Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ্যাম্পায়ার অব দ্য মোঘল : রাইডারস ফ্রম দ্য নর্থ – অ্যালেক্স রাদারফোর্ড

    লেখক এক পাতা গল্প802 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২.৮ সৌভাগ্যের সূত্রপাত

    ১৪. সৌভাগ্যের সূত্রপাত

    আমাদের রক্তের শত্রু বর্বর উজবেকদের প্রতি তোমাদের ঘৃণা এবং আমার প্রতি আনুগত্যের কারণে তোমরা বিপদ আর কষ্টকে আপন করে নিয়ে নিজেদের জন্মভূমি ত্যাগ করে আমাকে অনুসরণ করেছে। আমি তোমাদের উঁচু পাহাড় আর বরফাবৃত গিরিপথের ভিতর দিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছি। বাতাস যখন আমাদের উড়িয়ে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে, তখন তাঁবুর ভিতরে আমাদের শরীর পরস্পরকে উষ্ণতা দিয়েছে। আমরা আমাদের সামান্য খাবার ভাগ করে নিয়েছি। আমি সুলতান হবার পরে, গত নয় বছরে এতটা গর্বিত কখনও বোধ করিনি। হতে পারে তোমরা সংখ্যায় অল্প, কিন্তু তোমাদের ভিতরে রয়েছে সত্যিকারের বাঘের সত্ত্বা।” বাবর তার চারপাশে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে থাকা মুখগুলির দিকে তাকাতে তার সবুজ চোখ চকচক করতে থাকে। তার লোকজনের সংখ্যা এতো নগণ্য যে সে তাদের সবার নাম, কে কোনো গোত্র থেকে এসেছে আর যুদ্ধে কবে কোথায় আহত হয়েছিলো, জানে। সে এতোক্ষণ কেবল সত্যি কথাই বলেছে। সে তার এই ছন্নছাড়া ক্ষুদে বাহিনী নিয়ে ভীষণ গর্বিত।

    “আমি শীঘ্রই তোমাদের এই একনিষ্ঠতার প্রতিদান দিতে সক্ষম হব। আমার মরহুম আব্বাজানের ভাই, কাবুলের সুলতান, ইন্তেকাল করেছেন। আমার বংশপরিচয় আর খ্যাতি- তোমাদের সাহায্যে অর্জিত আমাকে একজন সাহসী আর অদম্য নেতা হিসাবে গড়ে তুলেছে। যাকে কাবুলের অধিবাসীরা তাদের নতুন সুলতান হিসাবে মনোনীত করেছে। যদি আমি সেখানে উপস্থিত হই। এবং আমি যাবোই- আমাকে যদি একা যেতে হয় তবুও আমি যাবই। কিন্তু আমি জানি তোমরা আমাকে আরো একবার বিশ্বাস করে আমার সাথেই যাবে। কিন্তু তারচেয়েও বড় কথা তোমরা সবাই নিজ নিজ গ্রামে খবর পাঠাও, যাতে অন্যেরাও আমাদের সাথে যোগ দিতে পারে আমাদের সৌভাগ্যের অংশীদার হতে এবং আমাদের সবার যে জন্মগত অধিকার, সেই নিয়তির লিখন সম্পূর্ণ করতে পারে।” বাবর এখনও যেনো কোনো মহান বিজয় উদযাপন করছে এমন ভঙ্গিতে হাত উঁচু করে।

    তার চারপাশ থেকে একটা মন্দ্র চিৎকার কণ্ঠ ত্যাগ করে। কে ভাবতে পেরেছিলো কয়েক ডজন কণ্ঠ থেকে এমন চিৎকার বের হতে পারে? বাবর আড়চোখে তাকিয়ে দেখে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাবুরী, বাইসানগার আর কাশিমও বাকিদের সাথে গলা মিলিয়েছে। সে নিজের ভেতর একটা নতুন শক্তির উদয় অনুভব করতে পারে…

    *

    একমাস পরের কথা। বাবর তার তাঁবুতে অবস্থান করছে। সূর্যের আলো আর তাজা উষ্ণ বাতাস যাতে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে, সেজন্য তাঁবুর পর্দা খুলে দেয়া হয়েছে। সে যেমনটা আশা করেছিলো, তার ভাগ্য পরিবর্তনের খবর দ্রুত রাষ্ট্র হয়েছে। হতজীর্ণ যে দলটাকে নেতৃত্ব দিয়ে সে ফারগানা ত্যাগ করেছিলো, এখন সেটায় চার হাজারের বেশি যাযাবর মোঙ্গল যোদ্ধা এসে যোগ দিয়েছে। যাদের সর্দারেরা তুগ বা ইয়াকের-লেজের বৈশিষ্ট্যসূচক স্মারক নিজেদের ঘোড়ার লেজে বেঁধে রাখে যুদ্ধের সময়। সাইবানি খানের হাতে নিহত তৈমূরীয় সর্দারদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে তারা। তার প্রতি বা তার ন্যায়সঙ্গত অধিকারের প্রতি এদের অধিকাংশই আস্থাশীল এমনটা বিশ্বাস করার মতে নবিশ সে আর নেই। তারা তার দলে যোগ দিয়েছে কেবল প্রাপ্তির আশায়। কিন্তু সেই সাথে এতো দীর্ঘ ঝুঁকিপূর্ণ একটা যাত্রায় অংশ নেয়ার প্রস্তুতি একটা বিষয়ই প্রকাশ করে যে, সে সফল হবেই। তার সুনামই তার পক্ষে কথা বলবে।

    কাবুলের শাহী দরবারের পাঠানো স্বর্ণমুদ্রা যা দূত নিয়ে এসেছিলো, সে ইতিমধ্যেই সেটা অস্ত্রশস্ত্র, শক্তিশালী ঘোড়ার পাল, নধর ভেড়ার দল আর ভেতরের দিকে পশমের আবরণ দেয়া নরম চামড়ার তৈরি তাঁবু, যা বাতাসের তীব্র ঝাপটা সামলে নিতে পারবে কিনতে ব্যয় করেছে। সে তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে প্রশস্ত আর শান্ত অক্সাস নদী ঘটনাবিহীনভাবে অতিক্রম করে। সমতল-তলদেশ বিশিষ্ট অল্প পানিতে ভাসতে পারে, এমন নৌকায় ঘোড়ার পাল, মালবাহী খচ্চর, উট আর মালবাহী গাড়িগুলো একে একে তোলা হয়। আর দক্ষ মাঝিরা তারপরে বালুময় তলদেশে তাদের হাতের লম্বা লগি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে তারা নৌকাগুলো ওপারে নিয়ে যায়। এভাবে নাগাড়ে দুই দিন দুই রাত ধরে তারা ক্রমাগত এপার ওপার আসা যাওয়া করে পুরো বহরটাকে ওপারে পৌঁছে দেয়। এসব মাঝিদেরই কেউ কেউ আবার বাবরের বহরের বিশালত্বে মুগ্ধ হয়ে হাতের লগি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তার বাহিনীর সাথে যোগ দেয়।

    দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে তার যাত্রা বিজয়দীপ্ত একটা সফরের অনুভূতির মতো মনে হতে শুরু করে। কিন্তু তার উল্লাসে উদ্বেল হওয়া সাজে না। সাইবানি খান আর ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী যদিও পেছনে অনেক দূরে রয়েছে। তৈমূরের অভিযানের বিবরণ পড়ে আর বৃদ্ধা রেহানার গল্প শুনে। বাবর জানে কাবুল আর তার মাঝে অবস্থিত মূর্তিমান হিন্দুকুশের বরফাবৃত জমাট চূড়োর মাঝে অনেক অজানা বিপদ ওঁত পেতে রয়েছে। বাবর তার আম্মিজান আর নানীজানকে সৈন্যদের প্রহরায় কিশম দূর্গের শক্তপোক্ত দেয়ালের অভ্যন্তরে রেখে আসতে পেরে সন্তুষ্ট বোধ করে। দূর্গটা তার এক নতুন মিত্র তাকে ব্যবহারের জন্য দিয়েছে। সে একবার কাবুলের অধিকার বুঝে নিলে সে তাদের নিয়ে আসবার জন্য লোক পাঠাবে। কিন্তু আপাতত তারা নিরাপদে আছে। খানজাদার জন্যও যদি সে এমনটা ভাবতে পারতো, যার যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখ স্বপ্নে সে প্রায়ই দেখতে পায়।

    “সুলতান।” তার দেহরক্ষী দলের একজন তাঁবুর ভিতরে প্রবেশ করে। “দরবার আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।”

    পুনরায় পরামর্শদাতা সম্বলিত দরবার ব্যাপারটাই তার কাছে কেমন অদ্ভুত মনে হয়। একটা ছাতিম গাছের ছড়ানো ডালপালার নিচে সবাই উপস্থিত হয়েছে কাশিমের পরণে উলের তৈরি লম্বা সবুজ আলখাল্লা। বাইসানগার আর বাবুরীর পরণে পশমের সূক্ষ্ণ বুননের নতুন জোব্বা। এছাড়াও সেরাম থেকে পঞ্চাশজন লোক নিয়ে আগত হুসেন মজিদ আর বাকী তিনজনের পরনেও নতুন পোশাক দেখা যায়। এদের ভিতরে দুজন মোঙ্গল সর্দার মাথায় ভেড়ার চামড়ার তৈরি গোলাকার টুপি। তাদের চকচকে দাড়িগোঁফবিহীন মুখে যুদ্ধের অসংখ্য স্মারক গিজগিজ করে। তৃতীয়জন বাবরের দূর সম্পর্কের ভাই মির্জা খান, বামচোখে পট্টি বাঁধা, হৃষ্টপুষ্ট মধ্যবয়সী এক লোক। উজবেকদের অভিযানের ফলে সে বাস্তচ্যুত হয়েছে এবং তার সাথে রয়েছে তিনশ অশ্বারোহীর সুসজ্জিত একটা দল। অতিরিক্ত ঘোড়ার পালসহ এবং গাড়ি ভর্তি শস্যদানা। নিজের এই ভাইয়ের বুদ্ধি বা সাহসিকতা সম্পর্কে বাবর খুব একটা আস্থাশীল না- নিজের ধনসম্পদ আর বংশ মর্যাদার কারণে তার আজকের সভায় ঠাই হয়েছে।

    মাটিতে বিছানো গালিচায় বাবর ইঙ্গিতে সবাইকে বসতে বলে, সরাসরি কাজের। কথায় চলে আসে: “কাবুল পৌঁছাতে হলে আমাদের এখনও আরও দুইশ মাইল পথ অতিক্রম করতে হবে। আমাদের আর শহরটার ভিতরে বাধার মত দাঁড়িয়ে আছে হিন্দুকুশ। আমাদের ভিতরে কারও এই পাহাড় দেখবার অভিজ্ঞতা হয়নি- অতিক্রম করা দূরে থাক। আমরা কেবল মানসচোখেই সেটা দেখেছি। কিন্তু এই গ্রীষ্মকালেও সেটা জোরাল বাঁধার কারণ হবে…প্রশ্ন হলো আমরা কি পাহাড়ের ভিতর দিয়ে যাবো নাকি ঘুরপথে অন্যদিক দিয়ে পাহাড়টাকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করবো…”

    “আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প উপায় আছে?” মির্জা খান জানতে চায়।

    নদীর তীর দিয়ে এগিয়ে গিয়ে আমরা বৃত্তাকারে দূর্গম পাহাড়ের অংশগুলো এড়িয়ে যেতে পারি। রাজদূত আমাকে খুঁজবার সময়ে যেমনটা করেছিলেন…”।

    “কিন্তু সেটা করতে গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে- সম্ভবত আমরা তখন তাহলে হয়তো সুযোগটাই হারাবো,” বাবুরী বলে। “পাহাড়ের চেয়ে দেরি করাটা এখন আমাদের জন্য অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হতে পারে…”।

    বাইসানগার মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। আমিও তার কথার সাথে একমত। আমাদের উচিত পাহাড়ের ভিতর দিয়ে এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু সেজন্য আমাদের পথপ্রদর্শক প্রয়োজন। এমন মানুষ যারা গিরিপথগুলো হাতের তালুর মতো চেনে এবং আমাদের সবচেয়ে নিরাপদ আর ভালো গিরিপথ দিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। এমন মানুষ যাকে আমরা বিশ্বাস করতে পারি…”

    মোঙ্গল সর্দারদের চেহারায় কোনো হেলদোল নেই যেনো। পৃথিবীর ছাদ হিসাবে। অভিহিত এই অঞ্চল দিয়ে হরহামেশাই তারা অতিক্রম করে। বাবরের মনে একটা ধারণা আছে, সেটা হলো তারা যদি আদৌ বিশ্বাস করেছে যে, লুটের মালের পরিমাণ প্রচুর হবে। তাহলে নরকের আগুনের ভেতরেও তারা তাকে অনুসরণ করবে কিন্তু যদি তারা আশাহত হয় যে লুট করার মতো তেমন কিছু পাওয়া যাবে না। তাহলে তারা তাকে সেখানেই পরিত্যাগ করবে…

    বাবর তার দরবারে সমবেত লোকদের দিকে আরেকবার তাকায়। আরো দেরি করার কোনো মানে সে দেখতে পায় না। মনে মনে সে পুরো বিষয়টা বহুবার খতিয়ে দেখেছে। আর প্রতিবারই সে একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। সে যদি কাবুলের সুলতান হতে চায়, তবে তাকে দ্রুত যা করার করতে হবে।

    “বেশ। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা হিন্দুকুশ অতিক্রম করবো। পাহাড়ের নিকটবর্তী হবার সাথে সাথে পথ দেখাবার জন্য আমরা পথপ্রদর্শক সন্ধান করবো আমরা যদি সেরকম কাউকে খুঁজে না পাই, তাহলে আমরা নিজেরাই এগিয়ে যাবো…আগামী ছত্রিশ ঘণ্টার ভিতরে আমরা যাত্রা আরম্ভ করবো। এই সময়টা সবাই নিজেদের অধীনস্ত লোকদের সরঞ্জামাদি আর রসদপত্র এবং ঘোড়ার যত্ন নেবে। বাইসানগার আমি চাই বাকি সর্দারদের আপনি নিজে সংবাদটা পৌঁছে দেন। এবং আমরা সাথে কেবল ঘোড়া আর মালবাহী খচ্চর নিয়ে যাবো মাংসের জন্য। কোনো প্রাণী আমাদের সাথে থাকবে না, এমনকি পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্তও না।

    *

    খাজকাটা আঁকাবাঁকা পাহাড়ের চূড়ো ধীরে ধীরে কাছে এগিয়ে আসতে থাকে। মাঝে মাঝে বাবরের মনে হয় সে তার মুখে তাদের জমাট হিম শ্বাস অনুভব করতে পারে। নিচের ঢালে কালচে সবুজের একটা স্রোত যেন আন্দোলিত হয়। অনেক উঁচুতে বরফাবৃত শৃঙ্গ হীরক দ্যুতিতে চকচক করছে। অনেকেই এই পাহাড়গুলোকে ধরণীর পাথুরে বেষ্টনী বলে অভিহিত করেন। কিন্তু বাবরের কাছে তারা স্ফটিক চূড়া ছাড়া আর কিছু না। বাবরের স্মৃতিতে এখনও উঁচু খাড়া পাহাড়ের পার্শ্বদেশ দিয়ে তৈমূরকে দড়ির সাহায্যে নামানোর কথা। তার ক্ষুধার্ত আর আড়ষ্ট সৈন্যদল, বরফের উপর আতঙ্কিত ঘোড়ার পা পিছলে আছাড় খাওয়া এবং বর্বর কাফেরদের চোরাগুপ্তা আক্রমণের কথা, ভাস্বর হয়ে আছে। আট মাস আগে ফারগানার দক্ষিণে পাহাড়ের ভিতর দিয়ে তার নিজ পরিবার আর অনুগত মুষ্টিমেয় লোকদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসবার সাথে কোনোভাবেই বিশাল একটা বাহিনী আর তার পুরো সাজসরঞ্জামসহ উঁচু চূড়ার ভিতর দিয়ে কিংবদন্তী আছে সেগুলো নাকি আকাশ স্পর্শ করেছে, অতিক্রম করার কোনো তুলনা হয় না।

    “আপনি কি ভাবছেন?” বাবুরীর ঘোড়াটা একটা তাম্রবর্ণের ঘোটকী, যেটা এই মুহূর্তে আপ্রাণ ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে একটা ভনভন করতে থাকা ঘোড়া-মাছির হাত থেকে বাঁচতে চেষ্টা করছে।

    “হিন্দুকুশ অতিক্রম করে তৈমূর দিল্লীতে তার বাহিনী কিভাবে নিয়ে গিয়েছিলেন সে সম্বন্ধে রেহানা যা বলেছে…”

    বাবুরী অবজ্ঞার ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকায়। “সবগুলোই রঙচঙে গল্প, মনগড়া আর বানোয়াট। তার কাছে পুরোটাই আগাগোড়া সত্যি কাহিনী। কিন্তু তার কতোটুকু আসলেই সত্যি সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তার দাদাজানের কথাটাই ধরেন, যেখানে প্রাণ বাঁচাবার জন্য বাচ্চা ছেলেটা তাকে সোনার সেই হাতিটা দিয়েছিলো। আমি বাজি ধরে বলতে পারি, হাতিটা আসলে লুট করা হয়েছিলো এবং অন্য ছেলেটাকে পরিত্যাগ করার অপরাধী মনোভাব নাকচ করার জন্য পরে এই উদ্ধার অভিযানের কাহিনীর অবতারণা করা হয়েছে। যাই হোক, শীঘ্রই আমরা নিজেরাই জানতে পারবো উপরের দৃশ্যপট কেমন। আমরা একজন লোক পেয়েছি সে আমাদের পথপ্রদর্শক হতে রাজি হয়েছে।”

    “আমি আশা করি সে যখন বলেছে যে, পাহাড়ের ভিতর দিয়ে যাবার রাস্তা চেনে তখন সে সত্যি কথাই বলেছে।”

    “সে মিথ্যা কথা বলেছে প্রতিয়মান হলে তুমি বলেছে যে তাকে পাহাড়ের উপর থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।”

    “আমি আসলেই তাই করবো।”

    বাবর তার কাঁধের উপর দিয়ে দেহরক্ষী বাহিনীর দিকে তাকায় এবং তাদের পেছনে রুক্ষ্ম প্রকৃতির উপর দিয়ে অগ্রসরমান অশ্বারোহীদের লম্বা সারির দিকে তাকায়। যা আগস্টের দাবদাহে কেঁপে কেঁপে উঠে। তার কপাল থেকে দরদর করে ঘাম ঝরতে থাকে এবং পিঠের অংসফলকের মাঝ দিয়ে বয়ে যায়। সে তার পর্যানের সাথে বাঁধা চামড়ার তৈরি পানির থলেতে একটা ছোট চুমুক দেয়। তার ভাবতেই অবাক লাগে শীঘ্রই তুষার আর বরফের রাজ্যে তারা প্রবেশ করতে চলেছে।

    “কাবুল শহরটা কেমন?” বাবুরী তার হাতের দাস্তানা দিয়ে সপাটে ঘোড়া-মাছিটাকে আঘাত করে এবং কঠিন মাটিতে বেচারার প্রাণহীন দেহ আছড়ে পড়তে দেখে সেদিকে সন্তুষ্ট চোখে তাকিয়ে থাকে।

    “আমার মরহুম আব্বাজান যদিও নিজে কখনও সেখানে যাননি। কিন্তু তিনি বলেছিলেন, তিনি শুনেছেন দুটো ভিন্ন জগতের মাঝে আঁকা পড়া একটা বিচিত্র স্থান সেটা- দুটো জগতের একটা শীতল আর অন্যটা উষ্ণ। কাবুল থেকে একদিনের দূরত্বে এমন স্থান আছে, যেখানে কখনও তুষারপাত হয় না। আবার ভিন্ন দিকে মাত্র দু’ঘণ্টার দূরত্বে এমন স্থানও রয়েছে যেখানের বরফ সারা বছর কখনও গলে না…”

    “আমি ভাবছি সেখানের মেয়েরা কেমন…” “তারা শীতল না উষ্ণ? আমরা যদি ভাগ্যবান হই তাহলে শীঘ্রই দেখতে পাবো।”

    *

    চারপাশের বাতাস অনেক হাল্কা। বাবরের শ্বাস নিতে রীতিমত কষ্ট হয় এবং স্বাভাবিকের চেয়ে তার হৃৎপিণ্ড অনেক দ্রুত স্পন্দিত হতে থাকে। ঘোড়াগুলোও বাতাসের অভাব বোধ করে এবং তারা উপরে উঠার সময়ে থেকে থেকেই নাক দিয়ে শব্দ করতে থাকে। শীতে অসাড় হয়ে আসা আঙ্গুলে, বাবর তার পশমের পরত দেয়া আলখাল্লার মস্তকাবরণ আরও ভালো করে টেনে দেয়। এক ঘণ্টা আগেও আকাশ পরিষ্কার ছিল। কিন্তু সহসা আগাম জানান না দিয়ে বরফ পড়তে শুরু করে। আর এখন তুষারের ভারী কণা তাদের চারপাশে বিষণ্ণ ভঙ্গিতে উড়ছে। পেছনে তাকিয়ে বাবর মানুষ আর পশুর গাঢ় অবয়বের আগুয়ান লম্বা সারি সে বহু কষ্টে আলাদা করে চিনতে পারে। কিছু লোক এখনও ঘোড়ায় চেপে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু অনেকেই তার মতো খাড়া বরফাকীর্ণ ঢাল বেয়ে ঘোড়ার লাগাম ধরে ঝড়ের মাঝে মাথা নিচু করে এগিয়ে চলেছে। তার নিজের ঘোড়া, কালো কেশর আর লেজ বিশিষ্ট ধূসর একটা স্ট্যালিয়ন, অস্বস্তিবোধ করাতে চিহিঁ আওয়াজ করে এবং বাবর তার লাগাম ধরে তাকে টেনে নিয়ে চললে সে প্রতিবাদ জানাতে চেষ্টা করে।

    তীব্র শীতের সাথে তার ভালোই পরিচয় আছে। কিন্তু গ্রীষ্মকালের এই তুষারঝড়ের আকষ্মিকতা, বাতাসের তীব্রতা আর শীতলতা একটা সতর্কবাণী বলে মনে হয়। তার চারপাশে পাগলের মতো ছন্দে আন্দোলিত হতে থাকা তুষারকণার মাঝে সে যেনো তার কল্পনায় তৈমূরের যোদ্ধাদের বহু কষ্টে উপরে উঠার আবছা অবয়ব দেখতে পায়। তারা এই বিপর্যয় সহ্য করে টিকে ছিলেন, এই ভাবনাটা তাকে শক্তি জোগায়।

    “সুলতান।” বাবর তার খুব কাছেই বাইসানগারের কণ্ঠস্বর শুনতে পায়। “পথ প্রদর্শক বলছে নাকের ঠিক সামনেই যখন দেখা অসম্ভব হয়ে উঠেছে, তখন এগিয়ে যাওয়াটা মারাত্মক বিপজ্জনক। সে একটা খাওয়াল পাহাড়ের ফাটলে একটা গুহা। চেনে, যা সামনেই কয়েকশ গজ দূরে অবস্থিত। ঝড় না থামা পর্যন্ত সে আপনাকে সেখানে আশ্রয় নিতে অনুরোধ করেছে এবং সে আমাদের বাকি সবাইকে শিখিয়ে দেবে কিভাবে নিজেদের আর প্রাণীর বহরকে সবচেয়ে ভালোভাবে রক্ষা করা যায়।” বাবর মাথা নেড়ে অসম্মতি প্রকাশ করে। “পথ প্রদর্শক যদি বলে থাকে যে আমাদের যাত্রা বিরতি করা উচিত, তবে আমরা তাই করবো।” সে বলে, “কিন্তু আমি আমার লোকদের বাইরের খোলা প্রান্তরে কষ্ট আর বিড়ম্বনার মাঝে রেখে নিজে গুহার ভেতরে লুকিয়ে থাকবো না। সে আমাদের অবশ্যই কি করতে বলেছে?”

    “সুলতান, খুঁড়তে বলেছে। এই বাতাসে আমরা তাঁবু খাটাতে পারবো না। আর তাই আমাদের নিজেদের জন্য গর্ত খুঁড়তে বলেছে এবং সেই বরফ দিয়ে বাতাস আটকাতে দেয়াল তৈরি করতে বলেছে ঘোড়ার পালকে আড়াল করতে এবং তারপরে তুষারঝড় না থামা পর্যন্ত আমাদের আর কিছুই করার নেই…”

    “বেশ তাই হবে। এবার আমাকে একটা শাবল এনে দাও…”

    পরের দিন খুব সকালবেলা, তুষারের ভেতরে একটা গর্তে বাবরের ঘুম ভাঙে। বরফের একটা স্তর তাকে ঢেকে রেখেছে কিন্তু আপাদমস্তক কম্বলে মুড়ে সে কতোটা আরামে রাত কাটিয়েছে টের পেয়ে চমকে উঠে। গুঁড়ি দিয়ে গর্ত থেকে বের হয়ে সে গায়ের উপর থেকে বরফের কুচি ঝেড়ে ফেলার মাঝে, চারপাশে তাকিয়ে ঝড় থেমে গিয়েছে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলে। আদিগন্ত বিস্তৃত পরিষ্কার নীল আকাশের নিচে সাদা দৃশ্যপট চোখ ঝলসে দেয়।

    “সুলতান।” তাদের শক্তপোক্ত গড়নের লম্বা বছর পঁয়ত্রিশেক বয়সের পথপ্রদর্শক শীতের হাত থেকে বাঁচতে আপাদমস্তক সে বেশ ভালো করে মুড়ে রেখেছে। তার ছেলে- চৌদ্দ কি পনের বছর হবে বয়স- পাশে দাঁড়িয়ে দু’হাত আড়াআড়ি করে রেখে কব্জি পর্যন্ত বোগলের নিচে এঁজে রেখেছে বাড়তি উত্তাপ পাবার আশায়।

    “আমরা কি যাত্রা আরম্ভ করতে পারি?”

    “হ্যাঁ, কিন্তু এখন থেকে আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। পূর্বে দৃশ্যমান অনেক বিপদই তুষারের আবরণে এখন ঢেকে গিয়েছে।”

    লোকটা ঠিকই বলেছে। বরফের পুরু স্তর চারপাশের দৃশ্যপট এখন অনেক কোমল আর ঝুঁকিহীন দেখাচ্ছে। কিন্তু সেই সাথে পাহাড়ের অসংখ্য ফাটলের উপরেরটাও ঢেকে দিয়েছে। পুরো বহরটা যাত্রা শুরু করতে বাবর তাকিয়ে দেখে পথপ্রদর্শক লোকটা কিভাবে সতর্কতার সাথে আগে আগে চলেছে। আর কিছুক্ষণ পরে পরেই আপাতদৃষ্টিতে কঠিন বরফের উপরে লম্বা লাঠি দিয়ে গুতো দিচ্ছে। সেটা সাথে সাথে ধ্বসে পড়ে নিচের অতলস্পর্শী গিরিখাদ উন্মুক্ত করে তুলছে। যেখানে একবার পড়লে আর দেখতে হবে না। বাবর যখন তার কাছে জানতে চায় এই জ্ঞান সে কিভাবে লাভ করেছে। তখন লোকটা জানায় বহু শতাব্দি ধরে তার পরিবার এই পাহাড় অতিক্রম করতে ভ্রমণকারীদের সাহায্য করে আসছে। তৈমূরের বাহিনীর সাথেও তাদের বংশের কেউ একজন পথপ্রদর্শক হিসাবে ছিলো ভেবে নেয়াটা কি খুব বেশি বাড়াবাড়ি হবে?

    শীঘ্রই অলস গালগল্পে সময় কাটাবার শক্তি বা অবকাশ কোনোটাই থাকে না। তারা ধীরে ধীরে দুটো চূড়ার মাঝে ঘোড়ার পর্যানের মত দেখতে একটা উঁচু ভূখণ্ডের দিকে এগোতে থাকে। বরফের স্তর ধীরে ধীরে আরো উঁচু হয়ে উঠতে শুরু করে যে, প্রায়ই ঘোড়ার রেকাব পর্যন্ত এমনকি কখনও পর্যান বাঁধার কাপড়ের ফেটি পর্যন্ত বরফে ঢুবে যেতে থাকে…

    “সুলতান…আমার এবার পায়ে বরফ-মাড়ানো লোক লাগবে।” পথপ্রদর্শক লোকটা নরম ঘন বরফে প্রায় কোমর পর্যন্ত ডুবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

    কি?…

    “বরফ মাড়াবার জন্য লোক লাগবে…গিরিখাদ আকীর্ণ এলাকাটা আমরা পার হয়ে এসেছি। সেসব নিয়ে আর ভীত না হলেও চলবে। এবার পনের কি বিশজন শক্তিশালী লোক আমার প্রয়োজন। সামনের লোকটার কাজ হবে বরফের মাঝে গায়ের জোরে এগিয়ে যাবার। আর তার পেছনের লোকেরা আলগা বরফ দাবিয়ে দিয়ে একটা গলি পথ তৈরি করতে পারবে। যার ভিতর দিয়ে বাকি লোকেরা আর ঘোড়ার পাল পেছন পেছন এগিয়ে যাবে। কেবল এভাবেই আমরা এখন গিরিপথে পৌঁছাতে পারি…”

    এক ঘণ্টা পরে বাবরের ফুসফুসে কেউ যেনো আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে মনে হয়। আর তার পা জোড়া আপনা থেকেই দেহের নিচে মুড়ে আসতে চায়। কিন্তু তাকেই সবার চেয়ে বেশি সহনশীলতা আর উদ্যম প্রদর্শন করতে হবে। সে নিজেই জোর করে বরফের ভিতর দিয়ে প্রথমে সামনে এগিয়ে যাবার দায়িত্ব নিয়েছে এবং অন্যরা যেখানে হাঁপিয়ে ওঠার আগে আট কি দশ গজ দূরত্ব অতিক্রম করতে পেরেছে যে, ঠিক করেছে তার দ্বিগুণ পথ সে পরিষ্কার করবে। যাতে ঠাণ্ডা সত্ত্বেও সে কুলকুল করে ঘামতে শুরু করে। কিন্তু প্রতিটা পদক্ষেপ তার ভিতরে একটা বুনো উল্লাসের জন্ম দেয় যে, প্রকৃতি নিজেও তাকে দমিয়ে রাখতে পারছে না।

    দুপুর নাগাদ তারা বরফের প্রান্তর থেকে শেষ পর্যন্ত বের হয়ে শক্ত উঁচু জমিতে এসে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। তৈমূরের মত না, সে আর তার লোকেরা ভাগ্যবান। আবার তুষারপাত শুরু হয় না এবং তারা এখন বৈরী কিন্তু অপরূপ সুন্দর দৃশ্যপটের ভিতর দিয়ে অতি ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। বাবর সবসময়ে মনে করেছে যে, ববফ বোধহয় কেবল সাদা হয়। কিন্তু এখানে পৃথিবীর ছাদের উপরে উষ্ণ সূর্যালোকে ফিরোজা আর মহানীল মহিমায় এটা চকচক করছে।

    “গিরিপথ আর কতো দূরে?”

    পথপ্রদর্শক এক মুহূর্ত কি ভাবে। “সুলতান, আমরা যদি এই গতিতে এগিয়ে যেতে পারি, হুপিয়ান গিরিপথে আমরা আগামীকাল রাত হবার আগেই পৌঁছে যেতে পারবো।”

    বাবর হাত তালি দেয়। পশমের পরত দেয়া দাস্তানা আর তার উপরে উলের কাপড় দিয়ে মুড়ে রাখা সত্ত্বেও জমে আছে এবং ব্যাথায় কুঁকড়ে যায়। নীল হয়ে ওঠা আঙ্গুলে পুনরায় রক্ত চলাচল শুরু হতে মনে হয় গনগনে সূঁচ দিয়ে কেউ যেনো খোঁচা দিচ্ছে। “তুমি ভালোভাবেই তোমার দায়িত্ব পালন করেছে। আমি ভেবেছিলাম আমাদের পশুর পালের অধিকাংশই আমরা হারাব।”

    “আপনাকে আমি এ কারণেই হুপিয়ান গিরিপথে নিয়ে এসেছি। অন্য সব গিরিপথ, যেমন খাওয়াকের মতো এটার উচ্চতা বেশি না। আর এটা দিয়ে উপরে উঠাও খুব একটা ঝুঁকিপূর্ণ না- যদিও এইসব পাহাড়ের সব জায়গাতেই বিপদ ওঁত পেতে আছে… আপনাকে সবসময়ে সতর্ক থাকতে হবে-” লোকটা তখনও কথা বলছে। এমন সময় হিম বাতাস বিদীর্ণ করে একটা জান্তব, মড়মড় শব্দ ভেসে আসে। আঁতকে উপরের দিকে তাকিয়ে বাবর তাদের অনেক উপরে বরফাবৃত চূড়ার মসৃণ পৃষ্টদেশে মাকড়সার জালের মতো ফাটল জন্ম নিতে দেখে। প্রায় মানুষের মতো একটা আর্তনাদ করে ওঠে। নীলচে-সবুজ বরফের একটা আয়তাকার খণ্ড বিচ্যুত হয়ে মানুষ আর প্রাণীর লম্বা সারির শেষ প্রান্তে এসে আছড়ে পড়ে।

    একই সাথে এমন বিকট একটা গর্জনের সৃষ্টি হয় যে, বাবরের মনে হয় সে বুঝি বধির হয়ে যাবে। সহজাত প্রবৃত্তির বশে সে দু’হাতে কান চেপে ধরে। সে যখন কান নিয়ে ব্যস্ত এমন সময় কিছু একটা ভীষণ জোরে এসে তার বুকে আঘাত করে। আর মাথার পাশ দিয়ে অন্য কিছু একটা বের হয়ে যায়। তার চারপাশে বিক্ষিপ্ত কণা নিক্ষিপ্ত হতে থাকে। তার ঘোড়া আতঙ্কে চিহি শব্দ করতে থাকলে বাবর লাফিয়ে নিচে নেমে ঘোড়ার গলার দড়ি আঁকড়ে ধরে তার পেটের নিচে আশ্রয় নেয়। তুষার ধ্বস যতোটা আকস্মিকভাবে শুরু হয়েছিলো ঠিক ততোটাই আকস্মিকভাবে শেষ হয়। তাদের চারপাশের তুষার শৃঙ্গ আবার মৌন হয়ে উঠলেও আশেপাশে থেকে আতঙ্কিত মানুষ আর পশুর যুগলবন্দি ভেসে আসতে থাকে। বাবরের মাথাটা দপদপ করে এবং পাঁজরের হাড় আড়ষ্ট হয়ে থাকা অবস্থায় সে সন্তর্পণে ঘোড়ার নীচ থেকে বের হয়ে আসে। অবোধ জন্তুটা তখনও ছটফট করলেও অক্ষত রয়েছে মনে হয়।

    “সুলতান, আপনি সুস্থ আছেন?” বাম হাত দিয়ে ডান হাতটা আগলে ধরে রেখে বাবুরী এগিয়ে এসে জানতে চায়। বেচারার মুখের একপাশে ইতিমধ্যে বীভৎস একটা কালসিটে জন্ম নিয়েছে।

    বাবর মাথা নাড়ে। তার পরণের মোটা কাপড়ের জন্যই এযাত্রা সে বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু বেচারা পথপ্রদর্শক তার পায়ের কাছে হাতপা ছড়িয়ে পড়ে আছে। লোকটার মাথার নেকড়ের চামড়ার টুপি তার মাথার পেছনে আছড়ে পড়া বরফ খণ্ডের প্রচণ্ডতা থেকে তাকে বাঁচাতে পারেনি। হতভাগ্য লোকটার রক্ত আর মগজ এখন বরফের উপরে বিক্ষিপ্তভাবে ছিটিয়ে আছে।

    বাবরের এবার লোকটার সতর্কবাণীর কথা মনে পড়ে। “আপনাকে সবসময়ে সতর্ক থাকতে হবে…”

    পৃথিবীতে সেগুলোই ছিলো হতভাগ্য লোকটার উচ্চারিত শেষ শব্দ। তাদের মাথার উপরে চূড়ার বরফ আবারও সূর্যের আলোয় চিকচিক করে। কিন্তু যেকোনো মুহূর্তে আবার মৃত্যুগ্রাসী তুষারখণ্ড নিক্ষিপ্ত করতে পারে আগাম ঘোষণা না দিয়ে। তার লোকদের এখনই এই মৃত্যুউপত্যকা থেকে সরিয়ে নিতে হবে।

    “আহতদের একত্রিত করো।” সে মৃদু কণ্ঠে বলে। “আমাদের পক্ষে যতদ্রুত সম্ভব এই এলাকা ত্যাগ করতে হবে। আদেশটা সারির শেষপ্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেবার বন্দোবস্ত করো।”

    সে এবার আবার তার পায়ের কাছে দলামুচড়ে পড়ে থাকা দেহটার দিকে তাকায়। আশেপাশে কোথাও সে লোকটার ছেলেটাকে দেখতে পায় না। আর এখন তাকে খোঁজার সময়ও নেই। “বাবুরী, আমাকে সাহায্য করো…”

    পথপ্রদর্শক লোকটা বিশালদেহী ছিলো। আর বাবুরীর ঘোড়ার উপরে তাকে উঠাতে তারা দুজনে হিমশিম খেয়ে যায়। কিন্তু লোকটাকে এখানে রেখে যাওয়াটা অমানবিক হবে। একটা উপযুক্ত স্থানে তাকে সমাধিস্থ করতে হবে। সেটা তার প্রাপ্য। আর বাবর তার জন্য তেমনই একটা স্থান খুঁজে বের করবে- সম্ভবত গিরিপথের কোথায় যেখানে তার আত্মা শান্তিতে বিশ্রাম নেবে।

    তারা যতোটা দ্রুত সম্ভব এগিয়ে যায়। পরিশ্রান্ত পা বরফাবৃত মাটিতে পিছলে যায় হোঁচট খায়। অবশেষে তারা একটা উপত্যকায় এসে উপস্থিত হয়। বাবর ভাবে, তুষারপাতের আক্রমণ থেকে তারা এখানে নিরাপদ থাকবে এবং ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নেবার আদেশ দেয়। সে যেমন ভয় পেয়েছিলো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তেমন ব্যাপক না- আঠার জন লোক মারা গেছে। এর প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক আহত হয়েছে। বেশির ভাগেরই আঘাত তেমন গুরুতর নয়। এছাড়া ছয়টা ঘোড়া আর তিনটা মালবাহী খচ্চর মারা গেছে বা চলার অনোপযোগীভাবে আহত হয়েছে। বাবরের লোকেরা ইতিমধ্যে তাদের জবাই করে তাদের মাংস রান্নার বন্দোবস্ত করেছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারতো….

    “সুলতান…” একটা কিশোর কণ্ঠ তার ভাবনার জাল ছিন্ন করে। পথপ্রদর্শক লোকটার ছেলে। তার চোখ লাল, কিন্তু কণ্ঠস্বর সংযত। “সামনের রাস্তা আমি চিনি। আমি এখন আপনার পথপ্রদর্শকের দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত আছি। আমার আব্বাজান বেঁচে থাকলে এটাই চাইতেন…”

    “তোমার সাহসের আমি প্রশংসা করি। আর তোমার আব্বাজানের মৃত্যুর জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত।” বাবর মাথা নেড়ে বলে। যাত্রা শেষে তাকে উপযুক্তভাবে পুরস্কৃত করবে বলে ঠিক করে।

    ভোরের ঠিক আগে তারা সেই কিশোর ছেলেটার নেতৃত্বে তারা হুপিয়ান গিরিপথ অতিক্রম করতে শুরু করে। দক্ষিণের আকাশে অনেক নিচুতে তখনও একটা নিঃসঙ্গ তারাকে জুলজুল করতে দেখা যায়।

    বাবর তারাটার দিকে তাকিয়ে থাকে। “ওটা কি তারা? আমি আগে কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।”

    বাবুরী অজ্ঞতা প্রকাশ করে। কিন্তু বাইসানগার জানে। “সুলতান ওটাকে বলে ক্যানোপাস। সমরকন্দ কিংবা ফারগানার উত্তরের আকাশে এটা দেখা যায় না। কিন্তু সমরকন্দে তৈমূরের পৌত্র জ্যোতিষ উলুঘ বেগের লেখায় আমি এর কথা পড়েছি। সেখানে একটা বিখ্যাত কবিতার পংক্তি রয়েছে: ক্যানোপাস কততদূর বিস্তৃত তোমার উজ্জ্বলতা আর কোনো আকাশে তোমার উদয়? যাদের উপরেই তোমার রশ্মি নিঙড়ে পড়ে তাদের সবার জন্যই তোমার চোখের তারায় সৌভাগ্যের চিহ্ন অংকিত থাকে।

    বাবরের চোখের সামনে ভোরের আলো ফুটে ওঠায় তারাটা বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু বার্তাটা ভালোই রেখে যায়। সৌভাগ্যের সূচক এমন একটা সংকেতই তার প্রয়োজন ছিলো এবং সে উদ্দীপ্ত বোধ করতে থাকে। আট ঘণ্টা পরে সে আরও উৎফুল্ল হয়ে ওঠে, যখন বরফাবৃত ভূখণ্ড তৃণভূমিতে রূপান্তরিত হয়। গত তিনদিনে এই প্রথম তারা তাঁবু খাটাতে পারে এবং গায়ের কাপড় আর পায়ের জুতো খুলে আরাম করে বসতে পারে।

    বাবর, বাবুরী আর বাইসানগারকে সাথে নিয়ে তার লোকদের অবস্থা পরিদর্শন করতে বের হয়ে কারো কারো অবস্থা দেখে তারা আঁতকে উঠে। তারা আদেশ সত্ত্বেও অনেকেই পাহাড়ের জন্য উপযুক্ত প্রস্তুতি নিয়ে আসেনি। সূর্যের আলোয় মুখের চামড়া ফেটে গেলেও মোঙ্গলদের প্রাণবন্তই দেখায়। কিন্তু মীর্জা খানের সৈন্যদের অবস্থা শোচনীয়। বেশ কয়েকজনের অন্তত ডজনখানেক হবে তাদের সংখ্যা, যাদের হাত পা হিম-দংশের আক্রমণে কালো হয়ে ফুলে উঠেছে।

    বাবর আগেও এমন তীব্র হিম-দংশের আক্রমণ দেখেছে। তার লোকদের বাঁচাতে হলে এখন কেবল একটা উপায়ই আছে। শীঘ্রই শিবিরে দাউদাউ করে আগুন। জ্বলতে থাকে। আর শান পাথরে ঘষে খঞ্জরে ধার দেয়া শুরু হয়। তাদের এই যন্ত্রণা কোনো মাদক দিয়েই নাকচ করা সম্ভব না। এই লোকগুলো যাদের হাত বা পায়ের আঙ্গুল সংক্রমণের শিকার হয়েছে, মুখের ভিতরে ভাঁজ করা কাপড়ের টুকরো রেখে যাতে তারা জিহ্বা কামড়াতে না পারে, কেটে ফেলা।

    মীর্জা খানের নিশান বাহক- মোল বছরের সুদর্শন দেখতে এক তরুণ যার ডান হাত কালো হয়ে ফুলে ছোট একটা তরমুজের আকৃতি নিয়েছে এবং আঙ্গুলের নিচে দিয়ে হলুদ পুঁজ বের হয়ে আসছে। অনেক চেষ্টা করেও সৈন্যদের খঞ্জরের ধার। পরীক্ষা করতে দেখে নিজের কান্না চেপে রাখতে পারছিলো না।

    “সাহস রাখো৷” বাবর তার পাশে হাঁটু মুড়ে বসে। “খুব দ্রুত এটা শেষ হবে আর তুমি অন্তত প্রাণে বেঁচে যাবে… আমার দিকে তাকিয়ে থাকো আর ভুলেও নিচের দিকে তাকিও না।” বাবর শক্ত করে তার কাঁধ চেপে ধরে এবং একজন তার। হিম-দংশে আক্রান্ত হাতটা কনুইয়ের উপরে চেপে ধরতে আরেকজন তার পায়ের উপরে চেপে বসে।

    “এবার- দ্রুত করো!” বাবর আদেশ দেয়। ছেলেটার চোখ ভয়ে বড়বড় হয়ে উঠে, তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। খঞ্জরটা তার ডান কব্জি কেটে নেমে আসতে বেচারা ব্যাথায় মুচড়ে উঠে। কিন্তু দাঁতের মাঝে কাপড়ের টুকরো থাকায় সে কোনো শব্দ করতে পারে না। ছেলেটাকে তখনও ধরে রেখে বাবর একপাশে সরে এসে আরেকজন সৈন্যকে হাঁটু মুড়ে বসতে সুযোগ দেয় এবং আগুনে পুড়িয়ে লাল করা। একটা তরবারির পাত দিয়ে কব্জির কর্তিত স্থানের রক্তপাত বন্ধ করতে সেখানটা পুড়িয়ে দেয়। এইবার কাপড়ের কারণে চাপা শোনায় কিন্তু ছেলেটা অনেক কষ্ট করেও চেঁচিয়ে উঠা থেকে বিরত থাকতে পারে না।

    মীর্জা খান আগ্রহী, কিন্তু ভাবাবেগশূন্য চোখে তাকিয়ে ছিলো। পাহাড়ের ভিতর দিয়ে সে নির্বিঘ্নেই এসেছে- তাকে এখনও প্রাণবন্ত দেখায়। কিন্তু এই লোকটার জন্য সে বিন্দুমাত্র পরোয়া করে না। বাবরের ইচ্ছা করে তার মুখটা গুঁড়িয়ে দেয়। এই ছেলেটার নাম কি?” সে জানতে চায়।

    “সাইয়্যেদিন।”

    “আমি তাকে আমার বাহিনীতে নিয়োগ করতে চাই।”

    “যেমন আপনার অভিরুচি।” মীর্জা খান কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে, যেন বলতে চায় “হাত কাটা নিশান বাহক আমার দরকার নেই।”

    বাবর এবার দাঁড়িয়ে থেকে একটা আলখাল্লা ছিঁড়ে সেটা দিয়ে ক্ষতস্থানে পট্টি বাঁধা দেখে। “একে আমার তাঁবুতে নিয়ে যাও আর পুষ্টিকর কিছু খেতে দাও।” সে আদেশ দেয়। “আজ সে যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দিয়েছে।”

    *

    আক সরাই তৃণভূমি, কাবুলের প্রেরিত দূত তাদের সালতানাতের সীমান্তের কাছে সাক্ষাতের স্থান হিসাবে মনোনীত করেছিলেন। সবুজ ঘাসে ছাওয়া একটা মনোরম স্থান। বাবরের শিবিরও দর্শনীয়ভাবে স্থাপন করা হয়। সারি সারি তাঁবু যার মাঝে তার নিজের বিশাল তাবুটা স্থাপিত। আশার কথা এই যে, পাহাড়ের পাদদেশের গ্রামের অধিবাসীরা তার বাহিনীর প্রতি কোনো ধরণের বিরূপতা প্রদর্শন করেনি এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে তারা যখন উপত্যকার ভিতর দিয়ে এগিয়ে এসেছে তখনও আশেপাশের গ্রামবাসীরা কেবল পাহাড়ের উপর থেকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেছে।

    সেটা তখন সেপ্টেম্বর মাস। ফসল কাটা শেষ হয়েছে আর শস্যাগার পরিপূর্ণ থাকায় গ্রামবাসীরা তাদের কাছে ফসল বিক্রি করতেই বেশি আগ্রহী ছিল। রাতের বেলা আগুনের পাশে বসে নধর ভেড়ার মাংস দিয়ে আহার সেরে বাগান থেকে সদ্য সংগৃহীত পাকা আপেল আর নাশপাতি আর চাকভাঙা মধু খাবার স্বাদই আলাদা। গাছের ডালে ঘুঘু, তিতির আর অন্যসব গায়ক পাখির ডানা ঝাপটানো শোনা যায়। রাতের বেলা বাবর লালচে-বাদামী নাইটিংগেলের ডাক শুনতে পায়। সমৃদ্ধ আর উর্বর একটা স্থান। আর সে যখন এখানকার সুলতান হবে, সেও এটাকে সেভাবেই রাখবে।

    কিন্তু তার আগে তাকে শিবিরে নিয়মশৃঙ্খলা স্থাপন করতে হবে। সে যদিও লুটপাট করতে মানা করেছে। কিন্তু ছয়জন লোক তার আদেশ অমান্য করে পাশের গ্রামে হামলা চালিয়ে নিজেদের গবাদি পশুর পাল রক্ষা করতে চেষ্টা করায় দু’জন কৃষককে হত্যা করেছে। বাবর দোষী ব্যক্তিদের সনাক্ত করে এবং মৃত কৃষকদের পরিবারের সামনে পাথুরে চোখে তাদের চাবকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাটা পর্যবেক্ষণ করে। সে এরপরে তাদের চাবকানো মৃতদেহ যা তখন আর মানুষের বলে চেনা মুশকিল আগাছাপূর্ণ একটা স্থানে মাটিচাপা দিতে বলে। কাবুল থেকে বার্তাবাহক যতো দ্রুত এসে পৌঁছে ততই মঙ্গল। যতবেশি সময় তাকে অপেক্ষা করতে হবে, ততোই তার বাহিনীতে এমন সব কুকর্মের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

    তৃতীয় দিন সে তার তাঁবুর বাইরে বসে বাবুরীর তীর বাছাই করা দেখছে। এমন সময় তৃণভূমির উপর দিয়ে একটা ছোট অশ্বারোহী দলকে সে তার তাঁবুর দিকে এগিয়ে আসতে দেখে।

    “তোমার কি মনে হয়? দূত ফিরে এসেছে?” চোখ কুঁচকে তাকিয়ে বাবর জিজ্ঞেস করে। লোকগুলো অনেক দূরে থাকায় তাদের ঠিকমতো চেনা যায় না। কিন্তু তার তাঁবুর দিকে খুব অল্প সংখ্যক লোকই সরাসরি এগিয়ে আসতে পারে। যার মানে তারা মিত্রই হবে। লোকগুলো আরো কাছে আসতে বাবর দূতের ময়ূরকণ্ঠী নীল রঙের আচকান আর তার পাগড়ীতে রত্নখচিত পিন দিয়ে সংযুক্ত লম্বা পালক চিনতে পারে।

    “সুলতান আপনাকে স্বাগতম। আপনি নিরাপদে আসতে পেরেছেন দেখে আমি আনন্দিত এবং নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে একটা বিশাল বাহিনীও আপনি নিয়ে এসেছেন। শাহী দরবার আপনাকে অভিবাদন জানাচ্ছে।”

    বাবর মাথা নাড়ে। “আমি কবে নাগাদ শহরে প্রবেশ করতে পারবো?”

    দূতের বাদামী চোখ পিটপিট করে উঠে। “সুলতান একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। মোহাম্মদ মুকুইম আরগুন নামের এক জবরদখলকারী কাবুল আর কাবুলের উপরে অবস্থিত দূর্গপ্রাসাদ দখল করে নিয়েছে। শাহী দরবার শহরের বাইরে অল্প কিছু সংখ্যক অনুগত সৈন্য নিয়ে কারাবাগে পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তারা পুনরায় শহর দখল করতে পারবে না।”

    “এই ভুইফোড়টা কে?”

    “হাজারা গোত্রের এক সর্দার। সে তার দলবল নিয়ে জোর করে শহর দখল করেছে।”

    “সে কি নিজেকে সুলতান হিসাবে ঘোষণা করেছে? তার নামে কি খুতবা পাঠ করা হয়েছে?”

    “না, সুলতান এখনও হয়নি। তার নিজের গোত্রের ভিতরেই অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে।”

    “তার সাথে কতো সৈন্য আছে?”

    “সুলতান সম্ভবত এক হাজার হবে, এর চেয়ে কিছু বেশি বা কমও হতে পারে।”

    “আমার সাথে চার হাজার যোদ্ধা আছে যারা যুদ্ধের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। আপনার শাহী দরবারকে খবরটা গিয়ে জানান। না আমাকেই কারাবাগে নিয়ে চলুন। আমি হিন্দুকুশ অতিক্রম এখানে এজন্য আসিনি যে অন্য কেউ লাভবান হবে।”

    “হ্যাঁ, সুলতান।” কাবুলের শাহীদূত এতক্ষণে তার সামনে নতজানু হয় এবং মাটিতে মাথা স্পর্শ করে। বাবর ভাবে, এই প্রথমবার সে তাকে সুলতান হিসাবে কুর্নিশ করলো।

    ***

    “আ-আ-আমার পরামর্শ হলো আপনি অ-অ-অপেক্ষা করেন।” বাহলুল আইয়ুব উত্তেজনার কারণে তোতলাতে তোতলাতে বলে। রাশভারি বৃদ্ধ লোকটা নিজের বিশাল রেশমী দাড়িতে হাত বুলায়। কাবুলের গ্রান্ড উজির হিসাবে তার পদমর্যাদা আর বয়সের কারণেই তিনি সম্মানের অধিকারী। তার মতামতের গুরুত্ব না দিলেও, বাবর অসহিষ্ণু চিত্তে ভাবে, যদিও শাহী দরবারের অন্যসব গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, ওয়ালি গুল শাহী কোষাগারের রক্ষক, এবং হায়দার তকী, শাহী সীলমোহরের রক্ষক, তারাও তাদের সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়ে।

    “দেরি করলে কি লাভ হবে? এতে করে হাজারারা কেবল উৎসাহিত হবে এবং বিশ্বাস করবে যে আমি তাদের ভয়ে ভীত। শাহী দরবারের কর্তৃত্ব আমার রয়েছে। আমি রাজরক্তের অধিকারী। আমার সাথে একটা শক্তিশালী সেনাবাহিনী আছে। আর কি প্রয়োজন?”

    “আ-আ-আমরা কাবুলের অধিবাসীদের নিয়ে চিন্তিত। মোহাম্মদ মুকুইম আরগুন শহরের অভিজাত কিছু অধিবাসীকে বন্দি করেছে আমাদের পরিবারের সদস্যও তার ভিতরে রয়েছে এবং দূর্গপ্রাসাদে তাদের আটকে রেখেছে।”

    “সে যদি তাদের ক্ষতি করার মতো দুর্মতি দেখায় তবে তাকে সেজন্য মূল্য দিতে হবে। আমি তাকে সেটা পরিস্কার বুঝিয়ে দেবো। আমি তাকে আরও বুঝিয়ে দেবো যে, আমি কোনো ডাকাত নই। আমি কাবুলের নতুন সুলতান, যিনি নিজের সালতানাতের দখল বুঝে নিতে এসেছেন।“

    তিন বৃদ্ধ এবার পালাক্রমে নিজেদের দিকে তাকায়। বাবর ভাবে, তার কথা বুড়ো লোকগুলোর মনে ধরেছে। সম্ভবত তারা ভুলে গিয়েছিলো কার সাথে তাদের পালা পড়েছে: এমন একজন- ভাগ্য যাকে বিড়ম্বনায় ফেললেও নিজের প্রতিভা আর সাহসের বলে ইতিমধ্যেই যিনি একজন সুলতান।

    “সুলতান আমরা আপনার আ-আদেশের অনুবর্তী। আমরা সেটা মেনে নিয়েছি।”

    শরতের উজ্জ্বল আলোয় কাবুলের চারপাশে অবস্থিত শহর রক্ষাকারী দেয়াল আখরোটের মতো গনগনে দেখায়। বেষ্টনীকৃত দেয়ালের পেছনে বাবর প্রাসাদ, বাড়ি, মসজিদ আর সরাইখানা দেখতে পায়। সমরকন্দের মতো মনোরম না। কিন্তু এখানকার সম্পদ ব্যবহার করে সে একেই সুন্দর আর জৌলুসপূর্ণ করে তুলবে। চীন, তুরস্ক, হিন্দুস্তান আর পারস্যের মাঝে অবস্থিত কাফেলা বহরের চলাচলের পথে একটা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র হবার কারণে কাবুল বেশ সমৃদ্ধ শহর। শাহী দরবারের অমাত্যরা তাকে গর্ব করে বলেছে যে, প্রতিবছর বিশ হাজার ঘোড়া, উট আর অন্য মালবাহী প্রাণীর বহর এখান দিয়ে মশলা, চিনি, রেশম আর মূল্যবান পাথর নিয়ে এখান দিয়ে অতিক্রম করে।

    শহরের উপরে উত্তরে, নিঃসঙ্গ পাথরের একটা স্তূপের মাথায় দূর্গপ্রাসাদ অবস্থিত। এর মসৃণ দেয়ালে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফাঁকা স্থান দেখা যায়। বাবর জানে এই মুহূর্তে অনেক চোখ- যাদের ভিতরে মোহাম্মদ মুকুইম আরগুনও রয়েছে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, আর সেও সেটাই চায়। সে তার লোকদের যতোটা সম্ভব সুসজ্জিত হতে বলেছে। তরবারি, বর্শা আর রণকুঠারের ফলা আলোয় ঝলসে উঠে। কাঁধের উপরে ধনুক ঝুলছে। আর পিঠে তীর ভর্তি তৃনীর। তার ইচ্ছা শত্রু যেনো তার সামর্থ্যের ব্যাপারে কোনো ভুল ধারণা না করে।

    তার লোকেরা সমরসজ্জায় তার পেছনে বিন্যস্ত হয়, বাবর ধীরে ধীরে শহর অতিক্রম করে দূর্গপ্রাসাদের দিকে এগিয়ে যায় এবং তারপরে দাঁড়িয়ে পড়ে। নিজের। লোকদের শহর কিংবা দূর্গপ্রাসাদ থেকে আকস্মিক কোনো আক্রমণ মোকাবেলার। জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে বলে, সে কাশিমকে তার কাছে ডেকে পাঠায়। “আরো একবার আমার দূতের দায়িত্ব তোমাকে পালন করতে হবে। একদল প্রহরী নিয়ে দূর্গপ্রাসাদে গিয়ে মোহাম্মদ মুকুইম আরগুনকে আমার চুড়ান্ত হুঁশিয়ারী পৌঁছে দিয়ে এসো। সূর্যাস্তের ভিতরে সে যদি বন্দিদের মুক্তি দিয়ে শহর আর দূর্গপ্রাসাদ ত্যাগ করে, তাহলে সে নিরূপদ্রবে কোনো ক্ষতি স্বীকার না করেই ফিরে যেতে পারবে। সে যদি এটা মানতে রাজি না হয়, তবে আমি তাকে কোনো রেয়াত করবো না।”

    বাবর চারজন সৈন্য নিয়ে কাশিমকে দূর্গপ্রাসাদের দিকে দুলকিচালে ঘোড়া ছুটিয়ে যেতে দেখে। দূতের দায়িত্ব পালন করা সব সময়েই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু কাশিম এর আগেও এমন পরিস্থিতিতে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে এবং বাবর নিশ্চিত এই দফা তাকে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে না…আরগুনের সাহস হবে না তার কোনো ক্ষতি করার। ইত্যবসরে অন্য কিছু কাজ সম্পন্ন করতে হবে। সে বাইসানগারকে ডেকে পাঠায়। “আমি চাই শহরের লোকেরা আমার আদেশের কথা জানতে পারুক। আমার বার্তার প্রতিলিপি আমি লিপিকরদের তৈরি করতে বলেছি। আপনার সেরা ধনুর্ধরদের বলেন তীরের মাথায় বেঁধে সেগুলো শহরে ছুঁড়ে মারতে, যাতে লোকেরা পড়তে পারে তাতে কি লেখা রয়েছে।”

    এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। একটাই অসুবিধা, বড্ড মাছি এখানে। তাদের কারণে তার ধূসর ঘোড়াটা অস্থির হয়ে উঠেছে এবং লেজ দিয়ে অনবরত পিঠের দুপাশে আঘাত করছে। সে জিন থেকে নেমে আসে এবং দুপায়ে বাঁধন জড়িয়ে দেয়। যাতে চড়ে বেড়াতে পারলেও দূরে সরে যেতে না পারে এবং আসনপিড়ি করে পাথুরে মাটিতে বসে পড়ে। মাথার অনেক উপর দিয়ে বকের একটা ঝাঁক উড়ে যায়, বেহেশতের পাখি। আল্লাহতালা তার সহায় তারই একটা সূচক।

    “আপনার কি মনে হয়, সে কি করবে?” বাবুরী ঘোড়ার লাগাম ধরা অবস্থায় তার পাশে বসে পড়ে বলে।

    “হাজারা দস্যুটা? সে সাইবানি খান না। আমার ধারণা নিজের লোকেরাই তাকে সমর্থন করে না। তার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। আমি তাকে ছেড়ে দেবো বলে ঠিক করেছি।”

    “আপনি বদলে গিয়েছেন। আপনার আমাদের ভিতরে সেই মারামারির কথা মনে আছে? যখন আমি আপনাকে আত্ম-করুণার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলাম।”

    “তুমি ঠিক কথাই বলেছিলে। আমার নিজের জন্য আসলেই করুণা হচ্ছিলো। তুমি আমাকে নিজের উপরে বিশ্বাস ফিরে পেতে সাহায্য করেছিলে- যে অনেক কিছুই ঘটতে পারে…রাস্তায় বড় হবার কারণে তুমি আমার চেয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। শাহজাদাদের তরুণ বয়সে ঘর থেকে বের করে দেয়া উচিত, যাতে তারা নিজেদের রক্ষা করতে শিখে…”।

    “সম্ভবত অবশ্য আমি খাবারের কথা ঠিক বলতে পারছি না…বা বদ বুড়ো লোকগুলো যারা গলিপথে আপনাকে কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাব দেবে।”

    বাবর হাসে।

    পশ্চিম আকাশে সূর্য তখন মাত্র এক বর্শা উপরে অবস্থান করছে এবং সময় প্রায় শেষ হয়ে এসেছে এমন সময় কাশেম ফিরে আসে। তার চেহারায় উফুল্লভাব ফুটে আছে। “হাজারারা নিজেদের ভিতরে ঝগড়া করছে কেউ মারামারিও আরম্ভ করেছে। কিন্তু মোহাম্মদ মুকুইম আরগুন আপনার প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। সে তার লোকদের নিয়ে দূর্গপ্রাসাদ ত্যাগ করে উত্তরে ফিরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে শহরে অবস্থানরত সৈন্যদেরও তার সাথে যোগ দেবার আদেশ দিয়েছে। তিনি আপনাকে দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বলেছেন। তারপরে আপনি শহর আর বন্দিদের দায়িত্ব। গ্রহণ করতে পারবেন…”

    “আমি যা ভেবেছিলাম সে আমাকে তারচেয়েও বেশি ভয় পেয়েছে। তুমি ভালো কাজ করেছে।”

    খবরটা বাবরের সৈন্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে তারা ঢালের উপরে তরবারি ঠুকে তুমুল উল্লাসে ফেটে পড়ে এবং সেই সাথে আরো একটা শব্দও ভেসে আসে। যদিও অনেক দূর থেকে আর হাল্কাভাবে ভেসে আসছে। কিন্তু নির্ভুলভাবে বোঝা যায় শহরের ভিতরে থেকে একটা কোলাহল ভেসে আসছে। শহরবাসীরা নিশ্চিতভাবেই জানতে পেরেছে কি ঘটেছে।

    বাবর আবার ঘোড়ায় চেপে বসে এবং নিজের লোকদের সামনে দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। “আমাদের দেখেই এই হঠকারী লোকটা নিজের প্রস্রাবে পিছলে পড়েছে। কিছুক্ষণের ভিতরেই মার খাওয়া কুকুরের মতো যে ডাকতেও ভয় পায়, সে আর তার লোকেরা শহর ত্যাগ করবে। পড়ন্ত আলোতে শহর ত্যাগ করার সময়ে সে যেনো ভালো করে আমাদের হৈহুল্লোড়ের শব্দ শুনতে পায়। তাদের তরবারি এখন উজ্জ্বল আর রক্তের দাগবিহীন, সম্মান ভূলুণ্ঠিত।

    সেই রাতে, বেগুনী আর সোনালী আলখাল্লা পরিহিত অবস্থায় কাবুলের সুলতানের রঙ- শাহী দরবারের অমাত্যরা আর নিজের সেনাপতিদের সাথে নিয়ে বাবর কাবুলের প্রধান মসজিদে প্রবেশ করে। মিহরাবের ঠিক নিচে সুলতানের নামাজের স্থান নির্ধারিত রয়েছে যেখানে তৈমূর হিন্দুস্তান অভিযানের সময় নিশ্চয়ই নামাজ আদায় করেছিলেন। বাবর পাথুরে মেঝেতে কপাল ঠেকিয়ে মনে মনে ভাবে। শাহী মসজিদের ইমান তার নামে খুতবা পাঠ করতে তাকে সুলতান ঘোষণা করার পবিত্ৰক্ষণে- সে নিজের ভেতরে আশা আর গর্বের একটা উৎসরণ অনুভব করে। এখন আর সে গৃহহীন যাযাবর না।

    ইমাম নতুন প্রার্থনা শুরু করতে, বাবর মনোযোগ দিয়ে শুনে:

    পরম করুণাময়, আপনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন
    যার কাছ থেকে ইচ্ছা সেটা কেড়েও নেন।
    যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সমৃদ্ধি দান করেন।
    এবং যাকে ইচ্ছা করেন তাকে ধ্বংস করে দেন।
    সকল পবিত্রতার উৎস কেবল আপনিই।
    আপনিই সবশক্তিমান। আল্লাহতা’লা আসলেই সর্বশক্তিমান আর তিনি বাবরের প্রতি সদাশয়।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleব্রাদার্স অ্যাট ওয়ার : অ্যাম্পেয়ার অব দ্য মোগল – অ্যালেক্স রাদারফোর্ড
    Next Article গথ – অৎসুইশি

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }