Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আজাজেল্‌ – আইজাক আসিমভ

    লেখক এক পাতা গল্প281 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    স্বর্গে-মর্ত্যে আরো কিছু আছে

    ডিনারের সময়ে জর্জ যেমন শান্ত ছিল, সচরাচর সে এমন থাকে না। কয়েকদিনে আমি যা ঠাট্টা তামাশা গল্পগাছা করেছি, জর্জকে সে সবের বর্ণনা দিতে চেষ্টা করছিলাম।

    তার বদলে যা পেলাম, তা হল,

    আমার সর্বোৎকৃষ্ট সরস উক্তিতে, অবজ্ঞায় সামান্য মুখ বাঁকিয়েছিল শুধু।

    তারপর শেষপাতে গরম ব্লু বেরী কেক খেতে তলপেটের নিচ থেকে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, আগে যে চিংড়ি-স্ক্যাম্প খেয়েছে, সে সম্বন্ধে তৃপ্তির পরিচয় ছিল না।

    ‘এটা কী জৰ্জ?’ আমি জিজ্ঞাসা করি, ‘তোমার মনে কিছু আছে, বলে মনে হয়।’

    ‘অবাক করলে তুমি,’ জর্জ বলল, ‘অযাচিত সচেতনতা দেখিয়ে। সাধারণত তুমি নিজের আজেবাজে লেখার বিষয় নিয়ে বড় বেশি জড়িয়ে থাক, অন্যের দুঃখকষ্ট তোমার নজর এড়িয়ে যায়।’

    ‘হ্যাঁ, কিন্তু যতক্ষণ ধরে আমি এটা লক্ষ্য করছি,’ আমি বলি ‘এই চেষ্টায় আগে যা খাটুনি পড়েছে, তাকে না হয় নষ্ট হতে নাই দিলাম।’

    ‘আমি শুধু আমার এক পুরনো বন্ধুর কথা ভাবছিলাম। বেচারি, ভিসারিওন জনসন। তার নাম। ধরে নিচ্ছি, তুমি কখনো তার কথা শোননি।’

    ‘যা হয়েছে’ আমি বলি, ‘আমি কখনো শুনিনি।’

    ‘বেশ, এই হচ্ছে যশ, যদিও, তোমার মতন সীমিত দৃষ্টির বক্তির কাছে এই না জানাটা এমন কিছু অসম্মানের নয়।’

    আসলে, ভিসারিওন ছিল এক মস্ত অর্থনীতিবিদ।

    ‘নিশ্চয়ই ঠাট্টা করছ,’ আমি বলি, ‘অর্থনীতিবিদের সঙ্গে তোমার কেমন করে পরিচয় হলো।’

    ভিসারিওন জনসন বিরাট পণ্ডিত ছিল।

    ‘মুহূর্তের জন্যও সে সম্বন্ধে সন্দেহ করছি না!’ আমি বলি, ‘আমি আশ্চর্য হচ্ছি।’ প্রেসিডেন্ট রিয়াগারকে নিয়ে এক গল্প আছে। একবার রাষ্ট্রীয় বাজেট নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন। ঠিকঠাক সমাধান করতে এক পদার্থবিদকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘দুই আর দুই, কি হয়?’

    পদার্থবিদের তাৎক্ষণিক জবাব, ‘চার,’ মি. প্রেসিডেন্ট। রিয়াগান আঙুলে গুনে এক মুহূর্তে বিবেচনা করে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। অতঃপর এক পরিসংখ্যাবিদের দ্বারস্থ হলেন, ‘দুই আর দুই, কি?’

    কিছুক্ষণ ভেবে পরিসংখ্যানবিদ বললেন, ‘চতুর্থ শ্রেণীর মধ্যে ভোটের যে সমস্ত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে তার গড়হিসেব প্রায় চার দাঁড়াবে।’

    ‘কিন্তু এটা তো বাজেটের প্রশ্ন?’ অতএব রিগান আরো উঁচুতে প্রশ্ন তুলে ধরার কথা ভাবলেন। এবং এক অর্থনীতিবিদকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দুই আর দুই কি?’

    অর্থনীতিবিদ রিগানকে আড়ালে টেনে আনলেন, তাছাড়া এদিকওদিক তাকিয়ে নিলেন। তারপর চুপিচুপি বললেন, ‘মি. প্রেসিডেন্ট,আপনার কী উত্তর পছন্দ?

    জর্জের কথায় বা মুখের ভাবে কোনো আমোদ প্রকাশ পেল না। সে বলল, ‘স্পষ্টতই, অর্থনীতি সম্পর্কে, তুমি কিছুই জানো না, বন্ধু।

    ‘অর্থনীতিবিদও কিছু জানে না, জর্জ,’ আমি বলি।

    ‘তাহলে, আমার ভাল বন্ধু অর্থনীতিবিদ ভিসারিওন জনসনের করুণ কাহিনী আমাকে বলতে দাও। এটা ঘটেছিল কয়েক বছর পূর্বে।‘

    .

    ভিসারিওন জনসন, যেমন আমি বলেছিলাম [জর্জ বলল] অর্থনীতির হিসাবে, পেশার উচ্চতম পদে যে প্রায় তার কাছাকাছি ছিল। সে পড়াশোনা করেছিল ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ্ টেকনোলজিতে। সেখানে, চক বেশি না কাঁপিয়ে, দুরূহ সমীকরণ লিখতে শিখেছিল।

    স্নাতক হওয়ার পরই, সে পেশা গ্রহণ করে, যাতে মক্কেলদের কাছ থেকে সংগৃহীত তহবিলের জন্য সে কৃতজ্ঞ ছিল। স্টক মার্কেটের দৈনিক ওঠানামায় ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনার গুরুত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করেছিল। তার এমনই দক্ষতা ছিল, খুব কম মক্কেলেরই কিছু লোকসান হয়েছে।

    বহু উপলক্ষ্যেই পরিবেশ অনুকূল কী প্রতিকূল সেই বিচারে পরদিন স্টকমার্কেট ওপরে উঠবে কি নিচে নামবে, সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার যথেষ্ট সাহস তার ছিল আর প্রতিক্ষেত্রে মার্কেটে তাই-ই ঘটত, যেমন সে পূর্বাহ্নে বলে দিয়েছিল।

    স্বভাবতই এই ধরনের বিজয় তাকে ওয়াল স্ট্রীট জ্যাকুল নামে বিখ্যাত করে তুলল। দ্রুত অর্থোপার্জনের ব্যাপারে বিখ্যাত পেশাদার ব্যক্তিরা তার পরামর্শ চাইতে আসতো।

    কিন্তু তার দৃষ্টি ছিল অন্যত্র। স্টক মার্কেটের থেকে বড় কিছু, ব্যবসায়িক ষড়যন্ত্রের চেয়ে বড় কিছু, এমনকি ভবিষ্যদ্বাণী করার চেয়েও বড় কিছু। সে যা চেয়েছিল, তা যুক্তরাষ্ট্রের মুখ্য অর্থনীতিবিদের পদ অপেক্ষা ন্যূন নয়। আর এই কর্মভারপ্রাপ্তকে বলা হতো ‘প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা’।

    তোমার সীমিত আগ্রহে, ক্বচিৎই তোমার কাছে আশা করা যায়, মুখ্য অর্থনীতি পদের এই অতি দায়িত্বপূর্ণ পদ সম্পর্কে কিছু জানবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রশাসনিক নিয়মনীতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিয়ে থাকেন। তাঁকে অর্থ সরবরাহ ও রাষ্ট্র দুইই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।

    কৃষি, বাণিজ্য, শিল্পসম্পর্কে তিনিই প্রস্তাব দেবেন, বা নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন। আয়কর বিভাজনে যেমন, কী খাতে সেনা বিভাগে যাবে, কিংবা অন্য কোথাও, দৈবক্রমে যদি কিছু উদ্বৃত্ত থেকে যায়, তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন। আর এই সমস্ত কিছুতে যিনি প্রথম ও প্রধান উপদেশদাতা তিনি হবেন ‘মুখ্য অর্থনীতিবিদ।

    আর যখন প্রেসিডেন্ট তার মুখাপেক্ষী, তখন মুখ্য অর্থনীতিবিদকে তাৎক্ষণিক স্থির করে ফেলতে হবে, প্রেসিডেন্ট ঠিক কি শুনতে চাইছেন এবং সেই অনুযায়ী তাকে প্রয়োজনীয় অর্থহীন বহুল প্রচারিত প্রবাদের মশলা মিশিয়ে প্রেসিডেন্টকে বলে দিতে হবে। অতঃপর তিনি সেটি আমেরিকার জনগণের সম্মুখে উপস্থাপিত করবেন।

    যখন তুমি প্রেসিডেন্ট, পদার্থবিদ পরিসংখ্যানবিদ আর অর্থনীতিবিদের গল্প শোনালে, বন্ধু, মুহূর্তের জন্য ভেবেছিলাম, তুমি বুঝি অর্থনীতিবিদের সম্পর্কে কাজটি বুঝেছ। কিন্তু তোমার ঐ অনুচিত হাস্যরোল পরিষ্কার দেখিয়ে দিল, তুমি আসল কথাটাই ধরতে পারনি।

    এদিকে ভিসারিওন চল্লিশে পা দিয়েছে, যতই উচ্চপদ হোক, তাতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। ইনস্টিটিউট অব গভর্নমেন্টাল ইকনমিক্স’-এর মাধ্যমে বিস্তৃত গুজব ছড়িয়ে গেল, গত সাত বছরে ভিসারিওন স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে কাউকে এমন কিছু বলেন নি, যা সে শুনতে চায় না। আরো বড় কথা, সংবর্ধনার সঙ্গে সিডিআর এর ক্ষুদ্র বৃত্তে তাকে ভোট দেওয়া হল।

    তোমার নিজের টাইপরাইটারের উর্ধ্বে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা, সম্ভবত তুমি সিডিআর সম্পর্কে কখনো কিছু শোননি। এটা হল ক্লাব অফ ডিমিনিশিং রিটার্নস এর তিনটি শব্দের আদ্যক্ষর নিয়ে গঠিত শব্দ।

    প্রকৃতপক্ষে কম লোকেই জানে এমন কি নিচের সারির অর্থনীতিবিদগণের মধ্যেও অনেকেই জানে না। বিস্ময়কর অর্থনীতির জটিল ক্ষেত্র যারা পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুশীলন করেছে, তাদের এক ক্ষুদ্র বিশিষ্ট গোষ্ঠি তারাই জানে, কিংবা যেমন একজন রাজনীতিবিদ এর সম্বন্ধে গ্রাম্য খেয়ালী উক্তি করেছিল, ‘ভুডু ইকনমিকস।’

    সবাই জানত, সিডিআর এর বাইরের কেউ প্রশাসনিক সরকার-এ জায়গা পেতে পারে না। কিন্তু ভেতরকার যে কেউ পারে। এইভাবে সিডিআর এর সভাপতি প্রয়াত হলে, সংস্থার একটি কমিটি ভিসেরিওনকে এ পদের জন্য আহ্বান জানালে, ভিসেরিওনের হৃদয় লাফিয়ে ওঠে, সভাপতি পদে থাকলে পরবর্তী সুযোগে, সে একেবারে ক্ষমতার উৎসমূলে চলে যাবে। তখন প্রেসিডেন্টের হাত সেদিকে সে ঘুরিয়ে নিতে পারবে, যেদিকে প্রেসিডেন্ট যেতে চাইছেন।

    কিন্তু একটা ব্যাপারে, ভিসেরিওনের উদ্বেগ গেল না। সে সাংঘাতিক উভয় সঙ্কটে পড়ে গেল। সে অনুভব করল, তার এমন কারোর সাহায্য প্রয়োজন, যে একাধারে স্থিতধী ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন।

    আর তখনই সে আমার খোঁজ করল। ঐ পরিস্থিতিতে পড়লে, স্বভাবতই যে কেউই তাই-ই করত।

    ‘জর্জ’ সে বলল, ‘সিডিআর-এর চেয়ারম্যান হতে পারলে আমার জীবনের সর্বোচ্চ আশা ও ঐকান্তিক স্বপ্ন পূরণ হবে।

    ‘মানে? বলতে চাইছ, প্রেসিডেন্টের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা?’

    ‘যদি তুমি বিধিবহির্ভূত হতে চাও, তবে হ্যাঁ। শুধুমাত্র সিডিআর এর সভাপতি হতে হবে আর দুবছরের মধ্যে, আমি নিশ্চয়ই মুখ্য অর্থনীতিবিদ হবো, যদি না-‘

    ‘যদি না কি?’ আমি বলি

    ভিসেরিওন নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ এনে বলল, ‘আমাকে গোড়া থেকে শুরু করতে হবে। ক্লাব অফ ডিমিনিশিং রিটার্নস বাষট্টি বছর আগে স্থাপিত হয়েছে, আর ঐ নামকরণ হয়েছিল, কারণ ল’ অব ডিমিনিশিং রিটার্ন একটা অর্থনীতি যা সুশিক্ষণপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ মাত্রই শুনে থাকবে। এর প্রথম সভাপতি সকলের প্রিয় এবং নভেম্বর ১৯২৯-এ, ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, স্টক মার্কেটে সাংঘাতিক অবনতি আসছে। বছরের পর বছর, পুনঃনির্বাচিত হতে থাকেন আর বত্রিশ বছর সভাপতি ছিলেন। প্রাচীনতম বয়স ছিয়ান্নবই বছরে মারা যান।

    ‘অত্যন্ত প্রশংসনীয়’ আমি বলি, ‘এত লোক আগেভাগেই ছেড়ে দেয়,

    যখন শুধু টিকে থাকার ক্ষমতা আর দৃঢ় সংকল্প থাকলেই নব্বই কেন তারও বেশিদূর যাওয়া যেতে পারে।

    ‘আমাদের দ্বিতীয় সভাপতিও প্রায় ভালই চলেছিলেন, ঐ পদে ছিলেন ষোলো বছর, একমাত্র যিনি মুখ্য অর্থনীতিবিদ হননি। তাঁর যোগ্যতা ছিল এবং টমাস ই. দুয়ে তাকে ঐ পদে নিযুক্তও করেন। নির্বাচনের আগের দিন কিন্তু যে করেই হোক, তৃতীয় সভাপতি মারা যান ঐ পদে আটবছর থাকার পর। চতুর্থজন মারা যান চার বছর সভাপতি পদে থাকার পর। আর আমাদের পরের সভাপতি যিনি মাত্র গত মাসে প্রয়াত হয়েছেন, সারিতে পঞ্চমে ছিলেন, তিনি মাত্র দুবছর থাকতে পেরেছিলেন। তুমি এসবের মধ্যে অদ্ভুত ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছ।’

    ‘অদ্ভুত?’ তাদের সবার কি স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।

    ‘অবশ্যই’।

    ‘যে পদে তারা অধিষ্ঠিত ছিল, পদটি অদ্ভুত।’

    ‘বোকা কোথাকার,’ কিছুটা রুক্ষ স্বরে ভিসারিওন বলল, ‘পর পর সভাপতি পদে অধিষ্ঠানের সময়কালের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বত্রিশ, ষোল, আট, চার, দুই।’

    কিছুক্ষণ ভেবে বললাম, ‘সংখ্যাগুলো ক্রমশ ছোট হয়েছে মনে হচ্ছে।’

    ‘তারা শুধুমাত্র ছোট হয়ে আসেনি। প্রত্যেকটা সংখ্যা আগের সংখ্যার অর্ধেক। বিশ্বাস করুন, আমি একজন পদার্থবিদকে দিয়ে যাচাই করিয়ে নিয়েছি।’

    ‘জানো, আমার মনে হয়, তুমি ঠিকই বলেছ। আর কেউ এটা লক্ষ্য করেছে।’

    ‘নিশ্চয়।’ ভিসারিওন বলল, ‘আমি আমার ক্লাবের সভ্যদের এই সংখ্যাগুলো দেখিয়েছি। তাদের দাবি, এটা সন্তোষজনক লক্ষণীয় বিষয় হবে না। যতক্ষণ না প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে কার্যনির্বাহী ঘোষণা জানাচ্ছেন। কিন্তু তুমি কি এতে নিজে লক্ষণীয় কিছু দেখতে পাচ্ছ না। আমি যদি সভাপতির পদ গ্রহণ করি, তাহলে একবছরের মধ্যে মারা যাব, নিশ্চয়ই। আর তাহলে, তারপর কি করে আমাকে মুখ্য অর্থনীতিবিদের পদে নিযুক্ত করা যাবে!’

    আমি বলি, ‘হ্যাঁ, ভিসারিওন, তোমার উভয়সঙ্কট। আমি অনেক সরল অধিকর্তাদের জানি যাদের মাথার পিছনে জীবন নেই, ভোঁতা, কিন্তু একেবারেই জীবন নেই, তেমন দেখিনি। আমাকে একদিন ভাবতে সময় দেবে? ভিসারিওন?

    পরদিন একই সময়ে একই জায়গায় সাক্ষাতের বন্দোবস্ত করলাম। সেটা চমৎকার রেস্তোরাঁ ছিল আর যাই হোক, তোমার মতন বন্ধু, ভিসারিওন আমাকে এক টুকুরা রুটি দিতে নারাজ হয় না। হ্যাঁ অবশ্যই। চিংড়ি-স্ক্যাম্পি দিতেও নারাজ হয়নি।

    .

    এটা অবশ্যই আজাজেলের এক্তিয়ার। আর আমার ছোট্ট দুই সে.মি. লম্বা জিন যার অপার্থিব ক্ষমতা রয়েছে, তাকে এই কাজে লাগানো যুক্তিযুক্ত বলে মনে করলাম।

    যতই হোক। ভিসারিওন একজন দয়ালু ব্যক্তি, রেস্তোরাঁ সম্বন্ধে সুরুচিবোধ। কিন্তু আমি সততার সাথে অনুভব করি, উৎকৃষ্ট বিচার শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের আপত্তির বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্টের অভিরুচির সমর্থন করে ভিসারিওন জাতির মহান সেবায় ব্রতী হবে। যতই হোক, কারা তাদের নির্বাচিত করেছে?

    ডেকে পাঠানোর জন্য আজাজেল্‌ খুশি হয়নি। সে আমাকে দেখামাত্রই ছোট্ট হাত থেকে সব জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলে দিল। সেগুলো এতই ছোট ছোট যে ভাল করে বোঝা গেল না। মনে হল অদ্ভুত নকশার ছোট ছোট আয়তাকার পিজ্‌বোর্ড

    ‘এইখানে,’ সে বলল, তার ছোট্ট মুখমণ্ডল রাগে কুঁচকে গিয়ে উজ্জ্বল পীতবর্ণ ধারণ করলো। তার ছোট্ট লেজ আছড়ে পড়ল বন্য কায়দায় আর কপালের ওপর ক্ষুদ্র শিং দুটি প্রবল আবেগের দাপটে ভালমতন কাঁপতে লাগল।

    ‘তুমি কি বোঝ, নিকৃষ্ট মস্ত বপু!’

    সে তীক্ষ্ণ চিৎকার করল ‘যে আমি শেষ পর্যন্ত একজন জটচিলকে হাতে ধরেছিলাম, শুধু জুচিলমাত্র নয়, আমার পরামর্শদাতা।

    তারা সকলেই আমাকে খেলতে উৎসাহ দিচ্ছিল, আর আমি কখনো হারতাম না। টেবিলের ওপর রাখা সব টাকা আমি সাফ করে দিতাম।’

    আমি কঠোরভাবে বলি, ‘জানি না। কিসের কথা বলছ? বোঝা যাচ্ছে, তুমি জুয়া খেলছিলে। এটা কি একটা মার্জিত, সভ্য ব্যবহার? যদি তোমার মা জানতে পারেন, তুমি একদল নিষ্কর্মার সঙ্গে জুয়া খেলে সময় নষ্ট করছিলে?’

    আজাজেল্‌ একটু থিতিয়ে গেল। তারপর বিড়বিড় করল, ঠিক বলেছ আমার মায়েদের মন ভেঙে যাবে। তিনজনেরই বিশেষ করে মধ্যম মায়ের। উনি আমার জন্য এত আত্মত্যাগ করেছেন।

    তারপরই সে সপ্তক সুরে গরগর করে উঠল, শুনতে ভয়ঙ্কর।’

    ‘আরে, আরে,’ আমি নরম সুরে বললাম। কানের ব্যথা সামলাতে আমাকে কানে আঙুল চাপা দিতে হল। কিন্তু আজাজেল্‌ আহত হল।

    ‘আমাদের জাতের একজনকে সাহায্য করে তুমি ভাল কাজ করতে পার।’ আমি ভিসারিওন জনসনের কাহিনী বর্ণনা করলাম।

    ‘হুম!’ আজাজেল্‌ বলল।

    ‘তার মানে কি?’ আমি উদ্বিগ্ন স্বরে বললাম।

    ‘এর মানে হল,’ তীব্র বাধা দিল আজাজে, ‘এর মানে কি হওয়া সম্ভব, তুমি ভাবছ?’

    ‘হ্যাঁ, কিন্তু তোমার কি মনে হয় না, সবই কাকতালীয় যোগাযে ভিসারিওনের এটাকে অগ্রাহ্য করতে সাহস করা উচিত?’

    ‘হয়তো। এ সমস্ত কাকতালীয় যোগাযোগ কী হতে পারে না এবং ভিসরওনের এটা অগ্রাহ্য করতে সাহস করা উচিত নয়? প্রকৃতির একটা নিয়মকে ঘেঁটে দেখতে

    হবে।

    ‘এটা কেমন ভাবে প্রকৃতির রীতি হতে পারে!’

    ‘তোমার কি প্রকৃতির সব রীতিনীতি জানা রয়েছে?’

    ‘তা, না।’

    ‘অবশ্যই নয়। আমাদের মহান কবি চীফপ্রীস্ট একদা দুলাইনের এক মর্মস্পর্শী কবিতা লিখেছিলেন। আমি আমার সূক্ষ্ম কাব্যিক বিচারে তোমাদের অসভ্য ভাষায় অনুবাদ করে দিচ্ছি।’

    আজাজেল্‌ গলা সাফ করে। এক মুহূর্ত চিন্তা করে নিয়ে বলল,

    ‘সব প্রকৃতি এক কলা, যা তোমার কাছে অজানা, সব সম্ভাবনা, দিশা যা তুমি দেখতে পাও না।’

    সন্দেহের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করি, ‘এর অর্থ কী?’

    ‘এর মানে হল, প্রকৃতির নিয়ম নিশ্চিত উপস্থিত, আমাদের তা খুঁজে পেতে হবে আর আমাদের পছন্দ অনুযায়ী তাকে নিয়ন্ত্রিত করে সুবিধা পেতে হবে, এটা বোঝাচ্ছে। তোমার কি মনে হয়, আমাদের মহান কবি মিথ্যাবাদী হতে পারে?’

    ‘বেশ, তুমি কি এ বিষয়ে কিছু করে উঠতে পার!’

    ‘সম্ভবত। প্রকৃতির অনেক রীতিনীতি রয়েছে, জানো কি?

    ‘আছে, সত্যিই!’

    ‘হ্যাঁ, আছে। প্রকৃতির একটি ছোট্ট মজাদার নীতি রয়েছে। শয়তানসুলভ আকর্ষণীয় সমীকরণ, যাকে Weinbaumian tensor-এ পরিণত করলে, গরম স্যুপ শেষ করার তাড়া থাকলে, সেই সম্পর্কে নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব।

    এটা সম্ভব, যদি এই সভাপতির আসনের সময়কালের ক্রমিক হ্রস্বতা, নীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, ও আমার বিশ্বাস তাই হয়ে থাকে, তাহলে আমি তোমার বন্ধুর প্রকৃতি বদলিয়ে, পার্থিব কোনো বস্তু থেকে তার ক্ষতির আশঙ্কা সম্পূর্ণ দূর করে দিতে পারি।

    শারীরবৃত্তীয় ক্ষয় থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয় কিছুতেই। আমি যেটুকু করতে পারি, তা হল, একে আমি পার্থিব ক্ষতির হাত থেকে স্থায়ীভাবে বাঁচিয়ে রাখব। অবশ্যই অমর করতে পারব না। কিন্তু এটা নিশ্চিত, কোনো সংক্রামক রোগ বা দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হবে না। এটুকু করলেই নিশ্চয় সে সন্তুষ্ট হবে।’

    ‘পুরোপুরি ঠিক। কিন্তু কখন এটা কার্যকরী হবে?’

    ‘একদম নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না। আমার প্রজাতির স্ত্রী লোকের সঙ্গে আমি কিছুদিন ব্যস্ত থাকবো, যে আমার ধারণায়, অসতর্কভাবে আমার ঘাড়ে পড়ে আছে। বেচারি!’

    সে হাই তুলল। তার ছোট্ট চেরা জিভ কুঁকড়িয়ে পেঁচালো দেখাল, তারপর আবার সোজা হয়ে গেল। ‘মনে হয় আমার ঘুম কম হয়েছে। তবে দুতিনদিনের মধ্যে হয়ে যাবে।’

    ‘হ্যাঁ। তবে কবে, কেমন করে আমি জানবো, যে সব ঠিকঠাক হয়েছে।

    ‘খুব সোজা’ আজাজেল্‌ বলল, ‘কটা দিন অপেক্ষা করে যাও, আর তারপর, জোরসে আসা ট্রাকের মুখে তোমার বন্ধুকে ঠেলে দাও যদি সে অক্ষত উঠে দাঁড়ায়, তবে বুঝবে, যা পরিমার্জনা করে দিয়েছি তা কার্যকরী হয়েছে। আর এখন যদি কিছু মনে না কর, আমি এক হাত খেলে আসতে চাই। তারপর বেচারী মধ্যমা মার কথা ভেবে, খেলা ছেড়ে উঠে আসবো। অবশ্যই আমার জয়লাভের পর।‘

    .

    ভেবো না, সে যে সম্পূর্ণ নিরাপদ, একথা ভিসারিওনকে বোঝাতে আমাকে বেগ পেতে হয়নি।

    ‘পৃথিবীর কোনো কিছুই আমার ক্ষতি করতে পারবে না?’ সে বলল, ‘কেমন করে জানলে, পার্থিব কোনো কিছুতেই আমার ক্ষতি হবে না?’

    ‘আমি জানি। দেখ, ভিসারিওন, তোমার বিশেষ জ্ঞান সম্পর্কে আমি প্রশ্ন করি না। যখন তুমি বল, সুদের হার কমতে চলেছে, কথার মারপ্যাচে যাই না, জিজ্ঞাসা করি না, কেমন করে জানলেন।’

    ‘আচ্ছা, বেশ ভাল। কিন্তু আমি বললাম, সুদের হার কমতে চলেছে আর তারপর তা উঠতির মুখে গেল, আর গেল না, অর্ধেকের বেশি সময়। তাতে তোমার অনুভূতিই আহত হবে, অন্য কিছু নয়। কিন্তু আমি যদি ভেবে নিই, পৃথিবীর কোনো কিছুই আমাকে আঘাত করতে পারবে না এবং কিছু যদি আমাকে আঘাত করে, তাহলে আঘাতের থেকে তা’ বেশি। আমি সত্যিই আহত।

    এই যুক্তিতে তর্ক করে কাজ হয় না। তবু আমি তর্ক করতে থাকলাম। অন্ততপক্ষে পদটি সম্পর্কে সাক্ষাৎ প্রত্যাখ্যান থেকে তাকে নিবৃত্ত হতে সম্মত করিয়ে, দিন কয়েক দেরি করার চেষ্টা করতে বললাম।

    ‘তারা দেরী মানবে না,’ সে বলল।

    কিন্তু কথাবার্তা নেই, জানা গেল, সেই দিনটি ব্ল্যাক ফ্রাই ডে’র বার্ষিকী আর সিডিআর তিন দিন শোক পালনকাল রেখেছে, মৃতের জন্য প্রার্থনা করতে।

    অতএব আপনা আপনিই দেরি হল আর তাতেও ভিসারিওন বিচলিত হয়ে ভাবল, হয়তো সে মনোরম জীবনই কাটাবে।

    অতএব শোক পালন পর্বের শেষে, যখন আবার সর্বসমক্ষে আসা হল, আমি তার সঙ্গে এক ব্যস্ত রাস্তা পার হচ্ছিলাম। ঠিক মনে নেই, কী করে এটা ঘটে গেল, হঠাৎ জুতোর ফিতে বাঁধতে নিচু হতে হল আর টাল সামলাতে না পেরে তার ঘাড়ে পড়লাম। তাতে সেও সামাল দিতে না পেরে, ট্রাফিকের লাইনে উল্টে গেল, আর, তক্ষুনি ব্রেককষা ও টায়ার ঘষটানোর সাংঘাতিক বিকট আওয়াজ তিনটে গাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেল।

    ভিসারিওন একদম অস্পৃষ্ট বেরিয়ে এল না। তবে চুল এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। চশমা একটু বেঁকে গিয়েছিল, তার ট্রাউজারের ডান হাঁটুতে এক ফোঁটা তেল পড়েছিল। যাইহোক, সেগুলো সে কর্তব্যের মধ্যে আনল না।

    ব্যাপক হত্যার দিকে তাকিয়ে সে বিমুঢ় হয়ে বলল, ‘আমাকে কেউ ছোঁয়নি। কী কাণ্ড। আমার কিছু হয়নি।’

    আর তার ঠিক পরদিনই সে বৃষ্টিতে আটকে গিয়েছিল রবার, বর্ষাতি, ছাতা কিছু সঙ্গে ছিল না। যাচ্ছেতাই ঠাণ্ডা বৃষ্টি, সেখানেও তার ঠাণ্ডা লাগেনি।

    তোয়ালে দিয়ে মাথা পর্যন্ত না মুছে, সে ফোন করে সভাপতির পদ গ্রহণ করেছিল।

    অবশ্যই বলব, উপভোগের সুন্দর ক্ষমতা ছিল তার। সে তার পারিশ্রমিক পাঁচ গুণ বাড়িয়ে দিল। তার ভবিষ্যদ্বাণীর প্রেক্ষিতে, আরো লাভের আশার পাগলামি ছাড়াই।

    যতই হোক, একজন মক্কেল সব কিছু আশা করতে পারে না। যদি পেশাদার কারো সঙ্গে পরামর্শ করার সময় কেউ অতুল্য সম্মান পায়, সে কি উপরি আরো উপদেশ পাওয়া যুক্তিযুক্ত মনে করবে!

    তাছাড়াও সে জীবনকে উপভোগ করত। কোনো ঠাণ্ডা লাগা নেই। কোনো সংক্রমণের ভয় নেই।

    সে নির্ভয়ে রাস্তা পার হত। তাড়া থাকলে লাল বাতি অগ্রাহ্য করেই আর তাতে ক্বচিৎই অন্যদের দুর্ঘটনা ঘটত। রাতে পার্কে প্রবেশ করতে তার কোনো দ্বিধা ছিল না। একবার রাস্তার এক গুন্ডা তার বুকে ছুরি চাপিয়ে, টাকা পয়সা চেয়েছিল।

    ভিসারিওন সেই তরুণ ধনিকের পুংস্থলীতে এক লাথি কষিয়ে, সোজা হেঁটে চলে গেল। লাথি খেয়ে গুন্ডার এমনই অবস্থা, সে পুনর্বার আক্রমণ করতে সাহস করল না।

    সেটা ছিল তার সভাপতিত্বের প্রথম বার্ষিকী, তার সঙ্গে আমার পার্কের ধারে দেখা হল। সেই উপলক্ষ্যে প্রামান্য লাঞ্চে সে চলেছিল। যেন এক সুন্দর ভারতীয় গ্রীষ্মকালীন দিবস। পার্কের বেঞ্চে যখন পাশাপাশি বসেছি, আমরা অনায়াস আরাম বোধ করছিলাম।

    ‘জর্জ,’ সে বলল, ‘আমার একটা সুখী বছর গেল।’

    ‘আমিও আনন্দিত।’ বললাম আমি।

    ‘এ যাবৎ অর্থনীতিবিদদের যে কারো চেয়ে আমার যশ বেশি। মাত্র সাত মাসে

    ‘এ্যামালগামেটেড’সুদ কোম্পানিকে সাবধান করেছি, ওদের ‘কনসোলিডেটেড’ সোপ সংস্থার সঙ্গে জুড়ে যেতে হবে, আর তারাও ‘মার্কড সোপ’ এর সঙ্গে যুক্ত হতে বাধ্য হয়েছে। প্রত্যেকেই পরমাশ্চর্য, আমার ভবিষ্যদ্বাণী কত কাছাকাছি যেতে পারে!

    ‘আমার মনে আছে,’ আমি বলি।

    ‘আর, এবার আমি তোমাকেই প্রথম বলব।’

    ‘হ্যাঁ, ভিসারিওন, বল।’

    ‘প্রেসিডেন্ট আমাকে যুক্তরাষ্ট্রের মুখ্য অর্থনীতিবিদের পদে আহ্বান করেছেন। আমি আমার স্বপ্ন ও বাসনার শীর্ষে পৌঁছাতে পেরেছি। এই দেখ।’

    আমার সামনে চমৎকার এক খাম বার করল, বাঁদিকের কোণে মুদ্রিত রয়েছে ‘হোয়াইট হাউস’ খাম খুলছি যখনই, এক অদ্ভুত আওয়াজ জিঙ্গ-গ্-গ্ যেন একটা গুলি কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল, আমি চোখের কোণে আলোর ঝলক দেখলাম।

    ভিসারিওন বেঞ্চির পাশে গড়িয়ে পড়ল, তার শার্টের সামনে এক দলা রক্ত, সন্দেহ নেই সে মৃত। কেউ কেউ যেতে যেতে, অবাক হয়ে থামল। কেউ চিৎকার করল, কেউ হাঁপাতে হাঁপাতে তাড়াতাড়ি চলে গেল।

    ‘ডাক্তার ডাক,’ আমি চিৎকার করে উঠলাম, ‘পুলিশ ডাক’।

    তারা এসে পড়ল তখনই, আর জানা গেল, একেবারে হার্টের মধ্যে দিয়ে গুলি গেছে, কোনো অনিশ্চিত শক্তিমানের বন্দুক থেকে, বা হয়তো কোনো মনোরোগী আড়াল থেকে গুলি করে পালিয়েছে।

    তাকে কখনোই ধরা যায়নি কিংবা কেউ গুলিরও খোঁজ পায়নি। ভাগ্যক্রমে অনেকেই সাক্ষী ছিল, যারা দেখেছে, সে সময়ে চিঠি হাতে আমি দাঁড়িয়েছিলাম। আমি কোনো কুকর্ম করতেই পারি না। নয়তো আমার সময় খারাপ যেতে পারত।

    বেচারি ভিসারিওন! সে ঠিক এক বছর সভাপতির পদে ছিল, এই রকমই হতে পারে, তার আশঙ্কা ছিল এবং তবু এতে আজাজেলের দোষ ছিল না। আজাজেল্‌ বলেছিল, পার্থিব জিনিসে ভিসারিওনের মৃত্যু হবে না। কিন্তু হ্যামলেট যেমন গুরুর মতন বলেছিল ‘স্বর্গে ও পৃথিবীতে আরো অনেক জিনিস রয়েছে, হোরেসিও, যা না শুধুই পৃথিবীতে রয়েছে।’

    ডাক্তার আর পুলিশ আসার আগে, আমি ভিসারিওনের পেছনেই বেঞ্চিতে ফুটো লক্ষ্য করেছিলাম, যে বস্তুটি আটকে ছিল, আমার পেন নাইফ দিয়ে সেটি খুঁটে তুলেছিলাম। সেটি তখনো গরম। কয়েক মাস পরে, ঠিক ওই রকমই একটা মিউজিয়ামে গিয়ে দেখতে পাই আর আমিই ঠিক। সেটা একটা ছোট্ট উল্কাপিণ্ড।

    সংক্ষেপে বলতে গেলে, ভিসারিওন পার্থিব কোনো বস্তু দ্বারা নিহত হয়নি। আমি অবশ্য একেবারেই চুপ ছিলাম, কারণ, ভিসারিওন গৃহমুখী ব্যক্তি ছিল। এ ধরণের প্রামাণ্য দলিল পেতে, সে ঘৃণা করত। এটা তার অর্থনীতির সমস্ত মহান কাজকে ডুবিয়ে দিত আর আমি তা অনুমোদন করতে পারি না।

    কিন্তু তার উন্নতির ও তার মৃত্যুর প্রতিটি বার্ষিকীতে আজকের দিনটির মতন আমি বসে বসে ভাবি। বেচারি ভিসারিওন! বেচারি ভিসারিওন!

    .

    জর্জ চোখ মুছল, রুমাল দিয়ে। আর আমি বললাম, পরবর্তী সভাপতির কি হয়েছিল? সে নিশ্চয়ই মাত্র ছয় মাস থাকতে পেরেছিল আর তার পরের জন তিন মাস আর তার পরের জন—

    জর্জ বলল, ‘থাক, অঙ্কের অত উচ্চ মানে গিয়ে কাজ নেই, বন্ধু। আমি তোমার কষ্টসহিষ্ণু পাঠকদের একজন নই। সে সব কিছুই ঘটেনি। মজাটা হল, ক্লাব নিজেই প্রকৃতির নিয়ম পাল্টে দিয়েছিল।’

    ‘আচ্ছা! কেমন করে করল সেটা?’

    ‘তাদের মনে হল, ক্লাবের নামটাই অভিশপ্ত, যা সভাপতিত্বের সময়কাল নিয়ন্ত্রণ করত। তারা শেষ দুটি শব্দের আদ্যক্ষর উল্টে দিল। সিডিআর থেকে বদলিয়ে সিআরডি।

    ‘সিআরডি মানে কি?’

    ‘দি ক্লাব অব র‍্যানাডম ডিস্ট্রিবিউশন’ অবশ্যই, জর্জ বলল, ‘আর পরবর্তী সভাপতি দশ বছর হয়ে গেল, বহাল তবিয়তে রয়েছে।’

    এবং যেই বেয়ারা আমাকে চেঞ্জ ফেরত দিল, জর্জ তার রুমালে উঠিয়ে নিয়ে, রুমাল আর নোট দুইই বুক পকেটে পুরল সানন্দে এবং প্রফুল্ল অভিবাদন জানিয়ে হেঁটে বেরিয়ে গেল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleব্ল্যাক ফেয়ারি টেইল – অৎসুইশি
    Next Article I, রোবট – আইজাক আসিমভ

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }