Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অহিংসা – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    উপন্যাস মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এক পাতা গল্প288 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১৬. দেখলে বাবা তোমার দেবতার কীর্তি

    রাগে পৃথিবী অন্ধকার দেখিতে দেখিতে বিভূতি বলিল, দেখলে বাবা তোমার দেবতার কীর্তি?

    মহেশ বলিল, ওর অধঃপতন হয়েছে।

    বিভূতি নাক সিঁটকাইয়া বলিল, ও আবার ওপরে উঠল কবে যে পতন হবে? ও লোটা চিরকাল ভেতরে ভেতরে এমনি বজ্জাত। সাধে কি ওকে ঘুসি মেরেছিলাম।

    ছেলের সে অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করিতে মহেশকে হাতুড়ি দিয়া নিজেকে আঘাত করিতে হইয়াছিল, ব্যাপারটা সহজে ভুলিবার নয়। মহেশ জিজ্ঞাসা করিল,–ঘুসি মেরে লাভ কি হয়েছিল?

    তোমার জন্যে–

    আমার কথা বাদ দিয়ে বল। আমি কিছু না করলেও তোর লাভটা কি হত? চারিদিকে বিচ্ছিরি একটা কেলেঙ্কারি বেধে যেত, গায়ের লোক আমাদের মারতে আসত, নিজে রাগের যন্ত্রণায় ছটফট করতিস–।

    মহেশের যুক্তিতর্ক কোনোদিনই ভালো করিয়া বিভূতির মাথায় ঢেকে না, তার মনে হয় ছেলেবেলা হইতেই সে যা বলে আর ভাবে, মহেশ ঠিক তার উল্টা কথাটা বলিয়া আসিতেছে। রক্তটা বিভূতির একটু গরম, ন্যায়-অন্যায়ের বিচারবোধ আর কর্তব্যপ্রবণতা বাপের জীবন্ত দেবতার নাকে ঘুসি মারানোর মতো উদ্ধত, মানুষের চাপে পৃথিবীতে মানুষ কষ্ট পায় বলিয়া তার আফসোসের সীমা নাই। আর আদর্শগুলি এমন যে, কাজে কিছু করার সুযোগ না পাইলেও, কেবল একটা দলে কয়েকমাস মেলামেশা করার জন্যই পুলিশ তাকে কয়েকটা বছর আটকাইয়া। রাখিয়াছিল। মনটা যে বিভূতির একটু নরম হইয়াছে, সংসারের অন্যায়গুলির সঙ্গে রক্ষা করিয়াই বাঁচিয়া থাকিতে সে যে প্রস্তুত হইয়াছে, মাধবীলতাকে বিবাহ করিয়া সংসারী হওয়াটাই তার প্রমাণ। তবুও, মানুষের মন মানে না, কাজে না পারিলে তর্কে নিজেকে জাহির করে।

    তুমি বুঝি ভাব, তোমার জন্যে চুপ করে গিয়েছিলাম বলেই আমার রাগ কমে গিয়েছিল?

    ক্ষমা চাওয়ার জন্যে তো কমেছিল।

    তুমি আমাকে দিয়ে জোর করে ক্ষমা চাওয়ালে, তাতে কখনো রাগ কমে?

    কমে বৈকি, ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক, ক্ষমা চাইলেই মানুষের রাগ কমে যায়। তখন কি মনে হয় জানিস, মনে হয় এবারকার মতো চুলোয় যাক, আবার যদি লোকটা কিছু করে তো দফা নিকেশ করে দেব। আমি জোর করে ক্ষমা চাওয়ালে কি হবে, নিজের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা তো তোকে সত্যি সত্যি চাইতে হয়েছিল। ক্ষমা চাওয়ার পর আগের মতো জোরালো রাগ পুষে রাখতে মানুষের বড় বিরক্তি বোধ হয়।

    বিভূতি বিশ্বাস করিল না। আগের বারের চেয়েও এবার তার বেশি রাগ হইয়াছিল। তার চলাফেরার দিকে পুলিশ একটু নজর রাখিবে, মাঝে মাঝে বাড়িঘর খানাতল্লাশ করিবে, এ সব। বিভূতির কাছে খাপছাড়া ব্যাপার নয়। এতকাল আটক রাখার পর তাকে পুলিশ একেবারে জন্মের মতো ত্যাগ করিবে, বিভূতি নিজেও তা বিশ্বাস করে না। ছাড়া পাওয়ার পর সব সময়েই তার মনে একটা আশঙ্কা জাগিয়া আছে, কখন আবার ডাক আসে। এমনিই পুলিশ যাকে বাগে পাওয়ার জন্য ওত পাতিয়া আছে, তার নামে মিথ্যা করিয়া পুলিশের কাছে লাগানো! বিভূতির মনে ভয় ছিল, সকলের মনেই এ অবস্থায় থাকে, রাগের জ্বালায় তাই তার মনে হইতে লাগিল, ভেঁাতা একটা দা দিয়া সদানন্দের গায়ের মাংস কাটিয়া নেয়।

    এই অসম্ভব কাজটার বদলে একবার আশ্রমে সদানন্দকে একটু ধমক দিয়া আসিবে কিনা ভাবিতে ভাবিতে বিভৃতি অন্যমনস্ক হইয়া থাকে।

    রাতে মাধবীলতা জিজ্ঞাসা করে, কি ভাবছ?

    বিভূতি বলে, না। কিছু ভাবছি না।

    মাধবীলতা গভীর আদরের সঙ্গে তাকে জড়াইয়া ধরিয়া চুম্বন করিয়া বলে, বল না, কি ভাবছ?

    দিনের বেলা মেলামেশা চলে, কিন্তু দিনের বেলা ভালবাসার খেলা মাধবীলতার পছন্দ হয় না। মাঝে মাঝে স্বামীর পাওনাগণ্ডার বিষয়টা খেয়াল না থাকিলেও এমনও হয় যে, ফাঁকলে একটু সোহাগ করিতে আসিয়া দুহাতের জোরালো ঠেলায় বিভূতি চমকিয়া যায়। তখন অবশ্য মাধবীলতার খেয়াল হয়, মৃদু তিরস্কারের সুরে সে বলে, কি যে কর তুমি চাদ্দিকে লোক রয়েছে না? ওমা, দরজা বন্ধ করে দিয়েছ! বেশ লোক তো তুমি? তবু, দিনে রাত্রে সব সময় মাধবীলতাকে নিয়া ঘরের দরজা বন্ধ করিবার অধিকার জন্মানোর অল্পদিনের মধ্যেই বিভূতি টের পাইয়া গিয়াছে, দিনের বেলা মিলনের আনন্দ ভোগ করার ক্ষমতাটা মাধবীর যেন ভেঁাতা হইয়া যায়। ব্যাপারটা তার বড়ই দুর্বোধ্য মনে হয়, কারণ, রাত্রে মাধবীর তীক্ষ্ণতায় তাকেও মাঝে মাঝে বিব্রত হইতে হয়, ঘুম পর্যন্ত যেন মাধবীর চলিয়া যায়, বিভূতির ঘুম আসিলেও তাকে সে ঘুমাইতে দেয় না, প্ৰাণের চেয়ে যে প্রিয়তর, তাকে পর্যন্ত ভালবাসিতে ভালবাসিতে শ্ৰান্ত হইয়া বিভূতি ঝিমাইয়া পড়িবে, মাধবীলতা অক্লান্ত চেষ্টায় যেভাবে আবার তাকে বাঁচাইয়া তোলে, মানুষের বাস্তব জীবনে যে সে ধরনের অনুরূপ কাব্যের স্থান আছে, বিভূতি কোনোদিন কল্পনাও করিতে পারে নাই।

    বিভূতি বলে, পুলিশের কথা ভাবছিলাম। আবার যদি আমায় ধরে নিয়ে যায়?

    এক নিমেষে মাধবীলতা বদলাইয়া যায়, রুদ্ধশ্বাসে বলে, মাগো, পুলিশ দেখে আমার যা হচ্ছিল!

    পুলিশ চলিয়া যাওয়ার পর আরো তিন-চার বার এমনিভাবে সে প্রায় এই কথাগুলি বলিয়াছে। হঠাৎ একবার বিভূতির মনে হয়, সব কি মাধবীলতার ন্যাকামি, বাড়াবাড়ি, হিষ্টিরিয়া? কিন্তু এই টাইপের খাঁটি ন্যাকামি আর বাড়াবাড়ি আর হিস্টিরিয়া ঠিক কি রকম, সে বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় সন্দেহের চোখে মাধবীলতার ভীত চোখ দুটি দেখিতে গিয়া সে মুগ্ধ হইয়া যায়। কত জন্ম তপস্যা করিয়া সে এমন বৌ পাইয়াছে, কত ভাগ্য তার!

    তখন মাধবীলতার ভয় দূর করার জন্য তাকে ভিতরের সব কথা খুলিয়া জানাইয়া দেয়। আশ্বাস দিয়া বলে যে, সমস্তটাই সাধু সদানন্দের কারসাজি, সদানন্দ পিছনে না লাগিলে পুলিশ আর তাকে জ্বালাতন করিতে আসিত না। ভয় নাই, মাধবীলতার কোনো ভয় নাই, পুলিশ আর বিভূতিকে ধরিবে না, বৌকে এমনিভাবে বুকে করিয়া, বিভূতি জীবন কাটাইয়া দিবে।

    শুনিয়া, ভয়ে না যত হইয়াছিল মাধবীলতার চোখ তার চেয়ে বেশি রকম বিস্ফারিত হইয়া গেল।

    উনি! উনি এমন কাজ করলেন।

    কেন, ও কি এমন কাজ করতে পারে না?

    মাধবীলতা সায় দিয়া বলিল, পারে, ও লোকটা সব পারে। ওর অসাধ্য কাজ নেই। ওর মতো ভয়ানক মানুষ–

    মাধবীলতার ক্ষোভ-দুঃখের বাড়াবাড়ি দেখিয়া আবার বিভূতির মনে হইল সে যেন বাড়াবাড়ি করিতেছে। ভালবাসিতে আজ যেন মাধবীলতার ভালো লাগিল না, ঘুরাইয়া ফিরাইয়া বার বার সে ওই কথাই আলোচনা করিতে লাগিল। প্রথমটা কয়েক মুহূর্তের জন্য বাড়াবাড়ি মনে হইলেও তার বিচলিত ভাব দেখিয়া বিভূতি আবার মুগ্ধ হইয়া গেল। কি ভালোই মাধবীলতা তাকে বাসে!

     

    বিভূতির এই কৃতজ্ঞতাই মাধবীলতাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করিয়াছিল। বড় সহজে বিভূতির মন ভুলানো যায়? একটু আদর যত্ন করা, রূপের সামান্য একটু বিশেষ ভঙ্গি দেখানো, বিভূতির। কাছে এ সমস্ত যে কত দামি বুঝিতে পারিয়া মাধবীলতা নিজেই অবাক হইয়া যায়। কত সহজে কত গভীর আনন্দ সৃষ্টি ও উপভোগ করা যায়, মাঝে মাঝে খেয়াল করিয়া নিজের অফুরন্ত মন। কেমন করার অভিশাপ তার যেন অসহ্য ঠেকে। ভয়ানক কিছু, বীভৎস কিছু প্রচণ্ড কিছুর জন্য কামনা যে স্বরানুভূতির মতো মৃদু অথচ মানসিক রোগের মতো একটানা হইতে পারে, মাধবীলতার তা জানিবার বা বুঝিবার কথা নয়, ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়ার তরঙ্গে উঠিতে নামিতে তার প্রাণান্ত হইতে থাকে বলিয়া, জীবনের প্রত্যেকটি সহজ সুখ ও আনন্দের জন্য বিভূতিকে মনে মনে সে প্রায় পূজা করে। বিচলিত ভাবটা যতক্ষণ না কমে ততক্ষণ অবশ্য বিভূতিকে বড় করার কথাটা তার খেয়ালও হয় না এবং বিচলিত ভাবটা কমিতে কমিতে মাঝরাত্রি প্রায় কাবার হইয়া যায়। তখন হঠাৎ মনে পড়িয়া যাওয়ায় আফসোসের তার সীমা থাকে না। বিভূতির কপালে হাতের তালু ঘষিয়া দিতে দিতে সে ব্যগ্ৰকণ্ঠে বলে, না, না, তুমি ভেব না, ও তোমার কিছু করতে পারবে না।

    এতক্ষণ পরে নিজের দেওয়া আশ্বাস ফিরাইয়া পাইয়া গভীর ঘুমের আক্রমণ আর বিভূতিকে কাবু করিতে পারে না, মাধবীলতার গোলামি করার একটা রোমাঞ্চকর সাধ বরং তাকে ছোট ছেলের মতো লজ্জার হাসি হাসাইয়া দেয়।

    তার মাথাটা সজোরে বুকে চাপিয়া ধরিয়া মাধবীলতা বলে,  তোমার কিছু হলে আমি মরে যাব।

    বিভূতি চুপ করিয়া পড়িয়া থাকে।

    লণ্ঠনের বাদামি আশোয় মশারির ভিতরে ও বাহিরে গভীর রাত্রি রূপ নিয়াছে, লণ্ঠনের কয়েকটা জিনিস ছাড়া মশারির জন্য বাহিরের আর কিছু ভালো দেখা যায় না, রঙিন কুয়াশায় যেন। একটু ঝাপসা হইয়া গিয়াছে। স্টোভের পাশেই স্পিরিটের বোতলটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকাইয়া থাকিতে থাকিতে আবেগের ভাঙনপ্রবণতার জন্য মাধবীলতার চোখে যেন জল আসিয়া পড়ে। এমন কোমল কেন বিভূতি, এত বেশি ভাবপ্রবণ আর মমতাময়? এত অল্পে সে সন্তুষ্ট কেন, এত কম সে। চায় কেন, এত কম সে নেয় কেন, কেন সে এত ব্যগ্ৰ শুধু দেওয়ার জন্য? জেল আর ফাঁসির ভয় তুচ্ছ করিয়া সে বুক-কাঁপানো কাজে জীবন উৎসর্গ করিয়াছিল, অনায়াসে সে সদানন্দের নাকে ঘুসি মারিতে পারে, সে যেন মাটির পুতুল, মায়ের কোলের শিশু।

    তা হোক। তাই ভালো।

    আরো জোরে বিস্তৃতির মাথাটা বুকে চাপিয়া ধরিয়া গায়ের জোরেই যেন মাধবীলতা স্পিরিটের বোতলটার দিক হইতে দৃষ্টি সরাইয়া আনে।

    ঘুমোবে না?

    তোমার ঘুম পেয়েছে?

    হাতের চাপ একটু আলগা করিয়া মাধবীলতা মৃদু হাসে, আমার ঘুম দিয়ে কি করবে, আমি তো দিনে ঘুমোই। তোমার ঘুম পেয়েছে কিনা তাই বল।

     

    পরদিন দুপুরে ঘুমানোর বদলে মাধবীলতা শশধরের বৌকে সঙ্গে করিয়া সদানন্দের আশ্রমের উদ্দেশে বাহির হইয়া গেল। গেল প্রতিবেশী মনোেহর দত্তের গরুর গাড়িতে। আশ্ৰমে যাইবে শুনিয়া মনোহর দত্তের বুড়ো মা, বয়স তার প্রায় সত্তরের কাছে গিয়াছে, তাড়াতাড়ি নামাবলী গায়ে জড়াইয়া তাদের সঙ্গ নিল।

    মনোহর দত্তের বৌ দেড় মাসের ছেলে কোলে করিয়া আফসোস করিয়া বলিল, আমিও যেতাম বাছা তোমাদের সঙ্গে, কিন্তু আমার কপালে কি আর ধম্মোকমো আছে।

    আগে মাধবীলতা শশধরের বৌকে কিছু বলে নাই, বাহির হওয়ার একটু আগে কেবল খবরটা দিয়াছিল। শশধরের বৌ তো শুনিয়া অবাক।

    আশ্রমে যাবে? সাধুবাবাকে তুমি এত ভক্তি কর তা তো জানতাম না ভাই!

    ভক্তি না তোমার মাথা। যাচ্ছি তার মুণ্ডপাত করতে। আমাদের বাড়িতে পুলিশ লেলিয়ে দেয়, এমন আস্পদ্ধা!

    শশধরের বৌ থতমত খাইয়া গিয়াছিল, একটু ভয়ও পাইয়াছিল। বলিয়াছিল, বাড়িতে ওঁরা জানতে পারলে কিন্তু বড্ড রাগ করবেন।

    বাবাকে বলে এসেছি।

    চুপিচুপি কারো কাছে কিছু না বলিয়া যাইবে অথবা মহেশ চৌধুরীর অনুমতি নিয়া যাইবে, সমস্ত সকালটা মাধবীলতা আজ এই সমস্যার মীমাংসা করিয়াছে। মহেশ চৌধুরী তাকে সদানন্দের আশ্ৰমে যাইতে দিতে রাজি হইবে কিনা এ বিষয়ে মাধবীলতার মনে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। শেষ পর্যন্ত কিন্তু বলিয়া যাওয়াই ভালো মনে করিয়া অনুমতি চাহিতে গিয়া তার বিস্ময়ের সীমা থাকে নাই।

    মহেশ চৌধুরী সঙ্গে সঙ্গে রাজি হইয়া বলিয়াছিল, আশ্রমে ওদের সঙ্গে দেখা করতে যাবে মা? বেশ তো। তারপর হাসিয়া বলিয়াছিল, পুরোনো সাথীদের দেখতে সাধ হচ্ছে?

    মহেশ চৌধুরীই যে সদানন্দকে তাড়াইয়া দিয়াছে, সদানন্দকে ভক্তি করার বদলে সে যে এখন তার অধঃপতনের জন্য আফসোস করে, এ সব মাধবীলতার অজানা নয়। একটা প্রশ্ন পর্যন্ত জিজ্ঞাসা না করিয়া হাসিমুখে তাকে সদানন্দের আশ্ৰমে যাইতে অনুমতি দেওয়া মহেশ চৌধুরীর মতো মানুষের পক্ষেও সম্ভব মাধবীলতা ভাবিতে পারে নাই। সদানন্দের অধঃপতনে বিশ্বাস হইয়াছে, কিন্তু তাকে যে সদানন্দ সত্যই অপমান করিয়াছিল, মহেশের মনে কি এ বিষয়ে একটু খুঁতখুঁতানিও জাগে নাই? যে কাণ্ডের ফলে নিজেকে তার হাতুড়ি দিয়া আঘাত করিতে হইয়াছিল?

    দুপুরবেলা আশ্রমে যে যার ঘরে বিশ্রাম করিতেছিল, উমা ছিল রত্নাবলীর ঘরে। শশধরের বৌ আর মনোহর দত্তের মাকে সঙ্গে করিয়া মাধবীলতা প্রথমে সে ঘরে গেল, তারপর সঙ্গী দুজনকে সেখানে বসাইয়া রাখিয়া একা দেখা করিতে গেল সদানন্দের সঙ্গে।

    রত্নাবলী বলিল, একটু বোস্না ভাই, দুদণ্ড গল্প করি। সেদিন তো কথা বলারই সময় পেলাম না।

    সদানন্দের নির্দেশে উমার সঙ্গে মাধবীলতাকে নিমন্ত্ৰণ করিতে গিয়া রত্নাবলী একাই প্রায় তিনঘণ্টা মাধবীলতার সঙ্গে গল্প করিয়াছিল। কিন্তু যে রকম রোমাঞ্চকরভাবে মাধবীলতার বিবাহ হইয়াছে, তাতে দু-চার ঘণ্টার গল্পে কি মনের কথা সব বলা হয়?

    মাধবীলতা বলিল, না ভাই, চট করে আগে দেখাটা করে আসি। সেদিন আসি নি বলে বড্ড চটে আছেন।

    তুই কি করে জানলি চটে আছেন?

    ওঁকে চিনি না আমি?

    সদানন্দের মহলে ঢুকিতে গিয়া আগে দেখা হইল বিপিনের সঙ্গে। বিপিন তাকে দেখিয়াই বলিল, কি সৰ্বনাশ, তুমি এখানে!

    ওঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।

    কেন?

    আমার দরকার আছে।

    কি দরকার?

    আছে।

    বিপিন খানিকক্ষণ স্তম্ভিত হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল, তারপর বলিল, সেদিন তোমাকে অত করে তোমাকে অত করে বুঝিয়ে বলে এলাম–

    মাধবীলতার নিজেরও বুকের মধ্যে অকথ্য রকমের ঢিপঢিপ করিতেছিল, তবু সে মুখে সাহস দেখাইয়া বলিল, আপনার ভয় নেই, উনি আমার কিছু করতে পারবেন না। আপনার যত সব উদ্ভট ধারণা–উনি সে রকম মানুষ নন।

    ইতিমধ্যে বিপিন একটু আত্মসংবরণ করিয়াছিল, সে গম্ভীরমুখে বলিল, আমার যেমন ধারণাই থাক, ওঁর সঙ্গে তোমার দেখা হবে না। চল, তোমাকে বাইরে রেখে আসি।

    কেন?

    কেন আবার কি? আমার আশ্রমে যদি তোমায় ঢুকতে না দিই, তুমি কি গায়ের জোরে ঢুকবে?

    কথা হইতেছিল সদানন্দের ঘরের সামনে বারান্দায় দাঁড়াইয়া। মাধবীলতার গলা শুনিয়া সদানন্দ আগেই দরজার কাছে উঠিয়া আসিয়া দুজনের কথা শুনিতেছিল, এবার ডাকিয়া বলিল, এস মাধু, ভেতরে এস। বিপিন তুমি একটু বাইরের দরজার কাছে বসবে যাও তো, কেউ এসে আমাদের বিরক্ত না করে।

    আগাইয়া আসিয়া বিপিনের চোখের সামনে মাধবীলতার হাত ধরিয়া টানিতে টানিতে সদানন্দ তাকে ঘরের মধ্যে নিয়া গেল, বিপিনের মুখের উপর বন্ধ করিয়া দিল দরজা।

    মাধবীলতার আর্তকণ্ঠের চিৎকার শোনা গেল, বিপিনবাবু! ও বিপিনবাবু! তারপর স্পষ্টই বুঝা গেল সদানন্দ তার মুখে হাত চাপা দিয়াছে।

    দরজার কাছে সরিয়া গিয়া বিপিন চাপা গলায় বলিল, সদা, তুই কি আমাদের সকলকে না ড়ুবিয়ে ছাড়বি না? দরজা খুলে দে–ওকে ছেড়ে দে।

    সদানন্দ ভিতর হইতে বলিল, কেন ভাবছিস্ তুই? কিচ্ছু হবে না, তার কোনো ভাবনা নেই। যদি হয়, তার বোকামির জন্যে হবে।

    তোর পায়ে পড়ি সদা–

    পায়ে পড়ি আর যাই করিস্ কিছু লাভ হবে না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গাধার মতো কেন সময় নষ্ট করছি, একজন কেউ এসে পড়লে ভালো হবে? এই সোজা কথাটা তুই বুঝতে পারছি না। নচ্ছার, মাধু একা ফিরে গেলে ও কারো কাছে কিছু বলবে না। কিন্তু অন্য কেউ জানতে পারলে, না বলে মাধুর উপায় থাকবে না।

    বিপিন জানিত মানুষটা সদানন্দ ভয়ানক, কিন্তু এতটা সেও ভাবিতে পারে নাই। এর চেয়ে ঢের বেশি অমানুষিক কাণ্ড সর্বদাই সংসারে ঘটে, কিন্তু নিজের সামনে না ঘটা পর্যন্ত নিজের জানাশোনা মানুষের সম্বন্ধে কে তা সম্ভব ভাবিতে পারে। বিপিন দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া মাথা চুলকাইতে লাগিল। সদানন্দ যা বলিতেছে তাই করাই হয় তো ভালো, তা ছাড়া আর কি উপায় আছে!

    ভিতর হইতে সদানন্দ বলিল, বিপিন, গেলি?

    বিপিন বলিল, যাচ্ছি।

    ধীরে ধীরে বিপিন সদরের দরজার দিকে আগাইয়া যায়, মাথার মধ্যে তার যেন সব গোলমাল হইয়া যাইতে থাকে। দরজা বন্ধ না করিয়া খোলা দরজার সামনেই সে বসিয়া থাকে। মাথার মধ্যে তার যত গোলই পাকাইয়া যাক, এ বুদ্ধিটা তার থাকে যে, দরজা বন্ধ করার চেয়ে দরজা খুলিয়া রাখিয়া নিজে বসিয়া সকলের পথ আটকানো ভালো।

    আশ্রমের একজন সামনে দিয়া যাওয়ার সময় জিজ্ঞাসা করে, এখানে বসে আছেন?

    এমনি। উনি একজনকে বিশেষ উপদেশ দিচ্ছেন আমারও একটু দরকার আছে উনার সঙ্গে।

    বেলা পড়িয়া আসে, সামনে দিয়া আশ্রমের শিষ্য-শিষ্যার যাতায়াত বাড়িয়া যায়। কেউ কেউ বিপিনকে এখানে এভাবে বসিয়া থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করে, কেউ দুদণ্ড দাঁড়াইয়া বাজে কথা বলিয়া যায়। চালার নিচে নিত্যকার সভার জন্য গ্রামবাসী নরনারী একে একে আসিয়া জমা হইতে থাকে। তৃষ্ণায় বিপিনের বুক ফাটিয়া যাওয়ার উপক্রম হয় কিন্তু উঠিয়া গিয়া এক গ্লাস জল যে খাইয়া আসিবে, সে সাহসও হয় না, কাউকে এক গ্লাস জল আনিয়া দিতে বলিতেও ভরসা পায় না।

    শেষ বেলায় চালার নিচে সকলে সমবেত হইয়া অধীর আগ্রহে যখন সদানন্দের প্রতীক্ষা করিতেছে, উমা আর রত্নাবলী শশধরের বৌকে সঙ্গে করিয়া মাধবীলতার খবর নিতে আসিল।

    বিপিন পাংশুমুখে বলিল, উনি মাধুর সঙ্গে কথা বলছেন।

    এখনো কথা বলছেন!–রত্নাবলী বলিল।

    বিপিন হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলিল, মাধুকে উনি একটু বেশি পছন্দ করেন। তাছাড়া, অনেকবার আমায় বলেছিলেন, বিবাহিত জীবনের কর্তব্য সম্বন্ধে মাধুকে কিছু বলবেন। সে সব কথা বলছেন বোধহয়।

    রত্নাবলী বলিল, এতদিন এক বাড়িতে থেকে বললেন না, এখন–

    বিপিন বলিল, বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে উপদেশ দিলে কি হবে? উনি অ্যাদ্দিন ইচ্ছে করেই কিছু বলেন নি। আজ মাধু নিজে শুনতে চাইল—

    আমরাও একটু শুনে আসি বলিয়া রত্নাবলী ভিতরে ঢুকিতে যায়, বিপিন ব্যস্ত হইয়া বাধা দিয়া বলিল, না না, যেও না। উনি কাউকে যেতে নিষেধ করেছেন।

    কিন্তু রত্নাবলীকে আটকাইবার মতো গায়ের জোর বিপিনের ছিল না, তাকে ঠেলিয়া সরাইয়া দিয়া রত্নাবলী ভিতরে চলিয়া গেল।

    রত্নাবলী মনটা একটু সন্দিগ্ধ।

    সদানন্দের ঘরের সামনে রত্নাবলী একটু দাঁড়াইল। সন্দিগ্ধমনে সাহস থাকে না, থাকে কৌতূহল। দরজা বন্ধ না খোলা? ঠেলা দিলেই যদি খুলিয়া যায়? সদানন্দ দরজা খুলিয়া যদি জিজ্ঞাসা করে, কি চাই? বিপদ হিসাবে কোনোটাই কম নয়।

    সাহস যে মনে নাই, কৌতূহল দমন করার মতো মনের জোর সে মনে কোথায় পাইবে, দরজাটা ভেজানোই ছিল।

    সদানন্দ খাটে বসিয়া আছে, পা ঝুলাইয়া। দুপাশে হাতের তালু দিয়া খাটে চাপ দিবার ভঙ্গি দেখিয়া মনে হয় হাতের উপরেই শরীরের ভর দিয়া যেন সদানন্দ বসিয়াছে। মাধবীলতা বসিয়াছে। মেঝেতে তার ঝুলানো পায়ের কাছে–উর্ধ্বমুখী, উত্তেজিতা, শব্দময়ী মাধবীলতা। উপদেশ দেওয়ার কথা সদানন্দের, কিন্তু সে রীতিমতো অস্বস্তির সঙ্গে মাধবীলতার বক্তৃতা শুনিতেছে।

    সদানন্দের চোখে না পড়িলে রত্নাবলী হয়তো চোরের মতো পালাইয়া যাইত, সদানন্দ তাকে দেখিয়াই তৎক্ষণাৎ সাগ্রহে আহ্বান করিয়া বসায় সে সুযোগটা আর পাওয়া গেল না।

    এস রতন।

    মাধবীলতা মুখ নামাইয়া ভালো করিয়া গা ঢাকিয়া কুঁজো হইয়া বসিল। পায়ে পায়ে আগাইয়া আসিয়া রত্নাবলী তার কাছে বসিল, সন্তৰ্পণে। মনের মধ্যে তার ওলট-পালট চলিতেছিল। অবস্থাবিশেষে কত রকম সন্দেহই মনে জাগে।

    তুমি একা এসেছ রতন?

    আজ্ঞে হাঁ। ভাবলাম যে একবার–

    দেখে আসি ওরা কি করছে? সদানন্দ হাসিল। রত্নাবলীর বিব্রত ভাব দেখিয়া আবার বলিল, বন্ধুর জন্য ভাবনা হচ্ছিল, চাবুক মারছি না গায়ে ছাকা দিচ্ছি ভেবে পাচ্ছিলে না, কেমন? আশ্রম ত্যাগ করার জন্য আমি কাউকে শাস্তি দিই না রতন! যার গলায় খুশি মালা দিয়ে তুমিও যেদিন ইচ্ছা আশ্রম ছেড়ে চলে যে, আমি কিছু বলব না।

    সত্যমিথ্যায় জড়ানো কথা, না-চাওয়া কৈফিয়তের মতো। সদানন্দের ভাবটা যেন নতুন জামাইয়ের মতো, শালীর সঙ্গে ফাজলামি করিতেছে। রত্নাবলী কিছুই বুঝিতে পারে না, কারণ, বুঝিবার মতো কি যেন একটা জ্ঞান মনের অন্ধকার তলা হইতে উপরে উঠিতে উঠিতে চাকায় লাগা নোংরা কিছুর মতো পাক খাইয়া নিচে তলাইয়া যায়। সে চুপ করিয়া বসিয়া থাকে।

    সকলে চুপ করিয়া থাকিলে চলিবে কেন? মাধবীলতা তাই বলে, এবার থেকে মাঝে মাঝে আশ্রমে আসব ভাই। ওঁকে প্রণাম করে যাব।

    তারপর আবার তিনজনেই চুপ করিয়া থাকে, তবে বেশিক্ষণের জন্য নয়। একটু পরেই বিপিন আসিয়া গম্ভীরমুখে খবর দেয় যে, চালার নিচে বসিয়া বসিয়া অনেকে চলিয়া যাইতেছে, অনেকে অপেক্ষা করিতেছে। সদানন্দ যদি না যায়, বিপিন তাদের খবরটা দিতে পারে।

    চল যাচ্ছি। সদানন্দ যেন একটু ব্যস্ত হইয়াই চলিয়া গেল।

    তারপর দুজনে চুপচাপ বসিয়া থাকে। অনেকক্ষণ। শেষে মাধবীলতাই বলে, এখানে বসে থেকে কি হবে, চল আমরাও যাই।

    আশ্রমে থাকবে নাকি আজ?

    থাকবার কি উপায় আছে ভাই? তোমার ঘরে বসে নিরিবিলি দুদণ্ড কথা বলিগে চল।

    রত্নাবলীর মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন পাক খাইয়া বেড়াইতেছিল, সে খানিক খানিক জানে কিন্তু সব জানে না। সব তাকে জানানো হয় নাই বলিয়া অভিমানে প্রশ্নগুলি গলার কাছে আসিয়া আটকাইয়া যাইতেছিল। তবে জানার সাধটা জোরালো হইলে প্রায় সব মেয়েরাই খুখুক করিয়া একটু কাশির ধাক্কাতেই দারুণ অভিমানের বাধা ঠেলিয়া দিতে পারে। জিজ্ঞাসা তাই হয় আকস্মিক।

    হঠাৎ এলে যে?

    হঠাৎ এলাম? ও হঠাৎ কেন এলাম? এমনি এলাম আর কি।

    এমনি এলে না তোমার মাথা এলে। ছি, ধিক্ তোকে। ঘরে যদি মন না বসে, ঘরের বৌ সাজতে গেলি কেন? কে তোর পায়ে ধরে সেধেছিল?

    একজন সেধেছিল ভাই।

    ফাঁকি দেওয়া হাসি। হাসির ভঙ্গির সঙ্গে হাল্কা কথা রতনকে রাগে যেন অন্ধকার দেখাইয়া দেয়। আশ্রমের মানুষ-দেবতার পূজার জন্য কোন গ্রামের কে যেন কি উপলক্ষে এক বোঝ নৈবেদ্য পাঠাইয়াছিল, আশ্রমের সকলেই ভাগ পাইয়াছে। ক্রুদ্ধ চোখে চাহিতে চাহিতে রত্নাবলী বন্ধুর জন্য একটা পাথরের থালায় ফলমূল আর মিষ্টান্ন সাজাইতে থাকে। সন্দেহটা মনের মধ্যে ধীরে ধীরে বিশ্বাসে দাঁড়াইয়া যাইতেছে। মনের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ না জানিলেও মানুষের বড় বড় ভাব পরিবর্তনের মধ্যে মনের পরিবর্তন আবিষ্কার করা যায়। ভদ্ৰগৃহস্থের ছেলের সঙ্গে সামাজিক বিবাহের ফলে জীবনের সমস্ত তুচ্ছ খুঁটিনাটি যার কাছে এমন গুরুতর হইয়া উঠিয়াছিল যে, প্রায় মুচকি একটু হাসি পর্যন্ত অন্যায় মনে হইত, বন্ধুর এ রকম সাংঘাতিক জেরার সময় সে যদি এমন শয়তানি-ভরা ফাজলামি করিতে পারে, কিছু একটা ঘটিয়াছে বৈকি। হায়, মাঝখানে কিছুদিনের ছেদ পড়িয়া সদানন্দের সঙ্গে আবার কি মাধবীলতার আগের সম্পর্ক পাতানো হইয়া গেল?

    খা।

    তুইও বোস ভাই, দুজনে একসঙ্গে খাই?

    এতক্ষণে, মাধবীলতা যখন এক টুকরো ফল মুখে তুলিতেছে, রত্নাবলীর নজর পড়িল, মাধবীলতার ডান হাতের কজির কাছটা লাল হইয়া ফুলিয়া উঠিয়াছে।

    হাতটা প্রায় ভেঙে গেছে ভাই, গায়ে কি জোর মানুষটার!

    চিবানো ফলের সঙ্গে টোক গিলিয়া রত্নাবলী ভালোমানুষের মতো জিজ্ঞাসা করে, কেন, এত জোরে হাত ধরল কেন?

    মাধবীলতা হাসিয়া বলে, রাগের চোটে, আবার কেন।

    তারপর?

    তারপর আবার কি? আমি কটমট করে তাকাতে হাত ছেড়ে দিয়ে বকবকানি আরম্ভ করে দিল।

    মাধবীলতা তৃপ্তির হাসি হাসে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleচতুষ্কোণ – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article পুতুল নাচের ইতিকথা – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    ফেলুদা এণ্ড কোং – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }