Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আজাজেল্‌ – আইজাক আসিমভ

    লেখক এক পাতা গল্প281 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    বিজয়ীর প্রতি

    আমার বন্ধু জর্জকে প্রায় দেখতেই পাই না, কিন্তু যখন দেখা হয়, সেই ছোট্ট জিন, যাকে সে ডেকে পাঠাতে পারে, তার খবর নেওয়া আমার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে।

    জর্জ আমাকে বলতো, ‘টেকো বুড়ো কল্পবিজ্ঞানের লেখকের বক্তব্য হচ্ছে, চিরাচরিত প্রথার ঊর্ধ্বে, যথেষ্ট উন্নত প্রযুক্তিকে যাদুর মতন মনে হতে পারে। এবং তবু, আমার ছোট্ট বন্ধু আজাজেল্‌ অপার্থিব অদ্ভুত নয়, কিন্তু এক যথার্থ জিন। সে মাত্র দুই সে.মি. লম্বা, তবে ‘চমৎকার’ দেখাতে পারে। কিন্তু তুমি তার কথা কেমন করে জানলে?

    ‘তোমার কাছ থেকে শুনে।’ জর্জের মুখে সোজা সোজা অসন্তোষের রেখা ফুটল, যেন সে সমাধি থেকে বলে উঠল, ‘আমি কক্ষনো আজাজেল্‌কে নিয়ে আলোচনা করিনি।’

    ‘হ্যাঁ, যখন তুমি বকবক কর, তখন ছাড়া,’ আমি বললাম, ‘আজকাল সে কী করছে?’

    জর্জ তার পায়ের আঙুল থেকে প্রশ্বাস টেনে এনে নিষ্কলুষ আবহাওয়ায় ভালমতন সুরাসিক্ত নিঃশ্বাস ছাড়ল, ‘তোমার জন্যে আমার মন খারাপ হয়ে গেল। আমার তরুণ বন্ধু থিওফিলাস, আমার ও আজাজেলের যৌথ প্রয়াসের পক্ষে খানিক নিকৃষ্টই ছিল, যদিও আমরা তার ভালই চাইছিলাম,’ মদের গ্লাস মুখে তুলে সে বলে চলল।

    ‘আমার বন্ধু থিওফিলাস (জর্জ বলল), ‘তাকে তুমি কখনো দেখনি, কারণ যে বৃত্তে তোমার প্রায়শ ঘোরাফেরা, সেই অর্থলোভীদের অনেক ঊর্ধ্বে সে বিচরণ করে। সে এক মার্জিত রুচির যুবা পুরুষ। তরুণীদের স্বাভাবিক সৌষ্ঠব ও স্বর্গীয় সুষমায় বিভোর- যে ব্যাপারে আমি সৌভাগ্যবশত রেহাইপ্রাপ্ত। কিন্তু মেয়েদের অনুপ্রাণিত করে, তাদের মনে সাড়া জাগাতে সে অক্ষম ছিল।

    সে আমাকে বলত, ‘জর্জ, আমি কোনো মতেই বুঝে উঠতে পারি না, আমার মহান হৃদয় রয়েছে। আমি কথোপকথনে নিপুণ, বুদ্ধিমান, দয়ালু, যথেষ্ট সুদর্শন-

    ‘হ্যাঁ’ আমি উত্তর দিতাম, ‘তোমার চোখ, নাক, চিবুক, মুখ সব ঠিক ঠিক জায়গায়, ঠিক ঠিক সংখ্যায় রয়েছে। আমি যত দূর দেখতে পাচ্ছি।’

    ‘আরো, প্রণয়তত্ত্বে আমি অবিশ্বাস্যরকমের ওয়াকিবহাল, যদিও অভ্যাস করার সুযোগ, এখনো পর্যন্ত মন পাইনি। তবু আমি কেন সুন্দরীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারি না? দেখুন, মেয়েরা চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু আমার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেষ্টাই করছে না। যদিও আমি অমায়িক আসনে বসে আছি।’

    আমার হৃদয় তার জন্য বিগলিত হলো। মনে পড়ল, যখন সে মায়ের দুধ খায়, সেই শিশু বয়সে আমি তাকে কোলে নিয়েছি। এসবেই তো প্রাণের টান জন্মায়। বললাম, ‘বন্ধু, মেয়েদের আকৃষ্ট করতে পারলে সত্যিই কি সুখী হবে?’

    সে সোজাসুজি বলল, ‘সে তো স্বর্গ।’

    তাকে কি আমি স্বর্গ থেকে বঞ্চিত করতে পারি! আমি ব্যাপারটা আজাজেল্‌কে জানালাম। স্বভাব মতন আজাজেল্ এ ব্যাপারে মৌন রইল। তারপর বলল, ‘তুমি কি আমার কাছে একটা হীরে চাইতে পারতে না? আমি একটা কয়লার টুকরোতে পরমাণুদের স্থান অদল বদল করে একটা ভাল আট ক্যারেট হীরে তৈরি করে দিতাম। কিন্তু মেয়েদের দুর্নিবার আকর্ষণ? কেমন করে পারব!’

    ‘কেন? থিওফিলাসের পরমাণুগুলো একটু সাজিয়ে গুছিয়ে দাও না!’

    আমি সাহায্য করতে এগিয়ে এলাম। ‘আমি ওর জন্য কিছু করতে চাই, অন্তত ওর মায়ের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে।’

    ‘আচ্ছা। আমাকে ভাবতে দাও! ‘মানুষ!’ আজাজেল্‌ বলে, ‘বিশেষ রসায়নের রসক্ষরণ! অবশ্যই আজকালকার দিনে, যে কোনো সুযোগে স্নান করে ফেলার পরে ও নকল সুগন্ধিতে সিক্ত হয়ে, তোমরা স্বাভাবিক আবেগ সম্পর্কে সচেতন থাকছ না। আমি হয়তো তোমার বন্ধুর জৈবরসায়ন গঠনের পুনর্বিন্যাস করতে পারব, যাতে ফলপ্রসূ হরমোনের অসামান্য পরিমাণে অসাধারণ রসক্ষরণ হবে, যখন তোমাদের মতন বিরক্তিকর প্রজাতির সৌষ্ঠবহীন মেয়েদের ছায়া তার অক্ষিপটে প্রতিফলিত হবে।

    ‘তার মানে, সে কি দুর্গন্ধ ছড়াবে?’

    ‘মোটেই নয়। এটা ঠিক সচেতন গন্ধ হিসাবে আসবে না। কিন্তু স্ত্রী জাতির ওপর এর প্রভাব পড়বে। কাছে আসবার, হাসবার এক হাল্কা কিন্তু দুর্দম কামনা জাগাবে। মেয়েটির শরীরেও প্রতিক্রিয়াস্বরূপ অনুরূপ রসক্ষরণ শুরু হবে আর আমি ধরে নিতে পারি, সব কিছুই ঘটবে পর পর, আপনাআপনি। যেন স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা।’

    ‘তাহলে বড় কথা হল’ আমি বলি, ‘আমি নিশ্চিত, তরুণ থিওফিলাস নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করবে’ উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও উৎসাহ নিয়ে সে এক সৎ যুবাপুরুষ।’

    আজাজেলের চিকিৎসা ফলবতী হচ্ছিল আমি আবিষ্কার করলাম। তখনই, যখন দৈবাৎ তাকে রাস্তার ধারে এক কাফেতে দেখে, ফেললাম। এক মুহূর্ত পরে সে আমার নজরে এসেছিল, কারণ প্রথম আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল বৃত্তাকারে এক ঝাঁক তরুণীর সমাবেশ। সৌভাগ্যবশত একটি বিশেষ বয়সে পৌঁছিয়ে, আমি আর তরুণীদের দেখে বিচলিত হই না। কিন্তু সেটা ছিল গ্রীষ্মকাল আর তরুণীদের প্রত্যেকেই হিসাব মতন হ্রস্ব পোশাকে সজ্জিত ছিল আর আমি, যতটা বিশিষ্ট মানুষের পক্ষে শোভা পায়, সেই মতো তাদের দিকে চোখ রেখেছিলাম।

    নজর করলাম এক বিশেষ জায়গায় চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে, এখানে- সেখানে নয়। কয়েক মিনিট কেটে যাওয়ার পর লক্ষ্য করলাম আর কেউ নয়, থিওফিলাসই সেই বৃত্তীয় বিন্যাসের মধ্যমণি এবং গ্রীষ্মকালীন রমণীদের ধ্রুবতারা। পিতৃসুলভ হাসি, সস্নেহদৃষ্টি ও কখনও কাঁধে সাদর চপেটাঘাতসহ, আমি সেই নারী আধারিত বৃত্তে আমার পথ করে নিয়ে, থিওফিলাসের পাশে যে চেয়ারে বসলাম সেটি একটি লাস্যময়ী তরুণী অধৈর্যভাবে ঠোঁট ফুলিয়ে খালি করে দিল।

    ‘থিওফিলাস’ আমি বলি, ‘এতো চমৎকার আকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য।’

    এক আতঙ্কজনক বিষণ্নতার ছোট্ট ভ্রূকুটি থিওফিলাসের মুখে খেলে গেল। আমি উদ্বিগ্ন হলাম, ‘কী হয়েছে কী?’

    সে ঠোঁট না নাড়িয়ে, চুপি চুপি স্বরে বলল, ‘ঈশ্বরের দোহাই, আমাকে এখান থেকে বার করে নিয়ে চলুন।’

    তুমি তো জান, আমি এমনই একজন মানুষ, যার সাহায্য করার নানান উপায় সর্বদা নখদর্পণে। মুহূর্তমাত্র লাগল আমার প্রস্তুত হতে। উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘ভদ্রমহোদয়গণ, আমার তরুণ বন্ধুর হঠাৎ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার প্রয়োজন পড়েছে, তাকে টয়লেটে যেতে হবে। আপনারা অপেক্ষা করুন, সে এখুনি ফিরে আসছে।’

    আমরা ছোট্ট রেস্তোঁরার মধ্যে ঢুকে, পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলাম। তরুণীদের মধ্যে একজন যার বাহুর পেশী বিশ্রীভাবে অস্বাভাবিক স্ফীত, একরাশ সন্দেহ নিয়ে অশালীন তৎপরতায় আমাদের পিছু নিয়ে রেস্তোঁরার পিছনের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা সময় মতন দেখতে পেয়ে, ট্যাক্সিতে উঠে পড়তে পারলাম। মেয়েটি ভয়াবহ দ্রুতগতিতে দুটো ব্লক আমাদের অনুসরণ করেছিল।

    থিওফিলাসের ঘরে নিরাপদে পৌছিয়ে গেলাম, ‘তুমি তাহলে তরুণীকে আকৃষ্ট করার গোপন তত্ত্ব আবিষ্কার করে ফেলেছ?’

    ‘একেবারেই নয়,’ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে আরাম করতে করতে থিওফিলাস বিশদ হ’ল’

    ‘ওরা পরস্পরকে সামলায়। অমি জানি না ওটা কি করে ঘটল। কিন্তু কিছুদিন আগে, হঠাৎ আবিষ্কার করলাম, যে অদ্ভুত তরুণীরা আমার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করছে, আটলান্টিক সিটিতে বোধহয় আমাদের দেখা হয়েছিল।’

    থিওফিলাস অবজ্ঞা ভরে উত্তর দিয়েছে, ‘আমি কখনো আটলান্টিক সিটিতে যাইনি।’ সেই সত্য স্বীকার করতে না করতে, অন্য এক মহিলা যেচে পড়ে এসে বলছেন, তক্ষুনি আমার রুমাল পড়ে গেছে, তিনি ফেরত দিতে চান। পরক্ষণেই তৃতীয় মহিলা এসে দাঁড়ালেন, ‘একসঙ্গে সিনেমা দেখতে গেলে কেমন হয়?’

    আমি বলি, ‘তোমাকে যা করতে হবে, তা হল, এদের মধ্যে একজনকে বেছে নাও। আমি হলে, যে সিনেমায় যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল তাকেই বেছে নিতাম। কোমল জীবন আর তুমি কোমল তরুণী পরিবৃত হয়ে রয়েছ।’

    ‘কিন্তু আমি তো যে কাউকে তুলতে পারি না। ওরা পরস্পরকে শকূনের মতন নজরে রাখছে। যেই দেখা যাচ্ছে, আমি বিশেষ কারো ওপর আকৃষ্ট, অম্‌নি বাকিরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, তার চুল টেনে, তাকে বার করে দিতে চাইবে। আমি আগের মতোই রমণী-বিহীন রয়ে গেছি। পুরনো দিনে তাও তো যেসব নারী উন্নত বক্ষে আমার দিকে এগোত, সেদিকে তাকাতে তো পারতাম!’

    সহানুভূতির সাথে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমি বললাম, ‘বাতিল করার প্রতিযোগিতার বন্দোবস্ত করলে কেমন হয়! যেমন তুমি আজকাল রমণী পরিবৃত হয়ে রয়েছ। ওদের বল ‘তুমি প্রত্যেকের প্রতি ভীষণভাবে আকৃষ্ট। নামের বর্ণানুক্রম অনুসারে সবাই একলাইনে খাড়া হয়ে যাও, যাতে প্রত্যেকেই আমাকে একবার চুমু খেতে পার। যার চুম্বনে রুচিপূর্ণ শ্রেষ্ঠ সমর্পণ থাকবে সে আজ রাতে আমার অতিথি। এর সবচেয়ে মন্দ দিক হল, তুমি প্রচুর আগ্রহী চুম্বন লাভ করবে।’

    ‘হ!’ থিওফি নাস সন্তুষ্ট ‘কেন নয়? বিজয়ীর কাছে লুণ্ঠন আসে আর আমি প্রকৃত বিজয়ীর কাছে লুণ্ঠিত হতে চাইব।’ সে তার ঠোঁট চেটে নিয়ে, ওষ্ঠ দৃঢ়বদ্ধ করল এবং বাতাসে চুম্বন অভ্যেস করতে শুরু করল, ‘আমার বোধ হয়, আমি ঠিক সামলাতে পারব। আপনার কি মনে হয়, চুম্বনের সময়, হাত পিছনে রাখাই কম ক্লান্তিকর হবে?’

    ‘মোটের ওপর আমি তা মনে করি না, থিওফিলাস, বন্ধু আমার। এই উপলক্ষ্যে, উদ্যোগ তোমাকে নিতেই হবে। ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতি ঠিক কিনা সে সম্পর্কে আমার সংশয় রয়েছে।’

    ‘ঠিকই বলেছেন যার প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে, তার উপদেশের সামনে, এসব ব্যাপারে নিজের অভিমত আঁকড়ে থাকা যুক্তিযুক্ত নয়।’

    এই সময়ই আমাকে কাজের খাতিরে বাইরে যেতে হল, আর পরবর্তী এক মাসের মধ্যে থিওফিলাসের সঙ্গে দেখাই হল না। সেটা ছিল একটা সুপার মার্কেট আর প্রচুর মুদিখানার জিনিসপত্র ভর্তি করে কার্ট ঠেলছিল থিওফিলাস। তার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি দারুণ কষ্ট পেলাম। সে এমনভাবে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি, যেন সে কোনো কিছুর শিকার হয়ে পড়েছে।

    আমি কাছে আসতেই সে মাথা নিচু করে চিৎকার করে উঠল। পরক্ষণেই আমাকে চিনতে পেরে বলল, ‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। আমি ভেবেছিলাম, বুঝি বা কোনে। স্ত্রীলোক!’

    মাথা নাড়ালাম, ‘এখনো একই সমস্যা? তুমি তাহলে বাতিল করার প্রতিযোগিতার আয়োজন করনি!’

    ‘চেষ্টা করেছিলাম, সেটাই তো গণ্ডগোল।’

    ‘কী হয়েছিল?’

    ‘বেশ!’ এদিকওদিক তাকিয়ে ধারের দিকে সরে এসে উঁকি মেরে এক গলিতে ঢুকে পড়ল। তারপর, নিশ্চিন্ত জায়গা দেখে, নিচু স্বরে তাড়াহুড়ো করে বলতে শুরু করল, যেন কথাগুলো খুবই জরুরি ও সময় নিতান্ত অল্প।

    ‘বন্দোবস্ত করিলাম,’ সে বলল, ‘সবাই ফর্ম ভরেছিল, বয়স, মাউথওয়াশ কোম্পানির নাম, প্রশংসাপত্র, সবকিছুই প্রচলিত রীতি অনুযায়ী দিয়েছিল। তারপর আমি দিন স্থির করেছিলাম। ওয়ালডর্ফ অ্যাসটোরিয়ার গ্র্যান্ড বলরুমে ব্যবস্থা করেছিলাম। প্রচুর ওষ্ঠ মলম মজুত রেখেছিলাম। পেশাদার মালিশের লোক ও এক ট্যাঙ্ক অক্সিজেনও ছিল, আমাকে সতেজ রাখার জন্য।

    কিন্তু প্রতিযোগিতার আগের দিন একটি লোক আমার কাছে এল। বলছি বটে একটা লোক। কিন্তু আমার বিস্ফারিত চোখের সামনে দাঁড়িয়েছিল যেন মানুষের মতন দেখতে ইটের স্তূপ। সাতফুট লম্বা, পাঁচফুট চওড়া, জাহাজের বেলচার মতন মুষ্টি। যেন বিষদাঁত বার করে হাসল, ‘মশাই, আগামীকাল প্রতিযোগিতার জন্য আমার ভগিনী একজন প্রার্থিনী।

    ‘শুনে বড় আনন্দ হল,’ আলোচনাকে মিত্রভাবে রাখতে চাইলাম আমি।

    ‘আমার ছোট বোনটি’ সে বলে চলল, বংশের রুক্ষ বৃক্ষে এক কমনীয় পুষ্প। আমার তিন ভাই ও আমার চোখের মণি। আর, আমরা কেউই চাই না, তাকে হতাশ হতে হয়।’

    ‘আপনার ভাইরা কি আপনার মতো দেখতে?’ আমি অনুসন্ধিসু হই।

    ‘একেবারেই নয়।’ দুঃখের সঙ্গে সে বলল, ‘আমি সারা জীবন বেঁটে আর রোগা রইলাম। আমার ভাইদের চমৎকার পুরুষালি চেহারা। তারা এতটা লম্বা’ বলে, সে মাটি থেকে হাত তুলে সাড়ে আট ফুট মতন উচ্চতা নির্দেশ করল।

    ‘আমি নিশ্চিত,’ ঐকান্তিক আগ্রহ দেখিয়ে বলি, ‘আপনার রূপসী ভগিনীর চান্স খুব বেশি।’

    ‘শুনে খুব আনন্দিত হলাম। আসলে হতভাগ্য আমার, ছোট চেহারার ক্ষতিপূরণ হিসাবে, আমি দ্বিতীয় দৃষ্টির অধিকারী। আমি নিশ্চিত আমার বোনই প্ৰতিযোগিতায় বিজয়িনী হবে। তবে অজ্ঞাত কারণে আমার ছোট্ট বোনের বালিকাসুলভ ছন্দে তুমি এসে পড়েছ আর আমার ভাইরা এবং আমি শিকারী কুকুরের চেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে যাব, যদি আমার বোনকে হতাশ হতে হয়। আর, যদি আমরা আরো বিকৃতভাবে বিষদাঁত বার করে হাসল সে। তারপর ধীরে ধীরে ডান হাতের আঙুল মটকাতে লাগল। এমন শব্দ হচ্ছিল, মনে হল যেন উরুর হাড় ভাঙছে পটাপট। যদিও কখনো উরুর হাড় ভাঙার শব্দ শুনিনি কিন্তু ঐ দ্বিতীয় দৃষ্টির উচ্ছ্বাস আমাকে বলে দিল, সেই শব্দ কেমন ছিল।

    ‘আমারও মনে হচ্ছে, মশাই, আপনিই ঠিক। আপনি কি পাত্রীর কোনো ফটো সঙ্গে এনেছেন?’

    ‘অতিরিক্ত হিসাবে, কাছেই রয়েছে,’ ফ্রেমে বাঁধানো একটি ফটো এগিয়ে দিল আর মুহূর্তের জন্য আমার মনে হলো, আমার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেল। আমি বুঝলাম না, কেমন করে সে প্রতিযোগিতায় জিতবে।

    এবং তবু ঐ দ্বিতীয় দৃষ্টির পশ্চাতে কিছু ছিল, যাতে তরুণীটির মধ্যে স্থুল অস্বাভাবিকতা থাকা সত্ত্বেও সে পরিষ্কার জিতে গেল। তথ্যটি ঘোষিত হওয়া মাত্র, প্রায় দাঙ্গা বেধে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু বিজয়িনী একাই চমৎকার তৎপরতায় ঘর সাফ করে ফেললেন। এবং তারপর থেকে দুর্ভাগ্যবশত নয়, সৌভাগ্যবশত আমরা পরস্পর আর বিচ্ছিন্ন হতে পারিনি।

    আসলে সে এখন মাংসের দোকানে ঘুরছে। বিরাট মাংসাশী। কখনো কখনো রান্না করা।

    আমি বিতর্কিত মেয়েটিকে দেখলাম এবং তক্ষুনি চিনে ফেললাম। এই সেই তরুণী, যে দুই ব্লক পর্যন্ত আমাদের ট্যাক্সিকে তাড়া করেছিল। নিঃসন্দেহে দৃঢ়চিত্ত মহিলা। মেয়েটির ঢেউ খেলানো বাহুর পেশী, শক্ত পায়ের গুলি আর শৈলশ্রেণীর ন্যায় দুই বলিষ্ঠ ভ্রূর তারিফ করতেই হয়।

    বললাম, ‘তুমি বোঝ থিওফিলাস। মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ তোমাকে আগের মতন কমিয়ে ফেলতে হবে

    থিওফিলাস নিঃশ্বাস ছাড়ল, ‘তাতে আমি নিরাপদ নই। আমার বাগদত্তা আর তার মস্ত প্রাণবন্ত ভাইরা যদি মনে করে, আমি ওর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছি। অবশ্য এরও ক্ষতিপূরণ রয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, যত গভীর রাতেই শহরের যে কোনো পথেই হাঁটি না কেন, তা সে যতই বিপজ্জনক হোক, ও যদি আমার সঙ্গে থাকে, তবে আমি সম্পূর্ণ নিরাপদ।

    সবচেয়ে অবুঝ ট্রাফিক পুলিশও মিষ্টি হয়ে ওঠে, যদি ও একবার তার দিকে ভ্রূকুটি আনে। তার প্রেম প্রদর্শনে সে সব নবনব ভাবে, বহুমুখী। না জর্জ, আমি নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। সামনের মাসের পনেরো তারিখ আমরা বিয়ে করব। তার, ভাইরা ভাঙা পুরনো গাড়ি মেরামতি ঘষামাজা করে নতুন করে তোলার ব্যবসায় সৌভাগ্য স্তূপীকৃত করেছে। কারণ, তারা মাথা খাটাবার চেয়ে, হস্তবলেই অধিক বিশ্বাসী। এটা ঠিক কখনো আমার ইচ্ছে- ‘

    অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার দৃষ্টি গলি থেকে তারই দিকে ধাবমানা এক তন্বী তরুণীর প্রতি পড়ল। মেয়েটি থিউফিলাসকে দেখা মাত্র, আতঙ্কিত হয়ে পড়ল থিওফিলাস। ‘ক্ষমা করুন’ বলে মেয়েটি শরমে জড়িত সুমধুর সুরে থিওফিলাসকে বলল, ‘সম্প্রতি কি আমাদের টার্কিশ স্নানে দেখা হয়েছিল?’

    আর তক্ষুনি আমাদের পশ্চাতে ভারী পায়ের আওয়াজ আর সাথে সাথে ফুঁসে ওঠা পুরুষালি কণ্ঠস্বর শোনা গেল ‘থিউফিলাস, আমার সোনা, এই দুশ্চরিত্রা মেয়েটি কি তোমাকে বিরক্ত করছে? থিউফিলাসের ‘প্রেমের আলো’ মেয়েটির কপাল মস্ত ভ্রূকুটিতে শক্ত হয়ে উঠেছে। সে তরুণীটার ওপর ঝাঁপিয়ে এল, মেয়েটি তো ভয়েই কাঁটা।

    আমি ঝটতি দুই নারীর মাঝখানে নিজেকে ঠেলে দিলাম, অবশ্যই যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়ে। কিন্তু আমি তো সব সময়েই সিংহের ন্যায় সাহসী। বললাম, এই মিষ্টি মেয়েটি আমার ভাগ্নী, মহাশয়া। দূর থেকে আমাকে দেখতে পেয়ে চুপিচুপি ছুটে আসছে। আমার কপালে শ্রদ্ধার চুমো খেতে, আমার কাছেই। এ মেয়ে, ও ঘটনাচক্রে থিউফিলাসও এখানেই দাঁড়িয়ে আছে। এটা একেবারেই কাকতলী ব্যাপার, থিউফিলাসকে অবশ্য ভাগ্নী লক্ষই করেনি।’

    যে কুৎসিত সন্দেহের রেখা আমি থিউফিলাসের বাগদত্তার মুখে, প্রথম, সাক্ষাতের সময় দেখেছিলাম, পুনরায় তা প্রত্যক্ষ করে যন্ত্রণাবিদ্ধ হলাম।

    ‘আচ্ছা! তাই-ই!! তাহলে, আপনারা এখন এখান থেকে কেটে পড়ুন। দুজনেই। এই মুহূর্তে।’

    মোটের ওপর সেটাই যুক্তিযুক্ত বিবেচনা করলাম। থিওফিলাসকে তার নিজের ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে, সুন্দরী তরুণীকে বাহুলগ্ন করে এগিয়ে গেলাম।

    ‘আচ্ছা মশাই,’ তরুণীটি বলল, ‘সাংঘাতিক সাহস আর বুদ্ধির তৎপরতায় কাজ করেছেন। যদি আমার উদ্ধারে এগিয়ে না আসতেন, তবে আমাকে ক্ষতবিক্ষত ও

    আহত হতে হত।

    বীর পুরুষের কায়দায় বললাম, ‘তোমার কোমল দেহ ক্ষতবিক্ষত বা আহত হওয়ার জন্য সৃষ্টি হয়নি। চল, তুমি না টার্কিশ স্নানের কথা বলছিলে! এসো আমরা দুজনে সেটাই সম্পন্ন করি, আমার অ্যাপার্টমেন্টে। ঘটনাচক্রে আমার একটা বাসস্থল রয়েছে। সেখানে আমরা অন্তত আমেরিকান স্নানে যেতেই পারি। ধর্মত তা একইরকম হবে।’

    যতই হোক, বিজয়ীর প্রতি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleব্ল্যাক ফেয়ারি টেইল – অৎসুইশি
    Next Article I, রোবট – আইজাক আসিমভ

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }