Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যাডগার অ্যালান পো রচনাসমগ্র / অনুবাদ : জাকির শামীম

    জাকির শামীম এক পাতা গল্প1512 Mins Read0

    দ্য ডিউক ভিলা ওমলেট

    সমালোচনা সাংঘাতিক ব্যাপার।

    সমালোচনার দৌলতে বড় বড় মানুষকেও কুপোকাৎ হয়ে যেতে হয়।

    রাজা ওমলেট।

    মহাপ্রতাপশালী রাজা ওমলেট।

    সমালোচনার দৌলতে তাঁকে একেবারে ল্যাজে-গোবড়ে হতে হয়েছিল।

    যে রাতের কথা বলছি, সে রাতে তিনি সোফার ওপর শরীর এলিয়ে দিয়ে শুয়ে অলসভাবে সময় কাটাচ্ছিলেন। স্পঞ্জের মতো নরম একটা বালিশের ওপর তিনি আলতোভাবে মাথাটা রেখে আরাম-আয়েশে ডুবেছিলেন। ঘরে তিনি একাই ছিলেন।

    এমন সোনার খাঁচার মধ্যে সযত্নে রক্ষিত পেরুদেশের সে অদ্ভুত পাখিটা রাজা ওমলেটের সামনে হাজির হলো।

    পাখিটা এতদিন রানি কাছে, তারই তত্ত্বাবধানে ছিল। মহানন্দেই সেটা সেখানে ছিল।

    এমন সোনার খাঁচাটাসমেত পাখিটাকে রাজার কাছে নিয়ে আসা হলো।

    পাখিটাকে কারা রাজার সামনে হাজির করল?

    রাজ্যের ছয়জন জ্ঞানী ব্যক্তি পাখিটাকে নিয়ে এলো।

    ব্যাপারটা সহ্য করা রাজা ওমলেটের পক্ষে সম্ভব হলো না। তার মধ্যেনিদারুণ। অস্থিরতা ভর করল।

    অস্থিরচিত্ত রাজা শেষপর্যন্ত একটা গোটা জলপাই ফল মুখে পুরে দিলেন। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে দমবন্ধ হয়ে তিনি ইহলোক ত্যাগ করলেন। রাজা ওমলেট চরম বিতৃষ্ণা বুকে নিয়ে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে অনন্ত সুন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করলেন।

    রাজা মশাই তো পৃথিবী ছেড়ে পরলোকে পাড়ি জমালেন, কিন্তু মৃত্যুর তিন দিন পর এক অত্যাশ্চর্য–একেবারেই অবিশ্বাস্য এক কাণ্ড ঘটে গেল। হঠাৎ-ই তিনি বিকটস্বরে হেসে উঠলেন। সে কী হাসি! প্রাসাদের দেওয়াল চৌচির হয়ে যাওয়ার যোগাড় হলো।

    বিকটস্বরে হেসে, শয়তান রাজার হাসির পাল্টা জবাব দিল। তার মেজাজ খুবই গরম। মরা হাসবে তার স্বরে। এ কী বরদাস্ত করা যায়, নাকি করা উচিত?

    রাজা সাহেব আবার একই রকম বিশি স্বরে, রীতিমত খেঁকিয়ে উঠলেন–এটা হচ্ছে কি শুনি!

    হি-হি-হি! কেন? কী বলতে চাইছি, বুঝছ না? হি-হি-হি! শয়তান হাসতে হাসতে রাজার কথার জবাব দিল।

    রাজা এবার বললেন–মস্করা করছ! আমার সঙ্গে ইয়ার্কি পাপ করে থাকলে। বেশ করেছি। দরকার হলে একবার নয়, আরও হাজারবার পাপ করব।

    বেশ করেছ? পাপ করে আবার বুক ফুলিয়ে গলা চড়িয়ে কথা বলছ!

    কিন্তু আমাকে এ বর্বরের মতো শাস্তি দেওয়ার অধিকার কে দিয়েছে তোমাকে?

    অধিকার? হি-হি-হি! অধিকার কেউ কাউকে দেয় না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়।

    এত বড় কথা তুমি আমার মুখের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে তোমার বুক এতটুকুও কাঁপছে না! জানো আমি তোমাকে

    আমাকে তুমি কি করতে পার, তা না হয় পরে ভেবে-চিন্তে করবে। হি-হি-হি!

    হাসি থামাও! আমার সামনে দাঁড়িয়ে ধূর্ত শেয়ালের মতো এমন খাক-খ্যাক করে হাসবে না, সাবধান করে দিচ্ছি!

    আমাকে সাবধান করার আগে তুমি আগে নিজেকে সামলাও। যাক গে, এখন যা বলছি, তাড়াতাড়ি করে ফেল তো।

    কী? তোমার আবার কি বলার থাকতে পারে? হো-হো-হো! রাজা আগের মতোই বিকটস্বরে হাসতে হাসতে বলে উঠলেন।

    তাড়াতাড়ি প্যান্ট খুলে আমার সামনে দাঁড়াও।

    কী? কী বললে? আমাকে তুমি প্যান্ট খুলতে বলছ? তোমার স্পর্ধার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে দিচ্ছি!

    কথা না বাড়িয়ে যা বলছি, লক্ষিসোনার মতো ঝটপট করে ফেলো। খোলো প্যান্ট খুলে আমার সামনে দাঁড়িয়ে পড়।

    তোমার হয়তো জানা নেই, আমি কে। তা যদি জানতে জানি। খুব ভালোই জানি। হি-হি-হি!

    না, কিছু জানেন না। তুমি কচু জানো। মাজুরকিয়াদ বইটা লিখে আমি কত নাম-যশ পেয়েছি, জানো কী?

    হি-হি-হি!

    আমি অ্যাকাডেমির একজন সম্মানীয় সদস্য, জানো?

    হি-হি-হি! এমন একজন নামকরা লোককে তুমি বলছ কিনা প্যান্ট খুলতে! তোমার স্পর্ধা–বলিহারি স্পর্ধা তোমার! তুমি বললে, আর আমি সুরসুর করে প্যান্ট খুলে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ব! কি ভেবেছ তুমি? কিছুতেই না।

    খুলবে না? প্যান্ট খুলবে না তুমি।

    না। কিছুতেই না। আহাম্মক কোথাকার! তুমি যদি জানতে, এ-প্যান্টটা আমার রাজ্যের সবচেয়ে সেরা দর্জি দিয়ে করানো। এটা তো আমি খুলবই না–এমনকি হাতের দস্তানা জোড়াও কিছুতেই খুলব না।

    হি-হি-হি! এতক্ষণ অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। কিন্তু আর নয়।

    কে তুমি? তুমি কে, এটাই তো আমি জানতে চাচ্ছি?

    স্বয়ং শয়তান! স্বয়ং শয়তান তোমার সামনে দাঁড়িয়ে, এখন পর্যন্ত তোমার প্যানপ্যানানি বরদাস্ত করে যাচ্ছে, শুনে রাখো।

    তুমি শয়তান! হো-হো-হো!

    খবরদার! হাসি থামাও। এমন হো-হো করে হেসে আমার মেজাজটা আর খারাপ করে দিও না, বলে দিচ্ছি! আরও খোলসা করে আমার পরিচয় দিচ্ছি, শোনো–আমার নাম বাল-জিবাব, মাঝিদের সম্রাট আমি। একটু আগেই আমি তোমাকে ওই কফিনটা থেকে বের করে এনেছি। ওই দেখো, রোজ উদেরে তৈরি, হাতির দাঁতের কারুকার্য করা কফিনটা পড়ে রয়েছে।

    রাজা ঘাড় ঘুড়িয়ে মুহূর্তের জন্য কফিনটার দিকে তাকালেন।

    শয়তান আগের মতোই বিশ্রি স্বরে বলে চলল–তোর গা দিয়ে ভুরভুর করে সুগন্ধ বেরোচ্ছিল। আর এক চিলতে কাগজের গায়ে স্পষ্টাক্ষরে সব বৃত্তান্ত লেখা ছিল।

    তুমি, তুমি আমাকে, কফিন থেকে বের–

    রাজার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে শয়তান আবার একই স্বরে বলে উঠল–হ্যাঁ, আমিই তোমাকে কফিনটা থেকে বের করেছি। তোমাকে কে পাঠিয়েছে, বলতে পারো?

    রাজা ফ্যালফ্যাল করে নীরবে শয়তানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

    শয়তান নিজেই তার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলল–তোমাকে এখানে পাঠিয়েছে আমারই বেতনভুক্ত কবরখানা-ইন্সপেক্টর।

    কবরখানা-ইন্সপেক্টর?

    হ্যাঁ, ঠিক তা-ই। শোনো, তোমাকে যখন আমি খরিদ করে নিয়েছি তখন তোমার পরনের ওই প্যান্টটাও তো আমারই, তাই না? খোলো, শিগগির প্যান্টটা খুলে ফেল।

    ওমলেটের রাজা রাগে একেবারে কাঁপতে কাঁপতে বললেন–তুমি ঘুঘু দেখেছ, তার ফাঁদ দেখনি শয়তান। তুমি শুনে রাখো, এমন একটা ন্যাক্কারজনক অপমানের বদলা আমি নেবই নেব না।

    হি-হি-হি!

    তোমার ধৃষ্টতা আমি এতক্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে বরদাস্ত করেছি। অসহ্য! একেবারেই অসহ্য! এ অপমানের প্রতিশোধ আমি নেবই নেব। এখন আমি বিদায় নিচ্ছি। নমস্কার!

    শয়তানকে নমস্কার জানিয়ে ঘর ছেড়ে বেরোতে গিয়েই রাজা দরজার সামনে মোক্ষম একটা ধাক্কা খেলেন। এক ধাক্কায় তাকে ফেলে দেওয়া হলো শয়তানের সামনে–একেবারে তার মুখোমুখি।

    রাজা কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। বার কয়েক চোখ দুটো রগড়ে, পর-পর হাই তুলে কাঁধ দুটোকে ঝাঁকুনি দিয়ে পরিস্থিতিটা সম্বন্ধে একটু আঁচ করে নিলেন।

    পরমুহূর্তেই তিনি ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক-ওদিক তাকালেন। শয়তানের কথার সত্যতা যাচাই করে নিলেন। এবার পুরোপুরি নিঃসন্দেহ হলেন, তিনি সত্য সত্যই মড়া।

    রাজা আবার চোখের মণি দুটো ঘুরিয়ে ভালো করে দেখে নিলেন। তিনি কোথায় এসেছেন–এখন কোথায় অবস্থান করছেন, জানা দরকার। কিছুটা অন্তত ধারণা তার হলো।

    চার দেওয়ালে ঘেরা একটা ছোট্ট ঘর। ঘর না বলে একে বরং একটা খুপড়ি বলাই উচিত। চারটি দেওয়ালের মধ্যে বৈচিত্র কিছু নেই। বৈচিত্র যেটুকু লক্ষিত হচ্ছে, তা মাথার ওপরে। যেটার কড়িকাঠের অস্তিত্ব নেই। কড়ি কাঠের পরিবর্তে মাথার ওপরে টুকরো টুকরো আচ্ছাদনের মতো লাল মেঘ অনবরত চক্কর মারছে।

    রাজা এবার সোজা ওপরের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। দেখলেন, লাল মেঘের ফাঁক দিয়ে অনেক, অনেক ওপর থেকে রক্তের মতো লাল, অজ্ঞাত এক ধাতুর তৈরি বেশ মোটা একটা শেঁকল সোজা নেমে এসেছে।

    শেঁকলটার একটা প্রান্ত হয়তো আকাশের সঙ্গে লেগে রয়েছে, আর বিপরীত প্রান্তে একটা চুনি পাথর ঝুলছে। চুনি পাথরটার গা থেকে অত্যুজ্বল দ্যুতি যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে। এমন তীব্র দ্যুতি যে, তাকাতেই কষ্ট হচ্ছে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে।

    চুনি পাথরটাকে দেখেই রাজা নিঃসন্দেহ হলেন। এমন অত্যাশ্চর্য পাথর এর আগে কেউই দেখে নি, কল্পনাও করতে পারেনি। অতএব পাথরটার দিকে মুহূর্তের জন্য তাকিয়েই তিনি মনে মনে ভূয়সী প্রশংসাই করতে লাগলেন।

    এবার ঘরের চারকোণের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে রাজা দেখলেন, চারকোণে চার রকমের চারটি পাথরের মূর্তি রয়েছে। প্রতিটা দানবাকৃতি বিশিষ্ট।

    পাথরের মূর্তিগুলোর তিনটিতে লক্ষিত হচ্ছে, মিশরের দৈহিক বিকৃতি, গ্রীসের দেহসৌষ্ঠব আর ফরাসির সবকিছু।

    চতুর্থ মূর্তিটাকে বোরখা দিয়ে এমনভাবে আবৃত করে রাখা হয়েছে, যাতে ক্রমে সরু হয়ে আসা হাটু আর পায়ের জুতা জোড়া ছাড়া আর কিছু রাজার নজরে পড়ল না।

    ব্যস, এটুকু দেখেই রাজার মুখটা রক্তের মতো লাল হয়ে উঠল। মনে হলো হঠাৎ যেন কেউ তুলি দিয়ে রক্তের ছোপ দিয়ে দিয়েছে তার সারা মুখে।

    আর ঘরের এখানে-ওখানে হাজার খানেক ছবি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ছবিগুলোর ওপর একবার চোখ বুলিয়েই রাজার মনে হলো চিত্রশিল্পী র‍্যাফেলকেও বুঝি কোনো না-কোনো সময়ে এ ঘরে আনা হয়েছিল। দেওয়ালের গায়ে সর্বত্র বিলাসিতার ছাপ সুস্পষ্ট।

    রাজা কিন্তু এতকিছু দেখেও এতটুকুও দমে যাননি। নিজেকে সামলে সুমলেই রেখেছেন।

    কিন্তু একটামাত্র পর্দাবিহীন জানালা দিয়ে নরকের আগুনের হল্কা দেখে ভয়ে একেবারে কুঁকড়ে গেলেন। আর সঙ্গে সঙ্গে তার কানে এলো বিকট আর্তস্বর। যন্ত্রণার চিল্লাচিল্লির সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনবরত বেজে চলেছে যন্ত্র-সংগীত। একে যন্ত্র-সংগীত না বলে বরং যন্ত্রণা-সংগীত বললেই যথার্থ বর্ণনা দেওয়া হবে।

    সে বাজনার শুরু বা শেষ কিছুই নেই। জানালার মায়াচ্ছন্ন কাঁচের ফাঁক দিয়ে অনবরত সে বিদাসময় বাজনা ভেসে আসছে। যন্ত্রণা! দুঃসহ যন্ত্রণার সংগীত।

    রাজা যেন আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না। দুম্ করে বসে পড়লেন। পাথরের মূর্তির মতো নিশ্চল-নিথরভাবে বসেই রইলেন।

    অন্যান্য জাতির মতো ফরাসিরা ঝট করে সংজ্ঞা হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে না। আর ওমলেটের রাজা লোক হাসিয়ে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলার ব্যাপারটাকে মোটেই বরদাস্ত করতে পারেন না। তাই মুহূর্তের মধ্যেই তিনি নিজেকে সামলে স্বাভাবিক হয়ে নিলেন।

    বসে থাকা অবস্থাতেই চোখ ঘুরিয়ে টেবিলের দিকে তাকালেন। দেখলেন, সেখানে কয়েকটা সুতীক্ষ তরবারি পড়ে রয়েছে। তরবারি চালানোয় রাজা খুব ওস্তাদ। যুদ্ধ ভালোই জানেন। এক সময় যোদ্ধা হিসেবে তার খ্যাতিও নেহাৎ কম ছিল না।

    তিনি হাত বাড়িয়ে দুটো তরবারি তুলে নিলেন। আঙুল বুলিয়ে বুলিয়ে তার তীক্ষ্ণতা পরীক্ষা করে নিলেন।

    হাতের তরবারি দুটো বার কয়েক বন্ বন্ করে ঘুরিয়ে রাজা এবার শয়তানকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান করলেন।

    হায়! এ কী মহা ফ্যাসাদ! শয়তানটা যে তরবারি চালাতে জানে না, যুদ্ধ করবে কি করে! এখন উপায়!

    বহুৎ আচ্ছা! তরবারি না হয় বাদই দেওয়া যাক। তবে তাসের লড়াই শুরু হোক। দেখা যাক, কার হিম্মৎ বেশি।

    রাজার হুঙ্কারে শয়তান রাজি হয়ে গেল।

    লড়াইয়ের শর্ত শয়তান হেরে গেলে মরা রাজা হবেন জ্যান্ত-নরক থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।

    ব্যস, তাদের লড়াই শুরু হয়ে গেল।

    শয়তান তাস চালতে চালতে যখন হাই তুলতে আরম্ভ করল আর মদের বোতল গলায় ঢালতে লাগল। সে সময় মওকা বুঝে রাজা হাত সাফাইয়ে লেগে গেলেন।

    শয়তান হি-হি-হি করে হেসে উঠল।

    যুদ্ধজয়ী রাজা ঝট করে উঠে দাঁড়াল। দিগ্বিজয়ী বীরের মতো না হলেও বিবাগী ডায়োজিনির মতো কাঁটামারা বুটে ঘটঘট আওয়াজ তুলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।

    তাসের জুয়ার মাধ্যমে রাজা মুক্তিপণ আদায় করলেন। যমরাজার দরবার থেকে তিনি হাসিমুখে ফিরে এলেন।

    হোয়াই দ্য লিটল ফ্রেঞ্চম্যান ওয়ারস হিজ হ্যান্ড ইন এ স্লিভ

    একবার একজনের মুখে পাড়ারই এক রূপসি সম্বন্ধে অনেক গল্প শুনেছিলাম। এক সকালে আমি জানালায় দাঁড়িয়েছিলাম। ছয়ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা শরীরটাকে নিয়ে, আমি রাস্তার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছিলাম। তখন একেবারে হঠাৎই রাস্তার বিপরীত দিকের জানালায় সে সুন্দরীকে দেখতে পেলাম।

    আমি হচ্ছি একজন জমিদার–ডাকসাইটে জমিদার। আমার খেতাবও নেহাৎ ছোটখাট নয়–খুবই লম্বা।

    আমার ভাষা একেবারেই গ্রাম্য লন্ডনের নিচের তলার ভাষা ঠিক যেমনটা হয়ে থাকে।

    সে রূপসি ছিল আমার থেকে বেশ কিছুটা দূরে। এতদূর থেকে কথা বলা সম্ভব নয়, দরকারও নেই। চোখের ইশারায়ই কাজ সারতে হলো।

    আমার চোখের দিকে চোখ পড়তেই আমার পাড়ার রূপসির দুচোখের পাতা পতপত করে উঠল।

    আমি তার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে একইভাবে তাকিয়েই রইলাম।

    রূপসি ইতিমধ্যে চোখে একটা আতস কাঁচ লাগিয়ে ভালোভাবে আমাকে দেখে নিল। তারপর ঝট করে জানালা থেকে সরে গেল।

    গর্বে আমার বুক ফুলে এত উঁচু হয়ে গেল। কম কথা! প্রথম দর্শনেই, এক নজরেই বাজিমাত করে ফেলেছি, গর্ব হওয়ার তো কথাই বটে।

    পরদিন সকাল হলো।

    আমি একটু আগেই বিছানা ছেড়ে নেমেছি।

    এমন সময় আমার ঘরের দরজার কড়া নড়ে উঠল।

    দরজা খুলতেই দেখি, তিন ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট এক ফরাসি ভদ্রলোক হাসিমুখে দরজায় দাঁড়িয়ে।

    আমি কিছু বলার আগেই সে তার আগমনের কারণ জানাল। সে রূপসির সঙ্গে আমার আলাপ-পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য আমাকে ডেকে নিয়ে গেল। আমি যারপরনাই আশান্বিত ও উল্লসিত হলাম। বাঁধনহারা আনন্দের মধ্যে আমি নিজের ছয়ফুট তিন ইঞ্চি উচ্চতার দেহটাকে ঝটপট সাজিয়ে নিলাম। ব্যস, আর মুহূর্তমাত্র দেরি না করে আগন্তুকের সঙ্গে সে রূপসির বাড়ির দরজায় হাজির হলাম।

    দেখলাম, আমার বাঞ্ছিতা রূপসি একটা সোফার ওপর শরীর এলিয়ে দিয়ে ঘর আলো করে বসে রয়েছে। মুখে মিটিমিটি হাসির ঝিলিক।

    আমি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে অভিবাদন জানিয়ে তার বা-দিকে ধপাস করে বসে পড়লাম।

    আমি বসতে না বসতেই বেটেখাট ফরাসিটাও তার ডানদিকে বসে পড়ল।

    তার ধৃষ্টতা দেখে আমি রেগে একেবারে আগুন হয়ে গেলাম। কটমট করে তার মুখের দিকে তাকালাম। আমি মুখে কিছুই বললাম না। কারণ, আমি তো একজন সম্ভ্রান্ত ঘরের পুরুষ মানুষ। হৈ-হল্লা করে তো আমার মানায় না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে লাগলাম।

    আমি এবার রূপসির দিকে ফিরলাম। তার দিকে চোখ ও মন নিবদ্ধ করলাম। দু চারটি মিঠে কথা বলার পর তার বাঁ-হাতের কড়ে আঙুলটা আমার হাতের মুঠোর মধ্যে নিলাম। কিন্তু যেই না আঙুলটাকে আলতোভাবে একটা মোচড় দিলাম, অমনি রূপসি অতর্কিতে এক হেঁচকা টানে আমার হাতের মুঠো থেকে নিচের আঙুলটাকে টেনে নিল।

    আমি সবিস্ময়ে তার মুখের দিকে নীরবে তাকিয়ে রইলাম।

    সে চোখের তারায় তিরস্কারের সুস্পষ্ট ছাপ এঁকে কটমট করে আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন আমাকে কাঁচাই গিলে খাবে।

    না, আমারই ভুল হয়েছে। তার চোখের ভাষা আমি বুঝতে ভুল করেছি। তার আঙুল মুচড়ে দেওয়ার জন্য সে আমার দিকে এমন করে তাকায়নি।

    তবে? আকস্মাৎ তার মধ্যে এমন ভাবান্তর ঘটল কেন?

    আসলে সে বলতে চাইছে, যা করতে মন চায় কর না কেন, আপত্তি নেই, কিন্তু তাই বলে এ হতচ্ছাড়া ফরাসিটার সামনে! ছি! লজ্জা শরম বলে কিছু নেই!

    আমি তার মনের কথা বুঝতে পারলাম।

    ব্যস, এক মুহূর্তও দেরি না করে আমি সোফার পিছনের দিকে ডান হাতটা চালান দিয়ে দিলাম।

    হ্যাঁ, যা ভেবেছি, তা-ই ঘটল। উদ্দেশ্য সিদ্ধ হলো।

    রূপসি ইতিমধ্যেই তার ডান হাতের কড়ে আঙুলটাকে সোফার পিছন দিকে বাড়িয়ে রেখেছে। তবে পুরোপুরি হতচ্ছাড়া ফরাসিটার অলক্ষে।

    আমি মনের সুখে হরদম তার কড়ে আঙুলটা মর্দন করতে মেতে গেলাম। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম, বে-আক্কেল নচ্ছাড় ফরাসিটা অসভ্যের মতো ঘেঁষতে ঘেঁষতে রূপসির দিকে সরে আসতে আরম্ভ করেছে। ইতিমধ্যে সে অনেকটা সরেও এসেছে।

    আমি হুমকি দিয়ে উঠতেই সুন্দরী ঝট করে সোফা থেকে উঠে গটগট করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। আমি আপন মনে বলে উঠলাম–হ্যায়! এ কী আজব কাণ্ড! এটা কি করে সম্ভব! আমি যে এখনও তার কড়ে আঙুলটা আগের মতোই মর্দন করে চলেছি! আমি চেঁচিয়ে উঠলাম–এ কী করছ সুন্দরী! তোমার কড়ে আঙুলটা আমার মুঠোর মধ্যে রয়ে গেল যে!

    সে কিন্তু দাঁড়ানো তো দূরের কথা, আমার কথা শুনে পিছন ফিরে তাকাল না পর্যন্ত। আর আমি রাগ সামলাতে না পেওে যন্ত্রেও মতো দ্রুততার সাথে সোফার পিছনে দৃষ্টি দিয়ে থেমে গেলাম। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আপন মনে বলে উঠলাম–হায় ঈশ্বর! আমি যে মুঠো করে বসে আছি সেটা তো নচ্ছাড় ফরাসিটার আঙুল!

    আমি রাগে গজরাতে লাগলাম আর আঙুলটা এমনভাবে মর্দন করলাম যে, সেটা কট করে ভেঙে গেল।

    একটু পরেই রূপসির দারোয়ান এসে আমাদের দুজনকেই টেনে-হিঁচড়ে সিঁড়ির কাছে নিয়ে গেল। তারপর জোরে জোরে দুটো লাথি মেরে আমাদের দুজনকেই সিঁড়ির ওপর থেকে ফেলে দিল। আমরা অসহায়ভাবে গড়াতে গড়াতে আধ-মরা অবস্থায় একেবারে নিচে এসে পড়লাম।

    তারপর থেকে ফরাসি অপদার্থটা বাঁ-হাত কাপড় দিয়ে জড়িয়ে গলার সঙ্গে সর্বক্ষণ ঝুলিয়ে রাখতে লাগল। আসল কারণটা কী? কাউকেই মুখ ফুটে বলতে পারল না। এমন লজ্জার কথা কি কাউকে বলা যায়?

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগোল্ডেন লায়ন – উইলবার স্মিথ / জাইলস ক্রিস্টিয়ান
    Next Article লাভ ক্যান্ডি – জাফর বিপি
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }