Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অভিশাপ

    বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ভৌতিক গল্প এক পাতা গল্প11 Mins Read0

    অভিশাপ

    —’এই সেই প্রতাপনারায়ণ চৌধুরির বাড়ি।’

    আমি সবিস্ময়ে সেই ভগ্নস্তূপের পানে চাহিয়া দেখিলাম। এই সেই প্রতাপনারায়ণ চৌধুরির বাড়ি? সহজে বিশ্বাস করিয়া উঠিতে পারিলাম না। দিনান্তের অস্পষ্ট আলোক যাই যাই করিয়াও আকাশের পশ্চিমপ্রান্তে তখনও অপেক্ষা করিতেছিল। পরিশ্রান্ত বিহগকুলের অবিশ্রাম কূজনধ্বনি রহিয়া রহিয়া তখনও আকাশ-বাতাস মথিত করিয়া দিতেছিল। গঙ্গার অপূর্ব তরঙ্গভঙ্গ চিত্তলোকে এক অজ্ঞাতচেতনার সঞ্চার করিতেছিল। সেই প্রদোষের ম্লান দ্যুতিবিকাশের অন্তরালে আমি প্রাতঃস্মরণীয় সুবিখ্যাত প্রতাপনারায়ণ চৌধুরির প্রাসাদের পানে চাহিয়া দেখিলাম। গঙ্গার ঠিক তীরভূমিতে অগণিত লতাপল্লবে মণ্ডিত হতশ্রী প্রতাপনারায়ণ চৌধুরির প্রসাদ নিঃশব্দে দাঁড়াইয়া আছে। নদীস্রোতের অবিরাম আঘাতে সে প্রাসাদের অনেকখানিই ভাঙিয়া চুরিয়া কোন অনির্দেশের পথে বহিয়া গিয়াছে। অতীতের সাক্ষ্যস্বরূপ যাহা এখনও বর্তমান আছে, তাহা সেই হতগৌরবের কঙ্কালবিশেষ; এখন যেন সেখানে সেই দুর্দান্তপ্রতাপ প্রতাপনারায়ণ চৌধুরির প্রেতাত্মা বিরাজ করিতেছে। প্রকৃতি তাহাকে আজ নিজের হাতে সাজাইয়া দিয়াছে। অনাড়ম্বর সৌন্দর্য তাহাকে শ্যামল করিয়া রাখিয়াছে। গঙ্গার বক্ষে একটি নৌকা পাল তুলিয়া পাশ দিয়া বহিয়া চলিয়াছিল। একটি মাঝি গান গাহিতেছিল। তাহার সেই ক্লান্ত কণ্ঠস্বর সন্ধ্যাপ্রকৃতির নিঃশব্দতার বক্ষ চিরিয়া চিরিয়া কোন দূরান্তের এক অপূর্ব সাড়া বহিয়া আনিতেছিল।

    পলাশপুরের প্রতাপনারায়ণ চৌধুরির নাম শোনে নাই এমন লোক খুব কমই আছে। একদা তাহার প্রতাপে সারা পলাশপুর তটস্থ হইয়া থাকিত। কিংবদন্তি আছে যে সেকালে নাকি বাঘে-গোরুতে নির্বিবাদে একই ঘাটে জলপান করিত। অতবড়ো ক্ষমতাশালী বর্ধিষু; প্রতিপত্তিশালী জমিদার সেকালে খুব কমই ছিলেন। ইংরেজ রাজত্বের সূচনাদিন হইতে পলাশপুরের চৌধুরি বংশের উদ্ভব। ইংরেজ বাহাদুরকে সর্বপ্রকার সাহায্য করার পুরস্কারস্বরূপ ধূর্জটিনারায়ণ চৌধুরি এই পলাশপুরের জমিদারি লাভ করেন। ধূর্জটিনারায়ণ চৌধুরি, চৌধুরি বংশের আদিপুরুষ। তাঁরই পৌত্র বিজয়নারায়ণ চৌধুরি সিপাহি বিদ্রোহের সময়ে ব্যারাকপুরের বিদ্রোহ দমনে ইংরেজদের যথেষ্ট সহায়তা করেন। তাঁহারই প্রচেষ্টায় ক্যাপ্টেন লরেন্স সপরিবারে আত্মরক্ষা করিতে সমর্থ হন। ইতিহাসে সেসব কথা নাই বটে, তবে সকলেই সে কথা জানিত। ১৮৫৭ সালের মার্চ মাসের শেষদিকে যখন দুর্যোগের ঘনঘটা ভারতবর্ষের রাজনৈতিক আকাশ কালো করিয়া দিয়াছিল, বিজয়নারায়ণ সে সময় ব্যারাকপুরে। সেদিনও এমন ছিল। ক্যাপ্টেন লরেন্স বিজয়নারায়ণ চৌধুরির কর্মকুশলতায় তাঁহাকে স্বীয় তরবারি উপহার দিয়াছিলেন। বহুকাল সেই তরবারি চৌধুরি বংশের প্রাচীরে অতি সন্তর্পণে অতীত গৌরবের চিহ্নস্বরূপ টাঙানো ছিল।

    বেলেডাঙার কমল হালদারের সঙ্গে গ্রীষ্মের ছুটিতে তার দেশে গিয়াছিলাম বেড়াইতে। সন্ধ্যাকালে গঙ্গার তীরে ভ্রমণ করিতে-করিতে পলাশপুরের চৌধুরিবাড়ির নিকট আসিয়া পড়িলাম। কমল বলিল, এই সেই প্রতাপনারায়ণ চৌধুরির বাড়ি।

    ইতিপূর্বে চৌধুরি বংশের অতীত কাহিনির আমি অনেক কিছুই শুনিয়াছি। তাঁহাদের সেই বিরাট প্রাসাদের এই দুর্দশা দেখিয়া বাকশূন্য হইয়া গেলাম। এখন মানুষ সেখানে বাস করে না। সেটি এখন হিংস্র পশুর লীলাভূমি হইয়া দাঁড়াইয়াছে।

    বিজয়নারায়ণ চৌধুরির পুত্র প্রতাপনারায়ণ চৌধুরির সময় চৌধুরি বংশের গৌরব চরমে উঠিয়াছিল। চতুর্দিকে চৌধুরি বংশের প্রতিপত্তি ছড়াইয়া পড়িয়াছিল। প্রতাপনারায়ণের সময়ে যেমন চৌধুরি বংশের গৌরব চরমে উঠিয়াছিল, সেই প্রতাপনারায়ণের সময়েই তাহার আবার ভাঙন শুরু হয়! অমানুষিক দুশ্চরিত্রতা ও প্রচুর মোকদ্দমার ফলে তাঁহার পতন শুরু হয় মৃত্যুর কয়েক বৎসর পূর্বেই। ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালে মোগলসাম্রাজ্য যেমন চরম সীমায় উঠিয়াছিল, সেই ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালেই আবার তাহার পতন শুরু হয়! বৃদ্ধ সম্রাট বহু দুঃখেই দূর দক্ষিণাপথে প্রাণত্যাগ করেন। ঔরঙ্গজেব ছিলেন চরিত্রবান ও ধার্মিক, আর প্রতাপনারায়ণ ছিলেন ঠিক তার বিপরীত। তাঁহার অভিধানে চরিত্র বলিয়া কোনো শব্দ ছিল না। মদ ও মেয়েমানুষ তাঁহার জীবনের একমাত্র উপাস্য। আর এ ছাড়া যেটুকু সময় পাইতেন, তাহাতে মামলামোকদ্দমার তদবির করিতেন। তাঁহার ন্যায় নিখুঁতভাবে মোকদ্দমা তদবির করিতে সেকালে খুব কম লোকই পারিত। অথচ লেখাপড়ার তিনি ধার ধারিতেন না, আইন তো দূরের কথা। কত সতীরমণীর আর্তক্রন্দনে নিঃশব্দ রাত্রে চৌধুরি বংশের সুদীর্ঘ রংমহল যে ধ্বনিত হইয়া উঠিয়াছিল তাহার ইয়ত্তা নাই। তাহাদের সেই ব্যাকুল কণ্ঠধ্বনি ঝিল্লিরবের সহিত তালে তালে শব্দিত হইয়া মরিতেছে। তাহাদের বিকট অট্টহাস্য হয়তো এখনও ভগ্নপ্রাসাদের প্রাচীরে আঘাত খাইয়া খাইয়া ফিরিতেছে।

    তিনি বিবাহ করিয়াছিলেন ক্ষীরোদাসুন্দরীকে আর ভালোবাসিয়া ছিলেন পত্নীর বিধবা ভগিনী আভাময়ীকে। ক্ষীরোদাসুন্দরীর প্রতিবাদ করিবার সাহস হয় নাই; আর বালবিধবা আভাময়ী প্রতাপনারায়ণের প্রেমের তরঙ্গে সংক্ষুব্ধ হইয়া আত্মীয়স্বজনের বিষদৃষ্টি হইতে আত্মগোপন করিবার জন্য উদবন্ধনে প্রাণত্যাগ করেন। এ ঘটনার পর প্রতাপনারায়ণ আর ক্ষীরোদাসুন্দরীর মুখদর্শন করেন নাই। সেই অভাগি রমণী চার মাসের শিশুপুত্র সূর্যনারায়ণ চৌধুরিকে বুকে লইয়া স্বামীর দৃষ্টিপথের অন্তরালে জীবন কাটাইয়া দিতে লাগিলেন, আর প্রতাপনারায়ণের উচ্ছৃঙ্খলতার মাত্রা গেল বাড়িয়া। তিনি বাহির বাড়িতেই দিন কাটাইয়া দিতে লাগিলেন। আভাময়ীর প্রতি সমাজের এই অসহনীয় অত্যাচারের প্রতিকারস্বরূপ তিনি তাঁহার প্রজাদের শান্তির সংসারে দিতে লাগিলেন আগুন জ্বালাইয়া। গৃহস্থবধূ বা গৃহস্থকন্যা তাঁহার ক্ষুধিত দৃষ্টি হইতে অতিকষ্টে আত্মরক্ষা করিত। সারাদিন পথে পথে পাখিমারা বন্দুক কাঁধে লইয়া পাখি মারিয়া ফিরিতেন। সে-পথে কোনো স্ত্রীলোকের বাহির হইবার সাহস ছিল না। আর তাঁহার সঙ্গে থাকিত কানা কালু সর্দার। কানা হইলে কী হয়, চক্ষুষ্মানকেও সে হার মানাইতে পারিত। তাহার তীক্ষ্নবুদ্ধির বলে প্রতাপনারায়ণের ক্ষুধা নিবৃত্ত হইত সহজেই। ইংরেজ রাজত্বের এমন ধরাবাঁধা আইন তখন ছিল না। প্রতাপনারায়ণের মহল্লায় তাঁহার বিখ্যাত লাঠিয়ালদের দৌলতে কাহারও টুঁ শব্দটি করিবার সামর্থ্য ছিল না। লাঠির জোরেই রাজ্যজয় হইত আর লাঠির জোরেই রমণীয় সতীত্বলুণ্ঠন হইত। কিন্তু প্রতাপনারায়ণ স্ত্রীলোকদের ঘৃণা করিতেন সর্বান্তকরণে। নারী নরকের দ্বার। এই নারীই তাঁহার জীবনে দিয়াছিল দাবানল জ্বালাইয়া।

    .

    সেবার দুরন্ত বর্ষার এক অবিশ্রান্ত ধারাপতনের দিনে কালু কোথা হইতে এক অজ্ঞাতনামা রমণীকে বহিয়া আনিল। রাত্রি তখন দশটা। চারিদিকে সেই বর্ষাপ্রকৃতির গুঞ্জন কোনো এক বিরহিণীর আর্তক্রন্দনের ন্যায় ধ্বনিত হইতেছিল। কাহাকে হারানোর বেদনা যেন সারা বিশ্ব মথিত করিয়া রাখিয়াছিল। প্রতাপনারায়ণ তখন সুর্মা দিয়া তাঁহার নয়নপ্রান্তে রেখাপাত করিতেছিলেন। কালু আসিয়া ডাকিল, মহারাজ!

    প্রতাপনারায়ণ হাঁকিলেন, কে?…ও।

    —এসেছে।

    —বিশ্রাম করতে বল। কতদূর থেকে আসছে?

    —সাত ক্রোশ।

    —কেমন?

    —আপনার প্রসাদ পাবার উপযুক্ত।

    —উত্তম।

    প্রতাপনারায়ণ দ্রুত সাজ সমাধা করিয়া প্রমোদগৃহে উপস্থিত হইলেন। অভাগিনি তখন সেই বিলাসগৃহের এক কোণে বস্ত্রখণ্ডে সর্বাঙ্গ আবৃত করিয়া কাঁদিয়া মরিতেছিল। মনুষ্যপদশব্দে সে প্রতাপনারায়ণের পানে চাহিয়াই বিকট শব্দে আঁতকাইয়া উঠিল। তাহার আয়ত আঁখি, সর্বোপরি তাহার সেই ভীতিসুন্দর দেহলতা প্রতাপনারায়ণের প্রাণে এক উন্মাদনা জাগাইয়া দিল। প্রতাপনারায়ণ তাহার নিকট গিয়া প্রশ্ন করিলেন— তোমার নাম?

    কোনো উত্তর পাইলেন না। পুনরায় বলিলেন— এই যে বিরাট প্রাসাদ, এই অতুল বৈভব, সবই তোমার। তুমি আজ আমার রানি।

    সেই রমণী কহিল— না, না, আমি রানি হতে চাই না। আমায় ভিখিরি থাকতে দিন। আপনার দু-টি পায়ে পড়ি, আপনি আমাকে আমার স্বামী-পুত্রের কাছে ফিরে যেতে দিন।

    কথাশেষে সে প্রতাপনারায়ণের পদপ্রান্তে পড়িল। প্রতাপনারায়ণ উৎকট হাসি হাসিয়া উঠিলেন, বলিলেন— অসম্ভব।

    জীবনে এমন নিখুঁত রূপ প্রতাপনারায়ণ আর দ্বিতীয়টি দেখেন নাই। তাহার সেই বিনাইয়া-বিনাইয়া কান্না প্রতাপনারায়ণের নিকট বড়ো মধুর বলিয়া বোধ হইল। সেই রমণী কহিল— আমায় ছেড়ে দিন, আপনার ভালো হবে।

    প্রতাপনারায়ণ হা-হা করিয়া হাসিতে লাগিলেন, বলিলেন— আমার ভালো আমি চাই না।

    —আপনি ধ্বংস হয়ে যাবেন। আপনার সর্বনাশ হবে। আমার অভিশাপে এ বাড়িঘর জ্বলেপুড়ে যাবে।

    প্রতাপনারায়ণ শিহরিয়া উঠিলেন। সে পুনরায় বলিল— যদি আমি যথার্থ সতী হয়ে থাকি, তবে আমার অভিশাপ কখনো সহ্য করতে পারবেন না। আপনি নির্ব*ংশ হবেন।

    অবলা রমণীর যে এমন করিয়া মানুষকে অভিশাপ দিবার ক্ষমতা আছে, ইহা ছিল প্রতাপনারায়ণের বিশ্বাসের অতীত। কিন্তু তিনি পরিণামদর্শী ছিলেন না আদৌ। তিনি ওই অবলার সাবধানবাণী শুনিলেন না। এই তাঁহার জীবনের শেষ শিকার।

    পরদিন সারা প্রাসাদে একটা দুরপনেয় বিষাদের ছায়াপাত হইল। সেদিন হইতে সেই রমণী আর উঠিল না, বা আহার গ্রহণ করিল না। দুই দিন পূর্ব হইতেই সে উপবাস করিতেছিল। তিল তিল করিয়া সে শুকাইয়া মরিতে লাগল। সকলে মূক বিস্ময়ে অভাগির পানে চাহিয়া রহিল। প্রতাপনারায়ণ ভয়ব্যাকুলচিত্তে গৃহত্যাগ করিয়া চলিয়া গেলেন। উহার বিষাক্ত দীর্ঘশ্বাস সহ্য করিবার সাহস তাঁহার ছিল না। তিনদিন তিনরাত্রি অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করিয়া অভাগিনি প্রাণত্যাগ করিল। পরিশেষে রানিশ্রী ক্ষীরোদাসুন্দরীও তাঁহার দীর্ঘকালের শুচিতা ত্যাগ করিয়া এই নরককুণ্ডে আসিয়াছিলেন অভাগিনির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করিতে, স্বামীর কল্যাণকামনায়। কিন্তু তাঁহার সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হইল। ‘যদি আমি যথার্থ সতী হয়ে থাকি, চৌধুরি বংশ ধ্বংস হয়ে যাবে’— এই বলিয়া সেই তেজস্বিনী নারী শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করিল।

    এই ঘটনার সাত দিন পর প্রতাপনারায়ণ ফিরিয়া আসিলেন; কিন্তু জীবিত নয়, মৃত। পথে তাঁহার সর্পঘাতে মৃত্যু হইয়াছে।

    সূর্যনারায়ণও পিতাকে অনুসরণ করিয়া চলিলেন। অল্পবয়সে সম্পত্তির মালিক হইয়া মোসাহেবের সহায়তায় তাঁহার ক্ষয়িষু;প্রায় সম্পত্তি ক্রমে ক্রমে নিঃশেষ হইয়া আসিতে লাগিল। পিতার ন্যায় তিনিও ছিলেন অপরিণামদর্শী। ভবিষ্যতের কথা ভাবিবার অবকাশ তাঁহার ছিল না। পরস্ত্রীতে লোভ তাঁহার ছিল না সত্য, তবে তাঁহারও নেশা ছিল। শহর অঞ্চল হইতে সব বিখ্যাত বাইজি আনার নেশা তাঁহাকে পাইয়া বসিয়াছিল। তাহার জন্য তিনি মুক্তহস্তে ধনব্যয় করিয়া যাইতেন। লক্ষ্নৌ, দিল্লি, আগ্রা, বেনারস, লাহোর, বোম্বাই, কলকাতা ইত্যাদি সকল শহরের সুপ্রসিদ্ধা বাইজিকুলের পদরেণুপাতে তিনি তাঁহার পিতৃ-পিতামহের পবিত্র প্রাসাদ ধন্য করিতে মাতিয়া উঠিয়াছিলেন। তিনি দিনরাত তাহাদের সুরলহরীর ও রূপমাধুরিতে মগ্ন হইয়া থাকিতেন। বিবাহ করিয়াছিলেন যথাসময়ে। যদিও পিতার ন্যায় তিনি তাঁহার পত্নীকে ঘৃণা করিতেন না, তথাপি তাঁহার দিন কাটিত বাহির বাড়িতে। গভীর রাত্রে অতিরিক্ত তাগাদার ফলে মাঝে মাঝে টলিতে টলিতে অন্দর বাড়িতে উঠিয়া যাইতেন নিতান্ত অনিচ্ছায়। অধিকাংশ রাত্রিই তাঁহার এই বাহির বাড়িতে কাটিত। তাহা ছাড়া দেশভ্রমণ তাঁহার জীবনের একটি বিশেষ অঙ্গ ছিল। একটির পর একটি করিয়া তিনি দেশ দেখিয়া বেড়াইতেন। কত তীর্থক্ষেত্রে গিয়াছেন, অথচ দেবতা দর্শন করেন নাই, দেবমন্দিরের নিকট হইতে ফিরিয়া আসিয়াছেন। বলিতেন, জীবনে তো অনেক পাপ করেছি, মিথ্যে পবিত্র দেবমন্দির আর কলুষিত করি কেন!

    অকস্মাৎ একদিন সূর্যনারায়ণ কাহাকেও কিছু না-বলিয়া না-কহিয়া অতি অসময়ে বিসূচিকা রোগে দেহত্যাগ করিলেন। মৃত্যুকালে তিনি তাঁহার নাবালক পুত্র শঙ্করনারায়ণ চৌধুরিকে দেনার দায়ে আকণ্ঠ ডুবাইয়া যাইতে কুণ্ঠিত হন নাই।

    শঙ্করনারায়ণ যখন সাবালক হইলেন তখন তিনি তাঁহার সম্পত্তির মধ্যে তাঁহাদের প্রাচীন বসতবাটি ছাড়া আর কিছুই দেখিতে পাইলেন না। চারিদিকের আয়ের পথ রুদ্ধ হইয়াছিল। বনেদি বংশের ধ্বংসাবশেষ লইয়া চৌধুরিপরিবার বিভীষিকার ন্যায় দাঁড়াইয়া রহিল। গহনা বিক্রি করিয়া শঙ্করনারায়ণ মানুষ হইয়া উঠিলেন। তিনি কিন্তু মানুষ হইলেন তাঁহার পিতা বা পিতামহের বিপরীত প্রকৃতি লইয়া। ইংরেজি শিক্ষার তিনি ধার ধারিলেন না। তবে অবিচলিত চিত্তে সংস্কৃত অধ্যয়ন করিয়া যাইতে লাগিলেন। তাঁহার মধ্যে কেমন যেন ধর্মভাব জাগিয়া উঠিল, তিনি অল্পবয়স হইতেই ধার্মিক হইয়া পড়িলেন। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে তাঁহার প্রগাঢ় শ্রদ্ধা। গৃহদেবতা লক্ষ্মীজনার্দনের পূজায় ক্রমে ক্রমে তিনি আত্মনিয়োগ করিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত গম্ভীরপ্রকৃতির মানুষ। কাহারও সঙ্গে বড়ো একটা কথা কহিতেন না। বাড়িতে খাইতেন আর ত্রিতলের ঘরে বসিয়া থাকিতেন। কোথাও বাহির হইতেন না। রুদ্রাক্ষের মালা গলায় পরিয়া গেরুয়াবসনে সর্বাঙ্গ মণ্ডিত করিয়া তিনি সন্ন্যাস জীবনযাপন করিতে লাগিলেন। অবসর সময়ে তিনি তাঁহার প্রিয় বেহালাখানায় বসিয়া ছড়ি ঘষিতেন। রাত্রির নিঃশব্দতার বক্ষ চিরিয়া সেই রাগিণী কোনো বন্দিনী বিরহিণীর আর্তক্রন্দনের ন্যায় শুনাইত। ক্ষয়িষু; চৌধুরিবাড়ির গৃহলক্ষ্মী যেন ওই ভাষায় গুমরাইয়া-গুমরাইয়া কাঁদিয়া মরিত।

    শঙ্করনারায়ণও তাঁহাদের বংশের ধারা বজায় রাখিয়া অল্পবয়সে বিবাহ করিয়াছিলেন এবং খুব অল্পবয়সেই তাঁহার পুত্র হইয়াছিল। তাঁহার পিতৃপুরুষদিগের ন্যায় তিনি তাঁহার পত্নী কল্যাণীকে ঘৃণা করেন নাই সত্য, তবে তাঁহাকে যে ভালোবাসিতেন একথা হলফ করিয়া বলা যায় না। তিনি পত্নীর প্রতি তাঁহার কর্তব্য সম্পাদন করিতেন মাত্র। সারাদিন প্রায় তাঁহার গৃহদেবতার ধ্যানধারণায় কাটিত। তিনি নিত্য অত্যন্ত শুচিতাসহকারে দেবতার আরাধনা করিতেন। গভীর রাত্রে পূজায় বসিতেন। যাহা জুটিত সেই সামান্য দু-টি শাকান্ন মুখে দিয়া তিনি আবার তাঁহার সেই ত্রিতলের গৃহে যাইতেন। বাড়ি হইতে বাহির হইতেন না আদৌ। দিনদিন চৌধুরি বংশ যে নিশ্চিহ্ন হইবার পথে আগাইয়া যাইতেছে, তাহা দেখিয়া তিনিও ধীরে ধীরে শুকাইতে লাগিলেন। আর ততই তাঁহার গৃহদেবতার পূজার মাত্রাও বাড়িয়া যাইতে লাগিল। তিনি পাগলের মতো হইয়া গেলেন। তাঁহার জীবনের একমাত্র কামনা হইল— বিত্ত চাই, অর্থ চাই, ঐশ্বর্য চাই। তিনি কেবল প্রার্থনা করিতেন, দেবতা আবার যেন চৌধুরি বংশের নষ্টসম্পদ ফিরাইয়া দেন।…

    এহেন কালে একদা চৈত্রের এক অমাবস্যা রজনীতে শঙ্করনারায়ণ স্বপ্ন দেখিলেন যেন তাঁহাদের গৃহলক্ষ্মী চৌধুরি বংশ ত্যাগ করিয়া যাইতেছেন। তাঁহার অপূর্ব জ্যোতিতে বিশ্বভুবন আলোকিত। একটা সুস্নিগ্ধ সুবাসে দিগন্ত ভরিয়া গিয়াছে। শঙ্করনারায়ণ ত্বরিতপদে উঠিয়া গিয়া দেবীর পথ রোধ করিয়া দাঁড়াইলেন। দেবী তাঁহার বিষণ্ণ মুখে যেন বলিলেন— বাছা পথ ছাড়, আমায় যেতে দে।

    শঙ্করনারায়ণ কাঁদিতে লাগিলেন— মা, আমাদের এমনি করে ছেড়ে যাচ্ছ মা? দেবী নিষ্ঠুরভাবে হাসিলেন।— নিত্য না খেয়ে তোমার পূজার আয়োজন করেছি মা, তবু তোমার ক্ষুধা দূর হয়নি?

    —না। আমি রক্ত চাই।

    —কার রক্ত মা?

    —তোর ছেলের।

    দেবী অন্তর্হিতা হইলেন। অমনি শঙ্করনারায়ণের ঘুম ভাঙিয়া গেল। ঘামে তাঁহার সর্বাঙ্গ ভিজিয়া গিয়াছিল। তিনি উঠিয়া রোদন করিতে লাগিলেন। রাক্ষসী এ-কী পরীক্ষা তোর! তখনও তাঁহার সেই গৃহে দেবীর পদ্মগন্ধ বিচ্ছুরিত হইতেছিল। শঙ্করনারায়ণ বিচলিত হইলেন না। চৌধুরি বংশ তাহার পুত্রের চেয়েও অধিক মূল্যবান। তিনি বলিলেন, তাই হবে মা, তাই হবে। তুমি এ অভাগাকে ত্যাগ করো না।

    তারপর তিনি ধীর পদক্ষেপে তাঁহার শয়নগৃহে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। অতি সন্তর্পণে। কল্যাণী তখন ঘুমাইতেছিলেন আর তাঁহার পুত্র মাতার স্তন্যপান করিতেছিল ঘুমন্ত অবস্থায়। শঙ্করনারায়ণ অত্যন্ত ধীরে ধীরে সেই খোকাকে মাতার বক্ষ হইতে ছিনাইয়া আনিলেন। কল্যাণী সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত হইয়া ঘুমাইতেছিলেন, তিনি একবার পাশ ফিরিয়া শুইলেন মাত্র। শঙ্করনারায়ণ খোকাকে পরম স্নেহে তাঁহার বুকের মধ্যে করিয়া গৃহ হইতে বাহির হইয়া আসিলেন। সোঁ-সোঁ শব্দে সারা প্রকৃতি যেন উন্মাদ তাণ্ডবে মাতিয়া উঠিয়াছিল। খোকা পিতার বাহুমধ্যে ঘুমাইতে লাগিল। তারপর খোককে গৃহদেবীর সম্মুখে নিজ হাতে বলি দিলেন। একবার হয়তো সে কাঁদিয়াছিল, কিন্তু বাহিরের সেই ঝড়জলের মধ্যে সে কান্না হয়তো শোনা যায় নাই। রক্তধারায় সারা গৃহ ছাইয়া গেল। ভয়ে বিস্ময়ে তিনি কিন্তু দিশাহারা হইলেন না, বা বেদনায় মুষড়াইয়া পড়িলেন না। হোমের জন্য যে বালি ছিল তাহা আনিয়া সারারাত্রি তিনি সেই রক্তচিহ্ন মুছিতে লাগিলেন। চৌধুরি বংশ বড়ো হইবে— জীবনের এই একমাত্র আকাঙ্ক্ষা আজ তাঁহার পূরণ হইয়াছে, এই সান্ত্বনায় পরম তৃপ্তিতে সেই বালির উপরই রাত্রিশেষের দিকে তিনি ঘুমাইয়া পড়িলেন। দিনের আলো ফুটিতে না-ফুটিতে কল্যাণী উন্মাদিনীর ন্যায় ছুটিয়া আসিয়া স্বামীকে জাগাইলেন— ওগো, খোকা কোথা গেল?

    শঙ্করনারায়ণ স্ত্রীর পানে চাহিতে পারিলেন না। খোকার মৃতদেহ তখন ভাগীরথীর খরস্রোতে কোন দূরান্তরে ভাসিয়া গিয়াছে। সেই রক্তমাখা বালুকারাশিই তাহার শেষ চিহ্ন। কল্যাণী আবার ডাকিলেন— ওগো কথা কও! কথা কও? আমার খোকাকে এনে দাও!

    শঙ্করনারায়ণ আর কোনো কথা বলিতে পারিলেন না। জীবনে আর তিনি খুব কমই কথা বলেন। যাহা হউক ব্যাপারটা আর চাপা রহিল না। বুদ্ধিমতী কল্যাণী ক্রমে-ক্রমে সমস্ত ব্যাপারই অবগত হইলেন। সারাদিন তিনি আর উঠিলেন না, খাইলেন না। সেইদিন রাত্রে তিনি কুলপ্লাবিনী জাহ্নবীর পুণ্যস্রোতে আত্মবিসর্জন দিয়া তাঁহার বড়ো আদরের খোকার সহিত মিলিত হইলেন।

    ব্যাপারটা ক্রমে-ক্রমে রাষ্ট্র হইয়া পড়িল।

    এ ঘটনার কিছুদিন পর শঙ্করনারায়ণ চৌধুরিকেও আর পাওয়া গেল না। আজ পর্যন্ত তাঁহাকে পাওয়া যায় নাই।…

    .

    সে আজ পঞ্চাশ বছরের কথা। গৃহলক্ষ্মী এখনও সেই ভগ্নপ্রায় বংশহীন চৌধুরিবাড়ির অন্তরালে বন্দিনী আছেন কি না জানি না। তবে মাঝে মাঝে ওই ধ্বংসস্তূপের মধ্য হইতে একটা চাপা হাসি পরম পরিতৃপ্তির সহিত বাহির হইয়া আসে। সেদিনও এমনি ঝড় উঠিয়াছিল; সেদিনও পশ্চিমের আকাশে একটা কালো মেঘ দিগন্ত ছাইয়া রহিয়া রহিয়া কাঁদিয়া মরিতেছিল; সেদিনও হয়তো ওই শ্মশানঘাটের নিষ্পত্র ঝাউগাছটার মাথায় বসিয়া একটা শকুন আর্তকণ্ঠে চিৎকার করিয়া মরিতেছিল।

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅভিশপ্ত
    Next Article আরক

    Related Articles

    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    কাদা kada

    August 11, 2025
    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    অসাধারণ | Ashadharon

    April 3, 2025
    ধীরেন্দ্রলাল ধর ভৌতিক গল্প

    তান্ত্রিক

    March 13, 2025
    উপন্যাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    February 27, 2025
    উপন্যাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    চাঁদের পাহাড় – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    February 27, 2025
    উপন্যাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    পথের পাঁচালী – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    February 27, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }