স্ন্যাপচ্যাট
ডাকবাক্সটায় ধুলো পড়েছে অনেকদিন হল। আজকাল আর খোলাই হয় না। তবু সেদিন অফিস ফেরতা কী একটা উঁকি মারতে দেখে বাক্সের জং ধরা ছিটকানিটা খুলেই ফেলল অর্ণব। আর খুলতেই চিঠিটা বেরিয়ে এল। গোলাপি খামের চিঠি। উপরে লাল লাল গোলাপের ছবি আঁকা। এককালে আর্চিস কোম্পানি এইরকম খাম বেচত। এই খামে কে চিঠি দেবে ওকে? উপরে ওর নাম ঠিকানা লেখা। হাতে নিয়ে বুঝল ওজনদার বেশ।
সুজাতা লিখেছে? কিন্তু ওপরের হাতের লেখা সুজাতার না। আর যাবার আগে সুজাতা যা লিখে গেছিল, তাতে ও আবার ফিরে আসবে, সে সম্ভাবনা কম। কে জানে কোথায়, কার সঙ্গে, কী নাম ভাঁড়িয়ে নতুন সংসার পেতেছে! শুধু যাবার আগে সর্বস্বান্ত করে দিয়ে গেছে অর্ণবকে।
দরজা খুলে ঘরে ঢুকে পাখা চালিয়ে দিল অর্ণব। সারাদিনের জমাট গরম হাওয়া নেমে আসছে নিচে। মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপে প্রায় গোটা পঞ্চাশ মেসেজ। সেদিনের প্রেস কনফারেন্সটার পর প্রচুর লোকে জানতে চাইছে। হতে পারে উদ্বেগ। তবে গসিপটাই আসল বোধহয়। অর্ণবের কপাল বেয়ে দরদর করে ঘামের ফোঁটা নামতে থাকে। জামা প্যান্ট খুলে বারমুডা পরে খাটের ওপর বসে চিঠিটা খুলল সে। জেরক্সের সস্তা সাদা এ-ফোর পাতায় ডটপেনে লেখা চিঠি। বেশ কয়েকপাতা জোড়া। হাতের লেখা দেখে বোঝাই যাচ্ছে খামের ঠিকানাটাও এই হাতেই লেখা। চিঠিটা এইরকম—
মাননীয় শ্রী অর্ণব দাশগুপ্ত,
হরিপুর, অশোকনগর।
পিন— ৭৪৩২২২
“মাননীয় অর্ণববাবু,
আপনি আমাকে চিনবেন না। আর এখন যা পরিস্থিতি, তাতে আমার নিজের নাম বলাও সমীচীন বোধ করছি না। আপনি পুলিশকে আমার নাম বলে দেবেন। আমার পুলিশে বড্ড ভয়। এই চিঠি আমি হয়তো কোনও দিনও লিখতাম না। কিন্তু সেদিন স্টার আনন্দে আপনাকে দেখলাম। আপনার সাক্ষাৎকার দেখলাম। সাংবাদিকের সামনে অবলীলায় আপনি আমায় চোর বলে দিলেন মশাই! এতদিন তো বেশ চুপচাপ ছিলেন। আজ কার অনূপ্রেরণায় আপনি খামখা এতগুলো সাংবাদিকের সামনে, দেশের সামনে আমাকে মিথ্যে অপবাদ দিলেন? আমি চোর না অর্ণববাবু। আমি আবার বলছি, আমি চোর না। জানি সুজাতা আপনার জমানো সব টাকা নিয়ে ছয় মাস আগে আমার সঙ্গে পালিয়েছিল। আপনার পকেট এখন প্রায় গড়ের মাঠ। কিন্তু সেজন্য আমি দায়ী নই। আসল ঘটনা না জেনে জনসমক্ষে আমাকে চোর বললে তো আমায় প্রতিবাদ করতেই হবে। আপনার জানা উচিত ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল।
আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন, যে আপনার স্ত্রী অতি মুখরা একটি মহিলা। সারাদিন বকবক বকবক করেই যাচ্ছে। কোনও কিছুতেই ক্ষান্তি নেই। কিন্তু মজার ব্যাপার কী জানেন, ওর এই কথা শুনেই ওর প্রেমে পড়েছিলাম। আসলে পরের বউ হলে যা হয় আর কি! আর দেখতে শুনতেও… বলতে কী নিতান্ত মন্দ নয় আপনার স্ত্রী। বছর দেড়েক আগের কথা। তখন সদ্য সদ্য সুকন্যার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা শেষ হয়েছে। আমি বুঝে গেছিলাম ও আর কোনও দিন আমার জীবনে ফিরে আসবে না। তাই সঙ্গী খুঁজতে স্ন্যাপচ্যাটে একটা অ্যাকাউন্ট খুলেছিলাম। বেকার ছেলে। ফ্রি জিও। দেখতে শুনতে মন্দ নই। একদিন আচমকা একটা রিকোয়েস্ট এল। সুইট সুজি। তখনও আমি ভাবতাম, ওখানে যেসব মহিলার রিকোয়েস্ট আসে, তারা সব ফেক আইডি। এটাও সেরকমই কিছু একটা। প্রথমদিকে পাত্তা দিইনি জানেন। কিন্তু আপনি তো সুজাতাকে চেনেন। যদি একবার কোনও কিছু মাথায় ঢোকে, তবে সেটা পেয়েই ছাড়বে। প্রথমে বিরক্ত হতাম। তারপর ভালো লাগতে শুরু করল। দিনে চার ঘণ্টা, পাঁচ ঘণ্টা টানা কথা হত। তবে হ্যাঁ, এটুকু বলি, এর জন্য ওকে পুরোপুরি দোষ দেওয়া যায় না। আপনার অফিসের যা চাপ! আপনি সময় দিতেন না বলেই বেচারি স্ন্যাপচ্যাটে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। প্রথম প্রথম টাইপ করে চ্যাট, তারপর ভয়েস চ্যাট। সেখানে ওর গলা শুনে প্রথমবারই প্রেমে পড়েছিলাম, জানেন। কী মিষ্টি গলা, আর কী দারুণ কথা বলতে পারে! দারুণ গানও জানে। অনেক রাতে আপনি যখন ওর পাশে ঘুমিয়ে পড়েছেন, ও তখন ফিসফিস করে আমায় গান শোনাত। আমার খুড়তুতো দিদির মতো। দিদি আমার চেয়ে পাঁচ বছরের বড়ো ছিল। আমরা রাতে একসঙ্গে শুতাম। আমার যখন তেরো, একদিন রাতে দেখি ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসছে। দিদি আমার মুখটা নিয়ে চেপে ধরেছে ওর নরম বুকে। ও বুকে “রোজ সেন্ট” মাখত। তার সঙ্গে ঘামের গন্ধ মিশে অদ্ভুত এক গন্ধ আমায় আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। তারপর কী হয়েছিল ঠিক মনে নেই। কদিন বাদে কেমন করে যেন কাকিমা জেনে গেছিল। কাকা আমাকে খুব মেরেছিল। দিদিকেও। দিদির বিয়ে ঠিক করে দিয়েছিল।
ধুসস, এসব কথা আপনাকে কেন বলছি? আপনাকে বরং সুজাতার কথা বলি। সুজাতা বলত আর আমি শুধু শুনে যেতাম। ও বলত আপনি ওকে একদম সময় দেন না, ঘুরতে নিয়ে যান না, বাড়িতে এসে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন, বিছানার কোলবালিশটাও আপনার চেয়ে গরম… এইসব আগডুম বাগডুম কথা। আমি ওর কথায় বিশ্বাস করতাম। নিজের মতো যতটা পারি প্রবোধ দিতাম। ভয়েস চ্যাটে আমাদের আলোচনা ধীরে ধীরে উত্তাপ ছড়াতে লাগল। তারপর একদিন ভিডিও চ্যাটে ও আমাকে নিজের সব কিছু খুলে দেখাল। কিছু মনে করবেন না, বিয়ের তিন বছর পরেও কোনও মহিলার এত আঁটসাঁট শরীর আমি আগে দেখিনি। দেখেই বোঝা যায়, খুব বেশি ব্যবহার হয়নি। আমি আর কী করি! নিজেকে ওর সামনে মেলে দিলাম। মানে সুজাতার অনুরোধেই। আর তা দেখে ও আপনাকে নিয়ে যা যা বলেছিল, সেসব বলে আর লজ্জায় ফেলতে চাই না। এভাবেই সব চলছিল। ভার্চুয়াল। কথাও ছিল কোনও দিন দেখা করব না। কিন্তু ওই যে বলে না, উপায় থাকলে ইচ্ছে হয়। এমন কপাল, ঠিক সেই সময় অফিসের কী একটা কাজে আপনি এক সপ্তাহের জন্য পাটনা গেলেন।
সুজাতাও আমাকে আপনার হরিপুরের বাড়িতে ডেকে নিল। আপনার বাড়িটা বেশ ভালো। একটেরে। আশেপাশে প্রতিবেশীদের ঝামেলা নেই। কে এল, কে গেল, কিচ্ছু বোঝা যায় না। সন্ধ্যার পর ঢুকতাম, ভোর ভোর বেরিয়ে আসতাম। সারারাত আপনার বিশাল ডবলবেড খাটে, সেই হলুদের উপর লাল গোলাপফুল আঁকা বেডকভারে শুয়ে আমরা কী কী করেছি আপনি ভাবতেও পারবেন না। এটা বলতে পারি, সুজাতাকে সন্তুষ্ট করা মুশকিল। আপনার অপারগতা আমি বুঝি। তবে হ্যাঁ, ওই কটা দিন সুজাতা দারুণ খুশি ছিল। ওকে এত খুশি আমি আগে দেখিনি। ফিরে এসে আপনিও নাকি অবাক হয়ে গেছিলেন ওর খুশি দেখে! সত্যি মিথ্যা জানি না মশাই, ও আমাকে বলেছিল। আর যদি সেটা হয় তাহলে তো আমার একটা বড়ো “থ্যাঙ্কু” প্রাপ্য। আর তার বদলে আমাকে আপনি চোর বদনাম দিলেন!!
আপনার অফিসে কাজ বাড়তে লাগল আর আমাদের দেখা হওয়াও। মাঝে মাঝেই ও শপিং-এর নাম করে চলে আসত বারাসাতে। সোজা গিয়ে ঢুকতাম সিনেমা হলে। কোনও নামী সিনেমা হল না। এই আইনক্সের বাজারে যে কটা ঝড়তিপড়তি হল আছে, তাদের একটায়। ওখানে বক্স নামে অদ্ভুত একটা জিনিস আছে। প্লাইউডের পার্টিশন দিয়ে ছোটো ছোটো ঘরের মতো। ভিতরে সবাই দুজন দুজন বসে। কী সিনেমা চলছে, কে খবর রাখে! কিন্তু এটা আমার পছন্দের ছিল না। এসব সিনেমা হলে নাকি পুলিশের রেইড হয়, আর আপনি তো জানেন, আমি পুলিশে কত ভয় পাই।
সমস্যা এল অন্য জায়গা থেকে। সুজাতার মাথায় পোকা নড়ল। একদিন বলল সত্যিই এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করা যায় না। ও নাকি পালিয়ে যাবে। তাও আবার আমার সঙ্গে! আমার তো মাথায় বাজ। এই মহিলা বলে কী! আমি এমনিতেই কাঠবেকার। খাব কী আর খাওয়াব কী? কিন্তু আপনার ওই জেদি বউ আমার একটা কথা শুনলে তো… বলল টাকাপয়সা নাকি কোনও সমস্যাই না। সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আপনি নাকি ওকে দারুণ বিশ্বাস করেন। আপনাদের সেভিংস অ্যাকাউন্টটাও নাকি জয়েন্ট ইত্যাদি প্রভৃতি। কিন্তু আমাদের দরকার ছিল আরও টাকা। ও আপনাকে বোঝাল ব্যবসা করবে। শাড়ির। নাম দেবে “সুজাতার সম্ভার”( এখানে বলে রাখি, এই নামটা কিন্তু আমার ঠিক করা)। আপনিও অফিস থেকে লোন নিলেন। পঞ্চাশ লাখ টাকার। নতুন অফিস হবে। শো-রুম হবে। তাই বাড়ি খোঁজার একটা নাটকও হয়েছিল বোধহয়। আপনিও কাজ ফেলে দুদিন গেছিলেন, যতদূর জানি। কিন্তু এখানে আবার জানিয়ে রাখি, এর একটাও কিন্তু আমার প্ল্যান না। তলে তলে নিউ ব্যারাকপুরের কাছে একটা বাড়ি কেনার চক্রান্ত চলছিল, সেটা আপনি জানতেন না। আমি জানতাম। লোকাল নেতাদের টাকা খাইয়ে কম দামে আমিই বাড়িটার ব্যবস্থা করেছিলাম। আজকাল এমন বাড়ি পাওয়া মুশকিল। সামনে অনেকটা জায়গা ফাঁকা। ঘাসের সবুজ লন। যেন মখমলের কার্পেট। দেখেই ঠিক করেছিলাম বাগান করব। আমার বাগানের খুব শখ। সেই ছোটোবেলা থেকে। গোলাপ বাগান। লাল গোলাপ। একটা লাল গোলাপ গাছ ছিল আমার। ছোটো ছোটো লাল লাল গোলাপফুলে গোটা গাছ ঢাকা। রোজ জল দিতাম। মাঝে মাঝে গোবর সার দিতাম। খোল পচা দিতাম। নাম রেখেছিলাম “লালমোহন।” ফেলুদার গল্পের মতন। যেদিন খুড়তুতো দিদির বিয়ে হল, ওরা লালমোহনকে কেটে ফেলল। কত কাঁদলাম। কেউ শুনল না। রেগে গিয়ে দিদির বাসরঘরের জানলা দিয়ে খাটে জ্বলন্ত মোমবাতি ফেলে দিয়েছিলাম। পুলিশ এসেছিল। সবাইকে জিজ্ঞাসা করল। আমাকেও। কাকা বলল, “ও-ই করেছে।” পুলিশ কাকার বন্ধু। আমাকে দোতলার ঘরে নিয়ে গিয়ে ল্যাংটো করে মারল। রুল দিয়ে। চারদিন উঠে বসতে পারিনি।
যাক গে সেসব কথা, সেই বাড়ি দেখে তো বাগান করব ঠিক করলাম। সুজাতাকে বললাম। কোনও উৎসাহ দেখাল না মাইরি! কেমন বউ আপনার? ফুল ভালোবাসে না। ফুল আর শিশু যারা ভালোবাসে না, তারা বড্ড নিষ্ঠুর হয়। মানুষ খুন করতে পারে। আমার মন দমে গেল। কিন্তু তখন দেরি হয়ে গেছে। আর নতুন করে ভাবার আর সময় নেই। আমরা পালালাম। পালিয়ে প্রথম দুইমাস নাম ভাঁড়িয়ে কোথায় ছিলাম বলব না। আপনি তাহলে আমায় চিনে ফেলবেন। আমার পিছনে পুলিশ লাগাবেন। আমার পুলিশে বড্ড ভয়। যাবার আগে সুজাতা আপনাকে একটা চিঠি লিখে গেছিল। তাতে আপনাকে যৌন অক্ষম বলে যা যা লেখা ছিল, কোনও পুরুষমানুষ চাইবে না সে চিঠি অন্যের হাতে যাক। আমি জানি, পুরুষমানুষ সব সহ্য করতে পারে, কিন্তু তাকে কেউ নপুংসক বলে গালি দেবে সেটা সহ্য করতে পারে না। আমি এটাও জানতাম ওই চিঠি কোনও দিন দিনের আলো দেখবে না। চিঠির বয়ান আমারই। যদিও লিখেছিল সুজাতা। আপনি এই নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করেননি। পুলিশকে জানাননি। ঠিক করেছেন। বউ পালিয়েছে এটা কি ঢাকঢোল পিটিয়ে বলার মতো খবর?
সব ঠান্ডা হতে আমরা নিউ ব্যারাকপুরের ওই বাড়িতে থাকা শুরু করলাম। পালাবার আগেই গোলাপের চারা লাগিয়েছিলাম। সেগুলো বেশ বড়ো হয়ে লাল লাল ফুল দিত। কী সুন্দর গন্ধ! আমার খুড়তুতো দিদির বুকের গন্ধের মতো। কেন জানি না, সুজাতা বদলাতে থাকল। দিনরাত খিটখিট করত। মাথা গরম করত। ঝগড়া করত। ঠিক যেমনটা সুকন্যা করত বলে আমার সঙ্গে ব্রেক আপ হয়েছিল। আমি বারবার সুজাতাকে বলতাম ফুলে হাত না দিতে। গাছে হাত না দিতে। ও শুনত না। গাছ থেকে ফুল ছিঁড়ে ছিঁড়ে খোঁপায় লাগাতে চাইত। দু-একবার ঝগড়া করেছি। কিছু বললেই শুরু হত সেই বকবক বকবক। মাথার পোকা নড়ে যায়। শুরু হলে থামতেই চাইত না। ভয় দেখাত। বলত আমায় নাকি ফাঁসিয়ে দেবে। পুলিশে সব জানিয়ে দেবে। আমিও কেঁচো হয়ে যেতাম। আমার ওপর ওর টান শেষ হয়ে গেছিল। আপনার থেকে চুষে নেওয়া টাকাও তখন প্রায় শেষ। এমন সময় কী এক চাকরি নিল কে জানে। দেখলাম বাড়িতে অন্য পুরুষ ঢুকছে। ওদের কাউকে আমি চিনি না। ওরা ঢুকলে আমি বাগানে বেরিয়ে আসতাম। গোলাপ গাছে জল দিতাম। খোল পচিয়ে দিতাম। চা-পাতা ধোয়া জল দিতাম। আমি বেরিয়ে এলেই দরজা বন্ধ হয়ে যেত। রাতে আমরা আলাদা শুতাম। আলাদা ঘরে।
গত মাসের কুড়ি তারিখ বাড়াবাড়ির চূড়ান্ত হল। আমি এক প্যাকেট বিড়ি কিনতে স্টেশনে গেছি। একটু এদিক ওদিক ঘুরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছি। গেটের ভিতরে পা দিতেই চমকে উঠলাম। আমার সব গোলাপ গাছ ফাঁকা। একটাও ফুল নেই। ঘরে ঢুকে দেখি আপনার বউ সুজাতা নিউ মার্কেট থেকে বড়ো বড়ো পিতলের ফুলদানি কিনে এনেছে। তাতে লম্বা লম্বা ডাঁটির সব গোলাপফুল কেটে কেটে সাজাচ্ছে। কিছু ফুল ওর পায়ের চাপে চটকে গেছে। অদ্ভুত এক লালচে তরল মেঝেতে দাগ তৈরি করেছে। আমি হতভম্বের মতো তাকিয়ে রইলাম। মুখ ভেটকে সুজাতা বলল, “এত ওভাররিঅ্যাক্ট করার কিছু নেই। কাল আমার বস মিঃ গুপ্ত আসবেন। বিশাল বড়োলোক। ঘরটা সাজিয়ে রাখতে হবে তো! আর শোনো কাল দুপুর দুপুর কোথাও বেড়িয়ে এসো। রাতের আগে এসো না।” আমার মাথা কাজ করছিল না। আমার চোখের সামনে লাল লাল চটকানো কিছু মৃতদেহ। আমার সন্তানদের মৃতদেহ। চোখের সামনে গোটা পৃথিবী দুলে উঠল।
আমি সেই রাতেই ওই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি। আমার সন্তানদের মৃতদেহের মাঝে এক মুহূর্ত কাটানো আমার পক্ষে অসম্ভব। আশা করি সত্যিটা আপনি এতদিনে জানলেন। যদি আপনি ভদ্রলোক হন, তবে দয়া করে আর-একটি প্রেস কনফারেন্স করে এই মিথ্যে চুরির দায় থেকে আমাকে মুক্তি দিন।
আপনার মঙ্গল হোক।
ইতি
আপনার অপরিচিত এক হতভাগ্য।
পুনঃ- আমি যে সত্যিই চোর না তার প্রমাণ আমি দিতে পারি। আপনার যতটুকু টাকা অবশিষ্ট আছে, সব একটা গোলাপ কাঠের বাক্সে পুরে রেখেছি। বাক্সটা আপনিই সুজাতাকে বিবাহবার্ষিকীতে উপহার দিয়েছিলেন। বাড়ির সামনে বাগানের পাশের মাটিটা খুঁড়লে সুজাতার সঙ্গে ওই বাক্সটাও পাবেন।
একটু খেয়াল রাখবেন এই খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়ে আমার গাছগুলোর যেন কোনও ক্ষতি না হয়। ওরা আমার সন্তানসম।
ভালো থাকবেন। আমিও ভালো আছি। মাসখানেক হল স্ন্যাপচ্যাটের মাধ্যমে এক বিধবা মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছি। মহিলা দারুণ সুন্দরী। সবই ভালো, কিন্তু সুকন্যা আর সুজাতার মতো এও বড্ড বেশি বকবক করে।
লেখকের জবানি: ফেসবুকে কিছুদিন আগে একটা খবর দেখেছিলাম। এক বিবাহিত মহিলা ফেসবুক ফ্রেন্ডের জন্য স্বামীকে ত্যাগ করেছেন। স্বামীর বক্তব্য দোষটা সেই প্রেমিকের। সে নাকি টাকার জন্য তাঁর স্ত্রীকে ফুসলিয়েছে। তখনই মনে হয়েছিল ব্যাপারটা তো এমন নাও হতে পারে। ধরি মহিলা স্বেচ্ছায় ঘর ছাড়লেন। এবার তাঁদের কী হল? এইসব ভাবতে ভাবতে আচমকা এই প্লটটা মাথায় এল। লিখে ফেললাম।