Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যাডগার অ্যালান পো রচনাসমগ্র / অনুবাদ : জাকির শামীম

    জাকির শামীম এক পাতা গল্প1512 Mins Read0

    দ্য কাস্ক অব অ্যামন্টিলাডো

    দ্য কাস্ক অব অ্যামন্টিলাডো

    অস্ত্রাঘাত!

    আমি ফর্চুনাটোর অগণিত অস্ত্রাঘাত বুক পেতে নিয়েছি, মুখ বুজে সহ্য করেছি। কিন্তু সে যখন আমাকে অপদস্ত করল তখন আর আমার পক্ষে ব্যাপারটা হজম করা সম্ভব হলো না, কিছুতেই না। আমি শপথ করে বললাম, এ অপমানের বদলা আমি নেবই নেব।

    আমার স্বভাব সম্বন্ধে তোমাদের মধ্যে যাদের ভালো ধারণা রয়েছে তারা কিন্তু কিছুতেই ভেবে নিও না যে, সে শপথবাক্য আমি কেবলমাত্র মুখে উচ্চারণ করেই ক্ষান্ত থেকে ছিলাম।

    না, সেটাকে অবশ্যই কেবলমাত্র মুখের কথাতেই আমি সীমাবদ্ধ রাখব বলে শপথ করিনি, সে রকম তিলমাত্র ইচ্ছাও আমার নেই।

    অতএব বদলা আমি নেবই, আমাকে নিতেই হবে। আমি একেবারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। তবে সমস্যা হচ্ছে, কথাটা প্রচার করার ঝুঁকিও তো নেওয়া সম্ভব নয়।

    আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শাস্তি আমি দেবই দেব। তবে সে কাজটা আমাকে করতে হবে খুবই সতর্কতার সঙ্গে, নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে নিয়ে তবেই। অর্থাৎ যখন নিজেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখতে পারব বলে মনে করব তখনই আমি শপথ পালনের কাজে হাত দেব। তবে আমি বদলা না নেওয়া পর্যন্ত কিছুতেই ক্ষান্ত হচ্ছি না।

    আর একটা কথা, অপরাধি যদি পাল্টা বদলা নেবার জন্য তৎপর হয় তবে সে অপরাধের প্রতিকার হয় না। প্রতিকার করা সম্ভব নয়। কিন্তু সোজা কথা, বদলা আমি নেবই নেব।

    অতএব ভেবে দেখতে হবে, কথার মাধ্যমে বা কাজে আমি ফর্চুনাটোকে এমন কোনো সুযোগই করে দেইনি যার ফলে আমার ওপর তার মনে কোনো সন্দেহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। আমার মনের জেদকে বাস্তব রূপ দিতে গিয়ে আমি কি না তাকেই সুযোগ করে দেব–আজব কথা তো।

    আমার স্বভাবই কথায় কথায় হাসা। ফলে তাকে যখন যেখানেই দেখি, তখনই মুখে স্বভাবসুলভ হাসি ফুটিয়ে তুলি অর্থাৎ হেসে হেসে কথা বলি। সে কিন্তু ঘুণাক্ষরেও অনুমান করতে পারে না যে আমার এ হাসিটা তাৎপর্যপূর্ণ। তাকে দেখে আমি হাসি এই কথা ভেবে, সে আমার হাতেই খতম হবে, তার ভবলীলা সাঙ্গ হবে।

    এ ফর্চুনাটো অন্য সবদিক থেকে আমার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র, সন্দেহ নেই। এমনকি ভয় ভীতির ব্যাপার-স্যাপার হলেও তার একটা দুর্বলতা ছিল।

    মদের উৎকর্ষতা বিচারের দক্ষতা নিয়ে তার খুবই বড়াই ছিল। তার বিশ্বাস, তার মতো মদের ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা খুব কম লোকের রয়েছে। সত্যিকথা বলতে কি, ইতালিয়দের মধ্যে যথার্থ কলাবিদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সময় সুযোগমতো কাব্য কর্মে নিজেকে লিপ্ত রাখতেই তারা আগ্রহী নয়তো অস্ট্রিয় আর বৃটিশ ধনকুবেরদের সঙ্গে প্রবঞ্চণা করতে, মওকা পেলেই ঠকাতে বড়ই আগ্রহী।

    ফর্টুনাটোর প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। সে চিত্রশিল্প বা স্বর্ণকার পেশা তার দেশবাসীদের মতোই একজন আনাড়ী ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু পুরনো মদের ভালো মন্দ বিচারের কাজে তার। নৈপুণ্য অবশ্যই লক্ষ্যণীয়। তবে এও সত্য যে, এ ব্যাপারে তার সঙ্গে আমার খুব একটা মতপার্থক্য নেই। আমার কথা যদি জানতে চাওয়া হয় তবে বলব, ইতালিয় মদের ক্ষেত্রে আমিও একজন বড় সমঝদার–বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী। আর একটু মওকা পেলেই আমি এ বস্তুটা যথেষ্ট পরিমাণে কিনে নিই। আর তা করি আমার নিজের বিচার বুদ্ধির ওপর নির্ভর করে।

    তখন শহর জুড়ে কার্নিভালো উৎসব বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে, পুরোদমে চলছে। হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার চলেছে চারদিকে। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা উৎসবে মাতোয়ারা।

    এক উৎসবমুখর সন্ধ্যায়, সন্ধ্যায়-ঠিক নয়, সন্ধ্যার একটু আগে হঠাৎ বন্ধুবর ফর্চুনাটোর মুখোমুখি দেখা হয়ে গেল। সে একটু বেশি মাত্রায়ই অভ্যর্থনা জা নিয়ে বসল। আসলে মাত্রাতিরিক্ত তরল পদার্থ পেটে পড়ার জন্যই সে তার অভ্যর্থনা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে, আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না।

    বন্ধুবরের গায়ে ভাঁড়ের পোশাক আশাক। তার গায়ের জামাটায় বহুবর্ণ আর চিত্রাবলীর একত্র সমাবেশ ঘটেছে। তার ওপর ডোরাকাটা তো রয়েছেই। মাথায় চাপিয়েছে কানওয়ালা উঁচু টুপি আর ঘণ্টা।

    সত্যি বলছি, তার সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হতেই আমার ভেতরটা খুশিতে রীতিমত চনমন নিয়ে উঠল। আনন্দ উচ্ছ্বাসে আমার বুকটা এমন ভরে উঠল যে, তার হাতটা ধরে মুচড়ে দেবার ভাবনাটাকে আমার মনে স্থান দেওয়াটা মোটেই সঙ্গত হয়নি। এমন অন্তহীন খুশির মেজাজে মাতোয়ারা অবস্থায় এমন একটা কাজের কথা ভাবা–ধৎ! অবশ্যই সঙ্গত হয়নি।

    তার সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হতেই করমর্দনের জন্য হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে মুখে স্বভাবসুলভ হাসি ফুটিয়ে তুলে বললাম–‘বন্ধু ফর্চুনাটো, নিতান্তই ভাগ্যের জোরে তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।’

    করমর্দন সারতে সারতে সে-ও হাসি হাসি মুখে ছোট্ট করে উচ্চারণ করল– আমারও ঠিক একই কথা বন্ধু।

    ‘তোমাকে আজ কী সুন্দরই না লাগছে!

    ‘হুম!’

    ‘সত্যি বলছি, অদ্ভুত দেখাচ্ছে তোমাকে! কিন্তু আমি একটা পাইপ—’

    ‘পাইপ?

    ‘হা, পাইপ। কিন্তু তারা বলছে, বস্তুটা নাকি অ্যামন্টিলাডোর।

    ‘অ্যামন্টিলাডোর?

    ‘তারা তো এরকমই বলছে। তবে আমার কিন্তু এতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বন্ধু। কথাটাকে আমি মেনে নিতে মন থেকে উৎসাহ পাচ্ছি না।’

    ‘এ কি কথা! অ্যামন্টিলাডো?’

    হ্যাঁ, বলছে তো তা-ই।

    ‘তাও আবার পাইপ? অসম্ভব, একেবারেই অবাস্তব কথা! অন্য সময় হলেও না হয় ভেবে দেখা যেত। তা-ও আবার কার্নিভালের মাঝখানে! অসম্ভব!

    আমি বললাম–‘আমার মনেও তো একই সন্দেহ জেগেছে। কিন্তু আমি একটা। কাজ করে ফেলেছি বন্ধু।

    ‘কী? কী কাজ? কী ব্যাপার বল তো বন্ধু?

    ‘তোমার সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করেই আমি অ্যামন্টিলাডোকে পুরো দামটা মিটিয়ে দিয়েছি। তবে এর পিছনে কারণও ছিল বটে।

    সে মুখের হাসির রেখাটুকু অব্যাহত রেখেই বলল–কারণ? কি সে কারণ, বল তো?’

    ‘কারণটা হচ্ছে, কয়দিন যাবৎ তোমার দেখাই পাচ্ছিলাম না। আবার এমন একটা ভালো জিনিস বেহাত হয়ে যাবার আশঙ্কাও কম ছিল না।

    ‘হুম্।

    ‘তাই তো তোমার সঙ্গে পরামর্শের জন্য সময় নিতে ভরসা হলো না।

    ‘অ্যামন্টিলাডো!’ ফর্চুনাটো সবিস্ময়ে বলল।

    ‘আমার কিন্তু যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

    ‘অ্যামন্টিলাডো!’

    ‘তাদের সন্তুষ্ট না করে যে উপায়ই নেই।

    ‘অ্যামন্টিলাডো!’

    ‘মনে হচ্ছে, তুমি ব্যস্ত আছ, তাই না?

    ‘হুম!’

    ‘আর আমিও লুচেসির কাছে চলেছি।’

    ‘তাই বুঝি?

    ‘হ্যাঁ। আমার বিশ্বাস, একমাত্র তার পক্ষেই ভালো-মন্দ বিচার করা সম্ভব। একবার গিয়ে তার কাছে প্রসঙ্গটা পেড়ে তো দেখি ফল কি হয়।

    ‘লুচেসি?’

    ‘হ্যাঁ, তার কথাই ভেবে রেখেছি।

    ‘আরে ধ্যুৎ!’

    ‘কেন? এ-কথা বলছ কেন?

    ‘আরে সে তো শেরী থেকে অ্যামন্টিলাডোর পার্থক্য কোথায় তা-ই তো বলতে পারে না।’

    ‘বোকাদের মতে কিন্তু তার রুচিজ্ঞান নাকি তোমার থেকে কম তো নয়ই, বরং সমান।

    ‘ঠিক আছে, এসব কথা নিয়ে অন্য সময় না হয় আলোচনা করা যাবে। এখন চল তো—’

    ‘কোথায়? কোথায় যেতে বলছ?’

    ‘তোমার নেশার ঘরে, অমৃত-গৃহে।

    ‘না, বন্ধু।

    ‘কেন? আপত্তি কীসের?’

    ‘আপত্তি একটাই, তোমার ভালোমানুষেমির সুযোগ নিতে আমি উৎসাহি নই, নেবও না। তোমার তো আবার একজনের সঙ্গে দেখা করার ব্যাপার রয়েছে, তাই না? লুচেসি–তাই না?

    ‘না, কারো সঙ্গে দেখা করারই তেমন কোনো পরিকল্পনা আমার নেই?’

    ‘আরে, দেখা করতে আমি বলছি না বন্ধু। আর তোমার যা দশা তা-তো নিজের চোখেই আমি দেখছি, সর্দিতে তুমি একেবারে কাবু হয়ে পড়েছ।

    ‘হুম’

    ‘আরে বন্ধু, ভূগর্ভ কক্ষ বলতেই খুব স্যাঁতাতে হয়। কেবলমাত্র তোমার ঘরের কথাই বলছি না, যে কোনো ভূগর্ভ কক্ষের ক্ষেত্রেই এ-কথা প্রযোজ্য।

    ‘এ কথা বলার অর্থ?

    ‘অর্থ একটাই, দেওয়ালের গায়ে সোডার একটা আস্তরণ পড়ে যায়।

    ‘হ্যাঁ, তা অবশ্য সত্যি।’

    ‘এমন ঘরে থাকলে সর্দি লাগাটা অস্বাভাবিক নয়, বরং ঠাণ্ডা না-লাগাটাই অবাক হবার মতো কথা।

    ‘তা হোক গে তবু তুমি চল।

    ‘তবু যেতে হবে?’

    ‘অবশ্যই। আরে, সর্দি-কাশি তো একটা মামুলি ব্যাপার। অ্যামন্টিলাডো! তোমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে, ঠকিয়েছে তোমাকে। আর এদিকে লুচেসির কথা বলছ তো? আরে বন্ধু, অ্যামন্টিলাডো আর শেরীর পার্থক্যটা সম্বন্ধেই তো তার কোনো ধারণা নেই।

    ফর্চুনাটো কথা বলতে বলতে আচমকা আমার হাতটা চেপে ধরল। তাকে সঙ্গে করে আমার পালাজ্জোতে উপস্থিত হলাম। একটা আলখাল্লা তার গায়ে জড়ানো ছিল আর একটা কালো রেশমের মুখোশও লাগানো ছিল।

    পালাজ্জোতে হাজির হয়ে দেখি দাস-দাসিরা কেউ-ই নেই। একেবারে সুনসান। দাস-দাসিরা মওকা বুঝে আনন্দ ফুর্তি করতে বেরিয়ে গেছে।

    আসলে আমার জন্যই এমনটা হয়েছে। পালাজ্জো ছেড়ে যাবার সময় আমি তাদের বলে গিয়েছিলাম, আমি রাতে ফিরব না। ফিরতে ফিরতে সকাল হয়ে যাবে। তবে এও তো মিথ্যা নয়, পালাজ্জো ছেড়ে যাবার সময় আমি তো তাদের এ কথাও পই পই বলে করে বলে গিয়েছিলাম–ভুলেও যেন কেউ বাড়ি ছেড়ে কোথাও না যায়।

    তারা তখন মুখে কিছু না বললেও মনে মনে কি ভাবছিল বুঝতে আমার অসুবিধা হয়নি। আমি নিঃসন্দেহ ছিলাম। আমি পালাজ্জো ছেড়ে যাবার সঙ্গে আমার এ নির্দেশেই তাদের বেপাত্তা হয়ে যাবার পক্ষে যথেষ্ট। কার্যতও তা-ই দেখা গেল।

    আমি তাদের বাতিদান থেকে দুটো জ্বলন্ত মশাল উঠিয়ে নিলাম। একটা রাখলাম আমার হাতে আর দ্বিতীয়টা ফর্চুনাটোর দিকে বাড়িয়ে দিলাম। সে হাতবাড়িয়ে আমার কাছ থেকে মোমবাতিটা নিল।

    এবার তাকে সঙ্গে করে আমি পর পর কয়েকটা ঘর পেরিয়ে ভূগর্ভ কক্ষের খিলানের তলায় নেমে গেলাম। লক্ষ্য করলাম, সে একটু আধটু ইতস্তত করলেও ধীর পায়ে ঠিক নেমে যেতে পারল।

    এবার তাকে সতর্ক করে দিতে গিয়ে বললাম–‘খুব সাবধানে পা ফেলবে। পা ফেলার আগে মোমবাতির আলোয় জায়গাটা ভালো করে দেখে নিতে ভুলো না যেন। মনে রেখো, একটু অ-সাবধান হলেই পা হড়কে গিয়ে কেলেঙ্কারি বাধিয়ে বসবে।

    ‘হুম।’ সে প্রায় অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করল।

    আমি এবার লম্বা ঘোরানো একটা সিঁড়ি-বেয়ে ধীর পায়ে নিচে নেমে গেলাম। সে ও মোমবাতির আলোর ওপর ভরসা রেখে খুবই সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলে ফেলে আমার পিছন পিছন নিচে নেমে গেল।

    আমি অবশ্য প্রতি মুহূর্তেই তার ওপর নজর রেখে চলছিলাম।

    আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম, বন্ধুবরের পা দুটো টলছে। একটু আধটু এলোমেলো পা ফেলছে। তবে নিজেকে সামলে নেবার মতো হুশ তার মধ্যে অবশ্যই আছে।

    আর বন্ধুবর প্রতিবার পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে তার টুপির ঘণ্টা গুলো থেকে থেকে টুং টাং শব্দে বেজে উঠছে।

    নিচে নেমে আমার পাশে গিয়ে দাঁড়াবার সঙ্গে সঙ্গে সে বলল–‘কি হে, পাইপটা?’

    ‘পাইপটার খোঁজ করছ?’

    ‘হ্যাঁ, সেটা কোথায়, দেখছি না তো?

    ‘আরও একটু এগিয়ে গেলে তোমার বাঞ্ছিত পাইপটার দেখা মিলবে।

    ‘হুম।

    আমি এবার দেওয়ালের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে বললাম–‘ওই, ওই দেখ।

    সে হাতের জ্বলন্ত মোমবাতিটাকে কিছুটা ওপরে তুলে, অনুসন্ধিৎসু নজরে দেওয়ালের দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করে বলল–কী? কীসের কথা বলছ বন্ধু?

    ‘মোমবাতির আলো পড়ায় দেওয়ালের মাকড়শার সাদা জালগুলো কেমন চকচক করছে দেখ, যাকে বলে রীতিমত ঝিল্লা দিচ্ছে।

    সে এবার দেওয়াল থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকাল।

    আমি লক্ষ্য করলাম–‘তার চোখ দুটো জবাফুলের মতো লাল আর নেশায় বুঁদ হয়ে রয়েছে।

    আমি তার মুখের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধই রাখলাম।

    আমি মুখ খোলার আগেই সে আচমকা বলে উঠল–একটা কথার জবাব দেবে। কী?

    আমি স্লান হেসে বললাম কী? কী বলতে চাইছ?’

    সে দুম করে বলে উঠল–‘সোরা কী, বল তো?

    আমি জবাব দিলাম–‘হ্যাঁ-হ্যাঁ সোরা’

    সে খুক খু্ক করে কাশতে লাগল।

    আমি বললাম–‘কি হে, এমন খুকখুক করে কাশছ যে! তোমার কাশিটা করে থেকে হয়েছে, বল তো?

    আমার বন্ধুবর নীরবে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়েই রইল। আমি আবারও বললাম–এমন কাশিটা কবে থেকে হয়েছে?’ বেচারি বন্ধুবরের পক্ষে বেশ কয়েক মিনিট আমার প্রশ্নের জবাব দেওয়া সম্ভব হলো না। তারপর কাশতে কাশতেই জবাব দিল–ও কিছু না।

    ‘কিছু না, বলছ কি হে! কাশি যে একেবারে বুকে জেঁকে বসেছে!

    ‘হুম।

    ‘চল, ফিরেই যাওয়া যাক। আমি বেশ জোর দিয়েই বললাম।

    সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলে আমার মুখের দিকে সবিস্ময়ে তাকাল। মুখে কিছুই বলল না।

    আমি আগের মতোই জোর দিয়েই এবারও বললাম আমার একটা কথা শুনবে কি?

    ‘কী? এত ভনিতার কী আছে? কী বলবে, বলেই ফেল না।’

    ‘তোমার ফিরে যাওয়াই দরকার। কারণ, তোমার স্বাস্থ্যের দাম আমি অনেক, অনেক বেশি বলেই মনে করি।’

    ‘হুম।

    ‘কেন? মিথ্যে বলেছি? তুমি একজন বিত্তশালী, শ্রদ্ধাভাজন, প্রিয়জন, উচ্চ প্রশংসিত। আর তোমাকে আমি একজন সুখি ব্যক্তি বলেই মনে করি, এক সময় আমি ঠিক যেমনটি ছিলাম। তোমাকে হারাবার কথা তো আমি ভাবতেই পারি না বন্ধু।

    ‘তাই বুঝি?

    ‘অবশ্যই। তোমাকে হারাতে হবে এ-কথা ভাবলেই আমার বুকের ভেতরে চিব ঢিবানি শুরু হয়ে যায়। আমার কথা ছাড়ানই দাও। তুমি ফিরে যাও, অসুস্থ হয়ে পড়বে, সেজন্য আমি দায়ী হব এটা যে ভাবাই আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর

    ‘আর কী?

    ‘আর লুচেসি রয়েছে–অতএব–‘

    ‘থাক বন্ধু, খুব হয়েছে, অনেক কিছুই তো বললে–ক্ষান্ত হও।’

    ‘কিন্তু বুকভরা এমন–‘

    ‘আরে বন্ধু, এ কাশি খুবই তুচ্ছ একটা ব্যাপার। এতে আমার মৃত্যু হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।’

    ‘কিন্তু–

    ‘এতে কোনো কিন্তুই থাকতে পারে না। একটু আধটু কাশিতেই আমার মৃত্যু এরকম কোনো আশঙ্কাই নেই।

    ‘ঠিক, ঠিকই বলেছ। শোন, সত্যি কথা বলছি, অহেতুক তোমাকে ভয় দেখানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও আমার মধ্যে ছিল না।

    ‘তবে?’

    ‘আমি বলতে চাইছি, তোমাকে সব রকম সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।’

    ‘কিন্তু কিভাবে?

    একটা মদের পাত্রের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে আমি এবার বলে উঠলাম– এই অমৃতসুধা, মানে এ মেডক মদ এক পেয়ালা গলায় ঢাললেই ঠাণ্ডা আমাদের কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারবে না।’

    সে আমার অঙ্গুলি-নির্দেশিত পথে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে নীরবে মুচকি হাসল।

    আমি দুপা এগিয়ে দেওয়ালের দিকে এগিয়ে গেলাম। এক সারি মদের বোতলে ভেতর থেকে একটা বোতল তুলে নিলাম। দেওয়ালের গায়ে মৃদু আঘাত করে তার গলাটা ভেঙে ফেললাম। ভৰ্ভ করে কিছুটা মদ ভাঙা গলাটা দিয়ে বেরিয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। তার চোখ মুখের উৎসাহের ছাপটুকু আমার নজর এড়াল না। মদের বোতলটা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম–এই নাও খাও।

    সে মুখটাকে অদ্ভুতভাবে বাঁকিয়ে আমার হাত থেকে বোতলটানিল। তারপর ঠোঁটে ঠেকাল।

    দু-এক ঢোক খেয়েই সে মুহূর্তের জন্য থামল। তারপর আন্তরিকতার সঙ্গে আমার দিকে তাকিয়ে মাথাটা দোলাল। টুপির সঙ্গে আটকানো ঘণ্টাগুরো টুনটুন্ শব্দ করে বাজতে লাগল।

    আমি তার চোখ-মুখে তৃপ্তির ছাপটুকু লক্ষ্য করে নীরবে মুচকি হাসলাম।

    সে আবেগ উচ্ছ্বাসে অভিভূত হয়ে বলল–‘বন্ধু, আমি কাদের উদ্দেশে পান করছি, বলতে পার?

    আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার মুখের দিকে তাকালাম। সে বলে চলল–‘আমার চারদিকে যারা কবরে শুয়ে বিশ্রামে রত আমি তাদের উদ্দেশ্যে পান করছি, বুঝলে?

    আমি বললাম–আর আমি কী কামনা করে পান করছি, বল তো?

    ঠোঁট থেকে মদের বোতলটা নামিয়ে নিয়ে সে বলল–‘কী? কী কামনা করে?

    ‘তোমার দীর্ঘায়ু কামনা করে।

    ‘হুম।

    সে এবার এগিয়ে এসে আমার হাত ধরল।

    আমরা আবার এগোতে লাগলাম।

    কয়েক পা এগিয়ে সে বলল–‘বন্ধু, এ ভূগর্ভ কক্ষগুলো খুবই চওড়া, তাই না?

    ‘হ্যাঁ, তা একটু চওড়াই বটে।

    ‘একটু বলছ কি, বরং বল, বেশি রকমই চওড়া।

    ‘মন্ত্রেসরাও তো ছিল খুবই বড়, আর রিবারও তো ছিল অসংখ্য; ঠিক কি না?

    ‘আরে, তোমার হাত কখন যে ছেড়ে দিয়েছি, খেয়ালই করিনি।

    ‘তাতে কি আছে, আবার ধরলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়।

    সে আবার আমার হাতটা ধরল। এবার বেশ শক্ত করেই ধরল।

    ‘নীল মাঠে একটা ইয়া বড় মানুষের পা। সে পায়ের চাপে একটা সাপ একদম থেঁতলে গেল। তার গোড়ালির তলায় সাপের ফণাটাও থেঁতলে গেল।

    ‘নীতিবাক্যটা কী, বল তো?’

    ‘আমার অনিষ্ট সাধন না করে সে আমাকে উত্তেজিত করে।

    সে বলল–‘ভালো! খুব ভালো!’

    আমরা আরও কয়েক পা এগিয়ে গেলাম। তার চোখ দুটো লাল, জবাফুলের মতো লাল। মদে রীতিমত কুঁদ হয়ে রয়েছে। টুপির মাথায় আঁটা ঘণ্টা টুং-টাং শব্দে বাজছে।

    কেবলমাত্র তার কথাই বা বলি কেন? মেডেকের নেশা আমাকেও জেঁকে ধরেছে।

    আমরা হাত ধরাধরি করে পা ফেলতে লাগলাম। উভয়ের পা-ই প্রায় সমানভাবেই টলছে। আর মেডেকের নেশায় আমার কল্পনাও চাঙ্গা হয়ে উঠতে লাগল।

    পাঁজাকরা হাড়ের দেওয়ালের ভেতর দিয়ে গাদাগাদি করে রাখা মদের বোতলের স্তূপ আর বেশ কয়েকটা পিপে পেরিয়ে আমরা সমাধি প্রাঙ্গণের একবারে ভেতরে হাজির হলাম।

    এবার উভয়েই থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। সে আমার দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকাল।

    এবার আমি বুকে সাহস সঞ্চয় করে ফর্চুনাটোর হাতটা খপ করে চেপে ধরলাম। সে বলল–‘সোরা!’ আমি অন্যমনষ্কভাবে উচ্চারণ করলাম–‘হ্যাঁ, সোরা–সোরাই বটে।

    ‘লক্ষ্য করছ, সোরার পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে।

    ‘হ্যাঁ, তা বাড়ছে বটে।

    ‘প্রাচীরের গায়ে শ্যাওলার মতো জমে রয়েছে। আস্তরণটা কী পুরু, তাই না?

    ‘হ্যাঁ, তা বটে।’

    ‘আমরা এখন নদীখাতের তলায় অবস্থান করছি। ওই–ওই দেখ, হাড়ের ওপর। টপ টপ করে বিন্দু বিন্দু পানি পড়ছে।’

    ‘এখন সময় আছে, চল, সময় থাকতে কেটে পড়া যাক।

    ‘কেটে পড়বে?

    ‘সেটাই তো উচিত। তোমার কাশিটা আবার–‘

    ‘আরে, ধৎ। কাশি কাশি করেই তুমি কান ঝালাপালা করে দিলে দেখছি!’

    ‘তাই বলে কাশির ব্যাপারটাকে তো আর অস্বীকার করা যায় না।’

    ‘কাশির ব্যাপারটা ছাড়ান দিয়ে, অন্য কথা বল। চল তো এগিয়ে যাওয়া যাক।

    পা বাড়িয়ে সে আবার থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর বলল–এগোনোর আগে বরং আর এক চুমুক করে মেডক গলায় ঢেলে নেওয়া যাক, কী বল বন্ধু?

    আমি তার কথার কোনো জবাব না দিয়ে ডি গ্রাভের সরু মুখওয়ালা একটা বোতল হাতে তুলে নিলাম।

    সে ব্যগ্র হয়ে আমার হাত থেকে সেটাকে ছোঁ মেরে প্রায় নিয়েই নিচ্ছিল।

    আমি পাশের হাড়ের দেওয়ালে ঠুকে বোতলের মুখটা ভেঙে তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম।

    সে ছোঁ মেরে বোতলটা আমার হাত থেকে নিয়েনিল। লম্বা একটা চুমুক দিয়ে সে বোতলটাকে প্রায় খালি করে দিল।

    তার চোখ দুটো জ্বল জ্বল করতে লাগল। মোমবাতির আলোয় দেখা গেল তার চোখ দুটো যেন অত্যুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

    সে বোতলটায় শেষ চুমুক দিয়ে খালি বোতলটাকে এমন অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করে ছুঁড়ে ফেলে দিল, আমার পক্ষে কিছু বোঝা সম্ভব হলো না।

    বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে তার মুখের দিকে তাকালাম।

    আগের মতোই অত্যাশ্চর্য অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে সে জিজ্ঞাসা করল–‘কি, কিছুই বুঝতে পারলে না?

    আমি অসহায়ভাবে জবাব দিলাম না। সত্যি বলছি, কিছুই বুঝতে পারিনি।’

    ‘তবে আমি একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি–।

    আমি তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললাম–কী? কী কথা?

    তবে তুমি তো দলের লোক নও হে।

    ‘দলের লোক নই? কী ব্যাপার বল তো?

    ‘আমি বলতে চাচ্ছি যে, তুমি রাজমিস্ত্রি পরিবারের লোক নও–কিছুতেই হতে পারে না।’

    আমি হো হো করে হেসে উঠলাম।

    চোখে মুখে গভীর বিস্ময়ের ছাপ এঁকে বলল–‘তুমি? রাজমিস্ত্রি পরিবারের? অসম্ভব–একেবারেই অসম্ভব!’

    ‘আমি রাজমিস্ত্রি। অবশ্যই রাজমিস্ত্রি পরিবারের লোক।

    ‘ভালো কথা, কোনো প্রমাণ দিতে পার?

    ‘পারি। অবশ্যই পারি।’

    কী সে প্রমাণ, দেখাও তো?’

    তার মুখের কথা শেষ হবার আগেই আমি গায়ের আলখাল্লার ভেতরে হাতটা চালান করে দিলাম। একটা কর্ণিক বের করে এনে তার মুখের সামনে নাচাতে নাচাতে বললাম–প্রমাণ চাচ্ছিলেন না? এই যে, এটাই প্রমাণ দেবে যে, আমি রাজমিস্ত্রি পরিবারের লোক। আর নিজের একজন রাজমিস্ত্রি।

    সে ঝট করে কয়েক পা সরে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠল–‘বাজে কথা! তুমি আমার সঙ্গে রসিকতা করছ।

    আমি নীরবে ম্লান হাসলাম।

    সে এবার বলল–‘কিন্তু এবার চল, অ্যামন্টিলাডোর কাছে যাই।’

    আমি কর্ণিকটাকে আবার আলখাল্লার ভেতরে চালান করে দিলাম। সে আবারও বলল–কী, যাবে তো? অ্যামন্টিলাডোর কাছে যাচ্ছ তো? চল, যাওয়া যাক।

    আমি হাত বাড়িয়ে তার হাতটাকে ধরে বললাম ঠিক আছে, তাই চল! এবার দেখা গেল, সে আমার গায়ে একটু বেশি করেই ভর দিল।

    আমরা হাত ধরাধরি করে অ্যামন্টিলাডোর খোঁজে এগিয়ে চললাম।

    আমরা এবার একের পর এক খিলান পেরোতে পেরোতে অনেকগুলো খিলান পেরিয়ে নিচে নেমে গেলাম। তারপর আরও কয়েক পা এগিয়ে আবার নিচে নামতে লাগলাম।

    শেষপর্যন্ত আমরা একটা গুহার মধ্যে ঢুকে গেলাম। নাকে একটা দুর্গন্ধ আসতে লাগল। বাতাসে একটা অস্বাভাবিক ভোটকা গন্ধ। আর তার ফলে একটা জিনিস নজরে পড়ল, মোমবাতির আলোর জোর যেন অনেকাংশে কমে গেল।

    আমি এগিয়েই চললাম। গুহাটার একেবারে শেষপ্রান্তে গিয়ে আর একটা গুহা দেখতে পেলাম।

    দ্বিতীয় গুহাটায় ঢুকেই আমরা থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। দেখলাম, দেওয়াল বরাবর নরকঙ্কাল স্থূপাকৃতি হয়ে একেবারে ছাদ পর্যন্ত উঠে গেছে। অবিকল প্যারিসের বড় সমাধিক্ষেত্রের মতোই দৃশ্য। শুধুই কঙ্কাল আর কঙ্কাল।

    আমি বিস্ময় মাখানো কৌতূহলী দৃষ্টি মেলে গুহাটার চারদিকে তাকাতে লাগলাম। দেখলাম, গুহাটার তিন দিকে একই রকমভাবে নরকঙ্কাল স্থূপাকৃতি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। চতুর্থ দেওয়ালটার দৃশ্য অবশ্য অন্যরকম। সেখানকার কঙ্কালগুলোকে নিচে নামিয়ে রাখা হয়েছে। এ কারণেই সেখানে একটা ছোট স্কুপ গড়ে উঠেছে।

    চতুর্থ দেওয়ালটা থেকে কঙ্কালগুলোকে নামিয়ে স্থানান্তরিত করে ফেলার জন্য সেটা ফাঁকা হয়ে গেছে। আর এজন্যই আরও একটা ছোট গুহা আমাদের নজরে পড়ে গেল।

    তৃতীয় গুহাটার গভীরতা চারফুট, উচ্চতা ছয়-সাত ফুট আর প্রস্থ তিন ফুট।

    আমি এগিয়ে গিয়ে অনুসন্ধিৎসু নজর মেলে গুহাটাকে দেখে নিলাম। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে গুহাটা তৈরি করা হয়েছিল বলে মনে হলো না। আবার এও সত্য যে, এটাকে তৈরি করার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আমি কোনোরকম কল্পনাও করতে পারলাম না।

    কেবলমাত্র আমার কথাই বা বলি কেন, গুহাটা নিয়ে ফচুনটার কৌতূহলও কম মনে হলো না। সে হাতের মোমবাতিটাকে উঁচু করে, বার বার এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বৃথাই তার ভিতরটা ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু মোমবাতির আলো গুহাটার শেষপ্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছালা। শেষপর্যন্ত সে ব্যাপারটা সম্বন্ধে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাল, কিছুই বলল না। আমি নিজের কিছু জিজ্ঞাসা করে মাত্রাতিরিক্ত উৎসাহ দেখালাম না।

    আমি বললাম–‘এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে তো আর আমাদের অভিষ্ট সিদ্ধ হবে না। চল, এগিয়ে যাওয়া যাক। অ্যামন্টিলাডোর দেখা এখানেই পাওয়া যাবে। আর লুচেসিও’

    আমার বন্ধুবরের পা দুটো আগের চেয়ে বেশি মাত্রায় টলতে লাগল। আঁকাবাঁকা পদক্ষেপে সে সামনের দিকে এগোতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে সে বলল–‘আরে ধৎ! সে তো একটা অকাট মূর্খ দেখছি।’

    আমি তাকে ধরার আগেই লম্বা লম্বা পা ফেলে সে মুহূর্তের মধ্যেই ঘরটার একেবারে শেষ প্রান্তে হাজির হয়ে গেল।

    না, সে আর এগোতে পারল না। পাথরে পথ আটকে যাওয়ার ফলে তাকে নামতেই হল। সে পাথরগুলোর দিকে সবিস্ময়ে তাকিয়ে বিমূঢ়ের মতো দাঁড়িয়েই রইল।

    ব্যস, আর দেরি নয়। আমি যন্ত্রচালিতের মতো চোখের পলকের মধ্যেই শিকল দিয়ে তাকে পিঠমোড়া করে বেঁধে ফেললাম। তারপর শেঁকলটাকে বড় সড় একটা গ্রানাইট পাথরের সঙ্গে জড়িয়ে ফেললাম। সে বন্দি হয়ে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে রইল।

    এদিক-ওদিক দৃষ্টি ফেরাতেই দেওয়ালের গায়ে, ফুট দুই উঁচুতে পাশাপাশি, প্রায় গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দুটো আংটা রয়েছে দেখলাম। ছোট একটা শেঁকল তার একটা থেকে ঝুলে থাকতে দেখলাম। আর অন্য আংটায় একটা তালাও ঝোলানো রয়েছে। দেখতে পেলাম।

    শেঁকলটা তার কোমরে আচ্ছা করে জড়িয়ে তালাবন্ধ করতে তো মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল।

    আমার বন্ধু তখন অতি বিস্ময়ের ঘোরের মধ্যে পড়ে গেল। আর এরই ফলে বাধা দেওয়ার মতো মানসিকতা বা শক্তি সামর্থ্য কোনোটাই তার মধ্যে ছিল না। আর এরই জন্য আমার পক্ষে এত সহজে কাজটা হাসিল করা সম্ভব হল।

    এবার তালা থেকে চাবিটাকে বের করে আমি দুপা পিছিয়ে এলাম।

    বন্ধুর বিস্ময়ের ঘোর তখনও কাটেনি। সে বন্দি অবস্থায় পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়েই রইল।

    আমি তার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই বললাম–‘এবার দেওয়ালটার গায়ে হাতটা বুলাও।’

    সে পাথরের মূর্তির মতোই নিশ্চল-নিথরভাবে নীরব চাহনি মেলে আমার মুখের দিকে আগের মতো তাকিয়েই রইল।

    আমি এবার অধিকতর গম্ভীর স্বরে, প্রায় ধমক দিলাম–কী হল, দেওয়ালটার গায়ে হাত বুলাও, তবেই সোরার উপস্থিতি স্পষ্ট বুঝতে পারবে। সত্যি দেওয়ালটা খুবই স্যাঁতাতে। মনে হচ্ছে এই মাত্র কে যেন পানি ছিটিয়ে দিয়েছে। কী হল, চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলে যে বড়। হাত বুলাও, দেওয়ালটার গায়ে হাত বুলাও।

    সে আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইল।

    আমি এবার গলা নামিয়ে বললাম–‘শোন, আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ–

    আমাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই সে বলে উঠল–‘অনুরোধ? কি সে অনুরোধ।

    ‘আমি তোমাকে বার বার অনুরোধ করছি, ফিরে চল।

    ‘না। আমার পক্ষে ফিরে যাওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়।

    ‘সম্ভব নয়! এখনও বলছি ফিরে চল।

    ‘বললামই তো, যাব না, কিছুতেই যাব না।’

    তবে তুমি যাবেই না? ভালো কথা, তবে তোমাকে এখানে এ অবস্থায় ফেলে রেখেই আমি চলে যাব, বলে দিচ্ছি।

    ‘হুম!

    ‘হ্যাঁ, এ ছাড়া আর কোনো উপায়ই দেখছি না। তবে তোমাকে এ অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যাওয়ার আগে তোমার দিকে সাধ্যমত মনোযোগ দেব আমি–

    আমাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই বন্ধুবর গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে উঠল– ‘অ্যামন্টিলাডো! অ্যামন্টিলাডো!’ লক্ষ্য করলাম তার বিস্ময়ের ঘোর তখনও কাটেনি।

    আমি অপেক্ষাকৃত গলা নামিয়ে বললাম–ঠিকই বলেছ অ্যামন্টিলাডো।

    তাকে উদ্দেশ্য করে কথা ছুঁড়ে দিয়েই আমি দু-তিন পা এগিয়ে গেলাম। ব্যস্ত হাতে হাড়ের স্তূপ সরাবার কাজ শুরু করে দিলাম।

    হাড়ের স্তূপ সরিয়ে কিছু হালকা করতে না করতেই আমার চোখে পড়ল বাড়ি তৈরির ছোট-বড় পাথর আর কিছু পরিমাণ চূণ-সুড়কির ছোট ছোট দুটো স্তূপ।

    বাড়ি তৈরির মাল-মশালা পেয়ে যাওয়াতে আমার মনে উৎসাহ উদ্দীপনা রীতিমত চাঙ্গা হয়ে উঠল। আপন মনে বলে উঠলাম–‘যাক একটা দেওয়াল গাঁথার কোনো

    সমস্যাই তবে আর রইল না।

    আর মুহূর্তমাত্রও সময় নষ্ট না করে আমি আলখাল্লার তলা থেকে কর্ণিকটা ঝট করে বের করে আনলাম। তারপর সে সব মাল-মশলাগুলোকে ব্যবহার করে ঝটপট প্রাচীর গাঁথতে আরম্ভ করলাম। কর্ণিকটা সঙ্গে থাকাতে বাঁচা গেল।

    হাত চালিয়ে প্রাচীরটার প্রথম স্তরটা গাঁথা শেষ হতে না হতেই একটা ব্যাপার আমি লক্ষ্য করলাম, বন্ধুর নেশাটা অনেকাংশে কেটে গেছে।

    ব্যাপারটা আমি কিভাবে বুঝলাম, তাই না? তার প্রথম প্রমাণ পেলাম, ছোট্ট কামরাটার ভেতর থেকে বার কয়েক চাপা আর্তস্বর ভেসে এলো।

    আমি উত্তর্ণ হয়ে আর্তস্বরটাকে লক্ষ্য করলাম।

    শেষপর্যন্ত নিঃসন্দেহ হয়ে আপন মনে বলে উঠলাম–‘না, এ তো কিছুতেই মাতালের কণ্ঠস্বর নয়। মদ্যপ অবস্থায় কেউ যতই চিৎকার চ্যাঁচামেচি করুক না কেন, কণ্ঠস্বর কম বেশি জড়িয়ে জড়িয়ে উচ্চারিত হতে বাধ্য।

    বার-কয়েক আর্তনাদের পরই লক্ষ্য করা গেল সেখানে দীর্ঘস্থায়ী নিরবচ্ছিন্ন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।

    যাক, কিছুটা নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।

    আমি আবার প্রাচীর গাঁথার কাজে হাত দিলাম। ব্যস্ত হাতে কর্ণিক চালিয়ে প্রাচীরটার দ্বিতীয় তৃতীয় এবং চতুর্থ স্তরটা গাঁথার কাজও সেরে ফেললাম।

    আমি চতুর্থ স্তরটা গাঁথার কাজ সবে শেষ করেছি, ঠিক তখনই পাথরের টুকরোর প্রচণ্ড শব্দ আমার কানে এলো।

    মিনিট কয়েক দূরে অনবরত সে শব্দটা হয়েই চলল।

    শব্দটাকে ভালোভাবে লক্ষ্য করে ব্যাপারটা বোঝার জন্য হাত থেকে কর্ণিকটা নামিয়ে হাড়ের স্তূপের ওপর বসে পড়লাম।

    এবার পাথরের শব্দের সঙ্গে শেকলের ঝনঝনানী শুরু হয়ে গেল। কিছুক্ষণ ধরে এক নাগাড়ে চলল পাথর আর শেকলের শব্দটা।

    এক সময় অবাঞ্ছিত শব্দ বন্ধ হয়ে গেল।

    আমি আবার হাড়ের স্তূপ থেকে নেমে কর্ণিকটাকে হাতে তুলে নিলাম।

    আবার পুরোদমে প্রাচীর গাঁথার কাজে লেগে গেলাম। কোনোরকম বাধা বিপত্তি ছাড়াই পঞ্চম, ষষ্ঠ আর সপ্তম স্তরটাও গেঁথে ফেললাম।

    এ পর্যন্ত গাঁথার পর লক্ষ্য করলাম, প্রাচীরটার প্রায় বুক অবধি গাঁথা হয়ে গেছে। নিজের দক্ষতার জন্য ভেতরে ভেতরে খুব খুশিই হলাম।

    সপ্তম স্তর অবধি গাঁথার পর আমি আবার কাজ বন্ধ করলাম। এবার গাঁথুনির ওপর জ্বলন্ত মোমবাতিটা তুলে ধরে ভেতরের মূর্তিটার ওপর সাধ্যমত আলোকচ্ছটা ফেলে পরিস্থিতিটা দেখার চেষ্টা করলাম।

    দেখলাম, শেঁকলজড়ানো মনুষ্যমূর্তিটা গলা থেকে বেরিয়ে-আসা নিরবচ্ছিন্ন আর্তস্বর যেন আমাকে আচমকা সজোরে পিছনের দিকে ঠেলে দিল।

    আমার মধ্যে অকস্মাৎ কেমন যেন ভাবান্তর ঘটল। কয়েক মুহূর্তের জন্য আমি ইতস্তত করলাম। আমার সর্বাঙ্গ থর থরিয়ে কাঁপতে লাগল।

    আমি দিগ্বিদিক্ জ্ঞানশূন্য হয়ে বিদ্যুঙ্গতিতে খাপ থেকে তরবারিটাকে এক হেঁচকা টানে বের করে ফেললাম। এবার ব্যস্ততার সঙ্গে ছোট্ট কামরাটার ভেতরে হাতড়াতে লাগলাম। মুহূর্তের চিন্তাই আমাকে নিঃশঙ্কিত করে দিল। আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। এবার মোমবাতিটা নিয়ে দুপা এগিয়ে গেলাম। সমাধিগুলোর ওপরে হাত বুলাতে লাগলাম। নিশ্চিন্ত হলাম। সন্তুষ্টি বোধ করলাম।

    মোমবাতিটা হাতে নিয়েই আমি সদ্যগাঁথা দেওয়ালটার দিকে এগিয়ে গেলাম।

    আর্তস্বর সমান তালেই ভেসে আসছে। আমি এবার আর্তনাদের জবাব দিতে শুরু করলাম। তার কথার প্রতিধ্বনিই যে কেবল করলাম তাই নয়, নতুন কথাও বলতে লাগলাম। ক্রমে কণ্ঠস্বর উঁচু পর্দায় তুলতে তুলতে পঞ্চমে ছড়িয়ে দিলাম। আমার কণ্ঠস্বর তার স্বরকে ছাপিয়ে গেল।

    লক্ষ্য করলাম আমার কণ্ঠস্বর তার স্বরকে চাপা দিয়ে দিলে তার স্বর ক্রমে থেমে গেল। নিশ্চিন্ত হলাম। আমিও বাধ্য হয়ে নিজেকে সামলে নিলাম। এবার সেখানে অখণ্ড নীরবতা নেমে এলো।

    ক্রমে রাত ঘনিয়ে এলো। আমার প্রাচীর গাঁথার কাজও মিটে গেল। অষ্টম, নবম এবং দশম স্তরও গাঁথার কাজ আমি পুরোপুরি মিটিয়ে ফেললাম। কয়েক মুহূর্ত বিশ্রাম নিয়ে আমি আবার কর্ণিকটা হাতে তুলে নিলাম। একাদশ আর শেষ স্তরটারও একটা অংশ গাঁথা হয়ে গেল। এবার আর মাত্র একটা পাথর গেঁথে প্লাস্টার লাগানোর কাজ বাকি রইল ।

    পাথরটা খুবই বড় আর ভারী। কঠোর পরিশ্রম করে, বহু চেষ্টায় সেটাকে কোনোরকমে আংশিকভাবে জায়গামত বসাতে পারলাম।

    পাথরটা থেকে হাত দুটোকে সরাতে-না-সরাতেই কুলুঙ্গির ভেতর থেকে হঠাৎই একটা চাপা হাসির শব্দ ভেসে এলো। অট্টহাসি হলেও সেটা খুবই চাপা। আমি থমকে গেলাম। উৎকর্ণ হয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। আতঙ্কে আমার বুকের ভেতরে ঢিব ঢিবানি শুরু হয়ে গেল। চোখের পলকে আমার মাথার সব কয়টা চুল সজারুর কাঁটার মতো খাড়া হয়ে গেল।

    পরমুহূর্তেই রীতিমত বিষণ্ণ একটা স্বর আমার কানে এলো। বার বার উৎকর্ণ হয়ে লক্ষ্য করেও আমার বুঝতে খুবই কষ্ট হলো যে, সেটা আমার বন্ধুবর মহানুভব ফর্চুনাটোর বিষণ্ণ কণ্ঠস্বর।

    আবার–আবারও চাপা হাসির স্বর আমার কানে এলো–’হ্যাঁ! হা! হা!

    মস্করা। মস্করা–চমৎকার মস্করাই বটে।

    যাক, ভালোই হল, পালা করে ব্যাপারটা নিয়ে চুটিয়ে রঙ্গ-রসিকতা করা যাবে। মদের পেয়ালা হাতে নিয়ে খুব হাসাহাসি করা যাবে।

    আমি বললাম–‘অ্যামন্টিলাডো। অ্যামন্টিলাডো।

    ‘হ্যাঁ, হা! হা! হা!–হ্যাঁ, অ্যামন্টিলাডো কিন্তু খুব দেরি হয়ে যাচ্ছে না। লেডি ফার্টুনাটো আর অন্যান্য সবাই কি আমাদের জন্য পালাজ্জোতে অধীর অপেক্ষায় রয়েছে না? সে গলা ছেড়ে বলল।

    আমি সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলাম– যাওয়া দরকার তো অবশ্যই।

    ‘দেবতা মন্ত্রেসরের সন্তোষ উৎপাদন, প্রীতির জন্য।

    ‘অবশ্যই দেবতার প্রীতির জন্য!

    কিন্তু তার একটামাত্র উত্তর শোনার জন্য আমার মধ্যে অত্যুগ্র আগ্রহ জেগে উঠল। আমি উত্তর্ণ হয়ে রইলাম।

    না, আর কোনো উত্তরই ভেসে এলো না।

    আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার জোগাড় হল। বহু চেষ্টা করেও নিজেকে আর সংযত রাখা কিছুতেই সম্ভব হলো না। আমি গলা ছেড়ে চিৎকার করে বলে উঠলাম

    ‘ফর্চুনাটো? ফর্চুনাটো?

    না, আমার প্রশ্নের কোনো উত্তরই ভেসে এলো না।

    না, এবারও কোনোই সাড়া পেলাম না।

    আমি এবার সাধ্যমত গলা ছেড়ে চিৎকার করে ডাকলাম–‘ফর্চুনাটো। ফর্চুনাটো।

    তবুও কোনো কণ্ঠস্বর আমার কানে এলো না। বরং আমার কণ্ঠস্বরটা প্রতিধ্বনিত হয়ে বার বার আমার কাছেই ফিরে এলো।

    আমি অসম্পূর্ণ দেওয়ালটার গর্ত দিয়ে হাতের জ্বলন্ত মোমবাতিটাকে ভেতরে গলিয়ে দিলাম।

    না, এতেও কোনো সাড়াশব্দ আমার কানে এলো না। কেমলমাত্র ঘণ্টার ঠুং-ঠাং শব্দ ফাঁকাটা দিয়ে বেরিয়ে আমার কানে এলো। আমার হৃদযন্ত্রটা যেন হঠাৎ দুমড়ে মুচড়ে এলো, যেন বিকল হয়ে যাবার জোগাড় হল। উপলব্ধি করতে লাগলাম, সমাধিপ্রাঙ্গণটা ক্রমে ঠাণ্ডা হয়ে পড়তে লাগল। ঠাণ্ডা–অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা। ঠাণ্ডায় যেন একেবারে ঝালিয়ে যাবার জোগাড় হলাম।

    হাত চালিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজটা শেষ করার জন্য আমি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।

    অনেক চেষ্টা করে মেষ বড়সড় পাথরটাকে জায়গামত বসিয়ে দিলাম। এবার তার ওপর কর্ণিক দিয়ে তড়িঘড়ি পলেস্তারা চাপালাম।

    হাড়ের পুরনো সে প্রাচীরটাকে সদ্য গাঁথা দেওয়ালটার গায়ে আবার নতুন করে সাজিয়ে দিলাম।

    আধা শতক কাল ধরে এসব হাড়ে, হাড়ের গায়ে কোনো মানুষের হাতের ছোঁয়া লাগেনি। এদিকে কারো নজরই পড়েনি। গোড়াতে যেমন ছিল আজও ঠিক তেমনই রয়ে গেছে।

    তাদের শান্তি বিঘ্নিত হোক এটা আমার আদৌ ইচ্ছা নয়। তারা পরম শান্তিতে অবস্থান করুক।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগোল্ডেন লায়ন – উইলবার স্মিথ / জাইলস ক্রিস্টিয়ান
    Next Article লাভ ক্যান্ডি – জাফর বিপি
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }