Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যানিমেল ফার্ম – জর্জ অরওয়েল

    জর্জ অরওয়েল এক পাতা গল্প95 Mins Read0

    অ্যানিমেল ফার্ম – ৭

    সাত

    শীতকালটা দুর্যোগ বয়ে নিয়ে এল। তুষার ঝড় আর শিলাবৃষ্টি চলল ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত। নতুন করে উইণ্ডমিলের কাজ শুরু করল জন্তুরা। এজন্য কঠোর পরিশ্রম করছে সবাই। তারা জানে, বাইরের পৃথিবীর হিংসুটে মানুষগুলো তাদের কার্যকলাপ উদগ্রীব হয়ে দেখছে। ব্যর্থ হলে তাদের কাছে মুখ দেখানোর জো থাকবে না।

    মানুষের বিশ্বাস, স্নোবল উইণ্ডমিল ধ্বংস করেনি। উইণ্ডমিল ধসেছে ঝড়ে। কারণ, দেয়ালটার গাঁথুনি যথেষ্ট মজবুত ছিল না। জন্তুরা বিশ্বাস করল না সে কথা। তবুও এবার দেয়ালটা আগের আঠারো ইঞ্চির বদলে তিনফুট পুরু করে গাঁথা হলো। তার মানে, আগের চেয়ে দ্বিগুণ পাথরের প্রয়োজন। তুষারে চুনাপাথরের খনি ঢেকে গেল, ফলে কাজ এগোল না। জন্তুরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিল। ঠাণ্ডা ও খিদেয় তারা ক্লান্ত, শুধু বক্সার ও ক্লোভারের কোন ক্লান্তি নেই।

    স্কুয়েলার জন্তুদের উৎসাহ দেবার জন্য মাঝে মাঝে শ্রমের মর্যাদার ওপর—লম্বা-চওড়া বক্তৃতা দিত। কিন্তু জন্তুরা তার বক্তৃতার চেয়ে বরং বক্সার-ক্লোভারকে দেখেই বেশি উৎসাহ পেত। জানুয়ারি মাসে খাদ্যাভাব দেখা দিল। দৈনিক খাদ্যের বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হলো। ঘোষণা করা হলো, এরপর থেকে রেশনে শস্যের বদলে আলু দেয়া হবে। কিন্তু আলুগুলো ভালমত ঢেকে রাখার পরও পচে গেছে, খুব অল্প সংখ্যকই আছে খাওয়ার যোগ্য। ক’দিন পর কেবল খড় ও খৈল ছাড়া আর কিছুই রইল না। সবাই বুঝল, সামনের দিনগুলো কাটাতে হবে অনাহারে।

    খাদ্যাভাবের ব্যাপারটা মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা জরুরী হয়ে পড়ল। এমনিতেই উইণ্ডমিলের ব্যাপারটা নিয়ে নানা রকম কেচ্ছা ছড়িয়েছে। গুজব রটেছে, জন্তুরা দুর্ভিক্ষ আর রোগে মারা যাচ্ছে, নিজেরা মারামারি করছে, স্বজাতির মাংস খাচ্ছে এবং শিশু হত্যার মত জঘন্য কাজ করছে। নেপোলিয়ন বোঝে, আসল অবস্থার কথা জানাজানি হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। সে বুদ্ধি আঁটল, মি. হুয়িম্পারের মাধ্যমে মানুষের ধারণা বদলে দেয়া হবে

    খামারের অন্য জন্তুদের সাথে ভদ্রলোকের কোন সম্পর্ক নেই। একদিন একদল ভেড়া আইনজীবীর সাথে দেখা করে জানাল, খামারে কোন খাদ্যাভাব নেই। নেপোলিয়নের নির্দেশে আগেই খালি ব্যারেলগুলো বালি দিয়ে ভর্তি করে তার ওপর খানিকটা শস্য ছড়িয়ে রাখা হয়েছিল। মি. হুয়িম্পার গুদাম পরিদর্শন করে শস্যের ভরা ব্যারেল দেখে বাইরের পৃথিবীকে জানালেন—জন্তু খামারে খাদ্যের কোন অভাব নেই।

    জানুয়ারির শেষ দিকে খাদ্যাভাব তীব্র হয়ে উঠল। শিগগিরই খাদ্য জোগাড় না হলে জন্তুদের অনাহারে থাকতে হবে, আজকাল আর নেপোলিয়ন জন্তু সমক্ষে আসে না। সময় কাটায় ফার্ম হাউসে। কুকুরগুলো ফার্ম হাউসের চারদিকে ঘুরে ঘুরে পাহারা দেয়। মাঝে মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে যখন বাইরে আসে, তখন তাকে ঘিরে থাকে কুকুরগুলো। এখন আর রোববারের সভায়ও তাকে দেখা যায় না। সবাই কাজের নির্দেশ নেয় স্কুয়েলারের কাছ থেকে।

    এক রোববারে স্কুয়েলার ঘোষণা করল, এখন থেকে মুরগির ডিম বিক্রি করা হবে, নেপোলিয়ন সপ্তাহে চারশো ডিম সরবরাহের চুক্তি করেছে। এই ডিম বিক্রির অর্থে খাদ্য কেনা হবে। ঘোষণা শুনে মুরগিরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ল। একথা তাদের আগেও জানানো হয়েছে। কিন্তু কেউ ভাবেনি, সত্যিই এর প্রয়োজন হবে। মুরগিরা এসময় আসন্ন বসন্ত কালের জন্যে বাচ্চা ফোটাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এসময় ডিম বিক্রি মুরগি হত্যার সামিল। তারা এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করল। তিনটে কালো মুরগির নেতৃত্বে সংগঠিত হলো তারা।

    জোনসের বিতাড়ণের পর এই প্রথম বিদ্রোহ দেখা দিল জন্তু খামারে। মুরগিরা ছাদের ওপর উড়ে উড়ে ডিম পাড়তে শুরু করল। ছাদে পড়ার সাথে সাথে ভেঙে যেত ডিমগুলো। বিদ্রোহী মুরগিদের শায়েস্তা করার জন্য ঘোষণা করল নেপোলিয়ন, এখন থেকে মুরগিদের খাবার বন্ধ। কেউ যদি তাদের খেতে দেয়, তবে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। এই আদেশ যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা, কুকুরেরা সেদিকে লক্ষ রাখল। পাঁচদিন অনাহারে থাকার পর মুরগিরা নতি স্বীকার করল।

    এরই মধ্যে মারা গেল নয়টি মুরগি। মৃতদেহগুলো পুঁতে ফেলা হলো বাগানের ধারে। সবাই জানল, রোগে ভুগে মারা গেছে মুরগিগুলো। মি. হুয়িম্পার এসবের কিছুই জানলেন না। কেবল চুক্তি অনুযায়ী সপ্তাহে চারশো ডিমের চালান গ্রহণ করলেন। এর মধ্যে স্নোবলের আর কোন খবর মেলেনি। শোনা যায়, সে আশপাশের কোন খামারেই আত্মগোপন করে আছে। জন্তু খামারের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।

    নেপোলিয়ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, খামারের প্রায় দশ বছরের পুরানো বীচ্ গাছের গুঁড়িটা বিক্রি করে দেবে। ফ্রেডরিক ও পিলকিংটন, দু’জনেই কেনার আগ্রহ দেখালেন, ফ্রেডরিকের সাথে রফায় পৌঁছালে শোনা যায়, স্নোবল আত্মগোপন করেছে ফক্সউডে। আর পিলকিংটনের সাথে আলাপ করলে জানা যায়, স্নোবল আশ্রয় নিয়েছে পিঞ্চফিল্ড ফার্মে।

    বসন্তের শুরুতে একটা আতঙ্কের খবর ছড়িয়ে পড়ল, স্নোবল রোজ রাতে জন্তু খামারে হানা দেয়! জন্তুদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেল। স্নোবল খাবার চুরি করে, গরুর দুধ দুইয়ে নিয়ে যায়, ডিম ভেঙে রাখে, বীজতলা—এমনকি গাছের ফলও নষ্ট করে। কোথাও কোন গোলমাল হলে নিশ্চিতভাবে ধরে নেয়া হয় এটা স্নোবলের কাজ। যদি জানলার কাঁচ ভাঙে বা নালাগুলো বুজে যায়, তবে বোঝা যায় স্নোবল এসেছিল রাতের বেলা। একদিন গুদাম ঘরের চাবি হারিয়ে গেল। সবাই ধরে নিল, স্নোবল নির্ঘাত কুয়োয় ফেলে দিয়েছে চাবিটা।

    অনেক খোঁজাখুঁজির পর তা পাওয়া গেল বস্তার নিচে। কিন্তু তাতে কারও বিশ্বাস টলল না। শীতকালে বুনো ইঁদুরের উপদ্রব বেড়ে গেল। সবাই বলল, স্নোবলের সাথে ইঁদুরের গোপন যোগাযোগ আছে। এরকম উৎপাত কিছুদিন চলার পর তদন্তের নির্দেশ দিল নেপোলিয়ন। কুকুরের শোভাযাত্রা সহকারে খামার পরিদর্শনে বের হলো সে, অন্যেরা একটু দূরত্ব রেখে তাকে অনুসরণ করল। মাটি শুঁকে শুঁকে স্নোবলের চিহ্ন খোঁজার চেষ্টা করল সবাই। সর্বত্রই খোঁজা হলো—বার্ন, গোয়াল, মুরগির খোঁয়াড়, সবজি খেত কিছুই বাদ গেল না। সব জায়গাতেই স্নোবলের উপস্থিতির নিদর্শন মিলল।

    খানিকক্ষণ পরপরই নেপোলিয়ন চিৎকার করে জানান দিচ্ছিল, ‘স্নোবল এখানে এসেছিল, আমি তার গায়ের গন্ধ পাচ্ছি।’ প্রতিবার স্নোবলের নাম উচ্চারণের সাথে সাথে কুকুরগুলো রক্ত হিম করা গলায় ডেকে উঠল। জন্তুরা ভয়ে অস্থির। মনে হচ্ছিল, স্নোবল বোধহয় বাতাসের সঙ্গে মিশে তাদের ঘিরে আছে। বিকেলে বার্নে সভা ডাকা হলো। স্কুয়েলারের থমথমে মুখ দেখে সবাই বুঝল, কোন খারাপ খবর আছে।

    ‘বন্ধুরা,’ অস্থির ভঙ্গিতে লেজ নাড়ল স্কুয়েলার। ‘একটা ভয়ঙ্কর কথা শোনা গেছে। স্নোবল মানুষের সাথে যোগ দিয়ে খামারটা আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়ার চক্রান্ত করছে। সে এখন ফ্রেডরিকের আশ্রয়ে আছে। আমরা জানতাম, সে বিদ্রোহ করেছিল নিজের উচ্চাশা পূরণের জন্য। আসলে তা নয়, সে শুরু থেকেই জোনসের হয়ে কাজ করত। কিছু সদ্য আবিষ্কৃত গোপন দলিল থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। আর গোশালার যুদ্ধে আমাদের পরাজয়ের দিকে ঠেলে দেবার ব্যাপারে তার ব্যর্থ চেষ্টার কথা তো সবার জানা।

    জন্তুরা একেবারেই বোকা বনে গেল। কথাগুলো তারা বিশ্বাস করতে পারল না। সবারই মনে আছে, গো-শালার যুদ্ধে স্নোবল বীরত্বের সঙ্গে লড়েছে। জোনসের গুলিতে সে আহতও হয়েছিল, কিন্তু তারপরেও পিছু হটেনি। কারও মাথায় এল না, কি করে স্নোবল জোনসের পক্ষ নিয়েছিল! স্বল্পভাষী বক্সারও বোকা হয়ে গেল। পা মুড়ে, চোখ বুজে খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল, ‘আমি এসব বিশ্বাস করি না। স্নোবল যুদ্ধে বীরের মত লড়েছে। আমরা তাকে “প্রথম শ্রেণীর জন্তুবীর” উপাধিতে ভূষিত করেছিলাম, তাই না?’

    ‘পুরো ব্যাপারটা আমরা ভুল বুঝেছিলাম। গোপন দলিল থেকে জানা গেছে, সে বরাবরই আমাদের বিপক্ষে ছিল।’

    ‘যুদ্ধে সে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিল,’ প্রতিবাদ করল বক্সার। ‘সবাই দেখেছে, তার গা থেকে রক্ত ঝরছিল।’

    ‘সেটাও ছিল তার পরিকল্পনার অংশ, চিৎকার করল স্কুয়েলার। জোনসের গুলি তার গায়ে কেবল আঁচড় কেটেছিল। সে নিজে গোপন দলিলে লিখেছে একথা। তোমরা চাইলে দলিলগুলো দেখতে পারো, অবশ্য যদি পড়তে পারো। স্নোবলের পরিকল্পনা ছিল, সঠিক মুহূর্তে শত্রুদের সঙ্কেত দিয়ে নিজের গা বাঁচানো। সফলও হয়েছিল প্রায়, কিন্তু আমাদের নেতা কমরেড নেপোলিয়নের কারণে তার সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। সবার নিশ্চয়ই মনে আছে, জোনসের দলবল উঠানে ঢুকে পড়তেই স্নোবল উল্টোদিকে দৌড় দিয়েছিল এবং অনেকেই তাকে অনুসরণ করেছিল? সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল, মনে হচ্ছিল পরাজয় নিশ্চিত। এমন সময় কমরেড নেপোলিয়ন জোনসের পা কামড়ে ধরে চিৎকার করে উঠেছিলেন, ‘মানুষেরা ধ্বংস হোক’ বলে, তোমাদের তো সে সব মনে থাকার কথা, লাফাতে লাফাতে বলল স্কুয়েলার।

    তার কথা শুনে জন্তুদের মনে হলো, পুরো ঘটনাটা তাদের চোখের সামনে ভাসছে। মনে পড়ল, সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে স্নোবল পালাবার চেষ্টা করেছিল। কেবল বক্সারের বিশ্বাস টলল না। ‘স্নোবল শুরুতে মোটেই বিশ্বাসঘাতকতা করেনি,” সে ঘোষণা করল। ‘গোশালার যুদ্ধে তার ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয় ছিল।

    ‘আমাদের নেতা কমরেড নেপোলিয়ন, ধীরে ধীরে টের পেয়েছেন, স্নোবল শুরু থেকেই আমাদের বিপক্ষে ছিল,’ জানাল স্কুয়েলার।

    ‘হয়তো,’ বলল বক্সার। কমরেড নেপোলিয়ন যখন বলেছেন তখন তাই সত্য।’

    ‘এটাই আসল সত্য।’ সবাই লক্ষ করল, বক্সারের দিকে কুৎসিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্কুয়েলার। চলে যাবার আগে আবেগপূর্ণ গলায় সে বলল, আমি সবাইকে চোখ কান খোলা রাখতে অনুরোধ করছি। আমার ধারণা, আমাদের ভেতর স্নোবলের গুপ্তচর লুকিয়ে আছে।’

    চারদিন পর বার্নে সভা ডাকা হলো। সবাই উপস্থিত হবার পর গলায় মেডেল ঝুলিয়ে কুকুর পরিবেষ্টিত হয়ে এল নেপোলিয়ন (সম্প্রতি নেপোলিয়ন নিজেকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর জন্তুবীর উপাধিতে ভূষিত করেছে)। পুরো সভা স্তব্ধ, নেপোলিয়নের উপস্থিতি প্রমাণ করে—নির্ঘাত খারাপ কিছু ঘটেছে। সবাইকে দেখে নিয়ে দৃঢ় ভঙ্গিতে দাঁড়াল নেপোলিয়ন। নাক দিয়ে অদ্ভুত শব্দ করল, সেই শব্দ শুনে কুকুরগুলো ছুটে গেল শুয়োরদের দিকে। চারটে শুয়োরের কান কামড়ে ধরে টেনে নিয়ে এল নেপোলিয়নের সামনে।

    শুয়োরগুলোর কান থেকে রক্ত বের হতে লাগল দর দর করে। গন্ধে যেন উন্মাদ হয়ে উঠল কুকুরেরা। সবাইকে চমকে দিয়ে এরপর তারা আক্রমণ করল বক্সারকে। আক্রমণ ঠেকাতে খুর দিয়ে একটা কুকুরকে মাটিতে ঠেসে ধরল বক্সার। বাকিগুলো ভয়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেল। কুকুরটাকে মেরে ফেলবে, না ছেড়ে দেবে-নেপোলিয়নের কাছে জানতে চাইল সে। ছেড়ে দেবার হুকুম দিল নেপোলিয়ন। ছাড়া পেয়ে চিৎকার করতে করতে পালিয়ে গেল কুকুরটা।

    ভয়ে কাঁপছিল শুয়োর চারটে, তাদের চোখে মুখে অপরাধী ভাব। এরা হলো সেই শুয়োর, যারা ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার দাবি তুলেছিল। তারা স্বীকার করল, স্নোবলের সাথে তাদের গোপন যোগাযোগ আছে। তার আদেশেই তারা উইণ্ডমিল ধ্বংস করেছে। জন্তুখামার ফ্রেডরিকের হাতে তুলে দেবার পরিকল্পনাও ছিল তাদের। স্বীকারোক্তি শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে কুকুরগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের ওপর, দেহ থেকে শুয়োরগুলোর মস্তক আলাদা করে ফেলল। হিম গলায় জানতে চাইল নেপোলিয়ন, আর কেউ তাদের অপরাধ স্বীকার করতে চায় কিনা।

    ডিম বিদ্রোহের নেতৃত্বদানকারী তিন মুরগি এগিয়ে এল। স্বীকার করল, স্বপ্নে স্নোবল তাদের বিদ্রোহের নির্দেশ দিয়েছিল। শুয়োরদের মত একই পরিণতি হলো তাদেরও। এরপর এগিয়ে এল হাঁসের দল, তারা খাবার চুরি করেছিল। একটা ভেড়া স্বীকার করল, সে খাবার পানিতে প্রস্রাব করেছিল। আরও জানাল, স্নোবলের প্ররোচনায় তারা নেপোলিয়নের অনুগত এক বৃদ্ধ ছাগলকে পুড়িয়ে মেরেছে। একের পর এক অপরাধ স্বীকার ও বিচারের পালা চলল। নেপোলিয়নের পায়ের কাছে জমে উঠল মৃতদেহের স্তূপ। রক্তের গন্ধে ভারী হয়ে উঠল বাতাস

    বিচার শেষ হলো। শুয়োর আর কুকুর ছাড়া সবাই ধীরে ধীরে সভাস্থল ত্যাগ করল। সবার মন বিষণ্ণ-বিধ্বস্ত। জানে না, কিসে তারা বেশি মর্মাহত—জন্তুদের বিশ্বাসঘাতকতায় নাকি তাদের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে! আগের দিনগুলোতেও রক্তপাতে তারা বিষণ্ণ হয়ে উঠত। কিন্তু আজ নিজেদের মাঝে ঘটে যাওয়া রক্তপাতের ঘটনায় তারা আহত হয়েছে অনেক বেশি। জন্তুরা উইণ্ডমিলের গোড়ায় একে অপরের গা ঘেঁষে বসে পড়ল—যেন উষ্ণতার সন্ধান করছে।

    ক্লোভার, বক্সার, মুরিয়েল, বেনজামিন, হাঁস-মুরগি সবাই। কেবল বেড়াল নেই। সভা শুরুর পর থেকে আর তাকে দেখা যায়নি। সবাই স্তব্ধ, কেবল বক্সারই স্বাভাবিক। সে উদ্দেশ্যহীনভাবে এদিক সেদিক তাকাচ্ছিল, লেজ নাড়িয়ে কিছু বলার চেষ্টা করল, ‘আমার কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না। কোথাও কোন গোলমাল আছে। বেশি কাজ করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কাল থেকে আমি পুরো এক ঘণ্টা আগে উঠে কাজ শুরু করব।’

    পরদিন একাই বিশাল দু’খণ্ড চুনাপাথর গুঁড়ো করল সে। রাত নামার আগেই পাথরের টুকরোগুলো এনে জড়ো করল টিলার গোড়ায়। টিলার গোড়া থেকে পুরো খামারটা দেখা যায়। বিস্তৃত ফসলের খেত চলে গেছে বড় রাস্তা পর্যন্ত, ঘেসো মাঠ, পানির চৌবাচ্চা, ফসলের খেত—কচি সবুজ গম জন্মেছে সেখানে, ফার্ম হাউসের লাল টালির ছাদ, চিমনির কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়া। বসন্তের সুন্দর বিকেল, ঘাস আর ঝোপগুলো বিকেলের সোনা রোদে ঝলমল করছে।

    সবিস্ময়ে উপলব্ধি করল জন্তুরা—এই খামারটা তাদের! একেবারেই তাদের নিজস্ব সম্পত্তি, তাদের ভালবাসার পুণ্যভূমি। ক্লোভারের চোখ দুটো জলে ভরে এল। যদি বলতে পারত, তবে সে বলত—এজন্য তারা মানুষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেনি। বুড়ো মেজরের সে রাতের স্বপ্নে এরকম নৃশংস রক্তপাতের কথা ছিল না। তার আঁকা সোনালি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ছিল খিদে ও কষ্টমুক্ত জন্তু জগতের স্বপ্ন।

    যেখানে সবাই সমান, সবাই সাধ্যমত পরিশ্রম করবে, সবলরা দুর্বলদের রক্ষা করবে—সেইরাতে সে যেমন দু’পায়ের মাঝখানে অসহায় হাঁসের বাচ্চাদের জন্য আশ্রয় রচনা করেছিল, তেমনি নিরাপদ হবে তাদের এই জগৎ। তবে এমন কেন হলো? কেন কেউ মনের কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না? হিংস্র কুকুর গর্জায় চারদিকে, বন্ধুদের রক্তাক্ত দেহ মাটিতে লুটায়! তার নিজের মনে তো কখনও অবাধ্যতার চিহ্ন ছিল না। আর কোন কথা বুঝুক বা নাই বুঝুক, একটা কথা সে খুব ভাল বোঝে, কোনভাবেই আর জোনসের যুগে ফেরা চলবে না। যাই ঘটুক না কেন, সে আগের মতই বিশ্বস্ত থাকবে। নেপোলিয়নের সব নির্দেশ মেনে চলবে আর যথাসাধ্য পরিশ্রম করবে।

    এরপর ‘বিস্টস অভ ইংল্যাণ্ড’ গাইতে শুরু করল ক্লোভার। অন্য জন্তুরাও গলা মেলাল তার সঙ্গে। নিচু স্বরে, বিষণ্ন সুরে—এই সুরে গানটা তারা আর কখনও গায়নি। গান গাওয়া শেষ হতেই তিনটে কুকুরসহ হাজির হলো স্কুয়েলার। অত্যন্ত জরুরী একটা কথা বলতে এসেছে সে। কমরেড নেপোলিয়ন এক বিশেষ আদেশ জারি করেছেন, তা হলো, আজ থেকে ‘বিস্টস অভ ইংল্যাণ্ড’ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

    জন্তুরা স্তব্ধ হয়ে গেল। ‘কেন?’ আর্তনাদ করে উঠল মুরিয়েল।

    ‘এ গানের আর কোন প্রয়োজন নেই,’ কঠোর গলায় বলল স্কুয়েলার। ‘এটা ছিল বিদ্রোহের গান, বিদ্রোহ শেষ হয়েছে বহুদিন আগে। বিশ্বাসঘাতকরাও নির্মূল হয়েছে। ভেতরের বাইরের সব শত্রুই শেষ। এ গান আমাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়েছিল, সেই স্বপ্ন আজ সফল। তাই এই গানের আর কোন প্রয়োজন নেই।

    ভয় পাওয়া সত্ত্বেও কেউ কেউ প্রতিবাদ করতে চেয়েছিল। কিন্তু স্কুয়েলারের বক্তব্য শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে ভেড়াগুলো ভ্যা ভ্যা করে উঠল—‘চারপেয়েরা বন্ধু, দু’পেয়েরা শত্রু।’ বেশ কিছুক্ষণ চলল তাদের চিৎকার। ততক্ষণে জন্তুরা প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।

    ‘বিস্টস অভ ইংল্যাণ্ড’ এরপর আর কখনও শোনা যায়নি। প্রতি রোববার এর বদলে শুয়োর কবি মিনিমাস রচিত একটা গান গাওয়া হত। গানটা এরকম:

    ‘অ্যানিমেল ফার্ম, অ্যানিমেল ফার্ম
    নেভার থ্রো মি শ্যাল্ট দাউ কাম টু হার্ম!’

    কিন্তু কেন যেন এই গান ‘বিস্টস অভ ইংল্যাণ্ড’-এর মত জন্তুদের হৃদয়ে ঝঙ্কার তোলে না।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Article১৯৮৪ (নাইন্টিন এইটি-ফোর) – জর্জ অরওয়েল
    Next Article শ্যামাঙ্গীর ঈশ্বর সন্ধান – জর্জ বার্নাড শ

    Related Articles

    জর্জ অরওয়েল

    ১৯৮৪ (নাইন্টিন এইটি-ফোর) – জর্জ অরওয়েল

    August 11, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }