Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ২ – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অপেক্ষবাদের অ, আ, ক, খ – বারট্রান্ড রাসেল

    বার্ট্রান্ড রাসেল এক পাতা গল্প197 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১৪. পদার্থ কি?

    ১৪. পদার্থ কি?

    পদার্থ কি? এ জাতীয় প্রশ্ন সাধারণত অধিবিদ্যাবিদরাই (metaphysicians) করে থাকেন। এর উত্তর থাকে অবিশ্বাস্য রকম দুর্বোধ্য বিরাট বিরাট গ্রন্থে। আমি কিন্তু এ প্রশ্ন অধিবিদ্যাবিদ হিসাবে করছি না। সে খুঁজে বার করতে চায় আধুনিক পদার্থবিদ্যার নীতিবাক্য কি এবং বিশেষ করে জানতে চায় অপেক্ষবাদের নীতিবাক্য কি, এ প্রশ্ন আমি জিজ্ঞাসা করছি তার পক্ষ থেকে। পদার্থ সম্পর্কে আগে যে কল্পন ঠিক সে কল্পন এখন আর গ্রহণযোগ্য নয়। অপেক্ষবাদ আমরা যতটুকু জেনেছি তা থেকে এ তথ্য স্বতঃপ্রতীয়মান। আমার মনে হয় নতুন কল্পনকে কি হতেই হবে সে সম্পর্কে আমরা এখন কিছু কিছু বলতে পারি।

    পদার্থ সম্পর্কে প্রাচীন ঐতিহ্যগত দুটি কল্পন ছিল : যখন থেকে বৈজ্ঞানিক দূরকল্পন শুরু হয়েছে তখন থেকেই এই দুটি মতের সমর্থক রয়েছে। একদল ছিলেন পরমাণুবাদী। তারা ভাবতেন পদার্থ এমন কতকগুলি ক্ষুদ্র পিণ্ড দিয়ে গঠিত যেগুলি আর ভাগ করা সম্ভব নয়। অনুমানকরা হতো, এগুলি নানাভাবে পরস্পরকে আঘাত করে নানাদিকে ছিটকে যায়। নিউটনের পর থেকে, তারা পরস্পরের সত্যিকারের সংস্পর্শে আসে একথা আর ভাবা হতো না। ভাবা হতো তারা পরস্পরকে আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ করে এবং তারা পরস্পরকে বেষ্টন করে কক্ষপথে চলমান। আর এক দল ছিলেন তাঁর ভাবতেন কোনো না কোনো প্রকারের পদার্থ সর্বত্রই আছে এবং সত্যকার শূন্যস্থান অসম্ভব, দেকার্তেরও এই মত ছিল। তিনি ভাবতেন গ্রহগুলির গতির কারণ ইথারের ভিতরকার ঘূর্ণি । মহাকর্ষ সম্পর্কে নিউটনীয় তত্ত্ব আবিষ্কারের পর, পদার্থের অস্তিত্ব সর্বত্র রয়েছে এই মতবাদে বিশ্বাস কমে যায়। আরো কমে এইজন্য যে নিউটন এবং তাঁর উত্তরাধিকারীরা ভাবতেন আলোকের কারণ উৎস থেকে বাস্তব কণার গতি। কিন্তু এই মত যখন অপ্রমাণিত হল এবং দেখা গেল আলোকতরঙ্গ দিয়ে গঠিত, তখন ঢেউ খেলবার জন্য একটা কিছু প্রয়োজন এই কারণে ইথারকে আবার বাঁচিয়ে তোলা হল। যখন দেখা গেল বিদ্যুৎচুম্বকীয় পরিঘটনাতেও ইথার একই ভূমিকা পালন করে তখন ইথারের ইজ্জত আরো বাড়ল। এমন কি এ আশাও করা গিয়েছিল যে হয়তো দেখা যাবে পরমাণু আসলে ইথারের এক রকম গতি। পদার্থ সম্পৰ্কীয় পারমাণবিক দৃষ্টিভঙ্গির অবস্থা এই সময়ে সবচাইতে কাহিল হয়ে পড়ে।

    অপেক্ষবাদের কথা আপাতত বন্ধ থাক। আধুনিক পদার্থবিদ্যা সাধারণ পদার্থের আণবিক গঠন প্রমাণ করেছে। অথচ ইথারের সপক্ষে যুক্তিগুলি অপ্রমাণ করেনি। ইথারের কিন্তু ঐকম কোনো গঠন আছে বলে মনে করা হয় না। এর ফল । ছিল দুটি দৃষ্টিভঙ্গির ভিতরে এক ধরনের আপোষ। একটি ভঙ্গি ছিল স্কুল পদার্থের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, অন্যটি প্রযোজ্য ছিল ইথারের ক্ষেত্রে। ইলেকট্রন এবং প্রোটন সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না। আমরা কিন্তু অচিরে দেখতে পাব পরমাণু সম্পর্কে যে প্রথাগত কল্পন (conceived traditionally) ইলেকট্রন প্রোটনকে সেভাবে কল্পনা করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমার মনে হয় অপেক্ষবাদের দাবী আসলে পদার্থ সম্পৰ্কীয় প্রাচীন কল্পন পরিত্যাগ করা। বস্তুর (substance) সঙ্গে জড়িত অধিবিদ্যা দ্বারা এ কল্পন সংক্রমিত। তাছাড়া এটা এমন একটা মতের প্রতিনিধি যে মতের পরিঘটনা বিচারে কোনো প্রয়োজন নেই–এটাই এবার আমরা অনুসন্ধান করব।

     

     

    প্রাচীন মত অনুসারে, এক টুকরো পদার্থ ছিল চিরস্থায়ী এবং একই কালে তার অবস্থান একাধিক জায়গায় হতে পারত না। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি যে আগেকার লোকের বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত, এ তথ্য স্বতঃপ্রতীয়মান, তাঁরা বিশ্বাস করতেন স্থান ও কাল সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। স্থান এবং কালের স্থলে স্থান-কাল প্রতিস্থাপন করলে আমরা স্বাভাবিকভাবেই আশা করব ভৌত জগৎকে যে সমস্ত উপাদান থেকে আহরণ করা হবে সেগুলি স্থানেও যেমন সীমিত, কালেও তেমনি সীমিত। এই উপাদানগুলিরই আমরা নাম দিয়েছি ‘ঘটনা’ (events)। একটি ঘটনা ঐতিহ্যগত পদার্থের টুকরোর মতো স্থায়ী কিংবা চলমান হয় না। ঘটনার অস্তিত্ব শুধুমাত্র তার ক্ষুদ্র মুহূর্তের জন্য। তারপরই তার সমাপ্তি। সুতরাং একটি পদার্থের টুকরো পরিণত হবে একটি ঘটনামালায়। ঠিক যেমন প্রাচীন দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে বিস্তৃত একটি বস্তুপিণ্ড বহু বস্তুকণা দিয়ে গঠিত ছিল এখন তেমনি মনে করতে হবে প্রতিটি বস্তুকণা একাদিক ‘ঘটনা-বস্তুকণা’ দিয়ে গঠিত, তার কারণ বস্তুকণা কালে প্রসারিত। বস্তুকণার ইতিহাস সম্পূর্ণ এই ঘটনামালা দিয়ে গঠিত। বস্তুকণাকে আমরা এর ঐতিহাসিক সত্ত্বা রূপ (being) মনে করি। আরা মনে করি না যে বস্তুকণা একটি অধিবিদ্যক সত্ত্বা (metaphysical entity) যার উপর ঘটনাগুলি ঘটছে। এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন হয়েছে তার কারণ অপেক্ষবাদ আমাদের বাধ্য করেছে স্থান ও কালকে প্রাচীন পদার্থবিদ্যার তুলনায় সমতল স্তরে (more on a level) স্থাপন করতে।

     

     

    এই বিমূর্ত প্রয়োজনকে অবশ্যই ভৌতজগতের জনিত ঘটনাবলীর সঙ্গে সম্পর্কিত করতে হবে। জানিত ঘটনাগুলি কি? ধরে নেওয়া যাক আলোক তরঙ্গ দিয়ে গঠিত এবং গৃহীত বেগে চলে; এ তথ্য মেনে নেওয়া হয়েছে। আমরা তাহলে স্থান-কালের যে অংশগুলিতে কোনো পদার্থ নেই সেখানে কি ঘটছে সে সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি। অর্থাৎ আমরা জানি সেখানে পর্যাবৃত্ত ঘটনা (periodic occurrences) রয়েছে (light waves–আলোকতরঙ্গ)। সে ঘটনাগুলি বিশেষ কয়েকটি বিধি মেনে চলে। এই আলোকতরঙ্গগুলির শুরু পরমাণু থেকে। কি পরিস্থিতিতে সেগুলি শুরু হয় এবং তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্ধারিত হওয়ার কারণ কি এগুলি জানার সামর্থ্য আমরা পাই পরমাণুর গঠন সম্পর্কে আধুনিক তত্ত্ব থেকে। একটি আলোকতরঙ্গ কিভাবে ভ্রমণ করে শুধু সেটাই আমরা বার করতে পারি তাই, আমরা সাপেক্ষ সেই আলোকতরঙ্গের উৎস কি করে চলমান, বার করতে পারি সেটাও। কিন্তু একথা বলার সময় আমি অনুমান করছি- সামান্য পৃথক দুটি কালে একটি আলোকের উৎসকে অভিন্ন বলে আমরা চিনতে পারব। এটাই কিন্তু আসল জিনিস-যে সম্পর্কে অনুসন্ধান করার প্রয়োজন ছিল।

    আগের অধ্যায়ে আমরা দেখেছি, একটি বিধি অনুসারে (by a law) পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত স্থান-কালের একটি কেন্দ্রের সর্বদিকে বিন্যস্ত, একটি সংযুক্ত, ঘটনাগোষ্ঠী কি করে গঠন করতে হয়। একটি ক্ষণস্থায়ী আলোর ঝলক থেকে নির্গত আলোকতরঙ্গের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো হবে সেইরকম একটি ঘটনাগোষ্ঠী। কেন্দ্রে বিশেষ কিছু ঘটছে এরকম অনুমান করার কোনো প্রয়োজন আমাদের নেই। সেখানে কি ঘটছে সেটা আমরা জানি এ অনুমান করার কোনো প্রয়োজনই নেই। যা আমরা জানি তা হল : আলোচ্য ঘটনাগোষ্ঠী একটি কেন্দ্রের সবদিকে জ্যামিতির রীতিতে বিন্যস্ত মাছি একটা পুকুর ছুঁলে যেরকম প্রসারমান ঢেউ হয়– সেই রকম। কেন্দ্রে কি হয়ে থাকতে পারে সে সম্পর্কে অনুমানাত্মক একডিট ঘটনা আবিষ্কার করতে পারি এবং পরবর্তী অস্থিরতা কি করে প্রেরিত হয় সে সম্পর্কে বিধিও গঠন করতে পারি। সাধারণ বুদ্ধিতে তখন মনে হবে এই অনুমানাত্মক ঘটনাই অস্তিরতার কারণ। যে বস্তুকণা ঐ অস্থিরতার কেন্দ্রের অধিকারী বলে অনুমান করা হয়েছিল সেই বস্তুকণার জীবনীর একটি ঘটনা বলেও ওটা গণিত হবে।

     

     

    আমরা দেখছি একটি কেন্দ্র থেকে একটি বিশেষ বিধি অনুসারে শুধুমাত্র একটি আলোকতরঙ্গই বহিঃমুখী গমন করে না বরং সাধারণত খুব ঘনিষ্ঠভাবে সমরূপ একাধিক আলোকতরঙ্গ তাকে অনুসরণ করে। উদাহরণ : ঝড়ের হাওয়ায় সামনে দিয়ে একটা মেঘ উড়ে গেলেও সূর্য সহসা তার রূপ পরিবর্তন করে না, পরিবর্তন দ্রুত হলেও ক্রমান্বয়িক। এইভাবে স্থান-কালের একটি বিন্দুতে অবস্থিত একটি কেন্দ্রের সঙ্গে সংযুক্ত একটি ঘটনাগোষ্ঠীর স্থান-কালের নিকটস্থ বিন্দুকেন্দ্রিক অত্যন্ত সমরূপ অন্য ঘটনাগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হয়। অন্য গোষ্ঠীগুলির প্রতিটির কেন্দ্র দখল করে রয়েছে সমরূপ অনুমানাত্মক ঘটনা : এ আবিষ্কার হয় সাধারণ বুদ্ধিতে। সাধারণ বুদ্ধি আরও বলে: এই সমস্ত অনুমাণাত্মক ঘটনাবলী একই ইতিহাসের অংশ। অর্থাৎ সাধারণ বুদ্ধি একটি অনুমানাত্মক বস্তুকণা আবিষ্কার করে এবং ভাবে ঐ অনুমানাত্মক ঘটনাগুলি ঘটেছে ঐ বস্তুপিণ্ডে। অর্থাৎ পুরানো অর্থে যাকে পদার্থ বলা যায় তার কাছাকাছি কোথাও পৌঁছাতে গেলে সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় দুটি অনুমান (hypothesis) ব্যবহার করতে হয়।

    অপ্রয়োজনীয় অনুমান এড়াতে হলে আমরা বলব : একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে পরমাণু হল–পরিবেষ্টনকারী মাধ্যমের নানা অস্থিরতা (disturbances)। সাধারণ ভাষায় হলে বলা হতো এই অস্থিরতার কারণ ঐ পরমাণু। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে যা আলোচ্য মুহূর্ত সেই সময়কার এই অস্থিরতাগুলি আমরা ধরব না তার কারণ। তাহলে আমাদের পর্যবেক্ষকের উপর নির্ভর করতে হবে। তার পরিবর্তে আমরা আলোকের গতিতে পরমাণু থেকে বহিঃমুখে গমন করব এবং প্রতিটি জায়গায় পৌঁছে যা যা অস্থিরতা দেখতে পাব সেগুলিই আমরা ধরব। যেগুলির অস্তিত্ব সামান্য আগে কিংবা পরে পাওয়া যায় সেরকম প্রায় এককেন্দ্রিক ঘনিষ্ঠভাবে সমরূপ অস্থিরতার ঝক (set of disturbances) সামান্য অগ্রবর্তী কিংবা পরবর্তী মুহূর্তের পরমাণুরূপে সংজ্ঞিত হবে। এইভাবে আমরা অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প কিংবা অনুমিত সত্ত্বা (inferred entity) ছাড়াই পদার্থবিদ্যার সমস্ত বিধিকেই রক্ষা করি এবং মিতব্যয়ের যে নীতি অপেক্ষবাদকে অপ্রয়োজনীয় জঞ্জাল পরিষ্কারের সামর্থ্য দান করেছে সেই মিতব্যয়িতার সঙ্গে আমরা সামঞ্জস্য রক্ষা করি।

     

     

    সাধারণ বুদ্ধি কল্পনা করে : যখন সে একটা টেবিল দেখতে পায় তখন সে। একটা টেবিলই দেখে। এটা একটা স্থূল (gross) বিভ্রম (delusion)। যখন কিছু। আলোকতরঙ্গ তার চোখে পৌঁছায় তখন সাধারণ বুদ্ধি একটা টেবিল দেখতে পায়। সেই আলোকতরঙ্গগুলি এমন যে অতীত অভিজ্ঞতায় সেগুলির সঙ্গে বিশেষ এক ধরনের স্পর্শবোধের সম্পর্ক ছিল। তাছাড়া ছিল অন্য লোকের সাক্ষ্য : তারাও টেবিলটা দেখেছিল। কিন্তু এর কোনোটিই কখনো আমাদের তরঙ্গ সত্ত্বার (table it self) কাছে নিয়ে যায়নি। আলোকতরঙ্গ আমাদের চোখে একাধিক ঘটনা। ঘটিয়েছে। এই ঘটনাগুলি নেত্রক স্নায়ুতে (optice nerve) কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ঘটনাগুলি আবার কতকগুলি ঘটনা ঘটিয়েছে মস্তিষ্কে। প্রচলিত প্রাথমিক প্রক্রিয়া ছাড়া এর যে কোনো একটি ঘটলেই আমাদের ভিতরে ‘টেবিলটি দেখার’ বোধ নিয়ে আসত। এমনকি কোনো টেবিল যদি না থাকত তাহলেও। (অবশ্য সাধারণভাবে বস্তুর ব্যাখ্যা যদি হয় কতগুলি ঘটনাগোষ্ঠী, তাহলে চক্ষু, নেত্রক স্নায়ু এবং মস্তিষ্ক সম্পর্কেও এ ব্যাখ্যা প্রযোজ্য)। আমরা যখন আঙুল দিয়ে টেবিলে চাপ দিই তখন যে স্পর্শবোধ হয় সেটা আসলে আমাদের আঙুলের প্রান্তের ইলেকট্রন এবং প্রোটনের বৈদ্যুতিক অস্থিরতা। আধুনিক পদার্থবিদ্যা অনুসারে এর কারণ টেবিলের ইলেকট্রন আর প্রোটনের সান্নিধ্য। অন্য কোনোভাবে যদি আমাদের আঙুলের প্রান্তে একই অস্থিরতা হতো তাহলে কোনো টেবিল না থাকলেও একই বোধ হতো। অপরের সাক্ষ্য স্পষ্টতঃ পরের কাছ থেকে শেখা। আদালতে কোনো সাক্ষীকে যদি জিজ্ঞাসা করার হয় যে সে একটা ঘটনা দেখেছে কিনা তাহলে এরকম উত্তর তাকে দিতে দেওয়া হবে না যে : সে নিজে দেখেছে বলেই তার মনে হয় তার কারণ ঐ দেখা বিষয়ে একাধিক অন্য লোকের সাক্ষ্য রয়েছে। সে যাই হোক–কতগুলি শব্দতরঙ্গ দিয়ে সাক্ষ্য গঠিত। তার মনস্তাত্ত্বিক এবং ভৌত ব্যাখ্যা প্রয়োজন। সুতরাং বস্তুর সঙ্গে এর সম্পর্ক খুবই পরোক্ষ। এইসব কারণের জন্য আমরা বলি একটি লোক একটি টেবিল দেখছে তখন আমরা জটিল এবং কঠিন অনুমিত (inferrness) গোপন করে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত একটি অভিব্যক্তি ব্যবহার করি। এ অনুমানগুলির সত্যতা প্রশ্নাতীত নয়।

     

     

    কিন্তু আমাদের মনস্তাত্ত্বিক প্রশ্নে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্ভব হলে এগুলি আমাদের এড়িয়ে চলা উচিত। সুতরাং শুদ্ধ ভৌতদৃষ্টিভঙ্গিতে ফিরে আসা যাক।

    যে ইঙ্গিত আমি করতে চাই সেটা নিম্নলিখিতরূপে বলা যায়। পরমাণুর অস্তিত্বের দরুন অন্য স্থানে যা কিছু ঘটে অন্তত তত্ত্বের দিক দিয়ে সে সমস্তই পরীক্ষার সাহায্যে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুসন্ধান করা যায়–অবশ্য সেগুলি যদি বিশেষ গোপন কোনো পদ্ধতিতে না ঘটে। পরমাণুকে জানা যায় তার অভিক্রিয়ার সাহায্যে। কিন্তু ‘অভিক্রিয়া’ শব্দটি কার্যকারণ তত্ত্বের যে দৃষ্টিভঙ্গির অংশ তার সঙ্গে আধুনিক পদার্থবিদ্যার সঙ্গতি নেই, বিশেষ করে সঙ্গতি নেই অপেক্ষবাদের সঙ্গে। যা আমাদের বলার অধিকার আছে সেটা শুধুমাত্র এই : কিছু ঘটনাগোষ্ঠী একত্র ঘটে অর্থাৎ স্থান-কালের সন্নিকট অংশে ঘটে। একজন পর্যবেক্ষক একটি ঘটনাগোষ্ঠীর একটি অপর ঘটনার পূর্বে ঘটেছে ভাববেন কিন্তু অন্য পর্যবেক্ষক কালক্ৰম ভিন্নভাবে বিচার করবেন। এমন কি যখন সমস্ত পর্যবেক্ষক সাপেক্ষই কালের ক্রম অভিন্ন তখনও আমরা শুধু বলতে পারি দুটি ঘটনার ভিতরে সম্পর্ক রয়েছে। সে সম্পর্ক অগ্রবর্তী এবং পশ্চাদ্বর্তী দু’রকমই হতে পারে। অতীত ভবিষ্যৎকে নিয়ন্ত্রণ করে একথা কোনো অর্থে ভবিষ্যৎ অতীতকে নিয়ন্ত্রণ করে এই কথার চাইতে পৃথক : এ তথ্য সত্য নয়। আপাতদৃষ্ট পার্থক্য শুধু আমাদের অজ্ঞতার জন্য। সে অজ্ঞতার কারণ অতীতের চাইতে ভবিষ্যতের জ্ঞান আমাদের অল্প। ব্যাপারটা কিন্তু নেহাই আকস্মিক : এমন জীবও থাকতে পারত যারা ভবিষ্যৎ মনে রাখতে পারে এবং অতীত যাদের অনুমান করতে হয়। এই সমস্ত ব্যাপারে ঐ জীবদের মনোভাব হতো আমাদের ঠিক বিপরীত–তা বলে মনোভাব ভ্রমাত্মক হতো না।

     

     

    স্পষ্ট বোঝা যায়, পদার্থ কয়েকটি ঘটনা গোষ্ঠী ছাড়া অন্য কিছু এ অনুমান না করেও পদার্থবিদ্যার তথ্য এবং তত্ত্বও ব্যাখ্যা করা সম্ভব। প্রতিটি ঘটনাই এমন যে সেগুলির কারণ আলোচ্য পদার্থ–একথা আমাদের পক্ষে ভাবা স্বাভাবিক। এর জন্য পদার্থবিদ্যার কোনো প্রতীক (symbol) কিংবা সঙ্কেত (formula) পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় না : প্রশ্নটি শুধুমাত্র প্রতীক ব্যাখ্যার।

    ব্যাখ্যার এই স্বাধীনতা গাণিতিক পদার্থবিদ্যার বৈশিষ্ট্য। কতকগুলি অত্যন্ত বিমূর্ত যৌক্তিক সম্পর্ক আমরা জানি। সে সম্পর্ক আমরা প্রকাশ করি গাণিতিক সঙ্কেতের মাধ্যমে। আমরা জানি কয়েকটি ক্ষেত্রে এমন ফল পাওয়া যায়, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার সাহায্যে যার সত্যাসত্য নির্ণয় সম্ভব। উদাহরণ : জ্যোতির্বিজ্ঞানের সেই সমস্ত পর্যবেক্ষণ যেগুলির সাহায্যে আলোকের আচরণ সম্পর্কে অপেক্ষাবাদের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। যে সমস্ত সঙ্কেতের সত্যাসত্য। প্রমাণের প্রয়োজন ছিল সেগুলি আন্তঃগ্রহস্থানে আলোকের গতিপথ বিষয়ে। যদিও সঙ্কেতগুলির যে অংশ থেকে পর্যবেক্ষণ করা ফল পাওয়া যায় সে অংশের ব্যাখ্যা সব সময় একভাবেই করতে হবে তবুও অন্য অংশের কিন্তু নানারকম ব্যাখ্যা সম্ভব। যে সঙ্কেতগুলির সাহায্যে গ্রহের গতি আহরণ করা যায় সেগুলি আইনস্টাইনের তত্ত্বে এবং নিউটনীয় তত্ত্বে প্রায় সম্পূর্ণ অভিন্ন, কিন্তু সে সঙ্কেতগুলির অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাধারণত গাণিতিক বিচারে আমরা আমাদের সঙ্কেতগুলির আসন্ন নির্ভুলতা (approximately correct) বিষয়ে অনেক বেশি নিশ্চিত হতে পারি কিন্তু সেগুলির বিভিন্ন ব্যাখ্যার নির্ভুলতা সম্পর্কে অতটা নিশ্চিত হতে পারি না। সেই জন্য এ অধ্যায়ে আমাদের আলোচ্য ক্ষেত্রে, ইলেকট্রন এবং প্রোটনের চরিত্র কি সে প্রশ্নের উত্তর কোনোক্রমেই পাওয়া যায় না। এমন কি এদের গতির বিধি সম্পর্কে আর পরিবেশের এবং এদের পারস্পরিক ক্রিয়া সম্পর্কে গাণিতিক পদার্থবিদ্যার যা বক্তব্য তার সমস্তটা আমাদের জানা থাকলেও সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না। আমাদের প্রশ্নের নির্দিষ্ট নিশ্চিত এবং সিদ্ধান্তমূলক উত্তর সম্ভব নয়। তার কারণ শুধু এই : অনেক রকম উত্তরই গাণিতিক পদার্থবিদ্যার সত্যের সঙ্গে সুসঙ্গত। তবুও কতগুলি উত্তর অন্যগুলির চাইতে ভাল লাগে তার কারণ, কতগুলির সম্ভাব্যতা অন্যগুলির চাইতে বেশি। এই অধ্যায়ে আমরা চেষ্টা করেছি পদার্থের সংজ্ঞা দিতে। সে সংজ্ঞা এমন হবে যে পদার্থবিদ্যার সঙ্কেতগুলি যদি সত্য হয় তাহলে সেই সংজ্ঞার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটা জিনিস থাকতেই হবে। আমাদের সংজ্ঞা যদি হতো এমন যে লোকে যা ভাবে পদার্থের একটি কণা তাই হতো, অর্থাৎ হতো প্রকৃত বাস্তব (substantial) কঠিন (hard) নির্দিষ্ট নিশ্চিত পিণ্ড তাহলে আমরা সেরকম একটা জিনিসের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতাম না। সেইজন্যই যৌক্তিক মিতব্যয়িতা এবং বৈজ্ঞানিক সাবধানতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমাদের সংজ্ঞা জটিল মনে হলেও অধিকতর গ্রহণীয়।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকর্তৃত্ব ও ব্যক্তিসত্তা – বার্ট্রান্ড রাসেল
    Next Article সুখের সন্ধানে – বার্ট্রান্ড রাসেল

    Related Articles

    বার্ট্রান্ড রাসেল

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    সুখের সন্ধানে – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    কর্তৃত্ব ও ব্যক্তিসত্তা – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    ধর্ম ও বিজ্ঞান – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    দর্শনের সমস্যাবলি – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    মানুষের কি কোনো ভবিষ্যত আছে? – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Our Picks

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ২ – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }