Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অশুভ সংকেত – কাজী মাহবুব হোসেন

    ডেভিড সেলজার এক পাতা গল্প211 Mins Read0

    অশুভ সংকেত – ১

    এক

    পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তেই এক লাখেরও বেশি লোক প্লেনে উড়ন্ত অবস্থায় আকাশে অবস্থান করে। এই ধরনের তথ্যে বেশ মজা পায় রবার্ট। প্লেন সংক্রান্ত ম্যাগাজিনটা পড়তে পড়তেই সে পৃথিবীর মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলল। একভাগ আকাশে আর বাকি সবাই মাটিতে। যদিও সাধারণত মানুষের কঠিন কঠিন সমস্যা নিয়ে ভাবতে অভ্যস্ত রবার্ট, তবু আজ সে যে-কোন একটা কিছু নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চাইছে। তার জন্যে যে কি সংবাদ অপেক্ষা করছে সেই দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চাইছে সে। রবার্ট ভাবছে, মাটির ওপরকার লোকগুলো সবাই যদি কোন কারণে নিশ্চিহ্নও হয়ে যায় আকাশে প্লেনের মধ্যে যে লোকগুলো নিশ্চিন্ত মনে মার্টিনির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে ছায়াছবি উপভোগ করছে তারা কিছুই জানবে না।

    রোমের উপর দিয়ে উড়ে যেতে যেতে নানান চিন্তা মাথায় আসছে রবার্টের। যারা এই মুহূর্তে আকাশে উড়ছে তাদের মধ্যে কতজন পুরুষ আর কতজন নারী? পৃথিবীর অন্য সব লোক মারা যাওয়ার পরে ওদের পক্ষে যদি নিরাপদে কোথাও নামা সম্ভব হয়, কেমন সমাজ গড়ে তুলবে তারা? ধরে নেয়া যায় যে যাত্রীদের বেশির ভাগই পুরুষ, আর তারা মধ্যবিত্ত থেকে ধনী পর্যায়ের লোক। কিন্তু এদের শিক্ষা আর যোগ্যতা বিশেষ কিছু কাজে আসবে না, কারণ শ্রমিক শ্রেণীর কোন লোকই থাকছে না কাজ করার জন্যে। ম্যানেজারের ম্যানেজ করার লোক থাকবে না, অ্যাকাউন্টেন্টের থাকবে না হিসেব দেয়ার লোক। এইসব বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যে কয়েকটা বিমান বোঝাই কাজের লোক সবসময়ে আকাশে রাখা গেলে ভালই হত। তখন আর গায়ে খাটার লোকের অভাব পড়ত না। মাও সে তুই না বলেছিল?–রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ যাদের সবচেয়ে ভাল সে দেশই দুনিয়া—জোড়া চরম ধ্বংসযজ্ঞের পর টিকে থাকতে পারবে!

    প্লেনের হাইড্রলিক চাকা নামানো হয়েছে। সিগারেট নিভিয়ে সিট বেল্ট বেঁধে নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের অস্পষ্ট আলোগুলোর দিকে চাইল সে। ইদানীং ঘন ঘন রোম ভ্রমণের ফলে ওটা একটা অত্যন্ত পরিচিত দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আজকে তার মনটা উদ্বিগ্ন। বার ঘন্টা আগে ওয়াশিংটনে টেলিগ্রামটা পেয়েছে সে। অর্থাৎ যা হবার তা এতক্ষণে হয়ে গেছে। ক্যাথি শেষ পর্যন্ত মাতৃত্ব লাভ করবে আজ। এতক্ষণে নিশ্চয়ই সে তার পাশে শোয়া বাচ্চাটাকে আদর করছে। কিংবা পরপর দুবার গর্ভপাত হয়ে বাচ্চা হারানোর পরে তৃতীয়বারও আবার বাচ্চা হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। আগের দুবার গর্ভধারণের অল্পদিনের মধ্যেই গর্ভপাত হয়েছে—কিন্তু এবার পুরো আটমাস গর্ভবতী রয়েছে সে। রবার্ট ভাল করেই জানে যে এবারে কিছু গোলমাল হলে আর কোনদিনও ক্যাথিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে না।

    ছেলেবেলা থেকেই ক্যাথির সাথে তার জানাশোনা। ওর বয়স যখন মাত্র সতেরো তখন স্পষ্টই বোঝা যেত ওর মানসিক ভারসাম্যের অভাব। ওর চোখে ছিল ভীত সন্ত্রস্ত দৃষ্টি। সব সময়েই সে চাইত কেউ তার দেখাশোনা করুক—নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিক। রবার্টের সাথে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার মূলে ছিল তার সহজেই কর্তৃত্ব নিয়ে নেয়ার সহজাত ক্ষমতা। কিন্তু এখন অবস্থা অন্যরকম দাঁড়িয়েছে, রাজনীতিবিদের স্ত্রী হিসেবে তার ওপর দায়িত্ব অনেক—কুলিয়ে উঠতে না পেরে ক্যাথি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। নিঃসঙ্গ, একা একাই কাটে তার সময়।

    প্রথম আভাসটা এসেছিল অদ্ভুতভাবে। রবার্ট একদিন বাড়ি ফিরে দেখে একটা কাঁচি দিয়ে নিজের চুল কেটে কুটে সঙ সেজে বসে আছে ক্যাথি। চুল আবার বড় না হওয়া পর্যন্ত বাধ্য হয়ে পরচুলা ব্যবহার করে কোনমতে মুখ বাঁচানো হয়েছিল। এর একবছর পরে দেখা গেল একদিন বাথরূমে বসে ক্ষুর দিয়ে নিজের সবকটা আঙুলের ডগা ফালি ফালি করে কেটেছে ক্যাথি। এমন অদ্ভুত আচরণ সে কেন করল তা সে নিজেও জানে না। একমাস সে একজন সাইকিয়াট্রিস্টের চিকিৎসাধীন ছিল। তারপর হঠাৎ করে চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়ে স্থির করল এগুলো কিছু না, তার দরকার একটা বাচ্চা। বাচ্চা হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

    যেই ভাবা সেই কাজ—অল্পদিন পরেই অন্তঃসত্ত্বা হল ক্যাথি। প্রথম তিনটে মাস নির্বিঘ্নে সুন্দর কাটল ওদের। সব কিছুতেই উৎসাহ বেড়ে গেছে ওর। এমন কি স্বামীর সাথে পূর্বাঞ্চলে বেড়াতেও এল সে। প্লেনের বাথরূমের নীল পানিতে তার সব আশা আকাঙ্ক্ষা ধুয়ে মুছে গেল—গর্ভপাত হল তার। অঝোরে কেঁদেছিল সে।

    পরের বার তার আবার অন্তঃসত্ত্বা হতে দুবছর লেগে গেল। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তাদের মিলিত হবার উপযুক্ত সময় যেটা বেঁধে দিলেন তাতে রবার্টের অফিস ছেড়ে বাড়িতে ক্যাথিকে সঙ্গ দেয়া খুব ঝামেলার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। তবু মাসের পর মাস রবার্ট অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তার দায়িত্ব পালন করে শেষ পর্যন্ত কৃতকার্য হল।

    এবারে সাড়ে পাঁচমাস পর কেনাকাটা করার সময়ে তার পেটে ব্যথা আরম্ভ হয়। চোখ কান বুজে ব্যথাটাকে অস্বীকার করে কেনাকাটা করেই চলল ক্যাথি। যা ঘটার তাই ঘটল। এই বাচ্চাটাকেও হারাল সে। শোক কাটিয়ে উঠতে ছয়মাসেরও বেশি লেগে গেল ক্যাথির। এটা তৃতীয় ও শেষ বার। রবার্ট জানে এবারই শেষ— এবার কোন অঘটন ঘটলে আর ক্যাথিকে ফিরিয়ে আনা যাবে না—মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটবে তার।

    রানওয়েতে নামল প্লেন—মৃদু তালির শব্দ উঠল প্যাসেঞ্জারদের ভিতর। অকপটে প্রকাশ করণ তারা নিজেদের আনন্দ। নিরাপদে মাটিতে ফিরে এসে একটু অবাকই হয়েছে যেন সবাই। আকাশে কেন উড়ি আমরা?—ভাবল রবার্ট। জীবনের মূল্য কি এতই কম? সবাই তাড়াহুড়ো করে দরজার দিকে এগুচ্ছে, কিন্তু রবার্ট বসেই রইল। তার ব্যস্ত হবার কিছু নেই–অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি সে। রাজকীয় সম্মানে তাকে কাস্টমের ভিতর দিয়ে বিনা ঝামেলায় পার করে অপেক্ষমাণ গাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে। প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে রোমে তার কদরই আলাদা। বিশ্ব অর্থনৈতিক কনফারেন্সের সভাপতিত্ব করতে হয়েছিল তাকে রোমে। প্রথমে চার সপ্তাহের কর্মসূচী নিয়ে কাজ আরম্ভ হলেও প্রায় ছয়মাস ধরে চলেছিল সভা। সভার মধ্যমণি রবার্টের প্রতি অনেকেরই বিশেষ নজর পড়েছে, কেউ কেউ আন্দাজ করছে কয়েক বছরের মধ্যেই তার ইউ এস প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনে দাঁড়াবার সম্ভাবনা রয়েছে।

    আসলেও এই বিয়াল্লিশ বছর বয়সেই রবার্ট তার পেশাগত জীবনের শিখরে উঠেছে। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে তবে সে আজ এখানে পৌঁছেছে। সভাপতি হওয়ায় জনসাধারণের কাছে সম্মান অনেক বেড়ে গেছে তার। রাষ্ট্রদূত হওয়া এখন তার হাতের মুঠোয়, তারপরে ক্যাবিনেটের সদস্য পদ এরপরে আরও উপরে। আজকে যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তিনি যে একসময়ে রবার্টেরই রুমমেট ছিলেন কলেজ জীবনে সেটা তার সৌভাগ্যের বিষয় তবে নিজের ব্যক্তিগত চেষ্টাতেই সে আজ এত উপরে উঠেছে।

    যুদ্ধের সময়ে তাদের পারিবারিক কাপড়ের কারখানাগুলো চুটিয়ে ব্যবসা করেছে। সে নিজে লাভ করেছে উচ্চ শিক্ষা আর আর্থিক প্রাচুর্য। তার বাবার মৃত্যুর পরে প্রায় একশো মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি পেয়েছে সে উত্তরাধিকার সূত্রে। সে নিজেও সঠিক জানে না কত টাকা আছে তার।

    .

    ট্যাক্সিটা প্রায়-অন্ধকার অসপিডাল ডি স্যান্টোর সামনে এসে থামল। তিনতলার অফিস ঘরের জানালা দিয়ে ফাদার স্পিল্লেট্টো ট্যাক্সি থেকে একজন লোককে নামতে দেখলেন। রবার্ট থর্নকে চিনতে দেরি হল না তাঁর। খবরের কাগজে ওই ছবি ফাদার বহুবার দেখেছেন। না, তাঁদের নির্বাচনে কোন ভুল হয়নি। বিরাট আলখাল্লাটা সামলে নিয়ে ছোট্ট টেবিলটার ধার থেকে উঠে নিঃশব্দে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। চেহারায় তাঁর কোন ভাবান্তর হল না। নিচে থেকে রবার্টের পায়ের মৃদু শব্দ শোনা যাচ্ছে। নগ্ন টালির মেঝের ওপর শব্দের প্রতিধ্বনি তুলে দুজনে পরস্পরের দিকে এগিয়ে গেলেন।

    ‘মিস্টার থর্ন?’

    মুখ তুলে অন্ধকারে দেখার চেষ্টা করল রবার্ট।

    ‘বলুন?’

    ‘আমি ফাদার স্পিল্লেট্টো। আমিই আপনাকে…’

    ‘হ্যাঁ, আপনার টেলিগ্রাম পেয়েই তাড়াহুড়ো করে চলে এসেছি আমি।’

    ধীরে ধীরে আলোয় বেরিয়ে এলেন ফাদার। তাঁর চলাফেরা আর নীরবতায় কেমন একটা অশুভ ছায়া দেখতে পেল রবার্ট। মনে মনে একটা দুঃসংবাদ শোনার জন্যে প্রস্তুত হল সে।

    ‘বাচ্চা…মানে ডেলিভারি কি হয়ে গেছে?’ জিজ্ঞেস করল রবার্ট।

    ‘হ্যাঁ।’

    ‘আমার স্ত্রী…?’

    ‘বিশ্রাম নিচ্ছেন,’ কাটা কাটা ছোট্ট কথায় জবাব দিচ্ছেন পাদরী।

    সিঁড়ির গোড়ায় পৌঁছে গেছেন ফাদার স্পিল্লেট্টো। রবার্টের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তার চোখে চোখ রাখলেন ধর্মযাজক, যেন তাকে সান্ত্বনা দিতে চাইছেন।

    ‘কিন্তু একটা অঘটন ঘটেছে!’ মনে প্রাণে তার কোন সর্বনাশ হয়নি প্রার্থনা করলেও মুখে সন্দেহ প্রকাশ করল রবার্ট।

    ‘বাচ্চাটা মারা গেছে।’

    একটা বিশ্রী নীরবতা নেমে এল। শূন্য করিডোরের নিস্তব্ধতার মাঝে কান ঝাঁ ঝাঁ করছে রবার্টের। প্রচণ্ড আঘাতে পক্ষাঘাতগ্রস্তের মত অসাড় হয়ে গেছে যেন। ‘মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্যে বেঁচেছিল বাচ্চাটা, তারপরেই সব শেষ। ‘

    নিশ্চলভাবে দাঁড়িয়ে রবার্টকে লক্ষ্য করছেন প্রীস্ট। টলতে টলতে কয়েক পা এগিয়ে ধপ করে বেঞ্চটার ওপর বসে পড়ল রবার্ট। দুহাতে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়ল সে। তার গুমরে গুমরে কান্নার শব্দ শূন্য করিডোরে ঘুরে ফিরতে লাগল। ধৈর্য ধরে কথা বলার উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় রয়েছেন ফাদার স্পিল্লেট্টো।

    ‘আপনার স্ত্রী সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন,’ রবার্টের কাঁধে একটা হাত রেখে আরম্ভ করলেন ফাদার। সময়কালে আবার সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন তিনি।

    ‘অসহ্য যন্ত্রণায় তার ভিতরটা পুরে ছারখার হয়ে যাবে,’ রুদ্ধ কণ্ঠে উচ্চারণ করল রবার্ট।

    ‘কাউকে দত্তক নেন না কেন?’

    ‘নিজের একটা সন্তান চেয়েছিল ও।’

    আরও কাছে সরে এলেন প্রীষ্ট। তাঁর বিশাল মূর্তি আর মুখের শান্ত ভাবের কোনই পরিবর্তন নেই। কেবলমাত্র তাঁর কপালের গড়িয়ে নামা এক ফোঁটা ঘাম থেকে তাঁর ভিতরের উৎকণ্ঠা আঁচ করা যায়।

    ‘স্ত্রীকে খুব ভালবাসেন আপনি?’

    গলা দিয়ে যেন স্বর বেরুল না রবার্টের, মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল সে।

    ‘ঈশ্বরের ইচ্ছাই আপনার মেনে নেয়া ঠিক হবে।’

    অন্ধকার করিডোর থেকে একজন বৃদ্ধা নান এগিয়ে এলেন, তাঁর চোখে ফাদারের সাথে দুটো কথা বলার মিনতি। অল্পক্ষণ তাঁরা একটু আড়ালে ইটালিয়ান ভাষায় আলাপ করলেন নিচু স্বরে। নান ফিরে যেতেই প্রীস্ট আবার রবার্টের দিকে এগিয়ে এলেন। তাঁর চোখের দৃষ্টিতে কি যেন ছিল, সেদিকে চেয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেল রবার্ট

    ‘ঈশ্বর বড় বিচিত্র পদ্ধতিতে কাজ করেন, মিস্টার থর্ন।’ হাত তুলে রবার্টকে তাঁর সাথে যাবার ইঙ্গিত করলেন পাদরী। যন্ত্রচালিত পুতুলের মত তাঁকে অনুসরণ করল রবার্ট।

    মেটার্নিটি ওয়ার্ডটা তিনতলায়। পিছনের একটা প্রায় অব্যবহৃত সিঁড়ি দিয়ে রবার্টকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন ফাদার স্পিল্লেট্টো। ওয়ার্ডটা অন্ধকার কিন্তু পরিচ্ছন্ন। বাচ্চাদের মিষ্টি গন্ধ নাকে আসতেই রবার্টের বুকের ভেতর হারানোর ব্যথাটা আবার নতুন করে চাড়া দিয়ে উঠল। একটা স্বচ্ছ কাঁচের পাশে এসে থামলেন ফাদার। রবার্ট এগিয়ে এসে একটু ইতস্তত করে কাঁচের ওপাশে চাইল। একটা শিশু নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে ওপারে-স্বর্গীয়, সুন্দর নিখুঁত চেহারা। ঘন চুলে ভরা মাথা। হঠাৎ গভীর নীল মায়াময় চোখ দুটো খুলে বাচ্চাটা রবার্টের দিকে চেয়ে একটু মিষ্টি হাসি দিল।

    ‘বাচ্চাটা এতিম,’ বললেন ফাদার। ‘আপনার ছেলের সাথে ঠিক একই সময়ে ওর মা-ও মারা যায়।’ বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে রবার্ট ফাদারের মুখের দিকে চাইল। ‘আপনার স্ত্রীর দরকার একটা বাচ্চা, আর এর দরকার একজন স্নেহময়ী মা।’

    ধীরে ধীরে এপাশ ওপাশ মাথা নাড়ল রবার্ট। নিজের সন্তানই আমাদের কাম্য ছিল।’

    ‘ছেলেটার কিন্তু অনেক মিল আছে আপনাদের সাথে।’

    আবার ফিরে তাকাল রবার্ট বাচ্চাটার দিকে। কথাটার সত্যতা স্পষ্ট উপলব্ধি করল সে। গায়ের রঙ একেবারে ক্যাথির মত আর চেহারায় তার সাথে অনেক মিলও রয়েছে। এমনকি থুতনিতেও থর্ন পরিবারের সবার মত খাঁজ রয়েছে।

    ‘ম্যাডামকে না হয় না-ই জানালেন,’ রবার্টকে চুপ করে ভাবতে দেখে জোগান দিলেন পাদরী।

    চাপা উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছে রবার্টের হাত। নিজের দুহাতে ওর ডান হাতটা তুলে নিয়ে মৃদু চাপা দিয়ে তার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেন পাদরী ফাদার।

    ‘বাচ্চাটা…ওকি পুরোপুরি—মানে স্বাস্থ্য…?’ কম্পিত গলায় জানতে চাইল রবার্ট।

    ‘সবদিক থেকে নিখুঁত,’ জবাব দিলেন ফাদার।

    ‘কোন আত্মীয়স্বজন?

    ‘নেই।’

    করিডোরের নিস্তব্ধতায় কান ভোঁ ভোঁ করছে রবার্টের।

    ‘সব কিছুই আমার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে, কোন রেকর্ড থাকবে না—কেউ কিছু জানতেও পারবে না।’

    ফাদারের দিকে চোখ তুলে চাইতে পারছে না রবার্ট। অনিশ্চয়তা আর সংশয়ে দুলছে তার মন। মনস্থির করতে পারছে না কিছুতেই!

    ‘আমি…আমি নিজের ছেলেকে একটু দেখতে পারি?’

    ‘কি লাভ তাতে? যারা জীবিত তাদের জন্যে জমা রাখুন আপনার স্নেহ ভালবাসা।‘

    ঠিক এই সময়ে কাঁচের পর্দার পিছন থেকে রবার্টের দিকে দুহাত বাড়িয়ে দিল বাচ্চাটা। যেন কোলে উঠতে চাইছে।

    ‘আপনার স্ত্রীর ভালর জন্যে আপনার এই ছলনা ঈশ্বর ক্ষমা করবেন। এই নিষ্পাপ ছোট্ট বাচ্চাটারও একটা আশ্রয় মিলবে…’ বলতে বলতে নীরব হয়ে গেলেন ফাদার। আর বেশি বলার দরকারও ছিল না।

    ‘আজকের রাতে ঈশ্বর আপনাকে একটা শিশু পুত্র উপহার দিলেন।‘

    রাতের আকাশে সেই কালচে তারাটা চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছেছে। হঠাৎ বিজলীর আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল ওটা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ক্যাথি র্থন ভাবছে স্বাভাবিকভাবেই তার জ্ঞান ফিরে আসছে। সে জানে না প্রসবের কিছুক্ষণ আগেই ইনজেকশন দিয়ে তাকে অজ্ঞান করে ফেলা হয়েছিল। বাচ্চাটাকে দেখার সুযোগ তার ঘটেনি। এখন জ্ঞান ফিরে আসতে আরম্ভ করতেই একটা অজানা ভয়ে তার মন কুঁকড়ে উঠল। বাইরে করিডোরে শোনা যাচ্ছে পায়ের শব্দ—তার ঘরের দিকেই এগিয়ে আসছে। দরজাটা খুলে গেল—কোলে একটা বাচ্চা নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে তার স্বামী।

    ‘আমাদের ছেলে,’ কাঁপা আবেগভরা স্বরে বলল রবার্ট। ‘আমাদের এতদিনের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হল শেষ পর্যন্ত।’

    হাত বাড়িয়ে বাচ্চাটাকে কোলে নিল ক্যাথি। খুশির আতিশয্যে কেঁদে ফেলল সে। রবার্টের চোখের কোণেও পানি এসে তার দৃষ্টি ঝাপসা করে দিল কিন্তু তার ঝাপসা চোখেও ধরা পড়ল ক্যাথির উপচে পড়া খুশি। মনে মনে সঠিক পথ দেখাবার জন্যে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাল সে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleভ্যাঙ্কুভারের ভ্যাম্পায়ার – ডিউক জন
    Next Article দুশ্চিন্তামুক্ত নতুন জীবন – ডেল কার্নেগি
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.