Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আজাজেল্‌ – আইজাক আসিমভ

    লেখক এক পাতা গল্প281 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    গুরু গুরু ডম্বরু

    বন্ধু জর্জ, আমাকে কী বলে, তা বিশ্বাস না করতে আমি যথেষ্ট চেষ্টা করি। কেমন করে একটা লোককে বিশ্বাস করা সম্ভব, যে বলে, আজাজেল্‌ নামে দুই সে.মি. এক জিনের কাছে সে সহজেই পৌঁছে যায়। জিনটি এক অপার্থিব চরিত্র এবং সীমিত হলেও অসামান্য শক্তির অধিকারী। তার নীল চোখের মধ্য দিয়ে আমার দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে নিজের বকবকানিতে তখনকার মতন বিশ্বাস জাগিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তার ছিল। আমার মনে হয় এটা ছিল বিশেষ মদিরার প্রভাব।

    এক সময়ে জর্জকে বলেছিলাম, তার ছোট্ট জিন তাকে মৌখিক সম্মোহনের ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু জর্জ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলত, ‘মোটেই না।’ যদি সে সত্যিই কিছু দিয়ে থাকত আমায়, তাহলে লোকের বিশ্বাস অর্জন করতে এটা একটা অভিশাপ, কেননা আজাজেলের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার বহু পূর্বেই আমার ভাগ্যের এই অবনতি ঘটেছে। অসাধারণ ব্যক্তিরা তাদের দুঃখের কাহিনী শুনিয়ে আমার মনের বোঝা বাড়িয়ে দেয়।

    ‘আর সময় সময়,’ দারুণ মনমরা হয়ে সে মাথা নাড়ল ‘ফলত কখনো কখনো সে ভার আমাকে বইতে হয়। রক্তমাংসের মানুষের কেউই ততটা সহ্য করতে পারে না। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, একবার আমার হানিবাল ওয়েস্ট নামে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়।

    ‘আমি তাকে প্রথম নজর করি’ (জর্জ বলল), যে হোটেলে আমি ছিলাম, তারই লাউঞ্জে। প্রথমত সে আমার লক্ষ্যে এল, কারণ সে স্বল্পবাসে সজ্জিতা অপরূপা মূর্তি প্রতিম এক পরিচারিকাকে দৃষ্টির আড়াল করছিল। আমার মনে হয়, সে ভাবছিল আমি বুঝিবা তারই দিকে তাকিয়ে রয়েছি, যা আমি ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো করিনি এবং সে ওটাকেই বন্ধুত্বের সূচনা হিসেবে ভুল করেছিল। নিজের পানীয়টি নিয়ে সে আমার টেবিলে চলে এল এবং আমার অনুমতির অপেক্ষা না করেই, বসেও পড়ল। স্বভাবে আমি সজ্জন। অতএব তাকে বন্ধুসুলভ আপ্যায়নে স্বাগত জানালাম। সে শান্তভাবে তা গ্রহণ করল। বেলে রঙের কেশমন্ডিত মস্তক, বিবর্ণচক্ষু ও তেমনই বিবর্ণ আননে ঘনীভূত কঠিন চাহনি, তার আগে আমার নজরে আসেনি।

    ‘আমার নাম, সে বলল, হানিবাল ওয়েস্ট।’ আমার বিশেষ আকর্ষণের ক্ষেত্র হল Speleology. আপনি নিশ্চয়ই কোনোক্রমে স্পেলিওলজিস্ট নন! আমার তক্ষুনি মনে হল, সে বোধকরি এক স্বগোত্রীয় ব্যক্তি আবিষ্কার করে ফেলেছে। তেমন সম্ভাবনায় আমি উদ্দীপ্ত হলেও সৌজন্যে বিনয়ী রইলাম।

    ‘আমি সব আশ্চর্য শব্দ সম্পর্কে আগ্রহী,’ বললাম আমি, ‘স্পেলিওলজি কী!’

    ‘গুহা!’ সে বলল ‘

    ‘গুহা কন্দরে অভিযান ও অনুশীলন। মশাই, এটাই আমার সখ। অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া প্রতিটি মহাদেশের গুহায় অভিযান সম্পন্ন করেছি আমি। বিশ্বের যে কারোর চেয়ে আমি গুহা সম্পর্কে অনেক কিছু জানি।’

    ‘অতি চমৎকার,’ আমি বলি, ‘এবং প্রশংসনীয়।’ এই বলেই আমি অপ্রিয় সাক্ষাৎ পর্ব শেষ করলাম ভেবে, পরিচারিকাকে ডাক দিলাম আমাকে নতুন পানীয় ভরে দেওয়ার জন্য। এবং বিজ্ঞান সংক্রান্ত চিন্তাধারায় ডুবে গিয়ে পরিচারিকার তরঙ্গায়িত চলনে দৃষ্টি দিলাম।

    হানিবাল ওয়েস্ট, আমার প্রসঙ্গ শেষ করে দেওয়ার ব্যাপারটা বুঝলই না।

    ‘হ্যাঁ,’ জোরসে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে সে বলল, ‘তাহলে আপনি বলছেন এটা প্রশংসনীয় কাজ। পৃথিবীর অন্তর্গত আশ্চর্য সব গুহাকন্দরে আমি অভিযান চালিয়েছি, যেখানে তৎপূর্বে কোনো মানুষের পদচিহ্নই পড়েনি। আমিই প্রথম সেসব গুহায় প্রবেশ করেছি এবং কতিপয় মানুষের মধ্যে একজন হয়ে জীবিত রয়েছি। অনাবিষ্কৃত গুহাকন্দরের বদ্ধ বাতাসে প্রথম প্রশ্বাস গ্রহণ করেছি। আমিই প্রথম মানুষ, যে সেখানকার দৃশ্য অবলোকন করেছে, শব্দ শুনেছে, যা ইতিপূর্বে কেউ দেখেনি অথবা শোনেনি এবং বেঁচেবর্তে রয়েছি।’ বলেই সে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ল।

    ইতোমধ্যে আমার পানীয় এসে গিয়েছিল। পরিচারিকা যেভাবে সম্মান জানিয়ে, আনত হয়ে আমাকে পানীয় এগিয়ে দিল, তাতে তাকে মনে মনে অভিনন্দন জানিয়ে, সেটি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করলাম। ঠিক কী বলছি, সে দিকে খেয়াল না দিয়ে, আমি বললাম, ‘আপনি ভাগ্যবান পুরুষ!

    ‘নাঃ, আমি তা নই।’ ওয়েস্ট বলল ‘যে মনুষ্যত্বের অপরাধের ওপর প্রতিশোধ নিতে গিয়েছিল, এমন লোভনীয় পাপী হিসাবে ঈশ্বর আমাকে অভিহিত করবেন।’ এবার আমি তার দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে এক অন্ধ গোঁয়ার্তুমির ছায়া দেখলাম, যা আমাকে দেওয়ালে ঠেকিয়ে দিল।

    ‘গুহার মধ্যে?’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

    ‘গুহার মধ্যে, সে গম্ভীর স্বরে বলল, ‘বিশ্বাস করুন। জিওলজির অধ্যাপক হিসাবে, আমি জানি, আমি কী বলছি।

    জীবনে আমি বহু অধ্যাপকের সাক্ষাৎ পেয়েছি, কিন্তু কারো কাছেই এমন কথা শুনিনি। কিন্তু আমি সত্য গোপন করে গেলাম। হয়তো বা ওয়েস্ট আমার চোখের ভাষায় তা পড়ে থাকবে, কারণ সে পায়ের কাছে রাখা ব্রিফকেস থেকে কাগজের একটা কাটিং আমার সামনে মেলে ধরল।

    ‘এখানে,’ সে বলল, ‘একটিবার দেখুন!’

    আমি বলতে পারব না। তাতে সত্যিই সারগর্ভ কিছু ছিল কিনা। কোনো স্থানীয় সংবাদের মাত্র তিনটি অনুচ্ছেদ। শিরোনাম লেখা ‘এক মৃদু গুরুগম্ভীর আওয়াজ’ আর জায়গাটা হচ্ছে, নিউইয়র্কের পূর্ব ফিকিল্। স্থানীয় বাসিন্দাদের এক অনুযোগের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, এক ক্ষীণ গুরু গম্ভীর আওয়াজে তারা পীড়িত ও শহরের কুকুর-বিড়াল তাতে উত্যক্ত হয়ে উঠছে। পুলিশের বক্তব্য, ওটি ছিল মেঘের ক্ষীণ গুরু গম্ভীর নিনাদ, যদিও আবহাওয়া দপ্তর ঐ অঞ্চলে ঐদিন মেঘ গর্জন বা বজ্ৰ বিদ্যুতের কোনো তথ্য দেয়নি।

    ‘এ বিষয়ে আপনার কী মত? ওয়েস্ট জিজ্ঞাসা করল।

    ‘মনে হয় মহামারীর আকারে বদহজম এসেছিল।’

    ওয়েস্ট নাক সিঁটকালো। কারণ, আমার অভিমত তার মনঃপূত হল না, যদিও যাদের বদহজম হয়েছে, তারাও কিন্তু এ বিষয়ে কিছু বিবেচনা করেনি।

    সে বলল, ‘লিভারপুল, ইংল্যান্ড, বোগোটা, মিনান, কলম্বিয়া, ইটালি, রেঙ্গুন, বার্মা এবং সম্ভবত পৃথিবী জুড়ে আরো অর্ধশত অঞ্চল থেকে অনুরূপ তথ্য ছিল। সকলই মৃদু গুরু গুরু নিনাদের অভিযোগ জানিয়েছে, যাতে যুগপৎ আশঙ্কা ও অস্বস্তি ছড়িয়েছে এবং জন্তু জানোয়ারদের ক্ষিপ্ত করে তুলেছে। এবং সব সংবাদই দুদিনের অন্তর্বর্তী ব্যবধানে।

    ‘বিশ্বব্যাপী একটি একক ঘটনা,’ আমি বলি।

    ‘একদম ঠিক। প্রকৃতই বদহজম,’ আমার দিকে ভ্রূকুটি হেনে পানীয়ে চুমুক দিল ওয়েস্ট। তারপর বুক চাপড়াল, ঈশ্বর আমার হাতে এক অস্ত্র তুলে দিয়েছেন আর সেটি আমাকে কাজে লাগাতে হবে।’

    .

    ‘এটা কী ধরনের অস্ত্র?’ আমি বললাম। সরাসরি উত্তর না দিয়ে সে বলল, ‘বাস্তবিক গুহাটি আবিষ্কার করেছিলাম, কিন্তু দৈবক্রমে। সেই গুহাকে স্বাগত জানান যায়, যেমন যে গুহার উন্মুক্ত মুখ খোলাখুলি নিজের বিজ্ঞাপন জাহির করে, সে সাধারণের সম্পদ, সহস্র জনের আশ্রয়দাতা হতে পারে। একটা গুপ্ত সঙ্কীর্ণ মুখের গুহা দেখাতে পারেন যদি, যা আগাছা জঙ্গলে ভর্তি, প্রস্তর স্তূপে ঢাকা বা ঝর্নার আড়ালে আত্মগোপন করে এক দুর্ভেদ্য দুর্গম অঞ্চলে বিরাজ করছে, আমি আপনাকে দেখিয়ে দেব অনাহত গুহা কতটা পর্যবেক্ষণ যোগ্য! আপনি তো বলেছেন, আপনি স্পেলিওলজির কিছুই জানেন না।’

    ‘আমি অবশ্যই গুহা পরিভ্রমণ করেছি, ভার্জিনিয়ার লুরে ক্যাভার্নস।’

    ‘ওতো বাণিজ্যিক ব্যাপার। ওয়েস্ট আমাকে নস্যাৎ করে দেয়, মুখ বাঁকিয়ে যেন মেঝেতে থুথু ফেলার জায়গা খুঁজতে থাকে, ভাগ্যবশত খুঁজে পায় না।

    ‘সেহেতু আপনি গুহারহস্য উন্মোচনের স্বর্গীয় আনন্দের কিছুই জানেন না,’ সে বলে চলল, ‘কোথায় আমি সেই গুহা খুঁজে পেয়েছিলাম, সে প্রসঙ্গ উত্থাপন করে আপনাকে বিরক্ত করবো না। অবশ্য নব নব গুহা অভিযানে সঙ্গী ছাড়া যাওয়া একেবারেই নিরাপদ নয়, কিন্তু যতই হোক, কেউই যে নেই, যে এ বিষয়ে আমার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে! একথা লুকিয়ে লাভ নেই, আমি সিংহের ন্যায় সাহসী।

    এই অভিযানে বাস্তবিক সৌভাগ্যের বিষয়, আমি একা ছিলাম। কারণ আমি যা আবিষ্কার করেছিলাম, অন্য কোনো মানুষের পক্ষে তা সম্ভব ছিল না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে, যখন আমি এক বিশাল নিঃশব্দ ঘেরা জায়গায় প্রবেশ করলাম, সেখানে ফোঁটা ফোঁটা জলচুঁইয়ে পড়ে, সৃষ্ট চূণের দণ্ডসমূহ মাথার ওপর দোদুল্যমান এবং পায়ের কাছে ও আশেপাশে খাড়া সে এক জাঁকজমকের দৃশ্য বলা চলে। আমি এসবের মধ্যে দিয়ে পথ করতে করতে, সাবধানে এগোতে লাগলাম পিছনে সুতোর কুণ্ডলী ছাড়তে ছাড়তে। কারণ, পথ হারানোর সখ আমার ছিল না। পাশেই এক পুরু চূণের দণ্ড অতিক্রান্ত হলাম, যেটা স্বাভাবিক প্রস্তরের ভাঙনে স্থানচ্যুত হয়েছে। এক পাশে চুনাপাথরের স্তূপ। এখানে হঠাৎ থামতে হল, মনে হয়, হয়তো কোনো জানোয়ার পালাতে গিয়ে অন্ধকারে চূনের দণ্ডে ধাক্কা খেয়েছিল অথবা মৃদু ভূকম্পের ফলস্বরূপ অপেক্ষাকৃত হাল্কা চূনের দণ্ডটি ভেঙে পড়েছিল।

    যাই হোক, চুনাপাথরের স্তূপের শিখর তখন মসৃণ সমতল, যা আমার বৈদ্যুতিক বাতিতে চক্‌চক্ করে উঠল। প্রায় গোলাকার ও বলতে গেলে এক ড্রাম সদৃশ এর আকার। এতটাই ড্রামের আকৃতি পেয়েছে, যে নিজের অজান্তেই ডান হাতের তর্জনী দিয়ে সেটিতে নরম আঘাত করে ফেললাম। বাকি পানীয় এক ঢোকে গলাধঃকরণ করে, সে বলল, ‘ওটাকে ড্রাম বলাই যুক্তিযুক্ত, অন্তত আকৃতিতে অন্য কিছু বলা যায় না।

