Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আঁধার আখ্যান – কৌশিক মজুমদার

    কৌশিক মজুমদার এক পাতা গল্প186 Mins Read0

    পোস্টকার্ড

    ১

    ঝাঁ চকচকে হাউজিং-এর এই ফ্ল্যাটে ভাড়া আসার এক সপ্তাহের মধ্যে ধৃতি বুঝল এখানে না এলেই হত। একে তো ভাড়া বেজায় বেশি, কতদিন দিতে পারবে জানে না, আর তার চেয়েও বেশি মুশকিল হাউজিং-এ সে ছাড়া সবাই বেশ হোমরাচোমরা লোক। কেউ কাউকে পাত্তা দেয় না। কথা বলা, আলাপ করা দূরে থাক। টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ার একেবারে কাছে এত সুন্দর ফ্ল্যাট ভাড়া পেয়ে সহজে ছাড়তে চায়নি। এমনিতেই এই তার প্রথম কলকাতায় থাকা, তাও একা। মা কিছুদিন এসে ছিলেন, কিন্তু তিনিও আর কতদিন থাকবেন। মূলত দুটো কারণে এই ফ্ল্যাট পছন্দ হয়ে গেছিল ধৃতির। তার ব্যালকনি থেকে কলকাতার স্কাইলাইনের অনেকটা দেখা যায়। এই নিঃসঙ্গ জীবনে ওটুকুই তার অক্সিজেন। দ্বিতীয়, ফ্ল্যাটের একটা ঘরে ঠাসা মেঝে থেকে দেওয়াল অবধি নানা দেশি বিদেশি বই। এ জিনিস সবার ভাগ্যে জোটে না।

    ধৃতির আগে এখানে থাকতেন বিখ্যাত চিত্রনাট্যকার সুপ্রিয় বসু। অকৃতদার। কোনও ওয়ারিশ নেই। তিনি মারা যাবার পর এই ফ্ল্যাট তালাবন্ধ ছিল। দালাল প্রথমে আমতা আমতা করছিল বটে, ‘আসলে একটা ঘর কিন্তু পুরো বইতে ভরা, ওটা ইউজ করতে পারবেন না’, আর সেটা শুনেই ধৃতি লাফিয়ে উঠে এই ফ্ল্যাটটাই নিল।

    ধৃতি সবে জার্নালিজম পাশ করে বীরভূম থেকে পাকাপাকি কলকাতায় এসে আছে। এখন একটা সংবাদ চ্যানেলে ফ্রিলান্সে কাজ করে। বড়োলোকের মেয়ে। নিজের পায়ে দাঁড়াবে বলে চাকরিটা নিয়েছে। দুপুর নাগাদ অফিসে যায়, গভীর রাতে অফিসের গাড়ি এসে ফ্ল্যাটের সামনে ছেড়ে দিয়ে যায়। এখন বাজারে একটাই খবর। সুপ্রিয় বসুর লেখা শেষ স্ক্রিপ্ট ‘বিষণ্ণ সকাল’ থেকে তৈরি সিনেমা দুই সপ্তাহ আগে রিলিজ করেছে। আর রিলিজ হতেই সুপারহিট। এত বড়ো ওপেনিং সুপ্রিয় বসুর আগের কোনও ছবি পায়নি। কারণটাও ধৃতি আন্দাজ করতে পারে। সুপ্রিয় বসুর মৃত্যু। সুপ্রিয় বসুর মৃত্যুকে ঠিক স্বাভাবিক মৃত্যু বলা যায় না।

    ২

    এক মাস আগে যখন সুপ্রিয় বসুর মৃত্যু হল, তখন কাগজে কাগজে হেডলাইন হয়েছিল এই নিয়ে। সুপ্রিয় বসুর বয়স হয়েছিল, খিটখিটে হয়ে পড়ছিলেন। শেষের দিকে বর্তমান সরকারের একেবারে পিছনে পড়ে গেছিলেন। পত্রিকা হোক বা টিভি সাক্ষাৎকার, সুযোগ পেলেই সরকারকে তুলোধোনা করতে ছাড়তেন না। তাই তাঁর মৃত্যুর তেমন কোনও তদন্তও হয়নি। এমনিতে দেখতে গেলে মৃত্যুতে রহস্যের কিছু নেই। ছয়মাসে একদিন লাইব্রেরি গোছাতেন সুপ্রিয়। সেদিনও তেমনই একদিন ছিল। সকাল থেকে ঘরাঞ্চির মাথায় উঠে তাকের বই সাজাচ্ছিলেন। বাড়ির কাজের মহিলা দেখেছে। এমনকি দারোয়ান একবার কী কাজে এসেছিল, সেও তাঁকে ঘরাঞ্চির মাথায় দেখেছিল। সে নাকি সুপ্রিয়বাবুকে সাহায্যের অফারও করে। সুপ্রিয় রাজি হননি। শুধু বলেন বেরিয়ে যাবার সময় দরজাটা টেনে দিয়ে যেতে। দারোয়ান সেটাই করেছিল। ইয়েল লক। ভিতর থেকে না খুলে দিলে কারও ঢোকা সম্ভব না। পরদিন কাজের মহিলা এসে দ্যাখে দরজা বন্ধ। কলিং বেল বাজিয়েও কোনও কাজ হয়নি। সে দারোয়ানকে জানায়। দারোয়ান পুলিশকে। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ঢুকে দ্যাখে ঘরাঞ্চি একদিকে কাত হয়ে পড়ে আছে আর পাশেই ঘাড় মটকে মরে পড়ে আছেন চিত্রনাট্যকার সুপ্রিয় বসু। তাঁর জীবনের চিত্রনাট্য যে এত করুণ ভাবে শেষ হবে তা কেউ বোঝেনি। প্রাথমিক তদন্তের পর গোটা ঘটনাকে অ্যাক্সিডেন্ট তকমা দিয়ে কেস ক্লোজ করে দেওয়া হয়। ধৃতির জার্নালিজমের কোর্স সবে শেষ হয়েছে তখন। নিয়মিত খবর রাখত সে, কোনও অন্যরকম ক্লু বেরোয় কি না। কিন্তু সে গুড়ে বালি। প্লেন অ্যান্ড সিম্পল দুর্ঘটনা। পুলিশ বারবার সিসি টিভি ফুটেজ দেখেছে। কাউকে ঢুকতে বা বেরোতে দেখা যায়নি। ঘরের জানলা, ব্যালকনির দিকে দরজা, সব ভিতর থেকে বন্ধ। ফাউল প্লে-র কোনও অবকাশই নেই।

    সেদিন শুক্রবার। ধৃতির ছুটি ছিল। একটু দেরি করেই দশটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠেছে। ব্রেকফাস্ট বানিয়ে ল্যাপটপে নেটফ্লিক্স ওয়েব সিরিজ ছেড়ে বসল ধৃতি। কাউকে না বললেও ওর মনে মনে একটা গোপন ইচ্ছে আছে। স্ক্রিপ্ট রাইটার হবার। কিন্তু সেই সুযোগ দেবে কে? কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে একটু আনমনা হয়েই সিনেমা দেখছিল ধৃতি। এমন সময় কলিং বেলটা বেজে উঠল। ধৃতি এই ফ্ল্যাটে আসার পর প্রথমবার তার কলিং বেল বাজল। ধৃতি উঠে দরজা খুলে দিতেই দ্যাখে ওয়াচম্যান হাসিমুখে দাঁড়িয়ে। হাতে একটা পোস্টকার্ড।

    — ম্যাডাম, আপনার একটা চিঠি আছে।

    — চিঠি? আমার নামে?

    — না, আসলে সুপ্রিয় স্যারের নামে চিঠি। কিন্তু আমাদের তো সব চিঠি পিওনবুকে রিসিভ করে নিতে হয়, তাই যে ঠিকানার চিঠি, সেখানেই পৌঁছে দিই। সুপ্রিয় স্যার মারা যাবার পর আপনিই তো এসেছেন, তাই হিসেবমতো এ চিঠি আপনাকে দেবার কথা। আপনি না নিলে নাও নিতে পারেন। শুধু এই খাতায় একটা সই করে দিন। আমার চাকরি বাঁচাই…

    — না, না, এনেছ যখন দাও। কিন্তু উনি মারা গেছেন মাসখানেক হল। সবাই জানে। এখন কে আবার ওঁকে চিঠি লিখছে?

    খাতায় সই করে চিঠিটা নিয়ে নিল ধৃতি। চিঠিটা লেখা হয়েছে দিন তিনেক আগে। গোটা গোটা হরফে লেখা—

    বন্ধু সুপ্রিয়,

    তোমার চিঠি যথারীতি পেয়েছি। এই নিঃসঙ্গ জীবনে তোমার চিঠিগুলোই আমায় বাঁচিয়ে রেখেছে। তুমি লিখেছ ‘বিষণ্ণ সকাল’ নাকি দারুণ হিট হয়েছে। এ যে কত বড়ো আনন্দের সংবাদ, তা আমি তোমায় বলতে পারি না। তোমার কথামতো আমি এই চিঠিতে নতুন গল্পটার শেষাংশ পাঠাচ্ছি। তুমি সত্যজিৎ বাবুর সঙ্গে কথা বলে দেখো।

    এর পরে সাত-আট লাইনে একটা প্লটের শেষ অংশের খসড়া। যদিও মূল কাহিনির শুরুটা ধৃতি জানে না, তবে শেষটা যে জব্বর সেটা বুঝতে পারল।

    চিঠির শেষে সই, তোমার বন্ধু অরবিন্দ।

    ধৃতি চিঠিটা বার তিনেক পড়ল। পোস্টমার্ক ভিজে গেছে, তাই কোথা থেকে এসেছে বলা মুশকিল। তবে মাত্র তিন দিনে ডেলিভারি হয়েছে যখন, কাছাকাছিই হবে। কে এই অরবিন্দ? ভাবতে গিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল ধৃতির শিরদাঁড়া বেয়ে। সুপ্রিয় বসু মারা গেছেন এক মাস আগে। আর ‘বিষণ্ণ সকাল’ রিলিজ করেছে মাত্র দুই সপ্তাহ হল। তাহলে মৃত ব্যক্তি চিঠিতে ছবির সাফল্যের কথা জানালেন কীভাবে?

    ৩

    জার্নালিজম ক্লাসের সময় সন্দীপ স্যার একটা কথা খুব বলতেন। প্রতিটা ভালো জার্নালিস্ট আসলে একজন ভালো গোয়েন্দা। এই চিঠি পড়ে ধৃতির মধ্যে ব্যাপারটা তলিয়ে দেখার ইচ্ছে উসকে উঠল। কিন্তু শুরু কোথা থেকে করা যায়? হাউজিং-এর এই ফ্লোরে আর দুটোই ফ্ল্যাট। একটাতে থাকেন এককালের ডাকসাইটে অভিনেত্রী রোশনি মিত্র আর অন্যটায় ওয়েব সিরিজের উঠতি পরিচালক সাগ্নিক চ্যাটার্জি। দুজনেই একা থাকেন। রোশনির সঙ্গী অবশ্য বিরাট দুটো ল্যাব্রাডর কুকুর। ধৃতি দেখেছে প্রায়ই রোশনি এঁদের নিয়ে নিচে হাওয়া খাওয়াতে বেরোন। সুপ্রিয় বসুকে নিয়ে কিছু বলতে পারলে এই দুইজনই পারবেন। কিন্তু ধৃতি সবে তেইশ বছরের ইন্টার্ন। ওঁরা ধৃতিকে খুব একটা আমল দেবেন বলে মনে হয় না। আর গায়ে পড়ে প্রশ্ন করাটাও ধৃতির কেমন কেমন লাগছিল।

    সুযোগ এসে গেল ভাগ্যক্রমে। পরের দিনই রোশনি তাঁর একটা কুকুর নিয়ে সবে বেরোচ্ছেন, ধৃতিও ঘর থেকে বেরিয়েছে নিচে নেমে কিছু কেনাকাটা করবে বলে। আচমকা কুকুরটা রোশনির হাত ছেড়ে সোজা ধৃতির গায়ে লাফ দিল। এমনিতেই কুকুরে ধৃতির বেজায় ভয়। গায়ে লাফিয়ে উঠতেই “মা গো” বলে একেবারে অজ্ঞান। জ্ঞান হারাবার আগে সে রোশনির গলায় ‘কোকো, কোকো’ শুনতে পেয়েছিল কয়েকবার।

    জ্ঞান যখন ফিরল, ধৃতি দেখল সে অন্য একটা ফ্ল্যাটে শুয়ে আছে। ফ্ল্যাটে প্রচুর জিনিসপত্র, কিন্তু অগোছালো। পাশের একটা ঘর থেকে দুটো কুকুরের চিৎকার শোনা যাচ্ছে। সে সোফায় শুয়ে। পাশেই চেয়ারে উদবিগ্ন মুখে বসে আছেন অভিনেত্রী রোশনি মিত্র। তাঁর হাতে একটা কাচের গোল গ্লাস, তাঁর সেই গ্লাসের ভিতরের তরলটা যে কোকাকোলা নয় সেটা এই অবস্থাতেও বুঝতে পারল ধৃতি। সে চোখ মেলে তাকাতেই রোশনি হাতের গেলাস রেখে তার পাশে এসে বসলেন।

    — কী ব্যাপার? এখন ঠিক আছ?

    মাথা নেড়ে কোনওক্রমে হ্যাঁ বলল ধৃতি।

    — আসলে আমারই ভুল। কোকোটা খুব দুরন্ত। ওর চেনটা আরও শক্ত করে ধরে রাখা উচিত ছিল। আয়াম স্যরি। আমি বুঝিনি তুমি এত ভয় পেয়ে যাবে।

    ধৃতি ততক্ষণে সামলে নিয়েছে। মাথাটা একটু টলমল করছে। সে উঠে বসার চেষ্টা করল।

    — আরে উঠতে হবে না। একটু রেস্ট নাও। শুয়ে শুয়েই কথা বলো। আমি ডাক্তার ডেকেছিলাম। তিনি দেখে বলেছেন ভয়ের কিছু নেই। একটা প্রাইমারি শক। তোমার নাম কী? কী করো? বাড়ি কোথায়?

    — আমি ধৃতি রায়চৌধুরী। বাড়ি বোলপুর। এখানে নিউজ ২০-তে ইন্টার্নের কাজ করছি।

    — ও, জার্নালিস্ট? তোমাদের বস অর্জুন তো আমার বেশ পরিচিত। ভালো ছেলে। এককালে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আমার সিনেমাগুলোর রিভিউ ও-ই করত। এখন অনেকদিন কথা হয় না। তুমি ১৯ বি-তে এসেছ, তাই না?

    — হ্যাঁ, সুপ্রিয় বসুর ফ্ল্যাট। আপনি নিশ্চয়ই চিনতেন ওঁকে?

    মুখে অদ্ভুত একটা হাসি খেলে গেল রোশনির। এ হাসি আনন্দের না। দুঃখের।

    — যে আমার জীবন শেষ করে দিল, তাকে চিনব না?

    — মানে? কীভাবে?

    ‘তুমি বাচ্চা মেয়ে। কলকাতায় থাকো না, তাই জানো না। নইলে সবাই জানে’, হাতের গেলাসে এক সিপ দিয়ে বললেন রোশনি। ‘বছর দু-এক আগেকার কথা। আমার স্বামী, মেয়ে তখন আমার সঙ্গেই থাকত। এই ফ্ল্যাটেই। আমার স্বামী কর্পোরেট সার্ক। প্রায়ই দেশবিদেশ ঘুরে বেড়াতেন। মেয়ে হোস্টেলে। সেই সময় আমার প্রযোজক রাজীব আগরওয়ালের সঙ্গে আমার একটা রিলেশান হয়। গোপনে। যাতে কেউ না বুঝতে পারে, তাই গভীর রাতে ও আমার ফ্ল্যাটে যাতায়াত করত। বুড়ো সুপ্রিয়র রাতে ঘুম আসত না। দরজায় কাচে চোখ লাগিয়ে বসে থাকত কে কী করছে। গোপনে ক্যামেরায় আমার ঘরে রাজীবের ঢোকার আর বেরোনোর ছবি তুলেছিল। টাইম সমেত। তারপর মোটা টাকায় বেচেছিল মিডিয়াকে। স্ক্যান্ডাল তো একটা হলই। বর ডিভোর্স দিল। মেয়ে আজকাল আর আমার কাছে আসে না।’

    ধৃতি দেখল রোশনির দুই গাল বেয়ে জলের ধারা নামছে। ‘কতক্ষণ আর এই কুকুরদের নিয়ে থাকতে ভালো লাগে বলো তো? রাজীব নিজেও স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়ে। ওরও বউ বাচ্চা আছে। ওকে কেউ বোঝায় আমিই নাকি পাবলিসিটির জন্য এটা করেছি। সেই থেকে হাতে কাজও নেই।’ এবার কান্নায় ভেঙে পড়লেন রোশনি। ধৃতি একটু ইতস্তত করে তাঁর হাতে হাত রাখল।

    — শুধু কি আমার সর্বনাশ করেছে শয়তানটা? সাগ্নিকের যা ক্ষতি করেছে কী বলব। ওর ক্যারিয়ারও তো দায়িত্ব নিয়ে শেষ করেছিল ওই কুচুটে বুড়ো।

    — কীভাবে?

    — সেটা সাগ্নিক ভালো বলতে পারবে। আমি তোমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেব। তোমার সঙ্গে কথা বলে অনেকদিন পর একটু হালকা লাগছে। মাঝে মাঝে এসো, কেমন? মিষ্টি মেয়ে তুমি… নাম যেন কী বললে? কৃতি?

    — না না, ধৃতি… আচ্ছা, সুপ্রিয়বাবু মারা গেলেন কীভাবে?

    — শুনেছি তো ঘরে মই থেকে পিছলে পড়ে। এক হিসেবে ভালোই হয়েছে। পাপের শাস্তি পেয়েছে। না হলে কোনদিন আমিই শয়তানটাকে খুন করতাম। আমায় দেখলেই গা জ্বালানো একটা হাসি দিত। মনে হত দৌড়ে গিয়ে গলাটা টিপে ধরি…

    ৪

    — তুমিই ধৃতি? রোশনি তোমার কথা বলেছিল… বসো। চা খাবে? না অন্য কিছু?

    — না, না, কিচ্ছু খাব না। জাস্ট কয়েকটা প্রশ্ন ছিল।

    — বলো, কী প্রশ্ন?

    — রোশনিদির ঘরে সেদিন কথা হচ্ছিল। শুনলাম সুপ্রিয়বাবু ওঁর কী সর্বনাশ করেছেন। দিদি বললেন আপনারও নাকি ক্ষতি করেছেন উনি? কী ক্ষতি সেটাই…

    — জেনে কী লাভ বলো তো? সে তো প্রায় বছর দেড়েক হয়ে গেল। তুমি কি আবার এই নিয়ে স্টোরি করবে? শুনলাম তুমি নাকি জার্নালিস্ট?

    — আরে না, না। জাস্ট কৌতূহল। যার ফ্ল্যাটে আছি, সে লোকটা কেমন ছিল জানতে ইচ্ছে করল, তাই…

    — শুয়োরের বাচ… পার্ডন মাই ল্যাংগুয়েজ। কিন্তু অত বড়ো অসভ্য লোক আমি লাইফে দেখিনি। মরাল ভ্যালুজ বলে কিস্যু ছিল না। বাচ্চা বাচ্চা মেয়েদের সিনেমায় চান্স দেবে বলে ফ্ল্যাটে নিয়ে আসত। তারপর… বুঝতেই তো পারছ। তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু অন্যের পিছনে কাঠি করাটা ওর একটা স্বভাবে দাঁড়িয়ে গেছিল। রোশনির ব্যাপারটা তো জানোই। আমার সঙ্গে যা করেছিল সেটাও খুব নোংরামি। আমি প্রথম যখন এই কমপ্লেক্সে আসি, খুব ভালো ব্যবহার করত আমার সঙ্গে। মাঝে মাঝেই রাতে পার্টি হত। ওই দারুর পার্টি আর কি… একদিন নেশার ঘোরে একটা দারুণ প্লট ওকে বলে দিলাম। শুনে বলল কাউকে না বলতে। ও নাকি এই থেকে স্ক্রিপ্ট করবে। আমরা দুজন মিলে প্রোডিউসারকে ধরে ছবি বানাব। ও-ই সব ব্যবস্থা করে দেবে। কিছুদিন পরে দেখি সেই প্লটে সিনেমা রিলিজ করে গেল। প্রোডিউসার ঠিক আছে, স্ক্রিপ্ট রাইটার ঠিক আছে। শুধু আমি বাদ। সিনেমা ব্লকবাস্টার হিট। ‘চব্বিশে আষাঢ়” দেখেছ নিশ্চয়ই। ভেবে দ্যাখো। ওটা আমি করলে আমার লাইফ পুরো চেঞ্জ হয়ে যেত। শুনেছি এটা পাওয়ানোর জন্য সেই পরিচালক ওকে লাখ পাঁচেক টাকা উপরিও দিয়েছিল।

    — কিন্তু এত টাকা দিয়ে করতেন কী?

    — সে আমি কী করে বলব? খরচা ছিল নিশ্চয়ই কিছু…

    — সুপ্রিয়বাবু মারা যাওয়াতে তাহলে…

    — সত্যি বলব? হেবি খুশি হয়েছি। হাতে কাজ নেই। এই ফ্ল্যাটের ভাড়া কতদিন দিতে পারব জানি না। তবু এই একটাই খুশির খবর। বুড়োটা মরেছে। মাঝে মাঝেই দেখতাম সিঁড়ি বেয়ে নামছে। মনে হত দিই একটা ঠেলা…

    ৫

    ধৃতি ঘরে এসে বড়ো এক কাপ কফি বানায়। ভাবতে বসে। সুপ্রিয় বসু বেঁচে থাকতেই প্রচুর শত্রু বানিয়েছিলেন। এঁদের যে কেউ তাঁকে খুন করতেই পারত। কিন্তু তা হল না। সুপ্রিয় মারা গেলেন বন্ধ ঘরে। ঘরাঞ্চি থেকে উলটে পড়ে। ‘পিওর অ্যান্ড সিম্পল অ্যাক্সিডেন্ট’। পোস্টমর্টেমে খুনের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তাঁকে শেষ জীবিত দেখেছিল ওয়াচম্যান সুদীপ। এই সুদীপই কিছুদিন আগে তাকে সেই পোস্টকার্ড এনে দিয়েছিল।

    কফির কাপ সাইড টেবিলে রেখে ধৃতি দরজা বন্ধ করে, পায়ে স্লিপার গলিয়ে নিচে নামল। মূল দরজার পাশেই একটা চেয়ারে সুদীপ বসে আছে। হাতে একটা বই। দেখে বেশ অবাক হল ধৃতি। ওয়াচম্যান যে পড়ুয়াও হয় তা তার আগে ধারণা ছিল না। ধৃতিকে আসতে দেখতে পায়নি সুদীপ। যখন দেখল, তখন চমকে উঠে দাঁড়াল। আঙুল বইয়ের পাতায় গোঁজা।

    — কী বই পড়ছ সুদীপ?

    — দূরবীন। শীর্ষেন্দুর।

    — তুমি বই পড়তে ভালোবাস?

    — ওই একটাই তো নেশা ম্যাডাম। ফেসবুক করি না, পাবজি খেলি না। বই পড়ি।

    — তা বেশ। তোমার সঙ্গে কিছু কথা ছিল। ফাঁকা আছ?

    — হ্যাঁ ম্যাডাম, বলুন।

    — তুমি বসো। বসেই কথা বলো। দাঁড়াতে হবে না।

    সুদীপ একটু ইতস্তত করে চেয়ারে বসল।

    — তুমি সুপ্রিয় বসুকে চিনতে?

    — আজ্ঞে আমি ওয়াচম্যান। হাউজিং-এর সবাইকেই চিনতে হয়।

    — উনি যেদিন মারা যান, সেদিন তুমি আর কাজের মহিলা তাঁকে শেষ দেখেছিলে?

    — কাজের মহিলা না। আমি দেখেছিলাম। সেদিনও ওঁর নামে একটা পোস্টকার্ড এসেছিল। দিতে গিয়ে দেখি কাজের মেয়ে কানন বেরিয়ে আসছে। আমায় বলল বাবু লাইব্রেরি রুমে বই গোছাচ্ছেন। আমি ঢুকলাম। দেখি সত্যিই তাই। আমি বললাম, এত উপরে উঠে বই সাজাচ্ছেন, মাথা ঘুরে গেলে তো মুশকিল। উনি বললেন কিচ্ছু হবে না। তারপর খানিক এদিক ওদিক কথা হল। আমি ওঁর টেবিলে পোস্টকার্ড রেখে দরজা টেনে চলে এলাম।

    — দরজা বাইরে থেকে টানলে লক হয়ে যেত?

    — হ্যাঁ, ইয়েল লক। পরদিন কানন এসে অনেক দরজা ধাক্কায়। দরজা খোলেনি। কানন আমাকে জানায়। আমি সোজা পুলিশে ফোন করি। তারপর তো আপনি জানেনই।

    — তুমি বললে ওঁর সঙ্গে তোমার এদিক ওদিক কথা হত। কী কথা?

    — আমি গ্র্যাজুয়েট। চাকরি পাইনি। তাই এই কাজ করছি। কিন্তু বই পড়তে ভালোবাসি। উনি আমাকে নানারকম বই দিতেন পড়তে। পড়া হলে অনেক সময় জানতে চাইতেন বই কেমন লাগল। এইরকম কথা আর কি…

    — সেদিন কী নিয়ে কথা হচ্ছিল?

    — সেদিন আমি বললাম, আমি আপনাকে হেল্প করব? উনি বললেন, তাহলে তোমার গেট দেখবে কে? বললাম, গোপাল আছে। আমরা তো দুজন থাকি। উনি বললেন, দরকার নেই। চলে আসছিলাম, এমন সময় বললেন, ঠিক আছে, নিচের বইয়ের ডাঁইটা একটু তুলে দাও। দিলাম। তারপর উনি বললেন, তুমি যাও। দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমিও চলে এলাম।

    — আচ্ছা এই পোস্টকার্ডের কেসটা কী বলো তো? আজকের দিনে কেউ পোস্টকার্ড লেখে?

    — তা জানি না ম্যাডাম। মাসে চার-পাঁচবার এই চিঠি আসত। আমিও একবার স্যারকে বলেছি। উনি হেসে বলেছেন, লেখে লেখে। পুরোনো বন্ধুরা লেখে। আর কিছু বলেননি।

    ৬

    ঘরে এসে ধৃতি দেখল কফি ঠান্ডা জল হয়ে গেছে। সেটাকে মাইক্রোওভেনে রেখে তিরিশ সেকেন্ড টাইম দিয়ে চালিয়ে দিল। এই পোস্টকার্ড তাহলে এই প্রথম না। আরও আছে। কোথায়? পুলিশ যদি না নিয়ে থাকে (সেটার সম্ভাবনাই বেশি, কারণ তদন্ত হয়নি বললেই চলে) তাহলে সেগুলো এখনও লাইব্রেরিতেই আছে। লাইব্রেরি রুমের দরজা খুলল ধৃতি। বইয়ের একটা সোঁদা গন্ধ ভেসে এল নাকে। রুমের সিলিং অবধি ঠাসা বই। মাটিতেও কিছু বই স্তূপ করে রাখা। ধৃতি এই ঘরে আগেও এসেছে। পছন্দমতো দু-একটা বই নিয়ে পড়তে। এক কোণে সেই কাঠের ঘরাঞ্চি। এটা থেকে পড়েই মারা গেছিলেন সুপ্রিয়। ধৃতির শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল। কিন্তু বই না, তাকে খুঁজতে হবে সেই চিঠিগুলো, যেগুলো নিয়মিত পেতেন তিনি, আর উত্তরও দিতেন— এমনকি মারা যাবার পরও।

    খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই বাদামি চামড়ায় মোড়া একটা অ্যালবাম পেল ধৃতি। কালো মোটা কাগজে আঠা দিয়ে লাগানো সেপিয়া টোনের ছবি। উপরে পাতলা সেলোফেন পেপার। বেশিরভাগই পুরোনো দিনের নায়ক নায়িকা বা পরিচালকের সঙ্গে ছবি। সত্যজিৎ রায়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছবিটা দেখে অবাক হল ধৃতি। এ ছবি আগে দেখেনি। প্রতি ছবির নিচে কুশীলবদের নাম কাগজে লিখে আঠা দিয়ে সেঁটে দেওয়া। একটা ছবি দেখে দাঁড়িয়ে গেল ধৃতি। ধুতি পরা গোবেচারা মতো এক ভদ্রলোকের কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বেলবটম প্যান্ট আর বুক খোলা জামা পরা যুবক সুপ্রিয়। পিছনে একটা সিনেমার সেট। নিচে লেখা, ‘আমি আর অরবিন্দ— দূরের বলাকা ছবির সেটে’।

    ধৃতির এক বন্ধু আছে স্যমন্তক। পুরোনো বাংলা ছবির এনসাইক্লোপিডিয়া। তাকেই ফোন লাগাল ধৃতি।

    — হ্যালো স্যমন্তক, শোন না, একটা দরকারে ফোন করলাম।

    — বুঝেছি। কারণ দরকার ছাড়া তুই কখনও ফোন করিস না। বল…

    — বাজে কথা বলিস না। শোন না, তুই দূরের বলাকা সিনেমার ব্যাপারে জানিস?

    — হ্যাঁ, সুপারহিট সিনেমা। রঞ্জিত মল্লিক ছিল। কেন?

    — সেই সিনেমায় সুপ্রিয় বসু স্ক্রিপ্ট রাইটার ছিলেন?

    — হ্যাঁ। তবে একা নয়। অরবিন্দ-সুপ্রিয় স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন।

    — এই অরবিন্দ কে?

    — আরে এই তো আসল মানুষ। সুপ্রিয় ড্যাশিপুশি ছিল। প্রোডিউসার ধরত। আর অরবিন্দ গুপ্ত লিখত। মুখচোরা মানুষ। কিন্তু ডায়লগ লিখত যখন তখন বাঘের বাচ্চা। বাংলার সেলিম-জাভেদ বলা হত এদের। আশির দশকের মাঝামাঝি অরবিন্দবাবুর কী একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়ে স্মৃতি চলে যায়। তারপর থেকে কোনও খবর নেই। মরে-টরে গেছে বোধহয়। কেন, তোর কী দরকার?

    — না, আসলে সুপ্রিয়কে নিয়ে একটা স্টোরি ভাবছি। থ্যাঙ্ক ইউ রে…

    অরবিন্দ মারা যায়নি। সে এখনও বহাল তবিয়তে বেঁচে। অন্তত তিনদিন আগেও ছিল। কিন্তু কোথায়? চিঠিগুলো না পেলে এর সমাধান হবে না। ধৃতি এবার পাগলের মতো খুঁজতে থাকল এদিক ওদিক। কোনও লাভ নেই। শেষে চোখ গেল তাকের একেবারে মাথায়। সিলিং-এর কাছে একটা সুটকেস মতো কী দেখা যাচ্ছে!! দুরুদুরু বুকে কাঠের ঘরাঞ্চিটা দাঁড় করিয়ে মাথায় উঠল ধৃতি। ওপর থেকে নিচটা কত দূরে মনে হচ্ছে। এখান থেকে পড়লে সত্যিই আর রক্ষা নেই। হাত বাড়িয়ে পেল বাক্সটা। একটা কাঠের বাক্স। বেশ ভারী। অতিকষ্টে নামিয়ে আনল নিচে। তালা মারা নেই, তাই খোলার ঝামেলা হল না। খুলেই ধৃতি দেখতে পেল সে যা চাইছে, তা সব বান্ডিল বান্ডিল করে রাখা। রাবার ব্যান্ড দিয়ে বাঁধা গোছা গোছা পোস্টকার্ড। সবচেয়ে নতুন যেটা মনে হল সেই বান্ডিলটা খুলে পড়তে শুরু করল ধৃতি। অরবিন্দবাবু কিস্তিতে কিস্তিতে একটা গল্প পাঠিয়েছেন। প্রতিটাটেই এরকম একটা না একটা গল্প লেখা। তবে এটা ধৃতি জানে। কিছুদিন আগে হলে দেখা ‘বিষণ্ণ সকাল’ সিনেমার গল্প। কিন্তু চিত্রনাট্যকার হিসেবে একজনেরই নাম ছিল। সুপ্রিয় বসু।

    গোটা জটটা ধীরে ধীরে খুলে যাচ্ছে ধৃতির সামনে। কুয়াশাটা স্পষ্ট হচ্ছে ক্রমে। সুপ্রিয় বসু আসলে অরবিন্দ গুপ্তের প্লট চুরি করতেন। কিন্তু অরবিন্দ কিছু বলতেন না কেন? বরং শেষ চিঠিতে লিখেছেন উনি আনন্দিত! এরকম তো হবার কথা না। পোস্টকার্ডে ঢাকুরিয়ার ছাপ। ঠিকই ধরেছে। কাছাকাছি থেকেই আসত এই চিঠি। কিন্তু এই যুগে পোস্টকার্ড!! আচমকা একটা ডায়রিতে চোখ পড়ল ধৃতির। সুপ্রিয়র প্রতিবছরের আয় ব্যয়ের হিসেব। সেটা দেখতে গিয়েই চমক! প্রতি বছর প্রায় ছয় লাখ টাকা করে সুপ্রিয় দিতেন দি রিট্রিট নামে কোন এক সংস্থায়। সাগ্নিক চ্যাটার্জি বলেছিলেন সুপ্রিয়র টাকার দরকার থাকে সবসময়। এদেরকে দিতেই? কারা এরা? ধৃতি দ্রুত গুগল করল। কিছুটা আন্দাজ করেছিল। এবার শিওর হল। দ্য রিট্রিট এক মানসিক রোগীদের প্রাইভেট হোম। সবচেয়ে দামি আর পশ। ঢাকুরিয়ার কাছেই। ধৃতি বুঝল সে অরবিন্দ গুপ্তের ঠিকানা পেয়ে গেছে।

    ৭

    হোমের চকচকে মেঝে পেরিয়ে রিসেপশনিস্টের কাছে যেতেই তিনি ভুরু কুঁচকে তাকালেন।

    — কী চাই?

    ধৃতি আই কার্ড বার করল।

    — আমি নিউজ চ্যানেল থেকে আসছি। আপনাদের এখানে বিখ্যাত চিত্রনাট্যকার অরবিন্দ গুপ্ত ভরতি আছেন অনেকদিন হল। আমি ওঁকে নিয়ে একটা স্টোরি করতে চাই।

    ভদ্রমহিলার মুখটা অদ্ভুত বেঁকে গেল।

    — বাবা, এতদিন আছেন উনি। আজ অবধি কাউকে তো দেখা করতে দেখলাম না। আজ সোজা সাংবাদিক! খবর পেলেন কোথা থেকে?

    — ওঁর এক আত্মীয় আমায় সেদিন বললেন।

    শুনে ভদ্রমহিলা আরও চটে গেলেন।

    — কে সেই আত্মীয়? আজ অবধি একদিন দেখা করতে আসেনি!! শুনুন, তাঁকে বলে দেবেন, সুপ্রিয় বসু এত বছর টাকা দিয়ে চালাচ্ছিলেন তাই উনি আছেন। সুপ্রিয়বাবুও তো মারা গেছেন মাসখানেক হল। এই বছরের টাকা সামনের মাসেই শেষ। তখন রিনিউ না করলে আমাদের পক্ষে আর ওঁকে রাখা সম্ভব না। এই ফাইভ স্টার খাতির কোথায় পাবেন শুনি? সোজা সরকারি হোমে রেখে আসব।

    ধৃতি বুঝল এঁকে চটালে চলবে না। হাসিমুখে বলল, ‘অবশ্যই জানাব। অরবিন্দবাবুর সঙ্গে দেখা করা যাবে?’

    মহিলা গোমড়া মুখে ‘মহুয়া, অ্যাই মহুয়া, এঁকে একটু অরবিন্দবাবুর কাছ নিয়ে যা তো’ বলায় কোথা থেকে একটা ছোট্টখাট্ট মেয়ে এসে ধৃতিকে বলল, ‘আমার সঙ্গে আসুন।’

    এই মেয়েটি বেশ নরমসরম। ধৃতি যেতে যেতেই জিজ্ঞেস করল, ‘কী হয়েছিল ওঁর?’

    — শুনেছি একটা অ্যাকসিডেন্টে মাথার ডানদিকে চোট পান। তারপর এখন অদ্ভুত অবস্থা। মনে মনে উনি এখনও আশির দশকেই আছেন। রাশিয়ার কথা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কথা বলেন, পোস্টকার্ডে চিঠি লেখেন…

    — কাকে লেখেন?

    — সুপ্রিয়বাবুকে। ওঁর বন্ধু। উনিই ওঁর এখানের খরচ দেন।

    — কী লেখেন জানো?

    — বলেন তো গল্প। কিন্তু টানা লিখতে পারেন না। অল্প অল্প করে লেখেন। আমি গিয়ে ডাকে ফেলে আসি।

    — সুপ্রিয়বাবু আসতেন না?

    — অনেকদিন আগে একবার এসেছিলেন। অরবিন্দবাবু চিনতে পারেননি… এই যে ওঁর ঘর…

    বলে একটা ছোটো ঘর খুলে দিল মহুয়া। কাচের জানলা দিয়ে আলো ঢুকছে। ঘরে আসবাব বিশেষ কিছু নেই। একটা ছোটো বইয়ের আলমারি। একটা টেবিল, চেয়ার আর খাট। টেবিলে বসে বৃদ্ধ অরবিন্দ কী যেন লিখছেন। ধৃতি এগিয়ে গেল। ভদ্রলোক তাকে খেয়াল করেননি। খুব নরম করে ধৃতি বলল, “ভালো আছেন অরবিন্দবাবু?”

    চমকে উঠলেন তিনি, “আপনি? আপনি কে?”

    — আমি ধৃতি। সুপ্রিয় বসুর নতুন সেক্রেটারি।

    — ও বাবা, সুপ্রিয় সেক্রেটারিও রেখেছে! আজ কদিন ওর চিঠি পাই না। কী ব্যাপার?

    — উনি একটু ব্যস্ত আজকাল। আপনাদের সিনেমা তো সব সুপারহিট!

    হাসি ফুটল ভদ্রলোকের মুখে, “আমিও শুনি, জানো। খুব ইচ্ছে হয় দেখতে যেতে। কিন্তু এখানে কড়া নিয়ম। বেরোনো মানা। কটা হলে রিলিজ করেছে, কত টিকিট ব্ল্যাক হচ্ছে, সব আমায় বলে সুপ্রিয়। এবারে নাকি মিনার, বিজলী, ছবিঘর, তিনটেতেই হাউসফুল ছিল?”

    — হ্যাঁ। ঠিকই শুনেছেন। আচ্ছা অরবিন্দবাবু, সুপ্রিয়বাবুর শেষ চিঠিটা একটু দেখাবেন?

    “এই এই তো… এই তো আমার পাশেই আছে”, ধৃতির হাতে পোস্টকার্ড তুলে দিলেন অরবিন্দ গুপ্ত।

    সিনেমা রিলিজের পরের দিনের চিঠি। হাতের লেখা সুপ্রিয়র কায়দায়। কিন্তু সুপ্রিয়র না। তাতে লেখা—

    বন্ধু অরবিন্দ,

    আমাদের যৌথ ছবি বিষণ্ণ সকাল সুপারহিট হয়েছে। এখন যে গল্পটা লিখছ সেটার শেষ অংশটা পাঠাও। স্বয়ং সত্যজিৎ রায় আগ্রহ দেখিয়েছেন। তুমি শেষ অংশ পাঠালেই আমি ওঁর সঙ্গে কথা বলব।

    ইতি

    সুপ্রিয়

    এখন প্রশ্ন একটাই। এ চিঠি কে লিখল? আর তার চেয়েও বড়ো প্রশ্ন… কেন?

    ফিরে গেটে সুদীপকে দেখতে পেল না ধৃতি। গোপালের সঙ্গে নতুন একটা ছেলে বসে আছে। কী ব্যাপার? সুদীপ কি চাকরি ছেড়ে দিল? পড়াশুনো করা হাসিখুশি এই ওয়াচম্যানকে কখন যে বেশ পছন্দ করতে শুরু করেছিল ধৃতি, নিজেই জানে না।

    — কী ব্যাপার গোপাল? সুদীপ কোথায়?

    — চাকরি ছেড়ে দিয়েছে ম্যাডাম।

    — কেন?

    — ওর এখন বিশাল ব্যাপার। পড়াশুনোতেতে বরাবরই ভালো। কী একটা গল্প লিখে সেদিন আমাদের ডিরেক্টর সাগ্নিকবাবুকে শুনিয়েছে। উনি তো শুনেই খুশ। দুজনে গেছিল শ্রী বালগোপাল ফিল্মস-এ। ওরা নাকি লাখ পাঁচেক দিয়ে গল্প কিনে নিয়েছে। ও গল্পে ছবি হবে। সুদীপ আর এই কাজ করবে না। সিনেমার কাজই করবে… লাইফ বদলে গেল ম্যাডাম ওর…

    ধৃতি হেসে বলল, “বাহ রে! বেশ তো! ওকে অভিনন্দন জানাতে হবে। ওর বাড়ির ঠিকানাটা একটু দেবে? দরকার ছিল।”

    উত্তর কলকাতার ঘিঞ্জি গলি। উবের ড্রাইভার বলল ঢুকবে না। একটু এগিয়ে গিয়ে দু-একজনকে জিজ্ঞেস করতেই বাড়ি দেখিয়ে দিল। পুরোনো প্রায় ভেঙে পড়া শরিকি বাড়ি। সুদীপ বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল। ধৃতিকে দেখে চমকে উঠল, “ম্যাডাম, আপনি? এখানে?”

    — তোমার সুখবরটা পেলাম। গোপাল বলল। তাই মিষ্টি দিতে এলাম।

    সুদীপের ঘোর যেন কাটেনি। আমতা আমতা করেই বলল, “আসুন ম্যাডাম। ভিতরে আসুন।”

    ঘরের ভিতরটা অগোছালো। অবিবাহিত ছেলেদের যেমন হয় আর কি। খাটে বেশ কিছু বই রাখা। একটা বই খোলা অবস্থায় পড়ে আছে। সেই খাটের এক কোনায় বসল ধৃতি। হাসিমুখে সুদীপের হাতে মিষ্টির প্যাকেট দিয়ে শান্ত গলায় বলল, “এবারে বলো, সুপ্রিয় বসুকে তুমি কেন খুন করলে?”

    ৮

    খানিকক্ষণ ধৃতির মুখের দিকে সোজা তাকিয়ে রইল সুদীপ। চোয়াল শক্ত। গলার কাছটা দপদপ করছে। বেশ খানিক বাদে প্রায় ফিসফিসে গলায় বলল, “আপনাকে কে বলেছে?”

    — কেউ না। আমিও কাউকে বলব না। জাস্ট কৌতূহল।

    — আপনি বুঝলেন কী করে?

    — যে-কোনো হত্যায় সন্দেহ সবার আগে তার ওপরেই পড়ে যে মৃত ব্যক্তিকে শেষ দেখেছে। মানে এই ক্ষেত্রে তুমি। কিন্তু মজাটা হল, আপাতদৃষ্টিতে তোমার কোনও মোটিভ নেই। তাই হু মিলে গেলেও হোয়াই-তে আটকে যাচ্ছিল বারবার। সুপ্রিয় বসু অসৎ মানুষ ছিলেন। অরবিন্দবাবুর মানসিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে তাঁকে দিয়ে কিস্তিতে কিস্তিতে গল্প লেখাতেন আর সেই গল্প নিজের নামে চালাতেন। এ কথা কারও জানার কথা না, কারণ অরবিন্দবাবু তো ভাবছেন ছবিতে দুজনের নামই থাকছে। তাহলে এই পোস্টকার্ডের গল্পের কথা আর কে জানতে পারে? সেই লোক, যে এটা ঘরে পৌঁছে দেয়। বিশেষ করে সে যদি পড়ুয়া হয়, আর পড়ার বইয়ের অভাব থাকে তবে সে হাতের কাছে যা পায় পড়ে। আমার বিশ্বাস ঠিক এটাই তোমার সঙ্গে হয়েছিল। তুমি বুঝতে পেরেছিলে কেউ একজন চিঠিতে গল্পের প্লট লিখে পাঠাচ্ছে আর পোস্টকার্ড হওয়াতে পড়াও সুবিধে। সুপ্রিয়বাবু যেদিন মারা গেলেন, সেদিন তুমি তাঁর ঘরে চিঠি নিয়ে গেলে। তিনি তখন ঘরাঞ্চির মাথায়। আমি নিজে উঠে দেখেছি অত উপর থেকে পড়লে বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম। তুমি পোস্টকার্ড পড়ে বুঝেছিলে আর-একটা নতুন গল্প শেষ হতে চলেছে। হলেই সুপ্রিয় সেটাকে নিয়ে সিনেমা বানাবেন। দেখলে এই সুযোগ। ঘরাঞ্চিতে ঠেলা দিতেই সুপ্রিয় বসু মাটিতে ঘাড় মটকে পড়ে গেলেন। তুমি তাঁর নাড়ি দেখলে। তিনি মারা গেছেন। খুব সাবধানে ঘরাঞ্চি থেকে হাতের ছাপ মুছে তুমি দরজা লাগিয়ে বেরিয়ে এলে। এখন শুধু একটাই ফাঁক রয়ে গেল। গল্পের শেষটুকু তোমার জানতে হত। যদি ভুল না করি, সুপ্রিয় বসুর চিঠিও তুমিই ডাকে ফেলতে, জানতে হাতের লেখা কীরকম। হাতের লেখা নকল করে অরবিন্দকে চিঠি লিখলে। গল্প এল। তুমি গোটা গল্প বাড়িয়ে নিজের নামে সাগ্নিক চ্যাটার্জিকে শোনালে, যেমন সুপ্রিয় করতেন। আর তারপর… তোমার লাইফ বদলে গেল। কিন্তু কয়েকটা ব্যাপার একটু বলো দেখি। অরবিন্দবাবু যে মানসিক রোগী, হাতের লেখার বদল ধরতে পারবেন না, এই খবরটা তুমি পেলে কোথা থেকে?

    — আমার প্রেমিকা। মহুয়া। ও রিট্রিটে কাজ করে। ও-ই আমাকে এই চিঠিগুলোর কথা প্রথম বলেছিল। কিন্তু আপনি যা বললেন তার অনেকটাই ভুল। আমি গল্পের লোভে খুন করিনি। ইনফ্যাক্ট আমি খুনই করিনি। কলেজে দারুণ লেখালেখি করতাম। ম্যাগাজিনের এডিটার-ও ছিলাম। তারপর বাবা মারা গেলেন। মা আগেই গেছিলেন। চাকরি নেই। উপায় না দেখে ওয়াচম্যানের কাজ নিলাম। ভালো লাগত না, জানেন। একদিন সুপ্রিয় স্যারের সঙ্গে আলাপ হল। চিঠি দিতে গিয়েই… বললাম আমিও লেখালেখি করি। উনি খুব উৎসাহ দেখালেন। আমি কলেজে ম্যাগাজিনের লেখা একটা গল্প পড়ালাম। বললেন বেড়ে হয়েছে। আমি বললাম, এ থেকে সিনেমা হয় না? উনি বললেন প্রযোজককে বলবেন। দুই হপ্তা বাদে জানালেন গল্প রিজেক্ট হয়েছে। ছয়মাস গেল না, গোপাল দেখি একটা ওয়েব সিরিজের গল্পের খুব প্রশংসা করছে। মোবাইলে দেখাল। চমকে উঠলাম। এ তো হুবহু আমার লেখা গল্প! কিচ্ছু বলিনি জানেন। ঘরে এসে ডুকরে ডুকরে কেঁদেছি। যেদিন স্যার মারা গেলেন, সেদিন ওঁর ঘরে গেছিলাম চিঠি দিতে। ঘরাঞ্চির মাথায় উনি। নিচে আমি। খুব ইচ্ছে করছিল দিই ঠেলা। পারলাম না। ভদ্রঘরের ছেলে তো! উনি বললেন বইয়ের ডাঁই তুলে দিতে। দিতে গিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম ঘরাঞ্চিতে। ঘরাঞ্চি কাত হয়ে গেল। উনি সোজা নিচে। যখন বুঝলাম মারা গেছেন, প্রথমে ভয় হল। তাড়াতাড়ি দরজা আটকে বেরিয়ে এলাম। সেদিন সারারাত ঘুমাতে পারিনি। পরে দেখলাম তেমন কোনও তদন্ত হল না। তখন এল লোভ। অরবিন্দবাবুর গল্পের পুরোটাই তো জানা। শুধু শেষটা জানতে বাকি। চিঠি লিখলাম সুপ্রিয় স্যারের হাতের লেখা নকল করে। বাকিটা তো আপনি জানেন। আচ্ছা, আপনি কি পুলিশে যাবেন?

    ঘাড় নাড়ল ধৃতি, “না। শুধু একটাই প্রশ্ন। আমাকে চিঠিটা দিলে কেন? না দিলেও তো পারতে… তাহলে এত কিছু হতই না।”

    — পিওনবুকে রিসিভ করে নিয়েছিলাম যে। দিতেই হত। আমাদের খাতায় চিঠি বা পার্সেল ডেসপ্যাচ করে রিসিভ করিয়ে নিতে হয়। একবার একটা পার্সেল খোয়া গেছিল। সেই থেকে। তবে ভেবেছিলাম আপনি রিসিভ করবেন না। করলেও পাত্তা দেবেন না। এত কিছু হয়ে যাবে বুঝতেই পারিনি। একটা কথা ম্যাডাম, আমার জীবন এতদিনে অন্যদিকে ঘুরছে। প্লিজ, প্লিজ, কাউকে কিছু বলবেন না।

    ৯

    তিনদিন বাদে আবার রিট্রিটে গেল ধৃতি। সেই মহিলাই বসে আছেন রিসেপশানে। একটা এক লাখের চেক দিয়ে ধৃতি বলল, “এখন থেকে অরবিন্দবাবুর খরচা আমিই দেব। একটু ওঁর সঙ্গে দেখা করা যাবে?”

    এই প্রথম হাসি ফুটল মহিলার মুখে।

    “মহুয়াকে ডাকতে হবে না। আমি চিনি”, বলে পা বাড়াল ধৃতি।

    আবার সেই ঘর। অরবিন্দ বসে আছেন চেয়ারে। ধৃতি হেসে বলল, “আমায় চিনতে পারছেন? সুপ্রিয়বাবুর সেক্রেটারি।”

    — হ্যাঁ, হ্যাঁ… চেনা চেনা লাগছে

    — আপনার আগের গল্প থেকে সিনেমা হচ্ছে। সত্যজিৎ বাবু রাজি হয়েছেন। এবার নতুন গল্প লিখতে হবে। মৃণাল সেন চেয়েছেন।

    — বলেন কী! আমার গল্পের এত কদর!!

    চকচক করে ওঠে অরবিন্দের মুখ। তাঁর সামনে একগোছা পোস্টকার্ড নামিয়ে রাখে ধৃতি।

    “যেমন পাঠান, তেমনই পাঠাবেন। তবে একমাসের মধ্যে গল্প শেষ করতে হবে। ওঁদের একটু তাড়া আছে, কেমন?”

    অরবিন্দর বোবা হাসির উত্তরে মৃদু হেসে ধৃতি দরজার দিকে এগোয়। অদ্ভুত এক প্রশান্তি তার সারা শরীর জুড়ে। রিট্রিট থেকে বেরিয়েই ফোন বার করে একটা নম্বর ডায়াল করল ধৃতি। বার দুই রিং হবার পর অপর পক্ষ ধরল।

    “হ্যালো সাগ্নিকদা, আমি ধৃতি বলছি। হ্যাঁ। হাউজিং-এর ধৃতি। একটা দারুণ গল্পের প্লট মাথায় এসেছে। ভালো সিনেমা হবে… হ্যাঁ, আপনাকেই দেব। তবে আমায় একমাস সময় দিতে হবে…”

    লেখকের জবানি: এটা অনেকদিন আগে সত্যি হয়েছিল। ডাক বিভাগের তৎপরতায় আমার এক আত্মীয়ের লেখা চিঠি আমাদের বাড়িতে তাঁর মৃত্যুর পরে পৌঁছায়। সেটাই মাথায় রেখে গল্পটা লেখা।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার
    Next Article সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার

    Related Articles

    কৌশিক মজুমদার

    নোলা : খাবারের সরস গপ্পো – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    নীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    অগ্নিনিরয় – কৌশিক মজুমদার

    August 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.