Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আবার যদি ইচ্ছা কর – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025

    আম্রপালী – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025

    বিশ্বাসঘাতক – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    অ-আ-ক-খুনের কাঁটা – নারায়ণ সান্যাল

    নারায়ণ সান্যাল এক পাতা গল্প156 Mins Read0

    অ-আ-ক-খুনের কাঁটা – ১

    এক

    —আহ্! ওটা কী করছ! ওটা সল্ট! এই নাও –

    নুনের পাত্রটা সরিয়ে সুগার-পটটা রানী দেবী ঠেলে দিলেন স্বামীর দিকে।

    —ও, আয়াম সরি! এবার চিনির পাত্র থেকে এক চামচ চিনি তুলে নিয়ে নিজের চায়ের কাপে মিশিয়ে নিলেন,বাসুসাহেব! সুজাতা কুঞ্চিত ভ্রূভঙ্গে দেখতে থাকে তার বাসুমামার চায়ে চিনি-মেশানোর কায়দাটা। বাসুসাহেব আদৌ ভুলো মানুষ নন।

    রানী বলেন, তোমার আজ কী হয়েছে বল তো? সকাল থেকে ভীষণ অন্যমনস্ক দেখছি!

    বাসু জবাব দিলেন না। সুনিপুণভাবে তিনি চায়ের কাপে চিনি মেশাতে থাকেন। ‘সুনিপুণভাবে’ অর্থে এক বিন্দু চা যেন ছকে প্লেটে না পড়ে, কাপের কাঁধায় চামচের আঘাত লেগে যেন ঠুনঠুন শব্দ না ওঠে। এ সব অসৌজন্য নাকি টেবিল-ম্যানার্সের বিরুদ্ধে। এ জাতীয় আচরণ ওঁর মজ্জায় মজ্জায় মেশানো—সচেতনভাবে করেন না। এ কিছু খানদানী টী-পার্টি নয়। নিতান্ত ঘরোয়া পরিবেশে প্রাতরাশের টেবিলে বসেছেন ওঁরা চারজন—বাসুসাহেব, রানী দেবী, কৌশিক আর সুজাতা। বিশে, মানে ওঁর ছোকরা চাকর, রান্নাঘর থেকে খানকয় গরম টোস্ট এনে রেখে গেল খাবার টেবিলে। রানী দেবী কৌশিকের দিকে ফিরে বললেন, কী ডিটেকটিভ সাহেব? আমার ডিডাকশান ঠিক? তোমাদের আবার কোনও কেস্ এসেছে নিশ্চয়? খুনটা হল কে?

    কৌশিক আর সুজাতা থাকে ঐ একই বাড়িতে। ভাড়াটেও নয়, পেয়িং-গেস্টও নয়, ব্যবসায়ের পার্টনার। বাসুসাহেব প্রখ্যাত ক্রিমিনাল লইয়ার, আর কৌশিক-সুজাতা যৌথভাবে খুলেছে একটা প্রাইভেট গোয়েন্দা-অফিস : ‘সুকৌশলী’। একতলার একদিকে ব্যারিস্টার সাহেবের অফিস, অপরদিকে সুকৌশলীর; মাঝখানে দুই অফিসের যৌথ রিসেপশান কাউন্টার। তাতে বসেন মিসেস্ রানী বাসু—বাসুসাহেবের পঙ্গু সহধর্মিণী। দ্বিতলটা কৌশিক-সুজাতার রেসিডেন্স। বাসুসাহেব সস্ত্রীক একতলাতেই থাকেন, কারণ রানীর পক্ষে হুইল-চেয়ারে দ্বিতলে ওঠা সম্ভবপর নয়।

    রানীর প্রশ্নে কৌশিক টোস্টের কর্তিত অংশটা গলাধঃকরণ করে বলে, আমি যদ্দূর খবর রাখি—এ হপ্তায় কোনও মক্কেল বাসুমামুর চৌকাঠ পার হয়নি!

    বাসু বললেন, ভুল হল তোমার।

    কৌশিক প্রশ্ন করে, এসেছে? আমার নজর এড়িয়ে কোন মক্কেল?

    —তা বলছি না। বলছি, তোমার ‘স্টেটমেন্ট’টা ভুল।

    —কী আবার ভুল হল? আমি তো শুধু বললাম : ‘এ হপ্তায় কোনও মক্কেল বাসুমামুর চৌকাঠ পার হয়নি! ‘

    বাসু জোড়া-পোচের প্লেটটা টেনে নিয়ে বলেন, সুজাতা! তুমি বলতে পার? তোমার কর্তার ঐ স্টেটমেন্টে কোনও ভুল আছে কিনা?

    কৌশিক তার ধর্মপত্নীর দিকে অসহায়ভাবে তাকায়।

    —পারি মামু! ‘সপ্তাহ’ বলতে আমরা সচরাচর ‘বুঝি সোম টু রবি’। সপ্তাহ শুরু হয় ‘সোম’ থেকে। আজই সোমবার। ও ‘মীন’ করছে গত সপ্তাহ, বলছে ‘এ সপ্তাহ’।

    —কারেক্ট! আর কোনও ভুল?

    —হ্যাঁ। আপনার চেম্বারের প্রবেশ-পথে কোনও চৌকাঠের চতুর্থ কাঠ নেই। ইন-ফ্যাক্ট এ বাড়ির কোনও ঘরের দরজাতেই তেমন কোনও কাঠ নেই। তিন-কাঠের ফ্রেম আছে প্রতিটি দরজায়। সুতরাং ‘চৌকাঠ’ শব্দটা যদি কেউ উচ্চারণ করে তবে বুঝতে হবে–হয় সে বাংলায় কাঁচা, অথবা ‘সিভিল এঞ্জিনিয়ারিং-এ’।

    রানী দেবী উচ্চৈঃস্বরে হেসে ওঠেন। বলেন না, না, কৌশিকের মাতৃভাষা বাংলা, বেচারি বোধহয় সিভিল-এঞ্জিনিয়ারিং-এই একটু কাঁচা। তোমার মতো পাকা এঞ্জিনিয়ার নয়!

    কৌশিক শিবপুরের বি. ই.। সিভিল-এরই। বেচারি নিঃশব্দে দ্বিতীয় টোস্টে মাখন মাখাতে থাকে। বাসু বলেন, ও যা বলতে চায়, গুছিয়ে বলতে পারল না, সেই স্টেটমেন্টটা কিন্তু ঠিক। অর্থাৎ ‘গত সপ্তাহে আমার চেম্বারে কোনও মক্কেল আসেনি’। কিন্তু রানুর অবজারভেশানটাকেও উড়িয়ে দিতে পারছি না—ওর ডিডাকশানটাও ঠিক—’পর্বতো বহ্নিমান ধূমাত্’! লবণে শর্করাভ্রম যখন হয়েছে, তখন আমার চিত্তচাঞ্চল্যের হেতু আছে—পত্রাৎ!

    —অর্থাৎ?

    —আজকের ডাকে একটা রহস্যময় চিঠি পেয়েছি। খামের চিঠি। দাঁড়াও দেখাই। এটি নিশ্চয় শনিবারের চিঠি। এসেছে বিকালের ডাকে। কিন্তু ওঁরা সপ্তাহান্তে বেড়াতে গিয়েছিলেন গাড়ি নিয়ে। ফিরেছেন রবিবার রাত্রে। বাসুসাহেবের ঘুম ভাঙে কাক-ডাকা ভোরে। বাড়ির আর সকলের নিদ্রাভঙ্গের আগেই তিনি প্রাতঃকৃত্যাদি সেরে এবং এক চক্কর প্রাতঃভ্রমণ সমাপনান্তে তাঁর চেম্বারে এসে বসেন। গত দিনের বিকালের ডাকে আসা চিঠিগুলি পড়েন এবং তার মাথায় এ. বি. সি. দাগ দিতে দিতেই খাবার টেবিলে ডাক পড়ে। প্রাতরাশ শেষ হলে রানী দেবী এসে চিঠিগুলি সর্টিং করেন। কোন্ চিঠি যাবে ছেঁড়া কাগজের ঝুড়িতে, কোটা সরিয়ে রাখতে হবে সময়মতো জবাব দিতে, আর কোটা জরুরি। যে কোনও কারণেই হোক, আজ সে নিয়মের ব্যতিক্রম হয়েছে। ডাকের একখানি চিঠি আশ্রয় পেয়েছে বাসুসাহেবের ড্রেসিংগাউনের পকেটে। খামটা বের করে উনি সন্তর্পণে টেবিলের উপর রেখে বললেন, তোমরা একে একে দেখ। তারপর আলোচনা হবে। না, না, অত সাবধানতার দরকার নেই। খামে কোনও ফিঙ্গার-প্রিন্ট নেই। কৌশিক আর সুজাতার চোখাচোখি হল। কৌশিক স্ত্রীকে বললে, আমার দিকে তাকাচ্ছ কেন? তুমিই আগে দেখ, আমি আবার কী বলতে কী বলব!

    সুজাতা মুখ টিপে হেসে বলে, বাঃ! তা কী হয়? তুমি হলে গিয়ে ‘সুকৌশলী’র. সিনিয়ার পার্টনার!

    রানী দেবী হেসে বলেন, তোমাদের ঐ অজাযুদ্ধ-ঋষিশ্রাদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত আমার বাপু ধৈর্য থাকবে না। আমিই দেখি প্ৰথম—

    খামটা লম্বাটে। পোস্ট-অফিসে যে রকম খাম কিনতে পাওয়া যায়, তা নয়। বেশ ভালো খাম। দামী, মোটা কাগজ। খামের উপর টিকিট সাঁটা। নাম-ঠিকানা টাইপ করা—মায় কোনায় Q.M.S. ছাপটাও। ভিতরের কাগজখানা কিন্তু খেলো। তার এক পিঠে কিছু অঙ্ক কষা। সম্ভবত বীজগণিতের। মনে হয় কোনও বড় কাগজ থেকে লম্বালম্বিভাবে ছেঁড়া। তাই অঙ্কটার সবটা বোঝা যাচ্ছে না। অপর পৃষ্ঠায় ইংরাজীতে টাইপ করা একখানি চিঠি। চিঠির উপরে একটি কুমিরের ছোট্ট ছবি। রঙিন ছবি। কোনও ইংরেজি ছবির বই থেকে কেটে আঠা দিয়ে সেঁটে দেওয়া হয়েছে। ছবির নিচে টাইপ করা আছে ইংরাজী ব্লক-ক্যাপিটালে—

    ‘A’-FOR ALLIGATORAIH NAMAH!

    তার নিচে ইংরেজী চিঠিখানার আক্ষরিক অনুবাদটা এইরকম :

    “শ্রীল শ্রীযুক্ত বাবু পি. কে. বাসু, বার-অ্যাট্-লয়েষু,

    “মহাশয়,

    “শুনিয়াছি, আপনি কী একটি ‘আন-ব্রোকেন-রেকর্ডের অধিকারী।

    “আপনাকে ষড়বিংশতিটি সুযোগ দিতেছি। হয়তো X, Q অথবা Z-এ পৌঁছিয়া আমি কিছু পোয়েটিক-লাইসেন্স গ্রহণ করিতে বাধ্য হইব। নিজগুণে ক্ষমা করিবেন!

    “ষড়বিংশতিবারই গাড্ডু মারিলে কেদ্দানি প্রদর্শন হইতে অবসর গ্রহণ করিবেন কি? “রেডি-স্টেডি-গো : ‘A’ ফর ASANSOL। তাং–এ মাসের উনিশে! ইতি একান্ত গুণমুগ্ধ।

    “A-B-C”

    বার-বার তিনবার পাঠ করে রানী দেবী নিঃশব্দে পত্রখানি সুজাতার হাতে দিলেন। সুজাতাও খুঁটিয়ে দেখল চিঠিখানা। কোনও মন্তব্য প্রকাশ করল না। হস্তান্তরিত করল কৌশিককে। কৌশিক কিন্তু চিঠিখানা পড়ে নীরব থাকতে পারল না। বললে, বদ্ধ উন্মাদ

    রানী বললেন, কিন্তু বদ্ধ উন্মাদের ইংরেজী জ্ঞানটা টনটনে। একটাও বানান ভুল করেনি।

    —এবং টাইপিং-এ পাকা হাত। ছাপার ভুলও নেই।—যোগ করল সুজাতা।

    —কিন্তু ঐ কথাটার মানে কী হল? ঐ ALLIGATORAIH NAMAH? – জানতে চান রানী।

    বাসু বলেন, Alligator শব্দের তৃতীয়ার বহুবচন। লোকটা সংস্কৃত ভালো জানে। এবং বিসর্গ চিহ্ন যে রোমান হরফে ‘H’ দিয়ে বোঝাতে হয় সেটাও। শুধু শেয়ানা-পাগল নয়, লোকটা শিক্ষিত। সম্ভবত উচ্চশিক্ষিত!

    কৌশিক বলে, মানছি! শিক্ষিত, উচ্চশিক্ষিত, মহোমহাপাধ্যায়। কিন্তু বদ্ধ-উন্মাদ! বাসুসাহেব চুরুট ধরাচ্ছিলেন। নিপুণভাবে সেটা ধরিয়ে একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে বলেন, সুজাতা?

    — উঁ?

    —এবার কৌশিকের স্টেটমেন্টে কোনো ভুল নজরে পড়েছে তোমার?

    —পড়েছে বাসুমামু। দুটো ভুল। একটা ভাষার, একটা ডিডাকশনের। কথাটা ‘মহোমহাপাধ্যায়’ নয়, ‘মহামহোপাধ্যায়’; আর বদ্ধ উন্মাদ মানে raving lunatic! সে চিঠি টাইপ করতে কিংবা খামের উপর ঠিকানা লিখতে পারে না, উপযুক্ত টিকিট সাঁটতে জানে না, ‘Q.M.S.’ শব্দের অর্থ বোঝে না।

    —কারেক্ট! ফুল মার্কস!

    কৌশিক উঠে দাঁড়ায়। বলে, অনেক কাজ বাকি আছে। উন্মাদের প্রলাপ- —সুজাতা?

    —হ্যাঁ মামু। আমি লক্ষ করেছি। এবারও ওর ভুল হয়েছে। ট্রান্সফার্ড এপিথেট’! নিজের বাকপ্রয়োগের আর বিশ্লেষণের ভ্রান্তিকে সে মনে করছে অপরের পাগলামি

    রানী দেবী কৌশিকের পাঞ্জাবির হাতটা খপ্ করে চেপে ধরেন। বাসুসাহেবের দিকে ফিরে বলেন, ‘লেগপুলিং’ থামাও দেখি তোমরা। কৌশিক বলতে চায়, এটা পাগলের কাণ্ড। হতে পারে। ‘লোকটা বদ্ধ উন্মাদ’ বলেছে সে—এটাও ‘পোয়েটিক লাইসেন্স’। একটু অতিশয়োক্তি। আমারও মনে হয়, চিঠিখানা যে লিখেছে সে একটু—কী বলব? ‘একসেন্ট্রিক’, আধপাগলা! এরকম প্র্যাকটিক্যাল জোক করা তার উচিত হয়নি। সে ঘুরিয়ে বলতে চেয়েছে…আই মীন, সে তোমাকে একটা চ্যালেঞ্জ থ্রো করেছে! ইঙ্গিত করেছে, ঊনিশ তারিখে আসানসোলে একটা দুর্ঘটনা ঘটতে চলেছে, যার কিনারা তুমি করতে পারবে না। খুব সম্ভবত এটা একটা অমূলক হুমকি। তোমার রাত্রের নিদ্রাহরণই তার উদ্দেশ্য।

    —কেন? আমার নিদ্রাহরণে তার স্বার্থ?

    —যে কোনও কারণেই হোক সে তোমার উপর খাপ্পা। চ্যাঙড়া ছেলে হলে বলতে হবে ওদের সরস্বতী পুজোয় তুমি চাঁদা দাওনি, তাই একটা হুমকি দিয়ে তোমার রাতের ঘুম ছুটিয়ে দিচ্ছে।

    —সংস্কৃত বা ইংরেজিতে যার এরকম দখল সে পাড়ায় পাড়ায় মা সরস্বতীর নামে চাঁদা চেয়ে বেড়াবে?

    —ওটা একটা কথার কথা। ‘গাড্ডু’ এবং ‘কেদ্দানি’ শব্দ প্রয়োগে ওটা আমার মনে হয়েছে। হয়তো তোমার কল্যাণে বেচারি বেশ কিছুদিন ঘানি ঘুরিয়েছে। বেরিয়ে এসে এভাবেই শোধ নিচ্ছে।

    বাসুসাহেব সুজাতার দিকে ফিরে বলেন, আর তোমার মত?

    —আমি মামিমার সঙ্গে একমত। প্র্যাটিক্যাল জোক!

    —আর কৌশিক?

    কৌশিক ইতিমধ্যে আবার বসে পড়েছে। বললে, আমার বিশ্বাস সুজাতার স্টেটমেন্টটা ভুল। সে যা ‘মীন’ করতে চায়, তার উল্টো কথা বলছে। ও বলতে চায় ‘ইম্‌-প্র্যাকটিক্যাল জোক’। পাগলটা ইঙ্গিতে বলেছে, আপনাকে ছাব্বিশটা সুযোগ দেবে! এ টু জেড। শুরু হচ্ছে ‘এ ফর আসানসোল’ দিয়ে। হয়তো শেষ হবে Zaire বা Zambia দিয়ে। সেটা অসম্ভব! ইম্‌প্র্যাকটিক্যাল!

    বাসু বলেন, এক্ষেত্রে কী আমার কর্তব্য?

    কৌশিক বলে, চিঠিখানা ছেঁড়া কাগজের ঝুড়িতে ফেলে দেওয়া। ওটার কথা ভুলে থাকা। এবং রাত্রে শোবার আগে একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলা।

    —এটাই তোমাদের সম্মিলিত অভিমত?

    রানী বলেন, তুমি কী করতে চাও?

    —কৌশিক! তুমি এই চিঠি আর খামের খান-তিনেক Xerox কপি করে নিয়ে এস। আমি ততক্ষণ ডি. আই. জি., আই. ডি.-কে একটা ফোন করে ব্যাপারটা জানাই।

    সুজাতা বলে, আপনি বিশ্বাস করেন—উনিশ তারিখে আসানসোলে একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে?

    –পয়েন্ট-জিরো-ওয়ান পার্সেন্ট চান্স আছে বৈকি। আজ রাত্রে আমাকে ঘুমের ট্যাবলেট খেতে হবে না; কিন্তু তোমাদের কথামতো চিঠিখানা যদি ছিঁড়ে ফেলি আর বিশ তারিখের খবরের কাগজে যদি দেখি, আসানসোলে একটা বিশ্রী ব্যাপার ঘটেছে, তাহলে বিশ তারিখে রাত্রে একমুঠো স্লিপিং ট্যাবলেট খেলেও আমার ঘুম হবে না।

    রানী সায় দেন, তা ঠিক। এমনও হতে পারে–ঝড়ে কাক মরবে আর ফকিরের কেরামতি বাড়বে। অর্থাৎ নিতান্ত দৈবক্রমে আসানসোলে একটা খুন-জখম বা ট্রেন অ্যাকসিডেন্ট হবে—যার সঙ্গে ঐ পত্রলেখকের কোনও সম্পর্কই নেই, অথচ আমরা নিজেদের দায়ী করব।

    কৌশিক বললে, সে-কথা ঠিক। দিন খামটা, আমি জেরক্স করিয়ে আনি। হোক পাগলামি, তবু ‘আঠারো ঘা’ বানানোর দুর্লভ সুযোগ থেকে কেন নিজেদের বঞ্চিত করি?

    —আঠারো ঘা মানে?—সুজাতা জানতে চায়।

    —‘বাঘে ছুঁলে’ যা হয়। এটাও ট্রান্সফার্ড এপিথেট’! ‘বাঘ’ অর্থে ‘পুলিস’।

    রানী দেবী হাসতে হাসতে বলেন, তা ঠিক। এক নম্বর ‘ঘাটা নিয়ে অত চিন্তা করছি না। বহ্বারম্ভে শুরু হলেও সেটা লঘুক্রিয়া; কিন্তু দু-নম্বর ঘা হল কৌশিকের জেরক্স করতে দৌড়ানো। তিন নম্বর এখনি পেট্রল পুড়িয়ে থানায় যাওয়া, চার নম্বর…

    বাসু বলেন, তবু তো তোমরা আঠারোয় থামবে। আমাকে তো ছাব্বিশ পর্যন্ত ছুটবে হবে!

    ডি. আই. জি., সি. আই. ডি. কাগজখানা দেখে বললেন, আপনি চিন্তা করবেন না বাসুসাহেব। এ জাতীয় উড়ো চিঠি আমরা সপ্তাহে সপ্তাহে পাই। লোকটা যে কোনও কারণেই হোক আপনার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত। না হলে ‘আনব্রোকন রেকর্ড’ কথাটা উল্লেখ করত না। এ পর্যন্ত কোনও অপরাধীই যে আপনার হাত এড়িয়ে নিষ্কৃতি পায়নি—এ খবরটুকু তার জানা। হয়তো আদালত এলাকার লোক। আপনার কাছে বেইজ্জত হয়েছে। তা যদি হয় আমি খুশি হব। কারণ দ্বিতীয় সম্ভাবনা হচ্ছে লোকটা ক্রিমিনাল ওয়ার্ল্ডের। সে ক্ষেত্রে একটু ভাবনার কথা—

    —কী ধরনের ভাবনার কথা?

    —ধরুন, লোকটা অপরাধ জগতের। আপনি তো জানেনই যে, ওদের বিভিন্ন দলের মধ্যে বেশ রেষারেষি আছে। এমন হতে পারে লোকটা ঘটনাচক্রে জানতে পেরেছে যে, ওর বিপক্ষ দলের কেউ কেউ উনিশে একটা রাহাজানির পরিকল্পনা করেছে আসানসোলে। খবরটা সে সরাসরি পুলিসকে জানাতে চায় না। পাগল সেজে আপনাকে জানালো। কারণ তার বিশ্বাস—আপনি সেটা আমাদের জানাবেন। পুলিস সতর্ক থাকবে। কিন্তু ওর বিপক্ষদলের লোকেরা তাকে সন্দেহ করবে না। ভাববে, কোনো পাগলের কাণ্ড—যে হতভাগা নিতান্ত ঘটনাচক্রে ব্যাপারটা জানতে পেরেছে আর ফকির সেজে ঝড়ে মরা কাকটার কৃতিত্ব দাবি করতে চায়।

    —বুঝলাম। এ ক্ষেত্রে আপনি কী করতে চান?

    —আসানসোলে কোনো স্পেশাল স্কোয়াড নিশ্চয়ই পাঠাবো না। ডি. আই. জি. বার্ডওয়ান রেঞ্জকে ব্যাপারটা জানিয়ে রাখব অবশ্য। যাতে আসানসোল, থানা সজাগ থাকে।

    —আমার আর কিছু করণীয় আছে?

    —আপনি আবার কী করবেন? আপনি পুলিসে রিপোর্ট করেছেন, পাগলের চিঠিখানার অরিজিনাল কপি পৌঁছে দিয়েছেন, ব্যস! আপনার করণীয় কাজ একটিই—এ ব্যাপারটা স্রেফ্ ভুলে গিয়ে নিজের কাজকর্মে মগ্ন থাকা।

    —থ্যাঙ্কু।

    বাসুসাহেব তাঁর নিউ আলিপুরের বাড়িতে ফিরে গেলেন নিশ্চিন্ত মনে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসারমেয় গেণ্ডুকের কাঁটা – নারায়ণ সান্যাল
    Next Article উলের কাঁটা – নারায়ণ সান্যাল

    Related Articles

    নারায়ণ সান্যাল

    আবার যদি ইচ্ছা কর – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025
    নারায়ণ সান্যাল

    আম্রপালী – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025
    নারায়ণ সান্যাল

    বিশ্বাসঘাতক – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025
    নারায়ণ সান্যাল

    সোনার কাঁটা – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025
    নারায়ণ সান্যাল

    মাছের কাঁটা – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025
    নারায়ণ সান্যাল

    পথের কাঁটা – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    আবার যদি ইচ্ছা কর – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    আবার যদি ইচ্ছা কর – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    আবার যদি ইচ্ছা কর – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025

    আম্রপালী – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025

    বিশ্বাসঘাতক – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.