Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অন্যমনস্ক – জুনায়েদ ইভান

    জুনায়েদ ইভান এক পাতা গল্প83 Mins Read0

    মনোরথের কিছু একটা

    ১

    আমরা বসে আছি একটা কাঠের ড্রইং রুমে। দেয়ালে কিছু অ্যাবস্ট্রাক্ট পেইন্টিং। একটা বাচ্চা হাতির মূর্তি শুঁড় উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বিথির চোখের নিচে কালি জমেছে। বোধ হয় রাতে ঘুম হয় না। মানুষের চোখ যদি কথা বলে থাকে তাহলে চোখের কালি হলো সেই কথার সারাংশ।

    আমি ঘড়ির দিকে তাকাই। সকাল ৭টা ১০ মিনিট। বিথি বসে আছে চুপচাপ। কী যেন একটা বলতে চায় কিন্তু কী বলতে চায় জানে না।

    বললাম, ‘কী চিন্তা কর?

    ‘কিছু একটা।

    ‘সেটা কী?’

    ‘তুমি বুঝবে না।’

    ‘তাই নাকি?’

    ‘যেটা তুমি আগে বুঝতে, আমি কী কল্পনা করছি।’

    তারপর কিছুক্ষণ নীরবতা। দুজন মনে মনে কি সব চিন্তা করে, সেটা নিজেদের ভেতরেই রেখে দিলাম।

    আমি যা দেখি তুমিও তা দেখ?

    ‘হ্যাঁ দেখি।’

    ‘আমি দেখছি একটা ফড়িং। বল তো কোথায়?’

    বিথি সারা ঘর ফড়িং খুঁজতে লাগল। আমি বললাম, ‘এই যে আমার টিশার্টে।’

    আমাদের চিন্তা মহাশূন্য থেকে টিশার্টের ফড়িংয়ে এসে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। আমরা দুজন এখন একই জিনিস নিয়ে চিন্তা করছি। তারপর কখন সেটা কেন্দ্র থেকে সরে দুটা পৃথক বিন্দুতে রূপান্তর ঘটে, তা বোঝা মুশকিল। পুনরায় জিজ্ঞাসা করি

    ‘কী চিন্তা কর?’

    ‘অনেক কিছু।’

    ‘অনেক কিছু কী?’

    ‘ভুলে গেছি।’

    ‘মনে করার চেষ্টা কর।

    ‘কীভাবে করব?’

    ‘তুমি কি একটা বাঘের কথা চিন্তা করছিলে? ডোরাকাটা বাঘ?’

    ‘বাঘের কথা কেন চিন্তা করব?’

    ‘তার মানে চিন্তার একটা এরিয়া আছে। সেখানে গেলেই খুঁজে পাবে।’

    আগেকার মানুষ দূরে কোথাও যাবার সময় কিছু চিহ্ন রেখে যেত, যেন ফেরার সময় পথ ভুল না করে। কল্পনা করার ক্ষেত্রেও এই কাজটি করা যায়।

    বললাম, ‘একটা জিনিস লক্ষ করেছ?’

    ‘কী?’

    ‘আমরা যখন থেকে চিন্তা করে কথা বলতে শুরু করি তখন থেকে আমাদের কথা কমতে শুরু করে।‘

    বিথি চোখ মেলে তাকায়।

    ‘চিন্তার জন্ম কোথায় জানো?’

    ‘না। তুমি জানো?’

    ‘আমিও জানি না। তবে সব চিন্তার একটা কারণ থাকে। কারণটা কী রকম? তার ওপর নির্ভর করে চিন্তার একটা স্ট্রাকচার তৈরি হয়।’

    ‘তাহলে চিন্তার জন্ম কোথায়?’

    ‘মস্তিষ্ক থেকে। মানুষ চিন্তা করে। এখানে ‘করে’ ক্রিয়াপদ। আর আমি চাইছি এই কাজটি একসাথে করতে।’

    ‘একসাথে চিন্তা করা যায়?’

    ‘চেষ্টা করে দেখতে পারি।’

    ‘কীভাবে চেষ্টা করব?’

    ‘প্রথমে একটা বস্তু ঠিক করব।’

    ‘ঘাসফড়িং?’

    আমি হাসতে শুরু করি। আমরা দুজন আমাদের কথা বুঝতে পারছি। এক মুহূর্তের জন্য আমাদের দূরত্ব কমতে শুরু করে।

    বললাম, ‘তোমার কিসে ভালো লাগে? বন্দি নাকি স্বাধীনতা?’

    ‘দুটাই দরকার।’

    ‘যেকোনো একটা নেয়া যাবে।’

    ‘দুটা অর্ধেক করা যাবে না?’

    ‘না।’

    ‘এই নিয়ম কে বানিয়েছে?’

    ‘আমি।’

    ‘এই মাত্র?’

    আমাদের ঠোঁটে লেগে থাকা হাসির ভাঁজ, দীর্ঘায়িত হয়। আর দীর্ঘায়িত হয় আমাদের কল্পনা, যার উৎস খণ্ড খণ্ড স্মৃতি। ঝিনুক কুড়ানো বালকের মতো স্মৃতি কুড়িয়ে আমরা মালা গাঁথি। কিন্তু আমাদের মালা অসম্পন্ন থাকে।

    বিথি উঠে গিয়ে ভেতরের ঘরে যায়। ফেরার সময় হাতে করে চা নিয়ে আসে। চায়ের সাথে বিস্কুট। আমি বিস্কুট চায়ে ভিজিয়ে খেতে অভ্যস্ত। খেতে খেতে বিস্কুট কাপে তলিয়ে যায়। চামচ দিয়ে উঠিয়ে তারপর সুপের মতো গিলে ফেলি।

    ‘বললে না তো, কিসে ভালো লাগে?’

    ‘বন্দি নাকি স্বাধীনতা?

    ‘একটা বেছে নাও।’

    ‘তুমি বল শুনি।’

    ‘আকাশে উড়ার জন্য পাখিকে ঘরে ফিরতে হয়।’

    ‘আর যে পাখি কখনো আকাশে ওড়েনি?’ বিথি জানতে চায়।

    ‘সেও স্বাধীন। তার কাছে খাঁচা হলো আকাশ।

    ‘কী বলতে চাও?’

    ‘আমরা আমাদের কল্পনার কাছে বন্দি।’

    ‘আর আমাদের কল্পনা?’

    বিথি কেমন করে তাকায়। আমি তাকে পড়তে পারি না। তার হাতে একটা ছুরি। পাউরুটিতে বাটার মেশাচ্ছে। টেবিলে টিফিন বক্স। পাশের ঘরে আহিল রেডি হচ্ছে। ৮টায় তার ক্লাস।

    বললাম, ‘কবে থেকে মনে হলো, আমি তোমাকে বুঝতে পারি না?’

    ‘যখন থেকে আমি তোমাকে বুঝতে পারি না।’

    আমরা কেউ কাউকে বুঝতে পারি না, তর্ক করার চেয়ে এই সত্য মেনে নেয়া ভালো। আমি আহিলকে সাথে নিয়ে বের হলাম। আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে ফ্লোরিডার শান্ত রাস্তা ধরে। পাশেই একটা ছোট লেক। রাস্তার দুপাশে ওক আর সেঞ্চুরি গাছের সমাহার। হঠাৎ হঠাৎ যখন গাছ থাকে না, তখন লেক দেখা যায়। আবার গাছ। আবার লেক। আমরা দুজন খেলতে শুরু করি। গাড়ি থেকে যা দেখা যায় তা শব্দ করে বলা।

    পানি-গাছ। গাছ-পানি। পানি পানি গাছ।

    আহিলের বয়স ৭ বছর ২ মাস। কোর্টের রায় মোতাবেক সে তার মায়ের সাথে আছে।

    আহিল বলল, ‘আমরা সবাই আবার কবে একসাথে থাকব?’

    ‘এই তো বাবা, খুব শিগগিরই।’

    ‘শিগগিরই মানে কী?

    ‘শিগগিরই মানে তাড়াতাড়ি।’

    ‘তখন আমরা আবার একসাথে থাকব?’

    ‘হ্যাঁ।’

    ‘এখন কেন না?’

    ‘সবকিছুর একটা সময় আছে।’

    ‘কখন সময় হবে?’

    ‘আবার যখন পাতা জন্মাবে।’

    রাস্তার দুধারে শুকনো পাতা ঝরে পড়ছে।

    আহিল মন খারাপ করে বলল, ‘পাতা ঝরে যায় কেন?’

    ‘যেন নতুন করে আবার জন্ম নেয়।’

    ‘কখন জন্ম নেবে?’

    ‘এই তো বাবা স্প্রিং-এ। মার্চের পর থেকে।‘

    ‘তখন আমরা একসাথে থাকব?’

    ‘হ্যাঁ। একসাথে থাকব।’

    একটা গ্যাস স্টেশনের সামনে আমাদের গাড়ি থামে। আমি ওয়ালেট ফেলে এসেছি।

    আহিল বলল, তার কাছে টাকা আছে। সে ব্যাগের সাইড পকেট থেকে বিশ ডলার বের করে। তারপর আমি যেভাবে কথা বলি, ঠিক সেভাবে রিসিপশনে গিয়ে বলল ‘Could you please get me $20 at pump 3? ‘

    বললাম ‘টাকা পেয়েছ কোথায়?’

    ‘মিস এলেক্সি দিয়েছে।’

    মিস এলেক্সি আমার বান্ধবী। সে আহিলকে অনেক পছন্দ করে। একবার আহিল দুই পায়ে দুই রকমের মোজা পরে এসেছিল। বাসায় গিয়ে এলেক্সিকে বললাম, আহিলের জন্য মোজা কিনতে হবে। সে একসাথে একশ জোড়া মোজা কিনে আনল। বিভিন্ন রকমের ডিজাইন, মিকি মাউস, নিঞ্জা, ব্যাটম্যান কত কী।

    বাচ্চাদের মাথায় কোনো কিছু ঢুকে গেলে সহজে বের হয় না। সে আবার জিজ্ঞাসা করে, ‘আমরা কখন একসাথে থাকব?’

    ‘যখন বিকেলে সূর্যাস্ত হবে।’

    আহিল আকাশের দিকে তাকায়। এখানে এখন সূর্যাস্ত হয় রাত ৮টার পর। শুকনো পাতার ওপর দিয়ে পায়ে পায়ে মাড়িয়ে গেলে মর্মর ধ্বনি ওঠে। এত এত দূরত্বের মাঝে কী করে কাটাব সাথে নিয়ে জীবনের স্মৃতি ভয়, কুৎসিত অভিযোগ?

    রবীন্দ্রনাথ এর একটি উত্তর রেখে গেছেন। ‘অতিদূর পরপারে গাঢ় নীল রেখার মতো বিদেশের আভাস দেখা যায়, সেখান হইতে রাগ-দ্বেষের দ্বন্দ্বকোলাহল সমুদ্র পার হইয়া আসিতে পারে না।

    ২

    আহিলকে স্কুলে দিয়ে বাসায় ফিরি সকাল ৯টায়। এলেক্সি ঘুম ঘুম চোখে দরজা খোলে। তার হাতে কফির মগ।

    বললাম, ‘খিদে পেয়েছে।’

    টেবিলে ব্রেকফাস্ট সাজানো। এলেক্সি চুলায় চা বসিয়ে চুল বেঁধে নিল। তার পরনে অফ হোয়াইট কালারের টিশার্ট। সেখানে ‘মুড সুইং’ লেখা নিয়ে কিছুক্ষণ আলাপ হয় আমাদের।

    বললাম, ‘মুড সুইং কেন?’

    ‘আমার তো সব সময়ই মুড সুইং করে।’

    ‘কী রকম?’

    ‘এই ধর একটা গান প্লে করলাম। শুনতে গিয়ে সেটা আর ভালো লাগছে না।’

    ‘এ রকম তো সবারই হয়।’

    ‘আমার একটু বেশি বেশি হয়।’

    ‘ভালো তো। টিকে থাকার লড়াইয়ে, বারবার নতুন কিছু চিন্তা করা।’

    ‘সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তুমি যখন চিন্তা করতে বাধ্য হবে, তখন অসহ্য মনে হবে।’

    ‘কে তোমাকে বাধ্য করছে?’

    ‘সেটা জানি না।’

    এলেক্সি হাসতে থাকে। হাসলে তার নিচের পাটির সবগুলো দাঁত দেখা যায়। হাসি থেমে গেলেও মুহূর্ত থেকে যায়।

    এলেক্সির সাথে পরিচয় হয় বছর খানেক আগে। আমি তখন একটা ব্যাংকে চাকরি করি। পাশেই একটা দোকান থেকে কিছু খাবার কেনার পর খেয়াল হয়, ওয়ালেট ফেলে এসেছি। গাড়ি থেকে ওয়ালেট নিয়ে এসে শুনি, আমার বিল পে করা হয়ে গেছে। তেমন কিছু না, মাত্র ১৬ ডলার। কিন্তু আমি তাকে খুঁজে বের করি।

    তারপর আরেকদিন দেখা হয় সেই একই জায়গায়। পাশেই একটা নেভি ক্যাম্প। সেখানেই চাকরি করে। গায়ের রং ধবধবে সাদা, সোনালি চুল। একুশ বছর বয়সের এক আমেরিকান নেভি, যে একা থাকে।

    আমিও তখন একা। অফিস থেকে ফিরে এসে একা একা রান্না করি। এঘরে ওঘরে আহিল আর বিথির নানান জিনিসপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। ফেলে দেয়া কিংবা গুছিয়ে রাখা কোনোটাই করা হয়নি।

    একদিন বিকেলে এলেক্সি আমার বাসায় আসে। কেমন উষ্কখুষ্ক চুলে বিষাদমাখা চেহারা। তার হাজব্যান্ড আত্মহত্যা করেছে, সেদিন ছিল মৃত্যুবার্ষিকীর দিন।

    কবে মারা গেছে কিংবা কেন এই জাতীয় কোনো প্রশ্ন না করে আমি বললাম, সে মারা যাবার পর তোমার কি নিজেকে স্বাধীন মনে হয়?

    এলেক্সি রাগান্বিত চোখে আমার দিকে তাকায়। হয়তো এমন সময় আমার কথা অবিবেচক কিংবা নির্দয় রসিকতা মনে হয়েছে।

    তারপর একদিন জানতে পারি, তার হাজব্যান্ড (জিমি) মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। আত্মহত্যা করার আগে, এলেক্সিকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন। বিশেষ কিছু কথা আছে। এলেক্সি ঘুম ঘুম চোখে জবাব দেয়, কী কথা?

    ‘আলমিরার ৩ নাম্বার ড্রয়ারের চাবি ১ নাম্বার ড্রয়ারে রাখা আছে।’

    ‘সেটা বলার জন্য ঘুম থেকে জাগাতে হয়?’

    ‘হ্যাঁ হয়। কারণ একটু পর আমি মারা যাব।’

    এলেক্সি বিরক্তি নিয়ে ঘুমাবার চেষ্টা করে। একটু পর আবার জাগিয়ে তোলে।

    ‘১ নাম্বার ড্রয়ারের চাবি ২ নাম্বার ড্রয়ারে রাখা।’

    ‘আচ্ছা। এবার একটু ঘুমোতে দাও।’

    কিন্তু ২ নাম্বার ড্রয়ারের চাবি কোথায় রাখা আছে সেটা না জানলে সমস্যায় পড়বে।’

    ‘কোথায় রাখা আছে? দাও চাবি আমার হাতে দাও।’

    ‘কীভাবে দিব? সেটা তো ৩ নাম্বার ড্রয়ারে। ‘একটা ড্রয়ার তো খোলা থাকার কথা।’

    ‘এক্সট্রা চাবি দিয়ে লাগানো।’

    ‘বাকিগুলোর এক্সট্রা চাবি কোথায়?’

    ‘৩ নাম্বার ড্রয়ারে।’

    ‘৩ নাম্বার ড্রয়ারের চাবি কোথায়?’

    ‘১ নাম্বার ড্রয়ারে।’

    ‘আচ্ছা আমাকে ঘুমাতে দাও। তুমিও ঘুমাও। সকালে তালা ওয়ালাকে খবর দিলেই হবে।

    ‘এখনই খবর দেয়া দরকার। সকাল পর্যন্ত আমার হাতে সময় নেই।’

    রাত ১টায় জিমি বাসা থেকে বের হয়। তালা-চাবি ওয়ালা কারো নাম্বার তার কাছে নেই। একজনকে চেনে, ঠিকানা খুঁজে বের করা যাবে। এলেক্সি তার এসব কর্মকাণ্ডের সাথে পরিচিত। সে বালিশে মাথা রাখে।

    ঘণ্টাখানেক পর কলবেলের শব্দে তার ঘুম ভাঙে। জিমি ফিরে আসে। নিজের সব কাপড় বের করে ফ্লোরে রাখতে শুরু করে। চাবির কথা সম্ভবত ভুলে গেছে।

    ‘এসব ধোয়া কাপড়। বের করছ কেন?’

    ‘পুড়িয়ে ফেলব।’

    ‘কেন?’

    ‘মানুষের শরীরের জিন তার কাপড়ে লেগে থাকে।

    ‘এতে সমস্যা কোথায়?’

    ‘সমস্যা কিছু না। এসবের আর দরকার হবে না।’

    ‘কী বলছ?’

    ‘একটু পর আমি মারা যাব। চলে যাওয়া মানে একেবারে চলে যাওয়া। প্রাচীন সাধকরা এই কাজটি করতেন।’

    এলেক্সি মহা বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘যা ইচ্ছে কর। আমাকে ঘুমাতে দাও।’

    জিমি একটা লাইটার দিয়ে কাপড়ে আগুন দেয়। ফ্যানের বাতাসে আগুন নিভে যায় কিন্তু নিভছে না। এলেক্সি ঘুমে তলিয়ে গেছে। সকালে উঠে দেখে জিমি পাশের রুমে, উলঙ্গ শরীরে সিলিং ফ্যানে ঝুলছে।

    ৩

    এলেক্সি প্রায় আমার বাসায় আসতে শুরু করে। বেশির ভাগ সময় আসত অফিস শেষ করে। কেন আসত, কেনই বা আমিও চাইতাম সে আসুক, সেটা বুঝে ওঠার আগেই অনেকগুলো ঘটনা খুব দ্রুত ঘটে গেল। বেশির ভাগ সময় সে জিমির কথা বলত। কী রকম একটা অপরাধবোধ তাকে গিলে ফেলে, রোদ যে রকম গিলে খায়, দূর্বাঘাসের জল।

    একদিন বললাম, ‘জিমির সুইসাইডের সাথে তোমার একটি যোগসূত্র আছে।’

    ‘কী রকম?’

    ‘সে বলেছিল, একটু পর মারা যাবে। তুমি তার কথা বিশ্বাস করোনি।’

    এলেক্সি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। মলিন গলায় বলল, ‘তুমি ঠিক বলেছ।’

    ‘নাকি বিশ্বাস করতে চাওনি?’

    ‘কী রকম?’

    ‘একটাই তো জীবন, তুমি একটু বাঁচতে চেয়েছিলে।’

    ‘আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম, পালাতে না।’

    ‘কিন্তু তুমি তাই করেছ।’

    ‘আমি তাই করেছি?’ এলেক্সি হতভম্ভ হয়ে জিজ্ঞাসা করে।

    ‘তুমি দেখছিলে সে কাপড়ে আগুন দিয়েছে। ঘুমাতে পারলে?’

    ‘কারণ তার মাথায় সমস্যা আছে। কখন কী বলে আর করে ঠিক নেই।’

    ‘এজন্য আরও বেশি না ঘুমানোর কথা।’

    এলেক্সি অসহায় বোধ করে। কিন্তু সে আমাকে থামাতে চাইছে না। আমার সাথে এই আলোচনা চালিয়ে নিতে চায়। যেন সত্যটা সে জানে, কিন্তু বিশ্বাস করে না।

    ‘সে নিশ্চয়ই তোমাকে বলেছিল, সুইসাইড করার কথা।’

    ‘সব সময় বলত।’

    ‘বিশ্বাস হতো না?’

    ‘অসংলগ্ন মনে হতো।’

    ‘তুমি মুক্তি চেয়েছিলে। তোমার পক্ষে তাকে ছেড়ে যাওয়া কঠিন কিন্তু তার পক্ষে তোমাকে ছেড়ে যাওয়া সহজ।’

    এলেক্সি চিৎকার করে ওঠে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মধ্য দিয়ে মানুষ এখন চেহারা দেখে আবেগ শনাক্ত করতে পারে। কিন্তু তাকে দেখে কিংবা তার এই চিৎকার শুনে সবকিছু খুব ঘোলাটে লাগে। তার নিজের কাছেও পরিষ্কার না।

    ‘এই যে তুমি আমার কাছে এসেছ, এর পেছনেও কারণ আছে।’

    ‘কী কারণ?’

    ‘আমাদের অবচেতন মন সব সময় বিকল্প একজনকে খুঁজে বেড়ায়।’

    জীবনে এমন কিছু সত্য আছে, মুখোমুখি না হলে অনুমান করা যায় না। এলেক্সি আমাকে এ রকম কিছু সত্যের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে। আমরা আমাদের কাছাকাছি মিলের জায়গাগুলো খোঁজার চেষ্টা করি।

    আমাদের পছন্দের রং, খাবার, বই, গল্প সব আলাদা। শুধু আমাদের সমুদ্র ছিল একই—অন্ধকার বালির বুকে দূর থেকে ছুটে আসে ঢেউ

    আমাদের একাকিত্ব আমাদের দুজনকে এক করার জন্য সহায়ক ছিল, কিন্তু আমাদের অতীত আমাদের আলাদা করার চেষ্টা করত। আমরা কথা বলতাম আমাদের প্রয়োজনে, কিন্তু আমাদের প্রয়োজন কী, সেটা আমরা জানতাম না।

    এলেক্সির সাথে একদিন বেড়াতে যাই, ৪০০ কিলোমিটার দূরে মিয়ামি বিচে। বে বিলভি থেকে ড্রাইভ করে যেতে সময় লাগে ৮ ঘণ্টা। ফেরার সময় আমরা যখন সমুদ্র থেকে বিদায় নিতে যাই, মনে হয়েছিল-একাকিত্বের অন্য কোন ধরনে, অন্য রকম কিছু সুখ-দুঃখের হিসেব মেলাতে আবার দেখা হবে।

    যখন সূর্যটা ডুবে যায়, আলোর রিফ্লেকশনে চোখে বিভ্রম হয়। মনে হলো, হঠাৎ করে সারা দুনিয়া সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সে আমার দিকে কেমন ফ্যাকাশে দৃষ্টিতে তাকায়। তার দৃষ্টি এমন, মনে হবে কিছু একটা বলছে কিংবা বলার কথা ভাবছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মনে হয় জিজ্ঞাসা করি, কী ভাবছে অথবা অপেক্ষা করি-যদি কিছু বলে।

    তারপর আরও কিছু সময় গড়িয়ে, চোখের পলক নেমে আসে। আমি তাকে আশ্বস্ত করি, আমরা আবার এখানে আসব।

    সে বলল, ‘অন্ধকারকে অভিশাপ দেওয়ার চেয়ে একটু মোমবাতি জ্বালানো ভালো।’

    ‘যদি আমার কাছে সেই মোম না থাকে?

    ‘তাহলে অন্য কারো কাছ থেকে ধার নেবে। ‘যদি তার কাছেও না থাকে?’

    ‘সেটা তাকে জিজ্ঞাসা করেছ?’

    ‘কে সে?’

    ‘জিজ্ঞাসা কর নিজেকে।’

    আমাদের একাকিত্ব আমাদের দুজনকে এক করার জন্য সহায়ক ছিল, কিন্তু একসাথে থাকার পরেও আমরা একা থাকব কিনা, এই প্রশ্নটি এলেক্সি একদিন আমাকে করে।

    আমি কোনো সদুত্তর দিতে পারিনি। বললাম, ‘তোমার কী মনে হয়?’

    সে বলল, ‘আমার অনুমান সব সময় ভুল হয়।’

    ‘আমরা যখন কারো দিকে তাকাই-চোখ, নাক, কানের ভিড়ে তাকে দেখি না।’

    ‘কেন দেখি না?’

    ‘পোশাক আর শরীরের মধ্যে বিরাট একটা ফারাক আছে।’

    ‘কী রকম ফারাক?’

    ‘আমরা হাত ধরে হাঁটি, হাতটা যার, তাকে ধরি না।’

    একটা বিশেষ কারণে আমাদের সবকিছু সুন্দর মনে হতো। প্রচণ্ড ভয়ের অমীমাংসিত রাতে, যখন তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতাম, দাবানলের সত্যকে কল্পনা মনে হতো। হঠাৎ দেখা স্বপ্নের মতো, সময় গড়ালে লীন হয়ে যায়।

    একদিন এলেক্সি আমাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যায়। শিকাগো শহরে একটি নদীর কাছাকাছি তার কবর। জিজ্ঞাসা করলাম, বাবা কোথায়? বলল, পোল্যান্ডে থাকে। সেখানে তার আরেকটা সংসার আছে।

    ফেরার সময় পিকাসোর একটি ভাস্কর্য দেখিয়ে বলল, ‘খুব ভালো করে তাকালে মনে হবে, এটি একটি কুকুর। আরও ভালো করে তাকালে মনে হবে এটি একটি মানুষ।’

    ‘যদি উল্টোটা মনে হয়?’

    এলেক্সি চুপ করে থাকে।

    আমি বললাম, ‘কোনটা বেশি ভুল? একটা জন্তুকে মানুষ মনে করা নাকি একটা মানুষকে জন্তু মনে করা?’

    ‘প্রথমটিতে তুমি ভুল বুঝবে, দ্বিতীয়টিতে তোমাকে ভুল বুঝবে।’

    ৪

    গত তিন মাস ধরে আমি আর এলেক্সি একসাথে আছি। আগামী শীতে আমরা বিয়ে করব। কী চাই, কেন চাই এর চেয়েও গুরুত্ব হয়ে ওঠে, আমাদের এই চাওয়া কিছু পাওয়ার জন্য না।

    প্রথম দিকে আমাদের একটু অসুবিধা হয়েছিল। ঘরের দেয়াল, চায়ের কাপ আর ফুলদানিতে আমরা নিজেরা আলাদাভাবে থাকতে পারছিলাম না। এঘর ওঘর থেকে বিথির ফেলে রাখা কাপড়, চিরুনি আর জুতা-ব্যাগ; সব সরিয়ে ফেলি।

    আমাদের প্রাত্যহিক যাপন সম্বন্ধে বলতে গেলে দুজনেই অফিস করি। ছুটির দিনে বেড়াতে যাই। মাঝে মাঝে আহিলকেও নিয়ে যাই। এলেক্সি তাকে পছন্দ করে। আহিল করে কিনা বুঝতে পারি না।

    আমরা নিজেদের প্রয়োজনে নিজেদের খুঁজে নিয়েছি। কখনো প্রয়োজন মনে না করলে আবার হারিয়ে যাব কিনা, এই প্রশ্নটি একদিন এলেক্সি আমাকে করে।

    আমি বললাম, ‘তোমার কী মনে হয়?’

    সে বলল, ‘আমার আত্মাকে সুখী কর, কিন্তু তোমার সুখ আলাদা করে না।’

    আমি তাকে কোনো সদুত্তর দিতে পারিনি। আমার নিজস্ব ভাবনা আর সেই ভাবনার প্রতি আমার বিশ্বাস, এটুকুর ওপর ভর দিয়ে এত ভারী বস্তু আমি আলগাতে পারব না।

    আমি তাকে সেই সত্যটা বলি, যে সত্য আমি জানি। কিন্তু আমি যা জানি তা সত্য নাও হতে পারে।

    ৫

    পরদিন সকাল ৭টা ১০ মিনিটে বিথির দরজায় কড়া নাড়ি। চোখের নিচের কালো দাগ আরও তীক্ষ্ণ হয়েছে। বলল, ‘একটু অপেক্ষা কর আহিল ঘুমোচ্ছে।’

    বিথি উঠে গিয়ে আহিলকে ডাকতে গেছে। মিনিট দশেক বসে আছি। দেয়ালের ছবিগুলোর দিকে নতুন করে তাকানোর কিছু নেই। আরও কিছুক্ষণ পর বিথি চা নিয়ে আসে।

    ‘ঘরে কেক আছে, দেব?’

    ‘আমি কিছু খাব না।’

    বেশির ভাগ সময় এ রকম হয়, আমরা কোনো কথা না বলে চুপ করে বসে থাকি। আহিল এলে যেন প্রাণ ফিরে পাই।

    আমাদের বিয়ে হয়েছিল দশ বছর আগে। হাতে তেমন টাকাপয়সা নেই। তবু নিয়ে গিয়েছিলাম হোটেল ম্যারিয়টে। আমাদের প্রথম রাত, ম্যারিয়টের ত্রিভুজ ব্যালকনি, ওয়াইন আর গোলাপের মধ্যে আশ্চর্য এক মিলন ঘটে।

    আমি তখন একটা কফি শপে চাকরি করি। বিথি মাঝে মাঝে সেখানে এসে বসে থাকত। সেখান থেকে চলে আসা ফ্লোরিডায়, মাঝে একবার দেশে। বাবা বেঁচে ছিলেন যতদিন, সে একবারই তাকে কাছ থেকে দেখেছিল।

    আমাদের সম্পর্ক যেন শেষ হয়েছে মাঝ রাস্তায়, গাড়ির একটা চাকা নষ্ট হবার মধ্য দিয়ে। সেটাকে সারিয়ে তোলার একটা চেষ্টা আমরা দুজনেই করেছিলাম।

    বিথি সব সময় বলত, সম্পর্কের কোনো শেষ নেই, ভালোবাসায় শেষ আছে।

    সে ঠিকই বলেছিল, আমরা দুজন আমাদের অমিলগুলোকে সম্মান করেছিলাম। আমাদের করুণ পরিণতি হয়েছিল মন খারাপ করা রাতে। কথার পর কথা, একটু বিরতি, ঠান্ডা করে চা আবার গরম করা, একটু শ্বাসকষ্ট।

    বিথির চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। টেবিলে টিফিন বক্স। তার হাতে ছুরি। বাটার মেশায়।

    আমি বললাম, ‘তোমাকে আজকাল খুব চিন্তিত মনে হয়।’

    ‘সেটা তোমার চিন্তা না।’

    ‘কিন্তু তুমি বলেছিলে, সম্পর্কের কোনো শেষ নেই।’

    ‘ভুল বলেছিলাম।’

    ‘কোনটা ঠিক?’

    ‘সম্পর্কের শেষ আছে।’

    বলেই সে কী সুন্দর করে হাসতে লাগল। এক মুহূর্তের জন্য আমাদের দূরত্ব কমতে শুরু করে। কখন চা ঠান্ডা হয়ে গেছে টের পাইনি। আধখানা বিস্কুট চায়ের সাথে ভাসছে। একটা চামচ দিয়ে সেটাকে নেবার চেষ্টা করছি, আহিল ছুটে এসে চুমো খায় গালে।

    আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে লেকের পাশ দিয়ে। আহিল বসে আছে জানালার দিকে মুখ করে। আমাদের এই আলাদা হবার গল্প তাকে বোঝানো হয়েছে এভাবে যে এখন থেকে আমাদের দুটা বাসা।

    সে জিজ্ঞাসা করে, ‘দুটা বাসা কেন?’

    ‘একটা আমার অফিস থেকে কাছে, আরেকটা তোমার স্কুল থেকে।’

    ‘আমরা আবার কবে একসাথে থাকব?’

    আমার মিথ্যে কথা বলতে ভালো লাগে না। কিন্তু আমি কেন বারবার মিথ্যা বলি? বিথিও কেন বলে? আমরা দুজনেই কি মনে মনে চাইছি আমাদের মিথ্যে সত্য হোক?

    ৬

    আহিলকে স্কুলে দিয়ে এসে সকাল ৯টায় ঘরে ফিরি। এলেক্সি সকাল সকাল গান শুনছে। যেন বব ডিলান হাত নেড়ে বলছে…

    দুশো মাইল হেঁটেছি আমি, দেখ
    দৌড় শেষ হয়ে গেল, চাঁদ অধরা।
    কী আসে যায়, কে কাকে ভালোবাসে
    যখন আকাশ থেকে রাত্রি নেমে আসে।

    বললাম, তোমার সাথে খুব জরুরি কথা আছে।’

    এলেক্সি শান্ত হয়ে বসে।

    ‘আমি বুঝতে পারছি না, আমার কী করা উচিত?’

    ‘যা তুমি চাইছ।’

    ‘কিন্তু আমি কী চাই, সেটা জানি না।’

    এলেক্সি নির্বিকার গলায় বলল, ‘সেটা তুমি আগেও জানতে না।’

    ‘এখন জানতে চাই। তুমি আমাকে সাহায্য কর।

    ‘আমি কীভাবে সাহায্য করব?’

    ‘কারণ আমি আমাকে বুঝতে পারছি না।’

    ‘তাহলে আমাকে বুঝবে কী করে?’

    ‘তোমাকে বিশ্বাস করি। নিজের ওপর বিশ্বাস নেই।’

    ‘কেন নেই?’

    ‘কারণ আমি বারবার ভুল করি। আর প্রতিবার ভুলকে সঠিক মনে করি। সেটা আরেকটা ভুল।’

    ‘নিজের ওপর বিশ্বাস নেই, কথাটা আসলে ঠিক না।’

    ‘কেন?’

    ‘তোমার বিশ্বাস পরিবর্তন হয়। কিন্তু তুমি সেই পরিবর্তন মানতে পারো না।’

    ‘আমার কী করা উচিত?’

    ‘বললেই তো না, কী ব্যাপারে।’

    ‘আমাদের বিয়ে নিয়ে। ‘ ‘কনফিউজড?’

    ‘এজন্যই তোমার কাছে এসেছি। আমি কী করব বুঝতে পারছি না।’

    ‘কবে থেকে এরকম হচ্ছে?’

    ‘জানি না।’

    বলেই আমি অবাক হয়ে গেছি। আমি তাকে মিথ্যে বলেছি। ‘কবে থেকে আমার এ রকম হচ্ছে, আমি জানি। কিন্তু তাকে জানাতে চাইছি না। অর্থাৎ এই যে আমি তাকে সব বলব বলে মনস্থির করেছি, এখানেও ফাঁকি আছে।

    আহিল সব সময় জানতে চায়, আমরা কবে একসাথে থাকব। আমি তাকে মিথ্যা বলতাম, যখন পাতা জন্মাবে। সমস্যা এটা না যে আমি মিথ্যা বলেছি। সমস্যা হলো, মিথ্যে বলার সময় কোনো কোনোদিন সত্য মনে হতো।

    তখন আমি ফের কল্পনা করি, সত্য হলে কেমন হবে? বিথির চোখ ভেসে আসে। চোখের নিচে গর্ত হয়ে গেছে, ছোট খালের মতো।

    বাইরে থেকে ছোট খাল, ভেতরে সমুদ্র। আমি সেই সমুদ্রে আমাকে সাঁতার কাটতে দেখি। আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় উদ্ধারকারী জাহাজ। একেক সময় একেক রকম অনুভূতি কাজ করে। কখনো নিজেকে উদ্ধারকারী মনে হয়। বিথিকে মনে হয় আপ্রাণ চেষ্টা করছে বাঁচার। আমার সামনে ডুবে যায় বিথির গলা থেকে চিবুক। তারপর যখন চোখ ছোট হয়ে আসে, চিন্তাটা বদলে যায়। মনে হয়, এসব সত্য না। আমি মিথ্যে বলছি। পাতা জন্মালেও

    আমরা আর একসাথে থাকব না। কখনো না।

    এলেক্সি জিজ্ঞাসা করে, ‘তোমার আর কী মনে হয়?’

    ‘অনেক কিছু মনে হয়। আমি বুঝিয়ে বলতে পারব না।’

    এলেক্সির কথা মনে এলে অন্য একটা সমুদ্র চোখের সামনে ভাসে। সূর্য ডুবে গেলে যখন সব বিভ্রম, বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে আমি তাকে আশ্বস্ত করছি, সুখী হতে চাই কিন্তু তোমার সুখ আলাদা করে না।

    কখনো প্রয়োজন মনে না করলে আবার হারিয়ে যাব কিনা, এই প্রশ্নটির জবাব দেবার সময় হয়েছে।

    বললাম, ‘আমি তোমাকে ফিরে পেতে চাই।’

    ‘ফিরে গিয়েছিলে নাকি?’

    ‘একটু।’

    ‘কখন?’

    ‘আহিলকে একটা মিথ্যা কথা বলতে গিয়ে। সব সময় না, মাঝে মাঝে।’

    ‘মানে?’

    ‘সমস্যা এই না যে আমি মিথ্যা বলছি, সমস্যা হলো আমি সত্য মনে করছি।’

    ‘মিথ্যাটা কী?’

    ‘সেটা তোমাকে বলব না।’

    ‘লুকোচ্ছ কিছু?’

    ‘নাহলে দম আটকে মারা যাব।

    এলেক্সি উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বিয়েতে সে শাড়ি পরবে ঠিক করেছে। আমি বললাম, ‘তুমি তো শাড়ি পরতে পারো না।’

    ‘শিখে ফেলব।’

    এলেক্সি হাসতে থাকে। তার এই হাসি অমলিন থাকুক।

    ৭

    এরপর অনেকদিন হয়ে গেল। রাস্তার দুধারে নতুন পাতা জন্মেছে। পা মাড়িয়ে শোনা যায় না শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি। রোজ স্কুলে যাবার পথে আহিল আর জিজ্ঞাসা করে না, কবে আমরা একসাথে থাকব।

    সে কি সত্যটা জেনে গেছে? এখানে এখন বিকেলে সূর্যাস্ত হয়। আহিল এখন আর সূর্যাস্তের জন্য অপেক্ষা করে না। যে সূর্য ডুবে গেছে, আগামীকাল সে আবার উঠবে। শুধু থেকে যাবে আজ রাতের অন্ধকার।

    1 2 3 4 5 6 7
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশেষ – জুনায়েদ ইভান
    Next Article শব্দযাত্রা লেখক সংঘ – জুবায়ের আলম

    Related Articles

    জুনায়েদ ইভান

    শেষ – জুনায়েদ ইভান

    August 14, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.