Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অপারেশন জন্নত – অভীক দত্ত

    লেখক এক পাতা গল্প92 Mins Read0
    ⤷

    অপারেশন জন্নত – ১

    ১

    করাচী, পাকিস্তান।

    নভেম্বর, ২০১৬।

    জীবনের প্রথম চাকরি। আরিফের স্বপ্নের মত লাগছিল।

    অফিস থেকে দেওয়া ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে অটোতে জিন্না রোডে পৌঁছে তাদের অফিসের বড় বিল্ডিংটার সামনে যখন দাঁড়াল, মনে মনে আল্লাহকে অনেক ধন্যবাদ দিল।

    আম্মি ফোনে অনেক দুয়া করেছেন তার জন্য। বার বার আল্লাহকে মনে মনে ডেকে আরিফ অফিসের ভিতর প্রবেশ করল।

    জয়েনিং এ বেশি ঝামেলা হল না। সার্টিফিকেট ইত্যাদি দেওয়াই ছিল আগে। এথিক্যাল হ্যাকিং নিয়ে তার প্রোজেক্টের ইন্টারভিউ বোর্ডে খুব প্রশংসা করা হয়েছিল।

    তাকে তার অফিসের বায়োমেট্রিক এন্ট্রিতে রেজিস্টার করানো হল। প্রোজেক্ট লিডার ইউনুস স্যার প্রচুর মোটিভেশনাল স্পিচ দিলেন।

    এবং অবশেষে তাকে একটা কিউবিকল দেওয়া হল।

    আরিফ এতদিন টিভিতে দেখে এসেছে। স্বপ্ন দেখেছে তার একটা নিজস্ব কিউবিকল হবে। ইউনুস স্যার এসে তার কাছে দাঁড়িয়ে বললেন, “ডোন্ট হ্যাভ টু ওয়ারি টু ডে। যা ইচ্ছা কর আজ। কাল থেকে কাজ শুরু করব ইনশাল্লাহ”।

    আরিফ ইউনুস স্যারকে “শুক্রিয়া” বলে পিসি অন করল।

    অফিসের বাকি সবাই সিরিয়াস মুখে কাজ করছে। সে কী করবে বুঝতে না পেরে একবার নিজের মেইল চেক করল। সেরকম কিছুই মেসেজ আসে নি। গাদা খানেক স্প্যাম এসেছে। তার বেশিরভাগই মিডল ইস্ট কান্ট্রিগুলোতে চাকরি করার আহ্বান। এগুলোর বেশিরভাগ ফেক কোম্পানি। পাকিস্তানে এরকম অনেক কোম্পানি আছে যারা মিডল ইস্টে নিয়ে যাবার নাম করে সিকিউরিটি মানি নিয়ে পালিয়ে যায়। আরিফের চাচাতো ভাই জামিলের সঙ্গেই হয়েছিল।

    বেচারার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছিল। পাগলের মত হয়ে গেছিল জামিল।

    বাথরুমে যাওয়ার সময়গুলো তাদের ফ্লোরে কে কে আছে একবার করে চোখ বুলিয়ে নেয় আরিফ। সবাই খুব গম্ভীর মুখে কাজ করছে। শুধু একজনকে দেখে একটু অবাক হল সে। ভদ্রলোক সারাদিন ধরে ডেস্কে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলেন। তাকে বস থেকে শুরু করে কেউ কিছু বলল না।

    লাঞ্চ আওয়ারে তার সঙ্গে একে একে পরিচয় হল সাকিল, যায়ান, সুহানের। ক্যান্টিনে সবাই কফি আর স্যান্ডউইচ খাচ্ছিল। আরিফ দেখল ডেস্কে শুয়ে থাকা ভদ্রলোকও এলেন। কফি নিয়ে একটা টেবিলে গম্ভীর হয়ে বসে রইলেন।

    যায়ান বলল, “ওদিকে দেখো না জনাব, তুমি আমাদের মধ্যেই কনসেন্ট্রেট কর”।

    আরিফ যায়ানকে বলল, “কেন? কী প্রবলেম?”

    যায়ান চুপ করে গেল। সাকিল যায়ানকে বলল, “আরে আজ ইন্ডিয়ার এগেইন্সটে ম্যাচ আছে না? বাবর আজম জেতাতে পারবে আজ?”

    আরিফ বুঝল সাকিল কথাটা ঘুরিয়ে দিতে চাইছে।

    সে আর এই নিয়ে কিছু কথা বলল না, তবে তার কৌতূহল বেড়ে গেল।

    বিকেল পাঁচটা বাজলে ইউনুস স্যার এসে তাকে বললেন, “আরিফ, ইউ মে গো নাও। কাল থেকে টাইমে এসো। আজ একটু হালকা ছিল, কাল থেকে কিন্তু হেকটিক হবে লাইফ। বি প্রিপেয়ারড ফর দ্যাট”।

    আরিফ হেসে ঘাড় নাড়ল, “শিওর স্যার”।

    সবাই কাজে ব্যস্ত ছিল। আরিফ একটু সংকোচ নিয়েই বেরোল অফিস থেকে। বাইরে এসে শ্বাস ছাড়ল। একটা দিন গেল।

    তার অফিসের প্রথম দিন। আম্মি আব্বুকে ফোন করে বলে দিতে হবে সব কিছু ভালোয় ভালোয় হয়ে গেছে।

    কথাটা ভাবতে না ভাবতেই সে দেখল সেই ডেস্কে ঘুমানো ভদ্রলোকও অফিস থেকে বেরোলেন। সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল অটোর জন্য। দেখল একটা বিরাট বড় মার্সিডিজ এসে ভদ্রলোককে তুলে নিয়ে চলে গেল।

    আরিফ অবাক হল। তার র‍্যাঙ্কেই কাজ করা লোক একটা মার্সিডিজের মালিক? আবার কোন কাজও করেন না? অদ্ভুত তো! একটু ভেবে সে হাল ছেড়ে দিল। কী দরকার প্রথম দিনই এত কিছু ভেবে? সে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করল। রাস্তাঘাটের দোকানগুলোতে লোক গিজগিজ করছে। ইন্ডিয়া পাকিস্তান ম্যাচ চলছে। ডে নাইট ম্যাচ, ওয়ান ডে। আবু ধাবিতে খেলা হচ্ছে।

    আরিফ দাঁড়িয়ে গিয়ে দেখল ইন্ডিয়া ব্যাট করছে। কোহলি সেঞ্চুরি করল।

    আরিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এক কালে সে খুব ক্রিকেট ভক্ত ছিল। ইদানীং ক্রিকেট থেকে মন উঠে যাচ্ছে। ওয়াকার ইউনুস, ইমরান খান, ওয়াসিম আক্রম, সঈদ আনোয়ার, ইনজামামদের পরের প্রজন্ম আজকাল ইন্ডিয়ার সঙ্গে জিততে ভুলে যাচ্ছে। তার ওপর বেটিং কেলেঙ্কারিতে টিম জর্জরিত। সে খেলা দেখবে না মনস্থ করে এগোতে গিয়ে দেখল কোহলি আউট হয়ে গেছে। সবাই খুব লাফাচ্ছে। আরিফ দাঁড়িয়ে পড়ল।

    খেলাটা জমবে এবার।

    ২

    রাত এগারোটা।

    পাকিস্তান হেরে গেছে। তেতো মুখে আরিফ টিভি বন্ধ করল।

    তার উচিতই হয় নি খেলাটা দেখা।

    পরোটা কিনে এনেছিল। খেলো না। একগাদা কোল্ড ড্রিংক্স খেয়ে শুয়ে পড়ল।

    পাকিস্তান হারলে তার মন ভাল থাকে না। খুব খারাপ লাগে।

    তাদের ছোটবেলাতেও একটা কন্টেস্ট হত ইন্ডিয়ার সঙ্গে খেলা হলে। আজকাল সেটাও হয় না।

    যে ফ্ল্যাটটা তাকে কোম্পানি থেকে দিয়েছে, সেটা ষোল তলার। সে চোদ্দ তলায় থাকে। ব্যালকনিতে গেলে আরব সাগর দেখতে পাওয়া যায়।

    কাল এসে খুব মজা পেয়েছিল। আজ সব কেমন বিস্বাদ লাগছে। দিনটাই নষ্ট করে দিল। সে খেলা দেখবে না মনস্থ করেও শেষমেশ দেখল, আর তাতে এই হাল হল।

    এপাশ ওপাশ করে মাঝরাতে গিয়ে ঘুম এল তার।

    ঘুম ভেঙে দেখল অনেক সকাল হয়ে গেছে। ঠিক ঠাক না খেয়েই অফিসে দৌড়ল।

    ইউনুস স্যার তাকে বেশ কিছু কাজ দিলেন।

    আগের দিন যথার্থই বলেছিলেন ভদ্রলোক। আরিফ মাথা তুলতে পারল না সারাদিন। শুধু বাথরুম করার সময় একবার দেখল সেই ভদ্রলোক একইভাবে ডেস্কে ঘুমাচ্ছেন। তবে লাঞ্চ টাইমে আর কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করল না আরিফ। চুপচাপ খেয়ে কিউবিকলে এসে বসল।

    এদিন বেরোতে বেরোতে সাতটা বাজল তার। ক্লান্ত লাগছিল। যায়ান বাইক নিয়ে যাতায়াত করে। তাকে বলল, “তুমি আয়াত টাওয়ারসে থাকছো তো? চল ড্রপ করে দি তোমাকে”।

    আরিফ আর কিছু বলল না। যায়ান তাকে নিয়ে বিচের ধারে গেল। দুজনের বন্ধুত্ব হতে বেশি সময় লাগল না। যায়ান লাহোরের অভিজাত পরিবারের লোক। এককালে তারা ইন্ডিয়ার অমৃতসরে থাকত। পার্টিশনের সময় এদেশে চলে আসে। যায়ানের খালাতো বোনের সঙ্গে তার বিয়ে হবে খুব সামনেই।

    খোলা মনের ছেলে যায়ান। গড়গড় করে অনেক কথাই বলে গেল। সমুদ্রের হাওয়া দিচ্ছে। বিচ চত্বরে বসতে বেশ ভাল লাগছিল।

    আরিফ করাচী থেকে আরো দূরে ইরান বর্ডারের কাছে একটা গ্রামে থাকে জানার পর যায়ান খুব উৎসাহ নিয়ে বলল “তোমার গ্রামে নিয়ে যাবে? বর্ডারের কাছে থাকো, অসুবিধা হয় না? তার উপরে বালুচিস্তানে। ইয়া আল্লা। অসুবিধা তো হবেই।”

    আরিফ হেসে জবাব দিল, “অতটাও কাছে না। অনেকখানি দূরে। আমাদের গ্রামে অত কিছু নেই, তবে হালত খুব যে ভাল তাও না। আমার পড়াশুনা সবটাই করাচিতে। এবার ধীরে ধীরে ফ্যামিলিকেও নিয়ে আসব। বর্ডারের কাছে যারা থাকে, তাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। বুঝতেই পারো সীমান্তবর্তী অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যায়। মিলিট্যান্টস নিয়েও অনেক সমস্যা আছে ওদিকে। ঝামেলা লেগে থাকে সারাবছর ধরে।”

    যায়ান বলল, “সে তো ঠিকই। লাহোর সেদিক দিয়ে অনেক ভাল। তবে কে জানে, ইন্ডিয়ার সঙ্গে ওয়ার সিচুয়েশন হলে কতখানি সেফ থাকব”।

    আরিফের হঠাৎ করেই অফিসে ঘুমানো লোকটার কথা মনে পড়ে গেল। সে বলল, “আচ্ছা, আমাকে একটা কথা বলবে?”

    যায়ান বলল, “তুমি আমাকে সব কথা জিজ্ঞেস করতে পারো, কিন্তু কোন দিন বেগ সাহেবের ব্যাপারে জানতে চাইবে না। আমিও একবার ইউনুস স্যারের কাছে ওর ব্যাপারে জানতে চেয়ে ভীষণ বকা খেয়েছিলাম। আমাদের ওপরে ইন্সট্রাকশনই আছে বেগ সাহেবের ব্যাপারে যেন কেউ কিছু জানতে না চাই”।

    আরিফ কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, “ঠিক আছে। আমি তোমার কাছে আর কিছু জানতে চাইব না। শুধু একটা ব্যাপার দেখেই অবাক লাগল, উনি কত টাকা স্যালারি পান যে মার্সিডিজ করে অফিস যাতায়াত করেন? আর যদি ঘুমাবেনই, তাহলে অফিসে আসবেন কেন? এতই যদি পাওয়ারফুল লোক হন তিনি, তাহলে সরাসরি বাড়ি থেকেই ডিউটি করতে পারেন তো”।

    যায়ান হাসল, “আরিফ প্লিজ। ভুলে যাও। ট্রাই টু ইগনোর হিম। তোমার কপাল ভাল, তুমি আজ বা গতকাল ইউনুস স্যারের কাছে কিছু জানতে চাও নি বেগের ব্যাপারে। আমি এখনো সেই ঝাড়টা ভুলতে পারি না। প্লিজ লিভ ইট। কাজু খাবে?”

    আরিফ ব্যাজার মুখে হ্যাঁ বলল।

    ৩

    অফিস ঢুকে আরিফ একটু অবাক হয়ে গেল। বেগ সাহেবের সিটটা ফাঁকা।

    ইউনুস স্যার তাকে দেখেই ডেকে নিলেন, “এদিকে এসো আরিফ। একগাদা কাজ আছে। আর শোনো, আমার কেবিনে এসো একবার”।

    আরিফ নিজের কিউবিকলে ব্যাগ রেখে ইউনুস স্যারের চেম্বারে গেল। ইউনুস স্যার বললেন, “অফিস থেকে তোমাকে দু সপ্তাহের জন্য ট্রেনিঙে ইসলামাবাদ পাঠানো হবে। যদিও তোমার অ্যাকাডেমিক বেশ ভাল, তবু একটা অন জব ট্রেনিং হবে তোমার”।

    আরিফ খুশিই হল। তার ঘুরতে বেশ ভালই লাগে। সে বলল, “জি জনাব”।

    ইউনুস স্যার বললেন, “কোন প্রবলেম নেই তো?”

    আরিফ বলল, “না জনাব। কবে যেতে হবে?”

    ইউনুস স্যার বললেন, “আমি তোমাকে ডেটটা আজ বিকেলের মধ্যেই জানিয়ে দেব। খান ব্রাদার্সের এই ফাইলটা দেখতে থাকো। ব্রিফ করব আবার কিছুক্ষণ পরে”।

    আরিফ ইউনুস স্যারের কেবিন থেকে বেরিয়ে কিউবিকলে এসে ফাইলটা দেখতে শুরু করল।

    কিছুক্ষণ পর অফিসের এক জন তার কিউবিকলে এসে বলল, “তোমায় ডাকছেন”।

    আরিফ জিজ্ঞাসু হল, “কে?”

    লোকটা তাকে চোখ দিয়ে ইশারা করল। আরিফ দেখল বেগ সাহেব দাঁড়িয়ে আছে। সে অবাক হল। পরক্ষণে বলল, “ওকে”।

    সে কিউবিকল থেকে বেরিয়ে বেগ সাহেবের কিউবিকলের দিকে হাঁটার সময় স্পষ্ট বুঝতে পারল, গোটা ফ্লোরের সবাই তাকে কৌতূহলী চোখে দেখছে। খানিকটা অস্বস্তি হল তার। তবু সে বেগ সাহেবের কাছে পৌঁছল।

    বেগ সাহেব তাকে দেখে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “ফলো মি”। হতভম্ব আরিফ বেগ সাহেবের পিছন পিছন হাঁটতে শুরু করল। বেগ তাকে ব্যালকনিতে নিয়ে গিয়ে বললেন, “কফি?”

    আরিফ মাথা নাড়ল, “না স্যার”।

    বেগ বলল, “লজ্জা লাগছে?”

    আরিফ হাসল। বেগ কফি মেশিন থেকে দু কাপ কফি নিয়ে এসে আরিফের হাতে দিয়ে বলল, “তুমি বালোচের লোক তাই না?”

    আরিফ অবাক হল। বলল, “আপনি কী করে জানলেন?”

    বেগ হেসে কফিতে চুমুক দিয়ে বলল, “গ্রামে যাও না কত দিন হল?”

    আরিফ বলল, “অনেক দিন হয়ে গেছে”।

    বেগ বলল, “কেন যাও না?”

    আরিফ বলল, “পড়াশুনা করে এখানেই চাকরির জন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। যাওয়া হয় নি ওই জন্যই”।

    বেগ তার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল, “ইঞ্জিনিয়ার হয়ে কী লাভ, তা যদি দেশের কোন কাজে না লাগল? আমাদের মানুষের কোন কাজে না লাগল?”

    আরিফ অবাক হয়ে বলল, “আমাদের মানুষ বলতে?”

    বেগ বলল, “আফগানিস্তানে আমেরিকান আর্মি যেটা করেছে, সেটা সাপোর্ট কর তুমি?”

    আরিফ বুঝতে পারল না এই প্রশ্নটা তাকে কেন করা হল।

    সে বলল, “কোন মানুষই তো সমর্থন করতে পারে না। খুব বাজে কাজ হয়েছে”।

    বেগ কয়েক সেকেন্ড চুপ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে কফি খেয়ে বলল, “যাও। আর কিছু বলার নেই”।

    আরিফ কিছুই বুঝল না। নিজের কিউবিকলে গিয়ে বসে পড়ল।

    কিছুক্ষণ পর ইউনুস স্যার ফোন করে তাকে ডাকলেন। আরিফ কেবিনে ঢোকার পর বললেন, “আরিফ, তুমি খান ব্রাদার্সের ফাইলটা আমায় দিয়ে যেও। ওটাতে এখন কোন কাজ করতে হবে না। আর শোন, আমি তোমাকে একটা চিঠি আর অ্যাড্রেস দিচ্ছি। পরশু থেকে ইসলামাবাদে তোমার ট্রেনিং আছে। চলে যেও। চাইলে এখনই অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে পারো। পজিটিভলি কাল রাতের মধ্যে ইসলামাবাদ পৌঁছে যেও। ক্লিয়ার?”

    আরিফ বলল, “ওকে স্যার”।

    ইউনুস স্যার বললেন, “আমি ক্যাশিয়ারকে বলে দিচ্ছি। তোমার টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। ইসলামাবাদে গিয়ে কোন রকম প্রবলেম ফেস করলে আমাকে ফোন করে নেবে। ওকে?”

    আরিফ ঘাড় নাড়ল, “ওকে স্যার”।

    ইউনুস স্যারকে খান ব্রাদার্সের ফাইলটা দিয়ে নিজের কিউবিকলে গিয়ে চুপ করে বসল আরিফ। কী হল কিছুই বুঝতে পারল না। বাকিরা সবাই তার দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে। দ্বিতীয় দিন একগাদা কাজ করাল, তৃতীয় দিন কাজ না করিয়ে বলছে ইসলামাবাদ যেতে হবে, বেগ সাহেবের অদ্ভুত সব কথা, আরিফের কিছুই মাথায় ঢুকল না। যায়ানের দিকে তাকাল। যায়ান তাকে যেন চিনলই না। গম্ভীর মুখে কাজ করতে লাগল।

    ক্যাশিয়ার এসে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাকে বেশ কিছু টাকা দিল।

    আরিফ জিজ্ঞেস করল, “সই করতে হবে না?”

    ক্যাশিয়ার বলল, “না”।

    আরিফ আর কিছু জিজ্ঞেস না করে লাঞ্চের আগেই অফিস থেকে বেরিয়ে স্টেশনে পৌঁছল। করাচী থেকে সঈদ ফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেন রাত এগারোটায় ছাড়ে। পরের দিন বিকেল চারটেয় রাওয়ালপিন্ডি পৌঁছয়। সেখান থেকে ইসলামাবাদ এক ঘন্টার রাস্তা। সন্ধ্যের আগেই ইসলামাবাদ পৌঁছে যাওয়া যাবে। আরিফ ঠিক করল রাতেই রওনা দেবে। সে ফ্ল্যাটে গিয়ে গোছগাছ করতে শুরু করল।

    ৪

    ক্যুপে বুক করা ছিল আরিফের। দুজনের এসি ক্যুপেতে দ্বিতীয়জন এলো না। আরিফ খুশিই হল।

    চিরকাল ট্রেনের জেনারেল কামরায় যাওয়া আসা করেছে সে। অফিস থেকে ক্যুপের টাকা দেবে দেখে আনন্দ পেয়েছে। বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়ল সে। ঘুম ভাঙল যখন, তখন ভোর হয়েছে। ট্রেন তীব্র গতিতে ছুটছে। কাঁচের জানলা দিয়ে বাইরের দিকে দেখল আরিফ। রুক্ষ্ম চারপাশ। গাছ পালার চিহ্নমাত্র নেই। ভাল কোন দৃশ্যও নেই।

    বাথরুম সেরে প্যান্ট্রির দিকে এগোল সে। ব্রেকফাস্ট পাওয়া যাচ্ছে। নিজের জন্য ব্রেড আর জ্যাম নিয়ে ক্যুপেতে ফিরে এসে বসল।

    আম্মি আব্বুর সঙ্গে ট্রেনে ওঠার আগে কথা হয়েছে। দুজনেই ভীষণ খুশি। আব্বু একবার ইসলামাবাদ গেছিল। বলে দিল করাচীর মত ইসলামাবাদেও প্রচুর চোর আছে। বড় শহর মানেই চোর, ছ্যাঁচোড়ের শহর। সাবধানে থাকে যেন।

    আরিফ নিজের মনেই হাসল। আম্মি আব্বুর কাছে সে কোন দিন বড় হবে না। ছোটই থাকবে।

    ট্রেন ‘জানিওয়ালা’ স্টেশনে দাঁড়াল কিছুক্ষণের জন্য। আরিফ ট্রেন থেকে নেমে হাঁটাহাটি করল। জল নিল।

    ট্রেনে উঠে নিজের ক্যুপেতে ঢুকে দেখল এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক বসেছেন। লম্বা সৌম্য চেহারা। মুখ ভর্তি কাঁচা পাকা দাড়ি। তাকে দেখে হেসে বললেন, “সালাম ওয়ালাইকুম। রাওয়ালপিন্ডি যাবেন?”

    আরিফ প্রত্যুত্তরে হেসে বলল, “হ্যাঁ। আপনার এখান থেকে বুকিং?”

    ভদ্রলোক বললেন, “হ্যাঁ। রাওয়ালপিন্ডিতে অনেক কাজ আছে। ঘড়ির বিজনেস আছে। আপনি?”

    আরিফ বলল, “আমি আইটি সেক্টরে আছি। ট্রেনিং এর জন্য ইসলামাবাদ যাচ্ছি”।

    ভদ্রলোক বকবক করতে করতে আরিফের মাথা খারাপ করে দিলেন। আরিফ ঘুমানোর ভান করলে তারপরে ঠান্ডা হলেন। দুপুরে আরিফ বিরিয়ানি খেল। ট্রেনের বিরিয়ানি অত ভাল লাগল না। তবু ঝাঁকুনিতে ক্ষিদে পায়। সামনের ভদ্রলোক টিফিন নিয়ে এসেছিলেন। একগাদা খেয়ে নাক ডাকতে শুরু করলেন।

    আরিফের হাসি পেল। দুপুর তিনটে গড়িয়েছে। ট্রেন রাইট টাইমেই আছে। আর কিছুক্ষণ পরেই রাওয়ালপিন্ডি পৌঁছে যাবে। খানিকটা নার্ভাস লাগছিল।

    ইসলামাবাদ একেবারে নতুন শহর তার কাছে। তার ওপর দেশের রাজধানী। খুব স্মার্ট হবে এখানকার মানুষজন?

    চোখ বন্ধ করে বসে রইল কিছুক্ষণ। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে ছাড়তে লাগল।

    আব্বু শিখিয়েছিল। যখনই টেনশন হবে, একটু শ্বাস নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে ছাড়লে অনেকটা টেনশন মুক্ত থাকা যায়। কিছুক্ষণ এই প্রক্রিয়া মেনে চলে আরিফ দেখল খানিকটা ভাল লাগছে। সে নামার জন্য প্রস্তুত হল। রাওয়ালপিন্ডিতেই তো যাত্রা শেষ হবে না। সেখান থেকে আবার ইসলামাবাদের পথে রওনা দিতে হবে।

    আরিফ ঠিকানাটা মোবাইলে লিখে নিয়েছিল। একবার ভাবল সামনের ভদ্রলোককে ঘুম থেকে তুলে জিজ্ঞেস করবে জায়গাটা কোথায়। পরক্ষণে সিদ্ধান্ত পাল্টাল। এ লোক বড্ড বেশি কথা বলে। একবার শুরু করলে বাকি পথটুকুও কানের পোকা নাড়িয়ে দেবে। সে ঠিক করল স্টেশনে নেমে ট্যাক্সি করে নেবে।

    সন্ধ্যের আগে ইসলামাবাদে পৌঁছতে পারলেই ভাল। অজানা অচেনা শহর রাতের অন্ধকারে আরো ভয়ানক হয়ে যায়। একটা রাতের ব্যাপার। রাতটা ইসলামাবাদের কোন হোটেলে কাটিয়ে নিয়ে পরের দিন ট্রেনিং এ ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারলেই হবে।

    ট্রেন রাওয়ালপিন্ডি স্টেশনে ঢুকছে। সামনের ভদ্রলোককে ঠেলে তুলতে হল। ভদ্রলোকের ঘুম কিছুতেই ভাঙছিল না। ঘুম ভাঙতেই ধড়মড় করে উঠে তার হাতে একটা কার্ড দিয়ে বললেন, “কোন অসুবিধা হলে আমাকে ফোন করবেন জনাব”।

    আরিফ হাসল, “শুক্রিয়া”।

    কার্ডটা পকেটে রাখল।

    রাওয়ালপিন্ডি স্টেশনে খুব একটা ভিড় নেই। তার সঙ্গী ভদ্রলোক স্টেশনে নেমে হন হন করে হাওয়া হয়ে গেলেন। আরিফকে একটু পরিশ্রম করতে হল। স্টেশনের বাইরে প্রচুর ট্যাক্সি, একেকজন একেক ভাড়া বলছে। নতুন শহরে আরিফ একটু থতমত খেয়ে একটা ট্যাক্সিতে উঠে বসল। ড্রাইভার কিশোর কুমারের গান চালিয়ে দিল।

    আরিফ চুপ করে শুনতে লাগল। হোক ভারতীয়, কিশোর কুমার আর মহম্মদ রফির গান তার বড্ড ভাল লাগে।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleযারা ভেবেছিল ওরা ফ্লাইওভারে ছিল – অভীক দত্ত
    Next Article কিছুক্ষণ – অভীক দত্ত

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }