন কাজটি কোনও সরকারই করতে চায় না। অথচ এটিই সবচেয়ে জরুরি। মুসলিম জঙ্গিরা যেদিন থেকে ধর্মের নামে আর মানুষ খুন করবে না, সেদিন থেকে সাধারণ মুসলিমদের সমস্যা হবে না পৃথিবীতে। তাদের কেউ ঘৃণা করবে না, তাদের কেউ ভয় পাবে না।

    প্রায় ২০০ কোটি লোক পৃথিবীতে মুসলমান। দিন দিন এই সংখ্যাটি বাড়ছে। এই ধর্ম নিয়ে গেল গেল রব তোলার কোনও অর্থ হয় না। মুসলমানরা যত গভীরভাবে ধর্মে বিশ্বাস করে, সেরকম গভীরভাবে অমুসলিমরা তাদের ধর্মে বিশ্বাস করে না। ইহুদি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অধিকাংশই ধর্মে নয়, বিজ্ঞানে বিশ্বাসী। সুতরাং ধর্ম টিকে থাকলে ইসলামই টিকে থাকবে। এই ধর্মই সারা বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াবে। কিন্তু এতেই কি ধর্মের সার্থকতা? কোনও ধর্মকে ভালোবেসে যদি মানুষ তার উদারতা, স্বার্থহীনতা, ক্ষমাশীলতা ইত্যাদি গুণগুলো নষ্ট করে ফেলে, তবে কি তা ভালো লক্ষণ? নিশ্চয়ই শুভবুদ্ধির মানুষেরা রাজনৈতিক ইসলাম চায় না, চায় উদারনৈতিক ইসলাম।

     ১১. শব্দ

    আমার লেখা একটি গল্পের বই পড়ে কলকাতার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে বললো, ”বইটির শেষ পাতায় একটা গ্লসারি থাকলে ভালো হতো।”

    শুনে আমি অবাক। বললাম—বাঙালি পাঠকের জন্য বাংলায় লেখা বইয়ে গ্লসারি থাকবে কেন?

    তারপর কথোপকথন এইভাবে চললো।

    —কিছু শব্দ তো বাঙালি পাঠকরা বুঝবে না, সে জন্য বলছিলাম।

    —কোন কোন শব্দ বুঝবে না?

    —খালা, দোযখ…

    —বলতে চাইছো বাঙালি হিন্দুরা বুঝবে না ওই শব্দগুলোর অর্থ? বাঙালি মুসলমানরা তো মাসি, নরক এই শব্দগুলোর অর্থ বোঝে। হিন্দুরা বুঝবে না কেন? ওরা তো হাজার বছর ধরে এক ভূমিতে বাস করছে মুসলমানের সঙ্গে। এই শব্দগুলো মুসলমানের মুখ থেকে এতকাল শোনেনি?

    —না, বাঙালিরা জানে না এইসব শব্দ।

    —না জানা তো গর্বের কথা নয়, বরং লজ্জার কথা। আমি নতুন কোনও শব্দ পেলে ডিকশেনারিতে সঙ্গে সঙ্গে অর্থ দেখে নিই। এতে নতুন একটি শব্দ শেখা হয় আমার। বাঙালি হিন্দুরা তাহলে আমার বই পড়ে অনেক নতুন শব্দ শেখার সুযোগ পাবে। তাহলে তো ওদের জন্য ভালো হল।

    —বলছিলাম…

    —বাংলা ভাষায় প্রচুর বিদেশি শব্দ আছে, আরবি ফার্সি ইংরেজি পর্তুগীজ। এক কালে কলকাতার কোর্টের ভাষা ফার্সি ছিল। বাইরে থেকে যত শব্দ ঢুকবে ভাষায়, ভাষা তত সমৃদ্ধ হবে। কুয়োয় সাঁতরে আনন্দ নেই, সমুদ্রে সাঁতরাতে হয়।

    —কী বললে, ফার্সি শব্দ বাংলা ভাষায় আছে? কোন শব্দ? আমরা বলি?

    —ও তুমি বলতে চাইছো বাঙালি হিন্দুরা বলে কি না? হাঁ নিশ্চয়ই বলে। আওয়াজ, জায়গা, চাকরি, দেরি, দোকান, বাগান, রোজ, পছন্দ, চশমা, পর্দা, রাস্তা, কাগজ, কানুন, খারাপ, খালি, খুব, চালাক, চাকু, চাদর, জরুরি, তাপ, তীর, তোশক, দরজা, নরম, পিঁয়াজ, বরফ, বাচ্চা, বন্দর, শক্ত, হাজার, আবাদ, আমদানি রফতানি, আরাম, আসর, আস্তানা, আস্তাবল, আস্তে, কারখানা, কারচুপি, কারিগর, কিনার, কুর্ণিশ, হিন্দু, রঙ, মামুলি, নারিকেল, দলিল, তারিখ, গরম, বালিশ, শিশি, হরেক, হাঙ্গামা, হুঁশ এরকম হাজারো শব্দ।

    —বল কী?

    —সেটাই।

    —এত মুসলিম শব্দ বাংলা ভাষায়, বিশ্বাস হচ্ছে না।

    —শব্দের বা ভাষার কোনও ধর্ম নেই। কোনও শব্দই মুসলিম বা হিন্দু শব্দ নয়। ভাষা অঞ্চল ভিত্তিক। একই অঞ্চলে বাস করা নানা ধর্মের, সংস্কৃতির লোক এক ভাষায় কথা বলে। পারস্য দেশে মুসলিম আসার আগে থেকেই ফার্সি ভাষাটি ছিল। আরবি ভাষাটিও আরবেরা মুসলমান হওয়ার আগেও ছিল। বাংলা ভাষাটি বাংলায় বাস করা হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম খ্রিস্টান সব বাঙালিরই।

     ১২. আত্মসমালোচনা করতেই হবে

    ১

    ইরানের নাজাফবাদ শহরে একটি মেয়ে হিজাব না পরে সাইকেল চালিয়েছে। দুটো অপরাধ মেয়েটি করেছে, সাইকেল চালিয়েছে, এবং হিজাব পরেনি। ইচ্ছে করেই অপরাধ দুটো করেছে মেয়ে। চেয়েছে শহর দেখুক সে যে আইন ভাঙছে, সাইকেল চালাতে চালাতে, খোলা চুল ওড়াতে ওড়াতে, ডান হাতখানা নাড়াতে নাড়াতে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে সে। লুকিয়ে চুরিয়ে কিছু করেনি। যার হিজাব পরার ইচ্ছে, সে হিজাব পরুক, যার ইচ্ছে নেই, তাকে জোর করা হচ্ছে কেন। মেয়েদের আপত্তি এই জোর করা নিয়েই। নাজাফবাদের মেয়েটিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেয়েটি নিশ্চয়ই জানতো তাকে গ্রেফতার করা হবে, তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। জেনেশুনেই সে বিষপান করেছে। শিক্ষিত সচেতন মেয়েরা আর কতকাল এই অত্যাচার সহ্য করবে! এই যে যা হয় হোক বলে বেরিয়ে পড়েছে স্বাধীনতার ডান হাত উত্তোলন করে, এ একদিনের সিদ্ধান্ত নয়। এ নিছক মজা করা নয়। চল্লিশ বছর ধরে জড়বস্তুর জীবন কাটাতে কাটাতে শ্বাসকষ্ট হতে থাকা কিছু প্রাণ শ্বাস নিতে বেরিয়েছে খোলা হাওয়ায়। এই মেয়েরা স্বাধীনতার প্রতীক। এই মেয়েরা ইতিহাস। কোনও একদিন ইরানে ঠিকই আধুনিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে, যে সমাজে নারীর সমানাধিকার থাকবে। নাজাফবাদের সাহসী এই মেয়েটির নাম সেই আধুনিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়ে যাবে। নারীবিদ্বেষের জগদ্দল পাথর সে সরাতে পারেনি। একটি নুড়ি তো সরিয়েছিল!

    ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লব ঘটিয়ে মোল্লারা ক্ষমতা দখলের পর থেকে মেয়েদের হিজাব না পরে রাস্তায় বেরোনো অপরাধ। সাইকেল চালানোটা বৈধ ছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে সাইকেল চালানোর বিরুদ্ধে মোল্লাগুরু একখানা ফতোয়া জারি করেন। এদিকে ইরানের কিছু শহরে বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালে কলের গাড়ি বাদ দিয়ে মানুষ যখন পায়ে-চালানো-সাইকেলকে যখন আশ্রয় করছে, তখনই এই ফতোয়া। সাইকেল-চালানো-মেয়েরা তো রুখে দাঁড়ালো। ইসলামের কোথায় আছে মেয়েদের সাইকেল চালানো চলবে না? কোথাও তো নেই! ১৪০০ বছর আগে সাইকেল নামে কোনও বস্তু ছিল না। তাহলে? ইসলামের নামে তাহলে মেয়েদের ন্যায্য অধিকার সবই হরণ করার চেষ্টা চলছে! ইরানের মেয়েরা সহজে ছেড়ে দেয় না। কিছু মেয়ে তো মাথা পেতে যা আদেশ আসে, তা-ই বরণ করে। তাদের কথা আলাদা। কেউ কেউ কিন্তু আদেশ বরণ করতে চায় না, কিন্তু বরণ করতে বাধ্য হয়। কিছু মেয়ে প্রতিবাদ করে। সারা বিশ্ব দেখেছে হিজাবের বিরুদ্ধে ইরানি মেয়েদের অভিনব প্রতিবাদ। রাস্তার কিনারে উঁচু কোনও জায়গায় দাঁড়িয়ে এরা লাঠির মাথায় হিজাব বেঁধে পতাকার মতো উড়িয়েছে। ওটিরই আরেক নাম ছিল স্বাধীনতা। সারা বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষ সাহসী ওই মেয়েদের বাহবা দিয়েছে। দূর থেকে তো বাহবাই দেওয়া যায়। যারা মোল্লাতন্ত্রের অধীনে বেঁচে থাকে, তারাই জানে বেঁচে থাকাটা ঠিক কেমন দুঃসহ।

    ধর্মের নামে যে নির্যাতন মেয়েদের ওপর চলে, তার তুলনা হয় না। পিতৃতন্ত্র তো আছেই নির্যাতনের জন্য, তার সঙ্গে, মোল্লাতন্ত্রের দাপটে ধর্মকে যোগ করা হয়েছে। পিতৃতন্ত্র আর ধর্মের যখন মিলন ঘটে, তখন মেয়েদের ওপর নির্যাতন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। মেয়েদের কার্যত বন্দি করা হয়। মেয়েরা বাধ্য হয় ঘরবন্দি হতে, পর্দার আড়ালে চলে যেতে; বাধ্য হয় পরনির্ভর হতে, সমাজের চোখে অপবিত্র অচ্ছুত হতে, অকিঞ্চিৎকর হতে, ক্ষুদ্র তুচ্ছ নগণ্য হতে। বিশ্বের সভ্য রাষ্ট্র ধর্মকে দূরে সরিয়েছে। মুশকিল হল মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এই একবিংশ শতাব্দীতেও ধর্মকে আঁকড়ে ধরে আছে। আধুনিক রাষ্ট্রের কোনও ধর্ম থাকতে নেই, এ কথা জানার পরও যে নেতারা ধর্মকে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে মেশায়, তারা সভ্যতা এবং আধুনিকতা কোনওটিই চায় না। তাদের এই না চাওয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি যারা ভোগে, তারা নারী।

    ২

    প্যারিসের উপকণ্ঠে একটি স্কুল। স্কুলের ৪৭ বছর বয়সী ইতিহাস-ভূগোলের শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি ১৩/১৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ‘মত প্রকাশের অধিকার’ বিষয়ে পড়িয়েছেন, পড়াতে পড়াতে মত এবং ভিন্নমতের উদাহরণ দিয়েছেন। এই উদাহরণের জন্য শিক্ষকরা হাতের কাছে শাসক এবং ধর্মগুরুদের ব্যঙ্গচিত্র রাখেন। যেহেতু ব্যঙ্গচিত্র আঁকলে শাসক এবং ধর্মগুরুদের ভক্তকুল এবং সমর্থকবৃন্দ ক্রোধে উন্মাদ হয়ে ওঠে। যে মতটি সকলকে তুষ্ট করতে পারে না, সেটিই ভিন্নমত, এবং এই ভিন্নমতটির জন্যই প্রয়োজন ‘মত প্রকাশের অধিকার’। কয়েক বছর আগে প্যারিসের শার্লি এব্দো পত্রিকা-অফিসে নবী মুহম্মদের একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করার কারণে ১২ জনকে খুন করেছিল মুসলিম সন্ত্রাসীরা যারা ভিন্নমত প্রকাশের অধিকারে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করে না। এই কাহিনী বলতে বলতে স্যামুয়েল প্যাটি ব্যঙ্গচিত্রটি শিক্ষার্থীদের দেখিয়েছেন। অবশ্য দেখানোর আগে মুসলিম শিক্ষার্থীদের, যারা ওটি দেখতে চায় না, শ্রেণীকক্ষ থেকে আপাতত প্রস্থানের জন্য অনুরোধ করেছেন।

    স্যামুয়েল প্যাটি শিক্ষার্থীদের কিছু মুসলমান অভিভাবক স্কুল-প্রধানের কাছে অভিযোগ করলেন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। কেন তিনি ওই কার্টুনটি শিক্ষার্থীদের দেখিয়েছেন! অভিভাবকদের এই প্রতিবাদের ভিডিও কোনও এক অভিভাবক ফেসবুকে প্রচার করেছিলেন। সেটিই নজরে পড়ে আব্দুল্লাখ আনজরভের। আব্দুল্লাখ আনজরভ ওই ইস্কুলের শিক্ষার্থী না হয়েও, কোনও শিক্ষার্থীর অভিভাবক না হয়েও ইস্কুলে প্রবেশ করে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে খোঁজ নেয় ক্লাসে কী ঘটেছিল। কয়েকটি শিক্ষার্থীকে সে ৩০০ ইউরো দিয়েছে যেন স্যামুয়েল প্যাটি ঠিক কোন লোকটি তা দেখিয়ে দেয়।

    ওদিকে একের পর এক হুমকি পেয়ে স্যামুয়েল প্যাটি পুলিশকে জানান। পুলিশ তাঁকে পরামর্শ দেন যে পথে তিনি বাড়ি যান, সেই পথে না গিয়ে এখন থেকে অন্য পথে বাড়ি যেতে। তা-ই করছিলেন প্যাটি, কিন্তু বাঁচাতে পারলেন না নিজেকে। চেচনিয়ার ১৮ বছর বয়সী সন্ত্রাসী আব্দুল্লাখ আনজরভ তাঁকে শুক্রবার বিকেলে স্কুলের বাইরের রাস্তায় দিব্যি জবাই করে ফেলে রাখলো, হ্যাঁ জবাই। বড় একখানা মাংস কাটার ছুরি দিয়ে আল্লাহু আকবর বলতে বলতে সে বীভৎস হত্যাকাণ্ডটি করে।

    এটিই আসল ইসলাম। অনেক মুসলিমই শান্তিপ্রিয়, ইসলাম কিন্তু তাদের শান্তিপ্রিয় করেনি, করেছে সভ্যতা, আধুনিকতা,জাগতিক সুশিক্ষা।

    বিশ্ব তো কম দেখেনি সন্ত্রাস। মাথা ঠান্ডা রেখে বড় বড় সন্ত্রাসীরা বহুদিন ধরে হিসেবনিকেশ করে বড় বড় সন্ত্রাস ঘটাচ্ছে। এর মধ্যে অমুসলিম আছে, মুসলিমও আছে। মূলত রাজনীতিই কারণ। কিন্তু ধর্মের নামে যে সন্ত্রাস ঘটছে, অধিকাংশ সন্ত্রাস শুধু মুসলিমই ঘটাচ্ছে।

    আব্দুল্লাখ আনজরভ চেচনিয়ার ছেলে। ১০ বছরের ভিসা নিয়ে সপরিবার প্যারিসে বাস করতে এসেছিল। মনে আছে বোস্টন ম্যারাথনে প্রেশার কুকার বোমা নিয়ে গিয়েছিল তামেরলান আর জোখার জারনায়েভ দুই ভাই? ওরাও ছিল চেচনিয়ার। চেচনিয়াও সন্ত্রাসী তৈরি করে। আমার তো ভয় হয়, কোনওদিন হয়তো শুনতে হবে পাশ্চাত্যের কোথাও পয়গম্বরের কোনও ছবি বা কার্টুন দেখে যে ছেলেটি মানুষের মুণ্ডু কেটেছে, সে বাংলাদেশের ছেলে। হতেই তো পারে, গুলশানের ক্যাফেতে যারা অমন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছিল, তারা তো বাংলাদেশের ছেলেই ছিল। ইসলামের প্রতি মানুষের ভয় যে বাড়ে, ঘৃণা যে বাড়ে, মুসলিমদের কাছ থেকে মানুষ যে দূরে থাকতে চায়, তার তো কারণ আছে। এসবই কারণ।

    যত বেশি ধর্মীয় সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটাবে মুসলমানেরা, তত বেশি তারা ক্ষতি করবে মুসলমানদের। মুসলমানদের আর শরণার্থী হিসেবে, উন্নত শিক্ষা বা উন্নত চিকিৎসার জন্য ইউরোপ-আমেরিকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। পাশ্চাত্যের সর্বত্র মানুষ মুসলমান দেখলে ভয় পাবে, তাদের ঘৃণা করবে। শান্তিপ্রিয় মুসলমানদেরও মানুষ সন্ত্রাসী ভেবে সন্দেহ করবে। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি আসলে মুসলমানরাই করে। চিরকালই করে এসেছে।

    ৩

    নিজের মুসলিম-দেশ ছেড়ে যে মুসলিমরা ইউরোপ আমেরিকায় বসে নানা সুযোগসুবিধে ভোগ করছেন, তাঁদের অধিকাংশই বড় অবলীলায় সেই দেশগুলোর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। বিষোদ্গার করতে তাঁদের দু’বার ভাবতে হয় না কারণ তাঁরা ভালো করেই জানেন তাঁরা বাকস্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন একমাত্র ওসব দেশেই। বিষোদ্গারের জন্য তাঁদের কেউ জেলে ভরবে না, তাঁদের মুণ্ডু কেটে কেউ রাস্তায় ফেলে রাখবে না। তাঁরা তখনই পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে সরব হন, যখনই মুসলিম সন্ত্রাসীরা ইসলামের নামে সন্ত্রাস করে, বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় সভ্যতা, নিরীহ মানুষদের জবাই করে। পশ্চিমি দেশগুলো মূলত সেক্যুলার (রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করা), তারপরও তাঁরা দেশগুলোকে ‘খ্রিস্টান দেশ’ বলবেন। লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে পশ্চিমি দেশ আশ্রয় দিয়েছে, তারপরও বলবেন দেশগুলো মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে, মুসলমানদের ঘৃণা করে, ইসলামকে ঘৃণা করে। মোদ্দা কথা, জিহাদি হত্যাযজ্ঞের ন্যায্যতা প্রমাণ করার জন্য একটা ”যুক্তি” বের করেন তাঁরা। এতে কাদের লাভ হয়? লাভ হয় জিহাদিদের। তারা যে ঠিক কাজ করছে, এ ব্যাপারে তাদের ধারণা আরও পোক্ত হয়। অগুনতি মুসলিম তরুণও জিহাদি দলে যোগ দেওয়ার প্রেরণা পায়।

    মুসলিমরা কেন সন্ত্রাস করছে, কেন দেশে দেশে অমুসলিম বা ইসলামে – অবিশ্বাসীদের হত্যা করছে? যেহেতু কোনও এক কালে অমুসলিমরা মুসলিম-দেশগুলোকে উপনিবেশ করেছিল, যেহেতু ইসলামি খেলাফত ভেঙে দিয়েছিল, যেহেতু ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, যেহেতু ইরাকে বা আফগানিস্তানে বোমা ফেলেছিল। সব অন্যায়ের ফল এখন ভোগ করতে হবে। আবার তাঁরা এও বলেন, জিহাদি নাকি পাশ্চাত্যের সৃষ্টি, সন্ত্রাসী বাম দলগুলোও নাকি পাশ্চাত্যের সৃষ্টি, এমনকি মুসলিম সমাজে যে মুক্তচিন্তক জন্ম নিচ্ছেন, মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করার উদ্দেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৌলবাদের বিরুদ্ধে বলছেন, ইসলামের সমালোচনা করছেন, তাঁরা নাকি মুক্তচিন্তক নন, তাঁরা নাকি যুক্তিবাদি নন, তাঁরা নাকি পশ্চিমা বিশ্বের ভাড়া করা লোক। এর মানে তাঁরা বিশ্বাস করেন খ্রিস্টান, ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মীয় সমাজে মুক্তচিন্তক এবং যুক্তিবাদি জন্মাতে পারেন, কিন্তু মুসলিম সমাজে জন্মাতে পারেন না। তাঁরা, যা তাঁদের পছন্দ নয়, সব কিছুর ক্রীড়নক হিসেবে পশ্চিমা বিশ্বকেই চিহ্নিত করেন। এতে বিরাট যে সুবিধে, তা হল আত্মসমালোচনা করার প্রয়োজন হয় না।

    তাঁরা মুসলিমদের ধর্মনিরপেক্ষ, আধুনিক, গণতন্ত্রে-বাকস্বাধীনতায় -সমানাধিকারে বিশ্বাসী করতে চান না। তাঁরা চান এভাবেই মুসলিম সমাজ অন্ধকারে পড়ে থাকুক, আর তরুণ তরুণী ধর্মান্ধ হতে থাকুক, আর সন্ত্রাস করতে থাকুক। তাঁদের কাজ মুসলিম দেশগুলোর যা কিছু খারাপ, দারিদ্র, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক দুরবস্থা, সবকিছুর জন্য তো বটেই, সন্ত্রাসীদের অপরাধের জন্যও, পাশ্চাত্যকে দায়ী করা।

    ইহুদিরা যত অত্যাচারিত হয়েছে, তত আর কারা হয়েছে ইতিহাসে? ইহুদিরা কি কোনও এককালের নাৎসি ইউরোপে বোমা মেরে মেরে প্রতিশোধ নিচ্ছে? জরথুস্ট্রপন্থী বা পার্সিরা আজও কিছু অবশিষ্ট আছে, তারা কি মুসলিমরা তাদের অঞ্চল দখল করে নিয়েছে, বলে মুসলিমদের মুণ্ডু কাটছে? পাশ্চাত্যের ভুল তো আছেই, কিন্তু তারা ভুল করেছিল বলেই আমাদের ভুল করতে হবে? তারা অন্যায় করেছিল বলে আমাদের অন্যায় করতে হবে?

    মুসলিম সমাজের সবচেয়ে বড় মুশকিল এই, যাঁদের কাজ মুসলিম সমাজকে মৌলবাদের আগ্রাসন থেকে মুক্ত করা, রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে পৃথক করা, আইনকে সমানাধিকারভিত্তিক করা, নারীর অধিকার নিশ্চিত করা, সেই মুসলিম বুদ্ধিজীবীরাই, শিক্ষিত সচেতন লোকেরাই মুসলিম সমাজের কোনও পরিবর্তন চান না, তাঁরাই ছলে কৌশলে জিহাদিদের ঘৃণ্য কার্যকলাপকে যৌক্তিক বলে মনে করেন।

    আত্মসমালোচনা না করলে কোনও মানুষ বড় হতে পারে না, কোনও সম্প্রদায় সভ্য হতে পারে না।

     ১৩. মৃত্যু

    আমরা আসি, আমরা চলে যাই। যেখান থেকে আসি, সেখানেই চলে যাই। আমরা ‘কোথাও না’ থেকে আসি, ‘কোথাও না’ তে চলে যাই। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কাছে আমাদের থাকা না-থাকার কোনও মূল্য নেই। ৩৫০ কোটি বছর ধরে প্রাণের জন্ম হচ্ছে, সূর্য নিভে যাওয়ার আগ অবধি হয়তো হতেই থাকবে। হতে পারে তার আগেই প্রাণের বিলুপ্তি ঘটে যাবে। সব একযোগে ডায়নোসোরের মতো মরে যাবে। মৃত্যুই আমাদের শেষ ঠিকানা। সে এককভাবেই হোক, বা সম্মিলিত ভাবে হোক।

    মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের সব কিছু, সারাটা জীবনের কাজ কম্ম, হাসি আনন্দ, দুঃখ শোক, সবকিছু ভিডিওগেমের মতো। কোথাও সুইচ টেপা হয়ে যায়, আর সব শেষ হয়ে যায়।

     ১৪. চরম দক্ষিণপন্থী

    টুইটারে কিছুদিন ট্রাম্পের কীর্তিকলাপ নিয়ে লিখেছি, আর আক্রমণের শিকার হয়েছি। কে আক্রমণ করেছে আমাকে? আমেরিকার সাদা বর্ণবিদ্বেষী গোষ্ঠী? আমেরিকার চরম দক্ষিণপন্থী দল? না। আক্রমণটা এসেছে ভারতীয় হিন্দুদের কাছ থেকে। তারা ট্রাম্পের সমর্থক। ট্রাম্প তো সাংঘাতিক বর্ণবিদ্বেষী লোক, কালো আর বাদামী লোকদের ঘৃণা করেন! না, এতে তাদের কোনও আপত্তি নেই, ট্রাম্প মুসলিমদের ঘৃণা করেন, ট্রাম্প মুসলিমদের আমেরিকায় ঢুকতে দেবেন না, ট্রাম্প মুসলিমদের বারোটা বাজাবেন—এই কারণেই তারা ট্রাম্পকে ভালোবাসে, এই কারণেই তারা ট্রাম্প আবার জিতুন চায়। ট্রাম্প দক্ষিণপন্থী, তারাও দক্ষিণপন্থী, এই একখানা মিল আছে বটে। কিন্তু দুই দক্ষিণপন্থীতে আবার অমিলও প্রচুর। দক্ষিণপন্থী ক্রিশ্চান আবার দক্ষিণপন্থী অক্রিশ্চানদের, দক্ষিণপন্থী সাদা আবার দক্ষিণপন্থী কালোদের, দক্ষিণপন্থী ধনী আবার দক্ষিণপন্থী গরিবদের অতটা কাছের লোক বলে মনে করে না। সুতরাং অসাদা বাদামিগুলোকে ‘মুসলিম’ হিসেবে ভাবতে তাদের কোনও অসুবিধে হয় না। কিছু শিখ লোককে মুসলিম ভেবে ওরা তো গুলি করে মেরেই দিয়েছে। ত্বকের রঙ বাদামি হলে ‘মুসলিম’, মাথায় টুপি বা টারবান পরলে ‘মুসলিম’, ইমিগ্রেন্ট হলে ‘মুসলিম’। অস্পৃশ্যতার আরেক নাম এখন ‘মুসলিম’। তুমি মুসলিম নও বলে, তুমি হিন্দু বলে ট্রাম্প তোমাকে পছন্দ করবে, তা কিন্তু নয়। আজ ট্রাম্প মুসলিম-বিরোধী বলে তুমি ট্রাম্পকে ভালোবেসে ফেলেছো, এমনও হতে পারে মুসলিমদের ভোট পাওয়ার জন্য, বা অন্য কোনও স্বার্থে পার্টি থেকে আদেশ এলো, ট্রাম্পকে খুব মুসলিমপ্রীতি দেখাতে হবে, ব্যস ট্রাম্প তখন মুসলিম-বিরোধিতা বন্ধ করে দেবেন। রাজনৈতিক স্বার্থে হিন্দু-বিরোধীও হয়ে উঠতে পারেন, বলা যায় না। সুতরাং সাদা বর্ণবিদ্বেষী রাজনীতিকদের এত বুক ভরা ভালোবাসা না দান করাই ভালো। বুক ভরা ভালোবাসা বরং সৎ এবং নিঃস্বার্থ মানুষের জন্য রেখে দেওয়া উচিত।

     ১৫. উনি

    উনি কাবাঘরে ঢুকে ৩৬০টি মূর্তি ভেঙেছিলেন। না ভেঙে উপায় ছিল? উনি তো উনির বিরোধীদের পেছন থেকে আক্রমণ করতেন, উনি তো শতশতকে কচুকাটা করার হিম্মত রাখতেন, গনিমতের মাল নিজে একা ভোগ করতেন না, বন্ধুদের মধ্যেও বণ্টন করতেন। উনির কানে তো শয়তান কথা বলে যেত, উনি এত সহজ সরল যে বুঝতে পারতেন না, ভাবতেন ফেরেস্তা। উনি তো ক্রীতদাসির সঙ্গে, শিশুর সঙ্গে, পুত্রধূর সঙ্গে ইয়ে করতেন। উনির কী দোষ, সবাই তো উনিকে চাইতো। মানুষের দুঃখে কেঁদে কেটে একবার তো ডানাওয়ালা ঘোড়ায় চড়ে সাত আসমানে পৌঁছে ৫০কে ৫ করে নিয়ে এলেন। সোজা ব্যাপার? ভাইয়েরা, উনি ছিলেন মহান। উনির মতো মহান হওয়া দুনিয়ার কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বলি মহান হওয়ার চেষ্টা বাদ দিয়ে বরং মানুষ হও।

     ১৬. ট্রাম্পের কোভিড

    ট্রাম্পের করোনাভাইরাস একটু দেরিতেই হল। আমি তো আশঙ্কা করেছিলাম আরও আগেই হবে। উনি মাস্ক পরবেন না, উনি কারও সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখবেন না। হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে সেদিন পার্টি হল, প্রায় কেউই মাস্ক পরেননি। নির্বাচনী প্রচারণায় যাচ্ছেন, তিনি তো মাস্ক পরেনই না, তাঁর কাছের লোকদেরও মাস্ক পরতে দেন না। হোয়াইট হাউজের সাংবাদিক সম্মেলনে মাস্ক পরা সাংবাদিকদের কী হেনস্থাই না করেন। তাঁর মাস্ক বিরোধী প্রচারণার কারণেই তো গড়ে উঠেছে অ্যান্টি-মাস্কার দল, যারা মিছিল করে বেড়ায়, রাস্তায় রেস্তোরাঁয় মাস্ক না পরা লোকদের অভিনন্দন জানায় আর মাস্ক পরা লোকদের অপমান করে। ট্রাম্প তো করোনাভাইরাসকে প্রথম থেকেই গুরুত্ব দেননি। চীনা ভাইরাস বলে একে ডেকেছেন, চিকিৎসক না হয়েও মানুষকে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা দিয়েছেন, হাইড্রক্সিক্লরোকুইন, এমনকি ডিজইনফেক্টেন্ট খেতে বলেছেন। বিশেষজ্ঞদের জানাতে হয়েছে হাড্রোক্সিক্লরোকুইন করোনাভাইরাস সারায় না, লাইজল কোম্পানী তড়িঘড়ি মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছে, ভুলেও কেউ যেন ডিজইনফেক্টেন্ট লাইজল খাবার চেষ্টা না করে।

    ২ লক্ষ লোক মরে গেল, তারপরও ট্রাম্পের কোনও হেলদোল নেই। এত বড় ক্ষমতাবান দেশের ক্ষমতাবান প্রেসিডেন্ট, তাঁর তো উচিত ছিল গোটা বিশ্বকে মহামারীর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সবরকম চেষ্টা করা, মানুষকে ঘরে থাকা, মাস্ক পরা আর সামাজিক শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করা, উৎসাহ দেওয়া। তা নয়, তিনি তাঁর অজ্ঞতা, অশিক্ষা আর অহংকারের প্রদর্শনই করেছেন। ভাইরাসের অস্তিত্বকে অস্বীকার করলে তো ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়া যায় না। লড়তে গেলে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে হবে, মানুষকে জানাতে হবে, এবং বিশেষজ্ঞদের উপদেশ মেনে সবরকম পদক্ষেপ করতে হবে।

    শুধু তিনি নন, তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া, সেনেটর মাইক লী, সেনেটর টম টিলিস, রিপাব্লিক্যান পার্টির ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারপারসন রোনা ম্যাকডানিয়েল, হোয়াইট হাউজের তিনজন সাংবাদিক, উপদেষ্টা হোপ হিক্স, পুরোনো উপদেষ্টা কেলিয়ান কনওয়ে, নির্বাচনী প্রচারণা ম্যানেজার বিল স্টেপিয়েন সকলেই করোনায় আক্রান্ত। কে কাকে সংক্রামিত করেছে, তার কোনও হদিশ পাওয়া যাবে না।

    ট্রাম্প বলেছিলেন যুব সমাজ কাজে যোগ দাও, আমরা বয়স্কদের দেখভাল করবো। বয়স্ক তো তিনিও, সম্ভবত ভুলেই গিয়েছিলেন। প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী এবং প্রচণ্ড বিত্তশালীর আশেপাশে করোনা ভাইরাস উঁকি দিতেও পারবে না, এরকম একটা বিশ্বাস বোধহয় ওঁদের মধ্যে কাজ করে। বিলিওনিয়ার এলোন মাস্কও করোনা ভাইরাসকে মোটেও আমল দেননি।

    হোয়াইট হাউজের ভেতরেই চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকে, কিন্তু হাসপাতালে যাওয়া মানে ট্রাম্পের অবস্থা যতটা ভালো তিনি বলছেন, ততটা ভালো নয়। বেঁচে যদি যান এ যাত্রা, ভালো। আমি চরম শত্রুরও মৃত্যু কামনা করি না। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যেমন হাসপাতালে ক’দিন ভুগে ফিরেছিলেন, হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন কোভিড-১৯ কী জিনিস। তেমন ট্রাম্পও ক’দিন ভুগে ফিরুন। হাড়ে হাড়ে তিনিও টের পান কোভিড-১৯ কী জিনিস। এরপর যদি তিনি ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার আনায়, করোনার টিকা বানানো ত্বরান্বিত করায়, বিশ্বের সকলকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করায়, নিজের দম্ভ কমানোয় মন দেন ভালো। প্রচুর কাজ, করতে চাইলেই করা যায়। অবশ্য আসছে নির্বাচনে তাঁর জেতার সম্ভাবনা খুবই কম।

     ১৭. শরীর

    বাংলাদেশের একটি খবর, একটি ভিডিও এখন দাবানলের মতো ছড়িয়ে গেছে চারদিকে। ”এক মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেছে কিছু পুরুষ”। কেন খবরটি ভাইরাল হল? ওই ‘বিবস্ত্র’ শব্দটির জন্য। স্বামীকে বেঁধে রেখে নির্যাতন করেছে ওরা। কেউ কেউ বলছে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল, সম্ভব না হওয়ায় বিবস্ত্র করেছে। বিবস্ত্র করার ভিডিও করেছে ওরা, ফেসবুকে ভিডিও আপ্লোড করবে বলে। মেয়েটির শরীর শুধু ওরা নয়, আরও হাজার লোকে দেখবে, এর চেয়ে বড় শাস্তি একটি মেয়ের জন্য ওরা মনে করে না আর কিছু আছে।

    যদি একটি পুরুষকে বিবস্ত্র করে অত্যাচার করা হত, তাহলে কি খবরটা এমন ছড়াতো? মানুষ তখন পুরুষকে মারধর করার বিরুদ্ধে কিছু হয়তো বলতো, বিবস্ত্র করার বিরুদ্ধে নয়। পুরুষ বিবস্ত্র হলে ঘটনা ভয়ানক নয়, মেয়ে বিবস্ত্র হলে ঘটনা ভয়ানক। দুটোই শরীর। দুটো শরীরে শুধু যৌনাঙ্গগুলো ভিন্ন। তাহলে এক যৌনাঙ্গ প্রকাশ হলে ক্ষতি নেই, আরেক যৌনাঙ্গ প্রকাশ হলে ক্ষতি কেন?

    যদি খবরটি এমন হত—’একটি মেয়েকে নির্যাতন করেছে কিছু পুরুষ’, তাহলে কারও কিছু যেত আসতো না। বিবস্ত্র শব্দটি শুনে লোকে লাফিয়ে উঠেছে। কী, এত বড় স্পর্ধা, বিবস্ত্র করেছে! তার মানে মেয়েটির বুক মুখ পেট পিঠ হাত পা এমন কী যৌনাঙ্গ পর্যন্ত দেখে ফেলেছে! কী সর্বনাশ।

    মেয়েরা তো শুধু স্বামীর সম্পত্তি নয়, মেয়েরা সমস্ত পুরুষের সম্পত্তি। সে কারণেই সব পুরুষই মেয়েদের শরীর নিয়ে চিন্তিত, এই শরীর আবার কেউ না দেখে ফেলে! সে কারণেই তো মেয়েরা কী পোশাক পরবে, তা পুরুষেরাই নির্ধারণ করে। বিবস্ত্র না করে নির্যাতন করলে সেটিকে অন্যায় বলে মনে করা হত না। বিবস্ত্র না করে জবাই করে ফেললেও মানুষ এতটা ক্ষিপ্ত হতো না, যতটা বিবস্ত্র করায় ক্ষিপ্ত।

    মেয়েকে বিবস্ত্র করাটা লোকের কাছে বড় নির্যাতন মনে হয়েছে, ওই চড় লাথি, লাঠির মারের চেয়ে। কারণ মানুষ বিশ্বাস করে, মেয়েরা আস্ত একখানা ‘শরীর’ ছাড়া কিছু নয়। যেহেতু মেয়েরা শুধুই ‘শরীর’, তাই শরীরের সবকিছু, বুক মুখ পেট পিঠ, ঢেকে রাখতে হবে। ঢেকে রাখতে হবে, কারণ ওগুলো মেয়েটির হলেও মেয়েটির নয়, ওগুলো মেয়েটির মালিক অর্থাৎ স্বামীর খাদ্য, ওই খাদ্যে মালিক ছাড়া কারও নজর পড়লে খাদ্য খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে।

    যে মানসিকতা মেয়েদের বোরখায় ঢেকে রাখে, মেয়েদের বিবস্ত্র করাকে অন্যায় বলে বিচার করে, কারণ মেয়েরা তো শুধুই ‘শরীর’, তার শরীর উলঙ্গ হয়ে গেলে তার আর কিছুই থাকে না—এই একই মানসিকতা কিন্তু বলে মেয়েদের বিবস্ত্র করা যাবে, ধর্ষণ করা যাবে, কারণ মেয়েরা তো শুধুই ‘শরীর’।

     ১৮. বাপের জাত

    আমেরিকার পেন্সিলেনিয়ার এক ফুটবল কোচ, ব্ল্যাক ডায়মণ্ড কন্সট্রাকশান কোম্পানীর মালিক অস্টিন স্টিভেন্স তার ১০ মাস বয়সী শিশুকন্যাকে প্রচণ্ড ধর্ষণ করেছে। ২৯ বছর বয়সী পিতার ওই ধর্ষণ সওয়ার মতো শরীরের জোর ছিল না শিশুটির। প্রচুর রক্তপাত ঘটেছে, শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। তখন কী করেছে অস্টিন? অস্টিন গুগলে উত্তর খুঁজেছে এসবের—”শিশু যদি শ্বাস না নেয়”, ”যদি শিশুর হৃদপিণ্ডের শব্দ না শুনি”, ”শিশু মরে গেছে কি না বুঝবো কী করে”। দুটো মহিলার সঙ্গে তখন চ্যাটও করেছে।

    বাপের জাতকে কী করে বিশ্বাস করবে মানুষ! বাপের জাতকে কী করে শ্রদ্ধা করবে মানুষ! প্রাণীজগতে মেয়েরাই বোধহয় একমাত্র প্রাণী যারা তাদের শত্রুর সঙ্গে, তাদের ধর্ষক এবং খুনীর সঙ্গে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে বাস করে, এক ঘরে, এক পাড়ায়, এক সমাজে!

     ১৯. শত্রু নেই

    বড় কিছু বাঙালি লেখক সম্পর্কে খুব গর্ব করে বলা হয় তাঁদের কোনও শত্রু নেই। শুনে আঁতকে উঠি আমি। শত্রু নেই, তাহলে কেমন লেখক তাঁরা, কী লেখেন যে শত্রু তৈরি হয়নি? তাঁরা এমন লেখা লেখেন, যে লেখা পড়ে সবাই খুশি থাকে। বামপন্থী ডানপন্থী কট্টরপন্থী নরমপন্থী সকলেই খুশি, ধনী গরিব নারীবিদ্বেষী নারীবাদী সকলেই খুশি, কেউ লেখার কোনও বিষয়ে আপত্তি করে না, মন খারাপ করে না, রুখে ওঠে না। কারণ আপত্তি করার, মন খারাপ করার বা রুখে ওঠার কিছু থাকে না তাঁদের লেখায়।

    আমার ভয় হয় এমন লেখকের নাম শুনলেই। এই লেখকেরা এক নষ্ট সমাজে বাস করছেন, কিন্তু নষ্ট সমাজের নিন্দে করেননা, করলে নষ্ট সমাজের হর্তাকর্তারা তাঁদের পছন্দ করবেন না তাই। এই লেখকেরা বৈষম্যের মধ্যে বাস করেন, কিন্তু বৈষম্যের প্রতিবাদ করেননা, প্রতিবাদ করলে শত্রু তৈরি হবে, বৈষম্যে বিশ্বাস করা মানুষ তাঁদের ঘৃণা করবে এই ভয়ে। এই লেখকেরা বিস্তর জাতীয় পুরস্কার পান, বড় বড় সাহিত্য সভায় সভাপতিত্ব করেন, পুরু পুরু ফুলের মালা পরেন গলায়, উদ্বোধনের ফিতে কাটেন, প্রকাশকেরা এই লেখকদের রচনাবলী প্রকাশ করেন। এই লেখকেরা নিষিদ্ধ হন না, বরং বিক্রি হন ভালো।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleফেরা – তসলিমা নাসরিন
    Next Article ফরাসি প্রেমিক – তসলিমা নাসরিন

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    লজ্জা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার মেয়েবেলা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    উতল হাওয়া – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    দ্বিখণ্ডিত – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    কিছুক্ষণ থাকো – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    ভালোবাসো? ছাই বাসো! – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }