Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025

    ব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অলৌকিক নয়, লৌকিক – 8র্থ খণ্ড – (জাতিস্মর, আত্মা, অধ্যাত্মবাদ) – প্রবীর ঘোষ

    প্রবীর ঘোষ এক পাতা গল্প416 Mins Read0

    অধ্যায় : পনের – জাতিস্মর কাহিনীর দ্বিতীয় পৰ্যায়

    এতক্ষণ বিভিন্ন জাতিস্মর কাহিনী বা ‘কেস’ নিয়ে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করেছি। এ’বার দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার পালা। সংক্ষিপ্ত অথচ প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে সে’সব ঘটনার আলোচনায় যাব, যেগুলো গুরুত্বের দিক থেকেও দ্বিতীয় পর্যায়ের। গুরুত্বের মাপকাঠি ঠিক করল কে বা কারা? না, আমরা বিলকুল এ’সব ব্যাপারে নেই। তাত্ত্বিকভাবেই আমরা জানি, অতি স্পষ্টভাবে ও স্বচ্ছতার সঙ্গেই জানি—’আত্মা’=‘চিন্তা’ বা ‘চিন্তার কারণ’, যাই হোক না কেন তা অবশ্যই মরণশীল। এরপর মৃত্যুর পর আত্মার বেঁচে থাকা এবং জন্ম নেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমাদের চোখে ‘জাতিস্মর’ ব্যাপারটা প্রতিটি ক্ষেত্রেই গুরুত্বহীন ও অবাস্তব।

    তবু এর পরও জাতিস্মর-কাহিনী শুনলেই আমরা যুক্তিবাদী সমিতির পক্ষ থেকে বারবার ছুটে গেছি ঘটনাস্থলে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই যে ফাঁক আর ফাঁকি আছে, এটা হাতে-কলমে প্রমাণ করতেই ছুটে গেছি। অধ্যাত্মবাদের ‘প্রতারক’ চরিত্রটিকে বে- আব্রু করতেই ছুটে গেছি। ফলও পেয়েছি। আমাদের লাগাতার ঐকান্তিক ও নিখুঁত চেষ্টার ফসল হিসেবে আজ বহু সাধারণ মানুষও এই দৃঢ় সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন—”যে যত বড় প্যারাসাইকোলজিস্ট সে তত বড় প্রতারক (ওই, ‘যত বড় জ্যোতিষী তত বড় প্রতারক’-এর মত ব্যাপার আর কি)।” “জাতিস্মর? তার মানে, ও হয় প্রতারক, নয় মানসিক রোগী।”

    দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচ্য জাতিস্মর কাহিনীগুলোর ক্ষেত্রে গুরুত্বের মাপকাঠির নির্ধারক প্যারাসাইকোলজিস্টরা।

    আসুন এ’বার আমরা ঘটনায় ঢুকি।

    জাতিস্মর তদন্ত ৭ : জ্ঞানতিলক

    ঘটনাস্থল মধ্য শ্রীলংকার ছোট্ট গ্রাম হেদুনাউয়া। জল-জঙ্গলে ঘেরা পরিবেশ। আর পাঁচটা বাড়ির মতই পাথরের উপর পাথর চাপিয়ে তৈরি কুঁড়েতে থাকেন শ্রী ও শ্রীমতী বাডডিউথানা। শ্রীবাডডিউথানা পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষ। গ্রামেই একটা ছোট্ট দোকান ওঁর। শ্রীমতী ঘর সামলান।

    ১৯৫৬ সালে শ্রীমতী বাডডিউথানা জন্ম দিলেন একটি মেয়ের। মেয়েটি আগাছার মতই বেড়ে উঠতে লাগল। বেশ চলছিল। কিন্তু হঠাৎ সব কিছু গোলমাল হয়ে গেল। সব কিছু গোলমাল করে দিল ওই ছোট্ট মেয়েটি যার নাম এখন জ্ঞানতিলক বা জ্ঞানতিলখা। হঠাৎই ও বলতে শুরু করল, আগের জন্মে ও জন্মেছিল তালাওকেল- এ। সে জন্মে ছিল ছেলে। বাড়িতে মা ছিল, বাবা ছিল। ভাই ছিল। বোন ছিল। মা রান্না করতেন। রান্না হতো কাঠের আগুনে। গ্রামের আশে-পাশে ছিল প্রচুর সবুজ গাছ। ছোটবেলায় বোন আমাকে মেরেছিল। দিদি ভালোবাসত। দাদা আমাকে মেরেছিল। আমি স্কুলে যেতাম। স্কুলে মাস্টারমশাই পড়াতেন। মাস্টারমশাই আমাকে ভালোবাসতেন। ট্রেন দেখেছি। ট্রেনে করে রানী গিয়েছিলেন, আমি দেখেছি। মা শাড়ি পড়তেন। গায়ের রঙ ছিল ফর্সা। বাবা কাজে যেতেন। আমি বাবার সঙ্গে দোকানে গেছি। বাবার সঙ্গে পোস্ট অফিসে গিয়েছি। সমুদ্র দেখেছি। সমুদ্রের জল নীল। সমুদ্রের পাড়ে বালি থাকে, নারকোলগাছ থাকে। আমি ছবি আঁকতাম। আমার নীলরঙের পাজামা ছিল।

    জ্ঞানতিলকের কথায় প্রথম প্রথম ওর মা তেমন মাথা ঘামাননি। কিন্তু তারপর এক সময় সন্দেহের দোলায় দুলেছেন—সত্যিই কি আমাদের জ্ঞানতিলক জাতিস্মর? সত্যিই কি ঈশ্বর জন্মান্তরের অস্তিত্ব কলিযুগে আবার প্রমাণ করতেই জ্ঞানতিলককে পাঠিয়েছেন! প্রমাণ সংগ্রহে কৌতূহলী মা জ্ঞানতিলকের বাবাকে সব কথা জানালেন। তারপর একদিন দু’জনে মেয়েকে নিয়ে গেলেন তালাওকেল-এ। সময়টা ১৯৬০ সাল। জ্ঞানতিলক তখন চার বছরের শিশু। তালাওকেল শহর ছোট্ট শহর। বা বলা যায়, আধা-শহর, আধা-গাঁ। বাসস্ট্যান্ড থেকে পোস্ট অফিসে যাওয়ার পথেই নাকি ছিল ওদের বাড়ি। তিনজনে প্রায় সারা দিন ঘুরেও বাড়ির হদিস না পেয়ে ফিরে আসেন।

    ইতিমধ্যে জ্ঞানতিলকের খবর তালাওকেল-এ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ওর মা- বাবা বাড়ির খোঁজ করতে, সম্ভাব্য পরিবারটির খোঁজ করতে অনেককেই বলেছেন তাঁদের অদ্ভুত সমস্যার কথা। মানুষ অদ্ভুত কিছুর প্রতি সাধারণত এক বাড়তি আকর্ষণ অনুভব করে। এ’ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল। তালাওকেলের অধিবাসীদের অনেকেই হয় তো ভেবেছেন, ঠিক-ঠাক সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় সাহায্য পেলে হয়তো দেখা যাবে জ্ঞানতিলক এক দুর্লভ জাতিস্মর, তালাওকেলের গর্ব। পরিবেশগতভাবে এদের অনেকেই এমনটা ভেবে থাকতেই পারেন—জ্ঞানতিলক জাতিস্মর প্রমাণিত হলে এও প্রমাণিত হবে জাতককাহিনী নেহাতই গল্পকথা নয়। হিন্দুরাও একই ভাবে মনে করতেই পারেন—জ্ঞানতিলকের কথার সত্যতা প্রমাণিত হলে, নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হবে আত্মার অবিনশ্বরতা তত্ত্ব।

    যাই হোক, দাবানলের মতই গোটা শ্রীলংকাতেই জ্ঞানতিলকের কথা ছড়িয়ে পড়েছিল। খবর কাগজে ছাপার অক্ষরে খবর প্রকাশের আগেই এই কাহিনী শুনলেন কলম্বোর বিদালনকারা কলেজের বৌদ্ধ-দর্শনের অধ্যাপক পিয়দাসী থেরা। শুনলেন ক্যান্ডি কলেজের অধ্যাপক এইচ.এস. নিশাংকা। জ্ঞানতিলকের মুখ থেকে সব কিছু শুনতে পিয়দাসী ও নিশাংকা গেলাম হেদুনাউয়াতে। সেখানে সব শুনলেন। ‘নোট’ করলেন। এ’বার জ্ঞানতিলকের বর্ণনা মত সত্যিই কেউ তালাওকেলে ছিল কি না- তার খোঁজ করার পালা। অনুসন্ধানে নেমে পড়লেন স্থানীয় শ্রীপদ স্কুলের অধ্যক্ষ অশোকা কৌতমাদেসা, শিক্ষক সুমিথাপালা ও অনিরুদ্ধ স্কুলের শিক্ষক তিলক সমরিংঘে।

    ওঁরা খুঁজেও বের করলেন একজনকে। তিলকরত্ন। জ্ঞানতিলকের জন্মের আগে তিলকরত্ন মারা যায়। জ্ঞানতিলক তার পূর্বজীবন সম্পর্কে যা যা বলেছে তার সঙ্গে তিলকরত্নের জীবনের আশর্য রকমের মিল খুঁজে পেলেন ওঁরা! (আরো অনেকের সঙ্গেই খোঁজার চেষ্টা করলেই মিল পেতেন। কিন্তু পাকা মাথা তো…..)

    এ’বার পিয়দাসী থেরা ও তাঁর অনুসন্ধান-সঙ্গীরা শ্রীলংকার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানালেন, তাঁরা পূর্বজন্মের একটি মহত্ত্বপূর্ণ সত্য ঘটনার সন্ধান পেয়েছেন এবং বিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে এটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মঞ্জুরী কমিশন ঘটনাটি জানাল শ্রীলংকার তৎকালীন গভর্নর জেনারেলকে। গভর্নর এই তদন্তের কাজে নির্ভরযোগ্য লোক খুঁজতে গিয়ে জানতে পারলেন, হাতের কাছেই ভারতে রয়েছেন ডঃ হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনেক জাতিস্মর খুঁজে বের করার পূর্বঅভিজ্ঞতা তাঁর আছে।

    ১৯৬১-র জুনে ডঃ বন্দ্যোপাধ্যায় এলেন শ্রীলংকায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালালেন। তাঁকে অনুসন্ধানে সাহায্য করলেন সিংহল বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনশাস্ত্রের অধ্যাপক ডঃ জয়তিলকা। অনুসন্ধান শেষে তাঁরা নিশ্চিত হলেন, মেয়ে জ্ঞানতিলকই পূর্বজন্মে ছিল ছেলে তিলকরত্ন। তিলকরত্ন যে মেয়ে হয়ে জন্মাবে, তার পূর্বাভাসও নাকি তিলকরত্নই দিয়ে গিয়েছিল। অনুসন্ধানকারীরা জেনেছিলেন তিলকরত্ন দাদার চেয়ে দিদিকে বেশি ভালবাসত। দিদির সঙ্গে মিশতে বেশি পছন্দ করত। দিদির নেলপালিশ ব্যবহার করত। এ’সবই নাকি ওর মেয়ে হয়ে জন্মাবার পূর্বাভাস। (অনেক ছেলেই ছোটবেলায় মা, মাসি, দিদির দেখাদেখি নেলপালিশ ব্যবহার করে, অনেক সময় মা, দিদি, পিসিরা আদরের ছোট ছেলেটিকে শাড়ি পরিয়ে মেয়ে সাজিয়েও মজা পায়। এমন কিছু ঘটলে সে পরবর্তী জন্মে মেয়ে হয়ে জন্মাবে এমন জেনে শিহরিত হচ্ছি! কি সাংঘাতিক ব্যাপার বলুন তো! আমি ঘোড়া সেজে ছেলেকে পিঠে নিয়ে অনেক হামাগুড়ি দিয়েছি! পরের জন্মে আমি ঘোড়া…… শিহরিত হচ্ছি! বিখ্যাত হরবোলা ঘনশ্যাম পাইন কি হবেন? হাঁস, মুরগি, টিয়া, ৰাঘ, সাপ, হাতি, ঘোড়া, এত-কিছুর ডাক গভীর মনোনিবেশের সঙ্গে ডাকেন….. উনিও কি তবে রামকৃষ্ণের মত বহুভাগে বিভক্ত হয়ে এতগুলো জীব রূপে জন্মাবেন?? )

    অনুসন্ধানকারীরা জ্ঞানতিলককে ৬১ টি প্রশ্ন করেছিলেন। তার মধ্যে ৪৬টি তিলকরত্নের জীবনের সঙ্গে একশভাগ মিলে গিয়েছিল। মিলে যাওয়া জ্ঞানতিলকের কথাগুলো এই রকমের :

    ১. আমার বাবা ছিল।

    ২. আমার মা ছিল।

    ৩. আমার ভাই ছিল।

    ৪. আমার বোন ছিল।

    ৫. মা রান্না করতেন।

    ৬. রান্না হতো কাঠের আগুনে। (ওখানে প্রায় সব বাড়িতেই কাঠের আগুনে রান্না হয়।)

    ৭. মা জ্বালানি কাঠ কিনতেন।

    ৮. গ্রামের আশে-পাশে প্রচুর গাছ ছিল।

    ৯. সবুজ গাছ।

    ১০. ছেলেবেলায় বোন আমাকে মেরেছিল

    ১১. দিদি ভালবাসত।

    ১২. দাদা আমাকে মেরেছিল।

    ১৩. আমি স্কুলে যেতাম।

    ১৪. স্কুলে মাস্টারমশাই পড়াতেন।

    ১৫. মস্টারমশাই আমাকে ভালবাসতেন।

    ১৬. টেন দেখেছি।

    ১৭. ট্রেনে করে রানী গিয়েছিলেন, আমি দেখেছি। (রানী এলিজাবেথের শ্রীলংকা ভ্রমণের কথা ও বলেছিল।)

    ১৮. মা শাড়ি পরতেন।

    ১৯. মায়ের গায়ের রঙ ফর্সা ছিল।

    ২০. বাবা কাজে যেতেন।

    ২১. বাবার সঙ্গে দোকানে গেছি।

    ২২. বাবার সঙ্গে পোস্ট অফিসে গিয়েছি।

    ২৩. সমুদ্র দেখেছি।

    ২৪. সমুদ্রের পাড়ে বালি থাকে।

    ২৫. সমুদ্রের পাড়ে নারকোলগাছ আছে।

    ২৬. আমি ছবি আঁকতাম। (সাধারণভাবে সব বাচ্চারাই ছবি আঁকে।)

    ২৭. আমার নীল রঙের পাজামা ছিল। ইত্যাদি… ইত্যাদি…।

    মধ্য শ্রীলংকায় যে শিশু বড় হচ্ছে, সে এ’ধরনের কথা বলতেই পারে। এর মধ্যে অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে, কিন্তু এই কথাগুলো কখনই একজনকে জাতিস্মর বলে চিহ্নিত করার পক্ষে চূড়ান্ত প্রমাণ হতে পারে না। একজন শিশু কোনও কারণে নিজেকে জাতিস্মর বলে বিশ্বাস করতে থাকলে (সে বিশ্বাস সচেতন বা অবচেতন— যাই হোক না কেন) সে এইধরনের তুচ্ছ ও অকিঞ্চিতকর কিছু কথা বলতেই পারে, যার বেশিরভাগই পূর্বজন্মের জীবনের সঙ্গে মিলে যেতে বাধ্য। একটি শিশুর তথাকথিত জাতিস্মর হয়ে ওঠার পিছনে তিনটি কারণ থাকতে পারে। এক : ‘জন্মান্তর আছে’, এই বিশ্বাস তার অবচেতন বা সচেতন মনে রয়েছে। শুনেছে একজনের জীবনের কিছু কথা ও তার মৃত্যুর খবর। নিজের অজান্তে নিজেকে মৃত মানুষটি ভাবতে শুরু করেছে। দুই : কোনও বিশেষ কারণে শিশুকে শেখানো হয়েছে—সে জাতিস্মর। পূর্বজন্মের নাম, ঠিকানা ও কিছু তথ্য তার মাথায় ঢোকানো হয়েছে। তিন : এই ধরনের কোনও শিশুর খবর পেলে তাঁকে নির্ভেজাল জাতিস্মর প্রমাণ করতে এগিয়ে আসে বিক্রি বাড়াতে চাওয়া প্রচার-মাধ্যম, জন্মান্তরবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়া প্যারাসাইকোলজিস্ট-ধর্মগুরু। এ বিষয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করে রাষ্ট্রশক্তি। কারণ রাষ্ট্রশক্তি জানে, ‘এ’জন্মের বঞ্চনা পূর্বজন্মেরই কর্মফল’ এই তত্ত্ব মানুষের মাথায় গেঁথে দিতেই জাতিস্মরের অস্তিত্ব মাঝে-মধ্যে প্রমাণিত হওয়া প্রয়োজন।

    জ্ঞানতিলকের জাতিস্মর হয়ে ওঠার পিছনে ‘তিন’ নম্বর কারণটি অবশ্যই ছিল। সঙ্গে ছিল ‘এক’ অথবা ‘দুই’ নম্বর কারণ। জ্ঞানতিলক ছোটবেলা থেকেই শুনেছে বুদ্ধের জাতক কাহিনী, যার ফলে পূর্বজন্মে বিশ্বাস তৈরি হয়েছে।

    পরামনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন, জ্ঞানতিলক সমুদ্র দেখেনি। অথচ সমুদ্রের জলের রঙের সঠিক বর্ণনা দিয়েছে, সমুদ্রের পাড়ে যে নারকোলগাছ থাকে তাও ও বলতে পেরেছে। সমুদ্রকূলে বালির বর্ণনাও সঠিক দিয়েছে। এ’সবই বলতে পেরেছে পূর্বজন্মের তিলকরত্নের সমুদ্র দেখার স্মৃতি উদ্ধার করে।

    সমুদ্র না দেখে কি সমুদ্রের বর্ণনা দেওয়া যায় না? নিউইয়র্ক না দেখতে কি নিউইয়র্কের বিশাল উঁচু উঁচু বাড়ির বর্ণনা করা অসম্ভব? রবীন্দ্রনাথকে মুখোমুখি না দেখলেও কি তাঁর চেহারা আমাদের অপরিচিত?

    একটা চার-পাঁচ বছরের বাচ্চাকে হাতি, বাঘ, ভাল্লুক, ঘোড়া, নদী, সমুদ্র, পাহাড়, ট্রেন—এইসব নানা ধরনের জিনিসের ছবি দেখিয়ে দেখবেন, আপনার বয়স্ক চোখের চেয়েও ওদের চোখ অনেক বেশি ডিটেল্স্-এর দিকে নজর রাখে। ছোটদের ছবি আঁকতে একগাদা রঙের মাঝখানে বসিয়ে দিন, দেখবেন, অনেক সময় ওদের ডিটেক্সের কাজ আপনাকে অবাক করে দেবে। একটা ছোট শিশুকে নদী, পাহাড়, সমুদ্রের রঙিন ছবি দেখাবার পর তাকে জিজ্ঞাসা করে দেখবেন, সে প্রত্যেকটারই সঠিক বর্ণনা দেবে। জ্ঞানতিলক কোনও দিনই কোনও সমুদ্রের ছবি দেখেনি, এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

    জ্ঞানতিলকের আঁকা একটা ছবি দেখে প্যারসাইকোলজিস্টরা নাকি বেবাক অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। একটা রাস্তা, একটা ব্রিজ, একটা বাড়ি, বাড়িতে ওঠার সিঁড়ি পর্যন্ত। এই ছবির মধ্যে ওঁরা খুঁজে পেলেন তিলকরত্নর স্কুলকে। স্কুলের বারান্দায় উঠতে কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভাঙতে হয়। স্কুলের কাছেই রয়েছে একটি ব্রিজ। আরও একটি বিস্ময়কর তথ্য কি জানেন? নদী-পাহাড়ের দেশ শ্রীলংঙ্কায় এমন ব্রিজের ছড়াছড়ি। জ্ঞানতিলকের জ্ঞানে স্থানীয় ব্রিজের ব্যাপক উপস্থিতি অধরা ছিল না। তাই ছবিতে ব্রিজ এসেছে—এটা ওর জাতিস্মরতার পক্ষে প্রমাণ হলো কোথায়? বাড়ি আঁকতে কয়েক ধাপ সিঁড়ি, প্রায় শিশুদের ছবিতেই এর দেখা পাবেন। না জোর করে আমার যুক্তিকে খাড়া করতে এ’কথা বলছি না, ছোটদের ‘বসে আঁকো’ ধরনের অনেক প্রতিযোগিতাতেই অনেক সময় হাজির থাকতে হয়েছে একটু আধটু ছবি-আঁকি বলে। সেখান থেকে সঞ্চিত অভিজ্ঞতার সূত্রেই এ’কথা বলা। বাড়িতে সিঁড়ির ধাপ দেখে সেটাকে ধরে নেওয়া হলো এগুলো স্কুলের সিঁড়ির ধাপ এঁকেছে, অতএব ও জাতিস্মর। সিঁড়ির ধাপ না এঁকে বাড়ির পাশে গরু, কুকুর, বেড়াল, কাক, এমন কি সূর্য আঁকলেও ওইধরনের ছেঁদো যুক্তি খাড়া করে বলাই যেত— এটা একেবারে একশভাগ তিলকরত্নর স্কুল। কারণ ওর স্কুলের সামনে গরু দেখা যেত। একইভাবে স্কুলের কাছে কুকুর, বেড়াল, কাক কিংবা সূর্যের ছবির উপস্থিতিও প্রমাণ করে ছাড়াত—ছবিটা স্কুলেরই।

    এবার আসুন আমরা দু’একটি প্রাসঙ্গিক তথ্য জেনে রাখি।

    জ্ঞানতিলকের গ্রাম হেদুয়াউনা থেকে তিলকরত্নের ছোট্ট শহর তালাওকেলের দূরত্ব মাত্র ১৬ কিলোমিটার।

    …….. অনুসন্ধানকারীরা তাঁদের রিপোর্টে জানিয়েছেন, তিলকরত্নের মৃত্যু ৯ নভেম্বর ১৯৫৪। তাঁদের উল্লিখিত ডেথ সার্টিফিকেট অনুসারে—মৃতের পুরো নাম জানা যায়নি। সংক্ষিপ্ত নাম, জি. তিলকরত্ন। নিবাস আবানায়েক। বাবা-মা’র নাম জানা যায়নি। বয়স ১৬ বছর।

    অথচ জ্ঞানতিলক বলেছিল, সে থাকত তালাওকেলে (আবানায়েকে নয়)। তালাওকেলের যে তিলকরত্ন শ্রীপদ স্কুলে পড়ত, এবং যাকে বর্তমান জন্মের জ্ঞানতিলক বলে অনুসন্ধানকারীরা চিহ্নিত করেছিলেন, সেই তিলকরত্নর নাম তুরিন তিলকরত্ন। অর্থাৎ সংক্ষেপে টি. তিলকরত্ন, জি. তিলকরত্ন নয়। জি. তিলকরত্নের মৃত্যু ১৬ বছর বয়সে, এবং তুরিন তিলকরত্নের মৃত্যু ১৩ বছর ৯ মাস বয়সে। জি.তিলকরত্নের মৃত্যু জ্ঞানতিলকের জন্মের বছর দু’য়েক আগে হলেও তালাওকেলের তুরিন তিলকরত্ন মারা যায় জ্ঞানতিলকের জন্মের মাত্র পাঁচ মাস আগে।

    জ্ঞানতিলকের মা শ্রীমতী বাডডিউথানা স্বাভাবিকভাবেই দশমাস গর্ভ ধারনের পরই জ্ঞানতিলককে ভূমিষ্ঠ করেছিলেন। মাতৃগর্ভে জ্ঞানতিলকের যে প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছিল তিলকরত্নের মৃত্যুর প্রায় পাঁচ মাস আগে, সেখানে তিলকরত্নের আত্মার শ্রীমতী বাডডিউথানার গর্ভে প্রবেশের প্রসঙ্গই আসতে পারে না।

    এই একটি কারণে, শুধুমাত্র এই একটি কারণেই জ্ঞানতিলকের জাতিস্মর হয়ে ওঠার তত্ত্বকে বাতিল করা যায়।

    জাতিস্মর তদন্ত ৮ : প্রদীপ

    প্রদীপের জন্ম ১৯৮৩-তে। এরই মধ্যে বিভিন্ন হিন্দি পত্র-পত্রিকার কল্যাণে প্রদীপ জাতিস্মর হিসেবে যথেষ্ট প্রচার পেয়েছে। প্রদীপের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের আলিগড় জেলার সীতামাই গ্রামে। গ্রামের প্রায় সকলেই গরিব ভূমিহীন কৃষক।

    প্রদীপরাও এর বাইরে নয়, প্রদীপের বড়ি বলতে মাটির চার দেওয়ালের ওপর খড়ের চাল।

    বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানতে পারা যায়, প্রদীপ হঠাৎই একদিন বলতে শুরু করল, ওর গত জন্মের নাম ছিল কুল্লো লালা। থাকত মেদু গ্রামে। ব্যবসা করত। যথেষ্ট ধনী ছিল।

    প্রদীপের কথায় কেউই মাথা ঘামায়নি। বাচ্চা ছেলের খামখেয়াল বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। মেদু সীতামাই থেকে বারো কিলোমিটার দূরে। মেদুর এক ফলওয়ালা ফেরি করে ফল বিক্রি করত। সীতামাইতেও যেত ফলের পসরা নিয়ে। সেখানে প্রদীপের মুখে কুল্লো লালা ও মেদু গ্রামের কথা শুনে চমকে উঠল। সত্যিই তো মেদু গ্রামে কুল্লো লালা ছিলেন! ‘৮০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চম্বলের ডাকাতদের গুলিতে মারা গেছেন। কতই বা বয়স তখন কুল্লোর? বছর বত্রিশ।

    ফলওয়ালা প্রদীপের কথা জানাল কুল্লোর দাদা মুন্না লালাকে। মুন্নাও ধনী ব্যবসায়ী। নিজের ধান্দাতেই ব্যস্ত থাকেন। প্রদীপের কথা কানে গেল কুল্লোর স্ত্রী সুধা ও দুই ছেলে রবিকান্ত ও প্রকাশের। প্রধানত সুধা, রবি ও প্রকাশের আগ্রহে মুন্না লালা একদিন ফলওয়ালার সঙ্গে সীতামাই গেলেন। প্রদীপের সঙ্গে দেখা করতেই বিস্মিত হলেন। প্রদীপ মুন্নাকে চিনতে পেরেছিল কুল্লোর দাদা বলে। মুন্না প্রদীপকে মেদুতে নিয়ে এলেন।

    মেদুতে এসে আরও অনেক চমক দেখাল প্রদীপ। চিনতে পারল স্ত্রী সুধাকে, দুই ছেলে রবিকান্ত ও প্রকাশকে। কুল্লো লালা ফিরে এসেছেন শুনে তাঁর পরিচিতেরা অনেকেই এমন এক বিস্ময়কর ঘটনাকে নিজের চোখে দেখতে ছুটে এলেন। প্রদীপ প্রত্যেককে চিনতে পারল। প্রত্যেকে ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক। প্রদীপ একটা তাক থেকে কিছু টাকা বের করল। যে টাকা মৃত্যুর আগে কুল্লো রেখেছিল। এই টাকার হদিস কুল্লো ও সুধা ছাড়া আর কারোরই জানা ছিল না।

    পত্র-পত্রিকায় এই জাতীয় প্রতিবেদন পড়ার পর সাধারণ মানুষ মাত্রেই ধরে নিয়েছিলেন আত্মা যে অমর, পুনর্জন্ম আছে, তারই অব্যর্থ প্রমাণ এই প্রদীপ। প্রদীপের জাতিস্মর রহস্যের উন্মোচন করা ছিল যুক্তিবাদীদের কাছে চ্যালেঞ্জ। ভারতীয় যুক্তিবাদী সমিতির সানান এডামারুকু তথ্যানুসন্ধানে হাজির হলেন মেদু গ্রামে। মুন্না লালা তাঁর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, খবরের কাগজের প্রতিবেদনগুলো সত্যি নয়। সম্ভবত রং-চঙে গল্প ফেঁদে পাঠকদের আকর্ষণ করার জন্য ওইসব লিখেছে। নতুবা এমন সব মিথ্যে লেখার কারণ কি থাকতে পারে?

    মুন্নার কথায় আসল ঘটনা হলো, এক ফলবিক্রেতা প্রায় দিনই এসে ঘ্যান ঘ্যান করত—সীতামাই গ্রামে নাকি কুল্লো আবার জন্ম নিয়েছে প্রদীপ নামে। ও নাকি হলফ করে বলতে পারে প্রদীপই কুল্লো। ফলবিক্রেতার কথায় একটুও বিশ্বাস করিনি, একটুও আমল দেইনি। তবু দিনের পর দিন ও এসেছে। একই কথা বলে গেছে। শেষ পর্যন্ত কুল্লোর স্ত্রী ও ছেলেদের কথায় প্রদীপকে দেখতে গেছি, সঙ্গী হয়েছিল ওই ফলবিক্রেতা।

    প্রদীপের বাড়ি গিয়ে ওই ফলবিক্রেতা আমাকে দেখিয়ে বলেছিল আমি কুল্লোর বড় ভাই মুন্না, আমাকে প্রদীপ চিনতে পারছে কি না?

    প্রদীপ বলেছিল, চিনতে পারছে, তারপরই এক দৌড়ে খেলতে চলে গিয়েছিল।

    প্রশ্ন—প্রদীপকে আপনি মেদুতে নিয়ে আসার পর আপনার কি মনে হয়েছিল ও কুল্লো?

    উত্তর–না মশাই, অমি প্রদীপকে আদৌ নিয়ে আসিনি, আমি সীতামাই থেকে ফিরে আসার পর হঠাৎই একদিন প্রদীপকে নিয়ে ওর মা-বাবা ও সেই ফলবিক্রেতা এসে হাজির। সেই সময় ও অবশ্য আমাকে চিনতে পেরেছিল।

    প্রশ্ন—ওর পূর্বজন্মের স্ত্রীকে চিনতে পেরেছিল?

    উত্তর-না। প্রদীপের বাবা প্রদীপকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বলো তো তোমার আগের জন্মের বউয়ের নাম কী?

    উত্তরে প্রদীপ জানিয়েছিল—সুধা। ওর মুখে ‘সুধা’ নামটা শুনে আমাদের পরিবারের সকলেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। পরে অবশ্য মনে হয়েছে—প্রদীপকে হয়তো শেখানো হয়েছিল ওর আগের জন্মের স্ত্রীর নাম সুধা। কাছাকাছি গ্রাম। সুতরাং এ-সব বাড়ির খবর কারও জানার ইচ্ছে থাকলে নিশ্চয়ই জেনে নিতে পারে।

    মুন্না জানিয়েছেন প্রদীপের তাক থেকে টাকা বের করার কথাটা একেবারেই গপ্পো কথা।

    মুন্না আরও জানালেন, পত্র-পত্রিকায় যেভাবে লেখা হয়েছে প্রদীপ কুল্লোর ছেলেদের ও পরিচিতজনদের চিনতে পেরেছিল, ব্যাপারটা ঠিক তেমনভাবে ঘটেনি। কুল্লোর পরিচিতজনেরা ও দুই ছেলে প্রদীপকে ঘিরে দাঁড়িয়েছিল। তাদের অনেকেই প্রশ্ন করেছিল—আমাকে চিনতে পারছ?

    প্রদীপ এক সময় উত্তর দিয়েছিল—তোমাদের প্রত্যেককে আমি চিনতে পারছি। সুধা জানিয়েছিলেন, প্রদীপ তাঁকে সুধা বলে চিনতে পেরেছিল—কথাটা ঠিক নয়। প্রদীপ জানিয়েছিল তার আগের জন্মের স্ত্রীর নাম সুধা।

    প্রশ্ন—আপনি কি প্রদীপকে কোনও প্রশ্ন করেছিলেন?

    উত্তর—হ্যাঁ, বিয়ের রাতে আমার স্বামী আমাকে যে আংটিটা দিয়েছিলেন, সেটা দেখিয়ে প্রদীপকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বলো তো এটা কবে আমাকে দিয়েছিলে?

    প্রশ্ন—কি উত্তর দিল?

    উত্তর—আমার আংটিটা দেখে কোনও উত্তর না দিয়ে বলল— পরে বলব। কিন্তু আর বলেনি।

    রবিকান্ত ও প্রকাশ জানালেন—তাঁদের দুজনকে প্রদীপ চিনতে পারেনি। কুল্লোর দুই ছেলের নাম বলেছে। এ তো সামান্য চেষ্টাতেই আগে থেকে জেনে নেওয়া সম্ভব। প্রদীপ আগের জন্মে বাবা ছিল, এমনটা মেনে নিতে দু’জনেরই ঘোরতর আপত্তি আছে।

    প্রতিবেদক সীতামাই গ্রামে প্রদীপের বাড়ি হাজির হয়েছিলেন মিথ্যে পরিচয়ে- কল্লো লালার আত্মীয়।

    প্রদীপকে যখন প্রশ্ন করা হলো, “তোমার আগের জন্মের নাম কি ছিল?”

    “কুল্লো লালা, তাই নয়?” বলে প্রদীপ ওর মায়ের দিকে তাকাল।

    “তোমার আগের জন্মের স্ত্রীর নাম কি ছিল?”

    “সুধা বলো সুধা।” মা ও বাবা প্রদীপকে উত্তর যুগিয়ে দিলেন। প্রদীপ বললো, “হ্যাঁ সুধা।”

    “যখন তুমি কুল্লো ছিলে তখন কোন্ কলেজে পড়তে মনে আছে? মথুরা কলেজ, না আলিগড় কলেজে?”

    প্রদীপ মায়ের দিকে তাকাল।

    প্রতিবেদকের আবার প্রশ্ন—”তুমি আলিগড় কলেজে পড়তে মনে পড়ছে না?”

    প্রদীপ উত্তর দিল, “হ্যাঁ মনে পড়েছে। আলিগড় কলেজে পড়তাম।”

    বাস্তবে কুল্লো ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়েছিলেন।

    ফেরার সময় প্রতিবেদক ১৯৮৭ সালের মডেলের মারুতিতে উঠতে উঠতে প্রদীপকে বলেছিলেন, “মনে পড়ছে, এই গাড়িটা তুমি আগের জন্মে নিজেই চালাতে?”

    প্রদীপ ঘাড় নেড়ে বলল, “হ্যাঁ, মনে পড়েছে।”

    বুঝুন? ‘৮৭ সালের মডেল ‘৮০ সালে মৃত কুল্লো চালাতেন?

    লালা পরিবারের প্রত্যেকেরই সন্দেহ প্রদীপকে কুল্লো বলে চালাবার পেছনে প্রদীপের পরিবার ও ফলবিক্রেতার গভীর কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে। সম্ভবত ধনী লালা পরিবারের ধনের লোভেই প্রদীপকে কুল্লো সাজাতে চাইছে ওরা।

    .

    জাতিস্মর তদন্ত ৯ : ত্রিশের দশকে কলকাতায় জাতিস্মর

    ত্রিশের দশকে কলকাতায় একটি বাঙালি মেয়েকে নিয়ে দস্তুরমত হইচই পড়ে গিয়েছিল। মেয়েটি নাকি জাতিস্মর। পত্র-পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হলো। মেয়েটি জানিয়েছিল, পূর্বজন্মে সে কলকাতা থেকে বহুদূরে একটি অখ্যাত, অজ পল্লীগ্রামে থাকত। মৃত্যু হয়েছিল জলে ডুবে। মেয়েটি তার পূর্বজন্মের নাম, বাবার নাম, ও গ্রামের নাম জানিয়েছিল। জলে ডুবে যাওয়ার ঘটনাটির একটা মোটামুটি বিশদ বিবরণ দিয়েছিল। মেয়েটির বাবা-মা স্পষ্টতই জানিয়েছিলেন, তারা কেউই কোনও দিনই ওই গ্রামে যাননি। এমনকি ওই গ্রামের নাম পর্যন্ত শোনেননি। না, মেয়েটি তাঁর পূর্বজন্মের বাবার যে নাম বলেছে তাঁর সঙ্গে কোনও রকম পরিচয় বা যোগাযোগ মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে ছিল না। সত্যিই আশ্চর্য ব্যাপার! ওইটুকু মেয়ে কিভাবে বানিয়ে বানিয়ে বলেছে?

    সত্য যাচাই করতে কলকাতা থেকে উৎসাহী সাংবাদিক গেলেন গ্রামটির সন্ধানে। আরও অনেক বিস্ময় সাংবাদিকটির জন্য অপেক্ষা করছিল। সত্যিই ওই নামের একটি গ্রাম খুঁজে পেলেন। জানতে পারলেন, মেয়েটি পূর্বজন্মের যে নামটি জানিয়েছিল সেই নামের একটি লোক ওই গ্রামেই থাকত এবং পনের বছর আগে মারা যায় জলে ডুবেই। মৃতের বাবার নামও—মেয়েটি যা বলেছিল তাই।

    মেয়েটির ক্ষেত্রে এমন ঘটনা কেন ঘটল? যতদূর জানা যায় তাতে প্রায় নিশ্চিতভাবেই সাংবাদিকেরা একথা বলতেই পারেন, বালিকাটির পক্ষে মৃত মানুষটির বিষয়ে এত কিছু জানার সম্ভাবনা ও সুযোগ ছিল না। আর ঘটনাটাও এমন টাকা নয় যে, পত্রিকায় মৃত্যুর খবরটা পড়ে ছিল।

    মনোবিজ্ঞানী বা মনোরোগ চিকিৎসকরা জন্মান্তরকে অস্বীকার করার তাগিদে অবশ্য জোর করে একটা তথ্য হাজির করার চেষ্টা করতে পারেন—মেয়েটি জলে- ডোবা মানুষটির বিষয়ে শুনেছিল এবং দুর্ঘটনার খবরটি তাকে আকর্ষণ করেছিল, ফলে মেয়েটির চিন্তায় ওই মৃত মানুষটি বার বার হানা দিত। বালিকার কল্পনাপ্রবণ, আবেগপ্রবণ মনে স্থিতিস্থাপকতা ও সহনশীলতা কম থাকার দরুন কল্পনাবিলাসী মন এক সময় ভাবতে শুরু করে আমিই সেই মৃত মানুষটি। এই ভাবনাই কোনও এক সময় বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়। মনোবিজ্ঞানীদের এমন ব্যাখ্যার পেছনে জানার সুযোগ চাই। এক্ষেত্রে সে সুযোগ তো অনুপস্থিত। অতএব?

    এই ‘অতএব’-এর রহস্য সন্ধানের জন্য ডাঃ গিরীন্দ্রশেখর বসু-কে অনুরোধ করেন একটি সংবাদপত্র। ডাঃ গিরীন্দ্রশেখর বসু ভারতবর্ষে মনোরোগ চিকিৎসা এবং মনোসমীক্ষণের অন্যতম পথিকৃৎ। ডাঃ বসু ঘটনাটির কারণ বিশ্লেষণের জন্য বালিকাটিকে পরপর ক’দিন পরীক্ষা ও মনঃসমীক্ষা করেন। একদিনের ঘটনা। ডাঃ বসু মেয়েটির বৈঠকখানায় বসে আছেন। হঠাৎই চোখে পড়ল ঐ ঘরের আলমারিতে কতকগুলো পুরনো বাঁধানো সাময়িকী ও পত্রিকার ওপর। আলমারি খোলা। সময় কাটাতে, নিছকই খেয়ালের বশে বাঁধানো সাময়িকীগুলো নাড়াচাড়া করতে লাগলেন, পাতা উলটোতে লাগলেন। একটা সাময়িকীর একটা পৃষ্ঠায় এসে ডাঃ বসু উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। ঐ পৃষ্ঠাটিতে জনৈক গ্রামীণ সংবাদদাতা একটি জলে ডোবার ঘটনা জানিয়েছেন। গ্রামের নাম, মৃতের নাম ও তার বাবার নাম ও বিস্তৃত ঘটনাটি পাঠ করতে করতে ডাঃ বসুর চক্ষুস্থির। মেয়েটি এতদিন এই ঘটনার কথা আর এসব নামই বলছিল। সাময়িকীটি পনের বছরের পুরনো। মেয়েটি যে ডাঃ বসুর মতই কোনও এক অবসর সময়ে বাঁধানো বইগুলো টেনে নিয়ে পড়তে পড়তে এই ঘটনাও পড়ে ফেলেছিল এতে আর কোনও সন্দেহ নেই। তারপর ঐ ঘটনাটি নিয়ে ক্রমাগত ভাবতে ভাবতে অবচেতন মনে সেই জলে ডোবা মানুষটির সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে নিয়েছিল।

    ডাঃ বসু মেয়েটিকে ওই পৃষ্ঠাটি দেখানোর পর মেয়েটির স্মৃতি ধীরে ধীরে ফিরে আসে। ও জানায় লেখাটি আগে পড়েছিল। তবে লেখাটি পড়ার কথা ভুলে গিয়েছিল। মনে ছিল শুধু ঘটনাটি। তাই এতদিন অনিচ্ছাকৃতভাবেই ভুল বলেছিল— জলে ডোবার ঘটনাটি শোনেনি। মেয়েটি ডাঃ বসুর আকস্মিকভাবে পাওয়া যোগসূত্রের কল্যাণে ‘জাতিস্মর’ নামক মানসিক রোগী হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যায়।

    তবে স্বভাবতই সব সময় এমন আকস্মিক যোগাযোগ অনুসন্ধানীদের নাও জুটতে পারে। এই না জোটার অর্থ এই নয় যে, জাতিস্মরের বাস্তব অস্তিত্ব সম্ভব।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না – প্রবীর ঘোষ
    Next Article প্রত্যন্ত বাংলায় গুপ্তবিদ্যা – প্রবোধকুমার ভৌমিক

    Related Articles

    প্রবীর ঘোষ

    আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না – প্রবীর ঘোষ

    September 20, 2025
    প্রবীর ঘোষ

    অলৌকিক নয়, লৌকিক – ১ (প্রথম খণ্ড) – প্রবীর ঘোষ

    September 20, 2025
    প্রবীর ঘোষ

    অলৌকিক নয়, লৌকিক – ২ (দ্বিতীয় খণ্ড) – প্রবীর ঘোষ

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025
    Our Picks

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025

    ব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.