Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আঁধার আখ্যান – কৌশিক মজুমদার

    কৌশিক মজুমদার এক পাতা গল্প186 Mins Read0

    টেলিপ্যাথি

    ১

    “এক্সকিউজ মি। একটু শুনবেন? হ্যাঁ হ্যাঁ… আপনাকেই ডাকছি। আপনিই কুহু তো?”

    পিছনে থেকে অচেনা গলার ডাক শুনে একটু চমকে পিছনে ফিরে তাকাল কুহু। এটা ওর ছোটো থেকে হয়। থেকে থেকেই চমকে চমকে ওঠে। এখনও নাকি ঘুমের ঘোরে কী সব বলে আর ভয় পেয়ে চিৎকার করে ওঠে। ওর রুমমেট তৃষা বলছিল সেদিন।

    মহাজাতি সদনে জাদুকর এ সি সরকারের শো সবে ভেঙেছে। দর্শকরা ধীর পায়ে বাড়ির দিকে রওনা হচ্ছে। তাদের অনেকেই আবার ঘাড় ঘুরিয়ে কুহুকে দেখছে। কুহু জানে এর কারণ কী।

    জাদুখেলার শেষ আইটেম ছিল হিপনোটিজম বা সম্মোহন। জাদুকর দেশি ও বিদেশি সম্মোহন নিয়ে নানা কথা বললেন। বললেন আন্টন মেসমার আর মেসমারিজমের কথা। তারপর আচমকা মঞ্চে ডেকে নিলেন কুহুকে। ব্যাপারটার জন্যে একেবারেই প্রস্তুত ছিল না কুহু। এই অনুষ্ঠানে তার আসারই কথা না। তৃষাকে আজই সাততাড়াতাড়ি দেশের বাড়ি পুরুলিয়ায় যেতে হল। ওর বাবার একটা মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক মতো হয়েছে। যাওয়ার আগে কুহুকে আগাম কেটে রাখা টিকিটটা দিয়ে গেছে। নইলে বেকার নষ্ট হত। কুহুরও আজকে টিউশানি পড়ানো নেই। মেসে বসে থেকেই বা কী করবে ভেবে একা একা ম্যাজিক দেখতে এসেছিল। এসে এই কাণ্ড!

    প্রথমে একটু ইতস্তত করলেও শেষ পর্যন্ত গুটিগুটি পায়ে মঞ্চে উঠে আসে কুহু। জাদুকর তার নাম জিজ্ঞেস করলেন।

    “কুহু মুখার্জি।”

    “কী করা হয়?”

    “এই কলকাতাতেই একটা স্কুলে পড়াই।”

    “বাঃ কুহু! আপনি তাহলে দিদিমণি! কিন্তু দিদিমণি, এখন তো কিছুক্ষণ আপনাকে ছাত্রী হতে হবে। নিন এই চেয়ারে চুপটি করে বসুন”, জাদুকরের ঠোঁটে দুষ্টুমি মাখা হাসি।

    কুহু বাধ্য মেয়ের মতো চেয়ারে বসে পড়ল। জাদুকর যেন হাওয়ায় হাতড়ে একটা পেন্ডুলাম হাজির করলেন।

    “এবার আমি পেন্ডুলাম দুলিয়ে তিন গুনব। এক-দুই-তিন বললেই আপনি ঘুমিয়ে পড়বেন। মন দিয়ে তাকিয়ে থাকুন এই পেন্ডুলামের দিকে। এ-এ-ক, দু-ই-ই, তিন…”

    বলামাত্র কুহুর মনে হল আশেপাশের সমস্ত আওয়াজ এক ঝটকায় কমে গেল। ঠিক যেন টিভির মিউট বাটন টিপে দিয়েছে কেউ। সে জেগে আছে। কিন্তু কানে অদ্ভুত একটা গোঁ গোঁ শব্দ। পরিষ্কার একমাত্র জাদুকরের গলা।

    “আমাদের কুহু দিদিমণি এখন সম্পূর্ণ সম্মোহিত। ওঁকে যা করতে বলব, একটিও প্রশ্ন না করে তিনি সেটাই করবেন। এমনকি মানুষ খুনও… হা হা হা… না, না, এত কঠিন কাজ দেব না ওঁকে। উনি বরং এই তুলোর বলটা আপেল ভেবে মুখে নিয়ে চিবুতে থাকুন।”

    বলেই কুহুর হাতে লাল রঙের একটা তুলোর ডেলা গুঁজে দিলেন জাদুকর। কুহু স্পষ্ট বুঝতে পারছিল এ জিনিস চিবানো মানে লোক হাসানো ছাড়া কিছু নয়। সে কিছুতেই এই কাজ করবে না। কিন্তু সে নিজেই অবাক হয়ে দেখল তার ইচ্ছের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে তার হাত ধীরে ধীরে মুখের কাছে উঠে এসে তুলে ধরল সেই বলটা। আর মুখও বশংবদের মতো সেই বলে কামড় লাগাল।

    দর্শক আসনে ওঠা হাসির ফোয়ারা খুব মৃদু হলেও এল কুহুর কানে। সে বহুবার চাইল বলটাকে ছুড়ে ফেলে দিতে। পারল না। পরের দশ মিনিট কুহু স্টেজে হামাগুড়ি দিল, কাল্পনিক এক কুকুরছানার মাথায় হাত বোলাল, নিজের হাতের হ্যান্ডব্যাগটা ধরে গদার মতো চালাল এবং সবটাই নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে। তার সব অঙ্গগুলো যেন বেজায় অভব্য হয়ে তার কথা শুনতে অস্বীকার করছে। চলছে সেই জাদুকরের নির্দেশে। কুহু বুঝতে পারছিল সে কী করছে। কিন্তু না করেও থাকতে পারছিল না। অপমানে তার সারা গা রি রি করছিল। যদি এই ম্যাজিশিয়ানটাকে বাগে পাওয়া যেত…

    প্রায় পনেরো মিনিট কসরতের পর জাদুকর কুহুর দুই চোখের মাঝে আঙুল ছুঁয়ে তার সম্মোহন কাটালেন। দর্শকদের করতালিতে তখন হলে পায়রা উড়ছে। কুহুর কাছে ক্ষমা চেয়ে দর্শকদের প্রচুর ধন্যবাদ দিয়ে জাদুকর শো শেষ করলেন। কুহুর চোখে হালকা কান্নার আভাস। বেরোবার পথেই সেই পিছুডাক, “এক্সকিউজ মি…!”

    কুহু পিছন ফিরতেই দেখল বেঁটে, মোটা, কালো, চশমা চোখে হাসিমুখ এক ভদ্রলোক দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছেন আর ডান হাত তুলে তাঁকে দাঁড়াতে বলছেন। কুহুর সামনে এসে ভদ্রলোক হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন “একটু সময় হবে কুহু দেবী? আপনার সঙ্গে জরুরি কথা ছিল।”

    ভদ্রলোক কুহুর নাম কী করে জানলেন তা বোঝার জন্য বুদ্ধি লাগে না। জাদুকরের কল্যাণে হলের সবাই তা জেনেছে। প্রশ্ন হল, কী এমন জরুরি কথা!

    “বলুন।”

    “আচ্ছা আপনি কি তুলা রাশি?”

    আচমকা এই প্রশ্নে বেশ অবাক হল কুহু। প্রথমত, এত ডেকে হেঁকে শেষ পর্যন্ত এই প্রশ্ন! আর দ্বিতীয়ত, সে সত্যিই তুলা রাশি।

    “কেন বলুন তো?”

    “আপনি তুলা রাশি, তাই তো? আমিও তাই। আপনাকে যখন জাদুকর সম্মোহিত করছিলেন তখনই বুঝেছি। তুলা রাশির জাতকদের মনে প্রভাব বিস্তার করা সবচেয়ে সহজ। দেখেন না, প্ল্যানচেটে যত বড়ো বড়ো মিডিয়াম, মাদাম ব্লাভাটস্কি থেকে মাদাম কোনান ডয়েল, সবাই তুলা রাশির মহিলা।”

    কুহু এবার সত্যিই বিরক্ত হল। রাত্রি হয়েছে। রাস্তার লোকজন কমছে। আর এই ভদ্রলোক তার পথ আটকে কি আবোলতাবোল বকে চলেছেন!

    “আবোলতাবোল না ম্যাডাম!” কুহুর মনে কথা ধরতে পারছে লোকটা, এমনভাবে বলল, “জানেন তো আজকে একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে।”

    “কী ঘটনা?” কুহুর কৌতূহল বাড়ছে।

    “জাদুকর আপনাকে সম্মোহিত করা মাত্র আপনার মন তো আর আপনার বশে রইল না। ঠিক তখনই আমি অনুভব করলাম আপনার মনের সব কথা আমি পড়তে পারছি। স্টেজে উঠে আপনার বিরক্তি, রাগ, কেন স্টেজে উঠলাম এমন ভাবা, কান্না… সব।”

    “এ আর নতুন কী? এমন অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই অনেকেরই হয়। আপনারও হয়েছে।”

    এবার ভদ্রলোক গলাটা খাদে নামিয়ে মুখটা কুহুর কানের কাছে নিয়ে প্রায় ফিসফিস করে বললেন, “আর এক মুহূর্তের জন্য জাদুকরকে যে আপনার খুন করতে ইচ্ছে হয়েছিল, সেটাও কি সবার হয়? হয় না তো?”

    কুহু চমকে উঠল। মুখে কিছু বলল না। ভদ্রলোকের গলা এবার প্রায় সাপের মতো হিসহিসে হয়ে গেছে। পোস্টের আলোতে তাঁর চশমার মাইনাস পাওয়ারের মোটা কাচ চিকচিক করছে। হাসি হাসি মুখে তিনি আবার শুরু করলেন, “আপনি বুঝতে পারছেন না কেন কুহু দেবী? একেই ইংরাজিতে টেলিপ্যাথি বলে। আজ থেকে আপনার আর আমার মনের যোগ হয়ে গেল। এতে আপনারও কিছু করার নেই। আমারও না। আর হ্যাঁ, নামটা মনে রাখবেন, মলয় সামন্ত। আজ চলি, কেমন?”

    ২

    মলায় সামন্তকে প্রায় ভুলেই গেছিল কুহু। ডুবে গেছিল স্কুল, টিউশানি আর মেসে ফিরে রান্নাবান্নায়। কিন্তু বেশিদিন ভুলে থাকতে পারল না। সেদিন স্কুলে পরীক্ষা চলছে। হলে গার্ড দিয়ে গিয়ে এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা হল কুহুর। হঠাৎ তার মনে হল সে আর ক্লাসরুমে নেই। বরং দাঁড়িয়ে আছে কোনও পাঁচতারা হোটেলের বিরাট লাউঞ্জে। প্রচুর সুসজ্জিত নারী ও পুরুষ। কোনও পার্টি চলছে সম্ভবত। না চাইলেও বারবার তার চোখ চলে যাচ্ছে মুসুর রঙের মুর্শিদাবাদ সিল্কের শাড়ি পরা দারুণ দেখতে এক মহিলার দিকে। মহিলার হাতে পানীয়ের গেলাস। কথা বলতে বলতে বারবার ঢলে পড়ছেন পাশের ভদ্রলোকের গায়ে। শাড়ির আঁচল সরে যাচ্ছে বুক থেকে। মহিলাকে চেনা চেনা ঠেকল কুহুর। কোথায় যেন দেখেছে।

    কিন্তু কী অবাক কাণ্ড! আজ এঁকে যতবার দেখছে তত রাগ হচ্ছে কুহুর। কেন? ইনি তো কুহুর কোনও ক্ষতি করেননি! তবু রাগটা ফিরে ফিরে আসছে। মহিলা হাত নেড়ে কাকে যেন ডাকলেন। আর তখনই কুহু তাঁকে চিনতে পারল। সেদিন মহাজাতি সদনে মলয় সামন্ত যখন তার সঙ্গে কথা বলছিল, একটু দূরেই বিরক্ত মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন এই মহিলা। একবার হাত নেড়ে মলয়কে ডেকেছিলেন। ঠিক এইভাবে। তবে কি ইনি মলয়বাবুর স্ত্রী?

    “ম্যাডাম, একটা পেজ প্লিজ”, এক ছাত্রীর ডাকে সংবিৎ ফিরল কুহুর। তার গা হাত পা থরথর করে কাঁপছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। কুহু বুঝতে পারল সে ধীরে ধীরে চারিয়ে বসছে মলয় সামন্তের মগজে। মলয় সামন্তের মগজ দখল নিচ্ছে তারটার। সেদিন যেমন মাঝরাতে হঠাৎ চমকে জেগে উঠে বসল কুহু। দেখল বিশাল এক খাটে সেই মহিলা নাইট গাউন পরে শুয়ে আছেন। শ্বাস বইছে মৃদু মৃদু। অঘোরে ঘুমিয়ে। মহিলাকে দেখেই তাঁর গলা টিপে ধরার এক অদম্য ইচ্ছে হতে লাগল কুহুর মনে। কতক্ষণ এভাবে চলল সে জানে না। আচমকা মাথার মধ্যে শুনতে পেল খুব চেনা মৃদু কিন্তু স্পষ্ট হিসহিসে এক কণ্ঠস্বর, “এ কী কুহু! এত রাতে তুমি জেগে আছ?”

    ৩

    সেদিন তৃষার জন্মদিন ছিল। সন্ধেবেলা সে আর তৃষা মিলে কিছু বন্ধুর সঙ্গে শপিং মলে ঘোরাঘুরি করে রাতে রেস্তোরাঁতে খাবার কথা। রুমে এসে কুহু দেখল তৃষা বেরিয়ে গেছে। সেরকমই কথা ছিল। কুহু স্কুল থেকে মেসে ফিরে তৈরি হয়ে সোজা চলে যাবে সাউথ সিটিতে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে কুহু চুল আঁচড়াচ্ছে, এমন সময় আবার সব কিছু গুলিয়ে গেল। কুহু দেখল সে চলে এসেছে অভিজাত ঘরের এক বেডরুমে। এই রুমটাই সেদিন রাতে দেখেছিল। কিন্তু এবার দৃশ্য অন্য। জানলার ধারে পানীয়ের গেলাস হাতে বসে আছেন সেই মহিলা। পরনে সেই নাইট গাউনটাই। কুহুর মনে হল সে এগিয়ে যাচ্ছে। জানলার স্লাইডিং কাচ খোলা। দূরে কলকাতা শহরের স্কাইলাইন দেখা যাচ্ছে। ভদ্রমহিলা নেশাতুর চোখে কুহুর দিকে তাকালেন। অস্ফুটে প্রশ্ন করলেন, “আরে এই সময় তুমি? কী ব্যাপার!”

    কুহু উত্তর দিতে চাইল। পারল না। সেই জাদুকরের সম্মোহনের দিনের মতো। দেখল একটা হাত বিদ্যুৎবেগে উঠে এসে চকিতে জানলার ধারে বসা সেই মহিলাকে মারল এক ধাক্কা। মহিলার তীব্র চিৎকারে সংবিৎ ফিরে পেয়ে কুহু দেখল সে তার নিজের ঘরেই বসে আছে। তার যা দেখার সে দেখে নিয়েছে। উদ্যত সেই ডানহাতের রোলেক্স ঘড়িটা তার চেনা। কিছুদিন আগেই মহাজাতি সদনে মলয় সামন্তের হাতে এই ঘড়িটাই দেখেছিল সে। তার চোখের সামনে মলয় সামন্ত তার স্ত্রীকে খুন করল। কোনও সাক্ষী নেই। সে ছাড়া। কিন্তু তার সাক্ষ্য কি আদালতে গৃহীত হবে!

    তৃষাকে ফোন করে সে জানিয়ে দিল রাতে ডিনারে যেতে পারছে না, মাথা যন্ত্রণায় ছিঁড়ে পড়ছে। পরদিন সকালে আনন্দবাজারে পাঁচের পাতার ওপরের দিকেই বেশ বড়ো করে খবরটা ছাপা, “বিখ্যাত শিল্পপতি সঞ্জীব ব্যানার্জির একমাত্র মেয়ে সুমিতার মৃত্যু।” বিবাহসূত্রে সুমিতা ছিলেন ব্যবসায়ী মলয় সামন্তের স্ত্রী। তাঁদের মধ্যে কোনও দিন বনিবনার অভাব ছিল বলে জানা যায়নি। সঞ্জীব নিজের জামাইকে স্নেহই করতেন। খুব সম্ভব কোনও অজ্ঞাত কারণে ডিপ্রেশানে ভুগছিলেন সুমিতা। তাই জানলা থেকে ঝাঁপিয়ে সুমিতা আত্মহত্যা করেন। পেটে অনেকটা অ্যালকোহল পাওয়া গেছে। অবশ্য দুর্ঘটনার তত্ত্বকেও পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ যাঁর উপরে পড়ে, সেই মলয়বাবু সেই সময় তাঁর গড়িয়ার ফ্ল্যাট থেকে বহুদূরে খিদিরপুরে ব্যবসার কাজে গেছিলেন। অন্তত চার-পাঁচজন সাক্ষী তেমনই জানাচ্ছে। খবরটা পড়ে আবার শিউরে উঠল কুহু। আর কেউ জানুক না জানুক, কুহু জানে, সেদিন সন্ধ্যায় মলয় সামন্ত তার ফ্ল্যাটে এসেছিল। হঠাৎ মাথাটা আবার ঢিপ ঢিপ করতে লাগল। অপর প্রান্তের কথাগুলো এবার আরও স্পষ্ট, আরও কাটা কাটা।

    “কুহু, আমি জানি… তুমি স-ব জানো। কিন্তু তুমি যা জানো, সে তো আমিও জানি। সুতরাং সাবধান। তোমার প্রতিটা ভাবনার খবর আমার কাছে আসে। টেলিপ্যাথি… তোমাকে বলেছিলাম না!”

    ৪

    দুইদিন কুহু যেন এক ঘোরের মধ্যে কাটাল। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছে তার মাথার মধ্যে যেন কে একটা বাসা বেঁধে চেপে বসে আছে। চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারি করছে তার ওপরে। মাঝেমধ্যেই ভেসে ভেসে আসছে সেই খুনের দৃশ্য। স্পষ্ট থেকে ষ্পষ্টতর। এখন সে জানে ঠিক কীভাবে খিদিরপুরের অফিসের পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে ট্যাক্সি ভাড়া করে চুপচাপ ফ্ল্যাটের ফায়ার একজিট দিয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকে স্ত্রীকে খুন করেছিল মলয়। এরপর অন্য ট্যাক্সি ধরে ফিরে গেছিল।

    কোনও সাক্ষী নেই, তবে কুহু জানে সেই দুটো ট্যাক্সির নম্বর, যারা মলয়কে নিয়ে যাতায়াত করেছিল। পুলিশ সেই ড্রাইভারদের জিজ্ঞেস করলেই সব কিছুর হদিশ পাবে। কিন্তু পুলিশকে সেই খবর দেবে কে? কুহু? সঙ্গে সঙ্গে টের পেয়ে যাবে মলয় সামন্ত। যে একটা খুন নির্বিকারে করতে পারে, আরও একটা করতে তার হাত কাঁপবে না।

    কুহুর মাথার মধ্যে সেই ফিসফিসানি আরও বেড়েছে, “আমি বুঝতে পেরেছি তুমি পুলিশকে খবর দিতে চাও। কোনও লাভ নেই… আমার পয়সা আছে… পুলিশের মুখ বন্ধ করার ক্ষমতা আছে। সুমিতা বড়ো বাড় বেড়েছিল। ওকে পৃথিবী থেকে সরতেই হত। আমার আড়ালে আমার পার্টনারের সঙ্গে প্রেম করত শয়তানীটা। ভেবেছিল আমি বুঝতে পারব না। তুমি এর মধ্যে ঢুকো না… মাঝখান থেকে তুমি কচি বয়সে প্রাণটা হারাবে দিদিমণি।”

    বন্ধু তৃষার কিছু একটা সন্দেহ হচ্ছিল গোড়া থেকেই।

    “তোর কী হয়েছে বল তো?” বারবার জিজ্ঞাসা করে সে। কুহু জবাব দিতে পারে না। পাঁচদিন এইভাবে কাটানোর পর সে ঠিক করল যা হবার হবে। সে পুলিশকে জানাবেই। কিন্তু পুলিশ স্টেশনে যে মলয় সামন্তের লোক বসে নেই তার কী নিশ্চয়তা! সুমিতার কোনও সন্তান ছিল না। একমাত্র ওয়ারিশ মলয়। তার হাতে এখন প্রচুর সম্পত্তি। পয়সার জোরে সে যা খুশি করতে পারে।

    অনেক ভেবে একটা উপায় বের হল। কুহুর স্কুলের সহকর্মী রাজীবের কাকা যেন কোথাকার ডি.এস.পি। রাজীবকে তো তাহলে গোটা ঘটনা খুলে বলতে হয়। এদিকে মাথার সেই ফিসফিসানি ক্রমাগত বলছে, “বোকামি কোরো না কুহু। তুমি পুলিশ স্টেশন অবধি যেতেই পারবে না। রাজীবকে বললে আমি ওকে ছেড়ে দেব ভেবেছ? মাঝখান থেকে তোমার এই বোকামিতে ও বেচারাও মারা পড়বে।”

    শেষে কুহু ঠিক করল সব কথা একটা চিঠিতে লিখে নিজের মেসের ঠিকানায় পাঠাবে। সে ফাঁকে নিজেও পালাবে। কোথায়? জানা নেই। জানতে চায়ও না কুহু। জানলেই তো মলয় সামন্ত জেনে যাবে। গোটা ঘটনা একটা চিঠিতে লিখে দুটো ট্যাক্সির নম্বরসুদ্ধু কুহু পোস্ট করে দিল তৃষার নামে। এবার খুব তাড়াতাড়ি পালাতে হবে তাকে। মলয় নিশ্চয়ই এই চিঠির কথা জেনে গেছে।

    স্কুল থেকে মেসে ফিরেই সে বুঝল কেউ তাকে ধরতে এই মেসে আসছে। মোবাইলে মলয় কাউকে একটা নির্দেশ দিচ্ছে। তার নাম রহমত। কুহু বুঝল এক্ষুনি না পালাতে পারলে বড্ড দেরি হয়ে যাবে। শুধুমাত্র পার্সে এটিএম আর কিছু খুচরো নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল সে। সামনেই একটা ফাঁকা ট্যাক্সি, হাত দেখাতেই দাঁড়াল। কী সৌভাগ্য! কোনওক্রমে উঠেই গাড়ির দরজা সশব্দে বন্ধ করল কুহু।

    “কাঁহা যাইয়েগা?” শুধাল পাঞ্জাবি ড্রাইভার।

    “যাঁহা মর্জি লে চলিয়ে। সির্ফ মুঝে মত বতাইয়ে কাঁহা লে যা রহে হ্যায়।”

    সর্দারজি এমন আজব যাত্রী আগে দেখেননি। মুখ দিয়ে অদ্ভুত একটা আওয়াজ করে “যো মর্জি” বলে তিনি গাড়ি ছোটালেন। পিছনের সিটে দুচোখ বন্ধ করে মাথা চেপে কুহু বসে রইল। সে দেখতে চায় না কোথায় যাচ্ছে, দেখলেই তো সে খবর পৌঁছে যাবে মলয় সামন্তের মস্তিষ্কে। তা হলেই সর্বনাশ!

    কুহু বুঝল রহমত তার মেসের দরজা ভেঙে ঢুকে পড়েছে কারও তোয়াক্কা না করে। মলয় কথা বলছে তার সঙ্গে।

    “কী বলছ? পাখি হাওয়া? ও আচ্ছা। ঠিক আছে। আমি দেখছি কী করা যায়।”

    খানিক বাদে কুহুর মাথায় সেই গলা। যে হেসে হেসে বলছে, “কুহু… মিষ্টি মেয়ে আমার… কোথায় তুমি? ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না, তোমায় আমি মারব না/ সত্যি বলছি কুস্তি করে তোমার সঙ্গে পারব না… বলো তো মামণি, তুমি কোথায়?”

    যন্ত্রণায় কুহুর মাথায় যেন বড়োসড়ো একটা বিস্ফোরণ ঘটবে। তবু সে জোর করে চোখ বুজে রইল। জানলা দিয়ে এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস জানিয়ে দিল সে নদীর খুব কাছে এসে গেছে। কিন্তু না। সেটাও কুহু জানতে চায় না।

    সর্দারজি গাড়ি থামালেন। তারপর ভাঙা ভাঙা বাংলায় বললেন, “আভি তো গঙ্গা মাইয়া এসে গেলেন। এবার বোলেন কুথায় যাবেন?”

    কুহু তাকিয়ে দেখল আলোআঁধারি এক গলির মুখে গাড়ি দাঁড়িয়ে। এ জায়গা সে চেনে না। এক হিসেবে ভালোই হল। ড্রাইভারকে ভাড়া মিটিয়ে সোজা হাঁটা লাগাল কুহু। আজ রাতটা কোনওক্রমে কাটলে হয়। মলয় সামন্ত তাকে পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে। আর কাল ভোর হলে সে কী করবে? সেটা কালকেই দেখা যাবে।

    রাত হয়েছে। লোকজন কম। সামনে নিকষ কালো আঁধার। কিন্তু এ কী! অন্ধকার যে ধীরে ধীরে অবয়ব নিচ্ছে! তাও কুহুর চেনা অবয়ব। বিশালাকৃতি এগুলো কি তবে… কুহু চমকে উঠল। এ জায়গা তার একেবারেই অচেনা না। ছোটোবেলায় কলকাতা এলেই জাহাজ দেখার নাম করে বহুবার সে বাবার সঙ্গে এসেছে এই খিদিরপুর ডকে। এদিকে ডকটায় এখন কাজ হচ্ছে না। লোকজনের ভিড় একদম নেই। শুধু দু-একটা আলো জ্বলছে মিটমিট করে।

    মাথার মধ্যে চারিয়ে উঠল একটা খিলখিলে হাসি, “এত দৌড়ঝাঁপ করে শেষে বাঘের গুহাতেই পা দিলে কুহু দেবী? আমি এক্ষুনি আসছি তোমার সঙ্গে দেখা করতে।”

    কুহু বুঝল সে মলয় সামন্তের অফিসের খুব কাছেই আছে। হয়তো ঢিল ছোড়া দূরত্বে। এটাও বুঝল মলয় একটা গাড়ি স্টার্ট দিল। সে কুহুকে গাড়ির তলায় পিষে মারতে চায়। প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে শুরু করল কুহু। নদীর পাড় ধরে। পাশে ফেলে রাখা দড়িদড়াতে পা আটকে যাচ্ছে, তবু ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে সে। একটা হলুদ আলো পিছন দিক থেকে এগিয়ে আসছে। উজ্জ্বল হলুদ চোখের মতো। ওই গাড়িতেই মলয় সামন্ত আছে। হাতে রোলেক্স ঘড়ি। চোখে হাই পাওয়ার চশমা। মুখে অদ্ভুত হাসি। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।

    মলয়ের হৃৎস্পন্দন দ্রুত হচ্ছে। গাড়ি ক্রমাগত এগিয়ে আসছে কুহুর দিকে। মলয় যেন তার গোটা মাথা অধিকার করে বসে আছে। এবার আর বাঁচার পথ নেই।

    কুহু মনেপ্রাণে চাইছিল যদি কোনও মানুষের দেখা মেলে। সামনেই একটা ব্রিজ। ব্রিজ পেরোলে যদি সাহায্য মেলে। ব্রিজ ধরে খানিক দৌড়াতেই কুহুর পা বাতাস ছুঁল। কিছু বোঝার আগেই সে পেল কালো শীতল জলের স্পর্শ। ঠিক সেই মুহূর্তেই প্রায় একশো কিলোমিটার বেগে তার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে এসে জলে পড়ল একটা কালো সিডান গাড়ি। কুহু টের পেল গাড়ির ভিতর মলয় সামন্তের সিটবেল্ট আটকে গেছে। সে বারবার চেষ্টা করছে খোলার। কিছুতেই পারছে না। মলয়ের ফুসফুস ধীরে ধীরে জলে ভরে উঠছে। একবার যেন বলেও উঠল, “কুহু… বাঁচাও।”

    তারপর তার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেল। কুহুর মাথায় আর কোনও ফিসফিসানি নেই। যেন চরম কোলাহলের পর শ্মশানের নিস্তব্ধতা। একটু দূরে গাড়ির পিছনের লাল আলোটা ডুবতে ডুবতে চোখের আড়ালে চলে গেল।

    সাঁতরে পাড়ে উঠল কুহু। অন্ধকারে যেটাকে ব্রিজ ভেবেছিল আসলে সেটা জাহাজ থামার একটা ভাঙা জেটি মাত্র। মলয় সামন্ত বড্ড বেশি বিশ্বাস করে ফেলেছিল কুহুর মাথার ওপর। সেও আর ভেবে দেখেনি। নিজের অজান্তেই কুহুর ভাবনা তারও ভাবনা হয়ে উঠেছিল। বাস্তবে ফিরে আবার শিউরে উঠল কুহু। শুধু টেলিপ্যাথির জোরে সে আস্ত একটা মানুষ খুন করে ফেলেছে।

    লেখকের জবানি: ম্যাজিক নিয়ে পড়তে গিয়ে টেলিপ্যাথির কথা জানতে পারি। তখনই মনে হয়, কেমন হবে যদি দুজনের একজন কোনও অপরাধ করে, আর অন্যজন সেটা জানতে পেরে যায়? কিশোর ভারতীতে প্রকাশিত এই গল্পটা আমার কোনও পত্রিকায় প্রকাশিত প্রথম গল্প।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার
    Next Article সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার

    Related Articles

    কৌশিক মজুমদার

    নোলা : খাবারের সরস গপ্পো – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    নীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    অগ্নিনিরয় – কৌশিক মজুমদার

    August 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.