Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যাডগার অ্যালান পো রচনাসমগ্র / অনুবাদ : জাকির শামীম

    জাকির শামীম এক পাতা গল্প1512 Mins Read0

    দ্য ম্যান দ্যাট ওয়াজ ইউজড আপ

    মি. জন এ. বি. সি. স্মিথ!

    ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জন এ. বি. সি. স্মিথের সঙ্গে আমার কোথায়, কবে আর কখন যে প্রথম পরিচয় হয়েছিল, এখন আর স্মৃতির পাতা ঘাঁটাঘাঁটি করে সে সব কথা উদ্ধার করা সম্ভব নয়।

    ভদ্রলোকের চেহারাটা বাস্তবিকই জবরদস্ত, যাকে বলে রীতিমত আভিজাত্যের ছোঁয়া আছে মাথার চুল থেকে আরম্ভ করে পায়ের নখ পর্যন্ত প্রতিটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। সত্যিকারের পুরুষ মানুষের বলতে যা বোঝায়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ছিলেন ঠিক তা-ই।

    তার সঙ্গে প্রথম আলাপ কবে আর কোথায় হয়েছিল–আজ আর ঠিক স্মরণ করতে না পারলেও তবে কেউ না কেউ তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল এ কথা কিন্তু মিথ্যা নয়। আর যতদূর আমার মনে পড়ছে, কোনো এক জনসভায় আমাদের প্রথম পরিচয় হয়েছিল। তবে তার সম্পূর্ণ নামটা আজ আর আমি স্মৃতিতে কিছুতেই আনতে পারছি না। মহানুভব সে ব্যক্তিটার নাম আমার এখন আর একদম মনে পড়ছে না।

    তবে আমার এটুকু বেশ মনে পড়ছে, তার সঙ্গে প্রথম আলাপের মুহূর্তে আমি অকস্মাৎ ঘাবড়ে গিয়ে একেবারে মিইয়ে গিয়েছিলাম। আর সে কারণেই তো কিছুই স্মৃতিতে আনতে পারছি না। আর আমার অন্তরের অন্তঃস্থলে কোনো দাগই পড়তে পারেনি।

    আমার স্বভাব অনুযায়ী এমনিতেই সহজে ঘাবড়ে যাই। মানসিক সুস্থিরতা হারিয়ে ফেলি। আমার জন্মসূত্রে পাওয়া ভিরু প্রকৃতি। অতএব সে মুহূর্তে যে আমি খুবই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, এতে আর অবাক হবার কি থাকতে পারে? আমার এ ভিতু প্রকৃতিতে যদি রহস্যের নামগন্ধও লেগে থাকে, তবে আমার প্রাণ উদ্বেগ, আর উত্তেজনায় খাঁচাছাড়া হয়ে পড়ার যোগাড় হয়।

    এমন একজনের সম্বন্ধে লিখতে বসেছি, যাকে এক অদ্ভুত প্রকৃতির মানুষ ছাড়া অন্য কিছুই ভাবা সম্ভব নয়। অদ্ভুত বা অত্যাশ্চর্য শব্দের মাধ্যমেও আমি মনের কথাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত করতে পারছি না।

    কেন এরকম কথা বলছি, তার সমর্থনে যুক্তিস্বরূপ বলা যেতে পারে, ভদ্রলোকের দৈহিক উচ্চতা ছয়ফুট। আর মুখ দেখলেই মনে হয়, অস্বাভাবিক রকমের ডাকসাইটে প্রকৃতির। সবার ওপরে ছড়ি ঘোরাতেই অভ্যস্ত। কারো হুকুম তামিল করতে নয়, সবাইকে হুকুম করতেই যেন তিনি ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছেন।

    আরও আছে, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাহেব জন্মসূত্রেই যিনি সমজের ওপর তলার মানুষ হিসেবে সম্মানলাভের অধিকারী। আর সে মহলের উপযোগি পড়াশুনা আর আদব-কায়দা শিখে নিজেকে সে সমাজের উপযোগি করে তৈরি করে নিয়েছেন। তার চোখমুখ আর চলাফেরাতেও সে প্রমাণই প্রকট।

    স্বীকার করতে লজ্জা নেই, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাহেবের পাশে দাঁড়ালে আমাকে একজন পিগমি সন্তান ছাড়া ভাবতেই পারবে না। আর তাই আমার মন প্রাণ বিষণ্ণভরা তৃপ্তিতে ভরপুর করে তোলে। তার মাথায় একরাশ ঝাকড়া চুল। ব্রুটাস যদি এমন চুলের অধিকারী হতেন তবেনির্ঘাৎ বর্তে যেতেন।

    মাথার বড় বড় কোঁকড়ানো চুলগুলোর চাকচিক্য যেমন আকর্ষণীয়, ঠিক তেমনই মনোলোভা কায়দায় সেগুলো বিন্যাস করা হয়েছে। সত্যিকথা বলতে কি, এমন দৃষ্টিনন্দন চুল সচরাচর চোখেই পড়ে না। তার ওপর কালো রঙ, চুলগুলোর সৌন্দর্যকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে, সন্দেহ নেই। আর দুপাশের ইয়া বড় জুলপির রঙও একই রকম কালো–চকচকে ঝকঝকে। আর মোটা গোঁফ জোড়াও তার সুখের সৌন্দর্য কম বৃদ্ধি করেনি, আকর্ষণীয়ও কম করে তোলেনি।

    সব মিলিয়ে একটা কথা খুব জোর দিয়েই বলা যেতে পারে, সূর্যের তলায় পৃথিবী নামক এ গ্রহে এমন পুরুষোচিত মনোলোভা গোঁফ আর জুলফি আগে তো নয়ই, বর্তমানেও কারো মুখে নজরে পড়ে না। এ দুটো বস্তু প্রায় পুরো মুখটাকেই ঢেকে রাখত।

    গোঁফ আর জুলফির দৌলতে, দাপটেও বলা চলে, মাঝে মধ্যে তার মুখটা যেন ছায়াচ্ছন্ন হয়ে থাকত। আবারও না বলে পারছি না, এরকম আর একটা মুখ সারা পৃথিবী ঘুরে এলেও নজরে পড়বে না।

    আর তার দাঁত? দাঁতের পাটি দুটোর দিকে তাকালে চোখ ট্যাঁরা হয়ে যাবে। দাঁতগুলোকে যেন এমন সতর্কতার সঙ্গে পাশাপাশি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনো একটা দাঁত যেন সারি থেকে এতটুকুও বাইরে বেরিয়ে যায়নি সামান্যতমও অসমান নয়।

    দুপাটি দাঁতের ফাঁক দিয়ে সুরেলা মিষ্টিমধুর কণ্ঠস্বরনির্গত হয় যাকে একাধারে গানের মতো মাত্রাতিরিক্ত মিষ্টিমধুর, পানির মতো স্বচ্ছ আর বজ্রের মতোই নিরস কর্কশ মনে হয়। কোনো মানুষের কণ্ঠ দিয়ে যে এমন মধুর স্বচ্ছ আর স্পষ্ট হতে পারে, তা নিজের কানে না শুনলে বিশ্বাস করতেই উৎসাহ পাওয়া যাবে না।

    আর তার আয়তাকার চোখ দুটোর দিকে এক পলক তাকালেই মনে হবে যেন দুটুকরো কোমল হীরা তার চোখের কোটরে আলতোভাবে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এ দুটোকে চোখ না বলে চক্ষুরত্ব বললেই বুঝি যথাযথ বর্ণনা দেওয়া হবে। কিন্তু যদি চক্ষুযন্ত্র বা দর্শণেন্দ্রিয় বলা হয়, তবে এদের প্রতি অবিচারই করা হবে।

    তার চোখ দুটো যেমন আয়তনে বিশাল, ঠিক তেমনই জ্যোতি সমুজ্জ্বল আর ভাবগম্ভীরও অবশ্যই। মাঝে মাঝে এর চোখের তারার রহস্যের ছাপও মেলে। সব মিলিয়ে এ দুটো মনোভাব অভিব্যক্তি প্রকাশের মাধ্যম মনে করা ছাড়া অন্য কিছু ভাবাই যায় না।

    আর তার দেহসৌষ্ঠব! এরকম দেহের অধিকারী মানুষ পথে-ঘাটে একজনও চোখে পড়ে না। নির্দিধায় একে পুরুষশ্রেষ্ঠ বলে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। কেউ যদি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে, অনুসন্ধিৎসু চোখে নিরীক্ষণ করে তবুও তার অঙ্গ-প্রতঙ্গের অনুপাতে তিলমাত্র ত্রুটিও খুঁজে বের করতে পারবে না।

    ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের সমুন্নত কাঁধ দুটোকে দেখলে অ্যাপোলোরর শ্বেত পাথরের নিখুঁত মূর্তিও লজ্জায় রক্তিম হয়ে উঠবে। আঃ! কী চমৎকার! সত্যি পুরুষোচিত কাধই বটে। একটা বদ-খেয়াল অনেকদিন ধরেই আমার রক্তের সঙ্গে যেন মিশে রয়েছে। পথেঘাটে চলতে চলতে যথার্থ পুরুষোচিত কাঁধের খোঁজ করা।

    অতএব আমার কথার ওপর নির্দিধায় বিশ্বাস রাখতে পারেন, সৃষ্টিকর্তা বিধাতা এমন দৃষ্টিনন্দন, এমন নিখুঁত মনোলোভা কাঁধ সৃষ্টি করে একজনকে কেবলমাত্র একজনকেই ধরাধামে পাঠিয়েছেন সে ব্যক্তিটিই হচ্ছেন আমাদের এ সুপুরুষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ছাড়া কেউ নন।

    তার বাহু দুটোতে অখ্যাতি করার মতো কোনো চিহ্নই কারো নজরে পড়ে না। কারণ এমন নিখুঁত-নিটোল বাহুর অধিকারী মানুষ দ্বিতীয় আর একজনও চোখে পরে না।

    তার বাহু দুটো যেমননিম্নমানের নয় ঠিক তেমনই নিখুঁত তার পা-দুটোর গড়ন। এ দুটোর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলতেই হয়–অধিকতর মাংসল তো নয়ই আবার কম মাংসলও নয়। আবার যেমন কাঠিন্য বেশি নয়, তেমনই কোমলতাও তেমন লক্ষিত হয় না। ভালোভাবে নিরীক্ষণ করলে স্বীকার না করে উপায় থাকবে না, তার পা দুটো বেশি বেঁটেখাট নয়, আবার চোখে লাগাল মতো লম্বাও নয়। মোদ্দাকথা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের চেহারার বিবরণ দিতে গিয়ে সমানুপাতৎ শব্দটাকে বার বার ব্যবহার না করে উপায়ই থাকে না।

    পা দুটোর কথা বলতে গিয়ে আরও বলতেই হয়, উরুদেশ, হাঁটু আর গোড়ালি– সব ক্ষেত্রেই সমানভাবে কথাটা প্রযোজ্য। পৃথিবীর সেরা কারিগরের পক্ষেও এমন সব দিক থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ দুটো পা-গড়া সম্ভব নয়, কিছুতেই নয়।

    ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের চালচলনে একটা অত্যাশ্চর্য সংযম ফুটে উঠত। হাঁটাচলার সময় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নির্দিষ্ট একটা ছকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত–এতটুকুও হেরফের হত না। কেউ যদি একে আড়ষ্টতা মনে করেন তবে কিন্তু দারুণ ভুলই করবেন।

    এ রকম দশাসই চেহারা, চটকদার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জ্যামিতিক নিয়মে সঞ্চালিত হবে, এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে পিগমি চেহারার ব্যাপারটা মানানসই না হতে পারে, বিশালদেহী এটাই অদ্ভুত একটা আর্টে পরিণত হয়েছে। যার ক্ষেত্রে যা মানানসই তার হেরফের ঘটলেই তো চোখে বিসদৃশ্য ঠেকবে।

    এবার জাঁদরেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়ের বিশেষ মুহূর্তটা সম্বন্ধে দু-চার কথা বলা প্রয়োজন বোধ করছি। যে বন্ধুর দৌলতে এমন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আমার প্রথম মোলাকাৎ ঘটে, চেনা-পরিচয় হয়, তিনি তখন আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে সাধ্যমত অনুচ্চ কণ্ঠে, ধরতে গেলে রীতিমত ফিসফিসিয়ে একটা কথাই পরিচয়ের মুখবন্ধ হিসেবে আমাকে বলেছিল–সত্যি এক অদ্ভুত প্রকৃতির মানুষ এ-ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাহেবটি। আর যাকে অদ্ভুত–অতাশ্চর্য বলতে চাইছি তা কিন্তু সব ব্যাপারেই পুরোপুরি প্রযোজ্য। এর কথাবার্তা, হাবভাব আর চলাফেরা সবকিছুতেই আশ্চর্যের ছোঁয়া ছিল পুরোদস্তুর। আমি অদ্ভুত আর অত্যাশ্চর্য শব্দ দুটো ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি বটে, কিন্তু আসলে এদের উভয়কে হাজারগুণ বাড়িয়ে দিলেও তার সম্বন্ধে আমার মনের ভাব পুরোপুরি ব্যক্ত করা হবে কিনা সন্দেহ।

    মুহূর্তের জন্য থেমে আমার সে বন্ধু এবার বলল–বন্ধু, এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে যাচ্ছি, আমাদের এ-ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাহেব আরও একটা বিশেষ কারণের জন্য মহিলাদের কাছে যারপরনাই আকর্ষণীয়–সেটা হচ্ছে, এর অটুট মনোবল আর অতুলনীয় সাহসিকতা। এমন অপরিমিত সাহস আজ অবধি কোনো পুরুষই প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়নি–একমাত্র তিনি ছাড়া।

    আমি এর সম্বন্ধে যতটুকু জানি তাতে করে না বলে পারছি না, এমন একজন মনে-প্রাণে বেপরোয়া মানুষ হয় না, হবে না। প্রাণের মায়া তিলমাত্রও এর নেই। এ প্রসঙ্গে একটা কথাই বলা যেতে পারে, মণ্ডা-মিঠাইয়ের মতো তিনি অবলীলাক্রমে আগুনও গিলে ফেলতে পারেন। সব মিলিয়ে তার মতো পুরুষ-সিংহ পৃথিবী ঘুরে এলেও দ্বিতীয় আর একজনকে খুঁজে বের করা যাবে না–আমার দৃঢ় প্রত্যয়।

    কথা বলতে বলতে আমার বন্ধুটি তখন এমন ভাব-বিমুগ্ধ হয়ে পড়েছিল, যাকে একমাত্র শ্রদ্ধায়-ভক্তিতে গদগদ বলেই বর্ণনা করা চলতে পারে।

    কথা বলতে বলতে তার কণ্ঠস্বর শেষের দিকে এমন আপুত, এমন ভাঙা-ভাঙা হয়ে পড়েছিল যে, সে বক্তব্য শেষ করাই তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সত্যি কথা বলতে কি, তার কণ্ঠস্বরের ক্রম-পরিবর্তনটুকুর অব্যক্ত রহস্যে আমার ভেতরটা যেন কেমন মিইয়ে যেতে লাগল। শেষপর্যন্ত কহু কষ্টে আমি যে নিজেকে সামলে-সুমলে নিতে পেরেছিলাম এটাই যথেষ্ট।

    আমার বন্ধুটি কয়েক মুহূর্তের জন্যনির্বাক-নিস্তব্ধ হয়ে কাটানোর পর আবার মুখ খুলল। আমি কিন্তু একতিলও বা নিয়ে বলিনি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাহেব সত্যি সত্যি আগুন গেলার হিম্মৎ রাখেন। আরে বন্ধু, তিনি এভাবেই কি কাপু আর বুগাবু রেড ইন্ডিয়ার দুজনের সঙ্গে যুদ্ধ করেই তো ধরাশায়ী করে ছেড়েছিলেন। নইলে কি আর অমিত শক্তির আধার জংলি দুটোকে কজা করতে পারতেন, আমি জোরগলায় বলতে পারি, অবশ্যই না।

    তিনি এমনই দোদণ্ড প্রতাপশালী ছিলেন যে, মন চাইলে তিনি আকাশের বাজকেও কোৎ করে গিলে ফেলতে পারতেন।

    একটু দম নিয়ে আমার সে বন্ধুবর তারপর বলেছিল–শোন বন্ধু, সত্যি কথা যদি বলতেই হয় তবে না বলে উপায় নেই, মানুষ বলতে যা বোঝায় তিনি আদৌ তা না। নয়। ওনাকে একমাত্র–

    ব্যস, এ পর্যন্ত বলার পর আমার সে বন্ধুবরের কণ্ঠ হঠাৎ হ্যাঁ, একেবারে হঠাৎ যেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

    কথা বলতে বলতে সে যে হঠাৎ-ই থেমে গিয়েছিল তার কারণও ছিল যথেষ্টই। কারণ, ইতিমধ্যেই ব্রিগেডিয়ার-জেনারেল আমাদের একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। তিনি এগিয়ে এসে বিশাল দেহটাকে বার কয়েক দুলিয়ে, হাসতে হাসতে বন্ধুর সঙ্গে করমর্দন সারলেন।

    আমি তখন মুগ্ধ নয়নে তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এমন বিস্মিত হয়েছিলাম যে, আমি চোখের পলক পর্যন্ত ফেলতে পারছিলাম না। সে মুহূর্তে আমার বিস্ময়ের কারণ ছিল, তার মুক্তোর মতো ঝকঝকে চকচকে দাঁত, চোখের মণির উজ্জ্বল্য আর মিষ্টি মধুর কণ্ঠস্বর। এমন চমৎকারিত্বে মুগ্ধ না হয়ে কেবলমাত্র আমার পক্ষেই না, কারোরই সম্ভব ছিল না।

    আমি আফসোস করছি, হা-পিত্যেশই বলা চলে–ইস্ বন্ধুর বক্তব্যের শেষটুকু শুনতে পেলাম না। যদি তা সম্ভব হতো তবে কিন্তু আমাকে রহস্যের উঙ্কণ্ঠায় এমন করে পৌণে-মরা হয়ে থাকতে হতো না। এখন আর ভেতরে ভেতরে গুমড়ে মরা ছাড়া উপায়ই বা কি?

    ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাহেবের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েই প্রাণের দোসরটা কোথায় যেন সুরুৎ করে কেটে পড়ল। আমি তার খোঁজে এদিক-ওদিক তাকানোর আগেই সে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে একেবারে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিল।

    ব্যস, সে ঘটনার পর থেকে সে আমার চোখের আড়ালেই চলে গেল। আজ অবধি তার হদিস আমার জানা নেই। এমনকি, তাকে মুহূর্তের জন্যও চোখে দেখার সুযোগ আমার হয়নি। আর একই কারণে তার নামটা পর্যন্ত আমি কিছুতেই স্মৃতিতে আনতে পারিনি।

    আজও আমার ভালোই মনে আছে, জাদরেল জেনারেল সাহেবের সঙ্গে সেদিন আমি জোর গল্প জমিয়ে বসেছিলাম। তার মধ্যেও উৎসাহের এতটুকুও ঘাটতি দেখা যায়নি।

    তার সঙ্গে দু-চারটি কথা বলেই আমি বুঝে নিয়েছিলাম, ভদ্রলোক কথার জাহাজ বটে! আরে কি আর বলব, আমাকে মুখ খোলার ফুরসত-ই দিলেন না।

    আমি তো মনে-মনে স্থিরই করে রেখেছিলাম, যদি আমি মুহূর্তের জন্যও মুখ খোলার অবসর পেতাম তবে অবশ্যই তাকে সরাসরি প্রশ্ন করে বসতাম, আপনি অমিত শক্তিধর ও দুর্ধর্ষ রেড ইন্ডিয়ান দুজনের সঙ্গে তুমুল লড়াই করেছিলেন, সেটা কি রকমের ছিল, খুব জানতে ইচ্ছা করছে। অবশ্যই-গায়ের রোম খাড়া হয়ে যাবার মতোই, কি বলেন?

    আমি অবাক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাহেব কিন্তু যুদ্ধ সম্বন্ধে একটা কথাও বললেন না। আমি হতাশ না হয়ে পারলাম না।

    তিনি আলোচনার শুরুতেই আধুনিক যান্ত্রিক আবিষ্কারের প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেন। ব্যস, শেষপর্যন্ত একই প্রসঙ্গে আলোচনায় লেগে রইলেন।

    স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, কিকাপু আর বুগাবু যুদ্ধের রহস্যের প্রতি আমার মন খুবই আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল, সত্যি। কিন্তু কেবলমাত্র ভব্যতার জন্যই আমি সে প্রসঙ্গে না গিয়ে সতর্কতার সঙ্গে নিজের আগ্রহ কৌতূহলকে সামলে-সুমলে রেখেছিলাম।

    কিন্তু কিকাপু আর বুগাবু যুদ্ধক্ষেত্রের ভয়ঙ্করতা সম্বন্ধে কিছু হলেও আলোচনা করার জন্য আমি ভেতরে ভেতরে গুমড়ে মরছিলাম।

    তবে আমি যখন লক্ষ্য করলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাহেব আমার আকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধের কাহিনী নিয়ে নিতান্তই অনাগ্রহী তিনি সবচেয়ে বেশি–একমাত্র আগ্রহই বলা চলে, দর্শনশাস্ত্রের আলোচনা নিয়ে তিনি উৎসাহি, আর যান্ত্রিক আবিষ্কারের অত্যাশ্চর্য যন্ত্র আবিষ্কারের আলোচনাতেই পুরোদস্তুর মেতে পড়েছেন, তখন অনন্যোপায় হয়েই গল্পের প্রসঙ্গ নির্ধারণের ব্যাপারটা পুরোপুরি ওনার হাতেই ছেড়ে দিয়ে আমি কেবলমাত্র শ্রোতার ভূমিকা পালনেই ব্রতী হলাম।

    ব্যস, আর কোনো কথা নয়, বক্তা ভদ্রলোক পরম উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে যান্ত্রিক আবিষ্কারের প্রসঙ্গ নিয়ে জোর আলোচনায় মেতে গেলেন। আর আমি নিতান্ত নিরীহ অনুগত শ্রোতার মতো তার শ্রীমুখ নিঃসৃত বাণী নীরবে শুনতে লাগলাম।

    আমাকে লক্ষ্য করে তিনি বললেন–জনাব, আপনি যা-ই বলুন না কেন, আমরা বাস্তবিকই চমৎকার মানুষ। আর বাসও করছি এক চমৎকার যুগেই। আজ আমাদের অবলম্বন রেলপথ আর প্যারাসুট। আর স্প্রিংয়ের বন্দুক আর কলের কাদও একে বলা যেতে পারে! আমাদের স্টিম-বোট সাত-সাগরের বুকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

    অচিরেই ন্যাশো বেলু এক অত্যাশ্চর্য, একেবারেই অবিশ্বাস্য এক কাণ্ড করে বসবে, দেখে নেবেন। কিছুদিনের মধ্যেই সেটা লন্ডন শহর আর টিকটুর মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করবে, মানে যাতায়াতের কথা বলতে চাইছি, আশা করি বুঝতে পারছেন, এর জন্য এক পিঠের ভাড়া মাত্র বিশ পাউন্ড স্টার্লি দিলেই আপনি দায়মুক্ত হয়ে যাবেন। তারা আপনাকে লন্ডন শহর থেকে চিম্বাকটু বা টিকটু থেকে লন্ডন শহরে পৌঁছে দেবে।

    তারপর ইলেকট্রো-ম্যাগনেটের কথা বলছি–এটি আমাদের সমাজজীবন, বাণিজ্য-সাহিত্য আর কলাশিল্প–সব ব্যাপারের ওপর দারুণ প্রভাব বিস্তার করবেই করবে!

    জনাব কেবলমাত্র তাই নয়, আরও আছে। আরও অনেক আছে থমসন সাহেব। ভালো কথা, আপনার নাম তো থমসনই বললেন, তাই না। আবিষ্কারের স্রোত কিন্তু এখানে থমকে যায়নি। থামেনি ভাই। ক্রমান্বয়ে এগিয়েই চলেছে–আরও চমৎকার। সব কাজে নামবার মতো আবিষ্কার একের পর এক ঘটেই চলেছে।

    মুহূর্তের জন্য থেমে একটু দম নিয়ে তিনি আবার বলতে আরম্ভ করলেন– থমসন সাহেব, আবিষ্কারের জগতে কী যে বিরাট হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটে চলেছে–বিপ্লব ঘটে চলেছেও বলতে পারেন, তা বুঝিয়ে বলার মতো আমার ভাষার একান্ত অভাব।

    রোজ! প্রতিমুহূর্তে বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না, যান্ত্রিক আবিষ্কার এখানে ওখানে সর্বত্রই ঘটেই চলেছে।

    উফ! কী শান্তি! কী আরাম! না, সর্বত্র বললে যথার্থ বলা হবে না। প্রতি মুহূর্তে উচ্চিংড়ি বা গঙ্গাফড়িংয়ের মতো প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে যান্ত্রিক আবিষ্কার তড়া তড়াক করে বেড়েই চলেছে।

    থম্পসন সাহেব, ভাবতে পারেন আবিষ্কারের জগতে কী বিরাট ঘটনা ঘটে চলেছে। আর এসব আবিষ্কারগুলো আমাদের চারদিকে বিরাজ করছে।

    আমার নাম কিন্তু অবশ্যই থম্পসন নয়। তাতে আমি কিছু মনে করিনি। কি করে যে তিনি আমাকে এমন একটা নাম ধরে সম্বোধন করতে আরম্ভ করলেন, আমি তো জানিই না, এমনকি তিনি নিজের কিছু জানেন কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যাক গে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল যে একজনকে ভুল নামে সম্বোধন করে মনের আনন্দে গদগদ হয়ে পড়েছেন তাতেই আমি রীতিমত ধন্য হয়েছে।

    আমি দু-চারটি কথাতেই বুঝে নিয়েছি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল স্মিথের মানুষের মঙ্গলই একমাত্র কাম্য। মানুষই তার একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান-সাধনা। আর উদারহৃদয় জেনারেল মানুষের সঙ্গে আলাপ জমাতে এবং কথাবার্তার মাধ্যমে মানুষের মন জয় করতে বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী।

    আর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল স্মিথের মাথায় যান্ত্রিক আবিষ্কারগুলো চারদিকে যে অভাবনীয় বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে, তা তার মাথায় অনবরত চক্কর মেরে চলেছে।

    সত্যি বলছি, তার মুখ থেকে এত কথা শোনার পরও কিন্তু আমার কৌতূহল কিছুমাত্রও নিবৃত্ত তো হয়ইনি, বরং উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।

    ব্রিগেডিয়ার জেনারেল স্মিথ সম্বন্ধে আমার মনে অদম্য কৌতূহল সঞ্চারিত হওয়ার ফলে আমি তার সম্বন্ধে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে পড়লাম। এর ওর কাছে তার কথা জিজ্ঞাসা করে জানার চেষ্টা করতে আরম্ভ করলাম।

    সবচেয়ে বেশি করে আমি জানতে চেয়েছিলাম, কিকাপু আর বুগাবু অভিযানে কি কি ঘটনা ঘটেছিল। যার ফলে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল স্মিথ সমাজের বুকে এমন এক বিশেষ ব্যক্তিত্বপূর্ণ মানুষে পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন।

    যা-কিছু শোনলাম ও বুঝলাম তাতে করে আমি মোটামুটি নিঃসন্দেহই হয়ে পড়েছি যে, মহিলা-সমাজে জেনারেল স্মিথের প্রতাপ নাকি অভাবনীয়। মহিলারা তার নাম শুনলেই নাকি একেবারে কুপোকাত হয়ে যায়। তাদের আর দিগ্বিদিক জ্ঞান থাকে না। তাই তাদের মহলে গিয়েই আমার মনের জমাটবাধা কৌতূহল নিবৃত্ত করতে গিয়েছিলাম।

    কাজে নামার পর আমার প্রথম কাজ হলো বেছে বেছে সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলাদের সঙ্গে মোলাকাত করা। করলামও তা-ই।

    আমি তাদের এক-একজনের কাছে গিয়ে জাদরেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের নাম করামাত্রই চোখ দুটো রীতিমত কপালে তুলে ফেলল। পঞ্চমুখে তার বীরত্ব আর কৃতিত্বের কথা অনবরত বলেই চলল। বলতে বলতে তাদের কেউ-কেউ এমনকিছু কথাও বলে ফেলল, যা বাস্তবে কেবলমাত্র অবিশ্বাস্যই নয়, অসম্ভবও বটে।

    যা-ই হোক, অবিবাহিতা আর বিবাহিতা মহিলাদের পঞ্চমুখে জেনারেল স্মিথের প্রশংসা শুনে শুনে আমার কান ঝালাপালা হয়ে গেল।

    মহিলার তার ভূয়সী প্রশংসা করতে করতে একটা প্রসঙ্গে কথা বলার সময় বিশেষ একটা জায়গায় গিয়ে থেমে গেল। লক্ষ্য করলাম সবাই সে বিশেষ প্রসঙ্গে, বিশেষ জায়গাটা আর কিছুতেই অতিক্রম করছে না। সতর্কতার সঙ্গে বক্তব্যের লাগাম টেনে ধরছে। ব্যাপারটা আমার মধ্যে কৌতূহলের উদ্রেক ঘটাল।

    আবার আমার বন্ধুবরও সে প্রসঙ্গটা শুরু করার পর সামান্য গিয়ে হঠাৎ একেবারে হঠাৎ-ই লাগাম টেনে ধরল। আমি যে কথাটা সম্বন্ধে বলতে চাইছি–এটা সেই কথা যখন বলা হয়েছে, তাকে মানুষ বলে গণ্য করা যায় না, বরং তিনি একজন কী সমস্যায়ই না পড়া গেল! একগাদা অবিবাহিতা আর বিবাহিতা মহিলাদের সবাই বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে একই জায়গায় আচমকা লাগাম টেনে ধরলেন, দুম করে থেমে গেলেন দেখে আমার কৌতূহল দ্রুত গতিতে করে বেড়ে গেল।

    কেবলমাত্র মহিলাদের কথাই বা বলি কেন? পুরুষ বন্ধুরাও একই রেকর্ড বাজাতে শুরু করেছে দেখে স্তম্ভিতই হয়ে গেলাম। তারাও সব শেষে একই কথা–তাকে মানুষ হিসেবে গণ্য করা যায় না, বরং তিনি একজন…তারাও একই জায়গায় এসে থমকে গেল দেখে, এমন কোনো মানুষ আছে, যার মন কৌতূহলে ভরপুর হবে না, আপনিই বলুন তো?

    এরকম একটা কথা যদি একাধিক মানুষের মুখ থেকে শোনা যায় তবে কারো। কৌতূহল উত্তরোত্তর বেড়ে না গিয়ে পারে? আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটল না। সত্যি, আমি নিঃসীম কৌতূহলের শিকার হয়ে পড়লাম। কৌতূহলজনিত অস্থিরতায় টিকতে না পেরে শেষমেশ একদিন জাদরেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের বাসায় হাজির হলাম। আমি আগেই শুনেছিলাম, বাসায় তিনি একাই থাকেন। আর একনিগ্রো চাকর তার যাবতীয় কাজকর্ম করে দেয়।

    আমি তার বাসার দরজায় পৌঁছে বার-কয়েক কড়া নাড়তেই, দরজাটা সামান্য ফাঁক হলো। সে সামান্য ফাঁকটুকু দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বুড়োনিগ্রোটা বলল–কাকে চাই?

    আমি সুপ্রভাত জানিয়ে অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম–বিগ্রেডিয়ার জেনারেল স্মিথের সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই! বুড়োনিগ্রোটা এবার বলল–না, ওনার সঙ্গে দেখা হবে না।

    আমি বিমর্ষমুখে তার দিকে নীরব চাহনি মেলে তাকিয়ে রইলাম।

    বুড়ো নিগ্রোটা এবার বলল–জেনারেল এখন সাজগোজ করতে ব্যস্ত। অতএব তার সঙ্গে এখন কিছুতেই দেখা হবার নয়।

    আমি রেগে গিয়ে বললাম–আরে রেখে দাও তোমার সাজগোজ! বুড়োনিগ্রো চাকরটাকে তোয়াক্কা না করে আমি গটমট করে ভেতরে ঢুকে গেলাম। তারপর সোজা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল স্মিথের শোবার ঘরে হাজির হলাম।

    বুড়ো নিগ্রোটা কিন্তু আমার সঙ্গে চীনে-জোঁকের মতো লেগে রইল। মুহূর্তের জন্য সে আমার পিছন ছাড়ল না। আমি দরজা দিয়ে সোজা ঘরের ভেতরে ঢুকেই ঘরের মালিকের খোঁজে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলাম। কিন্তু তিনি যে কোথায় অবস্থান করছেন তার চিহ্নও নজরে পড়ল না।

    হঠাৎ আমি নিজের পায়ের দিকে তাকালাম, দেখলাম, মেঝেতে, আমার ঠিক পায়ের কাছেই বিচিত্ৰদৰ্শন কীসের যেন একটা মোড়ক পড়ে রয়েছে।

    এত চেষ্টা করেও ঘরের মালিকের দেখা না পাওয়ায় আমার মেজাজ এমনিতেই তিরিক্কি হয়েছিল। ফলে মোড়কটাকে দেখেই বিরক্তিভাবে সেটাকে লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা আমার মনে জাগল।

    আমি লাথি মারার জন্য পা বাড়াতেই সে মোড়কটা আচমকা বলে উঠল–সে কী সাহেব! সামান্যতম শিষ্টাচারও কি আপনার জানা নেই!

    আমি থমকে গিয়ে পা-টাকে টেনে আবার জায়গামতো নিয়ে এলাম।

    আমার এত বয়স হয়েছে কিন্তু এরকম অদ্ভুত–একেবারেই অত্যাশ্চর্য কোনো কণ্ঠস্বর আগে কোথাও, কোনোদিন শুনিনি। কোৎ কোঁৎ কুঁই কুঁই আর শিষ দেওয়ার শব্দ মিলিয়ে বিচিত্র একটা শব্দ আমার কানে ভেসে এলো। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, আওয়াজটা বাস্তবিকই বড়ই মজাদার। কিন্তু কোনো শব্দ যে এমন বিশি হতে পারে আমি কিন্তু স্বপ্নেও কোনোদিন ভাবিনি।

    তাই আমার মধ্যে অকস্মাৎ ভীতির সঞ্চার হলো। আমি আকস্মিক আতঙ্কে উন্মাদের মতো গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে উঠলাম। আচমকা লম্বা একটা লাফ দিয়ে ঘরের দূরতম কোণে চলে গিয়ে আকস্মিক আতঙ্কে কাঁপতে লাগলাম।

    আমি যেন স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি–কোৎ কোঁৎ, কুঁই-কুঁই আর শিস দেওয়ার স্বরের মিশ্রিত আওয়াজটা যেন আমাকে লক্ষ্য করে বলে উঠল–আরে ভাই, ব্যাপারটা কী, বল তো?

    আমি ঘরের কোণটায় দাঁড়িয়েই আকস্মিক আতঙ্কে আগের মতোই নীরবে কেঁপেই চললাম।

    আবার সে অদ্ভুত কণ্ঠস্বরটা কানে এলো–কী ব্যাপার, বলুন তো ভাই! আপনি চোখে-মুখে এমন আতঙ্কের ছাপ এঁকে সেই তখন থেকে অনবরত ঠক-ঠক করে কেঁপেই চলেছেন, কারণ কী? এমন ভাব করছেন যে, জীবনে কোনোদিনই আমাকে। দেখেননি।

    কথাটা আমার কাছে আরও অদ্ভুত বলেই মনে হলো। এ-কথার কি-ইবা জবাব দেব? আদৌ এর কোনো জবাব হয় কি?

    আমি হাতের কাছে একটা হাতলওয়ালা চেয়ার পেয়ে গেলাম। কাঁপা-কাঁপা হাতে আমি সেটাকে টেনে নিয়ে ধপাস করে বসে পড়লাম। হুমড়ি খেয়ে পড়েই যাচ্ছিলাম। কোনোরকমে চেয়ারটার হাতল ধরে সামলে নিলাম। নিরবিচ্ছিন্ন জমাটবাঁধা আতঙ্কে আমার চোখের মণি দুটো কোটর থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইল। চোয়াল ঝুলে পড়ায় ইয়া বড় হা সৃষ্টি হয়ে গেছে। শ্বাসক্রিয়া ঘন ঘন বইতে লাগল।

    এমন সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতেও আমি শিকারি বিড়ালের মতো ওৎ পেতে দাঁড়িয়ে রইলাম। উত্তর্ণ হয়ে পরিস্থিতিটা সম্বন্ধে ধারণা করে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম।

    এবারই রহস্যটা আমার কাছে ফাঁস হয়ে যাবে। আমার যাবতীয় উৎকণ্ঠার অবসান ঘটে যাবে। আবারও সে বিচিত্র শব্দটা মেঝের মোড়কটা থেকে উঠে বাতাসের। কাঁধে ভর দিয়ে আমার কানে এসে তীব্র স্বরে বাজল।

    মোড়কটা কিন্তু এখন আর আগের মতো নিশ্চল-নিথরভাবে পড়ে রইল না। এবার সেটা তিরতির করে কাঁপতে লাগল। এ যে রীতিমত একেবারেই অবিশ্বাস্য কাণ্ড? এমন কোনো দৃশ্য চাক্ষুষ করতে হবে স্বপ্নেও যে কস্মিনকালে ভাবিনি।

    মোড়কটা কেবলমাত্র তিরতির করে নড়ছে না। আকারও ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অনুসন্ধিৎসু নজরে তাকিয়ে দেখলাম, মোড়কটা যেন সোজা পড়ছে। একটামাত্র পা দেখা যাচ্ছে। সেটাতেই কোনো অদৃশ্য হাত মোজাটাকে গলিয়ে দিচ্ছে।

    বিদঘুঁটে কণ্ঠস্বরটা আবারও কানে এলো–সে কী ভাই, এখনও আমাকে চিনতে পারলেন না। চেনা কিন্তু উচিত ছিল, অবশ্যই উচিত ছিল। ওরে পম্পি, পা-টা নিয়ে আয় তো।

    পম্পি একটা ছিপি-পা এগিয়ে দিল। তারপর আরও একটা। পোশাক গায়ে চাপানোই ছিল। দুটো পা লাগিয়ে দেওয়া মাত্র অদ্ভুত সে বস্তুটা তিড়িং-বিড়িং করে হাঁটাহাঁটি শুরু করে দিল।

    আমি তো বিস্ময়-বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে অত্যাশ্চর্য বস্তুটার কাণ্ডকারখানা দেখতে লাগলাম। সেটা এবার অনুচ্চ, প্রায় সগতোক্তির সুরে বলতে লাগল–রক্তাক্ত সে অভিযানটার কথা এত সহজে ভোলা সম্ভব? সত্যি বলছি, আমার খুব শিক্ষা হয়েছে। আমি বার বার বলছি ভুলেও যেন কেউ কিকাপু আর বুগাবুদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে উৎসাহি না হয়। তা সত্ত্বেও যদি কেউ ওপথে পা-বাড়ায় তবে আর তাকে জ্যান্ত ফিরতে হবে না, বলে রাখছি। পম্পি তোমার হাতটা বাড়াও। ধন্যবাদ!

    এবার আমার দিকে ফিরে অদ্ভুত সে বস্তুটা বলল–টমাস, এ-হাত ছিপি পায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম। তবে মনে রেখো, কোনো সময় যদি হাতের দরকার হয় তবে আমার সুপারিশ, বিশপের কাছে নিয়ে যেও।

    অদ্ভুত সে মোড়কটার বক্তব্য শেষ হলো। পম্পি এবার সেটার সঙ্গে হাতটা পেঁচিয়ে লাগিয়ে দিল।

    সে মোড়কটা থেকে এবার ক্রোধোন্মত্ত স্বর বেরিয়ে এলো–ওরে নচ্ছাড় কাহাকার! ওরকম আহাম্মকের মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছিস কী? হাত গুটিয়ে না থেকে আমার বুক আর কাঁধ ঝটপট লাগিয়ে দে। স্বীকার করতেই হবে, পেটিট সবচেয়ে ভালো কাঁধ তৈরি করতে পারে বটে। যদি চ্যাপ্টাবুক চাইলে সোজা ডুক্রোর দোকানে চলে যান, পছন্দ-মাফিক বুক পেয়ে যাবেন।

    আমি তার কথা শুনে বলেছিলাম–চ্যাপ্টা বুক?

    ওহে পম্পি, এত সময় নষ্ট করছ কেন? সামান্য পরচুলা লাগাতে এত সময় লাগিয়ে দিচ্ছ! হতচ্ছাড়া নচ্ছাড়! ছালবাকল ছাড়ানো মাথাটাকে তো আর এত সহজে ঢেকে দেওয়া সম্ভব নয়। জ্ঞান আর অভিজ্ঞতার সমন্বয় না ঘটলে এমন একটা শক্ত কাজ কিছুতেই সারা সম্ভব নয়। তবে পছন্দমাফিক কাজ যদি পেতে চান তবে কোনো চিন্তা না করে সোজা ডা, এল ওর্মসের কারখানায় গেলেইনির্ঘাৎ বাঞ্ছা পূর্ণ হয়ে যাবে।

    ছাল-বাকলা ছাড়ানো মাথা! এ আবার কোন

    হতচ্ছাড়া দাঁড় কাকের ছা! তাড়াতাড়ি দাঁত দাও! দেরি না করে দাঁত দাও। হ্যাঁ, মনের মতো দাঁতের চাহিদা যদি থাকে তবে কোনো চিন্তা-ভাবনা না করেই পামলি-র কাছে চলে যাও। ব্যস, নিশ্চিন্ত হতে পারবে। ঠকার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তবে স্বীকার করছি, দামটা আকাশ ছোঁয়া। তবে এও খুবই সত্য যে, জিনিস পাবেন একেবারে এক নম্বরের।

    মুহূর্তে নীরব থাকার পর সেটা আবার সরব হল–ওহে, আসল কথাটা শোনো, বন্দুকের কুঁদোর আঘাতে বুগাবু বেশ কয়েকটা দাঁতকে ভেঙে পেটের ভেতরে সিঁটিয়ে দিয়েছিল বলেই না মুক্তোর মতো এমন ঝকঝকে চকচকে আর প্রতিটা সমান দাঁত পাওয়া সম্ভব হয়েছিল। আহা! চমৎকার! চমৎকার দাঁত!

    আরে বাবা! এ কী ভয়ঙ্কর কথা শুনছি! বন্দুকের কুঁদোর আঘাতে দাঁত ভেঙে খুঁড়িয়ে দিয়েছিল! পেটের ভেতরে দাঁত সিঁধিয়ে যাওয়া! আমি তবে জেগে আছি, নাকি খোয়াব দেখছি! নিজের চোখ আর কানের ওপর আমি আস্থা হারিয়ে ফেলছি নাকি?

    চোখ? এর চেয়েও অনেক, অনেক ভালো চোখ আমার আছে। এখনই তা দেখতে চাইছ? ভালো কথা, দেখতে পাবে। ওরে হতচ্ছাড়া শয়তান পম্পি, পেঁচিয়ে লাগাতে এত সময় লাগিয়ে দিচ্ছিস! অপদার্থ কিকাপুটা তো চোখের পলকেই চোখ উপড়ে নিয়েছিল। ডক্টর উইলিয়ম তো সেটা তৈরি করতে অনেক, অনেক বেশি সময় লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তবে হ্যাঁ, যা তৈরি করছেন তাকে যথার্থই চক্ষুরত্ব বলা যেতে পারে। একেবারেই স্বচ্ছ দেখা যাচ্ছে সবকিছু। আপনার চেয়েও যে ঢেড় ভালো

    অবশ্যই দেখতে পাচ্ছি, এতে সন্দেহের কিছুমাত্রও অবকাশ নেই। সত্যি এ যান্ত্রিক। চোখ আর আপনার সত্যিকারের চোখের মধ্যে ফারাক যথেষ্টই!

    তবে এবার কিন্তু স্পষ্ট–একেবারেই স্পষ্ট দেখলাম। আমার সামনে যে দাঁড়িয়ে রয়েছে যে অদ্ভুত বস্তুটা, সেটা অবশ্যই জাঁদরেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল স্মিথই, এতে সন্দেহের তিলমাত্রও অবকাশ নেই।

    বীরসৈনিক পুরুষ অমিত শক্তিধর, সাহসিও বটে দুর্দান্ত।

    পম্পির হাতের কেরামতিকে বাহবা না দিয়ে পারা যায় না। তার হিম্মৎ আছে বটে। সামান্য এ সময়টুকুর মধ্যেই একটা পুটলির মতো মোড়ককে সে কেমন পুরুষ তৈরি করে ফেলল–কম কথা!

    তবে একটা ব্যাপার, বিদঘুঁটে কণ্ঠস্বরটা তখনও রীতিমত ধাপ্পা দিয়ে চলেছে। আরও কিছুক্ষণ উৎকর্ণ হয়ে এবং অনুসন্ধিৎসু চোখে ব্যাপারটা লক্ষ্য করার পর কণ্ঠস্বরের রহস্যটা অচিরেই ভেদ করা সম্ভব হলো।

    ব্রিগেডিয়ার-জেনারেল আগের মতোই বিশ্রি আর রীতিমত কর্কশ স্বরেই বলে উঠলেন–ওরে কুত্তার বাচ্চা, মড়া খেকো পম্পি, তোর মতলবটা কি, জানতে পারি! আমাকে কি তালু ছাড়াই বেরিয়ে পড়তে বলছিস! তোর ধান্ধাটা তো ভালো নয়, দেখছি!

    পম্পি কাচুমাচু হয়ে গুনগুন স্বরে মার্জনা ভিক্ষা করতে করতে নিতান্ত অপরাধীর মতো প্রভুর সামনে গিয়ে দাঁড়াল।

    সে এবার ঝট করে ঘোড়ার নাল বের করার যন্ত্রের মতোই দেখতে কটা যন্ত্র হাতে নিয়ে তৈরি হয়ে পড়ল। এবার যন্ত্রচালিতের মতো দ্রুততার সঙ্গে মুখ বিবরে ঢুকিয়ে দিল। পর মুহূর্তেই সেটাকে চাড় দিয়ে আরও ভেতরে সিঁধিয়ে দিয়ে মুখটাকে ফাঁক করে এতবড় হা করিয়ে দিল। এবার জটিল ও অত্যাশ্চর্য একটা যন্ত্র চোখের পলকে সেখানে বসিয়ে দিল।

    সে এমনই দ্রুততার সঙ্গে পুরো কাজটা সেরে ফেলল যে, অতু আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও পুরো ব্যাপারটা আমার পক্ষে ভালোভাবে দেখা সম্ভব হলো না। যে কলকজা ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের মুখবিবরে বসিয়ে দিল, সেটার গঠনবৈচিত্র্য সম্বন্ধেও পুরোপুরি ধারণা করতে পারলাম না।

    তবে ঘোড়ার নাল বের করার যন্ত্রের মতো যে যন্ত্রটাকে বিগ্রেডিয়ার জেনারেলের মুখের ভেতরে বসিয়ে দেওয়া হলো তাতে করে তার পুরো মুখটার আকৃতিই একেবারে বদলে গেল। আরও অবাক হলাম, যখন যান্ত্রিক কণ্ঠ দিয়ে মিষ্টিমধুর স্বর বেরোতে লাগল। কোন যন্ত্র যে এমন মিষ্টি স্বরনির্গত করতে পারে তা এর আগে কোনোদিন। কল্পনাও করতে পারিনি।

    ব্রিগেডিয়ার জেনারেল চিনির দানার মতো মিঠে অথচ রুক্ষ স্বরে বললেন নচ্ছাড় কোথাকার! আমার মুখ থেকে শুধুমাত্র তালুটাকেই হেঁটে বাদ দিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি। জিভটাকেও প্রায় কেটে-হেঁটে বাদ দিতে ছাড়েনি। জিভের আট ভাগের সাত ভাগই কেটে-হেঁটে বাদ দিয়ে দিয়েছিল। নচ্ছাড়গুলো আমার জিভটাকে টেনে ইয়া লম্বা করে নিয়ে ক্যাচ করে কেটে ফেলছিল। নরকের কীট, ছন্নছাড়া বাউণ্ডুলে উজবুক!

    কিন্তু একটা কথা জানবেন, সব সমস্যারই যান্ত্রিক সুরাহা কিছু না কিছু আছেই আছে। এ-কথা তো আপনাকে গোড়া থেকেই বলে এসেছি।

    যদি মনে করেন, সাঁড়াশি দিয়ে জিভটাকে আচ্ছা করে চেপে ধরে জোরসে টেনে ইয়া লম্বা করে ফেলেন তখন আর অন্য কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা বোনফানতি-র কারখানায় হাজির হবেন।

    সারা আমেরিকা মহাদেশটা চক্কর মেরে এলেও এমন আর একজন কারিগর খুঁজে বের করতে পারবেন না। আপনার চাহিদাটা কেবল জানিয়ে দেবেন। যেমন যার মাপ দেবেন, অবিকল সে রকমটাই পেয়ে যাবেন। তখন দেখবেন, ঠিক এক রকম গলার মালিক আপনিও বনে গেছেন!

    ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানালেন। আমি আর মুহূর্তমাত্র। সেখানে না দাঁড়িয়ে তাকেও অভিভাধন জানালাম। তারপর তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।

    এবার আমার ধন্ধ পুরোপুরি ঘুচে গেল। আমার আর তিলমাত্র সন্দেহও রইল না যে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জন এ. বি. সি স্মিথ অন্য পাঁচজনের মতো একজন সম্পূর্ণ মানুষ নন।

    তবে? তবে তিনি কী? তিনি অর্ধেক যান্ত্রিক মানুষ–কলকজা দিয়ে তার দেহের অর্ধেকটা তৈরি না।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগোল্ডেন লায়ন – উইলবার স্মিথ / জাইলস ক্রিস্টিয়ান
    Next Article লাভ ক্যান্ডি – জাফর বিপি
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }