Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অলৌকিক নয়, লৌকিক – ১ (প্রথম খণ্ড) – প্রবীর ঘোষ

    প্রবীর ঘোষ এক পাতা গল্প412 Mins Read0

    অধ্যায়: চার – সম্মোহন-আত্ম-সম্মোহন

    অধ্যায়: চার – সম্মোহন-আত্মসম্মোহন

    শ্রীকৃষ্ণ যে অর্জুনকে “বিশ্বদর্শন করিয়েছিলেন—তা কি সম্মোহন ছিল? হিটলার যে একটা গোটা জাতিকে হিস্টিরিক করে তুলেছিলেন? তাঁর একান্ত বাধ্য করে তুলেছিলেন? তাকে কি হিটলারের সম্মোহন শক্তি বলা যায়? রজনীশ কি তার চোখ ও কথা দিয়ে মানুষকে সম্মোহন করে রাখতেন? আমরা যে অভিনয় দেখতে দেখতে হাসি, কাঁদি, ক্রুদ্ধ হই, উত্তেজিত হই, তাকে কি অভিনেতার সম্মোহনী শক্তি বলবো? মহরমে বা চরকে ভক্তরা যে নিজেদের শরীরকে কষ্ট দেয়, কিন্তু কষ্ট অনুভব করে না—এর কারণ কী ওরা কি সেই সময় আত্মসম্মোহিত থাকে? ম্যানড্রেকের কমিকসে যেমন থাকে ভিলেনগুলি করতে গিয়ে দেখে হাতের রাইফেল বিষাক্ত সাপ হয়ে গেছে ইত্যাদি—সম্মোহনে এমন কিছু কি সত্যিই করা সম্ভব? জাদুকর কি সম্মোহন করে জাদু দেখান?

    পি.সি. সরকারের আগেও এমনি ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে দেওয়ার গণসম্মোহনের আষাঢ়ে গল্প আরও অনেক জাদুকরকে ঘিরে বিভিন্ন সময়ে চালু ছিল। এইসব জাদুকররা হলেন রাজা বোস, জাদুকর গণপতি, রয়-দি-মিসটিক। পৃথিবীতে যাঁকে নিয়ে আষাঢ়ে গল্পটির শুরু, তিনি হলেন এক মার্কিন জাদুকর হাওয়ার্ড থার্সটন। জাদুকররা মাঝে-মধ্যে কেন, কোনও সময়ই সম্মোহনের সাহায্যে জাদু দেখান না। শূন্যে মানুষ ভাসিয়ে রাখতে, একটা ডাণ্ডার উপর মানুষকে ঝুলিয়ে রাখতে, করাতে দেহ দু’টুকরো করার খেলা, দেখাতে বা অন্য কোনও খেলায় জাদুকর চোখ বড় বড় করে দু’হাতের আঙুল নেড়ে নেড়ে, যে সম্মোহন (?) করেন, সেটা আদৌ সম্মোহন নয়। অভিনয়। জাদুকরের সঙ্গিনী বা সঙ্গী সম্মোহিত হওয়ার অভিনয় করেন। তারপর যা দেখানো হয়, তা সম্পূর্ণই কৌশলে দেখান। এইসব জাদুর পিছনে সম্মোহনের কোনও ভূমিকাই নেই। জাদুকরদের এই অভিনয় বা প্রতারণামূলক সম্মোহন কয়েক প্রজন্ম ধরে দেখতে দেখতে দর্শকরা ‘সম্মোহন’ সম্বন্ধে ভুল ধারণা একটু একটু করে নিজের মনের মধ্যে গড়ে তুলেছেন।

    কোনও জাদুকর যখন জাদু দেখান, তখন সেসবই দেখান নিছক কৌশলে, কোনও অলৌকিক ক্ষমতায়। প্রতিটি জাদুকরই সেকথা মঞ্চে ও মঞ্চের বাইরে স্বীকারও করেন। কিন্তু কেউ যদি তেমনটা না করে কোনও জাদু দেখাতে গিয়ে দাবি করেন—এটা এবার দেখাচ্ছেন মন্ত্রশক্তিতে, ঈশ্বরের কৃপায় বা ভুতকে কাজে লাগিয়ে, তবে তা হবে সত্য-লঙ্ঘন, প্রতারণা। এবং এক্ষেত্রে যুক্তিবাদী প্রতিটি মানুষের উচিত এমন এক ভ্রান্ত ধারণাকে ভেঙে দিয়ে প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরা। ঠিক একইভাবে উচিত

    অভিনয়কে সম্মোহন বলে মানুষকে প্রতারণার যে ঘটনা
    সুদীর্ঘকাল ধরে জাদু জগতে ঘটেই
    চলেছে, তাকে বন্ধ করা।

    সম্মোহন বা মস্তিষ্কে ধারণা সঞ্চারের মধ্য দিয়ে বাস্তবিকই যা হয় তারও একটা সীমাবদ্ধতা আছে। সেই সীমাবদ্ধতাকে, সেই সত্যকে মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার স্বার্থেই এইসব ‘না-সম্মোহন’কে ‘সম্মোহন’ বলে চালানোর বুজরুকির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো দরকার।

    পি. সি. সরকার (জুনিয়র)-এর অমৃতসর এক্সপ্রেস ভ্যানিশ কি আদৌ কোনও কৌশলে দেখানো সম্ভব? ওই ব্যাপারটার পিছনে কি গণসম্মোহন কাজ করেনি? এ-জাতীয় অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় আমাকে এবং যুক্তিবাদী সমিতি’কে। উত্তরে প্রত্যেককেই যা জানিয়েছি, তা আবারও জানাচ্ছি—

    ট্রেন ভ্যানিশের ম্যাজিকে না ছিল অমৃতসর এক্সপ্রেস, না
    একজন দর্শকও দেখেছিল ট্রেনটাকে ভ্যানিশ হতে।
    ম্যাজিকটা আদৌ দেখানোই হয়নি। গোটা
    ম্যাজিকটার ভিত্তি ছিল মিথ্যে প্রচার।

    পুরো ঘটনাটা বিস্তৃতভাবে লেখা হয়েছে ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ বইটির চতুর্থ খণ্ডে, উৎসাহী পাঠক-পাঠিকারা পড়ে নিতে পারেন।

    জাদুকর ম্যানড্রেকের কাহিনিতে যে সব সম্মোহন শক্তির কথা আপনারা কমিক্সের বইতে পড়েন, সেসব নেহাতই ‘গুল-গপ্পো’। অথচ অনবরত ওসব কাহিনি পড়তে পড়তে অনেকেই ভাবে, সম্মোহনের সাহায্যে সত্যিই বোধহয় এমনটাও ঘটানো সম্ভব। মজার কথা কী জানেন, বছর কয়েক আগে ‘আনন্দমেলা’র পুজো সংখ্যায় সমরেশ মজুমদার ম্যানড্রেকের গল্পে প্রভাবিত হয়ে তার উপন্যাসে ‘ম্যানড্রেকি সম্মোহন’ হাজির করেছিলেন। এমনকী সন্দেশ পত্রিকার অগ্রহায়ণ ১৪০২ (ডিসেম্বর, ১৯৯৫) সংখ্যায় সত্যজিৎ রায়ের অপ্রকাশিত নতুন যে ফেলুদা-উপন্যাস ‘ইন্দ্রজাল রহস্য’ প্রকাশিত হয়েছে, তাতেও দেখা যাচ্ছে সূর্যকুমার নামে এক জাদুকর লালমোহনবাবুকে মঞ্চে ডেকে এনে তাঁকে সম্মোহন করে পেন্সিল খাওয়াচ্ছেন অথচ সম্মোহিত লালমোহনবাবু ভাবছেন তিনি চকোলেট খাচ্ছেন। বাস্তবে এমনটি ঘটে না, এবং সবই হল ম্যানড্রেকি গল্পের প্রভাবের ফল বা জাদুকরদের মিথ্যে সম্মোহনের ফল।

    অনেকে এমনও ভাবে, সম্মোহন করতে পারেন এমন লোকের কাছে যাওয়া দস্তুরমতো বিপজ্জনক। ওরা সম্মোহিত করে চুরি খুন-খারাপি—সবই করিয়ে নিতে পারে। এ’সবই, সম্মোহন সম্বন্ধে না জানার ফল।

    সম্মোহনের ইতিহাস, নানা মত

    ‘সম্মোহন’-এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘হিপ্‌নোটিজম’ (Hypnotism)। হিপ্‌নোটিজম্ কথাটি আবার এসেছে হিপ্‌নোসিস (Hypnosis) কথা থেকে। ‘হিপ্‌নোসিস কথার অর্থ ‘ঘুম’। স্বাভাবিক ঘুমের সঙ্গে অনেক সাদৃশ্য থাকলেও ‘সম্মোহন ঘুম’ আর ‘স্বাভাবিক-ঘুম’ এক নয় কারণ অ-সাদৃশ’ও কম নয়। তবে এটা বলা যায়, সম্মোহন জেগে থাকা ঘুমের একটা অন্তর্বর্তী অবস্থা।

    আধ্যাত্মিকতাবাদ ও জাদুবিদ্যার কবল থেকে মনোবিজ্ঞানকে মুক্ত করে বিজ্ঞানের পর্যায়ে উন্নত করতে প্রচুর বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। সম্মোহনের ক্ষেত্রে এই বাধা ছিল আরও বহুগুণ বেশি। কারণ, এখানে রয়েছে অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কার।

    ভারত, চীন ও গ্রীসের প্রাচীন সভ্যতার আদিপর্বে ধর্মীয় ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সম্মোহনের প্রচলন ছিল। আমাদের অথর্ববেদে সম্মোহনের উল্লেখ দেখতে পাই। মহাভারতেও সম্মোহনের প্রয়োগের উল্লেখ আছে।

    প্রাচীনযুগে সম্মোহনের যে মর্যাদা ছিল মধ্যযুগে সেই মর্যাদা হারিয়ে সম্মোহন হয়ে দাঁড়ায় ‘ব্ল্যাক-ম্যাজিক’ বা ডাকিনীবিদ্যা। কাপালিক বা তান্ত্রিকরা ইচ্ছে করলেই তাদের সম্মোহন শক্তির দ্বারা ক্ষতি করতে পারে, এমন একটা ভ্রান্ত ধারণার বশ আজও অনেকেই এদের সযত্নে এড়িয়ে চলেন।

    আধুনিক যুগের সম্মোহনের সুচনা আঠারশ’ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। ডক্টর মেসমার অনেক দুরারোগ্য রোগীকে সম্মোহিত করে মস্তিষ্কে ধারণা সঞ্চার করে (Suggestion পাঠিয়ে) সারিয়ে তুললেন। মেসমারের সম্মোহন চিকিৎসার এই অভাবনীয় সাফল্যে ইউরোপে হৈ-হৈ পড়ে গেল। সম্মোহন পরিচিত হলো ‘মেসমারিজম’ নামে।

    এরপর উনিশ শতকের মাঝামাঝি স্কটল্যাণ্ডের ডাক্তার জেমস ব্রেইড-এর সম্মোহন নিয়ে গবেষণা আবার আলোড়ন তুলল। তিনি সম্মোহনের নাম দিলেন ‘হিপনোসিস’ (hypnosis)। ডক্টর জেমস্ ব্রেইড সম্মোহন-ঘুমের ব্যাখ্যা করলেন বটে, কিন্তু, সম্মোহনকারী ও সম্মোহিত ব্যক্তির মধ্যে সম্মোহনকালে কী ধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সেই বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা করতে পারলেন না। অতএব জানা গেল না, কীভাবে সম্মোহনকারী সম্মোহিত ব্যক্তিকে প্রভাবিত করেন। অর্থাৎ এটুকু বোঝা গেল যে, সম্মোহনকারী সম্মোহিতকে জেগে থাকা ও ঘুমের একটি অন্তর্বর্তী অবস্থায় নিয়ে এসে সম্মোহিতের মস্তিষ্কে বিশেষ একটি ধারণার সঞ্চার করতে থাকেন। যেই ধারণাটি সম্মোহিতের মস্তিষ্কে পৌছে দিতে সেই ধারণাটি সম্মোহিতের সামনে বারবার একঘেয়েভাবে আউড়ে যাওয়া হয়। সম্মোহনকারী ও সম্মোহিতের এই যোগাযোগটিকে মনস্তত্ত্বের ভাষায় বলা হয় ‘সম্পর্ক’ (rapport)।

    উনিশ শতকের শেষ দশকে প্যারিসে শার্কো এবং ন্যানসিতে বার্নহাইম-এর নেতৃত্বে হিপনোসিস নিয়ে শুরু হলো নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

    হিস্টিরিয়া ও সম্মোহনের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করে শার্কো মতপ্রকাশ করলেন—সম্মোহন হলো তৈরি করা নকল হিস্টিরিয়া। সম্মোহিত ব্যক্তিরা সকলেই নিউরোটিক। সম্মোহনকারীর ধারণা সঞ্চারের (Suggestion) ব্যাপারটাকে আদৌ গুরুত্ব দিলেন না তিনি।

    বার্নহাইম মত প্রকাশ করলেন, সম্মোহন ধারণা সঞ্চারের ফল। সব মানুষের মস্তিষ্কেই কম-বেশি কোনও ধারণা সঞ্চারিত করা যায়। অর্থাৎ, সব মানুষকেই সম্মোহিত করা যায়। অবশ্য সম্মোহনের গভীরতা সব মানুষের ক্ষেত্রে সমান নয়। তবে যদি বোধ-বুদ্ধি থাকে।

    আরও অনেক নতুন নতুন তত্ত্ব নিয়ে এলেন মেতেল, জিমসেন, ভেরওর্ন এবং বেকটেরেফ। ভেরওর্ন বললেন, সম্মোহন হলো অতি জাগ্রত অবস্থা, অর্থাৎ এই অবস্থায় মানুষের মস্তিষ্ক থাকে সবচেয়ে সজাগ। বেকটেরেফ বললেন—সম্মোহন হলো স্বাভাবিক ঘুমেরই রকমফের।

    এলেন ফ্রান্সের এক বিখ্যাত মনোবিদ স্যানেট। তিনি যে তত্ত্ব দিলেন সেটা শাকোর তত্ত্বের উন্নত সংস্করণ মাত্র।

    ফ্রয়েড হাজির হলেন তাঁর সাইকো-অ্যানালিটিক থিওরি নিয়ে। ফ্রয়েডের মতে সম্মোহনকারী ও সম্মোহিতের মধ্যে সম্পর্ক বা rapport গড়ে ওঠে পারস্পরিক প্রেম বা ভালবাসার ফলে। প্রেমে পড়া ও সম্মোহিত হওয়া একই ধরনের ব্যাপার। ফ্রয়েডের তত্ত্বে সম্মোহিত অবস্থার বিবরণ এবং সম্মোহনকারী ও সম্মোহিতের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির ব্যাখ্যা মেলে। কিন্তু মেলে না সম্মোহিতের স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ ও সম্মোহনের কারণ।

    এলেন পাভলভ। বললেন, সম্মোহন আংশিক ঘুম। জেগে থাকা ও ঘুমের একটা অন্তর্বতী অবস্থা। স্বাভাবিক ঘুমে মস্তিষ্কের কর্মবিরতি বা নিস্তেজনা (inhibiation) বিনা বাধায় সারা মস্তিষ্কে ও দেহে ছড়িয়ে পড়ে। সম্মোহন-ঘুম বা হিপনোটিক ঘুমে মস্তিষ্কের যে-অংশ সম্মোহনকারীর নির্দেশে ও কণ্ঠস্বরে উদ্দীপ্ত হচ্ছে সেই অংশ জেগে থাকে। মস্তিষ্কের এই জেগে থাকা অংশই সম্মোহিত ব্যক্তির সঙ্গে বাইরের জগতের যোগাযোগের একমাত্র পথ। সম্মোহনকারীর নির্দেশ ছাড়া সম্মোহিতের পক্ষে কোন কিছু করা সম্ভব হয় না। অর্থাৎ, সম্মোহিতের স্বাধীন কোন ইচ্ছে থাকলেও নিষ্ক্রিয় থাকে।

    পাভলভ ও ফ্রয়েড

    এতক্ষণে আমি ছোট্ট করে আলোচনা করেছি সম্মোহনের ইতিহাস নিয়ে, কারণ সম্মোহন নিয়ে আলোচনার গভীরে ঢোকার আগে সম্মোহনের ইতিহাস জানবারও প্রায়োজন আছে। সম্মোহনের ইতিহাস বলতে গেলেই শুরু করতে হবে প্রাচীন সভ্যতার আদিপর্ব থেকে, আর শেষ করতে হবে এ যুগের মনোবিদ্যার দুই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব পাভলভ ও ফ্রয়েডের পরস্পরবিরোধী তত্ত্ব আলোচনার মধ্য দিয়ে।

    পাভলভ ও ফ্রয়েডকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর মনোবিজ্ঞানীরা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠাণ্ডা-গরম লড়াই। পাভলভ ও ফ্রয়েড দু’জনেই সমসাময়িক। পাভলভ জন্মেছিলেন ১৮৪৮ সালে। মারা যান ১৯৩৬-এ। ফ্রয়েড জন্মেছিলেন ১৮৫৬ সালে। মৃত্যু ১৯৩৯ সালে। আমৃত্যু এই দুই মনীষীই ছিলেন স্বতত্ত্বে আত্মপ্রত্যয়ী ও সক্রিয়।

    মানসিকতার হদিস পেতে পাভলভ মেতেছিলেন প্রকৃতিবিজ্ঞানের পথে উচ্চ-মস্তিষ্কের ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার গবেষণায়, আর ফ্রয়েড় মানসিকতার সন্ধান পেতে চেয়েছিলেন মস্তিষ্ক বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া মনে গভীরে। পাভলভ এগিয়ে ছিলেন উচ্চ-স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার বিজ্ঞানসম্মত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথে, ফ্রয়েড এগিয়ে ছিলেন মনোবিজ্ঞানের চিকিৎসক ও রোগী দু’জনেরই মনোসমীক্ষার পথে। পাভলভকে আবিষ্কার ‘উচ্চতর স্নায়ুবিজ্ঞান’ এবং ফ্রয়েডের আবিষ্কার—‘অবচেতন, মনের বিজ্ঞান’। পাভলভ-তত্ত্বকে ঘিরে রয়েছেন ‘Objective’ (বস্তুবাদী) দৃষ্টিভঙ্গির মনোবিজ্ঞানীরা, আর ফ্রয়েডের তত্ত্বকে ঘিরে রয়েছেন ‘Subjective’ (আত্মবাদী) অন্তর্দর্শনে বিশ্বাসী মনোবিজ্ঞানীরা।

    এই দুই মহারথীর তত্ত্বে বিরোধিতা রয়েছে ঘুম, স্বপ্ন, শিশুমন, শিশুশিক্ষা, মনোবিকারের কারণ, এবং চিকিৎসা প্রভৃতি নানা বিষয়ে।

    যাই হোক, আসুন, এবার আমরা ইতিহাস ছেড়ে সম্মোহনের ভেতরে ঢুকি।

    সম্মোহন নিয়ে কিছু কথা

    কোলের ছোট্ট বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানোর কৌশল ও সম্মোহন-ঘুম পাড়ানোর কৌশল কিন্তু অনেকটা একই ধরনের। শিশুদের ঘুম পাড়ানো হয় একটানা একঘেয়ে সুরে গান গেয়ে। সম্মোহন-ঘুমের জন্যেও সম্মোহনকারী প্রায় একই ধরনের পদ্ধতির আশ্রয় নেয়। সম্মোহনকারী যাকে সম্মোহন করতে চায়, তাকে শুইয়ে দেয় একটা সুন্দর নরম-সরম ছিমছাম বিছানায়। নরম বালিশে মাথা রেখে সারা শরীরটাকে হালকাভাবে ছড়িয়ে চিত হয়ে শুয়ে থাকেন রোগী। ঘরে জ্বলে খুব কম শক্তির নাইটল্যাম্প।

    সম্মোহনকারী ধীরে-ধীরে কিছুটা সুর করে টেনে-টেনে বলতে থাকেন, “আপনি এখন ঘুমিয়ে পড়ুন, ঘুমিয়ে পড়ুন। আপনার ঘুম আসছে। আপনার চোখের পাতা ভারী হয়ে যাচ্ছে। কপালের ও গালের পেশী শিথিল হয়ে যাচ্ছে। ঘাড়ের পেশী শিথিল হয়ে যাচ্ছে। এমনি করে হাত, বুক, পেট, কোমর, পা ইত্যাদি অঙ্গ শিথিল হয়ে যাচ্ছে, অবশ হয়ে আসছে। আপনার ঘুম আসছে, গভীর ঘুম আসছে।

    …বাইরের সব শব্দ আপনার কাছে অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাইরের গাড়ির শব্দ, ট্রামের শব্দ, কোন শব্দই আপনার কানে যাচ্ছে না। আমার কথা ছাড়া অন্য কোনও শব্দ আপনি শুনতে পাচ্ছেন না। …আপনার হাত-পা ভারী হয়ে গেছে। ঘুম আসছে…” সম্মোহনকারী টানাটানা একঘেয়ে সুরে বলে যেতে থাকে। এই কথাগুলো শুনতে শুনতে সম্মোহনের ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন শুয়ে-থাকা ব্যক্তি।

    সম্মোহিত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে সম্মোহনকারীর এই কথা বা নির্দেশগুলোকে বলা হয় ‘Suggestion’, বাংলায় অনুবাদ করে বলতে পারি ‘ধারণাসঞ্চার’ বা ‘চিন্তাসঞ্চার’।

    অবশ্য আরও অনেক পদ্ধতির সাহায্যেই সম্মোহন-ঘুম আনা সম্ভব। যে কোনও ইন্দ্রিয়কে মৃদু উদ্দীপনায় উত্তেজিত করলেই ঘুম আসবে।

    পাভলভ ও ফ্রয়েড দু’জনেই সম্মোহিত অবস্থাকে এক ধরনের ঘুমন্ত অবস্থা বলেই মত প্রকাশ করেছিলেন। সম্মোহন সম্বন্ধে জানতে গেলে ঘুম সম্বন্ধে দু-একটা কথা জানা খুবই প্রয়োজন, কারণ, ঘুম আর সম্মোহন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।

    ঘুম ও সম্মোহন

    আমরা আমাদের জীবনের প্রায় তিনভাগের একভাগ ঘুমিয়েই কাটাই। মানুষ যখন ঘুমোয়, তখন কিন্তু তার সম্পূর্ণ মস্তিষ্কই কর্মহীন হয়ে পড়ে না। কিছু মস্তিষ্ক কোষ জেগে থাকে বা আধা-ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। সামগ্রিকভাবে উচ্চ-মস্তিষ্ক কাজ করে বিশ্রাম নিলেও কিছু জেগে থাকা কোষের সাহায্যে আমরা ঘুমের মধ্যেও নড়াচড়া করি, পাশ ফিরি, মশা কামড়ালে জায়গাটা চুলকোই, স্বপ্ন দেখি ইত্যাদি অনেক কিছু করি। এই অবস্থায় কিন্তু সব পেশিও শিথিল হয়ে পড়ে না। ঘুমের মধ্যে মলমূত্রের নির্গমন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ না হারায় সেদিকে মস্তিষ্ক লক্ষ্য রাখে।

    ঘুমের গুরুত্ব মানুষের জীবনে অসীম। পনেরো-কুড়ি দিন না খেয়ে থাকলে শরীর দুর্বল হয় বটে, কিন্তু সাধারণত মানসিক ভারসাম্যের অভাব হয় না। অথচ, পনেরো-কুড়ি দিন সম্পূর্ণ না ঘুমিয়ে কাটালে প্রায় ক্ষেত্রেই মানসিক ভারসাম্যের অভাব ঘটে।

    আপনাদেরই পরিচিত এমন দু-একজন হয়তো আছেন যাঁরা মাসের পর মাস অথবা বছরের পর বছর অনিদ্রা রোগে ভুগছেন। শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিক শ্রীবিমল মিত্র সুদীর্ঘ বছর অনিদ্রা রোগে ভুগেছেন। আপনাদের মনে নিশ্চয়ই এই প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারবে, এত দীর্ঘ অনিদ্রার পরেও এঁদের প্রত্যেকেরই মানসিক ভারসাম্য বজায় রেখেছিলেন কীভাবে?

    না, আগে আমি যা বলেছি, সেটা মিথ্যে বলিনি। আবার, আপনারা যা দেখেছেন তাও মিথ্যে নয়। ‘অনিদ্রারোগ’ মস্তিষ্কের বিশেষ অসুস্থ অবস্থা। এই বিশেষ অবস্থায় মস্তিষ্কের অনেকগুলো কোষ দিনের ১৭/১৮ ঘণ্টা প্রায় ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। রাতে ৬/৭ ঘণ্টা কোষগুলো গভীর ঘুম দিয়ে বিশ্রাম নেয় এবং সজীব ও সক্রিয় হয়ে ওঠে। অধিকাংশ অনিদ্রা রোগে গভীর ঘুম হয় না বটে, কিন্তু আধা-ঘুমন্ত অবস্থার মধ্যে একটা সময় কাটে। এই সময়টায় মস্তিষ্ককোষ তাদের প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিয়ে নেয়, ফলে মস্তিষ্ককোষের বিশেষ কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয় না। এই ধরনের আধাঘুম অবস্থায় আমরা সুস্থ মানুষরা অনেক সময় কাটাই। বাসে, ট্রামে, ট্রেনে অথবা ইজিচেয়ারে বিশ্রাম নিতে নিতে অথবা নেহাতই অফিসের চেয়ারে বসে অনেক সময় ঘুম আর জাগরণের মাঝামাঝি একটা অবস্থায় থাকি। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থার নাম ‘hypnoid State’ অনিদ্রা রোগ এই ‘hypnoid State’-এরই দীর্ঘতম অবস্থা।

    পাভলভ কী বলেন

    পাভলভীয় বিজ্ঞানে ঘুমিয়ে-পড়া থেকে জেগে ওঠার মধ্যে চারটি প্রধান পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে। প্রথম পর্যায় প্রায় জাগ্রত অবস্থার মতো। দ্বিতীয় পর্যায়-ও প্রায় প্রথম পর্যায়েরই মতো, তবে ঘুমের গভীরতা প্রথম অবস্থার চেয়ে দ্বিতীয় অবস্থায় বেশি। একে বলে ফেজ অব ইকোয়ালিটি। তৃতীয় পর্যায়-এর নাম ফেজ অব প্যারাডক্স। এই পর্যায়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। শেষ এবং চতুর্থ পর্যায়-এর নাম ফেজ অব আলট্রা-প্যারাডক্স। এই পর্যায়ে আমরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকি।

    সম্মোহিত অবস্থায় ঘুমের তৃতীয় পর্যায় অর্থাৎ ‘প্যারাডক্সিকাল ফেজ’ দেখা যায়। ঘুমের এই পর্বকে আর. ই. এম. বা ‘র‍্যাপিড আই মুভমেণ্ট’ পর্ব বলে। এই প্যারাডক্সিকাল ফেজে সম্মোহিতের ওপর সম্মোহনকারীর নির্দেশ অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং প্রতিক্রিয়া খুবই অভাবনীয়। মস্তিষ্কের শারীরবৃত্তিক ধর্ম এবং বিশিষ্টতাই সম্মোহনকারীর শক্তি বলে প্রচারিত হয়ে আসছে।

    স্বাভাবিক ঘুমে মস্তিষ্কের প্রায় সব স্নায়ুগুলো নিস্তেজ বা নিষ্ক্রিয় হতে থাকে এবং সারা দেহে এই নিষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এই নিস্তেজ বা নিষ্ক্রিয় অবস্থাকে বলা হয় ‘Inhibition’। সম্মোহন-ঘুমে মস্তিষ্কের সব স্নায়ু নিষ্ক্রিয় হয় না। সম্মোহনকারীর নির্দেশমতো মস্তিষ্কের একটা অংশ জেগে থাকে ও উদ্দীপ্ত হতে থাকে। এই জেগে থাকা মস্তিষ্কের অংশ বা স্নায়ু সম্মোহিত ব্যক্তির সঙ্গে বাইরের জগতের যোগাযোগের একমাত্র পথ। সম্মোহনকারী ও সম্মোহিত ব্যক্তির মধ্যে এই যোগসূত্রকে বলা হয় ‘rapport’ বা ‘সম্পর্ক’।

    ‘Inhibition’ অর্থাৎ বাংলায় বলতে গেলে নিস্তেজ বা নিষ্ক্রিয় থাকার অর্থ কিন্তু উত্তেজনার অভাব বা অনুপস্থিতি নয়। উত্তেজনার বিপরীতধর্মী একটি প্রক্রিয়াকে বোঝাতে ‘Inhibition’ কথাটি ব্যবহৃত হয়। মস্তিষ্কে উত্তেজনাধর্মী ও নিস্তেজধর্মী দুই ধরনের স্নায়ুপ্রক্রিয়া রয়েছে। এই দুই মিলেই স্নায়ুপ্রক্রিয়ার প্রকৃত রূপ। দুই প্রক্রিয়াই সব সময় গতিশীল এবং পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত।

    পাভলভ
    পাভলভ

    মস্তিষ্কের কোন স্নায়ু বা কেন্দ্রবিশেষ উত্তেজিত হলে, উত্তেজনার ঢেউ প্রথমে বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতাকে বলা হয় ‘irradiation’। সঙ্গে-সঙ্গে উত্তেজিত স্নায়ুকেন্দ্রের আশেপাশের স্নায়ুকেন্দ্রগুলোতে উত্তেজনার বিপরীতধর্মী নিস্তেজ অবস্থা বা ‘inhibition’ দেখা দেয়।

    ঘুমিয়ে পড়লে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো বাইরের উদ্দীপনায় সাড়া দেয় না। উলটো দিক থেকে বাইরের উদ্দীপনা মস্তিষ্কে প্রবেশ করার পথগুলো আমরা বন্ধ করে দিলে তাড়াতাড়ি ঘুম আসে। জার্মানে ডাক্তার স্ট্রামপল তার এক বালক রোগীর কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, বালকটির একটি চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। একটি কানে শুনতে পেত না। দেহের ত্বকের অনুভূতি শক্তিও গিয়েছিল নষ্ট হয়ে। বালকটির সুস্থ চোখ ও কানের দেখা ও শোনা কোন কিছু দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বালকটি ঘুমিয়ে পড়ত। পাভলভও এই ধরনের একটি রোগীকে তার ইন্দ্রিয়-উপলব্ধি বন্ধ করে দিয়ে ঘুম পাড়াতেন। গ্যালকিস পামের আর এক বিজ্ঞানী কয়েকটি কুকুরের ঘ্রাণ, শ্রবণ ও দর্শন-ইন্দ্রিয়গ্রাহী স্নায়ুগুলো কেটে ফেলে দেখেছিলেন, কুকুরগুলো সারা দিনরাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৩ ঘণ্টাই ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে।

    মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোর অবসাদ থেকেই যে সব সময় ঘুম আসে, এমনটি নয়। পাভলভের মতে, ঘুম একরকম ‘conditioned reflex’ বা ‘শর্তাধীন প্রতিফলন’।

    ঘুমের ব্যাপারে নিয়মানুবর্তিতা বজায় রাখলে সাধারণত ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে না। কিন্তু একজন লোকের দীর্ঘ ঘুমের পরেও একটা বিশেষ পরিবেশে একজন সম্মোহনকারী আবার তাকে ‘suggestion’ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারে, এই সম্মোহন-ঘুমের ক্ষেত্রে ঘুম ‘conditioned reflex’ বা শর্তাধীন প্রতিফলন। আমি আমার এক পুস্তক প্রকাশক ব্রজ মণ্ডলের কথা আগেই বলেছি।

    ব্রজদা প্রতি রাত্রেই ঘুম আনতে ঘুমের ওষুধ খেতেন। আমি
    একবার ঘুমের জোরাল ওষুধ বলে ভিটামিন ক্যাপসুল
    দিয়েছিলাম। ক্যাপসুল খেয়ে ব্রজদার খুব ভাল ঘুম
    হয়েছিল। আমার ‘suggestion’ বা ধারণা
    সঞ্চারের জন্য ভিটামিন ক্যাপসুল
    ‘conditioned stimilus’ বা
    শর্তাধীন উদ্দীপক বস্তুর
    কাজ করেছিল।

    নানা ধরনের রোগের ওপরই হিপনোটিক সাজেশন বা সম্মোহন ধারণা সঞ্চারের ফলাফল ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। দেখা গেছে স্ট্যামারিং, অ্যাজমা, কোলাইটিস, ইমনোটেন্সি, ফ্রিজিডিটি, হাইপোকনড্রিয়া এবং মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলি reflex বা প্রতিফলন বিশৃঙ্খলায় (সাইকো-সোমাটিক) হিপটনিক-সাজেশনের সাহায্যে খুবই ভাল ফল পাওয়া যায়। উন্মাদরোগের মধ্যে স্কিজোফ্রিনিয়া এবং প্যারানইয়াতে হিপনটিক-সাজেশনে ভালই ফল পাওয়া যায়। অবশ্যই সেই সঙ্গে ওষুধও দিতে হয়। এছাড়াও যে কোন রোগেই সাহায্যকারী চিকিৎসা হিসেবে হিপনটিক-সাজেশন দেওয়া যেতে পারে।

    সম্মোহনের সাহায্যে সম্মোহনকারী এমন অনেক ঘটনাই ঘটাতে পারেন যেগুলি শুনলে প্রাথমিকভাবে অসম্ভব বা অবাস্তব বলে মনে হয়।

    সম্মোহনকারী সম্মোহিতকে যদি ‘সাজেশন’ দিতে থাকেন, এবার তোমার ডান হাতের কজিতে একটা গনগনে লোহা খুব সামান্য সময়ের জন্য ছোঁয়াব। লোহাটা আগুনে পুড়ে টকটকে লাল হয়ে রয়েছে, টকটকে লাল গরম লোহাটা এবার তোমার ডান কজিতে ঠেকানো হবে। ফলে একটা ফোসকা পড়বে। ভয় নেই, শুধু একটা ফোসকা পড়বে এই সাজেশনের সঙ্গে সঙ্গে ডান হাতের কজিতে ঠাণ্ডা লোহা ঠেকালেও দেখা যাবে যে ওখানে Second degree burn সৃষ্টি হয়ে ফোসকা পড়েছে।

    আধুনিক শারীরবিজ্ঞানে শিক্ষিত অনেকের কাছেও আমার কথাগুলো একান্তই অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কারণ, শারীরবিজ্ঞানে বলে, শরীরের কোন স্থানে প্রচণ্ড উত্তাপ লাগলে সেখানে অনেকগুলো আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বহু কোষ ফেটে যায়। কোষগুলোর ভেতরের রস বেরিয়ে আসে। এই কোষগুলোর রসই ফোসকায় জমা রসের প্রধান অংশ। শারীরবিজ্ঞানে এই ফোসকা পড়ার সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের যোগাযোগ না থাকলেও ফোসকা পড়ার মূহুর্ত থেকে পরবর্তী পর্যায়গুলোতে ‘Autonomus’ (অটোনোমাস) স্নায়ুতন্ত্রের কিছু প্রভাব দেখা যায়, যা শরীরকে দুর্বল করে বা মানসিক আঘাত (shock) দেয় কিংবা peripheral circulatory failure ইত্যাদির ক্ষেত্রে কাজ করে।

    ‘Autonomus nervous system’ (অটোনোমাস নার্ভাস সিস্টেম) সম্পর্কে নতুন ধারণা না থাকার দরুন এবং উচ্চ মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবের দরুন অনেকের কাছেই আমার কথাগুলো উদ্ভট ও অবাস্তব মনে হতে পারে। এই বিষয়ে অবগতির জন্য জানাই, ১৯২৭ সালে বহু চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের সামনে V. Finne শুধুমাত্র হিপনোটিক-সাজেশনের দ্বারা একজন সম্মোহিতের শরীরে ফোসকা ফেলে দেখান। তারপর আজ পর্যন্ত বহুবার প্রয়োগ হয়েছে।

    একজন মনযোগ দিয়ে ‘সাজেশন’ শুনলে তার পাঁচটি কর্মইন্দ্রিয়-ই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিয়ন্ত্রণ করবেন সম্মোহনকারী। নিয়ন্ত্রিত হবে সম্মোহিত মানুষটির ইন্দ্রিয়গুলো। পাঁচটি কর্মইন্দ্রিয় হলো: চোখ, কান, নাক, জিভ ও ত্বক।

    কয়েকশো অনুষ্ঠানে মঞ্চে দর্শকদের এনে সম্মোহিত অবস্থায় কাগজ ছুঁইয়ে বলছি—“ছুঁচ ফোটাচ্ছি।” তাঁরা প্রত্যেককেই ছুঁচ ফোটাবার যন্ত্রণা অনুভব করে চিৎকার করে উঠেছেন। আবার যখন ‘সাজেশন’ দিয়েছি—হাত অসাড় হয়ে গেছে, তখন ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ হাতে পুরোটা ঢুকিয়ে দিয়েছি। যাদের হাতে ঢুকিয়েছি, তাঁরা কেউ-ই টেরই পাননি।

    দর্শকদের মঞ্চে ডেকে সাজেশন দেওয়ার পর তারা সিগারেট পান করে বিভিন্ন রকমের স্বাদ পেয়েছেন। কেউ টক, কেউ ঝাল, তো কেউ মিষ্টি। যাকে যেমন ‘সাজেশন’ দিয়েছি, তিনি তেমন স্বাদ পেয়েছেন।

    এইসব অনুষ্ঠানের মধ্যে কয়েকটি হয়েছে ‘কালটিভেশন অফ সায়েন্স’, ‘এশিয়াটিক সোসাইটি’, ‘আই আই টি’ খগপুর, প্রেন্সিডেন্সি কলেজ-এর মতো উচ্চমেধার মানুষদের সামনে।

    বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ আজ পৃথিবী থেকে মহাকাশ
    পর্যন্ত বহু বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করলেও মানুষ
    তার মন বা মস্তিষ্কের সম্বন্ধে
    এখনও অনেক কিছুই
    জানতে পারেনি।

    (মনের নিয়ন্ত্রণ ও মেডিটেশান নিয়ে বিস্তৃত জানতে পারেন, ‘মনের নিয়ন্ত্রণ-যোগ-মেডিটেশান)

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅলৌকিক নয়, লৌকিক – ২ (দ্বিতীয় খণ্ড) – প্রবীর ঘোষ
    Next Article আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না – প্রবীর ঘোষ

    Related Articles

    প্রবীর ঘোষ

    অলৌকিক নয়, লৌকিক – 8র্থ খণ্ড – (জাতিস্মর, আত্মা, অধ্যাত্মবাদ) – প্রবীর ঘোষ

    September 20, 2025
    প্রবীর ঘোষ

    আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না – প্রবীর ঘোষ

    September 20, 2025
    প্রবীর ঘোষ

    অলৌকিক নয়, লৌকিক – ২ (দ্বিতীয় খণ্ড) – প্রবীর ঘোষ

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.