Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যাডগার অ্যালান পো রচনাসমগ্র / অনুবাদ : জাকির শামীম

    জাকির শামীম এক পাতা গল্প1512 Mins Read0

    দ্য অ্যাসাইনমেন্ট

    দ্য অ্যাসাইনমেন্ট

    রহস্যময় এক মানব!

    রহস্যময় এক অদৃষ্ট-বিড়ম্বিত মানব।

    সে হতভাগা নিজের কল্পনার উজ্জ্বল আভায় নিজেই পথ হারিয়ে ফেলেছে। পতঙ্গের মতো উদ্ভ্রান্ত হয়ে নিজের যৌবনের আগুনে নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাস্তবে নয়, কল্পনার মাধ্যমে তোমাকে আবার দেখছি, দেখতে পাচ্ছি। দেখতে পাচ্ছি,

    মূর্তি ধারণ করে তুমি আর একবার উঠে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়েছ।

    না না, তুমি তো ছায়াবৃত শীতল উপত্যকার আজকের তুমি নও। ঠিক যেমন তোমার হওয়া দরকার তেমন তো নও। সে তুমি তোমার মাতৃভূমি, তোমার নিজের দেশ ভেনিসের এক গাম্ভীর্যপূর্ণ মহৎ জীবনকে অবহেলা-অবজ্ঞায় অপচয়ের মাধ্যমে শেষ করে দিয়েছিলে, সে তুমি তো বর্তমানের তুমি নও।

    সত্যি, আমি আবারও বলছি, তোমার যেমন হওয়া উচিত সে তুমি তো নও।

    এ লোকটা ছাড়া আর লোকের অস্তিত্ব অবশ্যই আছে। মানুষের ভাবনা চিন্তা ছাড়া অন্য চিন্তা-ভাবনাও আছে; কূটনীতিবিদদের মতবাদ ছাড়া অন্য মতবাদের অস্তিত্ব আছে। অতএব তোমার চরিত্র সম্বন্ধে কে প্রশ্নের অবতারণা করবে? তোমার স্বপ্ন-দেখা দিনগুলো সম্বন্ধে তোমার ওপর কেই বা শেষ চাপিয়ে দেবে? আর তোমার যেসব কাম-কাজ শাশ্বত শক্তির ধারামাত্র তাকে কে জীবনের অবক্ষয় বলবে, কুৎসা গাইবে?

    ভেনিসের মানুষ যে পথকে পন্ডে দ্য সমৃপিরি বলে সম্বোধন করে, (মাথার ওপরে ছাউনি দেওয়া বিশেষ ধরনের পথের কথা বলছি) –তারই তলায় যে লোকটার সঙ্গে আমার তৃতীয় অথবা চতুর্থবার দেখা হয়েছিল তার কথাই আমি বলতে চাইছি।

    আর সেখানকার যে পরিবেশে আমাদের সাক্ষাৎ ঘটেছিল সে কথাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্মৃতিগুলোকে ঘেঁটে এখন আমি ব্যক্ত করছি। তবুও আমার স্মৃতিতে ভেসে উঠছে, উফ! সে-কথা কি আমি স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারি, নাকি ভুলে যাওয়া সম্ভব? সেই মাঝরাত, সেই ব্রীজ অব সাইজ। সে অতুলনীয় নারী আর সে রোমান্স–খালের এপাড় থেকে ওপাড়ে প্রতিভা যে ঘুরে ঘুরে বেড়াত।

    রাত! মাঝরাত! ঘুটঘুঁটে অন্ধকার রাত। চকের ইয়া পেল্লাই ঘড়িটায় ইতালীয় সন্ধ্যার পঞ্চম ঘণ্টা গম্ভীর আওয়াজ তুলে বেজে গেছে।

    ক্যাম্পানাইল স্কোয়ারটা জনমানবশূন্য। অবর্ণনীয় নিস্তব্ধতা সেখানে বিরাজ করছে।

    প্রাচীন ডিউক প্রাসাদের অত্যুজ্জ্বল বাতিগুলো এক এক করে নিভতে শুরু করেছে। একটু একটু করে অন্ধকার নামতে নামতে এক সময় অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেল অতিকায় প্রাসাদটা।

    আমি ছোট চক থেকে বড় খালের গা-বেয়ে ভিঙি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম।

    কিন্তু খাল বরাবর আমার ডিঙিটা সান সার্কো খালের মোহনার বিপরীতে পৌঁছতে-না পৌঁছতেই রাতের অন্ধকার ভেদ করে বাতাস বাহিত নারীকন্ঠের তীব্র ও দীর্ঘ আর্তনাদ আমার কানে এলো।

    আকস্মিক আর্তস্বরটা শোনামাত্র আমি সচকিত হয়ে এক লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আমার আকস্মিক লাফে ভিঙিটা একদিকে কাত হয়ে ডুবতে ডুবতে কোনোরকমে বেঁচে গেছে।

    আর ডিঙি চালকের হাত থেকে একমাত্র বৈঠাটা হঠাৎ ঝপাৎ করে হাত ফসকে পানিতে পড়ে গেল। ব্যস, একে ঘুটঘুঁটে অন্ধকার তার ওপর স্রোতের টানে বৈঠাটা যে ভেসে কোথায় চলে গেল হদিসই পেলাম না।

    বৈঠাটা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় স্রোতের টানের ওপরই আমাদের ভিঙিটার গতি অব্যাহত রাখা সম্ভব হলো। তাই অন্যন্যোপায় হয়ে আমরা স্রোতের টানে এগিয়ে চললাম।

    আমরা তখন যেখানে অবস্থান করছিলাম সেখানকার সব স্রোতই বড় খাল থেকে ছোট খালের দিকে প্রবাহিত হয়।

    আর আমরা এর ফলে অতিকায় শুকনের মতো ব্রীজ অব সাইজ-এর দিকে আমাদের ভিঙিটা মন্থর গতিতে এগিয়ে চলল।

    ভিঙিটা আমাদের নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ঠিক তখনই ডিউকের সুবিশাল প্রাসাদটার প্রতিটা জানালা আর সিঁড়ির ধাপগুলোতে হাজার হাজার জ্বলন্ত মশালের আলো ঠিকড়ে চোখের পলকে সে ঘুটঘুঁটে অন্ধকার রাত যেন দিনের মতো ঝলমলিয়ে উঠল। সীসা-রঙের অস্বাভাবিক দিনের আলোয় সবকিছু উদ্ভাসিত হয়ে পড়ল।

    একটু পরেই সুবিশাল ও সুউচ্চ প্রাসাদটার ওপর তলাকার একটা জানালা দিয়ে মায়ের কোল থেকে হঠাৎ ফসকে একটা শিশু নিচের গভীর অন্ধকার খালের পানি পড়ে গেল।

    খালের শান্ত পানি পড়ায় হতভাগ্য শিশুটা সহজেই তলিয়ে গেল। সে মুহূর্তে তার কাছাকাছি আমার ভিঙিটাই ছিল। তা সত্ত্বেও বহু দক্ষ সাঁতারুই ইতিমধ্যে ঝাঁপিয়ে তার খোঁজে বৃথাই পানি তোলপাড় করতে লাগল।

    হায়! যে হারানিধির খোঁজে তারা অনবরত পানি তোলপাড় করে চলেছে সে যে এতক্ষণে কোন অতল গহ্বরে তলিয়ে গিয়ে থিতু হয়ে গেছে।

    তখন পানি থেকে মাত্র সিঁড়ির কয়েকটা ধাপ ওপরে, প্রাসাদের সদরদরজার গায়ে কালো পাথরে বাঁধাই চওড়া পাথরটার ওপরে দাঁড়িয়ে-থাকা মূর্তিটাকে তখন যারা দেখতে পেয়েছিল তারা কেউ কোনোদিনই তাকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারবে না।

    কে সে? সেটা কার অতিকায় মূর্তি? তার নাম মারচেসা এফেফাদিতে। সারা ভেনিসের মানুষের চোখের মণি, বড়ই আদরের মানুষ, সদাহাস্যময় নারী, সুন্দরীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুন্দরী, সুন্দরী শ্ৰেষ্ঠা-বুড়ো অস্থিরমতি প্রেমিকা তরুণী স্ত্রী, প্রথম এবং একমাত্র সন্তান এ রূপবান শিশুটার মা এখন যে খালের শীতল পানির তলায় শায়িত।

    নারী একা, একদম একা দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার রূপার মতো সুদৃশ্য খোলা পা দুটো নিচের আয়নার মতো মসৃণ কালো পাথরের ওপর ঝলমল করছে।

    রূপসি নারীর বল-নাচের কায়দায় বাঁধা চুলের গোছাটা আধখোলা অবস্থায় পিঠের ওপর এলিয়ে পড়েছে। তার গায়ে হীরার একটা মালা জড়িয়ে দেওয়ায় তার সৌন্দর্য অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে।

    বরফের মতো ধবধবে সাদা সুতোয় বোনা একটা মাত্র বস্ত্রখণ্ড দিয়ে তার রূপ লাবণ্যকে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্য কোনো আবরণের চিহ্নমাত্রও নেই।

    তা সত্ত্বেও সারা রাতের উষ্ণ বিষণ্ণতায় ভরপুর আর অচঞ্চল বাতাসেও সে মিহি বস্ত্রখণ্ডের আবরণটার একটা ভাজও উড়ছে না, নড়ছেও না এতটুকুও।

    তবুও কী অত্যাশ্চর্য ব্যাপার! তার একমাত্র প্রদীপের সলতে, একমাত্র আশার। আলো খালের পানির অতল গহ্বরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে, সেদিকে কিন্তু তার উজ্জ্বল চোখের মণি দুটো নিবদ্ধ নেই।

    তবে? সে রূপসি নিস্পলক চোখে, স্থির দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে। এমন অসম্ভব কোনো ব্যাপারের কথা ভাবা যায় না, কি ভাবতে উৎসাহ পাওয়া যায়। তবুও যা বাস্তব তাকে তো আর অস্বীকার করা যাবে না।

    আমার বিশ্বাস, পুরনো প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রের কারাগারটাই ভেনিস নগরের উচ্চতম বাড়ি। কিন্তু এ নারী কিভাবে সে বাড়িটার দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে আছে ভাবলে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে পড়তে হয়। আর তা কখন, কোন্ মুহূর্তে? যখন তারই একমাত্র সন্তান নিচেই শীতল সলীল সমাধিতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে।

    আর দূরবর্তী ওই ঘুটঘুঁটে অন্ধকার, বিষাদময় কুলুঙ্গীটাও তারই জানালার বিপরীত দিকে যেন বিরাট গ্রীবা বিস্তার করে অবস্থান করছে।

    তবে সে সুবিশাল বাড়িটার ছায়ায়, তার স্থাপত্য ও ভাস্কর্যগতিতে, তার আইভিলতা ঝুলে থাকা গম্ভীর কার্নিসটায়, এমনকি আকর্ষণীয় থাকতে পারে যা মারচেসা দ্য মেননী ইতিপূর্বে অন্তত হাজারবার চাক্ষুষ করেছে।

    বাজে কথা! কী সব বাজে কথা! কার না জানা আছে যে, এরকম মানুষের চোখ দুটো ভাঙা-আয়নার একটা বিষণ্ণতাকে, একটা দুঃখ-যন্ত্রণাকে বহুগুণ প্রতিবিম্বিত হতে দুঃখ-যন্ত্রণাকে হাতের নাগালের মধ্যে দেখে অগণিত দ্রব্য সামগ্রির মধ্যে প্রতিফলিত হতে? জানে, সবাই-ই তা জানে।

    মেনতনি! মারচেসার থেকে বেশ কিছু সংখ্যক সিঁড়ি ওপরে, পানি দরজার খিলানের তলায় পরিপূর্ণ হয়ে মেনতনি স্বয়ং যক্ষের মতো অবস্থান করছে।

    কেন মেনতনি দাঁড়িয়ে, কেন? কি করছে সেখানে দাঁড়িয়ে? পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে একটু পর-পর সে হাতের গিটারের তারে টোকা মারছে। আর? আর কিছুক্ষণ বাদে-পরেই সন্তানকে খোঁজ করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে। গিটারের তারে টোকা মারছে। আর সন্তানের খোঁজ করতে বলছে। ব্যস, এটুকুই।

    এমন একটা ব্যাপার চোখের সামনে দেখে আমিও যেন কেমন হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। সে মুহূর্তে হঠাৎ করে কর্তব্য নির্ধারণ করাই আমার পক্ষে নিতান্ত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

    আর্তস্বরটা প্রথম শুনেই আমি যে ভিঙিটার ওপর যন্ত্রচালিতের মতো লাফিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম, সে মুহূর্ত থেকেই আমি যেন চলার মতো শক্তি সামর্থ্যটুকুও হারিয়ে ফেলেছিলাম।

    কার্যত যা দেখা গেল তা হচ্ছে, উত্তেজিত জনগণের দৃষ্টিতে আমি যেন একটা অলৌকিক অশুভ উপস্থিতিতে পরিণত হয়ে যাই। ফ্যাকাশে বিবর্ণ মুখ আর নিশ্চল নিথর হাত-পাসহ সে ভিঙিটায় চেপে আমিও তাদের মিছিলে ভাসতে ভাসতে এগিয়ে যেতে লাগলাম। তাদের দলের ভিড়ে আমি চলছি তো চলছিই। না, সব চেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো।

    এতগুলো লোক একজোট হয়ে দীর্ঘসময় ধরে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পানি তোলপাড় করল। কিন্তু ফায়দা কিছুই হলো না। অনুসন্ধানকারীদের মধ্যে অনেকে দীর্ঘ নিরলস কঠোর পরিশ্রম করেও ব্যর্থ হয়ে, হতাশায় জর্জরিত মনে অনিবার্য দুঃখকে স্বীকার করে নিয়ে বিশ্রাম নিতে লাগল।

    না, জলমগ্ন শিশুটাকে উদ্ধারের আশা আর কারোই রইল না, তার মায়েরও না। সবার মুখেই হতাশার কালো ছায়া।

    ঠিক তখনই কারাগারের যে কুলুঙ্গিটার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তারই জমাটবাঁধা অন্ধকার কোণ থেকে অতর্কিতে বেরিয়ে এলো একটা আবছা মূর্তি। আপাদমস্তক আলখাল্লায় মোড়া একটা মূর্তি।

    অন্ধকারের বুক চিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা খাড়া পাহাড়টার চূড়ার ওপর উঠে মূর্তিটা মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। পর মুহূর্তেই আচমকা লাফিয়ে পড়ল খালের ঠাণ্ডা পানিতে।

    কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই মূর্তিটা শিশুটাকে জীবিত শিশুটাকে বুকে জাপ্টে ধরে পানির ওপরে ভেসে উঠল।

    তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে জীবিত শিশুটাকে বুকে জড়িয়ে ধরেই সে কালো পাথরটার ওপর এসে মারচেসারের পাশে দাঁড়াল। পানিতে ভিজে জবজবে ও ভারী হয়ে যাওয়ায় মূর্তিটার গায়ের আলখাল্লাটা মহিলার পায়ের কাছে খুলে পড়ে গেল।

    দর্শকরা বিস্ময়বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল দীর্ঘদেহী ও সুঠাম যুবকটার মূর্তির দিকে। তাকিয়ে রইল ইউরোপের প্রায় সর্বত্র প্রতিটা আনাচে কানাচেও যার নাম লোকের মুখে মুখে উচ্চারিত ও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। সত্যি যুবকটা এক অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার। উদ্ধারকারী যুবক একটা কথাও উচ্চারণ করল না। সে গম্ভীর মুখে জীবিত শিশুটাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

    কিন্তু মারচেসা? মারচেসা তো তার সন্তানকে ফিরে পাবে, জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদকে বুকে জড়িয়ে ধরবে। আদরে-সোহাগে তাকে বিপর্যস্ত করে তুলবে।

    হায়! এ কী অবিশ্বাস্য কাণ্ড! মুহূর্তের মধ্যে আর এক জোড়া হাত এগিয়ে এসে বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে শিশুটাকে নবাগত যুবকটার হাত থেকে তুলে নিল। বহু বহুদূরে নিয়ে চলে গেল। তাকে নিয়ে গেল সবার চোখের আড়ালে, প্রাসাদের ভেতরে হাজির হলো।

    কিন্তু মারচেসা! মারচেসা-র ঠোঁট দুটো তিরতির করে কাঁপতে লাগল। মুহূর্তের মধ্যে তার চোখ দুটো পানিতে ভরে উঠল। একে স্থাস ফুলের পাপড়ির মতো নরম আর প্রায় তরল চোখ–চোখের মণিদুটো যেন পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে।

    সত্যি! চোখ দুটো কাণায় কানায় পানিতে ভরে উঠেছে। দেখুন ওই দেখুন, কেমন পানি থৈ থৈ করছে।

    আর মরচেসার দেহ আর মন বার বার কেমন শিহরিত হয়ে উঠছে। একটু আগেও যা নিশ্চল-নিথর পাথরের মূর্তি ছিল। এখন তার মধ্যে যেন প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে; পাথরের মূর্তি যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। তার মুখের পাথরের মতো পাগ্রতা, পাথরের বুক ওঠা-নামা আর পাথরের পা দুটো বরফের মতো ধবধবে সাদা রঙ–হঠাৎই কিছুর ওপর যেন রক্তিম স্রোত বয়ে চলল।

    নেপোলির মৃদুমন্দ বাতাস যেমন ঘাসের রূপালি ফুলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তিরতির করে কাঁপতে থাকে, ঠিক তেমনই মৃদু একটা কম্পন শিহরণ তার দেহ পল্লবের ভেতরে বইতে লাগল।

    এ কী অভাবনীয়, অদ্ভুত ব্যাপার! মারচেসা অকস্মাৎ কেন এমন রক্তিম হয়ে উঠল? কেন তার মধ্যে এমন অবিশ্বাস্য পরিবর্তনের জোয়ার বইতে শুরু করেছে?

    না, এ প্রশ্নের কোনো জবার দেওয়া সম্ভব নয়, আসলে কোনো জবাবই যে নেই। কেবলমাত্র এটুকুই বলা যেতে পারে, মায়ের ভীত সন্ত্রস্ত মন, নিরবচ্ছিন্ন আতঙ্কের জন্য লম্বা লম্বা পায়ে শোবার ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় চটি পরা সম্ভব হয়নি। আসলে চটি পরার মতো মানসিকতাই তার ছিল না। তার ওপর খোলা কাঁধের ওপর প্রয়োজনীয় আবরণ চাপানোও হয়নি। এ যদি না-ই হয় তবে তার দেহল্লব অকস্মাৎ এমন লক্ষিত বা হবে কেন?

    আর চারদিকের বহু অনুসন্ধিৎসু চোখের চাহনি কি? –কাঁপা কাঁপা বুকের বার বার অস্বাভাবিক ওঠা নামা কি?

    কি? কি? কি? নবাগত যুবক মেনতানি প্রাসাদের দিকে এগিয়ে যাবার পর আকস্মিকভাবে তার একটা হাত কি রূপসি মারচেসার কাঁধ ছুঁয়ে গিয়েছিল–তাই কি? সে জন্যই কি তার মধ্যে এমন আকস্মিক পরিবর্তন লক্ষিত হচ্ছে! সে যুবকটার কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় সে এতই গলা নামিয়ে, অস্বাভাবিক গলা নামিয়ে অথবা খুবই দ্রুততার সঙ্গে সে অর্থহীন কথাগুলো উচ্চারণ করেছিল কেন?

    কি বলেছিল, কি বলেছিল সে? সে কি বলেছিল পানির কুলকুল রবকে আমি ভুল শুনেছিলাম, তুমিই বিজয়ীর সম্মানলাভে ধন্য হয়েছ। সূর্যোদয়ের এক ঘণ্টা পরে, আমরা মিলিত হব–কথা থাকল। এমন অর্থহীন কথা কেন সে উচ্চারণ করেছিল?

    সমবেত জনতা ক্রমে নীরব হতে লাগল। এক সময় হৈ হট্টগোল, চিৎকার চ্যাঁচামেচি, গণ্ডগোল সবই থেমে গেল–পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলো।

    এক এক করে প্রাসাদটাগুলো ঘুটঘুঁটে অন্ধকারে আত্মগোপন করে রইল। আর সে আগন্তুক যুবক? হ্যাঁ, আমি এখন তাকে সনাক্ত করতে পেরেছি। মসৃণ কালো পাথরটার ওপর সে একা, একেবারেই একা দাঁড়িয়ে থাকল।

    আগন্তুক যুবকটা এখন কল্পনাতীত উত্তেজনায় থর থর করে কাঁপছে। আর অনুসন্ধিৎসু নজরে একটা ডিঙি নৌকার খোঁজে বার বার এদিক-ওদিক তাকাতে লাগল। তার অবস্থা দেখে আমি তাকে আমার ডিঙিটায় উঠতে না বলে পারলাম না। আর সেও নিজের সমস্যা দূর করতে গিয়ে আমার ভদ্রতাটুকুর সুযোগ নিল।

    আমরা উভয়ে খোঁজাখুঁজি করে দরজাটার কাছ থেকে একটা বৈঠা জোগাড় করে ফেললাম। এবার বৈঠার টানে ভিঙিটা আমার নিয়ে তরতর করে আগন্তুক যুবকটার। মাথা গোঁজার স্থানের উদ্দেশ্যে এগিয়ে চললাম।

    ভিঙিতে উঠে আগন্তুক যুবকটা আমার মুখোমুখি বসল। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে সে নিজেকে সামলে সুমলে নিল। তারপর আমাদের সামান্য পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে সে রীতিমত বিনয়ের সঙ্গে এবং যথেষ্ট ভদ্রতা বজায় রেখে আমার সঙ্গে কথা বলতে আরম্ভ করল।

    আমার নিজের কথায় আবার ফিরে যাই। সত্যি বলতে কি, এমনকিছু কিছু ব্যাপার আছে যার খুঁটিনাটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে, চিন্তাভাবনা করতে আমার খুব ভালো লাগে।

    আগন্তুক যুবকটা জগতের কাছে এখনও আগন্তুক বলেই পরিচিত। তার অন্য কোনো পরিচয় তো কারোই জানা নেই। তাই বাধ্য হয়ে আমিও তাকে আগন্তুক বলেই সম্বোধন করব। এ ছাড়া উপায়ও তো কিছু নেই। এ ছাড়া তার চেহারা ছবিটাও তো সে রকমই একটা ব্যাপার।

    তার উচ্চতা সঠিক জানা নেই, আর তা না জানলেও তার দৈহিক বিবরণ দেওয়ার তেমন কোনো সমস্যা হবে না। এতএব এভাবেই ব্যাপারটা ব্যক্ত করছি– মাঝারি উচ্চাতার চেয়ে একটু কমই তার দৈহিক উচ্চতা। তবে এত সত্য যে, প্রচণ্ড কোনো আবেগ-উচ্ছ্বাসের মুহূর্তে তার দৈহিক উচ্চতা সামান্য বেড়ে যায়।

    আর তার গড়ন একহারা। এ চেহারায় ব্রীজ অব সাইজ-এ কাজের তৎপরতার যতটা পরিচয় পাওয়া যায়, বিপদের মুহূর্তে কিন্তু ঠিক অতটা মেলে না। অর্থাৎ হারকিউলিসের মতো তার যে শক্তির খ্যাতি রয়েছে, তা কিন্তু বিপদের মুহূর্তে ছাড়া অন্য কোনো সময় লক্ষিত হয় না।

    এবার তার মুখায়বের দিকে নজর দেওয়া যাক। সত্যি করে বলতে গেলে তার মুখ আর থুতনিতে দেবতাসুলভ আদল বর্তমান। টানাটানা চোখ দুটো অসংযত। আর সে দুটো বাদামি থেকে কালো পর্যন্ত রং পরিবর্তিত হয়।

    আর মাথাভর্তি একরাশ কোঁকড়ানো কালো চুল। চুলের গোছার ফাঁক দিয়ে তার উন্নত ও প্রয়াত কপালটা থেকে থেকে চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ফলে মনে হয়, আলো আর হাতির দাঁতের শুভ্রতায় ঝলমল করতে থাকে।

    সবকিছু মিলিয়ে এমন একটা দর্শনীয় দেহসৌষ্ঠব চোখের সামনে ধরা দেয় যার তুলনা চলতে পারে একমাত্র সম্রাট কমোভাস-এর শ্বেতপাথরের মূর্তির সঙ্গেই। সত্যি কথা বলতে কি, সম্রাট কমোভাস-এর মূর্তি ছাড়া তার মতো দেহসৌষ্ঠব অন্য কোথাও, অন্য কারো মধ্যেই আমি অন্তত দেখিনি।

    আর স্পষ্ট করে বললে আগন্তুক যুবকের মুখে এমন কোনো বৈশিষ্ট্য লক্ষিত হয়, এমন কোনো স্থায়ী প্রকাশভঙ্গিও নেই যা স্মৃতির পাতায় আঁকা হয়ে যেতে পারে, দীর্ঘসময় মনে থাকে। অর্থাৎ তার মুখটা এমনই একটা মুখ যা দেখার পর মুহূর্তেই মন থেকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যায়। আরও আছে, তার মুখটা মন থেকে মুছে ফেললেও আবারও অন্তরের অন্তরতম কোণে টেনে আবার চাপা ও অফুরন্ত আকাঙ্ক্ষা অবশ্যই থেকে যায়। তবে এও খুবই সত্য যে, প্রত্যেকটা দ্রুতগতিসম্পন্ন আবেগই যে তার মুখের আয়নায় স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয় না তা নয়। তবে যে কোনো আয়নার মতোই আবেগটা যখন ফুরিয়ে যায় তখন মুখের আয়নায় তার কিছুমাত্র নজিরই রেখে যায় না। অর্থাৎ সবটুকু চিহ্নিই নিঃশেষ হয়ে যায়।

    সে-রাতে আগন্তুক যুবকটার সঙ্গে যখন আমার ছাড়াছাড়ি হলো, অর্থাৎ যখন বিদায় নিয়ে আমার কাছ থেকে চলে গেল, তখন সে আচমকা আমার হাত দুটো চেপে ধরল। আমি ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলে তার মুখের দিকে তাকালাম।

    সে আমার হাত দুটো চেপে ধরে বলল–বন্ধু, তোমাকে একটা অনুরোধ করতে চাই।

    বল, কি বলতে চাইছ, নির্দিধায় বল?

    কথা দাও, আমার অনুরোধ তুমি রাখবে?

    আমি ম্লান হেসে বললাম–কি তোমার অনুরোধ তাই তো জানা হলো না, কথা দেব কি করে?

    আমার হাত দুটো ধরে রেখেই সে বলল–আগামীকাল খুব ভোরে তোমাকে আমার সঙ্গে দেখা করতে হবে। কথা দাও, তুমি যাবে।

    আমরা বুঝতে পারলাম, ব্যাপারটা খুব জরুরি। তাই মুখের হাসিটুকু অব্যাহত রেখেই আমি ঘাড় কাৎ করে তার কথার জবাব দিলাম–কথা দিচ্ছি, কাল ভোরে তোমার ওখানে যাব।

    আমি কথা রক্ষা করলাম। পরদিন কাকডাকা সকালে তার পাল্লাজোতে উপস্থিত হলাম। সুবিশাল এক প্রাসাদ। কেবলমাত্র সুবিশাল বলাটা হয়তো ঠিক হবে না। জাকজমকপূর্ণ, অসাধারণ কারুকার্যমণ্ডিত একটা প্রাসাদ। বড় খালটার গায়ে, রিয়ালোটর অদূরে সেটা অবস্থিত। তবে এও সত্য যে, হঠাৎ করে দেখলে মনে হয় পরিবেশ–বিশেষ করে বাড়িটা যেন রীতিমত বিষণ্ণতায় ভরপুর।

    আমি সদর-দরজায় পা দিতেই এক প্রবীন ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে এসে আমাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল।

    আমি তার পিছন পিছন মোজাইক-করা একটা চওড়া ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে লাগলাম।

    লোকটা আমাকে নিয়ে এমন একটা ঘরে গেল যার ভেতরে ঢোকার আগেই, দরজার সামনে দাঁড়াতেই ঘরের ভেতরের বহু মূল্য বস্তু সামগ্রির অতুলনীয় উজ্জ্বলতা খোলা-দরজা দিয়ে বিচ্ছুরিত হয়ে আসায় চোখ দুটোকে এমন ধাধিয়ে দিল যে, আমি যেন দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে অন্ধ হয়ে গেলাম।

    আমার পূর্ব পরিচিত ব্যক্তি যে বিত্তশালী–অগাধ ধন সম্পদের মালিক, তা আমার জানা ছিল বটে। তবে সে একজন রীতিমত টাকার কুমির এ বিষয়ে আমার তিলমাত্র সন্দেহও নেই। তবে এও স্বীকার করছি, তার ধন-দৌলতের বর্ণনা আমি যেরকম ভাষায় শুনেছি তাকে আমি নিজেই অতিরঞ্জিত ও হাসির ব্যাপার আখ্যা না দিয়ে পারিনি; ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে আমার কাছে পরিবেশন করা হয়েছে, এ ব্যাপারে আমি নিঃসন্দেহই হয়ে পড়েছিলাম।

    কিন্তু চারদিকে কৌতূহল মিশ্রিত বিস্ময়ের সঙ্গে দৃষ্টিপাত করে করে যা-কিছু আমার সামনে ধরা দিল, তাতে আমি বিশ্বাস করতেই উৎসাহ পাচ্ছিলাম না যে, এমন রাজৈশ্বর্য ইউরোপের কোনো মানুষের বাড়িতে থাকা সম্ভব। কেবলমাত্র আমার কথাই বা বলি কেন? নিতান্ত হলফ করে বললেও কেউই এমন ধন-ঐশ্বর্যের অস্তিত্বের কথা বিশ্বাস করবে না–বিশ্বাস করার মতো ব্যাপারও নয়।

    আমি আগেই বলেছি ভোরের আলো ফুটে গেছে। এখন পূব-আকাশে সূর্যদেব উঁকি দিতে শুরু করেছেন। ক্রমে সূর্যের রক্তিম আভায় প্রকৃতি উদ্ভাসিত হয়ে গেল।

    এত বেলা হয়ে গেছে তবু ঘরের মধ্যে এখনও অনেক, অনেক উজ্জ্বল বাতি জ্বলছে। ঘরের অবস্থা, জ্বলন্ত বাতি, সবকিছু দেখে এবং আমার বন্ধুর চোখ-মুখের ক্লান্তির ছাপটুকু চাক্ষুষ করে আমি ধরেই নিলাম গত রাতে সে বিছানায়ই আশ্রয় নেয়নি। সে সম্পূর্ণ বিদ্রি অবস্থাতেই সারাটা রাত কাটিয়েছে।

    ঘরটার ভেতরের স্থাপত্য, বিশেষ করে ভাস্কর্য শিল্পরীতি এবং আসবাবপত্র ও সাজসজ্জা দেখলেই অনুমান করা যায় যে, মানুষের চোখ দুটোকে ঝলসে দিতে আর চমক সৃষ্টি করতে এ সবের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

    উপরোক্ত উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতে গিয়ে শালীনতাবোধ অথবা জাতীয়তাবোধের দিকে সামান্যতম নজরও দেওয়া হয়নি।

    আমার চোখের মণি দুটো একটা বস্তুর ওপর থেকে অন্য একটা বস্তু, তার পর সেটা থেকে অন্য আর একটা বস্তুর ওপর অনবরত চক্কর খেতে লাগল। কোনো বস্তুর ওপরই বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না বা স্থির হয়ে বসল না।

    আমার দৃষ্টি ইতালীয় শিল্পীদের সবচেয়ে ভালো ভাস্কর্যশিল্পের ওপর স্থির থাকল না। এমনকি গ্রীক চিত্রশিল্পীদের অত্যদ্ভুত মূর্তির ওপরও নয় আবার মিশরের অতিকায় খোদাই-শিল্পসামগ্রির ওপরও নয়। এমনকি ঘরের দরজা-জানালার পর্দাগুলোতেও বৈচিত্রের ছোঁয়া আছে। ধরের বহুমূল্য পর্দাগুলোনিচু পর্দার বিষণ্ণ সুরের তালে তারে আলতোভাবে দোল খাচ্ছে। কিন্তু সে সুরের উৎস যে কোথায় তা আমার কাছে অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে।

    অদ্ভুত কারুকার্যমণ্ডিত ধুনচি থেকে বাতাসবাহিত পরস্পর বিরোধী ধূপের গন্ধ নির্গত হয়ে নাকে এসে পৌঁছাচ্ছে। হরেক রঙের অগণিত আলোকরশ্মির দশ ইন্দ্রিয়কে বিভ্রান্ত ও বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে।

    ঘরের বিভিন্ন আকৃতি ও রঙ বিশিষ্ট দ্রব্য সামগ্রির ওপর ভোরের রক্তিম ও তাজা আলোকচ্ছটা পতিত হচ্ছে। আর সে আলোকচ্ছটা গলিত চিলি সোনার বহু মূল্য কার্পেটের গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যেন হাজারো শিখায় ঝিল্লা দিচ্ছে। আর সে আলোকচ্ছটায় ঘরের সবকিছু যেন উদ্ভাসিত হয়ে পড়ছে। সে যে কী অপরূপ শোভা তা ভাষার মাধ্যমে কারো মধ্যে সম্যক ধারণা দান করা সম্ভব নয়।

    আমি ঘরের দরজায় দাঁড়িয়েই ভেতরের সবকিছুর ওপর কৌতূহলী চোখের মণি দুটো বুলাতে লাগলাম। অন্য কোনো দিকে আমার খেয়ালমাত্রও নেই। এমন সময় গৃহকর্তা আচমকা যেন অট্টহাসিতে ফেটে পড়ার জোগাড় হলো। হাসতে হাসতে তার যেন দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগল।

    পর মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে, হাসি থামিয়ে গৃহকর্তা অঙ্গুলি-নির্দেশ করে একটা চেয়ারে আমাকে বসতে অনুরোধ করলেন। তারপরই একটা অটোম্যানের ওপর। টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল।

    আমার ভ্যাবাচ্যাকা-খাওয়া ভাবটা দেখে সে বলল–আমার ঘরটা যে তোমার মধ্যে বিস্ময়ের সঞ্চার করেছে তা আমার বুঝতে বাকি নেই, বন্ধু। কথা বলতে বলতে সামনের মূর্তিগুলোর দিকে অঙ্গুরিনিদের্শ করে বলল–এই যে পাথরের মূর্তিগুলো দেখছ–ঔসব ছবি, আর ভাস্কর্য শিল্প নিদর্শন এবং পর্দাগুলোর ব্যাপারে আমার নিজস্ব রুচি এবং ধ্যান-ধারণা তোমার মধ্যে বিস্ময়ের উদ্রেক করেছে। আমার প্রাসাদ ও অন্যান্য জাকজমক তোমার মনপ্রাণকে একেবারে কাণায় কাণায় ভরিয়ে দিয়েছে, তাই না? কিন্তু সুপ্রিয় আমাকে কিন্তু মার্জনা করতে হবে।

    আমি আচম্বিতে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলে তার মুখের দিকে তাকালাম। মনে মনে ভাবলাম, ক্ষমা? কেন ক্ষমা? ক্ষমার প্রশ্ন উঠছে কেন?

    আমাকে মুখ খোলার সুযোগ না দিয়ে গৃহকর্তাই আমার মুশকিল আসান করতে গিয়ে বলল–কী ভাবছ বন্ধু? কেন ক্ষমা, তাই ভাবছ তো? আমাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই সে বলল–আমার উদাত্ত হাসির কথা বলতে চাইছি। আমার উদাত্ত হাসিকে মার্জনা করতেই হবে।

    আমার চোখ-মুখের বিস্ময়ের ছাপটুকু গৃহকর্তার নজর এড়াল না। আমার মুখের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে সে এবার বলল–কী ব্যাপার, বল তো বন্ধু, তোমার মুখের বিস্ময়ের ছাপটুকু যে কিছুতেই মিলছে না। তোমার অবস্থা যে একেবারেই কাহিল হয়ে পড়েছে দেখছি!

    আমি ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে তার দিকে নীরব চোখ মেলে তাকিয়ে রইলাম। সে তার বক্তব্য অব্যাহত রাখল–হ্যাঁ যে কথা বলতে চাচ্ছিলাম, এমনকিছু কিছু জিনিসের অস্তিত্ব লক্ষিত হয় যা পুরোদস্তুর হাস্যকর। আর তাতে মানুষের হাসতে হাসতে পেটে খিল লেগে যাবার জোগাড় হবে, নয়ত মরেই যাবে।

    মরে যাবে! হাসতে হাসতে মরে যাবে!

    হা বন্ধু, হ্যাঁ। হাসতে হাসতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া, এর চেয়ে গৌরবের কিছু আছে, নাকি থাকতে পারে, তুমিই বল? স্যার টমাস মোরের নাম নিশ্চয়ই তোমার শোনা আছে, কী বল?

    আমি মুখ তুলে তাকালাম।

    কিন্তু আমাকে হ্যাঁ বা না উত্তর দেবার আগেই গৃহকর্তাই আবার বলতে শুরু করল–স্যার টমাস মোর, বড় ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। স্যার টমাস মোর হাসতে হাসতেই পরলোকে পাড়ি জমিয়েছিলেন। আহা! বড় ভালো লোক ছিলেন!

    মুহূর্তের জন্য থেমে গৃহকর্তা আবার মুখ খুলল–ভালো কথা, তুমি কি জান বন্ধু, স্পার্টাতে এক সময় হাজার দেব-দেবীর মন্দির আর পবিত্র বেদী ছিল।

    আমি ঘাড় কাৎ করে নীরবে তার প্রশ্নের উত্তর দিলাম। সে পূর্ব প্রসঙ্গের জের টেনে বলে চলল হাজারো দেবদেবীর মন্দির! কিন্তু কী অত্যাশ্চর্য, একেবারেই অবিশ্বাস্য ব্যাপার, কি জানি?

    আমি কি জবার দেব ভেবে না পেয়ে তার মুখের দিকে নীরবে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম।

    সে বলে চলল–অত্যাশ্চর্য ব্যাপারটা হচ্ছে। স্পার্টার অন্য সব দেব-দেবীর মন্দির ধ্বংস মানে ভেঙে গুঁড়িয়ে গেলেও হাসির দেবতার মন্দিরটা কিন্তু শেষপর্যন্ত অক্ষত রয়ে গেল। আজও সেটা বহাল তবিয়তে সদম্ভে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

    এবার চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গৃহকর্তা বললেন–কিন্তু হায়! বন্ধু, তুমি আমার বাড়িতেনিমন্ত্রিত অতিথি, সম্মানীয় ব্যক্তি। যাকগে, সে সব পুরনো কাসুন্দি আর না-ই বা ঘাঁটলাম। যে কথা বলতে চাইছি, তোমাকে নিয়ে যে একটু-আধটু আমোদ ফুর্তি করব তারও উপায় নেই। উপায় নেই বলতে, আসার অধিকারই নেই। অতএব তোমার অবাক হবার ব্যাপারটা তো আর অমূলক নয়। তবে একটা কথা, রাজার ঘরের মতো সাজানো আমার ঐ ঘরটার মতো আর একটা ঘর তৈরি করা ও সুসজ্জিত করে তোলা ইউরোপের কারো সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলোবে না। তবে এও সত্য যে, আমার প্রাসাদের অন্য ঘরগুলো কিন্তু ঠিক এর সমান মানের নয়, উকট ফ্যাশান যাকে বলে। ফ্যাশানের চেয়ে সেটাই তো ভালো, তোমার কী মতো বন্ধু? কিন্তু এটাই আজ সবার উম্মার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে যা-ই হোক, এ ব্যাপারে আমি একটু বেশি রকমের কঠোরতা পালন করি। যে কেউ হুটহাট করে আমার প্রাসাদে প্রবেশাধিকার পায় না। আমি মাত্র দুজনকে এখানে প্রবেশ করতে দিয়েছি–একজন আমার খানসামা আর দ্বিতীয়জন হচ্ছ, বন্ধু তুমি।

    আমি কিছু সময় তার মুখের দিকে তাকিয়ে স্থবিরের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। আসলে কী ভাবে যে তার বক্তব্যের স্বীকৃতি দেব, হঠাৎ করে ভেবে পেলাম না। পর মুহূর্তেই তার বক্তব্যের স্বীকৃতিস্বরূপ মাথাটা সামান্য নত করলাম।

    বুঝতে পারলাম শয্যা ছেড়ে নামার চেষ্টা করছে। আমি ব্যস্ত-পায়ে এগিয়ে তার খাটের গা-ঘেঁষে দাঁড়ালাম। আমার কাঁধে ভর দিয়ে সে খাট থেকে নেমে এলো।

    তারপর আমার কাঁধে হাত রেখে ঘরে পায়চারি করতে লাগল।

    ঘরে ঘুরতে ঘুরতে সে আমাকে লক্ষ্য করে কয়েকটা ছবির দিকে পর পর অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলল–বন্ধু, এই যে ছবিগুলো দেখতে পাচ্ছ, সবই গ্রীক আমল থেকে শুরু করে সিমাবু কাল পর্যন্ত, আর সিমাবু আমল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত পর পর টাঙানো হয়েছে।

    তাই বুঝি?

    অবশ্যই। আর একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে তুমি নিজেই বুঝতে পারবে ভাসুই মতবাদের পরোয়া না করে এগুলোর মধ্যে বহু ছবিকেই বাছা হয়েছে।

    হুম্।

    আর একটা কথা, সব ছবিই কিন্তু এ ঘরের পক্ষে খুবই মানানসই নির্বাচন। বুঝেছ বন্ধু? এ ছবিগুলো কার বা কার আঁকা, তোমার জানতে ইচ্ছে করছে না?

    আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার মুখের দিকে তাকালাম।

    সে-ই আবার বলতে আরম্ভ করল–অজ্ঞাতনামা কৃতীশিল্পীদের মহৎ চিত্রশিল্প বলে অবশ্যই মনে করা যেতে পারে।

    এবার দেওয়ালের এক পাশে টাঙানো কয়েকটা ছবির দিকে অঙ্গুলি-নির্দেশ করে সে বলল–এই যে অসমাপ্ত শিল্পকর্মগুলো দেখছ, এদের চিত্রশিল্পীরা তাদের আমলে খুবই খ্যাতিমান হলেও আজকের দিনের শিল্পবোদ্ধারা তাদের নীরবতার ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন, আর আমার কাছে।

    কথা বলতে বলতে সে অকাস্মাৎ তমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। ঘাড় ঘুরিয়ে আমার মুখের দিকে তাকাল। তারপর বলল–একটা কথা, জিজ্ঞেস করতে পারি কী বন্ধু?

    কী? কী কথা? তুমি নির্দিধায়–

    আমাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই সে বলল–কথাটা হচ্ছে, ম্যাডোনা দেলা পিয়েতা সম্বন্ধে তোমার কী ধারণা, বল তো?

    আমি অপরূপ রূপসমৃদ্ধ ছবিটার দিকেই সৃষ্টি নিবদ্ধ রাখলাম। তার কথায় যেন হঠাৎই সম্বিৎ ফিরে পেয়ে বলে উঠলাম–এটা যে গিদোর নিজেরই মূর্তি। আমি সোৎসাহে কথাটা ছুঁড়ে দিলাম।

    হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ।

    কিন্তু এটা তুমি, কোত্থেকে, কীভাবে সংগ্রহ করেছ?

    গৃহকর্তা নীরবে ম্লান হাসল। আমি বলে চললাম–ভাস্কর্য শিল্পের ক্ষেত্রে ভেনাসের যে স্থান মর্যাদা, চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রে সে-ও সে স্থানলাভের যোগ্য বলেই স্বীকৃত।

    সে কপালের চামড়ায় চিন্তার ভাঁজ ফুটিয়ে তুলে বলল–হ্যা! ভেনাস, রূপসি ভেনাস? মেদিসির ভেনাস? ছোট মাথা আর মাথাভর্তি সোনালি চুল?

    তাঁর আবেগ-উচ্ছ্বাসটুকু আমার নজর এড়াল না।

    সে আগের মতো আবেগের সঙ্গে বলতে লাগল–তার বাঁ হাতের অংশবিশেষ। আর ডান হাতের পুরোটাই পুনঃস্থাপন। এবার গলা নামিয়ে অধিকতর গলা নামিয়ে বলল–বন্ধু, আমার কিন্তু মনে হয়, সে ডান হাতের ভঙ্গটুকুতেই স্নেহধারা বর্ষিত হচ্ছে। এই এপোলোর ছবিটা যে কপি-করা এতে কিছুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। আর আমি নিজে? আমি এমনই বোকা অন্ধ যে এপোলোর স্পর্ধিত প্রেরণাটাও বুঝে উঠতে পারিনি। তুমি আমার প্রতি করুণা প্রদর্শন করতে পার সত্য, কিন্তু আন্তিনুসকে বেছে নেওয়া ছাড়া গত্যন্তরও তো কিছু নেই। সক্রেটিস কী বলেছিলেন, জানো?

    আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলে তার মুখের দিকে তাকালাম।

    সে আমার জিজ্ঞাসা নিরসন করতে গিয়ে বলল–ভাস্কর্যশিল্পী একখণ্ড শ্বেত পাথরের মধ্যেই তার মূর্তিটাকে পেয়েছিলেন, সক্রেটিসই তো এ-কথা বলেছিলেন, তাই না?

    সে যা-ই হোক, গৃহকর্তা এরকম সব ছোটখাট ব্যাপার প্রসঙ্গে যেভাবে আবেগ উচ্ছ্বাসের সঙ্গে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছিল, তার ভেতর দিয়েই ত্রাসের আভাস আমার চোখে ধরা পড়েছে, আর কথা এবং কাজের মধ্যে কিছুটা স্নাছুবিক দাওয়াইয়ের প্রলেপ–এমন একটা উত্তেজনার প্রকাশ, যা সর্বদাই আমার মন-প্রাণকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। আবার অনর্গল কথা বলতে বলতে মাঝে-মধ্যে বক্তব্যের গোড়ার দিকটা ভুলে গিয়ে হঠাৎ থেমে গেছে। তারপর গভীর মনোযোগের সঙ্গে উৎকর্ণ হয়ে থাকে কেন? এমনও হতে পারে কোনো অতিথির আগমনের প্রতীক্ষায়, নতুবা কোনো কাল্পনিক শব্দ শোনার প্রত্যাশায়ই তার এমন থমকে যাওয়ার কারণ।

    কিছুক্ষণের জন্য বিরতির ফাঁকে আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ। হলো অটোমানের ওপর রক্ষিত একটা বইয়ের ওপর। বইটা পণ্ডিত-কবি পলিটিয়ানের লেখা অতি সুন্দর ট্রাজেডি দ্য আরফিও।

    বইটা হতে নিয়ে পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে শেষের দিকে পেন্সিলে দাগ দেওয়া একটা অংশের দিকে আমার নজর পড়ল। তৃতীয় অঙ্কের শেষের দিকের একটা অংশ–মর্মভেদী উত্তেজনাপূর্ণ অংশ। এমন একটা অংশ যা পড়লেই যে কোনো পুরুষের মধ্যেই আবেগ-উচ্ছ্বাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। আর নারীরা? যে কোনো নারীর বুক নিঙড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসবে, সন্দেহ নেই। সত্যি কথা বলতে কি, পুরো পাতাটাই চোখের জলে ভিজানো।

    তার সে পাতাটারই বিপরীত দিকের পাতায় আমি কি দেখতে পেলাম? সে পাতার নিচের ইংরেজি পংক্তিগুলো এমন এক হাতের লেখায় লিখিত, যার সঙ্গে আমার সদ্য পরিচিত এ বন্ধুটার হাতের লেখার কোনো সাদৃশ্যই খুঁজে পেলাম না।

    দীর্ঘসময় ধরে গবেষণা চালাবার পর সেটা যে এ বন্ধুরই হাতের লেখা, বহু কষ্টে তা বুঝতে পারলাম।

    সে পাতায় যা লেখা ছিল তা মোটামুটি এরকম–

    ওগো আমার প্রেম-ভালোবাসা, তুমিই আমার সর্বস্ব ছিলে। আমার মন সর্বদাই তোমার জন্য কেঁদে আকুল হতো।

    সাগরের মাঝে সবুজ একটা দ্বীপ। প্রেম-ভালোবাসা একটা ঝর্ণাধারা, পূজোর একটা বেদী পরীদের দেশের ফুলে-ফুলে সজ্জিত–সে সব ফুল-ফল আমারই জন্য। ওগো আমার প্রেম-ভালোবাসা সব, সবকিছুই তোমার আমার জন্য।

    কিন্তু হায়! সে শান্তি-মুখের স্বপ্ন যে বড়ই ক্ষণস্থায়ী। হায়রে আমার নক্ষত্রোজ্জ্বল আশা-আকাঙ্ক্ষা, তোমার উদয় কেন হলো? মেঘের আড়ালে আত্মগোপন করার জন্যই যে তোমার প্রকাশ হলো! তুমি বড়ই ক্ষণস্থায়ী; এই আছ, এই নেই! হায়!

    কার তীব্র কণ্ঠস্বর যেন ভবিষ্যতের ওপাড় থেকে বাতাসবাহিত হয়ে কাছে এসে বাজছে। কে যেন গলাছেড়ে বলছে–অগ্রসর হও, এগিয়ে যাও।

    কিন্তু আমার অন্তরাত্মা যে হন্যে হয়ে ঘুরে ঘুরে মরে অতীতের বুকে, ব্যবধান বড়ই অস্পষ্ট; নির্বাক, নিশ্চল আর অভিভূত! কারণ, হায়! হায়! আমার কাছে, আমার সামনের পৃথিবীর আলো যে নিপ্রভ–না, নিষ্প্রভ নয়, এ একেবাওে নিভেই গেছে।

    সৈকত ভূমির বালির রাশিতে যে বাণী গভীর সমুদ্রকে বাধা দেয়, আটকে রাখে, তা হচ্ছে–আর নয়! আর নয়। কিছুতেই আর নয়।

    হায়! বজ্রপাতে পুড়ে-যাওয়া গাছের শাখায় শাখায় আর কোনোদিন কুঁড়ি দেখা দেবে না, ফুল ফুটবে না এবং আহত ঈগলও আর কোনোদিন আকাশে ডানা মেলবে না। সময় আজ আমার কাছে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, আমার রাতের যত স্বপ্ন সবকিছু কাকে কেন্দ্র করে? সবই তো ওই কালো, মায়া-কাজল পরানো চোখ দুটোকে কেন্দ্র করে।

    আর যেখানে তোমার পদচারণে ধ্বনি উত্থিত হয়, মনোলোভা শব্দ উত্থিত হয় সেখানেই অপার্থিব নাচ শুরু হয়ে যায়। হায়! এ কী অদ্ভুত কাণ্ড! আর সে অদ্ভুত অপার্থিব নাচ ইতালির নদীর তীরে তীরে শুরু হয়ে যায়। হায়! এ কী কাণ্ড!

    ঘায়! অভিশপ্ত মুহূর্তে তারা তোমাকে সমুদ্রের ঢেউয়ের ধাক্কায় ধাক্কায় একটা অপবিত্র উপাধানে প্রেম-ভালোবাসা থেকে তোমাকে বয়ে নিয়ে চলে গেল।

    তারা তোমাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল আমার কুয়াশাচ্ছন্ন রাজ্য থেকে, আমার বুক থেকে। কোথায়? কোথায় নিয়ে গেল? উলুখাগড়ার রূপালি বন যেখানে প্রতিনিয়ত কেঁদে মরে!

    উপরোক্ত পংক্তিগুলো যেহেতু ইংরেজি ভাষায় লিখিত ছিল তাই আমি নিঃসন্দেহ ছিলাম না যে, তাদের লেখকের ওই বিশেষ ভাষাটা রপ্ত ছিল। আমি কিন্তু তাতে তিলমাত্রও অবাক হইনি। সত্যি কথা বলতে কি, আমার তো ভালোই জানা ছিল যে, অনেক কিছুই তার জানা আছে, অনেক কিছুই রপ্ত আছে। আর তার জানা বিষয়গুলোকে দশজনের কাছে গোপন রাখতেও সে খুব মজা পেত, খুবই সত্য কথা।

    তবে লেখাটার উল্লিখিত তারিখ আর সে সঙ্গে জায়গার নামটা পড়ার পর আমার মধ্যে অন্তহীন বিস্ময়ের উদ্রেক ঘটল।

    লেখাটার সবার ওপরে লন্ডন কথাটা লেখা হয়েছিল। তারপর সেটাকে কেটে দেওয়া হয়েছে। আর এমনভাবে কাটা হয়েছে যাতে অনুসন্ধানি নজরে দেখলে কথাটা বোঝা যায়।

    এই মাত্রই তো বললাম জায়গাটার নামটা পড়ার পর আমার মধ্যে অন্তহীন বিস্ময়ের উদ্রেক করল। আমার খুব ভালোই স্মরণ আছে যে, এর কারণ সম্বন্ধে আগের কোনো এক কথা প্রসঙ্গে আমি নতুন এ-বন্ধুবরকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তবে। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, অতীতে কোনো সময়ে লন্ডন শহরের বাসিন্দা মার্চে ডি মেনতানির সঙ্গে কি তার দেখা হয়েছিল? কারণ বিয়ের আগে সে মহিলাটি বেশ কয়েক বছর সে শহরে কাটিয়েছিল।

    আমার প্রশ্নের উত্তরে সে যা বলেছিল, তা যদি আমি নিতান্ত ভুল বুঝে না থাকি তবে–সে আমাকে বলেছিল, সে কোনোদিনই গ্রেট ব্রিটেনের সে রাজধানী শহরটায় পা দেয়নি।

    প্রসঙ্গ ক্রমে সে আমাকে এও অবশ্যই বলা দরকার, আমি একবার নয়, বহুবারই শুনেছি যে, আমার এ নতুন বন্ধুবর কেবলমাত্র যে জন্মসূত্রে তা-ই নয়, শিক্ষাদীক্ষার ব্যাপারেও একজন নির্ভেজাল ইংরেজ।

    আমার হাতে যে কবি পলিটিয়ানের ট্র্যাজিডি দ্য অরফিও-টা রয়েছে সেটার দিকে নজর না দিয়েই আমার বন্ধুবর বলল–আরও একটা ছবি আছে যেটা তোমাকে দেখানো হয়নি।

    আমি মুচকি হেসে বললাম–না দেখালে আমি কী করে দেখব? আমার কথা শেষ হতে না হতেই সে হাত বাড়িয়ে একটা পর্দা সরিয়ে দিল।

    আমার চোখের সামনে থেকে পর্দাটা সরে যেতেই একটা ছবির দিকে আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো।

    সে অঙ্গুলি-নির্দেশ করে বলল–এটা মার্চেসা এফ্লোদিত-এর প্রতিকৃতি।

    আমি অপলক চোখে, মার্চেসা এফ্লোদিত-এর পূর্ণাবয়ব প্রতিকৃতিটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ছবিটার যে বিশেষত্বটুকু আমার চোখে ধরা পড়ল, তাতেই আমার পক্ষে ছবিটা থেকে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া দায় হয়ে পড়েছে।

    বাস্তবিকই ছবিটা প্রতিকৃতির দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকার মতোই বটে। আর এও স্বীকার করতেই হবে, কোনো মানুষের শিল্প-দক্ষতা সে নারীর অতিমানবিক সৌন্দর্যকে এর চেয়ে নিখুঁত করে আঁকতে পারত না, অবশ্যই না।

    ডিউকের প্রাসাদের দরজায় গত রাতে সে অপার্থিব মূর্তিটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম, আর একবার সে-ই আমার সামনে এসে দাঁড়াল। তার মুখে হাসির ঝিলিক বিরাজ করলেও তারই মধ্যে আত্মগোপন করে রয়েছে রীতিমত দুর্বোধ্য অসঙ্গতি, সে বিষণ্ণতার অস্পষ্ট ছাপটা যা চিরদিনই পূর্ণ সৌন্দর্যের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সম্পর্কযুক্ত।

    তার হাত দুটোর পরিস্থিতি? ডান হাতটা ভাঁজ করে বুকের ওপর রাখা আছে। আর অদ্ভুত আকৃতিবিশিষ্ট পাত্রের দিকে ডান হাতটাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

    আর পরীর মতো ছোট্ট যে পা-টাকে দেখা যাচ্ছে, সেটাকে নিচে নামিয়ে দিয়ে কোনোরকমে মাটি স্পর্শ করেছে। আর তার ডানা দুটো? ঝলমলে আলোয় আলোকিত পশ্চাৎপটে দেখা যায় কি যায় না, এমন ভঙ্গিমায় তার সুদৃশ্য ডানা দুটো আলতোভাবে উড়ছে। বাঃ! কী মনোরম দৃশ্য!

    আমার দৃষ্টি এবার প্রতিকৃতিটার ওপর থেকে সরে এসে পাশে অবস্থানরত নতুন বন্ধুর ওপর গিয়ে পড়ল।

    সে কিছু বলার আগেই, নিজে থেকেই আমার ঠোঁট দুটো বার বার নড়ে উঠল, উচ্চারিত হলো চাপম্যান-এর লেখা বুসিডি এর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা কথা–

    ওই–ওই তো সে উঠে দাঁড়িয়েছে। সে রোমক মূর্তির মতো খাড়াভাবে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যু যতদিন তাকে শ্বেতপাথরে পরিণত না করে দেয়, ততদিন সে দাঁড়িয়ে থাকবে। দাঁড়িয়েই থাকবে।

    আমার কথা শেষ হলে বন্ধুবর গুটিগুটি এগিয়ে গেল রূপার কাজ করা একটা টেবিলের দিকে। সেটা ঘরের ঠিক কেন্দ্রস্থলে না হলেও ভজন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে? আমি কিন্তু বলব, স্থান এবং কালে ভয়ই তাকে এমনটা করতে বাধ্য করে। আমি নিজেরই অতীতে একসময় বড়ই শিল্পপ্রীতি ছিলাম। তবে এও সত্য যে, সেটা আমার পক্ষে চরম বোকামি ছিল। আর তা-ই আমার মন-প্রাণকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। এও স্বীকার না করে উপায় নেই যে, বর্তমানে এসবই আমার উদ্দেশ্য সিদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করছে।

    আজ আমার আত্মা এসব আরবীয় ধূপধানের মতোই অগ্নিজ্বালায় দাউ দাউ করে জ্বলছে তো জ্বলছেই। আর সে দৃশ্যের যথার্থ স্বপ্নের মুল্লুকের চিত্র দর্শনের উপযোগি করে তৈরি করে তুলেছে, বর্তমানে আমি যার দিকে দ্রুত ধেয়ে চলেছি।

    কথা বলতে বলতে আমার বন্ধুবর অকস্মাৎ থমকে গেল। কথা বলা বন্ধ করে মুখে একেবারে কলুপ এঁটে দিল। তার মাথাটা সামনের দিকে ঝুঁকতে ঝুঁকতে অচিরেই একেবারে বুকের ওপর ঝুঁকে পড়ল।

    আমি তার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম। উৎকণ্ঠার সঙ্গে তার প্রতিটা মুহূর্তের দিকে নজর রেখে চললাম।

    আমার মনে হল, আমার নতুন এ বন্ধুবরের কানে এমন একটা শব্দ আছে, সে দিকে তার শ্রুতি আকৃষ্ট হচ্ছে তা আমি শুনতে পাচ্ছি না।

    শেষমেশ সে ঝট্‌ করে সোজাভাবে দাঁড়িয়ে পড়ল। ব্যস্তভাবে ওপরের দিকে মুখ তুলে তাকাল। তারপর ছিলচেস্টারের বিশপের লেখা কবিতার দুটো পংক্তি আবৃত্তি করল

    ওখানেই, আমার অপেক্ষায় ওখানেই থাক। ওই উন্মুক্ত প্রান্তরেই আমি তোমার সঙ্গে মিলিত হবই হব।

    না, আর দাঁড়িয়ে থাকার মতো শক্তি সামর্থ্য তার রইল না। মদের মাদকতা শিক্ত তার কায়িক শক্তিকে গ্লাস করে ফেলল। হলো সে অটোমানের ওপর টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল। পর মুহূর্তেই সিঁড়ি থেকে দ্রুত পায়ে চলার শব্দ ভেসে এলো। বার বার দরজায় গায়ে আঘাত পড়তে লাগল।

    আমি উৎকর্ণ হয়ে শব্দটা শুনলাম। তারপরই আমার মনে দ্বিতীয় গোলযোগের আকাঙ্খ উঁকি দিয়ে উঠল। ঠিক তখনই মেনতানির বাড়ির পরিচারকটা উৰ্ধশ্বাসে ছুটতে লাগল। তার সর্বাঙ্গ থর থর করে কাঁপছে। সে আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে কেটে কেটে কোনোরকমে কয়েকটা টুকরো টুকরো অসংলগ্ন কথা উচ্চারণ করল–আমার মনিবাণি! আমার মনিবাণি! বিষ! বিষ! হায়! হায় রূপসি এফ্রোদিতে! রূপসি এফ্রোদিতে!

    আমি বুকভরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে ছুটতে ছুটতে অটোমানটার কাছে হাজির হলাম। ঘুমন্ত বন্ধুবরকে অত্যাশ্চর্য, রীতিমত অবিশ্বাস্য খবরটা শোনাবার জন্য জাগাতে চেষ্টা করলাম।

    আমি যেন একেবারে আকাশ থেকে পড়লাম। যারপরনাই স্তম্ভিত হয়ে পড়লাম। তার হাত-পা কাঠের মতো শক্ত হয়ে গেছে। ঠোঁট দুটোর রক্ত কেন্দ্রস্থলে প্রায় কাছাকাছি রক্ষিত ছিল।

    টেবিলের ওপর কয়েকটা সুন্দর, মনোলোভা কারুকার্যমণ্ডিত পানপাত্র রক্ষিত ছিল। আর পানপাত্র দুটোর কাছাকাছি বড় বড় দুটো ইউট্রাস্কন পাত্র সাজিয়ে রাখা হয়েছিল। একটা ব্যাপার আমার নজর এড়ালো না, প্রতিকৃতিটার সামনের দিককার মতোই টেবিলটাকে অনন্য কারুকার্যে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অনুসন্ধিৎসু নজরে তাকিয়ে থাকার পর আমার মনে হলো, তাতে মোহানিস বার্জারই ভরে রাখা ছিল।

    আমি যখন শিল্পকর্ম নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি তখন সে হঠাৎই বলে উঠল–বন্ধু, অনেকক্ষণ ধরে আমরা শুধু কথাই বলে চলেছি, তাই না?

    তাতে কি আছে, ভালোই তো লাগছে।

    না, এখন আর কোনো আলোচনা নয়। চল, আগে একটু পান করে চাঙ্গা হয়ে নেবে। এখন সকাল, একেবারেই সকাল, তবু চল দু-এক পেয়ালা পান করা যাক। দেখবে, তাতে শরীর ও মন চাঙ্গা হয়ে উঠবে।

    সূর্যোদয়ের প্রথম ঘণ্টাটা দেবদূতের হাতুড়ির আঘাতে প্রথম ঘণ্টাটা মনোলোভা ও শ্রুতিমধুর সুরে বেজে উঠল। সে ঘণ্টাধ্বনি ঘরময় বার বার প্রতিধ্বনিত হতে লাগল।

    ঘণ্টাধ্বনিটা যেন বলতে লাগল–সত্যি এখন খুবই সকাল। তা হোক গে। এসো। আমরা গানে গানে মন-প্রাণ ভরিয়ে তুলি। আমরা পান করি, আকণ্ঠ পান করে শরীর ও মনকে চাঙ্গা করে তুলি।

    বাতি আর ধূপদানিগুলো দূরের ওই অতি উজ্জ্বল অতিকায় সূর্যটাকে পরাজিত করার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এসো তার সম্মান রক্ষার্থে আমরা পানীয় দিয়ে পানপাত্র দুটোকে ভরে নিই।

    আমার হাতের পাত্রটাতে পানীয় ঢেলে কানায় কানায় ভরে দিয়ে সে নিজে ব্যস্তভরে একের পর এক পাত্র পানীয় গলায় ঢালতে লাগল।

    পর মুহূর্তেই একটা ধূপদানের অত্যুজ্জ্বল আলোর দিকে সে নিজের হাতের পানীয় ভর্তি পেয়েলাটাকে তুলে ধরল। তারপর সে আপন মনে বলতে লাগল–আমার জীবনের কাজই তো হচ্ছে স্বপ্ন দেখা, স্বপ্নে মশগুল হয়ে থাকা। তাই তো নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছ, আর তাই আমি নিজের জন্য স্বপ্ন কুঞ্জকে গড়ে তুলেছি।

    আর একটা কথা আমার পক্ষে কি ভেশিমের জন্য এর চেয়ে বেশি কিছু গড়ে তোলা সম্ভব হতো? বল, এর চেয়ে বেশি কিছু কি আমি গড়ে তুলতে পারতাম?

    তবে এ-কথা তো খুবই সত্য যে, তোমার চারদিকে যে স্থাপত্যনিদর্শন এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে রয়েছে, এসব কী তুমি দেখতে পাচ্ছ?

    আমি কিন্তু বলব, এই যে চারদিকে এত অসঙ্গতি, তা কেবলমাত্র কাপুরুষদের চোখেই ধরা পড়ে। আর কয়েক মুহূর্ত আগেও যে চোখ দুটো অত্যুজ্জ্বল ছিল, এখন সে দুটো মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে গেছে।

    আমার সর্বাঙ্গ টলতে আরম্ভ করল। নিজেকে সামলে রাখাই আমার পক্ষে দায় হয়ে পড়ল। কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে টলতে টলতে টেবিলটার কাছে এগিয়ে গেলাম। সেটার একেবারে গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লাম।

    ভাঙা-কালো একটা পানপাত্রের ওপর আমার হাত পড়ল। সচকিত হয়ে সোজাভাবে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আর একেবারেই হঠাৎ সে ভয়ঙ্কর বাস্তব সত্যের একটা সামগ্রিক ব্যাপারের চেতনা, একটা বিদ্যুতের ঝিলিকের মতো আমার মন-প্রাণকে উদ্ভাসিত করে দিল। আর সে আলোর বন্যায় আমি ভেসে গেলাম।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগোল্ডেন লায়ন – উইলবার স্মিথ / জাইলস ক্রিস্টিয়ান
    Next Article লাভ ক্যান্ডি – জাফর বিপি
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }