Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আঁধার আখ্যান – কৌশিক মজুমদার

    কৌশিক মজুমদার এক পাতা গল্প186 Mins Read0

    কাঁটা

    ১

    “কারা এল গো আমাদের হাউজিং-এ?” জানলা থেকে মুখ না সরিয়েই রণিতা প্রশ্ন করল।

    “কে আবার আসবে? আমাদের এখানে আর ফ্ল্যাট খালি আছে নাকি! শেষ ফ্ল্যাটটা তো গত বছর সোহমরা কিনে নিল। মনে নেই?” পেপার ওলটাতে ওলটাতে আলগোছে উত্তর দিল দেবরাজ।

    “আরে সেটাই তো ভাবছি! কিন্তু তলায় মুভারস অ্যান্ড প্যাকারস-এর গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। মালপত্র ডাঁই করা। ব্যাপার কী?”

    “দ্যাখো কেউ ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যাচ্ছে নাকি।”

    এই ব্যাপারটা রণিতা ভেবে দেখেনি। কিন্তু সেটা হলে তারই সবার আগে জানা উচিত ছিল। রণিতার আড়ালে এই হাউজিং-এর বাসিন্দারা তাকে ‘গেজেট’ নামে ডাকে। কার হাঁড়িতে আজ কী চড়ল, কার বর সেক্রেটারির সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করে, কার ছেলে ড্রাগ নেয়, কার শালির মেয়ের অন্তরঙ্গ ছবি এখন হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল, সব তার নখদর্পণে। সকালে রান্না শেষ করে দেবরাজ অফিসে বেরোতেই ঘরে তালা লাগিয়ে রণিতা বেরিয়ে পড়ে। “কি গো কী করছ?” বলে আজ এর ফ্ল্যাটে কাল ওর ফ্ল্যাটে গিয়ে আড্ডা জমায়। কেউ দুঃখ প্রকাশ করলে সমবেদনা জানায়, আনন্দে ভাগ নেয়, আর এই করতে করতে সবার সব খবর কীভাবে যেন তার কাছে চলে আসে। শুধু ইনফরমেশনই না, তা সঠিকভাবে ব্রডকাস্ট করতেও রণিতার জুড়ি নেই। কোনও গোপন খবর জানতে গেলে তাকে একবারটি জিজ্ঞেস করলেই হবে। না করলেও যে জানা যাবে না তা না। এই যে রণিতাদের ঠিক উলটোদিকের ফ্ল্যাটে নতুন আসা দম্পতিদের মধ্যে বিন্দুমাত্র ভাব ভালোবাসা নেই, সেটা রণিতা না বললে কে জানত? ফ্ল্যাট কালচারে কে কার খবর রাখে? কিন্তু রণিতা রাখে। রণিতা নিজে ওদের ফ্ল্যাটে গিয়ে একদিন দেখেছে স্নিগ্ধার চোখ কেঁদে কেঁদে ফুলে গেছে। গালে কালশিটের দাগ। নিশ্চয়ই ওর বর সোহম ওকে মারে। আর একদিন ফ্ল্যাটের দরজা সামান্য খোলা ছিল। রণিতা পরিষ্কার শুনেছে সোহম স্নিগ্ধাকে বলছে, “আই উইল কিল ইউ বিচ।” রণিতার সঙ্গে স্নিগ্ধার সম্পর্ক বেশ ভালো। রণিতা মধ্য তিরিশ। স্নিগ্ধা সবে তেইশ পেরুল। তবু অসমবয়সি বন্ধুতা ধীরে ধীরে গাঢ় হয়ে উঠল দুজনের মধ্যে। স্নিগ্ধাও রণিতাকে অপছন্দ করত না। ছেলেমেয়ে নেই। ডাক্তার বলেছে হবেও না। কিছু তো একটা নিয়ে থাকবে মানুষটা। রণিতাও স্নেহ করত মেয়েটিকে। বাপ-মা মরা মেয়ে। মামারা ভালো ছেলে দেখে কম বয়েসেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। এখনও সংসারের অ-আ-ক-খ শিখতে সময় লাগবে।

    স্নিগ্ধার থেকে জানবে বলে দরজা খুলতেই রণিতার একগাল মাছি। ওরাই মালপত্র নিয়ে চলে যাচ্ছে। মুভারস অ্যান্ড প্যাকারস-এর লোকজন জিনিসপত্র নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছে। কী আশ্চর্য!! এত বড়ো একটা ঘটনা ঘটল, আর রণিতা আভাস মাত্র পেল না! তিনদিন আগে বর-বউয়ের ঝগড়া চরমে উঠেছিল। সাহস করে রণিতা ওদের ফ্ল্যাটে যায়নি। কিন্তু আজ আচমকা কী এমন হল?

    প্রায় দৌড়ে নিজের ঘরে ঢুকল রণিতা। “এই শোনো, সামনের ফ্ল্যাটের স্নিগ্ধারা চলে যাচ্ছে, জানো…”

    “ও”, বলে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিল দেবরাজ। “অন্য কোনও ভালো ফ্ল্যাট পেয়েছে বোধহয়।”

    “কী যে বলো না তুমি! যদি সেরকমই হত, তাহলে আমি জানতাম না? স্নিগ্ধা নিশ্চয়ই আমাকে বলত।” বলেই যেন একটু চমকে উঠল রণিতা।

    “এই শোনো না, সেই সেদিনের রাতে ওই ঝগড়ার পর তুমি স্নিগ্ধাকে আর দেখেছ?”

    “কী করে দেখব? আমি সাতসকালে অফিস যাই, গভীর রাতে ফিরি। এই একটা দিন বাড়িতে থাকি। হাউজিং-এ কে কোথায় গেল, কী করল, সে দেখা কি আমার কাজ?”

    “এইমাত্র একটা ব্যাপার মনে পড়ল। সেদিনের পর থেকে আমিও কিন্তু স্নিগ্ধাকে দেখিনি। প্রতিবার বরের সঙ্গে ঝগড়া হলেই পরের দিন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। দুঃখের কথা বলে। এবার আসেনি। আরও অবাক কাণ্ড, গত তিনদিন সোহম অফিস যাবার আগে ঘরের বাইরে তালা লাগিয়ে গেছে। তখন মাথায় আসেনি। এখন খেয়াল পড়ছে… হ্যাঁ, আমি শিওর।”

    “কোথাও গেছে হয়তো…” দেবরাজ বলে।

    “উঁহুঁ। স্নিগ্ধা বাজারে গেলেও আমাকে বলে যায়। আর বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে, আমাকে জানাবে না… হতেই পারে না। দাঁড়াও তো”, বলেই পাশের ঘর থেকে মোবাইলটা নিয়ে আসে রণিতা। কল লিস্ট থেকে স্নিগ্ধার নম্বর ডায়াল করে কানে দিল।

    “সুইচ অফ বলছে। কিন্তু ও তো ফোন সুইচ অফ করে না কক্ষনো। ওর চুঁচুড়ার বড়োমামি অসুস্থ। ওই মামিই ওকে মায়ের মতো মানুষ করেছে। কখন কী খবর আসে, সেই ভয়ে মোবাইল সারাক্ষণ খোলা রাখে। হোয়াটসঅ্যাপটা দেখি… এ কী! লাস্ট সিন তো তিনদিন আগে দেখাচ্ছে। যে মেয়ে চব্বিশ ঘণ্টা হোয়াটসঅ্যাপ ছাড়া থাকতে পারে না, সে গত তিনদিনে একবারও…” নিজের মনে বিড়বিড় করে বলে চলল রণিতা।

    “এই যে, কি গো, চলো না একবার আমার সঙ্গে… সামনের ফ্ল্যাটে। ব্যাপারটা নিজের চোখে দেখে আসি”, বলে দেবরাজকে তাড়া লাগাল রণিতা। দেবরাজের বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না কে এল, কে গেল তা দেখার। কিন্তু তার স্ত্রীকে সে চেনে। মাথায় একবার গোয়েন্দাগিরির শখ জাগল তো পৃথিবীর কোনও কিছু তাকে ঠেকাতে পারবে না।

    “অগত্যা…” বলে রবিবারের পত্রিকাটা পাশের টেবিলে সশব্দে ফেলে উঠে দাঁড়াল দেবরাজ।

    সোহম-স্নিগ্ধাদের ফ্ল্যাটটা নতুন রং করা। হালকা হলুদ রঙের ইন্টেরিয়র। দরজা খোলা। দরজায় কাঠের নেমপ্লেটে “সোহম বসু/ স্নিগ্ধা বসু” লেখা। দুটো ষণ্ডা প্রকৃতির লোক একটা কার্ল-অনের গদি দরজা দিয়ে বার করছে। ওদের দেখে “একটু সাইড দেবেন প্লিজ” বলতেই ওরা সরে দাঁড়াল। ঘর প্রায় ফাঁকা। শুধু বুকশেলফের বইগুলো কিছুটা সরানো বাকি। ঘরে ঢুকে এ ঘর ও ঘর করল রণিতা। দেবরাজ মানা করল, তবুও। টু-বিএইচকে ফ্ল্যাটের দুটো ঘর, এমনকি বাথরুমেও কেউ নেই। কাবার্ড খুলে দেখল রণিতা। থরে থরে কাপড় সাজানো। বেশিরভাগই স্নিগ্ধার।

    “আরে! দ্যাখো দ্যাখো, এটা কীরকম হল? স্নিগ্ধার ঘরে পরার মাত্র তিনটেই নাইটি ছিল। আমায় দেখিয়েছিল। তার মধ্যে এই গোলাপিটা তো ওর ফেভারিট। একটাও না নিয়েই চলে গেছে! আমার কেমন যেন ভালো ঠেকছে না।”

    ভালো ঠেকছিল না দেবরাজেরও। অন্যের বাড়িতে না বলে, না জানিয়ে এভাবে তদন্ত করাটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না সে। আর তখনই রান্নাঘরের দিকে চোখ পড়ল দেবরাজের। মাঝখানে বেখাপ্পাভাবে একটা কার্পেট গুটিয়ে আছে। উপরে নিচে দড়ি বাঁধা। সেদিকে এগোতেই একটা পচা গন্ধ নাকে এল। চাপা, কিন্তু স্পষ্ট। আর ঠিক তখনই দরজা খুলে ঘরে ঢুকল সোহম।

    ২

    ঢুকে প্রথমে থতোমতো খেয়েই রণিতাকে দেখে একগাল হাসল সে। “আরে বউদি! আপনারই অপেক্ষায় ছিলাম। দাদাও আছেন। ভালোই হল।”

    “আমাদের অপেক্ষায়? কেন ভাই?” রণিতা একটু অবাক হল।

    “চেনাজানার মধ্যে আপনারাই তো আছেন। আমিই যেতাম আপনাদের কাছে। আমরা এই ফ্ল্যাট ছেড়ে দিচ্ছি। আমার ট্রান্সফার হয়ে গেছে। কালিম্পং-এ। ওখানেই থাকব এখন।”

    “আর এই ফ্ল্যাট?”

    “থাকবে। তালাবন্ধ। দেখি যদি কোনও খদ্দের পাই। আপনারাও দেখবেন। আমার নম্বর দিয়ে যাব। জানাবেন।”

    “বলছি… স্নিগ্ধা কোথায়?” অপ্রিয় প্রশ্নটা রণিতাই করল।

    আচমকা এই প্রশ্নটা আসবে বোঝেনি সোহম। এই প্রথম ওর কনফিডেন্সে চিড় ধরল যেন।

    “ও… মানে… ও আগেই চলে গেছে। কালিম্পং-এ। মানে গোছগাছ করতে হবে তো… তাড়াহুড়োতে বলে যেতে পারেনি হয়তো। আমাকে বলেছে, দিদিকে বলে দিয়ো।”

    “ওর ফোন সুইচ অফ কেন? আরও হোয়াটসঅ্যাপও চেক করছে না গত তিনদিন।” দেবরাজ বুঝল রণিতা সহজে হাল ছাড়বে না।

    এবার সোহমকে সত্যি সত্যি বেশ বিব্রত দেখাল। “ওহ। হ্যাঁ… ওর মোবাইলের ব্যাটারিটা কদিন হল গেছে। নতুন মোবাইল আর কেনা হয়নি। দেখি, কালিম্পং-এ গিয়ে, সব গুছিয়ে…”

    গোটা ব্যাপারটাই কেমন সন্দেহজনক লাগছিল দেবরাজের। এতক্ষণ লাগেনি। এবার লাগল। সোহম কি কিছু লুকাতে চাইছে? আর অকারণে বারবার রান্নাঘরের দিকেই বা তাকাচ্ছে কেন?

    “রান্নাঘরে কী একটা যেন পচেছে, একটু দেখব নাকি?” এবার দেবরাজ গলা খাঁকরে প্রশ্ন করল।

    বলামাত্র সোহমের চোখে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। প্রায় ছুটে গিয়ে “মরা ইঁদুর-টিঁদুর হবে” বলেই দরজার কপাটটা লাগিয়ে দিল হুড়মুড়িয়ে। “রান্নাঘরে ইঁদুরের উৎপাত। তাই বিষ দিয়েছিলাম”, বলে ফ্যাকাশে একটা হাসির চেষ্টা করল সে।

    দেবরাজের গোটা ব্যাপারটাই একটা ভয়ংকর ষড়যন্ত্র বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু কিছু করার নেই।

    সিঁড়ি বেয়ে দুজনেই নেমে এল নিচে। দুজনেই চুপচাপ। দেবরাজ বুঝল, সে যা ভাবছে রণিতাও ঠিক সেটাই ভাবছে। রণিতার নাকেও নিশ্চিত সেই পচা গন্ধ ঢুকেছে। আর যদি তাদের ভাবনা সত্যি হয়, তাহলে তাদের চোখের সামনে দিয়ে কুৎসিততম অপরাধ করে অপরাধী পালিয়ে যাবে, আর তারা চুপ করে বসে থাকবে।

    মুভারস অ্যান্ড প্যাকারস-এর লোকদুটো গাড়িতে মাল ওঠাচ্ছিল। যেন এমনি, এমন করে হালকা গলায় রণিতা তাদের প্রশ্ন করল, “দাদা এই মাল কালিম্পং যেতে কতদিন লাগবে?”

    লোকদুটো কাজ থামিয়ে অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকাল। “কী বললেন দিদি? বুঝলাম না।”

    “মানে, এইসব জিনিসপত্র তো কালিম্পং যাচ্ছে, যেতে রাস্তায় কতদিন লাগতে পারে?”

    “ভজা… এই ভজা… এ দিদি কী বলছে দেখ তো… মাল কোথায় একটা যাবে…” বলতেই ড্রাইভারের জানলা দিয়ে একটা মুখ বেরিয়ে এল।

    “কী বলছেন দিদি?”

    “বলছি, এই সব মাল কালিম্পং যাচ্ছে তো?”

    “না দিদি, বড়বাজারে যাচ্ছে। বাবু তো আমাদের মালিকের কাছে সব বেচে দিয়েছেন। উনি নাকি বিদেশ যাচ্ছেন। আর ফিরবেন না। তাই…”

    দেবরাজ আর রণিতা স্তম্ভিত হয়ে একে অন্যের দিকে চেয়ে রইল। সোহম বিদেশে পালাচ্ছে। আর একবার বিদেশে গেলে তার টিকিটাও ছোঁয়া যাবে না। আর যদি তাদের ধারণা সত্যি হয়, তাহলে সোহম একাই যাচ্ছে। কারণ স্নিগ্ধার পক্ষে যাওয়া অসম্ভব। সে কার্পেট জড়িয়ে শুয়ে আছে এই ফ্ল্যাটেরই রান্নাঘরে। অনেকদিন পরে যখন তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে, ততদিনে বড্ড দেরি হয়ে গেছে।

    নিজেদের ঘরে যখন ফিরল তারা, তখন দুজনেরই মুখ থমথমে। যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। আর কয়েক ঘণ্টা হাতে পেলেই অঘটন ঘটবে। দক্ষিণ কলকাতার এই হাউজিং-এ কেউ কারও খবর রাখে না। তারা না থাকলে সোহমের পালিয়ে যাওয়া কেকওয়াকের মতো মসৃণ হত। কিন্তু না। তারা থাকতে এ জিনিস হতে দেওয়া যায় না।

    “তোমার বন্ধুর বাবা তো পুলিশের আইজি। তাঁকে ফোন করলে হয় না?” রণিতাই প্রথম কথা বলল।

    “কাকুকে ফোন করতে চাইছি না। এই সামান্য ব্যাপার…” বলতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল রণিতা। “সামান্য ব্যাপার? মেয়েটাকে খুন করে ফেলে রেখে বিদেশে পালাচ্ছে। একটার পর একটা মিথ্যে কথা বলছে। আর ওই গন্ধ, তুমি পচা গন্ধ পাওনি?”

    “বলল যে ইঁদুরের…” মিনমিন করে একটা প্রতিরোধ তৈরির চেষ্টা করল দেবরাজ।

    “তমি চুপ করো তো। আমি শিওর ওটা স্নিগ্ধা ছাড়া কেউ না। বাপ-মা মরা মেয়েটাকে খুন করেছে জানোয়ারটা। আগেও মারত। সুযোগ পেলেই মারত। এবার একেবারে প্রাণে মেরে ফেলেছে”, রণিতার চোখে জল উপচে পড়ল। “আর তুমি কী ভেবেছ, এই বডি উদ্ধার হবে না? আর হলে পুলিশ তোমায় ছেড়ে কথা বলবে? সব কিছু জেনে বুঝে খুনিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তোমাকেও রেয়াত করবে ভেবেছ? শেষে তোমাকে না ঘানি টানায়..”

    দেবরাজ ভীতু মানুষ। তাও খানিক ভেবেচিন্তে মোবাইলে ডায়াল করল। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “কাকু, আমি দেবরাজ বলছি। একটা ঘটনা ঘটে গেছে…”

    এর পরের কয়েক ঘণ্টা যে কেমন করে কাটল দুজনের তা আর বলার না। দুপুরে ভালো করে খাওয়া হল না। বিশ্রাম হল না। একটা কী হয়, কী হয় ভাব। দুপুর দুটো নাগাদ বাড়ির সামনে একটা পুলিশের গাড়ি এসে থামল। রণিতার খুব ইচ্ছে ছিল বেরিয়ে দেখার। দেবরাজ মানা করল। নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে যাবার দরকার নেই। পুলিশের গাড়ি সোহমকে নিয়ে রওনা হল। রণিতা দোতলার জানলা দিয়ে দেখতে পেল। এবার থানায় জিজ্ঞাসাবাদ চলবে। তারপর পুলিশ আসবে ওদের কাছে। ওদের সাক্ষ্য নিতে। ডিটেকটিভ বই পড়ে আর টিভি-তে ক্রাইম পেট্রল দেখে রণিতা এই সব কিছু জানে। সন্ধে সাতটা নাগাদ গাড়ির আওয়াজ পেয়েই জানলা দিয়ে উঁকি দিল রণিতা। পুলিশের গাড়িটা ফিরে এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে দেবরাজকে খবর দিল সে। “পুলিশ আবার এসেছে। আমাদের সাক্ষ্য নেবে। রেডি হও।” কয়েক সেকেন্ড বুক ঢিপ ঢিপ। তারপর তীব্রস্বরে বেজে উঠল ডোরবেল।

    প্রায় ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিল রণিতা।

    খুলেই দেখল স্নিগ্ধা দাঁড়িয়ে। জীবিত এবং হাস্যময়।

    ৩

    খানিকক্ষণ রণিতা কথা বলতে পারেনি। মনে মনে সে স্নিগ্ধাকে এতটাই মেরে ফেলেছিল যে, সেখান থেকে ফিরে আসা অসম্ভব। প্রায় ভূত দেখার মতো ফ্যাকাশে হয়ে গেল রণিতার মুখ। পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা দেবরাজেরও একই অবস্থা। প্রথম কথা বলল স্নিগ্ধাই, “দ্যাখো তো বউদি, আমাদের ঝগড়াঝাঁটির জন্য সবাইকে কেমন হ্যারাস হতে হল।”

    মুখে কথা জোগাচ্ছিল না রণিতার। তবু কোনওক্রমে বলল, “আরে আগে ভিতরে এসো…”

    ভিতরে এসে বসল স্নিগ্ধা। দেবরাজ পাশের ঘরে একটা বই নিয়ে বসল। কান রইল ওই ঘরেই। স্নিগ্ধা বলছিল, “তুমি তো জানোই বউদি, বিয়ের পর থেকে আমাদের অশান্তি। কারণটা এতদিন বলিনি। আজ বলছি। ওর অফিসের এক কলিগ। অবাঙালি মেয়ে। নাম জানি না। বলে না। রাতবিরেতে ফোন আসত, ও ফিসফিস করে হিন্দিতে কথা বলত। ফোনে লেখা শুধু “অফিস”। সেদিন হোয়াটসঅ্যাপে ওদের চ্যাট দেখে ফেলেছিলাম বউদি। কী নোংরা, কী নোংরা… তোমায় কী বলব। আমার বরটিও তেমনি। লিখেছে, “আর বেশিদিন নেই, তোমার পথের কাঁটা দূর হবে।” মানে কী? আমায় ছেড়ে দেবে, তাই তো? পরশু দিন এই নিয়েই ঝগড়া চরমে ওঠে। আমি রাগ করে ওর মোবাইল আছড়ে ভেঙে ফেলে রাত একটা নাগাদ এক পোশাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছি। সারারাত হাওড়া স্টেশনে কাটিয়ে পরদিন চুঁচুড়ায় মামাবাড়ি চলে গেছিলাম। ঠিকই করেছিলাম আর ফিরব না। মোবাইলও নিইনি। ও এখন সেটা ইউজ করছে…”

    “তারপর?” রণিতার বিস্ময় তখনও কাটেনি।

    “তারপরই তো অদ্ভুত ব্যাপার। গত তিনদিন রোজ সোহম অফিস ফেলে আমার মামাবাড়িতে গিয়ে পড়ে থাকত। কতবার যে ক্ষমা চেয়েছে, ঠিক নেই। এমনকি কেঁদেছে অবধি। আমি তাও ঠিক করেছিলাম কিছুতেই ফিরব না। আজ শুনলাম সব জিনিসপত্র বেচে দিয়ে বিবাগি হবার শখ চেপেছিল বাবুর। আর তা দেখে কারা যেন পুলিশে ফোন করে বলেছে ও নাকি আমায় খুন করে পালাচ্ছে। বোঝো কাণ্ড। এর পর আর রাগ করে থাকা যায়, তুমিই বলো। ওকে তো থানাতেও নিয়ে গেছিল। ওখান থেকেই মামার বাড়ি ফোন করে। আমি এসে ওকে ছাড়াই।”

    এতক্ষণে রণিতার মুখে হাসি ফোটে। “যাক বাবা! যা হয়েছে, ভালোই হয়েছে। বর বউয়ের এমন কত ঝগড়া হয়! এসবে পাত্তা দিলে চলে? যাক গে। আবার মালপত্র গুছিয়ে নাও, আর আজ রাতে তোমাদের দুজনের আমার বাড়িতে নেমন্তন্ন রইল, কেমন?”

    ৪

    সেদিন রাতে ওরা খেয়েদেয়ে যেতে যেতে প্রায় এগারোটা হল। রণিতা একটু বেশিই উচ্ছলতা দেখাচ্ছিল। একটু বুদ্ধিমান মানুষই বুঝতে পারবে এই অতিঅভিনয়টা। সোহম নিজে চুপচাপ খাচ্ছিল, আর মাঝে মাঝে রণিতার দিকে স্থির চোখে তাকিয়েছিল। দেবরাজের চোখ এড়ায়নি। খেতে খেতে দুবার উঠেছিল সোহম। একবার ওর অফিসের বসের ফোন এসেছিল, আর একবার টয়লেটে। দ্বিতীয়বার দেবরাজকেও উঠতে হয়েছিল স্টোর রুম থেকে সসের বোতলটা আনতে… টয়লেটে আধভেজানো দরজার ফাঁক দিয়ে সোহমের গলার আওয়াজ পেয়েছিল দেবরাজ। চাপা গলায় হিন্দিতে কারও সঙ্গে কথা বলছে সে… “অউর কভি ভি কোই লাফড়া নেহি হোগা। সব সেটিং কর দিয়া ম্যায়নে…” কার সঙ্গে কথা বলছিল সোহম? কী সেটিং করেছে? জিগস পাজলের একটা হিসেব কোথাও যেন মিলছে না… সেটা কী বুঝতেও পারছে না ছাই…

    রাত্রে ঘরে ঢুকে বিছানায় ধপাস করে বসল রণিতা। “বাস রে! আর কোনও দিন যদি কারও পার্সোনাল ব্যাপারে নাক গলাই! কী ভাবলাম, আর কী দাঁড়াল। ছি ছি। এরপর যাই হোক, মাল নিয়েই চলে যাক, আর বাড়ি বেচেই চলে যাক, আমি আর ওর মধ্যে নেই। সবাই যেমন চোখ বন্ধ করে থাকে, আমিও থাকব।”

    রণিতার কথায় সব কিছু পরিষ্কার হয়ে গেল দেবরাজের কাছে । জিগস পাজলের শেষ টুকরোটা… এবার সব মিলে যাচ্ছে খাপে খাপে। একটা অসামান্য ধূর্ত আর শয়তানি প্ল্যান তার চোখের সামনে ফুটে উঠছে, কিন্তু আর কিচ্ছু করার নেই। সোহম সব সেটিং করে দিয়েছে…

    তাদের নিজের ঘরে দেখে প্রথমেই সোহম বলেছিল, “আরে বউদি! আপনারই অপেক্ষায় ছিলাম।” সোহম রণিতার জন্য অপেক্ষা করছিল? কেন? কেন অকারণে কালিম্পং-এর মিথ্যে কথা বলল কিংবা ইঁদুরের মরার গন্ধ ঢাকতে সাততাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দিল। গোটাটাই যেন সাজানো এক প্লট, যাতে সবাই সোহমের ইচ্ছেমতো অভিনয় করে গেছে। এ হিসেব অন্য কিছুতেই মেলে না। মেলে শুধু একভাবে।

    সোহম চাইছিল রণিতারা তাকে সন্দেহ করুক। ওরা পুলিশে জানাক। ও খুব ভালো জানত পুলিশ কিস্যু করতে পারবে না। এটা কোনও কেসই না। আর এটাও জানত, এই ঘটনা এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার একইভাবে ঘটলে রণিতা হোক বা পুলিশ, কেউ ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নেবে না। সেই রাখাল ছেলের গল্পের মতো। রণিতা তো এইমাত্র বলে গেল, “আমি আর ওর মধ্যে নেই।” আর সেবার সোহম নিশ্চিন্তে সেটাই করবে যার রিহার্সাল ও এবার করল…

    সোহম জানে এই গোটা হাউজিং-এ কেউ কারও ব্যাপারে মাথা গলায় না। ফলে সোহমের ঘৃণ্য প্ল্যান কার্যকরী করার পিছনে একটাই বাধা ছিল। রণিতা।

    আজ দারুণ কৌশলে সোহম সেই পথের কাঁটাটাও দূর করল।

    লেখকের জবানি: নন-ক্রাইম ক্রাইম স্টোরি হল সেরকম গল্প, যাতে আদতে কোনও অপরাধ হয় না, কিন্তু অপরাধের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। শেষে গোটাটাই পাঠকের কল্পনার ওপরে ছেড়ে দেওয়া হয়। স্প্যানিশ ভাষায় এমন কয়েকটা গল্প থাকলেও বাংলায় (এমনকি ইংরাজিতেও) প্রায় নেই বললেই চলে। একেবারেই পরীক্ষামূলকভাবে তাই এই গল্পটা লেখা।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার
    Next Article সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার

    Related Articles

    কৌশিক মজুমদার

    নোলা : খাবারের সরস গপ্পো – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    নীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    অগ্নিনিরয় – কৌশিক মজুমদার

    August 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.