Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অসাধু সিদ্ধার্থ – জগদীশ গুপ্ত

    জগদীশ গুপ্ত এক পাতা গল্প138 Mins Read0

    পরিশিষ্ট – জগদীশ গুপ্তের সাহসী সত্তা : অভিজিৎ দাশগুপ্ত

    পরিশিষ্ট – জগদীশ গুপ্তের সাহসী সত্তা : অভিজিৎ দাশগুপ্ত

    গড়িয়ার কাছে রামগড় কলোনির আজকের চেহারা দেখলে সেই সময়ের কোনো হদিস পাওয়া মুশকিল। আশির দশকের গোড়ায় রামগড় কলোনিতে তখনো পায়ে চলা মেঠোপথ, ফাঁকা ফাঁকা মাঠ, চারচালা-আটচালার আটপৌরে বসতি। আমি তখন নেহাতই ছোকরা, তরুণ সাংবাদিক। একটা অ্যাসাইনমেন্ট পেয়ে মহাউৎসাহে খুঁজে বের করেছিলাম প্রয়াত জগদীশ গুপ্তের বাসা। খোঁজখবর নিয়ে জেনেছিলাম, জগদীশ গুপ্তের স্ত্রী চারুবালা দেবী তখনো বেঁচে; বয়স অনেক হয়েছে, পাড়ার মেয়ে-বউরা তাঁর দেখাশোনা করে। এত বয়সে তিনি কতটা স্মৃতিচারণ করতে পারবেন, সন্দেহ ছিল। কিন্তু কিছু যদি বলতে পারেন! যা বলেন, সেটুকুই তো লাভ।

    তিনি ঠিক কী বলেছিলেন এতদিন পরে তা আর ভালো মনে নেই। খবরের কাগজে প্রকাশিত ইন্টারভিউটাও কবেই হারিয়ে গেছে। এর কয়েক মাস পর চারুবালা দেবী মারা যান। তবু অতীতের কুয়াশা হাতড়ে যেটুকু মনে পড়ে―চারুবালা দেবী বারবার বলার চেষ্টা করছিলেন স্বামী জগদীশ গুপ্তের নির্লিপ্ত জীবনযাপনের কথা। ঘরের একটা কোনা দেখিয়ে বলছিলেন, ওই তো ওখানে তিনি বসে থাকতেন। লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে, কখনো খালি গায়ে। শীতকালে একটা চাদর। বইপত্তর নাড়াচাড়া করতেন। শেষদিকে চোখে ভালো দেখতেন না। ডাক্তারও দেখাতেন না। তার মধ্যেই লেখালেখি চলত। দুটো উপন্যাস শেষ করেছিলেন। অন্ধকার নেমে গেলে মাঝে মাঝে এস্রাজ নিয়ে বসতেন। গান-বাজনায় ছিল দারুণ ঝোঁক।

    ভাবতে অবাক লাগে, নিজের সাধনা সম্পর্কে কতখানি আত্মবিশ্বাস থাকলে সারাজীবন এমন নির্লিপ্তভাবে কাটিয়ে দেওয়া যায়। জগদীশ গুপ্ত এমন একটা যুগে লেখালেখি শুরু করেছিলেন, যখন কল্লোলিত হয়ে উঠছে কল্লোল যুগ। রবীন্দ্রনাথের প্রতিভার আলোয় তখন বিকেলের স্নিগ্ধতা। শরৎচন্দ্র বড় অনায়াসে দখল নিয়েছেন বাঙালি পাঠকের মন। অথচ এমন এক পালাবদলের সময়ে দাঁড়িয়েও জগদীশ গুপ্তের পপুলিজমের ধারপাশ দিয়ে গেলেন না। গ্রাহ্য করলেন না সেন্টিমেন্ট বা রোমান্টিকতার তীব্র জনমোহিনী আকর্ষণকে। উলটে ‘পয়োমুখম’ গল্পে অর্থপিপাসু কবিরাজ-বাবার সামনে তাঁরই দেওয়া মারণ ওষুধ নামিয়ে রেখে বিদ্রোহী ভূতনাথ বলে ওঠে; ‘এ বৌটার পরমায়ু আছে তাই কলেরায় মরল না, বাবা! পারেন তো নিজেই খেয়ে ফেলুন।’ ভাবতে অবাক লাগে, সেই ১৯২৭ সালে এ গল্প লিখছেন জগদীশ গুপ্ত, যখন পিতৃতান্ত্রিকতার রশি বাঙালির গার্হস্থ্য জীবনকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। জগদীশবাবুর গল্পের নায়ক ভূতনাথ সেই বাঁধনকে মোটেও গ্রাহ্য করছে না। তার চোখে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে অর্থলোলুপ বাবার বারবার ছেলেকে বিয়ে দিতে চাওয়ার আসল সত্যটি। বাবার দেওয়া ওষুধ খেয়ে প্রথম স্ত্রী মরেছে ভেদবমি হয়ে। দ্বিতীয় স্ত্রীরও মৃত্যু হলো একই ভাবে, ভেদবমির ভয়ানক ধাক্কায়। তৃতীয় স্ত্রীর অসুখের আগেই ভূতনাথ বুঝে গেল, তার তৃতীয় শ্বশুরের কাছ থেকে গোপনে টাকা চেয়ে পাঠাচ্ছেন কবিরাজ বাবা। কিন্তু পুত্রবধূর ইষ্টসাধনের কোনো অভিপ্রায় তাঁর নেই। চিকিৎসকের ছদ্মবেশে তিনি আসলে এক গোপন আততায়ী।

