Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যাডগার অ্যালান পো রচনাসমগ্র / অনুবাদ : জাকির শামীম

    জাকির শামীম এক পাতা গল্প1512 Mins Read0

    দ্য আয়ারল্যান্ড অব দ্য কে

    সংগীত! সংগীত রচয়িতা যেমন প্রতিভার অধিকারী হন, আবার যিনি উপভোগ করেন, তাঁকেও ঠিক তেমনই প্রতিভাধর হতে হয়। অর্থাৎ যার-তার পক্ষে যেমন সঙ্গীত রচনা করা সম্ভব নয়, ঠিক তেমনই সবাই সংগীত বোঝেনও না।

    একটা গানের পত্রিকার সমালোচক একবার যা লিখেছিলেন, তাতে মনে হয়েছিল, তিনি কৃতিত্বটা কেবলমাত্র সংগীত রচয়িতাকেই সম্পূর্ণ দিয়েছিলেন। গানের শ্রোতার এতে কোনো কৃতিত্ব আছে বলে তিনি মনে করেন না।

    এছাড়া আরও একটা কথা আছে, যা অবশ্য যাবতীয় প্রতিভার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

    একটা কথা স্বীকার না করে উপায় নেই। স্রষ্টার সৃষ্টিকে সম্পূর্ণরূপে উপভোগ করতে হলে দরকার নির্জন পরিবেশ।

    বিশেষ করে উচ্চমর্গের সংগীতের উপযুক্ত পরিবেশ অবশ্যই নির্জন হতেই হবে। যখন কউ সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ, মানে একেবারে একা থাকে তখন সংগীতের মাধুর্য মস্তিষ্কের কোষে কোষে প্রবেশ করে। সংগীতের মাধ্যমে যারা ঈশ্বরকে ডাকেন–আরাধনা করেন, তারা অবশ্যই এ-ব্যাপারটাকে অন্তর থেকে মেনে নেবেন।

    আর যা-ই হোক, এর একটা ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। তবে মাত্র একটাই। যদি নির্জনতায় প্রকৃতির সঙ্গলাভ করা সম্ভব হয় তবে, মনকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ করে দেয় গানের সুখ। ঈশ্বরের আরাধনায় আত্মমগ্ন হতে হলে, ঈশ্বরের মহান সান্নিধ্য লাভ কি ভালো নয়?

    চারিদিকের বিচিত্র সমারোহের মাঝখানে কেবলমাত্র মানুষই নয়, অন্য কোন প্রাণের উপস্থিতিই আমার কাছে একটা মামুলি দাগ-চিহ্ন বলে মনে হয়।

    তবে এটা খুবই সত্য যে, আমার মন-পছন্দ করে আঁধারে ঢাকা উপত্যকা, ধূসর পাথুরে অঞ্চল, পছন্দ করি জলরাশির নিঃশব্দ হাসি, বনভূমির দীর্ঘশ্বাসকে আমি অন্তর থেকে পছন্দ করি।

    নিতান্ত অস্বস্তির দিবান্দ্রিার মধ্যেও যা পছন্দ করি, সুউচ্চ, আকাশচুম্বী, সন্ধানি, আত্মম্ভরী পাহাড়গুলোকে, যারা সর্বক্ষণ অনেক ওপর থেকে সন্ধানি-দৃষ্টি মেলে সবকিছুর ওপর নজর রাখছে। আমি এসব কিছুকেই অন্তর থেকে ভালোবাসি।

    সত্যি এরা যেন এক অগণিত ও অবিশ্বাস্য এমন প্রাণময় সত্তা, যা অতিকায় একটা গোলকের সঙ্গে মিলে-মিশে একাকার হয়ে রয়েছে। যার পথে অবস্থান করছে সদা-সর্তক প্রহরী, যারা মূক পরিচারিকা আকাশের গায়ে ঝুলন্ত ওই সূর্য, চাঁদ আর গ্রহ-নক্ষত্র শাসক, জীবন যার অনন্ত, ঈশ্বর যার চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা।

    আর? আর যার আনন্দ স্মৃতি কেবলমাত্র জ্ঞানে, তার অদৃষ্ট অনন্ত-অসীমের মধ্যেই পথ হারিয়ে বসেছে।

    আরও আছে, যার প্রাণবসন্ত স্পন্দনের সঙ্গে তুলনা চলতে পারে মস্তিষ্কের প্রাণময় স্পন্দনের। কিন্তু আমরা এ অণুরণিত সত্ত্বাটাকেই প্রাণহীন বস্তু হিসেবে জ্ঞান করে থাকি-অনুরণিত প্রাণময় বস্তু ঠিক যেভাবে আমাদের দেখে থাকে।

    টেলিস্কোপ আমাদের পরম সহায়ক হিসেবে কাজ করে চলেছে। এ-অদ্ভুত যন্ত্রটা আমাদের অশেষ হিতসাধন করছে। এ যন্ত্র আর গণিতবিদদের কল্যাণে আমরা জানতে পেরেছি, মহাকাশটাই একটা অফুরন্ত বিস্ময়। যেখানে একের পর এক বস্তুময় জগতের অবস্থান রয়েছে। যিনি নিজেকে খুবই জ্ঞানী মনে করেন। সর্বদা বিশেষ জ্ঞানীর ভান করেন, এ তথ্য কিন্তু তার জ্ঞানবুদ্ধির গোচরে নয়।

    ঈশ্বরের সুষ্ঠু পরিকল্পনা যখন আছে, অসীম শূন্যতার মাঝে মাঝে অগণিত বস্তুর সমাহার, তখন তিনি যে কেবলমাত্র আমাদের চেনা-জানা এ-পৃথিবীর বুকে প্রাণের সঞ্চার ঘটিয়ে কর্তব্য সম্পাদন সম্পূর্ণ হয়ে গেছে বলে ক্ষান্ত হবেন, আর অন্যান্য বস্তুদের তার সুমহান পরিকল্পনার বাইরে রাখবেন, তাদের নিয়ে কোন ভাবনা-চিন্তাই করবেন না–তাও কী কখনও সম্ভব?

    আমি বলব না, অবশ্যই সম্ভব নয়।

    কালচক্রের মধ্যে অবস্থান করছে কালচক্র, চক্রনৃত্যের পর রয়েছে আর এক চক্রনৃত্য। এভাবেই রহস্য সঞ্চারিত হয়েছে–এর শেষ নেই, কিছুতেই শেষ নেই, ইতি টানার উপায় নেই।

    এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, সবকিছু তো অনবরত আবর্তন করে চলেছে, স্বীকার করছি, কিন্তু কিভাবে তারা প্রতিনিয়ত আবর্তিত হচ্ছে? এর একটাই জবাব–পরমপুরুষকে কেন্দ্র করে সবকিছু প্রতিনিয়ত আবর্তিত হয়ে চলেছে। এ আবর্তনের শেষ নেই, বিরাম নেই এতটুকুও। চলছে তো চলছেই, ঘুরছে তো ঘুরছেই।

    এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কেবলমাত্র আমরাই অবস্থান করছি, আমরা ছাড়া আর কোনো কিছুরই অস্তিত্ব নেই। এরকম ধারণার বশবর্তী হওয়াটা কিন্তু ভুল, অবশ্যই ভুল।

    কেন ভুল? কেন এমন দৃঢ়তার সঙ্গে কথাটা বলছি? অস্বীকর করার উপায় নেই যে, এ বস্তুময় বিশ্বে প্রাণের সঞ্চার ঘটানোই তার বাসনা। এমন বাসনা যিনি আঁকড়ে রয়েছেন তার পক্ষে কী কোনোরকম পক্ষপাতিত্ব রাখা সম্ভব, নাকি তাকে এটা মানায়? এর একটাই উত্তর হতে পারে–না, অবশ্যই মানায় না।

    ঠিক এরকমই অতিমাত্রায় কল্পনার বশবর্তী হওয়ার জন্যই আমি পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল, নদ-নদী আর সাগর-মহাসাগরের সান্নিধ্য লাভ করলেই, আমার মধ্যে কেমন যেন একটা অস্বাভাবিক ভাব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, ধ্যানে আত্মমগ্ন হয়ে পড়ে। কেবলমাত্র কথাই বা বলি কেন, যেকোনো মানুষের কাছেই তো তা চমৎকার বিবেচনা করা হয়। এ নেশার বশীভূত হয়ে আমি যেন কেমন বিভোর হয়ে পড়ি, পড়েছিলামও বহুবার। আমাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতোই এ-নেশা দূর থেকে দূরান্তে টেনে নিয়ে গেছে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই। আমি তখন মোহগ্রস্ত মন্ত্রমুগ্ধের মতোই দিগ্ধিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে গেছি।

    তারপর, নেশার বশীভূত হয়ে উদ্রান্তের মতো ছুটে যাওয়ার পর আমার মধ্যে কোন বিশেষ ভাবের সঞ্চার ঘটেছে? একের পর এক অজানা-অচেনা প্রাকৃতিক পরিবেশে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারিনি। তখন আমার নিজেকে কেমন মনে হয়েছে? এর একেবারে যথাযথ উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে শুধুমাত্র এটুকুই বলতে পারি, সে মুহূর্তে আমি নিজেকে সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ জ্ঞান করেছি। একা, একেবারেই একা।

    আমি একদিন এরকমই এক অভিযানে বেরিয়েছিলাম। তখন ক্রামগত এগিয়ে যেতে যেতে শেষপর্যন্ত হাজির হয়েছিলাম পাহাড়ে ঘেরা সবুজ বনানীতে ঢাকা এক মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে। সেখানে পাহাড়ের চূড়াগুলো যেন সদম্ভে মাথা উঁচিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা করছে। আর সেখানে পাহাড়ের গা-বেয়ে বিষণ্ণ নদীগুলো এঁকে-বেঁকে হেলে-দুলে নেমে আসছে সমতল ভূমির উদ্দেশ্যে। আর এখানে-ওখানে অবস্থান করছে কয়েকটানিস্তরঙ্গ পর্বত, হ্রদ। কাঁচের মতো স্বচ্ছ তাদের পানি। সেগুলো এমন নিস্তরঙ্গ যেন হঠাৎ করে দেখলে মনে হয়, সেগুলো বুঝি অনন্ত শয্যায় শায়িত, চিরনিদ্রায় মগ্ন।

    যে পর্বত আর বনাঞ্চলে উদাস ব্যাকুল মনে ভ্রমণ করতে করতে এক সময় আমার পা-দুটো যেন আচমকা থমকে গেল। দাঁড়িয়ে না পড়ে পারলাম না। আমি হঠাৎ এমনকি দেখলাম যে, গতি স্তব্ধ করতে বাধ্য হলাম? দেখলাম, বিশেষ একটা নদী আর একটা মনোলোভা প্রকৃতির শোভামণ্ডিত দ্বীপ।

    আমি যে দ্বীপে হাঁটতে হাঁটতে হাজির হয়ে পড়েছিলাম এক জুন মাসের বিকালে। চারদিকে গাছের মাথায় মাথায় সবুজ পাতার বিচিত্র এমন সমারোহ ঘটছে যে, সবুজের উৎসবে মেতেছে এখানকার গাছগাছালি আর লতাগুল্ম সবাই।

    এমন এক মনোলোভা প্রাকৃতিক পরিবেশে আমার মন-প্রাণ পুলকানন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠল। এখানে এক নাম গোত্রহীন মনে দোলা লাগানো গুল্মের ছায়া ছায়া পরিবেশে কার্পেটের মতো নরম সবুজ-ঘাসের বিছানায় উদাস-ব্যাকুল মনে শরীর এলিয়ে দিলাম।

    কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তন্দ্রায় চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসতে চাইল। মায়াচ্ছন্ন তন্দ্রার কোলে আশ্রয় নিলাম।

    আমি মায়া কাজল পড়ানো মনোরম পরিবেশে আঘোতন্দ্রা আবেগ জাগরণের মধ্য দিয়েনিসর্গ দৃশ্যকে শরীরের অণু-পরমাণু দিয়ে উপভোগ করতে লাগলাম।

    কেবলমাত্র পশ্চিমদিক ব্যতীত সূর্যদেব যেদিকে রক্তিম আভা আকাশের গায়ে ছড়িয়ে দিয়ে বিদায় নেবার জন্য উন্মুখবনাঞ্চল তার মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দেওয়াল গড়ে তুলেছে অবশিষ্ট তিনদিকে।

    ছোট পাহাড়ে নদীটা হঠাৎ-ই বাঁক ঘুরে ওই জঙ্গলের কয়েদখানায় ঢুকে হারিয়ে গেছে। যে কয়েদখানা থেকে সে আর কোনোদিনই মুক্তি পেয়ে বাইরে সবার চোখের সামনে বেরিয়ে আসতে পারবে না। কোনোদিনই না। যেদিকটার বনভূমির ঘন সবুজের সমাবেশ ঘটেছে, সে দিকে এমন অপূর্ব দৃশ্যটা দেখা যাবে।

    এবার তার বিপরীত দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। সোনালি এক চঞ্চলা ঝর্ণা পাহাড়ের গা-বেয়ে নেচে নেচে, হেলে-দুলে ক্রমেই নিচের দিকে নেমে আসছে।

    বিদায়ী সূর্যের শেষ রক্তিম আভা গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে টুকরো-টুকরো হয়ে ঝর্ণার জলে পড়ে তাতে এমন অভাবনীয় সোনালি রঙের বাহার সৃষ্টি করেছে। আর সোনালি রঙের মাঝে মাঝে এখানে-ওখানে রক্তিম ছোপ পড়ে তাকে যারপরনাই দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে। এমন এক স্বপ্নরাজ্যে এলে যেকোনো বেরসিকের মনও পুলকানন্দে নেচে উঠবে, সন্দেহ নেই।

    দুপুরের কাছাকাছি কোন এক সময়ে মায়া-কাজল পরানো স্বপ্নিল চোখে কৌতূহলী দৃষ্টিতে আমি ছোট দ্বীপটার দিকে তাকালাম। এক আনাস্বাদিত প্রশান্তিতে আমার মন-প্রাণ ভরে উঠল।

    আমার চোখ আর মনে লাগল অবর্ণীয় এক তৃপ্তির ছোঁয়া। কাঁচের মতো স্বচ্ছ পানির উপরে যেন বিরাজ করছে সবুজ ঘাসে-ছাওয়া একটা পান্নার টুকরো–বিরাজ করছে না বলে বরং পানির বুকে আলতোভাবে ভেসে বেরাচ্ছে বলাই ভালো।

    আমি মখমলের মতো নরম ঘাসের বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় আপনমনে শুয়ে শুয়ে একই সঙ্গে অনিন্দ্যসুন্দর দ্বীপটার পূর্ব আর পশ্চিম প্রান্ত দেখতে পাচ্ছিলাম।

    আমি তখন একবার পূর্বদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করছিলাম, আবার পর মুহূর্তেই চোখের মণি দুটোকে হালকাভাবে ঘুরিয়ে দৃষ্টিপাত করছিলাম পশ্চিম দিকে। এমন করে পর্যায়ক্রমে পূর্ব-পশ্চিমে দৃষ্টি ফেরাতে ফেরাতে এক সময় আচমকা অত্যদ্রুত পার্থক্যটা আমার চোখে ধরা পড়ে গেল। পশ্চিম দিকটায় ঘন সবুজের সমারোহ। কেবলই সবুজ আর সবুজ। সারা বিশ্বের সবুজ যেন এখানে একত্রে পুঞ্জিভূত হয়েছে। এখানে সবুজের এমন একাধিপত্য কি করে হলো? উদ্যান-বিলাসিতা চলছে।

    ঘন সবুজের মাঝে মধ্যে লক্ষিত হচ্ছে হরেক রঙ আর ঢঙের কতই না ফুল। পাহাড়ি এ ফুলগুলোর ওপর বিকেলের হালকা রোদের কিরণ পড়ে অনবরত এমন ঝলমল করছে যে, ফুলগুলো যেন হাসিতে মাতোয়ারা হয়ে একে অন্যের গায়ে এলিয়ে পড়ছে।

    শুধুই কি ফুলের বাহার! সবুজ মখমলের মতো নরম ঘাসগুলোও কম শোভামণ্ডিত হয়ে ওঠেনি। বিকেলের মৃদুমন্দ বাতাসে সেগুলো অনবরত দুলছে, দুলছে তো দুলছেই। বসন্তের পরশ লাগায় তারা যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে, প্রাণের স্পন্দন জেগেছে। আর এরই মাঝে মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে ছোট ছোট ঘাস-ফুলের গোছা। এদের উপস্থিতি যে পরিবেশটাকে কী অপূর্ব শোভামণ্ডিত করে তুলেছে তা বাস্তবিকই বর্ণনাতীত।

    দূর থেকে দেখলে মনে হয় সবুজপাতা আর ঘাস মিলে স্থানটাকে স্বর্গের নন্দনকাননে পরিণত করেছে যা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

    মনোলোভা এ ঘাসের রাজ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পার্বত্য বনানীর লম্বা-লম্বা গাছগুলোও যেন পরমানন্দে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে নাচছে। প্রতিটা ডালপালা আর পাতাগুলোর সাথে বিদায়ী সূর্যের শেষ রক্তিম আভা পড়ায় সেগুলো ঝকঝক করছে, আর অনন্য আভিজাত্যের ছাপ লক্ষিত হচ্ছে। দীর্ঘ দেহের আত্মম্ভরিতায় সবাই যেন মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে।

    এখানে লতা-গুল্মের ছায়ায় শুয়ে শুয়ে প্রকৃতি দেবীর রূপ সৌন্দর্য দেখে-দেখে আমার মনে-প্রাণে জেগে উঠছে এক অনাস্বাদিত আনন্দ আরনিবিড় প্রাণোচ্ছলতার অনুভূতি। অন্তরের অন্তঃস্থল কানায়-কানায় ভরে উঠেছে।

    বিস্ময়-মাখানো দৃষ্টিতে চারদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি যেন এ লোক ছেড়ে অন্যকোথাও, অন্য কোনো লোকে চলে গেলাম, যেখানে শুধু আনন্দ আর আনন্দ। পুরো অঞ্চলটা জুড়ে বুঝি আনন্দের অফুরন্ত বন্যা আর বাধা বন্ধনহীন নৃত্য চলছে। কোথাও ছিটেফোঁটা বাতাস নেই। অথচ প্রতিটা গাছের ডালপালা বার বার দুলে উঠছে। খুশির জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিলে তো হবার কথাই বটে। পাখায় রঙের বাহার আর পাতায় পাতায় ফুলে, ফুলে পরম উল্লাস নিয়ে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে অসংখ্য প্রজাপতি। অনুসন্ধিৎসু নজরে দীর্ঘসময় ধরে তাকিয়ে থাকায় আমার যেন মনে হলো অজস্র টিউলিপ ফুল প্রত্যেকেনিজনিজ অঙ্গে এক জোড়া করে ডানা লাগিয়ে হালকা বাতাসের কাঁধে ভর দিয়ে গাছের গায়ে নেচে-নেচে উল্লাস করে বেড়াচ্ছে। আর তাদের নৃত্যের সঙ্গী হয়েছে লতাপাতা আর ছোট ছোট রঙ-বেরঙের ঘাসফুল।

    ছোট দ্বীপটার অন্য দিক অর্থাৎ পূর্বদিকটানিবিড় ছায়ায় আচ্ছাদিত। খুব গম্ভীর অথচ শান্ত সুন্দর বিষণ্ণ ছায়া সেদিকটা পুরোপুরি ঢেকে রেখেছে।

    পূর্বদিকে গাছগুলোর রঙ এ অঞ্চলের গাছগুলোর তুলনায় অনেক, অনেক বেশি গাঢ়। মনে হয় বুঝি কোনো অদৃশ্য হাত সেখানকার গাছগুলোর গায়ে গাঢ় সবুজের প্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছে। আর তা এতই গাঢ় সবুজ যে, কালো বললেও ভুল হবে না।

    সে সেদিককার গাছগুলোর আবরণ শোকাকুল, অস্বাভাবিক দুঃখ-যন্ত্রণায় বুঝি বাকশক্তি হারিয়ে তারা বধির হয়ে গেছে। প্রতি মুহূর্তে অন্তরের পুঞ্জিভূত যন্ত্রণায় অনবরত কাতড়াচ্ছে। মৃত্যুলোকের পুঞ্জিভূত জ্বালা আর অকাল মৃত্যু প্রেত ছায়ার মধ্যে প্রতিভাত হচ্ছে।

    শোকের চিহ্ন সেখানকার গাছগাছালি, লতাগুল্ম আর ঘাসগুলোকে পর্যন্ত নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে দিয়েছে।

    শোক সন্তপ্ত ঘাস-জমির বুক চিরে সদম্ভে মাথা উঁচিয়ে রেখেছে পরপর কয়েকটা টিলা। তবে উন্নতশির বলতে যা বোঝায়, এরা কিন্তু ঠিক সে রকম নয়, কেউ-ই নয়। তবে তাদের আকৃতি কিছুটা লম্বাটে। গোরস্থানের কবরের মতোই মনে হচ্ছে। তবে কোনোটাই কিন্তু কবর নয়।

    টিলাগুলোকে ঘিরে রেখেছে রোজসারি ফুলের গোছা। তাদের অন্য কারো মনকে পুলকিত করলেও তারা কিন্তু আমার কাছে এক-একটা যন্ত্রণার মূর্ত প্রতীক ছাড়া কিছুই নয়।

    দ্বীপে গা-ঘেঁষে স্থায়ীভাবে অবস্থান করছে গাছগাছালির ছায়া। হঠাৎ করে দেখলে মনে হয়, তারা যেন গভীর পানিতে তলিয়ে যেতে চায়, আত্মহুতি দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে পড়েছে।

    গাছগাছালিগুলো পানির নিচে দুর্বার কল্পনা দিয়ে অন্ধকারের মধ্যে মিলেমিশে অধিকতর কুটিল করে তুলেছে, যা আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। আর মনের মধ্যেকার জমাটবাধা কল্পনা দিয়ে আমি যেন এও লক্ষ্য করলাম–বিদায়ী সূর্যটা যতই নিচের দিকে নামছে, প্রতিটা গাছের প্রতিটা ছায়া যেন ততই গাছগুলোর দেহ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করেনিচ্ছে। যে গাছ থেকে তারা জন্ম নিয়েছে, সে জন্মজাতকের কাছ থেকে তারা ক্রমেই একটু একটু করে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। আর তারা জলধারার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

    আর যেসব ছায়া সমাধির অতল গহ্বরে প্রবেশ করছে, তারাও নিজেদের নদীর জলে অল্প অল্প করে গুলিয়ে নিচ্ছে, মিশে যাচ্ছে।

    আমার মাথায় অদ্ভুত এধারণাটা একবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতেই আমি যেন কেমন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম। আধ-বোঝা চোখে ঢুকছিলাম আর কল্পনার ইন্দ্রজাল বুনে চলছিলাম। একটু পরেই আমি আবার প্রায় অস্ফুট স্বওে বিড়বিড় করতে লাগলাম। তবে, তবে এটাই সেই পরীর রাজ্য। এখানেই পরীর দল আপন খেয়াল খুশিতে ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়। এখানেই তবে কুহকমায়ার ছোঁয়া লেগেছে।

    এক সময় কুহকিনী পরীরা তো পৃথিবীর ছকে ছিলই। আজও তবে কোমল হাওয়া স্নিগ্ধকায়া অপরূপাদের সে প্রজাতির উপস্থিতি পৃথিবীর বুকে অবস্থান করছে, নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। বর্তমানে তারা সংখ্যায় বেশি থাকলেও কয়েকজন আজও নির্জন দ্বীপের শান্ত পরিবেশে আনন্দে দিনযাপন করছে, ফুলের মতো রূপ লাবণ্য নিয়ে।

    তবে কি মখমলের মতো সবুজ ঘাসের পুরু আস্তরণ বিছানো ঢিবিগুলোই তাদের নিশ্চিন্ত বাসস্থল? নাকি মানুষ যেমন আয়ু ফুরিয়ে গেলে পৃথিবী, থেকে চির বিদায় নিয়ে অনন্ত সুন্দর লোকের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়, ঠিক সেরকমই পরীরাও কি তবে মাটির নিচের অন্ধকার-ঠাণ্ডা কফিনে শান্তিতে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছে?

    গাছগাছালি যেমন পানিতে ছায়া ছড়িয়ে দিয়ে একটু একটু করে নিজেদের অস্তিত্ব বিলিয়ে দিতে চলেছে, ঠিক তেমন করেই কি পরীরা নিজেদের অস্তিত্ব অল্প অল্প করে খুইয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে না?

    পরীরা নিজেদের সত্ত্বা একটি পরসত্ত্বার সঙ্গে মিশিয়ে দেবার সময় তাদের মন প্রাণ কি ডুকড়ে ডুকড়ে কেঁদে ওঠে না?

    গাছের ঘন-সবুজ ছায়া অতল পানির অন্ধকার পরিবেশকে আরও অনেক, অনেক বেশি গাঢ় করে তুলছে না? পরীদের জীবনের পরিসমাপ্তি মৃত্যুর আধারকে নিকটতর করে দিচ্ছে না?

    আমি ঘন-সবুজ ঘাসের বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় এলিয়ে পড়ে থেকে যখননিবিষ্ট মনে এসব কথা ভেবে চলেছি আর অনুচ্চ কণ্ঠে অনর্গল বিড়বিড় করছি, ঠিক তখনই সূর্যদেব তার সাত ঘোড়ার রথে চেপে ক্রমেই পশ্চিম দিগন্ত পথে এগিয়ে চলেছে, বিদায় নেবার তীব্র উৎসাহে।

    আলো আর অন্ধকার যখন প্রতিমুহূর্তে স্থান পরিবর্তন করে চলেছে আর ক্রমেই সরে সরে যাচ্ছে, আর ডুমুর গাছের সাদা বাকলের ঝিলিমিলি যখন পানির উপরিতলে বারবার চমকে উঠছে আর যখন অস্থির জলরাশি দ্রুত পাক খেয়ে চলেছে ছোট দ্বীপটাকে চক্কর মেরে চলছে–সে মুহূর্তে, ঠিক সে মুহূর্তেই আলো আঁধারীর সারাময় পরিবেশে এক পরী আমার দৃষ্টিকোণে ভেসে উঠল। আমি দেখলাম, স্পষ্ট দেখলাম তাকে। সে পশ্চিমের আলোর রাজ্য ছেড়ে পূর্বে অন্ধকার যমপুরীতে নিঃশব্দে আবির্ভূত হলো।

    বাতাসের কাঁচে আলতো করে ভর দিয়ে, রূপ সৌন্দর্যের ডালি মেলে পরীটা ধীরমন্থর গতিতে এগিয়ে চলেছে। পর মুহূর্তেই আবার সে অপরূপাকে নৌকার গলুইয়ের ওপর একেবারে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে নাচতে দেখতে পেলাম।

    আমি চোখের তারায় বিস্ময়ের ছাপ এঁকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে সে মনোমহিনী রূপ সৌন্দর্য পান করতে লাগলাম।

    এবার সে অপরূপা পরী তার স্থান পরিবর্তন করল। গলুই থেকে সরে এসে নৌকার দাঁড়টা হাতে তুলে নিল।

    নৌকাটা অনেক আগেই ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল। এখন সে নিতান্তই দৈন্যদশায় পৌঁছে গেছে। এরকম খারাপ অবস্থায় পৌঁছে কোনোরকমে একটিমাত্র দাঁড় দিয়ে পানি কেটে কেটে পরীটা তার বাহন নৌকটাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।

    পরী! রূপসি পরী। আমার রূপের রানি পরী! আমার স্বপ্ন-সাধের অনন্যা পরী। আমার কল্পনার রূপ-সৌন্দর্যের আঁকর পরী প্রেতলোকের নৌকা বাইছে।

    যে ছিটেফোটো আলোর অস্তিত্ব এখনও পরিবেশে লক্ষিত হচ্ছে, এখনও ঝিলিক সৃষ্টি করছে করে চলেছে তার মনে দোলা লাগানো তনুশ্রী, সে তনুতেই যেন আনন্দ উল্লাস ফেটে পড়তে চাইছে। কিন্তু হায়! আমার ভালো-লাগা সে অনন্য আকৃতি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়ে ছায়ার রাজ্যে প্রবেশ করা মাত্র তার রূপলাবণ্য নিঃশেষে মিলিয়ে গিয়ে এমন বিকৃত রূপ ধারণ করেছে, যা দেখে আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে। আমি ভেবে কুল-কিনারা পেলাম না, মুহূর্তে এ কী অদ্ভুত কাণ্ড ঘটে গেল!

    আমি আপন চোখে সে অবিশ্বাস্য দৃশ্যটার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখলাম। তাকিয়ে রইলাম, নৌকার ওপর দাঁড়িয়ে ভাসমান সে আকৃতিটার দিকে।

    সে অত্যাশ্চর্য মূর্তিটাকে নিয়ে নৌকাটা হঠাৎ আমার দৃষ্টির বাইরে চলে গেল। অন্ধকার রাজ্যে প্রবেশ করে চোখের পলকে কোথায় যেন হারিয়ে, নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল।

    সে অপরূপা পুরো দ্বীপটাকে প্রদক্ষিণ করে এক সময় আবার আমার দৃষ্টিকোণে ভেসে উঠল। অন্ধকার জগৎ থেকে ছেড়ে বেরিয়ে এলো আলোর জগতে।

    আমি তখন আপন মনে বিড়বিড় করে চলেছি–মায়াময়ী রূপসি পরী পুরো একটা বছর অন্যত্র কাটিয়ে আবার এখানে ফিরে এলো। ছোট হলেও এ দ্বীপটাকে একবার প্রদক্ষিণ করার অর্থ তার আয়ু থেকে একটা বছর কমিয়ে দেওয়া। একটা বছর পুরো একটা বছর। একটা চক্কর মারতে গিয়েই সে শীত আর গ্রীষ্ম পার করে এলো। তার ছোট্ট জীবন আর কিছুটা ছোট হয়ে এলো। মৃত্যু, শেষ পরিণতির দিকে আরও কিছুটা এগিয়ে গেল তো বটেই।

    ছায়ায় ঘেরা মায়াচ্ছন্ন অঞ্চল দিয়ে যাওয়ার সময় আমার নজরে যা পড়েছে। তার শরীর থেকে ছায়া ঘসে ঘসে পানি পড়েছে। এর ফলে কালো পানির রং আরও কালো হয়ে গেছে। আর অনিন্দ্য সুন্দর ছায়া নিঃশেষে গ্রাস করেছে। ছায়া আরও ছায়া পানি আরও কালো।

    কালো, অন্ধকারের এলাকা অতিক্রম করে দ্বীপটাকে চক্কর মেরে ছিপছিপে অথচ অতুলনীয় রূপের আঁকর তন্বী যুবতি পরী আবার আলোর রাজ্যে ঢুকল। আবার সে আলোর এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে এলো। তার অপরূপ অঙ্গে অনিশ্চয়তা আগের চেয়ে আরও অনেকাংশে বেড়ে গেছে। আগের মতো হাসিখুশি ভাব, আনন্দ-উল্লাস এখন আর তার মধ্যে নেই।

    সে অপরূপা পরী আলোর এলাকা থেকে বেরিয়ে এসে বাতাসের কাঁধে ভর দিয়ে আলতোভাবে অন্ধকারে ঢুকে যাওয়া মাত্র, অন্ধকার অঞ্চলটা আরও অনেক, অনেক অন্ধকার হয়ে গেল।

    আবারও দৃশ্য আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল। তার শরীর থেকে টুকরো টুকরো ছায়া সে কালো জলরাশির ওপর খসে খসে পড়তে লাগর। কালো জলরাশি ক্রমে ঘন কালো হয়ে উঠল। ফলে পরীর গা থেকে খসে পড়া ছায়া মুহূর্তে কালো পানির মধ্যে মিশে একাকার হয়ে গেল।

    এভাবেই চক্রাকারে আলো অন্ধকারের ক্রম পরিবর্তন চলতে লাগল।

    অপরূপ তন্বী পরী দ্বীপটাকে চক্কর মেরে বার বার ঘুরে এল।

    আর এভাবে ক্রমান্বয়ে চক্কর মেরে মেরে অপরূপা পরীর দেহপল্লব ক্রমে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে পড়তে লাগল। আর সে সঙ্গে মুমূর্ষ বিষণ্ণতা অল্প অল্প করে প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে পড়তে লাগল।

    সময় যত পেরিয়ে যাচ্ছে, পরী দ্বীপটাকে যতই চক্কর মারছে, ততই তার শরীর হালকা, ফ্যাকাশে-বিবর্ণ, অস্পষ্ট আরও ক্ষীণকায় হয়ে পড়তে লাগল। এক সময় পরিস্থিতি এমন হয়ে এলো যে, কায়া বলে কিছুই আর অবশিষ্ট থাকছে না।

    অপরূপাতন্বী পরীর কায়া ক্রমেই ছায়ায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে। আর সে ছায়া পানির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

    জলরাশি ক্রমেই এমন গাঢ় কালো হয়ে পড়ছে, যেন কষ্ঠিপাথরের রঙ ধারণ করেছে।

    এদিকে বিদায়ী সূর্য তার শেষ রক্তিম আভাটুকু পাহাড়, দ্বীপ আর জলধারার ওপর ছড়িয়ে দিয়ে গা-ঢাকা দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে পড়ল। এবার সেটা সত্যি সত্যি গা ঢাকা দিল। সম্পূর্ণরূপে চোখের আড়ালে চলে গেল। একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। এককণা আলোও আর কোথাও রইল না।

    আর অপরূপ পরী? সেও জমাটবাঁধা অন্ধকারে আত্মগোপন করে রইল।

    অন্ধকার রাজ্যে ঢোকার মুহূর্তে বিদায়ী সূর্যের শেষ রক্তিম আভায় নিরাসক্ত নির্বাপিত প্রায় অবয়বটা দেখতে পেয়েছিলাম। ব্যস, তারপর মুহূর্তেই সে ঘুটঘুঁটে অন্ধকারে চিরকালের মতো হারিয়ে গেল। আর তাকে আমি দেখতে পাইনি।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগোল্ডেন লায়ন – উইলবার স্মিথ / জাইলস ক্রিস্টিয়ান
    Next Article লাভ ক্যান্ডি – জাফর বিপি
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }