Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যাডগার অ্যালান পো রচনাসমগ্র / অনুবাদ : জাকির শামীম

    জাকির শামীম এক পাতা গল্প1512 Mins Read0

    ন্যারেটিভ আর্থার গর্ডন পাম – ১৫

    ১৫. ॥ পঞ্চদশ অধ্যায় ॥

    জেন গাই জাহাজটা উত্তরদিকে অগ্রসর হতে হতে এ দ্বীপ সে দ্বীপ ঘুরতে ঘুরতে পনেরো দিন বাদে আকুনহা দ্বীপে হাজির হল।

    এ দ্বীপপুঞ্জটা তিনটি গোলাকার দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। এটা পর্তুগিজ নাবিকরা প্রথমে আবিষ্কার করেছিল।

    তারপর ১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দে ওলন্দাজ নাবিকরা সেখানে জাহাজ ভেড়ায়।

    ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে সেখানে হাজির হয় ফরাসি নাবিকরা। এরা সবাই দ্বীপপুঞ্জটার অবস্থান ও গঠন বৈচিত্র্য দেখে যারপরনাই মুগ্ধ হয়।

    দ্বীপ তিনটার সমন্বয়ে একটা ত্রিভুজাকৃতি ভূখণ্ড গড়ে উঠেছে। একটা দ্বীপ থেকে অন্যটায় যেতে হলে প্রায় দশ মাইল সাগর পাড়ি দিতে হয়।

    সবকটা দ্বীপই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ উঁচু। তবে সবচেয়ে উঁচু দ্বীপটাকে আশি নব্বই মাইল দূর দিয়ে জাহাজ নিয়ে পাড়ি দেবার সময়ও স্পষ্ট নজর পড়ে।

    সবুজ বনানীতে ছাওয়া এবং সাগরে ঘেরা দ্বীপটার আকৃতি ও গঠন বৈচিত্র্যে যে কোনো সৌন্দর্য পিপাসুর মনকে প্রভাবিত করবে সন্দেহ নেই।

    দ্বীপগুলোর উপকূলে বিভিন্ন আকৃতির সামুদ্রিক পাখি ও সীল মাছের প্রাচুর্যের জন্য প্রথম প্রথম ফরাসি আর ওলন্দাজরা প্রায়ই পালতোলা জাহাজ নিয়ে ঘুর ঘুর করত।

    তারপর ফিলাডেলফিয়ার ক্যাপ্টেন প্যাটেন ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে ‘ইন্ডাস্ট্রি’ নামক এক পাল তোলা জাহাজ নিয়ে এখানে আসেন। তখন তিনি কম করেও পাঁচ হাজার দুশ সীল মাছ ধরেন ও চামড়া সংগ্রহ করেন। আর তিনি এও বলেন, তিনি সপ্তাহের মধ্যে চর্বি দিয়ে জাহাজ বোঝাই করে নিতে পারতেন।

    এ ঘটনার কিছুদিন বাদে মার্কিন মুলুকের ক্যাপ্টেন কুশকোহন, ‘বেটিসির জাহাজের মালিক এখানে হাজির হন। তিনি শিকারে উৎসাহি ছিলেন না। তাই তিনি দ্বীপভূমিতে আলু, পিয়াজ আর কপির চাষ শুরু করেন। তারপর থেকেই সেখানে প্রচুর পরিমাণে সজি পাওয়া যায়।

    এবার ক্যাপ্টেন হেউড ‘নেরেয়ূস’ নামক জাহাজে চেপে ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে ‘ত্রিস্তান’ এ হাজির হন। তখন তিনি জন মার্কিন মুলুকের মানুষকে তিনি সীলের চামড়া ও চর্বির কারবার করতে দেখেছিলেন। রমরমা কারবার। এক সময় গ্লাস নামধারী বৃটিশ গোলন্দাজ বাহিনীর এক প্রাক্তন কর্পোরাল তো এই দ্বীপের সুপ্রিম প্রভু গভর্ণরের পদে নিযুক্ত ছিলেন। বিশজন পুরুষ ও নারী কর্মী তার অধীনে কাজ করতেন।

    আমরা যখন এ দ্বীপে হাজির হই তখনও গ্ল্যাস দ্বীপের গভর্ণরের পদে কাজ করছেন। তবে তার সংসার তখন বেড়ে বেড়ে ষাট-সত্তরে দাঁড়িয়ে গেছে।

    ক্যাপ্টেন গাই-এর সঙ্গে দেখা করলেন। দর দস্তুর করে তিনি তাঁর কাছ থেকে কিছু হাতির দাঁত আর পাঁচশো সীলের চামড়া খরিদ করেন। জাহাজের লস্কররা সেগুলোকে জাহাজে তুলেনিল।

    পাঁচই নভেম্বর। আমাদের জাহাজ আরও দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত অরোরা দ্বীপপুঞ্জের দিকে ছুটে চলল। তিনি তিনটি সপ্তাহ ধরে জাহাজটা এক নাগাড়ে ছোটার পরও কোনো দ্বীপ আমাদের নজরে পড়ল না। অবশ্য কোনো দ্বীপ এ-পথে আদৌ আছে কিনা আমার অন্তত জানা নেই।

    তবে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পর দেখছি, ‘হেনরি’ নামক মার্কিন জাহাজ নিয়ে ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে ক্যাপ্টেন জনসন, আর ‘ওয়াস্প’ নামক মার্কিন জাহাজ নিয়ে ক্যাপ্টেন মোলে সে দ্বীপাঞ্চলে হাজির হয়েছিলেন। আর এও জানতে পেরেছি তাঁদের উভয়ের বরাতে আমাদের মতোই ফল লাভ হয়েছিল।

    .

    ১৬. ॥ মোড়শ অধ্যায় ॥

    ১২ ডিসেম্বর। ক্যাপ্টেন গাই গর্ভনর গ্ল্যাসের পরামর্শ মাফিক ৬০° দক্ষিণ এবং ৪১.২° পশ্চিম সমান্তরালবর্তী কয়েকটা ছোট ছোট দ্বীপ আবিষ্কারের প্রত্যাশা নিয়ে সেই দিকে জাহাজ ছুটিয়ে নিলেন। তীব্র গতিতে জাহাজ ছুটে চলল।

    ১৮ ডিসেম্বর। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ক্যাপ্টেন গাই জাহাজ নিয়ে সে অঞ্চলে পৌঁছলেন। একনাগাড়ে তিন-তিনটি দিন জাহাজ নিয়ে সমুদ্রের বুকে চক্কর মেরে সে রকম কোনো দ্বীপের চিহ্নও দেখতে পেলেন না।

    ২১ তারিখ। আবহাওয়া অভাবনীয় মনোরম। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, দক্ষিণ দিকে যতদূর সম্ভব এগিয়ে যাব।

    আমাদের সমুদ্রযাত্রার এ অংশটুকু শুরু করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত দক্ষিণ মেরু আবিষ্কারের যে কয়েকবার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র পাঠকদের সামনে তুলে ধরলে হয়তো তাঁদের পক্ষে এ ব্যাপারে ধারণা নেওয়া সহজতর হবে। এ-কথা বিবেচনা করে এখন সে চেষ্টাই করছি।

    ক্যাপ্টেন কুক সর্বপ্রথম এ রকম অভিযানে আত্ম নিয়োগ করেন। ক্যাপ্টেন কুক ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে রেজোলিউশন’ জাহাজে চড়ে আর ক্যাপ্টেন কাশের ‘অ্যাডভেঞ্চার নামক জাহাজটা সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশে যাত্রা করলেন। তিনি ডিসেম্বর মাসে আট-পঞ্চাশ সমান্তরাল দক্ষিণ দ্রাঘিমা এবং ২৬০২৭ পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত হাজির হয়ে যান।

    জায়গাটা বরফের রাজ্য। যেদিকে, যতদূর দৃষ্টি চলে কেবল বরফ আর বরফ। আট-দশ ইঞ্চি পুরু হয়ে বরফ জমে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জাহাজ চালানো নিতান্তই অসম্ভব ব্যাপার। সেখানে হরেক রং আর আকৃতিবিশিষ্ট পাখির ঝাঁক দেখে ক্যাপটেন কুক নিঃসন্দেহ হলেন ধারে কাছেনির্ঘাৎ স্থলভূমি আছে।

    স্থলভূমির দেখা পাওয়ার প্রত্যাশা বুকে নিয়ে ক্যাপ্টেন কুক সোজা দক্ষিণ দিকে জাহাজ নিয়ে অগ্রসর হতে লাগলেন। আবহাওয়া মাত্রাতিরিক্ত ঠাণ্ডা তিনি এরই মধ্যে ৩৮°১৪’ পূর্ব দ্রাঘিমায় পৌঁছে গেলেন। এখানে থার্মোমিটার ৩৬০-তে অবস্থান করছে, আর আবহাওয়াও মোটামুটি মনোরম।

    একইভাবে পর পর পাঁচদিন অতিক্রান্ত হয়ে গেল। সতেরোশ’ তিয়াত্তরে জাহাজ দক্ষিণ মেরু পেরিয়ে গেল সত্য, কিন্তু আর এগোতে পারল না।

    এবার ৬৭°১৫’ লঘিমাতে হাজির হওয়ার পর তাদের নজরে পড়ল, দক্ষিণ দিকে আকাশচুম্বী বরফের প্রাচীর যমদূতের মতো পথ আগলে দাঁড়িয়ে। অতএব এগিয়ে। যাবার পথ রুদ্ধ। তাই উপায়ান্তর না দেখে ক্যাপ্টেন কুক এবার জাহাজের মুখ ঘুরিয়ে উত্তর দিকে এগোতে লাগলেন।

    ক্যাপ্টেন কুক পরের নভেম্বরে নতুন করে দক্ষিণ মেরু আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন।

    ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে জাহাজ ১৪২°৫৪’ পশ্চিম দ্রাঘিমা এবং ৬৭°৩১’ লঘিমায় পৌঁছলে তারা ঠাণ্ডার প্রকোপে পড়লেন। আর সে সঙ্গে বিধ্বংসী ঝড়ের তাণ্ডব শুরু হয়ে গেল। কুয়াশাও পুরু আস্তরণ সৃষ্টি করে প্রকৃতিকে ঢেকে রেখেছে। তবে যা মনে পুলকের

    সঞ্চার করল তা হচ্ছে, হরেক রঙ আর আকৃতিবিশিষ্ট পাখি। তাদের মধ্যে বিশেষ করে নাম করতে হয় পেঙ্গুইন, প্রেটেন আর অ্যালব্যাট্রস প্রভৃতি অতিকায় পাখির।

    লঘিমা ৭০°২৩’ তে পৌঁছে দেখা গেল, বরফের অতিকায় বহু দ্বীপ। আর বরফের মতো সাদা দক্ষিণের মেঘ। ক্যাপ্টেন কুক অনুমানে ধরে নিলেন, ধারে কাছেই হয়তো বরফের দেশ অবস্থান করছে।

    ১০৬°৪৫’ পশ্চিম দ্রাঘিমা ৭১°১০’ লঘিমার দক্ষিণে এগোতে গিয়ে ক্যাপ্টেন কুক লক্ষ্য করলেন, দিগন্তব্যাপী বরফের চাই পথরোধ করে বরফ সদম্ভে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে। আর সে প্রান্তরের উত্তর ভাগ তো বটেই, আর ভাঙা ভাঙাও। লম্বা-লম্বা বরফের চাঁই খুঁটির মতো এমন মাথা উঁচিয়ে রয়েছে যে, সেগুলোকে অতিক্রম করে অগ্রসর হওয়ার চিন্তা একেবারেই অবাস্তব। আর এরই পিছনে লক্ষিত হচ্ছে। আকাশচুম্বী বরফের পাহাড়। একটা নয়, একের পর এক পাহাড়ের শ্রেণি।

    ক্যাপ্টেন কুক অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে পরিবেশটাকে দেখে নিয়ে অনুমান করলেন, এমনও হতে পারে এমন পরিবেশটা হয় দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, নয়তো কোনো মহাদেশের সঙ্গে মিশে গেছে।

    পরবর্তীকালে মেরু অঞ্চল আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে গঠিত জাতীয় অভিযান কমিটির প্রধান হোতা মি. জে. এন. রেনল্ডস রেজোলিউশের প্রয়াস সম্বন্ধে মন্তব্য করেছেন ক্যাপ্টেন কুক যে ৭১°১০’ পেরোতে সক্ষম হননি তাতে কিন্তু আমরা এতটুকুও অবাক হইনি। কিন্তু অবাক হচ্ছি তিনি ১০৬°৫৪’ পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যরেখায় পৌঁছতে সক্ষম না হওয়ার জন্য।

    ‘পার্মাসল্যান্ড’ শেটল্যান্ডের দক্ষিণ ও পশ্চিম থেকে অধিকতর দক্ষিণ এবং পশ্চিমে বিস্তৃত হয়ে রয়েছে। আজ পর্যন্ত কোনো নাবিকের পক্ষে সেখানে উপস্থিত হওয়া কিছুতেই সম্ভব হয়নি। আর ক্যাপ্টেন কুকের অভিযান সেখানেই অবরুদ্ধ হয়েছিল। তীব্র আকাঙ্খা থাকা সত্ত্বেও বরফের জন্য তিনি রণে ভঙ্গ দিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হন।

    রাশিয়ার আলেকজান্ডার ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে ক্রুজস্তানও লিসিওস্কি ক্যাপ্তেনদ্বয়কে পৃথিবী পরিক্রমায় পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু দ্রাঘিমা ৭০°১৫ট্টি পশ্চিমের লঘিমা ৫৯°৫৮’র বেশি অগ্রসর হওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

    বৃটিশ নৌবহরের ক্যাপ্টেন জেমস ওয়েডেল ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে ছোট দুটো জাহাজ নিয়ে প্রায় বিনাবাধায় দক্ষিণে আরও অনেক ভেতরে চলে গিয়েছিলেন।

    এবার মার্কিন জাহাজ ওয়াসপে চেপে ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন মোরেল ১৮২৩ সালের ফেরগুলেন্স ল্যান্ড থেকে দক্ষিণ মেরু অভিযানে যাত্রা করেন। তিনি দিনলিপির পাতায় চোদ্দই মার্চে লেখেন–‘আমি বিভিন্ন মধ্যরেখায় কয়েকবার দক্ষিণ মেরুবৃত্তের মধ্যে প্রবেশ করেছি। পানি আর বাতাসের তাপমাত্রা প্রায় একই রকম লক্ষ্য করেছি। আর ৬০° এবং ৬৫° ডিগ্রির মধ্যে অগণিত সুবিশাল বরফের দ্বীপ অবস্থান করার জন্য আমাকে জাহাজ চালাতে খুবই বেগ পেতে হয়েছে। আর আছে বরফের দ্বীপগুলোর। মধ্যে কোনোটির ব্যস এক থেকে দুমাইল পর্যন্ত। আর সেগুলো সমুদ্ররেখা থেকে। পাঁচশো ফুটেরও বেশি উচ্চতা বিশিষ্ট।

    তখন পানি আর জ্বালানির অভাব দেখা দেয়। আর উপযুক্ত যন্ত্রপাতিও তাঁর সঙ্গে ছিল না সামনে বিস্তীর্ণ সমুদ্র অবস্থান করা সত্ত্বেও ক্যাপ্টেন মোলেয়ের পক্ষে ফিরে না গিয়ে উপায় ছিল না। উপরোক্ত অত্যাবশ্যক সামগ্রি সঙ্গে থাকলে তিনি আরও অগ্রসর হতেন–এটাই স্বাভাবিক আর তিনি নিজের স্বীকার করেছেন, অনিবার্য কারণ দেখা না দিলে তিনি দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম না হলেও অন্তত পঁচাশিতম সমান্তরাল রেখা পর্যন্ত অবশ্যই চলে যেতেন। কিন্তু তাঁর আশা সফল হলো না।

    ক্যাপ্টেন ব্রিস্কো যে অঞ্চলে পরবর্তী পুরো মাসটাই অতিবাহিত করেন। ভাগ্য মন্দ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া তার প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তার পক্ষে কিছুতেই তীরে নামা সম্ভব হয়নি।

    ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের কথা। সে বছরে প্রথমের দিকে তিনি আরও দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হন।

    ফেব্রুয়ারি মাসের চার তারিখে তিনি একটি মূল ভুখণ্ডে নামলেন। সে কী আনন্দ তার। প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে তার দ্বীপটার নামকরণ করলেন এডেলেড দ্বীপ।

    ক্যাপ্টেন ব্রিস্কোর সাফল্যের কথা জানতে পেরে লন্ডনের রয়্যাল জিয়োগ্রাফিক্যাল সোসাইটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, সেখান থেকে অনেক ভেতর পর্যন্ত একটা ভূখণ্ড অবশ্যই। অবস্থান করছে। মি. রেনল্ডসের প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন–আমরা এ বক্তব্য স্বীকার করে নিতে উৎসাহ পাচ্ছি না। আচ্ছা এ রকম অনুমানকে ব্রিস্কোর আবিস্কারও সমর্থন করে না। অতএব এ অনুমানকে মেনে নেওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়।’

    উপরোক্ত অভিযানগুলোই দক্ষিণ মেরু অভিযানগুলোর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

    কিছুক্ষণ পরেই জানতে পারা যাবে, জেন’-এর সমুদ্র অভিযানের আগে প্রায় ৩০০০ দ্রাঘিমা পর্যন্ত দক্ষিণ মেরু বৃত্তের অভ্যন্তরে কোনো অভিযাত্রীই প্রবেশ করতে সক্ষম হননি।

    সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের সামনেও এক অনাবিস্কৃত সুবিমাল ভুখণ্ড অবস্থান করছিল। আমি ক্যাপ্টেন গাই-কে আগ্রহের সঙ্গে বলতে শুনেছি–আমি সাহসে ভর করে আরও দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। আমাকে অগ্রসর হতেই হবে।

    .

    ১৭. ॥ সপ্তদশ অধ্যায় ॥

    গ্লাসের বর্ণিত দ্বীপপুঞ্জের খোঁজ করা থেকে আমরা বিরত থাকলাম। আমরা চারদিন একনাগাড়ে জাহাজ চালিয়ে আরও দক্ষিণদিকে ক্রমেই অগ্রসর হতে লাগলাম।

    ইতিমধ্যে আমরা যতটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি তার মধ্যে কোথাও সামান্যতম বরফও দেখতে পেলাম না।

    আমাদের গতি অব্যাহতই রইল। চব্বিশ তারিখের দুপুরের দিকে কয়েকটা বরফের দ্বীপ আমাদের নজরে ধরা পড়ল। দ্বীপ বটে, কিন্তু সেগুলোর আয়তন তেমন বেশি নয়।

    এবার থেকে আমাদের চলার পথে প্রতিদিনই কম-বেশি বরফ দেখা যেতে লাগল।

    ২৭ তারিখে থার্মোমিটারে পারদ পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত উঠল।

    ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের পয়লা জানুয়ারি। আজ আমরা বরফে পুরোপুরি আটক হয়ে গেলাম। অতএব আমাদের ভবিষ্যৎ বিষণ্ণতায় ভরপুর। দুপুরের কিছু আগে মাঝারি ধরনের ঝড় হল। দিনের শেষে ঝড় বাড়তে বাড়তে সন্ধ্যার দিকে ঝড়ের তাণ্ডব আরও বেড়ে গেল। ঝড়ের তাণ্ডব বেড়ে যাওয়ায় সামনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বরফের চাই ধসে গিয়ে বেশ কিছুটা জায়গা পরিষ্কার হয়ে গেলো। আমরা আনন্দে লাফালাফি শুরু করে দিলাম। ব্যস্ততার সঙ্গে জাহাজের পাল তুলে দিলাম। পালে প্রবল বাতাস লাগায় জাহাজ দ্রুতগতিতে ছুটতে লাগল।

    ২ জানুয়ারি। ঝড়ের তাণ্ডব থেমে গিয়ে আর হাওয়া মোটামুটি শান্ত হয়ে এসেছে। আমাদের জাহাজ উল্কার বেগে ছুটে দুপুরের মাঝামাঝি মেরুবৃত্ত অতিক্রম করল। দক্ষিণ দিকে ঘণ্টায় দুমাইল বেগে সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হতে লাগল। বাতাসে তাপমাত্রা প্রায় ৩৩০ সেঃ।

    ৫ জানুয়ারি। আমরা ৪২০ ১০ পশ্চিম দ্রাঘিমা, লঘিমা ৭৩০ ১৫ পূর্বে উপস্থিত হলে আবার আমাদের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটল। আমরা আবার বরফে অবরুদ্ধ না হলেও কঠিন বরফ পথরোধ করল। তখনও আমাদের দক্ষিণে অনেকটা উন্মুক্ত সমুদ্র চোখের সামনে ভেসে উঠল। এক সময় সেখানে যে পৌঁছতে পারবই এতে কোনো দ্বিধা নেই।

    আর একটু এগোতেই প্রায় মাইল খানেক চওড়া একটা পথের হদিশ পেয়ে সূর্য পাটে না বসা অবধি সে পথ বেয়ে আমরা অগ্রসর হতে লাগলাম। দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে একের পর এক ঝাঁক অ্যালবেট্রস পাখি আমাদের চোখের সামনে দিয়ে উড়ে যেতে লাগল।

    ৭ জানুয়ারিও সমুদ্র উক্তই দেখতে পেলাম। তাই অগ্রসর হতে কোনো সমস্যারই সম্মুখীন হতে হলো না। পশ্চিম দিকে কয়েকটা বরফের পাহাড় নজরে পড়ল। বিকেলের দিকে এরকমই একটা বরফের পাহাড়ের গা দিয়ে এগিয়ে যাবার সময় লক্ষ্য করে অনুমান করলাম, তার উচ্চতা সাগরপৃষ্ঠ থেকে চারশো বাও তো হবেই। আর একদম গোড়ার দিকে তার ব্যস পৌনে এক লীগ। আর তার গা-বেয়ে কয়েকটা ঝর্ণা এঁকে বেঁকে নিচে নেমে এসেছে। বরফের পাহাড়টাকে দুদিন অবধি দেখতে পেলাম। তারপরই সেটা কুয়াশার আড়ালে চলে গেল।

    ১০ জানুয়ারি সকাল। সকাল হতে না হতেই আমাদের একটা লোকরে আকস্মিক– মৃত্যু ঘটে গেল। সেনিউইয়র্কের অধিবাসী। পিটার ভেডেনবার্গ তার নাম। খুবই

    করিতকর্তা লোক। চটপট কাজ করতে তার জুড়ি পাওয়া ভার। হঠাৎ পা হড়কে দুটো বরফের চাঁইয়ের ফাঁকে পড়ে যায়। ব্যস, আর উঠে আসা সম্ভব হলো না।

    দুপুরের দিকে আমরা ৭৮০৩০ দ্রাঘিমা ৪০০১৫ পশ্চিমে হাজির হলাম। ঠাণ্ডা কনকনে ঠাণ্ডা যেন হাড়ে গিয়ে আঘাত করছে। উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে ঝড় হিমেল বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। মাথার ওপর দিয়ে হরেক রং আর আকৃতির পাখি ঝাঁক বেঁধে উড়ে যেতে লাগল। তারা এত নিচে দিয়ে যেতে লাগল যেন হাত বাড়ালেই ধরা যায়।

    ১২ জানুয়ারির সকাল। ভোরের আলো ফুটতেই লক্ষ্য করলাম, দক্ষিণের পথ আমাদের জন্য আবার বন্ধ হয়ে আছে। সীমাহীন আকাশছোঁয়া বরফের প্রাচীর সদম্ভে পথ আগলে দাঁড়িয়ে। খোলা পথের প্রত্যাশা নিয়ে চোদ্দ তারিখ পর্যন্ত পশ্চিমদিকে অধীর প্রতীক্ষায় কাটালাম।

    ১৪ জানুয়ারি। সকাল হতেই পশ্চিমদিক ঘুরে আমাদের পক্ষে নতুন করে ভোলা সমুদ্রে পৌঁছানো সম্ভব হল। চারদিকে সন্ধানী চোখে তাকালাম। একটুকরো বরফও নজরে পড়ল না। আমাদের সবার মন আনন্দে নেচে উঠল। আশায় বুক বাঁধলাম, দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছতে পারা সম্বন্ধে আর কোনোই দ্বিধা নেই।

    ১৭ জানুয়ারির সকাল। সকাল হতে না হতেই একের পর এক ঘটনা ঘটতে লাগল। সত্যি আজকের দিনটা ঘটনাবহুলই বটে। হরেক রং আর আকৃতির অগণিত পাখি দক্ষিণ দিক থেকে উড়ে আসতে লাগল। আমরা বন্দুক হাতে ডেকের ওপর গিয়ে দাঁড়ালাম। আমরা সেই কয়েকটাকে গুলি করে নামিয়ে দিলাম। রান্নাবান্নার পর দেখা। গেল পেলিকান নামক অতিকায় পাখির মাংস খুবই সুস্বাদু।

    দুপুরের দিকে আমরা ডেকের ওপর দাঁড়িয়ে হঠাৎ দেখতে পেলাম একটা বিশালায়তন বরফের চাঁইয়ের ওপর বেশ বড়সড় একটা জানোয়ার মৌজ করে বসে ভাসতে ভাসতে অগ্রসর হচ্ছে।

    আবহাওয়া স্বচ্ছ থাকার জন্য সেটা কোন জানোয়ার দেখে আসার জন্য ক্যাপ্টেন গাই দুটো নৌকা করে জন্য কয়েক লোককে পাঠিয়ে দিলেন। তাঁর অনুমতি নিয়ে পিটার্স আর আমিও তাদের সঙ্গ নিলাম। আমরা উঠলাম মেটের সঙ্গে বড় নৌকাটিতে।

    সাধ্যমত দ্রুত গতিতে বৈঠা চালিয়ে বরফের চাইটার কাছে গেলাম। দেখলাম, তার ওপরে মেরু ভাল্লুক প্রজাতির অতিকায় একটা জানোয়ার বসে রয়েছে। আমাদের সঙ্গে বন্দুক থাকায় গুলি চালিয়ে দিতেই জানোয়ারটা ক্রোধে গর্জন করতে করতে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল। সাঁতার কেটে আমাদের নৌকার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।

    আমরা আবারও ক্রোধোন্মত্ত জানোয়ারটাকে লক্ষ্য করে পর পর আরও কয়েকটা গুলি চালালাম। পেটে ও মাথায় লাগল। তবুও সেটা এগোতেই লাগল।

    সে সমূহ সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতি থেকে ডার্ক পিটার্স-ই আমাদের রক্ষা করল।

    পরিস্থিতি খারাপ দেখে ডার্ক পিটার্স-ই আচমকা লাফিয়ে একেবারে তার পিঠের ওপর বসে পড়ল। ব্যস, আর মুহূর্তমাত্র দেরি না করে উন্মাদের মতো সে হাতের ছুরির ফলাটা দিয়ে ক্রোধোন্মত্ত জানোয়ারটার পেটে, পাঁজরের কাছে আর গলায় একের পর এক আঘাত হানতে লাগল।

    ছুরির ফলাটা তার গলায় গেঁথে দিতেই তার ক্রোধের অবসান ঘটল। হঠাৎ । সমুদ্রের পানিতে কাৎ হয়ে এলিয়ে পড়ল।

    জানোয়ারটা পানিতে এলিয়ে পড়তেই ডার্ক পিটার্সও দুম করে পানিতে পড়ে গেল।

    আমরা তাকে লক্ষ্য করে নৌকা থেকে দড়ির গোছা ছুঁড়ে দিলাম। ডার্ক পিটার্স এবার মড়া জানোয়ারটাকে দড়ি দিয়ে আচ্ছা করে বেঁধে ফেলল। এবার নিজে সাঁতরে নৌকায় উঠে এলো।

    আমরা শিকারটাকে নৌকার সঙ্গে বেঁধে বিজয়ী বীরের মতো জাহাজে ফিরে এলাম। জাহাজের পাচক মাংস ভালোই রান্না করে। আমরা সবাই মিলে সদ্য শিকার করা জানোয়ারটার মাংস দিয়ে মজা করে খাবার সারলাম।

    আহারাদি সেরে আমরা সবে ভূঁড়িতে হাত বুলাতে ডেকের দিকে এগোচ্ছি, ঠিক সে মুহূর্তেই একজনের আনন্দ-উল্লাস কানে এলো। উত্তর্ণ হয়ে লক্ষ্য করলাম, মাস্তুলের ওপর থেকে কে যেন আনন্দে চিৎকার করছে–‘ওই ওই যে, ডাঙা দেখা যাচ্ছে। গলুইয়ের ডানদিকে–ওই যে ডাঙা দেখা যাচ্ছে।

    আমরা ছুটোছুটি করে ওপরে উঠে গেলাম। তার অঙ্গুলি-নির্দেশিত পথে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তার কথার সত্যতা যাচাই করলাম। হ্যাঁ, তার কথা অভ্রান্ত। নিঃসন্দেহ হলাম, ডাঙাই বটে।

    ব্যস, ব্যাপারটা সম্বন্ধে নিশ্চিত ধারণা লাভ করার পর আমাদের মধ্যে রীতিমত হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। আমরা ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে গিয়ে নিজনিজ কাজে হাত লাগালাম।

    কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা জাহাজটাকে উপকূলের কাছাকাছি নিয়ে যেতে লাগলাম।

    দেখলাম, আমাদের বহু আকাক্ষিত ডাঙাটা একটা ছোট পার্বত্য দ্বীপ। এক বিশেষ ধরনের কাঁটাগাছের ঝোঁপঝাড় ছাড়া তাকে ন্যাড়াই বলা চলে। বড়সড় কোনো গাছই দ্বীপটার কোথাও চোখে পড়ল না।

    দীর্ঘ সময় ধরে আমরা দ্বীপভূমিতে হাঁটাহাঁটি করলাম। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কিছুই চোখে পড়ল না।

    আমরা দ্বীপভূমি থেকে ফিরে আবার জাহাজের নোঙর তুললাম। সোজা দক্ষিণ দিকে এগোতে এগোতে এক সময় আমরা আরও ৮০ ডিগ্রি এগিয়ে গেলাম।

    সত্যি কথা বলতে কি, আজ পর্যন্ত যত অভিযান অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে আমাদের আগে কেউ-ই এ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি।

    সমুদ্র এখন শান্ত। পুকুরের মতো নিস্তরঙ্গ না হলেও শান্তই বলা চলে।

    একটা ব্যাপার আমাকে যারপরনাই অবাক করল, আমরা যতই এগোতে লাগলাম, পানি আর বাতাসের তাপমাত্রা ততই হ্রাস পাচ্ছে। ঝড়ের চিহ্নমাত্রও নেই। তবে দক্ষিণ দিকে কুয়াশার একটা হালকা চাদর যেন সমুদ্রের ওপর বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা-ও মাত্র কিছুক্ষণের জন্য।

    এবার দুটো মাত্র সমস্যার সম্মুখীন আমরা হলাম। তাদের একটা হচ্ছে, আমাদের জ্বালানি প্রায় নিঃশেষ আর জাহাজের নাবিকদের মধ্যে একজনের মধ্যে স্কার্ভি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে।

    ক্যাপ্টেন গাই প্রায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। আমাদের কাছে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব রাখলেন।

    আমরা, বিশেষ করে আমি কিন্তু তার প্রস্তাবটাকে সানন্দে গ্রহণ করতে পারলাম না আমরা তো দৃঢ়প্রত্যয় রয়েছে যে, অচিরেই বড়সড় কোনো ডাঙা আমাদের চোখে পড়বে।

    আমার দিক থেকে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ দেখতে না পেয়ে ক্যাপ্টেন গাই একটু অবাক হলেন।

    আমি তার কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ রাখলাম, মাত্র আর একটা দিন সুযোগ দেওয়ার জন্য। অর্থাৎ অন্তত আরও একদিন জাহাজটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক।

    ক্যাপ্টেন গাই মুচকি হেসে আমার প্রস্তাবে সম্মতি দিলেন।

    অতএব আমার অনুরোধ রক্ষা করতে গিয়ে জাহাজের গতি অব্যাহত রাখার জন্য যে অদৃষ্টবিড়ম্বিত মর্মান্তিক রক্তাক্ত ঘটনাগুলো ঘটে গেল, তার জন্য যেমন আজও অনুতাপ জ্বালায় দগ্ধে মরছি। ঠিক তেমনই, এ-কথা ভেবেই সংবাদ পরিবেশনার কাজে আমারও পরোক্ষ অবদান রয়েছে। কয়জনের বরাতে এমনটা ঘটে, বলুন?

    .

    ১৮. ॥ অষ্টাদশ অধ্যায় ॥

    আঠারোই জানুয়ারি। আমাদের গতি অব্যাহতই রয়েছে। চমৎকার আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা সোজা দক্ষিণ দিকে অনবরত এগোতে লাগলাম।

    পানির তাপমাত্রা তেপান্ন ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে সামান্য উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছে। আর সমুদ্র সম্পূর্ণ শান্ত, মৃদু, ঢেউ, বাতাসের চাপে ধীরগতিতে এগিয়ে চলেছে। মেরুর দিকে ঘণ্টায় এক মাইলবেগে একশো পঞ্চাশ বাও পানির স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে।

    পানি আর বাতাস একই দক্ষিণ-দিকে প্রবাহিত হওয়ার জন্য নাবিকরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে জাহাজের এখানে-ওখানে অনুচ্চ জল্পনা কল্পনায় লিপ্ত। সবার চোখে মুখেই আতঙ্কের ছাপ সুস্পষ্ট।

    আর একই ভাবনায় ক্যাপ্টেন গাইও ভাবিত। তাঁর মুখের অস্বস্তির ছাপটুকুও আমার নজর এড়াল না।

    দিন ভর পানি আর আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে অগণিত অ্যাব্রাটস পাখি আর কয়েকটা অতিকায় তিমির দেখা মিলল।

    দিনের শেষে যখন ফলের মতো দেখতে কিছু লাল ফুল আর একটা ফুলে ফেঁপে ওঠা বিচিত্র দর্শন একাট মৃত জানোয়ারকে সমুদ্র স্রোতে ভেসে যেতে দেখলাম। আমরা দড়ির ফাঁদ ফেলে জাহাজে তুলে নিলাম। মৃতদেহটা তিন ফুট লম্বা, ছয় ইঞ্চি উঁচু। ছোট ছোট পা চারটিতে বাঁকানো সুতীক্ষ নখ। সর্বাঙ্গ সাদা লোমে আবৃত। প্রায় দেড় ফুট লম্বা ইঁদুরের মতো একটা লেজও রয়েছে দেখলাম। আর বিড়ালের মতো প্রায় গোলাকৃতি মাথাটার দুদিকে কুকুরের ঝুলে-পড়া কান দুটোও আমার নজর এড়াল না। সব মিলিয়ে জানোয়ারটা বাস্তবিকই আমাদের চোখে অদ্ভুতই লাগল।

    আঠারোই জানুয়ারির রাত কেটে উনিশ তারিখের সকাল হল। আমাদের গতি অব্যাহতই রইল। আমরা লঘিমা ৮৩°৫ এবং ৪৩°৫গ্র পশ্চিম দ্রাঘিমায় উপস্থিত হলাম। সমুদ্রের দিকে চোখ পড়তেই লক্ষ্য করলাম, এখানকার পানি অস্বাভাবিক। কালো।

    আমরা মাস্তুলের ওপর থেকে আবার স্থলভূমি–মাটি দেখতে পেলাম। একটা দ্বীপপুঞ্জ-দ্বীপসমষ্টি।

    দ্বীপটার ভেতরে বহু গাছপালা আছে অনুমান করে আমাদের মন-প্রাণ আনন্দে নাচানাচি শুরু করে দিল।

    আমরা দ্বীপপুঞ্জটার দিকে আরও চার ঘণ্টা এক নাগাড়ে জাহাজ চালিয়ে একটা তীরের কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম। উল্লসিত হয়ে লস্কররা নোঙর ফেলল।

    দুটো বড় বড় নৌকার ডার্ক পিটার্স আর আমাকেসহ সশস্ত্র একটা দলকে, পর্যবেক্ষণের জন্য ডাঙায় পাঠানো হল। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ করার দায়িত্ব আমাদের ওপর বর্তাল।

    তীর ধরে এগিয়ে একটু আধটু খোঁজাখুঁজি করতেই একটা খাড়ি আমাদের নজরে পড়ল। খড়িটার মুখে পৌঁছে ভেতরে ঢুকতে গিয়েই আমরা রীতিমত হকচকিয়ে গেলাম। দেখতে পেলাম, চারটি শালতি উপকূল থেকে যাত্রা করার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে।

    প্রত্যেকটা শালতি সশস্ত্র মানুষে বোঝাই।

    আমরা থমকে গিয়ে নৌকা থামিয়ে দিলাম। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই শালতিগুলো আমাদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল।

    পরিস্থিতি অনুকূল নয় অনুমান করে ক্যাপ্টেন গাই একটা দাঁড়ের ডগায় এক চিলতে সাদা কাপড় বেঁধে উঁচু করে ধরে নাড়াতে লাগলেন।

    সাদা কাপড়টা দেখে অপরিচিত আগন্তুকরা হঠাৎ থমকে গিয়ে দুর্বোধ্য ভাষায় হৈ চৈ জুড়ে দিল।

    তারা গলা ছেড়ে যা-কিছু বলল তার একটা বর্ণের অর্থও বুঝতে পারলাম না সত্য কিন্তু দুটো শব্দ বার বার উচ্চারণ করতে শুনলাম–‘আমামু’ আর ‘লামা–লামা লামা।’

    বিশ্রিস্বর করে অবোধ্য ভাষায় তারা আধঘণ্টা ধরে এক নাগাড়ে চিল্লাচিল্লি করল। আমরা কিন্তু সুযোগটার সদ্ব্যবহার করতে ছাড়লাম না। কৌতূহল ও বিস্ময় মাখানো। দৃষ্টিতে বিচিত্র লোকগুলোকে নিরীক্ষণ করতে লাগলাম।

    শালতি চারটিই দৈর্ঘ্য পঞ্চাশ ফুট করে আর প্রস্থ পাঁচ ফুট। আর অসভ্য জংলিরা সংখ্যায় একশো দশজন।

    আর তারা ইউরোপীয়দের মতো লম্বা। তবে পেশিবহুল। একনজরে দেখলেই অনুমান করা যায়, প্রত্যেকেই অমিত শক্তিধর। গায়ের রং আবলুশ কাঠের মতো ঘন কালো। মাথায় ইয়া লম্বা চুলের গোছা পিঠ পর্যন্ত ঝুলে পড়েছে।

    অজানা-অচেনা কোনো জানোয়ারের চামড়া গায়ে জড়ানো। তবে চামড়ার লোমশ দিকটা ভেতরের দিকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেবলমাত্র কবজিদুটো, গোড়ালি দুটো

    আর গলার কাছাকাছি চামড়াটাকে ভাঁজ করে দেওয়া কালো লোমগুলো চোখে। পড়ছে।

    আর যন্ত্রপাতি? বর্শা জাতীয় অস্ত্র আর একটু বেশি রকম লম্বা গদা। সবার হাতেই কোনো-না-কোনো অস্ত্র একটা আছেই। আরও আছে। প্রতি শাতির খোলের ভেতর থেকে ডিম্বাকৃতি পাথরের স্তূপ উঁকি দিতে লাগল। ব্যস, এ পর্যন্তই।

    একটু পরেই তাদের সর্দারের ইশারায় চিল্লাচিল্লি থেমে গেল। সর্দার এবার ঝট করে গলুইয়ের ওপর উঠে গেল। আমাদের নৌকার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে ইশারা করতে লাগল, আমরা যাতে নৌকা দুটোকে তাদের শাতির কাছে নিয়ে যাই।

    আমরা তাদের ইশারা না-বোঝার ভান করলাম। উদ্দেশ্য তাদের শালতিগুলো থেকে সাধ্যমত নিজেদের দূরত্ব বজায় রাখা। আমাদের অনীহা লক্ষ্য করে সর্দার তিনটি শাতিকে একই জায়গায় রেখে কেবলমাত্র নিজের শালতিটাকে ধীরে ধীরে চালিয়ে অগ্রসর হতে লাগল। আমাদের কাছাকাছি এসেই সে ইয়া লম্বা একটি লাফ দিয়ে আমাদের নৌকায় চলে এলো।

    কোনো কথা বা কোনোরকম ইশারা না করেই সে এবার ক্যাপ্টেন গাইয়ের কাছে চলে গেল। তার পাশের আসনে বসে পড়ল। এবার জাহাজটাকে বার-কয়েক উৎসুক দৃষ্টিতে দেখে নিল। জাহাজটাকে দেখিয়ে ক্যাপ্টেন গাইকে লক্ষ্য করে বার বার বলতে লাগল ‘আসামা মু-আসামা মু। আর আগের সেই ‘লামালামা’ শব্দ দুটোও বলল বার কয়েক।

    আমরা নৌকা চালিয়ে এবার জাহাজে ফিরে গেলাম। শালতি চারটি কিন্তু আমাদের পিছন ছাড়ল না। আমাদের সঙ্গে সামান্য দূরত্ব বজায় রেখে তারা পিছন পিছন চলতে লাগল। অসভ্য জংলি সর্দার জাহাজের কাছে তার শালতিটাকে দাঁড় করাল। তার চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ, আর বুকে বইছে অন্তহীন খুশি। সে অনবরত দুহাতে তালি বাজাতে বাজাতে সরবে হাসতে লাগল। সে কী হাসি। মনে হল, এই বুঝি তার দম বন্ধ হয়ে এলো। সে একা নয়, পরমুহূর্তে তার দলের অন্যান্যরাও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাসতে আরম্ভ করল।

    একটু পরেই সবাই এক এক করে হাসি থামিয়ে চুপ করল। অচিরেই জানতে পারলাম, সর্দারের নাম টু-উইট।

    ক্যাপ্টেন গাই এবার আমাদের নৌকাটার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে সর্দারকে ইশারায় বোঝাতে চেষ্টা করলেন তার দলের বিশ জনের বেশি লোককে একসঙ্গে জাহাজে তোলা সম্ভব নয়।

    সর্দার যেভাবেই হোক ক্যাপ্টেনের অভিলাষ বুঝতে পেরে সেভাবেই ব্যবস্থা করল।

    একটা শালতি ধীর গতিতে জাহাজের একেবারে গায়ে এগিয়ে এসে দাঁড়াল। আর বাকি তিনটি জাহাজ থেকে দূরে, একই জায়গায় দাঁড়িয়েই রইল।

    ক্যাপ্টেন গাইয়ের অনুমতি পেয়ে সর্দারের তত্ত্বাবধানে বিশ জন অসভ্য জংলি এক এক করে জাহাজে উঠে এলো। জাহাজে উঠেই তারা বিস্ময়-ভরা চোখে জাহাজটাকে। দেখতে লাগল। পরমুহূর্তেই কৌতূহলের শিকার হয়ে তারা জাহাজের এটা-ওটা ধরে নাড়াচাড়া ও টানাটানি করতেও ছাড়ল না। জাহাজের জিনিসপত্রগুলো সম্বন্ধে ধারণা করে নেওয়াই তাদের ইচ্ছা।

    অসভ্য জংলি মানুষগুলোর রকম সকম দেখে এ-ধারণাটাই স্পষ্ট বুঝা গেল, এর আগে তারা কোনোদিনই সাদা চামড়ার মানুষ দেখেনি।

    তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ‘জেন’ একটা জীবন্ত প্রাণী। তার একমাত্র এ-বিশ্বাসের বশবর্তী হয়েই তারা হাতে বর্শা থাকতেও কিছুতেই তাকে সামান্যতম আঘাতও হানল না।

    সর্দার টু-উইটের লোকদের ডেকের উপরটা দেখা হয়ে গেলে ক্যাপ্টেন গাই তাদের নীচে নিয়ে যেতে বলল। করাও হলো তা-ই। তার সেখানে পৌঁছেই যা-কিছু দেখল তাতে চোখ ট্যারা হয়ে যাবার উপক্রম হল। বন্দুক-কামান দেখে তো তারা সেখান থেকে নড়তে চায় না। টু-উইট তো রীতিমত থ বনে গেল। তার লোকজন কামান বন্দুকের গায়ে হাত লেগে যেতে পারে ভয়ে সাধ্যমত দূরে দূরে থাকতে লাগল।

    কেবিনে দুটো বড় আয়না ঝুলিয়ে রাখা আছে। সে দুটোতে নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখে তো বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল।

    সে কেবিনে ঢুকে মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়ল। একটা আয়না তার মুখের আর পিছনের আয়না তার পিছনের দিকে দেওয়ালে আটকানো। আয়নায় নিজের মুখটা দেখেই সে তো ধরেই নিল, সে নির্ঘাত পাগল হয়ে গেছে। মুখ ফিরিয়ে দ্বিতীয়বার নিজেকে দেখতে পাওয়ামাত্র তার মুখাবয়ব এমন বদলে গেল যে, আমার তো ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যাবার জোগাড় হল, এই বুঝি লোকটা মারা গেল।

    সে অতর্কিতে মেঝেতে উপুড় হয়ে আয়নাটার সামনে পড়ে রইল। শেষমেশ আমরা তাকে অনেক বুঝিয়ে, ধরতে গেলে টেনে হিঁচড়ে ডেকের ওপর নিয়ে যেতে পারলাম।

    আমরা এভাবে বিশজনের একটা দলকে পর পর জাহাজে চড়িয়ে তাদের কৌতূহলনিবৃত্ত করলাম। তবে প্রতিজনার সঙ্গেই সর্দার টু-উইট রইল।

    অসভ্য জঙ্গলিগুলো কিছু জিনিস দেখে গোড়ার দিকে কৌতূহলাপন্ন ও ভত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেও শেষপর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই ব্যবহার করল। কিন্তু কয়েকটা জিনিস দেখে তারা এমন অদ্ভুত আচরণ করতে লাগল যার কারণ আজও আমি ভেবে পাচ্ছি না। ব্যাপারগুলো হচ্ছে–খুলে রাখা বস্তু জাহাজের পাল, ডিস, আর ময়দা ভর্তি আটা। এদের প্রত্যেকেই দেখামাত্র তাদের মুখ এমন বিমর্ষ হয়ে গেল যে, কিছুতেই তাদের ওগুলোর কাছে নিয়ে যাওয়া গেল না।

    আর একটা কথা, এ-দ্বীপে প্রচুর সংখ্যক গ্যাউল পাগোস প্রজাতির কচ্ছপ নজরে পড়ল। এমনকি সর্দার টু-ইউটের শালতিতেও একটা পড়ে থাকতে দেখলাম। এদের সুস্বাদু মাংসের কথা ভাবলেই জিভ রসিয়ে উঠে।

    এখন সব ব্যাপার-স্যাপার দেখে ক্যাপ্টেন গাই মনস্থির করে ফেললেন, এ অঞ্চলটাকে ঘুরে ঘুরে ভালোভাবে দেখবেন। এতে তার আবিষ্কারের সঙ্গে কিছু অমূল্য তথ্যে ঝোলা ভরে নিতে সক্ষম হবেন।

    আর আমি? একে মনসা তার ওপর ধূনার গন্ধ–হাতে স্বর্গ পেয়ে গেলাম।

    ক্যাপ্টেন গাই কথা প্রসঙ্গে পানি আর জ্বালানির কথা পাড়লেন। আমি তাকে নিশ্চিন্ত করতে গিয়ে বললাম–আরে, এরজন্য এত ভাববার কী আছে? জাহাজ নিয়ে ফেরার সময় এ দ্বীপ থেকে পানি আর জ্বালানি তুলে নেওয়া সম্ভব হবে।

    সর্দার টু-উইটের পরামর্শে ‘জেন’-কে প্রায় এক মাইল ঘুরিয়ে নেওয়া হল। দ্বীপটার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে সুদৃশ্য একটা উপসাগর চোখে পড়ল।

    উপকূলের শেষ প্রান্তে তিনটি স্বাদু পানির ঝর্ণা আর জঙ্গল থেকে প্রচুর শুকনো কাঠও পাওয়া গেল। তাই সেখানেই জাহাজ ভেড়ানো হল।

    সর্দার টু-উইট আমাদের সঙ্গে জাহাজেই রয়েছে। তার গায়ে বেড়াতে যাবার জন্য আমাদের সাদর আমন্ত্রণ জানায়।

    ক্যাপ্টেন গাই তার আমন্ত্রণে খুশি হয়ে তার গায়ে যেতে সম্মত হলেন। কিন্তু নিশ্চিন্ত হতে পারলেন না।

    ক্যাপ্টেন গাই অসভ্য জংলিদের মধ্য থেকে দশজনকে জামিন হিসেবে আমাদের জাহাজে থাকার ব্যবস্থা করে, আমরা বারো জন দল বেঁধে সর্দারের গায়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। প্রচুর অস্ত্রপাতিও সঙ্গে নিতে নিতে ভুললাম না।

    জাহাজ ছেড়ে যাবার পূর্ব মুহূর্তে ক্যাপ্টেন গাই সেটাকে কড়া নির্দেশ দিয়ে গেলেন তাঁর অবর্তমানে কাউকে যেন জাহাজে উঠতে না দেওয়া হয়। আর এও বললেন, বারো ঘণ্টার মধ্যে আমরা যদি জাহাজে ফিরে না আসি তবে যেন আমাদের খোঁজ করার জন্য ঘূর্ণায়মান কামানসহ এক-মাস্তুলওয়ালা জাহাজটাকে উপকূল ধরে এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে।

    উপকূল ছেড়ে ভেতরের দিকে যত এগোচ্ছি আমাদের মধ্যে ততই দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাতে লাগল, আমরা যেন সভ্য জগৎ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটা জগতে পৌঁছে গেছি। আমরা আগে যা-কিছু জেনেছি ও দেখেছি সেসবকিছুই এখানে অনুপস্থিত।

    পথের ধারে একটা পার্বত্য ঝর্ণা দেখতে পেয়ে সর্দার দু-উইট আর তার চ্যালাচামুণ্ডা গণ্ডুষ ভরে ভরে পানি খেতে খেতে গেল।

    জলের রং দেখেই আমরা ধরে নিলাম, পানের উপযুক্ত নয়, দূষিত। আমরা সে পনি খেতে আপত্তি জানালাম। শেষপর্যন্ত অবশ্য বুঝতে পারলাম, এখানকার সব পানি এরকমই। বর্ণহীন তো নয়ই, আবার বিশেষ কোনো একটা বর্ণেরও নয়।

    অসভ্য জংলিগুলো বিশেষ করে সর্দার টু-উইট আমাদের জাহাজে আয়না দেখে যেমন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল আমরাও ঝর্ণার পানি দেখে কম বিস্মিত হইনি।

    এবার একটা পাত্রে কিছুটা নিয়ে তাকে থিতিয়ে নেবার জন্য রেখে দিলাম। লক্ষ্য করলাম, সবখানি তরল পদার্থ বহু পৃথক পৃথক রসনালী মিলে গঠিত। আর প্রতিটা রসনালীর রং আলাদা, কেউ কারো সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে না।

    শেষমেশ যে আপাত অলৌকিক ঘটনাবলি আমার চারদিকে ঘিরে ধরেছিল তারই প্রথম পর্ব পানির এ ঘটনাটা। বাস্তবিকই একেবারেই অলৌকিক ঘটনাই বটে।

    .

    ১৯. উনবিংশ অধ্যায়

    জাহাজ থেকে নয় মাইলেরও বেশি দূরবর্তী সর্দারের গ্রমটায় পৌঁছাতে আমাদের তিন ঘণ্টা সময় লেগে গেল। আমরা যতই পথ পাড়ি দিচ্ছি ততই ছয়-সাতজনের নতুন নতুন দল এ-পথ সে-পথ দিয়ে এগিয়ে এসে আগের একশো দশজন জংলির সঙ্গে মিলিত হচ্ছে।

    তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারটা আমাদের যারপরনাই বিস্মিত করল এ জন্য যে পুরো কাজটাই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এবং শৃঙ্খলার সঙ্গে চলতে লাগল। এজন্যই ব্যাপারটা অন্য কারো না হলেও আমার মনে সন্দেহের উদ্রেক করল। আবার সমস্যা হচ্ছে, ফিরে যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই ভেবেচিন্তে মনস্থির করে ফেললাম, জংলি সর্দার টু-উইটের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখে যাবতীয় দায়িত্ব তার ওপর ছেড়ে দেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ ও একমাত্র উপায়।

    আমরা একটা পাহাড়ি খাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে দ্বীপভূমির একমাত্র বস্তিতে হাজির হলাম। বস্তির কাছাকাছি গিয়েই সর্দার টু-উইট গলা ছেড়ে অবোধ্য ভাষায় যা বলল তার মধ্যে ক্লিক ক্লক’ শব্দটা বার বার ব্যবহার করল। এমনও হতে পারে, ওটা বস্তিটার নাম। ইতিপূর্বে এমন শোচনীয় অবস্থাসম্পন্ন বাড়ি অন্য কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। আবার এগুলোর কয়েকটার মালিক গাঁয়ের ইয়ামপু অর্থাৎ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

    গ্রামটায় অবশ্য–একে গ্রাম বলে স্বীকৃতি দিলে, পথের এখানে ওখানে কিছু বিচিত্র জানোয়ার চোখে পড়ল। তাদের গতিবিধি দেখে মনে হলো তারা অসভ্য জংলিদের পোষা জানোয়ার। আর দেখলাম, অ্যালট্রেস পাখি, মুরগি আর জলাশয়ে দেখলাম হরেক রং ও আকৃতির মাছ। আর দেখলাম, গ্যালিপাগো কচ্ছপ।

    আমরা টু-উইটের সঙ্গে তাদের বস্তির কাছাকাছি যেতেই আমাদের দেখার জন্য দলে দলে মানুষ ছুটোছুটি করে এসে আমাদের ঘিরে দাঁড়াল।

    আমাদের চারিদিকে ভিড় করে দাঁড়ানো মানুষগুলোর মুখেও সর্দারে সঙ্গিদের মতোই আশা-সুর লামা লামা’ কথাটা বার বার শুনতে পেলাম।

    ব্যাপারটা আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিস্ময় উৎপাদন করল, নবাগত অসভ্য জংলিরা সবাই সম্পূর্ণ বিবস্ত্র। শাতি করে যারা আমাদের জাহাজে গিয়েছিল কেবলমাত্র তারাই কটিদেশে এক টুকরো চামড়া জড়িয়ে লজ্জা নিবারণ করেছে।

    তবে জংলিরা সম্পূর্ণ নিরস্ত্র। সর্দার দু-উইটের বসতি–ঝুপড়িটা বস্তির ঠিক কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। প্রায় তাঁবু খাটানোর কায়দায় সেলাই করা চামড়ার ছাউনি একটা। আর শুকনোপাতা পুরু করে বিছিয়ে গদি বা নিয়ে নেওয়া হয়েছে। চমৎকার বন্দোবস্ত।

    অভাবনীয় অভ্যর্থনা করে আমাদের ঘরের ভেতওে নিয়ে যাওয়া হল।

    ঘরের ভেতরে ঢুকে সর্দার টু-উইট নিজে পার্তার গতিতে বসল আর আমাদেরই ইশারায় বসতে বলল। আমাদের অস্বস্তি এবার তুঙ্গে উঠে গেল। আমরা মাত্র বারোজন মেঝেতে পাতার গদিতে বসেছি, আর অসভ্য জংলিরা কম করেও চল্লিশজন তো হবেই।

    অসভ্য জংলিদের দিকে মুহূর্তের জন্য চোখ বুলিয়ে নিয়ে ভাবলাম, হঠাৎ কোনো গোলমালের সূত্রপাত হলে আমাদের পক্ষে বন্দুক ব্যবহার করা তো দূরের কথা, বন্দুক তোলাও সম্ভব হবে না। এমনকি ঝট করে উঠে দাঁড়াবার মতো সুযোগই পাওয়া যাবে না।

    এ-তো গেল ঘরে ভেতরের পরিস্থিতি। আর বাইরে কৌতূহলী বস্তিবাদী জংলিরা আরও অনেক, অনেক বেশি।

    একসময় পরিস্থিতি এমনই খারাপ হয়ে পড়ল যে, সর্দার টু-উইট চিল্লাচিল্লি করে তাদের সরিয়ে না দিলে হয়তো তাদের পায়ের তলায় পড়ে আমাদের জান খতমই হয়ে যেত। নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমাদের মাঝখানে টু-উইটের উপস্থিতি একান্ত অপরিহার্য। তাই তো আমরা সাধ্যমত তার কাছাকাছি অবস্থান করতে লাগলাম।

    অসভ্য জংলিদের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী অতিথি অভ্যর্থনার সারলে আমরা তাদের বস্তি ছেড়ে উপকূলে বেঁধে-রাখা নৌকায় ফিরে এলাম। স্বীকার করতেই হবে, জংলি সর্দার টু-উইট বা তার অনুগামীদের কাছ থেকে কোনোরকম দুর্ব্যবহার তো দূরের কথা, সামান্যতম বিপরীত আচরণও তো পাইনি; এমনকি সর্দারের হুকুমে অসভ্য গ্রামবাসীরা কয়েকটা গ্যালিপাগো কচ্ছপ আর বুনোহাঁস আমাদের নৌকায় তুলে দিয়ে একান্ত অনুগত ভূত্যের মতো বিদায় জানাতে দাঁড়িয়ে রইল।

    আমরা সেই মুহূর্তে নিজেদের বড়ই ভাগ্যবান মনে না করে পারলাম না। কারণ, সর্দার টু-উইটের হুকুমে অসভ্য জংলিরা হরেক রকম খাবার দাবার এনে আমাদের জাহাজ বোঝাই করে দিল।

    গ্যালিপাগো কচ্ছপ আর বুনো হাঁস তো প্রচুর মিলেছে। আর আমরা আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেওয়ার পর অসভ্য জংলিরা প্রচুর পরিমাণে স্কার্ভি ঘাস, সেলেরি ঘাস এবং শালতি বোঝাই করে টাটকা মাছ ও শুঁটকি মাছ এনে দিয়ে নিজেদের জীবন ধন্য জ্ঞান করল।

    সত্যি কথা বলতে কি অসভ্য জংলিদের দেওয়া খাদ্যবস্তু খাওয়ার পর আমাদের রোগব্যাধি সেরে তো গেলই এমনকি অবসাদটুকুও কেটে গেল। এক কথায় আমরা সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে উঠলাম।

    আমরা পরম খুশির মেজাজে পুরো একটা মাস কাটিয়ে দিলাম। এবার আমাদের সেখান থেকে নোঙর তোলার পালা।

    আমরা মনস্থ করলাম, যাত্রা করার আগে একবার জংলিদের বস্তিতে গিয়ে সর্দার টু-উইট আর তার অনুগামীদের কাছ থেকেই বিদায় নিয়ে আসব। আর এ জন্য টু উইটিও এত বেশি আব্দার করতে লাগল যে, তার মনে ব্যথা দেওয়াটা আমরা কেউ-ই সঙ্গত মনে করলাম না! সবেচেয় বড় কথা, দীর্ঘ এক মাস ধরে তাদের কাছ থেকে আমরা হৃদ্যতাপূর্ণ আচরণ ও বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি তাতে আমাদের মধ্যে প্রথম দিকে তাদের প্রতি যে সন্দেহ জেগেছিল, তা পুরোপুরি কেটে গেছে। এতে তাদের ওপর অন্তরের অন্তঃস্থলে নিখাদ মমত্ববোধের সঞ্চার ঘটেছে।

    কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যেই আমাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়ে গেল। তাদের এই যে গায়ে পড়ে উপকার আর সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ সবকিছুর মূলে রয়েছে একটা গোপন চরমতম দূরভিসন্ধি ষড়যন্ত্র। অথচ সভ্যতার আলোক থেকে নিদারুণভাবে বঞ্চিত অসভ্য জংলিদের জন্য আমাদের মনে এতই সহানুভূতি আর প্রীতির সঞ্চার ঘটেছিল। তার পরিমাপ করা বাস্তবিকই অসাধ্য।

    জংলিদের গায়ে ঘুরে আসার জন্য আমরা পয়লা ফেব্রুয়ারি জাহাজ ছেড়ে নামলাম।

    ইতিপূর্বেই বলে রেখেছি, জংলিদের প্রতি আমাদের মনে আর সামান্যতম সন্দেহও নেই। তা সত্ত্বেও সাধ্যমত সাবধানতা অবলম্বন করলাম।

    জাহাজে দুজন নাবিককে পাহারায় নিযুক্ত করে কড়া নির্দেশ দিয়ে গেলাম, আমাদের অবর্তমানে শত অজুহাত-অনুরোধ-উপরোধেও যেন জাহাজে উঠতে দেওয়া না হয়। আর তারা যেন মুহূর্তের জন্য ডেকের ওপর থেকে না নামে।

    আর তাদের নজর এড়িয়ে কেউ যাতে জাহাজে চড়তে না পারে।

    এ-কথা ভেবে তার থেকে মাইল খানেক দূরে জাহাজটাকে নোঙর করে রাখা হল।

    দু-জনকে হাহাজে পাহারায় মোতায়েন রেখে আমরা বাকি বত্রিশজন সঙ্গে করে পিস্তল, গাদা বন্দুক, তরবারি আর নাবিকদের ছুরি সঙ্গে নিয়ে জাহাজ ছেড়ে তীরে নামলাম। একশো জংলি কালো যোদ্ধা আমাদের অভ্যর্থনা কওে নিয়ে যাবার জন্য আগেভাগেই তীরে জমায়েত হয়েছিল।

    তীরে অপেক্ষমান জংলিদের ওপর মুহূর্তের জন্য চোখের মণি দুটো বুলিয়ে নিয়ে দেখলাম, তারা সম্পূর্ণ নিরস্ত্র। এ ব্যাপারে সর্দার টু-উইটকে প্রশ্ন করলে জবাব পেলাম, আমরা যখন পরস্পর ভাইয়ের মতো তখন আর অস্ত্রপাতির প্রয়োজন কি?

    সর্দারের কথাটা বড়ই ভালো লাগল। আমরা এবার তাদের সঙ্গে পথ পাড়ি দিয়ে তার থেকে ক্রমেই জঙ্গলের ভেতরের দিকে এগোতে লাগলাম।

    আমরা এবার কয়েকটা ঝর্ণা আর নদীখাত ডিঙিয়ে সঙ্কীর্ণ একটা গিরিখাত ধরে এগোতে লাগলাম। গিরিখাতটা প্রায় চল্লিশ ফুট চওড়া আর দেড়-দু মাইল লম্বা।

    আজ যখননিরিবিলিতে বসে সেদিনের এত বড় বোকামির কথা ভাবি তখন একটা কথাই বার বার মনের কোণে ভেসে ওঠে, তখন এতই অবাক হই যে, সঙ্কীর্ণ সে গিরিখাতের ভেতর দিয়ে আমাদের সামনে ও পিছনে এতগুলো জংলিদের রেখে পথ পাড়ি দিতে গিয়েই ভুলটা করেছিলাম।

    কিন্তু গতদিন এখানেই তো আমরা নিজেদের দলের শক্তি সামর্থ্যের ওপর ভরসা রেখে নির্দিধায় পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। আমাদের নিজেদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত ভরসা আর সর্দার টু-উইটের অনুচররা নিরস্ত্র থাকার জন্যই আর তার ওপর আগ্নেয়াস্ত্রের অবশ্যম্ভাবী সাফল্যের বিশ্বাস আর জংলিগুলোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের মেকি হৃদ্যতার সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ নিশ্চিত ছিলাম।

    পথের ঝোঁপঝাড় কাটাকাটি আর পাথর সরিয়ে পথ পরিষ্কার করতে করতে পাঁচ ছয়জন জংলি সবার আগে আগে যেতে লাগল।

    একে অন্যের কাছ থেকে যাতে দূরে সরে না যাই সে চিন্তা করে আমরা প্রায় গা ঘেঁষা ঘেঁষি করে পথ পাড়ি দিতে লাগলাম। আর অবশ্য শৃঙ্খলা আর ভদ্রতার পরিচয় দিতে দিতে জংলিরা আমাদের পিছন পিছন হেঁটে চলল।

    [খুব সম্ভবত এখানে কিছু পাতা মিসিং আছে]

    উইলসন এলেন, ডার্ক পিটার্স আর আমি আমাদের দলটার ডানদিক ধরে হাঁটতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে নরম পাথরের একটা ফাটলের দিকে আমাদের নজর পড়ল। তার ভেতরে একটা লোক অতি কষ্টে গেল। ব্যস, এর বেশি নয়। আর সেটা পাহাড়ের পিছন দিকে আঠারো বিশ ফুট সোজা এগিয়ে গিয়ে বাঁ দিকে ক্রমেই চালু হয়ে নিচে নেমে গেছে। চোখ বুলিয়ে অনুমান করলাম, গিরিখাদের দুদিকের উচ্চতা ষাট-সত্তর ফুট হতে পারে। ঘাড় ঘুরিয়ে পিটার্স আর উইলসন এ্যালেনকে দেখে আমি বললাম, ফাটলের মধ্যে দুজনের পথ চলার মতো জায়গা হবে না। উইলসন এলেন ফাটলটার মুখের কাছে পা দিতে না দিতেই ভয়ঙ্কর একটা সংঘর্ষের শব্দে রীতিমত চমকে উঠলাম। এমন ভয়ঙ্কর শব্দ এর আগে কোনোদিনই আমি শুনিনি। মনে হলো পৃথিবীর ভিতটাকে কেউ বুঝি হঠাৎ টুকরো টুকরো করে দিল। পৃথিবীর বুকে মহাপ্রলয় নেমে এলো বলে। অচিরেই বুঝি সবকিছু ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগোল্ডেন লায়ন – উইলবার স্মিথ / জাইলস ক্রিস্টিয়ান
    Next Article লাভ ক্যান্ডি – জাফর বিপি
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }