Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আইরিন – পিয়ের লেমেইত

    লেখক এক পাতা গল্প257 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৪০. তদন্তকারী টিমের সদস্যরা

    অধ্যায় ৪০

    সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তদন্তকারী টিমের সদস্যরা হাজির হলো ক্যামিলের রুমে।

    “তাহলে, তোমাদের মাঝে কে শুরু করবে?” জিজ্ঞেস করলো ক্যামিল।

    উপস্থিত তিনজন এক অপরের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। এই দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে।

    “লুইস, তুমিই শুরু করো।”

    “জেমস এলয়ের আরো কিছু বই আমরা ঘেটে দেখেছি।”

    “তো, কী পেলে?”

    “আদতে জেমস এরয়ের সব বই আমরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছি, কিন্তু কোন বইয়ের কাহিনীর সাথে হত্যাকাণ্ডের মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।”

    “বাহ, অসাধারণ। তোমার কথার সাথে আমি কিছু যোগ করতে চাই। তার মানে আমরা দিনের প্রায় অর্ধেকটা সময় এই ফালতু খিয়োরির পেছনে নষ্ট করেছি। এটাই তো নাকি…”

    ক্যামিলের কথা শুনে তিনজনই হেসে উঠলো।

    “আমাদের জন্য কী সুসংবাদ আনলে ম্যালেভাল?”

    “তোমার কিছু না পাওয়ার মাঝে কিছু না কিছু তো আছে। হাজার হলেও তোমাকে আমি চিনি।”

    “শূন্যের মাঝে আবার কী থাকবে?” বলল লুইস।

    “কিছুই না,” প্রায় সাথেসাথেই জবাব দিলো আরম্যান্ড।

    “আচ্ছা, সেই ক্ষেত্রে শূন্যতার মাঝে কিছুই পাইনি আমি। আর আর্টিফিসিয়াল লেদারে কোনো কিছু ছিলো না যাতে করে এটা কোথা থেকে কেনা কিংবা বানানো তা জানা সম্ভব। বাথরুমে থাকা সাদা কালো ওয়ালপেপার কোন ফরাসি প্রতিষ্ঠান থেকে আসেনি। তবে আগামীকাল আমি এসব জিনিস প্রস্তুতকারী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা পাবো। সেখান থেকে যদি কিছু পাওয়া যায়। আমার মনে হয় না আমাদের খুনি নিজে এইসব জিনিস কিনে তার পরিচয় বের করার কোনো সূত্র রেখে যাবে।”

    “তুমি ঠিক ধরেছো। এমনটা হওয়ার কথাও না। তারপর?”

    “মারকিউর হোটেলে এভলিন রুভ্রে তার কাস্টমারের সাথে দেখা করে, যে আমাদের সন্দেহভান খুনি। ওই রুমের বিল নগদ টাকায় দেয়া হয়েছিলো। এ ব্যাপারে কারো কিছু মনে নেই। ফরেনসিক রিপোর্টও আপনাকে আশাবাদী করতে পারবে না, কেননা রুমে থাকা রেডিও, টিভি, সিডি প্লেয়ারের সিরিয়াল নাম্বার থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোন সূত্র পাওয়া যায়নি। সামনে এগুনোর সব পথ এখানেই থেমে গেলো।”

    “আচ্ছা। আর কিছু?”

    “আরেকটা কানাগলি আছে, যদি শুনতে ইচ্ছুক থাকেন…”

    “বলতে থাকো …”

    “আমেরিকান একটা টি.ভি অনুষ্ঠান থেকে ওই ভিডিও ক্লিপটা নেয়া, যা আমেরিকায় গত দশ বছর ধরে চলছে। ওখানে অনুষ্ঠানটা বেশ জনপ্রিয়। চার বছর আগে ওই ক্লিপটা সম্প্রচারিত হয়েছিলো।”

    “তুমি কীভাবে জানলে?”

    “ফ্রান্সে যারা এর স্বত্ব কিনেছে তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। তবে দর্শকের মাঝে কোন সাড়া ফেলতে পারেনি বলে তারাও চালানো বন্ধ করে দিয়েছিলো। অন্যান্য অনুষ্ঠানের মাঝের বিরতি পূরণ করার জন্য মাঝে মাঝে ভাল কিছু ক্লিপ চালায়। কুকুরের কমলার খোসা ছাড়ানোর ওই ক্লিপটা সর্বশেষ ফেব্রুয়ারির সাত তারিখে প্রচারিত হয়েছিলো। খুনি সম্ভবত ওই সময়েই রেকর্ড করেছে। আর ম্যাচবাক্সের বিষয়টা মনে হচ্ছে আমাদের ধোঁকা দেয়ার জন্যই করেছে। কেননা এমন ম্যাচবক্স যে কোনো দোকানেই পাওয়া যায়। লা পালিও’র লোগোও আহামরি কিছু নয়, সাধারণ প্রিন্টার দিয়েই এমনটা করা সম্ভব। এমন প্রিন্টার চার লাখেরও বেশি বিক্রি হয়েছে ফ্রান্সে। কাগজ আর আঠার ব্যাপারটাও এমন।”

    “তুমি ঠিকই বলেছো। এসব তথ্য নিয়ে আমরা কোনো দিকেই এগুতে পারবো না।”

    “সেটাই, এইসব ছোটখাটো তথ্য আমাদের তদন্তের অগ্রগতিতে খুব একটা কাজে লাগবে না।”

    “এই কথার সাথে আমি একমত না,” নোটপ্যাডের দিকে তাকিয়েই বলল লুইস।

    ম্যালেভাল আর আরম্যান্ড ঘুরে দাঁড়ালো তাকে দেখার জন্য।

    “লুইস ঠিকই বলেছে। এসব তথ্যও আমাদের তদন্তের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খুনি যে পরিকল্পনা করে কাজটা করেছে, তার মাঝে এগুলোও ছিলো। আমাদের হাতে থাকা সুত্রগুলোকে দুইভাগে ভাগ করা যেতে পারে : দামি কিছু জিনিসপত্র যার উৎস খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি আর বাকি জিনিসগুলো যা স্বেচ্ছায় এবং খুব সতর্কভাবে অপরাধস্থলে রাখা হয়েছে। অনেকটা তোমার জাপানিজ সোফার মত,” আরম্যাণ্ডের দিকে তাকিয়ে বলল সে।

    “কিন্তু খুনি কেননা ভিনদেশি নাম ব্যবহার করবে? বিষয়টা খুব অদ্ভুত লাগছে,” বলল লুইস।

    “আমার মনে হয় খুনির মাথায় সমস্যা আছে,” ম্যালেভাল বলল।

    “আচ্ছা, তাই নাকি..আর কিছু?” জিজ্ঞেস করলো ক্যামিল।

    “ম্যাগাজিনের ব্যাপারে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও খুব ছোট…পুরুষদের জন্য একটা ব্রিটিশ ম্যাগাজিন…”

    “আমেরিকান, ভুল শুধরে দিলো লুইস।

    “হ্যাঁ, ঠিক আছে। আমেরিকানই হবে,” নিজের নোটপ্যাড দেখে নিশ্চিত হলো আরম্যান্ড।

    “কী কারণে এটা তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো?” বিরক্তি সহকারে বলল ক্যামিল।

    “ওই ম্যাগাজিন হাতেগোনা কয়েকটা বইয়ের দোকানে পাওয়া যায়। আমি তিনজনকে ফোন করেছিলাম এবং ভাগ্যদেবি আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছে। তিন সপ্তাহ আগে একজন পুরনো একটা সংখ্যা অর্ডার করেছিলো।”

    নিজের নোট নিয়ে আবারো ব্যস্ত হয়ে পড়লো আরম্যান্ড, তদন্তে সহযোগিতার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।

    “ছোট করে বলবে আর দ্রুত বলবে।”

    “বলছি, একটু সময় দিন। বইয়ের দোকানের ওই বিক্রেতা নিশ্চিত যে ম্যাগাজিনটা কোনো পুরুষই অর্ডার করেছিলো। শনিবার বিকেলে ওই দোকানে প্রচণ্ড ভিড় থাকে আর ঠিক সেই সময়েই গিয়েছিলো সে। ম্যাগাজিন অর্ডার করে এবং অগ্রিম টাকা দিয়ে যায়। পরের সপ্তাহে একই দিন এবং একই সময়ে ম্যাগাজিন নিয়ে যায়। কিন্তু তার সম্পর্কে ওই বইয়ের দোকানের কেউই উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য দিতে পারেনি।”

    “ভাল কাজই তো করেছো,” বলল ম্যালেভাল।

    “সুটকেস থেকে পাওয়া জিনিসগুলোও খুব একটা কাজে আসেনি। যদিও আমরা এখনো তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।”

    হুট করেই ক্যামিলের কিছু একটা মনে পড়লো।

    “লুইস… লোকটার নাম যেন কী? তুমি তো তাকে চেনো…”

    লুইসের মুখভঙ্গি দেখেই বোঝা গেলো ক্যামিল যার কথা বলতে চেয়েছে তাকে সে চিনতে পেরেছে।

    “হেনাল, জ হেনাল। আমাদের ফাইলে তার ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই। এযাবত আমরা যত জনকে খুঁজে পেয়েছি তাদের কারো বয়স বেশি, কেউ বেঁচে নেই আবার কেউবা অনেক আগেই প্যারিস ছেড়ে চলে গিয়েছে। আমরা এখনো এটা নিয়ে কাজ করছি, তবে আমি খুব একটা আশাবাদী না।”

    “আচ্ছা, ঠিক আছে,” বলল ক্যামিল।

    “লুইস, ক্যুবেড়ুয়ার দুই নারী আর ট্রেম্বলের ওই মেয়ের মাঝে কোন না কোন যোগসূত্র আছে। যেভাবেই হোক তুমি এটা খুঁজে বের করো। হয়তোবা কোথাও তারা মিলিত হয়েছে, অন্য কোনো সম্পর্কও থাকতে পারে। তুমি কি বুঝতে পেরেছো আমি কী বলতে চাইছি…?”

    “হ্যাঁ, আমি দেখছি বিষয়টা।”

    “তাহলে কাল দেখা হচ্ছে,” বলল ক্যামিল।

    হাতে থাকা নোটপ্যাড রেখে তিনজন বের হয়ে গেলো।

    কিছুক্ষণ পর লুইস ফিরে এলো। একগাদা বই তার হাতে যা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে কাজ করছে।

    “দুঃখজনক, তাই না?” হতাশা জড়ানো কণ্ঠে বলল ক্যামিল।

    “হ্যাঁ, খুবই হতাশাজনক। থিয়োরিটা এতো অসাধারণ ছিলো…”

    বের হয়ে যাবার পথে ঘুরে দাঁড়ালো লুইস।

    “হয়তো আমরা যে কেসগুলো নিয়ে কাজ করি তা গল্প উপন্যাসের মত এতো গোছানো ভাবে হয় না।”

    “হয়তো তাই,” কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলো ক্যামিল।

    অধ্যায় ৪১

    বৃহস্পতিবার, ১০ই এপ্রিল

    “জাজ দেশম এটা মোটেও পছন্দ করবে না, ক্যামিল।”

    শিল্পবে অনুকরণ করে অপরাধ
    ট্রেম্বলে থেকে ক্যুবেভুয়া

    জাজ দেশম, যিনি বর্তমানে ক্যুবেভুয়ার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে তদন্তকারী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োজিত। সম্প্রতি তিনি বলেছেন অপরাধস্থলে পাওয়া নকল আঙুলের ছাপের সাথে আরেক কেসের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। ম্যানুয়েলা কন্সটাজা নামে চব্বিশ বছর বয়সি এক পতিতাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিলো, যার দ্বিখণ্ডিত শরীর পাওয়া যায় একটা ময়লার স্তূপে। কমান্ড্যান্ট ভেরহোভেন ধারণা করছেন এটা কোনো সিরিয়াল কিলারের কাজ। আপাতদৃষ্টিতে এই তথ্য তদন্তে আরো গতিশীলতা আনার কথা থাকলেও হয়েছে তার উল্টো। পুরো বিষয়টা আরো জট পাকিয়ে গিয়েছে। খুনির হত্যা করার ধরণ একদম ভিন্ন। সাধারণত সিরিয়াল কিলাররা একই কায়দায় খুন করে থাকে। কিন্তু এই দুই কেসে কোনো মিল নেই। আদতে দুটি হত্যাকাণ্ডের মাঝে এতোটাই অমিল যে নকল আঙুলের ছাপের মিল খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারটা নিয়েও সন্দেহ জাগে।

    হয়তোবা অন্য কোনো ব্যাখ্যা থাকতে পারে কম্যান্ড্যান্ট ভেরহেভেনের কাছে, কেননা থিয়োরিটা তারই দেয়া। জেমস এরয়ের উপন্যাসের সাথে ট্রেম্বলে হত্যাকাণ্ডের মিল খুঁজে পেয়েছেন উনি। উপন্যাসে…

    পত্রিকাটা ছুঁড়ে মারলো ক্যামিল।

    “বালের খবর!!!”

    খবরের শেষ অংশ পড়ার জন্য আবারো পত্রিকাটা হাতে নিলো।

    তবে এতোটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায় উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া ভেরহেভেনের এই থিয়োরি জাজ দেশমের কাছে কোন পাত্তা পাবে না। এই মুহূর্তে এইসব আজগুবি জিনিসের পেছনে না ছুটে ভাল সূত্র ধরে এগুনো উচিত বলে আমি মনে করি।

    অধ্যায় ৪২

    “এই সাংবাদিক তো একটা বিষফোঁড়া।”

    “হয়তো, কিন্তু এই বিষফোঁড়ার হাতে অনেক তথ্যই আছে।”

    চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে লা গুয়েন। “তোমার কী মনে হয়?”

    “আমি জানি না। কিন্তু এসব আমার পছন্দ না।”

    “দেশমও খুশি না। সকালেই তার সাথে কথা হয়েছে,” জানালো লা গুয়েন।

    আরো কিছু জানার আগ্রহ দেখা গেলো ক্যামিলের মাঝে।

    “সে এমনিতে বেশ ধীরস্থির। কেননা এমন পরিস্থিতি আগেও মোকাবেলা করতে হয়েছে তাকে। সে এটাও জানে দোষটা তোমার না। কিন্তু তুমি তো জানো এই ধরণের খবর বাতাসের আগে ছড়ায়।”

    ক্যামিল এটা বেশ ভালোমতোই জানে। কারণ, এখানে আসার পূর্বে নিজের অফিসে গিয়েছিলো। ছয়টা পত্রিকা, কয়েকটা রেডিও স্টেশন, তিনটা টিভি এর প্রতিনিধি এসে বসে আছে। সবাই আজকের পত্রিকায় উল্লেখিত

    তথ্য যাচাইয়ের জন্য তার সাথে দেখা করতে চায়।

    “এদিকে চলে এসো,” লুইসকে উদ্দেশ্য করে বলল ক্যামিল।

    কিছুক্ষণের মাঝেই ম্যালেভাল আর আরম্যান্স এসে উপস্থিত হলো।

    পত্রিকার চার নম্বর পৃষ্ঠা খুললো ক্যামিল।

    “আমরা এমন একজন সাংবাদিকের পাল্লায় পড়েছি যার কাছে বেশ ভাল রকমের তথ্য আছে। আমাদের কাজ আরো কঠিন করে তুলবে।”

    ম্যালেভাল এখনো খবরটা পড়েনি। তবে ক্যামিল নিশ্চিত আরম্যান্ড ইতিমধ্যে তা পড়ে ফেলেছে। কেননা আরম্যাণ্ডের রুটিন জানা আছে তার প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে আধঘণ্টা আগে বের হয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে গিয়ে বসে থাকে সে। যখনই কোন যাত্রী পত্রিকা ছুঁড়ে ফেলে সাথে সাথে সেখানে উপস্থিত হয়। তবে সব পত্রিকা সে পড়ে না, শুধুমাত্র লা মাটিন, তাও ক্রসওয়ার্ড মেলানোর জন্য।

    “এই কেসের সাথে এখন অনেকগুলো মানুষ জড়িত; ফরেনসিক টিম, ল্যাবের কাজে কর্মরত কয়েকজন, জাজের সহকারী…তথ্য যে কোন জায়গা থেকে ফাঁস হতে পারে। কিন্তু, তোমরা সবাই একটু সতর্ক থাকবে। আমি কি বোঝাতে পারছি ব্যাপারটা?”

    কেউ কোন জবাব দিলো না।

    “যত ঝামেলাই হোক নিজেদের মুখ বন্ধ রাখবে, এতোটুকু সাহায্য চাই আমি।”

    সবাই মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

    “ল্যাম্বার্টের কোন খবর পাওয়া গিয়েছে?” একটু নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলো ক্যামিল।

    “তেমন অগ্রগতি হয়নি। খুব সতর্কতার সাথে আমরা আশেপাশে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, যাতে করে তার আত্মীয়স্বজন কেউ টের না পায়। যতটুকু জানতে পেরেছি সে অনেক আগেই শহর ছেড়ে পালিয়েছে, কিন্তু কোথায় গেছে তা এখনো অজানা।”

    মনে মনে কিছু একটা চিন্তা করলো ক্যামিল।

    “আগামী কয়েকদিনের মাঝে যদি এই পদ্ধতিতে কাজ না হয়, তাহলে তার পরিচিত সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। ম্যালেভাল তুমি লিস্ট করা শুরু করো।”

    অধ্যায় ৪৩

    এরয়ের বইয়ের স্তূপের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ক্যামিল। এছাড়াও তার আঁকা অসংখ্য স্কেচ টেবিলের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, কেননা এগুলো তাকে ভাবতে সাহায্য করে। একটা কাগজে লিখলো :

    ট্রেম্বলে-ব্ল্যাক ডালিয়া-এলরয়

    লেখাটার দিকে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করলো সে, কিন্তু তার চোখ পাশে পড়ে থাকা অন্য একটা বইয়ের উপর পড়লো। থিমস অ্যান্ড টুপস ইন ক্রাইম ফিকশন বইটা উল্টিয়ে পেছনে থাকা লেখা পড়তে শুরু করলো।

    শুরুর দিকে গোয়েন্দা উপন্যাসগুলোকে মূল ধারার সাহিত্যের অংশ মনে করা হতো না। মূল ধারার সাহিত্যের পাশে বসার আগে এক শতাব্দী অপেক্ষা করতে হয়েছে এই জনরার। লেখক, সম্পাদক, সমালোচক কেউই এই জনরাকে সাদরে গ্রহণ করেনি, তার অন্যতম কারণ ছিলো এর বিষয়বস্তু–অপরাধ। কিন্তু সাহিত্যে সেই শুরু থেকেই ভালোবাসা আর অপরাধ একে অপরের সাথে মিশে আছে।

    দোকানে যখন ক্যামিল বইটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলো তখন বিক্রেতা বলেছিলো, “বইটা অসাধারণ। ব্যালাঞ্জার লোকটা খুব বুদ্ধিমান এবং এই বিষয়ে তার মতো দক্ষ কাউকে খুঁজে পাওয়া দুস্কর। দুঃখের বিষয় তিনি আর কিছুই লিখেননি।”

    জানালার পাশে বসে বেশ কিছুক্ষণ বাইরে তাকিয়ে রইলো ক্যামিল। হুট করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে টেলিফোনটা তুলে নিলো।

    অধ্যায় ৪৪

    বাইরে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টা দেখতে অনেকটা হাসপাতালের মত লাগে, যেখানে কেউই চিকিৎসা নিতে আগ্রহী হবে না। আধুনিক সাহিত্য বিভাগটা যেন এক গোলকধাঁধার মাঝে পড়েছে, খুঁজে পেতে কিছুটা কষ্ট হলো ক্যামিলের।

    হুট করে নোটিশবোর্ডের নিচে থাকা একটা লেখায় তার চোখ পড়লো :

    ‘গোয়েন্দা উপন্যাস : ভিন্ন ধারার সাহিত্য
    কোর্স পরিচালনা করবেন ফ্যাবিয়েন ব্যালাঞ্জার।’

    প্রায় আধা ঘণ্টা সময় লাগলো ক্লাসরুম খুঁজে বের করতে, কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের বিরক্ত করতে চাইলো না সে। আরো আধা ঘণ্টা সময় পার হলো ক্যান্টিন খুঁজে বেরতে। যথাসময়ে ক্লাসরুমে উপস্থিত হয়ে এক কোণায় গিয়ে বসলো। ছাত্রছাত্রীরা উচ্চস্বরে কথা বলার কারণে চিৎকার করা ছাড়া কোন উপায় ছিলো না তার।

    “কমান্ড্যান্ট ভেরহোভেন। আমি সকালে ফোন করেছিলাম।”

    “ক্রিমিনাল ব্রিগেডের কমান্ড্যান্ট ভেরহোভেন?”

    ব্যালাঞ্জার সামনের দিকে তাকালো যেন কাউকে খুঁজছে।

    “আমার হাতে খুব বেশি সময় নেই, নিচুস্বরে বলল সে।

    “তিনজন নারীর হত্যা রহস্য নিয়ে কাজ করছি আমি। যাদের সবাইকে নশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। যদি একটু সময় দেন।”

    আবারো তার দিকে তাকালো ব্যালাঞ্জার।

    “আমি বুঝতে পারছি না এই বিষয়ে আপনাকে কীভাবে সাহায্য…

    “পুরো বিষয়টা ব্যাখ্যা করার জন্য আমাকে কয়েকটা মিনিট সময় দিন।”

    মেকি হাসি দেখেই বোঝা গেলো বেশ বিরক্ত সে।

    “যাই হোক, আমাকে দশ মিনিট সময় দিন।”

    কিছুক্ষণ পর করিডোরে অপেক্ষারত ক্যামিলের পাশে এসে দাঁড়ালো  ব্যালাঞ্জার।

    “বড়জোড় পনেরো মিনিট সময় দিতে পারবো আপনাকে,” এই বলে নিজের রুমের দিকে এগিলে গেলো। রুমের সামনে এসে পকেট থেকে চাবি বের করে তিনটা তালা খুললো। ক্যামিলকে অবাক হতে দেখে বলল, “গত বছর দুইবার আমার কম্পিউটার চুরি হয়েছে।”

    ক্যামিলকে চেয়ারে বসার ইঙ্গিত দিলো সে।

    “বেশ কিছুদিন আগে ক্যুবেভুয়ার একটা অ্যাপার্টমেন্টে দুই তরুণীর লাশ পাওয়া যায়। এগুনোর মত কোন সূত্রই নেই আমাদের হাতে। শুধু এতোটুকু জানি তাদের উপর শারীরিক এবং যৌন অত্যাচার করা হয়েছিলো।”

    “হ্যাঁ, আমিও কিছুটা শুনেছি এই কেসের ব্যাপারে।”

    “এর সাথে আমরা আরেকটা কেসের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছি। আরেক তরুণীর দ্বিখণ্ডিত লাশ ময়লার স্তূপে পাওয়া গিয়েছিলো। কিছু মনে পড়ে?”

    “মনে পড়ার কথা নাকি?” চিন্তায় পড়ে গিয়েছে ব্যালাঞ্জার।

    “না। না। চিন্তার কিছু নেই। আমি আপনার কাছ থেকে সাহায্য নিতে এসেছি, সন্দেহভাজন হিসেবে জেরা করতে নয়।”

    “২০০১ সালের নভেম্বর মাসে ট্রেম্বলেতে ঘটা ওই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছু জানেন নাকি?”

    “আমি পত্রিকা খুব কম পড়ি।”

    তার চোখেমুখে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

    “আমি আসলে এখনো বুঝতে পারছি না এইসব খুনের সাথে আমার কী সম্পর্ক..”

    “কিছুই না, প্রফেসর ব্যালাঞ্জার। চিন্তার কিছু নেই। আমি আপনার কাছে এসেছি কারণ আমার মনে হয় কোনো না কোনো ভাবে খুনগুলো এক অপরের সাথে সম্পর্কিত। যদিও এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ধারণা।”

    “কীভাবে?”

    “আমিও সঠিক জানি না। তবে ট্রেম্বলের হত্যাকাণ্ড জেমস এলয়ের ‘দ্য ব্ল্যাক ডালিয়া থেকে অনুপ্রাণিত।

    “আরে, তাই তো!!!”

    “ওই বইটা পড়েছেন আপনি?”

    “অবশ্যই। কিন্তু আপনার এটা কেন মনে হচ্ছে যে-”

    “তদন্তের স্বার্থে এখন বিস্তারিত কিছু বলতে পারবো না। আমাদের মতে খুনগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, একটা আরেকটার সাথে জড়িত। যেহেতু প্রথম খুনটা এলরয়ের বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে করা হয়েছে, তাই ভাবছিলাম বাকিগুলোও…”

    “…এরয়ের অন্যান্য বইয়ের অনুসরণে করা হয়েছে কিনা?”

    “না। এটা আমরা চেক করেছি এবং তা নিশ্চিত। হয়তো অন্য কোনো বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বাকিগুলো করা হয়েছে।”

    “তার মানে আপনি আমাকে…”

    “স্পষ্ট করেই বলি, ক্রাইম ফিকশন নিয়ে আমি খুব বেশি কিছু জানি না। তেমন একটা পড়াও হয়নি আমার। তাই ভাবলাম এই বিষয়ে সাহায্য করার মত কেউ থাকলে আপনিই আছেন।”

    “আমিই কেন?”

    “এই বিষয়ে আপনার একটা বই আছে।”

    “ওহ, আচ্ছা। অনেক বছর আগের লেখা। কিছু তথ্য সংশোধন করতে হবে ওই বইয়ের। এই জনরা অনেক এগিয়ে গেছে।”

    “তো, আপনি কি সাহায্য করতে পারবেন?”

    “দেখুন, পারবো না তা তো বলিনি। কিন্তু ক্রাইম ফিকশনের এই জগতটা অনেক বড়। আমি শুধু একটা নির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশিত উপন্যাস নিয়েই কাজ করেছি। আমার সিলেবাসে এলরয় বিষয়ক তেমন কিছুই ছিলো না। এটা ঠিক যে আমি তার কিছু কাজ পড়েছি, কিন্তু নিজেকে বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করতে পারবো না।”

    ক্যামিল বিরক্তবোধ করলো এমন কথায়।

    “তার মানে আপনি কী বলতে চাইছেন?”

    “আমি বলতে চাইছি আপনার কেসগুলো যদি আমার জ্ঞান সীমার মাঝে পড়ে তাহলে আমি অবশ্যই সাহায্য করতে পারবো। কিন্তু এটা অনেকটা খড়ের গাদায় সুই খোঁজার মতই হবে।”

    পকেট থেকে কিছু কাগজ বের করে ব্যালাঞ্জারের টেবিলের উপর রাখলো ক্যামিল।

    “এখানে কেসের ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য লেখা আছে। সময় করে একবার দেখে নিবেন।”

    এরইমাঝে ক্যামিলের ফোন বেজে উঠলো।

    “কিছু মনে করবেন না, ফোনটা ধরতে হবে।”

    লুইস ফোন করেছিলো। তাড়াহুড়ো করে নোটপ্যাড বের করে খসখস শব্দে কিছু লিখলো যা বোঝার ক্ষমতা একমাত্র তারই আছে।

    “ঠিক আছে, তুমি চলে আসো। ওখানে দেখা হবে আমাদের,” বলল সে।

    “আমি দুঃখিত প্রফেসর ব্যালাঞ্জার, আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করলাম…” এই বলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো ক্যামিল।

    “ওহ? তার মানে আপনার থিয়োরি কি ভুল নাকি?”

    ঘুরে দাঁড়ালো সে।

    “খুব শিগগিরই আপনাকে আবার প্রয়োজন হতে পারে।”

    অধ্যায় ৪৫

    ফ্লুরোসেন্ট বাতির ঝলমলে আলোয় সজ্জিত বইয়ের দোকানের কোন ছাপই নেই পুরনো ধাচের এই দোকানে। তবে ভেতরে বাইরে প্রতিটি জায়গায় শিল্পীর নিপুণ হাতের ছোঁয়া সুস্পষ্ট। পুরো রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা, সময়টা যেন থমকে আছে এখানে। দরজা দিয়ে ঢুকে হাতের ডান পাশেই ম্যাগাজিন ভর্তি তাক। পরিবেশটা এমন যেন পৃথিবীর বাইরের কোনো এক নতুন বিশ্ব।

    ক্যামিল আর লুইস দরজার সামনে দাঁড়ানোর সাথে সাথেই লম্বা মতন এক লোক হাজির হলো। পরণে গাঢ় নীল ট্রাউজার আর তার সাথে একটা কার্ডিগান। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সি লোকটার মুখে কোনো হাসি নেই। গভীর আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল, “এটা আমার সম্পদ। আমি এখানকার মালিক থেকে শুরু করে যাবতীয় সব কিছু। বলুন আপনাদের কী উপকারে আসতে পারি?”

    “কম্যান্ড্যান্ট ভেরহোভেন।”

    “আচ্ছা, বলুন…”

    সামনের তাক থেকে একটা বই নিয়ে ক্যামিলের হাতে তুলে দিলো সে।

    “গতকাললেই আমি পত্রিকায় খবরটা পড়ি। এই ব্যপারে আমার কোন সন্দেহ নেই যে…”

    একটা পেপারব্যাক বই। এরইমাঝে হলুদ রঙের একটা বুকমার্ক দিয়ে কিছু অংশ চিহ্নিত করা। প্রচ্ছদের দিকে খেয়াল করলো ক্যামিল–

    খাটো একজন মানুষ যার পরণে গাঢ় লাল রঙের একটা টাই, মাথায় হ্যাট, গ্লোভস পড়া হাতে একটা ছুরি ধরে আছে।

    চশমাটা বের করে টাইটেল পেজ পড়া শুরু করলো সে।

    বেট এস্টন এলিস
    আমেরিকান সাইকো

    পরের পাতায় গেলো সে।

    সত্ব: ১৯৯১

    অনুবাদ : ১৯৯২

    মাইকেল ব্র্যাডোর লেখা ভূমিকা :

    ১৯৬৪ সালে ব্রেট এস্টন এলিসের জন্ম লস এঞ্জেলসে। তার ম্যানেজার এক প্রকাশকের কাছ থেকে তিন লাখ ডলার অগ্রিম নেয় নিউ ইয়র্কের এক সিরিয়াল কিলারের উপর উপন্যাস লেখার জন্য। কিন্তু পাণ্ডুলিপি হাতে পাওয়ার পর প্রকাশক বই প্রকাশে অসম্মতি জানায় এবং অগ্রিম দেয়া টাকা ফেরত চেয়ে পাঠায়। বইয়ের কিছু উদ্বতি প্রকাশ পেলে সাধারণ মানুষ আর নারীবাদীরা তার উপর চটে যায়। একের পর এর হুমকি পেতে থাকে সে। একসময় বাধ্য হয়ে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নিতে হয় তার। এতো কিছুর পরেও খোদ আমেরিকাতেই হাজার হাজার কপি বিক্রি হয়েছির বইটা।

    বসের উপর দিয়ে কোন কিছু করে না লুইস। নিজের মত করে দোকানে ঘুরতে থাকলো সে। এদিকে ক্যামিল নিজের ভেতর অন্যরকম এক উত্তেজনা অনুভব করে।

    বুকমার্ক দ্বারা চিহ্নিত অংশটুকু গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ছে আর মাথা দোলাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর নিচুস্বরে বলল, “এটা কোনভাবেই সম্ভব না…”

    ক্যামিলের এমন অভিব্যক্তি দেখে লুইসের যেন আর তর সইছিলো। ক্যামিল বইটা একটু কাত করলো যেন তার সহকারীও পড়তে পারে।

    মাঝরাতে দুই তরুণীর সাথে আমার কথা হয়। দুজনেই স্বর্ণকেশী আর বড় স্তনের অধিকারিণী।

    “আমি এখানে ক্রস চিহ্ন দিয়ে রেখেছি। আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিলো এই দুটি লাইন,” পেছন থেকে বলল ওই বিক্রেতা।

    এসব কোন কথাই ক্যামিলের কানে গেলো না। পড়া চালিয়ে গেলো সে

    …কোন কিছুই আমাকে আগের মত উত্তেজিত করে তুলতে পারছে না […]

    টরি ঘুম থেকে জেগে নিজেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় আবিষ্কার করলো, মুখ জুড়ে রক্ত কেননা আমি নেইল কাটার দিয়ে তার ঠোঁট কেটে দিয়েছি। আরেকপাশে টিফানিকেও বেঁধে রাখা হয়েছে, নিজের অবস্থা দেখে যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে সে। আমি চাই টরির সাথে যা করবো তা সে দেখুক। অবশ্য সে চাইলেও না দেখে থাকতে পারবে না, সেই ব্যবস্থাও আমি করে রেখেছি। মৃত্যুর সময় এরা কেমন ভাবে ছটফট করে তা দেখার জন্য ভিডিওর ব্যবস্থা করা আছে।

    “হায় ঈশ্বর…” স্বগতোক্তি করলো ক্যামিল। একের পর এক লাইন পড়ে যেতে লাগলো। আস্তে আস্তে পরে পুরো বিষয়টা কল্পনা করার চেষ্টা করলো। কিন্তু মস্তিষ্ক আজকে তার সাথে বেইমানি করছে। আবারো বইয়ে ডুবে গেলো সেঃ।

    এরপর শুরু করলাম আমার পছন্দের কাজ। টরির মুখ থেকে টুকরো টুকরো করে মাংস উঠিয়ে নিচ্ছি আর…

    লুইসের দিকে তাকিয়ে তার মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করলো ক্যামিল।

    “এটা কী মানুষের লেখা বই…” চিন্তামগ্ন লুইস এমনটাই বলল।

    “লেখক কি আদৌও সুস্থ স্বাভাবিক কোনো মানুষ ছিলো?” জিজ্ঞেস করলো ক্যামিল।

    লাশের পেটে হাত ঢুকিয়ে দিলাম আমি। হাত জুড়ে লেগে আছে টকটকে লাল রক্ত। লিভিং রুমের দেয়ালে লিখলাম ‘আই অ্যাম ব্যাক…’

    অধ্যায় ৪৬

    “তোমাকে শুধু একটা কথাই বলবো, অসাধারণ কাজ করেছে।”

    “থাক, আর তেল মারতে হবে না…”

    “আমি তা করছি না, ক্যামিল। সত্যি বলতে তোমার থিয়োরির উপর খুব একটা ভরসা পাচ্ছিলাম না। কিন্তু আমি আমার ভুল স্বীকার করছি। তবে আমাকে একটা জিনিস বলল…”

    “বলুন,” মেইল চেক করতে করতে বলল ক্যামিল।

    “তুমি আবার জাজ দেশমের অনুমতি ছাড়া ইউরোপিয়ান ডাটাবেজের সাথে যোগাযোগ করোনি তো?”

    “এই ব্যাপারটা আমি দেখবো কী করা যায়…”

    “ক্যামিল,” লা গুয়েন চিৎকার করে উঠলো, “তোমার কী মনে হয় না এমনিতেই আমরা অনেক ঝামেলার মাঝে আছি? কিছুক্ষণ আগেই তার সাথে আমার কথা হয়েছে। রাগে সে রীতিমত ফুঁসছে। প্রথমদিন টেলিভিশনে তোমার দেয়া ওই সাক্ষাৎকার আর আজকে এই ঘটনা। মনে হচ্ছে এসব তুমি ইচ্ছা করে করছে। আমি দুঃখিত ক্যামিল, এরচেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব নয়।”

    “এই ব্যাপারে উনার সাথে আমি কথা বলব। একটা না একটা উপায় তো বের করেই ফেলবো।”

    “কথা শুনে মনে হচ্ছিলো তোমার কাজের পরিধি আরেকটু কমিয়ে দেয়া হবে। তাছাড়া তোমার এসব কাজের জন্য উনি আমাকে দোষী মনে করেন। কাল সকালে জরুরি মিটিং ডেকেছে

    ক্যামিলের কাছ থেকে জবাব না পেয়ে সে আবারো জিজ্ঞেস করলো;

    “তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো? তুমি আসছো তো?”

    “তোমার ফ্যাক্স আমি পেয়েছি, কম্যান্ড্যান্ট ভেরহোভেন।”

    জাজ দেশমের চাঁচাছোলা আর কর্কশ কণ্ঠস্বর শুনে সতর্ক হয়ে উঠলো। ক্যামিল। অন্যসময় হলে হয়তো এতোক্ষণে কাঁচুমাচু হয়ে যেত। কিন্তু এবার, একটু দূরে থাকা প্রিন্টারের দিকে এগিয়ে গেলো সদ্য প্রিন্ট হওয়া কাগজটা তুলে নিতে।

    “তোমার পাঠানো উপন্যাসের কিছু অংশ আমি পড়েছি। মনে হচ্ছে তোমার থিয়োরিই ঠিক আছে। তুমি তো জানোই পোঁকিয়ের সাথে দেখা করতে হবে আমার। সত্যি বলতে আরও কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে উনার সাথে।

    “হ্যাঁ, আমি জানি, ডিভিশনাঁর একটু আগেই ফোন করেছিলো আমাকে। শুনুন ম্যাডাম লে খুঁজে-”

    “ম্যাডাম লা অঁজে,” শুধরে দিলো দেশম।

    “মাফ করবেন।”

    “তোমার তো স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধির অভাব আছে। কিছুক্ষণ আগেই আমি খবর পেয়েছি তুমি আমার ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইউরোপিয়ান ডাটাবেজের কাছে তথ্য অনুসন্ধানের অনুরোধ করেছো। তুমি যা করেছে তা সম্পূর্ণ-–”

    “বিচারবুদ্ধিবিহীন সিদ্ধান্ত?”

    “এটা গুরুতর অসদাচরণ, কম্যান্ড্যান্ট। আমি এটা কোনভাবেই সহ্য করবো না।”

    “আমি দেখছি বিষয়টা, ম্যাডাম লা জুঁজে।”

    “তুমি বোধহয় বুঝতে পারছে না, কম্যান্ড্যান্ট, এই ক্ষমতা শুধু আমারই! তুমি ভুলে গেছো তোমাকে অনুমতি দেবার ক্ষমতা একমাত্র আমার।”

    “আমি ভুলিনি। কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে যদিও আইনের চোখে আমাকে ভুল মনে হচ্ছে, কিন্তু সময়ের দাবি পূরণে আমাকে এমনটা করতে হয়েছে। সত্যি বলতে, যত দ্রুত সম্ভব আমার আবেদন অনুমোদন করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।”

    অন্য পাশে ভয় জাগানিয়া নীরবতা নেমে এলো।

    “কম্যান্ড্যান্ট ভেরহোভেন, আমার মনে হয় পোঁকিয়ের সাথে কথা বলে তোমাকে এই কেস থেকে সরিয়ে দিতে হবে।”

    “আপনি চাইলেই এই কাজ করতে পারেন। এই ক্ষমতা আপনার আছে। কিন্তু তার সাথে কখন কথা বলবেন?” হাতে থাকা পত্রিকা পড়তে পড়তে বলল ক্যামিল, “তাকে কি আরেকটা জিনিস বলতে পারবেন যে এরই মাঝে আমরা আরেকটা কেসে জড়িয়ে গেছি?”

    “মানে?”

    “আপনার অনুমতিতে ইউরোপিয়ান তদন্ত চলার সময়, ওখানকার একজন গোয়েন্দা আমার সাথে যোগাযোগ করেছে…” ইমেইল থেকে নামটা খুঁজে বের করতে কিছুটা সময় নিলো ক্যামিল। “…টিমোথি গ্যালাহার, গ্লাসগো সি.আই.ডির গোয়েন্দা। ২০০১ সালের জুলাই মাসে এক তরুণী খুন হয় যার হত্যা রহস্য এখনো অমীমাংসিত। তার শরীরেও নকল আঙুলের ছাপ পাওয়া যায় যা আমাদের কেসের সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। যাকেই এই কৈসের দায়িত্ব দিবেন তাকে বলবেন খুব শিগগিরই যাতে ওই গোয়েন্দার সাথে যোগাযোগ করে।”

    এই বলে সামনে রাখা লিস্টের দিকে মনোযোগ দিলো সে; ট্রেম্বলে–ব্ল্যাক ডালিয়া=এলরয়, ক্যুবেভুয়া=আমেরিকান সাইকো=এলিস। এরসাথে নতুন করে যোগ করলো : গ্লাসগো=? =??

    অধ্যায় ৪৭

    গোয়েন্দা অফিসার অনুপস্থিত থাকায় লুইসের ফোন তার জুনিয়র অফিসার মলেটের কাছে পাঠানো হয়, যার কথার ধাঁচে খাঁটি স্কটিশ ভাষার ছোঁয়া বিদ্যমান। তার কাছ থেকে লুইস জানতে পারলো স্কটল্যাণ্ড সম্প্রতি পি.জে.সি (দ্য পুলিশ অ্যান্ড জুডিশিয়াল কো-অপারেশন)’তে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একারণেই তারা ট্রেম্বলে কেসের ওই নকল আঙুলের ছাপ সম্পর্কে অবগত ছিলো না।

    “তাকে জিজ্ঞেস করো সম্প্রতি আর কোন কোন দেশ এতে যোগ দিয়েছে।”

    “গ্রিস আর পর্তুগাল, অন্যপাশ থেকে জবাব এলো।

    ক্যামিল এই দুটি দেশের পুলিশ ফোর্সের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ব্যবস্থা নেয়। তার নির্দেশনা মতে, লুইস মলেটকে জিজ্ঞেস করলো গ্লাসগো কেস ফাইলের কোন কপি আছে কিনা আর যত দ্রুত সম্ভব ইন্সপেক্টর গ্যালাহার যেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে।

    “গ্যালাহার ফ্রেঞ্চ জানে কিনা তাও জিজ্ঞেস করো।”

    “রিসিভারে হাত রেখে মুচকি হেসে লুইস জানালো, “আপনার ভাগ্য ভালো, উনার মা ফ্রেঞ্চ।”

    ফোন রাখার আগে আরো কিছুক্ষণ কথা বলল লুইস। ফোন রাখার সাথে সাথে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো সে। ক্যামিল তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

    “রেডপ্যাথ ইনজুরি থেকে সেরে উঠেছে কিনা তাই জিজ্ঞেস করছিলাম, ব্যাখ্যা করলো লুইস।

    “রেডপ্যাথ?”

    “স্কটিশ রাগবি খেলোয়াড়। কয়েক সপ্তাহ আগে অ্যায়ারল্যান্ডের সাথে ম্যাচের সময় আঘাত পায়। শনিবার যদি সে খেলতে না পারে তাহলে ওয়েলস এর জেতার কোন সাইট্যান্ডের।”

    “তারপর?”

    “সে খেলার জন্য প্রস্তুত।” সন্তোষজনক হাসি দিয়ে বলল লুইস।

    “তুমি রাগবি পছন্দ করো নাকি?”

    “খুব বেশি না। কিন্তু যেহেতু স্কটিশদের সাথে কিছুদিন চলতেই হবে, তাই একটু খাতির রাখতে দোষ কী।”

    অধ্যায় ৪৮

    সাড়ে সাতটার দিকে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো ক্যামিল। কিছুটা চিন্তিত। তার বাসার আশেপাশে অল্প সংখ্যক বাড়ি থাকায় চারপাশ খুবই নীরব। বাবার উপদেশের কথা মনে পড়লো। বাসাটা পরিবর্তন করা দরকার। তার ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো লুইস।

    “ফুলের কথা ভুলবেন না…” বলল লুইস।

    “ধন্যবাদ, লুইস, তোমার কোনো তুলনা হয় না।”

    ক্যামিলের জীবন এখন এমন এক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে নিজের স্ত্রীকে নিয়ে ভাবার কথাও তার সহকারী বলার আগে মনে পড়ে না। ফুলের দোকান পার করে চলে আসায় নিজের উপর বিরক্তবোধ করলো। আবার দোকানে যাওয়ার জন্য ঘুরতেই তার মাথা গিয়ে এক লোকের পেটে ধাক্কা খেলো।

    “আমি দুঃখিত…”

    “চিন্তার কিছু নেই, কম্যান্ড্যান্ট, আমার কিছুই হয়নি।”

    তাকানোর আগেই কণ্ঠস্বর শুনে সামনে থাকা মানুষকে চিনতে পারলো সে।

    “তো এখন আমাকে অনুসরণ করাও শুরু করেছো?” দাঁত কামড়াতে কামড়াতে বলল ক্যামিল।

    “আমি আপনার সাথে তাল মেলানোর চেষ্টা করছিলাম।”

    ক্যামিল কোনো কথা না বলে চুপচাপ হাঁটতে থাকলো। বুসন তার সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

    “একই কাজ বারবার করতে তোমার বিরক্ত লাগে না?” হুট করে থেমে গিয়ে বলল ক্যামিল।

    “একটু ড্রিঙ্ক করার সময় হবে নাকি?” পাশে থাকা এক বারের দিকে ইঙ্গিত করলো বুসন।

    “তোমার থাকতে পারে, কিন্তু আমার নেই।”

    “আরেকটা কথা বলার আছে। শুনুন, কম্যান্ড্যান্ট, ওই আর্টিকেলের  জন্য আমি দুঃখিত।”

    “কোনটার কথা বলছেন, প্রথমটা নাকি দ্বিতীয়টা?”

    “প্রথমটা…দ্বিতীয়টায় তো ভুল কিছু লিখিনি, বেশ তথ্যবহুল ছিলো ওই লেখাটা।”

    “ঠিক তাই, মঁসিয়ে বুসন, আপনি বেশ ভালই তথ্য পাচ্ছেন আজকাল।”

    “এটাই যদি না করতে পারি তাহলে আমি কিসের সাংবাদিক? এর জন্য আপনি আমার সমালোচনা করতে পারেন না। কিন্তু আপনার বাবার জন্য আমার খারাপ লাগছে।”

    “এর জন্য নিশ্চয়ই আপনার রাতের ঘুম হারাম হয়নি। সহজ শিকারের দিকেই আপনি ছুটেছেন। আশা করি নিজের পত্রিকার একটা কপিও দিয়ে এসেছিলেন তাকে।”

    “বাদ দিন না, কম্যান্ড্যান্ট, চলুন দুজনে মিলে কফি খাই। পাঁচ মিনিটের বেশি সময় নিবো না।”

    “আপনি আসলে কী চাইছেন, মঁসিয়ে বুসন?”

    “আপনি কি আসলেই নিজের থিয়োরি পুরোপুরি বিশ্বাস করেন?”

    “সত্যি বলতে, না। এটা কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে, এর বেশি কিছু না। একটা সম্ভাব্য সূত্র হতে পারে এটা, এই তো।”

    “তারমানে আপনি বিশ্বাস করেন!”

    “আমি আপনার মতো এতোটাও অন্ধবিশ্বাস করি না।”

    “আর কোনো প্রমাণ কি পেয়েছেন?”

    “যদি খুঁজেও পেতাম, আপনার কী মনে হয় আপনাকে ভরসা করে বলতাম?”

    “ক্যুবেভুয়া হত্যাকাণ্ড তো আমেরিকান সাইকো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে করা হয়েছে, এটাও কি আরেকটা কাকতালীয় ঘটনা নাকি?”

    কথাটা শোনার সাথে সাথে ক্যামিল যেন জমে গেলো।

    “আমি আপনার সাথে একটা সমঝোতায় আসতে চাই,” বলল বুসন।

    “আমি বাধ্য না।”

    “আমি এই তথ্যটুকু আগামী কয়েকদিন নিজের মাঝেই রাখবো যাতে করে আপনার তদন্তে কোন ব্যাঘাত না ঘটে।”

    “এর পরিবর্তে কী চান?”

    “যখনই নতুন কিছু ঘটবে আপনি আমাকে জানাবেন। কয়েক ঘণ্টা পরে জানালেও সমস্যা নেই।”

    “আর যদি আমি তা না করি?”

    “ওহ, কমান্ড্যান্ট, আপনি চাইলেই আমরা একটা সমঝোতায় আসতে পারি যাতে উভয়েই লাভবান হবো।”

    ক্যামিল তার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসলো। “ভাল থাকবেন, মঁসিয়ে বুসন।”

    আগামীকাল সকাল খুব বাজেভাবে শুরু হবে তার আভাস এখনি পাওয়া যাচ্ছে।

    “ধুর বাল,” অ্যাপার্টমেন্টের দরজা খোলার সময় তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো শব্দগুলো।

    “কী হয়েছে ডার্লিং?” শোয়ার ঘর থেকে জিজ্ঞেস করলো আইরিন।

    “কিছু না, এমন সময় ফুলের কথা মনে পড়লো তার।

    অধ্যায় ৪৯

    শুক্রবার, ১১ই এপ্রিল

    “আপনার স্ত্রী কি ফুলগুলো পছন্দ করেছে?” জিজ্ঞেস করলো লুইস।

    “কিসের কথা বলছো তুমি?”

    “ফুল।”

    “তোমার কোন ধারণাই নেই কালকে….”

    ক্যামিলের কণ্ঠস্বর শুনেই লুইস আন্দাজ করলো খারাপ কিছু হয়েছে। তার সাথে, কিন্তু এব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলো না।

    “কাগজগুলো পেয়েছো তুমি?”

    “আমার অফিসেই আছে।”

    “তুমি পড়েছো?”

    ডান হাত দিয়ে সামনে এলিয়ে পড়া চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিলো লুইস।

    “বিশ মিনিটের মাঝে আমাকে দেশমের অফিসে যেতে হবে। সংক্ষেপে বলল আমাকে।”

    “ক্যুবেভুয়ার হত্যাকাণ্ড যে আমেরিকান সাইকো থেকে অনুপ্রাণিত এই কথা সব পত্রিকা হেডলাইন করেছে।”

    “বাস্টার্ড!”

    “কে?”

    “ওহ, এই দুনিয়াটাই তো ওদের দিয়ে ভরপুর, লুইস। কিন্তু লা মাটিনের ওই সাংবাদিক, বুসন, সবার থেকে একধাপ এগিয়ে, গতরাতের ঘটনা খুলে বলল লুইসকে।

    “শুধু নিজে প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হয়নি, সহকর্মীদের মাঝেও ছড়িয়ে দিয়েছে,” বলল লুইস।

    “তুমি কী আশা করো? সব তার ইচ্ছা। আমার জন্য একটা গাড়ি ডেকে দিতে পারবে? সব জায়গাতেই এমন দেরি করাটা ঠিক হবে না।”

    লা গুয়েনের গাড়িতে চড়ে বসলো ক্যামিল। সামনে থাকা পত্রিকাটা হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলো। হেডলাইন দেখে তার মাথা ঘুরে উঠলো।

    “জিসাস ক্রাইস্ট, ঝামেলা আরো বেড়ে গেলো।”

    “এছাড়া তোমার আর কী করার ছিলো,” বলল লা গুয়েন। “আপনার সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ, বস।”

    পত্রিকাগুলো এখনি খুনিকে নতুন নামে ডাকতে শুরু করেছে ‘দ্য নভেলিস্ট।

    “এই নামে খুনিও রোমাঞ্চিত হবে,” চশমার গ্লাস মুছতে মুছতে বলল ক্যামিল।

    “তুমি বেশ ধীরস্থিরভাবে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। পুলিশের প্রটোকল অমান্য করার কারণে তোমাকে সতর্ক করা হয়েছে, যে কোন সময় দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে, কিন্তু তুমি যেন সব হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছো।”

    “আমি আর পারছি না, বস, কোনোভাবেই পারছি না।”

    অধ্যায় ৫০

    দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে আরম্যাণ্ডের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো ক্যামিল। হাতে থাকা পেন্সিল দিয়ে গোল করে কিছু চিহ্নিত করে ক্যামিলের দিকে

    তুলে ধরলো আরম্যান্ড।

    “এটা কী?”

    “ওয়ালপেপার বিক্রি করে এমন দোকানের লিস্ট। বিশেষ করে যারা ডালমেসিয়ান প্রিন্ট নিয়ে কারবার করে।”

    “কিছু পেলে?”

    “সাইত্রিশ নাম্বার অবধি চেক করলাম।”

    “তারপর?”

    “এখন আটত্রিশ নাম্বারটাকে কল করবো।”

    “অবশ্যই।”

    ম্যালেভলের ডেস্ক শূন্য পড়ে আছে।

    “ম্যালেভাল কোথায়?”

    “রিভোলির কোনো এক দোকানে গেছে। ওখানের এক বিক্রেতা তিন সপ্তাহ আগে নাকি রালফ লরেনের একটা সুটকেস বিক্রি করেছিলো এক লোকের কাছে।”

    ম্যালেভালের ডেস্ক সবসময়ই অগোছালো থাকে–ফোল্ডার, রিপোর্ট, কেস ফাইল থেকে বেরিয়ে আসা ছবি, পুরনো খাতাপত্র, ম্যাগাজিন। তার টেবিল দেখে গ্রীষ্মের ছুটিতে থাকা কোনো টিনএজারের শোবার ঘরের কথা মনে হয় ক্যামিলের।

    “তো লুইস কোথায়?”

    “পতিতাপল্লীতে,” জবাব দিলো আরম্যান্ড।

    “লুইসের তো এমন করার কথা না।”

    “মানে ম্যানুয়েলা কন্সটানজার সাবেক সহকর্মীদের সাথে কথা বলতে গিয়েছে।”

    “এখানে কাগজপত্র নিয়ে পড়ে না থেকে তুমিও তো যেতে পারতে?”

    “এখানেই ভাল আছি।”

    “আচ্ছা, আমি আগামী সোমবার গ্লাসগো যাচ্ছি। তাই আজকে বাসায় দেরি করে যাওয়া যাবে না। তুমি কাজ করো। কোন দরকার হলে জানিয়ো।”

    “ক্যামিল! আইরিনের কী অবস্থা?”

    “বেশ কয়েকদিন যাবত অসুস্থ।”

    “তোমার বাসায় যাওয়া উচিত। এখানে খুব বেশি অগ্রগতিও হচ্ছে না।”

    “ঠিকই বলেছে। আমি তাহলে যাই আজকে।”

    যাওয়ার আগে লুইসের রুমের সামনে থামলো ক্যামিল। সবকিছু পরিপাটি করে রাখা। কবেভুয়া, ট্রেম্বলের ভিক্টিমদের ছবি দেয়ালে লাগানো আছে। পুরো রুমটা দেখে মন জুড়িয়ে যায়।

    রুম থেকে বের হওয়ার সময় কিছু একটা নজর কাড়লো তার। পুরো রুমটা আবারো ঘুরে ঘুরে দেখলো কিন্তু যা চোখে পড়েছিলো তা আর পেলো না। বিজ্ঞাপনের কোন শব্দ কিংবা পত্রিকায় হুট করে চোখে পড়া কোনো নাম যেমন কিছু মনে করিয়ে দেয়, ঠিক তেমনি এই অনুভূতি তাকে ক্রমাগত নাড়া দিচ্ছে। করিডোর ধরে নামা শুরু করলো, তবুও মাথা থেকে বিষয়টা কিছুতেই দূর হচ্ছে না। এমন অবস্থায় তার পক্ষে বাসায় যাওয়া

    সম্ভব না। আবারো রুমের দিকে এগিয়ে গেলো সে, যা খুঁজছিলো এইবার তার চোখে পড়লো। লুইসের ডেস্কের বাম পাশে পড়ে আছে জ হেনালের সাথে সম্পর্কিত লোকজনের লিস্ট। যার নামটা চোখে পড়ি পড়ি করেও পড়ছিলো না তা খুঁজে পেলো।

    “জিসাস ক্রাইস্ট! আরম্যান্ড, এদিকে এসো তাড়াতাড়ি,” চিৎকার করে বলল সে।

    অধ্যায় ৫১

    লাইট আর ক্রমাগত সাইরেনের সুবাদে ভালমিতে পৌঁছাতে দশ মিনিটের কম সময় লাগলো। বন্ধ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে এই দুজন এস.ও.জি.ই.এফআই এর অফিসে পৌঁছালো।

    রিসিপসনিস্ট তাদের থামানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে শেষমেশ ব্যর্থ হয়ে পিছু পিছু ছুটলো।

    “মঁসিয়ে…” পেছন থেকে ডাকার চেষ্টা করলো সে।

    “এখানে অপেক্ষা করুন,” হাত দেখিয়ে তাকে থামার ইঙ্গিত দিলো ক্যামিল।

    কোটেটের ডেস্কের দিকে এগিয়ে গিয়ে দামি লেদারের চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো সে।

    “নিজেকে বস হিসেবে ভাবতে ভালই লাগে,” ব্যঙ্গ করে বলল ক্যামিল।

    এদিকে আরম্যান্ড কাজ শুরু করে দিয়েছে। কোটটের কোন চিহ্নও পাওয়া গেলো না অফিসের কোথাও।

    “তো, মঁসিয়ে ফ্রাঙ্ক কোটেটকে কোথায় পাওয়া যাবে?

    “আচ্ছা, এই ব্যাপার। আসলে তার খবর কেউই জানে না। গত সোমবারের পর এখানে তাকে দেখা যায়নি।”

    অধ্যায় ৫২

    কোটেটের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি দুটি থামলো। সামনে পড়ে থাকা ময়লার ঝুড়িতে হোঁচট খেলো ক্যামিল।

    তিনতলা সুবিশাল বাড়ি দেখে ক্যামিল খুব সহজেই কোটেটের অর্থনৈতিক অবস্থা অনুমান করে নিয়েছে। দরজায় নক করতেই একজন মহিলা বেরিয়ে এলো, চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে সাইরেনের শব্দে ঘুম ভেঙেছে তার।

    “মিসেস কোটেট?” সিঁড়িতে উঠতে উঠতে জিজ্ঞেস করলো ক্যামিল।

    “হ্যাঁ, বলুন…”

    “আমরা আপনার স্বামীকে খুঁজছি। উনি কি বাসায়?”

    “না। আপনারা ভেতরে আসুন,” এই বলে দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো সে।

    কোটেটের কথা বেশ ভালোমতোই মনে আছে ক্যামিলের। নিজের চেয়ে দশ বছর বেশি বয়সি এক নারীকে বিয়ে করে। আকারে লম্বা আর লিকলিকে শরীর হলেও দেখতে বেশ সুন্দরী তার স্ত্রী। সময়ের সাথে সাথে রূপও অনেকটা মলিন হয়ে গেছে কিন্তু ব্যক্তিত্ব এখনো আগের মতই আছে।

    আরম্যান্ড আর দুইজন অফিসার মিলে পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করে খোঁজা শুরু করলো।

    “আপনার স্বামী এখন কোথায় আছে, মিসেস কোটেট?”

    ক্যামিলের দিকে বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকালো সে।

    “তার পালিত বেশ্যার সাথেই আছে হয়তো। কেন?”

    “শেষ কবে বাড়িতে এসেছিলো?”

    “সত্যি বলতে কী, আমার কোন ধারণা নেই এব্যাপারে?”

    “আচ্ছা, আমি একটু অন্যভাবে প্রশ্নটা করছি, আপনি তাকে সবশেষ কবে দেখেছেন?”

    “উম…আজকে কী বার?”

    “শুক্রবার।”

    “আসলেই? তাহলে সম্ভবত সোমবার হবে। হ্যাঁ, সোমবারই।”

    “কিন্তু আপনি তো নিশ্চিত না?”

    “আমি নিশ্চিত, সোমবারই হবে।”

    “চারদিন আগের ঘটনা। আপনাকে দেখে তো চিন্তিত মনে হচ্ছে না।”

    “ওহ, তাহলে তো যতবার ‘আনন্দ অভিসারে বের হবে ততবারই আমার চিন্তা করতে হবে। আর হ্যাঁ ‘আনন্দ অভিসার তার নিজেরই দেয়া নাম।”

    “আপনি কি জানেন এই ‘আনন্দ অভিসার কোথায় হয়?”

    “তার সাথে তো আর পতিতাপল্লীতে ঘুরে বেড়াই না, তাই আমি কিছুই জানি না।”

    “আপনি একাই থাকেন?”

    “আপনার কী মনে হয়?”

    “মিসেস কোটেট, আপনার স্বামীকে একটা হত্যা মামলায় জড়িত সন্দেহে খোঁজা হচ্ছে।

    “তরুণী নাকি? কোনো বেশ্যা?”

    “দুইজন বেশ্যা।”

    “যতদূর জানি আমার স্বামী তাদের সাথে রাত কাটাতে পছন্দ করে। কিন্তু আমি ওকে যেমন চিনি, তার পক্ষে তো এমনটা…”

    “স্বামীর গতিবধি সম্পর্কে তো আপনার কোন ধারণাই নেই।”

    “ঠিক বলেছেন,” ক্যামিল এতোক্ষণে বুঝতে পারলো মিসেস কোটেট মদ্য পানের জন্য স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতেও পারছে না।”

    “মাফ করবেন বস, কিছু দেখানোর ছিলো।”

    দ্বিতীয় তলার একটা রুমের দিকে নিয়ে গেলো তাকে।

    “ফরেনসিক ল্যাবের সাথে যোগাযোগ করো। ম্যালেভালকে ফোন করে বলো জায়গামত চলে আসতে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে রাতে এখানেই থাকতে হবে।”

    “আপনার স্বামীর বিষয়ে টুকটাক কিছু কথা বলার ছিলো, মিসেস কোটেট।”

    অধ্যায় ৫৩

    “আমি দুইদিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি।”

    “তোমার সামনের ট্রিপ উপভোগ করার জন্য ফুলগুলো এনেছো?”

    “না, গতকালকেই আনতে চেয়েছিলাম।”

    “ফিরে এসে হয়তো তোমার ছেলের মুখ দেখবে।”

    “আমি তিন সপ্তাহের জন্য যাচ্ছি না, আইরিন, মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যাপার।”

    ফুলদানি খুঁজতে গেলে আইরিন।

    “দুঃখের বিষয় হলো তোমার উপর আমার রাগ করা উচিত কিন্তু আমি পারছি না। তোমার ফুলগুলো খুব সুন্দর।”

    “ওগুলো তোমার জন্যেই তো এনেছি।”

    “কেন রাগ করা উচিত জানতে চাইবে না। কারণ স্কটল্যান্ডে আমাদের একসাথে যাওয়ার কথা ছিলো। তা আরো দুই বছর আগের কথা। কিন্তু এখন তুমি আমাকে ছাড়াই যাচ্ছে।

    “আমি তো বেড়াতে যাচ্ছি না।”

    “যদি তাই হতো,” রান্নাঘর থেকে বলল আইরিন।

    ক্যামিল রান্নাঘরে গিয়ে পেছন থেকে স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো। আইরিন তাতে বাঁধা দিলো।

    এমন সময়ে ফোন বেজে উঠলো, লুইস ফোন করেছে।

    “আইরিনের ব্যাপারে কোন চিন্তা করবেন না। উনাকে বলবেন আপনি যখন থাকবেন না, যে কোন সময় আমাকে ফোন করলে পাশে পাবে।”

    “ধন্যবাদ, লুইস। কৃতজ্ঞ থাকবো তোমার কাছে।”

    “কে ফোন করেছিলো?” ফোন রাখার সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলো আইরিন।

    “দেবদূত।”

    “আমি তো জানতাম আমিই তোমার দেবদূত।”

    “তুমি তো আমার অপ্সরী।”

    “ক্যামিল,..” এই বলে কেঁদে দিলো আইরিন।

    অধ্যায় ৫৪

    শনিবার, ১২ই এপ্রিল রবিবার, ১৩ই এপ্রিল

    শনিবার সকাল সাড়ে আটটায় টিমের সব সদস্য একত্রিত হলো। লা গুয়েনও উপস্থিত সেখানে।

    “স্কটল্যান্ডের গোয়েন্দা বিভাগের সাথে যোগাযোগ হয়েছে?”

    “এক ঘণ্টার মাঝেই প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাবো আমরা।”

    সহকর্মীদের মাঝে কাজ ভাগ করে দিয়েছে ক্যামিল। কোটেটের ইমেইল, ব্যবসায়িক সহযোগী, আত্মীয়স্বজন, কাদের সাথে চলাফেরা করতো এসব বিষয়ে খোঁজ নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আরম্যান্ডকে। কোটেটের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, টাকা লেনদেনের কাগজপত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে লুইস।

    “আমাদের খুনির তিনটা জিনিস দরকার। সময়, অফিসের বস হিসেবে তা কোটেটের যথেষ্ট আছে। টাকা, সেটারও অভাব নেই তার। তৃতীয়ত, গুছিয়ে কাজ করার দক্ষতা। কোটেটের হয়তো এই গুণও আছে।”

    “তুমি কি খুনের উদ্দেশ্যের কথা ভুলে যাচ্ছো না?” জিজ্ঞেস করলো লা গুয়েন। “কোটেটকে একবার হাতে পেয়ে নেই, বাকিটা ওর কাছ থেকেই জেনে নেবো। ল্যাম্বার্টের খোঁজ পাওয়া গেছে?”

    “না। সচরাচর তাকে যে তিনটা জায়গায় দেখা যেতো সেখানে আমাদের কয়েকজন অফিসার চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারি করছে। এখনো কিছু পাওয়া যায়নি।”

    “নজরদারি করে তো আমরা এখনো কিছুই পাইনি, সামনে কিছু পাবো কি?”

    “আমি এব্যাপারে খুব একটা আশাবাদী না।”

    “ল্যাম্বার্ট, কোটেট…আমি এদের মাঝে কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছি না। এটা খুঁজে বের করতেই হবে। লুইস, তুমি একটু দেখো।”

    “এ তো বিশাল কাজ।”

    ক্যামিল লা গুয়েনের দিকে ঘুরলো।

    “লুইস বলল এটা বিশাল কাজ।”

    “যদি আরো অফিসার আমার কাছে থাকতো, তাহলে তোমাকে দিতে আমার কোনো সমস্যা ছিলো না।”

    “ওকে, জেন। সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ। ল্যাম্বার্টের পরিচিত লোকজনের বাড়িতে তল্লাশী চালাতে হবে। ম্যালেভাল, তোমার কাছে লিস্ট আছে না?”

    “এযাবত এগারো জনের নাম পেয়েছি। যদি একযোগে তল্লাশী চালাতে হয় তাহলে কমপক্ষে চারটা টিম লাগবে।”

    “জেন?”

    “আমি চারটা টিম দিতে পারি শুধু আজকে রাতের তল্লাশীর জন্য।”

    “আজ রাত দুইটায় একযোগে তল্লাশী শুরু হবে। এতে করে সবাইকে একসাথে জেলে পুরতে পারবো। ম্যালেভাল, তুমি এদিকটা দেখবে। আরম্যান্ড, তুমি ওর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবে। এরমাঝে আমি এদিকটা দেখবো যদি নতুন কোনো তথ্য হাতে পাই।”

    মাঝরাতের মাঝেই ক্যামিল কোটেটের ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য জোগাড় করলো।

    চব্বিশ বছর বয়সে দ্বিতীয় সারির একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হয় সে। এরপর একটা কোম্পানিতে যোগদান করে। তিন বছর পর বসের মেয়েকে বিয়ে করে প্রথমবারের মত সাফল্যের মুখ দেখে। দুই বছর পর ভাগ্যদেবি আবারো তার দিকে মুখ তুলে তাকায়। তার শ্বশুর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ায় কোম্পানির সি.ই.ও হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তোলে। আস্তে আস্তে ব্যবসা প্রসারিত হয় এবং একসময় অনেক টাকার মালিক বনে যায়। এরইসাথে একেকটা বাজে নেশায় জড়িয়ে পড়তে থাকে।

    “আপনার সাথে তো তার দেখা হয়েছে, কম্যান্ড্যান্ট। আমার স্বামী যে চূড়ান্ত মাত্রায় অশ্লীল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে আমার ধারণা যাদের সাথে সে মিশে তাদের কাছে এটা কোন বিষয়ই না,” হুট করে কোটেটের স্ত্রীর সাথে কথোপকথনের কথা মনে পড়লো ক্যামিলের।

    আঠারো মাস আগেই মিসেস কোটেট ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলেন তার স্বামীকে। কিন্তু কাগজপত্র জনিত কিছু জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

    ২০০১ সালের অক্টোবর মাসের চার তারিখে কোটেটকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এক বেশ্যাকে নাকে মুখে ঘুসি দিয়ে পালাবার সময় ওই বেশ্যার লোকজন তাকে ধরে ফেলে। সেখান থেকে জান নিয়ে পালাতে সক্ষম হয় পাশ দিয়ে যাওয়া একটা পুলিশের গাড়ির কারণে। দুইদিন সে হাসপাতালে কাটায়।

    ফাইলের অন্যান্য পৃষ্ঠা পড়ার সময় তারিখ খেয়াল করছে ক্যামিল। এডিনবার্গ হত্যাকাণ্ড–২০০১ সালের জুলাই মাসের দশ তারিখে সংঘটিত হয়। শুরুর দিকে গ্রেফতার হওয়ার কারণেই কি কোটেট পরবর্তি হত্যাকাণ্ডগুলো পরিকল্পনা করে করতে শুরু করে?

    অধ্যায় ৫৫

    পৌনে বারোটার দিকে টিমের সব সদস্য একত্রিত হলো।

    “ফরেনসিক টিম আজ সকালে কোটেটের বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে। ফলাফল পেতে দুই তিনদিন সময় লাগবে। কিন্তু তাকে খুঁজে না পেলে এসব দিয়ে খুব একটা লাভ হবে না,” বলল ক্যামিল।

    “কোটেটের মাথায় যে কী খেলা করে আমি বুঝতে পারছি না। কিন্তু তার স্ত্রী ঠিকই বলেছে সে বেশ্যা নিয়েই পড়ে থাকতো। তার কম্পিউটার ভর্তি পর্ন ভিডিও আর ব্রাউজার হিস্টোরিতে বিভিন্ন এসকর্ট ওয়েবসাইটের লিংকে পূর্ণ…যে পরিমাণ মেয়ের সাথে তার যোগাযোগ হয়েছে তা গুণে শেষ করতেও বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে।”

    আরম্যাণ্ডের কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো।

    “অ্যাড্রেস বইয়ে কোনো বেশ্যার নাম নেই। তারমানে এসব কাজ অনলাইনে চলতো। অন্যদিকে এতো ব্যবসায়ীর নাম আছে যে তাদের মাঝ থেকে সন্দেহভাজন কাউকে খুঁজে বের করাটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।”

    “একই কথা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এমন কোনো কিছু কেনার রেকর্ড পাওয়া যায়নি যা আমাদের তদন্তে সাহায্য করবে। গত তিন বছর ধরে অনেক টাকা তুলেছে। অনেক যাচাই বাছাই করার পর কিছু তথ্য আমি বের করেছি। হত্যাকাণ্ড ঘটার সময়ও প্রচুর টাকা সে তুলেছে। বাকিটা তাকে প্রশ্ন করে বের করে নেয়া যাবে। ডায়েরি থেকেও তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য পাইনি। গ্লাসগো হত্যাকাণ্ডের সময় সে স্পেনে ছিলো,” লুইস তার অগ্রগতি সম্পর্কে জানালো।

    “আসলেই ছিলো কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে,” বলল ক্যামিল।

    “এর জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছি আমরা, কিন্তু এক সপ্তাহের আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না। ২০০১ সালের নভেম্বরে প্যারিসে ছিলো সে। তাকে

    ধরার আগে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাবে না।”

    অধ্যায় ৫৬

    বিকালে বাসায় ফিরে ছোট রুমটাতে ঢুকলো ক্যামিল। তার স্ত্রী গত কয়েকমাস ধরে অনাগত সন্তানের জন্য ঘরটা নতুন করে সাজাচ্ছে। শুরুরদিকে স্ত্রীকে সাহায্য করলেও কাজের চাপে এখন আর হয়ে উঠে না।

    এরইমাঝে তার ফোন বেজে উঠলো।

    “নতুন কিছুই পাইনি আমরা। ট্রেম্বলে কেসের ফাইলটা ডেস্কে ফেলে গিয়েছেন, তাই ফোন করলাম। আমি ভাবলাম গ্লাসগোতে নিয়ে যাবেন কিনা।”

    “আমি একদম ভুলে গেছি।”

    “চিন্তার কিছু নেই আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছি। কালকে নিয়ে আসবো?”

    “না, লাগবে না। আমি দেখছি কী করা যায়।”

    রাতের বেলা স্ত্রীকে নিয়ে ডিনার করতে বের হলো ক্যামিল। স্ত্রীকে একা রেখে যাওয়াতে তার মন সায় দিলো না। তাই শ্বশুর বাড়িতে রেখে আসতে চাইলো।

    “আমি লুইসকে বলবো তোমাকে স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে আসতে নাকি ম্যালেভালের সাথে যাবে?”

    “আমি বরং ট্যাক্সি নিয়ে নিবো। লুইসের আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। আরম্যান্ড হলে ভাল হতো।”

    হাসলো ক্যামিল। আরম্যান্ডকে খুব পছন্দ করে আইরিন।

    “এখন দিনকাল কেমন চলে আরম্যাণ্ডের?”

    “আর কী বলবো তোমাকে। কিপ্টেমিতে যদি কোনো পুরষ্কারের ব্যবস্থা থাকতোতাহলে আরম্যান্ড তা ছিনিয়ে নিতো।”

    *

    সাড়ে দশটার দিকে ম্যালেভাল ফোন করলো।

    “ল্যাম্বার্টের সকল অন্তরঙ্গ বন্ধুদের তুলে এনেছি। শুধু একজন বাদে।”

    “তাকে রেখে এসেছো কেন? তাহলে তো সমস্যা হয়ে গেলো।”

    “না। বিষয়টা তেমন নয়। মোরাদ নামে বাচ্চা একটা ছেলে ছিলো। গতরাতে কারা যেন বুকে ছুরি মেরে ডাস্টবিনের পাশে ফেলে গিয়েছিলো। আজকে দুপুরের দিকে লাশ পাওয়া গেছে।”

    “আমার আসতে হবে নাকি?”

    গ্লাসগো যাওয়ার আগের সময়টুকু স্ত্রীর পাশে থাকতে চায় ক্যামিল। তাই মনে মনে প্রার্থনা করলো ওপাশ থেকে যেন নাবোধক উত্তর আসে।

    “আমার মনে হয় না লাগবে। সবাইকে আলাদা আলাদা কক্ষে রাখা হয়েছে। আরমান্ড আর লুইসও আছে। নতুন কোনো খবর পেলে জানাবো।”

    সেই নতুন খবর মাঝরাতের দিকে এলো।

    “কেউ কিছুই জানে না। সবার বক্তব্য আমরা মিলিয়ে দেখেছি। ল্যাম্বার্ট সবাইকে একই সময়ে একই কথা বলেছে,” ক্যামিলকে জানালো ম্যালেভাল।

    “কী বলেছে?”

    “কেউ ঠিকমতো কিছুই বলতে পারছে না। সবাই মোটামুটি নিশ্চিত যে ল্যাম্বার্ট ড্যানিয়েল রয়েটের সাথে শহর ছেড়েছে। কাউকে বলে গেছে কিছুদিনের জন্য যাচ্ছে। নিজের মেয়েকে বলে গিয়েছে দুইদিনের বেশি থাকবে না। কিন্তু কোথায় যাচ্ছে সেই বিষয়ে কাউকে কিছু বলে যায়নি।”

    “ঠিক আছে। সবাইকে বাসায় পাঠিয়ে দাও। তোমারও ঘুমের দরকার আছে।”

    অধ্যায় ৫৭

    সোমবার, ১৪ই এপ্রিল

    সোমবার সকালেও কোটেটকে পাওয়া যায়নি। তার বাড়ির চারপাশে এখনো নজরদারি বহাল আছে। শনিবার সকালে মিসেস কোটেট বের হয়ে যায় আর সন্ধ্যায় ফিরে আসে। সবকিছুই খুব স্বাভাবিকভাবে চলছিলো।

    সকাল সাড়ে এগারোটায় ক্যামিলের ফ্লাইট।

    ব্যালাঞ্জারের জন্য একটা মেসেজ রেখে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। বইয়ের দোকানের মালিককে ফোন করলো সে।

    “জেরোমে লেসাজ বলছি,” ভরাট কণ্ঠে ওপাশ থেকে জবাব এলো।

    “সোমবারে না আপনার দোকান বন্ধ থাকে?”

    “অবশ্যই। কিন্তু আমি সাধারণত ছুটির দিনে এসে কিছু কাজ গুছিয়ে রাখি।”

    ঘড়িতে সময়টা দেখে নিলো ক্যামিল।

    “কিছু সময়ের জন্য আসতে চাচ্ছিলাম আমি।”

    “আজকে তো দোকান বন্ধ।”

    তার কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে পুলিশকেও আর দশটা কাস্টমারের মতই দেখে সে।

    “কিন্তু আপনি তো আছেন,” দ্বিধাজড়িত কণ্ঠে বলল ক্যামিল।

    “হ্যাঁ, বলুন। আমি শুনছি।”

    “সামনাসামনি কথা বলতে পারলে সুবিধা হতো।”

    “যদি বেশি সময় না লাগে তাহলে আসুন।”

    .

    নক করার সাথে সাথেই দরজা খুলে দিলো লেসাজ।

    “আমি স্কটল্যান্ড যাচ্ছি,” চিন্তাভাবনা না করেই কথাবার্তা শুরু করে দিলো ক্যামিল।

    “আর…এটাই আমাকে জানাতে এসেছেন,”

    “বিশ বছর বয়সি এক তরুণীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।”

    “তাতে আমার কী?”

    “পার্কে তার লাশ পাওয়া গেছে।”

    “আমি বুঝতে পারছি না এরসাথে আমার কী সম্পর্ক?”

    “ভাবলাম আপনার কিছু মনে পড়ে নাকি আগেরটার মত, খুব কষ্ট করে নিজের মেজাজ ধরে রাখছে ক্যামিল।

    “শুনুন, কম্যান্ড্যান্ট, আপনারও কাজ আছে, আমারও কাজ আছে। ক্যুবেতুয়ার কেস সম্পর্কে যখন পড়েছিলাম সাথে সাথে আমার আমেরিকান সাইকোর কথা মনে পড়েছে। জানানো উচিত মনে করেছিলাম তাই জানিয়েছি তখন। ব্যাপারটা ওখানেই শেষ। আমি বইবিক্রেতা, কোনো পুলিশ অফিসার না। পেশা পরিবর্তন করার কোন ইচ্ছাও আমার নেই।”

    “মানে…?”

    “মানে হচ্ছে আমি প্রতিদিন এভাবে আপনার বিভিন্ন কেস নিয়ে মাথা ঘামাতে পারবো না। প্রথমত, আমার এতো সময় নেই এসবের জন্য। দ্বিতীয়ত, আমার এসব ভালও লাগে না।”

    এই বলে ক্যামিলের সামনে এসে দাঁড়ালো লেসাজ।

    “যদি আমি পুলিশের ইনফর্মার হতাম তাহলে তো আপনি জানতেন, তাই না?”

    “কিন্তু আপনি তো তাই হয়ে গেছেন। কেননা আপনি নিজে থেকেই কেস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আপনার নীতিতে বোধহয় কিছুটা সমস্যা আছে,” এই কথা বলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো ক্যামিল।

    “কোথায়?” পেছন থেকে বলল লেসাজ। ঘুরে দাঁড়ালো ক্যামিল।

    “মানে কোথায় হত্যা করা হয়েছে?”

    “গ্লাসগো।”

    “আর কিছু?”

    “মেয়েটা ধর্ষণ আর পায়ুকামিতার শিকার হয়েছিলো।”

    “মেয়েটার পরণে কী ছিলো?”

    “ডেনিমের ট্রাউজার, হলুদ জুতো। যতটুকু আমি জানি মেয়েটার সব কাপড়ই উদ্ধার করা হয়েছে, শুধুমাত্র–”

    “শুধুমাত্র কী? অন্তর্বাস ছাড়া?”

    সাথে সাথেই ক্যামিলের রাগ বাষ্প হয়ে উড়ে গেলো। ভেতরে এক ধরনের উত্তেজনা অনুভব করলো সে।

    বুকশেলফের দিকে এগিয়ে গেলো লেসাজ। কিছুক্ষণ খুঁজে একটা বই বের করে এনে ক্যামিলের হাতে দিলো। প্রচ্ছদে দেখা যাচ্ছে পশমি টপি পড়া এক লোক পুল টেবিলের দিকে ঝুঁকে আছে, অন্যদিক থেকে আরেকজন এগিয়ে আসছে তার দিকে কিন্তু তার মুখটা ঝাপসা। প্রচ্ছদের একপাশে লেখা :

    উইলিয়াম ম্যাকলাভ্যানি। লেইডলো।

    .

    “আপনি কি এটার ব্যাপারে নিশ্চিত?”

    “না, কিন্তু আপনি যেমনটা বলেছেন এই বইয়ে তার সবই আছে। কিছুদিন আগেই আমি বইটা পড়েছি। অমিলও থাকতে পারে।”

    “অনেক ধন্যবাদ,” বইটা নাড়তে নাড়তে বলল ক্যামিল।

    বইয়ের দাম দিয়ে বের হয়ে গেলো ক্যামিল। বাইরে তার জন্য ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে।

    অধ্যায় ৫৮

    এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে লুইসকে ফোন করলো ক্যামিল।

    “কী বললেন বইয়ের নাম, লেইডলো?”

    “হ্যাঁ। নাম শুনেছো নাকি?”

    “না। দেশমের কাছে এক কপি পাঠিয়ে দেবো?”

    “উঁহু, উনাকে এখনি আতঙ্কিত করার কোনো দরকার নেই। আগে বইটা পড়ে আমার ইংরেজ সহকর্মীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে নেই।”

    “স্কটিশ! ঈশ্বরের দোহাই লাগে উনাদের সাথে কথা বলার সময় এমনটা বলবেন না।”

    “ধন্যবাদ, লুইস। আমার স্কটিশ সহকর্মীদের সাথে আলাপ করে দেখি ওই বইয়ের সাথে পুরোপুরি মিলে যায় কিনা। এরপর দেশমকে জানানোর অনেক সময় পাওয়া যাবে।”

    লুইসের নীরবতা তাকে ভাবিয়ে তুললো।

    “তুমি আমার সাথে একমত না?”

    “না, না, বিষয়টা এমন না। আমি অন্য কিছু ভাবছিলাম। আমাদের ওই বইবিক্রেতা বেছে বেছে সে বইগুলো সম্পর্কে ভাল জানে যা আমাদের খুনি অনুসরণ করে।”

    “আমিও ঠিক একই জিনিস চিন্তা করছিলাম। সত্যি বলতে, আমি কাকতালীয় ব্যাপারে বিশ্বাসী না।”

    “এর আগেও তো অনেক খুনি এমনটা করেছে। কিছু সূত্র দিয়ে পুলিশকে সাহায্য করার বাহানায় তদন্তের গভীরে ঢুকে পড়ে।”

    “হ্যাঁ, আমিও জানি। তোমার কী মনে হয় কী করা উচিত?”

    “তাকে সার্বক্ষণিক নজরদারির মাঝে রাখতে হবে। তবে খুব সাবধানে।”

    “ঠিক আছে, লুইস। তাই করো… অন্তত তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে তো পারবো।”

    এয়ারপোর্টে বসে ম্যাকলাভ্যানির বইটা পড়ার চেষ্টা করলো। কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারলো না বইটায়। শেষমেশ ব্যর্থ হয়ে একটা ম্যাগাজিন হাতে তুলে নিলো।

    তক্ষুণি মাইকে ঘোষণা এলো দশ মিনিটের মাঝেই বোর্ডিং শুরু হবে।

    অধ্যায় ৫৯

    হালকা পাতলা গড়নের টিমোথি গ্যালাহার। মাথায় ঘন চুল আর মুখে সবসময় ভদ্রতার হাসি লেগে থাকে। ক্যামিলের নাম লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্যামিলের আকৃতি দেখে বিন্দুমাত্র অবাক হলো না সে। এমন একজন অভিজ্ঞ মানুষের কাছ থেকে এমনটা আশা করাই যায়।

    ফোনে একে অপরের সাথে বেশ কয়েকবার কথা বলেছে। ভাল ফ্রেঞ্চ বলতে পারায় ক্যামিল তাকে সবসময়ই সাধুবাদ জানিয়েছে।

    “আমার সহকর্মীরা সবাই আপনার থিয়োরিতে কিছুটা…বিস্মিত,” বলল স্কটিশ গোয়ন্দা।

    “বিষয়টা যখন আমাদের নজরে পড়েছে আমরাও অবাক হয়েছিলাম।”

    “আমি বুঝতে পারছি।”

    ক্যামিলের ধারণা ছিলো গ্লাসগো শহরে একটা ঋতুই বিরাজ করে সারাবছর। কিন্তু সশরীরে এখানে এসে তার ধারণা পরিবর্তন হলো।

    দেশটার আবহাওয়া এমন যেন সবাইকেই খুশি করে।

    এসব ভাবতে ভাবতে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে এসে পৌঁছালো ক্যামিল আর টিমোথি। সময়মত মিটিং শুরু হলো।

    “গ্রেস হবসন, বয়স আঠারোর কাছাকাছি, গ্লাসগো ক্রসের কাছে বাবা মায়ের সাথে থাকতো। শহরের কাছেই একটা নাইটক্লাবে সারা সন্ধ্যা পার করেছিলো তার বান্ধবী ম্যারি বার্নসের সাথে। সেখানে তার বয়ফ্রেন্ড উইলিয়াম কিমারও উপস্থিত ছিলো যার ফলে সে উত্তেজিদ হয়ে উঠলো। একজন সাক্ষীর ভাষ্যমতে গ্রেস সারাক্ষণ কিমারের দিকে তাকিয়ে ছিলো আর প্রচুর পরিমাণে মদ গিলছিলো। রাত এগারোটার দিকে কিমার চলে যায়। ম্যারি বার্নস তার বান্ধবীকে একই সময়ে বের হয়ে যেতে দেখে। অনেক সময় পার হওয়ার পরে সে ফিরে না আসলে সবাই ভেবে নেয় হয়তো দুজনের মাঝে ঝগড়া চলছে। তার অনুপস্থিতি নিয়ে কেউ আর মাথা ঘামায়নি। পৌনে বারোটার দিকে সবাই যখন বেরিয়ে যাচ্ছিলো তখনও সে ফেরেনি। ২০০১ সালের জুলাই মাসের দশ তারিখ সকালে কেলভিনগ্রোভ পার্কে তার নগ্ন দেহ পাওয়া যায়। শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় তাকে। কিমার তার বিবৃতিতে দাবি করেছে ওই রাতে গ্রেসকে দেখেনি সে। একইসাথে নিশ্চিত করেছে ক্লাব থেকে বের হয়েই এক মেয়ের সাথে দেখা হয় এবং তাকে বাড়ি অবধি এগিয়ে দেয়, এরপর বাসায় ফিরে আসে। বাসায় ফেরার পথে স্কুলের দুই বন্ধুর সাথে দেখা হয়। তাদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ আড়াও দেয়। আমরা এই তথ্যও যাচাই করে দেখেছি। এই কেসে তিনটা জিনিস বেশ অবাক করেছে আমাদের। প্রথমত, মেয়েটার অন্তর্বাস পাওয়া যায়নি। বাকি সব ঘটনাস্থলেই ছিলো। রাবার স্ট্যাপ দিয়ে নকল আঙুলের ছাপের কথা না বললেই নয়। সবশেষে, তার কপালের বাম দিকে একটা জন্মদাগ ছিলো। দেখতে একদম সত্যিকারের মনে হচ্ছিলো, আদতে মেয়েটার বাবা মা লাশ শনাক্ত করতে আসার পর আমরা জানতে পেরেছি ওটা নকল।”

    ক্যামিল তাদেরকে বেশ কিছু প্রশ্ন করলো। অফিসারদের সবাই আন্তরিক ছিলো তার প্রতি। তথ্য দিতে কোন রকমের সংকোচ বোধ করেনি তারা। ঘটনাস্থলের ছবিও দেখলো ক্যামিল।

    লেসাজের কাছ থেকে আনা বইটা বের করলো ক্যামিল। এতে কোন অফিসার বিন্দুমাত্র অবাক হলো না। কাহিনীর সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে সবাইকে বইটা কেনার অনুরোধ জানায় সে। চা পানের বিরতি শেষে আবারো আলোচনা শুরু হলো বিকাল চারটায়।

    *

    গাছের পাতা দিয়ে তার শরীরের কিছু অংশ ঢাকা পড়ে ছিলো…] মাথাটা ঘাড় থেকে অদ্ভুত এক কোণে বাঁকা হয়ে আছে, মনে হচ্ছে সে কিছু শুনছে। কপাল থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলো সে। চুলগুলো কেমন যেন শক্ত হয়ে আছে। ধূলাবালি আর ঘামে এমনটা হয়েছে বলে তার ধারণা। কপালের বাম দিকে জন্মদাগ দেখতে পেলো।

    *

    অফিসারদের সবাই ম্যাকলাভ্যানির বইয়ের বর্ণনা পড়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো। তাদের সবার মুখে একই বিস্ময়ের ছাপ দেখে স্বস্তি পেলো ক্যামিল। “যদি আমার এই থিয়োরি পুরোপুরি সঠিক হয়, তাহলে এক ভয়ংকর মানসিক রোগির পিছু ছুটছি আমরা,” বলল ক্যামিল।

    শহরের প্রাণকেন্দ্রে এক হোটেলে উঠেছে ক্যামিল। সেখান থেকে নিজের শ্বশুরবাড়িতে ফোন করলো।

    “লুইস তোমাকে স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে এসেছিলো?”

    “অবশ্যই না, ক্যামিল। আমি নিজেই ট্যাক্সি ডেকে এনেছিলাম। আমি তো আর ছোট খুকি না।”

    “ক্লান্ত নাকি?”

    “বেশি না, অল্প। আসলে বাবা মা আমাকে ক্লান্ত করে ফেলছে।”

    “বুঝতে পারছি। উনারা কেমন আছে?”

    “আগের মতই, এটাই তো সমস্যা।”

    বিয়ে হওয়ার পর হাতে গুনে তিন থেকে চারবার শ্বশুরবাড়ি গিয়েছে ক্যামিল। তার শ্বশুর অবসরপ্রাপ্ত গণিত শিক্ষক, গ্রামে যত ধরণের সংঘ হওয়া সম্ভব তার সবগুলোর সভাপতি সে। ক্যামিলকে কাছে পেলেই নানা ধরনের সাফল্যের গল্প বলতে শুরু করে। একবার উত্তেজিত হয়ে মেয়ের জামাইকে দাবা খেলার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। টানা তিনবার হেরে গিয়ে সারাদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকবার ভান করে।

    “বাবা আমাদের ছেলের নাম দিতে চায় হুগো। ঈশ্বর জানে এই নাম কোথায় পেলো।”

    “জিজ্ঞেস করোনি?”

    “কোনো এক রাজ্যজয়ী বীরের নাম বলল।”

    “অস্বীকার করার উপায় নেই। জিজ্ঞেস করে দেখো তো সিজার সম্পর্কে কী মতামত উনার।”

    হুট করে নীরবতা নেমে এলো আইরিনের ওপাশ থেকে। “আমি তোমাকে খুব মিস করছি, ক্যামিল।”

    “আমিও।”

    “আমি তোমার চেয়ে বেশি। ওখানকার আবহাওয়া কেমন?”

    “এদের মতে পরিবর্তনশীল। তার মানে গতকাল বৃষ্টি হয়েছিলো, আগামীকাল আবারো হবে।”

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅ্যালেক্স – পিয়ের লেমেইত
    Next Article হযরত ওমর – আবদুল মওদুদ

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }