Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যানিমেল ফার্ম – জর্জ অরওয়েল

    জর্জ অরওয়েল এক পাতা গল্প95 Mins Read0

    অ্যানিমেল ফার্ম – ৯

    নয়

    বক্সারের পা ভাল হতে অনেক দিন লাগল। বিজয় উৎসবের পরপরই আবার নতুন করে উইণ্ডমিল তৈরির কাজে হাত দিল জন্তুরা। বক্সার আহত হলেও বিশ্রাম নিতে অস্বীকার করল। পায়ের ব্যথাটা লুকিয়ে রাখা তার কাছে এখন আত্মসম্মানের ব্যাপার। কেবল গোপনে ক্লোভারকে জানাল সে, তার খুব কষ্ট হচ্ছে। ক্লোভার ঘাস, লতা-পাতা চিবিয়ে তার ক্ষতস্থানে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দিল। বেনজামিন পরামর্শ দিল কিছু দিন বিশ্রাম নেবার। ‘ঘোড়ার ফুসফুসে অতিরিক্ত খাটুনি সহ্য হয় না,’ বার বার করে বলল সে। কিন্তু বক্সার কারও কথায় কান দেয় না। তার একটাই আশা, মৃত্যুর আগে নতুন উইণ্ডমিলটা দেখে যাওয়া।

    জন্তুদের অবসর গ্রহণের নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। অবসর গ্রহণের বয়স ঘোড়া ও শুয়োরের ক্ষেত্রে বারো বছর, গরুর চোদ্দ, কুকুরের নয়, ভেড়ার সাত আর হাঁস-মুরগির পাঁচ বছর। বুড়োদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা রাখা হলো। যদিও কোন জন্তু এখন অবসরগ্রহণ করেনি, তবুও ব্যাপারটা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হলো। বাগানের পেছনের মাঠে বার্লি চাষ করা হচ্ছিল, সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, প্রয়োজন মত সেটাকে অবসরপ্রাপ্তদের চারণভূমিতে রূপান্তরিত করা হবে। একটা ঘোড়ার পেনশনের পরিমাণ হবে রোজ পাঁচ পাউণ্ড শস্য, শীতকালে পনেরো পাউণ্ড খড়। ছুটির দিনে একটা আপেল বা গাজর। নিয়ম অনুসারে সবার আগে অবসর গ্রহণ করবে বক্সার। আগামী গ্রীষ্মে তার বারো বছর পূর্ণ হবে।

    খামারের জীবন এখন অনেক কঠিন। গতবারের মতই তীব্র শীত পড়েছে, খাদ্য সমস্যা প্রকট। রেশনের পরিমাণ আরও একবার কমানো হয়েছে, শুধু শুয়োর ও কুকুরের বরাদ্দ বাদে। স্কুয়েলারের মতে সবার জন্য একই পরিমাণ রেশন ‘জন্তু মতবাদ’-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তার তথ্যানুযায়ী, খামারে কোন খাদ্যাভাব নেই। স্বল্প সময়ের জন্য কেবল রেশন ব্যবস্থায় একটু হেরফের করা হয়েছে। খামারে সার্বিক পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে অনেক উন্নত।

    মাঝে মাঝে জন্তুদের পত্রিকা পড়ে শোনাত সে ‘—আগের চেয়ে এবারের ফলন অনেক বেশি, এমনকি শালগমগুলোও আগের চেয়ে অনেক বড় আকারের হয়েছে। জন্তুদের এখন আগের চেয়ে অনেক কম কাজ করতে হয়, তাদের গড় আয়ু বেড়েছে, সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। শোবার জন্য প্রচুর খড় মেলে আর পোকা মাকড়ের উপদ্রবও অনেক কমেছে।’ জন্তুরা নির্দ্বিধায় স্কুয়েলারের সব কথা বিশ্বাস করে। সত্যি বলতে কি, জোনসের সময়ের কথা তাদের তেমন মনে নেই তাদের মনে হয় জীবন সব সময়ই এমন কষ্টের ছিল।

    খিদে আর শীতে সব সময়ই তারা কাহিল থাকে। কেবল ঘুমাবার সময়টুকু ছাড়া সব সময়ই কাজ করতে হয়। কিন্তু সন্দেহ নেই, আগের দিনগুলো এর চেয়েও কষ্টের ছিল। তখন তারা ছিল পরাধীন আর এখন সবাই স্বাধীন। এটাই সবচেয়ে আনন্দের কথা। স্কুয়েলার জন্তুদের বার বার করে এসব বোঝাত।

    খাবার মুখের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। শরৎকালে বেশ ক’টা শুয়োর বাচ্চা দিয়েছে। মোট একত্রিশটা বাচ্চা, বিচিত্র তাদের গায়ের রঙ। ঠিক করা হলো, এরপর শুয়োরের বাচ্চাদের জন্য স্কুল তৈরি করা হবে। ততদিন পর্যন্ত নেপোলিয়ন নিজে তাদের বাগানে বসিয়ে পড়তে শেখাবে। অন্যান্য জন্তুদের সাথে শুয়োরের বাচ্চাদের মিশতে নিষেধ করা হলো। নতুন নিয়ম করা হলো, শুয়োরের সঙ্গে দেখা হলে অন্য জন্তুরা রাস্তা ছেড়ে সরে দাঁড়াবে। শুয়োরদের রোববারে লেজে সবুজ ফিতে পরারও নিয়ম চালু হলো।

    আগাগোড়া এ বছরটা ছিল সাফল্যের বছর। যদিও টাকার অভাব ছিল যথেষ্ট। স্কুল তৈরির জন্য ইঁট, কাঠ, বালু আর উইওমিলের যন্ত্রপাতির জন্য প্রচুর টাকা প্রয়োজন। তেল, মোমবাতি, নেপোলিয়নের জন্য চিনি (অন্য শুয়োরদের চিনি খাওয়া নিষেধ। কারণ চিনি খেলে মোটা হবার সম্ভাবনা আছে), যন্ত্রপাতি, তার, পেরেক, লোহা, কয়লা আর কুকুরের বিস্কুটও কেনা দরকার। অতিরিক্ত টাকার প্রয়োজনে কিছু খড় ও আলু বিক্রি করা হলো। সপ্তাহে চারশো’র পরিবর্তে ছয়শো ডিম চালানের ব্যবস্থা নেয়া হলো। ফলে এবছর মুরগিরা খুব কমসংখ্যক বাচ্চা ফোটাতে পারল।

    ডিসেম্বরে আরও একবার রেশনের পরিমাণ কমানো হলো। ফেব্রুয়ারিতে আবারও একবার। তেলের খরচ বাঁচাবার জন্য রাতের বেলা বাতি জ্বালানো নিষিদ্ধ করা হলো। সবাই কৃচ্ছতা সাধন করলেও শুয়োরদের আরাম আয়েশের কোন কমতি রইল না। দিনে দিনে তাদের ওজন বাড়তেই লাগল। ফেব্রুয়ারির এক বিকেলবেলা বাতাসে ভেসে এল উষ্ণ, লোভনীয় খাদ্যের সুগন্ধ, এমন লোভনীয় খাদ্যের সুঘ্রাণ জন্তুরা বহুদিন পায়নি। ভাবল, কোন উপলক্ষে হয়তো আজ বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।

    গন্ধটা অনাহার ক্লিষ্ট জন্তুদের আরও ক্ষুধার্ত করে তুলল। কিন্তু খাবার পাত্রে কোন সুস্বাদু, সুগন্ধি খাদ্যের দেখা মিলল না। পরের রোববার জন্তুদের জানানো হলো, বার্লি কেবলমাত্র শুয়োরদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। শুয়োরদের রোজ এক পাইণ্ট করে বার্লি দেয়া হয় আর নেপোলিয়ন পায় আধ গ্যালন। তাকে বার্লি পরিবেশন করা হয় দামী সুপের বাটিতে করে।

    জন্তুদের কখনও কখনও মনে হয়, আগের চেয়ে বর্তমান জীবনটাই বেশি কষ্টের। আবার ভাবে, বোধহয় সময়টাই কষ্টের। কিন্তু সব সত্ত্বেও তারা সুখী। কারণ, তারা এখন অনেক সম্মানজনক অবস্থানে আছে। তাছাড়া আনন্দের অনেক আয়োজন, আগের চেয়ে অনেক বেশি গান হয়, বক্তৃতা হয়, শোভাযাত্রা হয়। এরই মধ্যে নেপোলিয়ন সপ্তাহে একদিন আনন্দ শোভাযাত্রার কথা ঘোষণা করল।

    সে সময় খামারের সব কাজ বন্ধ থাকবে। জন্তুরা লাইন ধরে মার্চ করবে, সবার আগে থাকবে শুয়োর। তারপর ঘোড়া, গরু, ভেড়া এবং সবশেষে হাঁস—মুরগিরা। কুকুরেরা থাকবে শোভাযাত্রার দু’ধারে। মার্চের নেতৃত্ব দেবে নেপোলিয়ন স্বয়ং। বক্সার আর ক্লোভার সবুজ রঙের শিং-খুর আঁকা একটা ব্যানার বইবে, যাতে লেখা থাকবে কমরেড নেপোলিয়ন দীর্ঘজীবী হোন।

    এই নতুন শোভাযাত্রা জন্তুদের মধ্যে খানিকটা উদ্দীপনার সৃষ্টি করল। শোভাযাত্রায় নেপোলিয়নের সম্মানে রচিত কবিতা আবৃত্তি করা হলো, স্কুয়েলার শস্য ও খামারের উন্নয়ন সম্পর্কিত দীর্ঘ বক্তব্য রাখল। ভেড়ারা অচিরেই এই অনুষ্ঠানের মহাভক্ত হয়ে উঠল। কারও কারও মনে হলো, এটা নিছক বাড়াবাড়ি, তারা এর প্রতিবাদ করতে চাইল। শুয়োর-কুকুরেরা আশপাশে না থাকলে মৃদু প্রতিবাদ করতও। কিন্তু তা হত কেবলই সময়ের অপচয়, তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যে আরও খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা।

    নেপোলিয়নভক্ত ভেড়াগুলো প্রতিবাদকারীকে ‘চার পেয়েরা বন্ধু, দু’পেয়েরা শত্রু’ বলে চিৎকার করে থামিয়ে দিত। বেশিরভাগ জন্তু এই শোভাযাত্রা পছন্দ করল। গান, শোভাযাত্রা, স্কুয়েলারের লম্বা ফর্দ, তোপধ্বনি, মোরগের ডাক খানিকক্ষণের জন্য হলেও তাদের খিদে ভুলিয়ে রাখল।

    এপ্রিল মাসে জন্তু খামারকে ‘প্রজাতন্ত্র’ ঘোষণা করা হলো। ফলে শিগগিরই একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রয়োজন দেখা দিল। প্রার্থী ছিল একজনই, নেপোলিয়ন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সে জন্তু খামার প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলো। একই দিনে স্নোবলের বিশ্বাসঘাতকতার কিছু নতুন দলিল পাওয়া গেল। এতে নিশ্চিত বোঝা গেল যে, স্নোবল কখনোই জন্তুদের পক্ষে ছিল না। গো—শালার যুদ্ধে সে সরাসরি জোনসের পক্ষে লড়েছে। যুদ্ধের সময় তার স্লোগান ছিল ‘মানবতার জয় হোক।’ কারও কারও মনে পড়ল, স্নোবলের পিঠ জখম হয়েছিল নেপোলিয়নের কামড়ে।

    পা ভাল হবার পর বক্সার আগের চেয়েও বেশি পরিশ্রম করতে শুরু করল। অবশ্য সব জন্তুই সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খাটে। নিয়মিত কাজ ছাড়াও আছে উইণ্ডমিলের কাজ। তার ওপর স্কুল বানানোর কাজও শুরু হলো মার্চ মাসে। অপর্যাপ্ত খাবার আর অতিরিক্ত খাটুনি অনেক সময় জন্তুদের অসহ্য মনে হত। কেবল বক্সারের কোন ক্লান্তি নেই। কথায় বা কাজে কখনও বোঝা যেত না তার বয়েস হয়েছে—শরীরে আগের মত জোর নেই। তার চোখ দুটো উজ্জ্বলতা হারিয়েছে, দু’কাঁধ ঝুলে পড়েছে।

    সবাই বলাবলি করে, বসন্তে নতুন ঘাস গজাবার আগেই বক্সার মারা যাবে বসন্ত এল, কিন্তু বক্সারের কোন পরিবর্তন হলো না। মাঝে মাঝে পাথর ভাঙতে গিয়ে খুব ক্লান্ত হয়ে গেলে মাটিতে ঠেস দিয়ে একটু জিরিয়ে নেয় সে, আর বিড় বিড় করে নিজেকে শোনায় ‘আমি আরও বেশি কাজ করব।’ ক্লোভার-বেনজামিন তাকে স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখতে বলে কিন্তু বক্সার কারও কথা কানে নেয় না। বারোতম জন্মদিন পেরিয়ে গেল, তবু সে অবসর নিল না।

    একদিন বিকেল বেলা শোনা গেল বক্সারের কি যেন হয়েছে। সে একাই অনেকগুলো পাথর বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল উইণ্ডমিলে। কবুতর খবর নিয়ে এল, ‘বক্সার হাঁটু ভেঙে পড়ে গেছে আর উঠতে পারছে না।’ খবরটা শোনামাত্র খামারের প্রায় অর্ধেক জন্তু উইণ্ডমিলের গোড়ায় জমা হলো। বক্সার মাটিতে শুয়ে আছে। ঘাড়ে ব্যথা পেয়েছে সে, মাথা তুলতে পারছে না। তার সারা শরীর ভিজে গেছে ঘামে, চোখ জ্বল জ্বল করছে। কষ বেয়ে রক্ত পড়ছে। পাশে হাঁটু গেড়ে বসা ক্লোভার ব্যাকুল হয়ে বারবার প্রশ্ন করছে, ‘বক্সার! কি হয়েছে তোমার?’

    ‘আমার ফুসফুস,’ দুর্বল গলায় জবাব দিল বক্সার, ‘অবশ্য তেমন কষ্ট হচ্ছে না। আমার ধারণা, আমাকে ছাড়াই তোমরা উইণ্ডমিলটা শেষ করতে পারবে এবার আমি অবসর নিতে চাই। বেনজামিনেরও বয়স হয়েছে, সে আমার সঙ্গে অবসর নিলে আমি একজন সঙ্গী পাই।’

    ‘কেউ একজন সাহায্য করো ওকে,’ আর্তনাদ করে উঠল ক্লোভার ‘স্কুয়েলারকে খবর দাও।’

    সবাই ছুটল স্কুয়েলারকে খবর দিতে। ক্লোভার আর বেনজামিন বক্সারের কাছে বসে তার গায়ের মাছি তাড়াতে লাগল। স্কুয়েলার নেপোলিয়নের কাছ থেকে সহানুভূতিসূচক বার্তা নিয়ে এল। কমরেড নেপোলিয়ন তার একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ও পরিশ্রমী নাগরিকের অসুস্থতায় গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। তিনি অবিলম্বে বক্সারকে সুচিকিৎসার জন্য উইলিংডন পশু হাসপাতালে প্রেরণের সিদ্ধান্ত ও নিয়েছেন। এ সিদ্ধান্তে জন্তুরা অস্বস্তি বোধ করল। মলি ও স্নোবল ছাড়া আর কেউ কখনও খামারের বাইরে যায়নি।

    একজন অসুস্থ কমরেডকে মানুষের তত্ত্বাবধানে ছেড়ে দেয়া হবে—কথাটা কারও ভাল লাগল না। স্কুয়েলার তাদের বোঝাল, এই অবস্থায় একজন পশু চিকিৎসকই বক্সারের সবচেয়ে বেশি উপকারে আসবে। আধঘণ্টা পর একটু সুস্থ বোধ করায় বক্সার স্টলে ফিরল। ক্লোভার আর বেনজামিন তার জন্যে নরম খড়ের বিছানা তৈরি করে দিল।

    পুরো দু’দিন বক্সার স্টলে শুয়ে বিশ্রাম নিল। বাথরূমের তাকে খুঁজে পাওয়া এক বোতল গোলাপী রঙের ওষুধ খেতে দিল তাকে শুয়োরেরা। ক্লোভার নিয়মমত দিনে দু’বার এসে ওষুধটা খাইয়ে যেত। বিকেলে তারা একসঙ্গে গল্প করত, বেনজামিন লেজ দিয়ে বক্সারের গায়ের মাছি তাড়াত। বক্সার নিজের সম্বন্ধে যথেষ্ট আশাবাদী। তার ধারণা, সে শিগগিরই সেরে উঠবে, কমপক্ষে আরও তিন বছর বাঁচবে। অবসরের দিনগুলোতে বেনজামিনের সঙ্গে মাঠে চরে বেড়াবে। জীবনে প্রথমবারের মত অবসর নিয়ে ভাবার অবকাশ পেল সে। তার ইচ্ছে, বাকি দিনগুলো পড়াশুনা করে কাটাবে, বর্ণমালার সবগুলো অক্ষর শিখে ফেলার প্রচণ্ড ইচ্ছে তার।

    একদিন দুপুরবেলা গাড়ি এল বক্সারকে নিয়ে যেতে। জন্তুরা তখন শালগম খেতের আগাছা পরিষ্কার করছে। বেনজামিনকে ছুটে আসতে দেখে অবাক হয়ে গেল সবাই, চিৎকার করছিল সে—জীবনে এই প্রথম জন্তুরা তাকে উত্তেজিত হতে দেখল। শিগগির এসো সবাই! ওরা বক্সারকে নিয়ে যাচ্ছে।’ বেনজামিনের কথা শুনে জন্তুরা শুয়োরদের অনুমতির অপেক্ষা না করে কাজ ফেলে ছুটল। উঠানে বড়সড় বাক্স নিয়ে একটা ঘোড়ার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। চালক একজন বৌলার হ্যাট পরা ধূর্ত চেহারার লোক। সবাই দেখল, বক্সারের স্টল শূন্য। তুলে ফেলা হয়েছে তাকে গাড়িতে। নিথর শুয়ে আছে বিশালদেহী বক্সার। মাথাটা কাত হয়ে আছে একদিকে। খোলা নিষ্প্রভ চোখ জোড়া চেয়ে আছে তার আকাশে।

    গাড়ির চারধারে জড়ো হলো জন্তুরা। বিদায় বক্সার’ তারা বলল, “বিদায়।’ ‘বোকার দল,’ মাটিতে পা ঠুকে বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল বেনজামিন, ‘বোকার দল! গাড়ির গায়ে কি লেখা আছে দেখতে পাচ্ছ না?’

    জন্তুরা চুপ করল। মুরিয়েল গাড়ির গায়ের লেখাগুলো বানান করে পড়তে শুরু করল। তাকে ঠেলে সরিয়ে জোরে জোরে পড়ল বেনজামিন লেখাটা ‘আলফ্রেড সিমগুস্, ঘোড়ার কসাই ও আঠা সরবরাহকারী, উইলিংডন।’

    ‘তার মানে?’ প্রশ্ন করল একটি হতভম্ব কণ্ঠ। কে, ঠিক বোঝা গেল না।

    ‘এখনও বুঝতে পারছ না? ওরা বক্সারকে কসাইখানায় নিয়ে যাচ্ছে।’

    আর্তনাদ করে উঠল জন্তুরা। এসময় গাড়ি চালক লোকটা চাবুক হাঁকাল, গাড়ি ধীরে ধীরে চলতে শুরু করল। চিৎকার করে গাড়ির পিছু নিল সবাই। ক্লোভার রাস্তার মাঝখানে দাঁড়াল, গাড়ির গতি ধীরে ধীরে বাড়ছে। ক্লোভার চিৎকার করল, ‘বক্সার! বক্সার!!’ এসময় গাড়ির ছোট্ট জানালায় বক্সারের সাদা ডোরাকাটা নাকটা দেখা গেল পলকের জন্য।

    ‘বক্সার!’ ক্লোভার চিৎকার করছে, ‘বক্সার! বেরিয়ে এসো, ওরা তোমাকে হত্যা করতে নিয়ে যাচ্ছে।’

    সবাই চিৎকার করছে, ‘বেরিয়ে এসো, বক্সার! বেরিয়ে এসো!’ কিন্তু গাড়ি ইতিমধ্যে পূর্ণগতিতে চলতে শুরু করেছে। বক্সার তাদের কথা শুনতে পেয়েছে কিনা বোঝা গেল না। জানালায় তাকে আর দেখা গেল না। কেবল গাড়ির গায়ে তার লাথির আওয়াজ শোনা গেল, সে বেরুবার চেষ্টা করছে। এক সময় বক্সারের দু’একটা লাথিই এই গাড়ি ভাঙার জন্য যথেষ্ট ছিল।

    কিন্তু হায়! সেই দিন আর নেই। বয়স আর অতিরিক্ত খাটুনি তার সব শক্তি কেড়ে নিয়েছে। জন্তুরা মরিয়া হয়ে গাড়ি টানা ঘোড়াদের কাছে মিনতি করল, ‘কমরেড! কমরেড! নিজের ভাইকে তোমরা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ো না।’

    কিন্তু বোকা অবোধ জন্তুরা সেকথা বুঝল না। কান নাড়িয়ে এগিয়ে চলল নিজ গন্তব্যে। খানিকপর সদর গেট বন্ধ করার বুদ্ধি দিল একজন। কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেছে। ততক্ষণে সদর গেট পেরিয়ে বড় রাস্তায় পৌঁছে গেছে গাড়ি। এরপর বক্সারকে আর কখনও দেখেনি কেউ।

    তিনদিন পর জানা গেল, বক্সার উইলিংডনের পশু হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ আর সেবার কোন অভাব হয়নি সেখানে। দুঃসংবাদটা স্কুয়েলার সবাইকে জানাল। সে নিজে, শেষ মুহূর্তে মৃত্যুপথগামী বক্সারের পাশে ছিল।

    ‘বক্সারের মৃত্যুটা দুঃখজনক,’ বলল স্কুয়েলার, খুর দিয়ে চোখের পানি মুছল। ‘শেষের দিকে তার কথা বলার শক্তি ছিল না। কোনমতে ফিস্ ফিস্ করে বলছিল, উইণ্ডমিলটা দেখে যেতে পারল না বলে তার আত্মা শান্তি পাবে না। “এগিয়ে যাও বন্ধুরা”—সে বলেছিল— “বিদ্রোহের কসম, তোমরা থেমে পোড়ো না। জন্তুখামার দীর্ঘজীবী হোক। কমরেড নেপোলিয়ন দীর্ঘজীবী হোন। কমরেড নেপোলিয়ন সর্বদাই সঠিক।” বন্ধুরা, এই ছিল তার শেষ কথা।’

    খানিকক্ষণ চুপচাপ থাকল স্কুয়েলার। তারপর তার আচরণ একটু বদলে গেল। কুতকুতে চোখে সন্দেহ নিয়ে এদিক সেদিক তাকাল। তারপর স্থির হয়ে বলল, সে জানতে পেরেছে যে বক্সারের ব্যাপারটা নিয়ে একটা বাজে কথা ছড়িয়েছে জন্তুদের মধ্যে। কেউ কেউ বলছে, যে গাড়িতে করে বক্সারকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা নাকি কসাইয়ের গাড়ি; তারা নাকি গাড়ির গায়ে কসাই-এর নাম লেখা দেখেছে।

    স্কুয়েলারের বিশ্বাস, এরকম বাজে কথায় কান দেবার মত বোকা নয় কেউ নিশ্চয়ই। সে লেজ নাড়িয়ে এদিক সেদিক চাইল। ‘তোমাদের নেতা, কমরেড নেপোলিয়ন এতটা হৃদয়হীন নন। পুরো ব্যাপারটার একটা সরল ব্যাখ্যা আছে। ঘটনাটা হলো, ওই গাড়িটা আগে ছিল এক কসাইয়ের সম্পত্তি। সম্প্রতি একজন পশু চিকিৎসক তা কিনে নিয়েছেন, কিন্তু গাড়িটা আর নতুন করে রঙ করাননি। তাতেই সবাই ব্যাপারটা ভুল বুঝেছে।’

    এ কথায় জন্তুরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। এরপর স্কুয়েলার বক্সারের হাসপাতালে থাকাকালীন সময়ের বর্ণনা দিল। হাসপাতালে সে যেসব দামী দামী ওষুধ খেয়েছে, তার দাম দিতে নেপোলিয়ন কোনরকম কার্পণ্য করেনি। জন্তুদের সব সন্দেহ ঘুচে গেল। বক্সার মৃত্যুর আগে উপযুক্ত পরিচর্যা পেয়েছে জেনে জন্তুদের শোক অনেকাংশে লাঘব হলো।

    পরের রোববারের সভায় নেপোলিয়ন স্বয়ং উপস্থিত হলো। প্রথমে বক্সারের সম্মানে ছোট্ট একটা বক্তব্য রাখল সে। জানাল, মৃত কমরেডের দেহ এখন আর খামারে এনে কবর দেয়া সম্ভব নয়। তারচেয়ে বরং বাগানের সমস্ত ফুল দিয়ে গাঁথা বিশাল এক পুষ্পস্তবক উইলিংডনে তার কবরের ওপর রেখে আসা হবে। বক্সারের সম্মানে ভোজের আয়োজন করা হলো। নেপোলিয়ন সেখানে তার বক্তব্য শেষ করল বক্সারের দুটি কথা দিয়ে—’আমি আরও বেশি পরিশ্রম করব।’ আর “কমরেড নেপোলিয়ন সর্বদাই সঠিক। নেপোলিয়ন আশা করে সবাই এ দুটো কথা মনে রাখবে। পরদিন বক্সারের কবরে দেবার জন্য ফুলের বিশাল স্তবক তৈরি, করে শুয়োরেরা উইলিংডন নিয়ে গেল।

    ভোজের আয়োজনের জন্য ভাড়া করা গাড়ি উইলিংডন থেকে বড়সড় একটা কাঠের বাক্স পৌঁছে দিয়ে গেল। সে রাতে ফার্ম হাউস থেকে ভেসে এল গানের সুর, আর সেই সাথে ভয়ানক ঝগড়া। এরকম চলল রাত এগারোটা পর্যন্ত। এক সময় শোনা গেল কাঁচ ভাঙার শব্দ, এরপর সব নিস্তব্ধ। পরদিন দুপুরের আগে কেউ ফার্ম হাউস থেকে বের হলো না। পরে জানা গেল—শুয়োরেরা কি করে যেন এক বাক্স হুইস্কি কেনার টাকা জোগাড় করেছে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Article১৯৮৪ (নাইন্টিন এইটি-ফোর) – জর্জ অরওয়েল
    Next Article শ্যামাঙ্গীর ঈশ্বর সন্ধান – জর্জ বার্নাড শ

    Related Articles

    জর্জ অরওয়েল

    ১৯৮৪ (নাইন্টিন এইটি-ফোর) – জর্জ অরওয়েল

    August 11, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }