Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অহিংসা – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    উপন্যাস মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এক পাতা গল্প288 Mins Read0
    ⤶

    ২০. সবাই মিলে এবার আশ্রমটা গড়ে তুলব

    প্রথমটা একটু উত্তেজিত হইয়াছিল, তারপর কিন্তু মহেশ চৌধুরী অস্বাভাবিকরকম শান্ত হইয়া পড়িল। একেবারে শান্তির প্রতিমূর্তি। মুহূর্তের জন্যও তার মুখের চামড়া কুঁচকায় না, দৃষ্টি উদ্ভ্রান্ত হয় না, কথায় আলো প্রকাশ পায় না। আরো বেশি আস্তে চলাফেরা করে, আরো বেশি ধীরতার সঙ্গে বাঁচিয়া থাকার প্রয়োজনগুলি নিখুঁতভাবে পালন করিয়া যায়।

    মাধবীলতা দাঁতে দাঁত কামড়ায়। আপনি কিছুই করবেন না?

    করব।

    কি করবেন? কি করব তাই ভাবছি মা।

    মাধবীলতা রাগে পৃথিবী অন্ধকার দেখিতে থাকে।–আপনার কিছু করা উচিত কিনা, তাও ভাবছেন বোধহয়?

    মহেশ চৌধুরীর স্পষ্ট, মৃদু ও একটানা আলাপ করার সুর বদলায় না! ভাবছি বৈকি। সব কথা না ভেবে কিছু করতে আছে? সব কথা ভাবছ না বলেই সদানন্দের দোষের কথা ভেবে তুমি অস্থির হয়ে পড়ে।

    আগে কোনোদিন মহেশ চৌধুরী সদানন্দকে সদানন্দ বলে নাই। সে অনায়াসে নামটা উচ্চারণ করিয়া গেল; খাপছাড়া শোনাইল মাধবীলতার কানে সে নিজেই মহেশ চৌধুরীকে বুঝাইবার চেষ্টা করিয়াছে যে, ও নামটা খুনীর।

    স্বামীজির দোষ আছে বলেই—

    দোষ তো তোমারও থাকতে পারে মা?

    মাধবীলতা বড় দমিয়া গেল, মুখখানা হইয়া গেল ফ্যাকাসে। মহেশ চৌধুরী কেন তাকেও দোষী করিতেছে, অনুমান করা কঠিন নয়। এ দিকটা আগে সে ভাবিয়া দ্যাখে নাই।

    তুমি আগেও ভাবতে সদানন্দ তোমার জন্য এমন পাগল যে, বিভূতিকে খুন পর্যন্ত করতে পারে। তাই এত সহজে সদানন্দকে দোষী ভেবে নিয়ে অস্থির হয়ে পড়েছ যে একবার একটু সন্দেহও জাগে নি। তোমার কোনো দোষ না থাকলে এ সব কথা ভাবতে কেন?

    আমি–

    তোমার কি দোষ তুমি জান না? অতি ধীরে ধীরে মাথা নাড়িয়া মহেশ চৌধুরী যেন তার সেই অক্ষমতাকে সমর্থন করে, সেইখানে তো মুশকিল বাছা। নিজের দোষ যদি আমরা জানতে পারতাম, তবে আর ভাবনা ছিল কি। আমি কি আমার দোষ জানি?

    মাধবীলতা বড় দমিয়া যায়। কি ভাবিতেছে মহেশ চৌধুরী? কিছুই বুঝিতে পারা যায় না। কি ধারণা জাগিয়াছে তার সম্বন্ধে তার মৃত স্বামীর পিতার মনে? কি সন্দেহ করিয়াছে এই বাগগাবা ভালোমানুষটি মাঝে মাঝে যাকে মারাত্মক রকমে চালাক মনে হয়? তার ছেলের বৌকে পাওয়ার লোভে সদানন্দ ইচ্ছা করিয়া তার ছেলেকে হত্যা করিয়াছে শুনিয়াও মহেশ চৌধুরীর অবিচলিত ভাব দেখিয়া মাধবীলতার আর রাগ করিবার সাহস হয় না। তাছাড়া, এতক্ষণে তার মনে হইতে থাকে যে, মহেশ চৌধুরীর করিবার বা কি আছে, সে কি করিতে পারে? প্রথমে মনে হইয়াছিল, মহেশ চৌধুরী আসল ব্যাপারটা অনুমান করিতে পারিলেই বুঝি সদানন্দের শাস্তির আর সীমা থাকিবে না। এখন মাধবীলতা ভাবিয়া পায় না, এমন একটা বিশ্বাস তার কেন জাগিয়াছিল। প্রতিহিংসা নেওয়ার মানুষ চৌধুরী নয়, সে ক্ষমতাও তার নাই।

