Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আঁখি এবং আমরা ক’জন – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প180 Mins Read0
    ⤶

    ১৩-১৪. মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়

    যখন আমরা বুঝতে পারলাম খুব বিপদের মাঝেও কেমন করে সবাই মিলে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়

    রিতু বলল, “এখন আমাদের খুব সাবধানে কাজ করতে হবে। বাইরে বের হয়ে আবার যেন ওদের হাতে ধরা না পড়ি।”

    আমি মাথা নাড়লাম, বললাম, “হ্যাঁ।”

    শান্তা বলল, “কিন্তু বের হয়ে আমরা কোনদিকে যাব? আমাদের চোখ বেঁধে এনেছে, কিছু দেখিনি। আমরা তো এই জঙ্গলের রাস্তা চিনি না।”

    আঁখি বলল, “আমি রাস্তা চিনি।”

    আমরা অবাক হয়ে বললাম, “তুই রাস্তা চিনিস?”

    “হ্যাঁ। তোদের চোখ বেঁধে এনেছে–তোরা কিছু দেখিসনি। আমার দেখতে হয় না, আমি তোদের নদী পর্যন্ত নিয়ে যাব। সেখানে অপেক্ষা করলে আগে হোক পরে হোক কারো না কারো নৌকা আসবে।”

    শান্তা ইতস্তত করে বলল, “যদি না আসে তা হলে?”

    মামুন বলল, “তা হলে আমরা নদীর তীর ধরে হাঁটতে থাকব। একসময় না একসময় কোনো মানুষের বাসা পেয়ে যাব।”

    রিতু বলল, “হ্যাঁ দরকার হলে আমরা জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতে পারব। যতদিন দরকার।”

    আঁখি মাথা নাড়ল, বলল, “যতদিন দরকার।”

    রিতু বলল, “এই ঘর থেকে বের হয়ে প্রথমেই কী করতে হবে জানিস?”

    “কী?”

    “ঘরের তালাটা খুলে সেই তালাটা লাগাতে হবে কাদের বক্সের দরজায়। বাইরে খাম্বায় চাবি ঝুলিয়ে রাখে। আমি দেখেছি।”

    আমি দাঁত বের করে হেসে বললাম, “ভেরি গুড! ওরা যদি তা হলে টেরও পায় তারপরেও আমাদের পিছু পিছু আসতে পারবে না।”

    আমরা তখন বসে বসে পুরো পরিকল্পনাটার খুঁটিনাটি অনেকবার আলোচনা করলাম। খোদা না করুক হঠাৎ করে যদি ধরা পড়ে যাই তা হলে কী করতে হবে, কে কোনদিকে পালাবে, আঁখির সাথে কে থাকবে সবকিছু ঠিক করে নিলাম। তারপর ঘর থেকে বের হওয়ার জন্যে রেডি হলাম।

    আমি সবার আগে গর্ত দিয়ে বের হলাম। গর্তটা আরেকটু বড় হলে ভালো হত, বের হতে আমার বেশ কষ্ট হল, ভিতর থেকে তাদের আমাকে ধাক্কা দিয়ে বের করতে হল। কাপড়-জামাতে মাটি লেগে গেল এবং ঘাড়ের কাছে মনে হল খানিকটা ছালও উঠে গেল।

    আমি বের হয়ে চারিদিকে তাকালাম। আশেপাশে কেউ নেই। আকাশে একটা চাঁদ উঠেছে, সেই চাঁদের আলোতে চারপাশের গাছগুলোর লম্বা ছায়া পড়েছে। কাছাকাছি কোথাও ঝিঁঝি পোকা ডাকছিল আমি বের হতেই সেটা থেমে গেল। খানিকক্ষণ পর আবার ঝিঁঝি পোকা ডাকতে শুরু করে। আমি গর্তে মাথা ঢুকিয়ে ফিসফিস করে বললাম, “আয় পরের জন।”

    এবারে সুজন বের হয়ে এলো। সুজন মনে হয় আমার থেকে মোটা, তার কারণ সে মাঝখানে আটকে গেল, বাইরে বেরও হতে পারে না, ভিতরে ঢুকেও যেতে পারে না। আমি তাকে বাইরে টানতে লাগলাম, অন্যেরা ভিতর থেকে ঠেলতে লাগল, শেষ পর্যন্ত সে বাইরে বের হয়ে এল। লম্বা লম্বা নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে ফিসফিস করে বলল, “জানটা আর একটু হলে বের হয়ে যেত! ইস পেটের চামড়া উঠে গেছে!”

    “কথা বলিস না! বের হয়েছিস সেটাই বেশি।”

    সুজন হাসার চেষ্টা করল, চাঁদের আলোতে সেই হাসিটা খুব ভালো দেখা গেল না। আমি আবার গর্তে মাথা ঢুকিয়ে বললাম, “এইবারে কে?”

    আঁখি বলল, “আমি।”

    মেয়েদের শরীর মনে হয় অনেক বেশি ভাজ হতে পারে, কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই আঁখি বের হয়ে আসল। আঁখির পরে রিতু, তারও কোনো সমস্যা হল না। শান্তাকে একটু ধাক্কাধাক্কি করতে হল। সবার শেষে মামুন, তাকে আমরা সবাই মিলে টেনে বের করে ফেললাম। আমাদের টানাটানিতে সে বের হল সবচেয়ে তাড়াতাড়ি কিন্তু সে জন্যে তার ঘাড় এবং পেটের ছাল অনেকখানি উঠে গেল বলে মনে হল। এখন অবশ্যি সেটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাল না।

    আমরা নিঃশব্দে ঘরের সামনে দাঁড়ালাম। রিতু পা টিপে টিপে ঘরের খাম্বার সাথে ঝোলানো চাবিটা এনে আমাদের ঘরের তালাটা খুলে নেয়। তারপর ফিসফিস করে বলে, “তোরা সবাই এখানে অপেক্ষা কর। আমি আর তিতু কাদের বক্সকে তালা মেরে আসি।”

    তখন আমি আর রিতু খুব সাবধানে পা টিপে টিপে কাদের বক্সের ঘরের সামনে গেলাম। ঘরের ভেতর থেকে নাক ডাকার শব্দ শোনা যাচ্ছে। আবছা

    অন্ধকারে ভালো করে দেখা যায় না। আমি তার মাঝে দরজার কড়া দুটো ধরে কাছাকাছি এনে রাখলাম, রিতু তখন খুট করে তালা মেরে দিল। ঠিক তখন ঘরের ভেতর থেকে বিড়বিড় করে কেউ কিছু একটা কথা বলল। এক মুহূর্তের জন্যে আমরা ভয় পেয়ে একেবারে পাথরের মতো জমে গেলাম, কিন্তু দেখলাম ভয়ের কিছু নেই, কেউ ঘুম থেকে উঠেনি, কেউ একজন ঘুমের ভিতর কথা বলছে।

    আমরা কিছুক্ষণ নিঃশব্দে অপেক্ষা করি, তারপর দুজন পা টিপে টিপে অন্যদের কাছে ফিরে আসি। সবাই খানিকটা উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছিল, আমাদের ফিরে আসতে দেখে তারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।

    শান্তা বলল, “চল, রওনা দিই। আঁখি, কোনদিকে যাব?”

    আঁখি জঙ্গলের ভেতর একটা পথ দেখিয়ে বলল, “এদিকে।”

    আমরা তখন আঁখির পিছনে পিছনে রওনা দিয়েছি, দশ পাও অগ্রসর হইনি হঠাৎ আঁখি দুই হাত দুই পাশে ছড়িয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল, চাপা স্বরে বলল, “সাবধান।”

    আমি ভয় পাওয়া গলায় বললাম, “কী হয়েছে?”

    “মানুষ।”

    “কোথায়?”

    “সামনে।”

    আমরা কোনো মানুষ দেখতে পেলাম না কিন্তু আঁখি যখন বলেছে তখন মানুষ নিশ্চয়ই আছে। আমি বললাম, “তোরা অপেক্ষা কর, আমি দেখে আসি।”

    রিতু বলল, “খুব সাবধান কিন্তু, কোনোভাবে যেন টের না পায়।”

    “ঠিক আছে।”

    আমি খুব সাবধানে পা টিপে টিপে এগিয়ে যাই। গাছের শুকনো পাতায় পা পড়ে যেন কোনো শব্দ না হয় সেই জন্যেও প্রত্যেকবার পা ফেলার আগে জায়গাটা পা দিয়ে দেখে নিচ্ছিলাম। বেশ খানিক দূর নিচে নামার পর আমি মানুষটিকে দেখতে পেলাম। একটা গাছে রাইফেলটাকে হেলান দিয়ে রেখে উবু হয়ে বসে আছে। চাঁদের আলোতে মানুষটাকে আবছা দেখা যাচ্ছে, মনে হল শুকনো ছোটখাটো মানুষ। সে নিশ্চয়ই এলাকাটাকে পাহারা দিচ্ছে। তাকে একটা মশা কামড় দিল, হাত দিয়ে মশাটাকে মারার চেষ্টা করে বিড় বিড় করে সে মশাটাকে খারাপ ভাষায় খানিকক্ষণ গালাগাল করল।

    আমি আবার খুব সাবধানে অন্য সবার কাছে ফিরে এলাম। তারা উদ্বিগ্ন মুখে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। রিতু জিজ্ঞেস করল, “আছে মানুষ?”

    “হ্যাঁ। আছে।”

    “সর্বনাশ!”

    “রাইফেল নিয়ে বসে আছে। পাহারা দিচ্ছে।”

    “তা হলে উপায়?” মামুন বলল, “অন্যদিক দিয়ে যাই।”

    আঁখি বলল, “আমি কিন্তু অন্যদিকের রাস্তা চিনি না। আমি শুধু এইটাই চিনি।”

    রিতু বলল, “খুঁজে খুঁজে বের করে ফেলি।”

    আমরা অন্যদিক দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। একদিকে খাড়া খাদ-যাওয়ার উপায় নেই। অন্যদিকে ঘন জঙ্গল, কাঁটা গাছ। আমরা হতাশভাবে ফিরে এলাম, যাওয়ার রাস্তা এই একটাই, সেই জন্যে এখানেই পাহারা। তখন

    সুজন বলল, “আয়, মানুষটাকে এটাক করি!”

    আমরা সবাই সুজনের দিকে তাকালাম, “এটাক?”

    “হ্যাঁ। আমরা ছয়জন যদি পিছন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ি তা হলে বেটা যাবে কোথায়? সত্যি। আলে সেই ম

    কথাটি সত্যি। আমরা ছয়জন মানুষ, ছয়জন মানুষ যদি একসাথে কারো উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তা হলে সেই মানুষটা যাবে কোথায়? তারপরেও শান্তা একটু ইতস্তত করে বলল, “মারামারি? আমি জীবনে মারামারি করি নাই।”

    “আমরাই কি করেছি না কি?” আমি বললাম, “সুজন ছাড়া আর কে মারামারি করে?”

    “তা হলে?”

    “আজকে করতে হবে।”

    আঁখি বলল, “আগে চেষ্টা করি মারামারি ছাড়া মানুষটাকে ধরতে।”

    “সেটা কীরকম?”

    “খুব আস্তে আস্তে পিছন থেকে যাব। একজন মানুষটার পিছনে একটা গাছের ডাল ধরে গলা মোটা করে বলবি “হ্যান্ডস আপ। নড়লেই গুলি। মানুষটা যদি হাত উপরে তুলে সারেন্ডার করে তা হলে হাত বেঁধে ফেলবি। যদি সারেন্ডার করে তখন সবাই মিলে এটাক করব।”

    রিতু বলল, “কিন্তু তা হলে মানুষটা তো জেনে যাবে।”

    “আমরা কারা কয়জন সেটা তো জানবে না। গলা মোটা করে বলতে হবে যেন বুঝতে না পারে আমরা কারা।”

    প্রথমেই মারামারি করতে হবে না, শুধু দরকার হলে তখন মারামারি, সেই জন্যে সবাই রাজি হয়ে গেল। সুজন বলল, “ঠিক আছে। কিন্তু সত্যি সত্যি যদি মারামারি করতে হয় তা হলে কেউ কিন্তু পিছাতে পারবি না।”

    সবাই মাথা নাড়ল, বলল, “ঠিক আছে।”

    রিতু বলল, “রান্নাঘরের কাছে অনেকগুলো চ্যালাকাঠ আছে। সবাই একটা করে নিয়ে নিই, যদি দরকার হয় দমাদম করে বাড়ি দিব।”

    আমরা সবাই রাজি হলাম। রিতু আমাদেরকে রান্নাঘরের কাছে নিয়ে গেল। সেখান থেকে সবাই নিজেদের পছন্দমতো লাঠি বেছে নিলাম। উঠানে কাপড় ধুয়ে শুকাতে দেওয়ার দড়ি পাওয়া গেল, সেটাও খুলে নেওয়া হল। পিছন থেকে ধরে ভয় দেখানোর জন্যে একটা বাঁশের কঞ্চি বেছে নেওয়া হল–সেটা মোটামুটি বন্দুকের নলের মতো।

    মামুন জিজ্ঞেস করল, “কে হ্যান্ডস আপ বলবে?”

    আঁখি বলল, “যে গলা মোটা করে বলতে পারবে, সে।”

    আমরা সবাই গলা মোটা করে বললাম, আঁখি শুনে আমার গলাটা পছন্দ করল। আমি আরো কয়েকবার প্র্যাকটিস করলাম, যখন আঁখি বলল কাজ চলে যাবে তখন আমরা রওনা দিলাম। রওনা দেওয়ার আগে ঠিক করে নিলাম যদি আমাদের পরিকল্পনা কাজ না করে, মানুষটা যদি দেখে ফেলে তা হলে একেবারে হইহই করে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সবার আগে রাইফেলটা কেড়ে নিতে হবে। যেভাবে হোক।

    এবারে আমরা রওনা দিলাম। সবার বুক ধক ধক করে শব্দ করছে, মনে হচ্ছে সেই শব্দ বুঝি সবাই শুনতে পাচ্ছে। আমরা সবাই খুব সাবধানে পা টিপে টিপে যাচ্ছি। সবাই খুব সতর্ক যেন এতোটুকু শব্দ না হয়। সবার আগে আমি, সবার পিছনে আঁখি। আমার হাতে বাঁশের কঞ্চি, আঁখির হাতে দড়ি, অন্য সবার হাতে চ্যালাকাঠ।

    কাছাকাছি পৌঁছানোর পর আমরা সবাই মানুষটাকে দেখতে পেলাম, আমাদের দিকে পিছন ফিরে বসে আছে। একটা গাছে রাইফেলটা হেলান দেওয়া। একটা জায়গায় এসে আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আঁখি দাঁড়িয়ে গেল। অন্য পাঁচজন এগিয়ে যেতে থাকি। মানুষটাকে পিছন থেকে ঘিরে ফেলা হল, আমি খুব সাবধানে এগিয়ে গেলাম। আমার সাথে সুজন, আমি যখন তার পিছনে বাঁশের কঞ্চিটাকে লাগিয়ে বলব হ্যান্ডস আপ তখন সে একই সাথে রাইফেলটাকে ছিনিয়ে নেবে। আমরা মাথা নিচু করে পা টিপে টিপে এগুতে থাকি, আর মাত্র কয়েক পা, উত্তেজনায় আমাদের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল, বুকের ভিতর হৃৎপিণ্ড ঢাকের মতো শব্দ করতে থাকে।

    ঠিক এই সময় মানুষটা কেমন যেন ঝটকা মেরে নড়েচড়ে বসল। আমরা সবাই পাথরের মতো জমে গেলাম। মানুষটা তখন তার পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট বের করে মুখে লাগায়। তারপর ফস করে একটা ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে সিগারেটটা ধরানোর জন্যে মাথা নিচু করে। এটা হচ্ছে সবচেয়ে ভালো সময়, আমি এক লাফে মানুষটার পিছনে গিয়ে বাঁশের কঞ্চিটা তার পিঠে ধরলাম, মুহূর্তের মাঝে সুজন রাইফেলটা ঝটকা মেরে তুলে নিল। কী বলতে হবে এতোক্ষণ ধরে প্র্যাকটিস করে আসছিলাম, এখন সেটা ভুলে গিয়েছি। যা মনে আসল গলা মোটা করে সেটাই বলে ফেললাম, “ব্যাটা বদমাইশের বাচ্চা। একেবারে খুন করে ফেলব। একটু নড়েছিস কী গুলি। মাথার ঘিলু বের করে ফেলব!”

    মানুষটা নড়ল না, ভাঙা গলায় বলল, “কেডা? ইসমাইল? বিশ্বাস করেন আমার দোষ নাই। আমি-”

    ইসমাইল কে, কেন তাকে কৈফিয়ত দিতে হবে জানি না। আমি মাথাও ঘামালাম না, গলা মোটা করে বললাম, “একটা কথা না, হাত উপরে তোল।”

    তার হাত থেকে জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি আর সিগারেট নিচে খসে পড়ল, সে দুই হাত উপরে তুলল। সবাই তখন কাছাকাছি ছুটে আসে। সবার আগে আঁখি, সে দড়িটা এগিয়ে দেয়। আমি মানুষটার হাত দুটো পিছনে নিয়ে দড়ি দিয়ে বাঁধতে শুরু করি।

    ঠিক এরকম সময় মানুষটার কী যেন সন্দেহ হল, সে মাথা ঘুরিয়ে পিছন দিকে তাকানোর চেষ্টা করল, হঠাৎ করে সে বুঝে গেল, ইসমাইল নয়–তাকে ধরেছি আমরা! মানুষটা তখন ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে–দমাদম করে তার পিঠে চ্যালাকাঠ এসে পড়তে থাকে। শুধু তাই না, সুজন রাইফেলটা তাক করে বলল, “নড়লেই গুলি। নড়লেই গুলি।”

    আমার বাঁশের কঞ্চি দিয়ে গুলি বের হয় না, কিন্তু এই ভয়ানক রাইফেল দিয়ে নিশ্চয়ই গুলি বের হয়, মানুষটা সেটা জানে। ভুল জায়গায় টেপাটেপি করলে সত্যি সত্যি গুলি বের হয়ে যেতে পারে সেটা এই মানুষটা টের পেয়েছে, কাজেই সে নড়ল না। মানুষটা উপুর হয়ে শুয়ে রইল আর আমরা খুব ভালো করে তার হাত দুইটা পিছনে নিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেললাম।

    মানুষটা বিড় বিড় করে বলল, “তো-তোমরা? তো-তোমরা কীভাবে?”

    সুজন রাইফেলের নল দিয়ে খোঁচা দিয়ে বলল, “আমরা কীভাবে সেটা এখনো দেখ নাই! তোমাদের সবগুলোকে ধরে এখন জেলে ঢোকানো হবে।”

    মানুষটার হাত দুটো বাঁধা শেষ হলে যখন পা দুটো বাঁধছি তখন হঠাৎ করে মানুষটা একটু মাথা তুলে কী যেন দেখল। সে কী দেখল আমরা বুঝতে পারলাম না কিন্তু হঠাৎ করে প্রচণ্ড আতঙ্কে সে উঠে বসে তারপর হাত বাঁধা অবস্থাতেই নিচের দিকে ছুটতে শুরু করে। মানুষ দৌড়ায় পা দিয়ে কিন্তু দৌড়ানোর জন্যে হাত দুটোর খুব দরকার। হাত ব্যবহার করতে না পারলে কিছুতেই তাল সামলানো যায় না, তাই মানুষটাও তাল সামলাতে পারল না, সে হুড়মুড় করে নিচে গড়িয়ে পড়ল। কোনোমতে আবার উঠে দাঁড়িয়ে আবার ছুটতে থাকে, ধরাম করে আবার একটা গাছের ডালে ধাক্কা খেয়ে সে পড়ে গেল। আবার উঠে দাঁড়াল তারপর আবার ছুটতে লাগল। দেখে মনে হল মানুষটার বুঝি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমি ভয় পাওয়া গলায় বললাম, “কী হল? মানুষটা কী দেখে এতো ভয় পেয়েছে?”

    আঁখি বলল, “আগুন। আমি ধোঁয়ার গন্ধ পাচ্ছি।”

    আমরা ধোঁয়ার গন্ধ পেলাম না কিন্তু দেখতে পেলাম কাছাকাছি ধিকিধিকি করে আগুন জ্বলছে। এই মানুষটাকে যখন আমরা ধরেছি তখন তার সিগারেট আর ম্যাচের কাঠি নিচে ছিটকে পড়েছিল। সেখান থেকে নিশ্চয়ই শুকনো পাতায় আগুন লেগেছে। আগুন নিশ্চয়ই একটা ভয়ের জিনিস কিন্তু এই মানুষটা যেভাবে ভয় পেয়েছে আগুন দেখে সেভাবে ভয় পাওয়ার কথা না। আগুনটা দাউ দাউ করেও জ্বলছে না–ধিকিধিকি করে জ্বলছে, এই আগুন দেখে এতো ভয় পাওয়ার কী আছে? আগুনটা ছড়াতেও তো সময় লাগবে।

    ঠিক তখন আমি বুঝতে পারলাম মানুষটা কেন এতো ভয় পেয়েছে। খুব কাছাকাছি কোথাও নিশ্চয়ই গোলাবারুদ রাইফেল গ্রেনেড লুকানো আছে–আগুনটা সেদিকে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই এক্ষুনি সেগুলো বিস্ফোরিত হবে। সেই জন্যে মানুষটা এতো ভয় পেয়েছে। সর্বনাশ!

    আমি চিৎকার করে বললাম, “পালা! সবাই পালা!”

    “কেন?”

    “এই আগুন নিশ্চয়ই গোলাবারুদ গ্রেনেডের দিকে যাচ্ছে। এক্ষুনি নিশ্চয়ই ফাটবে।”

    সাথে সাথে অন্য সবাইও বুঝে গেল মানুষটা কেন ভয় পেয়েছে। আমরাও তখন নিচের দিকে ছুটতে থাকি। অন্যেরা খুব তাড়াতাড়ি ছুটে সামনে এগিয়ে যায়, আমি একটু পিছনে পড়ে গেলাম। আঁখি আমার কাঁধে হাত দিয়ে দৌড়াচ্ছে। সেই জন্যে আমাদের দেরি হচ্ছিল। কোনো একটা গাছের লতায় পা বেঁধে আঁখি একবার হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল। আমি তাকে কোনোমতে টেনে তুলে বললাম, “ঠিক আছে?”

    “নাই!” আঁখি কঁকিয়ে উঠে বলল, “পায়ে ব্যথা পেয়েছি।”

    “কষ্ট করে চলে আয়।”

    আঁখি হাঁটার চেষ্টা করে বলল, “পারছি না।”

    “আমার ঘাড়ে হাত দে।”

    আঁখি আমার ঘাড়ে ধরল, আমি তার ঘাড়ে ধরলাম। আঁখি ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে হাঁটার চেষ্টা করে। আমি শুনতে পেলাম সামনে থেকে রিতু ডাকছে, “তিতু আঁখি তোরা কোথায়?”

    “আঁখি ব্যথা পেয়েছে।”

    সাথে সাথে দুদ্দাড় করে সবাই চলে এল। সুজন আর আমি আঁখিকে দুই পাশে ধরে টেনে নিচে নামাতে থাকি। প্রতি মুহূর্তে মনে হতে থাকে এই বুঝি প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শুনব আর আমরা সবাই টুকরো টুকরো হয়ে উড়ে যাব।

    পাহাড়ি পথটা সোজা নিচের দিকে নেমে এক জায়গায় ডান দিকে ঘুরে গেল, আমরা ডান দিকে যখন ঘুরে কয়েক পা এগিয়েছি তখন প্রথম বিস্ফোরণের শব্দটা শুনতে পেলাম, সেই শব্দটা মিলিয়ে যাবার আগেই আরেকটা প্রচণ্ড বিস্ফোরণে পুরো এলাকাটা কেঁপে উঠল। মনে হল আমাদের পায়ের নিচে বুঝি মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আমরা নিচে ছিটকে পড়লাম আর আমাদের উপর দিয়ে আগুনের মতো গরম বাতাসের একটা হলকা ছুটে গেল। বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে আমাদের কানে তালা লেগে যায়, আমরা দেখতে পেলাম আলোর ঝলকানিতে মুহূর্তের জন্যে চারিদিকে আলোকিত হয়ে গেছে। আমরা মাথা নিচু করে ঘাপটি দিয়ে বসে আছি আর মনে হল আকাশ থেকে পাথর মাটি গাছের ডাল পাতা আমাদের উপর বৃষ্টির মতো পড়ছে। ভেবেছিলাম একটা বিস্ফোরণ হয়ে থেমে যাবে–কিন্তু সেটা থামল না, ছাড়া ছাড়াভাবে বিস্ফোরণ হতে লাগল। মনে হতে লাগল বুঝি সেটা কখনোই থামবে না।

    শেষ পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ থামল, আমি তখন খুব সাবধানে মাথা তুলে তাকালাম, বললাম, “সবাই ঠিক আছিস?”

    একজন একজন করে সবাই মাথা তুলে উঠে বসে, শরীর থেকে মাটি পাথর গাছের ডাল সরাতে সরাতে বলল, “মনে হয় ঠিক আছি।”

    বিস্ফোরণের কারণে আগুন লেগে গেছে, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। সেই আগুনে চারিদিক আলোকিত হয়ে আছে। বিচিত্র এক ধরনের কাঁপা কাঁপা লালচে আলো। আমি দেখতে পেলাম সবাই মাথা তুলেছে, যার অর্থ সবাই এখনো বেঁচে আছি। আহা! বেঁচে থাকা কী চমৎকার একটা ব্যাপার।

    শান্তা কাঁপা গলায় বলল, “কাদের বক্স আর তার গার্ডের কী হয়েছে?”

    আমি বললাম, “ওরা তো পাহাড়ের উপরে ছিল। মনে হয় কিছু হয় নাই।”

    “কিন্তু আগুন?”

    “আগুন নেভাতে নিশ্চয়ই আসবে লোকজন।”

    “এই পাহাড়ে কী আর ফায়ার ব্রিগেড আছে? কে নেভাবে?”

    উত্তরটা আমরা কেউ জানি না তাই চুপ করে রইলাম।

    আঁখি ফিসফিস করে বলল, “দুইটা স্পিড বোট আসছে।”

    আমরা কেউ কিছু শুনতে পেলাম না, কিন্তু আঁখি যখন বলেছে তার মানে সত্যিই আসছে। বেশ কিছুক্ষণ পর সত্যি সত্যি আমরাও সেই স্পিড বোটের শব্দ শুনতে পেলাম।

    রিতু বলল, “নিশ্চয়ই পুলিশ, মিলিটারি।”

    “হ্যাঁ।” আমরা মাথা নাড়লাম, “এখানেই নিশ্চয়ই আসছে।”

    বিস্ফোরণের শব্দ নিশ্চয়ই অনেক দূর থেকে শোনা গেছে। আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে, তাই কোথায় আসতে হবে সেটা বুঝতে পুলিশের সমস্যা হবার কথা না।

    আস্তে আস্তে স্পিড বোটের ইঞ্জিনের শব্দ বেড়ে যেতে থাকে, বাড়তে বাড়তে একেবারে কাছাকাছি এসে থেমে যায়। আমরা তখন মানুষের গলা শুনতে পেলাম। একটু পরে তাদের হাতের টর্চ লাইটের আলো দেখতে পাই। সেগুলো নড়তে নড়তে এগিয়ে আসছে। আমরা তখন উঠে দাঁড়ালাম, শরীর থেকে মাটি, গাছের ডাল পাতা ঝেড়ে আমরা অপেক্ষা করি। আঁখি আমাকে ধরে দাঁড়িয়ে থেকে ফিসফিস করে বলল, “আমার আব্বুও এসেছেন।”

    আমি আলাদা করে কারো গলার আওয়াজ পাচ্ছি না কিন্তু আঁখি যখন বলছে, তখন নিশ্চয়ই তার আব্বুও এসেছেন। সে সবকিছু অনেক দূর থেকে শুনতে পায়।

    আমি জিজ্ঞেস করলাম, “তোর পায়ের অবস্থা কেমন?”

    “ব্যথাটা কমেছে। তার মানে হাড় ভাঙেনি।”

    রিতু আমাদের কাছে এসে বলল, “যখন আমরা এখান থেকে যাব তখন আমি প্রথমেই কী করব জানিস?”

    “কী?”

    “একেবারে ফুটন্ত গরম পানি দিয়ে গোসল করব। ফ্রেশ একটা সাবান দিয়ে অনেকক্ষণ সময় লাগিয়ে। তারপরে ধোয়া কড়কড়ে পরিষ্কার একটা কাপড় পরব।”

    আঁখি হাসল, বলল, “ঠিক বলেছিস। আমিও তাই করব। নতুন টুথ ব্রাশ দিয়ে সবার আগে দাঁত ব্রাশ করে অনেক লম্বা একটা গোসল।”

    শান্তা বলল, “আমি প্রথমে খাব। গরম ভাতের সাথে একটা ডিম ভাজা খাব। ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত।”

    সুজন বলল, “আমি কাদের বক্সের পেটে একটা ঘুষি মারব। সবার আগে ঘুষি। বদমাইসের বাচ্চা।”

    আমরা হি হি করে হাসলাম। রিতু মামুনকে জিজ্ঞেস করল, “তুই কী করবি?”

    “আমি নরম একটা বিছানায়, নরম তুলতুলে একটা বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়ব। তারপর একটা ঘুম। নাক ডেকে ঘুম। টানা চব্বিশ ঘণ্টা।”

    আঁখি আমাকে জিজ্ঞেস করল, ”তুই কী করবি?”

    “আমি?”

    “হ্যাঁ?”

    “আমি পরিষ্কার একটা বাথরুমে, পরিষ্কার একটা টয়লেটে বসে–” সবাই হি হি করে হেসে আমার পিঠে কিল মেরে বলল, “চুপ কর। চুপ কর অসভ্য কোথাকার!”

    ঠিক তখন একটা টর্চ লাইটের তীব্র আলো আমাদের চোখে এসে পড়ল, আমরা সবাই কথা বন্ধ করে সামনে তাকালাম। আলোর কারণে আমাদের চোখ ধাধিয়ে গেছে আমরা কিছু দেখতে পাচ্ছি না। শুধু আঁখির চোখ ধাঁধায়নি, সে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল, “আব্বু। তোমরা এসেছ?”

    “হ্যাঁ। মা। এসেছি।”

    “থ্যাংকু আব্বু।”

    “তোরা সবাই ভালো আছিস?”

    “হ্যাঁ আব্বু আমরা সবাই ভালো আছি।”

    “খোদা মেহেরবান!” আঁখির আব্বু একটু এগিয়ে এসে ধরা গলায় বললেন, “আমি খোদার কাছে শুধু তোদেরকে ফিরে চেয়েছি। খোদা আমাকে তোদর সবাইকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি এই জীবনে খোদার কাছে আর কিছু চাই না।”

    আঁখি বলল, “আমরাও চাইব না আব্বু।”

    রিতু বলল, “চাচা। আমরা কাদের বক্সকে তার ঘরে তালা মেরে রেখে এসেছি! আগুন ছড়িয়ে পড়লে সে বের হতে পারবে না।”

    আঁখির আব্বু, অবাক হয়ে বললেন, “কাদের বক্সকে তালা মেরে রেখেছ? সেটা কীভাবে সম্ভব?”

    আঁখি বলল, “সেটা অনেক লম্বা স্টোরি। তোমাদেরকে বলব।”

    সুজন তখন এগিয়ে এসে হাতের রাইফেলটা দেখিয়ে বলল, “আমরা একটা পাহারাদারের কাছ থেকে এটা কেড়ে রেখেছি। মানুষটার হাত বাঁধা, তার মাঝে পালিয়ে গেছে।”

    মিলিটারির একজন অফিসার বলল, “ওটা নিয়ে দুশ্চিন্তা কর না, ওকে আমরা এক্ষুনি খুঁজে বের করে ফেলব।”

    গলার স্বর শুনে আমরা তাকে চিনে ফেললাম, রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি চেক করার সময় তার সাথে আমাদের পরিচয় হয়েছিল। সুজন রাইফেলটা দেখিয়ে বলল, “চাচা, এই রাইফেলটা কী আমি নিতে পারি?”

    মিলিটারি অফিসার হেসে ফেললেন, বললেন, “কেন কী করবে?”

    “এমনি। স্কুলে নিয়ে সবাইকে দেখাব!”

    “এটাকে বলে এ কে ফোর্টি সেভেন। এটা হচ্ছে সত্যিকারের আর্মস। তোমার হাতে ওটা দেখেই ভয়ে আমার পেটের ভাত চাল হয়ে যাচ্ছে। তুমি যদি ভুল করে কোনো কিছু টেনে ধর আমরা সবাই ফিনিশ হয়ে যাব! ওটা বরং আমাদের হাতে দাও, আমি বরং একদিন তোমাদের স্কুলে নিয়ে সবাইকে দেখিয়ে আনব।”

    সুজন খুবই অনিচ্ছার সাথে তার এ কে ফোর্টি সেভেনটা মিলিটারি অফিসারের হাতে তুলে দিল।

    .

    ১৪.

    যখন আমরা বুঝতে পেরেছি যে আমরা যেটাই চাই সেটাই করে ফেলতে পারি শুধু সেটা করার ইচ্ছে থাকতে হয়

    তারপর অনেকদিন পার হয়ে গেছে। কাদের বক্স আর তার দলবলকে ধরা হয়েছে। অস্ত্র আর গোলাবারুদ চোরাচালানের বিশাল একটা দল ধরা পড়েছে এই খবরটা পত্রপত্রিকা রেডিও টেলিভিশনে অনেক বড় করে প্রচার হয়েছে শুধু খুব সাবধানে আমাদের কথাগুলো সেখানে বলা হয়নি। এই দলগুলো খুব ভয়ংকর তাদের না কী দেশ-বিদেশেও এজেন্ট আছে–তাই সবাই মিলে আমাদের কথা গোপন রেখেছে।

    স্কুলে অবশ্যি আমরা সবাইকে আমাদের গল্পটা বলেছি। ছোট ছোট ক্লাসের ছেলেমেয়েরা আমাদের দেখলেই গল্পটা আবার শুনতে চায়। আমাদের এতো ধৈর্য নেই কিন্তু আঁখির অনেক ধৈর্য। সে হাত-পা নেড়ে গলার স্বর উঁচু-নিচু করে অভিনয়ের ভঙ্গিতে পুরো গল্পটা বলে। সে তার চোখ দিয়ে কিছুই দেখেনি কিন্তু এতো সুন্দর করে সবকিছু বর্ণনা দেয় যে মনে হয় কোনো কিছু দেখার জন্যে বুঝি চোখের দরকারই নেই। সবচেয়ে সুন্দর হয় তার বিস্ফোরণের বর্ণনাটা, কাঁপা কাঁপা গলায় সে এমনভাবে ঘটনাটা বলে যে ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর চোখ বিস্ফারিত হয়ে যায়, তাদের মুখ হা হয়ে থাকে আর নিশ্বাস নিতে ভুলে যায়। কী মজার একটা দৃশ্য!

    আমাদের স্কুলে আরো দুজন ভর্তি হয়েছে যারা চোখে দেখতে পায় না। একজন ক্লাস সিক্সে একজন ফোরে। ক্লাস সেভেনে একজন ভর্তি হয়েছে যে হুইল চেয়ারে বসে থাকে। সে যেন ক্লাস রুমে যেতে আসতে পারে সেই জন্যে সিঁড়ির পাশে ঢালু জায়গা তৈরি করা হয়েছে। আমাদের নতুন ম্যাডাম সারা স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই ঢালু জায়গাগুলো তৈরি করেছেন। খুব মজা হয়েছিল সেদিন।

    হুইল চেয়ারের ছেলেটা মোটেও জবুথবু নয়। সে খুবই দুষ্ট-কেউ তার সাথে দুষ্টুমি করলে সে তার পায়ের উপর দিয়ে হুইল চেয়ার চালিয়ে দেয়। প্রায়ই দেখা যায় কিছু একটা ঘটেছে আর সে তার হুইল চেয়ার নিয়ে পাঁই পাঁই করে ছুটে যাচ্ছে আর সবাই তার পিছনে পিছনে তাকে ধরার জন্যে ছুটছে।

    সামনে আমাদের ফুটবল টুর্নামেন্ট। ক্লাস সেভেনের টিমে না কী হুইল চেয়ারের ছেলেটা খেলবে। কীভাবে সে ফুটবল খেলবে আমরা এখনো বুঝতে পারছি না। কিন্তু আঁখি যদি আমাদের ক্রিকেট টিমে খেলতে পারে, তা হলে সে কেন খেলতে পারবে না? নিশ্চয়ই পারবে। ক্লাস সেভেনের ছেলেমেয়েরা কিছু একটা কায়দা-কানুন নিশ্চয়ই বের করবে–সেটা কী হতে পারে দেখার জন্যে আমরা অপেক্ষা করছি।

    আমরা সবাই একটা জিনিস বুঝে গেছি। কোনো কিছুই অসম্ভব না। সবকিছু করে ফেলা যায়–শুধু সেটা করার জন্যে ইচ্ছেটা থাকতে হয়।

    আমাদের ইচ্ছে আছে। কী কী ইচ্ছে আছে সেটা সবাইকে এক্ষুনি বলব না। যখন বলব তখন সবার চোখ একেবারে ট্যারা হয়ে যাবে!

    ⤶
    1 2 3 4 5 6 7
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleস্কুলের নাম পথচারী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }