Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আঁধার আখ্যান – কৌশিক মজুমদার

    কৌশিক মজুমদার এক পাতা গল্প186 Mins Read0

    পরিশিষ্ট – অন্ধকারের উৎস সন্ধানে

    “There are different kinds of darkness… There is the darkness that frightens, the darkness that soothes, the darkness that is restful… the darkness of lovers, and the darkness of assassins. It becomes what the bearer wishes it to be, needs it to be. It is not wholly bad or good.”

    — Sara J. Maas

    .

    আঁধারের সঙ্গে মানুষের নাড়ির যোগ একেবারে শুরুর দিন থেকেই। গর্ভস্থ ভ্রূণ মাতৃজঠরে নয় মাস দশ দিন কাটায়, অ্যামনিওটিক ফ্লুইডে নিমজ্জিত অবস্থায়। সংকীর্ণ পরিসরে, জমাট বাঁধা অন্ধকারে কাটানো সেই সময়কাল গভীরভাবে ছাপ ফেলে তার সদ্যগঠিত মস্তিষ্কে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেও সেই স্মৃতি ভোলে না সে, প্রায় প্রতিবর্ত ক্রিয়ার মতোই অন্ধকারকে এড়িয়ে চলতে চায়। তবে এই মনোভাব বেশিদিন স্থায়ী হয় না। শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারের সঙ্গে তার সম্পর্কের সমীকরণেও আসে পরিবর্তন। আগের তীব্র বিকর্ষণের সঙ্গে যুক্ত হয় নিষিদ্ধ আকর্ষণ, বিতৃষ্ণার সঙ্গে যুক্ত হয় অদম্য কৌতূহল। পরস্পরবিরোধী এই মানসিকতা শুধু তার চেতন-অবচেতনে নয়, প্রভাব ফ্যালে তার পছন্দ-অপছন্দে, তার শিল্প-সাহিত্যের উপলব্ধিতে, এমনকি তার প্রাত্যহিক জীবনেও। রাতে ঘরের আলো নিভিয়ে ভূতের বই পড়া, অথবা আঙুলের ফাঁক দিয়ে ভয়ের সিনেমা দেখার প্রবৃত্তি এভাবেই জাগে তার মনে। যৌবনে পৌঁছে খবরের কাগজের প্রথম পাতায় হিংসা-হানাহানির খবরকে আর অগ্রাহ্য করে না সে, টিভিতে ইরাক-এর যুদ্ধের সরাসরি সম্প্রসারণ নজরে পড়লে রিমোট ঘুরিয়ে চ্যানেল বদলে দেয় না। এভাবেই দিন কাটে, রাত কাটে, এবং জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত প্রশ্ন তার আত্মসমীক্ষার অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়—“তিমির হননে তবু অগ্রসর হয়ে/ আমরা কি তিমিরবিলাসী?”

    ‘আঁধারের আখ্যান’। নামটা দেখে অবাক হলেন কি? বিশ্বাস করুন আমিও হতাম, যদি না এই বইয়ের বেশ কিছু গল্প আমার আগে থেকেই পড়া থাকত (গল্পগুলো গত কয়েক বছরে আমার দ্বারা সম্পাদিত একাধিক সংকলনে সংকলিত হয়েছে)। সেই পূর্বঅভিজ্ঞতা থেকে আমি আপনাদের আশ্বাস দিতে পারি, অন্ধকারের উপস্থিতি এই সংকলনের প্রতিটা গল্পে রয়েছে। কখনও সামনাসামনি, কখনও আড়াল থেকে, কখনও ভয়াল ভয়ংকর আকৃতি নিয়ে, কখনও আবার রূপকের রূপ ধরে, কখনও উন্মত্ত সমুদ্রের মতো সদর্পে, কখনও আবার অন্তঃসলিলা নদীর মতো নিস্তব্ধে। কিন্তু সে রয়েছে, এবং তার ‘ফ্লেভার’ আপনারাও অনুভব করতে পারবেন : বইটা হাতে নিয়ে উলটে পালটে দেখার সময়, বইয়ের পাতায় পাতায়, প্রতিটা কাহিনির পরতে পরতে।

    এই বইয়ের পনেরোটি কাহিনি প্রকারভেদে দুরকম : মৌলিক এবং অনুবাদ। আবার জঁর বা ঘরানা অনুযায়ী এই গল্পগুলোকে মোটামুটিভাবে চারটে শ্রেণিতে ভাগ করা যায় : ক্রাইম/ডিটেকশন, অলৌকিক/হরর, সায়েন্স ফিকশন/ফ্যান্টাসি এবং রহস্য/রোমাঞ্চ। তবে গল্পগুলো নিয়ে সামগ্রিক আলোচনায় মৌলিক/অনুবাদ ভাগাভাগি অথবা জঁর-কেন্দ্রিক ভেদাভেদের কোনও অর্থ আমি খুঁজে পাইনি, কারণ আমার মতে কোনও গল্পের মৌলিকত্ব অথবা জঁর-ভিত্তিক পরিচয় তার অভিঘাতের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। সাহিত্যের ক্যানভাসে মৌলিক সৃষ্টির ফুল ফোটানো পরিশ্রমসাধ্য এবং সৃজনশীল এক প্রয়াস, অন্যদিকে রোয়াল ডাল, নিল গেইম্যান বা লরেন্স ব্লক-এর মতো প্রখ্যাত লেখকদের গল্প বাংলায় অনুবাদ করে পাঠকদের সামনে তুলে ধরতেও যথেষ্ট পরিমাণ কবজির জোর লাগে। এই সংকলনে লেখক দুটোই সাবলীলভাবে করে দেখিয়েছেন, তাই তাঁর প্রচেষ্টাকে প্রাপ্য সম্মান দিতে শুরু থেকে শেষ অবধি গল্প ধরে ধরে বিশ্লেষণ করেছি আমি, যেখানে যেমন প্রয়োজন প্রাসঙ্গিক তথ্য সহকারে। আশা রাখি আলোচনার এই ধরন আপনাদের মন্দ লাগবে না।

    আসুন তাহলে, আর দেরি না করে আলো ফেলা যাক এই সংকলনের অন্তর্গত আঁধারময় গল্পগুলোর ওপর—

    ‘আঁধার আখ্যান’ বইয়ের প্রথম গল্প ‘নির্জন স্বাক্ষর’ এক নিখাদ ডিটেকটিভ ফিকশন, যা কিনা সাবজঁর অর্থাৎ উপধারার দিক দিয়ে ‘লকড রুম মিস্ট্রি’-ও বটে। এডগার অ্যালেন পো-র ‘দ্য মার্ডারস ইন দ্য র‍্যু মর্গ’ কাহিনিতে যার আত্মপ্রকাশ, আগাথা ক্রিস্টি থেকে জন ডিকশন কার-এর মতো কিংবদন্তি সাহিত্যিকগণ যাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন অথচ বাংলা ক্রাইম-ডিটেকশনে যা আজও ব্রাত্য, সেই মোটিফ-কে এই গল্পে সার্থকভাবে ব্যবহার করেছেন লেখক। বন্ধ লিফটের ভেতর ঘটে যাওয়া খুনের রহস্য উদ্ঘাটনের আগে অবধি পাঠককে ধাঁধায় রাখা এই কাহিনির আর-এক বৈশিষ্ট্য হল গোয়েন্দা তুর্বসু-র প্রথম আবির্ভাব, যা একে ‘সূর্যতামসী’ উপন্যাসের প্রিকোয়েল হিসেবে আমাদের সামনে আনে।

    নন-ক্রাইম স্টোরির প্রতি লেখকের যে দুর্নিবার আকর্ষণ রয়েছে সেটা তাঁর পরবর্তী দুটো গল্পে স্পষ্ট বোঝা যায়। এই ধরনের গল্পগুলোতে সরাসরি কোনও ক্রাইম সংঘটিত হয় না, কিন্তু অতীতে ঘটে যাওয়া ক্রাইমের বিবরণ অথবা ভবিষ্যতে ঘটতে চলা অপরাধের বীজ লুকিয়ে থাকে। সেই চিহ্ন অথবা সম্ভাবনা খুঁজে বের করতে পারলেই জিতে যায় পাঠক, সে কারণেই হয়তো যতবার ‘স্ন্যাপচ্যাট’ ও ‘কাঁটা’ পড়ি, ততবারই (অন্ধকার গল্প হওয়া সত্ত্বেও) একচিলতে হাসি আমার ঠোঁটে খেলে যায়। ‘স্ন্যাপচ্যাট’ এক আদর্শ ‘কোল্ড কেস’, যেখানে বহুদিন আগে ঘটে যাওয়া এক অপরাধ হঠাৎ করে চিঠির বয়ানের মাধ্যমে সামনে আসে এবং পাঠককে চমকে দেয়। অন্যদিকে ‘কাঁটা’ গল্পে প্রত্যক্ষ খুনের বদলে আসন্ন খুনের ইঙ্গিত এবং অনেকখানি মনস্তাত্ত্বিক ট্রিটমেন্ট আমাদের অভিভূত করে। আগাথা ক্রিস্টি-র স্ট্যান্ডঅ্যালোন কিছু ছোটোগল্প মনে পড়িয়ে দেওয়া এই দুটো কাহিনি, পাঠক, আপনাদের ভালো লাগতে বাধ্য।

    ‘পোস্টকার্ড’ নিঃসন্দেহে এক রহস্যময় গল্প; পাল্প যুগের অপরাধ গল্পের প্রায় সব ‘ট্রোপ’-ই এখানে স্বমহিমায় উপস্থিত। এখানে বন্ধ ঘরের মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা পাবেন, যা ‘ইম্পসিবল ক্রাইম’-এর প্রতি ইঙ্গিত করে। জন কোলিয়ার-এর ‘লিটল মেমেন্টো’ গল্পের বৃদ্ধের মতো একজন চরিত্র পাবেন, যে অন্যের সর্বনাশ করেই মানসিক আনন্দ পায়। এ ছাড়াও পাবেন ষড়যন্ত্রের জাল, লোভের চক্রব্যূহ, আপনাদের ধাঁধায় ফেলার জন্য ‘রেড হেরিং’-এর অবতারণা। আর এসবের পরেও যদি আপনার কিছু চাওয়ার থাকে, পাঠক, সেই চাহিদাও পূরণ করবে ‘পোস্টকার্ড’— নৈতিক ঠিক-ভুলের সীমারেখা মুছে দিয়ে ধূসর আঁধারের সামনে দাঁড় করাবে আপনাদের।

    ফ্যান্টাসি মানেই সোনালি সকাল, গোলাপি বিকেল নয়, পক্ষীরাজ ঘোড়ার পিঠে চড়া রাজপুত্র বা রাজকন্যা নয়। ফ্যান্টাসি গল্পও আঁধারের দ্যোতনা জাগানোর, মানবমনের অন্ধকারকে কল্পনার আয়নায় বহু গুণ বিবর্ধিত করার ক্ষমতা রাখে। ‘টেলিপ্যাথি’ এমনই এক কাহিনি, যেখানে মানবমনের এক অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা দিকনির্ণায়ক ভূমিকা নেয়। ‘ক্যাট অ্যান্ড মাউস’ লুকোচুরির মধ্য দিয়ে এগোয় কাহিনি, প্রতিমুহূর্তে ‘কী হয় কী হয়’ সাসপেন্সের দ্যোতনা জাগায়। শেষ পর্যন্ত দমবন্ধ-করা ক্লাইম্যাক্সের মধ্য দিয়ে ক্রাইসিসের সমাধান হয় এবং পাঠক হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। নম্বর দেওয়ার সুযোগ থাকলে এই গল্পকে পাঠক লেটার মার্কস দিতেন, এমনটা আমার অনুমান।

    সাইকোলজিক্যাল হরর-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ ‘পিপহোল’, ওপেন এন্ডিংয়েরও। বেশ কয়েক বছর আগে কিশোর ভারতীতে প্রকাশিত এই গল্পের ইউএসপি হল এর শেষ লাইন, যা পাঠকের রক্ত জল করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। বাংলা সাহিত্যের দিকপাল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আদর্শ ছোটোগল্পের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে যে কথা বলেছিলেন, ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’, এই গল্প যেন তাকেই নিষ্ঠাভরে অনুসরণ করে। চাবির গর্ত দিয়ে উঁকি দেওয়া সবুজ চোখ আসলে মানবীর, না দানবীর, নাকি এর পেছনে অন্য কোনও জটিল রহস্য রয়েছে, আমরা কখনোই স্পষ্টভাবে জানতে পারি না, আন্দাজ করতে পারি মাত্র। পাঠককে এই আন্দাজ করার স্বাধীনতা সব কাহিনি দেয় না; এখানেই ‘পিপহোল’-এর মাহাত্ম্য, স্পেকুলেটিভ ফিকশন হিসেবে সার্থকতা।

    ‘শল্লের নাভি’ গায়ে কাঁটা দেওয়া এক অলৌকিক গল্প, যার সম্বন্ধে ইংরেজি শব্দবন্ধ ধার করে বলাই যায়— ‘ব্যাক টু দ্য বেসিকস’। সাবেকি গন্ধমাখা, হেমেন রায়কে মনে পড়িয়ে দেওয়া এই গল্পের সূত্রপাত হয় কথকের অতীতের স্মৃতিচারণা দিয়ে। তারপর ধাপে ধাপে চড়ে ভয়, বিস্ময়, রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার পারদ। কলমের জোর থাকলে বহুব্যবহারে জীর্ণ হয়ে যাওয়া তন্ত্রনির্ভর হরর-এর প্রয়োগেও উৎকৃষ্ট ভয়ের গল্প লেখা যায়, লেখক এখানে সেটাই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। আধুনিক সময়ে দাঁড়িয়ে ‘কনভেনশনাল’ ভয়ের গল্প কেমনভাবে লেখা উচিত, এই কাহিনি তারই পথনির্দশক।

    বাংলা হরর সাহিত্যে মিথমেকিংয়ের কাজ বর্তমান সময়ে অনীশ দেব, সৈকত মুখোপাধ্যায়, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য প্রমুখ হাতে গোনা কয়েকজন সাহিত্যিক ছাড়া আর কেউ করেছেন কি না (অথবা করার কথা ভেবেছেন কি না) সন্দেহ। লেখক কৌশিক মজুমদার সেই কঠিন চ্যালেঞ্জটাই নিয়েছেন তাঁর ‘অভিশাপ’ গল্পে, এবং সফল হয়েছেন। সচেতনভাবেই নাগরিক জীবনের চাকচিক্য, অত্যাধুনিকতার আস্ফালন এবং জ্ঞানের অহংকারের বাইরে বেরিয়ে এসেছেন তিনি, গ্রামবাংলার অলিতে গলিতে যে ‘অভিশাপ’এর আতঙ্কে মানুষ সিঁটিয়ে যায়, তেমনই এক উপকথার জীব ‘দানো’-কে গল্পে এনে হাজির করেছেন পাঠকের সামনে, এবং স্রেফ বিবরণকে হাতিয়ার করে পাঠকের শিরদাঁড়া দিয়ে আতঙ্কের শীতল স্রোত বইয়ে দিয়েছেন।

    ‘মরণের পরে’ এক দুর্দান্ত ‘শর্ট-শর্ট’ গল্প, যা হয়তো সেই অর্থে ভয় পাওয়ায় না, কিন্তু বিস্ময়ে স্তব্ধবাক অবশ্যই করে। অ্যামব্রোস বিয়ার্স-এর ‘ওয়ান সামার নাইট’ থেকে এই গল্পের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন লেখক, কিন্তু আবহরচনা থেকে চরিত্রায়ন সবেতেই ষোলো আনা বাঙালিয়ানা বজায় রেখেছেন। বিয়ার্স-এর অধিকাংশ ছোটোগল্পেরই ‘স্যালিয়েন্ট ফিচার’ হল ‘সার্ডনিসিজম’, অর্থাৎ সূক্ষ্ম ‘ব্ল্যাক হিউমার’। পাশ্চাত্য আমেরিকান সাহিত্যের অন্যতম উল্লেখযোগ্য এই উপাদান আমরা আলোচ্য কাহিনিতেও পুরোমাত্রায় পাই; একইসঙ্গে পাই ‘প্রিম্যাচিওর বেরিয়াল’ থিমের আভাস, যা গল্প শেষে পাঠককে একবারের জন্য হলেও অস্বস্তিতে ফেলবে।

    ‘প্রেতিনী’-কে এই সংকলনের সবচেয়ে হাড় হিম করা গল্প বললে অত্যুক্তি হবে না। রবার্ট ফ্রস্ট তাঁর কবিতায় লিখেছিলেন— ‘I have it in me so much nearer home/ To scare myself with my own desert places.’ ভূতপ্রেত, রাক্ষস খোক্কস, ভ্যাম্পায়ার বা ওয়্যারউলফ নয়, মানবমনের গহিনে লুকিয়ে থাকা আঁধারই হল আদতে সবচেয়ে ভয়ংকর— পো থেকে শুরু করে ম্যাথেসন, ব্লক থেকে ব্যোমোঁ— বিশ্বের তাবড় হরর লেখকরা তাঁদের লেখায় এটাই বারবার প্রমাণ করেছেন। মনের আঁধার যখন চোরাবালি হয়ে কাউকে গ্রাস করে, তখন সেই হতভাগ্য মানসিক ভারসাম্যহীনতার অতল গহ্বরে তলিয়ে যায়, হয়ে ওঠে নিজেই নিজের শত্রু— জনি ডেপ অভিনীত ‘সিক্রেট উইন্ডো’ সিনেমার মতো এই ‘প্রেতিনী’ গল্পটাও এই চরম সত্যিকেই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

    কৌশিক মজুমদার কল্পবিজ্ঞান খুব বেশি লেখেননি, এটা তাঁর নিজের স্বীকারোক্তি। ‘বারো মিনিট’ পড়ার পর যদি আপনাদের মনে হয় বাংলা কল্পবিজ্ঞানকে তাঁর আরও অনেক কিছু দেওয়ার রয়েছে, আমি অন্তত অবাক হব না। এলিয়েন ইনভেশন-এর চেনা ট্রোপ-কে নতুনভাবে ব্যবহার করে চমৎকার এক গল্প ফেঁদেছেন লেখক, যা আইজ্যাক আসিমভ-এর ‘ডাজ আ বি কেয়ার?’-এর মতোই রোমাঞ্চকর ও স্বাদু। শেষ লাইনের অপ্রত্যাশিত ট্যুইস্ট এই কাহিনির উপরি পাওনা, সায়েন্স ফিকশনের অভিধান থেকে বিদায় নিতে চলা ‘সেন্স অফ ওয়ান্ডার’-এর রেশ ফিরিয়ে আনে এক লহমায়।

    রোয়াল ডাল-এর ‘ল্যাম্ব টু দ্য স্লটার’ এক অনবদ্য গল্প, যা সাদা পাতায় ছাপা কালো অক্ষরে তো বটেই, ‘অ্যালফ্রেড হিচকক প্রেজেন্টস’ টেলিভিশন সিরিজের সাদা কালো এপিসোডেও বাজিমাত করেছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ক্রাইম ফিকশনের উৎসাহী পাঠকদের বিনোদনের রসদ জুগিয়ে চলা এমন এক কাহিনি বাংলায় অনুবাদ করা বড়ো সহজ কাজ নয়। অতএব খোলা মনে আসুন, পাঠক, সাক্ষী হন মেরি ম্যালোরি-র অপূর্ব রন্ধনশিল্পের, এবং জেনে নিন কীভাবে প্যাট্রিক ম্যালোরি-র খুনের সঙ্গে আশ্চর্যভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল এক আশ্চর্য জিনিস (হিচকক-এর ভাষায় ‘ম্যাকগাফিন’)…

    ২০১৭ সালের মার্চ মাসে প্রকাশ পাওয়া ‘কিশোর ভারতী’ বিশেষ অনুবাদ সংখ্যা বিশ্বসাহিত্যের মণিমুক্তোর সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়েছিল। ‘সে এক অদ্ভুত পার্টি’ ছিল সেই সংখ্যার অন্যতম উজ্জ্বল এক রত্ন। মূল গল্প ‘হাউ টু টক টু গার্লস অ্যাট পার্টিজ’, লেখকের নাম নিল গেইম্যান। সায়েন্স ফ্যান্টাসির অদ্ভুত মায়াময় আবেদন, বুকের বাঁদিক ছুঁয়ে যাওয়া ভাষা, ম্যাজিশয়ান গেইম্যান-এর ‘এক্সক্লুসিভ’ কাব্যিক ন্যুয়ান্স— সব মিলিয়ে এই কাহিনি অনায়াসে স্থান করে নিয়েছিল আমাদের মনের মণিকোঠায়, ট্রায়োলেট-এর অদ্ভুত কবিতার মতোই। আর এখন, পাঠক, গেইম্যান-এর অনন্যসাধারণ এই গল্পের স্বাদ গ্রহণের বিরল সুযোগ পেতে চলেছেন আপনারাও।

    লরেন্স ব্লক-এর ‘ক্যাচ অ্যান্ড রিলিজ’-এর অনুবাদ ‘পাকড়ো-ছোড়ো’ কাহিনির ভয় বাস্তব জগতে ঘোরাফেরা করে, কখনও খবরের কাগজের শিরোনাম, কখনও টিভি মিডিয়ার ব্রেকিং নিউজ হয়ে। যে বিপদের আশঙ্কা করে অচেনা মানুষকে ঘরে ঢোকাতে ইতস্তত করি আমরা, ছোটোদের সাবধান করে দিই অচেনা মানুষের সঙ্গে কথা না বলতে, শুনশান রাস্তায় কোনও গাড়িতে লিফট নেওয়ার আগে দুবার ভাবি, সেই বিপদের উৎস ভূত, প্রেত বা পিশাচ নয়, মানুষ স্বয়ং। জীবন কেড়ে নেওয়াটা তাদের কাছে নিছকই খেলা। এই খেলার নিয়ম তারা নিজেরাই বানায়… এবং নিজেরাই ভাঙে। এবং হয়তো এই মুহূর্তে তারাও, আপনারই মতো, এই বইটা পড়ছে…

    এই সংকলনের শেষ গল্প, জে এ কনর‍্যাথ রচিত ‘পানিশমেন্ট রুম’-এর অনুবাদ ‘সাজাঘর’ এক অন্ধকারাচ্ছন্ন ডিসটোপিয়া, যেখানে স্বৈরাচারী শাসকের দমনপীড়ন সে দেশের নাগরিক নয়, নেমে আসে তাদের স্কুলপড়ুয়া সন্তানদের ওপর। হ্যাঁ, ঠিকই শুনলেন, সেই দুনিয়ায় ডিসিপ্লিন ভঙ্গের মতো সামান্য অপরাধের শাস্তি হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের ওপর নির্মম অত্যাচারকে বৈধতা দিয়েছে রাষ্ট্রশক্তি, এবং শাস্তিপ্রদানের দায়িত্ব ন্যস্ত করেছে একদল ধর্ষকামী, নৃশংস জল্লাদের ওপর। গল্পটা আপনার চোখ থেকে সুখী মধ্যবিত্ত দিনযাপনের রঙিন চশমা চিরতরে খসিয়ে দেবে। দেবেই।

    ‘স্টোরিজ’ সংকলনের ভূমিকায় সম্পাদক নিল গেইম্যান বলেছিলেন, ‘The joy of fiction, for some of us, is the joy of the imagination, set free from the world and able to imagine.’ আজ অবধি পৃথিবীতে যত কাহিনি রচিত হয়েছে তাদের মূল উদ্দেশ্য একটাই— কল্পনার আশ্রয় নিয়ে যুগ যুগ ধরে আমাদের মনে উদয় হওয়া একটাই মাত্র প্রশ্নের সঠিক উত্তর জোগানো। কী সেই প্রশ্ন? ‘তারপর কী হল?’ ছেলেবেলায় অন্ধকার ঘরে রূপকথার গল্প শুনতে শুনতে বাচ্চারা এই প্রশ্ন তাদের দাদু দিদিমাকে করে, রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার উপন্যাসের পাতা উলটোতে উলটোতে এই প্রশ্ন পাঠকের মনের অন্দরে ঘুরপাক খায়, এবং কাগজ কলম নিয়ে ধ্যানে বসা মননশীল লেখককে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। কৌশিক মজুমদারও তার ব্যতিক্রম নন।

    তাই নিশ্চিন্ত মনে ‘আঁধার আখ্যান’ হাতে তুলে নিন, পাঠক, পনেরোটি আঁধারঘেরা কাহিনির হাতছানিতে ধরা দিন স্বেচ্ছায়। দেখবেন, এক নতুন জগতের সন্ধান পাবেন আপনি, যে জগতে আলো খেলে না, চাঁদ ওঠে না, তারা ফোটে না, যেখানে কেবল আঁধারের বাস। আপনার মনে হবে এক নিকষ কালো সমুদ্র চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে আপনাকে, অথবা আপনার চোখের সামনে কালো পর্দা ঝুলিয়ে দিয়েছে কেউ। আপনি বারবার প্রশ্ন করবেন, ‘তারপর কী হল?’, উত্তরও পাবেন, কিন্তু সেই উত্তর আপনাকে পরিতৃপ্তি দেবে না, বরং দাঁড় করাবে অন্য আর-একটা প্রশ্নের সামনে, তারপর আর-একটা, তারপর আর-একটা… কখনোই সম্পূর্ণ হবে না আখ্যানের এই বৃত্ত; প্রতিমুহূর্তে ভাঙবে, গড়বে, এবং আপনার পরিচয় করাবে নিরবচ্ছিন্ন অন্ধকারের সঙ্গে।

    আজ এইটুকুই। আপনাদের আঁধার অন্বেষণ শুভ হোক!

    সৌভিক চক্রবর্তী
    সেইল-আইএসপি, বার্নপুর
    ২৭শে অক্টোবর, ২০২০

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার
    Next Article সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার

    Related Articles

    কৌশিক মজুমদার

    নোলা : খাবারের সরস গপ্পো – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    নীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    অগ্নিনিরয় – কৌশিক মজুমদার

    August 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.