Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যানিমেল ফার্ম – জর্জ অরওয়েল

    জর্জ অরওয়েল এক পাতা গল্প95 Mins Read0

    অ্যানিমেল ফার্ম – ৬

    ছয়

    সেই বছরটা জন্তুরা ক্রীতদাসের মত খাটল। এত খাটুনি সত্ত্বেও তারা ছিল সুখী। কোনরকম স্বার্থ ত্যাগে কারও কোন দ্বিধা নেই। কারণ, তারা জানে—এই খাটুনি, স্বার্থত্যাগ কেবল তাদের উত্তরসুরিদের স্বার্থেই, অলস-শোষক মানুষের স্বার্থে নয়। পুরো গ্রীষ্ম আর বসন্তকালে জন্তুরা সপ্তাহে ষাট ঘণ্টা কাজ করল। আগস্ট মাসে নেপোলিয়ন ঘোষণা করল, এখন থেকে রোববার বিকেলেও কাজ করতে হবে। এটা অবশ্য স্বেচ্ছাভিত্তিক, বাধ্যতামূলক নয়।

    তবে কাজ না করলে খাবার দেয়া হবে অর্ধেক। এত পরিশ্রম সত্ত্বেও অনেক কাজ বাকি রয়ে গেল।

    গত বছরের চেয়ে এবার ফসলও হলো কম। যে দুটো জমিতে গাজর লাগাবার কথা ছিল, তাতে ঠিক করে চাষ দেয়া হয়নি বলে সময় মত গাজর লাগানো হলো না। সহজেই অনুমান করা গেল, আগামী শীতকালটা খুব কষ্টে কাটবে। উইণ্ডমিল তৈরি করতে গিয়ে অপ্রত্যাশিত সব বাধার সম্মুখীন হতে হলো। খামারের এক পাহাড়ের খাদে প্রচুর চুনাপাথর মিলল। বালু আর সিমেন্টও পাওয়া গেল গুদাম ঘরে। সুতরাং, কাঁচামালের কোন সমস্যা রইল না।

    কিন্তু সমস্যা হলো, চুনা পাথরগুলোকে টুকরো করা নিয়ে, ক্রো-বার দিয়ে ঠুকে ঠুকে ভাঙা ছাড়া আর কোন উপায় দেখা গেল না। কিন্তু জন্তুরা ক্রো-বার ব্যবহার করতে জানে না। এক সপ্তাহ ব্যর্থ চেষ্টার পর একজনের মাথায় বুদ্ধি এল, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ব্যবহার করার। পাথরের টুকরোগুলো আছে পাহাড়ের খাদে। জন্তুরা বড় বড় টুকরোগুলো দড়ি দিয়ে বাঁধল। দড়ির অপর মাথা টেনে ধীরে ধীরে পাথরগুলোকে উঁচুতে তোলা হলো।

    এরপর দড়ি ঢিলে করলেই পাথরগুলো সোজা নিচের পাথরে আছড়ে পড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেত। এরপর টুকরোগুলো দিয়ে কাজ করা কোন সমস্যাই নয়। ঘোড়াটানা গাড়িতে করে চূর্ণ পাথরগুলোকে বয়ে নিয়ে যাওয়া হত। এ কাজে গরু, ঘোড়া, ভেড়া এমনকি প্রয়োজনে শুয়োরেরাও হাত লাগাল। গ্রীষ্মের শেষ দিকে অনেক চূর্ণ পাথর জমা হলো। এরপর শুয়োরদের তত্ত্বাবধানে শুরু হলো উইণ্ডমিল তৈরির কাজ।

    পাথর ভাঙার কাজটা ছিল শ্রমসাধ্য ও ধীরগতি সম্পন্ন। বড়সড় একটা পাথর পাহাড়ের ওপর টেনে তুলতেই প্রায় সারাদিন লেগে যেত। আবার অনেক সময় সেগুলো নিচে পড়ে ভাঙতও না। বক্সারের সাহায্য ছাড়া এসব কাজ সম্ভবই হত না, সে একাই সবার চেয়ে বেশি কাজ করত। যখন ভারী পাথরগুলো টেনে তোলা অসম্ভব মনে হত, জন্তুরা হতাশায় চিৎকার করত; তখন বক্সার সমস্ত শক্তি দিয়ে দড়ি টেনে পাথরগুলো পাহাড়ের চূড়ায় তুলত। একটু একটু করে পাথরগুলো তুলত সে। শ্বাস-প্রশ্বাস হত দ্রুততর। খুরগুলো মাটিতে ডেবে যেত। সারা শরীর চুপচুপে হয়ে যেত ঘামে।

    সবাই তাকে দেখে উৎসাহ পেত। ক্লোভার তাকে প্রায়ই অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে নিষেধ করত। কিন্তু বক্সার শুনত না। ‘আমি আরও পরিশ্রম করব,’ আর ‘কমরেড নেপোলিয়ন সর্বদাই সঠিক’—এই দুটো কথা সব সময় বলত সে। সে মুরগির বাচ্চাদের বলেছিল, তাকে যেন আধঘণ্টার বদলে রোজ পৌনে একঘণ্টা আগে ডেকে দেয়া হয়। এই অতিরিক্ত সময়টাতে সে একাই চলে যেত পাহাড়ের খাদে। টুকরো পাথরগুলো এনে জড়ো করত উইণ্ডমিলের কাছে।

    বেশি পরিশ্রম করতে জন্তুদের খারাপ লাগত না। খাদ্যের পরিমাণ জোনসের সময়ের চেয়ে বেশি না হলেও কম ছিল না। নিজেরা খাদ্য উৎপাদনের সুবিধা হলো, জোনস ও তার লোকদের জন্য কোন খাবার রাখতে হচ্ছে না। ফলে খাবারের পরিমাণ ঠিক করা নিয়ে কোন সমস্যা নেই। সব কাজেই জন্তুদের দক্ষতা বেড়েছে, তাই পরিশ্রম আগের চেয়ে কমেছে। জন্তুরা আর শস্য চুরি করে না, খেতের চারধারে বেড়াও দিতে হয় না।

    ফলে কাজ অনেক কমে গেছে। অবশ্য নতুন নতুন কিছু সমস্যার উদ্ভবও হয়েছে। বছর শেষে অনেক জিনিসের ঘাটতি দেখা দিল। জ্বালানী তেল, বিস্কুট, পেরেক, দড়ি, ঘোড়ার নালের জন্য লোহা-এসবের কোনটাই খামারে তৈরি হয় না। আরও দরকার বীজ, সার এবং উইগুমিলের জন্য নানা রকম যন্ত্রপাতি। কেউ বুঝতে পারল না, এসব কি করে জোগাড় হবে।

    এক রোববার সকালে জন্তুরা বার্নে সমবেত হলো তাদের সাপ্তাহিক কাজের নির্দেশ নেয়ার জন্য। নেপোলিয়ন ঘোষণা করল, সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আশেপাশের খামারগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করবে। অবশ্যই কোন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়, কেবলমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদা মেটাবার জন্য। উইণ্ডমিলের যন্ত্রপাতি কেনার ব্যাপারটাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এজন্য সে মজুদকৃত খড় ও গমের কিছু অংশ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

    যদি প্রয়োজন হয়, তবে মুরগির ডিম বিক্রি করে অতিরিক্ত টাকার চাহিদা মেটানো যেতে পারে। নেপোলিয়ন আশা প্রকাশ করল, উইণ্ডমিলের মত মহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মুরগিরা এই ত্যাগকে স্বাগত জানাবে। এই ঘোষণায় জন্তুরা অস্বস্তি বোধ করল। জোনসের পতনের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল—মানুষের সঙ্গে কোন লেনদেন নয়। তাদের সঙ্গে কোন ব্যবসা নয়। টাকার ব্যবহার নয়। সবারই কথাটা মনে আছে।

    সবাই চুপ থাকলেও, সেই চার শুয়োর মৃদু প্রতিবাদ করল, কিন্তু কুকুরদের ভয়ঙ্কর গর্জনে তাদের প্রতিবাদ চাপা পড়ে গেল। ভেড়াগুলো ভ্যা ভ্যা করে উঠল, ‘চার পেয়েরা বন্ধু, দু’পেয়েরা শত্রু।’ সভার থমথমে ভাব কেটে গেল নেপোলিয়ন তার খুরে শব্দ তুলে ভেড়াদের থামতে বলল। জানাল, এ ব্যাপারে সমস্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়ে গেছে।

    মানুষের সংস্পর্শে আসার প্রয়োজন নেই জন্তুদের। সে একাই সব দায়িত্ব নেবে। একজন আইনজীবী দুই খামারের মধ্যেকার ব্যবসার মধ্যস্থতা করবেন। তিনি প্রতি সোমবার সকালে এসে প্রয়োজনীয় নির্দেশ নিয়ে যাবেন। ‘জন্তু খামার দীর্ঘজীবী হোক,’ বলে নেপোলিয়ন তার বক্তব্য শেষ করল। এর পর ‘বিস্টস অভ ইংল্যাণ্ড’ গেয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হলো।

    এরপর স্কুয়েলার চলল জন্তুদের বোঝাতে। মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না, এমন কোন সিদ্ধান্ত কখনও নেয়া হয়নি। সে জন্তুদের নিশ্চিত করল। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। সম্ভবত দুষ্ট স্নোবলই একথা রটিয়েছে। কিছু সংখ্যক জন্তু এর পরেও সন্দেহ প্রকাশ করল। তখন ধূর্ত স্কুয়েলার প্রশ্ন করল, ‘তোমরা কি নিশ্চিত যে, এরকম কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল? এর কোন প্রমাণ দেখাতে পারবে? এমন কথা কি কোথাও লিখে রাখা হয়েছে?’ কথা সত্য, এ কথা কোথাও লেখা নেই। জন্তুরা ভাবল, আসলে হয়তো তারাই ভুল বুঝেছে।

    চুক্তি হলো, প্রতি সোমবার সকালে আইনজীবী মি. হুয়িম্পার আসবেন। ধূর্ত চেহারার, জুলফিওয়ালা, আইনজীবী তিনি। কিন্তু এটুকু বোঝেন এই খামারের ব্যবসায় মধ্যস্থতাকারীর যথেষ্ট আয়ের সম্ভাবনা আছে। তার আসা-যাওয়া জন্তুরা ভীত চোখে দেখতে লাগল। যদ্দূর সম্ভব তাকে এড়িয়ে চলল সবাই। নেপোলিয়ন একাই মি. হুয়িম্পারের সঙ্গে কাজ কারবার চালাতে লাগল, এ প্রসঙ্গে সে কারও সাথে কথা বলত না।

    মানুষের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রইল আগের মতই। মানুষরা এখন ‘জন্তু খামার’কে কেবল অপছন্দই করে না বরং রীতিমত ঘৃণা করে। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, শিগগিরই জন্তু খামার দেউলিয়া হয়ে যাবে এবং উইণ্ডমিল প্রকল্প কেঁচে যাবে। সরাইখানার আড্ডায় একে অপরকে বোঝাত যে, উইণ্ডমিলটা অবশ্য ভেঙে পড়বে। আর যদি দাঁড়িয়েও থাকে তবে অবশ্যই কোন কাজ করবে না।

    কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও তারা জন্তুদের সমীহ করতে শুরু করল। যত যাই হোক, একদল জন্তু ‘ম্যানর ফার্ম’ চালাচ্ছে। তারা নিজের অজান্তেই ‘ম্যানর ফার্ম’কে ‘জন্তু খামার’ বলে ডাকতে শুরু করল। মি. জোনসের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করল সবাই। মি. জোনসও খামার ফিরে পাবার আশা ছেড়ে দিয়ে অন্য জায়গায় চলে গেলেন। একমাত্র মি. হুয়িম্পার ছাড়া বাইরের জগতের আর কারও সঙ্গে জন্তুজগতের কোন সম্পর্ক রইল না। এরই মাঝে একদিন গুজব শোনা গেল, নেপোলিয়ন শিগগিরই ফক্সউডের মি. পিলকিংটন কিংবা পিঞ্চফিল্ডের মি. ফ্রেডরিকের সঙ্গে ব্যবসায় নামতে যাচ্ছে।

    এসময় শুয়োরেরা আস্তাবল ছেড়ে ফার্ম হাউসে থাকতে শুরু করল। জন্তুদের মনে পড়ল, ফার্ম হাউসে বসবাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা সম্বন্ধে। কিন্তু স্কুয়েলার বোঝাল–জন্তুরা যা ভাবছে, ব্যাপারটা আসলে তা নয়। ফার্ম হাউসে থাকা শুয়োরদের জন্য খুবই দরকারী। তারাই এই খামারটা পরিচালনা করে। তাদের. জন্য দরকার একটা নিরিবিলি পরিবেশ।

    আর একজন নেতার (নেপোলিয়নকে তারা ইতিমধ্যে নেতার মর্যাদা দান করেছে) পক্ষে খোঁয়াড়ে থাকাটা ঠিক মানানসই নয়। জন্তুরা আরও বিরক্ত হলো; যখন জানা গেল যে, শুয়োরেরা রান্না ঘরে খাচ্ছে, ড্রইংরুমকে ব্যবহার করছে অবসর কাটানোর জন্য আর ঘুমাচ্ছে বিছানায়। বক্সার সেই আগের মত—‘কমরেড নেপোলিয়ন সর্বদাই ঠিক’ এই আপ্তবাক্য আউড়ে চুপ করে থাকল।

    কিন্তু ক্লোভার বিছানা ব্যবহারের ওপর সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞার কথা মনে করতে পারল। বার্নের দেয়ালে লেখা নীতিগুলো পড়তে গেল সে। কিন্তু পড়তে না পেরে ডাকল মুরিয়েলকে। ‘মুরিয়েল,’ সে বলল। ‘আমাকে চার নম্বর নিয়মটা একটু পড়ে শোনাবে? এতে বোধহয় জন্তুদের জন্য বিছানা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।’

    মুরিয়েল কষ্ট করে লেখাটা পড়ল। ‘এতে বলা হয়েছে— “কোন জন্তু বিছানায় চাদর বিছিয়ে ঘুমাতে পারবে না”।’

    চার নম্বর নিয়মে কোন ‘চাদরের’ কথা ছিল কি না, মনে করতে পারল না ক্লোভার। কিন্তু লেখা যখন আছে, তখন ভুলটা তারই। এ সময় কয়েকটা কুকুর সহকারে স্কুয়েলার যাচ্ছিল সে পথ দিয়ে। সে পুরো ব্যাপারটার একটা ব্যাখ্যা দিল।

    ‘তোমরা নিশ্চয়ই শুনেছ,’ সে বলল, ‘শুয়োরেরা এখন বিছানায় ঘুমাচ্ছে? কিন্তু কেন ঘুমাবে না? বিছানার ব্যাপারে তো কখনও কোন নিষেধাজ্ঞা ছিল না। বিছানা হলো ঘুমাবার জায়গা। খড়ের গাদাও তো এক রকম বিছানা। নিষেধাজ্ঞা ছিল চাদরের ওপর। চাদর হলো মানুষের আবিষ্কার। বিছানা থেকে আমরা চাদর সরিয়ে ফেলেছি। আমরা ঘুমাই কম্বল বিছিয়ে। তাতেও বেশ আরাম হয় এবং এটুকু আরাম আমাদের প্রাপ্য। কারণ, আমরা মগজ খাটিয়ে সব কাজ করি। বিনিময়ে তোমরা নিশ্চয় এই অধিকারটুকু কেড়ে নেবে না? তোমরা কি চাও, জোনস আবার ফিরে আসুক?’

    জন্তুরা স্কুয়েলারের কথা সমর্থন করল। শুয়োরদের বিছানায় ঘুমানো নিয়ে আপত্তি তুলল না কেউ। আরও ক’দিন পর ঘোষণা করা হলো, শুয়োরেরা অন্য জন্তুদের চেয়ে এক ঘণ্টা পরে ঘুম থেকে উঠবে। এ নিয়েও কোন আপত্তি উঠল না।

    শরৎকাল এল। জন্তুরা অতি পরিশ্রমে ক্লান্ত কিন্তু সুখী। গত বছরটা তাদের বেশ কষ্টে কেটেছে। খড় আর শস্য বিক্রির পর শীতকালের জন্য আর বেশি খাবার রইল না। কিন্তু তাদের সমস্ত কষ্ট ভুলিয়ে রাখল উইণ্ডমিল। উইণ্ডমিলের কাজ প্রায় অর্ধেক শেষ হয়েছে। শস্য কাটার পর আবহাওয়া হয়ে উঠল ঝকঝকে, সুন্দর। জন্তুরা আগের চেয়েও বেশি পরিশ্রম করতে শুরু করল।

    উইণ্ডমিলের ফুটখানেক দেয়াল তোলা হয়েছে। বক্সার রাতের বেলা চাঁদের আলোয় কাজ করতে শুরু করল। অবসর সময়ে জন্তুরা উইণ্ডমিলের চারধারে ঘুরে ঘুরে দেখত। নিজেদের শক্তি, বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গর্ববোধ করত। বলত, এত সুন্দর জিনিস তারা আর কখনও বানাতে পারবে না। শুধু বুড়ো বেনজামিন নিস্পৃহ। মাঝে মাঝে ব্যঙ্গ করে বলে, ‘গাধারা অনেক দিন বাঁচে।’

    নভেম্বর এল এলোমেলো দুরন্ত দক্ষিণ-পশ্চিমা বাতাস নিয়ে। উইওমিলের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হলো। বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে সিমেন্ট মেশানো যাচ্ছে না। এক রাতে এল ঝড়। ভয়ঙ্কর সেই ঝড়ে ফার্ম হাউসের ভিত কেঁপে উঠল, বার্নের ছাদ ধসে গেল। মুরগিরা ভয়ে তারস্বরে চিৎকার করতে লাগল। কারণ, তারা নাকি গুলির শব্দ শুনেছে।

    সকাল বেলা ঝড় থামল, জন্তুরা বাইরে বের হলো। পুরো খামারের অবস্থা লণ্ডভণ্ড। পতাকা ধুলায় লুটাচ্ছে, বাতাস এল্‌ম গাছটাকে মূলোর মত উপড়ে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে মর্মান্তিক দৃশ্য, উইণ্ডমিল ধ্বংস হয়ে গেছে! অকুস্থলে জড়ো হলো সবাই, নেপোলিয়নও আছে তাদের মধ্যে। তাদের এত পরিশ্রমের ফসল মাটিতে মিশে গেছে, হতাশায় কারও গলায় কথা ফুটল না।

    কেবল বিষণ্ণ গলায় ফোঁপাতে লাগল সবাই। নেপোলিয়ন অস্থির পায়ে হেঁটে বেড়াতে লাগল। মাঝে মাঝে নাক দিয়ে ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ করছে। দ্রুত এদিক—সেদিক লেজ নাড়ছে, চিন্তা করছে নেপোলিয়ন—এটা তারই লক্ষণ। হঠাৎ থেমে গেল সে, যেন বুঝে ফেলেছে পুরো ব্যাপারটা। ‘বন্ধুরা, তোমরা জানো এজন্য দায়ী কে? জানো, কোন শত্রু এসে রাতের আঁধারে উইণ্ডমিল গুঁড়িয়ে দিয়ে গেছে? স্নোবল!’ সে গলার স্বর আরও এক ধাপ চড়াল। ‘স্নোবল করেছে এই কাজ। শুধুমাত্র হিংসার বশে আমাদের এক বছরের পরিশ্রমের ফসল একরাতে ধ্বংস করেছে সে। বন্ধুরা, আমি এই মুহূর্তে স্নোবলের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করছি। যে তাকে জীবিত অবস্থায় ধরে আনতে পারবে, তাকে “দ্বিতীয় শ্রেণীর বীর” উপাধিতে ভূষিত করা হবে। আর পুরস্কার দেয়া হবে এক বুশেল আপেল।’

    জন্তুরা শুনে আহত হলো, স্নোবল এত খারাপ কাজ করতে পারে? ঘৃণা মিশ্রিত ক্রোধ প্রকাশ করল সবাই। ভাবতে শুরু করল, কি করে তাকে জীবিত অবস্থায় ধরা যায়! একটু পরেই টিলার আশেপাশে শুয়োরের পায়ের দাগ আবিষ্কৃত হলো। মাত্র কয়েক গজ অনুসরণ করা গেল সেই পদচিহ্ন। অনুমানে বোঝা গেল, পদচিহ্ন মিলিয়ে গেছে ঝোপের ভেতরের এক গর্তের দিকে। নেপোলিয়ন ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে বলল, ‘এগুলো স্নোবলের পায়ের ছাপ। তার ধারণা, স্নোবল ফক্সউড থেকে এসেছিল হামলা চালাতে।

    ‘আর দেরি নয় বন্ধুরা,’ নেপোলিয়ন পদচিহ্নগুলো পরীক্ষা শেষ করে বলল। ‘অনেক কাজ পড়ে আছে। কাল সকালেই আমরা আবার নতুন করে উইণ্ডমিল তৈরির কাজ শুরু করব। পুরো শীতকালটা আমরা কঠোর পরিশ্রম করব। রোদ, বৃষ্টি যাই হোক না কেন। পাজী, হতচ্ছাড়াটাকে দেখিয়ে দেব অত সহজে আমরা হাল ছাড়ছি না। এই কথার কোন হেরফের হবে না। এগিয়ে চলো, বন্ধুরা! উইণ্ডমিল দীর্ঘজীবী হোক! জন্তু খামার দীর্ঘজীবী হোক।’

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Article১৯৮৪ (নাইন্টিন এইটি-ফোর) – জর্জ অরওয়েল
    Next Article শ্যামাঙ্গীর ঈশ্বর সন্ধান – জর্জ বার্নাড শ

    Related Articles

    জর্জ অরওয়েল

    ১৯৮৪ (নাইন্টিন এইটি-ফোর) – জর্জ অরওয়েল

    August 11, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }