Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যাডগার অ্যালান পো রচনাসমগ্র / অনুবাদ : জাকির শামীম

    জাকির শামীম এক পাতা গল্প1512 Mins Read0

    ফোর বিস্টস্ ইন ওয়ান দ্য হোম–কেমলোপার্ড

    ফোর বিস্টস্ ইন ওয়ান দ্য হোম–কেমলোপার্ড

    সবার বিশ্বাস, এলিয়োকাস এপিথোশিসকে মহাত্মা এজেকি ল-এর দাগ। তবে আসলে কিন্তু এ সম্মান পাওয়ার প্রকৃত যোগ্য ক্যাম্বিসেস–মাইরাস-এর মহানপুত্র।

    সত্যি কথা বলতে কি, সিরিয়ার রাজার কিন্তু এ রকম কোনো সম্মানের প্রতি আদৌ তিলমাত্র লিপ্সাও নেই।

    যীশুখ্রিস্টের আবির্ভাবের একাত্তর বছর আগে তিনি যেভাবে সিংহাসনে বসেন, বা রাজত্ব হস্তগত করেন, ইসোসের ডায়ানার মন্দির লুণ্ঠন করে ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য উদ্যোগী হন, পরমতম পবিত্রকে অপবিত্র করার জন্য প্রয়াসী হন, ইহুদি জাতির ওপর নির্মম-নিষ্ঠুরতার মধ্য দিয়ে শত্রুতাচারণ করেন আর এগোরো বছর হরেক রকম প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে রাজ্য শাসনের পর তাবাতে তার মর্মান্তিক ‘মৃত্যুবরণ’–এসবই বড়বড় ঘটনার পর্যায়ে পড়ে।

    আর এ কারণেই যেসব কাপুরুষসুলভ নির্মম-নিষ্ঠুর অপবিত্র ও হুজুকে কাজকর্মের মধ্য দিয়ে তার ব্যক্তিগত জীবন পরিচালিত হয়েছে আর যশ, তাদের বদলে পূর্ব কথিত ঘটনাগুলোই ঐতিহাসিকদের মনে বেশি মাত্রায় দাগ কেটেছে। আর এরই ফলে তারা সেগুলোকেই লেখার উপকরণ হিসেবে উপযুক্ত বিবেচনা করেছেন।

    আমরা মনে করি না কেন, এখন সময়টা তিন হাজার আট শো ত্রিশ। আর কয়েক মুহূর্তের জন্য ভেবে নেওয়া যাক, আমরা এ মুহূর্তে মানুষের এক অদ্ভুত বাসস্থল এন্টিয়োক নগরে অবস্থান করছি।

    অবশ্য এ-কথাও সত্য যে, যে বিশেষ নগরটা সম্বন্ধে আমি বলছি সেটা ছাড়াও সিরিয়া আর অন্য বেশ কয়েকটি দেশে এ একই নামে আরও ষোলটা নগরের অস্তিত্ব বর্তমান।

    তবে আমাদের আলোচ্য নগরটাকে সবাই এন্টিয়োকিয়া এপিডাফ নগর নামেই জানত যে গ্রামে একটা দেবমন্দির রয়েছে, সে ডাফ গ্রামের লাগোয়া এ নগরটার অবস্থান হওয়ার জন্যই এর এ নামকরণ করা হয়েছে।

    শোনা যায়, দিগ্বিজয়ী বীর মহান আলেকজান্ডারের ঠিক পরেই এ দেশের সিংহাসনে বসেন সেলুকাস নিকানর। তিনি তার পিতা এন্টিকোয়াসের স্মৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে এ মন্দির নির্মাণ ও প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যস, এবার থেকেই এ স্থানটা সিরীয় রাজাদের বাসস্থানরূপে ব্যবহৃত হতে থাকে।

    রোমক সাম্রাজ্যের সুবর্ণযুগের আমলে প্রাচ্য প্রদেশগুলোর প্রধান কর্মচারীর কর্মস্থল এ নগরেই গড়ে তোলা হয়।

    শ্রেষ্ঠ সম্রাটদের অনেকেই, ভ্যালেন্স আর ডেবার্সের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য জীবনের অধিকাংশ সময় তারা এখানেই অতিবাহিত করেছিলেন।

    ধরে নেওয়া যাক, আমরা এখন সে নগরেই অবস্থান করছি। তবে এবার শহর এবং প্রতিবেশী দেশের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখি তাদের পরিস্থিতি কেমন।

    ওই যে আমাদের চোখের সামনে, অদূরবর্তী অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রশস্ত ও স্রোতস্বিনী কল্লোলিনী নদীটা অগণিত ঝর্ণার পানিকে বুকে নিয়ে নির্জন-নিরালা পার্বত্য অঞ্চলের ওপর দিয়ে নেচে নেচে হেলে দুলে অগ্রসর হয়ে হয়ে এক সময় প্রাসাদোপম অট্টালিকা সারির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, এটা কোন নদী, নামই বা কী?

    এ নদীটাই অরন্টেস নামে পরিচিত। এটা দক্ষিণে প্রায় বারো মাইল এগিয়ে গেছে। কাকের চোখের মতো, এবং এর পানি কাঁচের মতো স্বচ্ছ। ভূমধ্যসাগর আর এ নদীটা ছাড়া অন্য কোনো নদীর পানিই এমন টলটলে নয়।

    একটা কথা, অনেকেই ভূমধ্যসাগরকে চাক্ষুষ করেছেন। আমি কিন্তু বলব, এন্টিয়োক নদীকে খুব কম লোকই মুহূর্তের জন্য চোখে দেখার সৌভাগ্য লাভ করেছেন। কম লোক বলতে আমি আপনার আর আমার মতো আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষদের কথাই বুঝাচ্ছি। তাই বলছি কি, সমুদ্রের আলোচনা এখন দেওয়া যাক। আমরা বরং আলোচনাকে নিচের ওই বাড়িগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখি।

    খেয়াল থাকে যেন, এখন তিন হাজার আটশ ত্রিশ। এ না হয়ে এটা যদি আরও পরবর্তী কাল হত তবে? যেমন ধরা যাক, এটা যদি তিন হাজার আটশ’ ত্রিশের পরিবর্তে আঠারো শশা পয়তাল্লিশ যদি হত? তবে তো আমরা এ অসাধারণ দৃশ্যটা স্বচক্ষে চাক্ষুষ করতে পারতাম না, তাই না?

    উনিশ শতকে পা দিয়ে আমাদের আলোচ্য নদী এন্টিয়োক একটি হৃদয় বিদারক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সময়ে তিন-তিনটি ভয়ঙ্কর ভূ আলোড়নের ফলে শহরটা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস-শ্মশানে পরিণত হয়ে যাবে।

    খুবই সত্য যে, তিন-তিনটি ভু-আলোড়নের পর নগরটা যে সামান্য অংশটুকু টিকে থাকবে, তা এমনই জনমানবশূন্য ধ্বংসাবশেষ ভূখণ্ডে পরিণত হয়ে পড়বে যার ফলে রাজ্যের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা রাজা মশাই দামাস্কাসে তার বাসস্থল স্থানান্তরিত করবেন।

    চমৎকার! আমার পরামর্শে লাভ ছাড়া তিলমাত্র লোকসান হয়নি।

    নগরের ঘর-বাড়ি দেখে দেখে আমাদের সময় খুব ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছে, ঠিক কিনা? এ ন্যায়ের স্মৃতিসৌধ আর বিখ্যাত সবকিছু দেখে দেখে আপনাদের চোখ দুটো জুড়িয়ে গেছে, মিথ্যা বলেছি?

    আমি মার্জনা ভিক্ষা করে নিচ্ছি, আমার স্মরণই ছিল না, আরও সতেরশো বছর আগেকার কথা, মনেই ছিল না যখন মহাকবি সেক্সপীয়ারের জন্মই হবে না। তবে এপিডাফন নগরের এ রূপকে কিন্তু আমার পক্ষে গদগদ স্বরে অত্যাশ্চর্য সুন্দর আখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়, কিছুতেই নয়।

    হ্যাঁ, এটা অবশ্য খুবই সত্য যে, এপিদাফল নগরটা সুরক্ষিত। আর এর জন্য যে প্রকৃতিদেশি আর শিল্পনৈপুণ্যে উভয়ের কাছেই ঋণী, খুবই সত্য বটে।

    নগরটায় অগণিত রাজপ্রাসাদের মতো ঘর-বাড়ি বর্তমান।

    হ্যাঁ, খুবই সত্য–তা আছে বটে।

    এ-ছাড়া এখানকার অগণিত মনোলোভা জাঁকজমকে ভরপুর চমৎকার সব মন্দিরকে যে কোনো ভূয়সীপ্রসংশিত পুরাকীর্তির সঙ্গেই অনায়াসে তুলনা করা যেতে পারে।

    এসব কথাই আমি অকপটে স্বীকার করে নিচ্ছি। তা সত্ত্বেও এখনো ওখানে তো চোখে পড়ে অগণিত কাঁচা মাটির বাড়ি আর জঘন্য সব বস্তির ছড়াছড়ি। এখানে ওখানে সর্বত্র প্রত্যেকটা নালা-নর্দমা ময়লা আবর্জনায় বোঝাই। মূর্তিপূজারীদের ধূপ ধূনায় চাপা না পড়ে গেলে দুর্গন্ধে বসবাস করাই সমস্যা হয়ে দাঁড়াত।

    শুধু কি এ-ই? এমন অসহ্য-বিরক্তিকর সরু পথ-ঘাট, আর অত্যুদ্ভুত রকমের লম্বা লম্বা বাড়ি কি কেউ কোনোদিন দেখেছেন–কারো চোখে পড়েছে। সত্যি করে বলুন তো? ধরনীর ওপর তারা কী বিষণ্ণ ছায়াপাতই না করে।

    তবে রক্ষা যে, স্তম্ভগুলোর ঝুলিয়ে দেওয়া আলোগুলো দিনভর জ্বলে, আলো দেয়। তা না হলে মিশরের ধ্বংসসানুখ মুহূর্তে সে অন্ধকার কালো ঘোমটার আড়ালে চলে যাচ্ছিল সে রকম অন্ধকারে আমরা চাপা পড়ে যেতাম, খুবই সত্যি কথা। সত্যি, স্থানটা অভাবনীয় রকমের অদ্ভুত। ওই যে, বাড়িটা দেখা যাচ্ছে, তার মানে কি? আশপাশের অন্য বাড়িগুলোকে ছাড়িয়ে ওটা যেন আকাশে মাথা ঠেকাতে তৎপর। তা-ও আবার রাজপ্রাসাদটার পূবদিকটাকে আড়ালে ফেলে দাঁড়িয়ে আছে-আশ্চর্য!

    ওটা কি? আরে, ওটাই তো নতুন গড়ে তোলা সূর্যমন্দির। এলাহ গাবনাহ’ নামে সিরিয়াবাসীরা তাঁর পূজার্চনা করে।

    পরবর্তী সময়ে কুখ্যাত এক রোমক সম্রাট নতুন একটা পূজার প্রবর্তন করবেন। আর তা থেকেই তিনি ‘হোলিও গাবালুস’ নামে নতুন একটা উপাধি গ্রহণ করবেন। আশা করি সে মন্দিরটার গর্ভগৃহে রক্ষিত ও পুজিত হচ্ছেন যে দেবতা তাকে একবারটি চোখের দেখা দেখার জন্য আপনারা উৎসাহি হবেন, ঠিক বলিনি? এর জন্য আপনাদের আকাশ পানে তাকাবার কোনো দরকারই নেই। কারণ? সূর্য-দেবতা সেখানে অনুষ্ঠান করছেন না। আর যাই হোক, অন্তত সিরিয়াবাসীরা সে সূর্যদেবতার পূজাপাঠ করে তিনি তো অবশ্যই নেই। তবে কোথায় তিনি অধিষ্ঠান করছেন, দূরবর্তী ওই দেবালয়ে। বড়-সড় একটা প্রস্তরখণ্ডের মূর্তিরূপে তিনি পূজিত হচ্ছেন। প্রস্তরখণ্ডটার শীর্ষে একটা শঙ্কু অবস্থান করছে, অগ্নিদেবের প্রতীক ওটা।

    আমি এবার আপনাদের অনুরোধ করছি, দেখুন! সবকিছু শুনুন, জানুন! হাসির উদ্রেককারী ওই মানুষগুলো কে, কি-ই বা তাদের প্রকৃত পরিচয়?

    অর্ধ-নগ্ন, মুখে রং-কালির প্রলেপ দিয়ে যারা ওই মানুষগুলোর দিকে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে চিল্লাচিল্লি করছে তারা কারা, কি-ই বা তাদের প্রকৃত পরিচয়।

    তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক লোক ভেকধারী, ভণ্ডামি যাদের রক্তের সঙ্গে মিশে রয়েছে, আর অবশিষ্টরা দার্শনিক শ্রেণিভুক্ত।

    তবে তাদের মধ্যে যারা জনসাধারণের ওপর নির্মমভাবে লাঠি চালিয়েছে, তারা সবাই রাজসভার প্রধান পরিষদ। সর্বদা রাজার সন্তোষ উৎপাদনকেই যারা জীবনের প্রধান ও একমাত্র কাজ বিবেচনা করেন।

    কিন্তু এখানে চোখের সামনে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? হায় ভগবান! সারা নগরটা যে বুনো জন্তু-জানোয়ারে হেঁয়ে ফেলেছে। কী ভয়ঙ্কর! কী মারাত্মক সঙ্কটজনক পরিস্থিতি।

    যদি ভয়ঙ্কর বলতে উৎসাহি হন, আপত্তি করব না–তাই বলুন। তবে সঙ্কটজনক এমন কথা মোটেই বলবেন না। একটু কষ্ট স্বীকার করে যদি অনুসন্ধিৎসু নজরে ভালোভাবে লক্ষ্য করেন, তবেই বুঝতে পারবেন, প্রতিটি জানোয়ার কেমন অনুগত ভৃত্যের মতো মুখ বুজে তার প্রভুকে অনুসরণ করে চলেছে। তবে এও সত্য যে, কারো গলায় দড়ি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা প্রত্যেকে এমন নিরীহ ও ভীতু প্রকৃতির তা আর বলার নয়।

    তবে বাঘ, সিংহ আর চিতাবাঘগুলো কিন্তু পুরোপুরি ছাড়াই রয়েছে। অল্প সময়ে এবং অল্পয়াসেই তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে হরেকরকম কাজকর্ম শিখিয়ে নেওয়া রয়েছে। আর যার মনিবের খানসামার কাজে তারা নিযুক্ত।

    অবশ্য এ-কথাও সত্য যে, প্রকৃতিদেবী কখনও কখনও নিজেকে প্রকাশ করে থাকেন, কিন্তু ঠিক সে পরিস্থিতিতে কোনো সশস্ত্র যোদ্ধা যদি কোনো জানোয়ারের পেটে আশ্রয় নেয়, বা কোনো বড়সড় অমিত শক্তিধর কোনো ষাড়কে কুপোকাৎ করে দেয়া হয় তবে এ-ব্যাপার স্যাপার নিয়ে এফিডফ নগরের অধিবাসীরা কোনোরকম

    ফো-ফা করে না। ব্যাপারটাকে নিয়ে তারা মাথা ঘামানোর দরকারই মনে করে না।

    কিন্তু ওই, ওই যে কীসের ভীষণ হৈ হট্টগোল শোনা যাচ্ছে না। হ্যাঁ, এই অনুমান অভ্রান্তই তো বটে। মনে ত হচ্ছে, এটা নির্ঘাৎ অ্যান্টিয়োকের একটু বেশি রকমই ভাব শব্দ। ভাবগতিক লক্ষ্য করে মনে হচ্ছে, গোলমালের কারণটা অসাধারণই বটে। হ্যাঁ, এরকমই তো মনে হচ্ছে।

    অনুমান অভ্রান্ত। রাজা মশাই কোনো অদ্ভুত দৃশ্যের নির্দেশ দিয়েছেন। এমনও হতে পারে হিপোড্রামে কোনো মল্লযুদ্ধের খেলা শুরু হয়েছে। আর তা যদি না-ই হয় তবে হয়তো সিদিয়ান বন্দিদের গণহত্যা-পর্ব চলছে। নতুবা নতুন রাজপ্রাসাদে আগুন কাসের ভীষ নির্ঘাৎ অ্যাম্ভিকারণটা অসাধা জ্বেলে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দেওয়া হচ্ছে অথবা মনোলোভা কারুকার্য মণ্ডিত মন্দিরকে ভেঙে চুড়ে ধুলিস্যাৎ করে দেওয়া হচ্ছে বা একদল ইহুদিকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে।

    গলাছাড়া বিকট হাসির শব্দে আকাশ কাঁপিয়ে তোলা হচ্ছে। তাল-লয়হীন বাজনার শব্দে বাতাস ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে, লক্ষ মানুষের ক্ষুব্ধ কণ্ঠের হৈ হট্টগোলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।

    আপনারা আমাকে সঙ্গদান করুন, পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে দেখেই আসা যাক না, ওখানে কোনো তামাশা শুরু হয়েছে দেখেই আসি চলুন।

    এই যে, এদিকে-এদিকে। সাবধান! আমরা কিন্তু নগরের বুকে পৌঁছে গেছি। আর এমন প্রধান রাজপথে দাঁড়িয়ে রয়েছি–‘টাইমার্স পথ’ নামে একে সবাই জানে।

    টাইমার্স পথটা ধরে উদ্বেলিত জনতার মিছিল দুর্বার এগিয়ে চলেছে। বানের পানির মতো এমন উদ্দাম-দুর্বার গতিতে তারা পথ পাড়ি দিচ্ছে যে, তাদের পথ রোধ করা খুবই কঠিন সমস্যা।

    তারা হেরাক্লিডেস গলি-পথ ধরে উন্মাদের মতো ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে আসছে। আর এ-গলিটা রাজপথ থেকে বেরিয়ে সোজা চলে এসেছে। অতএব রাজাও হয়তো বা। এসব হুল্লাবারীদের সঙ্গে রাজা মশাইও রয়েছেন।

    হ্যাঁ, যা ভেবেছি, ঠিক তা-ই। ওই ওই তো ঘোষক গলা ছেড়ে চিৎকার করছে। প্রাচ্য দেশে চমৎকার শ্রুতিমধুর ভাষায় সে গলা ছেড়ে রাজা মশাইয়ের আগমনবার্তা ঘোষণা করে চলেছে।

    ঘোষকের কথামত আমরা এ-আশায় বুক বেঁধেইনিদারুণ অস্থিরতার মধ্য দিয়ে আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম। কারণ শুনেছি, তার মিছিল আশিসহ মন্দিরের লাগোয়া পথ ধরে এগিয়ে যাবে। সে মুহূর্ত এক পলকে তাঁকে দেখতে পাব, এটাই আমাদের এ মুহূর্তের প্রত্যাশা।

    এবার চলুন ভজনালয়ের বারান্দায় গিয়ে আশ্রয় নেওয়া যাক। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজা-মশাই সেখানে উপস্থিত হবেন।

    রাজা মশাই ভজনালয়ে পৌঁছাবার আগে আমরা বরং গর্ভগৃহে রক্ষিত মূর্তিটাকে দেখেনিই।

    চমৎকার মূর্তি। কিন্তু কীসের মূর্তি এটা, বুঝতে পারছি না তো? আরে এটাই অশিমহাদেবের প্রকৃত রূপ। অথচ আপনাদের চোখে ধরা পড়ছে তা না ছাগল, না ভেড়া, না অর্ধ-নর, এমনকি অর্ধ-নরও তো নয় তবে? কিন্তু আর্কিভিয়দের আরাধ্য। দেবতা প্যাম-এর মূর্তির সঙ্গেও তো এর তেমন সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তা সত্ত্বেও ভবিষ্যৎ বিজ্ঞজনরা সিরীয়দের উপাস্য দেবতা অশিসাহ-র মূর্তির গায়ে এসব রূপই এক এক করে চাপিয়ে দেবেন।

    ঠিক আছে, এবার না হয় চোখে চশমা লাগিয়েনিন। ব্যস, এবার ভালো করে পরখ করে নিয়ে বলুন তো, এটা কীসের মূর্তি?–‘আরে বাবা। কী কেলেঙ্কারি কাণ্ড রে বাবা! এ যে দেখছি একটা বানরের মূর্তি।

    হ্যাঁ, প্রায় ঠিকই বলেছেন ভাই। এটা একটা বেবুনের মূর্তি। বেবুন হলে হবে কি, দেবতা হিসেবে কিন্তু কোনো দিক থেকে কমতি নয়।

    ‘এর নামকরণ–‘

    ‘নামকরণ হয়েছে সিসিয়া থেকে। সিসিয়া একটি গ্রীক শব্দ। ব্যাপারটা ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবেন পুরাতত্ত্ববিদরা কি আহাম্মকই না হতে পারেন। আর ওই, ওই দিকে একবারটি তাকিয়ে দেখুন–একটা লোমশ বাচ্চা কেমন ধেই ধেই করে হরদম লাফাচ্ছে। সে এমন লাফাতে লাফাতে কোথায় চলেছে, বলতে পারেন? আবার চেঁচিয়ে কি যেন সব বলছে–কি বলছে। আরে, সে গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে বলছে–রাজা মশাই বিজয়-যাত্রায় বেরিয়েছেন। তার গায়ে রাজপোশাক ঝলমল করছে। এই তো সবেমাত্র নিজের হাতে এক সহস্র ইসরাইলী কয়েদির ভবলীলা সাঙ্গ করেছেন। তাঁর অন্তরের অন্তঃস্থলে খুশির জোয়ার বয়ে চলেছে। তার মনের আনন্দোল্লাস, তার মুখের ভাষায়, হাসির মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে।

    রাজা মশাই এরকম একটা সুমহান কর্ম সম্পাদন করায় দুর্জনরা তার জয়গানে আকাশ-বাতাস মথিত করে তুলছে। ওই ওই যে, তাদের সমবেত জয়ধ্বনি বাতাসবাহিত হয়ে কানে আসছে।

    ওই, ওই যে একই ধরনের একদল সৈন্য এদিকে আসছে। শুনুন, উকৰ্ণ হয়ে শুনুন–একটু লক্ষ্য করলেই ব্যাপারটা সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হতে পারবেন।

    ‘কিন্তু তারা গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে কী বলছে?

    ‘আরে ভাই, বলছে না–বলছে না, রীতিমত গানে মাতোয়ারা।

    ‘গান! আপনি তবে বলতে চাইছেন, এটা তাদের গান?

    ‘অবশ্যই গান–সমবেতকণ্ঠে গান গাইছে।

    ‘কিন্তু গান কেন? কীসের গান, জানতে পারে কী?

    ‘রাজার প্রশস্তি। ল্যাটিন ভাষায় একটা গান বেঁধে সেটাই সোল্লাসে গাইতে গাইতে তারা এগিয়ে চলেছে।

    গানটার বক্তব্য হচ্ছে–

    হাজার! এক হাজার! একটা মাত্র যোদ্ধা নিয়ে আমরা এক হাজার নরাধমকে হত্যা করেছি। এসো, আমরা মহানন্দে গান গাই, আমাদের রাজা মশাইয়ের দীর্ঘ জীবন কামনা করছি। যে মহান রাজা একটামাত্র হাত সম্বল করে হাজারজনকে হত্যা করেছেন। এসো, আমরা ধ্বনি তুলি, গান গাই–রাজা মশাই টকটকে লাল রক্ত দিয়ে আমাদের মুঠোগুলো ভিজিয়ে দিয়েছেন, যা সমগ্র সিরিয়া নগর ঘুরেও তোমার দ্বারা কিছুতেই সম্ভব হবার নয়।

    গানের বক্তব্য বলা শেষ করে সে মুহূর্তের জন্য কান খাড়া করে বলল–ওই ওই যে, শুনতে পাচ্ছেন কী? শুনতে পাচ্ছেন না? ওই ভেরীর আওয়াজটা শুনতে পাচ্ছেন না?’

    ‘হ্যাঁ পাচ্ছি, শুনতে পাচ্ছি। রাজা মশাই আসছেন। একটু লক্ষ্য করুন স্পষ্ট বুঝতে পারবেন, জনগণের মুখ টকটকে লাল হয়ে গেছে।’

    ‘কেন?’

    ‘আরে ভাই,, তারা যে পঞ্চমুখে রাজার প্রশংসা করছে, লাল হবে না! আর ওই দেখুন, অন্তহীন শ্রদ্ধায় তারা বার বার মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকাচ্ছে। তিনি যে আসছেন।

    ‘তিনি যে আসছেন এতে কিছুমাত্রও ভুল নেই।

    ‘আরে, আর আসছেন নয়, এসে গেছেন! ওই, ওই তো তিনি আমাদের মুখোমুখি অবস্থান করছেন।

    ‘কিন্তু কোথায়? কোথায় তিনি? আমি যে দেখতে পাচ্ছি না।

    ‘দেখতে পাচ্ছেন না। রাজা মশাইকে দেখতে পাচ্ছেন না!’

    ‘সত্যি বলছি–বিশ্বাস করুন, রাজা মশাইকে আমি তো মোটেই দেখতে পাচ্ছি না!’

    ‘আরে ধৎ! মশাই, আপনি তবে অন্ধ।‘

    ‘হ্যাঁ, তবে হয় তো আপনার কথাই সত্যি হবে।‘

    ‘অবশ্যই। আমার কথা সত্যি হতে বাধ্য।‘

    ‘আমি আবারও বলছি, রাজা মশাইকে আমি মোটেই দেখতে পাচ্ছি না। তবে হয়তো আপনার কথাই ঠিক। আমি তবে অন্ধই বটে। আমি তো একদল আহাম্মক উন্মাদের চিল্লাচিল্লি ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। অতিকায় একটা বাঘুট-এর সামনে আবেগাপ্লুত হয়ে তার চরণে চুমু খাবার জন্য তারা নিজেদের মধ্যে গুঁতোগুতি ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দিয়েছে।

    আরে বাবা কী সাংঘাতিক ব্যাপার! জানোয়ারটা এক ভক্তকে এবার লাথি মারল তারপর আর এক ভক্তকে। একটা কথা না বলে আমি পারছি না, জানোয়ারটা যেভাবে দমাদম লাথি মেরে চলেছে তাতে তাকে বাহাদুর মানতেই হয়। হ্যাঁ, ভক্ত তো অবশ্যই। এরাই তো এপিডাফন নগরের মার্জিত রুচিসম্পন্ন স্বাধীন নাগরিক।

    জানোয়ারটা কর্কশ অথচ নিচু গলায় বলল–‘খবরদার! কেউ যেন শুনতে না পায়, ঘুণাক্ষরেও কিছু জানতে না পারে।’

    আপনি লক্ষ্য করছেন না, জানোয়ারটার মানুষেরই আকৃতি বিশিষ্ট? আরে ভাই,, চিতাবাঘ আর উটের মিলনে উদ্ভুত বাঘুটটা তো আর সাধারণ কোনো ব্যক্তি নন, তিনিই তো স্বয়ং এন্টিকোয়ার্স এপিফেনিস, সিরিয়ার অধিপতি বিখ্যাত এন্টিকোয়াশ। প্রাচ্যের সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাকারী রাজা! আর এও সত্য, তাঁকে কখনও বা এন্টিকোয়াস এপিসেনেস পাগলা-পাগলা এন্টিয়োকাস এপিমেনেস।

    ‘কেন? পাগলা বলার পিছনে এমনকি যুক্তি রয়েছে?

    ‘যুক্তি? যুক্তি তো অবশ্যই রয়েছে। এর সবচেয়ে বড় যুক্তি হচ্ছে, তাঁর ভালো ভালো গুণগুলো অনুকরণ করার মতো ক্ষমতা সবার মধ্যে থাকে না। আর এও সত্য যে, এখন তিনি পশুর চামড়ায় নিজেকে আচ্ছাদিত করে, আত্মগোপন করে যথাসাধ্য সে বাঘুটটার ভূমিকায়নিখুঁত অভিনয় করতে ব্রতী হয়েছেন।

    ‘কারণ? এমন একটা প্রয়াস চালাব কারণ কী?’

    ‘কারণ একটাই, নরপতি হিসেবেনিজ মর্যাদাকে অধিকতর সুপ্রতিষ্ঠিত করা। আর একটা কথা রাজার বস্তুটা যেমন পেল্লাই, পোশাক পরিচ্ছদও তো তেমনই হতে হবে, ঠিক কিনা? তবে আমরা এমনই মনে করে নিতে পারি, তেমন জরুরি দরকার ছাড়া তিনি কিছুতেই এরূপ পরিগ্রহ করতেন না। মানে আনুষ্ঠানিক প্রয়োজনের কথা বলতে চাচ্ছি।

    ‘আনুষ্ঠানিক প্রয়োজন? অনুষ্ঠানটা কী?

    ‘এক হাজার ইহুদির গর্দান নেওয়া। কী অদ্ভুত মর্যাদার সঙ্গেই রাজা চার পায়ে হাঁটাচলা করছেন। আশা করি, নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছেন, রাজার দুই প্রধান উপপত্নী আর্গেলেস এবং এলিন তার ইয়া লম্বা লেজটাকে কী সুন্দরভাবে উঁচু করে ধরে রেখেছেন। আহা! কী চমৎকার ভঙ্গি! আসুন না, আমরা তাকে হিপোড্রোম পর্যন্ত অনুসরণ করতে করতে যাই।’

    ‘আর?’

    ‘আর সে বিজয়-সংগীতটা এ-মুহূর্তেই শুরু করবেন, সেটা উৎকর্ণ হয়ে মনোযোগ সহকারে শুনি। শোনাই যাক না, তাঁর গানের বক্তব্য কি?

    এপিফানেস ছাড়া রাজার মতো রাজা আর কে-ই বা আছে? তোমরা কেউ কী জানো, বল? সবাস রাজা! না, এফিফানেস ছাড়া আর কেউ নেই, কেউ রাজা নেই। তবে এক কাজ কর, মন্দিরটাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দাও। আর দাও সূর্যটাকেনিভিয়ে।

    উফ! কী চমৎকার! কী চমৎকার সুরেলা গান!

    জনসাধারণ চেঁচিয়ে বলছে রাজা, কবির রাজা, প্রাচ্য দেশের গৌরব, বাঘুট-এর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি, কম কথা!

    শুনতে পাচ্ছেন? শুনতে পাচ্ছেন কী? সবাই সমবেত কণ্ঠে চেঁচিয়ে তাকে আবার গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে। অনুরোধ উপেক্ষা করা তার পক্ষে সম্ভব হলো না। আবার তিনি গান শুরু করেছেন।

    হিপোড্রামে উপস্থিত হওয়ামাত্রই আগামী অলিম্পিকে তার বাঞ্ছিত বিজয়ের জন্য কবির জয়মাল্য দানের মাধ্যমে তাঁকে সম্মানীত করা হবে। আনন্দ-উল্লাসের মধ্যে দিয়ে জয়মাল্য তার গলায় পড়িয়ে দেওয়া হবে।

    ‘ভালো কথা, কিন্তু জুপিটারের দিব্যি! আমাদের পিছনে ওই ভিড়ের মধ্যে কি সব হচ্ছে, বুঝছি না তো?

    ‘উফ! বুঝেছি, বুঝেছি। পিছনের কথা জানতে চাইছেন তো? হ্যাঁ, একেবারে মোক্ষম সময়েই আপনি কথাটা পেয়েছেন।

    ‘তা নাহয় হল, কিন্তু ব্যাপারটা কি, তা-তো বলবেন?

    ‘এক কাজ করা যাক, আগে একটা নিরাপদ স্থানে গিয়ে আত্মগোপন করা যাক।

    ঠিক আছে, এখানেই থাকা যাক। এ ফোয়ারার খিলানটির নিচে গা-ঢাকা দিয়ে থাকা যাক। এবার আগে বলছি, ওখানকার গোলমালের সুত্রপাতের কাহিনী

    সত্যি কথা বলতে কি, আমি যেমনটা চেয়েছিলাম, ঘটেছেও ঠিক একই ঘটনা।

    গর্দানে মানুষের মাথা বসালে এ-বাঘুঁটের আর্বিভাবের ফলে নগরের যাবতীয় গৃহপালিত জন্তু-জানোয়ারদের আত্মসম্মানে ঘা লেগেছে। তারা মর্মাহত হয়েছে। মনে বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটেছে। শেষপর্যন্ত মরিয়া হয়ে তারা বিদ্রোহে মেতেছে। আর। এরকম পরিস্থিতিতে সাধারণত যা ঘটে থাকে, এ-ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বিদ্রোহ দমন করতে মানুষের সব রকম প্রয়াস দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

    বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে কিছু মনুষ্য-সন্তান নির্মমভাবে তাদের পেটে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।

    চার পেয়ে দেশহিতৈষীরা কিন্তু সমস্বরে বলেছে, সদ্য উদ্ভূত হতচ্ছাড়া বাঘুঁটেটাকে চিবিয়ে খেয়ে না ফেলতে পারলে আর শান্তি নেই। স্বস্তি নেই।

    তাই উপায়ান্তর না দেখে কবিদের রাজা মশাই এখন চাচা আপন প্রাণ বাঁচা সিদ্ধান্ত নিয়ে পড়ি কি মরি করে পালিয়ে যাচ্ছেন। আর সংসদরাও পরিস্থিতি খারাপ দেখে প্রাণভয়ে কেটে পড়েছে।

    এক্ষেত্রে উপপত্নীরা কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন এক নজির স্থাপন করেছে। পৃথিবীর আনন্দদাতা নিজেই আজ বিপন্ন কবিদের ম্রাট প্রাচ্যের গৌরব তো এবার আপনাকে ছেড়ে কথা বলবে না, হাড়মাস চিবিয়ে খাবে। অতএব বিষণ্ণ মুখে, সকরুণ দৃষ্টিতে লেজের দিকে ভুলেও যেন তাকাবেন না। ওই লম্বাটে বস্তুটা মাটিতে লুটোপুটি খেলেও অসহায়ভাবে সহ্য করা ছাড়া গতি কিছু নেই। সাহস অবলম্বন করুন, মনকে শক্ত করে বাঁধুন, পা দুটোকেও শক্ত করুন, দৌড়ে হেপোড্রামে চলে যান। ভাবুন, এন্টিয়োকাস এপিসেনিস আপনি নিজেই। আপনিই সর্বজন পরিচিত এন্টিয়োকাস! আপনিই কবিকুল সম্রাট, আর প্রাচ্যদেশের গৌরব–পৃথিবীবাসীর আনন্দদাতাও বটে। আপনিই সর্বজনমান্য সর্বশ্রেষ্ঠ বাঘুট!

    ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে বলছি, কী তীব্র আপনার গতিবেগ! কী অত্যাশ্চর্য ক্ষমতার অধিকারী। রাজা, আরও তীব্র গতিতে পা চালান, দৌড়ে চলুন! বলিহারি! বাহাদুর বটে এপিকোনিস! বাহবা! কী সুন্দর বাঘুট!

    গৌরবান্বিত এন্টিকোয়াস! তিনি দ্রুতদৌড়ে পথ পাড়ি দিয়ে বলেছেন। ক্রমাগত দৌড়াচ্ছেন, লাফাচ্ছেন আর পথ পাড়ি দিচ্ছেন। ঠিক যেন পাখা মেলে উড়ে চলেছেন।

    তীরবেগে হিপোড্রোমের দিকে এগিয়ে চলেছেন।

    তিনি সজোরে লম্বা একটা লাফ দিলেন। আর্তস্বরে চিৎকার করে উঠলেন। ব্যস, এবার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে গেলেন।

    ওহে প্রাচ্যদেশের গৌরব জব্বর বাঁচা বেঁচে গেছেন। আমি হলফ করে বলতে পারি, নাট্যশালায় পৌঁছাতে আপনি যদি আর আধ সেকেন্ড দেরি করতেন, তবে এপিডাফন নগরে সামান্য একটা ভালুক ছানারও হদিস মিলত না যে, আপনার শবদেহ খুবলে খুবলে খায়নি।

    যাক, অনেক হয়েছে, এবার ফিরে যাওয়ার চিন্তা করা দরকার। এখান থেকেই আমরা ফিরে যাই, কেমন?

    আর আমাদের নিয়ে যাওয়ার কারণও যথেষ্টই রয়েছে। কারণ, রাজার অন্তর্ধানকে কেন্দ্র করে একটু পরেই যে ভয়ঙ্কর জয়োল্লাস আরম্ভ হয়ে যাবে আমাদের আধুনিক অসভ্য কান দুটো তা মোটেই বরদাস্ত করতে পারবে না। তা শুনে আমরা চমকে উঠব, আতঙ্কিত হয়ে পড়ব।

    আরে ওই তো! এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ওই যে, শুনুন হৈ হল্লা আরম্ভ হয়ে গেছে! নগর জুড়ে কেমন হাঙ্গামা হজ্জতি আরম্ভ হয়ে গেছে, রীতিমত তুলকালাম কাণ্ড বেঁধে গেছে।

    হ্যাঁ অবশ্যই–এটাই প্রাচ্যের সর্বাধিক জনবহুল নগর।

    নানা স্তরের, নানা বর্ণের, নানা মর্যাদাসম্পন্ন আর নানা বয়সের মানুষের কী অদ্ভুত সমারোহ ঘটেছে। হরেক রং আর হরেক ঢঙের পোশাকে বিচিত্র সমাবেশ ঘটেছে আর নানা ভাষার এমন এক অত্যাশ্চর্য সমাবেশ সচরাচর নজরে পড়ে না। আর জন্তু জানোয়ারদের চমৎকারিত্বের তো তুলনাই মেলে না! আর কত আকৃতি ও প্রকৃতির বাদ্যযন্ত্রই যে দেখা যাচ্ছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। আর দার্শনিক? গণনা করে তাদের সংখ্যা নিরুপণ করা যাবে না। সব মিলে এক অত্যান্ড্রুত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে।

    আরে করছেন কি! এখনও দাঁড়িয়ে ভাবছেন, কি করবেন? আসুন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে সড়ে পড়া যাক। আর এক মুহূর্তও দেরি করলে ফাঁদে আটকে পড়ে যেতে হবে। আসুন, তাড়াতাড়ি এ-নগরের সীমানার বাইরে, নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই।

    ‘সে না হয় যাব। কিন্তু একটু অপেক্ষা করুন।

    ‘অপেক্ষা? কিন্তু কেন, কারণ কী?

    ‘ওই যে, ওটার কথা জানা দরকার। ওটা কি, মানে হিপোডড্রামে দারুণ হৈ হল্লা বেঁধে গেছে মনে হচ্ছে না? ব্যাপার কী, বলুন তো?

    হৈ হল্লা? আরে ধৎ! ওটা কিছু না। ব্যাপারটা খুবই মামুলি। এপিডাফেনের স্বাধীন ও মহান অধিবাসীরা তাদের অধিপতির মহত্ব, জ্ঞান-বুদ্ধি, সত্তা আর দেবত্ব সম্পর্কে পুরোপুরি নিঃসন্দেহ ও প্রীত হয়ে আর তার বর্তমান অতিমানবিক পদচারণা চাক্ষুষ করে তার পুরোপুরি নিঃসন্দেহ হয়েছে যে, দৌড়ের পাল্লায় তিনি যে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন, তা চোখের সামনে দেখে এত মুগ্ধ হয়েছে যে, তারা ভাবছে তার কপালে জয়-তিলক পরিয়ে দেওয়া কর্তব্য, তা ছাড়া আগামী অলিম্পিয়াডে তিনি যখন জয়-তিলকের অধিকারী হবেনই, তবে তো তারা এখনই পরিয়ে দিতে পারে, আপত্তির কি থাকতে পারে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগোল্ডেন লায়ন – উইলবার স্মিথ / জাইলস ক্রিস্টিয়ান
    Next Article লাভ ক্যান্ডি – জাফর বিপি
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }