Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025

    অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স ও অন্যান্য প্রসঙ্গ – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025

    আলস্যের জয়গান – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অপরাজিত – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    উপন্যাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এক পাতা গল্প563 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১০. আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি

    দশম পরিচ্ছেদ

    আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সব কলেজ খুলিয়া গেল, অপু কোনও কলেজে ভর্তি হইল না। অধ্যাপক মিঃ বসু তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইয়া ইতিহাসে অনার্স কোর্স লওয়াইতে যথেষ্ট চেষ্টা করিলেন! অপু ভাবিল—কি হবে আর কলেজে পড়ে? সে সময়টা ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরিতে কাটাব, বি.এ.-র ইতিহাসে এমন কোন নতুন কথা নেই যা আমি জানি নে। ও দু-বছর মিছিমিছি নষ্ট, লাইব্রেরিতে তার চেয়ে অনেক পড়ে ফেলতে পারব এখন। তা ছাড়া ভর্তির টাকা, মাইনে, এ সব পাই বা কোথায়?

    একটা কিছু চাকুরি না খুঁজিলে চলে না। খবরের কাগজ ক্রিয়ের পুঁজি অনেকদিন ফুরাইয়া গিয়াছে, মায়ের মৃত্যুর পর সে কাজে আর উৎসাহ নাই। একটা ছোট ছেলে পড়ানো আছে, তাতে শুধু দুটো ভাত খাওয়া চলে দু-বেলা–কোনমতে ইকমিক কুকারে আলুসিদ্ধ, ডালসিদ্ধ ও ভাত। মাছ, মাংস, দুধ, ডাল, তরকারি তো অনেকদিন-আগে-দেখা স্বপ্নের মতো মনে হয়—যাক সে-সব, কিন্তু ঘর-ভাড়া, কাপড়জামা, জলখাবার, এসব চলে কিসে? তাহা ছাড়া অপুর অভিজ্ঞতা জন্মিয়াছে যে, কলিকাতায় ছেলে-পড়ানো বাবার মুখে শৈশবে শেখা উদ্ভট শ্লোকের পদ্মপস্থিত জলবিন্দুর মতো চপল, আজ যদি যায় কাল দাঁড়াইবার স্থান নাই!

    কয়েকদিন ধরিয়া খবরের কাগজ দেখিয়া দেখিয়া পাইওনিয়ার ড্রাগ স্টোর্সে একটা কাজ খালি দেখা গেল দিনকতক পরে। আমহার্স্ট স্ট্রেটের মোড়া বড়ো দোকান, পিছনে কারখানা, তখনও ভিড় জমিতে শুরু হয় নাই, অপু ঢুকিয়াই এক স্থূলকায় আধাবয়সি ভদ্রলোকের একেবারে সামনে পড়িল। ভদ্রলোক বলিলেন, কাকে চান?

    অপু লাজুক মুখে বলিল—আজ্ঞে, চাকরি খালির বিজ্ঞাপন দেখে—তাই

    –ও! আপনি ম্যাট্রিক পাশ?

    —আমি এবার আই.এ.–

    ভদ্রলোক পুনরায় কিয়ায় ভর দিয়া হাল ছাড়িয়া দিবার সুরে বলিলেন–ও আই.এ. পাশ নিয়ে আমরা কি করব, আমাদের লেবেলিং ও মাল বটলিং করার জন্য লোক চাই। খাটুনিও খুব, সকাল সাতটা থেকে সাড়ে দশটা, মধ্যে দেড় ঘন্টা খাবার ছুটি, আবার বারোটা থেকে পাচটা, কাজের চাপ পড়লে রাত আটটাও বাজবে–

    -মাইনে কত?

    —আপাতত পনেরো, ওভারটাইম খাটলে দু-আনা জলখাবার–সে-সব আপনাদের কলেজের ছোকরার কাজ নয় মশায়—আমরা এমনি মোটামুটি লোক চাই!

    ইহার দিনকতক পর আর একটা চাকুরি খালির বিজ্ঞাপন দেখিয়া গেল ক্লাইভ স্ট্রীটে। দেখিল, সেটা একটা লোহা-লক্কড়ের দোকান, বাঙালি ফার্ম। একজন ত্রিশ-বত্রিশ বছরের অত্যন্ত চুল ফাঁপানো, টেরিকাটা লোক ইস্ত্রিকরা কামিজ পরিয়া বসিয়া আছে, মুখের নিচের দিকের গড়নে একটা কর্কশ ও স্থূল ভাব, এমন ধরনের চোখের ভাবকে সে মাতাল ও কুচরিত্র লোকের সঙ্গে মনে মনে জড়িত করিয়া থাকে। লোকটি অত্যন্ত অবজ্ঞার সুরে বলিল—কি, কি এখানে?

    অপুর নিজেকেই অত্যন্ত ছোট বোধ হইল নিজের কাছে। সে সংকুচিত সুরে বলিল—এখানে একটা চাকরি খালি দেখে আসছি।

    লোকটার চেহারা বড়োলোকের বাড়ির উজ্জ্বল, অসচ্চরিত্র, বড়ো ছেলের মতো। পূর্বে এধরনের চরিত্রের সহিত তাহার পরিচয় হইয়াছে, লীলাদের বাড়ি বর্ধমানে থাকিতে। এই টাইপটা সে চেনে।

    লোকটা কর্কশ সুরে বলিল—কি করো তুমি?

    —আমি আই.এ. পাশ করি নে কিছু—আপনাদের এখানে–

    —টাইপরাইটিং জানো? না?—যাও যাও, এখানে না-ও কলেজ-টলেজ এখানে চলবে—যাও–

    সেদিনকার ব্যাপারটা বাসায় আসিয়া গল্প করাতে ক্যাম্বেল স্কুলের ছাত্রটির এক কাকা বলিলেন—ওদের আজকাল ভারি দেমাক, যুদ্ধের বাজারে লোহার দোকানদার সব লাল হয়ে যাচ্ছে, দালালেরা পর্যন্ত দু-পয়সা করে নিলে।

    অপু বলিল-দালাল আমি হতে পারি নে?

    -কেন পারবেন না, শক্তটা কি? আমার শ্বশুর একজন বড়ো দালাল, আপনাকে নিয়ে যাব একদিন—সব শিখিয়ে দেবেন, আপনাদের মতো শিক্ষিত ছেলে তো আরও ভালো কাজ করবে

    মহা-উৎসাহে ক্লাইভ স্ট্রীট অঞ্চলে লোহার বাজারে দালালি করিতে বাহির হইয়া প্রথম দিনচার-পাঁচ ঘোরাঘুরিই সার হইল; কেহ ভালো করিয়া কথাও বলে না, একদিন একজন বড়া দোকানী জিজ্ঞাসা করিল,—বোলটু আছে? পাঁচ ইঞ্চি পাঁচ জ? অপু বোলটু কাহাকে বলে জানে না, কোন্ দিকের মাপ পাঁচ ইঞ্চি পাঁচ জ তাহাও বুঝিতে পারিল না। নোটবুকে টুকিয়া লইল, মনে মনে ভাবিল,

    একটা অর্ডার তো পাইয়াছে, খুঁজিবার মতোও একটা কিছু জুটিয়াছে এতদিন পরে।

    পাঁচ ইঞ্চি পাঁচ জ বোলটু এ-দোকান ও-দোকান দিনচারেক বৃথা খোঁজাখুঁজির পর তাহার ধারণা পৌঁছল যে, জিনিসটা বাজারে সুলভপ্রাপ্য নয় বলিয়াই দোকানী এত সহজে তাহাকে অর্ডার দিয়াছিল। একদিন একজন দালাল বলিল—মশাই সওয়া ইঞ্চি ঘেরের সীসের পাইপ দিতে পারেন জোগাড় করে আড়াই শো ফুট? যান না, অর্ডারটা নিয়ে আসুন এই পাশেই ইউনাইটেড মেশিনারি কোম্পানির অফিস থেকে।

    পাশেই খুব বড়ো বাড়ি। অফিসের লোকে প্রথমে তাহাকে অর্ডার দিতে চায় না, অকুশেষে জিজ্ঞাসা করিল-মাল আমাদের এখানে ডেলিভারি দিতে পারবেন তো?…

    এ কথার মানে ঠিক না বুঝিয়াই সে বলিল—হাঁ দিতে পারব।

    বহু খুঁজিয়া কলেজ স্ট্রীটের যে দোকান হইতে মাল বাহির হইল, তাহারা মাল নিজের খরচে কোথাও ডেলিভারি দিতে রাজি নয়, অপু নিজের ঘাড়ে ঝুঁকি লইয়া গরুর গাড়িতে সীসার পাইপ বোঝাই দেওয়াই-রাজা উডমান্ড স্ট্রীটে দুপুর রোদ্রে মাল আনিয়া হাজিরও করিল। ইউনাইটেড মেশিনারি কিন্তু গাড়ির ভাড়া দিতে একদম অস্বীকার করিল, মাল তো এখানে ডেলিভারি দিবার কথা ছিল, তবে গাড়ি-ভাড়া কিসের? অপু ভাবিল, না হয় নিজের দালালির টাকা হইতে গাড়ি ভাড়াটা মিটাইয়া দিবে এখন। এখন কাজে নামিয়া অভিজ্ঞতাটাই আসল, না-ই বা হইল বেশি লাভ।

    সে বলিল—আমার ব্রোকারেজটা?

    -সে কি মশাই, আপনি সাড়ে পাঁচ আনা ফুটে দর দিয়েছেন, আপনার দালালি নেন নি? তা কখনও হয়–

    অপু জানে না যে, প্রথম দর দিবার সময় তাহার মধ্যে দালালি ধরিয়া দিবার নিয়ম, সবাই তাহা দিয়া থাকে, সেও যে তাহা দেয় নাই, এ কথা কেহই বিশ্বাস করিল না। বার-বার সেই কথা তাহাদের বুঝাইতে গিয়া নিজের আনাড়িপনাই বিশেষ করিয়া ধরা পড়িল। সীসার পাইপওয়ালা গোমস্তা তাহাদের বিল বুঝিয়া পাইয়া চলিয়া গেল—তিনদিন ধরিয়া রৌদ্রে ছুটাছুটি ও পরিশ্রম সার হইল, একটি পয়সাও তাহাকে দিল না কোন পক্ষই। খোট্টা গাড়োয়ান পথ বন্ধ করিয়া দাঁড়াইয়া বলিল–হামারা ভাড়া কৌন দেগা?

    একজন বৃদ্ধ মুসলমান দালানের এক পাশে দাঁড়াইয়া ব্যাপার দেখিতেছিল, অপু অফিস হইতে বাহিরে আসিলেই সে বলিল, বাবু, আপনি কতদিন এ কাজে নেমেছেন কাজ তো কিছুই জানেন না দেখছি–

    অপুকে সেকথা স্বীকার করিতে হইল। লোকটি বলিল–আপনি লেখাপড়া জানেন, ও-সব খুচরা কাজ করে আপনার পোষাবে না। আপনি আমার সঙ্গে কাজে নামবেন?-বড়ো মেশিনারির দালালি, ইঞ্জিন, বয়লার এই সব। এক-একবারে পাঁচশো সাতশো টাকা রোজগার হবেবাবু ইংরেজি জানি নে তাই, তা যদি জানতাম, বাজারে এতদিন গুছিয়ে…নামবেন আমার সঙ্গে?

    অপু হাতে স্বর্গ পাইয়া গেল। গাড়োয়ানকে ভাড়াটা যে দণ্ড দিতে হইল, আনন্দের আতিশয্যে সেটাও গ্রাহের মধ্যে আনিল না। মুসলমানটির সঙ্গে তাহার অনেকক্ষণ কথাবার্তা হইল—অপু নিজের বাসার ঠিকানা দিয়া দিল। স্থির হইল, কাল সকাল দশটার সময় এইখানে লোকটি তাহার অপেক্ষা করিবে।

    অপু রাত্রে শুইয়া মনে মনে ভাবিল—এতদিন পরে একটা সুবিধে জুটেছে,—এইবার হয়তো পয়সার মুখ দেখবো।

    কিন্তু মাসখানেক কিছুই হইল না—একদিন দালালটি তাহাকে বলিল—দুটোর পর আর বাজারে থাকেন না, এতে কি হয় কখনও বাবু? যান কোথায়?

    অপু বলিল, ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরিতে পড়তে যাই—দুটো থেকে সাতটা পর্যন্ত থাকি। একদিন যেয়ো, দেখাবো কত বড়ো লাইব্রেরি।

    লাইব্রেরিতে ইতিহাস খুব আগ্রহের সঙ্গে পড়ে, কোন এক দরিদ্র ঘরের ছোট ছেলের কাহিনী পড়িতে বো ইচ্ছা যায়, সংসারে দুঃখকষ্টের সঙ্গে যুদ্ধ—তাহাদের জীবনের অতি ঘনিষ্ঠ ধরনের সংবাদ জানিতে মন যায়।

    মানুষের সত্যকার ইতিহাস কোথায় লেখা আছে? জগতের বড়ো ঐতিহাসিকদের অনেকেই যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রাজনৈতিক বিপ্লবের ঝাঝে, সম্রাট, সম্রাজ্ঞী, মন্ত্রীদের সোনালি পোশাকের জাঁকজমকে, দরিদ্র গৃহস্থের কথা ভুলিয়া গিয়াছেন। পথের ধারের আমগাছে তাহাদের পুঁটুলিবাঁধা ছাতু কবে ফুরাইয়া গেল, সন্ধ্যায় ঘোড়ার হাট হইতে ঘোড়া কিনিয়া আনিয়া পল্লীর মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকের ছেলে তাহার মায়ের মনে কোথায় আনন্দের ঢেউ তুলিয়াছিল—ছহাজার বছরের ইতিহাসে সে-সব কথা লেখা নাই—থাকিলেও বড়ো কম-রাজা যযাতি কি সম্রাট অশোকের শুধু রাজনৈতিক জীবনের গল্প সবাই শৈশব হইতে মুখস্ত করে কিন্তু ভারতবর্ষের, গ্রীসের, রোমের যব, গম ক্ষেতের ধারে, ওলিভ, বন্যদ্রাক্ষা, মার্টল ঝোপের ছায়ায় ছায়ায় যে প্রতিদিনের জীবন হাজার হাজার বছর ধরিয়া প্রতি সকালে সন্ধ্যায় যাপিত হইয়াছে তাহাদের সুখ-দুঃখ আশা-নিরাশার গল্প, তাহাদের বুকের স্পন্দনের ইতিহাস সে জানিতে চায়।

    কেবল মাঝে মাঝে এখানে ওখানে ঐতিহাসিকদের লেখা পাতায় সম্মিলিত সৈন্যবহের এই আড়ালটা সরিয়া যায়, সারি বাধা বর্শার অরণ্যের ফাঁকে দূর অতীতের এক ক্ষুদ্র গৃহস্থের ছোট বাড়ি নজরে আসে। অজ্ঞাতনামা কোন লেখকের জীবন-কথা, কি কালের স্রোতে কুলে-লাগা এক টুকরা পত্র, প্রাচীন মিশরের কোন্ কৃষক পুত্রকে শস্য কাটিবার কি আয়োজন করিতে লিখিয়াছিল, বহু হাজার বছর পর তাহাদের টুকরা ভূগর্ভে প্রোথিত মৃন্ময়পাত্রের মতো দিনের আলোয় বাহির হইয়া আছে।

    কিন্তু আরও ঘনিষ্ঠ ধরনের, আরও তুচ্ছ জিনিসের ইতিহাস চায় সে। মানুষ মানুষের বুকের কথা জানিতে চায়। আজ যা তুচ্ছ, হাজার বছর পরে তা মহা-সম্পদ। ভবিষ্যতের সত্যকার ইতিহাস হইবে এই কাহিনী, মানুষের মনের ইতিহাস, তার প্রাণের ইতিহাস।

    আর একটা দিক তাহার চোখে পড়ে। একটা জিনিস বেশ স্পষ্ট হইয়া উঠে তাহার কাছে মহাকালের এই মিছিল। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের ইতিহাস গিবন ক্রমশূন্য লিখিয়াছেন, কি অন্য কেহ ভ্রমশূন্য লিখিয়াছেন, এ বিষয়ে তাহার তত কৌতূহল নাই, সে শুধু কৌতূহলাক্রান্ত মহাকালের এই বিরাট মিছিলে। হাজার যুগ আগেকার কত রাজা, রানী, সম্রাট, মন্ত্রী, খোজা, সেনাপতি, বালক, যুবা, কত অশ্রুনয়না তরুণী, কত অর্থলিন্দু রাজপুরুষ—যাহারা অর্থের জন্য অন্তরঙ্গ বন্ধুর গুপ্ত কথা প্রকাশ করিয়া তাহাকে ঘাতকের কুঠারের মুখে নিক্ষেপ করিতে দ্বিধা বোধ করে নাই—অনন্ত কালসমুদ্রে ইহাদের ভাসিয়া যাওয়ার, বুদ্বুদের মতো মিলাইয়া যাওয়ার দিকটা। কোথায় তাহাদের বৃথা শ্রমের পুরস্কার, তাহাদের অর্থলিপ্সার সার্থকতা?

     

    এদিকে ছুটাছুটিই সার হইতেছে কাজ কিছুই হয় না। সে তো চায় না বড়োমানুষ হইতে খাওয়া-পরা চলিয়া গেলেই সে খুশি—পড়াশুনা করার সে সময় পায় ও নিশ্চিন্ত হইতে পারে। কিন্তু তাও তো হয় না, টুইশানি না থাকিলে একবেলা আহারও জুটিত না যে। তা ছাড়া এ সব জায়গার আবহাওয়াই তাহার ভালো লাগে না আদৌ। চারিধারে অত্যন্ত হুঁশিয়ারি, দর-কষাকষি…শুধু টাকা…টাকা…টাকা-সংক্রান্ত কথাবার্তা—-লোকজনের মুখে ও চোখের ভাবে ইতর ও অশোভন লোভ যেন উগ্রভাবে ফুটিয়া বাহির হইতেছে—এদের পাকা বৈষয়িক কথাবার্তায় ও চালচলনে অপু ভয় খাইয়া গেল। লাইব্রেরির পরিচিত জগতে আসিয়া সে হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচে প্রতিদিন।

    একদিন মুসলমান দালালটি বাজারে তাহার কাছে দুইটি টাকা ধার চাহিল। বড়ো কষ্ট যাইতেছে, পরের সপ্তাহেই দিয়া দিবে এখন। অপু ভাবিল—হয়তো বাড়িতে ছেলেমেয়ে আছে, রোজগার নাই এক পয়সা। অর্থাভাবের কষ্ট যে কি সে তাহা ভালো করিয়াই বুঝিয়াছে এই দুই বৎসর—নিজের বিশেষ স্বাচ্ছন্দ্য না থাকিলেও একটি টাকা বাসা হইতে আনিয়া পরদিন বাজারে লোকটাকে দিল।

    ইহার দিন সাতেক পর অপু সকালে ঘুম ভাঙিয়া উঠিয়া ঘরের দোরে কাহার ধাক্কার শব্দ পাইল, দোর খুলিয়া দেখিল-মুসলমান দালালটি হাসিমুখে দাঁড়াইয়া।

    —এসো, এসো আবদুল, তারপর খবর কি?

    —আদাব বাবু, চলুন, ঘরের মধ্যে বলি। এ-ঘরে আপনি একলা থাকেন, না আর কেউ–ওঃ—কেশ ঘর তো বাবু।

    –এসো-বসো। চা খাবে?

    চা-পানের পর আবদুল আসিবার উদ্দেশ্য বলিল। বারাকপুরে একটা বড়ো বয়লারের সন্ধান পাওয়া গিয়াছে, ঠিক সেই ধরনের বয়লারেরই আবার এদিকে একটা খরিদ্দার জুটিয়া গিয়াছে, কাজটা লাগাইতে পারিলে তিনশো টাকার কম নয়—একটা বড় দাও। কিন্তু মুশকিল দাঁড়াইয়াছে এই যে, এখনই বারাকপুরে গিয়া বয়লারটি দেখিয়া আসা দরকার এবং কিছু বায়না দিবারও প্রয়োজন আছে—অথচ তাহার হাতে একটা পয়সাও নাই। এখন কি করা?

    অপু বলিল—খদ্দের মাল ইনস্পেকশনে যাবে না?

    –আগে আমরা দেখি, তবে তো খদ্দেরকে নিয়ে যাব?—দেড় পার্সেন্ট করে ধরলেও সাড়ে চারশো টাকা থাকবে আমাদের—খদ্দের হাতের মুঠোয় রয়েছে—আপনি নির্ভাবনায় থাকুন—এখন টাকার কি করি?

    অপু পূর্বদিন টুইশানির টাকা পাইয়াছিল, বলিল–কত টাকার দরকার? আমি তো ছেলেপড়ানোর মাইনে পেয়েছি কত তোমার লাগবে বলে।

    হিসাবপত্র করিয়া আট টাকা পড়িবে দেখা গেল। ঠিক হইল-আবদুল এবেলা বয়লার দেখিয়া আসিয়া ওবেলা বাজারে অপুকে খবর দিবে। অপু বাক্স খুলিয়া টাকা আনিয়া আবদুলের হাতে দিল।

    বৈকালে সে পাটের এক্সচেঞ্জের বারান্দাতে বেলা পাঁচটা পর্যন্ত আগ্রহের সহিত আবদুলের আগমন প্রতীক্ষা করিল। আবদুল সেদিন আসিল না, পরদিনও তাহার দেখা নাই। ক্রমে একে একে সাত-আটদিন কাটিয়া গেল—কোথায় আবদুল? সারা বাজার ও রাজা উডমান্ড স্ট্রীটের লোহার দোকান আগাগোড়া খুঁজিয়াও তাহার সন্ধান মিলিল না। ক্লাইভ স্ট্রীটের একজন দোকানদার শুনিয়া বলিল—কত টাকা নিয়েছে আপনার মশাই! আবদুল তো! মশাই জোচ্চোরের ধাড়ি—আর টাকা পেয়েছেন,—টাকা নিয়ে সে দেশে পালিয়েছে—আপনিও যেমন!…

    প্রথমে সে বিশ্বাস করিল না। আবদুল সে রকম মানুষ নয়, তাহা ছাড়া এত লোক থাকিতে তাহাকে কেন ঠকাইতে যাইবে?

    কিন্তু এ ধারণা বেশিদিন টিকিল না! ক্ৰমে জানা গেল আবদুল দেশে যাইবে বলিয়া যাহার কাছে সামান্য যাহা কিছু পাওনা ছিল, সব আদায় করিয়া লইয়া গিয়াছে দিন সাতেক আগে! কাটাপেরেকের দোকানের বৃদ্ধ বিশ্বাস মহাশয় বলিলেন—আশ্চয্যি কথা মশাই, সবাই জানে আবদুলের কাণ্ডকারখানা আর আপনি তাকে চেনেন নি দু-তিন মাসেও? রাধে-কৃষ্ট! বেটা জুয়াচোরের ধাড়ি, হার্ডওয়ারের বাজারে সবাই চিনে ফেলেছে, এখানে আর সুবিধে হয় না, তাই গিয়ে আজকাল জুটেছে মেশিনারির বাজারে। কোনও দোকানে তো আপনার একবার জিজ্ঞেস করাও উচিত ছিল। হার্ডওয়ারের দালালি করা কি আপনার মতো ভালোমানুষের কাজ মশাই? আপনার অল্প বয়স, অন্য কাজ কিছু দেখে নিন গে। এখানে কথা বেচে খেতে হবে, সে আপনার কর্ম নয়, তবুও ভালো যে আটটা টাকার ওপর দিয়ে গিয়েছে—

    আট টাকা বিশ্বাস মহাশয়ের কাছে যতই তুচ্ছ হউক অপুর কাছে তাহা নয়। ব্যাপার বুঝিয়া চোখে অন্ধকার দেখিল—গোটা মাসের ছেলে পড়ানোর দরুন সব টাকাটাই যে সে তুলিয়া দিয়াছে আবদুলের হাতে! এখন সারা মাস চলিবে কিসে! বাড়ি ভাড়ার দেনা, গত মাসের শেষে বন্ধুর কাছে ধার-এ সবের উপায়?

    দিশাহারা ভাবে পথ চলিতে চলিতে সে ক্লাইভ স্ট্রীটে শেয়ার মার্কেটের সামনে আসিয়া পড়িল। দালাল ও ক্রেতাদের চিৎকার, মাড়োয়ারিদের ভিড় ও ঠেলাঠেলি, থর্নিক্রফট ছআনা, নাগরমল সাড়ে পাঁচ আনা-বেজায় ভিড়, বেজায় হৈ-চৈ, লালদিঘির পাশ কাটাইয়া লাটসাহেবের বাড়ির সম্মুখ দিয়া সে একেবারে গড়ের মাঠের মধ্যে কেল্লার দক্ষিণে একটা নির্জন স্থানে একটা বড়ো বাদাম গাছের ছায়ায় আসিয়া বসিল।

    আজই সকালে বাড়িওয়ালা একবার তাগাদা দিয়াছে, কাপড় একেবারে নাই, না কুলাইলেও ছেলে পড়ানোর টাকা হইতে কাপড় কিনিবে ঠিক করিয়াছিল, রুম-মেট তো নিত্য ধারের জন্য তাগাদা করিতেছে। আবদুল শেষকালে এভাবে ঠকাইল তাহাকে? চোখে তাহার জল আসিয়া পড়িল-দুঃখদিনের সাথী বলিয়া কত বিশ্বাস যে করিত সে আবদুলকে।

    অনেকক্ষণ সে বসিয়া রহিল। ঝা ঝা করিতেছে দুপুর, বেলা দেড়টা আন্দাজ। কেহ কোন দিকে নাই, আকাশ মেঘমুক্ত, দূরপ্রসারী নীল আকাশের গায়ে কালো বিন্দুর মতো চিল উড়িয়া চলিয়াছেদূর হইতে দুরে, সেই ছেলেবেলার মতো—ছোট হইতে ক্রমে মিলাইয়া চলিয়াছে। একজন ঘেসেড়া বর্ষার লম্বা লম্বা ঘাস কাটিতেছে। হোট একটি খোট্টাদের মেয়ে ঝুড়িতে ঘুটে কুড়াইতেছে।…দুরে খিদিরপুরের ট্রাম যাইতেছে…গঙ্গার দিকে বড়ো একটা জাহাজের চোফোর্টের বেতারের মাস্তুল এক… দুই… তিন… চার… আকাশ কি ঘন নীল—এই তো চারিধারের মুক্ত সৌন্দর্য…এই কম্পমান শ্রাবণ দুপুরের খররৌদ্র… বিদ্যুৎ… সূর্য… রাত্রির তারা… প্রেম… মা… দিদি… অনিল… মাথার উপরে নিঃসীম নীল আকাশ…মৃত্যুপারের দেশ…চিররাত্রির অন্ধকারে যেখানে সাঁই সাঁই রবে ধূমকেতুর দল আগুনের পুচ্ছ দুলাইয়া উড়িয়া চলে—গ্রহ ছোটে, চন্দ্রসূর্য লাটিমের মতো আপনার বেগে আপনি ঘুরিয়া বেড়ায়…তুহিন শীতল ব্যোমপথে দূরে দূরে দেবলোকের মেরুপর্বতের ফাঁকে ফাঁকে তাহারা মিটমিট করে—এই পরিপূর্ণ মহিমার মধ্যে জন্ম লইয়া আটটা টাকা… তুচ্ছ আট টাকা… এ কোন বিচিত্র জগৎ!…কিসের থর্নিক্রফট আর নাগরমল?

    কখন বেলা পাচটা বাজিয়া গিয়াছিল, কখন একটু দূরে একটা ফুটবল টিমের খেলা আরম্ভ হইয়া গিয়াছিল—একটা বল দুম করিয়া তাহার একেবারে সামনে আসিয়া পড়াতে তাহার চমক ভাঙিল। উঠিয়া সে বলটা দু-হাতে ধরিয়া সজোরে একটা লাথি মারিয়া সেটাকে ধাবমান লাইনসম্যানের দিকে ছুঁড়িয়া দিল।

     

    একদিন পথে হঠাৎ প্রণবের সঙ্গে দেখা। দুজনেই ভারি খুশি হইল। সে কলিকাতায় আসিয়া পর্যন্ত অপুকে কত জায়গায় খুঁজিয়াছে, প্রথমটা সন্ধান পায় নাই, পরে জানিতে পারে অপূর্ব পড়াশুনা ছাড়িয়া দিয়া কোথায় চাকুরিতে ঢুকিয়াছে। প্রণব রাজনৈতিক অপরাধে অভিযুক্ত হইয়া বৎসরখানেক হাজতভোগের পর সম্প্রতি খালাস হইয়াছে, হাসিয়া বলিল—কিছুদিন গবর্নমেন্টের অতিথি হয়ে এলুম রে, এসেই তোর কত খোঁজ করেছি—তারপর, কোথায় চাকরি করিস, মাইনে কত?

    অপু হাসিমুখে বলিল—খবরের কাগজের আফিসে, মাইনে সত্তর টাকা!

    সর্বৈব মিথ্যা। টাকা চল্লিশেক মাইনে পায়, কি একটা ফন্ড বাবদ কিছু কাটিয়া লওয়ার পর হাতে পৌঁছায় তেত্রিশ টাকা ক আনা। একটু গর্বের সুরে বলিল, চাকরি সোজা নয়, রয়টারের বাংলা করার ভার আমার ওপর বুধবারের কাগজে আট ও ধর্ম বলে লেখাটা আমার, দেখিস পড়ে।

    প্রণব হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিয়া বলিল—তুই ধর্মের সম্বন্ধে লিখতে গেলি কি নিয়ে রে! কি জানিস তুই

    –ওখানেই তোমার গোলমাল। ধর্ম মানে তুই বলতে চাইছিস, সেটা হচ্ছে collective ধর্ম, আমি বলি ওটার প্রয়োজনীয়তা ছিল আদিম মানুষের সমাজে, আর একটা ধর্ম আছে, যা কিনা নিজের নিজের, আমার ধর্ম আমার, তোমার ধর্ম তোমার, এইটের কথাই আমি—যে ধর্ম আমার নিজের তা যে আর কারও নয়, তা আমার চেয়ে কে ভালো বোঝে?

    —বৌবাজারের মোড়ে দাঁড়িয়ে ওসব কথা হবে না, আয় গোলদিঘিতে লেকচার দিবি।

    –শুনবি তুই? চল তবে–

    গোলদিঘিতে আসিয়া দুজনে একটা নির্জন কোণ বাছিয়া লইল। প্রণব বলিল—বেঞ্চের উপর দাঁড়া উঠে।

    অপু বলিল–দাঁড়াচ্ছি, কিন্তু লোক জমবে না তো? তা হলে কিন্তু আর একটি কথাও বলব না।

    তারপর আধঘন্টাটাক অপু বেঞ্চের উপর দাঁড়াইয়া ধর্ম সম্বন্ধে এক বক্তৃতা দিয়া গেল। সে নিষ্কপট ও উদার—যা মুখে বলে মনে মনে তাহা বিশ্বাস করে। প্রণব শেষ পর্যন্ত শুনিবার পর ভাবিল—এসব কথা নিয়ে খুব তো নাড়াচাড়া করেছে মনের মধ্যে! একটু পাগলামির ছিট আছে, কিন্তু ওকে ওইজন্যেই এত ভালোবাসি।

    অপু বেঞ্চ হইতে নামিয়া বলিল—কেমন লাগল?–

    —তুই খুব sincere, যদিও একটু ছিটগ্রস্ত—

    অপু লজ্জামিশ্রিত হাস্যের সহিত বলিল—যাঃ–

    প্রণব বলিল—কিন্তু কলেজটা ছেড়ে ভালো কাজ করিস নি, যদিও আমি জানি, তাই সেদিন বিনয়কে বলছিলাম যে অপূর্ব কলেজে না গিয়েও যা পড়াশুনা করবে, তোমরা দু-বেলা কলেজের সিমেন্ট ঘষে ঘষে উঠিয়ে ফেললেও তা হবে না! ওর মধ্যে একটা সত্যিকার পিপাসা রয়েছে যে–

    নিজের প্রশংসা শুনিয়া অপু খুব খুশিবালকের মতো খুশি। উজ্জ্বল মুখে বলিল-অনেকদিন পরে তোর সঙ্গে দেখা, চল তোকে কিছু খাওয়াইগেকলেজ-মেটদের আর কারুর দেখা পাই নে আমোদ করা হয় নি কতদিন যে—মা মারা যাওয়ার পর থেকে তো…

    প্রণব বিস্ময়ের সুরে বলিল-মাও মারা গিয়েছেন।

    –ওঃ, সে কথা বুঝি বলি নি? সে তো প্রায় এক বছর হতে চলল—

    সামনেই একটা চায়ের দোকান। অপু প্রণবের হাত ধরিয়া সেখানে ঢুকিল। প্রণবের ভারি ভালো লাগিল অপুর এই অত্যন্ত খাঁটি ও অকৃত্রিম, আগ্রহ-ভরা হাত ধরিয়া টানা। সে মনে মনে ভাবিল—এরকম warmth আর sincerity কজনের মধ্যে পাওয়া যায়? বন্ধু তো মুখে অনেকেই আছে-অপু একটা জুয়েল।

    অপু বলিল—কি খাবি বল্?—এই বেয়ারা, কি আছে ভালো?

    খাইতে খাইতে প্রণব বলিল—তারপর চাকরির কথা বল—যে বাজার কি করে জোটালি?

    অপু প্রথমে লোহার বাজারের দালালির গল্প করিল। হাসিয়া বলিল—তারপর আবদুলের মহাভিনিষ্ক্রমণের পরে হার্ডওয়ার আর জমলো না—ঘুরে ঘুরে বেড়াই চাকরি খুঁজে, বুঝলি—একদিন একজন বললে, বি.এন.আর. অফিসে অনেক নতুন লোক নেওয়া হচ্ছে—গেলুম সেখানে। খুব লোকের ভিড়, চাকরি অনেক খালি আছে, ইংরিজি লিখতে পড়তে পারলেই চাকরি হচ্ছে। ব্যাপার কি, শুনলাম মাস-দুই হল স্ট্রাইক চলছে—তাদের জায়গায় নতুন লোক নেওয়া হচ্ছে–

    প্ৰণব চায়ে চুমুক দিয়া বলিল—চাকরি পেলি?

    –শোন না, চাকরি তখুনি হয়ে গেল, প্রিন্সিপ্যালের সার্টিফিকেটটাই কাজের হল, তখুনি ছাপানো ফর্মে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দিয়ে দিলে, বাইরে এসে ভারি আনন্দ হল মনটাতে। চল্লিশ টাকা মাইনে, যেতে হবে গঞ্জাম জেলায়, অনেক দুর, যা ঠিক চাই তাই—বেন্টিঙ্ক স্ট্রীটের মোড়ে একটা চায়ের দোকানে বসে মনের খুশিতে উপরি উপরি চার কাপ চা খেয়ে ফেললাম—ভাবলাম এতদিন পর পয়সার কষ্টটা তো ঘুচল?—আর কি খাবি? এই বেয়ারা, আর দুটো ডিম ভাজা–না–না—খা–

    —দু-দিন চাকরি হয়েছে বলে বুঝি—তোর সেই পুরানো রোগ আজও-হ্যাঁ, তারপর?

    –তারপর বাড়ি এসে রাতে শুয়ে শুয়ে মনটাতে ভালো বললে না—ভাবলাম, ওরা একটা সুবিধে আদায় করবার জন্য স্ট্রাইক করেছে, দুমাস তাদেরও ছেলেমেয়ে কষ্ট পাচ্ছে, তাদের মুখের ভাতের থালা কেড়ে খাব শেষকালে?—আবার ভাবি, যাই চলে, অতদূর কখনও দেখি নি, তা ছাড়া মা মারা যাওয়ার পর কলকাতা আর ভালো লাগে না, যাইগে—কিন্তু শেষ পর্যন্ত—ফের ওদের অফিসে গেলাম—ছাপানো ফর্মখানা ফেরত দিয়ে এলাম, বলে এলাম আমার যাওয়ার সুবিধে হবে না—

    প্রণব বলিল—তোর মুখ আর চোখ look full of music and poetry-প্রথম থেকে আমি জানি যে একজন আইডিয়াসিস্ট হোকরা—তোদের দিয়েই তো এসব হবে—তোর এ খবরের কাগজের কাজ কখন?

    –রাত নটার পর যেতে হয়, রাত তিনটের পর ছুটি। ভারি ঘুম পায়, এখনও রাতজাগা অভ্যেস হয় নি, তবে সুবিধে আছে, সকাল দশটা-এগারোটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে নি, সারাদিন লাইব্রেরিতে কাটাতে পারি–

    খাওয়া-দাওয়া ভালোই হইল। অপু বলিল—জল খাস নে—চল কলেজ স্কোয়ারে শরবৎ খাব-বেশ মিষ্টি লাগে খেতে।—লেমন স্কোয়াশ খেয়েছিস-আয়–

    কলেজের অত ছেলের মধ্যে এক অনিল ও প্রণব ছাড়া সে আর কাহাকেও বন্ধু ভাবে গ্রহণ করিতে পারে নাই, অনেকদিন পরে মন খুলিয়া আলাপের শোক পাইয়া তাহার গল্প আর ফুরাইতেছিল না। বলিল, গাছপালা যে কতদিন দেখি নি, ইট আর সিমেন্ট অসহ্য হয়ে পড়েছে। আমাদের অফিসে একজন কাজ করে, তার বাড়ি হাওড়া জেলা, সেদিন বলছে, বাড়ির বাগানে আগাছা বেড়ে উঠছে, তাই সাফ করছে রবিবারেরবিবারে। আমি তাকে বলি, কি গাছ মিত্তির মশাই? সে বলে—কিছু না, ঝুপি গাছ। আমি বলি—বলুন না, কি কি গাছ? রোজ সোমবারে সে বাড়ি থেকে এলে তাকে এই কথা জিজ্ঞেস করি—সে হয়তো ভাবে, আচ্ছা পাগল!—রাত্রে, ভাই, সারারাত প্রেসের ঘড়ঘড়ানি, গরম, প্রিন্টারের তাগাদার মধ্যে আমার কেবল মিত্তির মশায়ের বাড়ির সেই ঝুপি বনের কথা মনে হয়—ভাবি কি না কি জানি গাছ। এদিকে চোখ ঘুমে ঢুলে আসে, বাত একটার পর শরীর এলিয়ে পড়তে চায়, শরীরের বাঁধন যেন ক্রমে আলগা হয়ে আসে, কুঁজোব জল চোখে মুখে ঝাপটা দিয়ে ফুলে-ফুলো রাঙা-রাঙা, জ্বালা-করা চোখে আবার কাজ করতে বসি–ইলেকট্রিক বাতিতে যেন চোখে ছুঁচ বেঁধে-আর এত গরমও ঘরটাতে!

    পরে সে আগ্রহের সুরে বলিল—একদিন রবিবারে চল তুই আব আমি কোনও পাড়াগাঁযে গিয়ে মাঠে, বনের ধারে ধারে সারাদিন বেড়িয়ে কাটাব—বেশ সেখানেই লতাকাঠি কুড়িয়ে আমরা রাঁধব—বিকেল হবে—পাখির ডাক যে কতকাল শুনি নি! দোয়েল কি বৌ-কথা-কও, ওদের ডাক তো ভুলেই গিয়েছি, রবিবার দিনটা ছুটি, চল্ যাবি?—এখন কত ফুল ফোটাবও সময়—আমি অনেক বনের ফুলের নাম জানি, দেখিস চিনিয়ে দেব। যাবি প্রণব, চল আজ থিয়েটার দেখি? স্টারে ‘সধবার একাদশী’ আছে-যাবি?

    নিজেই দু-খানা গ্যালারির টিকিট কিনিল থিয়েটার ভাঙিলে অনেক রাত্রিতে ফিরিবার পথে অপু বলিল—কি হবে বাকি রাতটুকু ঘুমিয়ে; আজ বসে গল্প করে রাত কাটাই। কর্নওয়ালিস স্কোয়ারের কাছে আসিয়া অপু বন্ধুর হাত ধরিয়া রেলিং টপকাইয়া স্কোয়ারের ভিতর ঢুকিয়া পড়িল— আয় আয়, এই বেঞ্চিটাতে বসি, আমি নিমাদের পার্ট প্লে করব, দেখবি–

    প্রণব হাসিয়া বলিল—তোর মাথা খারাপ আছে—এত রাত্রে বেশি চেঁচাস নি-পুলিশ এসে তাড়িয়ে দেবে। কিন্তু খানিকটা পর প্রবও মাতিয়া উঠিল। দুজনে হাসিয়া আবোল-তাবোল বকিয়া আরও ঘণ্টাখানেক কাটাইল। অপু একটা বেঞ্চির উপরে গড়াগড়ি দিতেছিল ও মুখে নিমাদের অনুকরণে ইংরাজি কি কবিতা আবৃত্তি করিতেছিল-প্রণবের ভয়সূচক স্বরে উঠিয়া বসিয়া চাহিয়া দেখিল ফুটপাতের উপর একজন পাহারাওয়ালা। অমনি সে বেঞ্চের উপর দাঁড়াইয়া চিৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল-Hai, Holy Light! Heavens First born!-পরে দু-জনেই ডাফ স্ট্রীটের দিকের রেলিং টপকাইয়া সোজা দৌড় দিল।

    রাত্রি আর বেশি নাই। আমহার্স্ট স্ট্রীটের একটা বড়ো লাল বাড়ির পৈঠায় অপু গিয়ে বসিয়া পড়িয়া বলিল-কোথায় আর যাবো-আয় বোস এখানে–

    প্ৰণব বলিল—একটা গান ধর তবে—

    অপু বলিল-বাড়ির লোকে দোর খুলে বেরিয়ে আসবে-কোনরকমে পুলিশের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছি–

    -কেমন পাহারাওয়ালাটাকে চেঁচিয়ে বললুম—Hail, Holy Light!–হি-হি–টেরও পায় নি? কোথা দিয়ে পালালুম-নিমাদের মতো হয় নি?—হি-হি–

    প্রণব বলিল—তোর মাথায় ছিট আছে—যাঃ, সারা রাতটা ঘুম হল না তোর পাল্লায় পড়ে গা একটা গানই গা—আস্তে আস্তে ধর—আবার হাসে, যাঃ—

     

    ইহার দিন-পনেরো পরে একদিন প্রণব আসিয়া বলিল—তোকে নিয়ে যাব বলে এলাম— আমার মামাতো বোেনর বিয়ে হবে সোমবারে, শুক্রবার রাত্রে আমরা যাব, খুলনা থেকে স্টিমারে যেতে হয়, অনেকদিন কোথাও যাস নি, চল আমার সঙ্গে, দিন চার-পাঁচের ছুটি পাবি নে?

    ছুটি মিলিল। ট্রেনে উঠিবার সময় তাহার ভারি আনন্দ। অনেকদিন কলিকাতা ছাড়িয়া যায় নাই, অনেকদিন রেলেও চড়ে নাই। সকালবেলা স্টিমারে উঠিবার সময় ভৈরবের ওপার হইতে তরুণ সূর্য ওঠার দৃশ্যটা তাহাকে মুগ্ধ করিল। নদী খুব বড়ো ও চওড়া, স্টিমার প্রণবের মামার বাড়ির ঘাটে ধরে না, পাশের গ্রামে নামিয়া নৌকায় যাইতে হয়। অপু এ অঞ্চলে কখনও আসে নাই, সম্পূর্ণ অপরিচিত দেশ, নদীর ধারে সুপারির সারি, বাঁশ, বেতবন, অসংখ্য নারকেল গাছ। টিনের চালাওয়ালা গোলা গঞ্জ। অদ্ভুত ধরনের নাম, স্বরূপকাটি, যশাইকাটি।

    দক্ষিণ-পূর্ব কোণ ও খাড়া পশ্চিম, দু-দিক হইতে প্রকাণ্ড দুটা নদী আসিয়া পরস্পরকে চুঁইয়া অর্ধচন্দ্রাকারে বাঁকিয়া গিয়াছে, সেখানটাতে জলের রং ঈষৎ সবুজ এবং এই সঙ্গমস্থানেই ও-পারে আধ মাইলের মধ্যে প্রণবের মামার বাড়ির গ্রাম গঙ্গানন্দকাটি।

    নদীর ঘাট হইতে বাড়িটা অতি অল্প দূরে। এ গ্রামের মধ্যে ইহারাই অবস্থাপন্ন সম্রান্ত গৃহস্থ।

    অনেকবার অপু এ ধরনের বাড়ির ছবি কল্পনা করিয়াছে, এই ধরনের বড়ো নদীর ধারে, শহরবাজারের ছোঁয়াচ ও আবহাওয়া হইতে বহু দূরে কোন এক অখ্যাত ক্ষুদ্র পাড়াগাঁয়ের সম্রান্ত গৃহ, আগে অবস্থা ভালো ছিল, অথচ এখন নাই, নাটমন্দির, পূজার দালান, দোলমঞ্চ, রাসমঞ্চ সবই থাকিবে, অথচ সে-সব হইবে ভাঙা, শ্রীহীন—আর থাকিবে প্রাচীন ধনীবংশের ভ্রান্ত মর্যাদাবোধ, মানসম্মান, উদারতা। প্রণবের মামার বাড়ির সঙ্গে সব যেন হুবহু মিলিয়া গেল।

    ঘাট হইতে দুই সারি নারিকেল গাছ সোজা একেবারে বাড়ির দেউড়িতে গিয়া শেষ হইয়াছে, বাঁয়ে প্রকাণ্ড পূজার দালান, ডাইনে হলুদ রঙের কলসি বসানো ফটক ও ফুলবাগান, দোলমঞ্চ, রাসমঞ্চ, নাটমন্দির। খুব জলুস নাই কোনটারই, কার্নিস খসিয়া পড়িতেছে, একরাশ গোলাপায়রা নাটমন্দিরের মেজেতে চরিয়া বেড়াইতেছে, এক-আধটা ঝটাপট করিয়া ছাদে উড়িয়া পালাইতেছে, একখানা যোল-বেহারার সেকেলে হাঙরমুখো পালকি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়িয়া আছে। দেখিয়া মনে হয়—এক সময় ইহাদের অবস্থা খুব ভালো ছিল, বর্তমানে পসারহীন ডাক্তারের দ্বারে সংযুক্ত অনাদৃত পিতলের পাতের মতো শ্রীহীন ও মলিন।

    পুলু এসেছে, পুলু এসেছে—এই যে পুলু—এটি কে সঙ্গে? ও! বেশ বেশ, স্টিমার কি আজ লেট? ওরে নিবারণকে ডাক, ব্যাগটা বাড়ির মধ্যে নিয়ে যা, আহা থাক, এসো এসো দীর্ঘজীবী হও।

    চপ্রণব তাহাকে একেবারে বাড়ির মধ্যে লইয়া গেল। অপু অপরিচিত বাড়ির মধ্যে অন্দরমহলে যথারীতি অত্যন্ত লাজুক মুখে ও সংকোচের সহিত ঢুকিল। প্রণবের বড়ো মামিমা আসিয়া কুশল-প্রশ্ন জিজ্ঞাসাবাদ করিলেন। অপুকে দেখিয়া বলিলেন-এ ছেলেটিকে কোখেকে আনলি পুলু? এ মুখ যেন–

    প্রণব হাসিয়া বলিল–কি করে চিনবেন মামিমা? ও কি আর বাঙ্গাল দেশের মানুষ?

    প্রণবের মামিমা বলিলেন–তা নয় রে, কতবার পটে আঁকা ছবি দেখেছি, ঠাকুর-দেবতার মুখের মতো মুখ এসো এসো দীর্ঘজীবী হও–

    প্রণবের দেখাদেখি অপুও পায়ের ধুলা সইয়া প্রণাম করিল।

    –এসো এসো, বাবা আমার এসো—কি সুন্দর মুখ–দেশ কোথায় বাবা?

     

    সন্ধ্যার পর সারাদিনের গরমটা একটু কমিল। দেউড়ির বাহিরে আরতির কাঁসর ঘন্টা বাজিয়া উঠিল, চারদিকে শাঁখ বাজিল। উপরের খোলাছাদে শীতল পাটি পাতিয়া অপু একা বসিয়া ছিল, প্রণব ঘুম হইতে সন্ধ্যার কিছু আগে উঠিয়া কোথায় গিয়াছে। কেমন একটা নতুন ধরনের অনুভূতি-সম্পূর্ণ নতুন ধরনের কি সেটা? কে জানে, হয়তো শাঁখের রব বা আরতির বাজনার দরুন কিংবা হয়তো…

    মোটর উপর এ এক অপরিচিত জগৎ। কলিকাতার কর্মব্যস্ত, কোলাহলমুখর ধূলিপূর্ণ আবহাওয়া হইতে সম্পূর্ণ পৃথক এক ভিন্ন জীবনধারার জগৎ।

    নারিকেলশ্রেণীর পশীর্ষে নবমীর জ্যোৎস্না ফুটিয়াছে, এইমাত্র ফুটিল, অপু লক্ষ করে নাই। কি কথা যেন সব মনে আসে। অনেকদিনের কথা।

    পিছন হইতে প্রণব বলিল-কেমন, গাছপালা গাছপালা করে পাগল, দেখলি তো গাছপালা নদীতে আসতে? কি রকম লাগল বল শুনি।

    অপু বলিল—সে যা লাগল তা লাগল—এখন কি মনে হচ্ছে জানিস এই আরতি শুনে? ছেলেবেলায়, আমার দাদু ছিল ভক্ত বৈষ্ণব, তার মুখে শুনতাম, বংশী বটতট কদম্ব নিকট, কালিন্দী ধীর সমীর-যেন

    সিঁড়িতে কাহাদের পায়ের শব্দ শোনা গেল। প্রণব ডাকিয়া বলিল—কে রে? মেনী? শোন–

    একটি তেরো-চৌদ্দ বছরের বালিকা হাসিয়া দরজার কাছে দাঁড়াইল। প্রণব বলিল–কে, কে রে? মেয়েটি পিছন ফিরিয়া কাহাদের দিকে একবার চাহিয়া দেখিয়া বলিল—সবাই আছে, ননীদি, দাসীদি, মেজদি, সরলা-তাস খেলব চিলেকোঠার ঘরে–

    অপু মনে মনে ভাবিল-এ-বাড়ির মেয়ে-ছেলে সবাই দেখতে ভারি সুন্দর তো?

    প্রণব বলিল—এটি মামার ছোট মেয়ে, এরই মেজ বোনের বিয়ে। কবোনের মধ্যে সে-ই সকলের চেয়ে সুশ্রী—মেনী ডাক তো একবারঅপর্ণাকে?

    মেনী সিঁড়িতে গিয়া কি বলিতেই একটা সম্মিলিত মেয়েলি কণ্ঠের চাপা হাস্যধ্বনি শুনিতে পাওয়া গেল, অল্পক্ষণ পরেই একটি যোল-সতেরো বছরের নতমুখী সুন্দরী মেয়ে দরজার কাছে আসিয়া দাঁড়াইল। প্রণব বলিল—ও আমার বন্ধু, তোরও সুবাদে দাদা-লজ্জা কাকে এখানে রে? এটি মামার মেজ মেয়ে অপর্ণা—এরই–

    মেয়েটি চপলা নয়, মৃদু হাসিয়া তখনই সরিয়া গেল, কি সুন্দর একটাল চুল! কিছু দিন আগে পড়া একটা ইংরাজি উপন্যাসের একটা লাইন বার বার তাহার মনে আসিতে লাগিল–Do they breed goddesses at Slocum Magna? Do…they…breed…goddesses…at…Slocum Magna?

    এ রাতটার কথা অপুর চিরকাল মনে ছিল।

     

    পরদিন প্রণবের সঙ্গে অপু তাহার মামার বাড়ির সবটা ঘুরিয়া দেখিল। প্রাচীন ধনীবংশবটে। বাড়ির উত্তর দিকে পুরাতন আমলের আবাসবাটি ও প্রকাণ্ড সাতদুয়ারী পূজার দালান ভগ্ন অবস্থায় পড়িয়া আছে, ওপারে অন্যতম শরিক রামদুর্লভ বাঁড়ুজ্যের বাড়ি। পুরাতন আমলের বসতবাটি বর্তমানে পরিত্যক্ত, রামদুর্লভের ছোট ভাই সেখানে বাস করিতেন। কি কারণে তাহার একমাত্র পুত্র নিরুদ্দেশ হইয়া যাওয়াতে তাহারা বেঁচিয়া-কিনিয়া কাশীবাগী হইয়াছেন।

    এ সব কথা প্রণবের মুখেই ক্রমে ক্রমে শোনা গেল।

    স্নানের সময়ে সে নদীতে স্নান করিতে চাহিলে সকলেই বারণ করিল—এখানকার নদীতে এ সময়ে কুমিরের উৎপাত খুব বেশি, পুকুরে স্নান করাই নিরাপদ।

    বৈকালে একজন বৃদ্ধ ভদ্রলোক কাছারি বাড়ির বারান্দাতে বসিয়া গল্প করিতেছিলেন, দিনপনেরো পূর্বে নিকটস্থ কোন গ্রামের জনৈক তাঁতির ছেলে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হইয়া যায়, সম্প্রতি তাহাকে রায়মঙ্গলের এক নির্জন চরে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গিয়াছে। ছেলেটি বলে, তাহাকে নাকি পরীতে ভুলাইয়া লইয়া গিয়াছিল, প্রমাণস্বরূপ সে আঁচলের খুট খুলিয়া কাঁচা লবঙ্গ, এলাচ ও জায়ফল বাহির করিয়া দেখাইয়াছে, এ-অঞ্চলের ত্রিসীমানায় এ সকলের গাছ নাই-পরী কোথাও হইতে আনিয়া উপহার দিয়াছে।

    প্রণবের মামিমা দুপুরে কাছে বসিয়া দুজনকে খাওয়াইলেন, অনেকদিন অপুর অদৃষ্টে এত যত্ন আদর বা এত ভালো খাওয়া-দাওয়া জোটে নাই। চিনি, ক্ষীর, মশলা, কর্পূর, ঘৃত, জীবনে কখনও তাহাদের দরিদ্র গৃহস্থালিতে এ সকলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটে নাই। মায়ের সংসারে চালের গুঁড়া, গুড় ও সরিষার তৈলের কারবার ছিল বেশি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদেবযান – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article পথের পাঁচালী – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    কাদা kada

    August 11, 2025
    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025
    Our Picks

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025

    অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স ও অন্যান্য প্রসঙ্গ – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025

    আলস্যের জয়গান – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }