Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অপারেশন ওয়ারিস্তান – ইন্দ্রনীল সান্যাল

    ইন্দ্রনীল সান্যাল এক পাতা গল্প166 Mins Read0

    ১০. কাহিনি (অপারেশন ওয়ারিস্তান)

    সাঁত্রাগাছি স্টেশন থেকে হাওড়া স্টেশন। ২ অক্টোবর।

    সকাল এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটা।

    .

    ‘যাক! আপদ গেল!’ নিশ্চিন্ত হয়ে বলল প্রথমা। জনহীন কামরার সিটে বসে সামনের সিটে পা তুলে লোকটা বলল, ‘আমি ভাবতে পারিনি যে তুই আমাকে চিনতে পারবি। আমার টেনশান ছিল যে তুই বালাজির সঙ্গে চলে যাবি।’

    ‘আমি কিন্তু এখনও তোমাকে চিনতে পারিনি।’ ভুরু কুঁচকে বলে প্রথমা, ‘তোমার চেহারা বিস্তর বদলে গেছে। পোশাক-আশাকও অন্যরকম। হাইট আর গলার আওয়াজ ছাড়া কিছু মিলছে না। বরং চেহারা আর হাবভাবে বালাজি অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও ছিল। তোমার কাছে তো কিসসু নেই।’

    ‘তাহলে পালিয়ে এলি কেন? রামরাজাতলা স্টেশানে নেমে উলটোমুখো ট্রেন ধর।’ সামনের সিটে পা তুলে ঠ্যাং নাচাতে নাচাতে বলে লোকটা।

    ‘পালিয়ে এলাম সিরিয়াস একটা কারণে।’

    ‘কী কারণ? জানতে পারি?’

    ‘বালাজি আমাকে বলেছিল যে আমরা, অর্থাৎ অনাথ আশ্রমের ছেলেমেয়েরা অ্যাম্বুল্যান্সে করে পিকনিক করতে গিয়েছিলাম। পিকনিক সেরে ফেরার পথে অ্যাক্সিডেন্ট হয়। আমি ছাড়া বাকি সবাই মরে গেছে। আমি বালাজিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম—ষষ্ঠী, কৃষ্ণা সবাই মারা গেছে? বালাজি বলেছিল—হ্যাঁ।’

    ‘কৃষ্ণা আবার কে?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে গণেশ।

    প্রথমা লোকটাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘এতক্ষণ একশো শতাংশ শিয়োর হলাম যে তুমিই গণেশদা।’

    ‘কেন?’

    ‘কেন না, রি-লাইফে কৃষ্ণা নামে কেউ কখনও ছিলই না। কোলাঘাটের অ্যাক্সিডেন্ট স্পট থেকে আমাকে উদ্ধার করে উমা নামে এক মহিলা তার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। উমার বরের নাম কৃষ্ণকান্ত। ওরা আমাকে খেতে দেয়, নতুন পোশাক দেয়, কোলাঘাট থেকে ট্রেনের টিকিট কেটে ট্রেনে তুলে দেয়। ”কৃষ্ণ”র সঙ্গে ”উমা”র ”আ”কার যোগ করে ”কৃষ্ণা” নামটা আমি বানিয়েছিলাম। বালাজি যখন বলল, ‘কৃষ্ণা মারা গেছে, তখন আমি নিশ্চিত হলাম যে এই লোকটা ভালো নয়। একইভাবে, তুমি এখন বানানো নাম শুনে অবাক হয়ে বললে ”কৃষ্ণা আবার কে”—আর আমি শিয়োর হলাম যে তুমিই গণেশদা।’

    ‘হুম।’ ঠ্যাং নাচানো বন্ধ করে গণেশ গম্ভীর হয়ে যায়। রামরাজাতলা স্টেশানে ট্রেন দাঁড়িয়েছে। কেউ উঠল না। কেউ নামলও না। ট্রেন ছাড়ার পরে প্রথমা বলল, ‘শুধু বালাজি নয়, বাবাও বলেছে যে কৃষ্ণা মারা গেছে। যে মানুষটার কোনও অস্তিত্ব নেই, তাকে নিয়ে পরপর দুজন মিথ্যে কথা বলল কেন?’

    গণেশ চুপ। প্রথমা বলল, ‘অন্য একটা ব্যাপার নিয়েও আমার কনফিউশান আছে।’

    সিটের ওপরে লম্বা হয়ে শুয়ে চোখ বুঁজে গণেশ বলল, ‘বলে ফ্যাল। দাশনগর স্টেশন এল। হাওড়া ঢুকতে আরও মিনিট পনেরো। তার মধ্যে তোর কনফিউশান কাটানো যায় কি না দেখি।’

    ‘আমাকে পাঁচ বছর ধরে ঘুম পাড়িয়ে কার কী লাভ? তার থেকেও বড় কথা, এত হাইটেক একটা ব্যাপার কলকাতায় হচ্ছে। সেটা কেউ জানতে পারছে না?’

    ‘কলকাতাতে নয়। তুই ঘুমিয়েছিলি খড়গপুরে। সারা পৃথিবীর অজান্তে, ইনডিউসড হাইবারনেশানের কাজ করে চলেছে বিজ্ঞানী তনয়া মিত্র—তোর বাবার বেতনভুক কর্মচারী। তুই যাকে বাবা বলে ডাকিস, তাকে আমিও একদিন বাবা বলে ডাকতাম। কিন্তু ওই লোকটার মতো খারাপ লোক পৃথিবীতে আর একটা পয়দা হবে না। ক্রায়োনিকসের মাধ্যমে বাচ্চাদের ক্রায়োপ্রিজার্ভ করার বা ঘুম পাড়িয়ে রাখার প্রকল্প তোর বাবা শুরু করেছিল আজ থেকে পাঁচবছর আগে।’

    ‘আমাদের ক্রায়োপ্রিজার্ভ করা হয়েছিল? কেন?’

    ‘সে এক লম্বা গল্প।’ জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায় গণেশ। টিকিয়াপাড়া স্টেশানে ট্রেন দাঁড়িয়েছে। এর পরেই হাওড়া।

    ‘বলো।’ অনুরোধ করে প্রথমা।

    ‘মেঘনাদ আমাকে রিলাই করত। আমাকে বলে ফেলেছিল ওর কার্যপদ্ধতি।’ মেঘনাদ-তনয়া-লুসির গেম প্ল্যানের কথা ডিটেলে প্রথমাকে বলে গণেশ। শুধু একটা প্রসঙ্গ চেপে যায়। মেয়েটা একবারে এতটা নিতে পারবে না।

    কথায় কথায় কখন হাওড়া স্টেশন চলে এসেছে প্রথমা বা গণেশ কেউই খেয়াল করেনি। চোদ্দো নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢুকছে। গণেশ বলল, ‘চল এবার নামতে হবে।’

    ডান দিকে প্ল্যাটফর্ম। বাঁদিকে রেললাইন। তার ওদিকে তেরো নম্বর প্ল্যাটফর্ম। ওই লাইনেও বোধহয় কোনও ট্রেন ঢুকছে। কিছু প্যাসেঞ্জার ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে। চোদ্দো নম্বর প্ল্যাটফর্মেও সামান্য কিছু প্যাসেঞ্জার।

    হঠাৎ দুজন লোক ট্রেনের দরজা দিয়ে লাফিয়ে উঠল। গণেশ বলল, ‘সরে দাঁড়া প্রথমা। রানিং-এ অনেক লোক উঠবে।’

    প্রথমা কিছু বলার অবস্থায় নেই। যে দুজন লোক ট্রেনে উঠেছে তাদের একজন প্রথমার চেনা। বালাজি! সে পিছন থেকে প্রথমাকে জাপটে ধরে মোবাইল বার করে কাউকে একটা ফোন করল। বলল, ‘সাঁত্রাগাছিতে হাত ফসকে পালিয়েছিল স্যার। হাওড়া স্টেশানে পাকড়াও করেছি।’ তারপর ফোন কেটে বলল, ‘বুনো, ইনজেকশান কই?’

    বুনো ছেলেটা বালাজির মতোই লম্বা আর পেশিবহুল। সে প্যান্টের পকেট থেকে সিরিঞ্জ বার করে প্রথমার হাতে ফোটাতে গেল। সিরিঞ্জ ভরতি নীল রঙের তরল। প্রথমা চিৎকার করে বলল, ‘গণেশদা!’

    গণেশ দরজা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিল। কামরার ভিতরের ধাক্কাধাক্কি টের পায়নি। প্রথমার চিৎকারে ঘুরে তাকাল। বালাজি ডানহাতে প্রথমাকে ধরে রেখে বাঁ-হাত সামনের দিকে তাক করে বলল, ‘গণেশ তুই? আমার আগেই আন্দাজ করা উচিত ছিল!’

    প্রথমা দেখল তার নাকের ডগায়, বালাজির বাঁ-হাতে পুঁচকে একটা আগ্নেয়াস্ত্র।

    বুনো খুব একটা পোক্ত নয়। সিরিঞ্জ নিয়ে ইতস্তত করছে। কোথায় ফোটাবে বুঝতে পারছে না। হাত কাঁপছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।

    প্রথমা একসঙ্গে দুটো কাজ করল। ডান হাত প্রবল গতিতে নাড়তে লাগল। যাতে বুনো নিডল ফুঁড়তে না পারে। পাশাপাশি মাথা ঝুঁকিয়ে বালাজির হাতে মরণকামড় দিল। এত জোরে দাঁত ফোটাল যে মুখ ভরে গেল রক্তের নোনতা স্বাদে।

    ‘আ-আ-আ-আ-হ’! ককিয়ে উঠল বালাজি। প্রথমার গলা পেঁচিয়ে থাকা তার ডানহাত আলগা হয়েছে। এই সুযোগ গণেশ এগিয়ে এসে বালাজির হাত থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিল। বালাজি তাতে দমার পাত্র নয়। গণেশের পেট তাক করে মারল সপাটে এক লাথি। লাথির অভিঘাতে গণেশ ট্রেনের কামরা থেকে ছিটকে বেরিয়ে তেরো নম্বর প্ল্যাটফর্ম সংলগ্ন রেল লাইনে পড়ে গেল। তেরো নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেরা একসঙ্গে চিৎকার করে উঠল।

    গণেশের কী হল, প্রথমার দেখার সময় নেই। সে বুনোর হাত থেকে সিরিঞ্জ কেড়ে নিয়ে তারই পিঠে সুচ গেঁথে দিল। বুনো যন্ত্রণার চিৎকার করে উঠল। বালাজিও হাতের ক্ষত নিয়ে ব্যস্ত। দুজনকে কামরায় রেখে বাঁ-দিকের দরজা দিয়ে ঝাঁপ মারল প্রথমা।

    তেরো নম্বর প্ল্যাটফর্মের লোকেরা আবার হইহই করে উঠল। প্রথমা দেখল, ভীষণ জোরে হর্ন দিতে দিতে ব্রেক কষছে একটা মেল ট্রেন। তবে ব্রেক পুরোপুরি কাজ করার আগেই ট্রেনটা তাকে এবং গণেশকে পিষে দেবে। কেন না ট্রেনটা মাত্র ফুটদশেক দূরে।

    ১১

    রি-লাইফ। ডক্টর মেঘনাদ লাহিড়ির চেম্বার।

    ২ অক্টোবর। সকাল এগারোটা থেকে দুপুর বারোটা।

    .

    ‘আমি ক্রায়োনিকসের স্টুডেন্ট স্যার। জেনেটিক্স বুঝব না।’ চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে বলে তনয়া।

    মেঘনাদ বলে, ‘আমি তোমাকে এতদিন জানাইনি, কেন না দরকার পড়েনি। কেরালা, কলকাতা এবং খড়গপুরের তিনটে ইউনিটকে আমি একে অপরের থেকে আলাদা রেখেছি। আমি ছাড়া কেউ পুরো অপারেশানটা জানে না। আজ জানানোর সময় এসেছে। একটা রোড ট্র্যাফিক অ্যাক্সিডেন্ট পুরো ব্যাপারটাকে ডিসরাপ্ট করবে, এ আমি বরদাস্ত করতে পারছি না। সেই জন্যেই সব জানানো। লুসি আর আমি তোমার ক্রায়োপ্রিজার্ভেশানের পার্টটা জানি। আমার অরগ্যান ফারমিং-এর ব্যাপারটা লুসি জানে। এবার তোমার জানার পালা।’

    ‘অরগ্যান ফারমিং?’ ঢোঁক গিলে বলে তনয়া।

    ‘এমন ভাব করছ, যেন সাই-ফাই সিনেমার প্ট শুনছ। ব্যাপারটা অত জটিল কিছু নয়। আদি মাতৃকোষ বা স্টেম সেল তিনরকমের হয়। তার একটা টাইপ হল টোটিপোটেন্ট স্টেম সেল, যেখানে একটি কোষ থেকে শরীরের সমস্ত রকমের কোষ তৈরি হয়।’

    মেঘনাদের মোবাইল বাজছে। সে তনয়াকে বলল, ‘বালাজির ফোন। ধরে নিই।’ তারপর টেবিলে রাখা মোবাইলের স্পিকার ফোন অন করে বলল, ‘বলো।’

    ‘স্যার!’ বালাজি হাঁফাচ্ছে, ‘প্রথমার সন্ধান পেয়েছি। ওর সঙ্গে ট্রেনে করে সাঁত্রাগাছি এসেছি। মেয়েটা বোধহয় আমায় বিশ্বাস করেনি। হঠাৎ আমার হাত ছাড়িয়ে ট্রেনে উঠে পড়ল।’

    ‘তুমিও ওঠো।’ খেঁকিয়ে ওঠে মেঘনাদ।

    ‘আমাকে আরপিএফ ধরেছিল স্যার। অনেক কষ্টে ছাড়া পেয়েছি। কিন্তু ট্রেনটা মিস হয়ে গেল।’

    ‘বুনো কোথায়?’

    ‘ও গাড়ি নিয়ে ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে আসছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে।’

    ‘হুম।’ কিছুক্ষণ ভাবে মেঘনাদ। ল্যাপটপের পরদা দেখে বলে, ‘মেয়েটা ট্রেনেই আছে। হাওড়া স্টেশনে যাবে। তুমি আর বুনো ওদের আগে হাওড়া স্টেশানে পৌঁছোতে চেষ্টা করো। এখন আমায় বিরক্ত কোরো না।’

    মোবাইল কেটে মেঘনাদ তনয়াকে বলল, ‘কী যেন বলছিলাম?’

    তনয়া বলল, ‘টোটিপোটেন্ট স্টেম সেল।’

    ‘হুঁ। স্টেম সেল চিকিৎসা সম্পর্কে কোনও ধারণা আছে?’

    ‘জুজুর চিকিৎসা নিয়ে পড়াশুনো করতে গিয়ে দেখেছিলাম। ক্রিস্টোফার রিভ, যিনি সুপারম্যানের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, তিনি স্টেম সেল গবেষণার বিরাট পৃষ্ঠপোষক। ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে, শিরদাঁড়ায় চোট লাগার ফলে ওঁর দুটো পা বিকল হয়ে যায়। হুইল চেয়ারে চড়ে জীবনের শেষ দিনগুলোয় তিনি স্টেম সেল থেরাপি এবং রিসার্চের হয়ে ওকালতি করে গেছেন।’

    ‘কেন করেছিলেন বলো তো?’

    ‘স্টেম সেল থেরাপির মাধ্যমে নানা রোগ সারানো সম্ভব। মডার্ন মেডিসিন যেসব রোগের চিকিৎসা করতে পারে না, স্টেম সেল থেরাপি সেই চিকিৎসা করছে। ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, স্ট্রোক—এইসব রোগের চিকিৎসা এইভাবে সম্ভব। এটা কি সত্যি?’

    ‘ভীষণভাবে সত্যি। আমি কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ক চালাই, আমার থেকে ভালো আর কে জানবে? স্টেম সেল রিসার্চ এখন এত দূর এগিয়ে গেছে যে ল্যাবরেটরিতে তৈরি হচ্ছে লিভার, লাং, হার্ট, হার্টের ভালভ। অরগ্যান রিপ্লেসমেন্টের জন্য আর ব্রেন ডেথ হয়ে যাওয়া ডোনারের দরকার পড়ছে না।’

    ‘এটাকেই কি অরগ্যান ফারমিং বলা হচ্ছে?’

    ‘বাকি বিশ্ব একেই অরগ্যান ফারমিং বলে জানে। কিন্তু আমি, ডক্টর মেঘনাদ লাহিড়ি, এই বিষয়ে বিশ্বের পায়োনিয়ার। আমার বরাবর মনে হত, এমন দিন আসবে, যখন স্টেম সেলের চাহিদা এত বেড়ে যাবে যে জোগান দেওয়া যাবে না।’

    ‘হ্যাঁ। স্টেম সেলের উৎস তো দু’তিনটে। বোন ম্যারো, কর্ড ব্লাড, ফিটাস…’

    ‘ভ্রূণহত্যা করে ফিটাসের স্টেম সেল নেওয়া আনএথিক্যাল এবং ইললিগ্যাল। লুসির বাবা হুয়াং উ সাক কোরিয়াতে এমব্রায়োনিক স্টেম সেল রিসার্চ করতেন। ওঁকে অ্যাসিস্ট করতে করতে আমি একটা আইডিয়া পাই।’

    ‘কী আইডিয়া?’

    ‘ফিটাল স্টেম সেল নেওয়া বেআইনি বলে বিজ্ঞানীরা ঘুরপথে হাঁটছিলেন। গোরুর ডিম্বাণু সংগ্রহ করে তার থেকে বার করে নিচ্ছিলেন নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াস হল মাইক্রোচিপ। তাতেই প্রাণীর যাবতীয় প্রাোগ্রামিং করা থাকে। তুমি মানুষ না ছাগল, মানুষ হলে সাদা না রঙিন, চোখের মণির রং কালো না নীল, তোমার কী কী রোগ ভবিষ্যতে হবে—স-অ-ব ওই নিউক্লিয়াসে প্রাোগ্রামিং করা আছে। সুতরাং নিউক্লিয়াস বিহনে গোরুর ডিম্বাণু ডিমের খোলা বই কিছু নয়। এবার বিজ্ঞানীরা মানুষের চামড়ার কোষ থেকে নিউক্লিয়াস বার করে নিলেন। তাহলে বিজ্ঞানীদের হাতে রইল কী?’

    ‘একটা ডিপ্রাোগ্র্যামড ডিমের খোলা আর একটা নিউক্লিয়াস।’ জবাব দেয় তনয়া।

    ‘এই নিউক্লিয়াসকে ডিপ্রাোগ্র্যামড এগ সেলের সঙ্গে ফিউজ করা হল। এর ফলে যে কোষ তৈরি হল, সেটি গুণগতভাবে ৯৯ শতাংশ মানুষের, ১ শতাংশ গরুর। কোষটিকে ল্যাবরেটরিতে শক দিয়ে স্টিমুলেট করা হয়। এবং এই কোষ নিজেকে বিভাজন করতে থাকে। অনেকবার বিভাজনের শেষে তৈরি হয় ব্লাস্টোসিস্ট।’

    ‘তার মানে?’

    ‘খুব আর্লি স্টেজের ভ্রূণ। যার ডিএনএ আর মানুষের ডিএনএ-র মধ্যে মিল ৯৯ শতাংশ। এবং এইভাবেই ডলি তৈরি হয়েছিল।’

    তাহলে এই ব্লাস্টোসিস্ট স্টেম সেল থেকে পাওয়া যায়। তাই তো?’

    ‘অনেকটা তাই। লুসি তোমাকে বলেছে, কাইমেরা কাকে বলে। যেটা বলেনি, সেটা হল, আমি অলরেডি কাইমেরা তৈরি করে ফেলেছি।’

    ‘কাইমেরা তাহলে সায়েন্স ফিকশানে সীমাবদ্ধ নেই? বাস্তবে তার অস্তিত্ব আছে?’ থরথর করে কাঁপছে তনয়ার গলা।

    ‘ডলি কাইমেরা। তাকে ক্লোন করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। তার দু’বছর পরেই, ১৯৯৮ সালে আমি মানুষ ক্লোন করে ফেলেছি। নেহাত সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষ ক্লোনিং ব্যান, তাই তোমরা এসব জানতে পারো না।’

    ‘তখন কি আপনি সাউথ কোরিয়ায়?’

    ‘হ্যাঁ। আমার বস হুয়াং তখন কোরিয়ার ন্যাশনাল হিরো। স্টেম সেল ক্লোন করে কোরিয়ার ইকনমিকে তরতর করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ইনফর্মেশান টেকনোলজিতে জাপানের সুপ্রিমেসিকে ধাক্কা দিয়ে বায়োটেকনোলজিতে কোরিয়ার নাম উঠে আসছে। হুয়াংকে মিডিয়া আখ্যা দিচ্ছে, ”এভানজেলিস্ট অফ বায়োটেকনোলজি” নামে। ১৯৮৯ সালে হুয়াং পেপার পাবলিশ করে যে সে একটা গোরু ক্লোন করেছে। সারা পৃথিবী রে রে করে ওর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যারা গবেষণার ঠিক-ভুল দেখাশোনা করে, তারা ওই পেপার ক্রসচেক করে দেখে যে সমস্ত ডেটা বানানো, ল্যাবের ছবি আর ডায়াগ্রাম বানানো। হুয়াং ন্যাশনাল হিরো থেকে ন্যাশনাল ভিলেন হয়ে যায়।’

    মলিনা খালি চায়ের কাপ নিয়ে গেল। মেঘনাদ বলল, ‘হুয়াং-এর সব গেল। অ্যাকাডেমিক লাইনে চুরির দায়ে ধরা পড়লে বাকি জীবনে আর কিছু করা যায় না। হুয়াং-এর সঙ্গে আমারও সম্মানহানি হল। আমি যুগান্তকারী আবিষ্কার করে ফেলেছি, অথচ মুখ বুঁজে থাকতে হচ্ছে। কেন না, হুয়াং-এর দু’নম্বরি ধরা পড়ার পরে আমি তামা-তুলসী পাতা হাতে নিয়ে কথা বললেও আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। যেমন মানুষকে ক্রায়োপ্রিজার্ভ করার নো-হাউ আবিষ্কার করা সত্বেও তুমি কোথাও কলকে পাওনি। এই কারণেই আমি তোমার প্রতি সিমপ্যাথেটিক তনয়া।’

    তনয়া মাথা নীচু করে বসেছিল। সামান্য ভেবে বলল, ‘আমার কাজটা প্রপার ছিল। কিন্তু আপনার কাজটা ইললিগাল এবং আনএথিক্যাল।’

    ‘একদম ঠিক। আমি তখন খুব কনফিউজড। কী করব বুঝতে পারছি না। এই সময় আমার শাশুড়ি কিমের রোড ট্রাফিক অ্যাকসিডেন্ট হয়। গতকালই এই ঘটনাটা এক সাংবাদিককে বলছিলাম। মালটিঅরগ্যান ফেলিয়োর নিয়ে ভেন্টিলেটারে দুশো দিন বেঁচে থাকার পর অরগ্যানের অভাবে কিম মারা যায়। ওই সময় আমি আর লুসি পাশাপাশি বসে দিনরাত এই নিয়ে আলোচনা করতাম। অবশেষে আমরা ঠিক করি, রাষ্ট্রকে না জানিয়ে অরগ্যান ফারমিং করব। সারা পৃথিবীতে অজস্র মানুষ প্রতিদিন অরগ্যান না পেয়ে মরে যাচ্ছে। আমি সাপ্লাই করতে পারি, কিন্তু রাষ্ট্র আটকে দিচ্ছে। সুতরাং আইনকে মারো গুলি। বড়লোকরা চিকিৎসা পাবে? পাক। কেউ তো পাবে। সব জিনিসগুলো খাপে খাপ বসতে আরম্ভ করল। লুসি কেরালায় কিমের রিসাইকল ক্লিনিকের ট্রানসপ্ল্যান্ট ইউনিটে কাজ করতে লাগল। আমি কলকাতায় অরগ্যান ফারমিং করতে লাগলাম। টাকা এল এমন জায়গা থেকে যেখানে এথিকস, মর‌্যালিটি, লিগ্যাল সিস্টেম—এই সব শব্দ অর্থহীন। আমি একের পর এক ডিজাইনার বেবি তৈরি করতে লাগলাম। কিন্তু আমাদের একটা জিনিসের অভাব হচ্ছিল। তুমি আসায় সেটা পূরণ হল।’

    ‘ক্রায়োপ্রিজার্ভেশান।’

    ‘একদম ঠিক ধরেছে। দাঁড়াও আবার বালাজি ফোন করেছে।’ টেবিলে রাখা মোবাইলের সবুজ বোতাম টিপে স্পিকার ফোন অন করে মেঘনাদ। শোনা যায় বালাজির উত্তেজিত কণ্ঠস্বর, ‘সাঁত্রাগাছিতে হাত ফসকে পালিয়েছিল স্যার। হাওড়া স্টেশনে পাকড়াও করেছি।’

    ‘গুড। ওকে তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো।’ ফোন কেটে ল্যাপটপের দিকে একঝলক তাকিয়ে মেঘনাদ তনয়াকে বলে, ‘ল্যাপটপে ওয়েবক্যামের আইকন ব্লিঙ্ক করছে। লুসির ফোন এসেছে। হাই লুসি!’ কি-বোর্ড টিপে মনিটরের পর্দায় লুসিকে এনে ফেলেছে মেঘনাদ। মনিটর থেকে লুসি তনয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সব শুনে নিয়েছ?’

    ‘হ্যাঁ। মোটামুটি।’ বলে তনয়া। লুসি মেঘনাদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ডোনারকে তাড়াতাড়ি পাঠাও লাহিড়ি। হার্ট ট্রানসপ্ল্যান্টের সময় চলে আসছে। আই নিড দ্যাট গার্ল অ্যাস্যাপ।’

    ওয়েবক্যাম অফ করে মেঘনাদ বলল, ‘আমার ফোন এসেছে। অচেনা নম্বর…হ্যালো?’

    ‘অপূর্ব কুমার রায় বলছি। লুসি লাহিড়ি আপনার নম্বর আমাকে দিয়েছেন।’ ওপার থেকে শোনা গেল।

    মেঘনাদ ইশারায় তনয়াকে বেরিয়ে যেতে বলল। তনয়া চেম্বারে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে মেঘনাদ ফোনে বলল, ‘আপনার সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে চাই।’

    ‘সম্ভব নয়। আমি আপনাকে পাবলিক বুথ থেকে ফোন করছি।’ ওপ্রান্ত থেকে উত্তর এল।

    মেঘনাদ বলল, ‘আপনি একটা সিকিয়োরড মেল আইডি বলুন। আমি আপনাকে এনক্রিপটেড মেল করছি।’

    ‘একেরে@জিমেল.কম।’

    মেঘনাদ ল্যাপটপ থেকে লম্বা একটা এনক্রিপ্টেড মেল করল। শেষে লিখল, ‘রিচ হাওড়া স্টেশন অ্যাজ আর্লি অ্যাজ পসিবল।’ তারপর হাইব্যাক চেয়ারে বসে ল্যাপটপের মনিটরের দিকে তাকিয়ে রইল। এখন তাকে এখানেই বসে থাকতে হবে।

    ১২

    শেয়ালদা থেকে হাওড়া। ২ অক্টোবর।

    দুপুর বারোটা থেকে সওয়া বারোটা।

    .

    একটা মিছিল আসছে। বিরক্ত হয়ে রকি বলল, ‘কীসের জুলুস?’

    বিট্টু মুখ খুলল না। জানলার কাচ নামিয়ে রকি শুনল মিছিলের গোড়ায় যে নেতা রয়েছে যে লালকার দিচ্ছে, ‘ওয়ারিস্তান মুর্দাবাদ!’ বাকিরা ধুয়ো দিচ্ছে, ‘ইন্ডিয়া জিন্দাবাদ!’

    নেতা বলল, ‘ওয়ারিস্তান কি পি এম মুর্দাবাদ!’ বাকিরা বলল, ‘মুর্দাবাদ মুর্দাবাদ!’

    দ্রুত গাড়ির জানলার কাচ তুলে দিয়ে ট্যাবের পাওয়ার অন করল রকি। থ্রি জি টেকনোলজির কারণে এখন সব চ্যানেলের লাইভ স্ট্রিমিং পাওয়া যায়। বাফারিঙে সামান্য প্রবলেম থাকে। বিবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজে ঢুকল রকি।

    ‘অ্যানাদার ক্যু ইন ওয়ারিস্তান বাই আর্মি। অ্যানাদার নিউক্লিয়ার ওয়ার ইন দ্য অফিং।’ বিবিসির ব্রেকিং নিউজের ক্যাপশান।

    ‘এক্স প্রাইম মিনিস্টার মায়া মল্লিক ইজ অ্যারেস্টেড। ডুমস ডে কন্সপিরেসি ফ্রম ওয়ারিস্তান।’ ফক্স নিউজ।

    ‘নিউ প্রাইম মিনিস্টার ইজ আর্মি চিফ জিয়া চৌধুরী। ট্রাবল ইন সাউথ ইস্ট এশিয়া।’ আবু ধাবি টিভি।

    ‘নিউ পিএম অফ ওয়ারিস্তান সেটস ওয়ান আওয়ার ডেডলাইন ফর ইন্ডিয়া।’ কাতারের আল জাজিরা।

    ‘জিয়া চৌধুরী ব্লেমস ইন্ডিয়া ফর ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স অফ রাজু মন্ডল।’ ইউরো নিউজ।

    ‘ওয়ান আওয়ার ডেডলাইন বাই জিয়া।’ সিএনএন।

    একগাদা চ্যানেলের ভিড়ে খাবি খেতে খেতে রকি দেখল তার ট্যাবে দুটো ইমেলের আইকন জ্বলজ্বল করছে। একেরে@জিমেল.কম —এই মেল আইডি কে কে জানে? মেঘনাদ জানে। জিয়া জানে। লুসি জানে কি? মনে পড়ছে না। বেশি না ভেবে প্রথম মেল খোলে রকি। মেঘনাদ লাহিড়ি খুব ডিটেলে মেল পাঠিয়েছে। একদম শেষে লিখেছে, ‘রিচ হাওড়া স্টেশন অ্যাজ আর্লি অ্যাজ পসিবল।’ মেল থেকে বালাজির মোবাইল নম্বর পেল রকি। বিট্টুকে বলল, ‘আমি হাওড়া স্টেশন যাব।’

    বিট্টু ফ্লাইওভার পেরিয়ে একটা সরু রাস্তায় গাড়ি ঢোকাল।

    ‘এই রাস্তার কী নাম?’ বিরক্ত হয়ে বিট্টুকে জিজ্ঞাসা করল রকি। সরু রাস্তায় দু’দুটো ট্রাম লাইন পাতা। একলাইনে একটা ট্রাম খারাপ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাস্তার দু’দিকে গাদাগাদা প্রাইভেট কার, ট্যাক্সি, অটোরিকশা, দু’চাকার রিকশা, তিনচাকার ভ্যান। গাড়ির এই কেঅসের মধ্যে ঝামেলা বাড়াচ্ছে বড়বড় স্টেট বাস। ওয়ারিস্তানে এইরকম ট্র্যাফিক জ্যাম সব সময়ে হয়। তবে রকি পৌঁছোনোর আগে সেইসব রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যায়। নিজের দেশে সে ভিআইপি, এখানে আম পাবলিক।

    ‘মহাত্মা গাঁধী রোড।’ সংক্ষিপ্ত জবাব বিট্টুর। রাস্তার নাম শুনে ক্যাজুয়ালি শ্রাগ করল রকি। সে শুনেছে ইন্ডিয়ার সব শহরে এই লোকটার নামে একটা করে রাস্তা আছে। কলকাতার সেই রাস্তার এই অবস্থা? বাপুর জন্মদিনে ট্র্যাফিক জ্যাম বাঁধিয়ে বাপুকে রেসপেক্ট জানাচ্ছে দেশের লোক? ওয়াহ ভাই ওয়াহ! ইন্ডিয়ার লোককে শাবাশি দিচ্ছে রকি, এমন সময় তার ট্যাবে প্রাইভেট নম্বর থেকে ফোন ঢুকল। কার হতে পারে? ফোনের সবুজ বোতাম টিপে রকি চুপ করে থাকে। কে কথা বলে দেখা যাক।

    ‘এদিকের খবর জানেন তো?’ গ্রিনবার্গের গলার আওয়াজ। রকি চুপ।

    ‘ধরে নিচ্ছি জানেন। আমি চাই যে ঘরের ছেলে ভালো হয়ে ঘরে ফিরে আসুক। তার জন্য যা যা করণীয় করুন।’ খসখসে গলায় বলল গ্রিনবার্গ।

    ঠান্ডা মাথায় কথাগুলো ডিকোড করল রকি। রাজুকে সুস্থ করে ওয়ারিস্তান ফেরত নিয়ে যেতে হবে।

    ‘আমি ডাক্তারবিবির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি সমস্ত ব্যাপারটা আমাকে বুঝিয়ে বলেছেন।’

    ঢোঁক গিলল রকি। ডাক্তারবিবি মানে লুসি লাহিড়ি। তার সঙ্গে গ্রিনবার্গ কথা বলেছে?

    ‘এই মুহূর্তে আসল কাজ হল পয়লা কদম ফেলা। জার্নি স্টার্টস ফ্রম ফার্স্ট স্টেপ। তাই তো, মিস্টার এ কে রে?’ গ্রিনবার্গের খসখসে গলায় হালকা হিউমার। ‘প্রথম রাতেই বেড়াল কাটুন। ঠিক আছে?’ লাইন কেটে গেল।

    ফার্স্ট। পয়লা। প্রথম। একাধিক ক্লু এসেছে। প্রথমা নামের বেড়ালটিকে কাটার জন্য ‘ডেথ সি শিপ ইয়ার্ড’-এর মালিক অর্ডার করছে রকিকে।

    রকির মনে হল, প্রথমা কোনও বেড়াল নয়। একটা ইঁদুর। ওয়ারিস্তানের জালে আটকা পড়ে মৃত্যুর ক্ষণ গুনতে থাকা ভারতীয় ইঁদুর।

    মেলবক্স থেকে দ্বিতীয় মেল পড়ে রকি। জিয়া পাঠিয়েছে।

    .

    রকি,

    সময় খুব কম। মোবাইল থেকে মেল করছি। এখানে একটা ক্যু হয়েছে। সেটা ঘটিয়েছি আমি। মায়া এখন আন্ডার সেলে হাউস অ্যারেস্ট হয়ে আছে। আমি-ই এখন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি রেডিয়ো স্টেশন, সরকারি টিভি অলরেডি আমার গুণগান শুরু করে দিয়েছে। রাজুর মতো আমিও মনে করি যে ইন্ডিয়াকে অ্যাটাক করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। আমি ওদের একঘণ্টার ডেডলাইন দিয়েছি। তারপরে কী হবে দেখা যাবে। নিড ইয়োর ব্লেসিংস।

    জিয়া।

    .

    জিয়া ইন্ডিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে যাচ্ছে? পাগল না ছাগল? গ্রিনবার্গ ওখানে কী করছে? বিরক্ত হয়ে রকি মেলের উত্তরে লিখল, ‘টক টু গ্রিনবার্গ ইমিডিয়েটলি।’

    সেটা পাঠিয়ে বিট্টুকে বলল, ‘এখন আমরা কোথায়?’

    ‘হাওড়া ব্রিজ।’ সংক্ষিপ্ত উত্তর বিট্টুর।

    জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে গঙ্গা দেখতে পেল রকি। ব্রিজে ট্র্যাফিক জ্যাম। তার ফাঁকফোকর দিয়ে গলে যাচ্ছে গাড়ি। লোকজন দৌড়ে দৌড়ে স্টেশানের দিকে যাচ্ছে। রাস্তায় টহল দিচ্ছে ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশের ভ্যান। বালাজি প্রথমাকে নিয়ে হাওড়া স্টেশানে থাকবে। তাহলে একেই ফোন করা যাক।

    রকির চোখের সামান হাওড়া স্টেশনের লালরঙা স্থাপত্য। সেসব না দেখে কানে ট্যাব দিয়ে রকি শুনল, বালাজির ফোনে রিং হচ্ছে।

    ১৩

    হাওড়া স্টেশান থেকে শেয়ালদা স্টেশন। ২ অক্টোবর।

    সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে সাড়ে বারোটা।

    .

    মেল ট্রেন এগিয়ে আসছে। পিস্টন, ফিশপ্টে, চাকা, ব্রেকের সম্মিলিত ধাতব শব্দে প্রথমার কান ফেটে যাচ্ছে। অথচ তার নড়ার ক্ষমতা নেই। ঝাঁপ মারার পরে দুই হাঁটু আর গোড়ালিতে এত জোরে লেগেছে যে সে বোধহয় আগামী একমাস হাঁটতে পারবে না। অবশ্য, মৃত্যু যেখানে এক মুহূর্ত দূরে তখন এসব ভেবে লাভ নেই।

    দুজনকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল একটা ছেলে। যারা প্ল্যাটফর্মে ঘুরে বেড়ায়, আঠা শুঁকে নেশা করে, ফেলে দেওয়া মিনারেল ওয়াটারের বোতল কুড়িয়ে ঝোলায় ভরে, নোংরা জামাকাপড় পরে থাকে, দিনের পর দিন চান করে না—এইরকম একটা ফচকে ছেলে। প্ল্যাটফর্ম থেকে একলাফে নেমে বছর বারোর ছেলেটা এক হাতে গণেশের আর অন্য হাতে প্রথমার ঘাড় ধরল। তারপর অমানুষিক গায়ের জোরে দুজনকে খাড়া করল। ট্রেন আর পাঁচ ফুট দূরে। ড্রাইভারের আতঙ্কিত মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে, ব্রেক পুরো দাবানোর পরেও সে ট্রেন থামাতে পারেনি।

    গণেশ এতক্ষণে হুঁশে এসেছে। সে দৌড়ে গিয়ে প্ল্যাটফর্মে দু’হাতের ভর দিয়ে ওপরে উঠতে গেল। তার আগেই দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা গণেশকে হ্যাঁচকা টানে ট্রেনের মরণকামড় থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তায় দাঁড়িয়ে গণেশ অবাক হয়ে দেখল প্রথমা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, সেই জায়গা পেরিয়ে, আরও ফুটতিনেক গিয়ে মেলট্রেন অবশেষে দাঁড়াল।

    মেল ট্রেন আসার আগের মুহূর্তে ছেলেটা প্রথমাকে ধাক্কা দিয়ে রেললাইনের ডানদিকে সরিয়ে দিয়েছে। নিজেও সরে গিয়েছে ডান দিকে। তারপর দুজনে দুই ট্রেনের মাঝখানে শুয়ে পড়েছে।

    ট্রেন দাঁড়ানোর পরে তড়াক করে উঠে ছেলেটা বলল, ‘আমার নাম সিন্টু। তোমার কী নাম?’

    ‘প্রথমা।’

    ‘ঢপের নাম। চলো, আমরা ট্রেনে উঠি।’ প্রথমাকে অবাক করে ট্রেনের চাকা, স্প্রিং, হাতল—এইসব জায়গায় পা দিয়ে মেলট্রেনে চড়ে সিন্টু। বন্ধ দরজার রেলিঙের ফাঁক দিয়ে ভিতরে হাত গলিয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে বলে, ‘উঠে এসো, পমদি।’

    তার দেখাদেখি হাঁচড়পাঁচড় করে প্রথমাও ট্রেনে চড়ে। যাত্রীদের ডিঙিয়ে, লাগেজ মাড়িয়ে কুলিদের গালাগালি শুনতে শুনতে অন্যদিক দিয়ে নেমে আসে।

    দূরপাল্লার ট্রেন থেকে ভারী ভারী লাগেজ নিয়ে যাত্রীরা নামছে। কুলিদের সঙ্গে শুরু হয়ে গেছে দর কষাকষি, বাড়ির লোকেদের জড়িয়ে ধরছে যাত্রীরা, প্ল্যাটফর্ম জুড়ে এখন খুশির আবহাওয়া। তার মধ্যে দাঁড়িয়ে গণেশ ভাবে, প্রথমাকে বাঁচানোর চেষ্টা বিফল হল? হতাশায় কেঁদে ফেলে সে।

    গণেশের প্যান্ট ধরে কেউ টানছে। গণেশ চোখ খোলে। সেই বাচ্চা ছেলেটা, যে তাদের বাঁচাতে রেললাইনে ঝাঁপ দিয়েছিল। ছোকরার চোখে ঝিকিমিকি হাসি। হাতের ইশারায় মেলট্রেনের কামরা দেখাচ্ছে।

    গণেশ দেখল, কামরা থেকে দৌড়ে নামছে প্রথমা। প্রাণে বেঁচে যাওয়ার জন্য আনন্দ হওয়া উচিত। কিন্তু প্রথমার মুখে আতঙ্কের ছাপ। যাত্রী এবং বাড়ির লোকেদের একধাক্কায় সরিয়ে সে দৌড়ে এল গণেশের কাছে। হাত ধরে বলল, ‘পালাও। বালাজি আসছে!’

    গণেশ আবার দৌড় লাগায়। হাতের মুঠোয় ধরা প্রথমার হাত। ফেরিওয়ালা, কুলি, যাত্রী, ভবঘুরে—সবাইকে অবাক করে দিয়ে দৌড়োতে থাকে তিনজনে। বারো নম্বর প্ল্যাটফর্মে লোকাল ট্রেন দাঁড়িয়ে। সেই ট্রেনের কামরায় উঠে পড়ে গণেশ। পাশেই এগারো নম্বর প্ল্যাটফর্ম। সেই লাইনেও একটা ট্রেন দাঁড়িয়ে। দু’টো ট্রেনের দরজা একটু আগুপিছু করে আছে।

    গণেশ আর সিন্টু একলাফে এই ট্রেন থেকে ওই ট্রেনে চলে যায়। প্রথমা পিছন ফিরে দেখল মেল ট্রেনের যাত্রীদের ঠেলে ভিড় কাটিয়ে এই দিকে দৌড়ে আসছে বালাজি আর বুনো। ওরা প্রথমাকে দেখতে পেয়েছে।

    সিন্টু পাশ থেকে চেঁচায়, ‘লাফাও পমদি!’

    সাহসে ভর করে প্রথমা লাফ দেয়। এগারো নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো ট্রেনে পৌঁছোনো মাত্র বারো নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো ট্রেন চলতে শুরু করেছে। বালাজি আর বুনো এখন এই ট্রেনে। তারা চলন্ত ট্রেন থেকে নীচে নামার চেষ্টা করছে। ট্রেন স্পিড বাড়াচ্ছে। সিন্টু চিৎকার করে বলে, ‘যা পাগলা! হাওয়া খেয়ে আয়!’

    ‘ওরা ঠিক নেমে পড়বে।’ এগারো নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে দৌড়োতে দৌড়োতে বলে গণেশ।

    ‘ওরা মানে কারা?’ পাল্লা দিয়ে দৌড়ছে সিন্টু।

    ‘কেন? তোর কী দরকার? হাঁফাতে হাঁফাতে বলে গণেশ। তারা এখন বড়ঘড়ির তলায়। প্রথমা সিন্টুর কবজি চেপে ধরে বলল, ‘গনেশদা, সিন্টুকে বকবে না? ও না থাকলে আমরা দুজনেই অক্কা পেতাম।’

    ‘তুমি তো হিরোইনি।’ প্রথমার দিকে আঙুল দেখায় সিন্টু, ‘কিন্তু এই লোকটা কে? সাইড রোল?’

    ‘ভ্যাট। মারব এক থাবড়া!’ সিন্টুর দিকে চড় তুলেছে প্রথমা। গণেশ প্রথমাকে বলে, ‘নষ্ট করার মতে সময় নেই। আমরা এখন শেয়ালদা যাব। কিন্তু তার আগে বল তোর হাতের প্যাকেটে কী আছে?’

    ‘কেন?’ অবাক হয়ে বলে প্রথমা।

    ‘সাঁত্রাগাছি স্টেশানে আমি আর তুই যখন এক কামরায় হলাম, তখন বালাজি কোথায় ছিল?’ সাবওয়ের দিকে হাঁটছে গণেশ।

    ‘রেলপুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল।’ সিন্টুর হাত ধরে পাশে পাশে হাঁটছে প্রথমা।

    ‘যদি ধরে নিই যে রেলপুলিশ বালাজিকে একমিনিটের মধ্যে ছেড়ে দিয়েছিল, তাহলেও ও ওই ট্রেনে উঠতে পারেনি। তাহলে আমাদের থেকে তাড়াতাড়ি হাওড়া স্টেশানে এল কী করে?’

    ‘এটা খুব সোজা গণেশদা। সাঁত্রাগাছিতে বুনো গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল। আমাদের ট্রেন হাওড়া স্টেশনে ঢোকার আগে, কারশেডে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েছিল। তার মধ্যে গাড়িতে হাওড়া স্টেশানে চলে আসা সম্ভব।’

    ‘মানলাম। কিন্তু কত নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দিয়েছে এটা ও জানল কী করে?’

    ‘এটাও সিম্পল গণেশদা। ডাউন ট্রেন কত নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসছে, এটা পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে অ্যানাউন্স করে।’

    ‘আমরা কোন কামরায় আছি এটা কী করে জানল?’

    ‘ফাঁকা ট্রেন, বালাজি সব কামরাই চেক করছিল।’ তুরন্ত জবাব প্রথমার। আর আমার প্যাকেটে কী আছে এর সঙ্গে এইসব প্রশ্নের কী সম্পর্ক?’

    ‘আমার ধারণা তোর ওই প্যাকেটে জিপিএস আছে।’ প্রথমার হাত থেকে প্যাকেট নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছে গণেশ।

    প্রথমা জিজ্ঞাসা করল, ‘জিপিএস কী?’

    গ্লোবাল পোজিশানিং সিস্টেম। ছোট্ট যন্তর। যেটা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কানেক্টেড থাকে। তোর শার্টের বোতামের মধ্যে জিপিএস রেখে দিলে তুই টেরও পাবি না। কিন্তু বাড়িতে বসে কম্পিউটারের মনিটরে তোর অবস্থান নিখুঁত দেখতে পাবে মেঘনাদ।’

    ‘হ্যাঁ, আমি জানি’, বিজ্ঞের মতো ঘাড় নাড়ে সিন্টু, ‘মোবাইলে ওইভাবেই বলে দেয় তুমি কোন এলাকায় আছ।’

    ‘উরেব্বাস! হেবি, বললি, কিন্তু,’ সিন্টুর পিঠ চাপড়ে দেয় গণেশ। ‘মোবাইলের টাওয়ার লোকেশান দেখে ওইভাবেই ক্রিমিনাল ধরে পুলিশ।’

    ‘তোমার দেওয়া মোবাইল পলিথিনের প্যাকেটে রয়েছে। ওটা দিয়ে আমাকে লোকেট করছে না তো?’ প্যাকেট থেকে মোবাইল বার করে প্রথমা।

    ‘আনলাইকলি!’ প্রথমার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে সিমকার্ড বার করে গণেশ। সিমকার্ড সাবওয়েতে ফেলে কমব্যাট বুটের লাথিতে চিপ গুঁড়িয়ে দেয়। মোবাইল ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। প্রথমার প্যাকেট নিয়ে নীল শার্টের বোতাম, লাইনিং, পাজামার ইলাস্টিকের ঘর টিপে টিপে দেখে। বলে, ‘এগুলোয় জিপিএস নেই। তবে এগুলো ফেলে দেওয়াই ভালো।’ প্রথমা প্যাকেটটা ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।

    সিন্টু ডাস্টবিন থেকে মোবাইল তুলে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছে। গণেশ বলল, ‘অ্যাই, তুই আমাদের সঙ্গে আসছিস কেন? বাড়ি যা!’

    সিন্টু খিকখিক করে হেসে বেসুরো গলায় গান গাইল, ‘আমার বাড়ি তোমার বাড়ি আমার বাড়ি নেই। পথে ফেলে দিলে আমায় পথেই পড়ে রই।’

    ‘ওর বাড়িঘর নেই। আমাদের সঙ্গে চলুক।’ সিন্টুর হাত ধরে প্রথমা বলে, ‘গণেশদা, তুমি বলো, সেই রাতে কী হয়েছিল? আমাদের ক্রায়োপ্রিজার্ভ করার কথা জানার পরে তুমি কী করলে?’

    সাবওয়ে থেকে বাইরে বেরিয়েছে তিনজন। জাতীয় ছুটির দিকে রাস্তায় লোকজন কম। যারা আছে, তারা ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়চ্ছে। যেন, ট্রেন বা বাস মিস হয়ে গেলে তাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে। গণেশ আপনমনে বলল, ‘কী হল রে বাবা! শহরটা অন্যরকম লাগছে কেন!’

    হাওড়ার বাসস্ট্যান্ডে বাস কম। ফাঁকা স্টেট বাসে উঠল তিনজনে। সামনের দিকে জানলার ধারে বসেছে সিন্টু। তার পিছনের সিটে জানলার ধারে প্রথমা বসল। তিনটে শেয়ালদার টিকিট কেটে প্রথমার পাশে বসে গণেশ বলল, ‘পেস্ট্রি আর কফিতে কড়া ডোজে ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিল। তুই অজ্ঞান হয়ে গেলি। তোকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে খড়গপুরে নিয়ে গেল সনাতন। ওই দৃশ্য দেখে, সেই রাতেই আমি রি-লাইফ থেকে পালাই। সঙ্গে নিয়ে নিই ষষ্ঠীকে। বাকিদেরও বলেছিলাম। ওরা আসতে রাজি হয়নি।’

    ‘তারপর?’

    ‘তারপর আর কী? ফিউজিটিভ হয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানো। প্রথমে আমরা গেলাম মধ্যপ্রদেশের এক ছোট শহরে। ইশকুলের ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট টিউশনি দিতাম। মুশকিল হল তিন জায়গায়। এক নম্বর, তাড়াহুড়ো করে পালানোর সময়ে কোনও অরিজিনাল ডকুমেন্ট সঙ্গে নিতে পারিনি। ভোটার কার্ড বা স্কুল-কলেজের মার্কশিট ছিল না। ডকুমেন্টের অভাবে কেউ আমাদের বিশ্বাস করছিল না। নেহাত খারাপ পড়াতাম না, তাই টিউশনি জুটে যেত। ষষ্ঠীর অবস্থা খুব খারাপ। মেঘনাদ ওর কোনও পরিচয়পত্র বানায়নি।’

    ‘আমার মতো কেস।’ ফুট কাটে সিন্টু। সে মন দিয়ে গণেশের গপপো শুনছে।

    ‘চুপ কর।’ সিন্টুর মাথায় চাঁটি মেরে গণেশ বলে, ‘বেচারা কোনও স্কুলে ভরতি হতে পারছিল না। আমিই পড়াচ্ছিলাম। এমন সময়ে দ্বিতীয় ঘটনাটা ঘটল।’

    বাস বড়বাজারের মধ্যে দিয়ে ঢিকিয়ে ঢিকিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় ট্রাম, বাস, ঠেলা, তিনচাকা ভ্যান, টেমপো, অটো, ম্যাটাডোর মিলিয়ে এমন একটা জ্যাম বাঁধিয়ে রেখেছে, যেটা কোনও দিনও শুধরোবে বলে মনে হয় না। প্রথমা বলল, ‘কী ঘটনা?’

    ‘মেঘনাদ আমার নামে পুলিশে এফআইআর করল। আমি নাকি অনাথ আশ্রমের তহবিল তছরুপ করে পালিয়েছি। খবরের কাগজে আমার ছবি দিয়ে ‘সন্ধান চাই’ এবং ‘ওয়ান্টেড’ বিজ্ঞাপন বেরোল। কাগজে বেরোলে কোনও অসুবিধে ছিল না। আমি যেখানে থাকতাম, ওখানে কাগজ পড়ার রেওয়াজ কম। টিভিতে আমার ছবি দেখিয়ে মুশকিল করে দিল। আমাকে মধ্যপ্রদেশ ছাড়তে হল।”

    ‘তুমি সত্যি সত্যি মালকড়ি ঝেড়ে ভাগোনি তো?’ জানতে চায় সিন্টু।

    সিন্টুর মাথায় হাত বুলিয়ে গণেশ বলে, ‘তাই যদি হত, তাহলে ষষ্ঠীর হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কোনও পুলিশি তদন্ত হল না কেন? মেঘনাদ কেন বলল না যে আমি ষষ্ঠীকে কিডন্যাপ করেছি?’

    ‘এটাও ভাববার বিষয়। তোমাকে না জড়িয়ে হোক, ষষ্ঠীর নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া নিয়ে কোনও তদন্ত হয়নি কেন?’

    ‘মেঘনাদের সঙ্গে দেখা হলে জিজ্ঞাসা করিস।’

    ‘ওসব বাদ দাও। মধ্যপ্রদেশ থেকে তুমি কোথায় গেলে?’

    ‘কোথথাও না। বাপ বাপ বলে ব্যাক টু বেঙ্গল। ভেবে দেখলাম, কলকাতা শহরের মতো লুকিয়ে থাকার ভালো জায়গা কোথাও নেই। ভাষা নিয়ে সমস্যা নেই। চেহারা নিয়ে সমস্যা নেই। দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের সংস্থান হয়ে যাবে। আর এই শহরে প্রতিদিন হাজারে হাজারে ভিনদেশি লোক এসে নিজের পরিচয়পত্র বানিয়ে নিচ্ছে। আমি কলকাতার ছেলে হয়ে পারব না? খিদিরপুর বস্তিতে বেনামে ঘর ভাড়া নিলাম। বললাম, কুচবিহার থেকে এসেছি। ট্রেনে সব ডকুমেন্ট হারিয়ে গেছে। ওখানকার নেতা আমার একটা কথাও বিশ্বাস করল না। তবে লোকাল বাচ্চাদের ফ্রিতে পড়াতাম বলে এলাকায় সুনাম হল। মাস তিনেকের মধ্যে আমার নতুন নাম হল বিনায়ক বাগচি। ষষ্ঠীর কোনও কাগজটাগজ ছিল না। সে দিব্যি বার্থ সার্টিফিকেট আর র‌্যাশন কার্ড পেয়ে নাচতে নাচতে স্কুলে যেতে লাগল।’

    ‘বার্থ সাটিফিকেটে কী নাম দিয়েছিলে?’ দরকারি প্রশ্নটা করল প্রথমা।

    ‘আমাদের জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গাঁধী। মোহনদাসের নামের মাঝখানে স্পেস দিতেই পদবি বেরিয়ে এল। মোহন দাস। রি-লাইফের ষষ্ঠীচরর লাহিড়ী এখন রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের ছাত্র মোহন দাস।’

    প্রথমা ঘুমোতে যাবার সময় তার বয়স ছিল ষোলো বছর। পড়ত ক্লাস টেনে। না ঘুমোলে সে-ও ষষ্ঠীর মতো কলেজে পড়ত। এখন ষষ্ঠীকে দাদা বলতে হবে নাকি? মাথা থেকে আলতুফালতু চিন্তা সরিয়ে প্রথমা বলে, ‘ষষ্ঠী তাহলে কলেজে পড়ে। তুমি কী করো?’

    ‘আমরা দুজনে একটা ছোট্ট বিজনেস করি। আমাদের কোম্পানির নাম হেল্পিং হ্যান্ড। আমরা বাড়ি বাড়ি আয়া আর কাজের লোক সাপ্লাইয়ের কাজ করি। আমাদের ডেটাব্যাঙ্ক আছে। একদিকে লোকেশান-ওয়াইজ বুড়োবুড়িদের ঠিকানা। অন্যদিকে আয়া আর কাজের লোকেদের ঠিকানা। লোকেশান মিলিয়ে তাদের পাঠাই। আমাদের একটা কমিশান থাকে। সব আয়া আর কাজের লোকের পুলিশ ভেরিফিকেশান করা আছে।’

    ‘এদের পুলিশ ভেরিফিকেশান লাগছে, আর তোমার লাগছে না? পুলিশ বুঝতে পারছে না যে বিনায়ক বাগচি আসলে গণেশ লাহিড়ি, যে পাঁচ বছর আগে রি-লাইফের তহবিল তছরূপ করে পালিয়েছিল?’

    ‘অপরাধ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ কোনও বিষয়ে নাক গলায় না। সেই গণেশের সঙ্গে এই বিনায়ককে মেলাতে গেলে একটা অপরাধ লাগবে। যেটা এখনও আমি করিনি। তবে এবার করব।’

    ‘মানে?’ আঁতকে ওঠে প্রথমা। ট্র্যাফিক জ্যাম আর নেই। ঠিক সামনে একাত্তর নম্বর বাস খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যাচ্ছে। রাস্তা এত সরু যে ওভারটেক করা সম্ভব নয়। স্টেট বাস গুড়গুড় করে হাঁটছে। প্রাইভেট গাড়ি বা ট্যাক্সি অবশ্য হুশহাশ গলে যাচ্ছে। একটা লাল সেকেন্ডহ্যান্ড হ্যাচব্যাক প্রচণ্ড জোরে হর্ন দিতে দিতে তাদের বাসটাকে পেরিয়ে গেল।

    ‘রি-লাইফে আমার সাপ্লাই করা দুজন মেয়ে কাজ করে। তাদের কাছ থেকে আমি অনাথ আশ্রম আর মেডিক্যাল সেন্টারের প্রতিটি মুহূর্তের খবর পাই। মেঘনাদের চেম্বারে মাইক্রোরেকর্ডার বসানো আছে। দিনের শিফটে যে আয়া থাকে সে রাত দশটায় চেম্বার পরিষ্কার করার সময়ে পুরোনো সিডি বার করে নতুন সিডি লাগিয়ে চেম্বার ছাড়ে। রাত এগারোটার সময়ে সিডি হাতে পেয়ে আমার প্রথম কাজ সেটা শোনা। ওই থেকেই তো তোর খবর জানলাম। তা না হলে, বালাজির আগে তোর কাছে কী করে পৌঁছোলাম?’

    হাঁফ ছেড়ে প্রথমা বলে, ‘তুমি আমার কাছে পৌঁছোলে কী করে, এটা নিয়ে আমি খুব কনফিউজড ছিলাম। এতক্ষণে ক্লিয়ার হল। তুমি কি গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলে?’

    ‘খিদিরপুর থেকে সারাদিন লরি আর ট্রাক ছাড়ে দিল্লি আর মুম্বইয়ের উদ্দেশে। সিডিটা শোনার পরে লরিতে উঠে পড়েছিলাম। অ্যাক্সিডেন্ট স্পটে পৌঁছে দেখি ভিড়ে থিকথিক করছে। পুলিশ, মিডিয়া, স্থানীয় লোক, প্রশাসন—সবাই হাজির। তারই মধ্যে বালাজি তোর একটা ফটো বার করে সবাইকে দেখিয়ে বলছে ‘একে দেখেছেন?’ বালাজি আমাকে দু’একবার দেখেছে। কাজের মেয়ে খোঁজার জন্য হেল্পিং হ্যান্ডে এসেছিল। কাজেই ওর মুখোমুখি হওয়া যাবে না। আড়ালে দাঁড়িয়ে খেয়াল করলাম একটা লোক বালাজির হাতের ছবিটা দেখে থমকে গেল। তারপর অ্যাক্সিডেন্ট স্পট থেকে পালাল। আমি তার পিছু নিয়ে বাড়ি পৌঁছে শুনি, স্বামী-স্ত্রী মিলে তোকে নিয়ে আলোচনা করছে। ওদের জিজ্ঞাসা করে তোর অবস্থান জানতে পারি।’

    ‘উমা আর কৃষ্ণপদ,’ বাসের জানলায় মুখে রেখে বলে প্রথমা। বাস শেয়ালদা ফ্লাইওভারে উঠছে। ছবিঘর সিনেমা হলের পাশ দিয়ে ওপরে উঠে ডান দিকে ঘুরবে। প্রথমা বলল, ‘তুমি যেভাবে আমার সন্ধান পেয়েছ, বালাজি কি সেইভাবেই পেয়েছে?’

    ‘কোলাঘাটে অ্যাক্সিডেন্টের খবর পেয়ে ওরা মুভ করা শুরু করে। বালাজি গাড়িতে, আমি লরিতে। আমি খবর পেয়েছি বালাজি জানার একঘণ্টা পরে। তাও আমি তোকে আগে ধরতে পেরেছি। এটার জন্য হেডে একটু ব্রেন লাগে।’

    ‘জিপিএস কীরকম দেখতে হয় বলো তো?’ জানতে চায় প্রথমা। তার মাথায় অন্য এক সম্ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে। হাতের বালার কথা গণেশদাকে বলতেই হবে।

    ‘ছোট্ট বোতাম থেকে পিনের মাথা থেকে দেশলাই বাক্স—জিপিএসের চেহারা যা খুশি হতে পারে। মিলিটারিদের কাছে যে জিপিএস আছে তাতে কয়েকশো মিটারের অ্যাকিউরেসি হয়। বাজারে যেসব ট্র্যাকার পাওয়া যায়, তারা একদম পিন পয়েন্ট করতে পারে না। বড়জোর বলবে, তুই শেয়ালদা চত্বরে আছিস। কিন্তু শেয়ালদা বড় জায়গা। ওভাবে কাউকে পাওয়া যায় না। তুই ট্র্যাকারের কথা জিজ্ঞাসা করলি কেন?’

    শেয়ালদা কোর্টের পাশ দিয়ে ঘুরে বাস দাঁড়িয়েছে স্টেশানের সামনে। কথা ঘুরোতে প্রথমা বলল, ‘আমরা এবার কোথায় যাব?’

    গণেশ উত্তর দিল না। সে বাসের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে। সিট থেকে উঠে প্রথমা বলে, ‘কী হল? কোথায় যাব?’

    গণেশ ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, ‘কোথাও যাবার উপায় রেখেছিস? জানলা দিয়ে দেখ।’

    প্রথমা জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখল, লাল রঙের একটা হ্যাচব্যাক এসে স্টেট বাসের দরজা গার্ড করে দাঁড়িয়েছে। গাড়ি থেকে নামছে বালাজি আর বুনো। ড্রাইভারের সিটে রোগামতো একটা লোক বসে।

    ১৪

    রাষ্ট্রপতি ভবন। গেট নম্বর পঁয়ত্রিশ। প্রকাশ বীর শাস্ত্রী অ্যাভিনিউ, নতুন দিল্লি, ভারতবর্ষ। দুপুর দেড়টা।

    .

    ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট, উই নিড ইয়োর পারমিশান।’ বলল কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাকেশ জৈন।

    ‘পারমিশান ফর হোয়াট?’ জানতে চাইলেন অরুণ ‘নীরব যোদ্ধা’ চ্যাটার্জি। রাকেশ বলল, ‘আর্মি, নেভি এবং এয়ার ফোর্সের তিন কমান্ডার এসেছেন। আপনার অনুমতি চাইতে।’

    অরুণ চুপ করে রইলেন। যদিও এখন তাঁর চুপ থাকার সময় নয়। কথা বলার সময়। এগারোটার সময়ে ওয়ারিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মায়া মল্লিকের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, সব কিছু ঠিক আছে। সেই কথোপকথনের একঘণ্টার মধ্যে সেনাপ্রধান জিয়ার নেতৃত্বে ওয়ারিস্তানে ক্যু হয়েছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী জিয়া চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেই ভারতবর্ষকে একঘণ্টার ডেডলাইন দিয়েছে। তার পরে যুদ্ধ।

    এই সেই সময়, যখন রাষ্ট্রপতির অঙ্গুলিহেলনের অপেক্ষায় থাকে গোটা দেশ। দেশের সুরক্ষার জন্য নির্মিত আর্মি, নেভি এবং এয়ারফোর্স। এই তিন বাহিনীর জওয়ানরা দেশের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। আর্মির প্রধান ইউ কে নায়ার, নেভি চিফ যশপাল নেগি, এয়ার ফোর্সের অরূপ রাহা অরুণের কাছে যুদ্ধের অনুমতি নিতে এসেছে। অরুণ ‘না’ বললে, তিন সেনানায়ক রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরিয়ে যাবে। ভারতীয় আর্মির মর‌্যাল চিরকালের জন্য ডাউন হয়ে যাবে। ইতিহাসের পাতায় অরুণের নাম ভিলেন হিসেবে লেখা হয়ে থাকবে।

    নায়ার, নেগি, রাহাকে অরুণ বললেন, ‘আপনারা বসুন। চা খান।’ তিন জনেই বসল। তাদের মুখে কোনও অভিব্যক্তি নেই। নেই, কারণ প্রকৃত অভিব্যক্তি তারা প্রকাশ করতে পারছে না। রক্তপিপাসু বাঘকে একবাটি পায়েস দিলে তার কেমন অভিব্যক্তি হয়?

    অরুণ টেবিলের অন্য প্রান্তে বসে থাকা রেণুকা মান্ডিকে বললেন, ‘ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন ব্রিফ করো।’

    ‘এভরিথিং আন্ডার কনট্রোল স্যার।’ উঠে দাঁড়িয়ে বলে রেণুকা। অরুণ বলেন, ‘তুমি প্রেগন্যান্ট। বসে কথা বলো।’

    ‘আমি সব রাজ্যের সরকার এবং বিরোধী দলের সঙ্গে কথা বলেছি। একজনও আপত্তি করেনি। প্রতিটি রাজ্যে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং পলিটিক্যাল পার্টি মিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে। কোথাও কোনও গণ্ডগোলের খবর নেই। ইনফ্যাক্ট, ওয়ারিস্তানের তরফে যুদ্ধঘোষণার পরে রাস্তায় লোকজন কমে গেছে। যারা বেরিয়েছিল, তারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। সরকারি এবং বেসরকারি অফিসে ছুটি ডিক্লেয়ারড হয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ। ট্রেন এবং বিমান চলাচল এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে।’

    ‘হ্যাঁ। মিডিয়ার ভূমিকা খুবই সন্তোষজনক,’ ঘাড় নাড়েন অরুণ। ‘দেশের আভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে আপাতত মাথা ঘামাতে হবে না। মেধা, তোমার তরফে কোনও ডেভেলপমেন্ট?’

    মেধা ধাবোলকার চুপচাপ বসেছিল। অরুণের প্রশ্নের উত্তরে বলল, ‘সাংবাদিক সম্মেলন সফল। তবে আপনি যদি আমার অভিমত চান, তাহলে বলব, উই শুড গো ফর ওয়ার। ওদের এই বাঁদরামি আর ভালো লাগছে না।’

    তিন সেনানায়ক নীরবে ঘাড় নাড়ল। অরুণ বললেন, ‘রাকেশ, তোমারও তাই মত?’

    ‘ইয়েস, রেসপেক্টেড প্রেসিডেন্ট, আমি তাই-ই মনে করি। আমি আগেই বলেছিলাম যে ওয়ারিস্তানের মতো দ্বীপদেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে আমাদের আরও কয়েকটা রণতরীর প্রয়োজন। তখন কেউ আমার কথা শোনেননি। এখন কিয়েভ ক্লাস অ্যান্টি এয়ারক্রাফট কেরিয়ারের দরকার বোঝা যাচ্ছে।’

    অরুণ চুপ। রাকেশ বলল, ‘মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আপনি আমার সঙ্গে সহমত নন?’

    ‘আমার মত এখন অপ্রাসঙ্গিক। আমি শুধু বলতে পারি যে এই যুদ্ধ বন্ধ করার একটা উপায় আমার জানা আছে। আপনারা কেউ কি সেটা শুনতে ইচ্ছুক?’

    উপস্থিত তিন সেনাপ্রধান কোনও আগ্রহ দেখাল না। অরুণের সম্মানরক্ষার্থে হরভজন বললেন, ‘আপনি বলুন।’

    ‘আমার সমস্যা হল, ওয়ারিস্তান কেন যুদ্ধ চাইছে, এটা আমি বুঝতে পারছি না। প্রক্সি-ওয়ারের যে ট্র্যাডিশান ওয়ারিস্তানের আছে, তার সঙ্গে এই যুদ্ধ ঘোষণা যাচ্ছে না। সামথিং ইজ মিসিং ইন দ্য প্ট। জিগ-স পাজলের একটা টুকরো আমি পাচ্ছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি এই বিষয়ে কিছু বলবেন?’

    হরভজন আড়চোখে অরুণের দিকে তাকালেন। অরুণ আগের মতোই বদ রয়ে গেছেন। নিজে পর্দার আড়ালে থেকে হরভজনকে ঠেলে দিচ্ছেন স্পটলাইটের বৃত্তে।

    ‘লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলম্যান।’ গলা খাঁকরে শুরু করলেন হরভজন, ‘আপনাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলছে, আপনাদের কারও কারও ভিন্ন মত আছে। থাকতেই পারে। তবে মনে রাখতে হবে, আমরা কাজ করছি টিম ইন্ডিয়া হিসেবে। কেউ উইকেটকিপার, কেউ ব্যাটসম্যান, কেউ ফিল্ডার, কেউ স্পিনার, কেউ ফাস্ট বোলার, কেউ স্কিপার। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য একটাই। ওয়ারিস্তানকে হারানো।’

    ‘ওয়ার ইজ নট ক্রিকেট।’ বিরক্ত মুখে বলল রাকেশ।

    ‘ট্রু। বাট ইফ ইন্ডিয়া উইনস, ডু ইউ সেলিব্রেট?’

    ‘অফকোর্স আই ডু।’

    ‘দেন, উইনিং ম্যাটারস মোস্ট। আর জেতাটা রান চেজ করে হল, না পনেরো ওভারের মাথায় সবাইকে আউট করে, সেটা অবান্তর।’

    অরুণ হরভজনকে বললেন, ‘আপনি স্টেট লেভেলে ক্রিকেট খেলেছেন, একথা আমরা জানি। আপনি যদি মূল বিষয়ে প্রবেশ করেন, তাহলে ভালো হয়।’

    ‘মূল কথা ওয়ারিস্তানকে হারানো। সেটা যুদ্ধ করে, না, না করে—এইটা চিন্তা করতে হবে।’

    রাহা বলল, ‘ওরা যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে। এখন আমরা পাশ কাটাতে পারি না।’

    ‘না। ওরা যুদ্ধঘোষণা করেনি। একঘণ্টার সময়সীমা দিয়েছে। শুধু রণহুঙ্কার দিয়েছে। আমি আপনাদের কথা দিলাম, সীমান্তে একটা গুলি চললে, আন্তর্জাতিক সীমা পেরিয়ে একটা যুদ্ধবিমান বা যুদ্ধজাহাজ ভারতের সীমানায় ঢুকে পড়লে আমরা সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ব। কিন্তু প্রথম গুলি আমরা ছুঁড়ব না। ওদের শুরু করতে দিন।’

    ‘জিয়া কিন্তু গুলি ছুঁড়বে না স্যার। ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়বে। ফার্স্ট টার্গেট দিল্লি। হয়তো এই রাষ্ট্রপতি ভবন।’ ঘৃণাভরে বলে রাকেশ। তার দিকে তাকিয়ে অরুণ বলেন, ‘আমি জিয়ার কাছ থেকে দু’ঘণ্টা সময় চেয়ে নিচ্ছি। কীভাবে, সেটা আমার ওপরে ছেড়ে দিন।’

    অরুণ গলা তুলে বললেন, ভাণ্ডারী, ওয়ারিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ফোন করো। বলো ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী জিয়া চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে চান। ফোন সংক্রান্ত সমস্ত প্রাোটোকল মেনটেন করো।’

    পাশের ঘর থেকে ভাণ্ডারী আর এক কর্মচারী এই ঘরে এসে ফোনের বোতাম টিপল। রিং হচ্ছে…অরুণ তাঁর বাংলা উচ্চারণের উর্দুতে গুনগুন করছেন,

    .

    ‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা হিন্দুস্তান হমারা

    হম বুলবুলে হ্যায় ইসকে, ইয়ে গুলসিতা হমারা।

    .

    হ্যালো।’ ওপ্রান্ত থেকে পুরুষকণ্ঠ বলল, ‘দিস ইজ আব্রাহাম, ফ্রম প্রাইম মিনিস্টারস অফিস ইন ওয়ারিস্তান। দিস কনভার্সেশান ইজ বিয়িং রেকর্ডেড। আই অ্যাম হ্যান্ডিং ওভার দ্য লাইন টু রেসপেক্টেড প্রাইম মিনিস্টার।’

    ‘সেম প্রাোসিজিয়োর ইজ বিয়িং ক্যারিড ওভার হিয়ার। থ্যাঙ্কস।’ ভাণ্ডারী বলল।

    হরভজন বললেন, ‘হ্যালো, আমি কি জিয়া চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলছি?’

    .

    ওয়ারিস্তান রাষ্ট্রের ইস্টার্ন প্রভিন্স। আশিকানা প্রাসাদ।

    দুপুর দেড়টা থেকে পৌনে দুটো।

    .

    আশিকানা প্রাসাদে রকির ঘরে, রকির চেয়ারে বসে জিয়া সিঙ্গল মল্টে চুমুক দিচ্ছিল। গ্রিনবার্গ পাশে বসে মোবাইলে নীচু গলায় কারো সঙ্গে কথা বলছে। তাতিয়ানা নাভিনৃত্য পরিবেশন করছে। তাতিয়ানাকে নিয়ে এসেছিল রকি। সে নেই বলে মেয়েটাকে তো আর বসিয়ে রাখা যায় না। তাই তাতিয়ানা নাচছে। তবে জিয়া কোনও গ্রিক টয়বয় পেলে খুশি হত। চাচাম-চানান বলিউডের আইটেম সং পরিবেশন করছে। ইন্ডিয়া যত বড় শত্রু হোক না কেন, হিন্দি ফিল্ম ছাড়া ওয়ারিস্তানের মানুষ থাকতে পারে না।

    মদ খাওয়া জিয়ার স্বভাবে নেই। কিন্তু আজ সকাল থেকে যা যা ঘটল, তাতে মাথার ঠিক নেই। স্নায়ু শিথিল করার জন্য এই মদ্যপান।

    রকির পরামর্শমতো জিয়া রণহুঙ্কার দিয়েছিল। কিন্তু ইন্ডিয়ার প্রাইম মিনিস্টার মায়ার সঙ্গে ফোনে কথা বলে প্রকৃত পরিস্থিতি বুঝে গিয়েছিল। জিয়া তাই মায়াকে গ্রেফতার করে, নিজে প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশে সেনাশাসন চালু করেছে। সেনাশাসন সাধারণ মানুষ অপছন্দ করে। তাদের দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য অন্য উপায় আছে। বিদেশি শত্রুর জুজু দেখিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। ভাতকাপড়ের অভাবে ওয়ারিস্থানিরা যখনই সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে শুরু করে, তখনই ওয়ারিস্তান গভর্নমেন্ট আন্তর্জাতিক জলসীমান্তে অনুপ্রবেশকারীর ছায়া দেখতে পায়। দীর্ঘ দিন ধরে পার্টি নির্বিশেষে প্রতিটি সরকার এত নিবিড় অ্যান্টি-ইন্ডিয়া প্রচার চালিয়েছে যে ওয়ারিস্তানিদের যুক্তিবুদ্ধি লোপ পেয়েছে।

    ওয়ারিস্তানের সমস্যা এখন গভীর। ডেসপারেট নিডস কল ফর ডেসপারেট মেজারস। জিয়া তাই যুদ্ধের হুঙ্কার ছেড়েছে। যুদ্ধের অ্যাডভানটেজ দুটো। একনম্বর, ওয়ারিস্তানের মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরানো। দু’নম্বর, ইন্ডিয়াতে আভ্যন্তরীণ সংকট তৈরি করা। ইন্ডিয়া এখন ইন্টার্নাল ক্রাইসিস সামলাতে ব্যস্ত থাকবে। সেই ঘোলা জলে রাজু মন্ডলের অপারেশন করিয়ে রকি ভালোয় ভালোয় ওয়ারিস্তান ফিরে আসবে। বল এখন ইন্ডিয়ার কোর্টে। ওরা সন্ধি প্রস্তাব দিলে সাপ মরবে, লাঠিও ভাঙবে না। এই সব ভাবতে ভাবতে সিঙ্গল মল্টে চুমুক দেয় জিয়া। এই সময় আব্রাহাম ঘরে ঢুকে বলল, ‘ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ফোন।’

    ‘মিউজিক্যাল ব্রাদার্স অফ ওয়ারিস্তান’ গান থামিয়ে দিল। তাতিয়ানা নাচ থামিয়ে পটি করতে গেল। গ্রিনবার্গ ইশারায় জিয়াকে গ্লাস নামিয়ে রাখতে বলল। আব্রাহাম স্পিকার ফোন এবং অত্যাধুনিক রেকর্ডার অন করে বলল, ‘দিস ইজ আব্রাহাম, ফ্রম প্রাইম মিনিস্টারস অফিস ইন ওয়ারিস্তান। দিস কনভার্সেশান ইজ বিয়িং রেকর্ডেড। আই অ্যাম হ্যান্ডিং ওভার দ্য লাইন টু রেসপেক্টেড প্রাইম মিনিস্টার।’

    স্পিকার ফোনে শোনা গেল, ‘সেম প্রাোসিজিয়োর ইজ বিয়িং ক্যারিড ওভার হিয়ার। থ্যাঙ্কস।’ আব্রাহাম ইশারায় জিয়াকে কথা শুরু করতে বলল। জিয়া চুপ। ওপ্রান্ত থেকে শোনা গেল, ‘হ্যালো, আমি কি জিয়া চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলছি?’

    ‘বলছেন। গুড আফটারনুন রেসপেক্টেড প্রাইম মিনিস্টার।’

    ‘গুড আফটারনুন টু ইউ টু। আমার একটা কথা বলার ছিল।’

    ‘বলুন।’

    ‘আপনি হঠাৎ যুদ্ধ ঘোষণা করলেন কেন?’

    ‘আপনারা ওয়ারিস্তান বিরোধী কার্যকলাপ করবেন, আর সেটা আমি মেনে নেব?’ গলা চড়িয়ে, কণ্ঠস্বরে নাটক এনে, ফোনের দিকে রক্তচোখে তাকাল জিয়া। পারলে সে দৃষ্টি দিয়ে ভস্ম করে দেয় ইন্ডিয়াকে।

    ‘আপনি খুব ভালোভাবে জানেন যে আপনি যা বলছেন, তা সত্যি নয়।’

    ‘আপনি কিন্তু সীমার বাইরে গিয়ে কথা বলছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।’ হিশহিশ করে বলে জিয়া। তার হাতে এখন এম সিক্সটিন। গ্রিনবাগ ইশারায় জিয়াকে বলল, ‘কুল ডাউন, কুল ডাউন।’

    ‘হ্যাঁ, বলছি’, ‘হঠাৎ হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন পঞ্চনদের তীরের শিখপুঙ্গব হরভজন। ‘ক্যুদেতার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জেনে রাখুন যে শান্তিপ্রস্তাব দিতে আমি ফোন করিনি। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে আপনি যুদ্ধে আহ্বান জানিয়েছেন। সারা বিশ্ব এই সংবাদ জানে। ওয়ারিস্তানের এই চ্যালেঞ্জ আমি ও আমার দেশ অ্যাকসেপ্ট করছি। আমি চাইলে এই মুহূর্ত থেকে যুদ্ধ শুরু হতে পারে। আমি চাইলে আপনার দেশের ইস্টার্ন, ওয়েস্টার্ন সেন্ট্রাল, নর্থ ও সাউথ প্রভিন্সকে আগামী পাঁচ মিনিটের মধ্যে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারি। কিন্তু মেশাব না। আমি চাই, যুদ্ধ শুরু করুন আপনি। আর শান্তিপ্রস্তাব থাকলে সেটাও আপনার কাছ থেকে আসুক। আপনি আমাকে একঘণ্টা সময় দিয়েছিলেন। আমি আপনাকে ঠিক পনেরো মিনিট সময় দিলাম। আপনি ভেবেচিন্তে আমায় ফোন করুন। ফোন এলে আলোচনার দরজা খোলা রইল। না এলে…’

    গ্রিনবার্গ ইশারায় আঙুল নেড়ে ‘দুই’ দেখাচ্ছে। ইশারা বুঝে জিয়া বলল, ‘আম…আমি…মানে আমরা একটা মিটিঙের মধ্যে আছি। পনেরো মিনিট নয়, আমরা দু’ঘণ্টা বাদে যোগাযোগ করছি।’

    ‘অত সময় দেওয়া যাবে না।’ ফোনে ভেসে এল অন্য এক স্বর। আব্রাহাম তাড়াতাড়ি বলল, ‘প্রাোটোকল ভেঙে কে কথা বলছেন?’

    ‘আমি ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপতি অরুণ চ্যাটার্জি।’ বন্ধুত্বপূর্ণ গলায় বললেন অরুণ। ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা প্রশ্নের উত্তর এখনই দিলে ভালো হয়। সেটা হল, উনি যুদ্ধ চাইছেন কেন?’

    ‘আপনাদের পররাষ্ট্রনীতি কত খারাপ, এটা ভেবেছেন? কখনও ভেবেছেন আন্তর্জাতিক জলসীমা আপনারা কীভাবে লঙ্ঘন করেন? প্রতিরাতে ডিঙিনৌকোয় আর শালতিতে সাগর পাড়ি দিয়ে কত ইন্ডিয়ান আমাদের দেশে ঢুকছে, একথা ভেবেছেন কখনও?’ চিৎকার করে বলে জিয়া।

    ভাণ্ডারী অরুণের দিকে ‘থামস আপ’ চিহ্ন দেখাল। ঘাড় নেড়ে অরুণ কণ্ঠস্বর বদলে ফেললেন। বন্ধুত্বপূর্ণ আওয়াজের বদলে এখন গলায় ইস্পাতের দৃঢ়তা। কেটে কেটে তিনি বললেন, ‘আপনার আবেদনকে সম্মান জানিয়ে দু’ঘণ্টার ডেডলাইন আমরা গ্রহণ করলাম। দু’ঘণ্টা মানে কিন্তু দু’ঘণ্টাই। তার মধ্যে আপনাদের ফোন না এলে আমরা আমাদের কাজ শুরু করে দেব। ধন্যবাদ।’ ভাণ্ডারী হাত বাড়িয়ে ফোন অফ করে দিল।

    গ্রিনবার্গ মাথা নীচু করে ফোনালাপ শুনছিল আর বিরক্ত মুখে ঘাড় নাড়ছিল। এবার সে বলল, ‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টাও পেরোয়নি। এর মধ্যে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন? ভেবেছেন, যুদ্ধের জুজু দেখিয়ে ইন্ডিয়াকে চাপে রাখবেন? এবার ঠ্যালা সামলান। ইন্ডিয়া কাউন্টার অ্যাটাকে যাচ্ছে। যুদ্ধ বাঁধলে ওয়ারিস্তানের কী অবস্থা হবে, বোঝার কোনও ক্ষমতা আছে? ইন্ডিয়া আয়তনে ওয়ারিস্তানের থেকে দশগুণ বড়। ওদের জনসংখ্যা ওয়ারিস্তানের থেকে পনেরোগুণ বেশি। যুদ্ধ বাঁধলে ওয়ারিস্তান বলে মানচিত্রে আর কিছু থাকবে না। তখন আমি অস্ত্র বিক্রি করব কোথায়? আমার ইনভেস্টমেন্ট হল যুদ্ধের ভয়। আসল যুদ্ধ আমি কখনও চাই না। ওতে বাজার নষ্ট হয়।’

    ‘তাহলে?’ এম সিক্সটিন টেবিলে রেখে অসহায়ভাবে প্রশ্ন করে জিয়া।

    ‘ওই জন্যেই দু’ঘণ্টা সময় চেয়ে নিলাম।’ বলে গ্রিনবার্গ, ‘আপনি রিল্যাক্স করুন। আমি ততক্ষণে মায়ার সঙ্গে দেখা করে আসি।’

    গ্রিনবার্গ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। চাচাম-চানান আবার বলিউডি গান ধরে। তাতিয়ানা আবার বনবন করে শ্রোণিচক্র ঘোরাতে থাকে।

    1 2 3 4 5 6 7
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশেষ নাহি যে – ইন্দ্রনীল সান্যাল
    Next Article ইন দ্য হ্যান্ড অব তালেবান – ইভন রিডলি

    Related Articles

    ইন্দ্রনীল সান্যাল

    শেষ নাহি যে – ইন্দ্রনীল সান্যাল

    July 10, 2025
    ইন্দ্রনীল সান্যাল

    মধুরেণ – ইন্দ্রনীল সান্যাল

    July 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.