     

    দাঙ্গার ফলে আর কিছু না হোক আশ্রমের নাম আরো বেশি ছড়াইয়া গিয়াছে। কেবল কাছাকাছি গ্রাম আর শহরের মানুষের মধ্যেই ব্যাপারটা নিয়া হৈচৈ হয় নাই, খবরের কাগজেও বিস্তারিত বিবরণ বাহির হইয়াছে। দাঙ্গার বিবরণ শুধু নয়, আশ্রম সম্পর্কেও অনেক কথা প্রকাশিত হইয়াছে। একটি কাগজে লেখা হইয়াছে : এই আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক শ্ৰী শ্ৰী সদানন্দ স্বামী দীর্ঘকাল তপস্যার পর জনসেবাই সকল ধর্মের শ্ৰেষ্ঠ ধৰ্ম বলিয়া জানিয়া রোগশোক দারিনিপীড়িত নরনারীর কল্যাণের জন্য ইত্যাদি। সকল মহৎ কর্মের বিরোধিতা করাই এক শ্ৰেণীর লোকের প্রকৃতি, এইরূপ একদল লোক অন্যভাবে আশ্রমের ক্ষতি করিতে অসমর্থ হইয়া আক্ৰোশের বশে আশ্রমের বাৎসরিক প্রতিষ্ঠা-উৎসবের দিন গুণ্ডা ভাড়া করা ইত্যাদি। এই বিবরণ যে কাগজে বাহির হইয়াছিল, মহেশ চৌধুরীর বাড়িতে সেই কাগজটিই রাখা হয়। বাড়িতে খবরের কাগজটি আসামাত্র সকলের আগে মাধবীলতা সেটিকে দখল করে। দাঙ্গাহাঙ্গামার কোনো বিবরণ তার অজানা নয়, ব্যাপারটার জের কি দাঁড়াইতেছে, তাও খবরের কাগজে বাহির হওয়ার কয়েকদিন আগেই তার কানে আসে, তবু খবরের কাগজে সংক্ষিপ্ত আর ভুল বিবরণ পড়িবার জন্য সে ছটফট করিতে থাকে। সদানন্দ, তার আশ্রম ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সম্বন্ধে অভিনব টীকা পড়িয়াই কাগজটি হাতে করিয়া সে মহেশ চৌধুরীর কাছে ছুটিয়া যায়।

    দেখছেন কি আরম্ভ করেছে ওরা? পড়ে দেখুন।

    মহেশ ধীরে ধীরে আগাগোড়া পড়িয়া বলে, সদানন্দের তপস্যা আর আশ্রমের উদ্দেশ্যের কথা সত্য, গুণ্ডা ভাড়া করার কথাটা সত্য নয়।

    মাধবীলতা বোমার মতো ফাটিয়া যায়, একটা কথাও সত্যি নয়। ও লোকটা কত খারাপ আপনি জানেন না, যে সব কাণ্ড চলে–

    মহেশ বলে, জানি মা, সব জানি। সদানন্দ অনেক সাধনা করেছে, তবে কি জান মা, সাধকেরও পতন হয়। সদানন্দ লোক ভালো। আশ্রমটাও বড় উদ্দেশ্য নিয়েই স্থাপন করা হয়েছিল, তবে ঠিক সেভাবে কাজ হয় নি। মানুষের ভুলত্রুটি হয় কিনা, বুঝবার দোষ হয় কিনা নানারকম–

    মাধবীলতা অবাক হইয়া শুনিয়া যায়। সদানন্দ লোক ভালো? আশ্রমের উদ্দেশ্য মহৎ? এত কাণ্ডের পর মহেশ চৌধুরীও যে এমন কথা বলিতে পারে, কানে শুনিয়াও মাধবীলতার যেন বিশ্বাস হইতে চায় না। হঠাৎ তার মনে হয়, লোকটি বোধহয় পাগল। প্রত্যেক উন্মাদের মতো নিজের একটা জগৎ সৃষ্টি করিয়া সেখানে সে বাস করিতেছে আর বাস্তব জগতের অর্থ স্থির করিতেছে তার নিজের খাপছাড়া জগতের নিয়মে।

    কিছু ভেব না, সব ঠিক হয়ে যাবে।

    মাধবীলতা অভিভূতের মতো বলে, সব ঠিক হয়ে যাবে?

     

    মহেশ চৌধুরী একদিন আশ্রমে গেল। বিপিনের সঙ্গে দেখা করিয়া বলিল, বিভূতির দোষে এতগুলি লোক জেলে যাবে বিপিনবাবু?

    ওরাও তো মারামারি করেছিল।

    তা করেছিল, কিন্তু দোষ তো ওদের নয়। বিভূতি হাঙ্গামা না বাঁধলে কিছুই হত না।

    বিপিন চুপ করিয়া মহেশের মুখের দিকে চাহিয়া থাকে। কয়েক মুহূর্তের জন্য তারও মনে হয়, লোকটা কি পাগল? দাঙ্গা করার জন্য পুলিশ যাদের ধরিয়াছে, বিভূতিকে নিজের হাতে মারিয়াছিল এমন লোকও যাদের মধ্যে আছে, তারা শাস্তি পাইবে বলিয়া এই মানুষটার দুর্ভাবনা!

    সেদিন সকালেই বিপিন আর সদানন্দের মধ্যে পরামর্শ হইয়াছিল, আদালতে প্রমাণ করিতে হইবে দাঙ্গাহাঙ্গামার দায়িত্বটা ছিল বিভূতির। কিছুদিন আগে একটি আশ্রম স্থাপন করিবার উদ্দেশ্যে মহেশ চৌধুরী সদানন্দকে নিমন্ত্ৰণ করিয়া তার বাড়িতে নিয়া গিয়াছিল। কিন্তু কোনো ভালো উদ্দেশ্যের পরিবর্তে বড় আশ্রমটির ক্ষতি করিবার জন্য একটি বিরোধী আশ্রম স্থাপন করাই মহেশ চৌধুরীর আসল উদ্দেশ্য, ইহা টের পাইয়া সদানন্দ চলিয়া আসিয়াছিল। বাপের অপমানে ক্রুদ্ধ হইয়া প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য বিভূতি এই হাঙ্গামা বাধায়। মহেশ চৌধুরীকেও দাঙ্গাহাঙ্গামার সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠভাবে জড়াইয়া কিছুদিনের জন্য জেলে পাঠানোর চেষ্টা করার ইচ্ছা সদানন্দের ছিল, বিপিন কোনোমতেই রাজি হয় নাই। মহেশ চৌধুরীর সম্বন্ধে বিপিনের মনের ভাব ক্ৰমে ক্ৰমে বদলাইয়া যাইতেছিল।

    বিকৃত সত্য বলিয়া জানিয়া যে আদালতে প্রমাণ করার জন্য সদানন্দের সঙ্গে গোপনে চক্রান্ত করিতেছিল, মহেশ চৌধুরী নিজে আসিয়া তাই সত্য বলিয়া ঘোষণা করিতেছে, সব দোষ ছিল তার ছেলের! বিভূতিকে দোষী প্রমাণ করার উদ্দেশ্য তাদের ছিল স্বার্থরক্ষা, বিভূতির দোষে কতকগুলি লোক জেলে যাইবে বলিয়া মহেশ চৌধুরীর হইতেছে আফসোস!

    কিছু করা যায় না?

    কি করা যাবে বলুন?

    বিভূতির দোষটা আদালতে প্রমাণ করলে–?

    বিপিন ভাবিয়া বলিল, তাতে অন্য সবাই ছাড়া পাবে না, তবে শাস্তিটা কম হতে পারে।

    মহেশ বলিল, তাই হোক। তাছাড়া যখন উপায় নেই, কি আর করা যাবে।

    সদানন্দের সঙ্গে পরামর্শ করিয়া যা ঠিক হইয়াছিল, সেটা মনে মনে বাতিল করিয়া দিয়া বিপিন বলিল, আদালতে কি বলবেন?

    যা সত্য তাই বলব, আর কি বলব?

    যা সত্য আদালতে তাই বলা হইবে স্থির হইলেও, কি বলা হইবে, সে বিষয়ে পরামর্শ করার প্রয়োজন দেখা গেল। সকলে সত্য কথা বলিলেও সত্যের খুঁটিনাটিগুলি ভিন্ন ভিন্ন লোকের মুখে এমন পরস্পরবিরোধী হইয়া দাঁড়ায়! আদালতে দাঁড়াইয়া মহেশ চৌধুরী ধীরস্থির শান্তভাবে বলিয়া গেল, বিভূতি কেমন একগুঁয়ে ছিল, মেজাজটা তার কি রকম গরম ছিল, আগে একবার সে একটা ছোটখাটো হাঙ্গামা সৃষ্টি করিবার ফলে মহেশ কিভাবে কয়েকজনের হাতে মার খাইয়াছিল এবং বাপকে যারা মারিয়াছিল তাদের শাস্তি দিবার জন্য কীর্তনের আসরে গিয়া সে কিভাবে হাঙ্গামার সৃষ্টি করিয়াছিল। এই প্রসঙ্গে ছেলের চরিত্রের কয়েকটা বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করিয়া সকলকে বুঝাইয়া দিবার চেষ্টাও করিল যে কর্তব্যজ্ঞান, নিষ্ঠা, তেজ, সাহস, এ সব মানুষের যতই থাক, ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত, ন্যায়-অন্যায় বিচার করিবার ক্ষমতা না থাকিলে ও সব কোনো কাজেই লাগে না।

    অনেকে হতভম্ভের মতো শুনিয়া গেল, কেউ ভাবিল মহেশ চৌধুরীর মাথা খারাপ হইয়া গিয়াছে, কয়েকজন সকৌতুকে হাসিতেও লাগিল।

    বিভূতির মা বলিল, আদালতে দশ জনের কাছে তুমি আমার ছেলের নিন্দে করে এলে! এবার আমি গলায় দড়ি দেব। আমি অনেক সয়েছি, আর সইব না! বলিয়া মাথা কুটিতে লাগিল।

    মাধবীলতা বলিল, আপনার মনে এই ছিল! আমিও গলায় দড়ি দেব। বলিয়া হু হু করিয়া কাঁদতে আরম্ভ করিয়া দিল।

    মহেশ চৌধুরী তাদের বুঝাইয়া শান্ত করিবার কোনো চেষ্টা করি না, এতটুকু বিব্রত হইয়াছে। বলিয়াও মনে হইল না।

    অপরাহ্নে বিপিন আসিল। মহেশ বলিল, এস বিপিন।

    বিপিন যেন হঠাৎ তার স্নেহের পাত্রে পরিণত হইয়া গিয়াছে। সম্বোধনের তারতম্যটা বিপিনও খেয়াল করিল কিনা সন্দেহ, শ্ৰান্ত ক্লান্ত মানুষের মতো সামনে বসিয়া পড়িয়া পরমাত্মীয়ের মতোই বিনা ভূমিকায় বলিল, কিছু ভালো লাগছে না।

    মহেশ সায় দিয়া বলিল, অনেকদিন থেকেই তো তোমার মন খারাপ।

    ছোট ছেলে যেমন সহানুভূতির প্রত্যাশায় গুরুজনকে দুঃখ জানায়, তেমনিভাবে বিপিন বলিল, আশ্রম নিয়ে আমি পাগল হয়ে গেলাম চৌধুরীমশায়। যা ভেবেছিলাম তা তো কিছু হলই না, একটার পর একটা হাঙ্গামাই বাঁধছে। কত বড় উদ্দেশ্য নিয়ে কি রকম আশ্রমের গোড়াপত্তন করেছিলাম, দিন দিন কি দাঁড়াচ্ছে আশ্ৰমটা! এত চেষ্টা করছি, কিছুতেই গোল্লায় যাওয়া ঠেকাতে পারছি না।

    মহেশ বলিল, কেন, তুমি তো আশ্রমের টাকা আর সম্পত্তি বাড়াবার চেষ্টা করেছিলে তা তো বেড়েছে? নাম ছড়াবার চেষ্টা করেছিল, তাও তো ছড়িয়েছে?

    বিপিন বলিল, কিন্তু যে উদ্দেশ্যে আশ্রম করেছিলাম, তার যে কিছুই হচ্ছে না, বরং উল্টো ফল হচ্ছে।

    মহেশ বলিল, সে দোষটা তোমার।

    বিপিন আহত হইয়া বলিল, আমার দোষ? আমার কি দোষ?

    মহেশ বিপিনকে তার দোষগুলি বুঝাইয়া দিতে আরম্ভ করে। আগে বিপিন রাগ করি, আজ নিঃশব্দে শুনিয়া যায়। মহেশের কথা শেষ হওয়ার আগেই তার মুখ দিয়া হঠাৎ বাহির হইয়া যায়, আপনাকে যদি আশ্রমে পেতাম!

    পাবে।

    আপনি আশ্রমে যোগ দেবেন?

    দেব। কদিন আগেই ঠিক করেছি, আশ্রমের ভারটা আমিই নেব। মন দুর্বল কিনা, তাই ভাবছিলাম, ধীরেসুস্থে কদিন পরে আশ্রমে যাব। কিন্তু ঠিক যখন করে ফেলেছি, অনৰ্থক দেরি করে লাভ কি, কি বল?

    বিপিন অভিভূতের মতো বলিল, নিশ্চয়।

    মহেশ বলিল, চল তবে আজকেই যাই।

    বিপিন ভয়ে ভয়ে বলিল, কিন্তু সদানন্দের বিষয়ে কি করা যাবে?

    মহেশ সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল, সদানন্দ আর মাধবীলতাকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিলেই চলবে।

    সদানন্দ আর মাধবীলতাকে অন্যত্র পাঠাইয়া দিবার ব্যবস্থার অর্থ বিপিন একরকম বুঝিয়াছিল। সদানন্দকে আশ্রম ছাড়িয়া চলিয়া যাইতে বলা হইবে এবং মাধবীলতাকে মহেশের কোনো আত্মীয়ের কাছে পাঠাইয়া দেওয়া হইবে। মাধবীলতাকে অন্য কোথাও পাঠাইয়া দিবার অর্থটা সে ঠিক বুঝিতে পারে নাই। মহেশের আশ্রমে যোগদানের সঙ্গে সদানন্দকে সরাইয়া দেওয়ার প্রশ্ন জাগতে পারে, মাধবীলতাকে সরাইয়া দিবার প্রয়োজন কি, কারণ কি? মহেশ যে দুজনকে একসঙ্গে সরাইয়া দিবার মতলব করিয়াছে, বিপিন সেটা কল্পনাও করতে পারে নাই।

    সদানন্দ অথবা মাধবীলতাও কল্পনা করতে পারে নাই।

    রাত্রি প্রায় দশটার সময় মাধবীলতাকে সঙ্গে লইয়া মহেশ চৌধুরী আশ্রমে আসিল, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার আসল উদ্দেশ্যটা তিনজনের কাছেই পরিষ্কার হইয়া গেল। মাঝরাত্রে আশ্রমের পিছনের ঘাটে বাঁধা নৌকায় উঠিয়া সদানন্দ আর মাধবীলতা চলিয়া গেল। মাধবীলতা প্রথম দিন রাত্রে আশ্রমে আসিবার সময় নৌকা হইতে এই ঘাটেই নামিয়াছিল।

    নৌকা চলিয়া গেলে মহেশ বলিল, আমরা সবাই মিলে এবার আশ্রমটা গড়ে তুলব বিপিন।

    ⤶
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleচতুষ্কোণ – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article পুতুল নাচের ইতিকথা – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    ফেলুদা এণ্ড কোং – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }