Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যাডগার অ্যালান পো রচনাসমগ্র / অনুবাদ : জাকির শামীম

    জাকির শামীম এক পাতা গল্প1512 Mins Read0

    ফিলজফি অব ফার্নিচার

    গৃহসজ্জার ব্যাপার-স্যাপারে ইংরেজদের পারদর্শিতার জুড়ি নেই। কেবলমাত্র গৃহসজ্জার কথাই বা বলি কেন? বাড়ির বাইরের দিককার স্থাপত্য শিল্পের ক্ষেত্রেও তাদের রুচিবোধ বাস্তবিকই তুলনাবিহীন। তাদের স্থাপত্যকীর্তি বিস্ময় উৎপাদনের ক্ষমতা রাখে, সন্দেহের তিলমাত্রও অবকাশ নেই।

    ইতালিয়ানরা বাড়িঘর সাজানোর ব্যাপারে রঙের বাহারও শ্বেতপাথরের কারুকার্যকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এ কাজে রঙ আর শ্বেতপাথর ছাড়া অন্য কোনো কিছুর গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে বলে তারা বিশ্বাসই করে না।

    ফরাসিদের শিল্পরুচি কিন্তু সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র প্রকৃতির। প্রকৃত ভালো জিনিস কোনটি এ-সম্বন্ধে সম্যক ধ্যান-ধারণা তাদের আছে। আর ভালো জিনিসের দাম দিতেও তারা। জানে। অতএব তারা সেভাবেই ঘরদোর সাজিয়ে-গুছিয়ে মনলোভা করে তোলে। মাত্রাতিরিক্ত কোনোকিছু করতে তারা অভ্যস্ত নয়, জানেও না।

    চাষারা এবং অধিকাংশ প্রাচ্যজাতি, ঘরদোর সাজাবার ব্যাপারে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাত্রা বজায় রাখতে পারে না। কাজে নেমে তারা প্রায়ই এমনকিছু অতিরিক্ত কাজ করে ফেলে, যার মধ্যে বাড়াবাড়িই নজরে পড়ে।

    আর স্কটল্যান্ডবাসীরা? ঘরদোর সাজাবার যে একটা ব্যাপার থাকতে পারে, এ সম্বন্ধে কোনো ধারণাই তাদের নেই। মোদ্দাকথা, অগোছালো ঘরেই তারা হাসিমুখে জীবন কাটিয়ে দেয়।

    এবার ওলন্দাজদের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। তারা অনিশ্চয়তা রোগের শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত ধুকছে। তাদের মতে, বাঁধাকপি আর দরজা-জানালার পর্দার মধ্যে কোনো ফারাক আছে কিনা, সে সিদ্ধান্তে পৌঁছতেই তারা হিমসিম খেয়ে যায়। শেষপর্যন্ত হতাশ হয়ে তারা হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

    আর স্পেনের মানুষরা? তারা ঝোলাঝুলিতেই বেশি অভ্যস্ত। ঘরদোরের ভেতরে এখানে-ওখানে তারা পর্দা ঝুলিয়েই যারপরনাই তৃপ্তি পায়।

    রাশিয়ানরা কিন্তু ঘরদোর সাজগোজের ধার ধাওে না। সত্যিকথা বলতে কী ঘর সাজাবার যে কোনো দরকার আছে, তাদের জানাই নেই। তাদের মতে ঘরের ভেতরে যেটা যেখানে আছে, সেটাকে সেখানে থাকতে দেওয়াই তো বুদ্ধিমানের কাজ। এ নিয়ে মিছে মাথা ঘামাবার দরকারই বা কি? শুধু শুধু সুস্থশরীর ব্যস্ত করা।

    এবার কিকাপু আর হাটেনটটদের ঘরের ভেতরে একবার উঁকি দিয়ে দেখা যাক। এরা ঘরদোর সাজিয়ে গুছিয়ে কেমন টিপটপ করে রাখে। এরা কিন্তু নিজেদের কায়দা কৌশল নিয়ে মহাসুখেই আছে।

    আর ইয়াঙ্কিদের কথা যদি জানতে চান তবে বলতেই হয়–এরা মন-মাতানো আর চোখ ধাঁধানো জৌলসেই বিশ্বাসী। বিশেষ কায়দায় ঘরদোর সর্বদা সাজিয়ে গুছিয়ে এরা রীতিমত চমক সৃষ্টি করে রাখে।

    এটা কিভাবে সম্ভব, এ-ব্যাপারে আমার ধারণা স্বচ্ছ নয়–বরং নিতান্তই ঝাপসা। এটা তো আর মিথ্যে নয়, আমাদের রক্তে আভিজাত্যের বড়ই অভাব। তাই তো যেখানে আজও রাজতন্ত্রের প্রতাপ আজও অব্যহিত রয়েছে) রাজবংশীয়রাই একের পর এক সিংহাসন অলংকৃত করেন, বিশেষ করে এসব দেশে আমরা ডলারের প্রাচুর্যের ঝঙ্কার শুনিয়ে থাকি, চোখ দুটোকে ধাধিয়ে দেই, তাদের ওপর নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে আমরা আদাজল খেয়ে লেগে পড়ি। আর এ-থেকেই আন্তরিকতার পরিবর্তে লোক দেখানোর ব্যাপারটাই বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে। আর এটাই আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    লাগাম টেনে ধরে, অস্পষ্ট-ঝাপসা-ঝাপসাভাবে না বলে খোলাখুলিভাবেই আলোচনা করা যাক। কোনো ব্যাপারেই ঢাক ঢাক গুর গুর করা আমার ধাতে সয় না। ইংল্যান্ডের মানুষের ট্র্যাকের জোর নেই বললেই চলে। কিন্তু একটা ব্যাপার খুবই লক্ষ্যণীয়, বংশমর্যাদার কথা বলতে চাইছি। আর এ-ব্যাপারে তারা খুবই সজাগই বটে।

    সমাজের অন্য পাঁচজন সাধারণ মানুষের কথাই বলছি, তারা আদর্শ খুঁজতে গিয়ে–ওপরের দিকেই দৃষ্টিপাত করে থাকে। ওপর তলার মানুষের ক্রিয়াকাণ্ডকে অন্ধের মতো অনুকরণ করতে উৎসাহি হয়ে পড়ে, শেষপর্যন্ত করেও তা-ই। তারা চালচলন, হাভভাব আর কথাবার্তায় রাজা-রাজরাদের ভাবকেই আঁকড়ে ধরে। তাদের। সবকিছুতে এ-ভাবই প্রকাশ পায়।

    কেবলমাত্র আচার-আচরণের কথাই বা বলি কেন? আসবাবপত্র আর ঘরদোর সাজাবার উপকরণের মধ্যেও আভিজাত্যের ছোঁয়া স্পষ্টই নজরে পড়ে। কাথাবার্তা আর আচার আচরণের মতোই আসবাবপত্রেও সুরুচির পরিচয় মেলে।

    এ তো গেল ইংল্যান্ডের মানুষের ব্যাপার-স্যাপার। এবার দেখা যাক, আমেরিকার মানুষ সাজগোজের কাজে কোন পথ বেছে নেয়। তারা ওপর তলার মানুষের দিকে তাকিয়ে পথ খুঁজতে হাপিয়ে যায়। কিন্তু ওপর তলার মানুষের আচার-আচরণ দেখে তারা হতভম্ব হয়ে যায়। তারা ভেবেই পায় না কোনটাকে আঁকড়ে ধরবে, আর কোনটাকে বিতৃষ্ণার সঙ্গে বাতিল করে দেবে। তাদের সমাজে দুটো জিনিসের প্রভাব খুব বেশি। একটা ঐশ্বর্যের জৌলুস আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে ধাপ্পাবাজী।

    আরে ভাই, ধন-দৌলতের ভার তো সব যুগে সব কালেই বেশি। তাই স্বাভাবিকভাবেই ডলারের ঝনঝনানির কথা উঠে যায়। ঘরদোর সাজসজ্জার ব্যাপারে ডলার প্রভাব বিস্তার করে থাকে। পরিণাম হিসেবে দেশজোড়া দোষ-ক্রটি নজরে পড়ার মতোই বটে।

    ঘরদোর নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার যে দরকার হয়, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ছবি যেমন নিয়মিত ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার করতে হয় ঠিক তেমনই ঘরও পরিষ্কার ও গোছগাছ করা দরকার। নিয়মিত পরিচর্যা মানে নিয়মিত ঝাড়ামোছা না করলে একটা তৈলচিত্র কিছুতেই ভালো থাকতে পারে না।

    একটা কথা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, একটা আসবাবপত্রের রঙ যেমন চোখের পক্ষে পীড়ার কারণ হয় ঠিক তেমনই আসবাবপত্রে অবস্থানও চোখকে রীতিমত পীড়া দেয়।

    ঘর সাজাতে গিয়ে আসবাবপত্রকে কেউ অবিন্যাস্ত, মানে আঁকাবাঁকা রাখে, কেউবা সারিবদ্ধভাবে রাখে আবার কেউবা কোনো নিয়ম-না-মেনে এলোমেলোভাবেই রেখে দেয়। আর এ সবের জন্যই বহু ঘরের শোভা নষ্ট হয়ে যায়। আসবাবপত্র বহুমূল্য হওয়া সত্ত্বেও অর্থ ও ঘর সাজাবার পরিশ্রম সবই বিফলে যায়।

    আবার দরজা-জানালার পর্দার কথা যদি আলোচনা করা যায় তবে বলতেই হয়, খুব কম ক্ষেত্রেইনির্বাচন যথাযথ অর্থাৎ সুনির্বাচন করা হয়ে থাকে। আর সেগুলোকে ঠিকঠিক জায়গায় ঝোলানোও হয় না। মোদ্দা কথা হচ্ছে, দরজা-জানালার পর্দার কোনো দামই নেই। তবুও কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, অসঙ্গতি সৃষ্টি করে প্রচুর সংখ্যক পর্দা আর অহেতুক মূল্যবান পর্দা এলোমেলোভাবে যেখানে-সেখানে ঝুলিয়ে ব্যবস্থাপক কুরুচির স্বাক্ষর রাখে। ঘর আর দরজা-জানালা অনুযায়ী পর্দানির্বাচন করার ক্ষমতা খুব কম লোকেরই আছে।

    সুদূর অতীতে কার্পেটের ব্যবহার যতটা দেখা যেত, ইদানিং তা অনেকাংশে বেড়েছে ছাড়া কমেনি। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই একটা ব্যাপার আমাদের চোখ দুটোকে পীড়া দেবেই দেবে। ব্যাপারটা হচ্ছে, আমরা কার্পেটের রঙ, ডিজাইননির্বাচন করতে গিয়ে প্রায়ই দারুণ ভুল করে বসি।

    প্রকৃত সৌন্দর্যবোধ যাদের আছে, তারা অবশ্যই স্বীকার করবেন, কার্পেটকে ঘরের আত্মা মনে করলেও এতটুকুও বাড়িয়ে বলা হবে না। যেসব জিনিস দিয়ে ঘর সাজানো হবে এবং যেসব অত্যাবশ্যক জিনিসপত্রকে ঘরে স্থান দেওয়া হবে, তাদের আকার ও রঙের সঙ্গে কার্পেটের রঙের সামঞ্জস্য রাখা চাই-ই চাই।

    আবার বড় বা ছোট কার্পেট ব্যবহার করতে গিয়েও আমাদের ঘরের মাপের দিকে নজর দেওয়া অবশ্যই দরকার। স্বাভাবিকভাবেই ঘর যদি বড়সড় হয় তবে বড় মাপের কার্পেট ব্যবহার করতে হবে আর ঘরের মাপ ছোট হলে কার্পেটও ছোটই লাগবে। আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব কথা বিচার-বিবেচনা না করেই বাজার থেকে কার্পেট কিনে নিয়ে চলে আসি। সব তথ্য জানা থাকা সত্ত্বেও প্রায় সবাই-ই ভুল করে বসে। আবার এমন ঘটনাও বহু দেখা যায়, আমরা চোখের বিচারের পরিবর্তে দামের বিচারকেই বেশি কদর দিয়ে থাকি, আর দাম মিটিয়ে দিয়ে কার্পেট এনে ঘরে তুলি।

    আরও আছে, আমাদের মধ্যে অনেকেরই দৃঢ়বিশ্বাস রয়েছে, দূরবর্তী কোনো দেশের ঝকমকে কার্পেট হলেই বুঝি তা অবশ্যই উন্নতমানের হবে এবং ঘরের সৌন্দর্য অনেকাংশে বেড়ে যাবে।

    একটা কথা তো আর মিথ্যা নয়, সাধারণ মানুষ মামুলি ব্যাপার-স্যাপারের দিক বিচার করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। এর জন্য দক্ষতা আর অভিজ্ঞতার ধার তারা ধারে না। কিন্তু উন্নতমানের অর্থাৎ যথাযথ কার্পেটনির্বাচনের ক্ষেত্রে ধীশক্তির প্রয়োজন অবশ্যই আছে।

    ঘরদোর সাজাতে গিয়ে আমেরিকাবাসীরা ঘরে অত্যুজ্জ্বল আলোকচ্ছটাসম্পন্ন বাতি ঝুলিয়ে দিয়ে বিকৃত রুচির পরিচয় দিয়ে থাকে। সে আলো যত তীব্র দ্যুতিসম্পন্ন হবে, আলো-ঘরে যত বেশি কাঁচ-গ্লাসের শেড থাকবে মনে করা হবে ঘরটার কদর যেন ততই বেড়ে গেল।

    কাঁচ-গ্লাসের ব্যাপারটা নিয়ে মুহূর্তের জন্যও ভাবে না যে, শত্রু-দেশ এ বস্তুটার আবিষ্কর্তা।

    কাট-গ্লাসের ভূমিকা কী? আলোকরশ্মিকে অসম, ভাঙা-ভাঙা আর বিষণ্ণতায় পরিপূর্ণ করতে কাঁচ-গ্লাসের মতো অন্য কারোরই সাধ্য নেই।

    তবে কাঁচ-গ্লাস কেনার জন্য মানুষ এমন হন্যে হয়ে ছুটাছুটি শুরু করে? শেড। চোখ ধাধিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে বলে নয়। তবে? দামে বেশি হওয়াই এর সবচেয়ে বড় কারণ, স্বীকার করতেই হবে। এরকম আলো ব্যবহারের মাধ্যমে ঘরের সৌন্দর্য তো বরবাদ হয়ই আর সেই সঙ্গে ঘরের অর্ধেক লালিত্যও নষ্ট হয়ে যায়।

    আলোর চরিত্র হওয়া দরকার চাঁদের আলোর মতোই ফুটফুটে। ইথারের আলোর মতোই ঘষা কাঁচের সাদামাটা শেড দিয়ে ঘেরা থাকবে। এরকম আলোর প্রভাবে ঘরের প্রতিটা আসবাবপত্র তখন চোখ আর মনকে আকর্ষণ করবে। এখন দেখা যাবে, সম্পূর্ণ ঘরটাই দেহ আর মনের ওপর শান্তির প্রলেপ দিয়ে দেবে। এজন্যই তো তীব্র গ্যাসের আলো ঘরে ব্যবহার না করাই ভালো।

    সুসজ্জিত অধিকাংশ বৈঠকখানায়ই প্রিজম-কাঠ কাঁচের সুবিশাল ঝাড়লণ্ডন ঝুলতে দেখা যায়। এটা যে কেবলমাত্র বেমানান তাই নয়, কুরুচির পরিচায়কও বটে। অর্থকড়ির অহঙ্কার প্রকাশের এর চেয়ে আহাম্মকের কাজ আর কিছুই হতে পারে না।

    ঝাড়লণ্ঠন যখন গ্লাসের আলোয় জ্বলতে আরম্ভ করে তখন তা দেখে কেবলমাত্র বোকা-হাঁদারাই খুশিতে ডগমগ হয়ে ওঠে।

    কাঁপা কাঁপা অস্থির অত্যুজ্জ্বল আলোকচ্ছটা চোখে রীতিমত ধাঁধা লাগিয়ে দেয়। মালিক কিন্তু তখন আত্মপ্রসাদই লাভ করে। সে মনে মনে ভাবে, কী চমৎকার জিনিসই না আমি কিনে এনেছি!

    আমেরিকানদের কথা যদি আলোচনা করা যায় তবে দেখব, চাকচিক্যের প্রতি মানুষের প্রবণতা খুবই বেশি। এ প্রবণতা কীসের? আয়না দিয়ে ঘর সাজাবার ঝোঁক থেকেই এ-উদ্ভট প্রবণতা এসেছে।

    এবার ব্রিটিশদের সুবিশাল আয়নার কথাই আলোচনা করা যাক। কেটামাত্র বিশাল আয়নায় তারা তুষ্ট হতে পারে না, আবার একাধিক আয়না না হলে তাদের মন কিছুতেই ভরে না। অন্তত গোটা চারেক আয়না না টাঙালে তারা যেন স্বস্তিই পায় না, ঘরটা যেন সাজানোই হলো না।

    আয়না প্রতিফলন ঘটায়। একই প্রতিফলন বার-বার ঘটার ফলে একঘেয়ে বোধ হয়। আর এতেই বৈচিত্র্য যেটুকু ছিল তা-ও বরবাদ হয়ে যায়।

    একেবারে অজপাড়াগাঁয়ের মানুষও চার-পাঁচটা আয়না ঝোলানো চোখ ধাঁধানো ঘরে ঢুকেই ধরে নিতে পাওে, কোথায় যেন কিছু একটা গড়বড় হয়েছে। আবার এই একই অজপাড়াগাঁয়ের মানুষটা যদি রুচিসম্মতভাবে সাজানো-গোছানো ঘরে ঢোকে। তবে সে কিন্তু আনন্দিতই হবে না, বিস্ময় বোধও করবে।

    গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এভাবেই মহাঅমঙ্গল ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফল কি দাঁড়িয়েছে? ডলার উৎপাদকদের রুচি আর স্বাভাবিক রইল না। তাতে প্রচুর খাদ ঢুকে গেছে। তারা রুচির মধ্যে দুনীর্তিকে পুরোদস্তুর আশ্রয় দিয়েছে। বরং বলা চলে, দুর্নীতি আঁকিয়েই বসেছে।

    এবার মূলকথা বলছি, যে যত বেশি ডলারের মালিক, তার আত্মা তত ছোট। মানুষের অর্থকড়ি যত বাড়তে থাকে তার ধ্যান-ধারণাও ততই ভোতা হয়ে পড়তে থাকে। তাই তো মোটামুটি ধনবান আমেরিকানদের ঘরদোরে সুরুচির ছোঁয়া লক্ষ্যিত হয়।

    আমেরিকানরা রুচির দিক থেকে আমাদের সাগর পাড়ের বন্ধুদের সঙ্গে পাল্লা তো দিতে পারেই, এমনকি টেক্কাও দিতে পারে অনায়াসেই।

    এবার সে রকমই একটা ঘরকে কেন্দ্র করে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া যাক। কেমন সে ঘরটার পরিস্থিতি, তাই না? মনে করা যাক, গৃহকর্তা যে ঘরে সুখেনিদ্রা যাচ্ছে, দেহ-মনে রোমাঞ্চ জাগানো ঝিরঝিরে বাতাস বইছে, আকাশের গায়ে আলতোভাবে ঝুলছে রূপালি চাঁদ–তখন সময় মাঝরাত।

    ঘরটার আকৃতি কেমন, তাই না? বলছি–আয়তাকার, লম্বা ত্রিশ ফুট আর প্রায় পঁচিশ ফুট চওড়া।

    আসবাবপত্র দিয়ে সাজানোর জন্য ঘরটা খুবই উপযুক্ত বটে। ঘরটার একদিকে একটা সুদৃশ্য দরজা, অস্বাভাবিক বড় নয়। আর অন্যদিকে বড়-বড় দুটো জানালা। ফলে ঘরটায় প্রচুর আলো-বাতাস নিয়মিত খেলতে পারে। মেঝে থেকে কিছুটা ওপরে জানালা দুটো অবস্থিত হওয়ায়, পরিবেশটা রীতিমত খোলামেলা হয়েছে।

    জানালার পরই সুদৃশ্য ইতালিয়ান বারান্দাটা যে কোনো সৌন্দৰ্য-পিপাসুর মনকে আকর্ষণ করবেই করবে।

    পুরু রোজউডের জানালার ফ্রেমের সঙ্গে হালকা লাল রঙের কাঁচ বসানো। কাঠের ফ্রেম লালচে কাঁচের সঙ্গে মিলিয়ে রূপালি সুতায় বোনা পার্টি ঘিরে রেখেছে। তারই মাঝখানে সিল্কের টকটকে লাল পর্দা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

    দেওয়ালের যেখানে কড়িকাঠ আটকানো রয়েছে, সেখান থেকে ঘরের মেঝে পর্যন্ত ওই সিল্কের পর্দাটা ঝুলছে। আর একপাশে একটা দড়ি ঝুলতে দেখা যাচ্ছে যেটা টানলে পর্দাটা সুরসুর করে ওপরে উঠে যাবে।

    আর পর্দার সোনালি আর রূপালি রঙ ঘরের সর্বত্র বিন্দু-বিন্দু ছিটিয়ে রয়েছে। এর মধ্যদিয়েই ঘরটার চরিত্র সম্বন্ধে সম্যক ধারণা করে নেওয়া সম্ভব হয়।

    জানালার গায়ের ঝুলন্ত সোনালি দড়ি গাঢ় রক্তবর্ণের কার্পেটকে ঘিরে রেখেছে। এরকম সোনালি দড়িই আড়াআড়িভাবে পুরো কার্পেটটা জুড়ে রয়েছে আর তা এঁকেবেঁকে অবস্থান করার ফলে এমন দৃষ্টিভ্রম সৃষ্টি করেছে, যেন মনে হচ্ছে, মেঝে থেকে কার্পেটটা ঠেলে উপরের দিকে উঠে গেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, কার্পেটটা কিছুতেই আধ ইঞ্চির বেশি পুরু নয়।

    আরও আছে। চার-চারটি দেওয়ালই রূপালি-ধুসর রঙের চকচকে কাগজ দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে আর কাগজের গায়ে রক্তাভ বিন্দুর বিচিত্র সমাবেশ ঘটেছে যা ঘরের পরিবেশটাকে যারপরনাই মনোলোভা করে তুলেছে। আর কাগজের ওপর এমন বহু চিত্র আঁকা রয়েছে, যাদের অধিকাংশই প্রাকৃতিক দৃশ্য।

    আরও আছে, দেওয়ালের কাগজের গায়ে সুদক্ষ শিল্পীর তুলির টানে আঁকা পরীর মতোই সুন্দরী জনা চারেক মহিলার মুখের ছবি। এমন সুন্দর মুখ যে কোনো মানুষের হতে পাওে, তা যেন কল্পনাতীত ব্যাপার। প্রতিটা ছবিই উষ্ণতার স্বাক্ষর বহন করছে। কিন্তু আদৌ তরল নয়। জমকালো নয়, আবার মাপেও অবশ্যই ছোট নয়।

    ফ্রেম খুবই চওড়া। গায়ে দক্ষশিল্পীর হাতে সূক্ষ নক্সা করা যা ফ্রেমের কদর অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। তার ওপর সোনালি বার্নিশে পুরোটা ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

    ঝুলন্ত দড়িতে কোনো ছবি বেঁধে রাখা হয়নি। গোটা কয়েক ছবি দেওয়ালের গায়ে সেঁটে দেওয়া হয়েছে।

    তবে এটা অস্বীকার করা যাবে না, দড়িতে ঝুলিয়ে দিলে ছবিটা ভালোভাবে দৃষ্টিগোচর হলো। কিন্তু এতে ঘরের পুরো চেহারা তাতে কিছুটা বদলে যেত, সৌন্দর্য বিঘ্নিত হতো সন্দেহ নেই।

    একটামাত্র আয়নাই দেখা যাচ্ছে। তা-ও আবার তেমন বড়সড় নয়। আর প্রায় গোলাকার, কেবলমাত্র এ-আয়নাটাকেই এমনভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে ঘরের। অন্য সব বসার আসনে বসলে আয়নার গায়ে নিজের প্রতিবিম্ব পড়বে না।

    যে বসার আসনের কথা বলা হচ্ছে তা হচ্ছে, দুটোমাত্রনিচু সোফা। রোজউড দিয়ে তৈরি। আর তাতে লাল সিল্ক ও সোনালি ফুল ব্যবহার করা হয়েছে।

    সোফা দুটো ছাড়া দুটো রোজউডের চেয়ারও রয়েছে। একটা আটকোণা টেবিলও আছে বটে। কিন্তু ঢাকনাবিহীন। একটা সোফার কাছে এটা রক্ষিত আছে।

    রোজউডের তৈরি একটা ডালা-খোলা অবস্থায় ঘরে এক পাশে রাখা আছে।

    ঘরের কোণগুলো সামান্য গোল। প্রত্যেকটা কোণে একটা করে ফুলদানি আর সেগুলো টাটকা ফুলের তোড়া দিয়ে দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

    ঘুমন্ত বন্ধুর শিয়রে একটা বাতিদানে সুগন্ধি তেলের প্রদীপ জ্বলছে।

    আর দেওয়ালের গায়ে দেখা যাচ্ছে, ঝুলন্ত তাক। তাতে সুদৃশ্য কিছু বই সাজিয়ে রাখা আছে। সবগুলোই সুন্দর করে বাঁধানো।

    গাঢ় লাল আর সোনালি রঙের দড়ি প্রতিটা তাককে ঘিরে রেখেছে।

    এতক্ষণ যে সব আসবাবপত্রের বিবরণ দেওয়া হলো সেগুলো ছাড়া ঘরে আর কোনো আসবাবপত্র নেই। তবে একটা ঘষাকাঁচের রক্তবর্ণের শেড অবশ্য রয়েছে।

    খিলানের আকৃতিবিশিষ্ট সিলিং থেকে একটামাত্র ঝুলন্ত সরু সোনার কেলের গায়ে এ-বাতিটাকে বেঁধে রাখা হয়েছে।

    বাতিটা থেকে সব মিলিয়ে স্নিগ্ধ যাদুর বাতির মতো ঘরময় আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে পড়ে ঘরে এক মনোরম দৃশ্যের সঞ্চার করেছে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগোল্ডেন লায়ন – উইলবার স্মিথ / জাইলস ক্রিস্টিয়ান
    Next Article লাভ ক্যান্ডি – জাফর বিপি
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }