Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অলৌকিক নয়, লৌকিক – ১ (প্রথম খণ্ড) – প্রবীর ঘোষ

    প্রবীর ঘোষ এক পাতা গল্প412 Mins Read0

    অধ্যায়: দুই – কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান

    অধ্যায়: দুই – কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান

    জাদুকর জাদুর খেলা দেখান মনোরঞ্জনের জন্য। সেই খেলা দেখে বিস্মিত হলেও আমরা বুঝতে পারি এর পেছনে অলৌকিক কিছু নেই। আছে কিছু কৌশল, যা সাধারণ মানুষ চেষ্টা করলে আয়ত্ত করতে পারে। কিন্তু সরল বিশ্বাস ও কুসংস্কারের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির চতুর লোক যখন স্রেফ কিছু কৌশলের খেলা দেখিয়ে, অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন বলে নিজেদের প্রায় ঈশ্বরের আসনে বসিয়ে রাখে, তখন তা নির্দোষ মনোরঞ্জনের পর্যায়ে থাকে না।

    আসুন, আমরা প্রত্যেকেই খোলামেলা যুক্তিবাদী মন নিয়ে অলৌকিক বলে কথিত ঘটনাগুলোকে পর্যালোচনা করে দেখি, এগুলো কতখানি লৌকিক ও কতখানি অলৌকিক। সেইসঙ্গে প্রতিটি পাঠক-পাঠিকাকে অনুরোধ করব যুক্তিবাদী মনের অধিকারী হতে এই মুহূর্তে প্রতিজ্ঞা করুন—

    কোন অন্ধবিশ্বাসে বশ হওয়া নয়। বহুজনে বা বিখ্যাতজনে
    মেনে নিয়েছেন বলে কোন ধারণাকে মেনে নেওয়া
    নয়। যুক্তি দিয়ে বিচার করব, যাচাই করব শুধু।
    তারপরই গ্রহণ করব বা বাতিল করব।

    এই অলৌকিক ক্ষমতাবানদের প্রসঙ্গে একটা অসাধারণ ঘটনার উল্লেখ না করে পারছি না। একজন জাদুকর বুজরুক মোল্লাদের তথাকথিত ক্ষমতার মায়াজাল থেকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন আলজিরিয়ার অধিবাসীদের মুক্ত করেছিলেন।

    আলজিরিয়া তখন ফ্রান্সের অধীন। আলজিরীয়রা আরব মুসলমান সম্প্রদায়ের বংশধর। স্বভাবে দুঃসাহসী হলেও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। মোল্লা-সম্প্রদায় ওই সব সরল ও কুসংস্কারগ্রস্ত লোকগুলোকে নানারকম জাদুর খেলা দেখিয়ে এমন মুগ্ধ করে রেখেছিল। দেশের লোকেরা মনে করত মোল্লারা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ও আল্লার মতোই পূজনীয়। মোল্লারা জনসাধারণের ওপর ফরাসি সরকারের কর্তৃত্বে সন্তুষ্ট ছিল না। কারণ, এতে তাদের দীর্ঘদিনের একচেটিয়া কর্তৃত্বে বাধা পড়ছিল। মোল্লারা একসময় জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করতে শুরু করল যে, তারা আল্লার কাছ থেকে জানতে পেরেছে ফরাসি সরকারের আলজিরিয়া শাসনের দিন ফুরিয়েছে। মোল্লারা ফরাসি সরকারের বিরুদ্ধে জনতাকে নানাভাবে উসকানি দিতে লাগল।

    মোল্লাদের কথা আলজিরীয়দের কাছে স্বয়ং আল্লার কথা। অতএব, তারা আর ফরাসি সরকারকে পাত্তা দিতে রাজি হল না। আলজিরিয়ার ফরাসি সরকার প্রমাদ গুনলেন। মোল্লাদের এইসব কথার পিছনে যে কোনও যুক্তি নেই, তা অধিবাসীদের বোঝাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে তাঁরা শঙ্কিত হলেন। এই বিপদের কথা জানিয়ে ফ্রান্সে খবর পাঠালেন। ফ্রান্সের ফরাসি সরকার দীর্ঘ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছোলেন যে, সেনা পাঠিয়ে সাময়িকভাবে দমননীতি চালানো গেলেও এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজন, চতুর মোল্লাদের প্রভাব নষ্ট করা। জনসাধারণকে বুঝিয়ে দিতে হবে মোল্লাদের কোনও অলৌকিক ক্ষমতা নেই। ওরা এতদিন শুধু মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে লোক ঠকিয়ে এসেছে।

    ফরাসি সরকার এই কাজের ভার দিলেন ফ্রান্সের সেরা জাদুকর রবেয়ার উদ্যাঁকে। এতদিন শুধু চিত্ত বিনোদনের জন্যই উদ্যাঁ তাঁর জাদুর খেলা দেখিয়েছেন। এবার দেশের জন্য অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন আলজিরীয় মোল্লাদের মুখোমুখি হলেন। দলবল নিয়ে আলজিরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্স শহরে হাজির হলেন। সেখানকার সেরা থিয়েটার হলে তাঁর জাদু প্রদর্শনের ব্যবস্থা হল। বিশেষভাবে আমন্ত্রিত হলেন শহরের বহু গণ্যমান্য আরব মুসলমান ও মোল্লারা। ফরাসি জাদু দেখার ব্যাপারে অবশ্য জনসাধারণের খুব একটা উৎসাহ ছিল না। ওরা বিশ্বাস করত মোল্লাদের নানা ধরনের অলৌকিক কাণ্ডকারখানার কাছে ফরাসি জাদুকরের জাদু নেহাতই ছেলেখেলা।

    কিছু খেলা দেখানোর পর উদ্যাঁ light and heavy chest (হালকা ও ভারি বাক্স) খেলাটি দেখালেন। একটি ফরাসি সুন্দরী একটা ছোট্ট হালকা লোহার বাক্স লোহার পাটাতন পাতা মঞ্চে এনে রাখল। উদ্যাঁ এবার মঞ্চে আহ্বান জানালেন উপস্থিত সেরা শক্তিমান দর্শককে। শহরের সেরা পালোয়ান বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অতএব তিনি উঠলেন মঞ্চে।

    উদ্যাঁ বললেন, “দেখো তো বাক্সটা তুলতে পারো কি না?”

    পালোয়ান অতি তাচ্ছিল্যে তাঁর বাঁ হাত দিয়ে তুলে আবার নামিয়ে রাখলেন।

    উদ্যাঁ এবার পালোয়ানটিকে বললেন, “আমি আমার জাদুর বলে তোমার সব শক্তি কেড়ে নিচ্ছি।”

    উদ্যাঁ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সম্মোহন করার বিশেষ ভঙ্গিতে দু’হাত নাড়তে লাগলেন। তারপর একসময় বললেন, “এবার তোমার কোনও শক্তি নেই। তুমি বাক্সটা আর তুলতে পারবে না।”

    পালোয়ান তাচ্ছিল্যভরে হাত দিলেন বাক্সের হাতলে, কিন্তু এ কী! উঠছে না তো! তাচ্ছিল্যের হাসি মুহূর্তে মিলিয়ে গেল। সমস্ত শক্তি দিয়ে হেঁচকা দিলেন, কিন্তু বাক্সটা এক ইঞ্চিও উঠল না।

    দর্শকদের চোখে বিস্ময় ও আতঙ্ক। এমন দৈত্যের মত লোককে শিশুর চেয়েও দুর্বল করে দিয়েছেন জাদুকর।

    উদ্যাঁ এবার অলৌকিক শক্তি অধিকারী মোল্লা দর্শকদের আহ্বান জানালেন পালোয়ানটিকে শক্তি ফিরিয়ে দিতে।

    দর্শকদের একান্ত অনুরোধে স্টেজে উঠে এলেন শহরের দুই সেরা মোল্লা পীর। অনেক ঝাড়ফুঁক করলেন, কিন্তু তবুও পালোয়ানটি ঐ ছোট্ট লোহার বাক্সটা তোলার শক্তি ফিরে পেলেন না।

    শেষ পর্যন্ত উদ্যাঁই তাকে শক্তি ফিরিয়ে দিলেন। দর্শকরা অবাক বিস্ময়ে দেখল, এবার পালোয়ান অবহেলায় বাঁ হাতেই বাক্সটা তুলে ফেললেন। কৃতজ্ঞতায় উদ্যাঁর পায়ে মাথা ঠেকালেন পালোয়ান।

    এর পর একের পর এক শহর ঘুরে উদ্যাঁ তাঁর আশ্চর্য খেলা দেখিয়ে মোল্লাদের প্রভাবের ভিত কাঁপিয়ে দিলেন। তারপর শুরু করলেন আর এক নতুন খেলা। আলজিরীয়দের বোঝালেন, এতদিন ধরে তাঁর খেলাগুলো সকলে অলৌকিক বলে মনে করছেন, তার কোনওটাই অলৌকিক নয়। সবই লৌকিক কৌশলের সাহায্যে দেখান হয়েছে। উদ্যাঁ এবার মোল্লাদের দেখানো নানা ভোজবাজির খেলা দেখিয়ে সেগুলো যে নেহাতই লৌকিক কৌশলে দেখানো হয় তা বুঝিয়ে দিলেন।

    পালোয়ানের শক্তিহরণের খেলায় উদ্যাঁ বৈদ্যুতিক চুম্বকের সাহায্য নিয়েছিলেন। মঞ্চের আড়ালে উদ্যাঁর সহকারী ইশারা পেলেই বিদ্যুৎ-তরঙ্গ চালু করে দিতেন। বাক্সের তলার লোহা, মঞ্চের উপরের লোহার পাটাতনের সঙ্গে বৈদ্যুতিক চুম্বকের আকর্ষণে আটকে থাকত। সেই লোহার মঞ্চের উপরই দাঁড়িয়ে বাক্সকে তোলা পৃথিবীর কোনও মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। কারণ, তখন বাক্স তুলতে হলে তাকে চুম্বকের আকর্ষণের চেয়েও বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।

    মোল্লাতন্ত্রের ও কুসংস্কারের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে আলজিরীয়রা উদ্যাঁকে যে কতখানি ভালোবেসেছিলেন তা উদ্যাঁকে তাঁদের অভিনন্দনপত্রের প্রতিটি লাইনে ছড়িয়ে রয়েছে।

    আলজিরিয়ায় উদ্যাঁর প্রয়োজন শেষ হলেও পৃথিবীর বহু দেশেই এমনকী আমাদের ভারতেও উদ্যাঁর প্রয়োজন শেষ হয়ে যায়নি। কারণ—

    আমরা অনেকেই প্রয়োজনমতো যুক্তিকে এড়িয়ে চলতে ভালোবাসি।
    ভালোবাসি কিছু কিছু কুসংস্কারের কাছে মাথা নোয়াতে। চমক
    লাগানো গল্প বলতে ভালবাসি। পরের মুখে শোনা ঘটনাকে
    নিজের চোখে দেখা সত্য-ঘটনা বলে জাহির করার তীব্র
    লোভের শিকার হই। এই তীব্র লোভ থেকেই
    জন্ম নেয় বহু অতিরঞ্জিত কাহিনি। যা
    অনেক সময় বহু কথিত হওয়ার
    ফলে আমরা বিশ্বাসও
    করে ফেলি।

    এই সুযোগে ম্যাজিকের ওপর একটা গুল-গল্প শোনাই আপনাদের।

    এক বিখ্যাত ম্যাজিসিয়ানের ম্যাজিক দেখতে এসে দর্শকরা একটু একটু করে অধৈর্য হয়ে উঠছেন, শো’র সময় কখন পার হয়ে গেছে, অথচ তখনও ম্যাজিসিয়ানের দেখা নেই।

    অধৈর্য জনতা যখন ক্ষুব্ধ, সেই সময় মঞ্চের পরদা উঠল। জাদুকর হাসিমুখে এসে দাঁড়ালেন। কয়েকজন ক্ষুব্ধ দর্শক জাদুকরের কাছে দেরি করার কৈফিয়ত দাবি করতেই জাদুকর অবাক চোখে নিজের ঘড়ি দেখে বললেন, “এক মিনিটও তো দেরি করিনি।”

    যাঁদের হাতে ঘড়ি ছিল তাঁরা সকলেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে বোবা হয়ে গেলেন। প্রত্যেকের ঘড়িই একটু আগে দেখা সময় থেকে দেড় ঘণ্টা পিছিয়ে গেছে। এমন এক অসাধারণ খেলা দিয়ে ম্যাজিক শুরু হতে দেখে দর্শকরা প্রচণ্ড হাততালি দিয়ে অভিনন্দন করলেন জাদুকরকে।

    ম্যাজিক নিয়ে এই গণসম্মোহনের গল্পটা বহু প্রচলিত, মূল গল্পের কাঠামো প্রতিটি ক্ষেত্রেই এক। যে জাদুকরদের নিয়ে এই ধরনের কিংবদন্তি বা আষাঢ়ে গল্প বিভিন্ন সময়ে দারুণভাবে চালু হয়েছিল, তাদের মধ্যে রয়েছে ভারতীয় জাদুকর গণপতি, রাজা বোস, রয়-দি মিসটিক এবং জাদু সম্রাট পি সি সরকার। বিশ্বে যাঁকে নিয়ে এই আষাঢ়ে গল্প শুরু হয়েছিল তিনি এক মার্কিন জাদুকর হাউয়ার্ড থার্সটন।

    এই গণসম্মোহনের জাদু এঁরা কোনদিনই দেখাননি। কারণ, দেখানো সম্ভব নয়। অথচ, ভাবতে অবাক লাগে, আজও অনেকেই বিশ্বাস করেন এই বিস্ময়কর জাদুর খেলা বিভিন্ন জায়গায় দেখানো হয়েছে এবং অনেক প্রত্যক্ষদর্শী এখনও আছেন। দোষ এইসব বিশ্বাসকারীদের নয়। দোষ সেইসব আষাঢ়ে গল্পবাজদের, যাঁরা শোনা গল্পকে নিজের চোখে দেখা বলে চালিয়েছেন।

    শাসক শ্রেণির স্বার্থে কুসংস্কার পুষ্ট হচ্ছে

    হাঁ, সেই কথাতেই আবার ফিরে আসি। আমাদের দেশে উদ্যাঁর মতো কোন একজনের বড় বেশি প্রয়োজন, যিনি অলৌকিকবাদের লৌকিক-কৌশলগুলো সাধারণ মানুষদের বুঝিয়ে দিয়ে কুসংস্কার ও অলৌকিকত্বের মায়াজাল থেকে জনগণকে মুক্ত করবেন। কারণ—অলৌকিক বাবাজি-মাতাজিদের ভিড় এবং জ্যোতিষীদের রমরমা আমাদের দেশে বড় বেশি। বারো মাসে তেরো পার্বণের মতো লেগেই রয়েছে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক হানাহানি। ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনগুলো শক্তিবৃদ্ধি করে চলেছে। ডাক দিচ্ছে প্রকাশ্যে আন্দোলন। জয়েন্দ্র সরস্বতীর দাবির মধ্যে রয়েছে ভারতের নাম করতে হবে ‘হিন্দুস্থান’, গরুকে করতে হবে জাতীয় পশু। আমরা দেখলাম জয়েন্দ্র সরস্বতী আন্দোলনের সূত্রে দিল্লিতে এলেন। প্রধানমন্ত্রী পদে থেকেও রাজীব গান্ধী সপরিবারে তাঁর আশীর্বাদ নিতে হাজির হলেন। সে সময়ে রাজীবের হাতে তখন বিজ্ঞান দপ্তরও।

    আমরা দেখলাম পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল নুরুল হাসানের নাম উপরাষ্ট্রপতি পদে কংগ্রেস দলের মনোনয়নের প্রশ্নে বাতিল হল। তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি তথা আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী বিরোধী নেতাদের জানালেন, নুরুল হাসানের নাম বাতিল করা হল, কারণ নুরুল হাসান নাস্তিক।

    ১৯৮৭-র ৪ সেপ্টেম্বর। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে মাত্র চার ঘণ্টার দূরত্বে,

    রাজস্থানের দেওরালায় ধর্মীয়-উন্মাদ কিছু মানুষ মধ্যযুগীয় বর্বরতায়
    অষ্টাদশী রূপ কানওয়ারকে স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে সতী করল।
    আমরা দেখলাম ধর্মীয়-উন্মাদনার সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের
    ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় নেতারা পিছু হটলেন। সর্বভারতীয়
    কংগ্রেস কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক এন. সি.
    চতুর্বেদী প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন, সতীদাহ
    ব্যক্তিগত ধর্মীয় ব্যাপার।

    আমরা দেখলাম সতীর সমর্থনে জয়পুরের জনসভায়, রাজস্থানের রাজ্য জনতা দলের সভাপতি, রাজ্য লোকদল (বহুগুণ গোষ্ঠী) সভাপতির সরব উপস্থিতি।

    আমরা দেখেছি হরিয়ানার নির্বাচনের কংগ্রেস বিরোধী প্রচারে এন. টি. রামারাও নারায়ণ সেজে চৈতন্য রথম চেপে হিন্দু ভোটারদের সুড়সুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করতে। আমরা দেখেছি ‘শরিয়ত’ নামের আদিম বর্বর আইনের সমর্থনে দীর্ঘ মিছিল। ‘অকাল তখত’ থেকে পুরোহিতদের জারি হওয়া ফতোয়া। আমরা দেখেছি রামশিলা ও বাবরি মসজিদ নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। আমরা দেখলাম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় পুলিশের ভূমিকা হয় নীরব দর্শকের, নতুবা দাঙ্গাবাজদের উৎসাহদাতার। দেখেছি গুজরাটে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দুদের দ্বারা ইসলাম ধর্মের মানুষদের লুঠ, ধর্ষণ ও হত্যা হতে। তাই সংখ্যালঘুরা আর পুলিশকে নাগরিকদের রক্ষাকারী হিসেবে ভাবতে পারছেন না। অস্বীকার করার উপায় নেই, শাসকশ্রেণির স্বার্থে পুলিশের ওপর ধর্মীয় কুসংস্কারের প্রভাব বেড়েই চলেছে।

    পুলিশ লাইনে মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার বানাতে দেওয়ার কোনও
    প্রশ্নই নেই। আর আজ স্বাধীনতার প্রায় ষাট বছর পরে
    ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভারতের পুলিশ লাইনে হনুমান
    মন্দির, কালীমন্দির অতি স্বাভাবিক ঘটনা। পুলিশ
    ধর্মনিরপেক্ষতার পাছায় লাথি কষাচ্ছে।
    হিজড়ে প্রশাসন ও সরকার
    নীরব দর্শক।

    একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর কয়েকটি তদন্ত কমিশন পুলিশ লাইনে সমস্ত মন্দির ভেঙে ফেলার সুপারিশ করলেও, কোনও রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকার তা কার্যকর করতে ইচ্ছে প্রকাশ করেনি। অর্থাৎ পুলিশদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মানসিকতা গড়ে তুলতে, ধর্মান্ধতা গড়ে তুলতে সরকার ইন্ধনই যুগিয়েছে। সংবিধানগতভাবে ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। কোনও রাষ্ট্রনায়ক, সাংসদ, বিধায়ক বা সরকারি আমলা প্রকাশ্যে ধর্ম আচরণ করলে তা হবে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান অবমাননা। কোনও সরকারি বা আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান হবে উপাসনা ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক বর্জিত। আজ ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে যে সব রাজনৈতিক দল জোট বা ঘোট পাকাচ্ছে, তারা কেউ কি আদৌ ধর্মনিরপেক্ষ? বাম জামানায় পশ্চিমবঙ্গের প্রায় প্রতিটি থানায় গজিয়ে উঠেছে মন্দির কোর্ট চত্বরে মন্দির, মসজিদ, সরকারি স্কুলে হিন্দু দেব-দেবীর পুজো। এর পরও বামফ্রণ্ট কী করে নিজেদের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বলে দাবি করে? আমাদের মতো আকণ্ঠ দুর্নীতি ডোবা দেশেই এসব সম্ভব?

    আমাদের দেশের মন্ত্রীরা নির্বাচনের আগে জয়ের আশায় মন্দিরে, মসজিদে, গীর্জায়, গুরুদ্বারে পুজো দেন। অবতারদের আশীর্বাদ ভিক্ষা করেন। রাজনীতিবিদ থেকে বড়-মেজ-সেজ আমলারা পর্যন্ত প্রত্যেকেই প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের আগে দ্বারস্থ হন গুরুদেব বা জ্যোতিষীদের। যে কোনও রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় ঈশ্বরের পুজো করে।

    ধর্মকে রাজনীতির স্বার্থে, শুধুমাত্র ভোট-কুড়োবার স্বার্থে কাজে লাগাবার দেউলিয়াপনায় প্রগতিশীল বামপন্থীদেরও শরিক হতে দেখেছি আমরা। কেরলের বিধানসভা নির্বাচনের সময় খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের স্বাক্ষরিত বিবৃতি সংবাদপত্রে প্রচার করে খ্রিস্টান ভোট প্রার্থনা, বিবেকানন্দের বাণীকে নির্বাচনের প্রচারে লাগানো, এ-সবই আমরা দেখেছি।

    অন্ধ সংস্কারের ধারক-বাহক হিসেবে পশ্চিমবাংলার বামফ্রণ্ট সরকারের মার্কসবাদী অনেক মন্ত্রীই পিছিয়ে নেই। এখন মন্ত্রীরা বড় বড় সব পুজোর ‘পেট্রন’।

    যুক্তিহীন আচার পালনকেই আমরা বলি কুসংস্কার, যা এসেছে সাধারণভাবে যুক্তিহীন অন্ধ বিশ্বাস থেকে। এ-কথা ভুললে চলবে না, যুক্তিহীন অন্ধ বিশ্বাস শাসকশ্রেণির স্বার্থেই বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে এবং পুষ্ট করা হচ্ছে। দেশে পরিবর্তনের রাজনীতি শুরু করতে হবে মানুষের চিন্তায়, চেতনায় যুক্তিবাদের বীজ ছড়িয়ে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅলৌকিক নয়, লৌকিক – ২ (দ্বিতীয় খণ্ড) – প্রবীর ঘোষ
    Next Article আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না – প্রবীর ঘোষ

    Related Articles

    প্রবীর ঘোষ

    অলৌকিক নয়, লৌকিক – 8র্থ খণ্ড – (জাতিস্মর, আত্মা, অধ্যাত্মবাদ) – প্রবীর ঘোষ

    September 20, 2025
    প্রবীর ঘোষ

    আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না – প্রবীর ঘোষ

    September 20, 2025
    প্রবীর ঘোষ

    অলৌকিক নয়, লৌকিক – ২ (দ্বিতীয় খণ্ড) – প্রবীর ঘোষ

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.