    অঙ্গুলি দ্বারা স্পর্শ করা মাত্র স্পন্দন উঠল। আর মৃদু গম্ভীর আওয়াজে ঘর ভরে গেল। এক অস্পষ্ট শব্দ, যার বেশিটাই অশ্রুত, সামান্যই শ্রবণগ্রাহ্য। বাস্তবিকই, আমি পরে পরেই আবিষ্কার করলাম, তীব্র নাদে থাকা সত্ত্বেও নগণ্য ভগ্নাংশে শ্রুতিগ্রাহ্য হল। প্রায় সমস্ত শব্দই শক্তিশালী স্পন্দনে অতি ধীর গতিতে কর্ণকুহরে প্রবেশ করল। যদিও সমস্ত শরীর সেই স্পন্দনে কেঁপে উঠল। অশ্ৰুত ক্ষীণ প্রতিধ্বনি আমার মধ্যে যারপর নাই নিরানন্দ ও অস্বস্তিকর অনুভূতি জাগিয়ে তুলল, যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।

    আমি ইতিপূর্বে কখনো এরূপ ঘটনার সম্মুখীন হইনি। আমার অঙ্গুলি স্পর্শের শক্তি ছিল যৎসামান্য। তা হলে কি করে, তা অমন শক্তিশালী কম্পনে পরিণত হতে পারে? কিছুতেই আমার বোধগম্য হচ্ছিল না। নিশ্চিত হতে গেলে, ভুগর্ভের প্রচণ্ড শক্তির কথা ভাবতে হয়। হতে পারে, ম্যাগমার উত্তাপ যে কোনো ভাবে উদ্দীপিত করার উপায় রয়েছে। যার সামান্যতম অংশ ধ্বনিতে পরিণত হচ্ছে। প্রাথমিক আঘাত অতিরিক্ত এক শব্দ শক্তি মুক্ত করছে হয়তো শাব্দিক’ লেসার’ এর মতন। Light বা আলোর জায়গায় যদি Sound বা শব্দ বসাই, তাহলে ‘সেসার’ শব্দটি হয়তো তাৎপর্যপূর্ণ হবে।

    আমি কঠোরভাবে প্রতিবাদ জানালাম। ‘এমন কথা আমি কখনো শুনিনি।’

    ‘না’ অভদ্রভাবে নাক সিঁটকিয়ে ওয়েস্ট বলল, ‘আমারও বোধহয়, আপনি শোনেননি। কেউই এমন কথা ইতোপূর্বে শোনেনি। কিছু ভূতাত্ত্বিক যোগাযোগের ফলে উৎপন্ন হয়েছে ‘সেসার’। এটা চিরাচরিত কোনো ঘটনা নয়। দৈবক্রমে হয়তো দশ লাখ বছরে একবার ঘটে এবং সবচেয়ে আশ্চর্যজনক অভাবনীয় ঘটনা।

    ‘এতো বিরাট ব্যাপার,’ আমি বলি ‘মাত্র তর্জনীর আঘাতে!’

    ‘বিজ্ঞানী হিসাবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি মশাই, আমি তর্জনীর একটি আঘাতে সন্তুষ্ট হইনি। আরো পরীক্ষায় উদ্যোগী হয়েছিলাম। আরো জোরে আঘাতের চেষ্টা করেই বুঝেছিলাম, ঐ ঘেরের মধ্যে সাংঘাতিক কম্পনের প্রত্যাঘাতে আমি ধ্বংস হয়ে যেতে পারি। তখন আমি এক প্রক্রিয়া পদ্ধতি প্রস্তুত করে ফেললাম। নিজে গুহার বাইরে থেকে এক যন্ত্র তৈরি করলাম, যাতে দূর থেকেই নানান আকারের নুড়ি ধীরে ধীরে ‘সেসার’-এর উপর ফেলতে পারি। তাতে দেখলাম, গুহার বাইরে থেকেও শব্দ শোনা যাচ্ছে। একটা সরল সিসমোমিটার ব্যবহার করে দেখলাম, কয়েক মাইল দূর থেকেও স্পষ্ট স্পন্দন গৃহীত হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে নুড়ির সারি ফেলতে থাকলাম, ফল লাভ হল।

    আমি বললাম ‘তাহলে কি সেই দিনই পৃথিবীব্যাপী ক্ষীণ গুরু গুরু ডম্বরু শোনা গিয়েছিল।’

    ‘অবশ্যই!’ ওয়েস্ট বলল, ‘আপনাকে যতটা নির্বোধ ভাবছিলাম, ততটা নির্বোধ আপনি নন। পুরো পৃথিবী সেদিন ঘণ্টার মতন বেজেছিল।

    ‘আমি শুনেছি, বিশেষভাবে প্রবল ভূমিকম্পই তা করতে পারে।’

    ‘হ্যাঁ, কিন্তু সেসারে যে কোনো ভূকম্পনের চেয়ে তীব্র কম্পন সৃষ্টি করতে পারে এবং তা করে এক বিশেষ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে। এমন এক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য, দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, তা কোষসমূহকে অন্তস্তলে নাড়িয়ে ছিন্নভিন্ন করবে ক্রোমোজমের নিউক্লিক অ্যাসিড। চিন্তিতভাবে বলি, ‘তবে তো কোষের মৃত্যু।’

    ‘তা তো হবেই। এইভাবেই তো ডায়নোসরদের বিলোপ ঘটেছিল।’

    ‘আমি শুনেছিলাম, পৃথিবীর সঙ্গে এক গ্রহাণুর সংঘর্ষে এই বিপর্যয় ঘটেছিল।’

    ‘হ্যাঁ, কিন্তু সাধারণ সংঘাতে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে, গ্রহাণু ছিল অবশ্যই বিশাল মাপের। ‘অন্তত দশ কিলোমিটার বিস্তৃত। আর তাহলে ধরে নিতে হবে, বিশাল ধুলোর পরিমাণ তিনবর্ষব্যাপী শীত আর সেক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রজাতি বাঁচল, কিছুর বা অবলুপ্তি ঘটল, এক অযৌক্তিক ব্যাখ্যা। ধরে নেওয়া যাক, অপেক্ষাকৃত ছোট কোনো গ্রহাণু সেসারে আঘাত করেছিল এবং এটি শাব্দিক কম্পনে কোষসমূহ চূর্ণবিচূর্ণ করেছিল।

    সম্ভবত বিশ্বের নব্বই শতাংশ কোষ কয়েক মিনিটে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল, গ্রহের পরিবেশের উপর কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব না ফেলে। কিছু প্রজাতি বেঁচে গিয়েছিল। কিছু পারেনি। এটা একেবারেই তুলনামূলক নিউক্লিক অ্যাসিড গঠনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ।

    অত্যন্ত অস্বস্তির সঙ্গে মানলাম তার এই অন্ধ বিশ্বাস, আর বললাম, ‘তাহলে এটাই সেই অস্ত্র, যা ঈশ্বর তোমার হাতে দিয়েছেন!’

    ‘একদম ঠিক!’ সে বলল, ‘নানাভাবে সেসারে’ আঘাত করে, আমি বিভিন্ন শব্দ হতে উদ্ভূত সঠিক তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্ণয় করেছি, আর, এখন বার করতে চেষ্টা করছি, কোন্ বিশেষ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের শব্দ মানুষের নিউক্লিক অ্যাসিড ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে।

    ‘কেন, মানুষের পিছনে পড়েছ কেন!’ আমার দাবি।

    ‘কেন নয়?’ প্রতিবাদে তারও সোচ্চার দাবি। ‘কোন্ প্রজাতি অবাধে পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে চলেছে? অন্য প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটাচ্ছে? জৈব মণ্ডলকে রাসায়নিক দূষণে ভারাক্রান্ত করছে? কোন্ প্রজাতি পৃথিবীকে ধ্বংস করবে ও হয়তো বা, কয়েক দশকের মধ্যেই বাসের অযোগ্য করে তুলবে। নিশ্চয়ই হোমোস্যাপিয়ান ছাড়া অন্য কেউ নয়। আমি যদি যথার্থ শাব্দিক তরঙ্গ বার করে ফেলতে পারি, তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় আমার ‘সেসারে’ আঘাত করে মানবজাতিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলব। কিন্তু অন্য প্রজাতির নিউক্লিক অ্যাসিড অটুট রাখবো।’

    আমি বলি ‘তবে তুমি ছয়শত কোটি মানুষ হত্যা করে ফেলবে।’

    ‘ঈশ্বরও বন্যার মাধ্যমে তাই-ই করেছিলেন!’

    ‘তুমি নিশ্চয়ই বাইবেলের ঐ সব কাহিনী বিশ্বাস কর না!’

    ওয়েস্ট উগ্রভাবে উত্তর দিল, ‘আমি একজন সৃজনশীল ভূতত্ত্ববিদ মশাই।

    সব কিছু হৃদয়ঙ্গম হল। ‘আঃ’ বললাম আমি, ‘আর ঈশ্বর তাহলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে আছেন, তিনি পৃথিবীতে আর বন্যা প্রেরণ করবেন না। কিন্তু তিনি শব্দ তরঙ্গের ব্যাপারেতো কিছু বলেননি।’

    ‘ঠিক ঠিক। ছয়শত কোটি মানুষের দেহাবশেষ পৃথিবীর মাটিকে উর্বরা ও শস্যপূর্ণা করে তুলবে। অন্যান্য প্রজাতির খাদ্যসম্ভার সৃষ্টি হবে। যেসব প্রজাতি এতকাল মানুষের দ্বারা নিপীড়িত হয়েছে, তারা ক্ষতিপূরণের দাবি করবে। তবু মানব প্রজাতির একটি অংশ নিঃসন্দেহে বেঁচে যাবে। কিছু মুষ্টিমেয় মানুষ তো প্রজাতিতে থাকবেই, যাদের নিউক্লিক অ্যাসিড, শাব্দিক কম্পনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ঈশ্বরের আশীর্বাদে, সেই অবশেষে, নতুন করে জীবনযাত্রা শুরু করবে আর হয়তো বা পৃথিবীর এই অমঙ্গল থেকে শিক্ষা লাভ করলেও করতে পারে।’

    আমি বললাম, ‘আমাকে এ সমস্ত কথা বলছ কেন! এবং বাস্তবিক আমার মনেও হচ্ছিল, সে যা করতে চলেছে, তা নিতান্তই অদ্ভুত। ওয়েস্ট আমার দিকে ঝুঁকে এল। আমার জ্যাকেটের কলার ধরল। খুবই অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা। তার নিঃশ্বাস আমার মুখে পড়েছে। তারপর বলল, ‘আমার মন বলছে, আপনিই পারেন এ কাজে আমাকে সাহায্য করতে।

    ‘আমি’ আমি বলি, ‘আমি সত্যিই বলছি, তরঙ্গদৈর্ঘ্য, নিউক্লিক অ্যাসিড ইত্যাদি সম্পর্কে কিছুমাত্র জ্ঞান নেই আমার। কিন্তু তখনই দ্বিতীয় চিন্তা খেলে গেল মাথায়। আমি বললাম, ‘এসো এটা সম্পর্কে চিন্তা করতে থাকি। আমি হয়তো তোমাকে পথ দেখাতে পারব।’

    তারপর অত্যন্ত সহজ সুরে আমার স্বভাবসিদ্ধ ভদ্রতার সঙ্গে বলি, ‘মাত্র পনেরো মিনিট সময় আমায় দেবে? একটু অপেক্ষা কর, আমার খাতিরে।’

    ‘অবশ্যই মশাই।’ সমান ভদ্রতায় তার জবাব এল, ‘আমি ততক্ষণ কঠিন দুর্বোধ্য গাণিতিক সমস্যাগুলির বিশ্লেষণ করতে থাকি বরং।

    যখন আমি তাড়াতাড়ি লাউঞ্জ থেকে বেরিয়ে আসছি, বেয়ারাকে একটা দশ ডলারের নোট ধরিয়ে চুপি চুপি বললাম, ‘দেখ ঐ ভদ্রলোক যেন আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত কোথাও বেরিয়ে না যান। ওকে পানীয় দিতে থাকো, দরকার পড়লে আমিই বিল চুকিয়ে দেবো।’

    আজাজেকে ডেকে পাঠাতে, যে সমস্ত মিশ্র উপাদানের প্রয়োজন পড়ে, তা সঙ্গে রাখতে আমি কখনো ভুলি না। তাই কয়েক মিনিটের মধ্যেই আজাজেল্‌কে আমার ঘরের টেবিলল্যাম্পের পাশে বসে থাকতে দেখলাম। তার শরীরে চিরাচরিত মৃদু গোলাপী দীপ্তি। সে আমার ওপর দোষারোপ করে বাঁশির মতন মিহি সুরে বলল, ‘আমি যখন এক যাদুদেবীর সৃষ্টিতে মশগুল ছিলাম, যা দিয়ে আমার পূর্ণ প্রত্যাশা ছিল, সুন্দরী সামিনির মন জিতে নেওয়ার, সেই সময়ে তুমি আমাকে বিরক্ত করলে।’

    ‘আমি অনুতপ্ত, আজাজেল্‌,’ আশা করছিলাম যাদুদেবীর মাহাত্ম্য কিংবা সামিনির সৌন্দর্যের বিবৃতি দিয়ে সে আমার দেরি করিয়ে দেবে না, কারণ কোনোটার জন্যই আমার নখাগ্রতুল্য উৎসাহ ছিল না। কিন্তু সম্ভবত আমার এখন চরম পরিস্থিতিতে সঙ্কটজনক অবস্থা।

    অসন্তোষের সঙ্গে আজাজেল্‌ বলল, ‘তুমি সব সময়েই এমন কথা বল।’ তড়িঘড়ি আমি পরিস্থিতি ছকে নিলাম। এবং আমি নিশ্চয়ই বলব, সেও তখনি বুঝে নিল। সে এদিকে চমৎকার, কখনো বিশদ ব্যাখ্যার প্রয়োজন তার পড়ে না। আমার নিজস্ব বিশ্বাস, সে আমার মনের ভিতর উঁকি দেয়। যদিও আমার চিন্তাধারা যে অমান্য করার নয়, এ বিষয়ে সে আমাকে সব সময় নিশ্চিত করে।

    তবু তুমিই বল, তুমি এক দুই সে.মি. লম্বা জিনের ওপর কতদূর আস্থা রাখতে পার, যে সদাসর্বদা, নিজের মর্জিমতন সুন্দরী সামিনির দিকে ধাবিত, তারা যেমনই হোক, অসম্মানজনক ছলচাতুরীতে অভ্যস্ত! তাছাড়া সে যে আমার ভাবনা চিন্তাকে সম্মানজনক বা সহনীয় মনে করে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।

    আজাজেল্‌ চিৎকার করে বলল, ‘যার কথা বলছ, সেই মানুষটি এখন কোথায়?’

    ‘লাউঞ্জে, জায়গাটা হচ্ছে—

    ‘কিচ্ছু ভেবো না। নৈতিক অবনতির দেহসৌরভ ঠিক অনুসরণ করব। আমার মনে হয়, আমি পেয়ে গেছি। আমি কিভাবে লোকটিকে চিনব?’

    ‘বেলে রংএর চুল, বিবর্ণ চোখ’।

    ‘আরে না না, তার মন?’

    ‘অন্ধ গোঁয়ারের মতন’।

    ‘আরে, ও তো তুমি একবার বলেইছ। পেয়ে গেছি তাকে। আর দেখছি, বাড়ি ফিরে একবার আমার ভাল মতন স্টীম বাথ নেওয়ার প্রয়োজন। ঐ লোকটি তোমার চেয়েও মন্দ।

    ‘তাতে কিছু মনে করো না। ওকি সত্যি কথা বলছে?

    ‘সেসার’ সম্পর্কে? যতই হোক ওটা একটা চতুর অহমিকা।’

    ‘হ্যাঁ।’

    —আচ্ছা, এটা একটা কঠিন প্রশ্ন। আমার এক বন্ধু নিজেকে মহান আধ্যাত্মিক কেউকেটা মনে করে। তাকে প্রায়ই বলি, সত্য কাকে বলে? আমি তোমাকে এটা বললাম। তুমি সত্য বলে মানলে। সে এটা বিশ্বাস করে। মানুষ যেটা বিশ্বাস করে, তাতে যতই ব্যগ্রতা থাকুক, নিপাট সত্য নাও হতে পারে। নিজের জীবনেও তুমি নিশ্চয়ই এমন ইঙ্গিত পেয়ে থাকবে।’

    ‘পেয়েছি। কিন্তু যে বিশ্বাস নিপাট সত্য থেকে জন্ম নেয়, আর যে নেয় না, তাদের মধ্যে ফারাক্ করবে কি করে?’

    ‘বুদ্ধিমান ব্যক্তিত্বে সেটা সম্ভব। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে নয়। যাই হোক। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এই লোকটি সাংঘাতিক বিপজ্জনক। আমি ওর মস্তিষ্কের কিছু অণুর পুনর্বিন্যাস করে দিতে পারি, তাতে সে তক্ষুনি মারা যাবে।’

    ‘না, না,’ আমি বলি। এটা আমার পক্ষে এক নির্বোধ দুর্বলতা হয়ে যাবে, মেরে ফেলতে আমার আপত্তি আছে, ‘তুমি কি এমনভাবে অণুগুলির পুনর্বিন্যাস করতে পার না, যাতে ‘সেসার’ সম্পর্কে সব স্মৃতি তার নষ্ট হয়ে যায়!’

    আজাজেল্‌ ক্ষীণ সুরে ফোঁসফোঁস করে উঠল, ‘এটা আরো অনেক শক্ত। ঐসব অণুসমূহ ভারী ও পরস্পর সংলগ্ন থাকে। সত্যিই কেননা, সবটাই ছিন্নভিন্ন করে দেই।

    ‘না, আমি বলছি।’

    ‘আচ্ছা বেশ’ আজাজেল্‌ চাপা রাগে বলল। তারপর ফুঁ দিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে, নিঃশ্বাসের সঙ্গে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে প্রার্থনার সুর ধরল। দেখাতে চাইল কি কঠোর তার কেরামতি। অবশেষে বলল, ‘হয়ে গেছে।’

    ‘বেশ, অনুগ্রহ করে এখানেই অপেক্ষা কর। আমি একবার পরখ করে ফিরে আসছি এখুনি। আমি দ্রুত দৌড়ালাম। আর হানিবাল ওয়েস্ট তখনো সেখানেই রয়েছে, যেখানে আমি তাকে ছেড়ে গিয়েছি। বেয়ারা আমার দিকে চোখ মট্‌কাল ‘কোনো পানীয়ের দরকার হয়নি, মশাই, যোগ্য লোকটি বলল। আমি তাকে আরো পাঁচ ডলার দিলাম।

    ওয়েস্ট উৎফুল্ল চোখে তাকাল, ‘ওঃ। আপনি এসে গেছেন।’

    ‘হ্যাঁ, আপনি আমাকে দেখতে পেয়েছেন। আপনার ‘সেসার’ এর সমস্যার সমাধান আমি পেয়ে গেছি।’

    ‘কি কি কিসের সমস্যা?’ হতবুদ্ধির মতন প্রশ্ন করল ওয়েস্ট।

    ‘সেই যে আপনার স্পেলিওলজিক্যাল অভিযানে যা আপনি আবিষ্কার করেছিলেন।

    ‘স্পেলিওলজিক্যাল অভিযান? সে আবার কী!

    ‘আপনার গুহা কন্দরের গবেষণা।’

    ‘মশাই,’ ভ্রূ কুচকে ওয়েস্ট বলল, ‘জীবনে আমি কোনো গুহায় যাইনি। আপনি কি পাগল?’

    ‘না। কিন্তু এক্ষুনি আমার একটা দরকারি মিটিং-এর কথা মনে পড়ে গেল। বিদায় বন্ধু! সম্ভবত আমাদের আর দেখা হবে না।’

    আমি হাঁফাতে হাঁফাতে ঘরে ফিরে এলাম। আজাজেল্‌কে দেখলাম। নিজের জগতের বৈশিষ্ট্যে নিজের মনে নিজের সুরে গুনগুন করছে সে। সত্যি, বলিহারি তাদের রুচি। যাকে তারা সঙ্গীত বলে, সে অতি বিশ্ৰী।

    ‘তার স্মৃতি চলে গেছে’ আমি বলি, ‘আর আশা করছি, স্থায়ীভাবে।’

    ‘নিশ্চয়ই,’ আজাজেল্‌ বলল, ‘পরের ধাপ হচ্ছে, এইবার ‘সেসার’ সম্পর্কে ভাবতে হবে। যদি সত্যিই ওটি পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ তাপশক্তির বিনিময়ে শব্দকে বর্ধিত করার ক্ষমতা রাখে, তবে তার গঠনাকৃতি অবশ্যই যথাযথরূপে সুবিন্যস্ত হবে। সন্দেহ নেই, কোনো একটি বিশেষ অবস্থায় ক্ষুদ্র ভাঙনের একটা ব্যাপার রয়েছে। এমন কিছু যা হয়তো আমার ক্ষমতার এক্তিয়ারে, যা ‘সেসার’-এর ক্রিয়াশীলতা নষ্ট করতে পারবে। ঠিক কোথায় ওটা রয়েছে বলতো?’

    আমি বজ্রাহতর মতো তার দিকে তাকিয়ে রইলাম, ‘আমি কেমন করে জানব?’ সেও ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাল, বজ্রাহতের মতোই। কিন্তু তার ছোট্ট অভিব্যক্তি বুঝে ওঠা আমার কর্ম নয়।

    আজাজেল্ বলল, ‘তার মানে, তার থেকে আসল তথ্যগুলো না জেনেই তুমি আমাকে দিয়ে তার স্মৃতি মুছিয়ে ফেলেছ!’

    ‘আমার তো মাথাতেই আসেনি।’ আমি বলি।

    ‘কিন্তু যদি সত্যিই ‘সেসার’-এর অস্তিত্ব থেকে থাকে, যদি তার বিশ্বাস, নিপাট সত্যের ওপরই আধারিত হয়— ওটার ওপর কেউ যদি হোঁচট খায়, কোনো বিরাট পশু হতে পারে; হতে পারে ওটার ওপর উল্কাপাত এবং যে কোনো মুহূর্তে, দিনে বা রাতে, পৃথিবীর সমস্ত জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে।’

    ‘হায় ঈশ্বর।’ আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে।

    আপাত ধারণায়, আমার উদ্বেগ খানিকটা দূর হলো, যখন সে বলল, ‘এসো বন্ধু এর উজ্জ্বল দিকটাও দেখ। সবচেয়ে মন্দ সম্ভাবনা হল, মানব জাতির বিলোপ। শুধু মানব প্রজাতি, কিন্তু তারাই তো সবাই নয়।’

    তার গল্প শেষ করে নিরাশ হয়ে জর্জ বলল, ‘এখন বোঝ তুমি, যে কোনো মুহূর্তে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, এই আশঙ্কা নিয়ে আমাকে বাঁচতে হবে।’

    ‘যত সব বুজরুকি!’ আমি আন্তরিকভাবেই বললাম, ‘যদি তুমি হানিবাল ওয়েস্ট সম্পর্কে কথা বলেও থাক, তাহলেও, মাফ্ করো আমায়, সে যে উদ্ভট কল্পনার শিকার নয়, তার নিশ্চয়তা কোথায়?

    জর্জ উদ্ধতভাবে নাকের নিচ দিয়ে আমার দিকে তাকাল, এক মুহূর্তের জন্য, তারপর বলল, ‘আজাজেলের নিজেদের জগতের চমৎকার সামিনিদের নিয়েও তোমার মতন কূট সন্দেহপ্রবণতা আমার নেই। এটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবে?’

    ওর ওয়ালেট থেকে একটা ছোট্ট কাগজের কাটিং বের করল। গতকালের নিউইয়র্ক টাইমস কাগজের একটা অনুচ্ছেদ। শিরোনামে রয়েছে ‘এক মৃদু গুরু গুরু আওয়াজ

    এতে বলা হচ্ছে, এক মৃদু গুরু গুরু আওয়াজের কথা, যা ফ্রান্সের গ্রেনোবল এর অধিবাসীদের ভীষণভাবে পীড়িত করছে।

    ‘একটা সোজা ব্যাখ্যা জর্জ। আমি বলি, ‘তবে কি, ওই সংবাদটি দেখেই তুমি এই গল্পটা তৈরি করে ফেলেছ?’

    এক মুহূর্ত, জর্জ এমনভাবে তাকাল, যে সে বিস্ফোরিত হয়ে যাবে, বা আমাকে তার তেজে ভস্ম করে ফেলবে! কিন্তু আমি যেই আমাদের দুজনের মধ্যে রাখা পরিচারিকার দেওয়া বিলটি তুলে নিলাম, তার মুখ চোখ নরম হয়ে গেল, আর বিদায় নেওয়ার সময় আমরা বিনয়সহকারে করমর্দন করলাম।

    এবং তবু আমাকে স্বীকার করতেই হবে, সেই থেকে আমার রাতে ভাল ঘুম হয় না। প্রায়ই রাত আড়াইটা নাগাদ ঘুম ভেঙে যায়। হয়তো বা ক্ষীণ গুরু গুরু ধ্বনিই আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleব্ল্যাক ফেয়ারি টেইল – অৎসুইশি
    Next Article I, রোবট – আইজাক আসিমভ

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }