Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আঁধার আখ্যান – কৌশিক মজুমদার

    কৌশিক মজুমদার এক পাতা গল্প186 Mins Read0

    শেষ মেষ

    ঘরটা বেশ পরিষ্কার, ওম ওঠা, ভারী পর্দা টানা। দুটো টেবিল ল্যাম্পের একটা এধারে, অন্যটা ওধারে জ্বলছে। টেবিলের পাশে সাইডবোর্ডে দুটো লম্বাটে গেলাস। তাতে সোডা আর বরফকুচি ভরা।

    মেরি মালোরি তাঁর স্বামীর বাড়িতে আসার অপেক্ষা করছেন। মাঝে মাঝেই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছিলেন কটা বাজে। তবে উৎকণ্ঠায় নয়, উত্তেজনায়। তাঁর স্বামীর বাড়িতে পৌঁছাবার ক্ষণটি এগিয়ে আসছে যে! মিসেস মালোরির মুখে মৃদু হাসি। তাঁর আঙুলগুলো সেলাইতে ব্যস্ত। আর মাত্র তিন মাস— মা হতে চলেছেন মেরি। তাঁর নরম ঠোঁট, চোখের পাতা, গালের চকচকে ভাব, সবকিছুতেই যেন সেই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ছে।

    পাঁচটা বাজতে দশ। রোজকার মতো আজও কাঁকুরে রাস্তায় গাড়ির টায়ারের আওয়াজ পেলেন মেরি। গাড়ির দরজা দড়াম করে বন্ধ হল। মৃদু পায়ের শব্দ আর দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন তিনি, যাঁর জন্য এত আয়োজন।

    “হ্যালো ডার্লিং”, মেরি বললেন।

    “হ্যালো”, উত্তর এল শুকনো গলায়।

    মেরি তাঁর স্বামীর কোটটা খুলে নিয়ে আলমারিতে গুছিয়ে রাখেন। টেবিলের ধারের সেই লম্বাটে গেলাস দুটোতে ড্রিংকস বানালেন। একটা স্বামীর হাতে ধরিয়ে অন্যটা নিজে নিয়ে চেয়ারে দোল খেতে লাগলেন মেরি। আজ তাঁর স্বামীকে কেমন যেন অচেনা লাগছে। অন্যমনস্ক। গম্ভীরও।

    “খুব ক্লান্ত লাগছে তোমার?”

    “হ্যাঁ। আমি সত্যিই খুব ক্লান্ত”, বলেই প্রায় এক চুমুকে গোটা পানীয়টা গলায় ঢেলে দিলেন তাঁর স্বামী। এমনটা তো ও কখনও করে না! মেরি শঙ্কিত হলেন।

    “দাঁড়াও, তোমাকে আর একটা ড্রিংক বানিয়ে দিই”, তাঁর সাধের চেয়ার থেকে প্রায় লাফিয়ে উঠে পড়লেন মেরি।

    “তুমি বসো। আমি বানাচ্ছি।”

    মেরি আড়চোখে খেয়াল করলেন এবার মদে সোডার পরিমাণ বড্ড কম। প্রায় নেই বললেই চলে। অদ্ভুত অস্বস্তিকর একটা মাপ।

    “আমি তোমার চপ্পলটা নিয়ে আসি।”

    “না।”

    “এটা একদম ঠিক না। তোমার মতো একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসারকে এরা নিত্যদিন দৌড় করিয়ে মারে…”

    অন্যদিক থেকে কোনও উত্তর এল না। মেরি আবার মাথা নিচু করে সেলাই শুরু করলেন। গোটা ঘর নিস্তব্ধ। শুধু কাচের গায়ে বরফের টুকরো লেগে টুংটাং শব্দ হচ্ছে।

    “ডার্লিং, আমি বরং তোমার জন্য একটু চিজ বানিয়ে আনি। আসলে আজ বিষ্যুদবার তো, ভেবেছিলাম বাইরে খেতে যাব… তাই…”

    “দরকার নেই।”

    “না, মানে তুমি যদি খুব ক্লান্ত থাকো তবে বাদ দাও। ফ্রিজে প্রচুর মাংস আছে, চিজ আছে, আমরা নাহয় আজ ঘরেই কিছু বানিয়ে খেয়ে নেব”, বলে ঘাড় কাত করে মুচকি হাসলেন মেরি।

    অন্যদিক থেকে কোনও সাড়া এল না।

    “যাই হোক, একটু চিজ আর চটপটিভাজা তো নিয়ে আসি।”

    “দরকার নেই। বললাম তো।”

    “তাহলে আজ রাতে খাবেটা কী?” একটু আমতা আমতা করেই মেরি বললেন, “ভেড়ার মাংসের চপ? নাকি পর্ক বানাব? যা বলবে। সব মজুত আছে ফ্রিজে।”

    “কিচ্ছু লাগবে না। বাদ দাও।”

    “কিন্তু কিছু তো একটা খাবে? আচ্ছা তুমি বলো, আমি রেঁধে দিচ্ছি”, বলেই উঠে দাঁড়ালেন মেরি।

    “তুমি চুপ করে বসো। বসতে বলছি তো।” অদ্ভুত গলায় নির্দেশ এল।

    এবার কেমন একটা অজানা ভয় মেরিকে চেপে ধরতে লাগল।

    “যা বলছি তাই করো। বসো এই চেয়ারে”, তাঁর স্বামীর গলায় অদ্ভুত আদেশের সুর।

    বাধ্য মেয়ের মতো চেয়ারে বসে অবাক চোখে তাঁর স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইলেন মেরি। তাঁর স্বামী মদের গেলাসটা আবার এক চুমুকে শেষ করে ভুরু কুঁচকে মেঝের দিকে তাকিয়ে।

    “শোনো, তোমাকে একটা কথা বলব।”

    “কী কথা?”

    মুখের প্রতিটা পেশি শক্ত। দৃষ্টি নিচে। মেরি খেয়াল করে দেখলেন তাঁর স্বামীর বাঁ চোখটা যেন একটু কাঁপছে।

    “হয়তো শুনে তুমি একটু আহত হবে, কিন্তু আমি ভেবে দেখলাম সোজা কথাটা সোজাভাবে বলে ফেলাই ভালো। পষ্ট কথায় কষ্ট নেই।”

    কথাটা বলতে বেশিক্ষণ লাগল না। চার মিনিট কি পাঁচ মিনিট বড়োজোর। মেরি পাথরের মূর্তির মতো স্থির হয়ে স্বামীর প্রতিটা কথা শুনছিলেন, কিন্তু একটা শব্দও তাঁর মাথায় ঢুকছিল না।

    “তবে হ্যাঁ, তোমায় ছেড়ে দিলেও তোমার দায়িত্ব অস্বীকার করছি না আমি। মাসে মাসে কিছু মাসোহারা পাঠাব, তাতে তোমার দিব্যি চলে যাবে। তুমি আবার এ নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে অনর্থ বাধিয়ো না।”

    মেরির গোটাটাই একটা বাজে রসিকতা বলে মনে হচ্ছিল। নিশ্চয়ই তিনি স্বপ্ন দেখছেন। এখুনি জেগে উঠবেন। তড়াক করে চেয়ার ছেড়ে উঠে “আমি এখুনি খাবার বানিয়ে আনছি” বলে রান্নাঘরে ছুটলেন মেরি। এবার আর তাঁর স্বামী তাঁকে বাধা দিলেন না।

    রান্নাঘরে গিয়ে তাঁর মনে হল হাত পা যেন আর নিজের বশে নেই। মাথা ঘোরাচ্ছে। ভয়ানক বমি পাচ্ছে। তিনি কলের পুতুলের মতো স্যুইচ অন করলেন, বাতি জ্বালালেন, ডিপ ফ্রিজ খুললেন আর সেখান থেকে বার করে আনলেন ব্রাউন পেপারে মোড়া লম্বাটে একটা জিনিস— ঠান্ডায় জমে শক্ত হয়ে যাওয়া একটা ভেড়ার ঠ্যাং। ঠিক হ্যায়। আজ বরং ভেড়ার মাংসই রান্না হবে। তার আগে জলের ধারার নিচে রেখে এটাকে নরম করা দরকার। দুই হাতে গদার মতো সেই ঠ্যাংটা ধরে বসার ঘরে ঢুকলেন মেরি।

    “হা ভগবান! তোমায় বললাম না, আজ রাতে আমি এখানে খাব না। বেরোব এখুনি।” মেরির পায়ের শব্দ শুনে পিছন ফিরেই গর্জে উঠলেন তাঁর স্বামী।

    মেরি কোনও উত্তর দিলেন না। সোজা তাঁর স্বামীর পিছনে হেঁটে এসে একটুও না থেমে বিশাল সেই জমে যাওয়া ভেড়ার ঠ্যাংটা মাথার ওপরে তুলে সজোরে নামিয়ে আনলেন তাঁর স্বামীর খুলি বরাবর। লোহার ডান্ডা দিয়ে মারলেও আঘাত এতটা মারাত্মক হত না। খুব ধীরে ধীরে এক পা এক পা করে পিছিয়ে এলেন মেরি। মজার ব্যাপার, আঘাতের পরও চার পাঁচ সেকেন্ড দেহটা তেমনই খাড়া রইল। অল্প দুলল। তারপর সটান কার্পেটে লুটিয়ে পড়ল। নাকের সামনে হাত দিয়ে মেরি দেখলেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে।

    “যাক”, বিড়বিড় করে মেরি বললেন, “তাহলে আমি ওঁকে খুন করেই ফেললাম।”

    এবার খুব দ্রুত ভাবতে থাকলেন মেরি। পুলিশের বউ তিনি। এই খুনের শাস্তি যে কী, তা তাঁর থেকে ভালো কেউ জানে না। তাও তিনি মেনে নিতেন। কিন্তু যে সন্তান এখনও পৃথিবীর আলো দেখেনি তার জন্য তাঁকে বাঁচতে হবে। ঠান্ডা মাথায় ভেড়ার ঠ্যাংটা রান্নাঘরে নিয়ে গেলেন মেরি। জলে ধুয়ে, পাত্রে রেখে, সোজা পুরে দিলেন আভেনে। আভেনের নবটা উসকে দিতে ভুললেন না। হাত ধুয়ে সিঁড়ি বেয়ে বেডরুম। সেখানে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যত্ন করে গালে পাউডার বোলালেন। ঠোঁটে লাগালেন রক্তলাল লিপস্টিক। হাসবার চেষ্টা করলেন। অদ্ভুত লাগল। আবার চেষ্টা করলেন।

    “হ্যালো স্যার”, জোর গলায় বলতে গিয়ে নিজের কানেই বেসুরো ঠেকল। আবার চেষ্টা করলেন।

    “আমাকে কিছু আলু দেবেন তো স্যাম। আর হ্যাঁ, এক প্যাকেট মটরশুঁটি।”

    এতক্ষণে ঠিকঠাক হয়েছে। হাসি আর গলার আওয়াজ। দুটোই একেবারে স্বাভাবিক। আরও বেশ কয়েকবার বলা মকশো করে নিলেন মেরি। তারপর সিঁড়ি বেয়ে নেমে, ওভারকোট চাপিয়ে, পিছনের দরজা, বাগান পেরিয়ে সোজা বড়ো রাস্তায়।

    তখনও ছটা বাজেনি। কিন্তু দোকানে দোকানে আলো জ্বলে উঠেছে।

    “হ্যালো স্যার”, একগাল হেসে বললেন তিনি।

    “আরে মিসেস মালোরি যে! কেমন আছেন বলুন।”

    “আমাকে কিছু আলু দেবেন তো স্যাম। আর হ্যাঁ, এক প্যাকেট মটরশুঁটি।”

    স্যাম পিছন ফিরে আলু আর মটরশুঁটি গোছাতে লাগল।

    “আর বলেন কেন, প্যাট্রিক আজ অফিস থেকে ফিরে বেজায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। বলছে বাইরে খেতে যাবে না। আমরা তো প্রতি বিষ্যুদবার বাইরে খেতে যাই। রাঁধতে গিয়ে দেখি ঘরে সব সবজি বাড়ন্ত।”

    “মাংস লাগবে মিসেস মালোনি?”

    “না না, ফ্রিজে মস্ত বড়ো একটা ভেড়ার ঠ্যাং আছে।”

    “ওহহ।”

    “আসলে ঠান্ডা মাংস আবার আমার তেমন পোষায় না, কিন্তু এখন আর উপায় কী? ওটাই রাঁধব। ঠিক আছে না?”

    “আরে হ্যাঁ হ্যাঁ। এই নিন বড়ো বড়ো চন্দ্রমুখী আলু দিয়েছি। মাংস হল, সবজি হল, আর শেষপাতের ডেজার্ট বাকি থাকে কেন? ডেজার্টে কী করছেন?”

    “আপনিই বলুন।”

    “একটা বড়ো দেখে চিজকেক নিয়ে যান। আপনার স্বামীর পছন্দই হবে।”

    “জব্বর আইডিয়া। চিজকেক প্যাট্রিকের দারুণ পছন্দ।”

    সব প্যাক হয়ে গেলে একমুখ হাসি ছড়িয়ে মেরি বললেন, “অনেক ধন্যবাদ স্যাম। গুড নাইট।”

    এবার একটু পা চালিয়ে বাড়ি ফিরলেন মিসেস মালোনি।

    হাজার হোক, তাঁর স্বামী সারাদিন খাটাখাটনির পর বাড়ি ফিরেছেন। তাঁকে তো রান্না করে খাওয়াতে হবে, নাকি! কিন্তু দরজা খুলেই যে দৃশ্য তিনি দেখবেন তা এতটাই অপ্রত্যাশিত যে ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। তবে তিনি তো কিছু দেখবেন বলে ভাবছেন না। তিনি শুধু তাঁর ক্ষুধার্ত স্বামীর জন্য সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর চলনবলনও সেইরকমই হওয়া উচিত। নিজেকেই নিজে বলতে বলতে চললেন মেরি। পিছনের দরজা দিয়ে গুনগুন করে গাইতে গাইতে ঢুকেই হাঁক পাড়লেন, “প্যাট্রিক! তুমি কী করছ সোনা?” হাতের প্যাকেটটা টেবিলে রেখে এবার তিনি বসার ঘরে ঢুকলেন। সেখানে মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছেন তাঁর স্বামী। এতকালের ভালোবাসা। তিনি দৌড়ে গেলেন সেই দেহের কাছে। কেঁদে উঠলেন বুকফাটা আর্তনাদে। তারপর কোনওক্রমে ফোনের কাছে গিয়ে পুলিশ স্টেশনে ডায়াল করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “শিগগির! দয়া করে শিগগির আসুন। প্যাট্রিক মারা গেছে!”

    “কে বলছেন?”

    “মিসেস মালোনি, প্যাট্রিক মালোনির স্ত্রী।”

    “বলেন কী! প্যাট্রিক মারা গেছে!”

    “আজ্ঞে তাই তো মনে হচ্ছে”, ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললেন মেরি, “মেঝের ওপর পড়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে দেহে প্রাণ নেই।”

    “এখুনি আসছি আমরা।”

    খানিকক্ষণের মধ্যেই গারি এসে হাহির। গাড়ি থেকে যে দুজন নেমে এলেন তাঁরা দুজনেই মেরির পূর্বপরিচিত। এঁরা প্যাট্রিকের সহকর্মী। মেরি ছুটে গিয়ে জ্যাক নুনানকে জাপটে ধরে হাউহাউ করে কাঁদতে লাগলেন। জ্যাক তাঁকে খুব যত্ন করে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। অন্যজন, ওম্যালি, তখন মৃতদেহটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল।

    “ও কি সত্যিই মারা গেছে?” ডুকরে উঠলেন মেরি।

    “তাই তো মনে হচ্ছে। কী হয়েছিল বলুন তো?”

    খুব সংক্ষেপে মেরি তাঁর বিবৃতি দিলেন। কীভাবে সামান্য সময়ের জন্যে সবজি কিনে ফিরে এসেই তিনি এই দৃশ্য দেখলেন। এই ফাঁকে নুনান মৃতদেহের খুলিতে চাপ বাঁধা একদলা রক্ত দেখতে পেয়ে ওম্যালিকেও দেখালেন। এরপর একে একে নানাধরনের মানুষ আসতে শুরু করল। এক ডাক্তার, দুই গোয়েন্দা (যাদের একজনকে আবার মেরি আগে থেকে চেনেন), ফটোগ্রাফার, ফিঙ্গারপ্রিন্ট এক্সপার্ট, সবাই মৃতদেহকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে কথা বলছিল। গোয়েন্দারা মেরিকে প্রচুর প্রশ্ন করলেও তাতে নম্রতার কমতি ছিল না। মেরি বললেন একদম শুরু থেকে। যখন উনি সেলাই করছিলেন। প্যাট্রিক এলেন। ক্লান্ত প্যাট্রিক বাইরে খেতে যেতে না চাওয়ায় মেরি ঘরেই রান্না করবেন বলে ঠিক করেন। সবজি না থাকায় তাঁকে দোকানে যেতে হয়।

    “কোন দোকান?”

    মেরির উত্তর শুনে গোয়েন্দা তাঁর সহকারীকে ফিসফিস করে কিছু বলতেই সে একছুটে বেরিয়ে গেল। প্রায় পনেরো মিনিট বাদে যখন ফিরল তখন তার হাতের কয়েক তাড়া কাগজে কীসব যেন নোট নেওয়া। মেরি তাঁর অবিশ্রান্ত ফোঁপানির মধ্যেও শুনতে পেলেন চাপা গলার আওয়াজ, “হ্যাঁ… একেবারে স্বাভাবিক ব্যবহার… বেশ খুশি খুশিই ছিলেন… রান্না করবেন বলছিলেন… মটরশুঁটি… চিজকেক… না, না, ওঁর পক্ষে অসম্ভব…”

    ডাক্তার চলে গেলে দুজন এসে প্যাট্রিকের লাশটা স্ট্রেচারে করে নিয়ে গেল। সবাই চলে গেলেও দুই পুলিশ আর গোয়েন্দা গেলেন না। নুনান অবশ্য বললেন দরকার হলে মেরি এই কদিন তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে থাকতে পারেন। মেরি রাজি হলেন না।

    “আপনি বরং একটু বিশ্রাম নিন”, বলে তাঁরা গোটা বাড়ি তল্লাসি আরম্ভ করলেন। মাঝে নুনান এসে খবর দিলেন মেরির স্বামীর মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, আর সেই আঘাতেই প্যাট্রিকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা সেই মার্ডার ওয়েপনটা খুঁজছেন। তাঁদের বিশ্বাস আততায়ী সেটা নিয়ে পালিয়েছে অথবা আশেপাশেই কোথাও ফেলে রেখে গেছে।

    “সেই পুরোনো গল্প, বুঝলেন মিসেস মালোরি, মার্ডার ওয়েপনটা যদি একবার হাতে পাই, তবে খুন কে করেছে সেটা ধরা কোনও ব্যাপারই না।”

    পরে গোয়েন্দা দুজন তাঁকে বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন বাড়িতে কোনও ভারী লোহার স্প্যানার বা ফুলদানি আছে কি না। মেরি জানালেন ফুলদানি নেই, তবে গ্যারাজে স্প্যানার থাকতেও পারে। অতএব খোঁজ চলল। মাঝে মাঝেই কাঁকুরে পথে বুটের আওয়াজ। জানলার কাচে টর্চের আলো। মেরি বুঝলেন তদন্ত চলছে জোরকদমে।

    রাত নটা। তখন সবাই বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সার্জেন্ট নুনান রান্নাঘরে ঢুকেই চিৎকার করে বললেন, “আরে মিসেস মালোনি, আপনার আভেন তো অন করা, আর ভিতরে মাংসও দেখতে পাচ্ছি!”

    “ওঃ কী অবস্থা! আমি ভুলেই গেছিলাম ওটার কথা!”

    “আভেন বন্ধ করে দেব?”

    “অনেক ধন্যবাদ জ্যাক। তবে আমার একটা উপকার করবেন?”

    “বলুন। যদি সম্ভব হয়…”

    “আপনারা সবাই প্যাট্রিকের প্রিয় বন্ধু। আপনারাই খুঁজে বার করবেন কে আমার প্যাট্রিককে এভাবে খুন করল। কিন্তু এখন নটা বেজে গেছে। আপনাদের খিদেও পেয়েছে নিশ্চয়ই। আপনাদের না খাইয়ে রাখলে ওর আত্মা শান্তি পাবে না। ভেড়ার মাংসটা সদ্য রাঁধা। আপনারা কজন মিলে ওটা খেয়ে নিন না কেন!”

    “না না, ছি ছি, এমন অবস্থায় খাওয়া…”

    “প্লিজ জ্যাক। আমি আপনাকে অনুরোধ করছি। আমি নিজে আজ কিছুই খেতে পারব না। কিন্তু আপনারা না খেয়ে থাকলে আমি দুঃখ পাব। একটু খেয়ে নিয়ে আবার কাজ শুরু করুন। এটুকু অনুরোধ রাখুন আমার।”

    খানিক আমতা আমতা আমতা করে চারজনই রাজি হলেন। হাজার হোক, খিদেও পেয়েছে জব্বর। রান্নাঘরে বসে ওঁরা খাচ্ছিলেন আর আলোচনা করছিলেন। খোলা দরজা দিয়ে তাঁদের গলা মিসেস মালোরির কানে আসছিল।

    “আর একটু নাও চার্লি।”

    “এই, একেবারে শেষ করে ফেলো না।”

    “উনি শেষ করতেই বলেছেন। তাতেই নাকি উনি খুশি হবেন।”

    “দাও তবে আর-একটু।”

    “কী দিয়ে যে প্যাট্রিককে মারল সেটাই মাথায় আসছে না। খুলিটা ফেটে একেবারে চৌচির হয়ে গেছে।”

    “খুঁজে পাওয়া খুব একটা কঠিন হবে না। এ জিনিস তো আর কেউ হাতে নিয়ে ঘুরবে না”, বলে ঢেঁকুর তুলল একজন।

    “আমার মনে হয় এই বাড়িতেই কোথাও সেই মার্ডার ওয়েপনটা আছে। হয়তো আমাদের নাকের ঠিক তলাতেই। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি না। কী বলো জ্যাক?” মাংসের হাড়ে কামড় বসিয়ে বলল একজন।

    অন্য ঘরে মিসেস মালোনি নিজের অজান্তেই অদ্ভুত খিলখিলিয়ে হেসে উঠলেন।

    অনুবাদকের জবানি: রোয়াল ডাল-কে বিশ্বের সেরা গল্পকথক বলে মনে করেন অনেকে। কিশোরদের জন্য মাতিল্ডা, চার্লি অ্যান্ড দি চকোলেট ফ্যাক্টরি সহ দারুণ দারুণ সব বই লিখেছেন। তবে বড়োদের গল্পের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় Lamb to the Slaughter। হিচকক নিজে এই কাহিনির টেলি চিত্রায়ন করেছিলেন। তাই এই কাহিনি অনুবাদের লোভ সামলানো মুশকিল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার
    Next Article সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার

    Related Articles

    কৌশিক মজুমদার

    নোলা : খাবারের সরস গপ্পো – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    নীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    অগ্নিনিরয় – কৌশিক মজুমদার

    August 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.