    প্রেম নয়, প্রকৃতি নয়, সৌন্দর্যসাধনার নিভৃত নকশিকাঁথা নয়, জগদীশ গুপ্ত তাঁর গল্প-উপন্যাসগুলোকে ধরতে চেয়েছেন চরিত্রের জটিল আলো-আঁধারির দিক থেকে। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘মানুষের বিচিত্র প্রবৃত্তির সঙ্গে যার যত পরিচয়, যত অন্তর্দৃষ্টি, তার গল্প তত বিচিত্র হইবে। কিন্তু জীবনভর সেই প্রবৃত্তির সুলুক-সন্ধান করতে গিয়ে তাঁর কপালে জুটেছে প্রত্যাখ্যান, জুটেছে ‘অ্যান্টি হিরো’র স্রষ্টার অভিধা, বলা হয়েছে : ‘জগদীশ গুপ্ত আগাগোড়া তিক্ত রুক্ষ ও নৈরাশ্যবাদী। তাঁর লেখা পড়লে আমাদের মূল্যবোধগুলো প্রবলভাবে নাড়া খায় এবং আমরা অস্বস্তিবোধ করি’ (সুবীর রায় চৌধুরী)। পরবর্তীকালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তো সটান বলে দেন : “তিনি কোনোকালেই সাধারণ পাঠকের মন জয় করতে পারেননি। ইদানীং তিনি সমালোচক ও গবেষকদের গুর মধ্যেই আবদ্ধ।’

    অথচ এই অপেক্ষা কি প্রাপ্য ছিল জগদীশ গুপ্তের? সারাজীবন তিনি ছিলেন উপেক্ষিত-অবহেলিত। বিশেষ শ্রদ্ধা বা সম্মান তাঁর ভাগ্যে জোটেনি। আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসেননি প্রভাবশালী কোনো প্রকাশক। কেউ তাঁকে কোনো সাহিত্য পুরস্কার পদ উপাধি বা সংবর্ধনা দিয়ে সম্মানিত করেনি। জগদীশবাবুর সুহৃদ নন্দগোপাল সেনগুপ্ত ক্ষোভের সুরে লিখছেন : ‘মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারী বাংলা যাঁরা সাহিত্য ব্যাখ্যার নামে মোটা মোটা বর্ণনাত্মক গ্রন্থপঞ্জি লেখেন, সেই ‘বিদ্বজ্জন’ তাঁর লেখা কখনো পড়ে দেখেননি। সিনেমা রাজ্যের শিপ্রভুরা কোনোদিন তাঁর বইকে রূপ দেননি। উপেক্ষিত এবং প্রায়-অপরিচিত থেকেই বিদায় নিয়েছেন তিনি পৃথিবী থেকে।’

    তীব্র অভিমান ছিল স্ত্রী চারুবালা দেবীর মনেও। অন্তরঙ্গ স্মৃতিচারণায় চারুবালা বলছেন : “নিজে লিখতেন খুব মনোযোগ দিয়েই, রেখেও দিতেন যত্ন করিয়া, কিন্তু আর কেহ কিছু যত্ন লইতেন না। সবাই অশ্রদ্ধাই করিয়াছে। নিজে মনে মনে খু হইলেও মুখে কিছু বলিতেন না। চিরদিন লোকের কাছে অবহেলা-অশ্রদ্ধাই পেয়ে এসেছেন। কোনো কথা বলেন নাই। চুপচাপ নিজের কাজ করিয়া গিয়াছেন।’

    জগদীশ গুপ্ত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ পূর্বসূরি ছিলেন বলে সাহিত্যমহলে একটা কথা চালু আছে। মানিকবাবুর ডায়েরি বা চিঠিপত্রে অবশ্য এই প্রচলিত লোকশ্রুতির কোনো সকমর্থন নেই। কিন্তু জীবনযাপন তাঁরা কীভাবে করবেন, সাহিত্যের ভাবনা আর আঙ্গিক কোন পথে চালিত করবেন―এ-ব্যাপারে দুজনের আশ্চর্য কিছু মিল ছিল। মানিকবাবু ছাত্রদশাতেই ঠিক করে নিয়েছিলেন, সাহিত্যক্ষেত্রে বড় হবেন। দাদাকে লেখা চিঠিতে তিনি জোরের সঙ্গে জানাচ্ছেন―এই শপথ তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। এবং সে কাজ করতে গিয়ে অতিতরুণ বয়সে নিজের মন আর মননের ওপর এত বেশি চাপ দিয়ে ফেলেন যে, শরীর-স্বাস্থ্যের কথা মাথাতেই রাখেননি। নিজের স্বপ্নের জগতে ঢোকার জন্য অদ্ভুত এক জেদ, শরীরকে নিদারুণ অবহেলা―সারাজীবন মানিকবাবু এভাবেই কাটিয়ে গেলেন! জগদীশ গুপ্তের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অনেকখানি তাই। বাবা ছিলেন কুষ্টিয়ার পসারওয়ালা আইনজীবী, আদালতে ভালো প্র্যাকটিস, লোকজন মান্যগণ্য করে। তিনি চেয়েছিলেন জগদীশ তাঁর পেশাতেই আসুক। জগদীশবাবু কিন্তু মোকদ্দমা, মক্কেল, মামলা আর দলিল-দস্তাবেজের এই পেশা প্রথম থেকেই পছন্দ করেননি। তিনি বেছে নিলেন আদালত চত্বরে টাইপিস্টের চাকরি, সরকার যেমন যেমন কাজ দেবে, তেমন তেমন তাকে টাইপ করে দিতে হবে। এই কাজে যে সম্মানহানির আশঙ্কা আছে, তাচ্ছিল্য দেখাতে পারে আশপাশের লোকজন বা আত্মীয়স্বজন―তা নিয়ে কোনোদিন তাকে বিড়ম্বিত হতে দেখা যায়নি। স্বাধীন পেশাকেই সম্মানজনক মনে করেছেন, সেই বৃত্তির সুবাদে বহু মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন, তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণশক্তিতে তাদের জীবনযাপন, জটিলতা, দুঃখ-সুখ, মনের গভীরে প্রবৃত্তির সর্পিল ওঠাপড়া লক্ষ করেছেন―আর এসব অভিজ্ঞতার রসায়নে তাঁর লেখায় উঠে এসেছে এমনসব অভাবনীয় চরিত্র, বাংলা সাহিত্যে আগে কখনো যাদের দেখা যায়নি। নিজের উপলব্ধি আর সিদ্ধান্তের প্রতি এরকম অবিচল নিষ্ঠা, মনোরঞ্জনের তরল স্রোতকে সন্তর্পণে ডিঙিয়ে যাওয়ার ঋজুতা লেখক হিসেবে জগদীশ গুপ্তকে এত আলাদা করে দিয়েছে যে, জীবদ্দশায় এমনকি মৃত্যুর পরেও দশকের পর দশক ধরে মুষ্টিমেয় পাঠক ছাড়া তাঁর লেখা কেউ সেভাবে পড়লই না।

    এমন হয়েছে, মানুষকে বোঝার জন্য হয়তো বহুক্ষণ রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে রইলেন জগদীশবাবু। কুলি-কামিনদের ঝগড়া দেখছেন, কলকাতায় মেয়েদের ঝগড়া দেখেছেন ঠায় দাঁড়িয়ে। সঙ্গে স্ত্রী রয়েছেন, ওর হুঁশ নেই। হঠাৎ কখনো গ্রামে চলে গেলেন। মনের মতো মানুষ পেলে তার সঙ্গে জমিয়ে বসে গল্প। স্বভাবে চাপা অন্তর্মুখী হলেও মজলিশি আড্ডায় জমে যেতে বেশিক্ষণ লাগত না। বেশ ভালো বাজাতেন হারমোনিয়াম, বাঁশি, এস্রাজ আর বেহালা। আর এই চারটি যন্ত্রের সৌজন্যেই জমজমাট হয়ে উঠত আড্ডা। কুষ্টিয়ায় যখন থাকতেন, প্রতিবেশী নন্দলাল সরকারের বাড়িতে চলে যেতেন আড্ডার লোভে। সঙ্গে দেদার চলত চা আর সিগারেট। কর্মসূত্রে সম্বলপুর বা বোলপুরে যখন ছিলেন সেখানেও অনেক বন্ধু, বাড়িতে মাঝে মাঝে তাঁদের খেতে বলতেন। কিন্তু তেমন কেউ জানতেও পারত না, শীর্ণকায় এ মানুষটি শহরের বড় পত্রিকায় লেখেন। হঠাৎ যখন কোর্টের মধ্যে তাঁর নামে মানি অর্ডার আসত, লোকে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করত―ও টাকা কীসের? বিড়ম্বিত জগদীশবাবু মৃদুস্বরে জবাব দিতেন, গল্পটল্প লিখি তো। তাই ভারতবর্ষ টাকা দিয়েছে।

    আজ এতকাল পরেও ঠিক বোঝা যায় না, জগদীশ গুপ্তের মতো একজন অন্তর্মুখী নির্লিপ্ত লেখকের গ্রন্থ-সমালোচনায় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ অমন কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিলেন কেন। পরিচয় পত্রিকার প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যায় জগদীশবাবুর লঘুগুরু উপন্যাস নিয়ে রবীন্দ্রনাথের এক দীর্ঘ গ্রন্থ-সমালোচনা বেরোয়। সেকালে তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে রবীন্দ্রযুগকে অগ্রাহ্য করার যে রকম একটা হিড়িক এসেছিল, হতে পারে লঘুগুরুর সমালোচনা তারই এক অনিবার্য প্রতিক্রিয়া। জনে-জনে সবাইকে তো পাকড়াও করা যায় না। রিয়ালিজমের নাম দিয়ে শৌখিন আধুনিকতাকে মুখের মতো জবাব দিতে তাই হয়তো কবিগুরু ‘বেচারা’ জগদীশ গুপ্তকেই বেছে নিয়েছিলেন। নিজের স্বভাবসিদ্ধ উদারতায় বলে নিতে ভোলেননি : ‘এ-কথা মানতে হবে রচনা―নৈপুণ্য লেখকের আছে।’ তারপরেই লেখেন : ‘আধুনিক একদল লেখক পণ করেছেন তারা পুরাতনের অনুবৃত্তি করবেন না। কোনোকালেই অনুবৃত্তি করাটা ভালো নয় একথা মানতেই হবে। মানুষের এমনসব প্রবৃত্তি আছে যার উত্তেজনার জন্য গুণপনার দরকার করে না। অত্যন্ত সহজ বলেই মানুষ সেগুলোকে নানা শিক্ষা অভ্যাসে লজ্জায় সংকোচে সরিয়ে রেখে দিতে চায়, নইলে এরা জীবনকে জঙ্গল করে তোলে। আমার বলবার কথা এই যে, সেসকল তাড়িখানায় সাহিত্যকে সস্তা করে তোলে রিয়ালিজমের দোহাই দিয়ে তার ব্যবসা চালানো কল্পনার দুর্বলতা ঘটাবে।’

    এর কিছুটা পরে জগদীশবাবুকে খানিকটা যেন রেহাই দিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন : ‘রিয়ালিজম নিয়ে যে-কথাটা উঠে পড়ল তার সমস্তটা লঘুগুরু বইটি সম্বন্ধে খাটে না।’ কিন্তু তারপরেই এমন এক মন্তব্য তিনি করে বসেন, যে-মন্তব্যের কুটিল ভ্রুকুটি সমালোচিত লেখকের সাহিত্যিক সত্তাকেই যেন গোড়া ধরে টান দিতে চায়। রীবন্দ্রনাথ বলছেন, ‘গল্পের চেহারাটি নিঃসন্দিগ্ধ সত্যের মতো দেখাচ্ছে না এইটেতেই আমার আপত্তি।’

    সত্য তাহলে কী? কতখানি তার চৌহদ্দি? সে কি তাহলে এটুকু, সমাজের শিক্ষিত অভিজাত শ্রেণি, যাকে সত্য বলে গ্রহণ করেছে? তাঁর চেনা মানুষদের বাইরের কোনো সমাজ বা জনগোষ্ঠীকে দেখলে রবীন্দ্রনাথ যে রুষ্ট হয়ে উঠতেন তা তো বারবার দেখা গেছে। তাঁর মানদণ্ড কোনোদিন উচ্চারিত হয়নি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। সমালোচনার নামে নরেশ সেনগুপ্তকে এমন বকাবকি করলেন যে, হতাশ নরেশবাবু লেখাই প্রায় ছেড়ে দিলেন। রবীন্দ্রনাথের এ ধরনের অভিভাবকত্ব কিন্তু গ্রাহ্যের মধ্যেই আনেনি জেদি আত্মবিশ্বাসী জগদীশ গুপ্ত রবীন্দ্রনাথের দেখা মানুষের বাইরেও যে মানুষ আছে, তাদেরও সমাজ আছে, লড়াই আছে, প্রবৃত্তির দাঁত-নখ আছে―এ-কথা গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ভুরু কুঁচকেছেন বলে নরেশ সেনগুপ্ত লেখা ছেড়ে দেবেন―চিঠি লিখে এই সিদ্ধান্তে প্রবল আপত্তি জানিয়েছিলেন জগদীশবাবু। কিছুদিন পরে রবীন্দ্রনাথের সমালোচনার ‘মুখের মতো’ জবাব দিতে কলম ধরলেন নিজেই। লিখলেন : লোকালয়ের যে-চৌহদ্দির মধ্যে এতকাল আমাকে কাটাইতে হইয়াছে, সেখানে ‘স্বভাবসিদ্ধ ইতর’ এবং ‘কোমর বাঁধা’ শয়তান নিশ্চয়ই আছে, এবং বোলপুরের টাউন প্ল্যানিংয়ূের দোষে যাতায়াতের সময় উঁকি মারিতে হয় নাই, আপনি চোখে পড়িয়াছে। তথাপি আমার আপত্তি এই যে, পুস্তকের পরিচয় দিতে বসিয়া লেখকের জীবনকথা না তুলিলেই ভালো হইত, কারণ উহা সমালোচকের অবশ্য দায়িত্বের বাইরে এবং তাহার সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণও ছিল না।

    রবীন্দ্রনাথের সেই গ্রন্থ-সমালোচনার পরও চাকরির সুবাদে বেশ কয়েক বছর জগদীশবাবু বোলপুরেই ছিলেন; কিন্তু রবীন্দ্রনাথের প্রীতি বা অনুগ্রহলাভের জন্য বিশ্বভারতী চত্বরে তাঁকে কখনো ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়নি। নিজের লেখকসত্তার প্রতি গভীরভাবে আস্থাশীল এই ব্যতিক্রমী সাহিত্যিক নিজের মতো করেই লেখালেখি চালিয়ে গিয়েছিলেন জনপ্রিয়তার তোয়াক্কা না করে। ১৯৫৭ সালের ১৪ এপ্রিল রামগড়ের বাড়িতে যখন মারা যান, তাঁকে সম্মান জানাতে কোথাও কোনো শোকসভা বা স্মরণসভা হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে না। তবে শনিবারের চিঠিতে তাঁকে নিয়ে একটি মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। কোনো কোনো গবেষকের অনুমান, সেই প্রতিবেদনের লেখক, পত্রিকা-সম্পাদক সজনীকান্ত দাস স্বয়ং।

    প্রতিবেদক লিখছেন : “তাঁহার মনেরা অন্তরালে যে জটিল গ্রন্থি ছিল তাহা তাঁহাকে সাহিত্য-সরণি হইতে বহুবার বিপথে লইয়া গিয়েছে। তবু নতমস্তকে স্বীকার করিব, কথাসাহিত্যে তিনি ওস্তাদশিল্পী, জোরালো তাঁহার ভাষা, নিপুণ তাঁহার মানব চরিত্র―চিত্রণ। তাঁহার নিষ্ঠুরতা ও কাঠিন্যের মধ্যেও বেদনার ফল্গুপ্রবাহ বহিয়াছে। তাই তিনি বাঁচিয়া থাকিবেন। হ্যাঁ, বেঁচেই রইলেন জগদীশ গুপ্ত আমাদের সকলের কাছে আরো এক প্রস্থ অভিনিবেশের দাবি পেশ করে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপোকা-মাকড় – জগদানন্দ রায়
    Next Article অব্যক্ত – জগদীশচন্দ্র বসু
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }