Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অনন্ত অম্বরে – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প100 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১৩. আত্মকাহিনীমূলক রচনা

    আজকালকার ছেলেমেয়েরা আত্মকাহিনীমূলক রচনা শেখে কি-না জানি না তবে আমাদের সময় এ জাতীয় রচনা প্রচুর শিখতে হত। নদীর আত্মকাহিনী, একটি বটগাছের আত্মকাহিনী, চোরের আত্মকাহিনী ইত্যাদি। একের ভেতর তিন নামক একটি গ্রন্থ থেকে আমি বেশ কয়েকটি আত্মকাহিনী মুখস্থ করে ফেলি। এর মধ্যে একটি চোরের আত্মকাহিনীটি খুব করুণ করে লেখা। চোর বলছে, সবাই তাকে মারছে। লোকজন ভিড় করে আছে। সে হঠাৎ শুনল একটি বাচ্চা মেয়ে বলছে, বাবা আমি চোর দেখব। তাকে চোর দেখানো হল। মেয়েটি বলল, আরে এ চোর কোথায়? এ তো মানুষ! এই শুনে চোর আত্মগ্লানিতে জরজর।

    এই রচনার মোর্যাল হচ্ছে–চোরও মানুষ। অন্য দশজনের থেকে আলাদা কিছু নয়। এই তথ্য জানার পরও চোর শুনলেই আমাদের গলা বাড়িয়ে দেখার আগ্রহ হয়। আমরা কি দেখতে চাই? আগ্রহের কারণটা কি? আমরা কি দেখতে চাই–লোকটা কোন-না-কোন ভাবে একটু আলাদা কি-না?

    বরিশাল থেকে স্টীমারে ঢাকা আসছি। হঠাৎ শুনলাম এই স্টীমারে করেই একজন ভয়ংকর খুনীকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভয়ংকর খুনী দেখতে একজন ভাল মানুষের চেয়ে খুব একটা আলাদা হবে না জেনেও দেখতে গেলাম। ২১/২২ বছরের একটি যুবক। তিনজন পুলিশ তাকে ঢাকা নিয়ে যাচ্ছে। যুবকটির কোমরে দড়ি বাঁধা, লুঙ্গি পরা, সবুজ রঙের শার্ট। হাসিমুখে চা খাচ্ছে।

    আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে গভীর দৃষ্টিতে যুবকটিকে দেখছি। কোন রকম অস্বাভাবিকতা তার মধ্যে আছে কি-না তা ধরার চেষ্টা। সে শব্দ করে হাসছে। পা নাচাচ্ছে। পুলিশ তিনজনের সঙ্গে রসিকতা করছে–তার চরিত্রে বা চেহারায় কোন রকম অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করলাম না। এই মানুষটা চারটা খুন কিভাবে করল সেও এক রহস্য। খুন করতে মানসিক শক্তি যেমন প্রয়োজন শারীরিক শক্তিও প্রয়োজন। এই যুবকটি নিতান্তই দুবলা পাতলা।

    সে এখন সিগারেট ধরিয়ে টানছে। পুলিশ তিনজন তার সঙ্গে সিগারেট টানছে। সে হাসিমুখে বলল, ওস্তাদজী একটু হাঁটব। পায়ে ঝিঝি ধরছে। পুলিশ কোনরকম আপত্তি করল না। একজন তার কোমরের দড়ি ধরে পেছনে পেছনে যাচ্ছে। অন্য দুজন বসে আছে উদাসদৃষ্টিতে।

    পুলিশ তিনজনের সঙ্গে যুবকটির মনে হচ্ছে বেশ সুসম্পর্ক। সে যা বলছে, পুলিশ তাই করছে।

    আমিও মন্ত্রমুগ্ধের মত যুবকটির পেছনে পেছনে যাচ্ছি। সে কোথাও বেশিক্ষণ দাঁড়াচ্ছে না। সারা স্টীমার ঘুরে আবার আগের জায়গায় ফিরে এসে বলল, ওস্তাদজী সিগারেট।

    বসে-থাকা পুলিশ তার পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে সিগারেট দিল, এবং নিজেই ধরিয়ে দিল। চমৎকৃত হবার মত দৃশ্য। পরে বুঝলাম, এই দামী সিগারেট যুবকটিরই কেনা। পুলিশ তার সিগারেটের জিম্মাদার।

    আমি যুবকটির চোখ দেখতে চাচ্ছি। সরাসরি তাকাতে চাচ্ছি তার চোখের দিকে। একজন মানুষের ভেতরটা নাকি চোখের মাধ্যমেই দেখা যায়। একটা মানুষ ভাল কি মন্দ, সৎ-অসৎ, তা নাকি তার চোখ বলে দেয়। কিও যুবকটির চোখ আমি দেখতে পাচ্ছি না। তার দৃষ্টি কোথাও স্থির হয়ে পড়ছে না। এক সময় সে তাকাল আমার দিকে। আমার মনে হল তার চোখে অন্য এক ধরনের আলো। সাপের দৃষ্টির মত দৃষ্টি। পরক্ষণেই এই ধারণা মন থেকে মুছে ফেললাম। লোকটি খুনী, আগেভাগে তা জানি বলেই আমি তার চোখের দৃষ্টি সাপের দৃষ্টি বলে ভাবছি। সাপের দৃষ্টি কেমন তাও তো জানি না। সাপের চোখের দিকে তো আমি কখনো তাকাই নি।

    খুনীদের সম্পর্কে আমার খানিকটা কৌতূহল আছে। এই কৌতূহলের কারণ হল, খুব ছোটবেলায় আমাদের বাসায় একজন জ্যোতিষী এসেছিলেন। তিনি আমার সব ভাইবোনের হাত দেখে অনেক ভাল ভাল কথা বললেন। আমার হাত দেখে বললেন, এই ছেলে তিনটি বিবাহ করবে। আমার মার মুখ শুকিয়ে গেল। আমি অবশ্যি যথেষ্ট পুলক অনুভব করলাম। অতঃপর জ্যোতিষী বললেন, চন্দ্রের ক্ষেত্রে যব চিহ্ন–এই ছেলে ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ খুন করতে পারবে। আমার মা নিশ্চিত হলেন যে জ্যোতিষী কিছুই জানে না। সে যদি বলতো। আমি দেশের রাজা হব। মা ধরে নিতেন ঐ জ্যোতিষী খুবই বড় জ্যোতিষী। শৈশবে জ্যোতিষীর কথা আমাকে খানিকটা হলেও পীড়িত করেছে। আমি মানুষ খুন করব–এই ধারণা আমার কাছে খুব রুচিকর মনে হয় নি। এক সময় নিজেই এ জাতীয় আদিভৌতিক বইপত্র পড়তে শুরু করলাম। আমার উৎসাহ ছিল খুনীদের লক্ষণ বিচারে। একটা বই-এ দেখলাম, খুনীদে, বৃদ্ধাঙ্গুল হবে

    খাটো এবং মোটা। এর পর থেকে কারো সঙ্গে দেখা হলেই তার বুড়ো আঙ্গুলের দিকে তাকাতাম। কারো আঙ্গুল একটু মোটা দেখলেই মনে মনে ভাবতাম, পাওয়া গেছে। এইবার ধরেছি। ব্যাটা খুনী।

    লক্ষণ বিচারে মারাত্মক খুনী যাকে পাওয়া গেল সে আমাদের বাসায় কাঠের কাজ করতে এসেছিল। মানুষটা এতই মধুর স্বভাবের যে তাকে খুনী ভাবতেও খারাপ লাগে। উপায় নেই। খুনী তো বটেই। এই মোটা বুড়ো আঙ্গুল।

    মেট্রিক পরীক্ষার পর তিন মাস সময় পাওয়া যায়। এই তিন মাস রেজাল্টের জন্যে অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার নেই–আমি তিন মাস নষ্ট করলাম জ্যোতিষী এবং এস্ট্রনমির বই পড়ে পড়ে। বাসায় এ-জাতীয় বই-এর কোন অভাব ছিল না। এক সময় হাত দেখাও শুরু হল–হাত দেখা, সেই সঙ্গে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান বিবেচনা করা। দ্বিতীয়টি বেশ কঠিন। কিছুদিন চেষ্টা করে বাদ দিয়ে দিলাম। হাত দেখা বজায় রইল। অল্পদিনেই বুঝে গেলাম–বড় পামিস্ট হিসেবে নাম করা অত্যন্ত সহজ কাজ। হাত দেখাতে যে আসে সে নিজের সম্পর্কে কিছু কিছু জিনিস শুনতে চায়। কি শুনতে চায় তা নিজের অজান্তেই প্রকাশ করে ফেলে। যে সব জিনিস শুনতে চায় সে সব শুনিয়ে দিলেই সে পামিস্ট সম্পর্কে খুব উচ্চ ধারণা নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

    মহসিন হলে থাকাকালীন সময়ে আমার হাত দেখা বিদ্যার (!!) পূর্ণ বিকাশ ঘটল। দূর-দূর থেকে অচেনা মানুষজনও আসতেন এবং বিনীত গলায় বলতেন, আপনার নাম শুনে এসেছি–একটু যদি কাইন্ডলি। এঁদের কঠিন মুখে ফিরিয়ে দিতাম। তাই নিয়ম। কয়েকবার ফিরিয়ে দিতে হবে। তারপরেও আসবে তখন একদিন হাত দেখা হবে। যে সব কথা ভদ্রলোক শুনতে চাচ্ছেন তার সবই আমি তাকে শুনিয়ে দেই এবং অভিভূত করে বিদায় দেই, কাজটা খুব কঠিন না। নমুনা দিচ্ছি–

    আমি : আপনাকে সবাই ভুল বুঝে। আপনি আসলে কি কেউ জানে না।

    ভদ্রলোক : ঠিক বলেছেন। সবাই ভুল বুঝে (উদাস হয়ে গেলেন। একই সঙ্গে খুশি। সব মানুষই চায়–তার মধ্যে রহস্য থাকুক।]

    আমি : সবচে বেশি ভুল বুঝে আপনার অতি প্রিয়জনরা।

    ভদ্রলোক : খুব কারেক্ট অবজারভেশন। [আরো উদাস, এবং দুঃখি। তবে এই দুঃখে কিছুটা আনন্দ মেশানো।]

    আমি : আপনি মানুষ হিসেবে অত্যন্ত উদার যদিও ভাব করেন যে আপনি উদার নন।

    ভদ্রলোক : এটা ভাই আপনি দারুণ সত্যি কথা বললেন। ভেতরের কথা বলে ফেলেছেন।

    [দারুণ খুশি, সবাই চায় নিজেকে উদার ভাবতে।]

    আমি ও মানুষের প্রতি আপনার মমতা অপরিসীম। শুধু মানুষ না পশু পাখি এদের প্রতিও আপনার অসীম মমতা।

    ভদ্রলোক : এটা যখন বললেনই তখন আপনাকে একটা গল্প বলি। বৎসর খানিক আগের কথা। নিউ মাকের্টে গিয়েছি…

    [lম্বা গল্প ফেঁদে বসলেন যেখানে পশুপ্রেমের ব্যাপার আছে।]

    আমি : আপনার ভেতর অনুশোচনার ব্যাপারটা অত্যন্ত প্রবল। কোন একটা অন্যায় করবার পর তীব্র অনুশোচনায় আপনি আক্রান্ত হন। এমনও হয়েছে যে অতি সামান্য অন্যায় কিন্তু সারারাত আপনার ঘুম হল না।

    ভদ্রলোক : [ অভিভূত। চোখে পানি এসে যাচ্ছে। ধরা গলায় বললেন–] আমার ফ্যামিলি লাইফ সম্পর্কে বলুন।

    বলার ভঙ্গি থেকে ধরতে হবে লোকটি পারিবারিক জীবনে সুখী কি সুখী নয়। শতকরা আশি ভাগ সম্ভাবনা–অসুখী। সুখী মানুষ জ্যোতিষী খুঁজে বেড়ায় না। অসুখী হলে অসুখের কারণটা অর্থনৈতিক কি-না তা লোকটির কাপড়-চোপড় দেখে ধরতে হবে। যদি দেখা যায় কারণ অর্থনৈতিক নয় তাহলে বুঝতে হবে সমস্যা অন্য জায়গায়।

    আমি : ভাই কিছু মনে করবেন না। আপনার হাত দেখে মনে হচ্ছে। পারিবারিক জীবনে আপনি অত্যন্ত অসুখী, যদিও বাইরে থেকে তা বোঝা যায় না। কেন অসুখী তাও আপনার হাতে আছে। বেশ পরিষ্কার ভাবেই আছে, কিন্তু স্যরি। আমি বলতে চাচ্ছি না। এই বিষয়ে আমি কিছু বলব না। দয়া করে আমাকে জোর করবেন না।

    আমাকে তখন আর কিছু বলতে হয় না। ভদ্রলোক নিজেই তখন হড়বড় করে তার জীবন ইতিহাস বলতে থাকেন। এই ব্যাপার আমি একবার না, অসংখ্যবার লক্ষ্য করেছি। মানুষগুলি জেনেশুনে প্রতারিত হবার জন্যে আসে। প্রতারিত হয় এবং হাসিমুখে ফিরে যায়। তার জন্যে আমি তেমন কোন গ্ৰানিবোধ করি না। তার প্রধান কারণ, এর মধ্যে কোন অর্থ জড়িত নয়। হাত দেখার জন্যে আমি কোন টাকা নেই না। এতটা নামা আমার পক্ষে সম্ভব না। দ্বিতীয় কারণ, পুরো ব্যাপারটায় আমি খুব মজা পাই। মানব চরিত্রের বিচিত্র সব দিক ধরা পড়ে।

    অনেকেই হয়ত বলবেন–আপনি হাত দেখতে জানেন না বলেই আজেবাজে কথা বলে মানুষকে ধোকা দেন। যারা জানে তারা দেয় না। হাতে যা আছে তাই বলে। তাঁদের জন্যে আমার একটা গল্প আছে–বছর ছয়েক আগের কথা। সাপ্তাহিক রোববার পত্রিকার অফিসে গিয়েছি। গল্প করছি। রোববার পত্রিকার সম্পাদক কবি রফিক আজাদের সঙ্গে। তখন বাংলাদেশের একজন নামী হস্তরেখাবিশারদ পত্রিকা অফিসে ঢুকলেন। তাঁর নাম করছি না। তাতে তাঁর রমরমা ব্যবসার ক্ষতি হতে পারে।

    রফিক আজাদ আমাকে দেখিয়ে বললেন, উনার হাতটা দেখুন তো।।

    হস্তরেখাবিশারদ আমাকে চিনলেন না। চেনার কথাও না। তখন পত্র পত্রিকায় আমার কোন ছবি ছাপা হত না। তিনি গভীর মনোযোগে হাত দেখলেন–এবং বললেন,

    আপনি লেখালেখি করেন।

    সবাই চমৎকৃত হল। আমি হলাম না। পত্রিকার অফিসে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছি। সঙ্গত কারণেই ধরে নেয়া যায় আমি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত। আমি তাঁকে কনফিউজ করবার জন্যে খুব শংকিত গলায় বললাম–আমার পড়াশোনা কতদূর হবে একটু দেখুন।

    হস্তরেখাবিশারদ আমার টোপ গিললেন এবং আমার করুণভাবে বলার ভঙ্গি থেকে ধরে নিলেন–পড়াশোনার অবস্থা শোচনীয়।

    আপনার রবির ক্ষেত্র বেশ দুর্বল। তাছাড়া বৃহস্পতির ক্ষেত্রও তেমন ডেভেলপড নয়। ব্রেক অব স্টাডি আছে।

    তখন আমি সদ্য পি-এইচ.ডি করে দেশে ফিরেছি। কিন্তু এমন ভাব করলাম যেন তাঁর কথায় অভিভূত হয়ে গেছি। আমার আশেপাশে যারা ছিল তারা আমার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে গেল। আমি গলার স্বর আরো করুণ করে বললাম,

    পড়াশোনা বাদ দিন। যা হবার হয়েছে। এর বেশি কিছু হবার সম্ভাবনা নেই। চাকরি-বাকরি দেখুন।

    ভদ্রলোক আবার আমার টোপ গিললেন এবং বললেন–এখন চাকরির কোন যোগ দেখছি না। তবে বছর দুএকের মাথায় বড় ধরনের একটা সুযোগ আছে। সেই সুযোগ গ্রহণ করলে ভাল হবে।

    তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছি। আমি ভদ্রলোকের কথায় এমন আন্তরিক ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে লাগলাম যে তিনি চলে এলেন পুরো আমার হাতের মুঠোয়! আমি বললাম, আমার খুব দেশ-বিদেশ দেখার শখ। দেখুন না বিদেশযাত্রা আছে কি-না।

    শেষ বয়সে সম্ভাবনা আছে।

    এই হচ্ছে পামিস্ট্রি। এই হচ্ছে দেশবিখ্যাত (!!!) হস্তরেখাবিশারদের নমুনা। বিজ্ঞান সম্বন্ধে পড়াশোনা জানা মানুষদেরও আমি দেখেছি এই সব ব্যাপারে অটল ভক্তি। কেউ কেউ পামিস্ট্রি বিশ্বাস করেন না কিন্তু এস্ট্রনমি বিশ্বাস করেন। তাঁদের ধারণা এস্ট্রনমি নাকি সায়েন্স! বৃশ্চিক রাশির সব জাতকের স্বভাব চরিত্র না-কি এক রকম হবে। আমি এবং আমার দুই ভাইবোন বৃশ্চিক রাশির। আমাদের কারোর সঙ্গে কারো স্বভাবের কোন মিল নেই। তার চেয়েও বড় কথা, এইসব রাশির ব্যাপারগুলি হাজার বছর আগের আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র দেখে ঠিক করা। হাজার বছরে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে। আজ যদি কষ্টি তৈরি করা হয় এবং কষ্ঠি বিচার করে লেখা হয়–

    জাতক জন্মলগ্নে বৃশ্চিক রাশি

    তখন উচ্চস্বরে হাসা ছাড়া পথ নেই। হাজার বছর আগে জন্মালে এই জাতক বৃশ্চিক রাশি হত। আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রগুলি যোগ করলে বৃশ্চিকের মত হয়ত দেখাতো। আজ দেখাবে না। নক্ষত্ররা সরে গেছে।

    বাংলাদেশে হস্তরেখাবিশারদের মত অনেক এস্ট্রলজারও আছেন। তাদের সমিতি-টমিতি আছে। তাঁরা মহা সম্মেলন করেন। গ্রহ-নক্ষত্র বিচারে দেশের ভবিষ্যৎ কি তা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বিবৃতি দেন। পত্রিকাওয়ালারা সেই সব বিবৃতি খুব আগ্রহ করে ছাপেন। বিস্মিত হয়ে ভাবি, কোন যুগে বাস করছি? জাদুটোনার যুগে না চন্দ্র জয়ের যুগে?

    এস্ট্রলজারদের মহা সম্মেলনে একবার একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনাটি আমি আগেও এক লেখায় উল্লেখ করেছি। আবারো করছি। যে মহা সম্মেলনটির কথা বলছি সেই মহা সম্মেলনে এরশাদ সাহেবের এক মন্ত্রী ছিলেন প্রধান অতিথি। তিনি তাঁর বক্তৃতায়–মহা সম্মেলনের সাফল্য কামনা করলেন। এস্ট্রলজাররা গ্রহ-নক্ষত্র গুণে দেশ ও জাতির জন্যে যে মঙ্গল করে যাচ্ছেন তার ভূয়সি প্রশংসা করলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে এস্ট্রলজির একটি বিভাগ খোলা উচিত সেই সম্পর্কেও বললেন। ঘন ঘন হাততালি পড়তে লাগল।

    তখন তিনি একটি মোক্ষম কথা বললেন। তিনি বললেন, এস্ট্রলজারদের জন্যে তিনি একটি মানমন্দির স্থাপনের ব্যবস্থা করবেন।

    এস্ট্রলজাররা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগল। এ কি সমস্যায় পড়া গেল! মানমন্দির দিয়ে তাঁরা কি করবেন? কোন্ গ্রহ ভাল কোন্ গ্রহ মন্দ এটা তো মানমন্দির দিয়ে বোঝা যাবে না। মানমন্দির হচ্ছে এস্ট্রানমারদের জন্যে, এস্ট্রো

    ফিজিসিস্টদের জন্যে। তাঁদের প্রয়োজন হাজার বছরের পুরানো পুঁথি–এবং একদল বোকা পাঁঠা জনগুষ্ঠী।

    ভাল কথা, শৈশবে যে জ্যোতিষী আমার হাত দেখে বলেছিলেন আমি ঠাণ্ডা মাথায় খুন করতে পারব, তাঁর গণনা কিন্তু এক অর্থে মিলে গেছে। এইসব দিনরাত্রি নামক ধারাবাহিক নাটকে আমি টুনীকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছি। শুধু টুনী না–আমার উপন্যাসের অনেক চরিত্রকেও অকালে মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে। আমি কি করব? আমার হাতে লেখা।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসূর্যের দিন – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article দেখা না-দেখা – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }