Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অলৌকিক নয়, লৌকিক – ১ (প্রথম খণ্ড) – প্রবীর ঘোষ

    প্রবীর ঘোষ এক পাতা গল্প412 Mins Read0

    অধ্যায়: চোদ্দ – Psycho-Kanesis বা Pk (মানসিক শক্তি)

    অধ্যায়: চোদ্দ
    Psycho-kanesis বা Pk (মানসিক শক্তি)

    বিজ্ঞানের পরিচিত শক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ শক্তি, চৌম্বক শক্তি, শব্দ শক্তি ইত্যাদি। মানসিক শক্তি বা চিন্তা শক্তির খোঁজ বিজ্ঞানের জানা নেই। চিন্তা হলো মস্তিষ্কের স্নায়ুক্রিয়ার ফল। অর্থাৎ চিন্তার দ্বারা মানুষের মানসিক এবং শারীরিক কিছু পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। কিন্তু চিন্তার দ্বারা এমন কোনও শক্তি সৃষ্টি সম্ভব নয় যার সাহায্যে টেবিলে শুইয়ে রাখা একটি সিগারেটকেও দাঁড় করানো যেতে পারে। মানসিক শক্তির সাহায্যে একটি চামচকে বাঁকিয়ে ফেলা বা একটি গাড়িকে শূন্যে কিছুক্ষণের জন্যে তুলে রাখা অথবা কোনও ট্রেনকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া ইত্যাদি অসম্ভব। এইসব ঘটাতে প্রয়োজন কৌশলে অন্য ধরনের শক্তি প্রয়োগ কৌশলে কোনও ঘটনা ঘটিয়ে মানসিক শক্তি হিসেবে তাকে হাজির করার চেষ্টা পরামনোবিদরা বহুবারই করেছেন। পরামনোবিজ্ঞানীরা যা পারেননি, তা হলো সত্যিকারের মানসিক শক্তির কোনও প্রমাণ হাজির করতে।

    মানসিক চিন্তার ফলে যে দেহের নানা ধরনের পরিবর্তন ও অনুভূতি হয়। সে-বিষয়ে আগে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। অতিরিক্ত চিন্তা বা টেনশনের ফলে রক্তচাপ কমতে পারে বাড়তে পারে, মাথার চাঁদি উত্তপ্ত হতে পারে, হজমে গোলমাল হতে পারে, অনিদ্রা হতে পারে, আলসার হতে পারে, দাঁতে ব্যথা হতে পারে, এমনি হতে পারের তালিকা আরও দিতে থাকলে বিরাট হয়ে যাবে, তাই থামছি। হতে পারে অনেক কিছুই, কিন্তু তা সবই চিন্তাকারীর শরীরকে ঘিরে। কোনও জড় পদার্থকে চিন্তা শক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

    মানসিক শক্তিতে রেলগাড়ি থামানো

    মানসিক শক্তি দিয়ে রেল রোখার কাহিনি অনেকের কাছেই বোধহয় নতুন নয়। বিভিন্ন পরিচিত, অপরিচিত সাধু-সন্ন্যাসী-পীরদের ঘিরে এই ধরনের কিছু কাহিনি প্রচলিত রয়েছে।

    প্রখ্যাত তান্ত্রিক, ‘সিদ্ধপুরুষ’, আদ্যামার ভক্ত, আদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতা অন্নদাঠাকুরের শ্যালক শ্রীপরেশ চক্রবর্তী। সালটা ১৯৯০। শ্রী চক্রবর্তী আমাকে জানালেন, একবার তান্ত্রিক ও আদ্যামার পরমভক্ত, সিদ্ধপুরুষ শ্রীসুদীনকুমার মিত্র তাঁর মানসিক শক্তি প্রয়োগ করে একটা ট্রেনকে স্টেশনে আটকে রেখেছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছিল এই ধরনের: সুদীনকুমার মিত্র কোথায় যেন যাবেন বলে ট্রেন ধরতে শিয়ালদহ যাচ্ছিলেন। পথে গাড়ির ভিড়ে তাঁর গাড়ি যায় আটকে। জ্যামে আটকে পড়ে শ্রীমিত্রের সঙ্গীরা উদ্বিগ্নভাবে ঘন ঘন ঘড়ি দেখছেন। ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে যাচ্ছে। স্টেশনে যখন গাড়ি পৌঁছল তার কিছু আগেই ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। তবে, সুদীনকুমার মিত্রের ইচ্ছেয় তাঁর সঙ্গীরা মালপত্র নিয়ে হাজির হলেন প্লাটফর্মে। অবাক কাণ্ড! ট্রেন তখনও দাঁড়িয়ে আছে!

    আমি প্রশ্ন করেছিলাম, “ট্রেনটা এমনিতেও তো লেট থাকতে পারতো? আপনি কী করে ধরে নিলেন ট্রেন থাকার কারণ সুদীন মিত্রের ইচ্ছাশক্তি?

    শ্রী পরেশচন্দ্র চক্রবর্তী
    শ্রী পরেশচন্দ্র চক্রবর্তী

    “আমাদের অনেকেরই বোধহয় এই ধরনের দেরি করে স্টেশনে পৌঁছেও ট্রেন পাওয়ার অভিজ্ঞতা অল্প-বিস্তর আছে। আমাদের দেশে ট্রেন সময় মেনে চলে না, সুতরাং এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটা আদৌ অলৌকিক বা অসম্ভব পর্যায়ে পড়ে না।”

    আমার মন্তব্যে শ্রীপরেশ চক্রবর্তী বলেছিলেন, তিনিই তাঁর অতীন্দ্রিয় শক্তির পরিচয় দিতে পারেন চলন্ত ট্রেন আটকে দিয়ে।

    আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, “চলন্ত ট্রেন আটকাতে হবে না, আমি একটা সাইকেল চালাব। আপনি আপনার অতীন্দ্রিয় শক্তিতে সাইকেলটা থামাতে পারবেন?”

    —“না, সাইকেল নয়, ট্রেন থামিয়েই তোমাদের আমি দেখাব।” শ্রীচক্রবর্তী বলছিলেন। আমি বলেছিলাম, “আপনি যে পদ্ধতিতে ট্রেন থামাবেন, আমিও সেই পদ্ধতিতেই ট্রেন থামাব। কারণ, জানেনই তো, আমার একটা বিশ্রী অভ্যেস আছে, কেউ অলৌকিক কিছু দেখালে আমিও সেটা দেখাবার চেষ্টা করি।”

    না; আজ পর্যন্ত পরেশ চক্রবর্তী ট্রেন বা সাইকেল কোনটারই গতি ইচ্ছাশক্তিতে রুদ্ধ করে দেখাননি। তবে আমি কিন্তু একবার ছোট্ট একটা কৌশলে ট্রেন থামিয়ে অলৌকিক বিশ্বাসী বন্ধুদের চমকে দিয়েছিলাম। কৌশলটা হলো, পরীক্ষক বন্ধুদের অপরিচিত আমার এক বন্ধু ট্রেনের কম্পার্টমেণ্ট থেকে একটা সুটকেশ বাইরে ফেলে দিয়ে চেন টেনেছিল।

    আর একবার কলকাতার বুকে আমার ইচ্ছাশক্তিতে মোটর গাড়ি থামিয়ে বন্ধুদের বিস্মিত করছিলাম, কেউ বুঝতেই পারেননি, চালকের সঙ্গে আমার বোঝাপড়া ছিল।

    খড়গপুরের সেই পীর

    এবার যে ঘটনাটার কথা বলছি, সেটা ঘটেছিল খড়্গপুর স্টেশনে। তখন আমি নেহাতই বালক। ইন্দার কৃষ্ণলাল শিক্ষানিকেতনে পড়ি। রাম নবমীতে ট্রাফিক সেটেলমেণ্টের লাগোয়া ‘বড়া লাইট কা নীচে’ জি. ভি. রাওয়ের ম্যাজিক দেখি। ক্লাশে টিচার শুভেন্দু রায়ের কাছে গল্প শুনি, শোষক আর শোষিতদের। পাঁচ ভাই-বোনের সংসারে বেড়ে উঠছি আগাছার মতোই। খেলা বলতে ছিল সুশীল রায়চৌধুরীর ওখানে বক্সিং শেখা। আর নেশা বলতে অলৌকিক শক্তির খোঁজে সাধুসন্ত-পীরদের পেছনে দৌড়নো। তখন এই সব অলৌকিক-বাবাদের ভিড়ও থাকত বটে খড়্গপুরে। জানি না এখন কেমন। গুরুজি বাবাজি আর পীরদের রমরমা এবং অন্ধ সংস্কারে পাকখাওয়া মানুষের ভিড়ে বহু জাতি, বহু ভাষা-ভাষীদের শহর খড়্গপুর সবসময় যেন ভাবাবেগে ভেসে যেত। কখনও শুনতাম কাকে না কি মা শীতলা ভর করেছে, কখনও শুনতাম পাড়ার কোন মহিলা মা মনসার আশীর্বাদ পেয়ে স্বপ্নে পাওয়া ওষুধ দিচ্ছে। কখনও বা কারও বাড়ির গুরুদেব শূন্যে হাত ঘুরিয়ে পেঁড়া এনে আমাকে খাইয়েছেন। ওই বয়েসেই আমিও শূন্যে হাত ঘুরিয়ে পেঁড়া এনে বন্ধুদের খাওয়াতাম। পনেরোই আগস্ট বন্ধুরা মিলে ত্রিপল টাঙিয়ে মঞ্চে ম্যাজিক দেখাতাম। ম্যাজিক দেখে কেউ কেউ মেডেল দেওয়ার মিথ্যে প্রতিশ্রুতিও ঘোষণা করতেন স্টেজে। এমনি একটা সময় হঠাৎই এক পিরের অলৌকিক ঘটনা গোটা খড়্গপুর নাড়িয়ে দিল। ঘটনাটা নিজের চোখে দেখিনি, শুনেছিলাম।

    এক পির ট্রেনে উঠেছিলেন টিকিট ছাড়াই। পরনে বহু রঙিন তালিতে রঙচঙে আলখাল্লা আর গলায় নানা ধরনের পাথর ও পুঁতির মালা। মাথা ভর্তি বড় বড় চুল আর মুখ ভর্তি কাঁচা-পাকা দাড়ি-গোঁফ। অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান টিকিট চেকার বিনা-টিকিটের ফকিরটিকে পাকড়াও করে নামিয়ে দিলেন। ফকির রাগে ফুঁসতে লাগলেন। বিড়বিড় করে কী সব বলে শূন্যে হাত তুলে ট্রেনের ইঞ্জিন লক্ষ্য করে অদৃশ্য কিছু একটা ছুঁড়ে মারতে লাগলেন।

    খড়্গপুর খুবই বড় জংশন স্টেশন। ট্রেন এলে প্লাটফর্মের ভিড় যেন উপচে পড়ে। ভিড়ের একাংশ ফকিরের অদ্ভুত কাণ্ড-কারখানা দেখে তাঁকে ঘিরে দাঁড়াল।

    ট্রেন ছাড়ার ঘণ্টি পড়ল, অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান গার্ড সবুজ ফ্ল্যাগ নাড়াতে নাড়াতে হুইসিল বাজাল। ইঞ্জিন সিটি দিল, কিন্তু আশ্চর্য, ট্রেন নড়ল না। ইঞ্জিন ঘন ঘন সিটি বাজায় কিন্তু ট্রেন আর এগোয় না। গার্ড সাহেব ব্যাপার দেখতে নিজেই এগিয়ে এলেন ড্রাইভারের কাছে। দেখলেন, ড্রাইভার খুটখাট করে ইঞ্জিনের মেশিন-পত্তর নাড়াচাড়া করছে, সাহায্য করছে খালাসি। গার্ড সাহেব হিন্দিতেই প্রশ্ন করলেন, “কী হলো? ইঞ্জিন বিগড়েছে?”

    খড়্গপুরের দক্ষিণ ভারতীয় ড্রাইভার উত্তর দিলেন, “ইঞ্জিন তো ঠিকই আছে, কিন্তু গাড়ি চলছে না।”

    লোকো-শেড থেকে মিস্ত্রি এলেন, কিন্তু কিছুতেই ইঞ্জিন থামার রহস্য খুঁজে পাওয়া গেল না।

    কয়েক মুহূর্তে গোটা স্টেশন চত্বরে রটে গেল ফকির সাহেব ট্রেন আটকে দিয়েছেন। অন্য প্লাটফর্ম থেকেও লোক আসছে এই অলৌকিক ঘটনা ও ফকিরকে দেখতে। খবরটা ড্রাইভার ও খালাসির কানেও গেছে। তাঁরাই শেষ পর্যন্ত ফকিরের কাছে নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইলেন। ফকির একটি শর্তে রাজি হলেন তাঁর ইচ্ছাশক্তিতে তুলে নিতে, সেই টিকিট-চেকারকে এসে ক্ষমা চাইতে হবে।

    জনতার চাপে এবং ফকিরের অলৌকিক ক্ষমতা দেখে অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান টিকিট-চেকার সুড়সুড় করে এসে ক্ষমা চেয়ে ফকিরকে ট্রেনে বসিয়ে দিলেন। ফকির প্রসন্ন হলেন। এবার গাড়ি চলল। ঘটনাটি জনপ্রিয়তা পেল। কিছুদিন সর্বত্রই ওই আলোচনা। আমি কিন্তু অন্য কথা ভেবেছিলাম সেদিন। ড্রাইভার ফকিরের চেনা লোক নন তো? সেই সঙ্গে লোকো-শেডের মিস্ত্রি! যেমনটি ম্যাজিক দেখাবার সময় আমার বন্ধুরাও দর্শক সেজে বসে থাকে।

    স্টীমার বন্ধ করেছিলেন পি. সি. সরকার

    জাদুকর দীপক রায়ের একটা লেখায় একবার পড়েছিলাম জাদু সম্রাট পি. সি. সরকার একবার স্টিমার বন্ধ করেছিলেন। শ্রীসরকার কয়েকজন সঙ্গীর সঙ্গে স্টিমারে গোয়ালন্দ আসছিলেন নারায়ণগঞ্জ থেকে। তখন তিনি জাদুচর্চার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তত নাম ছড়ায়নি।

    রেলিং-এর ধারে ডেকে বসে শ্রীসরকার তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে নানা রকমের হাত সাফাইয়ের খেলা দেখাতে মেতে উঠলেন। ম্যাজিক দেখতে ডেকে ভিড় জমে উঠল, একটুক্ষণের মধ্যেই। শ্রীসরকারের হাতের কৌশলে সকলেই অবাক, ঘন-ঘন হাততালি পড়ছে। এরই মধ্যে একজন দর্শক ফুট কাটলেন, “এ আর কী এমন দেখালেন? এসব হাতসাফাই তো রাস্তার বেদেরাও দেখায়। অন্য কিছু দেখান না।”

    “সব কিছু কী আর সব জায়গায় দেখানো যায়? তারও একটা পরিবেশ আছে! এখানে এই পরিবেশে দেখনো সম্ভব এমন কোনও কিছু দেখাতে বললে নিশ্চয়ই দেখাব।”

    “বেশ তো, আমরা যে স্টিমারে যাচ্ছি, সেটাকেই এই মাঝনদীতে বন্ধ করে দিন না। দেখি আপনার কেরামতি।”

    শ্রীসরকার কিন্তু এতে দমলেন না। বললেন, “যোগের সাহায্যে মানসিক শক্তি প্রয়োগ করে এটা অবশ্য করা সম্ভব। আমি একবার কুম্ভক যোগ করে চেষ্টা করে দেখতে পারি। তবে পারব কি না জানি না। আপনারা কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে আমার মনসংযোগে সাহায্য করুন।

    সমস্ত দর্শক রুদ্ধশ্বাসে শ্রীসরকারের যোগের প্রয়োগ দেখার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। পি. সি. সরকার চোখ বুজে বসলেন যোগে। তারপরে যা ঘটে গেল বুদ্ধিতে তার ব্যাখ্যা মেলা ভার। স্টিমারের গতি কমল। তারপর পুরোপুরি থেমে গেল। সারেঙ, খালাসিদের মধ্যে হইচই পড়ে গেল, মাঝনদীতে স্টিমার থামল কেন?

    ইতিমধ্যে সারা স্টিমারে খবর ছড়িয়ে পড়েছে, এক জাদুকর যোগের শক্তিতে স্টিমার চলা বন্ধ করে দিয়েছেন।

    সারেঙের অনুরোধে পি. সি. সরকার আবার স্টিমার চলার আদেশ দিতেই, বাধ্য ছেলের মতোই স্টিমার আবার চলতে শুরু করল।

    পি. সি. সরকারের এই অতীন্দ্রিয় শক্তি দেখে দর্শকদের চক্ষু চড়কগাছ হলেও, তাঁর এই ক্ষমতার চাবিকাঠিটি ছিল সারেঙের সহযোগিতা। জাদুকর আগেই স্টিমারে উঠে নিজের পরিচয় দিয়ে সারেঙের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে নিয়েছিলেন। যাত্রীদের সঙ্গে একটু মজা করতে জাদুকরের সঙ্গে সারেঙও রাজি হয়ে গিয়েছিল। কী ধরনের ইশারা পেলে স্টিমার থামবে এবং কী ধরনের ইশারা পেলে স্টিমার ফের চালু হবে, সব দু’জনে মিলে ঠিক হয়ে গেল। তারপর জাদুকরেরই এক নিজের লোক জাদুকরকে উসকে দিয়ে মাঝনদীতে স্টিমার বন্ধ করে কেরামতি দেখাতে বলেছিলেন।

    সাধুজির স্টিমার খাওয়া

    গল্পটা শুনেছিলাম শ্রদ্ধেয় অগ্রজপ্রতিম সাহিত্যিক বনফুলের মুখে। তিনি আবার এটা শুনেছিলেন শরৎচন্দ্রের মুখে।

    শরৎচন্দ্র তখন স্কুলে পড়েন। সেই সময় ভাগলপুরের আজমপুর ঘাটে এলেন এক আশ্চর্য সাধু। অসাধারণ নাকি তাঁর ক্ষমতা। পরনে গেরুয়া, মাথায় জটা, সারা গায়ে ছাইমাখা, ভাগলপুরময় দ্রুত খবরটা ছড়িয়ে পড়ল। কয়েক দিনের মধ্যেই আজমপুরের ঘাট দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠল।

    শোনা গেল, সাধুজি অনেকের দুরারোগ্য ব্যাধি সারিয়ে দিচ্ছেন, শূন্য থেকে খাবার বের করছেন, ঝোলা থেকে বের করছেন অসময়ের আম। সাধুজির কাণ্ডকারখানা দেখে অনেকেই টপাটপ দীক্ষাও নিয়ে নিচ্ছিলেন।

    একদিন সাধুজির গঙ্গাপুজো করার ইচ্ছে হলো। তাঁর ইচ্ছের কথা শিষ্যদের বলতেই শিষ্যরা পুজোর সব উপকরণ নিয়ে হাজির হলো আজমপুর ঘাটে। সাধুজির নির্দেশে গঙ্গাতীরে পবিত্র জলের ধারে সাজানো হলো ফল, ফুল, বাতাসা, পেঁড়া।

    বেলা বারোটার সময় সাধুজি সবে পুজোয় বসবেন, এমন সময় একটা দারুণ কাণ্ড ঘটে গেল। কার কোম্পানির একটা বিরাট স্টিমার তখন রোজই ঐ সময় আজমপুর ঘাটের পাশ দিয়ে প্রচণ্ড গর্জনে বিরাট বিরাট ঢেউ তুলে যেত। এ-দিন সেই প্রচণ্ড ঢেউগুলো এসে হঠাৎই আছড়ে পড়ল গঙ্গামায়ের পুজোর নৈবেদ্যর ওপর। মুহূর্তে নৈবেদ্য ভেসে গেল গঙ্গায়।

    সাধুজি গেলেন খেপে—এত বড় স্পর্ধা। আমার গঙ্গামায়ের পুজো নষ্ট করা—ঠিক আছে কাল তুই ব্যাটা স্টিমার পালাবি কোথায়? এদিক দিয়েই তো যেতে হবে, তখন তোকে আস্ত গিলে খাব। হ্যাঁ, আজ আমি আমার এই সমস্ত ভক্তদের সামনে প্রতিজ্ঞা করছি, কাল সত্যিই তোকে গিলে খাব।

    একজন শিষ্যের কাছে গুরুজির প্রতিজ্ঞাটা বোধহয় বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। সে জিজ্ঞেস করল, “গুরুজি, এ যে জাহাজের মতো পেল্লাই স্টিমার, খাবেন কী করে?

    গুরুজি এ-হেন সন্দেহে গর্জে উঠলেন, “কালকেই তা দেখতে পাবি বেটা। আমার প্রতিজ্ঞার কোনও নড়চড় হবে না।”

    পুজো দেখতে আসা ভক্ত শিষ্যেরা পরম ভক্তিতে চেঁচিয়ে উঠল, “গুরুজি কী জয়।”

    দেখতে দেখতে গুরজির স্টিমার গেলার প্রতিজ্ঞার খবরটা ছড়িয়ে পড়ল ভাগলপুর ও তার আশেপাশে। পরদিন সকাল থেকেই আজমপুর গঙ্গার ঘাটে মেলা বসে গেল। বেলাও বাড়ে, লোকও বাড়ে।

    সাধুজি ঘাটের কাছে ধুনি জ্বেলে গভীর ধ্যানে মগ্ন। বেলা বারোটা যখন বাজে-বাজে, তখন জনতা চিৎকার করে উঠল, “স্টিমার আসছে, স্টিমার আসছে।”

    সাধুজির ধ্যান ভাঙল এবার। চোখ মেলে তাকালেন। গম্ভীর মুখে উঠে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে চললেন গঙ্গার দিকে। কোমর জলে নেমে থামলেন সাধুজি। তারপর বাজখাঁই গলায় চেঁচালেন, “আয় বেটা জাহাজ, আজ তোকে গিলে খাব।”

    সাধুজি যত চেঁচান, দর্শকদের সঙ্গে সঙ্গে শরৎচন্দ্রের বুক ঢিপ্‌ঢিপ্‌ করে। কী বিরাট অঘটন ঘটে যাচ্ছে ভাবতে গিয়ে আর থই পান না।

    প্রচণ্ড গর্জন তুলে স্টিমার এসে পড়ল। স্টিমারের ঢেউ আছড়ে পড়ল ঘাটে। সাধুজি হাঁ করে আবার যেই স্টীমারের দিকে এগোচ্ছেন, অমনি জনাকয়েক শিষ্য জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাধুজিকে ঘিরে কেঁদে পড়ল, “গুরুজি, জাহাজের কয়েক’শ নিরীহ যাত্রীদের আপনি বাঁচান। ওরা তো কোনও অপরাধ করেনি। জাহাজের দোষে ওদের কেন প্রাণ নেবেন?”

    শিষ্যদের কান্নাভেজা অনুরোধে গুরুজির মন নরম হলো। ভুরু কুঁচকে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, “তোদের জন্যেই জাহাজটা বেঁচে গেল।”

    এ-ক্ষেত্রেও কিন্তু সাধুজির অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা প্রমাণিত হলোনা তাঁর শিষ্যদের জন্যে। অথবা এ-ও বলা যায়, গুরুজির বুজরুকি ধরা পড়ল না তাঁরই শিষ্যদের অভিনয়ে।

    লিফ্‌ট ও কেব্‌ল-কার দাঁড় করিয়েছিলেন ইউরি গেলার

    অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার নানা চমক দেখিয়ে ইউরি গেলার ইউরোপের দেশগুলোতে যথেষ্ট হুলুস্থুল ফেলে দিয়েছিলেন। অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা দেখাতে জার্মান থেকেই প্রস্তাব এল। যিনি প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন তিনি ব্যবসা ভালোই বোঝেন। পাবলিসিটির জন্য বিস্তর খরচ করলেন। ইউরি মিউনিখে পা দিতেই সেখানকার পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনের সাংবাদিকেরা ছেঁকে ধরলেন তাঁকে। কয়েক দিন ধরে ইউরি, কয়েক জায়গায় চামচ ভাঙা, চামচ বাঁকানোর ঘটনা ঘটালেন, দেখালেন থট রিডিং-এর খেলা। কয়েকদিন পরে ম্যানেজার গেলারকে নতুন ধরনের শক্তি প্রয়োগের জন্য হাজির করলেন। পাহাড়ের গা থেকে রোপওয়ে ধরে এগিয়ে আসা কেবল-কার দাঁড় করিয়ে দিলেন গেলার। তারপর একটা ডিপার্টমেণ্টাল সেণ্টারের লিফ্‌টকে থামিয়ে দিলেন। প্রচারের বন্যায় ভেসে চললেন গেলার। তারই মাঝে কয়েকজন গেলারের এই ক্ষমতায় সন্দেহ প্রকাশ করলেন। কয়েকজন তাঁদের মোটরকার ও মোটরবাইক আটকাবার জন্য চ্যালেঞ্জ জানালেন। ‘অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী’ ইউরি বোকা নন। আল-টপকা চ্যালেঞ্জকে গ্রাহ্যই করলেন না। তাতে ইউরির ক্ষতি যত হয়েছে, লাভ হয়েছে তার চেয়ে বেশি। কারণ, চ্যালেঞ্জ জেতা ইউরির পক্ষে সম্ভব ছিল না।

    মানসিক শক্তি দিয়ে গেলারের চামচ বাঁকানো

    পরামনোবিজ্ঞানীদের কাছে ইউরি গেলার বিশ্বের শ্রেষ্ঠতর মানসিক শক্তির অধিকারী। গেলারের সাইকো-কিনেসিস (Psycho-kinesis) বা মানসিক শক্তির তথাকথিত পরীক্ষা আমেরিকা, ইংলণ্ড ও ইউরোপে যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছে। একাধিকবার সাইকো-কিনেসিস শক্তির দ্বারা একটা টেবিলের ওপর সোজা দাঁড় করানো ছুরি বা চামচকে টেবিলের অপরপ্রান্তে বসে না ছুঁয়েই বাঁকিয়ে দিয়েছেন গেলার। আবার, কখনও বা দু-আঙুলের চাপে চামচ বা ছুরিকে ভেঙে ফেলেছেন অতি অবহেলে।

    এই ধরনের ঘটনা ঘটার পেছনে পরামনোবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা হলো—মানুষের শক্তিকে এমন একটা পর্যায়ে উন্নত করা সম্ভব, যখন শরীরের বাইরের কোনও বস্তুর প্রভাবিত করা সম্ভব। গেলার মানসিক শক্তিকে বস্তুর উপর প্রয়োগসক্ষম একজন ব্যক্তি।

    ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠিত চিত্র-শিল্পী শক্তি বর্মন বছর উনিশ-কুড়ি আগে কলকাতায় এসেছিলেন। তখন তাঁর সঙ্গে ইউরি গেলারের অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা নিয়ে একাধিকবার দীর্ঘ আলোচনা হয় আমার। পরে ফ্রান্স থেকে ইউরি গেলারের অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার ওপর আমি একটি ভিডিও ক্যাসেট সংগ্রহ করি। তাতে লক্ষ্য করেছিলাম, টেবিলের একপ্রান্তে টেবিল না ছুঁয়ে বসেন ইউরি গেলার। টেবিলের ওপর অপর প্রান্তে একটা ছোট বেদী বা স্ট্যাণ্ড রাখা হয়। মিউজিয়ামে ছোটখাট মূর্তিগুলো যে ধরনের বেদীর ওপর রাখা হয় এও সেই ধরনেরই বেদী। বেদীর মাঝখানে লম্বা একটা ছিদ্র বা খাঁজ থাকে, যে ছিদ্র বা খাঁজে একটা চামচের তলার দিকটা ঢুকিয়ে সেটা খাড়া রাখা যায়। তার উপরে তীব্র আলো ফেলা হয়। এই আলোগুলো এমনভাবে সাজানো হয়, যাতে গেলারের চোখে প্রতিফলিত হয়ে মনঃসংযোগে বাধার সৃষ্টি না করে। চামচের ওপরে খুব কাছ থেকে এবং চারপাশ থেকে তীব্র আলো রিফ্লেক্টারে প্রতিফলিত করে ফেলা হয়।

    গভীরভাবে মনঃসংযোগ করে মানসিক শক্তিকে অপর প্রান্তের চামচে প্রয়োগ করতে থাকেন গেলার। দীর্ঘ সময় কেটে যায়, ঘণ্টার কাঁটা ঘোরে। একসময় দেখা যায় চামচটা বেঁকছে। একটু একটু করে চামচের হাতলটা বেঁকে যাচ্ছে।

    ধাতু বাঁকার আসল রহস্য

    ১৯৭৮-এর ১৬ এপ্রিল ‘সানডে’ পত্রিকায় জাদুকর পি. সি. সরকার (জুনিয়ার)-এর একটা সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল। সাক্ষাৎকারটিতে জাদুকর বলেছিলেন, ইউরি গেলারের চামচ বাঁকানোর মূলে রয়েছে দৃষ্টিবিভ্রম (Optical illusion)। অবশ্য, এই দৃষ্টিবিভ্রম ঠিক কেমনভাবে ঘটানো হয়ে থাকে তার উল্লেখ ছিল না। স্বভাবতই অতীন্দ্রিয় শক্তিতে বিশ্বাসী অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন—ইউরি গেলারকে কেউ একজন ভণ্ড বললেই তিনি ভণ্ড হয়ে যাবেন না। হয় শ্রীসরকার একটা চামচ বাঁকিয়ে দেখান, অথবা কৌশলটা জানান, যাতে যে কেউ পরীক্ষা করে তার সত্যতার প্রমাণ পেতে পারে।

    আমি অবশ্য যে ভিডিও ক্যাসেট দেখেছি, তাতে কিন্তু এটা স্পষ্টতই বোঝা গিয়েছিল, ইউরির চামচ বাঁকানোর পিছনে Optical illusion-এর কোনও ব্যাপারই ছিল না। কারণ, দর্শকরা বাঁকানো চামচটি হাতে ধরে পরীক্ষা করছিলেন। অর্থাৎ, চামচটি বাস্তবিকই বেঁকেছিল। দৃষ্টি বিভ্রম সৃষ্টি করে সোজা চামচকে বাঁকা দেখাবার চেষ্টা করেননি ইউরি।

    ইউরির চামচ বাঁকানোর ক্যাসেট দেখার সঙ্গে সঙ্গে ওর মানসিক শক্তির গোপন রহস্য আমরা কাছে গোপন থাকেনি। তবে অবাক হয়েছি এই ভেবে—কত সাধারণ একটা বিজ্ঞানের সূত্রকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞান পেশার মানুষদেরও ঠকিয়ে আসছিলেন।

    জেমস র‍্যাণ্ডি
    জেমস র‍্যাণ্ডি

    আমি এখন যে নিয়মে চামচ বাঁকানোর কথা বলছি, তাতে দৃষ্টিবিভ্রমের ব্যাপার নেই। একটা টেবিলের একপ্রান্তে থাকব আমি, অন্যপ্রান্তে একটা বেদির মতো স্ট্যাণ্ডের ওপরে দাঁড় করানো থাকবে একটা ছুরি বা চামচ। টেবিল কোনওভাবে স্পর্শ না করেই আমি বসব। টেবিলে কোনও কৌশল নেই। সেটা থাকবে অতি সাদা-মাটা। ঠিক মতো মনঃসংযোগের জনো ছুরি বা চামচের ওপর তীব্র আলো ফেলা হবে, এতে দর্শকদেরও দেখতে সুবিধা হবে। আলো আমার বা দর্শকদের চোখকে যাতে পীড়া না দেয়, তাই আলোগুলো ছুরি বা চামচের ওপর খুব কাছ থেকে ফেলা হবে। অর্থাৎ, ইউরি গেলারের কায়দাতেই দেখবে।

    গেলার চামচ বাঁকিয়েছেন
    গেলার চামচ বাঁকিয়েছেন

    একসময় দেখবেন, ছুরি বা চামচটা বেঁকে গেছে। নিজের হাতে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন, সত্যিই বেঁকেছে, আলোর সাহায্যে দৃষ্টিবিভ্রম ঘটানো হয়নি।

    এখানে কৌশলটা কিন্তু টেবিল, রঙিন আলোর কারসাজিতে নেই, রয়েছে এই ছুরি বা চামচেতে। ছুরির ফলা বা চামচের হাতলটা তৈরি করতে হবে দুটো ভিন্ন-ভিন্ন ধাতুর পাতলা পাত জুড়ে। ধরুন, লোহা ও তামার দুটো পাতলা পাত জুড়ে তৈরি করালেন। এবার দুটো জোড়া দেওয়া পাত যেন দেখা না যায় তাই প্রয়োজন গ্যালভানাইজ করে নেওয়া অর্থাৎ একটা নিকেল কোটিং দিয়ে নেওয়া।

    চামচ বাঁকাবার এই কৌশল আমি জানাবার পর পৃথিবী জুড়ের হই-হই পড়ে যায়। পৃথিবীর বহু দেশের টিভি এই কৌশলটি দেখায় এবং সঙ্গে দেখায় গেলারের বুজরুকি যে ধরেছে, সেই আমাকে। প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার অস্ট্রেলিয়ার জায়েণ্ট স্ক্রিনে ইউরির বুজরুকি ফাঁস ও আমাকে দেখে ফোনে অভিনন্দন জানান।

    তীব্র আলোর খুব কাছে চামচ বা ছুরিটা দাঁড় করিয়ে রাখলে এতগুলো আলোর তাপ উত্তপ্ত করবে। উত্তাপে বস্তুমাত্রেই প্রসারিত হয়। ছুরির ফলার বা চামচের হাতলের লোহার পাত এবং তামার পাত প্রসারিত হতে থাকবে। একই তাপে ভিন্ন-ভিন্ন পদার্থের প্রসারণ ভিন্ন-ভিন্ন রকমের। তামার প্রসারণ ক্ষমতা লোহার চেয়ে বেশি। অতএব লোহার পাতের সঙ্গে জুড়ে থাকা তামার পাত লোহার আগে বাড়াতে গিয়ে লোহার পাতকে বাঁকিয়ে দেয়, ফলে ছুরি ধনুকের মতো বেঁকে যায় বা হ্যাণ্ডেল ও মাথার জোড়ার কাছটা মুচড়ে যায়।

    ‘নিউ সায়েণ্টিস্ট’-এর পরীক্ষায় ইউরি এলেন না

    ‘নিউ সাইণ্টিস্ট’ পত্রিকার ১৯৭৪-এর ১৭ অক্টোবরের সংখ্যা থেকে জানতে পারি, পত্রিকাটির তরফ থেকে ইউরি গেলারের অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার দাবির সত্যতা পরীক্ষার জন্য চেষ্টা চালানো হয়েছিল। একটি সৎ, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক পত্রিকা হিসেবে গেলারের প্রচারের গড্ডলিকা প্রবাহে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে জনসাধারণের মানসিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পত্রিকার বিক্রি বাড়াতে চায়নি। আবার, ‘গেলারের অতীন্দ্রিয় স্রেফ বুজরুকি’, শুধু এ কথাটা বলেই ব্যাপারটা উড়িয়েও দিতে চায়নি। পত্রিকাটির তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল ইউরির সঙ্গে। এই ধরনের পরীক্ষায় সহযোগিতা করতে রাজি হলেন ইউরি। পরীক্ষার দিন স্থান সবই ঠিক হয়ে গেল। পরীক্ষার দিন ইউরি এলেন না। বললেন, “আমি বিজ্ঞানীদের সামনে বহু কঠিন পরীক্ষায় সফল হয়েছি। নতুন করে পরীক্ষায় নামার কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।”

    ‘নিউ সায়েণ্টিস্ট’ পত্রিকার কর্তৃপক্ষ কিন্তু আশা ছাড়লেন না। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে এবার ইউরি গেলারকে পরীক্ষায় হাজির হতে রাজি করালেন। কিন্তু এবারেও এলেন না ইউরি। পরিবর্তে জানালেন, তিনি একটা ভয় দেখানো চিঠি পেয়েছেন, যাতে বলা হয়েছে, এই পরীক্ষায় অংশ নিলে ইউরিকে খতম করা হবে। তাই বাধ্য হয়েই তিনি মত পরিবর্তন করেছেন।

    এক ঝলকে ইউরি

    ইউরি গেলারের এই ক্ষমতার উৎস হিসেবে ডঃ পুহারিক যে গল্প তাঁর বিখ্যাত ‘ইউরি’ বইটিতে লিখেছেন। তাতে বলা হয়েছে— ইউরির বয়েস যখন তিন বছর সেই সময় চকচকে মুখের একটা অদ্ভুত মূর্তি এসে হাজির হয় ইউরির মুখোমুখি। মূর্তিটার মাথা থেকে একটা তীব্র রশ্মি এসে পড়ে ইউরির মাথায়। ইউরি জ্ঞান হারান। তারপর থেকেই ইউরি নানা-রকম অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন। ওই অদ্ভুত মূর্তি না কি অন্য কোন মহাকাশের অধিবাসী।

    ইউরি গেলার তাঁর নিজের আত্মজীবনী ‘মাই স্টোরি’-তে অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা পাওয়ার যে গল্প বলেছেন, তা কিন্তু পুহারিকের গল্পের সঙ্গে মেলে না। ‘মাই স্টোরি’-তে আছে ওর সামনে এসে হাজির হয়েছিল বাটির মতো একটি বস্তু। তারই আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল, সেই সঙ্গে অনুভব করেছিলেন একটা ধাক্কা। ইউরিও অবশ্য বলেছেন, তাঁর এই অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা পেয়েছেন অন্য গ্রহবাসীর কাছ থেকে।

    ডক্টর অ্যানড্রিজা পুহারিকের সঙ্গে ইউরির প্রথম সাক্ষাৎ ১৯৭১-এ এক নাচগানের আসরে। নানা ধরনের নাচগানের পর ছিল ইউরির ম্যাজিক। ইউরি তখন পঁচিশ বছরের ঝক্‌ঝকে তরুণ। ইউরির কথা বার্তা শো-ম্যানশিপে মুগ্ধ হলেন পুহারিক। তারপরই ঘটে গেল ইউরি গেলার ও কোটিপতি বিজ্ঞানী অ্যানড্রিজা পুহারিকের মণিকাঞ্চন যোগ। পুহারিকের অর্থ, প্রচার ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ইউরিকে রাতারাতি প্রতিষ্ঠিত করল অতীন্দ্রিয় ক্ষমতাবান হিসেবে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅলৌকিক নয়, লৌকিক – ২ (দ্বিতীয় খণ্ড) – প্রবীর ঘোষ
    Next Article আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না – প্রবীর ঘোষ

    Related Articles

    প্রবীর ঘোষ

    অলৌকিক নয়, লৌকিক – 8র্থ খণ্ড – (জাতিস্মর, আত্মা, অধ্যাত্মবাদ) – প্রবীর ঘোষ

    September 20, 2025
    প্রবীর ঘোষ

    আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না – প্রবীর ঘোষ

    September 20, 2025
    প্রবীর ঘোষ

    অলৌকিক নয়, লৌকিক – ২ (দ্বিতীয় খণ্ড) – প্রবীর ঘোষ

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.